২৫।
অনেকদিন পর রেকর্ড প্লেয়ারটা চলছে। পঙ্কজ মল্লিকের রবীন্দ্র সংগীতের এই রেকর্ডটা কাকা দিয়েছিলেন ছবিকে। এই পিঠে সঘন গহণ রাত্রি গানটা রয়েছে। বড় সুন্দর গেয়েছিলেন গানটা! তখন অবশ্য এ ধরনের গান ছবি শুনতেন না। আজকাল কিন্তু বেশ লাগে রবিবাবুর গান গুলো। রবিবাবুর গানের রেকর্ড উপহার দিলেন রবি কাকা - ভাবনাটা মনে আসতে নিজের অজান্তেই ঠোঁট দুটোতে হাল্কা হাসির ছোঁয়া লাগল।
সত্যি, রবিকাকার দৌলতে অনেক রকমের গান যেমন শোনা হয়েছে তেমনই অনেক গুণী মানুষের সাথে আলাপও হয়েছে ছবির। পঙ্কজ বাবুর কথাই ধরা ... ...
২২।
শীতের দিনে সন্ধ্যেটা নামে বড় তাড়াতাড়ি; বিকেল আর সন্ধ্যের সন্ধিক্ষণের যে রঙটা - তা উপভোগ করবার সময়টুকু না দিয়েই। শুরু হয়েই যেন শেষ হয়ে যায়। একটু বেখেয়াল হলেই সেদিনের মতন উধাও হয় সেই রঙ। আবার প্রতীক্ষা আগামী দিনের জন্য।
আজকে সেই রঙটা দেখা হল না সুবোধের। স্কুলের পর কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে বসেছিলেন পড়া দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। এদের বাড়িতে পড়া বলে দেওয়ার মতন কেউ নেই। প্রাইভেট টুইশানির কথা তো স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা এরা। অথচ এদের ইচ্ছে আছে। লেখাপড়ার প্রতি শ্রদ্ধা আছে। নিজে শিক্ষক হয়ে যদি এ ... ...
১৮।
সকাল হলে তোমার কাছে যাবো ভাবি
দুপুর হলে তোমার কাছে যাবো ভাবি
বিকেল হলে তোমার কাছে যাবো ভাবি
রাত্রি হলে পলিয়ে আসি ভয়ে
সকাল হলে বকুল্গুলি গন্ধ ছড়ায়
দুপুর বেলা রেলিং জুড়ে ডুরে শাড়ি
বিকেল হলে খোঁপায় শুধু জুঁই টগর
রাত্রিবেলা ফিরে আসি ভয়ে
সকাল দুপুর বিকেল জুড়ে ইচ্ছাগুলি
রাত্রিবেলায় কঠিন সুরে কথা বলে
ভালোবাসায় স্মৃতিগুলি রৌদ্র মেখে
রাত্রি হলে অন্ধকারে মুখ লুকোয়।
বিকেলের রোদ পড়ে আসছে। চারদিকে সিঁদুরের ফিকে রঙ। ছাদ ... ...
১৬।
তবলচী একটা গৎ বাজাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে শুনছে বিশ্বনাথ। বড় মিঠে হাত লোকটার। আজকে রেওয়াজ করতে মন চাইছে না। শোনাটাও অবশ্য রেওয়াজেরই একটা অঙ্গ। গুরুজী বসে আছেন ফরাসের ওপর, মাঝে মাঝে ওনার মুখ দিয়ে বেরচ্ছে উৎসাহ ব্যঞ্জক কিছু শব্দ। বিশ্বনাথ মাটিতে বসেছে; গুরুজীর সাথে একাসনে বসার কথা চিন্তাও করতে পারেনা ও। ঘরের মধ্যে ওরা তিনজন ছাড়া আর রয়েছে এস্রাজ বাদক ধীরেন্দ্র । সেও নিজের বাদ্য যন্ত্র পাশে রেখে দিয়ে বাজনা শুনছে তন্ময় হয়ে। গুরুজীর ঘরটা ছোট ও বাহুল্য বর্জিত । ঘরে কিছু বাদ্য যন্ত্র ছাড়া রয়েছে ... ...
১৪।
একটা সজনে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিনে বাদাম খাচ্ছে গণেশ। সন্ধ্যে হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। একটু আগে তাঁতিবাড়ি থেকে তাঁত বোনার খট্খটাখট্ খট্খটাখট্ শব্দ আসছিল। মিনিট পনের হল শব্দটা বন্ধ হয়েছে। এখন রাস্তার উল্টোদিকের ঠাকুরবাড়িটা থেকে আসা ঘন্টা আর কাঁসরের শব্দ আশপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকের মতে এই ঠাকুর বাড়িটাই চৈতন্যদেবের জন্মস্থান। অনেকের আবার মত ভিন্ন। তাঁরা বলেন মহাপ্রভুর জন্ম হয়েছিল নদীর ওপারে - মিঞাপুরে। লোকের মুখে মুখে সেই মিঞাপুরই এখন মায়াপুর। গণেশের কিন্তু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে কর ... ...
১২।
গোছগাছ হয়ে গেছে প্রায়। গোছানো বলতে একটা সুটকেসে দিন দুয়েকের জামাকাপড় আর বিভিন্ন পরীক্ষার শংসা পত্র গুলো। কালকে ভোরের ট্রেন ধরতে হবে কলকাতা যাওয়ার জন্য; পরশু ইন্টারভিউ। অনেক কিছু নির্ভর করছে এই ইন্টারভিউটার ওপর; বাড়ির সকলে তাকিয়ে ওর মুখের দিকে। হয়ত মুখে কেউ কিছু বলছেনা, কিন্তু কমল জানে সকলে ওর সাফল্য কামনা করছে মনে মনে। হতে পরে সকলের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িয়ে আছে ওর সাফল্যের সাথে, তাই এই চাওয়া; তবু এই চাওয়াটা ভালো লাগছে ওর। একটা অব্যক্ত চাপও যে পড়ছেনা ওর ওপর এমনটা নয়, কিন্তু তবু ভালো ল ... ...
১১।
এক বার নক্ষত্রের পানে চেয়ে-একবার বেদনার পানে
অনেক কবিতা লিখে চলে গেল যুবকের দল।
পৃথিবীর পথে-পথে সুন্দরীরা মূর্খ সসম্মানে
শুনিল আধেক কথা;
...
....তবু আহা, ইহাদেরি কানে
অনেক ঐশ্বর্য ঢেলে চলে গেলো যুবকের দল;
একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে-একবার বেদনার পানে।
অন্ধকার হয়ে গেছে। শীতকালের বেলা। সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই ঝুপ করে আলো মরে আসে। স্কুল থেকে ফিরেই চটির মাঠে ছুটেছিল গণেশ। আজ গণেশদের রয়্যাল ক্লাবের সাথে এথলেটিক ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ ছিল। প্রচণ্ড রাফ খে ... ...
১০।
আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি
সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ।
তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি
তাহার গানে আমার নাচে বুক।
শোভা বুঝতে পারছে ওর পেছনে জনা দুয়েক রয়েছে। সামনে আরও একজন ওকে ধরার জন্য ওঁত পেতে রয়েছে। ধরবে! তা চেষ্টা করে দেখুকই না একবার! শরীরে হাল্কা একটা মোচড় দিয়ে সামনের জনের দিকে তেড়ে গেল ও। ওকে তেড়ে যেতে দেখে সে একটু বেসামাল হয়ে পড়েছে। সেই সুযোগে সামনের মেয়েটাকে হাল্কা একটা ধাক্কা মেরে পেছনে ঘুরতে যেই যাবে অমনি পেছন থেকে দুজন এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর ঘাড়ে। এই ... ...
৯।
তোমাকে দোহাই দিই,
একটা সাধারন মেয়ের গল্প লেখ তুমি।
বড়ো দুঃখ তার।
তারও স্বভাবের গভিরে
অসাধারন যদি কিছু তলিয়ে থাকে কোথাও
কেমন করে প্রমাণ করবে সে-
..............................
আমরা বিকিয়ে যাই মরীচিকার দামে।
আজ রবিবার। স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই। ঘুম ভেঙে গেলেও তাই বিছানাতেই শুয়ে রইল কিরন। ছুটি আছে বলে কাল রাত্রে অনেক্ষন পড়েছে। রাতের বেলায় পড়তে খুব ভালো লাগে ওর। চারিদিক চুপচাপ; একটু কান পাতলে নিজের বুকের ধুকপুকুনিও শোনা যায় স্পষ্ট।মনঃসংযোগ ক ... ...
৮।
জানলা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়ার সাথে সাথে সিনেমার গানের কলিও ভেসে আসছে দূরাগত কোনো উৎস থেকে। খুব সম্ভবত রেডিও। রাগ আশ্রয়ী গান। গানের কথা গুলো বোঝবার চেষ্টা করল বিশ্বনাথ। কান খাড়া করে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো পায়ে পায়ে। ভালো করে বোঝবার আগেই হাওয়ার অভিমুখ পাল্টে গেল। বিরক্ত হয়ে ফিরে এসে খাটের ওপর বসল আবার। চাইলে টেবিলের ওপরে রাখা মার্ফির রেডিওটাতে স্টেশনটা ধরতেই পারত, কিন্তু ইচ্ছে হলনা।
সন্ধ্যের পরে তেমন কোনো কাজ থাকেনা ওর। সকালটা রেওয়াজ করে কেটে যায়। তারপর দিনের বেলাটা স্নান খাওয়া ইত্যা ... ...