এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফেসবুক থেকে কিছু পুরনো লেখা

    sosen
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১২ | ১৮০০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 78.48.231.217 | ২৭ মার্চ ২০১৩ ২০:২৬570157
  • লেখো, লেখো !
  • raatri | 24.99.246.25 | ২৭ মার্চ ২০১৩ ২০:৪৬570158
  • সোসেন,
    স্যালুট!!
  • শঙ্কু | 127.199.29.158 | ২৭ মার্চ ২০১৩ ২১:২৭570159
  • সোসেনদি (দিদিই হবেন, কেননা আমার স্মরণকাল বাসভাড়া ২০ পয়সার যুগের) যে সংগ্রামের গল্প শোনাচ্ছেন, তা পড়তে গিয়ে খুব অসুবিধে হচ্ছে। বারবার চোখ ঝাপ্সা হয়ে গেলে অসুবিধে হবে না? প্রতিটা অক্ষর থেকে এখনও যেন রক্ত ঝরছে।
    আমরা সবাই দুঃখ ভুলতে চাই। তুমি তোমার পুরনো ক্ষতগুলো কি করে এতো মমতায় আবার উস্কে দিচ্ছ সোসেনদি? এতটা নান্দনিক অনুভবে?
    সোসেনদি আজ নিশ্চই এই সংগ্রামে বিজয়িনী। যারা আজ এই সংগ্রাম চালাচ্ছেন, তারা এই লেখা থেকে পাবে প্রেরণা। আর আমরা যারা জীবনের এই রূপ দেখিনি, তারা সঙ্কুচিত হচ্ছি এই ভেবে যে অজান্তে কত অকিঞ্চিৎকর কারণে ভাগ্যকে দোষারোপ করেছি।
    সোসেনদি, তোমার হয়তো কষ্ট হবে জানি। কিন্তু তুমি থেমো না প্লীজ। অন্তত তোমার কলমে রক্তক্ষরণ থেকে মধুক্ষরণের উত্তরণ না দেখিয়ে। যখন একটানা পড়তে পারবো তোমার লেখা, চশমার কাচ না মুছে...
  • sosen | 125.241.27.61 | ২৭ মার্চ ২০১৩ ২১:৪৩570160
  • তাই বলে এ এক গরিবানা যুদ্ধের গল্প নয়। জীবনের আর কতটাই বা যুদ্ধ হতে পারে? এ এক চেনার গল্প। চিনতে চিনতে যাওয়া , ছুঁতে ছুঁতে যাওয়া। আর্তনাদের গতিমুখ ভিতরপানে ঘুরিয়ে দিলে বদলে যায় সব চরিতকথা। একবার সয়ে গেলেই কেমন সব চোখে পড়তে থাকে। কান্না, আনন্দ, ঘেন্না, অসহায়তা, ক্ষমা সব রেজরের আগায় এসে বসে, ক্ষুরধার হয়ে ওঠে বোধ।

    অনাবিষ্কৃত সাম্রাজ্য এক। দিগন্তের এপার ওপার ছোঁয়া ধানক্ষেত। তার মাঝে মাঝে আল। বর্ষায় তার শিশুরা লকলক করে বেড়ে উঠেছে সে এক অচেনা সবুজ গায়ে মেখে। ঝড় উঠলে আমে আর শিলে মাখামাখি হয়ে যায় মাঠের চৌপাশ। আস্তে আস্তে খসখসে কালো চামড়ার মুখগুলো চরিত্র পায়। নাম পায়। হাসিগুলো মিষ্টি লাগে। পাশের বাড়িতে শুভকাকুর বুড়ো মা ডাকেন , হাত ভরে গাছের আম তুলে দেন। গরু পুষিয়ে নিমাইজেঠু বাবার সঙ্গে আড্ডা জমাতে আসে, সান্ত্বনা দেয়। মা কতকগুলো নেহাত ই ফেলকুটে কাচ্চাবাচ্চাকে পড়ায়, ১৫ টাকা, ২০ টাকা মাইনে পায়। এক হিন্দুস্থানী বাচ্চা বছর বছর এক ক্লাসে থাকে, দ্বিতীয় শ্রেণী । তার সুর করে "কাটুকুটু" বুড়োর কাছে যেওনা খবদ্দার - শুনতে শুনতে ভারী কাতুকুতু পায়, ফিক ফিক করে হাসি।

    শেষ কড়িটুকু খরচা করে বানানো বাবার ভাটি উত্তাপ ধরে রাখতে পারে না। কাজ হয় না তাতে। ডিজাইন বদলানো দরকার হয়ে পড়ে । বাবা প্রায় ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়, বলে "আর কিছু হবে না। আর পারব না"। মাঝরাতে উঠে আমি বাবার পিঠে হাত রেখে বলি-" হবে। পারবে, আমি তো আছি। " বিড়বিড় করে নিজেকে বলতে থাকি "আমি আছি। আমি আছি। ভয় নেই। " কে এই আমি? মাঝখান দিয়ে নিজেকে চিরে ফেলে আমি একা দু'জন হয়ে উঠি, নৈলে কি করেই বা বাঁচি, কি করেই বা বাঁচাই।

    এক লাইব্রেরি খুঁজে বার করা যায়, তিন চার বাস স্টপেজ দূরে। ধান খেতের আল, ইঁটের খোলাকাটা পুকুর এসবের মধ্য দিয়ে এক স্বপ্নরাজ্য হাঁটলে পৌঁছনো যায় সেখানে। কত কিছু দেখতে পাই সে হাঁটার পথে। তিন বৃদ্ধ-প্রায় বোনের বাড়ি। গরু পোষে তারা, দুধ বিক্রি করে। তিনজনেই ফ্রক পরে, সাদা চুল, ভারী থতমত খাই তাদের দেখে। তারা কারোর দিকে তাকায় না, শুধু কাজ করে। হাসে না। কথা বললে শুধু গরুদের সঙ্গে বলে। অনেক পরে জানি, তারা তিনজনেই কোনো অসুখে বধির হয়ে গেছে ধীরে ধীরে। সেদিন মনে হয়, যেন শাপভ্রষ্ট তিন রাজকন্যা তারা। তাদের নয়নতারার বেড়া ওলা বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে মনে হয়, এই নিরবধি কর্মধারার কি এক সুরভি যেন ছেয়ে রয়েছে উঠোন।

    বাড়ি ফিরলে শুনি, জানলার পাল্লা লাগানো হয়েছে , সেও তো ধারে, তারই পাওনাদারেরা এসে বাবাকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালিগালাজ করে গেছে। আমাদের অঙ্গের ভূষণ হয়ে ওঠে এইসব তুচ্ছতা। সেই সব সয়েই হাসতে চেষ্টা করি, তারপর ঠোঁট শক্ত হয়ে যায়। জিভ নড়ে না।
    ভারসাম্য কে-ই বা কবে বজায় রাখতে পেরেছে? তাই একটিমাত্র ঘরের দারিদ্রে মা বাবা কে কখনো অন্তরঙ্গ হতে দেখলে রাগ হয়, ঘেন্না হয়, আবার কবিতা আমায় সুস্থ করে ওষুধের মত, শান্তিধারার মত, আমি এদিক ওদিক হয়েও আবার ফিরে আসি বোধের অবয়বে। দারিদ্র্য আমায় দেয় যে কোনো মোজায় পা গলিয়ে শান্ত থাকার স্থৈর্য্য, আবার শুষে নেয় শিশুবেলার টলটলে জল, বুকের ভেতর থেকে , নি:শেষে। বুঝে পাইনা, কোনটা ক্ষয় আর কোনটা বর্ম।
  • sosen | 125.241.27.61 | ২৭ মার্চ ২০১৩ ২১:৪৫570161
  • শঙ্কু, বাসভাড়া ছিল বোধহয় ৪০ পয়সা, স্টুডেন্ট কনসেশন ১০ পয়সা। পঞ্চায়েত এলাকায় এসব সুবিধা খুবই মিলত।
  • শঙ্কু | 127.199.29.158 | ২৭ মার্চ ২০১৩ ২১:৫১570162
  • তাহলেও আপনি আমার দিদি...
  • I | 24.96.50.10 | ২৭ মার্চ ২০১৩ ২৩:০৯570163
  • আহ....
    কঠিন কাজ !
  • achintyarup | 24.96.116.215 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ০৩:৫৭570164
  • তারপর?
  • aranya | 154.160.130.16 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১০:৩৮570165
  • কি অদ্ভুত লেখা, কি কষ্ট, কষ্টের দিনযাপন, লড়াই। আমার ছোটবেলায় একটাই কষ্ট ছিল, খুব অল্পবয়স থেকেই বাবা-কে অসুস্থ দেখেছি, পারকিনসন্স ডিজিজ, যা সময়ের সাথে আরও খারাপ হতে থাকে, খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মত আমার বিজ্ঞানী, লড়ুয়ে বাবা, ডান হাত অচল হয়ে যাওয়ার পর একদিন যিনি নতুন করে বাঁ হাতে লেখা প্র্যাকটিস করেন, আর বাঁ হাতেই গাব্দা এক ডিএসসি থিসিস লেখেন, সেই মানুষ, একা ট্রেনে চেপে ভেলোরে গিয়ে যিনি অপারেশন করান, বাঁ হাতের মুভমেন্ট-ও যখন স্লো হয়ে যেতে থাকে, যেতেই থাকে, তখন সাধু সন্তের ম্যাজিকের দিকে ঝোঁকেন। ন্যারোগেজ ট্রেনে চেপে আমরা শিয়াখালায় যাই কোন সাধুর ওষুধের জন্য, তারকেশ্বরে যাই মহেশ্বরের কৃপাপ্রার্থী হয়ে, দূর গ্রামে যাই কোন সাধ্বী মাতার চরণামৃত নিতে।
    এই সব মনে পড়ে গেল, আর চোখ ঝাপসা হল, যদিও বয়স্ক মানুষদের কাঁদতে নেই।
    পৃথিবীর সব শিশু, কিশোরদের ছোটবেলাটা ঝলমলে করে দাও- ঈশ্বর বলে কেউ থাকলে, তার কাছে এই আর্জি থাকবে।
  • san | 69.144.58.2 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১১:০৪569775
  • সোসেনদি ঃ-(
  • siki | 132.177.166.48 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১১:০৬569776
  • সোসেন, লেখো।

    পড়ছি।
  • san | 69.144.58.2 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১১:১০569778
  • " আর আমরা যারা জীবনের এই রূপ দেখিনি, তারা সঙ্কুচিত হচ্ছি এই ভেবে যে অজান্তে কত অকিঞ্চিৎকর কারণে ভাগ্যকে দোষারোপ করেছি।
    ----- আরেকবার টুকে দিয়ে গেলাম। মানে ওটাই বলতাম।
  • san | 69.144.58.2 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১১:১০569777
  • " আর আমরা যারা জীবনের এই রূপ দেখিনি, তারা সঙ্কুচিত হচ্ছি এই ভেবে যে অজান্তে কত অকিঞ্চিৎকর কারণে ভাগ্যকে দোষারোপ করেছি।
    ----- আরেকবার টুকে দিয়ে গেলাম। মানে ওটাই বলতাম।
  • sosen | 24.139.199.1 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১১:৪৩569779
  • আমি দেখতে পেতে শুরু করি। এদ্দিন যেন অন্ধ ছিলাম। যে সব জীবনকথা গল্পের বই -এ পড়েছি, যে সব অনুভূতি শুধু লেখায় আসতে পারে ভেবেছি, সে সব চতুর্দিকে বুনো ঘাসফুলের মত, রক্তকমলের মত, ফেলা কুমড়োর বীজ থেকে হঠাত মাথা তোলা চারাগাছের মত হুর্মুড়িয়ে ছুটে আসে। কত রং, কত গন্ধ , শব্দ, স্পর্শ। চামড়া গন্ধ পেতে শুরু করে, শব্দ ছবি নিয়ে আসে। থৈ পাই না কেমন।

    ঝড় উঠলে লাল্টুর মা দৌড়ে গরুদের ঘরে ফেরাতে যায়। মাঠের পানে যে যায় তাকেই বলে " লালীরে দ্যাখলে পাঠাইয়া দিস তো! " লালী এক করুনাক্ষী সদ্য -মা গরু, তাকে কোন ভাষায় বললে সে ঘরে ফিরে আসবে , সে আমি বুঝেই পাই না। কিন্তু খানিক বাদে দুলে দুলে তাকে ঘরে ফিরে আসতে দেখি। কি ভাষা সে বোঝে কে জানে!

    এ দিগরে অশেষ ফুলের গাছ। আস্তে আস্তে আমাদের ঘরের চারপাশে লাগানো গাছগুলিও বেড়ে ওঠে। ঝাড়ালো টগর, কাঞ্চন , একটা কাগজি লেবুর গাছ। আমি পাঁচটার সময় উঠে পড়ি, এবাড়ি ওবাড়ি থেকে ফুল তুলে আনি সাজি ভরে। টগরের একটু মাংসল, নরম সাদা পাপড়ি যেন শিশুর ঠোঁট, আমার সদ্য জন্মানো ভাইয়ের ঠোঁটের কথা মনে পড়ে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রাণ জুড়োয়। বাড়ির সীমায় আছে এক হাজারী নারকোলের গাছ। তাতে সারা বছর ছোট ছোট নারকেল হয়, কি তার স্বাদ! একটা খেজুর গাছ ভরে উজ্জল কমলা রঙের খেজুর হয়, মিষ্টি, ছেলেমেয়েরা কুড়োতে আসে। আমাদের ও কুড়িয়ে দিয়ে যায়। ফেলে দেওয়া লাউ কুমড়োর বীজ থেকে টিনের চালা ভরে গাছ হয়, যেমন সুস্বাদু শাক, তেমন ফল। তেমনি গাছের ছায়ায় টিনের দুরন্ত গরম একটু কম পাই। একটা সাদা শিমের গাছ ধরে, তার ফুলগুলি যেন উড়ন্ত হাঁস। সহসা নিজেকে ভীষণ ধনী মনে হয়, বুকের ভিতর ভ্রমর কৌটো বয়ে বেড়াই, নিশ্চুপ।

    তাই বলে ঝড় ভুলে যায় না। বড় ঝড় তো বড়, আমার আছে ছোট ছোট ডুবন-পুকুর। হঠাত হঠাত তাতে ঘূর্ণি পাক দেয়। ছোট্ট পৃথিবী উলট পালট হয়ে যায় তাতে।
    ইস্কুল থেকে বেরোবার সময় হঠাত আমাকে গেটের বাইরে খপ করে ধরে ফেলে কেউ। ফিরে তাকিয়ে মুখ শুকিয়ে যায়। ছোটরেখাদি।
    যারা ছোটরেখাদিকে চেনেননা, তাঁরা বুঝবেন না সে কি মহাতঙ্ক। তিনি ইস্কুলের হিটলার বললেও অত্যুক্তি হয়না। কিন্তু, আমি কি করেছি? মাথার এধার ওধার খুঁজে কিচ্ছু পাইনা, ফাঁকা সব।
    "এই যে শোন, তোর নাম সোনালী?'
    ঘাড় নাড়ে বোবা পুতুল।
    "তুই হরির বাসে যেতিস? "
    যে ইস্কুল-গাড়িতে যেতাম আগে, সেটি প্রাইভেট, তার ড্রাইভারের নাম হরিকাকু। আবার ঘাড় নাড়ি, আতঙ্কে শক্ত ঘাড়।
    " মাইনে বাকি তোর হরির বাসের, জানিস? সাত মাসের মাইনে বাকি। বাবাকে গিয়ে বলবি, শিগগির মাইনে না দিলে ইস্কুল থেকে নাম কেটে দেবে বলেছেন দিদি। কি বলবি, বুঝেছিস? " সঙ্গে সঙ্গে চুলে টান পড়ে একটু।
    জীবনেও স্কুলে মার খাইনি আমি, কখনো শাস্তিও পাইনি। চোখ জ্বালা করতে থাকে, ছোটরেখাদির হুমকি কত অর্বাচীন তা বোঝার শক্তি আমার নেই। তিনি যে এইরকম বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বাসের মালিক, এটাই যে ওঁর ব্যবসা তা আমি কি জানি?
    কাকে বলব? বাবাকে? নুয়ে যাওয়া দীর্ঘ শরীর , যে হাত থেকে রোজ ৫০-৬০ পয়সা বাস ভাড়া নিয়ে যেতেও আমার কষ্ট হয়? কাকে বলব, মা? মা, জীবনে মাটির ঘর না দেখা, না-ইলেকটিরি রাত না দেখা, সেই কালে অঙ্কে লেটার পাওয়া, তুখোড় বিজ্ঞানের ছাত্রী মা , যে ১৫-২০ টাকার জন্য হ্যারিকেনের আলোয় এই পাঠশালা -শিশুদের পড়ায়? আমি তো জানিও না, কত টাকা বাসের মাইনে বাকি আমার? ইস্কুল থেকে বার করে দিলে কি হবে আমার পড়াশুনোর, কি হবে আমার বাঁচবার, বাঁচানোর, আমার নিজস্ব জগত্টুকুর?

    হা হা শব্দে কান্না পায় আমার, অচেনা কাজীপাড়ার এক রাস্তা দিয়ে না শিশু , না বড় পায়ে, জলে অন্ধ চোখে হন হন করে হাঁটতে থাকি। বাড়ি যাবার কথা মনে পড়ে না। কেন, কেন নিয়ে নেবে ওরা আমার পৃথিবী, কি করেছি আমি? কি করেছি?
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১২:৫১569780
  • সোসেন-দি কিছুই বলার নেই, পড়ছি আর অসম্ভব ভালো লাগছে আর গলার কাছে কি একটা যেন হচ্ছে সেটুকু জানিয়ে গেলাম,
    আপনার লেখা নিয়ে কিছু বলার ধৃষ্টতা আমি করব না।
  • মৌ | 24.99.48.233 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১৩:১৬569781
  • অদ্ভুত সুন্দর লেখা। এক নিঃশ্বাসে সব পড়ে গেলাম। জ্বালাময়ী সময়ের উপর কলমের মলম কি ভাবে দিতে হয় তা আস্তে আস্তে শিখছি।
  • sch | 132.160.114.140 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১৩:২৩569782
  • কিছু বলতেও ইচ্ছে করছে - কিন্তু কি বলবো - এটা তো ভাষার প্যাকেটে মোড়া বুদ্ধির চানাচুর না - একদম নিজস্ব উপলব্ধি = প্রাণের প্রতি তন্ত্রী ছুঁয়ে যাওয়া স্মৃতি রোমন্থন -সোসেন, প্রার্থনা করি আপনি অনেক ভালো থাকুন - অনেক অনেক ভালো আর
    স্মৃতিরা আপনাকে পড়াই করার শক্তি যোগাক -
  • dukhe | 212.54.74.119 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১৩:৪০569783
  • অনবদ্য।
    চলুক।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১৪:১৬569784
  • পড়ছি, লিখতে থাকো।
  • bb | 24.96.29.44 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১৪:২৭569786
  • বাপরে এই মেয়েকে শুধু সেলামই জানাতে পারি। বয়েসে অনেক ছোটো হলেও শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে এতটুকু জীবনে এতটা পথ অতিক্রম করার জন্য।
  • jhumjhumi | 127.194.245.201 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১৫:৩৫569787
  • পুরো লেখাটা পড়্লাম।
    কি বলবো !!
    তোমার লেখা চলুক, আমরা শুধু পড়ি।
  • pipi | 139.74.191.152 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ১৯:২৪569788
  • সোসেন, কি বলব জানি না। বেশ কিছু জিনিস খুব চেনা লাগছে। হাত ধরে রইলাম।
  • sosen | 125.242.196.254 | ২৮ মার্চ ২০১৩ ২০:৪৪569789
  • আমার কেন যেন কিছুই নেই। কানে রয়েছে ক্লাস ওয়ানের একখানা সরু ফিনফিনে রুপোর রিং, সে এতই ছোট, আর ছ'বছরে আমি এতই বেড়ে গেছি, যে সেখানা আমার কানকে কেটে বসে। সেইটা খুলে আঙ্গুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমি ভাবি, আচ্ছা, এটার বদলে একটা সোনার দুল থাকলে কেমন হত? সেইটা বিক্রি করলে নিশ্চয় বাসের মাইনে দেওয়া যায়।
    নেই যা, নেই। বাবা হ্যারিকেনের আলোয় ঝুঁকে নতুন নকশা আঁকে। মার ছায়া কুপির শিখায় দুলে দুলে রান্নাবান্না করে। আমি খাতায় লিখি, পালাও। পালানো আমার আছে। অক্ষর আমার আছে।

    কাঁটা হয়ে থাকি আমি, পাছে রেখাদি আমায় বার করে দেন। যদি স্কুলের অন্য মেয়েদের সামনে কিছু বলেন আমায়? সেই অপমানের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে আমার। বুকের তলায় একটা জায়গায় চাপ চাপ ব্যথা বাসা বাঁধে। এমনিই প্রায়ই জ্বর হয় আমার, বাবা হোমিওপ্যথিক ওষুধ আনে। চোখের পাতা ফাঁক করে দেখলে অনেক সাদা ছোপ দেখতে পান ডাক্তারবাবু, রক্তশূন্যতা। অপুষ্টি কিছুটা।

    আমি পালাতে শুরু করি। রেখাদিকে দেখলেই অন্যদিকে। কিন্তু আবার আমাকে ধরে ফেলেন তিনি ক্লাস টেনের বারান্দায় । আবার শাসান।
    আমি বলার চেষ্টা করি, যে আমাদের টাকার অভাব, টাকার যোগাড় হলেই, ঠিক------, কিন্তু তার আগেই, আমার গালে ঠাস করে এক চড় কষান তিনি-"ফের মুখে মুখে তর্ক" বলে।

    আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। চোখ জ্বালা করে , গালে লাল পাঁচ আঙ্গুলের দাগ। কোমর থেকে রুমাল খুলে, তাতে আঙ্গুল মুছে উনি হেঁটে চলে যান, যেন আমার নরম গালে কোনো নোংরা লেগে ছিল। আমার হাতে ভূগোল উইকলি টেস্টের খাতা, দ্যুতিদির হাতে এক্ষুনি হায়েস্ট পেয়েছি , সেই আনন্দ মুখে জ্বলজ্বল করছিল, জানিনা তার উপর লাল কেমন খোলে। আমি ক্লাসরুমে ফিরে আসি।

    সেভেনের যে জানলার পাশে আমি বসি তার পাশে ভুটান হাউস। সেখানে পাখিদের বিরাট আড্ডাখানা। সেই জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি আমি। আমার চট চট ছেঁড়া মত ব্যাগ, পুরনো পেন্সিলবাক্সো, তাতে চকচকে স্টিকার লাগানো, এরা আমাকে গভীর মমতায় দেখে। ভুটান হাউসের ভেন্টিলেটরের মধ্যে দুটো শালিক এদিক ওদিক তুরুক তুরুক লাফায়। সেই দেখতে দেখতে আমি শক্ত হয়ে বসতে থাকি।

    ছুটির পর আমি হরিকাকুকে খুঁজে বার করি। হরিকাকু আমায় দেখে বোধহয় আশা পায়, টাকা নিয়ে এসেছি আমি।
    আমি জিগ্গেস করি, কাকু, কত টাকা পাও তুমি, বাবার কাছে?
    কাকুর মুখস্থ -চারশ কুড়ি টাকা।
    আমার আটকে আটকে যাওয়া গলা কেমন শক্ত করার চেষ্টা করি আমি-আর আমার মুখ দিয়ে অন্য কেউ স্থিত শান্ত স্বরে বলে " কাকু, বাবা তোমাদের টাকা ঠিক দিয়ে দেবে, কিন্তু একটু সময় লাগবে; আমি তো স্কুলেই থাকব, আমি ঠিক দিয়ে দেব। আমাদের খুব অসুবিধা যাচ্ছে এখন, তুমি রেখাদিকে বল, আমরা দিয়ে দেব ঠিক। উনি যেন আমাকে আর না মারেন।"

    হরিকাকু চমকে ওঠে -দিদি মেরেছেন তোমায়?
    চারদিক থেকে চেনা মেয়েরা দৌড়ে বাসে উঠছে, তাদের দিকে তাকিয়ে আমি ক্লান্ত , অনেক বড় হয়ে যাওয়া গলায় বলি " হ্যা, কিন্তু সে ঠিক আছে। শুধু তুমি ওনাকে বলে দেবে একটু? "

    বাসে উঠে যেতে যেতে হরিকাকুর মুখে একটা ব্যথার ছোপ লাগে, ঘাড় কাত করে কাকু।

    না, ব্যথার গল্প নয় এই সবটাই। আমিই একমাত্র দুর্ভাগা, এমন তো নয়, সেই বোধ জন্ম নেয় ধীরে ধীরে পাখনা-মেলা কুঁড়ির ভিতর। নিজেকে করুণা করার কামড় থেকে জোর শক্ত হাতে দুই টুঁটি খুলে আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। এমন হয়, এমন হতেই পারে , মন্ত্রের মত বলতে বলতে আমি চোখ খুলে দেখতে পাই, আমার পুরনো পৃথিবী ছাড়াও আছে পৃথিবী। সেখানেও মানুষ দিব্বি বাঁচে। চারদিকে আমাদের মতই সব মানুষজন। অনেকের বাড়িই টিভি নেই, কারেন্ট নেই, অর্থ নেই, স্বাস্থ্য নেই। আমার আছে এক সব পেয়েছির দেশ, অক্ষর, আমার আছে পথের অনিবার্য নিশানা। না: এদের তা-ও নেই। সন্ধ্যার অন্ধকারে মাঠে মাদুর পেতে , কোনা-ঘুপচি খুঁজে রমণে মেতে ওঠে নরনারী, সামনের উঠোনে পড়তে পড়তে দেখতে পাই । শিশু নেমে আসে পৃথিবীতে। অক্ষর পরিচয় হয়, কি হয়না, চার অক্ষর শব্দে ভরে ওঠে ঝুলি। ক্ষুদ্র এদের গন্ডিতে বই নেই, গান নেই, টিনটিন বা শার্লক হোমস নেই। ১৩-১৪ বয়সে মেয়েগুলি বিয়ে করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে, যাকে পায় তাকেই জড়িয়ে ধরে লতানে গাছের মত; উচ্চ ফলন হার, ফলগুলি শুষ্ক, রুগ্ন , ক্রন্দসী । বছরে একবার ম্যারাপ বেঁধে পর্দায় সিনেমা দেখানো হয়, সেখানে দেখতে পাই সাজন। তার আবার সিজন টিকিট হয়। সামাজিক যাত্রা হয়, লোকে দল বেঁধে দেখেও। এ আমার অচেনা , কিন্তু প্রবল ভাবে বর্তমান এক জগত।

    এখানে রাজনীতির রং লাল, অকাট্য, প্রশ্নহীন লাল। সন্ধ্যার পর উঠোনে বসে রাজনৈতিক আড্ডার আসর। অধিকাংশ মানুষ রিফিউজি, আনুগত্য তাদের সুবিধার প্রতি। তত্ত্বকথা তারা বোঝে না, বোঝে মার্ক্সের ও লেনিনের ছবিতে মালা দিলে পঞ্চায়েত আপিসে চাকরি হতে পারে, এইট পাসের সাট্টিফিকেট মিলতে পারে ব্রিগেড গেলে নিয়মিত; স্কুল যাওয়ার দরকার পড়ে না , জমির দালালিতে মিলতে পারে লভ্যাংশ। আমার ইস্কুল আর বাড়ির মধ্যে এক খাড়াই দূরত্ব তৈরী হয়। কেউ পড়েনা অন্য দুনিয়ার খবরের কাগজ। দুই পৃথিবীর মধ্যে মুখোশ অদল-বদল করে ঘুরতে ঘুরতে আমার শৈশব সহসা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে।
  • achintyarup | 125.111.248.6 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ০০:৫২569790
  • তারপর?
  • bhagidaar | 218.107.178.181 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ০৯:০১569791
  • সোসেন-এর টাইপ করার হাতে তিনটে-পাঁচটা চুমু!
    এ তোমাদের ওই বাজার-চলতি "ফেলে-চুমু"-র থেকে অনেক উপাদেয়!
  • sosen | 125.241.22.138 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৯:০০569792
  • ভাগীদারকে একগাল হাসি দিলাম।
    চিন্তুবাবুর টই গুলিতে, "তারপর ?"লেখার ভলান্টিয়ার চাই। হ্যায় কোই?
  • sch | 132.160.114.140 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৯:২১569793
  • আপনি কি ব্যাসদেব হয়ে একটা গণেশ চাইছেন ঃ)
  • siki | 132.177.254.141 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৯:২৭569794
  • চিন্টুবাবু আপাতত গোল্লায় যাক।

    তারপর?
  • aranya | 154.160.226.53 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ২১:৩৩569795
  • 'তিনটে-পাঁচটা চুমু' কোন গল্পে আছে, কে বলতে পারবে ? সহজ প্রশ্ন।
  • sosen | 125.241.22.138 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ২১:৪০569797
  • হিন্ট: শরদিন্দু। বোঝাই যাচ্ছে , আমি জানি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন