শিক্ষার প্রথম সারিতে থাকা মানুষজন ক্রিয়েটিভ হবেন এটা স্বাভাবিক। আমার আপত্তি নেই। আমার আপত্তি অন্য জায়গায়। আমার এক পরিচিত মাস্টারমশাই সোশ্যাল গ্রুপে জ্বালাময়ী কবিতা আবৃত্তি করে ফাটিয়ে দিচ্ছেন। সাধু সাধু। গল্পটা হচ্ছে ব্লক লেবেল বা পাড়া লেবেল এও ওনার স্কুলের কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে দেখেনি কোন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায়। ওনার স্কুলের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম ওরা জানেই না অমুক মাস্টারমশাই এত ক্রিয়েটিভ বলে। তা মশাই এই সোশ্যাল গ্রুপ ক্রিয়েটিভিটি সমাজের কি লাভ দিলো। মানে ধরুন আপনি হাসপাতালের ডাক্তার, কিন্তু আপনার হাসপাতালের লোকজন জানেনই না আপনি চিকিৎসা করেন। তা এতে কি সম্মান বাড়ে? কী জানি? ... ...
বিশ্বসাহিত্যের ২২ জন বিখ্যাত লেখকের কয়েকটি সাক্ষাৎকারের সমাহার নৈঃশব্দের সংলাপ বইটি। এখানে লেখকেরা জানিয়েছেন তাঁরা কীভাবে লেখালেখি করেন, কী ধরনের লেখা পড়তে ভালোবাসেন, কোন কোন লেখক তাঁদের প্রভাবিত করেছেন, লেখার ক্ষেত্রে কত ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা তাঁদের করতে হয় ইত্যাদি নানা বিষয়। পড়লেন সৌভিক ঘোষাল। ... ...
হিব্রু পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার উর শহরে বাস করতেন আব্রাম এবং সেরাই। গোরু ভেড়া চড়িয়ে কাটে নিঃসন্তান জীবন। স্থানীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী আব্রাম বিশ্বাস করেন নানান দেব দেবতায়। একদিন ঈশ্বর প্রকট হলেন আব্রামের কাছে। বললেন ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। আমাকে মান্য করো। আব্রামকে নির্দেশ দিলেন- তোমার পৈত্রিক দেশ ত্যাগ করে চলো কানান অভিমুখে (আজকের ইজরায়েল, সিরিয়া – হাঁটা পথে বারো দিন) সেখানে বংশ প্রতিষ্ঠা করো। তোমার নাম হবে আব্রাহাম, বহু সন্তানের জনক।সেরাই হবে সারা (অভিজাত মহিলা / সুখী) । কানান তোমার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসভূমি। ... ...
উচ্চৈঃস্বরে হাসলেন বিবেকানন্দ। তাঁর স্বচ্ছ ধারালো চোখে কোন ছায়া ঘনাল না, কণ্ঠস্বর তেমনি ভাবগম্ভীর এবং দৃঢ়। আপনার শরীর নিয়ে আমার কোন কৌতূহল ছিল না, জানতে চেয়েছিলাম এই পোশাক আপনি কোথায় পেলেন। সারার চোখ এবার আনন্দে চকচক করে উঠল। আমি অনেক খুঁজে এই পোশাকের প্রতিটা উপকরণ সংগ্রহ করেছি। প্যারিস আর লন্ডনের বিভিন্ন মিউজিয়ামে গিয়ে হিন্দু নারীর পোশাক দেখেছি, রাজদরবারের নর্তকীর সাজ সজ্জার ছবি দেখেছি। তারপর এই পোশাকের কথা ভেবেছি। তবে এর প্রতিটা উপকরণ সংগ্রহ করতে আমাকে অনেক কসরত করতে হয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন বুঝি? ... ...
এর তাৎপর্য, বিজ্ঞানের ইউরোপ-কেন্দ্রিক উৎপত্তি সম্বন্ধে যে-ধারণা তখন বিদ্বৎমহলে প্রচলিত ছিল, তা বদলানোর মতো মালমশলা পেশ করলেন প্রফুল্লচন্দ্র। ইতালির Archivio di storia della Scienzia এই বইয়ের সমালোচনা করে যে-কথা বলল তা আরো তাৎপর্যপূর্ণ: ‘সবদেশেই একদল লোক থাকে, নির্বোধ সংকীর্ণ স্বাজাত্যবোধের দ্বারা চালিত হয়ে যারা বিশ্বাস করে যে বিজ্ঞান কেবল তাদেরই দেশে বিকশিত হয়েছে, এবং সেটা তাদেরই সম্পত্তি। কিন্তু আরেকদল মানুষ আছে যাঁদের রয়েছে উপযুক্ত শিক্ষাগত প্রস্তুতি, রয়েছে তথ্য সংগ্রহ করার, বিচার করার ও তা নিয়ে লেখবার মতো মনীষা। এঁরা যখন নিজ দেশ সম্বন্ধে প্রকৃত মমত্ব ও স্বাভাবিক দক্ষতা নিয়ে কোনো কাজে নিয়োজিত হন, তখন তাঁদের মধ্যে কাজ করে একটা উদার দর্শন, একটা সংস্কারমুক্ত মন। সুতরাং ,এঁদের রচনা আমরা গভীর মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করতে বাধ্য ৷ ভারতে রসায়নের ক্ষেত্রে স্যার পি সি রায়ের স্থান ঠিক এরকমই। তাঁর কাছে আমরা অনেক কাজের জন্যই ঋণী। ... কিন্তু যে মহান কীর্তির জন্য তাঁর নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে সেটি হল তাঁর রচিত আদিকাল থেকে শুরু করে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যকাল পর্যন্ত ভারতীয় রসায়নচর্চার এই অতুলনীয় ইতিহাসটি।’ ... ...
যেমন চিত্রণ-অলংকরণে, তেমনই ভাষার প্রয়োগে বৈচিত্র্যের অভাবিত-অপ্রত্যাশিত চমক সমগ্র বই জুড়ে অব্যাহত থাকে। মায়ামৃগবধের দৃশ্যে মায়াচরীদের নৃত্যসহ গীতে ‘সহসা আসি সহসা মিলাই/নয়ন ভুলায়ে মনেরে দুলাই/জাগায়ে দুরাশায় ডুবাই নিরাশায়—/হাওয়ায় হাওয়ায় সোনার ধূলার/ ঘূর্ণা বায়ে পায়ে পায়ে হারায়ে চলি—/নিরুদ্দেশে মরুমরিচীকা দলি নব নব সাজে/অভিনব দিনে রাতে—গহিন ছায়া রঙিন মায়াচরী’কুল আড়াল হয়ে যান পাণ্ডুলিপির পাতায় বন্ধ দরজার আগলে, আলতো বন্ধ দরজার পাল্লায় লেখা ফুটে ওঠে, ‘Behind Closed Doors Because...’ ... ...
হনুমানের লগে শেষ দেখা কথা মনে হয় সীতার। রাম রাজা হইবার পর সবাইরে প্রচুর দান-দক্ষিণা করে। সীতার গলায় সে পরায়া দেয় মূল্যবান একটা মুক্তার মালা। সীতা মালাটা পাইয়া আগায়া যায় হনুমানের দিকে- রানি হিসাবে এই মালাটাই আমার প্রথম আর এখন পর্যন্ত একমাত্র সম্পদ। মালাটা আমি তোমারেই দিতে চাই… হনুমান বিনীত হয়- বানরের গলায় মুক্তার মালা দিবা? যদি সারা জীবন এই কৃতজ্ঞতা ধইরা না রাখা যায়? সীতা কয়- তোমার কি মনে হয় ডর দেখাইলে আর ডরানোর মতো জায়গা বাকি আছে আমার? রাজ বাড়িতে বড়ো হইছি। কূটনীতিকের লগে যে আত্মীয়তাও বেশিদিন টিকে না সেইটা জানি। রাবণের বড়ো পছন্দের মানুষ আছিলা তুমি। সেই রাবণের কী দশা তুমি করছ সেইটা তো সকলেই জানে। তোমার কাছে আমার কোনো প্রত্যাশা নাই; আছে বেসুমার কৃতজ্ঞতা। এই মালাটা তুমি গ্রহণ করো… ... ...
লেখকের মতে বিধবাবিবাহ আইন পাশ করানো নিয়ে লেখালেখি এবং অপমানিত ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার পেছনে প্রেরণা বিধবাদের দুঃখকষ্টে দ্রবিত হওয়া নয়, বরং অন্য তাঁর অন্য কোন হিডেন এজেন্ডা ছিল। কী সেই এজেন্ডা? ধর্মশাস্ত্রের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে কলোনিয়াল শাসকেরা হিন্দু বিধবাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। প্রথমে প্রায় ৬২ বছর আগে জোন্স মনুসংহিতার কথিত অনুবাদের মাধ্যমে যে হিন্দু আইন প্রণয়ন করেছিলেন তাতেই বিধবাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ব্যবস্থা হয়েছিল। তারপরে বিধবাবিবাহ আইনের মাধ্যমে তাদের মৃত স্বামীর সম্পত্তি ও স্ত্রীধন থেকেও বঞ্চিত করা হল। এবং তাতে বিদ্যাসাগরের সক্রিয় সহযোগিতা ছিল। এবং তিনি তা কলোনিয়াল প্রভুদের স্পষ্ট আদেশ পেয়ে অনুপালন করেছেন মাত্র। ... ...
"যে অংশটুকু বাকি ছিল এই কাহিনির, লিখে গেলাম। এই কাহিনিকে মরে যেতে দিও না। আলো হাতে, প্রেম বুকে নিয়ে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে, হৃদয়ে সাহস নিয়ে আমরা সবসময় মানুষের পাশে পাশেই থেকেছি। তাপিতকে শান্ত কর। ভ্রান্তকে পথ দেখাও আলমিত্রা। তোমার কাছে এসে যেন লোকে শান্তি পায়। মাছি হয়ো না, মৌমাছি হও। তুমি স্বেচ্ছায় আমার পথ বেছে নিয়েছ। আমি চলে যাবার পর থেকেই শুরু হোক তোমার পথ চলা। শেবার রানির বাকি কাহিনি লিখে গেলাম। রানির মত হও। একাকী, সাহসী, ব্যতিক্রমী, নির্জন । " ... ...
মা যে হল ঘরে ছিলেন, তার এ মাথা থেকে ও মাথা এত দূর যে শেষ অব্দি মা'র চোখ পৌঁছাতো না। সারাদিন লাঠি দিয়ে ঘর আর বাথরুম মোছা হতো। নার্সদের ব্যস্ততার কোনো সীমা ছিল না। সকাল থেকে রাত তাঁরা এ রোগী থেকে ও রোগীর মাথার কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন।হাগিজ পাল্টে দেওয়া, পরপর ঘড়ি ধরে ওষুধ খাওয়ানো, ইনজেকশন দেওয়া, অনেককে খাইয়েও দিতে হতো। দুপুরে বাড়ির লোকদের সাথে ভিডিও কলে দেখা করিয়ে দিতেন তাঁরাই। সারারাত তাঁরা কেউ না কেউ হলঘরে পায়চারি করতেন। মা'র হাসপাতালে থাকাকালীন ওই ওয়ার্ডে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। খান দশেক বেড ফাঁকা ছিল বেশ কিছুদিন। ... ...
গা ছমছম করছিল ওদের। যেখানে সেখানে মনে হচ্ছে তখন - এই সেই ডেরা নয়তো! মানুষ দেখলে মনে হচ্ছে - এরা সেই ইরানের চাবাহারের টেররিস্ট নয়তো! এই বুঝি তুলে নিয়ে চলে যাবে ওই হলঘর থেকে। আট মাসে কোম্পানির আসল মালিকের দেখা পেয়েছিল মাত্র দু’দিন। এসেছিল ওয়ার্কশপে। সাথে লোকলস্কর নিয়ে। তার নিজস্ব শিপ আছে। গুডস এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট করে। বাস আছে অনেকগুলো। ট্রান্সপোর্টের বিজনেস আছে। সঙ্গে গোল্ডের কোম্পানি। নানা দেশ থেকে প্রচুর লেবারকে নিয়ে গিয়ে পুষতে পারে সে। ওই ইরানের মালিকটির ক্ষমতা যে কতটা হতে পারে, কী কী করে ফেলতে পারে সে, পশ্চিমবঙ্গের চাল-ডাল-তেল-নুন-চিনির মাসকাবারি মালের হিসেব দেখে বড় হয়ে ওঠা ছেলেদের সে কথা ভেবেই পা-হাত ঠান্ডা হয়ে আসছিল। হাত দিয়ে তাও গলছিল সোনা। ... ...
গোলেনূর দাদীর বাড়ির পেছনে ঝোপ-জঙ্গল থেকে ঘুঘু পাখি থেমে থেমে ডেকে উঠছে। আর গোলেনূর দাদীর ছায়াঘেরা উঠোন একটু পরপর চঞ্চল হয়ে উঠছে রান্নার ছ্যাঁত ছ্যাঁত শব্দে। কড়াইয়ে এবার থেঁতলানো রসুন পড়লো। একটু নাড়তেই তা বাদামী হয়ে আসলো। এরপর অনেকটা পেঁয়াজ কুঁচি আর বুকচেরা কাঁচামরিচ যোগ হলো তাতে। গনগনে আঁচে তেতে থাকা কড়াইয়ে তা পড়তেই ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়লো উঠোনে। দমকে কেশে উঠলাম আমি। ... ...
এদিকে শেবার রানির মন উথাল পাথাল। সে আগ্রহী। সে ভয়ানক কৌতূহলী। সে শান্তি পায় না। সে জানতে চায় সেই রাজাকে। প্রজ্ঞা তো হৃদয়ের অলঙ্কার! এও তো একরকমের যুদ্ধ যাত্রা। মননের যুদ্ধ। মেধার যুদ্ধ। চাতুর্যের কৌশলী তির। জ্ঞানের শাণিত তরবারি। মগজাস্ত্র! রানি ভাবে, এই যাত্রা কি খুব সহজ? মোটেই নয়। ইতিহাসে এমন যুদ্ধযাত্রার হদিশ কি পেয়েছ কখনো আলমিত্রা? পনেরশ মাইলের এক দীর্ঘ মরুপথ। সে পথ এঁকে বেঁকে গেছে আরব মরুভূমির গভীর প্রদেশ দিয়ে, নোনা সাগরের তীর ঘেঁষে মোআব, জর্ডন, কানানের ফসলের খেত আর আঙুর বাগানের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে গেছে জেরুজালেমের পাহাড়ে। দুইমাসেরও বেশি সময় চাই। ... ...
আমাদের ছোটবেলায় একজাতের বই বাড়িতে এবং স্কুলে অবশ্য পাঠ্য ছিল – মহাপুরুষদের জীবনী। তাতে ক্ষুদিরাম, নেতাজি ও সূর্য সেনের মত স্বাধীনতা সংগ্রামী, রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও আম্বেদকরের মত সমাজসংস্কারক, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিক এবং চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মত ধর্ম সংস্কারক সকলেই একসারিতে জায়গা পেতেন। এঁদের জীবনীর একটি ছাঁচ আছে। এঁরা কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রেরিত। এঁদের জন্মসূত্রেই প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। এঁরা কখনও ভুল করেন না। কাজেই ভুল স্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না। ... ...
আমরা বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণ হিসেবে গণ্য করি যে সময়কে, প্রফুল্লচন্দ্র তারই এক প্রতিভূ।ইউরোপের নবজাগরণের সঙ্গে তুলনীয় নাই হতে পারে আমাদের নবজাগরণ, হওয়া উচিত নয় এবং সম্ভবও নয়। কিন্তু বিজ্ঞান-কারিগরি ও শিল্পের আমূল পরিবর্তন কে বাদ দিয়ে কোনো রকম নবজাগরণের কথাই ওঠে না।সেদিক থেকে দেখলে নিজেদের মত করে বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের আত্তীকরণ করে, নিজেদের সমাজ সংস্কৃতি ইতিহাসের সঙ্গে সুসমঞ্জস ভারী শিল্পের পথিকৃৎ বলতে হয় প্রফুল্লচন্দ্রকেই। তিনি যেন প্রাচ্যের পার্কিন (স্যার উইলিয়াম হেনরি পার্কিন, কৃত্রিম জৈব রঞ্জক পদার্থের সংশ্লেষণ পদ্ধতির প্রথম উদ্ভাবক এবং শিল্পপতি, ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের নতুন ঘরানার প্রতিনিধি - বিজ্ঞানী এবং শিল্পপতি)। কিন্তু না, আমাদের ভাবনায় নবজাগরণ আসতে পারে, 'স্বদেশী শিল্প' হতে পারে, কিন্তু 'পুঁজি ‘ ‘শিল্প ' এসব হতে পারে না।আমরা বরং আক্ষেপ করেছি, এ হে, প্রফুল্লচন্দ্রের মত একজন ঋষিতুল্য মানুষ কিনা পুঁজিপতি বনে গেলেন! একটু বিপথে চলে যাচ্ছি বোধহয়।বেঙ্গল কেম-এর মত একটা উদ্যোগ যে শুধুমাত্র একটি উৎপাদনশিল্প, একটি কারখানা নয়, তার উপযোগিতা যে শুধু লাভ ক্ষতির হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করলাম না! ... ...
আমি মহা উৎসাহে বলতে শুরু করলাম – “আরে তোমার মনে নেই – ওই যে কুমড়ো পাইকের গৌরাঙ্গ কাকু গো! চোট খেয়ে দাগি হয়ে যাওয়া কুমড়োগুলো যেগুলো কেউ কিনতে চাইত না আর ঠাকুমা বসে বসে চুন লাগাতো – সেই কুমড়ো একমাত্র কিনত গৌরাঙ্গ-কাকু। আজ বুঝতে পারলাম সেই পচা কুমড়ো নির্ঘাত বিদেশে পাচার করত এমন স্যুপ বানাবার জন্য”। “এই রোমান্টিক সেট-আপে ডিনার করতে এসে তোমার পচা কুমড়োর কথা মনে আসছে! ধন্য চাষা মাইরি”। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ অধ্যায়ে এমসালালো-র দিকে রওনা হয়ে মুকনডোকু নামের জনপদ পার করে উয়ানজি নামের গ্রামে পৌঁছনোর কাহিনি। তর্জমা- স্বাতী রায় ... ...
এই লাইনের মানে কী হলো? – জলধর বলে, ধারমুর শেখানো করম পুজো আমরা এখন সবাই মানি; মানি, তাই বাঁচি মাথা উঁচু করে। অনেক দিন আগে, তা প্রায় একশো বছর হবে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের ভাষা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। তখন ইংরেজ আমল, আমাদেরই জঙ্গলের জমি কেটে খনি বানিয়ে ওরা আমাদের বাপ-দাদাদের তখন কুলি বানাচ্ছে, হাজার মাইল দূরে ওদের চা-বাগানে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কুলির কাজ করার জন্যে, আর আমাদের বাপ-দাদারাও নিজেদের ভাষা ভুলে ওদের ভাষাই শেখার চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে জন্ম নিলেন এক আশ্চর্য মানুষ যিনি অনুভব করলেন মাতৃভাষা মানুষের কাছে কত বড়ো সম্পদ। ... ...
প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ত অধ্যায় ছিল খুলনার দুর্ভিক্ষ, উত্তরবঙ্গের বন্যায় কংগ্রেসের হয়ে সেবাকার্যে প্রবেশ করা। সুভাষচন্দ্র বসু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, এই সেবাকার্যের মূল দায়িত্ব প্রফুল্লচন্দ্রের উপর আসে। তিনি মন্তব্য করেন যে এর মাধ্যমে কংগ্রেস বাংলার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে এবং ভোটদেওয়া হোক বা আন্দোলন হোক, এই জনসাধারণ ‘গান্ধী মহারাজের’ শিষ্যদের হাত ছাড়বে না। এর পাশাপাশি তিনি এও দেখেন, যে এই সব দুর্গতিই সরকারি নীতির প্রত্যক্ষ ফল। যেমন, রেলের জন্য অবিবেচনাপ্রসূত বাঁধ দেওয়া বন্যার জলকে নামতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় এই সমস্যাগুলি বোঝেন, কিন্তু হোয়াইট ম্যানস বার্ডেন কাঁধে নেওয়া সরকারি অফিসাররা বোঝেন উল্টোটা। গ্রামের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন ভেঙে যাওয়াই এই বিভিন্ন দুর্গতির পিছনে একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন। এবং সেই সংগঠনের উপর জোর দেওয়া, কংগ্রেসের কর্মসূচীর মূল ফোকাসে গ্রামপুনর্গঠনের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যাদির উপর তিনি জোর দেন। হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার সমাধানের পথও এর মধ্যে তিনি দেখতে পান। আসলে, গান্ধি-রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি, তার একজন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। গান্ধিজি প্রচারের জন্য, আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অনেকগুলিকে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ আত্মচরিতে চরকা বিষয়ক অনুচ্ছেদটি। চরকা এমন এক প্রশ্ন, যেখানে জাতীয়তাবাদী বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র বিশ্বমানবতাপন্থী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে রেহাই দেন নি। চরকা-খদ্দরে অনাস্থাশীল কবি প্রফুল্লচন্দ্রের পত্রাঘাতের উত্তরেই চরকার সমালোচনায় নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি লেখেন। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের চরকা-স্মালোচনা যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের, মুক্ত মানবতার প্রশ্নে, প্রফুল্লচন্দ্রের আত্মচরিতের চরকা অধ্যায়টি বস্তুনিষ্ঠ। ... ...
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত জনসংখ্যা সম্পর্কিত পূর্বাভাসের দলিলটি এই দুই মুখ্যমন্ত্রী বা তাদের উপদেষ্টারা কেউই পড়ে দেখা জরুরি মনে করেননি বলেই মনে হয়। এই দলিল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের জন্মহার (১৫-৪৯ বছর মহিলাদের গড় সন্তানের সংখ্যা) স্বাভাবিকভাবেই “প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহার”-এ (যেই জন্মহার দেশে বা রাজ্যে স্থাপিত হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়), অর্থাৎ, প্রতি মহিলার গড়ে ২.১ সন্তান থাকবে। আর আসামের ক্ষেত্রে ২০২০ সালেই সেই হারে পৌঁছে যাওয়া গেছে। তাহলে আসামে যদি সেই হার ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়ে গিয়ে থাকে এবং উত্তরপ্রদেশেও ২০২৫ এর মধ্যে এমনিতেই তা অর্জনের পূর্বানুমান রয়েছে, তাহলে হঠাৎ করে এই কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির প্রয়োগের কারণ কী? ... ...