এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • খামখেয়ালে দেওয়াল লেখা

    Suman
    অন্যান্য | ২২ ডিসেম্বর ২০০৫ | ২০৫০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pipi | 173.161.6.201 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২২:০৮451685
  • যাক কাঞ্চন নিয়ে কনফ্যুশন তাহলে দূর হয়েছে আশা করা যায়। সাদা ছাড়া আর কোন রঙের কাঞ্চন অবশ্য আমি দেখি নি। বাড়িতে ছিল সাদা কাঞ্চন, বাসক আর ডবল টগরের গাছে। সেই ফুল দিয়ে ঠাকুরের নিত্য পূজো হত। অতএব সে গাছে হাত দেওয়া চলত না। পাশেই ছিল গন্ধরাজের গাছ কিন্তু সে ফুলে পূজো হত না। সুগন্ধী ফুলে নাকি পূজো হয় না। শুনে টুনে ছোটবেলায় দু:খ হত। আহারে বেচারা নারায়ণ, ফুলের আসল গন্ধ নিতে পারে না, হাঁচি হয় বোধহয়, বেচারা চন্দনের গন্ধ মাখিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটায়।
    তাতে অবশ্য আমার পোয়া বারো হয়েছিল। যখন তখন গন্ধ ফুলগুলোর বুকে নাক ডুবিয়ে প্রাণ ভরে গন্ধ নেওয়া যেত। আর মাঝেমাঝে একটি দুটি গন্ধরাজ কি জুঁই পাথরের খোরায় জল দিয়ে রেখে দেওয়া যেত পড়ার টেবিলে মাথার কাছে। মাঝরাত্তিরে কখনো ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম হাওয়ায় জানালার পর্দা উড়ছে, চাঁদের আলো জানলা গলে এসে ধুইয়ে দিয়েছে বিছানা বালিশ আর ফুলের গন্ধে ঘর ম' ম। কিরকম একটা সুখের ভাবে মনটা ভরে উঠতে। টুপ করে ফের ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতে দেরী হত না একটুও।
    কেন যে সে দিনগুলো আর ফিরে আসে না।
  • pi | 72.83.92.218 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২২:২৩451686
  • ডাবল টগর। ছোটোবেলাটা আরেকটু কাছে চলে এল।
    আমরা অবিশ্যি বলতাম, গোলাপ টগর।
    আমার তো গোলাপের চেয়েও সুন্দর লাগতো।
    গোলাপকে কেন জানি কোনোদিনই তেমন পছন্দ হয়নি। বড্ড দেমাকী।

  • I | 14.99.233.58 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২৩:০৯451687
  • সরি সরি। মাধবীলতা । কেমন করে মালতী বল্লাম !
    কিন্তু গুগল কবে থেকে আমার বৌ হল কে জানে ।
  • I | 14.99.233.58 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২৩:১৫451688
  • দাঁড়াও, লাল কাঞ্চন দেখাচ্ছি।
  • achintyarup | 121.241.214.34 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০০:৩৩451690
  • ডাগদারের ছবি কিছুই দেখা গেল না। তবে কাঞ্চনে আমার বড় আসক্তি। কামিনীতেও। সেই ছোটবেলা থেকে। গাঁয়ের বাড়ির বাগানে পাশাপাশি লাগিয়েছিলুম। সে কাঞ্চন কিন্তু এমন ছোটখাটো গাছ নয়। বিশাল বিরিক্ষ। ভেতর বাড়ির উঠোনেও একটি ছিল। একটি গাছের ফুল সাদা, আরেকটি হাল্কা মভ। বসন্তকালে যখন ফুল ফুটত, সারা বাগান ম ম করত ছোট্ট মিষ্টি গন্ধে। আমার ইস্কুলেও ছিল তিন চারটি কাঞ্চনগাছ। দুই রঙেরই।
  • nk | 151.141.84.194 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০০:৫৬451691
  • শ্বেতকাঞ্চন এর ছবি, সামনে থেকে।
    http://www.flickriver.com/photos/37118859@N02/4929558162/
    তবে রক্তকাঞ্চন ও হয়, সেগুলোর গাছ বড়ো বড়ো, ফুলগুলো ও একটু আলাদারকমের।

  • Su | 86.160.9.208 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৫:১৩451692
  • অচিন্ত্যকুমারের কামিনী কাঞ্চনে আসক্তি! আজ যদি পরমপুরুষ শ্রী রামকৃষ্ণ বেঁচে থাকতেন! :P
    শুনেছিলাম লোকে বলে ঠাকুর তোমাকে কে চিনতো যদি না চেনাতো অচিন্ত্য!
    জোকস অ্যাপার্ট! ফুলের গন্ধে ম ম করছে এই টই! খুব ভালো লাগা! মধুরম মধুরম!
  • kumu | 14.98.238.207 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৮:৩৯451695
  • সরি

    picasaweb.google.com/117647207273434308408/September102011#5650790118598586322

    picasaweb.google.com/117647207273434308408/September10201102#5650792066622088658

  • kumu | 14.98.238.207 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৮:৩৯451696
  • হচ্চেনামাদ্দারা।
  • sayan | 115.242.223.181 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৩:৫৯451697
  • কারুর্দ্দারাই হওয়া সম্ভব নয়, হেচটিটিপি"এস' থাকলে হয় না।
  • bibeka | 195.37.234.132 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:১২451700
  • কাঞ্চন নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে কিন্তু ওর পাতা নিয়ে যে আম আঁটির ভেঁপুর কৌশলেই প্রায় বাজানো যায় তাতো কেউ বললো না।
  • pi | 72.83.92.218 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২২:১৩451701
  • বাজাতো আমার বন্ধুরা। আমি কোনোদিন পারিনি। বাজানোর ব্যাপারে আমি খুবই অদক্ষ। ঠিকঠাক একটা সিটিই কোনোদিন বাজাতে পারলুম না :(

  • bibek | 195.37.234.132 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২৩:২৭451702
  • না না এ সিটির চেয়ে বহুগুণে সোজা, পাতটা ভাঁজ করে ধরে ঠোঁটে চেপে জোরে খুঁ দিলেই হল। আম আঁটির ভেঁপু
    বরং তুলনামুলক শক্ত।
  • Jhiki | 182.253.0.98 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১১:০৬451703
  • Name: nk Mail: Country:

    IP Address : 151.141.84.194 Date:10 Sep 2011 -- 12:52 AM


    এই ছবি গুলোকে কেউ ফোটোশপে রং করেনি, আসুন ইন্দোনেশিয়ায়, সাদা, গোলাপী, মেরুন, হলুদ, কমলা সব রং-এর কাঠচাঁপা/কাঠমল্লিকা দেখিয়ে দেব।

    সাদা, গোলাপী, হালকা বেগুনী কাঞ্চন, যা শুধু ফাল্গুনে নয়, এখানে সারা বছর ই বিকশিত হয় তাও দেখিয়ে দেব। হালকা বেগুনী কাঞ্চন তো আমাদের অফিসের পার্কিং লটেই আছে!
    জবাও অ-নে-ক রং এর দেখেছি, তবে সেটা মালেশিয়াতে আরো বেশী। KL তো একটা হিবিস্কাস গার্ডেনও আছে।
  • Kaju | 59.163.201.173 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:৪৬451706
  • কান দে কইলে
    দেবে না ওরে
    তার চে' বরং
    কানের ডগায়
    জোরসে এবার
    টান দে
    রশির কষি খুলে রে তুই
    এই অবেলায়
    পানসি ভাসা গাঙে
    হাতছানি দেয়
    পূবের তারা
    এবার চলি চান্দে
    নানান গেরো
    কেমনতরো
    আষ্টেপৃষ্ঠে বান্ধে
    সকল ভুলে
    শক্ত হাতে
    জোরসে রে তুই টান দে
    এই অবেলায়
    গান ভেসে যায়
    আলগা ঢেউয়ের ছন্দে
  • Tim | 198.82.24.135 | ১৭ নভেম্বর ২০১১ ০০:১৬451707
  • আবার এসেছে আষাঢ়.....
    এই মুহূর্তে মেঘে ঢেকে যাচ্ছে পাহাড়, ভেজা সবুজ রঙের কালচে ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। অকালবৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে উপত্যকা। কালো, খয়েরি, পাটকিলে রঙের ছোপে ঢাকা গবাদি পশুরা কেউ নেই এখন। নদীর রাশ টেনে ধরার কথা যেসব পাথরের, তারা একপাশে সরে, স্কুল পালিয়ে ধরা পড়ে যাওয়া দুষ্টু ছেলের মত ভয়ে ভয়ে বসে আছে। বাঁধন নেই কোথাও, প্রবল স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে ডুবে যাচ্ছে।

    স্মৃতিও ডুবে যাচ্ছে, আলগা হয়ে আসছে ঝোড়ো হাওয়ায়। জলের নিচে শিকড়ে জড়িয়ে থাকা মাটির মত ধুয়ে যাচ্ছে অতীত। মুখে একঝলক আগুন দিয়ে জলে ভাসিয়ে দেওয়া শবদেহের মত, ভাঙা নৌকার কাঠের টুকরোর মত, তেলতেলে কাগজে নামলেখা লেবেল সাঁটা মলাটের মত- পাড়ে ও পাথরে ঠোক্কর খেতে খেতে, আধডোবা হয়েও মরা চোখে আকাশ দেখতে দেখতে ভেসে যাচ্ছে সব। আরো একটু পরেই বড়ো কুয়াশা হবে। বৃষ্টির জলের ছাঁট, অন্ধকার, কুয়াশা আর মেঘে মিলে আবছায়া রচনা করবে।

    আবছায়া অনেকটা নেশার মত। আরো আরো ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার ডাক, না দেখা, চেতনাকে অস্বীকার করার স্বেচ্ছাচার লোভ দেখায়। ভেসে যাওয়া ত্বরান্বিত করার ভূমিকা করে, ডুবে যাওয়া উদ্‌যাপনের স্বপ্ন দেখায়। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা বালিতে মুখ গুঁজে থাকার মত দেখায় বটে, কিন্তু সেইটা সব নয়। আমি একজনের কথা জানতাম যে বালিশের নিচে মুখ গুঁজে রেখে ভাবতো, আফ্রিকার জঙ্গলে চলে এসেছে। আশে পাশে হিংস্র শ্বাপদ - যেকোনো মুহূর্তে একটা কিছু হয়ে যেতে পারে। সেও তো অস্বীকারের নেশাই। স্বপ্নহীন পৃথিবী থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকার নেশা।

    সেইরকম ভেসে যাচ্ছে সব, এখন। নদীর জল এখানে দাঁড়ায় না। জল এখানে মাটির রঙে ঘোলা না, পাথরের জৌলুসে উঙ্কÄল। সেই ক্লিশে, ঘোলা জলে নৌকা ভাসানোর স্মৃতিও ভেসে যাচ্ছে, স্বস্তি দিয়ে। ব্রাউন পেপার দিয়ে একবার একজন নৌকো বানিয়েছিলো। কি বিশ্রী সে জিনিস না দেখলে বিশ্বাস হবেনা। মেটে রঙের জলে, বাদামী নৌকো। বরং সাদা কাগজের নৌকো ঝকঝক করে। আর রোদ উঠলে তো কথাই নেই। এইসব স্মৃতি ভেসে যাচ্ছে, এই বৃষ্টিদিনে। ডোবায় টুপিয়ে পড়া বৃষ্টির জলের শব্দও ভেসে যাচ্ছে আরো বৃষ্টিতে। মোমের ফোঁটার মত জল বসে থাকার দৃশ্য মুছে যাচ্ছে। গাছের গোড়ায় গোড়ায় কালচে মাটির ঘ্রাণ যদিও তীব্র হচ্ছে, তবে আরো কিছুক্ষণ পরেই সেও মিলিয়ে যাবে অন্যান্যদের মত। নর্দমা দিয়ে মাছেরা হাঁসফাঁস করতে করতে প্রাণপণে সাঁতার দিচ্ছে, তাদের আনাচে কানাচেই বিবিধ যন্ত্র নিয়ে মানুষ ছুটছে বা ওঁত পেতে আছে, এইসব ছবিও তলিয়ে যাচ্ছে বড়দির জন্মদিনের পেনের মত, জলনিকাশী নালা একে একে গিলে নিচ্ছে জীবিত ও জড় কিছু তুচ্ছ বস্তু ও স্মৃতি। আরেকটু পরেই ঐখানে জল জমে সমস্ত এককার হবে।

    আপাতত ক্ষণস্থায়ী অস্বীকারের পালা চলছে। আরো কিছু স্মৃতি, আরো কিছু শব্দ-দৃশ্য-কথা, ইন্দ্রিয় অবশ করা ঘুমে ঢেকে যাচ্ছে সবকিছু। সেই বালিশটা হঠাৎ খুঁজে পাওয়া গেছে। স্যাঁতস্যাঁতে বালিশের নিচে অন্ধকার ডাকছে। সেখানে ঘন সাবাই ঘাসে সিংহেরা গুঁড়ি মেরে আছে। সেখানে মাসাই তার বল্লমে ফলা তুলে চুপ। এই মেঘ, পাহাড়, নদী আর ধুয়ে যাওয়া দেশ ছেড়ে উধাও হওয়ার পথ ডাকছে আমায়।
  • s | 117.194.102.31 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২২:৪৭451708
  • পার্বতী বাউল আর ফরিদা পারভীন। প্রিন্সেপ ঘাট। শুনেছিলাম সেখানে গান হবে। গান হবে - এই কথাটা শোনারও প্রয়োজন ছিল না। ফরিদা পারভীন, পার্বতী বাউল আর প্রিন্সেপ ঘাট। গান যে হবেই এমনটা ধরেই নেওয়া যায়। গান শুনতে যাওয়ার আমন্ত্রন ছিল, যাব না জানতাম। আমার তো বাড়ি যাওয়ার কথা। আমি তাই আরশীনগরে যাওয়ার কথা ভাবি না। কিছুই হয় না। বাড়ি যাওয়া হয় না। গান শোনা হয় না। সামনে বসে শোনা হয় না ফরিদা পারভীন। লালন। পার্বতী বাউল। সঙ্গী মন খারাপ। যন্ত্রনা আর চওড়া বেল্ট। সম্বল বলতে আইপড। বা সেলফোনে ধরে রাখা কিছু সময়। অন্ধকার স্ক্রীন আর জাতিস্মর। সাত্যকী আর আষাঢ়ের ভিজা পথ। বিক্রম সিং। কিছুই তো হলো না, সেই সব, সেই সব.. অপার হয়ে বসেই থাকেন ফরিদা পারভীন।

    উড়ালপুলের ল্যাম্পপোস্টের মরা হলদেটে আলো, সরু এই একচিলতে বারান্দা, প্লাস্টিকের চেয়ার আর বসন্ত বাতাসে অল্প অল্প নড়া একগাছ তালের পাতা। ঠিক যেন কেউ চামর দোলাচ্ছে সিংহাসনের পাশে দাঁড়িয়ে.. গ্রীলের বাইরে রাত গাঢ় হয়। স্টিলের গ্লাসে মিশ্রিত জলে দু কুচি বরফ। একসময় দু:খেরা এসে জমাট বাঁধে স্টিলের গ্লাসে। গঙ্গার ধারে কোনো এক প্রিন্সেপ ঘাটে গান গেয়েই যান ফরিদা পারভীন। পার্বতী বাউল। গঙ্গা পেরিয়ে এপারে ভেসে আসে না কোনো সুর..

    ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মরে যাওয়া আধখানা চাঁদ। সামনে নাকি দোল। দোল বলতেই মনে পড়ে কল্যাণী আর কলি। এক বাড়ি ভর্তি ফুলগাছ আর গাছভর্তি সব ফুল। মালু আর বাদশাহ। নি:ঝুম দুপুর আর সাঁই সাঁই মোটর বাইক। রঙে রঙে রঙীন সব মেলাযাত্রী। যেহেতু দোল তাই আকাশে একটা পূর্ণ চাঁদ থাকবেই। বাড়ির সবকটা আলো তাই নেভানো। পেছনের বাগানে বার্বিকিউ, পোড়া পোড়া মুর্গি, আলু, আর টম্যাটো। অফুরন্ত স্টক থেকে একের পর এক শুধু খাবারেরই গল্প বলে যাওয়া মালু। বুঁদ হয়ে থাকা শুভজিত। টাল খাওয়া বাদশাহ। দড়ির দোলনায় নিরন্তর দোলে জো। আশ্রমের প্রার্থনা সঙ্গীতকে ছাপিয়ে দিয়ে কলি গায়, আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে..
  • aranya | 144.160.226.53 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২৩:১২451709
  • এমনিতেই আজ কাজে মন নাই, নীল সোমবার, তার ওপর সামরান কিসব মনকেমনিয়া কথা লিখছে। দোল আসছে বুঝি? এদেশে খেয়ালও থাকে না, কবে এল আর গেল ...
  • titir | 128.210.80.42 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০১:১৭451710
  • বিষণ্ন এক সকাল। ছাইরঙা আকাশ। মনখারাপের দিন। "ঝরঝর বরিষে বারিধারা"। থামার কোন লক্ষণ নেই। বৃষ্টির ছাঁট এসে লাগছে কাঁচের জানালায়। বড় বড় ফোঁটার জল মুক্তোবিন্দুর মতো লেপটে আছে কাঁচের গায়ে। জানালাগুলো গলাসম উচ্চতায়। ভালো করে দেখা যায় না সবকিছু। কাদের জন্য বানানো হয়েছিল এইসব বাড়ি? জেলখানা না গবেষণার গোয়াল ঘর বোঝা মুস্কিল। সারি সারি ঘর। সকাল, দুপুর বিকেল, সন্ধে আলো জ্বলে ঘরে। দিনের আলো ঢুকবে কোথা দিয়ে? দিবা রাত্রি বোঝার উপায় নেই। যে জন দিবসে মনে হরষে, সেই আপ্তবাক্য ভুলে যেতে হয় এইসব দেশে।

    ভর্তি হচ্ছে লিকুইড নাইট্রোজেন এক পাত্র থেকে আর এক পাত্রে। হিমায়িত হয়ে থাকবে অগুন্তি কোষ। নাইট্রোজেনের ধোঁয়ায় ভরে গেছে আশপাশ। বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি। চোখ চলে যায় জানার বাইরে। ন্যাড়া ন্যাড়া গাছগুলি মাথা দোলায় বৃষ্টির সাথে। কদিন আগেই ভরা ছিল হলুদ, কমলা ও লাল পাতায়। ইয়োলো-উড, এল্ম, মেপল,বার্চ, ওক, চেস্টনাট সবারি একি দশা। অথচ কদিন আগেই সবুজ পাতাগুলি রঙ বদলাছিল দ্রুত। ফল কালার দেখতে লোকে ছুটি নিয়ে একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। কেউ স্মোকি তো কেউ আপার পেনিনসুলা। ফেসবুকের পাতায় পাতায় অজস্র রঙের ছড়াছড়ি। আজ তাদের ডাল খালি। শাখাপ্রশাখা চেনা যায় খুব ভালো করে। মাঝেমাঝে পাতা আরো কিছু দিয়ে তৈরী ছোট্ট পাখির শুণ্য বাসা। পাখি উড়ে গেছে কোথায় কে জানে? হয়তো বা উষ্ণতার খোঁজে! সবাই তো খুঁজে ফিরি এই উষ্ণতা।

    বিকেল থেকে শুরু হয় তুষারপাত। যাহা ছিল বৃষ্টি তাহাই তুষার হয়ে ঝরতে লাগল অনবরত। ঘাসের ডগা, গাছের ডাল, পাইনের সবুজপাতা ভরে গেল সাদা আস্তরণে। ঝুরো ঝুরো স্নো শাখা-প্রশাখা জুড়ে। কি নি:শব্দ পরিবেশ! মনে হয় মুনি ঋষিরা ধ্যান করতে বসেছেন। অপূর্ব সেই স্বর্গীয় সাদা। ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসে। ঘরের বাইরের আলোগুলি ম্লান হয়ে যায়। দেখে মনে হয় টিমটিম করে প্রদীপ জ্বলছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো স্নো ঝরে পড়ে মাথায়, সারা গায়ে। বাসের জন্য প্রতীক্ষারত নিজেকে মনেহয় তুষারমানব। বছরের পর বছর ধরে শুয়ে রয়েছি সেই হিমশীতল চাদর গায়ে দিয়ে।

    ঝকঝকে সোনালী দিনে সেই সাদায় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ভালোকরে তাকানো যায় না। মনেহয় হাজার হীরকের দ্যুতি। আর জ্যোৎস্নারাতে পাগল করে দেয় সেই রূপ। মোমের মতো স্নিগ্‌ধ আর মায়াবি। চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে জানালার ধারে। ঘুম না হবার জন্য বিন্দুমাত্র দু:খ হয় না। মনেহয় এই বুঝি নেমে আসবে পরীর দল। হুটোপুটি করবে সাদা নরম স্নোএর বল নিয়ে, ছুঁড়ে ফেলবে এর ওর গায়ে। রাত্রি শেষ হবার আগেই ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাবে বাড়ি। কল্পনা করেও সুখ!
    বিষণ্ন দিনটা সুন্দর হয়ে যায় অদ্ভুতভাবে।

  • aranya | 144.160.226.53 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৪:১৯451712
  • বড় সুন্দর লিখেছেন, তিতির।
    এই পাতায় টিম-এর নভেম্বরের লেখাটাও কি ভাল, ফিরে পড়লাম আবার।
    কি অবলীলায় লেখে সবাই - দারুণ সব লেখা !
  • achintyarup | 59.93.247.176 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৪:১৯451711
  • ও তিতির, আরও লেখো না কেন?
  • titir | 128.210.80.42 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৫৭451713
  • বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে ছেলেবেলার গান,
    বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান।

    কদিন ধরে আকাশের মুখভার, ধুসর কালো মেঘের আস্তরণ। দমকা হাওয়ার
    সঙ্গে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি। মুখ ঘষে জানালার কাঁচে। শব্দ
    খুব একটা শোনা যায় না। জলের স্রোত দেখে বুঝতে পারি বৃষ্টি নেমেছে
    জোরে। বাতাসের তাণ্ডবে ঝুঁকে পড়ে গাছপালা। একবার সোজা হয়,
    পরমুহূর্তে আবার মাথা নত। নাহ, এদেশে বর্ষাকাল বলে আলাদা কোন
    ঋতু নেই। সে শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত ও শরৎ সবার সঙ্গে চলে আসে
    অনাহুতের মতো।

    অথচ সেই ছেলেবেলায় ভুগোল পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম, ঋতু ছয়প্রকার।
    গ্রীষ্মের পরেই বরষা বলে একটি ঋতু আছে। সে আসে তার দলবল নিয়ে।
    একনাগাড়ে কদিন ধরে ঝরবে তার কোন ঠিকঠিকানা নেই। টিনের চালে বড়ো
    বড়ো ফোঁটায় বৃষ্টির শব্দ এক অদ্ভুত ছন্দ তৈরী করত, সঙ্গে
    থাকত আকাশ ফালা করে দেওয়া বাজের আলো আর পরমুহূর্তে ভয়ঙ্কর সেই
    শব্দ।

    একবার এই রকম বাজ পড়ার পর খবর পাওয়া গেল ভুঁঞ্যাদের (এরা এই
    ভাবেই বানান লিখত) হালুয়া (মানে যে হাল বা লাঙল করে) চম্পাই
    মারা গেছে বাজ পড়ে। মাঠে ছুটে যায় সবাই তাকে দেখতে। বলদ দুটি
    তার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে দৌড়ে বাড়ি পৌঁছে গেছে। আর চম্পাই
    লাঙলটাকে পাশে নিয়ে নিথর হয়ে শুয়ে আছে। কোন আঘাতের চিহ্ন নেই
    শরীরে। শুধু কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে লাল জল। মৃত্যু যে এমন
    হিমশীতল হতে পারে তার কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না সেই
    শিশুকালে। গ্রামে ঘরে ঝগড়ার সময় শাপশাপান্ত করত অনেকে।
    তারমধ্যে একটি ছিল,"তোর মাথায় বাজ পড়ুক"। মনে হত কি ভয়ঙ্কর এই
    লোকগুলো! চম্পাইকে কি কেউ কখনো অমন অভিশাপ দিয়েছিল, যার জন্য ও
    মারা গেল এইভাবে?

    ভারী বৃষ্টির পর ভরে যেত পুকুরগুলি। বড় আর ছোট দুটো পুকুর ছিল।
    বর্ষার জল পেয়ে পুকুর থেকে উঠে আসত জিওল মাছ, মানে কই, মাগুর,সিঙি ও
    শোল। যত না ধরতে পারতাম তার চেয়ে হৈ হট্টোগোল হত শতগুণ। আমাদের
    আর পিসিদের বাড়ির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নালা দিয়ে জল বেরিয়ে আসত
    হু হু করে। এই নালার উৎপত্তি ছিল পিসিদের লুই পুকুর থেকে। নালার সঙ্গে
    যোগ ছিল আমাদের বড় পুকুরের ও। সেই সংযোগ স্থলের নাম ছিল উজান মুখ।
    মাছ ধরার জন্য উজান মুখে বসে যেত নানারকম মাছ ধরার ব্যবস্থা।
    বাঁশের কাঠি দিয়ে তৈরী বড় বড় মুখের ঘঙ্ঘা, ছোট মুখের মুগরি,
    হাঁড়িখাল বসে যেত দরকার মত। বেশীর ভাগ সময় স্রোতের প্রতিকুল থেকে
    মাছ উঠে আসত। তবে অনুকুলে উঠে আসা ও ব্যতিক্রম ছিল না।

    শুধু মাছ না, মাছের সঙ্গে অজস্র সাপ বের হত বর্ষাকালে। এক তাদের
    গর্তগুলি সব জলে ডুবে গেছে আর দ্বিতীয় কারন হল অঢেল মাছ। এই সব
    মাছ খাবার লোভে তারা মাঝে মাঝে তারা ঢুকে পড়ত সেই মাছ
    ধরার যন্ত্রে। অভিমন্যুর মতো তারা শুধু ঢোকার রাস্তা জানত, কিন্তু বের
    হবারটা জানত না। মাছ খেয়ে গায়ে গতরে তাদের সাইজ তখন দ্বিগুণ। আর
    বের না হতে পারার জন্য ভয়ঙ্কর গর্জন। খুব সাহসী কেউ না হলে এই সব
    সাপেদের মোকাবিলা খুব কঠিন হত। লোকেরা খুব সতর্ক থাকত এই
    বর্ষাকালে। বড়মার কথায় " সাপের লেখা আর বাঘের দেখা" কেউ
    খণ্ডাতে পারে না। তাই এক ,দুটি সাপের কামড়ের খবর আসত প্রায়ই।

    চারিদিকে জল, তাই আমাদের খেলার চৌহদ্দিটা ছোট হয়ে যেত। বাইরের
    দালানে চু কিত কিত খেলার জন্য চকখড়ি দিয়ে ঘর কাটা হয়ে যেত
    নিমেষের মধ্যে। ছেলেরা খুব একটা আগ্রহী হত না এই খেলায়। তখন
    শুরু হত চোর পুলিশখেলা, বা বল্লমকুড়ি। যত জন খেলোয়াড় তত কুড়ি
    গুনতে হবে, সেই সুযোগে অন্যরা লুকিয়ে পড়বে। আর ছিল পাঁচগুটি খেলা।
    দুধুভাতু অবস্থায় দু হাত দিয়ে খেলা হত। পোক্ত হবার পর একহাতে।
    প্রথমে একের খেলা, মানে একটা একটা গুটি তুলতে হবে অন্যগুলোকে না
    ছুঁয়ে। এই রকম পাঁচবার হবার পর দু গুটির খেলা। এই করে তিন, চার,
    শেষে থুপি খেলে গেম দেওয়া। সবাই চেষ্টা করত অন্যকে হারানোর। আর
    ছিল হাত মোছামুছি খেলা। একদিকে ছটা আর অন্য দিকে ছটা
    সমান্তরাল ছোট ছোট গর্ত করে তার মধ্যে পাঁচ টা করে তেঁতুল বিচি বা ছোট্ট ছোট্ট নুঁড়ি (আমদের ভাষায় ঘুষুম) বা
    অন্যকিছু দিয়ে ভরা হত। এক এক জন ঘুঁটিগুলো তুলে নিয়ে পাশের ঘরে এক এক
    করে ভরে দেবে। সে ততক্ষণ খেলবে, যতক্ষণ না তার খাবার পালা
    আসে। বড়রা খেলত ক্যারাম আর তাস। আমরাও সুযোগ পেলে ক্যারামে ঘুঁটি
    সাজিয়ে তাল গাছ খেলতাম। কালো ঘুঁটি পাঁচ, সাদা ঘুঁটি দশ আর
    "রেড" একদমে পঁচিশ।
    রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও ভরত বলে আর একটা খেলা ও খেলতাম এইসময়।
    চার চার করে ষোলটা কাগজের টুকরোতে নাম লেখা থাকবে ওদের ।
    এইগুলো বিলি হবে সবার কাছে। চারটে একি কার্ড মেলাতে পারলেই কেল্লা
    ফতে।

    বর্ষা মানে তেলেভাজা মুড়ি। কাচা লঙ্কা, পেঁয়াজ আর সর্ষের তেল
    দিয়ে মাখা হবে মুড়ি।
    চপ বা পেঁয়াজি থাকতে হবে সঙ্গে। গামলা গামলা মুড়ি মাখা।
    সবাই খাবলা দিয়ে খাচ্ছে সেখান থেকে। শেষ হতে যেত নিমেষের
    মধ্যে। ক্ষুদে ক্ষুদে বকরাক্ষস তখন সবাই। আর ছিল খিঁচুড়ি।
    সঙ্গে মশলা দিয়ে ভাজা মাছ। বড়বড় মৌরলা মাছ, পেটে ডিম
    ভরা, পেঁয়াজ, জিরে, লঙ্কাবাটা আর নুন দিয়ে মা কি সুন্দর মুচমুচে
    মাছভাজা করত। তা দিয়ে গরম গরম খিঁচুড়ি যেন অমৃত! আর একটা
    অদ্ভুত খাবার খেতাম এইসময়। টাটকা টাটকা ঝিঙ্গে ফুল তুলে নিয়ে
    পরিষ্কার করে, কাঁচালংকা আর পোস্ত বাটা মিশিয়ে হলুদ পাতায় মুড়ে
    কম আঁচের কাঠের আগুনে পুড়তে দিত। হলুদ পাতা বেশ পোড়া পোড়া হয়ে
    গেলে তুলে নেওয়া হত আগুন থেকে। তারপার বাঁধন খুলে সর্ষের তেল মেখে
    খাওয়া। মনে হয় এই সব যেন গতজন্মের কথা। ঝিঙ্গে ফুল নিয়ে একটা অদ্ভুত কবিতা ছিল,
    "ঝিঙ্গে ফুল আকুড় তাকুড়, বড় বৌ লক্ষ্মী ঠাকুর"।

    বৃষ্টি, মানে ঘরে বসে থাকার বান্দা ছিল না ছোটরা। অনায়াস গতি
    ছিল পিসির বাড়ি বা সেই কুমোর দাদার বাড়ি। ছাতা ফাতার পরোয়া না
    করে (চাইলে বা দিচ্ছে কে) বড় বড় কচু পাতা তুলে নিয়ে মাথায় ঢেকে
    চলে যেতাম অন্যের বাড়ি। বেশীরভাগ লোক ব্যবহার করত 'পেখ্যা" নামক
    তালপাতার তৈরী এক আচ্ছদন। সুতলি দড়ি দিয়ে সুন্দর করে পাতাগুলি
    গেঁথে এই 'পেখ্যা' বানান হত। মাথা থেকে হাঁটু পর্যন্ত্য ঢাকা পড়ে
    যেত তাতে। বেশীর ভাগ লোকেরা তাই মাথায় দিয়ে চাষের কাজ করতে যেত
    মাঠে। আমাদের আনন্দ ছিল, বৃষ্টিতে ভিজে, কাগজের নৌকো গড়ে জলে
    ভাসিয়ে দিতে। প্রতিযোগিতা হত, কার নৌকো কতো দুর যাচ্ছে, তাই নিয়ে।

    নাহ, আমাদের কোন নদী ছিল না। ছিল এক ছোট খাল। ঘোলা জলে ভরে যেত তার
    দুকূল। সঙ্গে থাকত বিভিন্ন ধরনের মাছ। কেউ বড়শিঁ দিয়ে কেউ বা
    জাল ফেলে মাছ ধরত তাতে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের সেই ছোট খাল
    কল্পনার নদী হয়ে ছুটে যেত কোন অজানা সমুদ্রে।

  • s | 117.194.96.218 | ০৫ মার্চ ২০১২ ০৩:৪০451714
  • খামখেওয়ালে দেওয়াল লেখা
    ------------------

    গুলাম আলী গাইছেন। আমি পড়ছিলাম অদিতি ফাল্গুণীর হেরুকের বীণা। ইন্দ্রাণীর উইদাউট আ প্রিফেস। মাথার ভিতর শব্দের কুচকাওয়াজ। বাংলাদেশ বাংলাদেশ। মোচ্ছব। মোচ্ছব। আমি সেই মোচ্ছবে শামিল নই। কোনোভাবেই নই। অসমাপ্ত লেখার ফোল্ডার ভর্তি লেখাগুলো সব আধখ্যাচড়া। দুই বা তিন প্যারাগ্রাফ। এর বেশি আর এগোয় না। কিছুতেই এগোয় না।

    নিশুথি রাত। ম্যালা রাত। কুকুরগুলূ ঘুমিয়ে পড়েছে কখন যেন। বহুকাল বাদে এমন রাত। মাথা ভার নেই, ওষুধের ঘোর নেই। ঘুম নেই। এমনকি নিত্যসঙ্গী ক্লান্তিও নেই। সোঁ সোঁ শব্দে জোর কদমে পাখা ঘুরছে, ঘুরেই চলেছে অবিরত, অনন্ত। সুইচ না টেপা অবধি থামবে না, থামবেই না। রাত নিঝুম। নি:ঝুম। বহুদিন পর। গুলাম আলি গেয়েই চলেছেন, আপনি ধুন্মে রেহতা হুঁ/ ম্যায় ভি তেরে য্যায়সা হুঁ..কার মত তিনি?

    জলের বোতলে কবেকার যেন একটু রাম। স্কচের গ্লাস। টুকরো বরফ। কোক। এই রাম আর কোক কবে থেকে যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে জো-তে। সেই জো। প্রেমে পড়ে এদেশে থেকে যেতে চেয়েছিল। অথবা প্রেমিককে নিয়ে যেতে চেয়েছিল সঙ্গে, নিজভূমে। প্রেমিকের ঘর-সংসার চুলোয় যাক। সে তো ভালবাসে। সে ভালবেসেছিল। ভালবাসায় ভরিয়ে দেবে সব, পূরণ করবে সমস্ত খামতি। যা কিছু পেছনে পড়ে থাকবে, সব, সমস্ত সে ভরিয়ে দেবে- এমনটাই ভেবেছিল সে.. ভালবাসায় নাকি কোনো দোষ নেই। যদি দোষই থাকত তবে থুড়ি না রাধা-কৃষ্ণ গাঁথা লোকমুখে ফিরত! কোনো দোষ নেই।! জো এমনটাই বিশ্বাস করত, করতে চেয়েছিল।

    রাত নিঝুম। নি:ঝুম। ঘুমন্ত। কাল কখন যেন 'আজ' হয়ে গেছে। 'আজ' আবার হয়ে যাবে কাল। কাল কে দেখেছে! আমি তাই কাল-কে নিয়ে ভাবিত নই। সমস্ত আজই কেমন করে যেন কাল হয়ে যায়। বা কাল হয়ে যায় আজ। এই যেমন আজ হয়েছে। খানিক আগে। না, বেশ আগে। আজ-টাই শুধু গতকাল হয়ে যায়, বাদবাকি সব আজ। আগামী বলে কিছু নেই। । নজরুল বলে গেছেন- প্রিয় এমনও রাত.. নজরুল থাকুন। বিদ্রোহী হয়ে। চিরকাল থাকুন। চির উন্নত শির নিয়ে থাকুন। কুচকাওয়াজে থাকুন। বদ্ধ, আবদ্ধ ঘরে না থাকতে চাওয়া নজরুল। বিশ্ব দেখতে চাওয়া নজরুল। ঘুমিয়ে আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। পাশেই মধুদার ক্যান্টিন।

    সেদিন, কল্লোলদার গান ছিল ছবির হাটে। ক্ললোলদা একক। ছবির হাট থই থই। সরু লাল পাড় সাদা শাড়ি নাসরীন। গম্ভীর মুখে কৃষ্ণাদি। অপেক্ষায় কাঁকন, কখন তুমি গাইবে, হেই ক্ষ্যাপা, মানুষ খুজো না! ব্যস্ত সমস্ত সাগর। আমি চুপচাপ এককোণে। সবে জানতে পারলাম, ছাব্বিশ বা সাতাশের আগে তিতাস কোনো নদীর নাম নয়- ছাপাখানার বিজলীবাতির আলো ছাড়িয়ে বাইরের আলো দেখতে পারছে না, পারবে না। রেশনের দোকানে কেরসিন বা চিনির লাইনের চাইতেও বড় লাইন বই-দের। আমার মন লাগে না। কল্লোলদা, আমার মন লাগে না তোমার গানে। ক্ষমা কোরো। তুমি করবেই আমি জানি। তুমিই তো বলেছিলে, গুরু পাওয়া যায় যত্র তত্র, শিষ্য মেলা ভার। আমি ফুটপাথে। ছবির হাটের বাইরে, রাস্তায়। ওয়াসিফ এলো। খানিক বসে থাকে চুপচাপ পাশে। বলে, যাবেন? নজরলের সমাধীতে? আমি কোনো কথা বলি না। ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তায়। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, মধুদার ক্যান্টিন। মন লাগে না। মনও লাগে না। মন পড়ে থাকে ছাপাখানায়, অনেক, অনেক বইয়ের লাইনে, সব, সমস্ত বইয়ের পেছনে লাইনে বসে থাকা আমার তিতাসে। বিস্বাদ ঠেকে চা। শাপলুরা বসে গজল্লা করে বটতলায়, বলে, শ্যাজা, আসো, গজল্লা করো। মন লাগে না। মনও লাগে না। মন পড়ে থাকে, রয়, ছাপাখানার অন্ধকারে, তিতাসে।

    আমি এগুই, এগিয়ে যাই, নজরুলের কাছে। থাকব নাকো বন্ধ ঘরে, দেখব এবার জগ্‌ৎটাকে। আমার তিতাস গুমরে মরে, ছাপাখানার অন্ধকারে। আমার মন লাগে না। মনও লাগে না। কে যেন সেলফোন আবিষ্কার করেছিল, কেন করেছিল কে জানে! না করলে কী ক্ষতি হত!! কীই বা এমন ক্ষতি হতো!! সেই সেলফোনে ঘন্টা নেজে যায়, বেজে যায়, বেজেই যায়.. লোকজন ব্যস্ত সমস্ত হয়ে অনর্গল ফোন বাজিয়েই চলেছে। কোথায় আছি, কার সঙ্গে আছি, কেন আছি!! তারা জানে না, জানতেও চায় না, আমি নজরুলের সঙ্গে আছি। খানিক থাকতে দে.. এমন রাতও কী বার বার আসে..
    চল চল চল
    উর্ধ গগনে বাজে মাদল
    নিম্নে উতলা ধরণীতল
    চল চল চল, চল রে চল রে চল

    থাকা হয় না বেশিক্ষণ নজরুলের সঙ্গে। ঘুমাও নজরুল,শান্তি কী অশান্তি জানি না, কিন্তু ঘুমাও তুমি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে, মধুদার ক্যান্টিনের খানিক দূরে ঘুমাও তুমি। আধো আলো আধো অন্ধকারে ঘুমাও তুমি..

    আমি এগুই। এগিয়ে যাই। আমার তিতাস যে অন্ধকারে। ওয়াসিফ চুপচাপ। কোনো কথা বলে না। ভাগ্যিস বলে না। আমি কোনো সান্তনা চাই না। আমার একটা বন্দুক চাই। চাই, কিন্তু পাই না। পাব না, জানি।অভাগ্যিস পাই না, দু দিন বাদেই সেই বিডিয়ার হত্যাকাণ্ড। রাস্তায় ট্যাঙ্ক, কার্ফিউ, মুহুর্মুহু গুলি আর বুকের ভিতর হাঁপরের শব্দ। না। আমার কোনো বন্দুক চাই না। আমি বিশ্বাস করি না বন্দুকের নলই ক্ষমতার সকল উৎস। তাই চুপচাপ হন্ঠন। তাই নত মস্তক। গন্তব্য-ছবির হাট। সেখানে এতক্ষণে কাল্লোলদা হয়ত গান থামিয়েছে। কল্লোলদা নিশ্চয়ই ক্লান্ত। শেষমেশ কল্লোলদাও তো মানুষ। টানা তিন ঘন্টা একা হাতে সামলেছে ছবির হাট। এখন তো ফেরার পালা। পাঠশালায়।

    মেঝেতে পাতা কার্পেট, তার উপরে তোষক, আর মতিভাইয়ের দাক্ষিণ্যে পাওয়া একখানা চাদর। রেহানা, মতিভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী। আক্ষরিক অর্থেই। পাঠশালার বাসিন্দারা রেহানার ইচ্ছের অধীন। মতিভাইও। খুলনার বাসিন্দা মতিভাই। আমি কখনও খুলনা যাইনি। আমি আর কোথায়ই বা গেছি! সে কথা থাক । কল্ললোদা। আজিজ মার্কেটের কথা বলি বরং। চাচার সিডির দোকান। কল্লোলদা সেখানে কি একটা সিডি কিনতে গেছে। সঙ্গী কৃষ্ণাদি, মাসুদ। নাকি নাসু মিঞা! ভুলে গেছি! সার্বক্ষণিক সঙ্গী গিটার খাপমুক্ত হয়, চাচার দোকানে গান শুরু হয়। আমি শুনিনি সেই সব গান। আমার মন, আমি অশরীরি হয়ে ছাপাখানায়, তিতাসের কাছে। চাচার সিডির দোকানে পৌঁছানোর আগে, আজিজে পা রাখতেই কানে আসে, সুখে থেকো ভালো থেকো, মনে রেখো এই আমারে! কৃষ্ণকলি আর চন্দনাদি।

    আমাদের বাড়িতে দালান যখন তিন কোঠার ছিল, মাইঝের কোঠায়, আমার পিসিমার হাতে করা একখান বান্ধানি টাঙানো ছিল, কয়েকটা সবুজ সুতোয় বোনা ঘাস, সাতা সুতোর ফুল আর লাল সুতোয় লেখা- সুখে থেকো ভালো থেকো, মনে রেখো এই আমারে.. আমি আটকে যাই। থমকে যাই। চমকে যাই। সেই প্রথম কৃষ্ণকলি। সেই প্রথম চন্দনাদি। আমার পিসিমা আর এরা কোথায় যেন মিলে মিশে একাকার.. গীত গাওয়া পিসিমা আমার। রেডিও শুনে শুনে নজরুল গীতি গাওয়া পিসিমা আমার। পিসিমা জানে না, জানবেও না, সেই আটপৌরে শাড়ি, লুকিয়ে শোনা রেডিও, চুপি চুপি গাওয়া গান সব তার অক্ষয় হয়ে রয়ে গেছে কোথাও, আজও আছে সেই সব গান। সেই বান্ধানি আছে কিনা কে জানে। কথাগুলো এখন সুরে সুরে এখন ছড়িয়ে গেছে সবখানে, সবখানে..

    ছাপাখানা বদল হয়। সিডিবন্দী হয় আমার তিতাস। নির্মলেন্দু। শক্তি আমি আর আমার কদমগাছ। সাগর হাত বাড়িয়ে দেয়। আরফান সঙ্গে থাকে। এলিফ্যান্ট রোড। কাঁটাবন। প্রেস। সূর্যের প্রথম আলোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশের আলো দেখার জন্যে মুখিয়ে থাকে তিতাস। সূর্য ওঠে। আলোফোটে, সকাল এগোয় দুপুরে। ভুত সওয়ার হয় ছাপাখানায়, তিতাস আছে, আমি নেই। আমি আবার ফুটপাথে। পরনে ঢাকাই শাড়ি, ছবির হাট, ফুটপাথ আর আমি।অশেষমেশ নামহীন তিতাস হাজির হয় একুশে বইমেলায়। ধুলোয় বসে আমি, পরনে ঢাকাই শাড়ি। ভুলে যাই, মনেই পড়ে না কাউকে বলা বা ডাকার কথা। আমার বই। প্রথম বই। হুয়ত বা একমাত্র। আমার তিতাস। বড় নীরবে, নি:শব্দে বয়ে যায় একুশে বইমেলায়। কৃষ্ণাদি অনুযোগ করে, ডাকলে না.. আমার মনেই ছিল না, কাউকে বলা যায়, ডাকা যায়, গান-বাজনা বা নিদেন একটু প্রকাশের অনুষ্ঠান! কিছুই নেই। কিচ্ছু নেই। কিচ্ছুটি নেই.. আমার বন্ধুরা, আমার স্বজনেরা, আমার গুরু, কেউ নেই.. যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল! আমি তো কাউকে ডাকিইনি। আসলে ডাকার কথা মাথায়ও আসেনি যে..

    সিন তারিখ হিসেব করলে সেদিনের সমস্ত কিছু আজ'গতকাল হয়ে গেছে। বা গত বছর বা তারও আগের বছর। সমস্ত কিছু আজ স্মৃতি। কাল, পরশু বা তারও আগেকার স্মৃতি। আমিই শুধু স্মৃতিতে বাঁচি। সবকিছু, সবটুকু তাই আগলে বসে আছি আজও, এখনও। আমাকে ছেড়ে যায় না সেসব কিছুতেই, কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ে না..

    আমি ভাবতাম বা ভাবি আসলে তা নয়, আমি স্মৃতিতে বাঁচি। আমি শুধু আজকেই বাঁচি। শুধু আজকে। আজ-কে নিয়ে.. কোনো ভূত, কোনো ভবিষ্যত কিস্‌সু নয়, নেই, আছে শুধু আজ..
  • pi | 72.83.76.34 | ০৫ মার্চ ২০১২ ২১:৪৮451715
  • সামরানদিকে কিচ্ছু বলার নেই ! x-(
  • kallol | 101.63.175.80 | ০৬ মার্চ ২০১২ ০৬:৩৭451718
  • ভালো থাকিস সামরান।
    আরও ছবি, অনেক ছবি লিখিস।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন