এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • খামখেয়ালে দেওয়াল লেখা

    Suman
    অন্যান্য | ২২ ডিসেম্বর ২০০৫ | ২০৪৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৭ মার্চ ২০১২ ০২:৩৪451719
  • সোনাদিদিরে ভুইল্যাগেলি নাকি রে সামরু
    :-((
    এত ভাল লিখিস ক্যান--ঝট করেই শেষ--আরো চাই ই ই ই
  • pi | 128.231.22.249 | ২৭ মার্চ ২০১২ ২৩:৪৩451720
  • সামরানদি, নাও :)
  • Nina | 69.141.168.183 | ২৮ মার্চ ২০১২ ০৪:৪৪451721
  • সামরু আম্মো বইলাম পাটি পেড়ে ---কই শুরু করেন বিবি---
  • achintya | 59.93.240.44 | ২৮ মার্চ ২০১২ ০৪:৫৭451722
  • হ, আমিও আছি। লন, শুরু করেন
  • s | 117.194.99.9 | ২৭ এপ্রিল ২০১২ ১২:০২451723
  • বিজ্ঞানমতে ইহা একপিস অবৈজ্ঞানিক গপ্পো
    -----------------------------

    মাঝে মাঝে একটা ঘর দেখি –দেখতে পাই। ঘর না, আসলে বাড়ি। পুরনো বাড়ি। পুরনো সেই বাড়ি। যেখানে জন্মান্তরে বসত ছিল আমার। বাড়িটা কেমন যেন পালটে পালটে যায়, ঘরগুলূ, এভাবে কখনও বাড়ি-ঘর পালটে পালটে যায়? কি জানি.. পালটে যায় দেওয়াল এমনকি পালটে যায় মানুষগুলূ। আমি মাঝে মাঝে যাই সেই বাড়িতে, যেমন আজ এসেছি। কেন যে যাই নিজেও জানি না কিন্তু যাই, না গিয়ে পারি না বলেই যেন যাই সেখানে, জন্মান্তরে যেখানে বসত ছিল আমার। সেখানে এখন বাস করে অন্য মানবী, বাতাসে অন্য শিশুর কলতান। সেই মানবী বসে আনাজ কোটে, কেরোসিনের স্টোভে রান্না করে। এই স্টোভটা আমার চেনা। এর প্রতিটা সলতে আমার পরিচিত। চেনা এই আঙিনা, অচেনা শুধু ঐ মানবী আর ঐ শিশুটি।

    একটি পুরুষ আসে, একে আমি চিনি না। হঠাৎ করে সব কেমন অচেনা হয়ে যায়। ভয় লাগতে শুরু করে। বাড়ির দেওয়ালটাও হঠাৎই বদলে যায়। একটা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা আঙিনা হয়ে যায় দেওয়াল ঘেরা ছোট্ট সেই উঠোন, যেখানে এক অপরিচিত নারী বসে আনাজ কোটে, রান্না করে আমার চেনা স্টোভে। আমার ভীষণ ভয় লাগে, আমি পালাতে চাই। জোরে হাঁটতে যাই, পারি না। প্রচণ্ড ভারী লাগে পা দুটো। দৌড়ুতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ি। অচেনা সেই পুরুষটি এসে আমার হাত ধরে, ফলাকাটা এক ছুরি দিয়ে চিরে চিরে দেয় আমার দুই হাত, কনুই অব্দি, কনুইয়ের উপরেও চিরে দিতে থাকে একের পর এক। খুব গভীর নয় সেই সব ক্ষত, যেন ছুরি দিয়ে সে নকশা কাটে আমার হাতে, রক্তের রেখায় ফুটে ওঠে রঙ। আমি কাঁদতে থাকি, যেতে দাও, আমাকে যেতে দাও -বলে অনুনয় করি, সে আমার হাত ছাড়ে না। রক্তের রেখা আমার দুই হাতে, অদ্ভুতভাবে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে থাকে সেই চেরা জায়গাগুলোর উপরেই, গড়িয়ে নামে না। নির্বিকার চিত্তে সেই অপরিচিত নারী আনাজ কোটে, শিশুটিকে ডাকে। আমি তাকে বলি, আমাকে ছেড়ে দিতে বলো, আমার ভয় করছে, আমি বাড়ি যাব। সে হাসে, বলে, বাড়ি? তোমাকে তো ও বাড়ি যেতে দেবে না, একবার পালিয়ে গেছ, আর তোমাকে পালাতে দেবে না ও।

    বাঁশের বেড়ার ওধারে কার যেন সাড়া পাই, তাকিয়ে দেখি ভীষণ চেনা দুটো মানুষ। ভারী, প্রায় অচল হয়ে যাওয়া পায়ে দৌড়ুনোর চেষ্টা করি, পারি না, তাও একসময় পৌঁছেই যাই বাঁশের গেটের কাছে, যেখানটায় গেটের বাইরে আমার ভীষণ চেনা মানুষ দুটো দাঁড়িয়ে আছে। আবার হুট করে সব পালটে যায়। সামনে সেই দেওয়াল! পুরনো বাড়ির পুরনো সেই দেওয়াল, মাঝখানে সদর দরজা। পুরনো কাঠের নড়বড়ে সেই সদর দরজায় শেকল তোলা, পেছন ফিরে তাকাই, ঐ অচেনা মানুষটাকে হঠাৎ করেই চিনতে পারি, এ যে ভীষণ চেনা এক মুখ! শেকল নামিয়ে আধভাঙা নড়বড়ে দরজা পেরিয়ে আবার তাকাই পেছন ফিরে, পেছনে যারা আছে, তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। শিশুটি একই ভাবে খেলে বেড়ায় আঙিনা জুড়ে, বটিতে আনাজ কোটে এক অপরচিত নারী, পাশে রাখা স্টোভে রান্না হয়, ঘরের দরজা পেরিয়ে যে সিঁড়ি তাতে বসে এক অচেনা মানুষ, যাকে আমি কোনোদিন দেখিনি, যাকে আমি চিনি না..

  • Nina | 12.149.39.84 | ২৭ এপ্রিল ২০১২ ১৯:০১451724
  • এই গল্প চুপকথাদের গাথা---
    কিসের যেন ব্যাথা
    বিষাদ ও হয় মধুর
    কলম যখন তোর হাতে ওঠে!
    সামরু--অনেক ভালবাসা জানিয়ে গেলাম তোকে আর তোর সবাইকে---
  • Bappa | 233.223.130.151 | ২০ মে ২০১২ ১২:০৪451725
  • খসে পড়া তারার ইতিহাস

    খসে পড়া তারার গায়ে নাকি স্বপ্ন আঁকা থাকে, ছোটবেলায় মা বলত রাতের কোনো খসে পড়া তারার দিকে চেয়ে থাকলে নাকি মনের স্বপ্ন পূরণ হয়, সেদিনের ছোট্ট ছেলেটি সেই রূপকথার গল্প বিশ্বাস করলেও, আজকের সাইন্স পরা ১০ টা ৫ টার অফিস বাবু এ কথা মানতে চায় না ় সে সবকিছুকে যুক্তিতক্ক দিয়ে বিচার করতে চায় ় তবুও ছোটবেলার সেই মায়ের কথা ছেলেটি আজও ভুলতে পারেনি, তাই আজও সে মনখারাপের রাতে, অন্ধকারে মুখ ঢেকে দাড়ায় কোনো এক ফ্লাট বাড়ির ছাদে, একটি খসে পড়া তারার খোঁজে ়

    আজ সারারাত চোখে ঘুম নেই, তা না থাকুক, ঘুমিয়ে পড়ার মতো সময় এখনো আসেনি, তাই দু চোখ মেলে দিলাম রাতের আকাশের পানে ় একটা অদ্ভুত গন্ধমাখা হাওয়া বইছে, আর সেই হাওয়ায় রাতের অন্ধকারটা ঠিক কালো কম্বলের মতো গায়ে চাপিয়ে নিলাম ় লক্ষকোটি বাতি জ্বালিয়েছে আকাশের নক্ষত্রগুলো ় ওই তো কালপুরুষ, পিছনে কুকুরটা, হাতে প্রকান্ড ধনুক ় এই বীর পুরুষ গড়ার পিছনে কতো তারার অবদান রয়েছে, আমরা শুধু ওই কালপুরুষকেই চিনি, কিন্তু তার শরীর আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে থাকা তারার খবর কেও রাখিনা ় কোনো একটি তারা খসে পড়লেই এই কালপুরুষের জীবনেও নেমে আসবে শুন্যস্থান ়

    ওই তো একটা তারা খসে পড়লো, এবার আর চোখ বন্ধ করে কিছু চাইলাম না, সবসময় চাইবো কেন? কিন্তু সেদিন চেয়েছিলাম জানো? "একটা হলুদ রঙের পাখি"

    তখনও শীত পড়েনি, হেমন্তের হাওয়ায় দুপুরের রোদে একটা ঝিম ধরানো গন্ধ, রবিবারের এই সময়টা আমি বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ি ় পাশে রাখা একোরিয়ামে দুটো গোল্ড ফিস ছোঁয়াছুঁয়ী খেলছে, হঠাত দেখি বারান্দার রেলিং ঘেসে উপরে ওঠা অপরাজিতার পাতার ফাঁকে এক অচেনা অথিতি, "একটা হলুদ রঙের পাখি" ় প্রথমে দেখে বুঝিনি এটা মেয়ে পাখি না ছেলে পাখি? ছোট্ট পাখিটার সারা গা হলুদ পালকে ঢাকা, মাথার নীচে হালকা সবুজ রঙ, বন্ধুত্বের রঙ ় হাত বাড়িয়ে দিতেই কাছে এসে বসলো, বুঝলাম ও ওর কিছুটা সময় কাটাতে এসেছে, আপন করে নিলাম ওকে ় ধীরে ধীরে বন্ধু হলাম, বন্ধুত্বে মনে হয় পরিধি থাকে না, আমাদেরও ছিলনা ় রোজকার খুনসুটিতে আমরা কাটিয়ে দিতাম অনেকটা সময়, গান গাওয়া, গান শেখা সব ় কখন যে হেমন্ত বিদায় নিয়ে শীত এসে পড়েছে খেয়ালই করিনি, একটা অদ্ভুত গন্ধমাখা হাওয়া বইছে, সেই হওয়াটা! দাম দিয়ে কেনা রঙ বাহারি ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, বেগনভেলিয়ার বাহারে ভুলতে বসেছিলাম এটা পাতাঝরার সময় ়

