পিএফআই যে ঠিক কী 'দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র' করেছে, খবরের কাগজ তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পেলামনা। অবশ্য এখন গণতন্ত্রের কারবারই আলাদা। সেই উপকথার গপ্পে ছিল, 'তুই না, তোর বাপ জল ঘুলিয়েছিল', সেখান থেকে একটা জিনিস বোঝা যায়, যে, খুব বদ হলেও, রাজা-বাদশারা ইচ্ছে হলেই কারো মুন্ডু কেটে ফেলতে পারতেননা। অন্তত একটা ফালতু অভিযোগ খাড়া করতে হত। এখন দারুণ গণতন্ত্রে সেই চক্ষুলজ্জাও উঠে গেছে। এমন সব দুর্দান্ত আইন বেরিয়েছে, যাতে, সব গোপন। তদন্ত তো গোপন বটেই, বিচারও চুপি-চুপি, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগও গোপন। আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার ব্যাপারটা তো ক্রমে উঠেই যেতে চলেছে। খুব ইচ্ছে হলে করতেই পারেন, কেউ আটকাবেনা, কিন্তু আপনি কেন নির্দোষ সেটা বলবেন কীকরে, অভিযোগটাই তো জানা নেই। হয়তো বললেন, আমি তো চুরি করিনি, খুনও করিনি, কিন্তু তদন্তকারীদের খাতায় লেখা আছে, সুপ্রিম কোর্টের দিকে ট্যারা চোখে তাকিয়েছিলেন, ওইটাই অপরাধ। কিন্তু সেটা আপনাকে বলা যাবেনা। সে আপনি জানবেনই কীকরে, আর পাল্টা বলবেনই বা কীকরে। ... ...
প্রায় সকল অনার্য দেবতারাই এখন হিন্দু দেবতা। কিন্তু তাও দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক, দেবতাদের থেকে এখন সাধারণ মানুষের দূরত্ব বেড়ে উঠেছে বহুগুণ। আগে অনার্য মানুষরা দেবতাদের কাছে সরাসরি প্রার্থনা করতে পারতেন। কিন্তু এখন সে প্রার্থনার অনেক রীতি, অনেক পদ্ধতি, অনেক মন্ত্র, সে মন্ত্র আবার কোন আঞ্চলিক ভাষায় নয় – সে ভাষা দেবভাষা সংস্কৃত। আর এই সকল পূজার বিচিত্র বিধি-বিধান, বিভিন্ন দেব-দেবীর বিবিধ মন্ত্র যিনি জানেন, তিনিই পুরোহিত এবং তিনি অবশ্যই ব্রাহ্মণ। ... ...
সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার সম্পর্কের রহস্য এখন জানি। সন্তানের জন্য সবটুকু উজাড় করে দেওয়া যায়। হাত ধরে তাকে রাস্তা চেনানো, খানাখন্দ পার করে দেওয়া, তারপর বড় রাস্তায় তুলে দিয়ে দুগ্গা দুগ্গা করে তার যাত্রাকে সফলতায় পূর্ণতাপ্রাপ্তির নিরন্তর শুভকামনা জানিয়ে যাওয়া।আর কী বা করতে পারে কোনো বাবা মা? ... ...
পাকিস্তান আমলে বামপন্থি একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল, নাম ক্রান্তি। ক্রান্তি দল একবার টাঙ্গাইলে গান গাইতে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে হায়দার আকবর খান রনোকে বলে যে তারা মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে চায়। রনো সাহেব তাদের নিয়ে চলে যান সন্তোষে মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে। মাওলানাকে ঘিরে সবাই বসে আবার গান গাওয়া শুরু করে। মাওলানা মনোযোগ দিয়ে শুনে সব গুলা গান। পরে তিনি সবাইকে চা নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। গান নিয়েই আলোচনা চলতেছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে ভাসানি তাদের বলেন, গান তো ভালই, মুশকিল হচ্ছে এই গান বুঝতে হলে তো কৃষকের বিএ পাস করতে হবে আর না হয় রনোকে যেতে সব জায়গায় এই গানের অর্থ বুঝিয়ে দিতে! এই উদাহরণটা দিলাম কারণ আমাদের প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখনও একই অবস্থা। বিপ্লব করব কী। আমরা তো ভাষাই জানি না কৃষকের! প্রচুর প্রগতিশীল মানুষ, সৎ মানুষ, আক্ষরিক অর্থেই ভাল মানুষ, মানুষের ভাল চায় এমন মানুষ জানেই না সাধারণ মানুষের ভাষা! ঢাকা কেন্দ্রিক সব, এখন আরও বিপদ হচ্ছে অনলাইন বা ফেসবুক কেন্দ্রিক কাজকাম! মানুষ ভুলেই গেছে ফেসবুক বাংলাদেশ না। ফেসবুকের বাহিরে পুরো বাংলাদেশই পরে আছে, যাদের নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নাই। যারা এর বাহিরে কাজ করতে চায় তারা সাধারণ মানুষের ভাষাই বুঝে না, কাজ কী করবে? এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কুসংস্কারে খাচ্ছে, ধর্মান্ধতা খাচ্ছে, অশিক্ষায় খাচ্ছে, অপসংস্কৃতি খাচ্ছে। আমাদের ঢাকা কেন্দ্রিক নেতৃত্ব শাহবাগে মানব বন্ধন করে কর্তব্য পালন করছে। আমরা এদিকে হারিয়ে যাচ্ছি অতলে। ... ...
সেকাল থেকে আজ পর্যন্ত, তীর্থে-তীর্থে এবং কলকাতা বা যে কোন বড়ো শহরের রত্নব্যবসায়ীদের চেম্বারে প্রায়ই স্বঘোষিত সিদ্ধ সাধকদের দেখা যায়। তাঁদের অনেকে আবার স্বর্ণপদক প্রাপ্ত – এই পদক কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে জানা যায়না। তবে এঁরা বশীকরণ করতে পারেন, আপনাকে যে কোন কাজে সার্থক করে তুলতে পারেন। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল বৈদেশিক আক্রমণের সময় এঁদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যোদ্ধাদেরই সীমান্তে লড়তে হয়ে। তাঁরা বশিত্ব দিয়ে বিপক্ষ সৈন্য বা সেনাপতিদের বশ করে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতেন, কিন্তু কোনদিন করেননি। অথবা সাধারণ আকৃতির সাধক মহিমা সিদ্ধি দিয়ে হঠাৎ বিশাল শরীর বানিয়ে, গরিমা সিদ্ধিতে তাঁদের পায়ের তলায় পিষে একজন শত্রুকেও বিনাশ করতে পেরেছেন - এমন শোনা যায় না। ... ...
কত গল্প করতো বুড়ো -- ঘুড়ি তো ছিল ছুতো ! মেটেবুরুজ-কলুটোলা - রাজাবাজার - গ্যাস স্ট্রীটের দোকানগুলোর মাঞ্জা ছিল লা-জবাব কিন্তু কোন কথা জিজ্ঞেস করলে জবাব পাওয়া যেত না ! জনাবের মুখভর্তি যে পান -জর্দা- সূর্তি ! ... ...
প্রিয় মিশ্রাজি (পরিচালক – দীপক কুমার মিশ্রা) … এই যে প্রশ্নপত্র হাতে আমাদের দাঁড় করিয়ে গেলেন আশাকরি তার উত্তর শীঘ্রই পাব পঞ্চায়েত ৩ এ। ততদিন মনের মনিকোঠায় লুকোনো থাক ফুলেরা গ্রামের গল্পরা … ... ...
এরপর চলল আফজলের কাঁচি। এক এক পার্ট করে কাটছে আর মাঝে মধ্যে ক্লিপ গুঁজে দিচ্ছে মাথায়, সেও এক বিশাল কায়দার ক্লিপ একেবারে কাঠঠোকরার ঠোঁটের মত ব্যাঁকানো। এরপর গানের তালে তালে চুলে কাঁচির আওয়াজ আরও জোরে হলো। ... ...
তিনি হাতে ডু-অ্যাণ্ড-ডোন্ট লিস্ট ধরিয়ে দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম ‘ডু’ তাতে বিশেষ কিছু নেই, কেবল ‘ডোন্ট’ আর ‘ডোন্ট’। ১) কম করে ছ-মাসের আগে ঘর ছাড়া চলবে না, ২) ঘরে বান্ধবী টান্ধবী আসা চলবে না, ৩) ভোজন চলতে পারে, তবে পান চলবে না, ৪) বেশি রাত অবধি আলো জ্বালিয়ে রাখা চলবে না, ৫) ভাড়া তিন তারিখের বেশি বাকি রাখা চলবে না, ৬) ১১-টার বেশি রাত করে ঘরে ফেরা চলবে না, ৭) ঘরের দেওয়ালে পেরেক টেরেক পোঁতা চলবে না, ৮) ইত্যাদি আরও অনেক কিছু চলবে না... ... ...
এই ডবল ডোজের গোবর খেয়ে মহাভারতের শুদ্ধতা না হয় ফিরিয়ে আনা গেল, কিন্তু বাংলার পোড়া পেটের শুদ্ধতা বাঁচে কি করে? অফিসের ক্যান্টিনের খাবার টিফিন হিসেবে চলতে পারে, কিন্তু কালা ছোলে (আলকাতরার মধ্যে চাট্টি সেদ্ধ ছোলা ফেলে দিলে যেমন দেখায়) দিয়ে লাঞ্চ? অনেকে যেমন খায়, তেমনি পেপসি বা কোকাকোলা সহযোগে? নাঃ, অমন সাঙ্ঘাতিক ফিউশন আমার চলবে না। অতএব তিন কোর্সের লাঞ্চ চালু করলাম – ভাত, ডাল আর অমলেট। আমার আর তথাগতর সঙ্গেই এই অফিসে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার এক বাঙালি – দাশগুপ্ত। কালা ছোলে দিয়ে লাঞ্চ করতে বিরক্তি প্রকাশ করায় তাঁকে আমার মেনু সাজেস্ট করেছিলাম। তিনি নাক সিঁটকে বললেন, “অমলেট! সেটা তো লোকে ব্রেকফাস্টে খায়”। ... ...
গোদার নিয়ে বঙ্গীয় সিনেফিলদের আকুল হবার কোনো কারণ নেই, কারণ গোদার আমাদের রক্তে, একদম হিমোগ্লোবিনে ঢুকে ছানা কেটে দিয়েছেন। মারাদোনার বাঁ পা যেমন আমাদেরই বাঁ পা, চিনের চাউমিন যেমন আমাদেরই চাউমিন, বিলেতের কোহিনুর যেমন আমাদেরই কোহিনুর, গোদার তেমনই আমাদেরই ফরাসি আতর। প্যারিসে নাকি প্রবাদ আছে, "জনপ্রিয়তায় হাঁদাভোদার, পরেই আছেন জাঁ লুক গোদার"। গোদার আমাদের যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বৃদ্ধাবাস, গোদার আমাদের আরামের পান্তাভাত, গোদার আমাদের বাড়ি ফেরা। গোদারের বাড়িই আমাদের বাড়ি, গোদার বাড়ি। ... ...
তাঁরা দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ। চা খেতে খেতে তাদেরই এক জন বললেন, "ইহার পূর্বে কি কোনও কেলেংকারি ঘটে নাই এই দেশে ? রাজনীতিকরা কি অভিযুক্ত হন নাই পূর্বে ? সে সকল লইয়া প্রবল তদন্ত হইয়াছে এবং তাহা যে অতি বৃহৎ গ্রিন ব্যানানা ব্যতীত অন্য কিছু প্রসব করে নাই, তাহা বুঝিতে চিন্তন বৈঠক নিষ্প্রয়োজন। অতয়েব, হে অর্বাচীন, তুমি নিশ্চিন্তে পানভোজনে নিরত থাক এবং বাহুমূলকে বাদ্যযন্ত্র রূপে ব্যবহার কর।’’ ... ...
কিভ নগরীর উত্তর পশ্চিমে একটি শহরতলির নাম ইরপিন । সেখান থেকে আর পাঁচ কিলোমিটার গেলেই বুচা । আমরা জানি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকে এই অঞ্চলে রাশিয়ান সৈন্যরা নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপরে অকথ্য অত্যাচার, বলাৎকার এবং লুণ্ঠন চালিয়েছে । বুচার রাজপথ ভরে গেছে শবে। মহামান্য লাভরভ বলেছেন ইউক্রেনের মানুষ নিজেদের লোককে মেরে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে । আমাদের সৈন্য ভদ্র শিক্ষিত মার্জিত। রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে এ আরেকটি পশ্চিমি চক্রান্ত।রাশিয়ানরা এই রণক্ষেত্র ত্যাগ করে আজ অনেকটা পুব দিকে চলে গেছে। রেখে গেছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী কালে ইউরোপের মাঝে অনুষ্ঠিত ক্রুরতম ধ্বংস ও হত্যালীলার ইতিহাস। ... ...
এটা ছোটদের গল্প নয়। এটা একজন ছোট্ট মানুষের গল্প। নাম তার সাবু। সাবুকে আমরা এই ৫ পর্বের খুদে গল্পে খুঁজে পাই বয়ঃসন্ধির গোড়ায়। তার পৃথিবী বদলে যেতে দেখি আকস্মিক পরিবর্তনের ঝড়ে। তার কিশোর হৃদয়ে জাগতে দেখি নতুন অনুভুতি - হারানোর নীরব বেদনা, হেরে যাওয়ার ভয়, ক্ষোভ, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। কিন্তু সব ছাড়িয়ে দেখিয়ে সাবুর কোমল মনে জীবনের প্রতি ভালবাসা। ... ...
আজকে শিক্ষক দিবসে ... ...
আন্দালীব কত বড় কবি সেই হিসেব কোনদিন করতে বসি নি – কারণ তার থেকেও বড় অজুহাত আমার কাছে ছিল তার কবিতার নিয়মিত পাঠক হবার। ভাবতাম মাঝে মাঝেই – আহা, এমন যদি লিখতে পারতাম! সেই ছিল আমার কাছে আমাদের সেই সময়ের কবিতার ‘কমলকুমার’ যেন। তুলনাটা হয়ত ক্লীশে হয়ে গেল, কিন্তু এমন সাযুজ্যের তুলনা আর মাথায় আসছে না এই মুহুর্তে। বলতে দ্বিধা নেই যে এমন সময়ও গেছে যে আন্দালীবের কোন কবিতা প্রথমবার পড়ছি, কেবল কবিতা পড়ার ঘোরেই – সে এক প্রবল আকর্ষণ, কত অজানা শব্দের ঝঙকার, কত চেনা শব্দের অচেনা প্রয়োগ – বিমুগ্ধ করে রাখত আমাকে। ... ...
কবিতা কৃষ্ণন নাকি টুইটে লিখেছেন, "সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল একনায়কতান্ত্রিক, সংসদীয় গণতন্ত্রের চেয়ে ঢের খারাপ"। আমি টুইটার দেখিনা। হিন্দু তে দেখলাম ( **লিংক লেখার নিচে) । টুইটারের আড়াই লাইনে এইসব তত্ত্ব লেখার কী মানে জানিনা, অবশ্য গোটা পৃথিবীতেই রাজনীতি এখন রেটোরিক সর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব কিছু দেখিওনা, উত্তরও দিইনা। কিন্তু এইটা কবিতা কৃষ্ণন বলেই লিখতে হচ্ছে, কারণ, "প্রগতিশীল"রা একরকম করে আদর্শ পতাকাবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই কবিতাকে উপস্থাপন করছেন। ফলে তাঁর বক্তব্যের কিছু ওজন আছে। এবং এটা ঠিক প্রেক্ষিতহীনভাবে একটা টুইট তুলে আনা নয়। হিন্দুতে দেখলাম, একই লাইনে কিছু কথাও বলেছেন। যেমন সোভিয়েত মডেলকে বিশ্বের খারাপতম একনায়কতান্ত্রিক মডেল হিসেবে দেখতে হবে। ... ...