এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শহর থেকে শহরে

    bozo
    অন্যান্য | ০১ এপ্রিল ২০০৬ | ১৭১৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sc | 117.198.49.73 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০১:০৫563894
  • থ্যাঙ্ক্যু SS.. ! এ পাতায় আর ইউনিকোডে একেবারে আনকোরা। তাই বেশ তালেগোলে হরিবোলে ব্যাপারটা হয়ে গেছে কয়টা মাত্তর লাইন টাইপাতেই :( ।

    শুচিস্মিতা,
    তোমার ঐ সুন্দর সবাক ছবিগুলোর পর আমার হিজিবিজি নেহাতই মকসো করা। কিন্ত এই সুতোটাই যেন লিখিয়ে নিলো এলোমেলো।
  • Bhuto | 203.91.201.56 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১০:০১563895
  • হ্যাঁ পাঁচ পাঁচটা বছর পার হয়ে গেল , ভুতোদা বলবে না ? :) তবে ছোট্ট ভুত নামটা আর পাল্টালো না .... তোর দেওয়া :)
  • Du | 65.124.26.7 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২৩:৩৮563896
  • এই লেখাগুলো সবসময়েই ভালো আর ভালো। শুচিস্মিতার লেখাগুলো পড়ে কেমন যে লাগলো ! sc র লেখাও খুব ভালো।

    ডিডিদাকে ডিটো আর এই একটা টইতে অন্তত: বাংলা বয়েজ আর গার্লস স্কুলগুলোকে একটা ode দিয়ে যাওয়া যেতেই পারে। লেখকদের দুর্ভাগ্য ছিল হয়তো, কিন্তু আমরা ভাগ্যবান হলাম ।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৫:২০563897
  • মাঘের এই একান্ত দুপুরবেলায়
    না শোনা গল্প পুরোনো
    মনে পড়ে যায়
    এক দমকা হাওয়ায়... :-)

    পাঁচ কই রে? আমার হিসেব তো বলছে ছ'বছর হতে চললো!

    দু-দি, সেসব দিন তো এখন সেপিয়া। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে চোখের আরাম। দুর্ভাগ্যের কথা আর না ভাবলেও চলবে :)

    ব্ল্যাঙ্ক, বারুইপুরের লেখাটা শেষ করলি না?
  • sana | 58.106.143.110 | ০৩ জুন ২০১০ ১৯:১৮563898
  • এই টই টা খুব ভালো লাগলো!
  • Tim | 71.62.121.158 | ০৩ জুন ২০১০ ২১:৫১563899
  • লিখেই ফেলি, এতই যখন হাত উশখুস। এই টইতে আগেই লিখেছে তানিয়াদি, অজ্জিতদা। আমারও নিবাস শহরের দক্ষিণতম প্রান্তে, ওদের বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। সায়েবরা যাকে বলে চিরস্থায়ী ঠিকানা, মানে কিনা বছরে-দুবছরে একবার ছুঁয়ে আসার খোঁড়া অজুহাত।

    শহরতলির প্রথম স্মৃতি ছোট্ট পাড়া ঘিরে। উত্তরে বিশাল ধূ ধূ মাঠ আর পশ্চিমে টালিনালা। পূব-দক্ষিণে শিকড় মেলেছে বসত। নালায় তখন অনেক জল, পারাপার হতে গা-ছমছম করে। আজ যেখানে পেশল সেতু, তখন সেখানে ছিলো বাঁশের সাঁকো। অন্যপাড়ে করুণাময়ী। সেখানকার মূল আকর্ষণ ছিলো বাজার। ডায়মন্ডহারবারের দিক থেকে অযুত ব্যাপারী এসে জমিয়ে দিয়েছিলেন ঐ বাজার। আমাদের ঘোষপাড়া অঞ্চলেও একটা বাজার ছিলো, কিন্তু সে হলো আটপৌরে ব্যাপার। রোজকার প্রয়োজনের জিনিস চটজলদি পাওয়ার ঠিকানা। কিন্তু শনি-রবিবারে, বা অন্য ছুটির দিন সক্কলে ছুটতো সাঁকো পেরিয়ে অন্যপাড়ে।

    সাঁকোটা দুলতো খুব। কয়েকটা বাঁশ একসাথে করলে যেমন হয়, খুব একটা চওড়া ছিলোনা সেটা। জেঠু বা বাবার হাত ধরে ঐ পথে যাওয়ায় মজা ছিলো, তবে ভয়ও কম ছিলোনা। অন্য আরেকটা সেতু ছিলো মিনিট দশেকের দূরত্বে, কংক্রিটের সরু ব্রিজ, তবে সেটা ঘুরপথ হতো।

    টালিগঞ্জ বলতে তখন সবাই চোখ গোল করে তাকাতো। স্টুডিওপাড়া, রাজনৈতিক খুনোখুনি, নিত্যনতুন হুজুগ আর বিতর্কের হাত ধরে শহরতলি তখন সবে সাবালক হতে শুরু করেছে। ছোট ছোট পাড়া, কখনও সদ্ভাব কখনও ঝগড়ায় অম্লমধুর দিন কাটাতো বাসিন্দারা। আমাদের পাড়ায় সবাই সবাইকে চিনতো প্রায়। এবং ভয়ানক শাসন করতো বড়রা। প্রতিবেশীরা বদমাইশি দেখলে নির্দ্বিধায় কানটান টেনে দিতে পারতেন আমাদের, পাপের ডিগ্রিবিচার করে হাল্কা চড়চাপাটিও চলত। আমাদের ছোটবেলার গোটাটাই স্বাধীনতা সংগ্রাম করে কেটেছে, খুদিরাম-সুভাষচন্দ্র-বাঘাযতীনের নামে সশস্ত্র বিপ্লব ডানা মেলছে। হেতু কখনও মাঠের ভাগ, তো কখনও ক্রীড়াসরঞ্জাম। ইমিডিয়েট সংগ্রামটা ছিলো পাড়ার সিনিয়রদের সাথে। তখন তারা সেভেন ও তদূর্দ্ধে, আমরা টেনেটুনে সিক্স। সিক্স প্যাকের কথাও তখনই শুনি। তবে প'য়ে একটা চন্দ্রবিন্দু ছিলো। আমাদেরই একজন, নাম তার মনা, ভারি ভালো হাঁসের ডাক ডাকতো-- এই গুরুদায়িত্ব তাকেই দেওয়া হত চিরকাল। বড়ো মেজ ছোট দাদাদের সাথে যুদ্ধগুলো সবই রক্তক্ষয়ী হতো। মোহনদাসের নাম সবাই জানতাম, কিন্তু অহিংস আন্দোলনে ভরসা ছিলোনা। যুদ্ধের শেষপর্বে আম্রিকা, অর্থাৎ কিনা সিনিয়রমোস্ট সিটিজেনরা এসে মিটমাট করে দিতেন। বিশ্বযুদ্ধের নিয়ম মেনেই কানধরে দাঁড়ানো, মৃদু হ্যান্ডশেক ওত্যাদি হতো।