    সেদিন বিকেলেই জানলা দিয়ে শীতের শহরটাকে দেখছি ় ঠান্ডায় কেমন জুবুথুবু হয়ে গেছে গতিময় শহরটা, ঠিক সেই সময় আমার পাখি বন্ধু কাধে এসে বসলো ় কেমন যেন অচেনা লাগলো ওকে! বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো, সেই চঞ্চলতা নেই, তারপর আসতে আসতে বললো নিজের পরিচয় ় বললো ও পরিযায়ী ় ওর পুরনো বন্ধুরা সব ফিরে এসেছে তাই ওকে ফিরে যেতে হবে পাতাঝরার আগেই ় চলে গেল সে ় চুপ করে রইলাম অনেকক্ষণ ় কথা দিলাম ভুলে যাব, শুধু চেয়ে নিলাম একটা হলুদ পালক ় আসতে আসতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হলো, সন্ধ্যে থেকে রাত ় রাতের আকাশে তারাগুলো জোনাকির মতো মিটমিট করছে, হয়ত এখুনি খসে পড়বে কারোর স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে ় একটা অদ্ভুত গন্ধমাখা হাওয়া বইছে বিকেল থেকেই, এখনো বইছে ়

    বন্ধ জানলার ফাঁক দিয়ে ভোরের আলো চোখে পরতেই ইতস্তত ও অসহায় ভাবে চোখের পাতাগুলি একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো ় একটা দুঃস্বপ্ন ভেঙ্গে জেগে ওঠার প্রয়াস, যেন নতুন অঙ্কুরোদ্গম ় পাতাঝরার দিন শেষ ় ঝরে পরা শুখনো পুরনো খয়েরি পাতার স্তুপ ভেদ করে নতুন কচি পাতা মাথা তুলে দিয়েছে নতুন সূর্যের দিকে ় এ সূর্যের সাথে কালকের সূর্যের কোনো মিল নেই ় সূর্য ও তো একটা নক্ষত্র, তাই কালকের সূর্য্য খসে পরেছে ় আজ একটা নতুন দিন, নতুন সূর্য্য, নতুন জীবন ় জানলা বন্ধ থাকলেও উদবাস্তুর মতো ফাঁক ফোকর খুঁজে নিয়েছে এই নতুন দিনের আলো ় বিছানা ছেড়ে বারান্দায় বেরিয়ে এলাম ় এ কোন সকাল দেখছি? আগে তো দেখিনি! একঝাঁক নতুন আলোয় পাল্টে গেছে চারপাশ ় আর সেই পাল্টে যাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে একটা অদ্ভুত গন্ধমাখা হাওয়া বইছে, এ অন্য হাওয়া, অন্য গন্ধ ় সত্যি বসন্ত এসে গেল! ঠান্ডা হওয়া বিদায় নিয়েছে এই শহর থেকে কোনো পাহাড়ি দেশের উদ্দেশ্যে ় পিছনে ফেলে গেছে কিছু ঝরে পরা পাতা, একটা হলুদ পালক আর গতকাল রাতের খসে পরা তারার ইতিহাস ়
  • achintyarup | 69.93.245.224 | ২৩ অক্টোবর ২০১২ ০২:২৪451726
  • বাজিতপুর থেকে ময়মনসিং যাচ্ছি। ঘোর সন্ধে, রাস্তাও যৎপরোনাস্তি খারাপ। একখানা বড়োসড়ো গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। জাপানি কোম্পানির তৈরি এত্তবড়ো গাড়ির চলতি নাম মাইক্রো। পরে দেখলুম ওগুলোর আসল নাম মাইক্রো বাস। সে যাগ্গে, ঝড়াক ঝড়াক করে গাড়ি চলেছে, সরু রাস্তার দুপাশে ঘন হয়ে আছে সারি সারি গাছ, কোথা দিয়ে যাচ্ছি, জায়গাটা কেমন, কিছুই বোঝা যায় না, সামনের গাড়ির উড়িয়ে-দেওয়া ধুলোর ওপর হেডলাইটের আলোয় পড়ে সামনেটাও ঝাপসা লাগে, দাঁতে ধুলো কিচকিচ করে।

    সবশুদ্ধ আমরা চারজন গাড়িতে। আমি, শুভ্র, চালক আর গাড়ির মালিক, বছর তিরিশের একটি ছেলে, নাম মনে নেই, ধরা যাক বাবলু। হাইওয়ে টাইপের যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলুম সেখান থেকে হঠাৎ বাঁ দিকের সরু পথে নেমে যাওয়া হয়েছিল আগেই। নাকি মেন রাস্তাটা ভাল না, তা ছাড়া শর্টকাটও হবে। কিন্তু এ রাস্তাটাই কী এমন ভাল তাও বুঝি না, মাথাটা খালি খালি গাড়ির ছাদে ধাক্কা খায়। এখানে গর্ত, সেখানে খোয়া-ওঠা, ফেব্রুয়ারি মাস বলে জল জমা নেই কোথাও, কিন্তু ধুলোয় অস্থির। বাপরে বাপ!

    শুনেছিলাম ঘণ্টা তিনেক লাগবে ময়মনসিং পৌঁছতে। বাজিতপুরে অচেনা এক বাড়িতে দুপুরের ভরপেট খাওয়ার পর তাই একটু দেরি করেই বেরিয়েছিলাম। বিকেল প্রায় পাঁচটা বেজে গিয়েছিল, তারপর একের পর এক নানা নাম-শোনা জায়গা পেরিয়ে বড় রাস্তায় পৌঁছতে পৌঁছতে এক্কেবারে অন্ধকার। তারপর থেকে চলেছি তো চলেইছি। ঘড়িতে আটটা বেজে গেছে কখন।

    গরুর গাড়ির স্পিডে চলতে চলতে, ঝাঁকুনি খেতে খেতে প্রাণটা ঠোঁটের কাছে চলে এসেছে, এমন সময় মাইক্রো গেল থেমে। এখানে থেকে আর এগুনোও যাবে না, পিছোনোও যাবে না। খানিক আগে মাঝপথে একটা ট্রাকটার নাকি খারাপ হয়ে গেছে, তাকে না যাচ্ছে সারানো, না যাচ্ছে ঠেলে সরানো। এদিকে চারদিক থেকে গাড়িরা সব ফাঁকফোকর খুঁজে বেরুনোর চেষ্টা করতে গিয়ে ভয়ানক জট পাকিয়ে ফেলেছে। সে জট ছাড়ানো কার বাপের সাধ্যি কে জানে। হতাশ হয়ে বসে আছি গাড়িতে। শহর থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে সমানে ফোন করে যাচ্ছেন কাকা আর পিসি। এই প্রথম তাঁদের চোখে দেখব। ঠাকুরমা, মানে আমার বাবার মামিমা, বসে আছেন না খেয়ে। নাতির জন্যে অপেক্ষা করছেন। তাঁর সঙ্গেও আগে দেখা হয়নি কখনো। তাঁরা যে বাড়িতে থাকেন, বাজিতপুর ছেড়ে ইণ্ডিয়ায় পালিয়ে আসার পথে আমাদের পরিবার সেখানে এক দু রাত ছিল বলে শুনেছি।

    গাড়িতে বসে আছি, মশা ভোঁ ভোঁ করছে কানের কাছে। সামনেও গাড়ির সারি, পেছনেও লম্বা লাইন। অ বাবলু, কী রাস্তায় আনলা? এত টাইম লাগব তো কও নাই? বাবলু কথা কম বলে। আমার প্রশ্নের জবাব দেয় না। দশ মিনিট কাটে, তারপর পনের মিনিট। অধৈর্য হই, বিরক্তি লাগে। এর মধ্যে ময়মনসিং প্রেস ক্লাব থেকে পিসির কাছে ফোন -- ইণ্ডিয়ার মেহমানরা যেন ডিনারটা আজ প্রেস ক্লাবেই করেন। তারপর একুশের মাঝরাতে মিছিল করে যাওয়া হবে শহীদ বেদিতে ফুল দিতে। কিন্তু কোথায় কী? এখন খোদার আন্‌দেখা এই জায়গায় বসে মশার কামড় খেয়েই কি রাত কাবার করতে হবে? অ বাবলু, দেখো না।

    কথা না বলে নেমে যায় বাবলু। দু মিনিট, চার মিনিট, পাঁচ মিনিট... অ ড্রাইভার সাহেব, বাবলু গেল কই? ড্রাইভার মুখ ভ্যাটকান। অর্থাৎ তিনিও আমাদের মতই ক্লু-লেস। তারপর বাবলু ফিরে আসে। উপায় একটা নাকি পাওয়া গেছে। ডানদিকে নেমে এক বাড়ির উঠোনের মধ্যে দিয়ে খানিকটা গিয়ে, ট্রাকটারটাকে পেরিয়ে তারপর রাস্তায় উঠতে হবে। সুতরাং গাড়ি শুদ্ধ নেমে পড়ি উঠোন-সমুদ্রে। সে অন্ধকারে অবশ্য আমাদের কাছে রাস্তাও যা, উঠোনও তাই। একটু একটু করে এগোই, বাঁদিকে ব্রেক-ডাউন হওয়া ট্রাকটরটাকে দেখতে পাই, পার হয়ে যাই। যাক বাবা, এবার রাস্তায় উঠলেই হয়। কিন্তু পথের দেবতা অত সোজা পাত্তর মোটেই নন দেখা গেল। উঠোন থেকে রাস্তায় উঠেতে গিয়ে দেখা গেল মাঝে এক গত্ত, এবং খোঁড়ার পা যেমন খানায় পড়ে, তেমনি আমাদের মাইক্রোর সামনের ডানদিকের চাকা সেই গত্তে গিয়ে পড়েছে। ড্রাইভার সাহেব গোঁ-গাঁ আওয়াজ তোলেন ইঞ্জিনে, গড়ি সামনে দোলে, পেছনে দোলে, কিন্তু এগোতেও পারে না, পেছোতেও পারে না। আবার দরজা খুলে নেমে যায় বাবলু। চাকা আর গত্ত পর্যবেক্ষণ করে এসে জানায়, কুনও উপায় নাই। সবাই মিলে ঠেলেও গাড়ি এখান থেকে তোলা যাবে না। তাহলে কী উপায়? অ বাবলু?

