গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ – এরা আজ ,একটি তরুণ সম্ভাবনাময় প্রাণের এই ট্র্যাজিক পরিণতিকে, শুধু নিজেদেরই পণ্যটা বাজারে বেশি বেশি করে বিক্রি করতে ব্যবহার করছে না কী? একজন সঞ্চালককেও দেখলাম না যাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি বিন্দুমাত্র খারাপ আছেন – সেটাই স্বাভাবিক ব্যাবহার, একজন পেশাদার সঞ্চালকের। কিন্তু, আমরাই প্রথম এই করেছি, সেই করেছি, দেখতে থাকুন, সঙ্গে থাকুন বলে যাত্রা পালার সং এর মত আচরণটাও সভ্য দেশে আশা করা যায় না। একজায়গায় স্থির হয়ে বসে পরিষ্কার বাংলায় তথ্য ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন করা অর্থাৎ হনুমানোচিত লাফ ঝাঁপ না দিয়ে, বাজনা বাদ্যি ছাড়া, একজন পেশাদার সংবাদ পাঠক, যাঁর মান ও হুঁষ দুটোই আছে – তা বোধহয় আজ এক বিলুপ্ত প্রজাতি। ... ...
সামগ্রিকভাবে, এদেশের নারী, বিশেষত রূপান্তরকামী, ভিন্ন যৌনতার মানুষদের প্রতি ঘৃণ্য সামাজিক বিরূপতা তথা পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা, নির্যাতনের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই সামগ্রিক সামাজিক কণ্ঠস্বর অবশ্যই নতুন রাজনৈতিক বোধের জন্ম দেয়, যা ঠিক ক্ষমতাসীন কোনও দল বিশেষের বিরুদ্ধে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে প্রচলিত রাজনৈতিক পরিসরের সমস্ত ক্ষমতান্ধ দলগুলো এবং প্রচলিত পুরুষ আধিপত্যবাদী সমাজ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক, সর্বনিয়ন্ত্রক ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে এক গণ প্রতিবাদ। প্রথাগত রাজনৈতিক দলের বাইরে অজস্র সামাজিক সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার আন্দোলনের সংগঠন, বিশেষত চিকিৎসকদের সংগঠন, এমন কি প্রান্তিক মানুষের আওয়াজ, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে, প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে, সর্বোপরি প্রচলিত সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্রমাগত স্বর তুলেছে, প্রায় প্রতিদিনই মিছিল নিয়ে পথের দখল নিচ্ছে। এমন বিসদৃশ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলা গণ বিক্ষোভের আঁচে দিশেহারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে, ধর্ষকের কঠোর শাস্তির জন্য বিধানসভায় বিশেষ একটি বিল (Aparajita Woman and Child (West Bengal Criminal Laws Amendment) Bill, 2024) পাশ করালেন ৩রা সেপ্টেম্বরে। মজার ব্যাপার, তিলমাত্র বিতণ্ডা না করে সভার উভয় পক্ষই সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ করেছে। বিরোধী বিজেপিরও দেখানো দরকার ছিল ধর্ষণ অপরাধ কমাতে তারাও কতো উদগ্রীব। কারণ, সম্প্রতি অসরকারী সংস্থা এডিআর-এর প্রকাশিত তথ্যে, সারা দেশের নিরিখে বিজেপির এমএলএ, এমপিরাই (১৩৪ জনের মধ্যে ৪৪ জন) যে সর্বাধিক নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত। মোদীর সময়কালে (২০১৪ থেকে ২০২২), সারা দেশে নারী নির্যাতনের হার ৩১% বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিলটির প্রয়োজন কি ছিল? ধর্ষণ অপরাধীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না প্রচলিত আইনে, নাকি কঠোর শাস্তির আইনের অভাবেই নিত্য নারী নির্যাতন হচ্ছে রাজ্যে? এর অভাবেই কি সরকারের প্রশাসন নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিরোধে, প্রতিবিধানে সেভাবে কাজ করতে কাজ করতে পারছিল না? প্রশ্নগুলোয় যাওয়ার আগে দেখে নিই কি বিশেষত্ব রয়েছে এই বিলে। ... ...
তখন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামনারায়ণ গোস্বামী। কৃষক নেতা। দুর্দান্ত লড়াকু গরিব দরদী সৎ নেতা। তাঁর খুব কাছের মানুষ ছিলেন মন্টুদা। সেই সূত্রে বা তাঁর ভালো ব্যবহারের জন্য পিজির সুপার তাঁকে ভালোবাসতেন। মন্টুদা বলে দিলেন সুপারকে। পরদিন অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে এলাম। সেই কলকাতায় প্রায় ২০ দিন টানা থাকা। পিজির এমার্জেন্সির দক্ষিণ দিকে এম ( মার্টিন) ওয়ার্ডে নেনো ভর্তি হল। আমি আর আমাদের পাশের বাড়ির একজন রাতদিন ওখানেই থাকলাম। গাছতলায় বহু রোগীর বাড়ির লোক শুতেন। আমরাও শুতাম। খাওয়া দাওয়া হোটেলে। একদিন সামনে মাসির হোটেলে খেতে গেলাম। শুনলাম ডাক্তার ছাড়া খেতে দেওয়া হয় না। একজন জুনিয়রও এমন চোখে তাকালেন, রাগ হল। কিন্তু চুপ। পেশেন্ট আছে। এখানেই প্রথম রোগীর বদলে পেশেন্ট এবং পেশেন্ট পার্টি শুনি। এটা অবজ্ঞা করে বলা হতো। আর আমরা গেলেই বলা হতো, ক্যাচ পার্টি এসেছে। মানে ধরে ভর্তি করানো। সেসময় জুনিয়র ডাক্তার ধর্মঘট চলছে। ... ...
ওরা যতক্ষণ খাচ্ছিল, ভদ্রলোক অন্য অতিথিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, নানারকমের খাবারের দিকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন তাদের, একেবারে পারফেক্ট হোস্ট! খাওয়ার পর যখন পা বাড়িয়েছে ওরা হোটেলের প্রধান গেটের দিকে – একটুখানি বাইরের থেকে ঘুরে আসবে ভেবে – ভদ্রলোক হাসিমুখে এগিয়ে এলেন ওদের দিকে। কোথায় চললে? – জিজ্ঞেস করেন ভদ্রলোক। ... ...
লক্ষ্যভেদের সময় যুধিষ্ঠির এবং অন্য সকলে – ওখানে উপস্থিত সব্বাইকে দেখতে পাচ্ছিল – গুরুদেব দ্রোণকে, নিজেদের ভাইদের। আকাশ, গাছপালা, পাতা, ফুল – সবকিছু। আর অর্জুন দেখেছিল শুধু পাখির চোখ – আর কিচ্ছু না। অর্জুনের লক্ষ্যভেদের গল্প শুনিসনি? ... ...
আমার নিজের অভিযানের দলকে ভেঙে দেওয়ার পর, ডাঃ লিভিংস্টোনের অনুরোধ অনুযায়ী আমি আরেকটা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ইংরেজ অভিযানে যা কিছু ছিল না, সেগুলো আমি মিঃ অসওয়াল্ড লিভিংস্টোনের দেওয়া অগ্রিম অর্থ থেকে কিনেছিলাম। ইংরেজ অভিযানের ভাণ্ডার থেকে পঞ্চাশটি বন্দুকও নেওয়া হল। সেই সঙ্গে ছিল গোলাবারুদ, উপঢৌকনের বাবদে কাপড়। গোগোদের নজরানা দেওয়ার জন্যও, আবার অভিযানের দলের রসদ যোগানোর জন্যও। মিঃ লিভিংস্টোন তাঁর বাবার স্বার্থে কঠোর পরিশ্রম করেছেন ও তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করেছেন। ... ...
ভোরবেলা আসিস ব্রাসিলি যাবার একটা গাড়ি যোগাড় হল ঐ হোটেলের মালিকেরই চেষ্টায়। গিয়ে জানা গেল সকাল দশটার আগে আসার কোন মানেই হয়নি। আসলে, আসিস ব্রাসিলি পর্যন্ত ব্রাজিল, আক্রে নদীর ওপারে গেলেই পেরু; কাজেই এ পারে পাসপোর্টে স্ট্যাম্প লাগিয়ে, তবেই ওপার যাওয়া যাবে, আর সেই পাসপোর্ট অফিস দশটার আগে খোলার কোন সম্ভাবনাই নেই। ... ...
"রাজধানী এবং সর্বত্র আপনি বার্তা পাঠাবেন, ডাকাতের সঙ্গে রক্ষীদের খণ্ডযুদ্ধের সময়, ডাকাতের হাতে সর্বজনশ্রদ্ধেয় কবিরাজমশাইয়ের নৃশংস মৃত্যুতে আমরা সকলেই মর্মাহত। দোষী ডাকাতদের আমরা খুঁজে বের করবই, এবং প্রশাসন প্রত্যেকটি অপরাধীর চরম দণ্ডের প্রতিজ্ঞা করছে। এদিকে আমাদের ছেলেরাও গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেবে, রাজার অত্যাচারী রক্ষীদের হাতে অকারণে প্রাণ গেল সর্বজনশ্রদ্ধেয় নিরপরাধ কবিরাজমশাইয়ের! প্রতিশোধ নিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গর্জে ওঠো, হে তরুণদল”। ... ...
এমন মাইক অন্ত প্রাণ খুব কম দেখা যায়। হাতে ঘোরানো কলের গান থেকে শুরু করে আধুনিক এল পি রেকর্ড সব কেনা চাই শিবু ভাইয়ের। মাইক বাজানো তাঁর যত না পেশা, তার চেয়ে বেশি নেশা। তখনকার দিনে দিন প্রতি ২৫ টাকা। আমার কাছে নিত দিন প্রতি ১৫ টাকা। একবার শিবু ভাই বলল, পূজার সময় মাইক বাজাবে না। ... ...
মিঃ নিউ এর থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ বিদায় নিলাম। তাঁর মহৎ, উচ্চ মার্গের পেশাযাপনের নিরিখে তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ধারণা উচ্চ। বন্ধুত্বপূর্ণ, সমালোচনার মাধ্যমে তাঁর ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিলে নিশ্চয় তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন। উপরের চিঠি থেকে পাঠক ঠিকই বুঝবেন যে ডসন, হেন এবং নিউ-এর সম্পর্ক বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, জাঞ্জিবারে বর্তমান খবরাখবর থেকে যে কোন অপরিচিত লোক ধারণা করবেন যে এই তিনজন ভদ্রলোক পরস্পরের দিকে ছুরি উঁচিয়েই আছেন। তবে এসব আপাত বিরোধ, উপরিতলের ঝামেলা, কোনও গভীর শত্রুতা নয়। ... ...
আবার কখনো কখনো এত গাম্ভীর্য। এত উদাসীন! এত ঈর্ষান্বিত! এত কষ্ট! অভিমান! অভিযোগ! আসলে কমলদা কখনো নিজেকে আড়াল করেন নি। তাঁর লোভ ছিল, তাঁর ইচ্ছে আছে, তিনিও চান, তিনিও পেতে পারেন, তাঁরও যোগ্যতা আছে— সবকিছুই তিনি বলতেন। তাঁর কথায় বোঝা যেত তিনিও যোগ্য। তিনি আড়াল জানতেন না। আবার হয়তো কখনো কখনো বর্ম এঁটে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিতেন একের পর এক নগ্নরূপ। আমি যদিও কখনো চাইতাম না তাঁর চোখ দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে দেখতে, তিনিও হয়ত চাইতেন না, কিন্তু তাও তাঁর অনবদমিত মন সেইসব কষ্টের কথা বলে ফেলত। বলত, উপেক্ষা, অবজ্ঞার কথাও। বোঝাতে চাইতেন, বাংলা সাহিত্য ফুরিয়ে যাবে নাহয়। এসব জেনেও মেনে নেব আমরা! ইত্যাদি ইত্যাদি! তিনি বলতেন, বাংলার বাইরে থেকে লেখালেখি করার অসুবিধে। কষ্ট। উপেক্ষার কথাগুলো। ... ...
কুচবিহারে বাবার চাকরিতে বদলি হয়ে যাওয়ার সুবাদে প্রথম ‘বদলি’ কথাটার সাথে পরিচয়। কথাটা আচমকা এসে উদয় হলেও আস্তে আস্তে তাকে মর্মে মর্মে অনুভব করলাম। জানলাম, জ্ঞান হওয়া ইস্তক যে বাড়িটিকে আমার পরম নিশ্চিন্তের থাকার আস্তানা বলে জেনে এসেছি, সেটায় আমরা ভাড়া থাকি এবং বড়দের নিজেদের পরিস্থিতির কারণে যে কোন সময় সেখান থেকে চলে যেতে হতে পারে। পরে অবশ্য এই বদলি, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে সরে যাওয়া, কখনো বাধ্য হয়ে, কখনও স্বেচ্ছায়, আর তার সাথে সাথে জীবন যাপনের বদল ঘটে যাওয়া, জীবনের অংশ হয়ে গেল। যাপনের এক পর্যায়ে এসে এও জেনেছি যে চুক্তিপত্র করে বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে নেওয়া বাড়িতে আমার অধিকারও চূড়ান্ত নয়। তা আদতে আরও বড় এক অদৃশ্য চুক্তিভিত্তিক, চুক্তি – রাষ্ট্রের সাথে, যেদিন রাষ্ট্র চাইবেনা কিংবা তার সমর্থন সরে যাবে, তার প্রতিনিধি কিংবা তাকে পরাজিত করা বিজেতা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এসে বলবে - “ওটা দিতে হবে”, এই অধিকার ছেড়ে দিতে হবে, দিতে হয়; হয়ত তখন চলে যেতে হয় সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা কোন দুনিয়ায়। ... ...
এই যে এতদূরে এসে এইসব রাজকার্য করছি… মাঝে মাঝে মনে হয়, যা কিছু করছি, ঠিক করছি কি… কোনটা যে কর্তব্য, আর কোনটা করণীয় নয়…সেটাই আজকাল কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে রে, রামালি… ... ...
উইল আমাকে নিয়ে গেলো পুরনো প্রাগের মাঝখানে। যে ইহুদি পরিবারের বাড়িতে তেসরা জুলাই ১৮৭৫ সালে শিশু কাফকার জন্ম গ্রহণ করেন, সেটি একদা তৈরি হয়েছিল প্রাগের সেন্ট নিকোলাস গিরজের ক্যাথলিক পুরুতদের বসবাসের জন্যে! ১৮৯৭ সালে ইহুদি ঘেটোর অবসানের সময় সে বাড়ি ভাঙা পড়ে, আজ কেবল মাত্র তার পুরনো দুয়োরটা দেখা যায়। অতএব কাফকার আদি বাড়ি আপনি দেখতে পাবেন না। তাতে কি, প্রাগের সবচেয়ে প্রখ্যাত সন্তানের স্মরণে এই বছর বিশেক আগে পৌরসভা সেখানে বানিয়েছেন কাফকা স্কোয়ার (নেমেসতে ফ্রান্তসে কাফকি)। একদা সেন্ট পিটারসবুরগে আনার সঙ্গে ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট উপন্যাসে দস্তয়েভস্কির কল্পিত রাসকোলনিকভের বাড়ি, উপাসনার গিরজে খুঁজেছিলাম। উইলের সঙ্গে হাঁটলাম কাফকার স্কুলের পথে - প্রথম বিদ্যাপীঠ ডয়েচে কনাবেনশুলে বা কিন্ডারগার্টেন, আজকের মাসনা নামক পথে। মাইসলোভার বাড়ি থেকে কিন্সকি পালাস চত্বরের মধ্যে আলটষ্টেডার ডয়েচে গিমনাসিউম মিনিট কয়েকের পথ। আট বছর বাদে কাফকা গেলেন কার্ল ফারদিনান্দস ডয়েচে ইউনিভেরসিতেতে। সে সময়ে বোহেমিয়ান কার্ল বিশ্ববিদ্যালয় দু ভাগে বিভক্ত - কার্ল ফারদিনান্দে পড়ানোর মাধ্যম জার্মান, অন্যটিতে চেক মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়। সেটিও হাঁটা পথ মাত্র। ধর্ম চর্চা প্রাগের সিনাগগে – তার নামটি বিচিত্র। নতুন-পুরনো সিনাগগ! সারা ইউরোপের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সেখানে সবচেয়ে দীর্ঘদিন প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিতা হ্যারমানের কঠোরতম শাসন উপেক্ষা করে যুবক কাফকা প্রতি শনিবার সিনাগগে হাজরে দিতে অস্বীকার করেন। পিতার সঙ্গে কাফকার নিরন্তর মতভেদ তাঁর ব্রিফে আন ডেন ফাটার (বাবাকে চিঠি) পুস্তকে স্পষ্ট। ... ...
সেমিনার শেষ হবার পরেও থেকে গিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর, ফল্গুদের সঙ্গে আর একবার দেখা না করে রিওতে ফেরার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। পরের দিন সকালবেলায় য়্যুনিভার্সিটি রেস্টোর্যান্টে ব্রেকফাস্টের সময় দেখা হয়ে গেল তাঁর সঙ্গে, খানিকটা আশাহত এবং অবাক হয়ে শুনল ওরা এসপিণ্ডোলো চলে গেছেন ভোরবেলাতেই, এমনকি ব্রেকফাস্ট না করেই। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওদের কাছ থেকে শুনে নিলেন চন্দ্রশেখর ওদের জঙ্গল আর আক্রে ঘোরার অভিজ্ঞতার কথা, মুড়কির কিং ভালচার পোষবার সখের কথাটা শুনে হাসলেন খুব একচোট। ... ...
অভিযোগটা যদি দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোন ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে হয়; কিংবা দেশের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে খেপিয়ে তোলার প্রসঙ্গে হয়, নিঃসন্দেহে তা গুরুতর এবং তদন্ত ও প্রমাণ সাপেক্ষে কঠোরভাবে দণ্ডনীয়ও বটে। সুতরাং, দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্র যদি কোন বিষয়কে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসে, তা রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু অনিবার্যভাবে প্রশ্ন উঠবেই, যদি দেখা যায় যে, দেশের অখণ্ডতা রক্ষার খোলসের আড়ালে রাষ্ট্র যদি দেশের নাগরিক সমাজের বাক্ স্বাধীনতা ও অবাধ মতপ্রকাশের অধিকারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খর্ব করতে উদ্যত হয়। ... ...
জোহানেস ভার্মিয়েরের আঁকা, হ্যান্স এন্ডারসনের ছোট জলকন্যার গল্প, নরওয়ের দেবতা জেন্ডার ফ্লুইড লোকি, একানড়ে সব মিলেমিশে যায় এই দুনিয়ায়। সেখানে আলোর অন্যরকম রং। কথা বলা খরগোশ, ভেড়ার ছানা, জ্ঞানের পেঁচা লেখককে সেই দুনিয়ার দরজার সন্ধান দেয়। সেখানে লেখক 'রাইড দ্য ওয়াইল্ড হর্স' ধ্যানের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন যেখানে প্রতিটি অনুভূতি একেকটা উদ্দাম বুনো ঘোড়ার মত। অভিযোগ একটিই, বইটি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। ... ...
ওদিকে বেড়ানোর গন্ধে গন্ধে ছোদ্দি আর ছেনু চলে এসেছে দৌড়ে দৌড়ে। ছেনু বলল, আমার তো আপিস আর কলেজ কিচ্ছুটি নেই, আমিই নিয়ে যাব তোমায়। আর ছোদ্দি জানাল তার রোজ রোজ ইস্কুল যেতে মোটেই ভাল্লাগেনা। তাই ক'দিন ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাবে তার ভোট সবচে আগে পড়বে। কিন্তু আমাদের মহারাজ যতই বীরপুরুষ হন, সেনাপতি না থাকলে কি আর যুদ্ধযাত্রায় বেরোনো যায়! তাই সবার সম্মতিক্রমে এই যাত্রার সেনাপতি হিসেবে বেনাকেই মনোনীত করা গেল। তার ওপরই দায়িত্ব পড়ল হলিডে হোম ঠিক করে সবাইকে নিয়ে পুরী ঘুরিয়ে আনার। বেনা তো এই দায়িত্ব পেয়ে খুব খুশি। সেও কোনোদিন পুরী যায়নি, নতুন জায়গা দেখা হবে, ঘোরাঘুরি হবে। বড়দা এরমধ্যে ওদের ট্রেনের টিকিটও কেটে নিয়ে এসেছে। ট্রেনের নাম আগেই বলেছি, পুরী এক্সপ্রেস, সেকেন্ড ক্লাস সিটিং, মানে বসে বসে যেতে হবে। যাক শেষ মুহূর্তে টিকিট পাওয়া গেছে এই ঢের। ছোড়দার আগেই পুরী ঘোরা। খুব ছোট্টবেলায় মামা আর দিদিমার সাথে গিয়েছিল। তখন তো এরকম হলিডে হোম ছিল না, পাণ্ডার বাড়িতে আট আনা দিয়ে থাকত। ছেনু গিয়ে তাই ছোড়দার কাছে প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে ফেলেছে," হ্যাঁরে, মা বলছিল, ওখানে নাকি এত্ত জল?" - জল আছে তো, এত বড় সমুদ্র, জল থাকবে না! - সমুদ্রটা কত বড়? আমাদের এই বাবুঘাটের গঙ্গার মতো? - না না, বিশাল, বিশাল বড়। আর তাতে সব দোতলা সমান ঢেউ আসে। এক ঝাপটায় লোককে উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। আর সমুদ্রের ধারটা কেমন জানিস তো, পুরো বালি দিয়ে ঢাকা। ওই সামনের বাড়িটা তৈরি হওয়ার সময় এত বালি এসেছিল মনে আছে? তার থেকে অনেক অনেক বেশি বালি ওখানে। - বাবুঘাটের মতো সবাই নাকি ওখানে গিয়েও চান করে? অত ঢেউ হলে চান করে কি করে? - ওখানে বেশি দূর যেতেই নেই, গেলেই ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে। নুলিয়ারা আছে, ওরা বাচ্চাদের ধরে ধরে সেই গভীর সমুদ্রে চান করাতে নিয়ে যায়, তারপর তাদের কি হয় কেউ জানেনা। খুব সাবধান! আর জলটা এমন নোনতা, চোখে মুখে ঢুকে গেলেই জ্বালা করে। আর ঢেউ এসে গেলে ওমনি ছুট্টে পালিয়ে যেতে হয়। ... ...
"কত লোক জনগণকে সাহায্য করে, জনগণের সেবা করে বড়োলোক হয়ে যাচ্ছে রে, বালিয়া...আর তুই ভাবছিস বিনামূল্যে সাহায্যের কথা?" ... ...
ওদের মালপত্রগুলো বূটে রেখে দিল ড্রাইভার, তারপর পেছনের সীটে আরাম করে বসল ওরা। গাড়ি স্টার্ট নেবার পর প্রথম কথা বললেন এসপিণ্ডোলো; মনে রেখো, তোমরা যে কাজ করতে এসেছ, সে কাজের সঙ্গে আমার কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই, আর আমার কোন রকমের এক্সপার্টিজও নেই। উদ্ধার-করা প্রাণীদের বাঁচাবার চেষ্টা করতে পারি আমি, কিন্তু উদ্ধারের কাজে কোন অভিজ্ঞতাই নেই আমার। লী আমাকে বলেছেন ফল্গু এবং তার সহকারীদের ওপর ওঁর দারুণ ভরসা, অতএব দারুণ ভরসা আমারও। ... ...