    টালিগঞ্জ ট্রামডীপোর দিকে ট্যাক্সি যেতনা। কিসের ভয় তখন বুঝিনি। আমরা অবশ্য রোজই বহাল তবিয়তে বেরোতাম ও ফিরে আসতাম। বরং ধর্মতলার দিকে ঝামেলা হলেই ভয় লাগতো বাবা-কাকা-জ্যাঠার জন্য। তখন কাগজে প্রায়ই এরকম বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরে না আসার গল্প থাকতো। ভাগ্যিস তখনও প্রেমেন মিত্তিরের কবিতা পড়িনি। ফিরে আসা না আসা নিয়ে চমৎকার সে কবিতা প্রথমবার কিরম থমকে দিয়েছিলো আমায় - সেসব ইশকুলের কথা।

    পাড়ায় একটাই নমো নমো করে দূর্গাপুজো হয়, একটা ভারতমাতা ( এই পুজোটা নিয়ে ব্যাপক কনফুশন হতো মনে আছে) আর প্রায় প্রতি গলিতে একটা দুটো করে সরস্বতীপুজো। কালীপুজোও তথৈবচ। কিন্তু তাতে ফুত্তিতে ঘাটতি ছিলোনা। মহালয়া থেকেই মোটামুটি বইপত্তর গুটিয়ে প্ল্যানিং শুরু হত। ছনম্বর রুটে ( অর্থাৎ ট্রামডীপো থেকে গড়িয়া অবধি রাস্তা) তখন ভয়ানক যানজট হত, তবু সেই ভিড় ঠেলে হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখতো লোকে। পুজোয় জামাকাপড় নিয়ে আমাদের অতটা মাথাব্যথা ছিলোনা ( অন্তত টেন অবধি, অত:পর বিপ্লব এলো, সে এক কেলোর কিত্তি, ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয়) অস্ত্রশস্ত্র ঠিকঠাক পেলেই বর্তে যেতাম সবাই। দেশি-বিদেশী পিস্তলের অনুকরণে যে যার সামর্থ্যমত অস্ত্র নিয়ে এপাড়া ওপাড়ায় কিঞ্চিৎ যুদ্ধ হত। বছরের বেশির ভাগ সময়ই বিভিন্ন সিনেমা বা কমিক স্ট্রিপের মুশকো জোয়ানেরা রোল মডেল, অবশিষ্ট সময়টা ক্রিকেট-ফুটবলের নামে উৎসর্গ করে আমরা বিপ্লব ত্বরান্বিত করছিলাম। আরো সব নানান ফিশি ব্যাপার ছিলো, সেসব আত্মজীবনীতে লেখা যাবে'খন।

    তো, সব মিলিয়ে নতুন কিছু ছিলোনা সেই শহরে। কিন্তু তবু কি অবিশ্বাস্য, কি স্বপ্নপ্রতিম মনে হয় ঐ বেড়ে ওঠাকে। ভূগোল বইতে পড়া অন্য সব নামী শহরে যখন পৌঁছই, কেমন জোলো লাগে কল্পনার অতীতশহরকে। শহর বদলায়, না মানুষ, না দুটোই -- বুঝে উঠতে পারিনা। স্মৃতির কুলুঙ্গিতে জমা থাক সেই শহরতলি, ধুলো জমা পুরোনো ছবির মত জঞ্জালের বোঝা হয়ে জেগে থাক বুকে।
  • Arya | 125.16.82.195 | ০৪ জুন ২০১০ ০৯:৩৫563900
  • ওহো Suchismita আমি উত্তরপাড়া, আর আমার শ্বশুরবাড়ী চুচুড়া, তোমার লেখাগুলো পড়ে মনটা হুহু করে উঠ্‌ল।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৭:১৭563901
  • আমার শহরান্তরের গল্প নয় যদিও...

    জুলিয়ার সাথে যে খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল তা কিন্তু নয়। জুলিয়াকে যতদিন ধরে চিনি তার পঁচানব্বই শতাংশ সময়ই আমরা আলাদা টিমে ছিলাম। ও অ্যাকুইজিশন। আমি পোর্টফোলিও। এক প্রোজেক্টে কাজ করারও সুযোগ হয় নি সেভাবে। হলওয়েতে বা রেস্টরুমে দেখা হত। টুকটাক কথা। মাঝেসাঝে এক সাথে লাঞ্চেও গেছি। জুলিয়াকে চেনা এভাবেই। তাও কি করে জানি বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কৃতিত্ব অবশ্য ওরই। এমন মিষ্টি মেয়ে – ভালো না বেসে উপায় নেই।

    তখন অ্যান্টনি হবে। কাজের চাপ, শরীরের অবস্থা সব কিছু ভেবেচিন্তে আড়াই বছরের সোফিয়াকে রেখে আসা হল চায়নাতে ওর দাদু-দিদিমার কাছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় যেমন পুতুলের মত সুন্দর বাচ্চাদের দেখা যায়, সোফিয়াকে দেখতে একদম তেমনটি। রেস্টরুমে দেখা হলেই জুলিয়ার মুখে তখন সোফিয়ার কথা – জানো, আজ আমার শাশুড়ি ফোন করে বলছে, সোফিয়ার কান বিঁধিয়ে দিলাম, তোমার আপত্তি নেই তো? ভাবো তো, আমার আড়াই বছরের সোফিয়া! ঐটুকু বাচ্চার কান বেঁধালো! আর তারপর কিনা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, আপত্তি আছে কিনা! আপত্তি থাকলেই যেন শুনতো! পরিষ্কার বুঝতে পারতাম সোফিয়াকে আদর করার জন্য জুলিয়ার মনটা ছটফট করছে। ঐ টুকু মেয়ে, কান বেঁধাতে গিয়ে না জানি কত কেঁদেছে। আমরা বলি, জুলিয়া, তুমি ওকে যেতে দিলে কেন? জুলিয়ার মুখ আরও ম্লান হয়। ইচ্ছে করে কি আর মা মেয়েকে ছাড়ে!

    তারপর অ্যান্টনি হওয়ার পরেও তো তাকে নিয়ে গেল ওর দাদু-দিদিমা। সোফিয়া তখন ফিরে এসেছিল ওর মা-বাবার কাছে। জুলিয়ার সাথে তখন দেখা হলেই আই-ফোনে অ্যান্টনির ভিডিও দেখাত। এই দ্যাখো, অ্যান্টনির দুটো দাঁত গজিয়েছে। জানো ও কেমন ইন্টেলিজেন্ট! এখন থেকেই সবাইকে চিনতে পারে। কাল ভিডিও চ্যাট করছিলাম, আমাকে দেখে হেসেছে, জানো! আমার মনে হয় ও সোফিয়ার থেকেও তাড়াতাড়ি সব কিছু শিখে যাচ্ছে। সেকেন্ড চাইল্ডরা কি এই রকমই হয়?

    তা’বলে ভাবার কোন কারন নেই জুলিয়ার মন সবসময় চায়নাতে পড়ে আছে। ভীষন কাজের মেয়ে জুলিয়া। কখনও অ্যাকুইজিশন নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেই জুলিয়ার কাছে গেছি। দেখেছি ওর কাজ কেমন পরিষ্কার, নিখুঁত ভাবে ডকুমেন্টেড। কর্পোরেট জগতে অনেকেই মুখে মিষ্টভাষী হলেও অন্যকে সাহায্য করাটা প্রতিযোগিতার পথে বাধা হিসেবে দেখে। জুলিয়ার মধ্যে সে ধরনের কোন মালিন্য ছিল না। মাসখানেক আগে আমাদের টিম আয়তনে বাড়লো। তখন জুলিয়া আমাদের টিমে এল ক্রেডিট লাইন অ্যাসাইনমেন্টে ওর ছ’বছরের এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে। তখনই নিশ্চয় মনে মনে জানতো যে এই কাজ বেশিদিনের জন্য নয়। কারন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই নোটিস এল জুলিয়া চায়নাতে ফিরে যাচ্ছে। ওর ননদের একটা ছোট গারমেন্টসের ব্যাবসা আছে। ওর বর ব্রায়ান ঠিক করেছে দেশে ফিরে গিয়ে বোনের সাথে ব্যাবসাটা বাড়াবে। জুলিয়াও তাই দেশে ফিরছে অ্যামেরিকার পাট চুকিয়ে, দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে, আট বছরের প্রবাসকে পিছনে ফেলে।

    জুলিয়ার চলে যাওয়ার খবরে মন খারাপ করার সময়টুকুও পেলাম না। যতদিন জুলিয়ার জায়গায় নতুন কেউ না আসছে ততদিন ওর বেশ কিছু কাজ আমাকে দেখতে হবে। এর আগে লাইন অ্যাসাইনমেন্টে কাজ করি নি কখনও। একেবারে নতুন জিনিসপত্র। ভালো করে বোঝার আগেই হুড়মুড় করে গাদা খানেক প্রজেক্ট ঘাড়ে চেপে গেল। তখন আবার জুলিয়াকে চিনলাম। কি কাজ করতে হবে, কি রকম পড়াশোনা করতে হবে, এমনকি কি ভাবে ভাবা উচিত নতুন স্ট্রাটেজি নিয়ে – সবকিছু জুলিয়া আমাকে মোটে দু’সপ্তাহের ট্রেনিং-এ বুঝিয়ে দিল। একা আমাকে তো না। আমি আর মাইক – দুজনে মিলে ভাগ করে নেবো জুলিয়ার কাজ – দুজনকেই।

    আজ ছিল জুলিয়ার শেষদিন। সকালে কফি নিয়ে ফিরছি, ওর কিউবের মানি প্ল্যান্টটার দিকে চোখ গেল। জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি তো কেটে পড়ছো, মানি প্ল্যান্টটার কি হবে এখন? ও বললো, তুমি নেবে প্লীজ? – নিতে তো পারি। কিন্তু কি ভাবে পরিচর্যা করবো তা তো জানি না। - কিচ্ছু না, সপ্তাহে একবার জল দিও, তাহলেই হবে। নিয়ে এলাম জুলিয়ার মানি প্ল্যান্টকে নিজের কাছে। প্রথমবারের জলটা জুলিয়াই দিল নিজের হাতে। ওর কাছে শেষবারের মত। সব ফার্নিচার বিক্রি হয়ে গেছে। এখন মেঝেতে স্লিপিংব্যাগ পেতে শুচ্ছে ওরা। সোফিয়া বেচারি কিছুই বুঝতে পারছে না, লোকে কেন ওদের বাড়ি থেকে আজকে সোফাটা, কালকে খাটটা, পরশু টিভিটা নিয়ে চলে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যখন ওর গোলাপি রঙের মিনির ছবি দেওয়া ডিভিডি প্লেয়ারটাও একজন এসে নিয়ে গেছে তখন খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। জুলিয়া বলছে, ওকে বললাম চলো আমরা চায়না যাই, তারপর আবার সব হবে আমাদের। সত্যি কি সব হয়! যেমনটি ছেড়ে যেতে হয় ঠিক তেমনটি কি আর কখনও ফিরিয়ে আনা যায়!

    দুপুরে লাঞ্চ করলাম একসাথে। জুলিয়া শেষবারের মত মনে করিয়ে দিল, তোমার ফোনটা ইনসিওর করিয়েছ? বলা বাহুল্য, করাইনি। ভুলে মেরে দিয়েছি। আসলে ব্রায়ানের আই-ফোনটা ওদের গতবারের চায়না ট্রিপে হারিয়ে গেছে। এদেশে সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে কনট্রাক্টে থাকলে খুব সস্তায় ফোন পাওয়া যায়। কিন্তু কনট্রাক্টের বাইরে ফোনের ভীষন দাম। ব্রায়ানের ফোনে লস্ট অ্যান্ড স্টোলেন ইনসিওরেন্স ছিল না। তাই ফোন হারানোর পর ওকে প্রচুর দাম নিয়ে নতুন ফোন কিনতে হয়েছে। তারপর থেকেই জুলিয়া আমাদের বলে যাচ্ছে ফোন ইনসিওর করিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি যথারীতি ল্যাদ খেয়ে যাচ্ছি। কিছুতেই করা হয়ে উঠছে না কাজটা। তবে এবারে করে ফেলতে হবে। জুলিয়া তো আর থাকবে না মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

    যাওয়ার আগে যেটা করল তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। জুলিয়ার টেবিলে একটা বানি ছিল, একটা মিষ্টি মত খরগোস ছানা একটা ছোট ঝুড়ি ধরে আছে বুকের কাছে। ঝুড়িটাকে পেনস্ট্যান্ড বা সেল-ফোন হোল্ডার হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। জুলিয়ার কাছে যখনই যেতাম বানিটার লম্বা লম্বা তুলতুলে কানে একটু আদর করে দিয়ে আসতাম। বেলা তিনটে নাগাদ, জুলিয়ারই কাগজপত্রগুলো তখন আরেকবার রিভিউ করছি, জুলিয়া এল আমার কিউবে। - শুচি, তুমি আমার বানিকে রাখবে? যখন প্রথম ইউ এসে এসেছিলাম, সেই ২০০২ থেকে এই বানিটা আমার কাছে আছে। তুমি নেবে একে? – অনেকদিন এতটা আবেগতাড়িত হই নি। আমি তো এর যোগ্য নই। তোমার আট বছরের প্রবাসকে তুমি আমার হাতে তুলে দিচ্ছো জুলিয়া! কিছুই বলতে পারলাম না। চুপচাপ হাসলাম শুধু।

    তারপর আর কি! আমার ডেস্কে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে জুলিয়ার বানি। আমি ভাবছি আমাকেও একদিন দিয়ে যেতে হবে কাউকে। এভাবেই তো চলে রিলে রেস। এভাবেই তো বৃত্তটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। আর ছড়িয়ে পড়তে থাকি পরিধি জুড়ে। কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। অথচ তাও কেমন হাতে ধরা থাকে হাত!
  • ps | 117.201.117.129 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২২:০৪563902
  • শুচিস্মিতা, খুব ভালো লাগলো।
  • Paramita | 122.172.35.20 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০১:১২563904
  • চার চার দিন পর রাত জুড়ে গনেশপুজোর মাইক থেমেছে। আওয়াজটা জোরালো থাক না থাক, বাড়ির বেশীরভাগ লোকেরই ঘুমোতে কোনো অসুবিধা হয় নি। আমি একদিন ক্লান্ত ছিলাম খুব, অকাতরে ঘুমিয়েছি। তবে বাকি তিনদিন বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঢাক, মাইকে প্রি রেকর্ডেড আওয়াজ, সুতোয় বাঁধা সিরিজ ফটকা, চেনা আওয়াজ শুনছি। আর সিম্বলিক কড়িকাঠ গুনছি।

    কি অবিশ্বাস্যভাবে আমাদের রিয়াক্ট করবার ধরন বদলে যায়। ওদেশ থেকে চলে আসার ঠিক আগে আমাদের বাড়ির পেছনে একটা বাড়ি ভাড়া হল। ভাড়া হবার দিন দুই তিনের মধ্যে তারা ব্যাকইয়ার্ডে দুটো জোরালো আলো আর অসংখ্য টুনি বাল্ব, তোরণ ইত্যাদি লাগিয়ে ফেললো। এরপর দু তিন উইকেন্ড ধরে অনেক রাত অবধি পার্টি। আমরা কেন যেন ভেবে নিলাম, বিয়ের পার্টি। তা কিছুদিনের মধ্যে সে ভুল ভাঙলো। সন্ধে হতে না হতে কালো কালো কোট আর কালো স্কার্ট পরা মহিলারা জমায়েত হতে লাগলেন। একটা দুটো অবধি তাদের তান্ডব চলতে লাগলো।

    একদিন পড়শীরা বোধ করি কমপ্লেন করেছিল। আমাদের নিস্তরঙ্গ শান্ত ঘরোয়া নেবারহুড। মেঘের সেদিন খুব জ্বর। পুলিস এলো কি না এলো জানি না, আমাদের পরদিন ওরা এসে গিফট হ্যাম্পার উপহার দিয়ে গেল। বললো, কর্পোরেট উপহার। আমরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। চলে গেলে কত্তা বললো, এটা বোধহয় ঘুষ ছিল জানো। সেদিন রাতে উন্মত্ততা চরমে, মেঘ ঘুমোতে পারছে না। আমরাই সেদিন ৯১১ কল করলাম। পরদিন দেখি আমাদের নতুন রঙ করা গাড়ি যা আমরা এদেশে ফিরে আসার আগে হাতবদলের জন্য অপেক্ষা করছে তার গায়ে একটা বড় স্ক্র্যাচ।

    তারপর কি হইতে কি হইলো জানি না।একদিন ওরা বাক্স প্যাটরা নিয়ে হাওয়া হলে গেল। তার আগেরদিন ভোর চারটে অবধি একই কান্ড চলেছিল। আমাদের বেডরুম থেকে কাতারে কাতারে লোক দেখা যাচ্ছিল।

    আজ গনেশপুজোর আওয়াজ ট্রেনের দুলকি চালের মত কাজ করে। মাইকের ডাকে ঘুমিয়ে পড়ি, মাইকের ডাকে জাগি - কোথাও কোনো প্রবলেম নেই। বোলটা এইরকম, জস্মিন দেশে ধাঁই ধপাধপ, জস্মিন দেশে ধাই ধপাধপ, জস্মিন দেশে ধাঁই ধপাধপ, জস্মিন দেশে..
  • I | 59.93.215.223 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:১৭563905
  • অল্প ক'দিন বিদেশবাসের পর ফিরে এসে সবচেয়ে বেশী অসুবিধে হত রাস্তা পেরোতে আর মানুষের রুডনেসে। শব্দটা লিস্টের পরের দিকে ছিল।
    তবে অধিকাংশ লোকের বোধ হয় বেশী প্রবলেম হয় শব্দ নিয়ে। সৈকতও বলছিল একদিন।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:৩৩563906
  • পামিতাদি, অপূর্ব!
  • aka | 168.26.215.13 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৮:১৪563907
  • ঠিক ঠিক, রাস্তা পেরোতে বড় অসুবিধা। ২০০৬ সনে সোদপুরের রাস্তা পেরোতে ১৫ মিনিট সময় নিয়েছিল। কিন্তু সাঁতার একবার শিখলে কি আর ভোলা যায়? দুদিনেই প্র্যাকটিস হয়ে গিয়েছিল। তারপর আর কোনবারই অত অসুবিধা হয় নি। আর অসুবিধা হয় গাড়িতে বসে, সর্বক্ষণই মনে হয় এই বুঝি ধাক্কা লাগল। খালি মনে মনে ব্রেক কষি।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৮:৪৩563908
  • অ্যায় অ্যায়, আকা ঠিক্কয়েছে। গাড়ি চালিয়ে চালিয়ে এমন ওভ্যেস হয়ে গেছে, নিজে যদি ড্রাইভারের সিটে না বসি, খালি ডান-পা-টা মাটিতে ঘষি, কাল্পনিক ব্রেক কষতে থাকি, সামনে গাড়ি দেখলেই।
  • Arpan | 204.138.240.254 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৮:৪৭563909
  • ডিট্টো।
  • pi | 72.83.97.171 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২১:৪৩563910
  • এখানে আকাশ নীল।
    নীলের বাড়াবাড়ি ই। বাড়াবাড়ি তো সব ই। বড়বড় ও। এক্স এক্স এল। এক্স এস খুঁজে পাওয়া দায়। আর এদিকে সব এক্সেস। যেদিকে তাকাও। উপরে তাকাও তো এক্সেল কাচা এক্সট্রা হোয়াইট মেঘ। মুখ তুলে তাকাও তো এক্সট্রা হোয়াইটেনিং টুথপেস্টচর্চিত স্মাইল। সামনে তাকাও তো সুপার স্বচ্ছ দরজা। দরজা যে আদৌ আছে তা ই বোঝা দায়। প্রথম কদিন তো দুর্যোধনবাবুর ইন্দ্রপ্রস্থ ভ্রমণসমদশা ।
    এমনকি চাঁদটাকেও প্রথম কোজাগরীতে দেখে বোমকে গেছিলাম। একেই কি বলে সুপারমুন ?
    সুপারমুন, সুপারম্যান, সুপারসাইজ, সুপারবউল, সুপারস্টোর, সুপারপাওয়ার...বলতে গেলে কেমনি সুপারলাইকই করে ফেলছিলাম। করবনা ?
    পিকচার ম্যানেজার ট্যানেজারের দরকার টরকারই নেই। ব্রাইটনেস, ক¾ট্রাস্ট সব অটো অ্যাডজাস্ট হয়ে বসে আছে। প্রি কি পোস্ট প্রসেসিং বিলকুল অপ্রয়োজনীয়। সুপারস্টোরের ট্রলিতে ভরি প্রসেসড ফুড। ক্যামেরায় ভরি প্রসেসড ছবি।অসুপারলাইক।
    নির্মেঘ নিকোনো নীলের ব্যাকগ্রাউণ্ডে কখনো ঝুলন্ত ডগ টিউলিপের ফুটফুটে গোলাপি কন্‌ট্‌র্‌যাস্ট, কখনও বা জেটের সুপার সফেদ ফেনিল ট্রেইলের কাটাকুটির কেরামতি।অঠিক অমনিতর সফেন নীল সাগরজলের কন্‌ট্‌র্‌যাস্টে ঠিক অমনপানা সাদা ডানা ভাসানো সিগাল।
    বাঁধানো রাস্তার ধারে সাজানো লাল নীল সবুজের মেলা। উঙ্কÄল হালকা সবুজ ঘাস, উঙ্কÄল গাঢ় সবুজ পাতা। সেই রেডিমেড কনট্‌র্‌যাস্টে আরও ব্রাইট লাগে।
    ব্রাইট, চকচকে।
    এ দেশটা শাইনিং।
    এক চিলতে ধুলো নেই।
    এখানে আকাশের গায়েও ধুলো নেই।
    চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
    কী ব্রাইট, কী চকচকে, কী শাইনিং।
    এখানে রোদের গায়েও ধুলো নেই।
    সিগালের ডানায় রোদের গন্ধ কী চড়া ।
    রোদে ভরে যায় আমার চারপাশ।
    আমি ঐ রোদকে ক্যামেরায় ভরি।
    ক্যামেরা ভরে যেতে থাকে।
    ছবি আর ছবিতে।
    ঝকঝকে হাসি, চকচকে লোকজন, ঝকঝকে রোদ্দুর, চকচকে আকাশ- শাইনিং এক শহরের ছবি।
    আর, তারপর একদিন দেখি, আসলে আমার কোন শহর ই নেই। আছে কেবল শহরের ছবি।অআমি ছবি তুলে চলেছি কতগুলো ছবির ।
    সব ই তো ছবির মতন ।
    সবাই তো ছবির মতন।
    ছবির মতন সুন্দর। পিকচারপারফেক্ট।
    আর বেসিক্যলি আমি সেই ছবির ছবি তুলে চলেছি। এক ছবি থেকে আরেক ছবিতে চলে বেড়াচ্ছি। এক ছবি থেকে আরেক ছবিতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ধাক্কা খাচ্ছি। একটা ছবি পেরিয়ে আরেকটা ছবির মুখে পড়ছি। একটা ছবির পিছনে ঘুরতে ঘুরতে আরেকটা ছবির সামনে গিয়ে পড়ছি।
    সব পিকচারপারফেক্ট।
    খাপে খাপ।
    ডিসক্রিট।
    কোন ভীড় নেই। তাই কোন মিশে যাওয়া ও নেই।
    কোন মীড় নেই।
    সব আলাদা আলাদা। একক । ইন্ডিভিজ্যুয়াল। সবাই একক। । সবাই একা।
    কোন ভীড় নেই।
    কেবল ছবির ভীড়।
    আমি হাঁপিয়ে যাই। কিছু ছবির মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে। আমি সারাদিন কেবল একটা ছবি থেকে আরেকটা ছবিতে ঘুরি।
    হাঁপিয়ে যাই।
    আমি কোন শহর খুঁজে পাই না।
    আমি আমার শহরকে খুঁজে পাই না।
    আমি ধুলো খুঁজতে শুরু করি। একটু কম ব্রাইটনেস। একটু কম ক¾ট্রাস্ট।
    একটু কম বাড়াবাড়ি।
    ছবিগুলো পোস্ট প্রসেস করতে শুরু করি। আলো কমাই।অশার্পনেস কমাই। স্যাচুরেশন কমাই।
    ক্রপ করা শুরু করি। কাটাকুটি করে সব এদিক ওদিক এলোমেলো করে দিই। খাপ থেকে খাপ সরিয়ে একের খোপে অন্যকে ঢোকাতে থাকি। আর এইসব ছবি আপ্লোড করে আলবাম নিয়ে নাড়াচাড়া করি। শহরের মধ্যে আর ছবি খুঁজিনা। এই ছবিগুলোর মধ্যে একটু একটূ করে শহরকে খুঁজতে থাকি।
    পাই ও কি ?
  • pi | 72.83.97.171 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২১:৪৫563911
  • আমি দোকানে গিয়ে এক রোদ চশমা খুঁজে আনি। তাকে দেখতে বড় বাজে। কিন্তু তাকে দিয়ে দেখতে বড় ভাল লাগে।
    চশমাটা একটু আধটু ম্যাজিক জানে। রোদ্দুরকে নরম করে দিতে জানে। চারপাশ আর অমনি পরিষ্কার ঠেকে না। অনেক অনুঙ্কÄল। একটু মরা মরা। একটু পুরান। একটু হলুদ মেশান সেপিয়া টোন।
    আমার খারাপ লাগা গুলো একটু একটু কমে।
    এমনকি আমি অল্প অল্প রিনরিনে ভাললাগা ও পাই।
    ম্যাজিক ?

    আর তাই থেকেই আইডিয়াটা আসে।
    আমি আবার ক্যামেরা ধরি। ক্যামেরা দিয়েই দেখা শুরু করি। একটু ম্যাজিক ক'রে।অফিল্টার লাগিয়ে।
    প্রি-প্রসেস করি। পোস্ট প্রসেসের কারিকুরি জারি করি ছবি তোলার সময় ই।
    জলের উপর রোদ্দুরকে হীরের কুচি বানিয়ে দি। চাঁদে লাগাই ঝিলের জলের জোয়ার। ন্যাড়া মেপলের ডাল দিয়ে তার ক্ষত-বিক্ষত গালে আরো আঁচড় কেটে দি। ঝকঝকে সূর্যাস্তকে বিষণ্ন করে দি।
    সেই বিষণ্ন আলো এসে পড়ে ধবধবে সাদা বি এম ডব্লুর উপর। একলা পাতা ঝরানো গাছের নিচে সে দু:খী দু:খী একলা দাঁড়িয়ে থাকে, আমার বাড়ি ফেরার সেপিয়া রাস্তায়।
    বিকেলটা দু:খী হয়ে যায়।
    আমি অল্প চিনচিনে সুখ পাই।
  • pi | 72.83.97.171 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২১:৪৯563912
  • বাড়ি ফিরতে গিয়ে ফুটপাথে দেখি চারটে স্ল্যাব। তৈরি হয়ে গেছে এক কোয়াড্‌র্‌যান্ট। নিজের ছায়াকে প্লেস ক’রে দি থার্ড কোয়াড্‌র্‌যান্টে। একটা শুকনো ঝরা পাতাকেও একটু সরিয়ে নিয়ে আসি, আমার পাশে। রেসিডেন্টস অব দ্য থার্ড কোয়াড্‌র্‌যান্ট।
    নিজেকে ঠিকঠাক দু:খের কো-অর্ডিনেটে প্লেস ক’রে ভারি একটা সুখ হয়।
    একঘর ভর্তি আলো থেকে এক চিলতে আলো তুলে নিয়ে বাকিটা ফেলে দি।
    ছাপোষা নিয়ন আলোর সন্ধেকে ভিজিয়ে দি সোডিয়ামের হলুদ বাষ্পে।
    বৃষ্টিদিনের কান্নার ফোঁটাটুকুকে পষ্ট ফোকাসে রাখি। বাকি সবকিছু কান্নাভেজা ঝাপসা করে দি।
    রাতের আলোর সামনে শাটার স্পিড কমিয়ে দি। চলন্ত গাড়ি থেকে তোলা ছবিতে আলোগুলো সব আঁকাবাঁকা রেখা হয়ে যায়। ক্যামেরা নাড়িয়ে নাড়িয়ে আমি আমার মত ছবি আঁকি। একটার সাথে আরেকটা আলো মিশে যায়। আর ডিস্ক্রিট নেই কিছু। সব মিশে যায়।অআমি আমার মত ছবি আঁকি। ছবিতে গল্প।
    আবার কখনো বা সেই রাতের আলোর সামনে শাটার স্পিড বাড়িয়ে দি। আয়পারচার ছোট করি। আশপাশ থেকে আর সব মুছে দি। জেগে থাকে কেবল সাঁঝবাতিগুলো। সেই সাঁঝবাতির আলোর মুখোমুখি বসে আমি প্রাণহীন শহরের রূপকথা খুঁজতে থাকি। সাঁঝবাতির রূপকথারা আমাকে দু’দণ্ড শান্তি দ্যায়।
    কেমন ম্যাজিক?
    পচা ম্যাজিক। ধুর ! ম্যাজিক তেমন করতে পারি কই ? ম্যাজিকের ট্রিক তেমন জানি কই ? বই খুলে টের পাই, কথা বলে চলেছি, অথচ ভাষার ব্যাকরণই শিখি নাই ! আমার নড়বড়ে লজ্ঝড়ে ক্যামেরায় ফোকাস হারিয়ে হারিয়ে যায়। আমাকে ব্যাকরণবিদেরা বলেন, লেন্স কেনো, নিয়ম মানো, টেকনিক শেখো।
    অক্ষমের আস্ফালনে বলি, টেকনিক, টেকনিক ! তোমার মন নাই ফোটোগ্রাফি ?
    আর তখনই সেই সত্যিকারের ম্যাজিকটা হয়।

  • pi | 72.83.97.171 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২২:০৩563913
  • দেখি,অবাক হয়ে দেখি, এইসব প্রি পোস্ট প্রসেসিং এর আডজাস্টমেণ্ট ও আর আমাকে করতে হয়না।অএলোমেলো এ সব কিছুই একটু একটু করে খুঁজে পেতে থাকি। দেখি, সব তো এলোমেলৈ হয়ে আছে।অকেবল ক্যামেরার য়াঙ্গল আর ফ্রেমটুকুর অপেক্ষা।
    দেখি সামনের আয়পার্টমেন্টের সাজানো গোজানো ঘরে ঢুকে পড়েছে এক চিলতে আকাশ আর এক ফালি মেঘে ঢাকা সূরয়।
    দেখি আমার অগোছালো ল্যাব চলে গেছে আকাশে ছড়ানো মেঘেদের কাছাকাছি। ১৩৭৩৫ টুইনব্রুক পার্কওয়ের বাড়ির আর নেই ঠিকানা !ল্যাব করিডর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে দেখি লালে লেখা exit আমাকে নিয়ে শূন্যে পাড়ি দিয়েছে, সেই বাড়ির পথে।
    ক্যামেরার ফ্রেমে, জানলার ফ্রেম পেতে ক্যাচ ধরে ফেলি দশটা সূর্যোদয়।
    দেখি ওদিকের ঐ সুখী ছিমছাম বাড়িটা খাপে খাপে জোড়া ইঁট জুড়ে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে এপাশের ন্যাড়া মেপল গাছের ছায়ারা।
    বরফ সাদা স্ক্রীনে হেঁটে চলে যায় ছায়াছবিরা।
    একটু আগে হয়ে যাওয়া বৃষ্টির জমে থাকা জলে ঝুঁকে পড়া ধোয়া মোছা আকাশটাকে আর অম্নি ঝকঝকে তকতকে লাগে না। কালো পিচরাস্তার বুকে ভাঙ্গা আয়নায় তার মুখ বিষণ্ন লাগে, তিরতিরে হাওয়ায় সে মুখ কেবলি ভাঙ্গে। কেবলি ভাঙ্গা মুখের জন্ম হয়।
    আর কোন আডজাস্টমেন্ট নয়, প্রসেসিং নয়, আমি শুধু ফ্রেমিংটুকু করি।
    আর এমনি বৃষ্টি হলে, এমনি জল জমলে , আমার যেমনটি ইচ্ছে শহরটা তেমনটিই হয়ে যায় যে!
    এমনি বৃষ্টির দিনে গল্পরা কবিতা হয়ে যায়, মনে পড়ারা মন কেমন, ইতিহাসেরা রূপকথা আর তাই ফোটোগুলো হয়ে যায় আঁকা ছবি ।
    বৃষ্টি হলে সব সত্যিগুলো আমি দেখতে পাই। এই যেমন, আমার বরাবরের সন্দ ছিল এই কালো পীচঢালা রাস্তাটার ঠিক নীচেই একটা শহর আছে। রাস্তা আছে। আলো আছে। যে শহরে সব উল্ট হয়। উলটে থাকে। বৃষ্টি হলে সেই শহরটাকে খুঁজে পেয়ে যাই।
    দেখি, সেই শহরের রাস্তায় নিটোল যুবতী চাঁদ টালমাটাল।
    আর দেখি, রাস্তার লাল নীল সবুজ আলোগুলো সব ধুয়ে যাচ্ছে। একটার সাথে আরেকটা মিশে যাচ্ছে। আর কিছু ডিস্ক্রিট নেই। মিশে যাচ্ছে, মীড়ের টানে।
    দেখি, সেই শহরের রাস্তায় নিটোল যুবতী চাঁদের শরীর ছিঁড়েখুঁড়ে ছড়ানো।
    ম্যাজিক। ম্যাজিক কি ?
    কোন শাটার স্পিড,আপারচারের আডজাস্টোমেন্ট আর করতে হয় না। ফ্রেমটুকুন করি মাত্র।
    দেখি, আমার সাঁঝবাতির হ্যালোজেন রূপকথা ছেড়ে বেরিয়ে এসে বৃষ্টিতে রং লিখছে। আমাকে পাঠাচ্ছে।
    পড়তে পড়তে আমার মন ভালো হয়ে যায়। এই শহরে। প্রথমবারের মত।
    যদিও এ ঠিক আমার শহর নয়।
    এমনি ই ছিলাম। মন্দ না। ক্যামেরা দিয়ে দেখতে দেখতে। দেখতে মন্দ না।
    মন্দ লাগছিল সেদিন বিকেলবেলা। ক’হপ্তা আগের বিকেল। দোলের আগের বিকেল।
    এ শহরে কোন দোল ছিলনা। এ শহরে কোন রঙ ছিলনা। এ শহরে তখনও রাতভরে বরফ। এ শহরে তখনও বসন্ত দূর অস্ত।
    একটু অবাক হয়েই দেখলাম, আমার বিষাদবিলাসী মন এই সত্যিকারের দু:খে তেমন সুখী হল না। মন কেমন করছিল। আমার শহরের জন্য।

  • siki | 122.162.75.33 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২২:০৪563915
  • বাহ্‌!
  • pi | 72.83.97.171 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২২:০৬563916
  • মন খারাপ করছিল। সত্যিকারের।
    আর তখনি দেখলাম।
    অপূর্ব সেই আলো।অশেষ বিকেলের। আর ঝকঝকে তকতকে আকাশে রঙের সে কি খেলা !
    কী ব্রাইটনেস। কী ক¾ট্রাস্ট। কী ভরপুর স্যাচুরেশন।অটোনের কী ভ্যারিয়েশন। হ্যু এর কী রেঞ্জ।
    লাল গোলাপী কমলা হলুদ, নীল আবীরে যত শেড হয়, স-অ-ব।অস্পেক্ট্রার স-অ-ব ফিকোয়েন্সি ছুঁয়ে গেছে। স-অ-ব।
    বসন্ত আসুক না আসুক, বসন্তোতসব এসেছে।
    এই প্রথমবার চেয়ে দেখলাম। ক্যামেরা ছাড়া।
    এই প্রথমবার ভাল লাগল। ক্যামেরা ছাড়া।
    এই প্রথমবার আমার শহরকে খুঁজে পেলাম।
    ম্যাজিক কার্পেটে চার সাগর পেরিয়ে আমার শহর এখানে ল্যাণ্ড করলো।
    নেমে এলো। সন্ধে নামার এই একটু আগে। পুব দিকে নয়,পশ্চিমেতেই।
    আমার এই পশ্চিম খোলা জানলায়।
    ম্যাজিক ! ম্যাজিক ! ম্যাজিক !
    তিন সত্তি ।
  • sayan | 98.225.180.78 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২২:২০563917
  • অসাধারণ!
  • achintyarup | 59.93.215.61 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২২:২৯563918
  • তোর চশমাটা আমায় দিবি, পাইদিদি?
  • Bratin | 117.194.101.152 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২২:৪৬563919
  • পাই অসাধারন। বলার ভাষা নেই !!
  • byaang | 122.166.145.109 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২৩:২৫563920
  • ইপিস্তাবাক্সো, কী বলি বল তো! ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার পড়ছি তোর লেখাটা। প্রতিটা লাইন মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। এই লেখাটা ভালোমন্দের বাইরে হয়েছে। ঠিক কোন শব্দ ব্যবহার করলে লেখাটা কেমন লেগেছে বোঝাতে পারবো জানি না। অনেকদিন পর এত ভালো লাগলো কোনো লেখা পড়ে।
  • kc | 89.203.49.18 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৩৪563921
  • ইপিস্তার লেখাটার প্রতিটা ভাঁজে ভাঁজে ইপিস্তারই তোলা মারকাটারি সব ছবি আছে। লেখাটার ফাঁকে ফাঁকে এইসব ছবিগুলোকে জুড়ে দিয়ে একটা ভাল দেখে বুবুভা দাও। শুনছ কি? ঈপ্সিতা?
  • pinaki | 82.209.167.222 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৫৭563922
  • পাই, অনবদ্য লেখা। এমন লেখা রোজ রোজ হাত থেকে বেরোনোর মত নয়। লাখে একটা হয়। দারুণ লাগল।

    শুধু আশা করব বুবুভায় যখন এই লেখাটা বেরোবে তখন টুইনব্রুক পার্কওয়ের বাড়ীর নাম্বারটার পাশে ব্র্যাকেটে ছোটো করে "মশামেসোর দ্বারা ভেরিফায়িত" এই কথাটা লেখা থাকবে। এক বালতি দুধে এক ফোঁটা চোনা আমাদের একেবারেই কাম্য নয়। ;-)
  • aka | 24.42.203.194 | ১১ এপ্রিল ২০১১ ০০:০৩563923
  • সেন্টু খেলে পাই বেশ ভালো লেখে তো। দিব্য হয়েছে।
  • Nina | 68.84.239.41 | ১১ এপ্রিল ২০১১ ০০:০৮563924
  • ছবির মতন লেখা না লেখার মতন ছবি?
    আজ এখানে এই আসরে ,
    কি গাইলি, তুই কবি?!
  • M | 59.93.219.249 | ১১ এপ্রিল ২০১১ ০০:১৬563926
  • ইসে, ছবি সংক্রান্ত বেশীর ভাগ জিনিস ক্যামন মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যায় কিনা, তাই একটু সংকোচ কচ্ছিলাম,তা বেশ ভালো লেগেছে, কিন্তু তুমি রোজ না আসতে পারো, মাঝে সাঝে এমন লেখা দিলে সে সব নিয়ে আর ভাব্বোনা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন