হইচইয়ে আমি শেষ সিনেমা, খুব সম্ভবত, দেখেছিলাম, কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন। তাতে বেশ কটা গান ছিল। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল "কেনিয়ার জঙ্গলে বিপদের তাঁবু / অপরাজিতের নাম আজও কাকাবাবু"। সত্যি, এটাই লিরিক ছিল। সিনেমায় অনেক দৃশ্যও ছিল(না হলে সিনেমা হবে কীকরে)। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছিল যেটা, সেটা হল, কেনিয়ার জঙ্গলে সন্তুকে সাপে কামড়াল। সঙ্গে সঙ্গে সন্তু মাথা ঘুরে উল্টে পড়ে প্রায়। এত বিষ। কাকাবাবু ঝাঁপ দিয়ে পড়ে রক্ত চুষে থুথু করে ফেলতে লাগলেন। একটু পরে দেখা গেল, সন্তু, কাকাবাবু দুজনেই হাল্কা করে কেলিয়ে পড়েছেন, কিন্তু মোটের উপর সুস্থ। কীকরে হল? কাকাবাবু বললেন “বিষ টা আমরা শেয়ার করে নিয়েছি।” ... ...
বাংলাদেশের অবস্থা যে ভয়াবহ, সে আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ছাত্ররা গুলি খাচ্ছেন। ট্যাঙ্কও নামছে শুনলাম। আমার তালিকায় থাকা ছেলেমেয়েরা দেখছি "আন্দোলনে যাচ্ছি" লিখে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। ইন্টারনেট নাকি জায়গায় জায়গায় বন্ধ। মেদিনিপুরের ভারত-ছাড়ো আন্দোলনের ইতিহাস মাথায় আসছে। যুবকরা পকেটে নাম-ঠিকানা লেখা কাগজ নিয়ে মিছিলে নামতেন সেই সময়। কেউ ফিরতেন, কেউ ফিরতেননা। আবু সাইদ ফেরেননি। ঢাকা তিয়েন-আন-মেন-স্কোয়ার হবে কিনা জানিনা, তবে আবুর ছবি তিয়েন-আন-মেন-স্কোয়ারের সেই যুবকের মতোই আইকনিক হয়ে গেছে। কোনো সন্দেহ নেই, হাসিনা সরকার বৈধতা হারিয়েছে। ভোটের ফলাফল যাই হোক, বিদায়ঘন্টা বাজছে। এইসব কান্ড ঘটানোর পর কোনো সরকার দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেনা। এরশাদ পারেননি। সাম্প্রতিক কালে এর চেয়ে ঢের কম জনজাগরণে পশ্চিমবঙ্গেও উল্টে গিয়েছিল রাজ্যপাট। হাসিনার যাওয়াও সময়ের অপেক্ষা। ... ...
সিঙ্গুরের পরের স্টেশন কামারকুন্ডুতে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান শুনলাম, এক হকারকে আরপিএফ গুঁতো মেরে ট্রেনে থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় বাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায়, কিছুদিন আগেই বিএসএফ একজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের দাপাদাপি সীমান্ত ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত। কান পাতলেই অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায়। তাদের দাপাদাপি রেলে। কান পাতলেই শুনতে পাবেন অত্যাচারের অভিযোগ। বাঙালিদের তুলে হিন্দুস্তানিদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে হকার হিসেবে, স্টেশনের স্থায়ী স্টলগুলোতে হিন্দিভাষীদের অস্বাভাবিক বাড়বৃদ্ধি। ... ...
মোদি কি আদৌ বারানসীতে জিতেছেন? ফলাফল বেরিয়ে যাবার পর এই প্রশ্ন কেন? কারণ, অন্য কেউ না, বিজেপির নেতারাই প্রশ্নটা তুলছেন। গোপন কিছু না। আস্ত সাক্ষাৎকার বেরিয়েছে। কিন্তু খুব সম্ভবত আপনি দেখেননি, কারণ মিডিয়া দেখায়নি। বা যৎসামান্য দেখিয়েছে। ওদিকে ব্যাপারটা কিন্তু বিস্ফোরক। তাই আমরাই ভিডিও সমেত জিনিসটা সামনে নিয়ে এলাম। আমাদের চ্যানেল এখনও পুরোদস্তুর তৈরি না। কিন্তু এইসব জিনিস এলে এখনও সঞ্চালকরা তৈরি না বলে তো থেমে থাকা যায়না। তাই করে ফেলা হল। কেন করে ফেলতে হল, সে দেখলেই বুঝতে পারবেন। ... ...
মহম্মদ সেলিম বহু ক্ষেত্রেই সঠিক কথা বলে থাকেন। এবারও বলেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, "কেউ কেউ স্বঘোষিত বিপ্লবী আছে, তাদের আমরা বলি ফেসবুকে বেশি বিপ্লবীয়ানা করবেননা। কিন্তু করে। এখানে এমন একটাও সিপিএমের কাছ থেকে এক্সপেক্ট করতে পারোনা, যে, মহিলাদের সম্পর্কে বা এ ধরণের ভাতা সম্পর্কে অফিশিয়ালি ডিনাউন্স করছে। কেন করবে? আমরা আমাদের বামপন্থী আন্দোলন মানে হচ্ছে, গোট বিশ্বে আমরা চাই, সরকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে, মানুষের যে অধিকার দিতে পারছেনা, তাকে কিছুটা অন্তত সাবসিডাইজ করবে। আর বাকি যারা এগুলো নিয়ে কটাক্ষ করছেন, তাঁরা বামপন্থী নন, তাঁরা হতে পারেন সমর্থক, আমাদের দায় আমাদের কথা তাঁদের কাছে নিয়ে যাওয়া, আমাদের মাধ্যমগুলো দিয়ে, সরাসরি তাঁদের কাছে গিয়ে। কেউ কেউ উগ্র সমর্থক আছেন, তাঁদের আমরা সমর্থক থাকতে বলব, উগ্রতা কমাতে বলব।" (শুনে শুনে লেখা, মোটামুটি হুবহু উদ্ধৃতি)। ... ...
কাল থেকে দেখি তথাকথিত বাম-সমর্থকরা ভর্তি করে লিখে চলেছেন, "শিক্ষা নয় জিতল ভিক্ষা"। আশ্চর্য হইনি, কারণ সিপিএমের মিছিলে গুচ্ছের লোক হয়, কিন্তু ভোট পায় বিজেপি। এঁদের সঙ্গে বস্তুত শাইনিং চাড্ডিদের বিশেষ তফাত নেই। রাজনীতি-ফিতি কিচ্ছু না, এঁদের মূলত দুটো দাবী। এক, বাম প্রার্থীরা খুব শিক্ষিত। দুই, পশ্চিমবঙ্গে হাইফাই চাকরি নেই, তাই বেঙ্গালুরুতে (কিংবা টিম্বাকটুতে) গিয়ে করেকম্মে খেতে হয়। শিক্ষিতরা খুব উঁচুদরের লোক, বাদবাকি ফালতু, এটা তাঁদের মাথার মধ্যে গেঁথে আছে, আর শিক্ষিতদের চাই মোটা-মাইনের চাকরি, এইটাকে তাঁরা প্রকৃত কর্মসংস্থান ভাবেন। দুটোই খুব সত্যি হতেই পারে (নাও পারে)। কিন্তু সেটা সমস্যা নয়, সমস্যা হল, এই দুটোই, বামপন্থা ছাড়ুন, যেকোনো মধ্যপন্থী জনপ্রিয় রাজনৈতিক চিন্তারই ঠিক উল্টোদিকে। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্বের প্রায় কোনো জনপ্রিয় নীতিই নির্ধারণ হয়না, হলেও মুখে বলা হয়না। খেটে-খাওয়া-মজদুর ইত্যাদিদের কথা অন্তত কাগজে-কলমে লেখা থাকে, কারণ বুক-বাজিয়ে "আমরা এলিট" বলার মতো দুঃসাহস নেহাৎই আত্মহত্যাপ্রবণ না হলে কোনো রাজনৈতিক দলই দেখায়না। ... ...
বুথফেরত সমীক্ষা দেখে আপনি কি ভেঙে পড়েছেন? তাহলে শুনুন, চ্যানেলে চ্যানেল গতকাল যে সব পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে তার বেশিরভাগ-ই ঢপের চপ। তেলে জল নয়, জলেই দুফোঁটা তেল। একেই পরিশীলিত ইংরিজিতে বলে স্ট্যাটিস্টিকাল মার্ভেল। উদাহরণ? কত চান? ১। রাজস্থান। News24 পূর্বাভাস দিয়েছিল যে রাজস্থানে বিজেপি ৩৩টি আসন জিতবে। জিততেই পারে, অঙ্কের হিসেব যখন। কিন্তু সমস্যা একটাই। রাজস্থানে আছেই মোট ২৫টি আসন। ২। হিমাচল। হিমাচলে Zee News এনডিএকে ৬-৮টি আসন দিয়েছিল। সেটাও অসম্ভব কিছু না, চারদিকে মোদি তরঙ্গ। কিন্তু সেখানেও সমস্যা একটাই। সেখানে আছে মাত্র ৪টি লোকসভা আসন আছে। ... ...
সত্যজিৎ ঘরে-বাইরেতে সন্দীপের গলায় কিশোরকুমারকে গিয়ে গান গাইয়েছিলেন। কেন গাইয়েছিলেন? আপনারা সক্কলেই ঘরে-বাইরে পড়েছেন। ফলে আলাদা করে বলার কিছু নেই, রবীন্দ্রনাথের দুখানা উপন্যাস খুবই প্রচারধর্মী, গোরা এবং ঘরে-বাইরে। গোরাতে প্রায় চোঙা ফুঁকে ভালো-ভালো কথা বলা হয়েছে। ঘরে-বাইরেতে অতটা নয়। কিন্তু তাতেও, সেটা প্রায় কুরুক্ষেত্র। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং নিখিলেশ হয়ে সন্দীপকে শৈল্পিক কথার মারপ্যাঁচে নানা ব্রহ্মাস্ত্র ঝেড়েছেন। বিমলা বেচারি সেই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রায় উলুখাগড়া। তাকে বাদ দিলে ওটা আর উপন্যাস না হয়ে 'স্বদেশী বিষয়ক আবর্তক ও নিবর্তক সম্বাদ' হয়ে যেত, তাই রাখা। ... ...
চালচিত্র এখন সিনেমাটাও এই রীতি অনুসরণ করেই বানানো। যদিও অত পুরোনো না, এবং অত গভীর অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন পড়তনা, কিন্তু সেটুকুও করার দরকার মনে হয়নি। এই সিনেমায় আশির দশকের কলকাতায় দিব্যি ল্যাজ তুলে ঘুরে বেড়ায় নীল-হলুদ বেসরকারি বাস, আশিতে সেসব বাস কেউ চোখে দেখেনি। শব্দ শোনা গেলে তারা হয়তো নিউটাউন-নিউটাউন বলেও হাঁক পাড়ত। দেখা যায়, সবুজ অটো। নায়কের বৌয়ের নাম মাঝেমধ্যেই মিতা থেকে বদলে গীতা হয়ে যায়। এবং মিতা ওরফে গীতা মিনার্ভা থেকে উত্তরপাড়া যেতে নিয়মিত শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরেন। শিয়ালদা থেকে উত্তরপাড়া ট্রেনে চড়ে যাওয়া একেবারে অসম্ভব কিছু না, কিন্তু সে তো নৈহাটি-ব্যান্ডেল হয়েও যাওয়া যায়, সাধারণভাবে সুস্থ লোকে ওই দিক দিয়ে নিয়মিত যায় না আর কি। ... ...
এই পুরো ব্যাপারটা যদি দেখেন, এর মধ্যে "শিক্ষা হল অধিকার" বা মানকল্যাণের কোনো জায়গা নেই। বোর্ড একটি অর্থকরী প্রতিষ্ঠান, তারা অনুমোদনের বিনিময়ে পয়সা নেয়। দেয়না। স্কুলও একটি অর্থকরী প্রতিষ্ঠান। তারা সম্পূর্ণ বেসরকারি। তারা টাকা তোলে ছাত্রদের কাছ থেকে। তার থেকে শিক্ষকদের মাইনে দেয়। নিয়োগও করে তারা এবং মাইনেও তারাই ঠিক করে। মাইনে ঠিক কী হবে, তার আইন নেই, কিছু উপদেশ আছে। ফলে সেটা কোম্পানির ইচ্ছে। এক কথায় পুরোটাই ব্যবসা। কত ফি হবে, কত মাইনে হবে, সবশুদ্ধ। কোথাও কোনো নির্দিষ্টতা নেই। হ্যাঁ, কোম্পানির মালিক লাভের গুড় পকেটে নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেননা। কিন্তু তাঁরা গুষ্টিসহ ডিরেক্টর হয়ে মোটা টাকা মাইনে নিলে সেটা সম্পূর্ণ বৈধ। ... ...