এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • খামখেয়ালে দেওয়াল লেখা

    Suman
    অন্যান্য | ২২ ডিসেম্বর ২০০৫ | ২০৫০৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • san | 115.117.214.64 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১০:০০451818
  • ছুঁয়ে গেল ...
  • suchetana | 122.172.147.50 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১০:০৯451819
  • খুব সুন্দর!
  • Tim | 71.62.121.158 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৫:৩১451820
  • টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে, আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা কিছু কাচ। পায়ে পায়ে এক আধটা রক্তের দাগ, ড্যালা পাকানো কাগজেরা পাখার হাওয়ায় ওড়ে। আরো নিচে, কাগজমন্ড আর কাচের টুকরোর আড়ালে মাটি কামড়ে আছে, ধুলো। কাগজেরা, কাচের টুকরোরা এর স্পর্শ পায়, পায়ের চাপে সরে সরে যায় তার জীবনের গতি, দমকা হাওয়ায় ভেসে নিরুদ্দেশে যাত্রা করে ধুলো-- আজন্মলাঞ্ছিত, অদরকারী, অস্তিত্ববিন্দু।

    বরফের নাগালেই চাকা। চাকা ঘোরে, সময় সরেনা। একদলা তুষার চাকায় লেপ্টে যেতে চায়, ঘুরপথে আসে তার মৃতদেহ। হিমেল হাওয়ায় সেই মৃতদেহ আনচান করে ওঠে, রোদ লেগে চোখ ঝলসায়। রোদচশমাতেও লেগে থাকে ঝুরো তুষার। এরাও একরকম ধুলো -- অথচ এদের বরাতে জোটে অভ্যর্থনা। সারিসারি মুখোশেরা নেচেকুঁদে একসা হয়, ভাঙে, গড়ে, হামাগুড়ি দেয়--- যেন মন্ত্রবলে খুলে গেছে গুহা, সামনেই মোহরের স্তুপ। সূর্য্য ওঠে, শহিদের স্থৈর্য্য নিয়ে গলতে থাকে বরফ।
  • sayan | 59.164.109.76 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০০:৫৪451821
  • একটা ভালো দেওয়াল লেখা - অনেকদিন পড়িনি।
  • tkn | 122.163.77.42 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০১:৪৪451822
  • স্কুল থেকে ফিরে বইখাতা নামিয়েই খেলা.. মায়ের বকুনি.. সন্ধ্যের ক্লান্তি ধুয়ে যায়না না কলতলায় হাত পা ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ... বইয়ের পাতা খোলার খানিক পরেই চোখের মধ্যে রাজ্যের ঝিলিকমিলিক ঘুম ভীড় করে আসে.. রাত বাড়লে ঝিঁঝির ডাক, মাঝে সাঝে পাশের বাড়ির জেঠিমার উঁচু গলায় দুচারটে কথার আবছা আওয়াজের মধ্যে থালার সামনে বসে কোনো রকমে রুটি, তরকারী আর গাঢ় খয়েরি তরল গুড়.. শীতরাত....
    উঠোনময় ছড়িয়ে থাকা আম পেয়ারা পাতার ওপর নতুন আলোয় চিকচিকে শিশির, পিছনের পাঁচিল থেকে উঁকি দেওয়া সারদা মিশনের চৌহদ্দির চাঁপা ফুলের গাছের ওপর কাকের বাসার ভেতরটুকু তখনও অন্ধকার.. সুরেলা ধীর ক্ষীণ গলায় স্তবপাঠ আশ্রমের মাতাজীদের..... দিদুর ঘরের জানলার নিচের কলে রাতভোর পেতে রাখা বালতির মধ্যে হঠাৎ বেজে ওঠা ছির্‌ছির্‌ একটানা শব্দ.... শীতভোর....

    নতুন ক্লাস, নতুন বই, সরস্বতী পুজোয় নতুন মুগ্‌ধতা... তখনও সোয়েটার।

    হঠাৎই এক অন্য হাওয়া... ভোরের উঠোন ছিমছাম... দুপুরের রোদ একটানা গায়ে লাগলে অল্প ভ্রূভাঁজ ... ছাদের ওপর ঝুঁকে পড়া আমগাছের পাতা ঢেকে একঢাল ইচলুকিচলু নরমহলুদ বোলের ঝাঁপি উপছে যাচ্ছে.. মাকে লুকিয়ে একমুঠো বোল দুহাতের পাতায় কচলে নাকের কাছে হাত... আহ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ... আচমাকা মিশনের দেবদারু গাছগুলো থেকে লুকোচুরির কুউউউ.. কুউউউউউউউউ... বন্ধুরা কেউ বাড়িতে এলে হিংসে চোখে তাকায়.. তোদের কোকিল আছে? পোষা? ধুস্‌স্‌স.... কোকিল আমাদের হবে কেন? সে তো বসন্তের। এক একদিন চিত্রহার শুরুর মুখেই লোডশেডিং। বিনা রিহার্সালে সারা পাড়া একসঙ্গে এক স্কেলে কঁকিয়ে ওঠে "যাহ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ্‌হ"... ছাদে উঠে যাই তিন বোনে.. ছুটকির মন পড়ে থাকে গিরিডির বাড়ির চৌহদ্দিতে.. এখন সব গাছে নতুন পাতা, না ছোড়দি? সজনে ফুল নিশ্চই ঝেঁপে হয়েছে গাছগুলোতে, তাই না? বুঝি, ওর মন কেমন করে রাত বাড়লে.... মনে মনে কোকিলটাকে ডাকি, ওরে একবার সাড়া দে ... ছুটকির মন খারাপটা নিয়ে যা..
    বসন্ত এসেছে.. বাবার হাত ধরে বেরোনো। দুটো বড়ো ব্যাগ হাতে। একটাতে আমাদের রং, পিচকারি, বেলুন.. অন্যটাতে পূর্ণিমার সওদা, ফলপাকুর, মঠ, ফুটকড়াই, দশকর্মাভান্ডারের ফর্দ মেলানো সাতসতেরো .. ফেরার সময় বুকুনদের দলটার সঙ্গে মুখোমুখি.. বেসুরো গলায় বুকুনই বোধহয় গেয়ে ওঠে "অমি দেখেছি তাআআআআর.. কালো হরিণ চোখ" ... কি সাহস!! বুকের ভেতর গুবগুবিয়ে ভয়্‌ঢাক বাজে "বাবা কি বুঝল কিছু! এই কদিন আগেই বুকুন একটা ভুলভাল বানানে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিল, পড়েই ছিঁড়ে ফেলেছি যদিও..
    রাতে তিনজনে ছাতে মাদুর পেতে শুয়ে শুয়ে আবোলতাবোল.. 'জানিস দিদিভাই, সুভদ্রার দাদার নাকি ছুটকিকে বেশ ভাল্লাগে'..
    "হ্যাঁ, বোলেছে তোমাকে".. ছুটকির গালে চাঁদের আলোটাকে লজ্জা দিয়ে খুশি চলকে যায়.. 'হ্যাঁ তো, সুভদ্রাই বল্লো আজ আমাকে ..'
    বড়ো হচ্ছে দুই বোন.. বসন্ত হাঁটে চুপিপায়ে তিনবোনের জোছনছাদে...
    'নারায়ন পুজো তো সন্ধ্যেবেলায়, তুমি আগে জামাগুলো তো বার করে দাও!' মায়ের পিছনে ঘ্যান ঘ্যান শুরু ভোর থেকে.. কাজ কি কম! রং গোলো, বেলুন ফোলাও, তাতে রং ভরো তারপর শুধু দুদ্দার খালি পায়ে "হোলি হ্যায়্‌য়্‌য়্‌য়" ... রাস্তার ওপারে ছাদের কোনে মালাদিকে তাক করে বেলুন ছুঁড়তে গিয়ে এই যা:.. টবে লাগালি!!! আর কি জোর তোর হাতে দিদিভাই! ছাদে পড়ে চুরচুর ছোটো টবটা! মালাদি ইশারা করে, পালা এখুনি.. আমরাও.. দুদ্দার..
    তেতে পুড়ে তিনবার গায়ের জামা গায়ে শুকিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে ধোপার পাটে ধোলাই.. নইলে রং ছাড়বে নাকি? একটাকেও তো চেনা যাচ্ছে না..

    সন্ধ্যে হলে এখন আর ছাদ জোটেনা.. ব্যালকনিতে মুখ চেপে চাঁদের দিকে তাকাই.. জোছনা দিবি? দে.. কেমন গোলপানা মুখ করে চেয়ে আছে দেখ! আমি এই বারান্দায়, বোন শহরের অন্য কোনে, ছুটকি সেইইই সুরাটে.. সুভদ্রার সেই জগন্নাথ না বলরাম দাদা, ওর মনে আছে তার কথা? এখন আমাদের তিনজনের একটা রঙের ব্যাগ নয় আর..
    .....
    উচ্ছল পায়ের শব্দ, লিফট থেকে নেমে দরজায় টুংটাং ..
    আয়.. চটি খুলে নে, ইস্‌স্‌স্‌স....
    না না, আমরা তো নিচে দোল খেলছি.. তোমাকে একটু আবির দিতে এলাম... মেয়ে ভেতর থেকে চেঁচায় 'মাআআ, বোতামটা লাগিয়ে দাওও ও' .. আমি নামব ওদের সঙ্গে..
    একটু হুটোপাটি.. একমুঠো আবিরে নেয়ে নেওয়া খানিক.. এখন জল রং নিয়ে খেলার সময় কই! না, নারায়ন পুজো নেই, তবে পেট পুজো তো আছে..
    বিকেলে আর এক প্রস্থ... বন্ধুর দল.. এসো, বোসো.. চা, নিমকি, রসগোল্লা.. আবিরের গুঁড়ো ওড়ে ঘরের আনাচে কানাচে...
    রাত বাড়লে আবার মুখোমুখি হই জোছনাসুন্দরীর.. আমি, বোন, ছুটকি, তিনজনেই দেখি ওকে, তিনজকেই দেখে ও, শুধু আমরা.. একে অন্যকে দেখতে পাই না আর একসঙ্গে..
    সেই কোকিলগুলো? কোথায় থাকে এখন? এ পাড়ায় কোকিল ডাকে না? ডাকে তো... কখন! কি জানি! তোর ওখানে ডাকে? ছুটকি?
    ক্লান্তি শেষে বিছানায় এসে বসি.. পায়ের দিকে তাকিয়ে টের পাই.. এসেছিল বসন্ত.. রেখে গেছে পায়ের তলায় লালচে আভাস..
  • sayan | 59.164.109.76 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০২:০২451823
  • আজ রাতের জেগে থাকা সার্থক হল। প্রতিদিন রাত যদি চাঁদের আলোয় সাফসুতরো হয়ে এমনটাই জেগে থাকে, চাঁদ যদি লুকিয়ে দেখা রঙালী মুখখানিতে পলাশগুঁড়ো দেখে বিভ্রান্ত হয়, আর উড়ন্ত সেই খবর রাতের ওম মাখা জ্যোৎস্নায় পাচার হয় পাড়া থেকে বেপাড়ায় ... নিয়ম ভেঙে গাওয়া হবে তবে কৃষ্ণপদাবলী। :-)
  • Du | 65.124.26.7 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০২:৫০451824
  • এমন লেখার পর এমন কমেন্টই সাজে।
  • kk | 67.187.111.178 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০৪:২৫451825
  • মেঘ মেঘ দুপুর আস্তে আস্তে গড়িয়ে যায় মেঘ মেঘ বিকেল। বিকেল না সন্ধ্যে? বোঝা যায় না। মেঘ মেঘ, কিচ্ছু বোঝা যায়না। এরকম দুপুরে কোনো চিঠি কোত্থাও নামেনা। এরকম বিকেলে পিদ্দিমগুলোর খুব ক্লান্ত লাগে। এরকম সন্ধ্যেয় অনেক খানি মনখারাপ একা একা ফিসফিস করে নিজের সঙ্গে। যে মনখারাপ কোনদিন চিঠি লেখেনি আমাকে আগে। বলেছি তো চিঠি নামেনা, কোত্থাও, কোনোখানে।
    মনখারাপ বলে - 'বুঝেছি, বয়েস হচ্ছে'। বয়েস হলে সবাইকে অন্যরকম হয়ে যেতে হয়। উদ্বেগ ব'লে দুষ্টু সাপ জড়িয়ে পেঁচিয়ে ধরে অন্যরকম মানুষকে। হিম নি:শ্বাস চুপিচুপি শরীর ফুঁড়ে ঢুকিয়ে দেয় ও। কালো, শীতল জিভ দিয়ে গরম রক্ত চেটে নেয়, জোঁকের মত, অজান্তে। ইতিবিতি কাগজে অনেক ইতিবিতি লেখা খুঁজি আমি রোজই। খোঁজ পাই কোনদিন, কোনদিন পাইনা। খোঁজ বড় দুরন্ত। আজ আছে, কাল নেই। খোঁজ বড় যাযাবর। সাপ তাড়ানির ষোলটা মন্ত্র চকোলেট রঙের সুরে বাজে। কোনদিন খুঁজে পাই, কোনদিন পাইনা। ইতিবিতি কাগজে রোজই। সত্যিকার জাদুকলেজ কোথায় আছে, কোনদিন খুঁজে পাই। কোনদিন পাইনা। অনেক দূরে কদমগাছের নীচে নীলচে অন্ধকারের মত চুপিচুপি বাঁশি বাজায় তামাকগন্ধ। শ্বাস পথ হারায়, মাথা খোঁড়ে। তবু বাঁশি বাজে। তামাকগন্ধ। ও'ও কারুর ব্যথায় কাঁদেনা। কক্ষণো।
  • Tim | 71.62.121.158 | ০৪ মার্চ ২০১০ ১২:০১451826
  • রাত জেগে থাকা? নেই। ঘুম এসে ডেকে নিয়ে যায়। ঘুম বড়ো রগচটা, তর্জনী তোলে। জানলার শার্সিতে মাথা রাখে। ঝকঝকে কাচে জমে ওঠে শ্বাস-- ঝাপসা চোখে চেয়ে থাকে একলাটি আলো।
    দুধসাদা মাঠে, বরফগলা কাদায় সেঁটে থাকে পাতা, হাওয়া এসে ডাকে, জ্যোৎস্নার ঢেউ লাগে তার গায়ে ---তবু তার রা নেই। মাঠ ঘিরে ছায়া পেতে বসে থাকে কেউ। ঘরছাড়া ঘুমগুলো এলোমেলো হাঁটে পায়ে পায়ে। আরেকটু পরেই ওরা ক্লান্ত হবে।

    রাত জেগে থাকা? নেই। রাতের কণ্ঠনালী পাক দিয়ে শুয়ে থাকে হিলহিলে কেউ। কেউ, না কিছু? স্পর্শ করে নেই, তবু অস্পষ্ট ফাঁসের আদল টের পাওয়া যায়। যেন একটু নড়লেই সরু কোন ফলা এগিয়ে এসে বিঁধে যাবে। হয়ত এতক্ষণেই বিঁধেই গেছে, নড়লেই যন্ত্রণা দেবে সেটা। সেটা, না সে? ফাঁস, না ফলা? রাতের সব গুলিয়ে যায়।
    ঘুম এসে ডাকে, হাওয়া এসে বরফের নদীগুলো শুকিয়ে দিতে চায়। ছায়া বাড়ে কমে।

    রাত জেগে থাকে। একলাই। পুরোনো অ্যাসিডের বোতল, ফিনাইলের টিন, আলতার শিশি। পোড়া মোবিল তেরছা হয়ে দাগ রেখেছে এক কোণে। গলাটা ফালা হয়ে যাওয়া একটা ব্যর্থ জলবেলুন, তার গায়ে আবার ফুলের কারুকাজ। এইসব গুছিয়ে আনে রাত। কাল ভোরে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেওয়ার আগেই গুছিয়ে যত্ন করে তুলে রাখতে হবে এই তুচ্ছ জঞ্জাল।

    রাত এখন ঘুমিয়েছে। ভোরের ঠান্ডা হাওয়ায় শিরশিরে ভাব। পুবদিকটা ফরসা হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে, যদিও আসলে সত্যিকারের আলো ফুটতে ঢের বাকি। মাঠ এখন খটখটে। হঠাৎ দেখলে মনে হচ্ছে গালচে পেতে রাখা একটা প্রকান্ড মন্ডপ। এতক্ষণে মুক্তি পেয়ে পাতাগুলো উড়ছে। জোরালো হাওয়ায় ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে সেই সাথে উড়ছে ফিনাইলের টিন, টুকিটাকি আরো নানা অদরকারি জিনিস।
    রাতের গলায় এখন মৃত্যুফাঁস নেই। আচমকা চোখ চেয়ে কেউ যদি দেখে ঘুম শেষ, তাহলে তার যেমন লাগে -- এখন রাতের সেরকম লাগছে। হালকা, অস্ফুট, অপার্থিব হয়ে আসে রাত। রাত জেগে থাকে তারপর।
  • sayan | 125.22.97.34 | ০৪ মার্চ ২০১০ ১৫:৫০451496
  • তারপর নদী বড়ো হ'ল, পার্বত্য উৎরাই ভেঙে উদ্দাম গড়িয়ে চলল সমভূমি অভিমুখে, মাধ্যাকর্ষণ এবং মোহনার টানে, মিলনাভিসারে, তার জলস্রোতের নীচে বাজল নুপূরের নিক্কণ, টিংলিং জলতরঙ্গ ... এমন রূপগরবিনীকে অভিবাদন জানাতে তার পথপার্শ্বে যুথবদ্ধ কুর্নিশরত সুঠাম সতেজ তরুণ তরুণী সবুজের দঙ্গল, আর কোনও দীর্ঘ তরু যার ছায়া নদীর দুইপারব্যাপী বিস্তৃত ... নদী এদের সবাইকে ছুঁয়ে যায় বরফকুঁচি জলের কণা, নদী এদের দিয়ে যায় খনিজ লবণ, অনাস্বাদিতপূর্ব অনাঘ্রাত চুম্বন, হিল্লোল উঠল কল্লোলিনী লহরিয়ার ছন্দে গতিতে ... মগ্নমৈনাক পাথরেরা, যারা এতদিন তরলিত চন্দ্রিমা নদীর অপেক্ষায় বুক পেতে অপেক্ষায় ছিল উন্মুখ অবগাহনের, লাজবতী নদীর ছদ্ম অনুরাগমাখা ধাক্কায় নদীকেই সফেন করে, শুষে নিতে চায় বালিপাথরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভালোবাসা, গিরিমাটি সিঞ্চিত আঁচলের মত মসৃণ বয়ে চলা, শ্যামলিয়া শ্রীপরশে শ্রীমন্ত সীমন্তিনী ছবি আঁকে আশিয়ানা মালভূমির স্নেহছায়ে ...

    ভয় পেলে চলবে না, প্রথমে দুহাতে সরাও স্মৃতির পলিমাটি, তারপর পা-দিয়ে ঠেলে ভাসাও সাধের নৌকা, প্রথমে জল গ্রাস করতে চাইবে, প্রথমে ঢেউএর উচ্ছ্বাস নববসন্তপবনস্পর্শলোলুপ, অগ্রাহ্য কোরও সেইসব, আর তারপর শুধুই গহীনতা, উথালপাথাল শেষের অনিবার্যতায় ... শান্তি, সামনে চেয়ে দেখো, দুপাশে তাকিও না, দুপাশে ভেসে যাবে শুকনো ফুলের মালা, অপরিণামদর্শী মৃত গাছের গুঁড়ি, বাগাড়ম্বরময় অন্ত:সারহীন কিছু কথাবার্ত্তার শব, হোম'এর উপকরণ, কাঠের বারকোশ, বরণডালা ... তুমি তাকিও সামনে, এসব কিছু ছুঁইও না মনের কোথাও, চিরকূটে লেখা ছোট্ট ঠিকানায় সন্ধান দিয়েছিলে যেই চোরকুঠুরীর, জামরুলগাছটার নীচে ছায়াপথ হেঁটে পৌঁছে যাওয়ার কথা, তার বন্ধ দরজার পিছনে পিঠ ঠেকিয়ে ডরপুকিয়া হৃৎস্পন্দন গুনছিলে সেই তুমি, অনেক উঁচুতে সেই গবাক্ষের জালিকা ভেদ করে কিছু সূর্যরশ্মী উদ্ভাসিত করেছিল তোমার চিবুক ... হাত কেঁপেছিল কি আমার, পরে কখনও তুমি কি খুঁজে পেয়েছ সেই সোঁদাগন্ধ মেঝেতে সিঁদুরের চিহ্ন ...

    আজ যখন রাত জেগে থাকবে, কোষমুক্ত ধাতব তরবারি দিয়ে ছিন্নভিন্ন করবো রাতের আঁধার ... দেখি, কোথায় লুকোয় আলো
  • Nina | 66.240.33.44 | ০৪ মার্চ ২০১০ ২০:৫৯451497
  • উফ! ক্ষি ক্ষান্ড ! এই টইটাতে ভাললাগায় হাবুডুবু খাচ্ছি। তেকোনা আজকাল বড্ড কমকম লিখছে --আর একটু হাত খোলকে প্লিজ।
  • Tim | 71.62.121.158 | ০৫ মার্চ ২০১০ ০৬:৩৯451498
  • হ্যাঁ, নৌকোর কথা। দুপাশের গুঁড়ি ঠেলে সরিয়ে দুর্ভেদ্য জঙ্গলে ক্রমাগত হারিয়ে যায় নৌকা। মাথার ওপর আকাশটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে আসে, আচমকা দু-একটা তীব্র আলোর রেখা ছুঁয়েই নিভে যায়। যেন যাচাই করে নিচ্ছে এই অস্তিত্ব।

    জলের অস্ফুট শব্দ হয়। দাঁড়ের শব্দ নয়, হাল কুরে কুরে খাচ্ছে যে জলচর, তার প্রত্যঙ্গের আস্ফালনে জল সরে। সেই শব্দ। হাল কামড়ে পিছে পিছে আসে সেই অবয়ব, নি:শব্দে জেগে থাকে ছায়াশরীর।

    দুপাড় একেকসময় কাছে আসে, হাতধরাধরি করে হাঁটে কিছুক্ষণ। ইতস্তত কাঁটাগাছ ডিঙিয়ে, স্বপ্নজর্জর জংলীফুলের ঝোপ বাঁচিয়ে যদি তীরে নেমে পড়া যায়, তো দেখা যাবে আগুনের ধ্বংসাবশেষ। দেখা যাবে দুটো একটা শুকনো গাছের ডাল, জ্বালানী হওয়ার অপেক্ষায় তার পাশ ফিরে থাকা।

    তখনই নৌকো ডাকবে আবার। আকাশের ক্ষত চুঁইয়ে রক্ত ঝরবে বলে সাদা পাল তুলে দেবে মাঝি। দুপাশের জমি হাত ছেড়ে, যে যার পথে যাবে। হালটা তুললে দেখা যাবে আধখাওয়া। ততক্ষণে অবশ্য দাঁড়ের ছপছপ শব্দ তুলে এগিয়েছে জলযান। আধখাওয়া হালেই দিব্যি কাজ চলে যাবে। নদীটা বাধ্য জানোয়ারের মত মৃদু প্রশ্বাস নেয়। চরাচর শান্ত, যদিও ঝড় আসার কথা নেই আজ।
  • nili | 82.198.250.5 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৫:৪৯451499
  • এষা,
    চিঠি লিখতে গিয়ে বুকের ভিতর থেকে সাপের লঘু ফণার দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাচ্ছি। কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে না পারা যে কতো কষ্টের , তা তুমি কি করে বুঝবে! নিষ্ফলা ভালোবাসার শেষটুকু যখন মাথাতুলে সাগরফেনার প্রান্তভাগে বেঁচে থাকে আর এক এক করে বুদ্বুদেরা বাষ্প হয়ে লোনাজলে মিশে যায়, সেই মিলিয়ে যাবার শূণ্যতা মৃত্যুকে বড়ো কাছে টেনে আনে!
    মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছো এষা?
    সর্পবিষের নীলাভ সবুজ রক্ত আমার হৃদপিন্ডে বইছে এখন। কান্নাজলের দাগে নীল ফুলের ফসিল! আমি বিষকন্যা! চাঁদপাহাড়ের কোণে লুকিয়ে জেগে থাকা নীল আলোর ঝর্ণার মত বিষের প্লাবন আমার সারা শরীর জুড়ে!

    আজকে এই রাতটায় মৃত্যু যখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, ইচ্ছে করছে তার হাতটা শেষবারের মত একবার ছুঁতে -- বিষে জরজর ঠোঁট দিয়ে তার লোভের লালা শুষে নিতে। রাতজোনাকীর ছোট্টো পাখার ঝিলমিল আলোর শিশিরের টিপ পরে অভিসারে যাই আমি। বনবাদাড় কাঁটার ঝোপ ধানক্ষেতের দুধভরা শীষের মাথায় দুলকি হাওয়ায় ভর করে পেরিয়ে যাই সহস্র মহাসমুদ্র, পর্বতশ্রেণী!

    মেঘলা হাওয়ার লুকোচুরি কান্না ভয় আমাকে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ধরছে! শীতের কাঁপনের বর্ণহীন নিয়তিতে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করে একটাই প্রশ্ন , কেন সে আমায় ভালোবাসার কথা বলেছিলো? সে যে জানতো যে সে এষাকেই ভালোবাসে! শুধু এষাকেই!
  • sayan | 125.22.97.34 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৮:৩৩451500
  • বকুলবউ পুকুরবাথান অন্নগন্ধী বেশ
    বৃক্ষতলে ধান্য কাটে হেঁষ হেঁষ
    মন ভেসে চল কুমিল্লা জেলায় ...

    এই পথে সোওজা হেঁটে গেলে পারঘাট, খেয়া পারাপার। সুবলমাঝি বলে "চারানা দিও গো বাবু'। পিতপিতে ছেঁড়া জামা ঘামে জড়িয়ে গেছে রুগ্ন শরীরটায়। এই খেয়াটা তার। গেলবারের বন্যায় ওর ঘর ভেঙে গিয়েছিল, যেমন প্রতিবছর যায়। আর ওদের সেই লাল
    গরুটা। একফালি উঠোনে কিছু আনাজের গাছ, সঙ্গে নিয়ে গেরস্থালীর টুকিটাকি, জালনের কাঠ, শস্যদানা। অনেকদিন বসে থাকত খেয়া ফেলে, ওদিকের উঁচু পাড়টায়। কোটরগত চোখগুলোয় কি খুঁজে চলত দূরের দিকে তাকিয়ে। সন্ধ্যে নামলে যখন গৃহস্থের বাড়িতে শাঁখের আওয়াজ, ওর ছোটো মেয়ে এসে কি জানি কি বলে নিয়ে যেত বাবাকে, কেমন লাগত সেই চলে যাওয়া দূর থেকে, বয়স অনেক নিয়েছে, একটু ন্যুব্জ, তবু খেয়ায় মানুষ পার করে সুবলমাঝি।

    ********

    সব চুপ
    ঘুমিয়ে পড়েছে যেন
    এখন এসেছ ভীরু নর্মধাত্রী বসন্তের হাওয়া
    আমার গল্পের ধান
    কাটা হয়ে লাটে উঠে গেছে
    জমিতে আজ অন্ধকার
    আদিমতম রূপকথার ছিঁড়েছে শৃঙ্খল
    অসম্বদ্ধ তান্ত্রিকের শুধু তুমিই প্রাসঙ্গিক ঘরের অর্গল
    খুলেছ - শুরু ঝড়ের আনাগোনা

    তালদীঘি পুকুরের সবুজ জলে আকাশের ছায়া পড়ে না। জলের ওপর থিরথির বইতে থাকা বাতাস সব পানা সরিয়ে নিয়ে যায় পুকুরের এক নির্দিষ্ট কোণে। সেখানে ছায়া বেশী তাই জল গভীর লাগে। এক'পা দু পা নেমে যাই পাড় ঘেঁষে। এখানে নিমজ্জনের ভয় নেই। পায়ের নীচে পিষতে থাকে কত জন্মের জমে থাকা মাটি, আরও কত পুরনো পায়ের ছাপ। এর ঠিক মাঝে কি ত্রিশূল আছে! কবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই গভীর খাত! পাতাল নিজের বুক উপচে জলে ভরিয়ে দিল এর পরিধি, কানায় কানায়। এতো সবুজ এর শরীর ঘিরে, এতো প্রাণ বাস করে এর গভীরে তবু কী নিথর! ওই যে হাঁসগুলো, আয় চই চই, এবার ঘরে ফের, উঠে আয় জল থেকে, নি:ঝুম একাকীত্বে এবার একটু ঘুমোক সে। এর সমস্ত দৈন্য মিশে যাক রাতভোর নিজেরই জলে।

    ********

    সব হারিয়ে যাক
    সব মিথ্যা হোক সত্য শ্রেষ্ঠ সুন্দরের গান
    ক্লান্তি আনুক শান্তি
    প্রথম শাড়িতে দেখা অনুভূতির মত চোখের পাতায়
    শব্দেরা ঝরে পড়ে
    ঘুম নেমে আসে দু'পা এক পা
    তুমি শেষবার ঘুমের গভীরে এসে দাঁড়াও

    ছিপছিপে জল এসেছিল, এখানে পায়ের নীচে মাটি এখনও ভিজে, জল সরে গেছে, বালিকাঁকড়া নতুন গর্ত খুঁড়ে উঁকি দিয়ে দেখে ইতিউতি। বালিকা ঝুঁকে দেখে কেমন খেলে তারা। হুটোপাটি ধরতে যায় একটা দু'টোকে। আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায় আর মধুর হাসে। তার পায়ের ছাপ নরম মাটিতে স্পষ্ট। সেই ছাপে একটু জল ভরে ওঠে। সূর্যের আলোয় রূপোলি লাগে জলছাপ। এবার সে চোখ তুলে দেখে বাঁধের উপরে, তারই সঙ্গীদের কলতান, পাড় ভেঙে নেমে আসছে .... ওই একটা গড়িয়ে পড়ল, পরক্ষণেই উঠে আবার দৌড়, দৌড়, দৌড়। একেবারে কাছে এসে হাঁপাতে থাকে সবকটা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়োটা, নিজের সঞ্চয় দেখায় - অনেকগুলো কুশি কুশি আম। খুশীতে চকচক করে চোখ বড়ো ছোটো সবকটার। নুন নেই। নেই তো নেই। মহানন্দে শুরু হয় বনভোজন। পড়ন্ত সূর্যের আলোয় রাঙা মুখগুলো খুশী খুশী।

    ********

    একাকী মাঠে প্রহর পোড়ে রোদে
    প্রহর কাটে রোমশ রাত্রির ধারালো দাঁত
    ছায়া তো অনুগামিনী, স্বৈরিনী
    কি অভিশাপে
    বসন ছিঁড়ে তবু দুরূহ কাঁপে
    আবার আসো, আবার যদি খোঁজো
    শরীর ভালোবাসা আহুতি পূজো

    মাঝে মাঝে ধুলোর ঝড় ওঠে এমন, ছোট ঘূর্ণির মত, তাতে পাক খেতে খেতে অনেক ওপরে উঠে যায় খড়কুটো, শুকনো পাতা, কাগজের টুকরো। এখানে বাড়ির চৌহদ্দিতে বেড়া মাটি দিয়ে তৈরী, তার উপরিভাগে বসানো শুকনো তীক্ষ্ম ডালপালা, ঐটুকুই সুরক্ষা। তার বাইরে আঁকাবাঁকা খামখেয়ালি হাঁটাপথ, কপালকুন্ডলা'র দিকে। সেই অভিমুখে সমুদ্রগর্জন। সেদিকে হিলহিলে রোদের বিকীরণ যেন ধাঁধা লাগায় চোখে। সাইকেলের চাকার নীচে পিষে যেতে থাকে শুকনো মোরাম, পার হয়ে যায় বাঘাপুট, জগন্নাথপুর। আরও একটু চাপ পড়ে প্যাডেলে। হাওয়া যেন হঠাৎ থমকে গেছে এখানে। একটু সামনে বালির দেওয়াল। গনগনে দুপুর রোদে এতো সাদা লাগে বালি। শুকনো বালির বুক চিরে চলেছে লতাগুল্ম, তার কিছুতে কাঁটা। সন্তর্পণে পার হতে হবে এসব।

    ********

    আমার নৌকার তলে প্রকান্ড বড় ঢেউ হাল বেয়ে
    বহু কষ্টে পার হয়ে এসেছি মোহনা
    জোয়ারের ঘরমুখো জল সুস্পষ্ট ভাটার টানে ছুটে যায় সমুদ্রের দিকে
    দু'দিকের দীর্ঘব্যাপ্ত সবুজ রেখায় সমান দূরত্ব অস্পষ্টতা

    এই অচেনা বালুবেলায় দুপুর গড়িয়ে যায় মৌলিক বেঁচে থাকার মত। অনেক দূরে চিকচিক জলের বুকে কিছু নৌকা। আর কিছু শুয়ে আছে যেখানে কোনও জল নেই। বালিয়াড়ি ভেঙে এগিয়ে যাই জলের দিকে। অনেকটা হাঁটতে হবে, জল অনেক দূরে সরে গেছে ভাটার টানে। এত পোড়া কাঠ ছড়ানো চারপাশে! আর সাইকেল চলবে না, চাকা বসে যায় শুধু, অথচ চাকা ছুঁড়ে মারার মত শক্তি নেই, লক্ষ্যও। এটা এখানেই থাক। একটু দৌড়োই। হালকা পায়ে লম্বা লাফে ছুটে চলা, বালি গ্রাস করার আগেই পরের পদক্ষেপ উড়ে যায়। এবার জল পাচ্ছি। লোনা বাতাসে ঠোঁটের পাশে সৈন্ধব লবণ স্ফটিক হয়ে জমে। জল হাঁটু ছাপিয়ে যায়। এখান থেকে পাড় এবং নিম্নগামী নিমজ্জন সমদূরত্বের। গতিপথ নিয়ে চিন্তা মনেও আনি না। আরও আরও বাতাস, ঢেউ চিরে এগিয়ে চলতে থাকি। নদী কি এখানে এসে মেলে সমুদ্রের সঙ্গে! আরও কিছু এগিয়ে যাই ... যতক্ষণ না কেউ বলে "এক বাঁও মেলে না, দুই বাঁও মেলে না' ...

    ********
  • nili | 82.198.250.5 | ০৫ মার্চ ২০১০ ২০:২৫451501
  • এষা,
    ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী কোনোদিন দেখিনি , শুনেছি তারা নাকি প্রেমের পাখি। বকুলের ডালপালায় তাদের সখ্যতা! শ্রাবণের ঝরা সন্ধ্যায় আঁধার বুকে ভরে যখন আমি বসে থাকতাম, অনন্তের অপেক্ষায়, ঠিক তখনই একটা মিসড কল আসতো! মুঠিভরা আলোয় কাঁপন জাগতো! প্রাণের! মৃত্যুকে দুরে ঠেলে আবার জেগে উঠতাম! ইছামতীর বুকে ভেসে যাওয়া নাও এর ছই জুড়ে যখন শ্রাবণ আসে, তখন তার সেই ফুটফুটে মুক্তোদানায় আমার নীলচোখের ছায়া পড়তো। তখন সে আমার চোখে চোখ রেখে শুধাতো কতো কথা। তার কোনো মানে নেই, মাথামুন্ডু নেই! তোমরা তাকে বলো সুইট নাথিংস, আমার এতো বিদ্যে বুদ্ধিও নেই যে তার সব কথার সুচারু উত্তর দেবো। সে ডাকতো আমাকে হেকেটি বলে! রবিঠাকুর বৌঠানকে এই নামে ডাকতেন-- হেকেটি সৌন্দর্য্যের দেবী, প্রেমের দেবী! এষা সত্যি সত্যি আমি বিশ্বাস করতে বসেছিলাম আমি হেকেটি, আমি সুন্দর, আমি প্রেমের দেবী!
    সুমেরু পর্বতে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে মোম জ্যোছনার আলোয় শাল্মলী গাছটার আড়ালে ভীরু বুকে একদিন অপেক্ষা করছিলাম রাতজোনাকীর! আলোর শিশিরকে টিপ করে কপালে পরেছিলে তুমি। সত্যি বলছি এষা তোমায় সুন্দর দেখাচ্ছিলো, একেবারে হেকেটির মত! তোমার পাতলা মিষ্টি ঠোঁটের হাসিতে কি যেন একটা ছিলো যা যে কোনো পুরুষকে বেঁধে ফেলতে পারে সাতরঙা বাঁধনে। তোমার ভ্রুপল্লবে ছিলো মোহন আঁকন, তোমার কটিতটের দৃশ্যমান শরীরটুকু দেবাদিদেবের ধ্যানভঙ্গ করতে পারে অতি অনায়াসে!
    সে আসছিলো পক্ষীরাজে সওয়ার হয়ে! বোকা আমি, পাগল আমি ভাবতে বসেছিলাম সে বুঝি আসছে আমারই খোঁজে! তাই শেষমুহুর্ত্তের পরিপাটিতে সাজিয়ে নিচ্ছিলাম নিজেকে, কাজললতা আঁকলাম চোখের মণিতে, মাথায় মন্দিরের চূড়ার মত করে বাঁধা এলো খোঁপায় গুঁজে দিলাম বেলকুঁড়ির আতসকাঁচ! নিজেকে সাজাতেই এতো ব্যাস্ত ছিলাম যে খেয়ালই করিনি ঘোড়সওয়ার কখন রাস্তা ভুলে চলে গেছে অনেক দূরে! সুমেরু পর্বতের মাথায় ধুনির আগুন জ্বলে উঠেছে, বিষাক্ত নীল তার রঙ! কোজাগর রাত্রে ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর ফিসফিসে প্রেমকথা ভেসে বেড়াচ্ছে হাওয়ায় হাওয়ায়! হেকেটি হেকেটি হেকেটি!!!!!
    শুধু এই টুকু শব্দই কানে আসছিলো -- জানতাম এ হেকেটি আমি নই! এষাই ! শুধু এষা!! এ যন্ত্রণা লক্ষ সাপের হিসহিসে বিষফণার চেয়েও ভয়ঙ্কর! সবুজ ফেনার গরল উঠতে লাগলো আমার বুক বেয়ে, চোখের জলের আঁচের হলাহলে লাভামাটির গন্ধ! শরীর জুড়ে সুপারনোভার বিস্ফোরণের জর্জ্জর কসমিক বর্ণালি!

    আমি উড়ে যাচ্ছিলাম চাঁদের পাশ দিয়ে , তোমদের মগ্নমৈথুন ছুঁয়ে চলে যাবো অনেক দূরে! অশরীরি আমি ! মিশে যাবো অতল আকাশে কৃষ্ণ গহ্বরে! আবার শুরু অনন্ত অপেক্ষার! কবে সে আসবে!

    মেঘলা বাদল হাওয়ায় যেদিন চুঁইয়ে পড়বে সোহাগজল! সে আসবে! আসবেই! তার নীল ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে প্রশ্ন রাখবো কেন সে আমায় মিছে ভালোবাসার কথা বলেছিলো?
  • sayan | 125.22.97.34 | ১০ মার্চ ২০১০ ১৮:৪৪451502
  • এমন দিন ঢলে গোটা গায়ে আলিস্যি মেখে, যেন পাটে না গেলেও চলে, উষ্ণায়নের তোয়াক্কা না করে সকলের অলক্ষ্যে একটু একটু থেমে থাকা সময় চুরি করে নেয় নির্বিকার, সকালের ঘুমের মত - আহ্‌, আরেকটু ... জানলার পর্দাটা এখুনি না সরালেই কি নয়! এমন অনির্ণেয় সৌন্দর্যের রাণী চন্দ্রাতপের এক ধাক্কায় মোহিত নুড়িপাথরটিকেও গড়িয়ে দিয়ে সদর্পে উঠে যায় আপাদমস্তক চেয়ে থাকা কালো-হলুদ ট্যাক্সির খোলা দরজা দিয়ে, উদ্ধত গ্রীবাভঙ্গীর দিকে তাকিয়ে ড্রাইভার একমুহূর্ত্তের জন্য ভুলে যায় পথ এবং গন্তব্য। "সচ তো ইয়ে হ্যায় ফুল কা দিল ভি ছল্লি হ্যায়/ হসতা চেহরা এক বাহানা লগতা হ্যায়' ... লাগুক। মিটার, ডাউন হো যা! রাস্তার ধারের অজস্র পুরুষ পলাশ, একটুও বেয়াদব না হয়ে কুর্নিশ জানায় তাদের রাণীকে। অসূর্যম্পশ্যা নির্দ্বিধায় বিলিয়ে দেয় কিছু উড়ন্ত চাউনী, চুম্বকের মত সেসব বিদ্ধ করে যেখানে বসন্তবাতাস বয়ে নিয়ে যায় তাদের। জালিম নজর আর ঘায়েল দিল মিলে জুলে থাকে। মানে, পড়ে থাকে। থাক। রাণী এসব দেখেও দেখে না কিছুই, খোলা কাচ হাওয়ায় চুলের ঘ্রাণ ওড়ে শহরময়, একটুক্ষণের জন্য সূর্যের মুখ ভার হয় ঈর্ষায় ....। এবারে নামবে সে। তার হাতের ইশারায় পথের মাঝেই ট্যাক্সির গতি রূদ্ধ হয়, দরজা খুলে অল্প মাটি ছুঁতে চলে তার পা, আর সারা শহর থমকে যায় হঠাৎ, গড়িয়াহাটের মোড়ে লা লা ল্যান্ড'এর ফ্রীজড্‌ স্ট্রীট কর্ণার আর ফ্রোজেন টাইম ফ্রেম, অল্প মাথা বার করে সে, বিলয়গামী সোনারোদ আলোকণা আর তার অহঙ্কারী কায়া স্কিন কেয়ারিত বর্ণচ্ছটা সন্ধ্যাকালীন কনট্রাস্টে লাল টিন্ট অ্যাড করে। বাতিস্তম্ভের আলো জ্বলে উঠতে গিয়েও ভাবে, আজ আমার ছুটি তাহলে! "আগ কা ক্যায়া হ্যায় পল দো পল মেঁ লগতে হ্যায়/ বুজতে বুজতে এক জমানা লগতা হ্যায়' ...
    ... তখনও কথা বলেনি সে, বৃষ্টির মত কন্ঠস্বরে হ্রেষাধ্বনিময় শহরে যখন সবাই ভাববে, আমরা মৃত।
  • tkn | 122.173.190.196 | ১০ মার্চ ২০১০ ২৩:০৮451503
  • :-) অদ্ভুত সুন্দর লেখা..

    তারপর?
  • sayan | 125.22.97.34 | ১৮ মার্চ ২০১০ ১৯:৪৪451504
  • এমন করে ফিরে তাকাও কেন তুমি, এত শত বার বলো - "এসো তাহলে', তাও জানি সেখানেই থাকবে, নতমুখ ডানাছেঁড়া প্রজাপতিটির মত, আর মনে মনে বলবে - "না গেলেই কি নয়'! এভাবে চললেই ঘুরে দাঁড়ানো হয়। এভাবে ভালোবাসার তিনটে শব্দ মৌনী ফুটে ওঠে পদ্মপাতায় জল হয়ে। একটা অনেক পুরনো কাঠের তোরণ, পুরোটা যার আর খোলে না অনেকদিন, তার চৌকাঠের একটু উপরে একটা ছোটো দরজা, সেসব ঠেলে সোজা চলে এলে জীর্ণ পুরাতন বইয়ের গন্ধমাখা অ্যান্টিচেম্বার একটা, সেই ঘরের একটামাত্র চোরকুঠুরি যার তারজালি ভেদ করে বুড়ো মাকড়সার ডাইনিং স্পেস চুঁইয়ে লুকোচুরি রোদ সুলেখা কালির দোয়াতে সটান। কালি শুকিয়েছে কবেই। কলম লিখতে চাইছিলো আরও। আমি কলমের দু:খ সই ... রাতদিন টুপটাপ ঝরে পড়া স্মৃতিকথাগুলোয় স্বপ্নের নীলি ভরে লিখি সোনাই উপাখ্যান। লিখতে বসে দেখি পাতা কিছুই খালি নেই আর। সেইসব কবে ভরে রেখেছে মোনোটাইপ অক্ষর। পীতবর্ণ কাগজের বুকে বড়ো মনকেমনিয়া সুবাস এখনও ভারি করে রেখেছে এই বদ্ধ ঘরের প্রতিটি কোণ। এই ঘরের আঁধার-আলোর মিশেল এতগুলো দিন-মাস-বছর কেমন নিশ্চুপে প্রত্যক্ষ করে গেছে কখনও-না-জানতে-চাওয়া এতো এতো এলোমেলো স্তুপীকৃত থেমে থাকা বন্দিনী শব্দের গুঞ্জন। কখনও ভোরবেলা বৃষ্টি থেমে গেলে জানলার শিকে ছোটো ছোটো পৃথিবীর মত জল জমে থাকে। সূর্য পরে শুষে নেয় তাদের, যদি তারা ঝরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে। এমন কিছু দাপুটে জলের কণা আর্দ্র করেছিলো একপশলা কাগজকে, আর ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে যত ছিল, সব অক্ষর। আজ হঠাৎ দেখি তারা এখনও কেমন কুঁকড়ে পড়ে রয়েছে ঘরের এক আনাচে। যতোটা পারি দুহাত ভরে তুলি তাদের, কিছু আঙুলের ফাঁক গলে পড়ে যায়, একে একে তাদের সবাইকে তুলে নিয়ে সন্তর্পণে সাজাই ... দেখি, একটুও মানে বদলায়নি তাদের, ঠিক যেমনটি লিখেছিলাম, ঠিক তেমন, অবিকল, অপরিবর্ত্তিত। কিছু শব্দ মরে যায় না। হারিয়ে যাওয়ার মত অবস্থায় গিয়েও ঠিক ফিরে আসে একদিন, আর লেখে নতুন কথা, কবিতা। ""অইখানে যেওনাকো তুমি, কথা বোলোনাকো অই যুবকের সঙ্গে'' -- ঘুম নির্ঘুম রাতের কথা তরল চাঁদের সোহাগ মাখে, ""ওই তরলেই ভাগ্য মাটি তাদের যারা পদ্য লেখে'' -- ""কি কথা তাহার সাথে, তার সাথে'' ... জিজ্ঞেস করতেই দু'চোখে ঢল নেমেছে, নাকের পাটা স্ফীত এবং ঘন নি:শ্বাস আর ওষ্ঠে অভিমান!
    য্‌যাও।
    এই শোনো, আমি না ...
    শুনতে চাই না।
    তুমি আমার কথা ...
    শুনতে পারবো না
    ...
    ...
    রাণী, আমার রাণী ...
    আরে! এইভাবে কেউ বুকে ঝাঁপ দেয়! আয়, শোন, পাশে এসে বোস, তোর মাথার চুল এলোমেলো ঘেঁটে একটু আদর করি। তোর যত অভিমানকথা, সব বল আমাকে। আর সেইসব বলা শেষ হলে, এই রইল পরিষ্কার রুমাল, ওটা নাকে বেঁধে, চল দু'হাতে সরাই স্মৃতির আস্তরণ। যা কিছু সুখের, গুছিয়ে তুলে রাখ ঐ কাঠের দেরাজে। আর দু:খের যত কিছু, আমার হাতে রাখ, দেখি অক্ষর ধুয়ে মুছে সাফ করে একটা নতুন অ্যান্থেম সৃষ্টি করতে পারি কিনা! আসবি?
  • Nina | 66.240.33.48 | ১৮ মার্চ ২০১০ ২১:৩৯451505
  • বাহ! নিশির ডাক। গা ছমছম করে ----
  • pharida | 115.187.52.144 | ২৬ মার্চ ২০১০ ১২:৩৩451507
  • আবার যারা শব্দের পাতা নড়া দেখে বৃষ্টি হবে কিনা বলে দিত - সেই হাত ধরে এগোলাম।

    যতই এগোই, ফিরে আসাটাই সামনে আস্তে থাকে, ডানোদিকে বাংলা না এলেও লিখে যেতে থাকি সেই সব ঘামে ভেজা রাস্তা দিয়ে টুকটাক ত্রামগড়ি চলে যাওয়া, নতূন ঢালই এর পরে জল দিতে থাকা এ সমুদ্র হৃদয় উৎসারিত ঝিনুকের খোল বালি মেখে মাতামাতি করে - সে আর কদিন ই বা জাগে বলো?

    কখন ঘুমোয় সে - জেগে ওঠে তোমাদের মতো?

    বলে দাও .................
  • M | 59.93.221.51 | ২৬ মার্চ ২০১০ ২০:০৩451508
  • উথাল পাথাল হাওয়া,নারকেল গাছের পাতার সাথে আম গাছের ডালের মিঠে খুনসুটি...........আকাশের আজ মনখারাপি আলো আঁধারির দিন, আর মেঘেদের অশান্ত ছোটাছুটি..........ছোট্ট পাখিগুলো টলোমলো সংসার সামলাতে ব্যস্ত..........লক্ষ্মীপেঁচাটাও আজ মিটার ঘরের উপর বসতে সাহস পায়নি...........সবে বড় হয়ে যাওয়া ছোট্ট মেয়েটা দুহাত ছড়িয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে ভাবছে, হারিয়ে গেছি আমি...........
  • arindam | 59.93.199.163 | ২৭ মার্চ ২০১০ ১৩:৩৪451509
  • আজ অন্তত ঘড়ির দিকে তাকাস না
    টুকরো করে উড়িয়ে দে সব সমস্যা
    চিন্তা তোকে মানায় না দ্যাখ, আকাশ লাল...(শ্রীজাত)
  • M | 59.93.203.130 | ২৭ মার্চ ২০১০ ২২:১১451510
  • পুরোটা প্রিয় কবিতার টইতে লিখে দে প্লিজ.....
  • shuchismita | 71.201.25.54 | ১৯ জুন ২০১০ ০৩:১২451511
  • আজকাল ভারী বৃষ্টি পড়ে। এই ছিল শুকনো খটখটে রোদ, ঝলমলে উঙ্কÄল দিন। হঠাৎ করে তার ঠোঁট ফুলে ওঠে। তার টানাটানা দীর্ঘ চোখের পাতা নিবিড় হয়। তার গলার নীল শিরাটা কাঁপতে থাকে। হু হু করে হাওয়া দেয়। নি:সাড় শরীরে হঠাৎ ব্যথা পাওয়ার মত একটা তীব্র জীবন্ত অনুভূতি তোলপাড় করতে থাকে সারা চরাচর। সেই সাথে উড়ে বেড়ায় ফেলে দেওয়া কোকের বোতল, উপচে পড়া ট্‌র্‌যাশক্যানের আবর্জনা, গ্রসারীর বিলের ছেঁড়া টুকরো। আর এদের মাঝেই সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে বৃষ্টি নামে। ধারালো নখের মত হিংস্র তুমুল বৃষ্টি। অবাধ্য মেয়ের মত সে আছড়ে পড়তে থাকে মাটির বুকে। যেন আরেকটু ধাক্কা দিলে মাটিটাও গলে যাবে।

    আমি আমার জানলা দিয়ে দেখি বেরি গাছটা আকন্ঠ ভিজছে। লাল লাল ছোটো ছোটো বেরি – বৃষ্টিকণা তার উপর পড়ে এক একটা ম্যাজিক ক্রিস্টাল তৈরী হয়। কাঠের বেড়াটার গায়ে ফুটে ওঠে সবজএটে ছবি। ম্যাপল পাতাগুলো ভীষন বৃষ্টি খেয়ে গুটিসুটি চুপচাপ। কতবার ভাবি ক্যামেরাতে তুলে রাখবো এই মুহুর্তটুকু। জলের ছিটে লেগে লেন্সই ভেজে শুধু। সে আর ধরা দেয় না। ভারী রাগ হয় আমার। তাই তো... আসবি কেন আমার কাছে... আমি কি আর তেমন দেখনদার! খাটের ওপর ক্যামেরা ছুঁড়ে ফেলে সবকটা জানলা খুলে দিই। বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যেতে থাকে আমার গেরস্থালী, আমার ছেঁড়া পাতার আঁকিবুঁকি। আমার ডায়েরীতে লেখা দিনগুলি বৃষ্টির আদর পেয়ে গলে যেতে থাকে। আকাশের মত নীলচে ধূসর হয়ে ওঠে তারা। আমি বাধা দিই না। ওরা ভিজতে ভিজতে একসময় মেঘেদের মাঝে মিশে যায়।

    এমন সময় আকাশ ভরে আলো ফোটে। বৃষ্টিশেষের প্রথম আলো। অপূর্ব এক হলুদ আলো। একফালি মেঘ সরিয়ে দিয়ে ক্ষণিকের জন্য সে দেখা দেয়। লুকিয়ে পড়ে পর মুহুর্তেই। অবিরাম বর্ষণের মাঝে ভারী গোপন এক সুখের মত নরম সেই আলো ছড়িয়ে পড়ে সদ্যস্নাত ম্যাপল পাতায়, বৃষ্টিকাতর পথে পথে, নীলচে ধূসর আকাশের কোণে কোণে। সেই আলোটুকু ছোঁয়ার জন্য আমি বার বার ঘর-বাহির করতে থাকি।
  • | 220.253.178.104 | ২০ জুন ২০১০ ১৬:২৩451512
  • থ্যাঙ্ক গড, ফ্রীজ ভর্তি খাবার, ওয়ার্ডরোব ভর্তি জামাকাপড়, সপ্তাহ গেলেই পে চেক, তবেই না এত রোম্যান্টিকতা!
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২০ জুন ২০১০ ১৭:৩৯451513
  • খামোখা গড-বাবুকে দোষারোপ কেন! কি জানি কেন হপ্তাহান্তের পে-চেকটা এরা কিছুতেই শ্রীমুখ দর্শন করে হাতে গুঁজে দেয় না। রীতিমত শোষন চালাতে থাকে। কি আপদ!
  • Nirob Dorshok | 59.93.246.55 | ২১ আগস্ট ২০১০ ২৩:৫৪451514
  • আজ আকাশে আবার আধখানা চাঁদ উঠেছে দেখেছ? তুমি হয় তো বলবে প্রতিমাসেই তো ওঠে একবার করে -হন, তা হই তো ওঠে. কিন্তু কি বল তো? প্রতি মাসে তো তুমি একরকম থাক না আজ যেমন আছ. আজ যেমন ভাবছ তুমি,যেটা ভাবছ সেটা তো আর পরের মাসে ভাববে না আজ যেমন তোমার মনের অবস্থা পরের মাসে তো আর সেটা তেমন থাকবে না; বা আগের মাসেও ছিল না. ছিল কি??
    পরের মাসে একই দিনে একই সময় যখন তুমি চাঁদ দেখবে তুমি শত চেষ্টা করেও সেই রকম ভাবতে পারবে না যেটা এখন ভাবছ বা আগের মাসেও পারনি যখন ওকে দেখেছিলে....
    তাই প্রতি মাসেই যদিও একটা চাঁদ ই বারবার ওঠে তবুও সে প্রতিবার ই আলাদা আলাদা;নতুন নতুন চাঁদ. যেমন আমাদের আসেপাশের মানুষেরা, সম্পার্করা, যেমন আমরা নিজেরা ঠিক তেমন ই তাই না?

    আজ রাতের জ্যোত্‌স্‌নাটা চাদের আলো টা ঠিক যেন ঝিরঝিরে বৃষ্টির মতো.
    বৃষ্টি দেখে তার আভাস পেয়ে তোমার মাথা খারাপ হযে যাবে,
    ঘরে থাকতে পারবে না..
    বাইরে ছুটে চলে যাবে নিজেকে কিছুতেই ধরে রাখতে না পেরে..
    কিন্তু
    বাইরে যাবে, বৃষ্টি তে ভিজবেও
    কিন্তু সেই পূর্ণতা আসবে না সেই ভেজাতে যেটা তুমি চেয়েছিলে
    তার কাছে
    সে তোমায় সেটা দিতে পারবে না
    ইচ্ছে থাকলেও পারবে না
    বৃষ্টির ইচ্ছে থাকলেও সে তোমার সাথে মন খুলে খেলা করতে পারবে না..
    তোমায় পুরো করে দিতে পারবে না..
    তোমার মনের মতো করে..
    সেটা যে তার একার হাতে থাকে না ------
    সে চাইলেও যে পারে না
    আমি জানি যান বৃষ্টি সব সময় চায় পূর্ণ করে দিতে
    একেবারে তোমার মনের মতো করে
    কিন্তু তার সাথে তো অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে
    একই সুতোর টানে অনেক কিছু বাধা থাকে
    অনেক সম্পর্ক, অনেক আশা, অনেক চাওয়া পাওয়া..
    আরো অন্য অনেক অনেক কিছু
    আজকে রাতের জ্যোত্‌স্‌নাটাও সেই রকম..
    যেমন ধরো----
    আজ চাঁদের আলোটা দেখে তোমার একছুট্টে বাইরে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে,
    মনে হচ্ছে প্রাণ ভরে স্নান করি মোম জোছনায়, গান করি গলা ছেড়ে,
    "এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে এস না গল্পো করি"
    উদ্দাম হযে যাই, মাতাল হযে যাই, কিন্তু জোছনা পুরো ভিজাতে পারছে কি তোমায়??
    ঝিরঝিরে বৃষ্টির মতো; হয় তো চুল ভিজলো তো মাথা ভিজলো না,
    কাপড় ভিজলো তো বুক ভিজলো না...
    মন টা কে ভেজাতে পারল না..
    ঠিক ঠিক সেই রকম,
    একদম সেই রকম..
    তাই না বল তোমার কি মনে হয়??
    যাও বাইরে গিয়ে দেখো তার সেই দেওয়া,
    তাকেও কেউ কেউ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে
    তার ইচ্ছে বা অনিছেই.. সেটা ঠিক বোঝা যায় না..
    হয়ত তার একটা প্রচ্ছন্ন সম্মতি আছে এই নিয়ন্ত্রিত হওয়া তে
    কারণ এটা তো মেনে নেওয়া যাই না বল
    যে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ
    যে কিনা নিজেকে পরিনত বলে দাবি করে
    তাকে তার ইচ্ছের বিরুধ্যে গিয়ে কেউ কিছু করতে বলে আর সে সেটা মেনে নেয়..
    জানি না আমি.. বুঝি না
    হয়তো চাঁদ চাইছে বিলিয়ে দিতে তার জোছনা,
    উজার করে চাইছে দিতে..
    তার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য..
    তবে পূর্ণতা পেলেই যে সে দিতে পারবে উজার করে নিজেকে
    সেটা ভাবা কি ঠিক?
    হই তো যেদিন সে পূর্ণ হলো; সত্যি কারের বড় হলো;
    যেদিন তার মন সুধু দিতে চায়, নিতে নয়..
    সেদিন তাকে জোর করে আড়াল করে রাখল কেউ, কালো মেঘের আড়ালে..
    বেরোতেই পারল না সে...
    মাঝে মাঝে যখন সে উঁকি দেবার চেষ্টা করে তাকে জোর করে আড়ালে রেখে দেওয়া হয়..
    কিন্তু??
    আদৌ কি তাকে আটকে রাখা যায়?
    আড়াল করা যায়???
    জানি না আমি
    আমার মনে হয় তাকে কখনই আড়াল করে রাখা যাবে না জান!!
    সম্ভব নয়..
    জল যেমন বাঁধ ভেঙ্গে চলে আসে দুকুল প্লাবিত করে দিয়ে..
    চাঁদের আলো ও ঠিক তেমনি,কিছুতেই মেঘের বাধা মানে না..
    ঠিক বের হযে পরে..
    মেঘ কে ঠেলে দুহাতে সরিয়ে দিয়ে যতই বাধা আসুক..........
  • Nirob Dorshok | 59.93.246.55 | ২২ আগস্ট ২০১০ ০০:১৮451515
  • জঙ্গলের মধ্যে একটা গাছ বৃসে্‌ত্‌য়্‌ত ভিজে সপসপে,
    তার চুল থেকে টুপ টুপ করে ঝরে পরছে জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা
    তার গাঁয়ে রাস্তার আলো টা এমন ভাবে পরেছে
    যে টাকে ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে চোখে পরছে
    বৃষ্টি ভেজা আলো মাখা গাছ টা যেন অভিসারিকা
    গোপন অভিসারের অভিজাত্রিনি
    তার প্রিয়তমের প্রতিক্ষায়
    নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে, সুন্দর করে সাজিয়ে
    নিয়ে তার পথপানে চেয়ে বসে আছে
    আর সেই মুহুর্তে তার সেই অপরূপ রূপ তার অজান্তে
    লুকিয়ে উপভোগ করছিল রাস্তাতে দাড়িয়ে থাকা তারই মত একজন
  • phaida | 122.163.98.105 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৯:৪৮451516
  • বেশ ভিজেটিজে একশা হয়ে সোজা ঘরের মধ্যে - নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত বুঝি? নাকি ফেলে এসেছে ছাতা, বর্ষাতি বা রংপেন্সিলের বাক্স থেকে দু এক টুকরো?

    মেঝেতে জলের দাগ যতক্ষণ - তার একটু বেশি বয়সের ছেলেমানুষী এখনো ফিরলো না।

    তাছাড়া আক্ষেপ নেই আর।
  • Tim | 173.163.204.9 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০৮:২১451518
  • বৃষ্টি হবে হবে করেও হয়না -- এমন দিনই বেশি। হাওয়ার দিক পাল্টায়। মেঘের ছিরিছাঁদ বদলে সেই হাওয়া পাক খায় ধুলোটে দুপুরে।

    বৃষ্টি নামলে পাশে এসে বসে পুরাতন। দু এক টুকরো ঝলক, কয়েক ফোঁটা রক্তদানা গড়ায়। পর্দাটা সাঁইসাঁই ওড়ে, যেন পাকসাট।

    বৃষ্টির দাগ অস্থায়ী। জলছাপের ক্ষয়ে, ধুয়ে আসা রঙের মতন। আর কিছু, কিছুই জমে থাকেনা। শূন্যতা বাদে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন