অনেকেই গুরুর বইয়ের দত্তক নিয়েছেন, বা ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ। তার চেয়েও বেশি এসেছে প্রশ্ন। গুরুর বইয়ের দত্তক,কী কেন ? যেহেতু অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে, ছোটো করে লিখেই রাখি।আমরা বইয়ের দাম কম, খুবই কম রাখি। নীতিগতভাবেই। ফলে বইয়ের বিক্রি খুবই ভালো হলেও, আমাদের মেরেকেটে টাকাটা উঠে আসে। কখনও সামান্য কিছু লসও হয়, কিন্তু সেটা অ্যাবসর্ব করে নেওয়া যায়। এগুলোর কোনোটাই কোনো সমস্যা না, কারণ আমরা প্রফিটের জন্য এই খেলায় নামিনি। সমস্যা এই, যে, এইভাবে চললে আমাদের টাইটেলের সংখ্যা প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছেনা। ... ...
অজিত রায় আর নেই। আপামর পাঠক সমাজ, অজিত রায়ের লেখা কখনও উদযাপন করেনি। মৃত্যুতে ক্ষণিক শোকপ্রকাশ দেখেছি। সমাজমাধ্যমের পাতায়। তারপর সে পাতা উল্টে গেছে। বদলে গেছে পৃষ্ঠাসংখ্যা, ক্যালেন্ডারের তারিখ। বইমেলা আসছে, কিন্তু একশটি পুস্তকালোচনায় অজিত রায়ের কথা আর নজরে পড়েনা। না পড়ারই কথা। ভূত আর তান্ত্রিক ছেয়ে আছে বাজারে। অজিত রায়দের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।বাংলা ভাষার অন্যরকম গদ্যলেখকদের এই এক ট্র্যাজেডি। তাঁরা দাঁতে দাঁত চেপে লিখে যান, তারপর চুপচাপ মরে যান। কপাল ভালো থাকলে সব দাঁত-টাত পড়ে, চুল-টুল উঠে যাবার পর এক আধটা পুরষ্কার পান। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় পেয়েছিলেন, এমন একটা বইয়ের জন্য, যা কস্মিনকালেও তাঁর শ্রেষ্ঠ লেখালিখির মধ্যে পড়েনা। উৎপল কুমার ... ...
রাজকার্য যে মূল্যহীন ব্যাপার-স্যাপার, এমন কথা লিখেছিলেন দারাশিকো, জাহানারার জ্যেষ্ঠভ্রাতা, আর এক সুফি শিষ্য। সংক্ষেপে--- '' সলতনত্ সহল অসত্ খুদ রা আশনাই ফকর কুন / কতরহ্ ই না দরিয়া তওয়ানদ শুদ চুরা গওহর শওয়াদ" --- রাজত্ব তো সহজ বস্তু বরং ফকিরি শেখো ভাই জলবিন্দু সাগর জানুক মুকুতা হয়ে লাভটি নাই !আর এঁদেরই পূর্বপুরুষ, বাবর, তুর্কি ভাষায় লেখা তাঁরই এক কবিতায় বলেছেন--- অলীক ... ...
কুলদা রায় একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। এই জন্য নয়, যে, তিনি বিপজ্জনক শব্দ লেখেন। নতুন করে আর বিপজ্জনক কিছু লেখা তো সম্ভব নয়, সব শব্দই এখন কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে অভিধানে জমানো আছে। সব বাক্যই ব্যাকরণে বাঁধা। রবীন্দ্রগানের সব সুরই আছে স্বরলিপিতে। সব নদীই সমুদ্রে পড়ে, আর বিপ্লব শেষ করে সব পাখিই ঘরে ফেরে। আসল বিপদ তাঁর দেখার ভঙ্গীতে। কত লোকে কত ভাবে দেখে। কেউ আড়চোখে, কেউ সোজাসুজি। কারও দৃষ্টি ঘোরালো, কেউ চোখ পাকিয়ে তাকায়। কেউ কটাক্ষ করে, কেউ রাখে নজরবন্দী। কিন্তু দেখে একই জিনিস। সামনে সুচিত্রা সেনকে পেলে, সবাই 'মহানায়িকা'ই বলবে। কিংবা মোহময়ী। কিংবা মুনমুন সেনের মা। মানে, অভিধানে যা লেখা আছে। ফিল্মফেয়ারে ... ...
যতই স্মার্ট হও 'শিট' আর 'ফাক' বলেগ্লোবাল ইংলিশে গাল দিয়েযতই 'সেন্ট্রাল' হবার ইচ্ছেয়হিন্দি চাল চষো হাল দিয়েদিনের শেষে সেই লোকাল ভাতই খাবেমাছের ঝোল আর ডাল দিয়েকারণ লোকালেই আগামী 'কাল' আছেগ্লোবাল শেষ হয় 'বাল' দিয়ে।এটা সোমনাথ রায়ের লেখা নয়, আমার লেখা। ন্যানোপুরানে এর একটা অন্য ভার্সান আছে। সোমনাথ এসব ফুক্কুড়ির ধার ধারেনা। কিন্তু মধ্যযুগ ছিল অন্ধকার, তারপর জল পড়িল, পাতা নড়িল, ফুল ফুটিল এবং সিরাজ বধ করিয়া, সগর্বে য়ুরোপ আসিয়া বাংলাকে গ্লোবাল করিয়া জ্ঞানের আলো দেখাইল, এইসব ঢপেচ্চ্পেও বিশ্বাস করেনা। সে রামপ্রসাদের ভক্ত। প্রগতি নামক লিনিয়ারিটিকে এন্তার দুচ্ছাই করে, বোধহয় একটু বেশিই করে। ইংরেজ এসে বাংলায় স্বর্গের সিঁড়ি বানিয়ে দিয়েছিল, সেই ... ...
সুভাষ বসুর জন্মদিবসের প্রাক্কালে, দেখলাম, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আনন্দ পটবর্ধন দাবী করেছেন, সুভাষ বসুর সঙ্গে আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার আদর্শগত জোট ছিল। হয় সোজাসুজি, নয়তো মাঝে হিটলারকে রেখে। কোনটা, ইংরিজি ভাষার কারণে ঠিক স্পষ্ট নয়। তা, এতদিন আমরা জানতাম, কোনো কেন্দ্রীয় সরকারই সুভাষকে না পারে গিলতে, না পারে ওগরাতে। তারা একদিকে হইচই করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে সুভাষের জন্মদিবস পালন করে, অন্যদিকে পুরোনো সোভিয়েতের রাশিয়ার কেজিবি আর্কাইভ খুলে গেলেও সুভাষের অন্তর্ধান নিয়ে অনুসন্ধান করতে সেদিকে উঁকি মেরে দেখারও প্রয়োজন মনে করেনা। আনন্দ পটবর্ধনের ফেসবুক পোস্টে সে ভুল ভেঙে গেল। ... ...
কাজের বাড়ির বাইরে পা দিয়ে শ্যামা এক সম্পূর্ণ অন্য মানুষ হয়ে যায় । বন্দির দশা কাটলে যেমন হয়। ও জানে বৌদিরা ঠিক কী চায়। তাই কাজের বাড়িতে প্রবেশের আগে শ্যামা গায়ে আঁচল দিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে খুলে রাখে পায়জোড়। ছমছম শব্দ করে বাড়ির মধ্যে চলাফেরা করা কোনো বৌদিই পছন্দ করে না। এবং পায়জোড়ের সঙ্গে সঙ্গে ও খুলে রাখে ওর যাবতীয় ছমকছল্লোপন, ছয়ল ছবিলি চলন, ভ্রূভঙ্গিমা, নখরাবাজি। বাসন মাজতে মাজতে ছেলের স্কুলের কথা বলে । ... ...
সিএএ আইন প্রবর্তনের পর শাহীনবাগ এবং তৎপরবর্তী যে 'দাঙ্গা' হয়েছিল মাত্র দুবছর আগে, ২০২০ সালে, পরবর্তী দুবছরের করোনা পরিস্থিতিতে সেকথা অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে। অথচ ভয়াবহতার নিরিখে এই ঘটিয়ে তোলা 'দাঙ্গা' অন্যান্য গণহত্যাগুলির চেয়ে কম কিছু নয়। 'দাঙ্গা' চলাকালীন, ২৭শে ফেব্রুয়ারি, কিছু সমাজকর্মী দিল্লির কিছু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তাঁরা দেখেন, যে, পদ্ধতি এবং প্রকরণে নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে তোলা হয়েছিল দিল্লিতে, তা ২০০২ এর গুজরাত বা ১৯৮৪ র দিল্লির 'দাঙ্গা'র থেকে পৃথক কিছু নয়। হত্যার সংখ্যা নিঃসন্দেহে অনেক কম, কিন্তু পদ্ধতি এবং নৃশংসতা একেবারে এক। ... ...
এ এক অদ্ভুত সময়। এ এক হননকাল। পৃথিবীতে কালান্তক করোনার আক্রমণের বাইরেও ঘটে চলেছে একটানা প্রাণঘাতী হননযজ্ঞ। না, ভাইরাস না। ভাইরাস মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। কিন্তু এখানে যার কথা বলা হচ্ছে, তা রীতিমতো আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষেরই নিয়ন্ত্রণে। রাজনৈতিক নেতৃত্বে, সম্পূর্ণ পরিকল্পনামাফিক ভাবে নিত্যদিন ধ্বংস করা হচ্ছে, জল, জঙ্গল আবাসভূমি। এ এক অদ্ভুত সময়, যখন সাড়ম্বরে ধ্বংসসাধনের নাম দেওয়া হয়েছে উন্নয়ন, বন্যাকে চিরস্থায়ী করার নাম হয়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ, উচ্ছেদকে বলা হচ্ছে নগরায়ন, আর কর্পোরেট শকুনের নাম বেদান্ত। ... ...
সুবণসিরির এক সহোদরা ধানসিড়ি বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত। তবে তাদের অন্য সহোদরারা, ডিহং, ডিবং, গাবরু, জিয়াভরলি তত পরিচিত নয়। ক্ষীণতোয়া মনু নদীর নাতি পুতিও বর্তমান, তাই বা কে জানত? সেসব নদীর জলে সময়ের ছায়া কেমন ভাবে পড়েছিল তাও আমরা সম্যক জানি না। ময়মনসিংহের ঠুনকি, মানকি বা আৎকা পীরের বিষয়েও আমাদের জ্ঞান সীমিত। ভারত ভূখন্ডে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ত্রিপুরা, আসামের বাঙালীদের জীবন কেমন ছিল? আমরা জানিনা। ... ...