অনেকে নাকি রাতের বেলা পুরনো বাড়িটার ভেতর থেকে অদ্ভুত আওয়াজ শুনেছে। মড়ার খুলির ভেতরে টকটকা রক্ত নিয়ে নাকি ফকির পান করে। এইসব গল্প ছড়িয়ে পড়াতে এখন মাতবর ইদ্রিস আলীও বিব্রত বোধ করেন। অনেকে তার কাছে অভিযোগ নিয়ে গেছে। তাদের ধারণা এই লোক গ্রামে থাকলে গ্রামের ক্ষতি হবে। এর আসল নাম পরিচয়, কোথা থেকে এসেছে, কেউ জানে না। কী তার উদ্দেশ্য এখানে তাও বুঝা যাচ্ছে না। ইদ্রিস আলী অভিযোগের যৌক্তিকতা বুঝতে পারেন কিন্তু ফকিরকে চলে যাবার কথাও বলতে পারেন না। তার ভয় হয়। ... ...
- 'মাস্টার, সালা বদ রক্তে ভরে গেল শরীলটা, চুলকানি খুব, সাদা পুঁজ জমে রোজ, গেলে দিয়ে সুখ পাই খুব...কিরিম টিরিম দে কিছু ...' বিদিগুচ্ছিরি মার্কা হাসে। রাগ করি না আজকাল, দিয়ে দিই, দিলেও লাভ হয় না। এর আগে হাজারবার দিয়েছি, নিওষ্পরিন, মারকিউড়োক্রম সব। মাখেই না ... কেউ বলে মাস্টারের দরদ বেশি, কেউ আবার ওর বুকের ছেঁড়া বোতামে আমার চোখের দোষ খোঁজে। আমি গান্ডু সারাজীবন, চোখে কাফের, আমি কি খুঁজি ... কি যে খুঁজি ...কে জানে? ... ...
সুশান্তর লাইন ছিল এগারো জনের পরে। বারো নম্বর। ও সবজি শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা মাঝে মধ্যে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছিলো আর সবজিওয়ালার সাথে রিপিট করছিলো “আপনার পঁচাশি আর এককেজি কাঁচা আম... একশো পাঁচ”। আর শেষে একটা করে “..হুঁ” মনে হচ্ছিলো পবিত্র মন্ত্রপাঠ চলছে। ‘হর পাপং হর ক্লেশং হর শোকং হরাসুখম্ | হর রোগং হর ক্ষোভং হর মারীং হরপ্রিয়ে।‘ ওদিকে ইলেকট্রনিক ওয়েট মেশিনের সামনে ‘পুরোহিত’, এদিকে সুশান্ত। হাতে শুধু ছেঁড়া ফুলের বদলে ছেঁড়া ব্যাগ। ছুঁড়ে না দ্যায়। ... ...
তালাশ মাহমুদ বললেন, বেশি বুজরুকি দেখালে, আর বেশি বললেই যুক্তি শক্ত হয় না। আপনার ম্যাডামের সব কেচ্ছাকাহিনী শেষ করে দেব সামনের লেখায়। তাই সময় লাগছে। এর মধ্যে এখন আবার আরেক জরুরী কাজে যেতে হচ্ছে। সেখানে ক'দিন থাকতে হবে, পরিস্থিতি কেমন হবে, কীরকম সময় পাব জানি না। যদি সময় পাই তাহলে ওখানে বসেই লেখা শেষ করে আপনাকে পাঠিয়ে দেব। চিন্তার কিছু নেই। একশো ভাগ নিশ্চিত থাকুন, আমি জিতবই। কারণ আমার আগ্রহ সত্যে। সবুর খান বললেন, তাহলে আগে কিছু বলুন, দুয়েকটা পয়েন্ট। তালাশ মাহমুদ বিরক্ত স্বরে বললেন, কী আর বলব, এসব রেট্রোফিটিং, কিছু জেনারালাইজড অনুমান করে, তারপর যেটা মিলে ওইটারেই আপনারা সবাই মিলে সামনে আনেন। এসব চালাকি তো নতুন না। ... ...
যৌন আধিপত্য নানা স্তরীয়। কে যে কাকে সুবিধে দেয় আর কে সুবিধে নেয়, বোঝা দায় বাইরে থেকে। বিস্তর ন্যাকাপনা করে, ক্লিভেজ বা কেশরাশি ব্যবহার করে কাজ হাসিল করা মেয়েদের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। পোশাক যখন স্টাইল স্টেটমেন্ট তখন তার মাহাত্ম্য আলাদা। তখন বিকিনি সুন্দর। স্প্যাগেটি টপ সুন্দর। হটপ্যান্ট সুন্দর। আবার আপাদমস্তক ঢাকা মধুবালাও সুন্দর। কিন্তু কোনটা স্টাইল স্টেটমেন্ট আর কোনটা সিডাকশন স্টেটমেন্ট সেটা তো বুঝতে হবে। ... ...
রাজামশাইয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মহামন্ত্রীমশাই বললেন, “আপনার রাজত্বকালের পনের বছর পূর্ণ হতে চলল। প্রথম দুবছরের কিছু গৌণ বিদ্রোহ এবং দু-একটা ছোটখাটো যুদ্ধের পর এই রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছে। অতএব অস্ত্র-শস্ত্রের কোন ঝনৎকার বহুদিন শোনা যায়নি। অসিবল্লভের সমস্যাটা ঘটছে সেখানেই। অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবহার যদি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, অস্ত্র-শস্ত্রের চাহিদা যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণের কোন প্রয়োজনই থাকছে না। অসিবল্লভের কথায় ওর অস্ত্রনির্মাণশালায় যে ভাণ্ডারগুলিতে ও নির্মিত অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষণ করে, সেগুলিতে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। উপরন্তু, সংরক্ষিত অস্ত্রশস্ত্রগুলির অনেকাংশই দীর্ঘ অব্যবহারে জং ধরে এবং ধুলো পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে”। রাজামশাই চিন্তিত মুখে বললেন, “হুঁ। তার মানে, আপনি কি বলতে চাইছেন, রাজ্যের পক্ষে নিরঙ্কুশ শান্তিও কাম্য নয়”? ... ...
হ্যাঁ শোন, বলে সে, যাবার আগে তোমাকে আর একটা অনুরোধ করব। এই অনুরোধটা সুধাকান্তদাদার পক্ষ থেকে। সুধাকান্তদাদা বলেছেন, গত-বছর সতেরই ফেব্রুয়ারিতে তুমি নাকি রেডিওতে বাংলা ছন্দ নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করেছিলে। রেডিওর ভাষায়, কথিকা। ওঁর ভাষাতেই বলি, উনি বলেছেন, অনবদ্য। বলেছেন, এই কথিকা শুনে উনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না তুমি কীভাবে সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছ, কবিতা তোমাকে ছেড়ে গেছে! সুধাকান্তদাদা আমাকে বিশেষ করে তোমাকে বলতে বলে দিয়েছেন যে, তুমি যে শুধু কবিতা লেখা চালিয়েই যাবে তা-ই নয়, রেডিওতে তুমি কবিতা রচনার একটা শিক্ষাবাসরও চালু করতে পার। তুমি ইচ্ছে প্রকাশ করলে রেডিওর কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই রাজি হবে। শুধু যে নতুন কবির দল আর কবিতা লেখায় উৎসাহীরাই এতে উপকৃত হবে তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠিত অনেক কবিরও তুমি তাতে কৃতজ্ঞতাভাজন হবে। ... ...
অনেক দূরের জিনিষ দেখতে পাওয়া আর তার ফলে যে সব তথ্য যোগাড় হল তাই দিয়ে অতীতের বিভিন্ন সম্ভাব্য ছবি ফুটিয়ে তোলা, আধুনিক মহাকাশ গবেষণা আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কত রকমের তরঙ্গের ব্যবহার, কত রকমের দূরবীন, কত মাপজোক। অনেকে নিজের দরকারে বা শখে একনলা কি দোনলা দূরবীন কেনেন, ব্যবহার করেন, সাজিয়ে রাখেন। আমি এ পর্যন্ত যে দু-তিনটি কিনেছি, নিতান্ত মামুলি, খেলনার বেশি মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়। হারিয়েও গেছে তারা। তবে অন্য একটি দূরবীন মাঝে মাঝে ব্যবহার করি। স্মৃতির দূরবীন, ফেলে আসা জীবনের ছবি দেখতে। কতটা অতীত দেখতে পাওয়া যায়? যাচ্ছে? বেশীর ভাগ ছবি-ই ফোকাসের বাইরে। তবু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে, যেন ডিজিটাইজ করে, পিক্সেল জুড়ে জুড়ে রেন্ডারিং করে নানা ভাঙ্গাচোরা টুকরো থেকে এক একটা ছবি বার করে আনা। যা ঘটেছিল তার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া, যতটা পারা গেল। ... ...
রামজন্মভূমি ন্যাস কমিটি গড়ে উঠল। মাথায় রইলেন রামচন্দ্র পরমহংস। পিছনে অশোক সিঙ্ঘল, প্রবীণ তোগাড়িয়া। আর তাঁদের প্রধান মুখ তখন আদবানি। বাজপেয়ীকে ছাপিয়ে উঠতে চাইছেন। এরমধ্যেই ধুয়ো উঠল বোফর্স কেলেঙ্কারির । রাজীব গান্ধির অর্থমন্ত্রী মান্ডির রাজা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে এলেন। বের হলেন আরিফ মহম্মদ খান এবং অরুণ নেহরু। ভিপি সিং এবং আরিফ মহম্মদ খান তখন বামপন্থীদের নতুন নায়ক। আরিফ মহম্মদ খান আগেই পদত্যাগ করেছিলেন মুসলিম মহিলা বিলের বিরোধিতা করে। তিনি বলতে বলে এলেন সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির ডাকে। বর্ধমান টাউন হলে। হইহই করে সবাই গেলাম। এরমাঝে এসেছে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬। ... ...
খড়গপুর চৌরঙ্গী থেকে শুরু হয়ে সদ্য শেষ হওয়া ফোর লেনের জাতীয় সড়ক সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। রাস্তা জুড়ে অজস্র আন্ডারপাশ সমস্ত চেনা জায়গাকে আড়াল করে অচেনা করে দিয়েছে। নিমপুরায় পথের পাশেই থাকা সিঙাড়া সিংয়ের ধাবা কিংবা মুন হোটেল এখন পথের নীচে, লোধাশুলির মাহাত হোটেলও নজরে পড়েনি। মোহনপুরের যে ঘন জঙ্গলের জন্য জাতীয় সড়কের ওপর সূর্যের আলো পড়তনা তাও এখন নির্বিরোধী, ফর্সা। ঘাটশিলারও তাই অবস্থা। তারই মধ্যে আন্দাজে দ্বিতীয় আন্ডারপাশের পাশ দিয়েই বেঁকে জাদুগোড়া-মুসাবনির রাস্তা ধরেছি। ৩৭ বছর পরেও এরাস্তা বড় চেনা! ঝাঁপানো বৃষ্টির মধ্যেই একটুও অসুবিধা হয়নি রাস্তা চিনতে। ডানদিকে টুমানডুংরি আর মৌভান্ডারক আর বাঁয়ে হিন্দুস্থান কপার লিমিটেডকে রেখে দিব্যি আমরা উঠে পড়লাম সুবর্নরেখা সেতুর ওপর। ... ...
রাজনীতিতে কেউ যখন উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হন তাঁর বক্তব্যও কর্মের সমার্থক হয়ে ওঠে। যে ক্ষমতা ও পদে আবদ্ধ নয় তাঁর বাক স্বাধীনতা বেশি হওয়া উচিত। লোহিয়া নিজে চেয়েছিলেন বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার। সে কারণে তিনি ক্ষমতা ও পদে আবদ্ধ ছিলেন না, কমিটিতেও অংশ নেননি। তাঁর অনুগামীরা ক্ষমতা ও পদ আঁকড়ে থাকতে চায়, কিন্তু কথা বলার শৃঙ্খলাহীনতাকে তাদের অধিকার বলে মনে করে। সম্প্রতি, যখন একজন সরকারী লোহিয়াবাদী নেতা দলীয় সভাপতির নরোরা শিবিরের ভাষণকে শৃঙ্খলাহীন বলে অভিহিত করেছেন, তখন তিনি আসলে তাঁর ভাষণকেই নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন এবং নিজের বাক স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় ... ...
শুভদীপের প্রবন্ধগুলি কিন্তু সেইসব চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে যাদের কাজ শৈল্পিক ভাবে নিপুণ। শুভদীপের প্রবন্ধে যেমন আছেন গোদার, বার্গম্যান, আন্তনিওনি, হিচকক, চ্যাপলিন তেমনই আছেন কিয়ারোস্তামি, ওজু, আমাদের সত্যজিৎ, মৃণাল এবং বর্তমান সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার নুরি বিলজ সিলান। যে কোন সফল প্রাবন্ধিকের লেখনীর একটা নিজস্ব স্টাইল থাকে। শুভদীপের লেখনীর দুটি বৈশিষ্ট্য আছে। দ্বিতীয়টির কথায় আমরা একটু পরে আসছি। শুভদীপ কোন প্রবন্ধের শুরুতেই সাধারণত মূল বিষয়ে সরাসরি প্রবেশ করেন না। এখানে মূল বিষয় বলতে বলা হয়েছে চলচ্চিত্র বা চলচ্চিত্রকার সম্পর্কিত আলোচনা। লেখকের একাধিক প্রবন্ধই শুরু হয় কোন উদাহরণ/ উপমা বা কোন সংজ্ঞার ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ দিয়ে। যেহেতু প্রবন্ধগুলি সময়কাল অনুযায়ী সাজানো (বইয়ের সর্বপ্রথম প্রবন্ধ তার সাম্প্রতিকতম লেখা), তাই বোঝা যায় সময়ের সাথে লেখক এই স্টাইলটি রপ্ত করেছেন। ... ...
তিনদিনের প্রদর্শনীতে দ্বিতীয় দিন দ্বিপ্রহরের কিছু সংখিপ্ত চিত্র ছাড়া এই উৎসবে আমার দেখা ও অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ঢুকেছিল তৃতীয় দিনের শেষ তিনটি নিবেদন। এর মধ্যে Clashing Differences ও ‘এক জগাহ আপনি’ আলোচনার পৃথক পরিসর ও প্রেক্ষিত দাবী করে, আসুন আমরা বরং দেখতে বসি ‘এক্কা দোকা তেক্কা’ - একটা বাংলা ছায়াছবি যেখানে শেষ বিন্দুতে এসে মিশে যায় বাঙালীর চেনা তিন-তিনটি আখ্যান। ... ...
আমার গ্রামজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণ ছিল এই মাঠপাহারার দায়িত্ব পাওয়া। সপ্তাহে একদিন পালা পড়তো বাড়ি পিছু। মনে হতো রোজ যাই। ধানের খড়ের ঘরে কী উষ্ণতা অকল্পনীয়। আমি যদি নিজে ছবি বানাতে আপ্রি তবে এই দৃশ্য রাখবোই। সবচেয়ে ভয়ের ছিল, বউ মারার মাঠে রাখপাহারা। ভূতের ভয়ে যেতে চাইট না। আমি আর সিরাজ, বছর পাঁচেকের বড়, নাম ধরেই ডাকতাম, গ্রামের প্রথা অনুযায়ী, বেছে নিতাম ওই মাঠ। নুরপুর পলাশনের লোকদের সঙ্গে দেখা হতো। গল্প হতো। ওইটা ছিল আমাদের গ্রামের মির শেষসীমা। ... ...
যাব ব্রাতিস্লাভা। স্লোভাকিয়া দেশটি সবে আপন পতাকা উড়িয়েছে; আগে সে দেশে যাওয়ার পথ ছিল পুরনো চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগ দিয়ে (১৯৭৭ সালে প্রথম ইউরোপে পৌঁছে সেখানে প্লেন বদল করেছি)। রাজধানী হলেও ব্রাতিস্লাভার বিমানবন্দর আকারে অতি ক্ষুদ্র। ১৯৯৬ সালে ব্রাতিস্লাভা এয়ারপোর্টে নেমে কোন ট্যাক্সি পাই নি। আরেকজনের সঙ্গে কোনমতে বাবা বাছা করে ভাগের গাড়ি চড়ে শহরে গিয়েছি। লন্ডন থেকে কোন প্লেন সরাসরি সেখানে যায় না- ইউরোপের কোথাও প্লেন বদলাতে হয়। ভিয়েনা-ব্রাতিস্লাভার ফ্লাইট কিছুকাল চালু ছিল কিন্তু মাত্র দশ মিনিটের এই উড়ানে খরচা পোষায় না বলে সেটি বাতিল হয়ে গেছে। তার চেয়ে সহজ তাদের প্রাক্তন প্রভুর দেশ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে গিয়ে গাড়ি, নৌকো ( স্পিড বোট ) বা ট্রেন ধরা। সময় লাগে বড়জোর এক ঘণ্টা। দূরত্ব মেরে কেটে ৮০ কিমি। সীমান্ত খুলে গেছে। ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেখালেই অবারিত দ্বার; বড়জোর একটা ছাপ মেরে দেবে। ... ...
সুবা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানান দোষগুণ বহুল আলোচিত এবং এই নিয়ে প্রচুর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ইতিহাসের সহজলভ্য জনপ্রিয় সূত্রগুলি দেখলে, সেখানে সচরাচর তাঁকে নিয়ে একতরফা বিরূপ অভিমতই চোখে বেশি পড়ে, যেমন- সর্বসাধারণের তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস উইকিপিডিয়া তে সিরাজ যে তথ্য পাওয়া যায় তা বাঙালির পক্ষে খুব স্বস্তিকর নয়। শুধু সিরাজ নয়, ওই শতকের বাংলার ইতিহাস আমরা সচরাচর যেভাবে পাই তা যেন বাংলা ও বাঙালির প্রতি একটু বেশিই বিরূপ। ইতিহাসের student হয়ে ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে জেনেছি ঐতিহাসিক বিবরণ লেখার প্রধান শর্ত হল নিরপেক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করা। সময় বা মহাকাল ও সেই নিয়ম মেনে চলে। তবে ওই অষ্টাদশ শতকের বর্ণনা একটি জাতির প্রতি কীভাবে এত বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে, খটকা লাগে। এই লেখা সেই খটকা, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। ... ...
তিনি কিভাবে জানবেন একই ঘরে অবস্থানকারী পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা ভিডিও আসে? কিছুতেই বুঝতে পারেন না কিভাবে একটি বাচ্চা যে মানসিক অবসাদে ভুগছে তার কাছে অজস্র ভিডিও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আসতে থাকে, আস্তে আস্তে যা আত্মহত্যায় পথে ঠেলে দেয়? একটা ক্লিক, একটা সার্চের থেকেই তৈরী হতে থাকে এই অ্যালগরিদিমের জাল। আর ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে অপরিণত মস্তিস্ক। কিছুক্ষণ একটা বিষয় দেখলে বা সার্চ করলে আকৃষ্ট করার উপাদান দিয়ে সময় বাড়ানো- আর বিজ্ঞাপন থেকে আরো আরো রেভিনিউ। ... ...
এইবার বাবা তার কারিগরি দক্ষতার প্রকল্প চালু করল। লতানে গাছের জন্য মাচা বাঁধার খুঁটি বানাতে লাগবে বলে বেশ কিছু বাঁশের টুকরো রাখা ছিল। তারই একটাকে নিয়ে এসে দা, করাত, আর কি কি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাটাকাটি করে একটা নল বানিয়ে ফেলা, তারপর সেটার যেদিক থেকে রঙ বের হবে সেদিকের দেয়ালে, তুরপুন দিয়ে ছ্যাঁদা করা ইত্যাদির পরে একটা লম্বা টুকরোর দুই প্রান্তে দুই কাপড়ের টুকরো জড়িয়ে একটা দিক হাতলের কাজে আর অন্য দিকটা বাঁশের খোলের মধ্যে ঢুকিয়ে রঙ টানা আর বের করার পিস্টন বানিয়ে ফেলতেই পিচকারি তৈরি হয়ে গেল। আর আমাদের পায় কে! কিন্তু তিনজনের জন্য দুটো পিচকারি করা হয়েছিল, এইটাতে সুবিধা হয়েছিল না অসুবিধা সেইটা এখন আর নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যেটা নিশ্চিত করে বলা যায় সেটা এই যে সমস্ত বাহুবলি সিনেমায় যেমন দেখায়, অস্ত্রশস্ত্র যতই ব্যবহার হোক, চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হাতাহাতি সম্মুখ সমরে। প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে শক্তিশালি দলও হেরে যায়, আমারাও আমাদের সেই প্রথম বছরের যুদ্ধে মনে হয় না খুব সুবিধা করতে পেরেছিলাম। পরের বছর থেকে রসদ সংগ্রহের দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নিয়েছিলাম। হাতের তালুতে রঙ মেখে নিয়ে এগিয়ে চলো, যুদ্ধে হেরে যাওয়া কোন কাজের কথা না। মুস্কিল হল, এই রঙের যুদ্ধশেষে সবাই একই রকম হেরে বসে। সবাই রঙে রঙে রাঙা আজব প্রাণী। ... ...
যাইহোক, নিচের পরিস্থিতি দেখে ছেনু ঠিক করল, আহত সৈন্যদের বোমা মারার কোনো মানে হয়না। তাদের আশেপাশের কিছু বাড়ির ছাদ থেকেও মাঝে সাঝে শেলিং হচ্ছে, তাই যেসব সৌভাগ্যবান সেসব এড়িয়ে তাদের বাড়ি পর্যন্ত বেরঙিন, বেদাগ জামায় আসতে পেরেছে, শুধুমাত্র তাদেরকেই সে নিশানা করবে। পুঁচকে হলেও তার হাতের টিপ মারাত্মক। সে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে তাক করে টপাটপ রং-বেলুন ছুঁড়ছে আর গায়ে ঠিকমতো পড়লেই বারান্দা থেকে ছুট। এভাবে অন্তত গোটা ছাব্বিশ লোককে সে উজালার খরিদ্দার বানালেও দুঃখের বিষয় উজালা কোম্পানি এতবড় উপকারের প্রতিদান কোনো দিনই তাকে দিতে পারেনি, হয়ত বিষয়টা তাদের গোচরেই আসেনি, কে জানে। ... ...