মুখের ওপর দিনের প্রথম রোদ এসে পড়ল। অনির্দেশকে খিঁচিয়ে উঠল কাঠবেড়া৯। এসময়টায় বড়ো বিরক্ত লাগে। চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না। তবু রাজ্যের আলো মাখামাখি হয়ে যায় চোখে। আরও একটুক্ষণ গড়াতে ইচ্ছে করে ঠাণ্ডায়। এ সময়েই সব শান্তি খানখান করে ডেকে ওঠে বাজখাঁই কাক। ঘাপটি মেরে ঘুমিয়ে থাকার আর উপায় থাকে না। ... ...
সে এক গহীন গন্ডগ্রামের দেশ। সেই দেশে একাকী এক বলদ মাঠে ঘাস খাইয়া সুখে দিনাতিপাত করিতেছিল। তাহার কোন সঙ্গীসাথী ছিল না। বিশাল প্রান্তরে একা একা চরে বেড়াত আর আর মনের আনন্দে হাম্বা হাম্বা করিত। প্রান্তরের পাশে একটা জঙ্গলে একটা হরিনী বাস করতো। হরিনীটা প্রান্তরের ওপাশের জঙ্গলের এক হরিনকে ভালোবাসতো। বহুদুর থেকে তাকিয়ে হরিনের সন্ধান করতো। কিন্তু অতদুরের পথ একা যাবার সাহস তার হয় না সহসা। ... ...
মানে সেই বেদ থেকে মহাভারত পর্যন্ত, মাঝে খান দশেক উপনিষদ ছুঁয়ে, এই হচ্ছে "পুরা ভারতে"র সময়সীমা। তো, তিন ভাগে লিখি। প্রথম পর্ব যেখানে পশু = জন্তু । কোনো প্যাঁচ পয়জার নেই। সেকেন্ড পর্বে লিখি সেই চেনা জন্তুদের কথা যারা বাহন হিসাবে বা অন্য কোনো ভাবে ঠাঁই পেয়েছে দেবলোকে, দেবতাদের বাহন বা স্রেফ দেবতা হিসাবেই। আর থার্ড ক্যাটেগরিতে মিথের পশু, যাদের সত্যিই কোনো অস্তিত্ব নেই, সেই সব ফ্যান্টাসির জীবেদের কথা। ... ...
বাবার ঠাকুর্দা ছিলেন বৃটিশ আমলের পুলিশ অফিসার। বাড়িতে ভেট আসতো নানান ধরণের রং-বেরঙের পাখি। খাঁচায় কিচিরমিচির করতো তারা রোস্ট হওয়ার আগে অবধি- সে আমলে ক্যামেরার গৃহস্থালী প্রচলন থাকলে এসবের ইন্টারেস্টিং ছবি পেতাম। তো পার্টিশন পেরিয়ে জন্মগত অর্জন থেকে আর সব বাদ পড়ে শুধু পাঁঠা-মুর্গী আর জলচর প্রাণী, শুনতুম বাড়ির বাগানটাতেই এককালে লোকজন ঝুড়ি চাপা দিয়ে খরগোশ ধরতো খেতো। ... ...
বাংলা গানে বহুদিন ধরে পাখী ডেকেছে। কুহু কুহু কোয়েলিয়া, পিউ পিউ পাপিয়া, চোখ গেল, চোখে গেল বলে চোখ-গেল পাখী। সবিতা চৌধুরী 'বউ-কথা-কও' বলে পাখীকে ডাকতে বারণ করেছেন। এমনকি আরতি মুখোপাধ্যায় বেহায়া পাখীকে অন্যত্র গিয়ে কথাবার্তা বলতে অনুরোধ করেছেন। এছাড়া বদ বা বোবা ময়না পাখীর আস্ত কলোনিই তো বাংলা গান। তাকে "কৃষ্ণরাধে" বলানোর চেষ্টা হয়েছে, সে কেন কার বিরহে যে একেলা তাই নিয়ে গভীর গবেষণা হয়েছে আর শেষ পর্যন্ত কেন যে সে কথা কয়না এই ভেবে লতা মঙ্গেশকর হাহুতাশ করেছেন। ... ...
অসংখ্য গ্রহ হয়তো আছে যেখানে উন্নত বুদ্ধিমান প্রাণী থাকতে পারে। কিন্তু সাগর থাকার কারণে বলা যায় পৃথিবী এমন অনেক জগতের মধ্যেও দুর্লভ একটি গ্রহ। প্রাণের অনুকূল পরিস্থিতির এই জলজ পরিবেশে নানা রকমের বুদ্ধিমান প্রজাতির বাস। তাঁদের অনেকেরই হয়তোবা আঁকড়ে ধরার জন্য আটটি উপাঙ্গ আছে; অন্যরা হয়তো শরীরের কালো ও উজ্জ¦ল দাগের বিভিন্ন জটিল প্যাটার্নের সুবাদে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে, এমনকি এক ধরনের চতুর জীবদের কথাও বলা যায় যারা স্থলভূমি থেকে কাঠের অথবা ধাতুর নৌযানে মহাসাগরে হানা দেয়। ... ...
বাগেরহাটের মংলা উপজেলার চিলার রজব আলী শেখ ছিলেন কৃষক। আটষট্টি বছরের জীবনে যিনি চাষের কাজ ছাড়া কিছুই শেখেননি। মাটি ছাড়া মানুষটি আর কোথাও কাজ করেননি। বীজ ছড়িয়েছেন। চারা পুতেছেন। জমি নিড়িয়েছেন। ধান কেটেছেন। ফসল বয়ে নিয়ে গোলাজাত করেছেন। মাটিই দিতো সারা বছরের খোরাক। নিজের সামান্য জমি ছিল। সময়ে-অসময়ে তিনি অন্যের জমিতে শ্রম দিতেন আবার ভাগে চাষ করতেন। আজ তাঁর সব গেছে। কোথায় জন (শ্রম) দেবেন। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া দেহে তিনি চোখের সামনে পরিবর্তনগুলো দেখেন, আর হা-হুতাশ করেন। ... ...
নাটক বা সিনেমায় অভিনেতাদের ছদ্মবেশ নিতে কে না দেখেছে। আর অপরাধীদের ধরতে শার্লক হোমসের ছদ্মবেশ তো ভুবন বিখ্যাত। ঘাগু অপরাধীর কথা বাদই দিলাম, তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ডা. ওয়াটসনও তখন তাকে চিনতে পারেন না! এতো গেল নাটক, সিনেমা আর গল্পের বইয়ের জগতের কথা। এদিকে যুদ্ধের সময়ে শত্রু পক্ষের কাছ থেকে নিজেদের আড়াল করতে সেনাবাহিনীরা ছদ্মবেশ নেয়, সে খবরও আশাকরি তোমাদের অজানা নেই। কিন্তু মানুষ ছাড়াও অনেক জীবজন্তুও যে ছদ্মবেশ নেয় সে খবর কী জানা আছে! ... ...
'খা খা বখ্যিলারে কাঁচা ধইরা খা/ তর শত্তুর রে খা তর সতীনরে খা...."। লোক পালা 'অরূণ বরুণ কিরণ মালা'র মত সাপ নিয়ে এমন কাহিনী ও গানের অভাব নেই বাঙালীর জীবনে। রাস্তার ধারে জমে ওঠা কোন মজমায় কান পাতলেই আজো শোনা যায় সর্প বশীকরণের কল্পিত যাদু ভরা দেশ "কামরূপ কামাখ্যা' কে নিয়ে ক্যানভাসারদের না না গাল গল্প। মনসা দেবী ও তার ভক্ত সর্পকূলের কথা ওরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে উপস্থাপন করে। ... ...
সুনামি ও বিপন্নতা আজ সমার্থক। সুনামি এক স্বেচ্ছাচারী কল্লোল, এক আন্তর্জাতিক সমুদ্র সন্ত্রাস। তামিলনাড়ু ও আন্দামান দ্বীপবাসীরা বোধহয় এখনও বুঝে উঠতে পারেনি কত ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী এই ক্ষয়ক্ষতি। স্বজন হারানো বাদ দিলেও, কৃষিজমি ও ভুগর্ভস্থ জল লোনা হয়ে যাওয়াতে বেশ কয়েক বছর ধরে আন্দামানে পানীয় জলের এবং চাষের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের উপকূল ভূমধ্য-আশ্রিত বলে হয়তো প্রাকৃতিক কারণেই আমরা সুনামি পীড়িত হইনি। ... ...
ব্লাক মামবা নামের এক প্রকার সাপ আছে আফ্রিকাতে। সে বড় ভয়ঙ্কর সাপ। সে সাপ ফোঁসফাঁস করে কিনা জানিনা। করলে তো ভালই, টের পেয়ে মানে মানে তার পথ ছেড়ে কেটে পড়া যায়। কিন্তু তা না হলে আর রক্ষে থাকেনা। সে সাপের এক ছোবলে চটজলদি কেষ্টপ্রাপ্তি নিশ্চিত! চটজলদি মানে একটুও দেরি করে নয়, কখনো কখনো এমনকি মিনিট বিশেকের মধ্যেই অক্কা। সে সাপের আরো কারামত আছে। সাপেদের দৌড় প্রতিযোগিতা হলে উসাইন বোল্টের খেতাবটা জুটতো ব্লাক মামবারই। কারণ এরা সাপেদের মধ্যে সবচাইতে দ্রুত ছুটতে পারে। ... ...
আমাদের রুপুনুনি যাওয়ার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো একটা দৈত্য পিপীলিকাভূককে পাকড়াও করা, কারণ শুনেছিলুম এগুলোকে গায়ানার জঙ্গলের থেকে খোলা মাঠে ধরাটা অপেক্ষাকৃত সহজ। তাই কারানাম্বো পৌঁছোবার পর তিন দিন ধরে আমরা পিঁপড়েখোর ছাড়া আর কিছু নিয়েই হ্যাজাইনি; শেষ অবধি ম্যাকটার্ক ভরসা দিলো যে সে ব্যাপারটা নিয়ে দেখছে। সেইমতো একদিন সকালে ব্রেকফাস্টের পরপর একটি বেঁটেখাটো আমেরিন্ডিয়ানের আচমকা উদয় হলো, এদের চিরাচরিত নি:শব্দ ভঙ্গীতে। লোকটার ব্রোঞ্জরঙা মঙ্গোলীয় মুখের কালো, চেরা চোখদুটোয় একটা লাজুক চাউনি না থাকলে নির্ঘাৎ শয়তান বলে মনে হতো। ... ...
'এইইইইইই পাখি নিবেন, পাখি। কথা বলা পাখিইইইইই।' ঝন্টুদের উঠানে মার্বেল খেলছিল রাশেদ। পাখিওয়ালার ডাক শুনেই কান খাড়া হয়ে যায়। ভুলে যায় নিজের চালের কথা। পাখিওয়ালার ডাক কোন দিক আসছে, তা বোঝার চেষ্টা করে। এরপর দৌড়ে বড় রাস্তায় গেলে পাখিওয়ালার সামনে পড়ে যায়। পাখিওয়ালার খাঁচায় কত পাখি! ময়না, চন্দনা, মুনিয়া, ডাহুক। 'কোন পাখি কথা বলে।' 'এই যে খোকা, ময়না পাখি।' ... ...
ঘোড়াটা ছুটছে। অশ্বমেধ যজ্ঞ। বছরকাল ফুরালেই অপেক্ষায় মৃত্যু - বিত্তের জন্য, শৌর্যের জন্য, বীর্যের জন্য হতে হবে বলি। তারপরও কী মধুর স্বাধীনতা! সময়ের দড়ি দিয়ে কষে বাঁধা পবিত্র স্বাধীনতা। ... ...
বুড়িটা দু'দিন পরপরই আসে। ক্ষুধা আর রোগে শুকিয়ে যাওয়া চেহারা, পিঠটা কুঁজো। পরনে একটি শতছিন্ন সাদা শাড়ি। ভিক্ষা চায় প্রথম, তারপর বলে, - আম্মাগো, মুরগির সালুন খাইতে কইলজা পোড়ে! দিবেন নি আম্মা? নাই বললে দ্বিতীয়বার আর চায় না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটতে শুরু করে। গেট অবধি গিয়ে পেছন ফিরে তাকায় একবার। ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায় বাইরে। তারপর পাশের বাড়িতে একই চাওয়া- - আম্মাগো, মুরগির সালুন খাইতে কইলজা পোড়ে! দিবেন নি আম্মা? ... ...
প্রজাপতি প্রজাপতি প্রজাপতি...সাদা কাগজের উপর পরপর তিনবার শব্দগুলো লিখল অয়ন। এমনভাবে, যেন আরেকবার লিখলেই সেও ডানা মেলে উড়ে চলে যাবে। কোথায় উড়ে যাবে? শুধু উড়েই যদি যেতে হয় তাহলে প্রজাপতি কেন? অন্য যে কোন পাখি হলেই তো আরো অনেক অনেক বেশী দূরে পাড়ি দেওয়া যেত। কিন্তু না। এই মুহুর্তে প্রজাপতিই হতে ইচ্ছে করছে। তার ঘরের জানালায় একটি স্বচ্ছ কাঁচ। সেই কাঁচের ওপর ভেতরের দিকে বসে আছে প্রজাপতিটা। উড়ে যাচ্ছে না। ডানা মেলে দিয়েছে। ... ...
বিড়াল দুই প্রকার। গৃহপালিত ও বন্য। যে সকল বিড়াল ঘরে থাকে তারা গৃহপালিত। আর যারা বনে থাকে তাদের বলে বনবিড়াল। গৃহপালিত ও বন্য উভয় বিড়ালই গুম্ফশোভিত। কবি বলে গেছেন শিকারী বিড়াল মাত্রই গোঁফ দিয়ে চেনা যায়। এর থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় সকল বিড়ালই স্বভাবগতভাবে শিকারী। ... ...
বলার আগে অনেকবার ভাবলাম এসব বলা পলিটিকালি কারেক্ট হবে কিনা? কিন্তু যা দেখলাম, বুঝলাম তার একটা খতিয়ান না দিলেই নয়, আর আজকের যুগে তথ্য সেন্সর করা যায় না, জানেনই তো নেটে সব মেলে। হয় আমি, নয়ত অন্য কেউ, তাহলে আমিই নয় কেন? বলেই দিই, সিংহি মশাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। হ্যাঁ হ্যাঁ মা দূর্গার বাহন সিংহি মশাইয়ের কথাই বলছি। গত একদিন হল ওনাকে কেউ দেখে নি। পুজোর ঠিক আগে আগে এরকম একটা ঘটনায় তুমুল শোরগোল পরে গেছে। সবাই কানাঘুষো করছে, মা দূর্গার মুখটা আগুনের মতন টকটকে লাল। ... ...
কাঠবিড়া৯ কাঠবিড়া৯! সেই ছোট্টটি থেকে শুনে শুনে বড় হ'লাম ছোট্ট তোমার ইয়াব্বড় খাইয়ের কথা! কিন্তু কোনোদিন তোমার সাথে কথা আর হ'লো না। কোনো ইনডোর ডিম-লাইটে কি আউটডোর রোদের সাইটে, কোনো দুপুরেই দুনিয়ার হাঁড়ি উপুড় করা তোমার বুফে খাওয়াদাওয়ারও দেখা হ'লো না কোনো সিন কোনো দিন। ... ...
বড় মনমরা হয়ে আছি। ছেলেটার জন্য কিছুতেই পাত্রী খুঁজে পাচ্ছি না। ছেলে আমার ছোট থেকেই লম্বাচওড়া, স্মার্ট, খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ান, বিশেষ করে হাই জাম্পে। যখন তখন দুই মিটার উঁচু লাফ দিতে পারত। কিন্তু আমাদের সমাজে আবার মেয়েদের বড় খাঁই। ওনারা সহজে কাউকে পাত্তা দেন না। ... ...