২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টিম জুকারবার্গের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিলেন ফেসবুকেরই ডেটা সাইন্টিস্ট সোফি ঝাং। এক বছর এক মাসের মাথায় আরও একবার বিশ্বজুড়ে তোলপাড়। নেপথ্যে এক মার্কিন সংবাদপত্র-ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং আরও এক খাপখোলা তলোয়ার, তাঁর নাম ফ্রান্সিস হাউগেন। ফ্রান্সিসের দেওয়া তথ্যকে হাতিয়ার করে জুকারবার্গের তৈরি করা মহাপ্রাণের মিনারকে টলমলো করে দিয়েছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের পো়ড়খাওয়া ফেসবুক সাংবাদিকরা, ফেসবুক ফাইলস নামে একটি ধারাবাহিকে একে একে উঠে আসছে ফেসবুক সংক্রান্ত একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। আর এই তথ্যই বলছে আঁচ পোহাতে হবে আপনাকেও, কারণ ফেসবুক-জাত সমস্যার শিকড় আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে এই বাংলাকেও। ... ...
যে কোনো বাঙলা সাহিত্য বা ভাষার ইতিহাসের স্কুলপাঠ্য সিলেবাস বা বইতে চর্যাপদকেই আরম্ভ বা প্রথম নিদর্শন বলা হয়েছে। যেটা আমাদের স্কুলপাঠ্য বইতে লেখা নেই, সেটা হল, এই পুঁথি শুধু বাঙলার নয়, ওড়িয়া, অহমীয়া, ভোজপুরি এইরকম বেশ কয়েকটি ভাষারও পূর্বপুরুষ। ওই সব ভাষার সাহিত্যের ইতিহাস বইতেও একই কথা লেখা আছে। তাই প্রশ্ন আসে, এটা আদি নিদর্শন বটে, কিন্তু এ ভাষা তখনো কি বাঙলা হয়নি? এই চর্যাপদের কবি বা গীতিকাররা নিজেদের কোথাকার লোক ভাবতেন? তাঁরা কি নিজেদের বঙ্গবাসী ভাবতেন? এই ভাষাকে কোন সময় থেকে বাঙ্গালা বলা শুরু হয়েছিল? বাঙ্গাল অরিজিনালি কারা ছিল? এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা, যা স্কুলপাঠ্য বইয়ে নেই.. পড়তে থাকুন। ... ...
লখিমপুর-খেরি বিজেপির গলায় কাঁটা হয়ে খচখচ করছে। তার কারণ দুটো। প্রথমত বিধানসভা নির্বাচন ঘাড়ের ওপর। এখন এই গন্ডগোল খুনখারাপির কারণে বিজেপি-বিরোধী জনমত আরও না দানা বাঁধে। দ্বিতীয় কারণটিও খুব গুরুতর। লখিমপুর-খেরি উত্তর প্রদেশের সবচেয়ে বড় জেলা, এর অবস্থান রাজ্যের পূর্বদিকে। অতীতে এখানে কৃষক আন্দোলনের অতো বাড়বাড়ন্ত ছিল না, কিন্তু এখন হচ্ছে, তার মানে নতুন নতুন জায়গায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। এতোদিন উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাংশে ৩০টি জেলায় আন্দোলনটি সীমাবদ্ধ ছিল। এখন পূবেও তা যদি ছড়িয়ে পড়ে, সে দাবানল নেভাবে কে? অতএব সামনের কয়েকটি দিন লখিমপুর-খেরি বিজেপির শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে থাকবে এটা একেবারে নিশ্চিত। ... ...
স্থান – ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ড, ২৬ অক্টোবর, ১৮৩১। তথাকথিত “ভারতীয়” কলেরায় আক্রান্ত প্রথম রোগী চিহ্নিত হল। মারাও গেল। এক বছরের মধ্যে ২৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হল কলেরায়। যদিও ল্যান্সেট-এর সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৫০,০০০। এ সময়ে এখানে এলেন এডিনবার থেকে সদ্য পাস করে বেরনো ২২ বছরের এক উজ্জ্বল মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট। স্নাতক হন ডাবলিনের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ থেকে। ইতিহাস ঘেঁটে আমরা এই যুবকের তিনটি নাম পাচ্ছি – প্রথমে উইলিয়াম স্যান্ডস, পরে উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি, এবং সবশেষে উইলিয়াম ও’শনেসি ব্রুক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠার যুগের শিক্ষক হিসেবে এবং দ্বিতীয় নামটিতে সবচেয়ে বেশি গবেষণাপত্র লেখার সুবাদে আমরা তাঁকে জানবো উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি বা শুধু ও’শনেসি বলে। ... ...
‘গরম হাওয়া’র নির্দেশক এম এস সাথ্যু কর্ণাটকের লোক, পুরো নাম মাইসোর শ্রীনিবাস সাথ্যু। গণনাট্য মঞ্চের সাথে যুক্ত ছিলেন বহুদিন। ভাষা নিয়ে ওঁর সিনেমায় প্রায়ই পরীক্ষা নীরিক্ষা দেখা যায়। একটা সিনেমার মধ্যেই লোকে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে থাকে। বহু আগে ওঁর বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। সিনেমায় ভাষার বহুত্ব নিয়ে প্রশ্ন করায় জবাব দিয়েছিলেন, একটু কান পেতে শুনে দেখবেন তো আমরা রোজকার জীবনে কত ভাষা বলি আর শুনি। ভারত যে বহুভাষী দেশ তার ছাপ সিনেমাতে পড়াটাই স্বাভাবিক। ... ...
গ্রামের নাম এদেসমেত্তা, জেলা বিজাপুর, ছত্তিসগড়। জেলাশহর থেকে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। ১৭-১৮ মে, ২০১৩র রাতে গ্রামের ৩০-৪০ জন মানুষ বীজ পান্ডুম উৎসব পালন করার জন্য মিলিত হয়েছে। বীজ পান্ডুম হচ্ছে ফসলের বীজের মাধ্যমে নতুন জীবনের আগমনকে উদযাপিত করা। প্রায় হাজার জনের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের ঘিরে ধরে, নির্বিচারে গুলি চালায়; ৮ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৪ জন নাবালক। মাওবাদীদের মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোবরা ইউনিট উল্লসিত, তাঁরা উগ্রপন্থীদের একটি দলকে নিকেশ করে দিয়েছে। এলাকার মানুষ মানতে নারাজ, তাঁরা বলেন যে এঁরা সবাই ছিলেন নিরীহ গ্রামবাসী, কেউ মাওবাদী নন। তুমুল হৈচৈ হয়। তখন রাজ্যে রমন সিংয়ের বিজেপি সরকার যাদের প্রবল দমন-পীড়নে আদিবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ঘটনাটি নিয়ে এতো সাড়া পড়ে যায় যে সেই সরকারও বাধ্য হয় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে। ... ...
বিশ্বজোড়া অতিমারী এই প্রথম নয়, তবু গত প্রজন্ম ও বিগত মহামারীর থেকে যা কিছু আমরা শিখে থাকি - তা ঠিকমতো প্রয়োগ করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এমন দ্রুত-বর্ধনশীল মহানগরগুলির ক্ষেত্রে। তবে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু শেখার আছে, এমনকি ধারাভির বাসিন্দাদের আপৎকালীন ব্যবস্থা থেকেও! যেমন, উগান্ডার কাম্পালাতে মূলত অপারগ বা বয়স্কদের জন্য স্থানীয় উৎপাদকরা একটি অ্যাপের সাহায্যে সাইকেলে জরুরী জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এমন সব উদ্যোগের ফলে রোগের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কম হতে পারে, কিন্তু নাগরিকদের জীবিকা হারানো, অনাহার, ভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা-বিভ্রাট ও অন্যান্য দুর্ভোগের কোনও যথাযথ হিসাব বা তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার সুদক্ষ ব্যবস্থার অভাব ও অনীহার জন্য। ... ...
আফগানিস্তানে জমানা বদলের পর থেকেই নানা দেশ নানাভাবে তাদের লাভক্ষতির হিসেব নিকেশ করছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনের সমস্ত তিক্ততাকে পাশে সরিয়ে রেখে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছে। বিরোধীরাও তাতে সমস্বরে সাড়া দিয়েছেন। বৈঠক থেকে আফগান-নীতি প্রসঙ্গে শাসক বিরোধী ঐক্যমত-ও তৈরি হয়েছে। বোঝা কঠিন নয় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সবারই উদ্বেগ আছে এবং এই ক্ষেত্রে অন্তত শাসক বিরোধী রাষ্ট্র স্বার্থে অনেকটা কাছাকাছি থাকতে চাইছেন। ... ...
এই ছবিতে শ্যাম বেনেগাল সচেতনভাবে যে সিদ্ধান্তটি নেন এবং যথার্থ শিল্পী হিসাবেই নেন – তা ছবিটিকে দেশভাগকেন্দ্রিক অন্যান্য ছবিগুলির থেকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। মূলত তিনি নিবিষ্ট-চেতনার আলোয় ৭০-এর দশকের সেই গা-ছমছমে সময়ে, একজন প্ৰান্তিক মানুষের অবস্থানকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কারণ তাঁর অসামান্য শৈল্পিক মেধা জানত, যে শতাব্দীর শেষে যখন মানুষ একটি নতুন ভোরের খোঁজে আকুল, তখন ৪৫ বছর আগের এক রাজনৈতিক অবিচক্ষণতা মানুষকে আর নতুন করে বিব্রত করতে পারে না। একমাত্র মানবিক সম্পর্ক, স্মৃতি এবং সমকালের সমাজচিত্রের মধ্যে দিয়ে উস্কে দেওয়া সম্ভব সেই দগদগে ঘায়ের ছোপ ছোপ স্মৃতি। ... ...
উৎসবের দেশ জাপানের পাঁচটি ঋতু-কেন্দ্রিক উৎসবের অন্যতম দুটি হল পুতুল-কেন্দ্রিক। পুতুল উৎসবের একটি ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত “হিনা মাৎসুরি”। এর অন্য নাম “বালিকা-উৎসব”। অন্যটি হল ৫ই মে অনুষ্ঠেয় “তানগো-নো-সেক্কু” বা “বালক-উৎসব”। জাপানের অন্যান্য উৎসবের মত এই পুতুল উৎসব দুটিরও শুরু বহুযুগ আগেই। তবে নিঃসন্দেহেই বলা যেতে পারে যে, নানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পথ পেরিয়ে বর্তমানের উৎসব অন্যরূপে প্রতীয়মান। ... ...
১৮৫০-এর লণ্ডন। তার একদিকে বর্ণিল সন্ধ্যার মায়াবী হাতছানি, আর একদিকে ঘিঞ্জি গলিতে আবর্জনার মধ্যে পিলসুজের তলার মানুষের লড়াই। এর-ই মধ্যে বারেবারে হাজার-হাজার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কলেরার দৈত্য। রোগের কারণ অজানা, মনে করা হত দূষিত বাতাস বা মায়াজমা থেকেই কলেরা ছড়ায়, যদিও মায়াজমা ঠিক কি জিনিস তা অবশ্য কেউ-ই জানতেন না। ঠিক সেই সময়েই লন্ডনের এক তরুণ ডাক্তারবাবু, জন স্নো, ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলেরার মোকাবিলায়, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রমাণ করলেন মায়াজমা নয়, দূষিত জল-ই এই রোগের বাহক। আজকের যদুবাবুর টিউশনিতে সেই জন স্নো-র গল্প, এক মহামারির দানবের চোখে চোখ রেখে সত্যি খোঁজার রূপকথা। ... ...
১৪ কোটি রেশনের ব্যাগে তাঁর ছবি ছাপা হচ্ছে, ৫ কোটি পোস্টকার্ডে লেখা হচ্ছে ‘ধন্যবাদ’। তারপর দেশের নানান প্রান্তের বিভিন্ন বুথের অন্তর্গত পোস্ট অফিস থেকে সেই পোস্টকার্ড ঠিক সময়মত যাতে তাঁর কাছে পৌঁছয়, তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তাঁর দল এবং সরকারের পক্ষ থেকে। দেশের ৭১টি গঙ্গা-সংলগ্ন ঘাট পরিষ্কারের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি ৭১ বছরে পদার্পণ করবেন। তিনি যে সে মানুষ নন, তিনি আমাদের প্রধান সেবক নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। ... ...
জুলাইয়ের মাঝামাঝি আমাদের ফ্ল্যাটে এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি এসেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্কুল খোলার দরকার আছে কিনা? তিনি বলেছিলেন “স্যার, এটা কোনো প্রশ্ন হল? বাচ্চা দুটো বরবাদ হয়ে যাচ্ছে”। SCHOOL এর গবেষকের একই প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা অবাক হয়ে বলেন “ইয়ে পুছনে-ওয়ালি বাত হ্যায়? বাচ্চা কা জিন্দেগি তো খতম হো রহা হ্যায়”। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় শহরের এক অসহায় বস্তিবাসী বাবার আকুতির সাথে বিহার/ঝাড়খণ্ডের এক প্রান্তিক পরিবারের মায়ের হাহাকার কি আমাদের বাধ্য করবে না খান দশেক “পুছনে-ওয়ালা বাত” সব ফোরামে তোলার জন্য? ... ...
পরমাণু বিদ্যুৎশিল্পের এখন হতচকিত অবস্থা। চিন, ভারত, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশে যে পরমাণু বিদ্যুতের প্রসার নিয়ে কথা হয় তার আসল কারণ এইসব দেশ হয় পরমাণু অস্ত্রধারী, অথবা তা হতে চায় .... তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিপদ, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা, তেজস্ক্রিয় বর্জ্যপদার্থের সমস্যা, চুল্লির ডিকমিশনিং নিয়ে রাষ্ট্রের দুশ্চিন্তা তেমন নেই। এসব দুশ্চিন্তা প্রতিবাদীদের এবং তার জন্য পরমাণু রাষ্ট্রের মত বদল হয় না। খরচ বেশি, প্রযুক্তিগত প্রতিকূলতা বেশি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি সস্তা – এই তিন কারণেই পরমাণু বিদ্যুতের প্রসার বন্ধ হয়ে গেছে .... বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রায় কিছুই কমেনি .... অন্য বছরের মত এ বছরও বিশ্বে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ,ঝড়, বন্যা, দাবানল ও অন্য্যান্য বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। এ বছর জার্মানি ও বেলজিয়ামের বন্যায় দুশ’র বেশি মানুষ মারা গেছে – যা কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না। ... ...
এই মদ্যপান নিয়ে বাঙালির নৈতিক দ্বন্দ্বের ইতিহাস বড় পুরাতন। মূলধারার সাথে অস্ফুট লোকাচারের পার্থক্য তো ছিলই; কিন্তু মূল সুর ছিল সহাবস্থানের। কথিত আছে, একবার শাক্ত সাধক কমলাকান্তকে মদ্যপান করতে দেখলে, বর্ধমানরাজ তেজচন্দ্র তিরস্কার করেন। প্রত্যুত্তরে মাতৃভক্ত কমলাকান্ত মদ্যকে দুগ্ধে পরিণত করে সেই দুধে দেবীপ্রতিমার পূজা করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রতিভূ তেজচন্দ্রের কাছে যা অনৈতিক, সাধক কমলাকান্তের কাছে তা নয়। ভারতীয় লোকাচারের ঊর্ধ্বে থাকা সাধক সামাজিক নিয়মনীতির অধীন নন। কমলাকান্তের মতই, সাধক রামপ্রসাদও মদ্যপান করতেন। পণ্ডিতসমাজের প্রধান কুমারহট্ট এ নিয়ে তাঁকে তিরস্কার করলে, রামপ্রসাদ বলতেন, “সুরাপান করিনা আমি / সুধা খাই জয় কালী বলে”। কিন্তু সব প্রেমিক যেমন দেবদাস নয়, সকল মদ্যপই রামপ্রসাদ নয়। শাক্তমতে গুহ্যসাধন-ক্রিয়ায় মদ্যপানের যে রীতি, তা প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ না হওয়াটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ‘প্রাত্যহিক জীবন’ তো কোন সমসত্ত্ব ধারণা নয়, বরং তা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন। একদিকে প্রাক-ঔপনিবেশিক বঙ্গীয় উচ্চবর্গ যেমন পারতপক্ষে মদ্যপান এড়িয়ে চলেছে, মঙ্গলকাব্যের অন্ত্যজ শ্রেণি অবশ্য শুঁড়িখানায় ক্রমাগত ভিড় জমিয়ে গেছে। তাই মদের বিচারেই বাঙালি অনেক আগেই ‘আমরা-ওরা’-র ব্যবধান তৈরি করে ফেলেছে। ... ...
একটি ক্লাস সেরে টিচার্স রুমে ঢুকে দেখি টেবিলের ওপর বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন। জানা গেল ছাত্রছাত্রীদের থেকে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একজন দিদিমনি সেই মোবাইলগুলি ঘাঁটছেন আর প্রবল আক্রোশে গজগজ করছেন। দিদিমনি যারপরনাই সুন্দরী, রূপসজ্জা-পটিয়সী, নানা আছিলায় সেলফি তোলা আর ফেসবুকে পোস্ট করা তার সর্বক্ষণের বিলাসিতা। ছেলেরা ফেসবুক থেকে তার প্রোফাইল থাকা ছবিগুলো ডাউনলোড করেছে দেদার। জানতে চাইলাম, মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে – ভাল কথা, তাই বলে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ঘাঁটা হবে কেন? দিদিমনি হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘ওরা ফেসবুক থেকে আমার প্রোফাইল পিকচার নামিয়েছে’। ... ...
বিদ্যা ভারতী নিজেদের “বিশ্বের সর্ব বৃহৎ শিক্ষা সংগঠন” হিসাবে দাবী করে থাকে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে “একটা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতি নির্মাণ করা যেটা নারী পুরুষের একটা তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলবে যারা হিন্দুত্বর প্রতি দায়বদ্ধ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং যারা প্রাণবন্ত ও শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ভাবে পরিপূর্ণ উন্নত………” ... ...
আসলে প্রশ্নটি ওঠার জায়গা ও রয়েছে অনেক। একটি প্রতিবেদনে জানা যায় রিফিউজি দলের দৌড়বিদদের মধ্যে ছয়জন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাননি কারণ দলের মধ্যের প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র তাঁদের যথাযথ স্বাধীনতা দিচ্ছেন না। বিতর্কের শুরু হয়দক্ষিণ সুদান থেকে বাস্তু-চ্যুত দৌড়বিদ দমিনিক লোকিনয়োমো লোবালু সুইস দৌড় প্রতিযোগিতায় জেতার পর পুরস্কারের অর্থমূল্য না পাওয়া নিয়ে। ... ... কথাটিকে একটু সাজিয়ে নিলেই হয় যে বাস্তু-চ্যুতদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এটাই যথেষ্ট তাই তাদের অনুযোগের অধিকার থাকে কি করে! অর্থাৎ হয় প্রদত্ত ব্যবস্থা গ্রহণ কর বা কাকুমার উদ্বাস্তু শিবিরে ফেরত যাও। 'Savior's Complex' কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গদের রয়েছে তাই নয়, বরং তা কেনিয়া পরিচালিত গোটা রিফিউজি দলের বিষয়টির সাথেও জড়িয়ে রয়েছে। অত্যাচারী যেমন অত্যাচারিতের মতের অপেক্ষা করে না; রক্ষাকর্তাও অনুগ্রহপ্রার্থীর মতের আশায় থাকে না। ... ...
কয়েকবছর হল, জীবনের দুটো নিয়ন্ত্রককে আমরা বরণ করে নিয়েছি বেশ। প্রথমটা ছোট্ট একটা স্ক্রিন বসানো রবারের ব্যান্ড। কব্জিতে তা এঁটে রাখতে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, স্নান করার সময়ও খোলা নিষ্প্রয়োজন। পোশাকি নাম ফিটনেস ট্র্যাকার। আপনার চলন, শয়ন, স্বপন-বপন সব কিছু সেই ১৫ গ্রামের ছোট্ট ডিভাইস মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। স্মার্ট ফোনের লেজুড় হয়ে কল, এসএমএস, হোয়্যাটসঅ্যাপের নোটিফিকেশন তো পাঠাবেই, ডায়ালের তলায় রাখা ইনফ্রারেড আলো আপনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপবে, হৃৎস্পন্দন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে। ... ...