    উপায় একটাই, বাবলু জানায়। পাশ থেকে মাটি কেটে এনে যদি খন্দটা খানিক বোজানো যায়, তাহলে আমাদের গাড়ি উঠে যেতে পারে রাস্তায়। কিন্তু এই অচেনা জায়গায় অন্ধকারের মধ্যে মাটি কাটার লোক এখন পাই কোথায়? অ বাবলু?

    খাড়ান, বলে অন্ধকারের মধ্যে কোথায় মিলিয়ে যায় বাবলু। একটু দূরে অন্ধকারের মধ্যে থেকে চাপা গলায় দুয়েকটা কথা আবছায়া শোনা যায়। বোঝা যায় না। বাবলু ফিরে আসে। হাতে একটা কোদাল। তারপর কোদাল চালিয়ে মাটি কেটে নিজের হাতেই সে গত্ত বোজায়। গোঁ-ও-ও করে আওয়াজ হয় ইঞ্জিনে, একটা ঝাঁকুনির সঙ্গে সঙ্গে আমরা আবার রাস্তায়। কোদাল যথাস্থানে রেখে বাবলুও এসে গাড়িতে ওঠে। মুখে মিটমিটে হাসি। কইত্থিক্কা কুদাল আনসিলা বাবলু? চিন নাকি এদেরে। বাবলু হাসে। বলে, চিনি না। সামনের বারিত গিয়া দেহি ঘরে কে ঘুমাইতাসে, দরজা খোলা। আমি আস্তে আস্তে ঘরে ঢুইকা জিগাইসি কুদালডা কই আসে? জিগায় তুমি কে? কুদাল কুন কামে লাগব? আমি কই, চুপ কইরা শুইয়া থাহেন। জানাজার লেইগ্যা মাডি খুরতে অইব। আফনের কুদাল দিয়া যামু আফনেরে। জানাজা শুইন্যা হেরা আর কিসু কয় নাই।

    আমি হতবাক। গাড়ি তখন চল্লিশ কিলোমিটার স্পিড নিয়েছে।
  • sosen | 125.184.123.45 | ২৩ অক্টোবর ২০১২ ০৭:৩১451727
  • হা হা হা! চিন্টুবাবু, চলুক!
  • achintyarup | 69.93.194.121 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ০২:০২451729
  • এইটুকুই রে। খামখেয়ালে লেখা আর কত বড় হবে?
  • kiki | 69.93.197.20 | ২৫ অক্টোবর ২০১২ ০১:১১451730
  • ঠিকাছে আরেট্ট খাখে লেখ! তাতে এর পরের্টা থাকবে।
  • | 24.99.239.195 | ২৭ অক্টোবর ২০১২ ১৮:৩৩451731
  • জানাজার জন্য! হা হা হা হা হা :-))))
    এইটা এক্কেবারে বস! কুনো কতা হবেক লাই।
  • Abhyu | 107.89.19.52 | ০৮ জানুয়ারি ২০১৩ ২১:৪৭451732
  • এটি একটি প্রফুল্লকর টই।
  • সায়ন | 59.249.139.57 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:৫০451733
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ সোহাগ মেশাও, সময়ের ক্ষয় যদি বন্ধ করা যেত তবে। খামোখা কিছু প্রশ্বাস বায়ু, তাদের সতেজ আনাগোনা, পাঁচমেশালি কোয়ান্টাম ফিজিক্স, দারুচিনি দ্বীপের মত... অক্ষরের গায়ে অক্ষর লাগে, বর্ণ চিনে নিক অন্যান্য বর্ণমালার পরিমিতি। এমন করে হাঁটু ঘষটাই লৌহআকরিকময় এই গলন্ত সময়ে, আর থেকে থেকে পালটে যায় দিবাস্বপ্ন, টেলিফোনের রিংটোন। এমন ভবিতব্য নিয়ে বাঁচতে শিখেছি আর কিছু নৈমিত্তিক দিনযাপন। রূদ্ধ কন্ঠে বাষ্প জমিয়ে রেখে দেখেছি কীভাবে দিনবদলের সংজ্ঞা বদলে দিয়ে যায় আপাতনীরিহ প্রভুভক্ত অনুরাগ। তার নষ্টামিময়, অনুচ্চার্‍্য গাথা-গীতি-কবিতা। স্বপ্নের রেশ না কাটুক, ধ্বংসস্তুপে একলা বসে যেন রোদন করি প্রস্থরীভুত পাললিক ফসল। আর রয়ে যাক রিক্ততা। স্বপ্নাবেশমোহমায়াসম জায়গীরদার একলা পৃথিবী। এসবের উল্লেখ কোরো। অনেক স্মৃতির স্তর হাতড়ে যদি খুঁজে পেতে পারো রক্ত-আগুন-প্রেমভরা অরণ্যরোদন... এসবের উল্লেখ রেখো তবে। কারণ, তুমি তো জেনেছিলেই, আজ বিষবসন্ত সমাগত।
  • titir | 138.210.80.42 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ ০২:১৫451734
  • মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল প্রায় ছয়মাস আগে। নাহ, ঠিক দেখা হয় নি। বাসে ওঠার আগে তার বন্ধুটি বাস ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করেছিল, এই বাস সেই নির্দিষ্ট স্টপে যায় কিনা? বাস ড্রাইভার সদুত্তর দিতে পারে নি। কিছুটা সংশয় নিয়ে , মেয়েটির সেই বন্ধুকে বললাম যদি কিছু না মনে করো আমি তোমার বন্ধুকে নির্দিষ্ট বাস স্টপে নামিয়ে দিতে পারি। মেয়েটির বন্ধু কি ভেবে রাজী হয়ে যায়। সহযাত্রী হয় মেয়েটি।

    অলবিস্তর কথা বলার চেষ্টা করে মেয়েটি। কিন্তু প্রতি পদে পদে ঠোক্কর খায়। ভাষা দুজনের মাঝখানে দুস্তর বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নির্দিষ্ট স্টপে নেমে পড়তে বলি তাকে। রাস্তা পার হই। খুব বেশীদিন হয়নি তার এই পাড়ায় বসবাস। তাই বাড়ি চেনে না। শুধু বলতে পারে তার বন্ধুর বাড়ি এই পাড়ার সেই ঝিলের ধারে। যেই ঝিলের মধ্যিখানে একটা বিরাট ফোয়ারা। তার থেকে অবিরাম জল গড়িয়ে পড়ে।পাশে আছে বাচ্চাদের পার্ক। তার বন্ধুর বাড়ি থেকে এই জিনিশগুলো সে দেখতে পায়। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাই তার বন্ধুর বাড়ির দিকে। খুব বড় পাড়া নয়। একটু এদিক ওদিক করে খুঁজে পাই সেই কাঙ্খিত বাড়ি। বিদায় জানিয়ে ফিরতে চাই।
    জড়িয়ে ধরে হাতখানা। তার দেশ থেকে আনা কিছু একটা উপহার দিতে চায়। ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসি বাড়িতে।

    দিন কেটে যায় নিজস্ব নিয়মে। সেই মেয়ের কথা মনে থাকে না। কেননা তার সঙ্গে তো আর আমার দেখা হয় না। হঠাৎ করে আবার একদিন দেখা হয়ে যায় তার সঙ্গে। সেই আমায় সহজে চিনতে পারে। আমি আর পাঁচটা অন্য মুখের ভীড়ে তাকে হারিয়ে ফেলেছি। এগিয়ে আসে হাসি মুখ নিয়ে। জিজ্ঞাসা করে কেমন আছি।

    কেটে যায় বেশ কিছুদিন। একদিন আবার তার সঙ্গে দেখা অন্য বাস স্টপে। থাকা সংক্রান্ত কিছু গোলমালের জেরে সে এখন অন্য জায়গায় থাকে। নিজের মতো করে গল্প করি আমরা। সে আমার দেশ সম্বন্ধে অনেক খোঁজ খবর রাখে। পণপ্রথা আর কাস্ট নিয়ে বহু প্রশ্ন করে। যতটা পারি উত্তর দিই। সে এখন অনেকবেশী গুছিয়ে কথা বলতে পারে। তার ছেলের কথা বলে, যে গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করে চাকরী করে বেইজিং শহরে। তার বাবা মার কথা বলে। চাকরী পাবার পর প্রথম মাইনের টাকা তাদের হাতে তুলে দেবার কথা বলে। তাদের প্রজন্ম আর তার প্রজন্মের ভিন্ন চিন্তা ধারার কথা ও চলে আসে। কথা চলতে থাকে সমস্ত সময় ধরে।কখনো সহমত কখনো ভিন্নমত । নির্দিষ্ট স্টপে নেমে পড়ি দুজনে। আমি চলে যাই আমার কাজের জায়গায়। সে চলে যায় আর একটি বাসে করে। এই শহরের ভাষা শেখার স্কুলে ইংরেজী শেখে। তার ইচ্ছে পরে কখনো সময় সুযোগ পেলে পড়াশোনা করতে আবার আসবে। ভালো লাগে মেয়েটির এই প্রচেষ্টা।

    কদিন ধরে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা পড়েছে। বাস না ধরে গাড়িতে করে যাই।
    তার সঙ্গে আর দেখা হয় না। আজ আবার বাসে তার সঙ্গে দেখা। সে খুব খুশী আমার দেখা পেয়ে। আজকেই তার স্কুলের শেষ দিন। সে দেশে ফিরে যাবে। আমার সঙ্গে তার আর দেখা হবে না। আমন্ত্রণ জানায় তার দেশে যাবার। এতদিন পাশে বসে এতো গল্প বলেছি কিন্তু তার নাম জানা হয় নি। তার নাম জিজ্ঞাসা করি। গোটা গোটা অক্ষরে লিখে দেয় তার নাম।
    বাস থেকে নেমে পড়ি। দুজনের দুদিকে চলে যাবার পালা। জড়িয়ে ধরে হাগ করে। তার গ্লাভস না পরা ঠাণ্ডা দুহাত ছুঁয়ে বলি, "আবার এসো। ভালো থেকো "।
  • nina | 79.141.168.137 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:২১451735
  • চিন্টুবাবু
    আরিব্বাস এই জব্বর গপ্পটা ই আমি মিসিয়ে গিয়েছিলুম আর তায় আবার কিনা শুরু শুধু নয় শেষ ও হয়েছে ঃ-)) জাবর হইসে এইডা!

    তিতির
    নতুন গুড়ের সিজনে বেশ মিষ্টি-মতন, আসা যাওয়ার পথের নানারকম মিষ্টি অভিজ্ঞতার সন্দেশ ;-)

    সান্দাকবি
    বড় করুণ সুরে গাইলি রে---
  • suman | 192.64.10.89 | ২৫ আগস্ট ২০১৩ ০০:০৫451736
  • তবে ফোন আসে। ফোন করে কথা বলার ইচ্ছেরাও আসে। কিন্তু যে নম্বরের ইচ্ছে সে নম্বরের সময় তো আর তখন থাকে না। শুধু ইচ্ছেরা থাকে। কাছেপিঠের ছোট খাটো ইচ্ছেরা যেন বাসে উঠে এদিক ওদিক যায়, আসে, কখনো একা একা ঘুরে বেড়ায় চেনা রাস্তায়।

    চেনা রাস্তার সুবিধা আছে বইকি। পা চেনে এইসব রাস্তা, রাস্তা সংলগ্ন কৃষ্ণচূড়া বা অশ্বথ গাছের শিকড় বহুলতায় গড়ে ওঠা ফুটপাথের ফাটল, এর প্রতিটি বাঁক চেনে পা। ঘাড় চেনে চেনা মানুষদের এখানে খুব, মুখোমুখি হলে অজান্তেই হেলে পড়ে সে। তাই চিন্তা ভাবনা ছুটে যায় অনায়াসে – যেন মাঝরাত্তিরে ট্রেন পেরোচ্ছে এক বিরাট নদী গুম গুম শব্দে – যাতে ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয় আর ফেরার উপায় নেই – আর কেউ চেনা থাকবে না অন্ততঃ এই জায়গায়।
  • সায়ন | 59.200.243.9 | ১৮ জুলাই ২০১৪ ২৩:০২451737
  • সামলেসুমলে রাখা ছোটবেলা ত' নয়, যে ভেসে যাবে, ভেঙে যাবে এইসব বলে আগলে রাখবে কেউ! তাও দুচ্ছাই করে দেখি আগলে রাখা ছিল বেশ ভালোমাত্রাতেই। অপরাধ করলে পিঠে তাল দমাদম, কথা শুনলে কোয়ালিটি আইসক্রিম পর্যন্তই। হ্যাপী ফ্যামিলি পুতুলের পেটে পুতুলগুলোকেও দেখতাম সুখী সুখী গোলগাল হাত-পা-মাথা। কেন কে জানে তখন জন্মদিন হলেই গল্পের বই আর হেলিকপ্টার উপহার পাওয়া যেত এন্তার। বইগুলো এখনও আছে। শুরুর আগের পৃষ্ঠায় উপরে ডানদিকের কোণে নাম-শুভেচ্ছাবার্তা মেয়েলি ছাঁদে লেখা সেই স্বপ্ন-স্বপ্ন বইগুলো। কিন্তু স্প্রিং'এর দম-দেওয়া উপরে বনবন পাখা-ঘোরা হেলিকপ্টারগুলো দু'দিনেই কেমন কেতরে পড়তো। এখন, হেলিকপ্টারে দম দিলে ওড়ার বদলে সে যদি ছুটতে আরম্ভ করে, চৌকাঠে এদিক-ওদিক ঠোক্কর খেয়ে সে চাকা হারায়, কেটে যাওয়া স্প্রিং গুটোনো কেন্নোর মত পড়ে থাকে তার টেকনিক্যালিটি আমি কী জানি! তেমন-তেমনটাই ডাকব্যাকের ব্যাগ আমার। কিনে দেওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই ব্যাগের মধ্যের সেলাই থেকে কী সব বেরিয়ে আসতে আরম্ভ করল। শেষমেষ পাতলা হলে একবার বৃষ্টির জলে চুপ্পুস ভিজে নিমুনিয়া হয়ে অকালে দেহ রাখল সেই ব্যাগ। এদিকে পায়ের পাতাও বড় হচ্ছে। বাবার জুতোয় পা গলানো শুরু হতেই প্রমাদ গোনে সবাই। সানিহীন দুপুরবেলায় স্কুলফেরতা আমরা দু-তিন ধাপ সিঁড়ি ভাঙতাম একলাফে। পায়ে বাবার জুতো।
    এই পর্যন্তও ঠিক ছিল। মুশকিল করলো সঞ্জয় দত্ত। আমরা স্টাইল করে হিন্দিমতে বলতাম সঞ্জয় দত্‌। ফুনাই'এর ভিসিপি ভাড়া করে এনে 'সড়ক' দেখা হয়েছিল সকল অপসংস্কৃতির কালো ঝান্ডা সমেত। (সেই ব্যথাময় 'ফির তেরি কহানী ইয়াদ আয়ি'র পুজা ভট্'এর বোনের রিসেন্টলি অভিনীত সিনেমার নাম 'হাইওয়ে'। নিন্দুকেরা বলে শাইনিং ইন্ডিয়া 'সড়ক সে হাইওয়ে তক। তরক্কি তো হুয়ি হ্যায়।')... কথা হচ্ছিল সঞ্জয় 'বল্লু বলরাম' দত্ত'কে নিয়ে এদিকে চলে গেলাম আলিয়া ভটে। দুনিয়াময় ব্যথার ট্র্যাপ! মা, মাগো! হুঁ, তো সেই সঞ্জয় দত্ত যখন পঙ্কজ উধাসের স্টেজ শো'তে চিট্‌ঠি আয়ি হ্যায় শুনে ফোঁস ফোঁস কাঁদল তখন অতি নিন্দুকদের চোখেও আমানি ছিল বৈকি! তখন অবশ্য সঞ্জয় দত্ত রোগাভোগা মধ্যবিত্তের কুপথে-যাবো-যাবো ছেলে। তখনও ট্রাইসেপ্‌স-ল্যাট্‌স তেমন গজায়নি গায়ে। এহেন ট্রানজিশনাল ফেজে একের পর এক সিনেমা নামলো আর আমার সব অপরাধের সাক্ষী দাদা আমাকে নিজের পাপের হিস্‌সা দিতে দিতে সব সঞ্জয় দত্তময় গান শুনিয়ে দিল। জানলাম খলনায়কের লম্পট, দঅওড়'এর (এটাকে অনেকদিন 'দাউদ' পড়তাম, যেমন শারুক খানের স্বদেশ'কে প্রথমে সবাই 'সোয়েড্‌স' ভেবেছিল) কেঁদো সঞ্জয় দত্তই আমাদের সাদাকালো অনুষ্ঠান-প্রচারে-বিঘ্ন-ঘটায়-দুঃখিত টিভির কুমার গওরভ'এর ভাই সেই বখা ছেলেটা। অ্যান্ড ইয়েট সঞ্জয় দত্ত রুলস! প্রমাণ, এই গানটা। শুনুন -

  • achintyarup | 127.194.63.129 | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০২:০২451738
  • আজকাল কেন জানি মিনির কথা খুব মনে হয়। অথচ তার সঙ্গে না ছিল আমার ভাব-ভালোবাসা, না ছিল কোনো টান, না ছিল বন্ধুত্ব। ক্লাস টু কিম্বা থ্রি-তে পড়ি যখন, বড় ইস্কুলের দু খানা ঘরে আমাদের ক্লাস হয়, সেখানে মিনি আমাদের সঙ্গে পড়ত। চাষীর বাড়ির মেয়ে, এই তালঢ্যাঙা মনে হত তখন, হবে না-ই বা কেন, এখন মনে হয় সেই ক্লাস টু কিম্বা থ্রি-তেই বারো-তেরো বছর বয়েস ছিল তার। কিম্বা হয়তো আরও কম ছিল। ছোট ইস্কুল ছেড়ে বড় ইস্কুলে সে গিয়েছিল কিনা তা মনে নেই। যদ্দূর মনে হয় পড়াশুনো তার দু-তিন বছরের মধ্যেই শেষ হয়েছিল। সুশ্রী নয়, কালো, দাঁত-উঁচু, ময়লা লাল ফ্রক পরা। কালো কালো চামড়া-ফাটা পা ফ্রকের নিচ থেকে বেরিয়ে থাকত। ফ্রকের কোঁচড়ে করে মুড়ি নিয়ে আসত, টিফিনে খেত, গায়ে গন্ধ। অবশ্য বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই অমনি ছিল। তবে অত বড় না। খুব নিষ্ঠুর কথা বলেছিলুম একদিন তাকে ওই সময়। এই লিখতে গিয়ে মনে পড়ল। রাশিয়ান বইতে, দেশ-বিদেশের রূপকথায় ডাইনির গল্প পড়ি, তারা সব কল্পনার জগতের প্রাণী তা-ও জানি, একদিন কি দারুণ রসিকতায় অন্য কোনো সহপাঠীকে বলেছিলুম, ও বোধ হয় ডাইনি। লুকিয়ে বলিনি। ভারি মজা করে মিনির সামনেই বলেছিলুম। মুহূর্তের মধ্যে দাঁত-নখ বের করা বিড়ালীর মতো ফ্যাঁশ করে উঠেছিল। দেখে আমি হাঁ। ভয়ও পেয়েছিলুম। অত বড় মেয়েটা যদি মারে। কী এমন ভয়ঙ্কর কথা বলেছি বুঝতেও পারিনি। কে জানে বাবা। তারপর তো এই নিয়ে কোনো কথাও হয়নি, এখন দেখছি ভুলেও গিয়েছিলুম। তার মুখখানাও খুব স্পষ্ট মনে পড়ে না। শুধু মনে আছে তার কয়েক বছর পর, পা আগে করে তাকে নিয়ে যাচ্ছিল যখন, লাল রঙের নোংরা জামা পরেছিল, আর পায়ের তলাদুটো এক্কেবারে হলুদ। অমনি কোনো মানুষের পা আর দেখিনি। ফলিডল খেয়েছিল তো। আমাদের গাঁয়ে হামেশা শোনা যেত ফলিডল খাওয়ার কথা। চাষী-বাসী ঘরে সহজলভ্য বিষ। কী তার মনে হয়েছিল, বাপে মেরেছিল, কি মায়ে বকেছিল, অথবা আরও অন্য ভয়ঙ্কর কিছু, জানতেই পারিনি। হয়তো পনের-ষোলো বছর বয়েস ছিল তার তখন। হয়তো আরও কম। তারপর কতদিন পেরিয়ে গেল। পঁয়তিরিশ কি ছত্তিরিশ বছর। হয়তো দু-এক বছর কম বা বেশি। আজকাল অকারণেই যখন মাঝে মাঝে মনে হয় খুব বেশি সময় নেই আর, হাতে-গোনা কয়েক দিন হয়তো, তখন সে আসে। অমনি নোংরা লাল রঙের ফ্রক, খাটিয়ায় দুলতে দুলতে যায়, পায়ের তলাদুটো অমনি হলুদ।
  • ranjan roy | 24.96.79.99 | ১৫ মার্চ ২০১৫ ২১:২৭451740
  • ছেলেটা প্রথম দিন থেকেই আমার অপছন্দ। তালঢ্যাঙা, চশমা চোখে। আমার স্থানীয় লব্জতে-- চশমুদ্দিন!
    শুনেছিলাম বড় পরিবারের ছেলে। বাবা দাদার সবাই বড় বড় সরকারি চাকরিতে। জামাকাপড়ে চলনে বলনে গ্রামীণ ব্যাংকের কমন কাস্টমার , অর্থাৎ হেঁটো ধুতি পড়া চাষি ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের প্রতি তাচ্ছিল্য ঝরে ঝরে পড়ে।
    আমি শুরু থেকেই বিরূপ। ব্যাংকের কাজে ওর মন নেই, যতটুকু না করলে নয় আর কি। যাকে বলে "থুক-পালিশ" করে কাজ চালানো।
    -- যা না! অন্য চাকরিতে যা। এই চাকরি করতে কে মাথার দিব্যি দিয়েছে!
    তোর ছোট বোন ভারত ভবনে বিখ্যাত পেইন্টার জে স্বামীনাথনের ছাত্রী? ফাইন আর্টসে গোল্ড মেডালিস্ট? এটা ওর করা স্টিল লাইফ? না, আমার চাই না।
    ডিসিএম এর বেডশিট আর আমার বৌয়ের জন্যে ম্যাক্সি? কেন এনেছিস? কী বললি?এটাই তো দস্তুর?
    বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। আর কোনদিন যদি --!
    তোর স্ত্রী ম্যাথমেটিক্সে ড্ক্টরেট ? খুব ভাল। ওনাকে আমার নমস্কার।
    তোর মতে বিজেপি দেশকে ঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে? আমি তোর সঙ্গে পলিটিক্যাল কথাবার্তায় উৎসাহী নই।
    আচ্ছা, তোর স্ত্রী লখনৌয়ে একমাসের ওয়ার্কশপ এ যাবেন। খুব ভাল। যা গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আয়। কী? একমাসের ছুটি চাই? তুইও ওখানে থাকবি?
    সরি, হবে না। এটা ,মার্চ মাস। ক্লোজিংয়ের টাইম; ব্যাংকের কাজগুলো কে করবে? আমার পিতাঠাকুর!
    ছেলেটি সাতদিনের ছুটি নিয়ে সেটা কে বাড়িয়ে একমাস করে। আমি চটে গিয়ে শো-ক্জ করি। ও উপরে লবিবাজি করে বরুণবাণ চালিয়ে আমার অগ্নিবাণ নাকাম করে দেয়।
    কিন্তু একদিন একটা ঘটনা ঘটে।
    আমার চোখের সামনে একজন কলিগ দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে লোহার রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফাটায় ও পা ভেঙে ফেলে। আমি হতভম্ব।
    চোখের নিমিষে ও মাটিতে বসে ছেলেটির পা কোলে তুলে নিয়ে টিপে টুপে দেখে টুর্নিকেট বাঁধে। তারপর নিজের কার চালিয়ে ওকে নার্সিংহোমে পৌঁছে দেয়।
    কোথায় শিখলে?
    আর্মিতে সিলেকশন হয়েছিল। বাড়ি থেকে ছাড়ল না। কিন্তু এনসিসির অ্যাডভান্স কোর্স করতে গিয়ে জাঠ রেজিমেন্টের সঙ্গে ছিলাম।
    আমার অবসর গ্রহণের আগের বছর। ট্রেনে করে রোজকার মত দৈনন্দিন রেলযাত্রীর দল হো-হল্লা করতে করতে যাচ্ছি। হটাৎ চেঁচামেচি।
    একটি ছেলে খোলা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছিল। হাত ফস্কে মোবাইল পড়ে যায়। সে মোবাইল ধরতে গিয়ে রেললাইনে পড়ে যায়।
    মুম্বাই মেল ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে। আমরা চেন টানি, কোন ফল হয় না। ওই ছেলেটি বাথরুমে গিয়ে থামে ট্রেন থেমে যায়। গার্ড এসে আমাদের ধমকায়, ফাইন করার হুমকি দেয়। পরামর্শ দেয় --আপনারা নেমে যান, জিআরপিকে কম্প্লেইন করুন। ওরা বডি নিয়ে রেলের হাসপাতালে দেবে।
    আমি কথা খুঁজে পাই না।
    ও গার্ডকে কড়া সুরে বলে --রেল দু'কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে। ছেলেটি হয়ত বেঁচে আছে। আপনি গাড়ি পিছিয়ে নিয়ে চলুন। ছেলেটিকে তুলে আমরা গাড়ি বুক করে বিলাসপুর রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাব। নইলে ছেলেটি মারা যাবে আর আমি আপনাকে ম্যানস্লটারের চার্জে জেল খাটিয়ে ছাড়ব।
    গার্ডের চোখ ছানাবড়া।
    ট্রেন পিছিয়ে যায়; প্রায় ৭০০ মিটার যেতেই বডি দেখতে পাই। বেঁচে আছে। কিন্তু পা আলাদা হয়ে গেছে। রক্ত! রক্ত! ও কাটা পা দেখে হাপুস নয়নে কাঁদছে।
    এই ছেলেটি শার্ট ছেঁড়ে , দক্ষ হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধে। কাটা পা কোলে নিয়ে জিপে বসে। আমরা একটু সরে সরে বসি।

