লতা মঙ্গেশকর -- বিশাল মাপের এক শিল্পী চলে গেলেন। তাঁকে শেষ বিদায় ও শ্রদ্ধা জানালাম। এবং তার পরে কয়েকটা "শাস্তিযোগ্য" কথা লিখলাম। ... ...
বিরিয়ানি মৃত্যুর মতো'ই, গ্রেট লেভেলার। রাজাগজা থেকে হেলেচাষা, বিরিয়ানিতে সবার রুচি রয়েছে। প্রথমযুগে একটি ধর্মবিশেষের সঙ্গে একে যুক্ত করা হতো, এখন সে বালাই'টি বেশ কমেছে। কিন্তু বিদায় হয়নি। খোদ লখনউ বা হায়দরাবাদে বহু জনতা আছেন যাঁরা এই পদার্থটিকে যথেষ্ট 'গ্রহণযোগ্য' মনে করেন না। মানে ঐ ম্লেচ্ছ সংযোগগত মাত্রাটির জন্য। যাকগে চিত্রগুপ্ত মহাশয় তাঁদের পুনর্জন্ম বরাত করবেন। আমিন।-----------------------------------বিরিয়ানি নিয়ে লিখতে গেলে একটা মহাভারত না হলেও, শ্রীশ্রীচন্ডী নামিয়ে ফেলা যায়। সার ... ...
দিল্লি থেকে ব্যান্ডেল যাত্রাটা, সময়বিশেষে, ঠিক রাজধানী এক্সপ্রেসে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবার মতন সাধারণ থাকে না। দুটো জায়গা এতটাই দু'রকম, মনে হয়, টাইম ট্র্যাভেল করছি। একটা যুগ থেকে আরেকটা যুগে। একটা শতাব্দী থেকে আরেকটা শতাব্দীতে চলেছি। সেই যেখানে সময় এগোয় না, থেমে থাকে, কখনও ক্কচিৎ দুটো একটা পরিবর্তন চোখে পড়ে কি পড়ে না। জীবন গিয়াছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার। সেই পঁচানব্বই সালে ছেড়ে যাওয়া, আর ফিরে আসা হয় নি, হবেও না নিকট ভবিষ্যতে, তবু যেভাবে ছেড়ে গেছিলাম, জায়গাটা সেভাবেই রয়ে গেছে। রয়ে যায়। ... ...
আলিমুদ্দিন, আলিমুদ্দিন, বিপ্লব কবে পাবো?আলিমুদ্দিন, তুমি কি আর মানুষের কথা ভাবো?আলিমুদ্দিন, বিপ্লব বাঁশি তমাল তরুমূলেবাজিয়েছিলে, আমি তখন মাধ্যমিক ইস্কুলে। ছোট থেকেই এসএফআই করি, শ্রেণী সংগ্রাম,ভোটে তখন রিগিং করো, আগুনের নন্দীগ্রাম।আমি তখন অবাক হই, লজ্জায় হই লাল,আনলে কুমির আলিমুদ্দিন, কাটলে তুমি খাল।আলিমুদ্দিন, আলিমুদ্দিন, আদর্শ তো ভালো,ভাবনা জুড়ে জ্বলেছিল সমাজতন্ত্রের আলো।তোমার জন্য এক দৌড়ে ব্রিগেড ময়দানে,আলিমুদ্দিন, আমার বাবা কাজ করে ... ...
বেশ নেশায় পড়ে গেছি। কেবল পাখির কথা মনে হচ্ছে। চেম্বারে রোগী বলছে বুক ধুপধাপ করছে-আমার মাথায় ঘুরছে অ্যাশি প্রিনিয়া। রেড স্কেলড মুনিয়া। ইকো করতে করতে মনে পড়ছে ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই। যদি আর একটু সময় নিয়ে ছবি নিতাম। যদি আর একটু কেয়ারফুল থাকতাম! অত হন্তদন্ত ভাব কোনো পাখিই পছন্দ করে না।সার্কল অফ ফিয়ার বলে একটা ব্যাপার আছে না ! আহা, যদি সেন্টার ওয়েটেড মিটারিং রাখতাম! কেন যে ম্যাট্রিক্স মিটারিং ব্যাভার করতে গেলাম! আহা, যদি ৮০-৪০০ থাকতো ! আর একটু সময় পেলে পাইড কিংফিশারের ছবি হত। ওটা কী ঈগল-লং লেগড না কমন ... ...
'ভালো লাগছে না রে তোপসে' বা 'ডিলাগ্রান্ডি' বললে বাঙালি মননে এক ধরনের রিফ্লেক্স অ্যাকশন কাজ করে যেন। ফেলুদা/তোপসে, টেনিদা, ঘনাদা ইত্যাকার নামগুলি বাঙালির আড্ডার স্বাভাবিক উপাদান। এই অনুষঙ্গগুলি দিয়ে বাঙালি তার হিউমারের অভ্যাস ঝালিয়ে নেয়, কিছুটা আক্রান্ত হয় নস্টালজিয়াতেও।তবে, এইসবের মধ্যে বাল্যবেলায় পড়া কিছু কিশোরচরিত্ররা হারিয়ে গেছে, কিছুটা উপেক্ষিতই যেন তারা। ক'জন আর নগণ্য সাধু কালাচাঁদকে মনে রেখেছে? ট্যাঁপা-মদনা বললে আমরা ক'জনই বা সহসা আবার ক্লাস ফোরের পূজাপ্রাক্কালে চলে যাই? এইসব চরি ... ...
কার্যকারণ সম্পর্ক জিনিসটা বেশ মজার। ধোঁয়া দেখলেই আমরা আগুনের অস্তিত্ব বুঝি, ভোরে উঠে রাস্তাঘাট ভিজে দেখলে আমরা আগের রাতের বৃষ্টি হয়েছিল কিনা মনে করার চেষ্টা করি, এ সবই কার্যকারণ সম্পর্কেরই খেলা। এবারে হয়েছে কি যে এই কার্যকারণ সম্পর্কের আইডিয়াটাকে আরেকটু বিস্তৃত করে যদি পদার্থবিদ্যার আঙ্গিনায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে কি হবে? লাপ্লাস (যাঁর আবিষ্কৃত নানান সুত্র ও আঙ্কিক পদ্ধতি ছাত্রজীবনে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি করেছে) ঠিক এই কাজটাই করলেন, মোদ্যা কথায় তিনি যা বললেন, তা হল এই, সকল বস্তু ও জীব আদতে পরমা ... ...
যে কোনো শিক্ষকের ক্ষেত্রেই একথাগুলো প্রযোজ্য, বিশেষ করে প্রযোজ্য শ্রমজীবীর শিক্ষাব্রতীদের (আমার নিজের তো বটেই) সম্পর্কে।এই প্রশ্নগুলো/কথাগুলো মাথায় এল বলে লিখে ফেললাম। আপনাদের কী মনে হয় জানতে পারলে একটা আলোচনা করা যেতে পারে।১) আপনি কি বাচ্চাদের অপছন্দ করেন? যে বয়সের বাচ্চাদের আপনি পড়ান তাদের মধ্যে থাকার সময় আপনি কি আনন্দ পান? না কি বিরক্ত বোধ করেন?২) যে বিষয়টি আপনি পড়ান তা কি আপনার ভালো লাগে, না কি, ক্লান্তিকর মনে হয়? ‘বিষয়টি কেন পড়ান’, জিগ্যেস করলে আপনি এই উত্তরগুল ... ...
সময়টা ছিল ২০০৩-এর ডিসেম্বর অথবা ২০০৪-এর জানুয়ারি। আমি তখন একুশ এবং কলেজের ফাইনাল ইয়ার। কলেজ থেকে পিকনিকে গেলাম আমরা ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা দল বেঁধে। জায়গাটা ছিল বাটানগর ছাড়িয়ে গংগার ধারে এক মরে যাওয়া টাউনশিপ, যেখানে কোনো এক সময়ে একটা কারখানা ছিল এবং তাকে ঘিরে লোকালয়। এখন শীতকাল, এখানে সন্ধ্যে নেমে যায় সকাল হতে না হতেই, এবং সারা অঞ্চল জুড়ে একটা কালচে কুয়াশার চাদর।সেই মৃত জনপদ আসলে গোটা কারখানা জুড়েই। তার বড় রাস্তার পাশে বন্ধ কোয়ার্টারের সারি, তার ভাংগা দেওয়াল জুড়ে বর্ষার ড্যাম্প, নিঃঝুম পানে ... ...
(সতর্কীকরণঃ এই পর্বে দুর্ভিক্ষের বীভৎসতার গ্রাফিক বিবরণ রয়েছে।) ১৯৪৩-এর মে মাস নাগাদ রংপুর, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ, চিটাগং, নোয়াখালি থেকে অনাহারে মৃত্যুর খবর আসতে থাকল। 'বিপ্লবী' পত্রিকার ২৩ শে মে সংখ্যায় মেদিনীপুরে ৫টি অনাহারে মৃত্যু আর ৮টি ধান লুঠের খবর বের হল।জানানো হল-প্রতিদিন ছ' থেকে সাতশো মানুষ তমলুক থেকে রেলে চাপছে ওড়িশায় গিয়ে সস্তায় চাল কিনবে বলে। বহু মানুষ তাদের ঘটিবাটি বেচে দিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যাচ্ছে-স্রেফ দুমুঠো খেতে পাবে এই আশায়। পাবনা থেকে খবর এল ... ...
ছেলেবেলার কোন ইচ্ছে বড়বেলায় পূর্ণ হলে অনেক সময়েই তার স্বাদ খুব মুখরোচক হয়না। ছেলেবেলা থেকে ক্যাভিয়ারের নাম শুনে বড়বেলায় বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে যখন খেতে পেলাম, তখন মনে হল, "এ বাবা, এই ক্যাভিয়ার!" সবারই বোধহয় এরকম কোন-না-কোন অভিজ্ঞতা আছে। আকাঙ্খা আর পরিপূর্ণতার তফাত যোজনখানেক। এর উল্টো অভিজ্ঞতা বরং কম হয়। মানে যেখানে অভিজ্ঞতা আকাঙ্খাকে শুধু মিটিয়েছে তাইই নয়, তার ওপরে কিছু ফাউও দিয়েছে। এরকম একটা উল্টো অভিজ্ঞতা আমার জিম করবেট পড়া।ছেলেবেলায় বাড়িতে সত্যজিতের বহু-আলোচিত প্রচ্ছদওলা 'কু ... ...
এটা মূলত শাক্যর লেখাটির একটি প্রত্যুত্তর। ওখানে লিখলেও হত, কিন্তু একটা আলাদা লেখা হিসেবেই থাক। লেখাটির শিরোনাম এইভাবে দেওয়া যেত, 'কেন মুসলিম মৌলবাদকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত', কিন্তু সেটা ঠিক পছন্দ হলনা। মুসলিম মৌলবাদকে হঠাৎ আলাদা করে বেশি গুরুত্ব দিতে যাব কেন? তার যতটুকু পাওনা গুরুত্ব, সেটাই সে পাক। বেশিও না কমও না। তাই শিরোনামটা অন্যরকমই থাক। যদিও, আগেই বলেছি, এটা শাক্যর লেখারই উত্তর। শাক্যর লেখা, বস্তুত এর অনেকদিন আগে ... ...
গতকাল ঢাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে কাটা হয়েছে চাপাতি দিয়ে, কিছু লেখবার ইচ্ছে হোলো, কিন্তু হাজার একটা জট!কি লিখি? কেন লিখি? কিভাবে লিখি? অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু আমাকে বাকরুদ্ধ করেছে। মৃত্যু হয়তো এক চিরন্তন সত্য, কিন্তু সত্যের হাতুড়ি মাথায় পড়লে মাঝে মাঝে বড় লাগে! ভীষণ জোরে।এখন কেলো হোলো, কেন তিনি মারা গেলেন? আমাদের অভিব্যক্তি কি হওয়া উচিৎ? কেন হওয়া উচিৎ? কিভাবে হওয়া উচিৎ।নির্দ্বিধায় বলা যায় তিনি মারা গেছেন ধর্মের কারণে, নিতান্তই ধর্মের কারণে, এমন একটি ধর্ম যে নিজে আভ্যন্তরীন ... ...
কালী : একটি অনার্য অডিসি তব রূপং মহাকালো জগৎসংসারকারকঃ । মহাসংহারসময়ে কালঃ সর্ব্বং গ্রসিষ্যতি ।। ... ...
যখন কার্গিল যুদ্ধ বাঁধে আমি তখন সবে মাধ্যমিক দিয়েছি। কিন্তু মাঝেমাঝে এটা ওটার কারনে স্কুলে যাই। সেই সময় যুদ্ধের ফান্ড বিষয়ে স্কুলে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারী স্তর থেকে না হলেও সম্ভবত শিক্ষকেরা নিজেরাই এগিয়ে এসেছিলেন এবং ছাত্রদের কাছে আবেদন করেছিলেন ডোনেট করতে। আমি টাকা দিইনি। না, সেই বয়েসে দেশদ্রোহ যুদ্ধোন্মাদনা এসব ভারী ভারী চিন্তার বশবর্তী হইনি। দিইনি, কারণ বাবা যে কুড়ি বা তিরিশ টাকা দিয়েছিলেন সেটা আমি নিজেই সরিয়ে ফেলেছিলাম বিড়ি-সিগারেট খাব বলে। যে শিক্ষক ইনিশিয়েটিভটা নিয়ে ... ...
প্রতি বছর বিশ্বের কিছু নামী সংস্থা দুনিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশাল রেঙ্কিং তালিকা এনে উপস্থিত করেন। কোন বছরেই কোন তালিকাতেই সেখানে ভারতীয় সংঘরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ২০০-র মধ্যে আসে না। সেই নিয়ে এখানকার কিছু লোক একটু চিন্তা ব্যক্ত করেন। আর কেউ কেউ বলেন ওসব রেঙ্কিং আসলে পশ্চিমা দুনিয়ার চক্রান্ত, যাতে কিনা আমাদেরকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয় (তারা বেমালুম চেপে যান যে শ্রেষ্ঠ ২০০-র তালিকায় একাধিক এশীয় বিশ্ববিদ্যালয় থাকে, থাকে চীনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়)। যেসব পন্ডিত মনে কর ... ...
মহাগুণ মডার্ণ নামক হাউসিং সোসাইটির একজন বাসিন্দা আমিও হতে পারতাম। দু হাজার দশ সালের শেষদিকে প্রথম যখন এই হাউসিংটির বিজ্ঞাপন কাগজে বেরোয়, দাম, লোকেশন ইত্যাদি বিবেচনা করে আমরাও এতে ইনভেস্ট করি, এবং একটি সাড়ে চোদ্দশো স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাট বুক করি। এবড়োখেবড়ো জমির মধ্যে একেবারে কিছু-নেই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলতে আমি দেখেছি। নিয়মিত যেতাম উইকেন্ডে। ধূলো-রাবিশ আর মেশিনপত্তরের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ালো একের পর এক কুড়ি তলা, চব্বিশ তলা টাওয়ার। অসমান জমিতে চকচকে টাইল আনল সমান ভাব। মহাগ ... ...
গৌরচন্দ্রিকাইচ্ছে ছিল এই শীতের ছুটিতে গুজরাট যাওয়ার। আমেদাবাদ-গির-সোমনাথ-দিউ-দ্বারকা-গ্রেটার রন-মোধেরা -পাটন ছুঁয়ে লিটল রনের বুনো গাধা আর ফ্লেমিঙ্গোর ঝাঁক দু’চোখ ভরে দেখে ঘরে ফিরে আসা। কিন্তু বিধি বাম! কন্যা জোর আপত্তি জানাল যে সে কিছুতেই ওই সময়ে বেড়াতে যাবে না — তার নাকি কীসব পরীক্ষাটরীক্ষা আছে, সেসব নিয়ে সে চরম ব্যস্ত থাকবে। চিরকালের অসফল ছাত্র আমি, তাই তার সফলতার চেষ্টার বিরুদ্ধে সেভাবে মুখ ফুটে কিছু আর বলতে পারলাম না। অগত্যা মেয়ের মাকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে উঠে পড়ে লাগতেই হল। চলো ক ... ...
আজ দেখলাম মেঘে ঢাকা তারা। এমনিতে ঋত্বিক নিয়ে আমার কোন পুজোর বালাই নেই। তবু দেখতে গিয়ে খুঁতগুলোর থেকে ভালোদিকগুলোই বেশি করে চোখে পড়লো। আমার বেশ বিশ্বাসযোগ্য লাগলো এই বায়োপিক, যদি একে আদৌ বায়োপিক বলা যায়। শাশ্বতর অভিনয় ভালো লাগলো, কমলেশ্বরের পরিচালনা ও চিত্রনাট্য খুবই ভালো লাগলো, সঙ্গীত পরিচালনা (দেবজ্যোতি মিশ্র) খুব ঠিকঠাক। সবথেকে ভালো লাগলো পরিমিতিবোধ। যা পোর্ট্রেয়াল অফ ট্র্যাজেডিতে খুব দরকার।বাবার কাছে শুনেছি, ঋত্বিক ঘটক নানুবাবুর বাজারে বাংলা খেয়ে পড়ে থাকতেন। সম্ভবত মৃত্যুর আগে আগেই কোন এ ... ...
কলরব কথা ... ...