    রেলওয়ে হাসপাতালে গ্যাংগ্রিনের ভয়ে দুটো পা'ই কাটতে হল। কিন্তু প্রাণ বাঁচল।

    অডিট রিপোর্টে ছড়ানোয় ওর চার্জশিট হয়। আমি ওর ডিফেন্স কাউন্সিল হই।
    আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। বলি-- তোর মত নড় মনের মানুষ এ জন্মে হতে পারব না। কিন্তু তুই আমার থেকে ব্যাংকিং এর প্রতি পজিটিভ অ্যাটিচুড নিয়ে নে।
    ওর প্রমোশন হয়।
    কাল ওর ফোন পেলাম।
    ফেব্রুয়ারি মাসে ওর ব্রাঞ্চে ডাকাতি হয়। ও ওদের সঙ্গে কথ বলে ওদের অবজার্ভ করে খুঁটিয়ে।
    ওর চেষ্টায় ও উপস্থিত বুদ্ধির ফলে অপরাধীরা একমাসের মধ্যে ধরা পড়েছে। টাকা ফেরত পাওয়া গেছে।
    তারপর বলে-- আরো সুখবর আছে। যে প্রোমোটারের সঙ্গে লড়াইয়ে আপনি ও ভাবিজি ছত্তিশগড় ছাড়লেন সে এখন জেলে। অন্য একটি ফ্রড কেসে।
    আমি গিন্নিকে বলি--ওগো শুনছ?
  • Tim | 101.185.15.45 | ১৬ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৭451741
  • এই যে এখন যেখানে বসে আছি, তার বাইরেই রাতের খাঁজে খোঁজে বরফ জমে আছে, এই মধ্য মার্চেও। এখন তো কবিতার ওপর থেকে বিশ্বাস চলে যাওয়া সময়, গায়ের ওপর থেকে কবিতার চাদর সরিয়ে নিয়েছে কেউ, ঝটকায়। উলঙ্গ করে দিচ্ছে রোজ। দূরে, কাছেও। বাচ্চাদের মাপজোখ হচ্ছে, ছেলে মেয়ে, শরীর, পোষাক---এইসব।
    এই সেদিন একটা বাচ্চা নয়-তলার জানলা দিয়ে পড়ে গেল। চার বছর বয়স। বাড়িতে ন বছরের দিদি ছিলো খালি, মা দোকানে গেছিলো অল্পক্ষণের জন্য। বাবা, আমাদের সহকর্মী, নামী কেমিস্ট, অফিসে তখন। ভেবে অদ্ভুৎ লাগলো, বাড়ি ফিরে বাবা দেখবে ছেলে নেই। এখন এইরকম সময়, ছয় বছর, চার বছর, ন বছর। জাফর পানাহির দ্য সার্কল (দায়রেহ) মনে পড়ে। বাচ্চা জন্মাচ্ছে, দিদা জিগ্যেস করছে মেয়ে? আগে তো পরীক্ষা করে ছেলে বলেছিলো, তবে? ভালো করে দেখুন।
    সেইসবের মধ্যেই মানুষ নিজেদের আদরের শিশু আনছে, মা-বাবা তার জন্মদিনে স্বপ্ন দেখছে, দেখতে পাই। অল্প মাইনের সবটাই তার খুশির উৎসবে ঢেলে দিয়ে স্বপ্ন দেখে মানুষ। তাদের পরাক্রম ও মানসিক শক্তি অবাক করে। এই পৃথিবীতে, যেখানে, এখন ভয় হয়, জীবদ্দশাতেই দেখে যেতে হবে সবটাই ধ্বংসস্তূপ, সেখানে এই সাহস অপার্থিব লাগে।
    যে লোকটা মোবাইলের অন্যপ্রান্ত থেকে শুনলো তার বউকে ছুরি মেরে মেরে ফেলছে কারা, যে বাবা শুক্রবার অফিস থেকে ঘরে ফিরলো বাচ্চার শব দেখবে বলে, যে বাচ্চা মেয়েটির জন্মদিনে খেলনা দিয়ে ভালো হোক সুখে থাক বলে আদর করে এলাম, তাদের সুস্থ থাকার জন্য আর কতটাই বা সময় আছে আমার জানা নেই।
  • sosen | 212.142.95.3 | ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৭:০৫451742
  • এখন স্বপ্নের মধ্যে পোকা হাঁটে। গায়ের উপর দিয়ে, শিরশিরিয়ে--আমি ধড়মড়িয়ে স্বপ্ন থেকে উঠতে চাই। পারি না।
    স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে ফুরিয়ে গেলো। আদিগন্তব্যাপী এই কলরোলের মধ্যে আমি ফুঁ দিয়ে নিজের চারপাশে সেই বেলুনটা ফুলিয়ে নি, তারপর দুই হাঁটু জড়িয়ে বসে থাকি চুপচাপ। আর শক্তি নেই স্বপ্নের পিছনে দৌড়নোর।
    হঠাৎ আহত চোখ, হঠাৎ বেসামাল হাসি, হঠাৎ দু-উরুর মাঝে কামস্পর্শে কেঁপে ওঠা, এই সব তো সেদিন-ই ছিল, এই তো সেদিন। তারপর "সেদিন" কুঁকড়ে ঝরে গেলো হলুদ পাতার মধ্যে মিশে যাওয়ার জন্য। আমি আতিপাতি খুঁজেও তাকে আর পেলাম না। কিন্তু সে তো "স্পেশাল" ছিল, সবার চেয়ে অন্যরকম, কি করে বুড়ো হলে তার রং -ও একই রকম হলুদ হয়? কি করে সব কমলা আর লাল ডুবে যেতে থাকে?
    হিসেবের খাতায় সব ওলটপালট। শিশুদের দিকে তাকিয়ে লোভে দুচোখ জুলজুল করে না আর। নতুন একটা বই উপহার পেয়ে আনন্দ হয় না। সবটাই উদাসীনতায়, ক্লান্তিতে সেই মোহনার দিকে বয়ে যাচ্ছে, কালো ফ্যাক্টরি থেকে বেরোনো আরো কালো জলস্রোতের মতো।
    এখন চতুর্দিকে অনন্ত জজ, ক্ষমাহীন জুরি। অপরাধীর মতো বসে থাকি। সময় এলেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
  • titir | 138.210.206.145 | ১৪ মে ২০১৫ ২১:৪৪451743
  • যদিও মে মাস। কিন্তু বাতাসে এখনো হিম হিম ভাব। প্রতিদিন তাপমাত্রা আট দশ থেকে সর্বোচ্চ কুড়ি ডিগ্রীর মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
    ঘন নীল আকাশ। একটাও মেঘের দেখা নেই। চোখ ধাঁয়িয়ে যায় আকাশের দিকে চাইতে গেলে। সেই নীলের বুকে রেখা টেনে চলে যায় দু একটা প্লেন। চারিদিক কি শান্ত।

    এই তো কদিন আগে হাঁটতে গেলে দশ বিশজনের সঙ্গে দেখা হওয়া খুব সাধারন ঘটনা। সবাই হন হন করে চলেছে ক্লাস করতে বা লাইব্রেরীতে বা কাফেটেরিয়াতে।
    উচ্চকিত কেউ নয়। ভালো লাগত মানুষের উপস্থিতি।

    যন্ত্রের ঘর ঘর আওয়াজ। ঘাস কেটে চলে। তাজা সবুজ গন্ধ ভেসে বেড়ায়। কদিন পরেই আবার লকলকিয়ে বেড়ে যাবে। আবার পুনারাবৃত্তি।

    গ্রীন ট্রেল ধরে যেতে গেলে চোখে পড়ে এক গাছ। যার নাম জানা নেই। বন্ধু পোস্টায় ছবি। ফেসবুকে। নাম চিনতে আলাপ হয় জুলিয়েনের সঙ্গে। ঐ যে অনুসন্ধান ডেস্কে বসে। ঐ তো দিল আর্বোরেটামের বইখানি। খুব বেশী লোক নাকি এর খোঁজ করে না।

    জাপানীজ প্যাগোডা ট্রী। কি অদ্ভুত ফল ধরে গরমকালে।
    চিনে নিতে হবে আরো আরো অনেক গাছ। গ্রীন ট্রেল, ব্লু ট্রেল আর গোল্ড ট্রেল ধরে।
  • titir | 138.210.206.145 | ১৪ মে ২০১৫ ২১:৪৪451744
  • যদিও মে মাস। কিন্তু বাতাসে এখনো হিম হিম ভাব। প্রতিদিন তাপমাত্রা আট দশ থেকে সর্বোচ্চ কুড়ি ডিগ্রীর মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
    ঘন নীল আকাশ। একটাও মেঘের দেখা নেই। চোখ ধাঁয়িয়ে যায় আকাশের দিকে চাইতে গেলে। সেই নীলের বুকে রেখা টেনে চলে যায় দু একটা প্লেন। চারিদিক কি শান্ত।

    এই তো কদিন আগে হাঁটতে গেলে দশ বিশজনের সঙ্গে দেখা হওয়া খুব সাধারন ঘটনা। সবাই হন হন করে চলেছে ক্লাস করতে বা লাইব্রেরীতে বা কাফেটেরিয়াতে।
    উচ্চকিত কেউ নয়। ভালো লাগত মানুষের উপস্থিতি।

    যন্ত্রের ঘর ঘর আওয়াজ। ঘাস কেটে চলে। তাজা সবুজ গন্ধ ভেসে বেড়ায়। কদিন পরেই আবার লকলকিয়ে বেড়ে যাবে। আবার পুনারাবৃত্তি।

    গ্রীন ট্রেল ধরে যেতে গেলে চোখে পড়ে এক গাছ। যার নাম জানা নেই। বন্ধু পোস্টায় ছবি। ফেসবুকে। নাম চিনতে আলাপ হয় জুলিয়েনের সঙ্গে। ঐ যে অনুসন্ধান ডেস্কে বসে। ঐ তো দিল আর্বোরেটামের বইখানি। খুব বেশী লোক নাকি এর খোঁজ করে না।

    জাপানীজ প্যাগোডা ট্রী। কি অদ্ভুত ফল ধরে গরমকালে।
    চিনে নিতে হবে আরো আরো অনেক গাছ। গ্রীন ট্রেল, ব্লু ট্রেল আর গোল্ড ট্রেল ধরে।
  • বিপ্লব রহমান | ১৫ মে ২০১৫ ২০:৩০451745
  • ​​বৃষ্টি বিকেলের বিবরণ

    খুব গুমট গরম পড়েছে। কয়েকদিন ধরেই ঢাকার আকাশ যেন জ্বলছে। ​আলকাতরার মতো অহরাত্রি লেপ্টে থাকে চিটচিটে ঘাম। পত্রিকায় পড়ছিলাম, শিশু রোগ বাড়ছে। ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোকে শিশু মৃত্যুর খবরও আসছে কিছু কিছু।

    ভ্যাপসা গরম কাটলো আজ বিকেলের বৃষ্টিতে। দুপুর থেকেই শহরের আকাশ ছিল অংশত মেঘলা। সিএনজি চালিত অটো রিকশা (আমরা শর্টে বলি, সিএনজি) ধরে অফিস আসছিলাম। উত্তরার শ্যাওড়া নামক ফ্লাই ওভারের গোড়ায় আসতেই সিএনজি বিগড়ালো। সেখানে বাংলো প্যাটার্ণের পাঁচ তারা হোটেল- র‌্যাডিসন ব্লু। আর আমার যান ভাড়া বাবদ ১১০ টাকা গচ্চা। মন ভালো হলো আকাশের দিকে তাকিয়ে। মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে।...

    আরেক সিএনজি ধরে অফিসে পেৌঁছাতে না পেৌঁছাতেই ঝমঝম বৃষ্টি। সেই সঙ্গে মেঘের গুরুগম্ভীর হাঁকডাক। শুক্রবারেও ঘোড়ার ডিমের অফিসে কি আর মন বসে? জানালা দিয়ে বার বার চোখ যায় বাইরে। পর্দা সরিয়ে রেখেছি আগেই। বিকেল বেলাতেই যেন সন্ধ্যা। আমার নিউজ ডেস্কের বাইরেই একটি প্রাক্তন খাল। আবর্জনায় প্রাণ যায়, এমন। রাজ্যের নর্দমা জুড়েছে এই খালে। বৃষ্টিতে খলবল করে ওঠে জলাধার। নারকেল গাছের পাতা ভেঙে পড়ে। বিজলির চমকে হঠাঁৎ আলোকিত চারপাশ।

    চিফ রিপোর্টার এসে আবহাওয়া সংবাদের কথা বলেন। আমি ওয়েব সাইট ডাউন লোড দেই। আধ ভেজা হয়ে সাংবাদিক সহকর্মী এসে বলেন পরিস্থির বিবরণ। আবহাওয়ার পূর্বাভাষও আরো ঝড়বৃষ্টির কথা বলছে। সবই নাকি কালবৈশাখী। আর ঢাকার রাস্তা তো সেই রকম, বিজ্ঞাপনের ভাষায়-- সিরাম! কান টানলেই মাথা আসবে সূত্র মেনে বৃষ্টি মানেই জলযট। আর জলযট মানেই যানযট। ফিনলে ইংলিশ চা'য়ের কাপে ঝড় ওঠে। লেখা হতে থাকে বৃষ্টিবিবৃত নগর জীবন।

    ইনবক্সে আপডেট গুরুগৃহ সংবাদ। পঞ্চম শ্রেণীর মীরা এসে রোমানে টোকা দেয়। কেমন আছো আংকেল? বিজি? আমি অভ্রে লিখি, হু, ওহ, এই আছি। ভালো আছি গো মা। নেচে ওঠে সাংবাদিকের মন, -মা গো, তোমাদের রাজশাহীতে কি এখন বৃষ্টি হচ্ছে? মীরা বলে, কই না তো! এখানে তো সিরাম গরম!
    -তাই? আমাদের এখানে ঝুম বৃষ্টি। বাজটাজও পড়ছে বোধহয়। আল্লা মিয়া ফ্ল্যাাশ লাইট মারতেছে। বিদ্যুত চমকায়। হা হা হা...
    বলো কি আংকেল! তুমি বৃষ্টিতে ভিজো না?
    - না গো মা। আমার তো ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা হাতে নিয়ে বৃষ্টি দেখার সুখ নাই। বৃষ্টি নিয়ে খালি নিউজ লিখি গো মা।
    ঞঁ! তোমার অফিস তো খুব পঁচা। শুক্রবারেও কাজ করায়।
    -সংবাদের কি বার থাকে গো মা? দিনরাত্রি? শনি, রবি, বার বেলা?

    আমি একথা সেকথা বলে মীরাকে কাটাই। রক্তিম হৃদয় একেঁ জানান দেই অগাথ মায়া। আমাদের ছেলেটি এই বৃষ্টিতেই নাকি ফুটবল নিয়ে মাঠে গেছে। বাছাই করা অল্প কয়েকজন বন্ধু। তাদেরই টানটা বেশী। মার কথা একদম শোনেনি। বৃষ্টিতে ভিজলেই ওর দুরদার করে জ্বর ওঠে। আকাশ পাতাল জ্বর। ১৬ বছর বয়সেই কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। গায়ে গতরে সিরাম গালিভার। কিন্তু আসলে নিতান্তই বালক। নিজেই ফেসবুকে নাম নিয়েছে - অস্থির। আমি স্বান্তনা দিয়ে বলি, এতো চিন্তা করো না। বাসায় ফিরলে গা হাত-পা ভাল করে মুছে শুকনো কাপড় দিও। আর গরম জলের গামলায় পা ডুবিয়ে রেখ কিছুক্ষণ। সব ঠিক হয়ে যাবে।

    অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে আমার ছেলেবেলার কথা। পুরনো ঢাকার ওয়ারিতে দোতলা লাল ইটের বাড়ি। ৪ নম্বর র‌্যাংকিন স্ট্রিট। ব্রিটিশ আমলের সাবেকি ব্যাপার। গেটের সামনেই এক বেল গাছ। ঘাসে ছাওয়া এক টুকরো লন। বৃষ্টি হলেই ভাইবোনরা সকলে মিলে জলকাদার ভেতরে দাপাদাপি। ঝুল বারান্দা থেকে মা'র গলা ভেসে আসে, এই, এই! তোরা শুরু করেছিস কি এসব! পই পই করে উজাতে বারণ কর্লাম! কেউ শুনলোই না! ঠিক সক্কলের জ্বর আসবে! ...

    মা'র কথায় মনে পড়লো, ৭৩ বছর বয়সী রেডিও অফিসের সাবেক করনিক কাম আপার ক্লার্ক আসগারী সিরাজীর ডান চোখের ছানিটি বুঝি পেকেছে। সামনের মাসে বেতন পেয়েই ছানি কাটানো ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন চশমা গড়ে দেবো মা'কে। আমার নিজেওর চোখটা দেখানো দরকার। মাইনস সিক্সে বাই ফোকালেও আজকাল পত্রিকার লেখা ভালো করে দেখি না। লো নাইট ভিশন সেই ছেলেবেলা থেকে। সব সময় ব্যগের ভেতরে থাকে টর্চ।

    বৃষ্টির কথায় আবার পাহাড়ের কথা মনে পড়লো। কতোদিন জংগলের ধারে বাশেঁর মাচাং ঘরে পা ঝুলিয়ে বসেছি। কাকজোছনার ভেতর ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে চরাচর। ঝুপড়ি ঘরের ভেতর হলুদ হেরিকেনের আলো। আমি আর বুদ্ধজ্যোতি চাকমা। দুজনে ভাতের রস থেকে তৈরি মারমা'দের লিকার -- প্রাইং খাওয়ার ধুম। কাঁচা বাশেঁর চোঙ কেটে তৈরি পানের গ্লাস। বুনো বরাহ ঝলসানো অনুপান। কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে বানানো সেদ্ধ সিমের বিচি। তরমুজ কেটে ফালি করা আছে কয়েকটি থালায়। ম্রো বুড়ো বাজাচ্ছেন নিজের বানানো বাশেঁর বাশি। ধোঁয়া ওঠা উনোন থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আগুনে পোড়া কাঠের মিষ্টি গন্ধ।...
  • achintyarup | 233.176.46.126 | ১২ জুলাই ২০১৫ ১০:০১451746
  • লাল ধুলোর রাস্তার উল্টোদিকে যে পুকুরটা, তার নাম তেলিপুকুর। বাঁধানো ঘাট, ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমেছে জলে। আর বাড়ির পাঁচিলের ঠিক গা ঘেঁষে যে পুকুর, বুনো ঝোপঝাড়ে ঘেরা, তার নাম পানাপুকুর। পানাপুকুর ডাইনে রেখে একটু এগোলে ডান হাতে মালপাড়া। খুব গরীব সেখানকার লোক। তারা নামাজও পড়ে, আবার কালীপুজোও করে। সাপ ধরে, সাপের খেলা দেখায়। তার আগে দেখায় পুতুল নাচ। লম্বা ঘাঘরা পরা কাপড়ের দুই পুতুল-- দুই সতীন তারা-- দুই হাতে দুটো গলিয়ে নিয়ে, গান গাইতে গাইতে পুতুল নাচ। খাঁদি নাচবি ভাল, রসের বিনোদিনী খাঁদি নাচবি ভাল। তাদের ঝগড়া, ভাব, কান্নাকাটি, তারপর এক সঙ্গে রিকশ চড়ে হেমা মালিনীর সিনেমা দেখতে যাওয়া -- কত গল্প। তারপর পুতুল সরিয়ে রেখে একটা লম্বা বাঁখারি হাতে গান গাইতে গাইতেই সাপের খেলা।

    সেই পাড়ার ছেলে ছিল হাসান। ছোট্ট। আমারই বয়সি প্রায়। আমাদের বাড়িতে আসত পাখি নিয়ে। মুনিয়া পাখি, টিয়া পাখি, চন্দনা, শালকি পাখি। শালিককে শালকি বলত আমাদের গাঁয়ের লোক। হাটবারে রথতলার হাট থেকে কেনা ছোটবড় মাটির পুতুল তাকে দিয়ে দিতুম। সেরম পুতুল বাড়িতেও বানানো যেত। উনুনে পুড়িয়ে নিলে লাল রং ধরত বেশ।

    কিন্তু হাসান আমাকে বাঁখারি দিয়ে পাখি-ধরা ফাঁদ বানাতে শেখায়নি। সে শিখিয়েছিল আরেকজন। অবশ্য অমনি শক্তপোক্ত বড় বাঁখারি যোগাড় করে ফাঁদ বানানো আর হয়ে ওঠেনি। কী করে পাখি ধরিস রে হাসান? কেন, গাছে চড়ে বাসা থেকে পেড়ে আনি। আর আব্বা ধরে আঠাকাটি দিয়ে। আঠাকাটি আবার কী? সে জিনিস চোখেই দেখিনি কোনোদিন। হাসান বলে, লম্বা লম্বা সরু বাঁশের কি নলখাগড়ার ফাঁপা টুকরো, একটার ভেতরে একটা বসে যায়। জুড়ে জুড়ে লম্বা লাঠি। লাঠির একেবারে ওপরে আঠা মাখানো। সে শিরিষের আঠা কিম্বা অন্য কোনো কায়দায় বানানো মনে নেই, কিন্তু সেই আঠায় আটকালে পাখি আর পালাতে পারে না। গাছের ওপর পাখি দেখলেই আস্তে আস্তে নিচে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। তারপর চটপট আঠাকাটির টুকরো জুড়ে জুড়ে পাখি পর্যন্ত লম্বা করে দিতে হয়। পাখি আটকে যায় তাতে। কিন্তু আঠাকাটি জোড়ার সময় বিড়বিড় করে সমানে বলতে হয়, উড়ে যা উড়ে যা উড়ে যা... ও হাসান, পাখি ধরবে যদি তো উড়ে যা উড়ে যা কেন বলে? গম্ভীর মুখে খাঁচা-টাচা গুছিয়ে নিয়ে হাসান বলে, বলতে হয় গো দাদা অমনি। নইলে পাপ লাগে
  • achintyarup | 125.187.37.112 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৪451747
  • জিমিস কিচেনের মাঝামাঝি জায়গায় ছোট্ট একটা টেবিল। তার দু দিকে দুটো চেয়ার। একটায় আমি বসি। অন্যটা খালি থাকে। আমি একটা বীয়ার খাই। স্ট্রং। সময় থাকে না। তাড়াহুড়ো করি। ফোনটা টেবিলে রাখি, পিঠের ব্যাগ হাত গলিয়ে ফেলে দিই চেয়ারের এক পাশে। যে চেয়ারটাতে আমি বসব। চট করে ঘুরে আসি টয়লেট থেকে। ফাঁকা রেস্তোরাঁ। আমি একমাত্র খরিদ্দার। ওয়েটার নাইজেল এসে হেসে জিগ্যেস করে, ভালো আছেন? আমি অন্যমনস্ক থাকি। আমি শুকদেববাবুর কথা ভাবি। লেখার কথা ভাবি ওঁকে নিয়ে। আমার মাথার মধ্যে সুর পাক খায়। টেবিলে ন্যাপকিন নেই, আমি ন্যাপকিন চাই। শুকদেববাবু আমাদের বাড়ি আসতেন। বাজনা শেখাতে। বাজনার কথা ভাবি। সুর পাক খায়। ফাঁকা রেস্তোরাঁয় আমি একলা খরিদ্দার। আমার মাথার ভেতর সুর ঘোরে। মনে হয় গান গাইছে কেউ। খুব আস্তে। ইমন। দূর থেকে ভেসে আসছে যেন সুর। না। আমার মাথার ভেতর বাজছে। আমি মাথা ঝাঁকাই। সুরটা বের করে দিতে চাই। বেরোয় না। মাথার ভেতর গেয়ে চলে কেউ। আমার অস্বস্তি হয়। দিশেহারা লাগে। চেনা ওয়েটার এগিয়ে আসে, শরীর খারাপ স্যার? জিগ্যেস করি, হ্যাঁ গো, তোমাদের এখানে কেউ গান গাইছে, কিচেনের ভেতর? প্রশ্নটা করেই লজ্জা পাই। চীনে রেস্তোরাঁর কিচেন থেকে ভর দুপুরে ইমনের সুর ভেসে আসতে পারে না। হেসে ফেলি। ওয়েটার হাঁ করে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে, আমতা আমতা করে। তারপর একটু থেমে বলে, সরি স্যার। বাচ্চা ছেলেটা, নতুন এসেছে, বারণ করে দেব স্যার? আশ্চর্য হয়ে লোকটার মুখের দিকে চেয়ে থাকি। বলি, একবার ডাকতে পারবে ওকে? খানিক পরে কিচেন থেকে হাত মুছতে মুছতে ছেলেটি এসে দাঁড়ায়, কাঁচুমাচু। কাছাকাছি আসতে ভয় পায়। একটু মঙ্গোলীয় চেহারা। নাম আদিত্য। দার্জিলিং সে নয়া আয়া হুঁ স্যার। বঙ্গালি সমঝ লেতা হুঁ, লেকিন বোলনা নহি আতা। জিগ্যেস করি, কী গান গাইছিলে? বিড়বিড় করে কী বলে, বুঝতে পারি না। আবার প্রশ্ন করে কান পেতে থাকি। বলে, রেওয়াজ করছিলাম স্যার। পিয়া কি নজরিয়া। শুধু কিচেনের কাজ ভালো লাগে না। আমি গান শিখতে চাই। হালতুতে একজনের খোঁজ পেয়েছি। কয়েক হপ্তা হল যাচ্ছি। ইমন দিয়ে শুরু করেছেন শেখাতে। রেওয়াজ করার সময় পাই না তো, তাই কাজ করতে করতেই করি। আপনার ডিস্টার্ব হচ্ছে স্যার? আমার মুখ দিয়ে কথা ফোটে না। সামলে নিয়ে বলি, এখানে গান শোনাতে পারবে আমাকে? ছেলেটি এদিক ওদিক তাকায়। রেস্তোঁরার ম্যানেজার মানা করে। অন্য খরিদ্দররা আসবে, এখানে গান করা যাবে না স্যার। সামনে বসে গান শোনা হয় না, কিন্তু ভারি ভালো লাগে আমার। বাচ্চাটার চুল ঘেঁটে আদর করে দিই। বীয়ারটা শেষ করে বেরিয়ে আসি রেস্তোঁরা থেকে। মাথাটা হাল্কা লাগে।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:৩৯451748
  • অসম্ভব ভাল লাগল।
  • sosen | 184.64.4.97 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:২৮451749
  • জানলা দিয়ে বাইরে তাকালে একটা সূর্যাস্ত দেখি, বুনো, অনাদৃত সূর্যাস্ত। কোনো অচেনা কিছুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, যা আগে কোনোদিন ছুঁয়ে দেখিনি। চামড়া নয়। আগুন নয়। বরফ নয়। নতুন। নতুন কিছু। ইলেকট্রিক শক?
    সেই মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেছি। তার বড়ো বড়ো ঠেলে বেরোনো চোখ, ফ্যাকাশে মুখ, ভীতু নীল ঠোঁট। সবটাই হারিয়ে যাচ্ছে। একটা স্কেলিটন পড়ে থাকে। আরশোলার বহিঃকঙ্কালের মতো ঘিনঘিনে। বাঁচা শেষ হয়ে যায়।
  • sosen | 184.64.4.97 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:৫৭451751
  • হেদোর উল্টোদিকে, ব্লসমের গায়ে লাগা ছোটো ছোটো রোলের দোকান। ব্লসমে রোল ষোলো টাকা। এখানে এগ রোল সাত টাকা। আমার দিনের বাসভাড়া পাঁচ টাকার একটা নীল নোট। দুটাকা জমে দিনে, তাই দিয়ে স্লাইড কিনতে হয়। নিজের সেলাই করা ছোট্টো কয়েন পার্স হাতড়ে আমি সাড়ে তিন টাকা বার করি, রুমঝুম সাড়ে তিন টাকা। খুব খিদে পায়। আমরা একটা এগরোল ভাগ করে খাবো।
    দুদিকে কাগজ জড়িয়ে এগরোল কেটে দ্যায় না এখানে। ছোটো রোল। আমি এককামড় খাই, রুমঝুম এক কামড়। উচ্ছিষ্টের কথা মাথায় আসে না। দুশো সতেরো আসছে কিনা নজর রাখি।
    পায়ের কাছে ছিনে জোঁকের মতো একটা ভিখিরি ছেলে এসে চাইতে থাকে। দিদি দুটাকা দাও না। দিদি একটু রোল দাও না। খিঁদেঁ পেয়েছে। নাকি সুরে বলে যায় সে। কালো মুখ। নাক দিয়ে সর্দি ঝরছে।
    আমরা পাগল হয়ে যাই। অমি ওকে পঞ্চাশ পয়্সা দিই। তবুও ছেলেটা একমনে বলে যায় -রোল খাবো। রোল খাবো।
    দোকানী বলে দেবেন না। ওদের অনেক পয়সা। রোজ রোল খায়। যা, ভাগ! তাড়া করে।
    ছেলেটা হাসতে হাসতে পালায়। সত্যি পয়সার ঝুনঝুন শুনতে পাই। অনেক খুচরো পয়সা। ওর কোমরে বাঁধা আছে।

    পরেরদিন সবাই মোনজিনিস-এ খেতে যায়। সব মেয়েরা। নতুন মোনজিনিস খুলেছে বিবেকানন্দ মোড়ে। আমার মোনজিনিস এ খেলে শরীর খারাপ করে। আসলে করে না। কিন্তু বাবার কাছে চার টাকা চেয়েছিলাম সকালে। দেয়নি। বলেছে খালি টাকা!

    ট্যুশনির টাকা দিয়ে এই সালোয়ার কামিজটা কিনেছি এ মাসে। দেশ কিনেছি। আর টাকা নেই।
    মোনজিনিসএর বাইরেও ঐ বাচ্চাটা দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সাথে আরো কয়েকটা বাচ্চা। দিদি, দুটো টাকা দেবে? পনিরপ্যাটি খাবো।

    আমার কাছে দুটাকা এক্সট্রা আছে। এটা দিয়ে কিছু কেনা যায় না। আমি বাচ্চাটাকে ডাকি, ওকে একটা টাকা দিই। একটাকা কেউ ভিক্ষে দ্যায় না।
    বাচ্চাটা ঐ কাঁচের দরজার ওদিকে যায় না। কিন্তু ওর কোমর থেকে গুনে গুনে পয়্সা বের করে। দোকানের একটা ছেলে ওকে কিছু একটা এনে দ্যায়। ওদের সেটিং আছে।
    ছেলেটা আমাকে বড়ো বড়ো হলদে দাঁত দেখিয়ে হাসে তারপর ছুটে উদ্যত বাসের সামনে দিয়ে বিবেকানন্দ রোড পেরিয়ে চলে যায়।

    আমি ওর জিভের জায়্গায় মনে মনে আমার জিভ বসাই। জিভের উপর প্যাটি গলে যায়। সুবাস আসে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন