এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফেসবুক থেকে কিছু পুরনো লেখা

    sosen
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১২ | ১৭৯৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | 125.241.111.218 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১২:০২569898
  • গোটাটাই অপিসে বসে পড়ে ফেললাম।
    এক হিসাবে, এটাই এই লেখাটা পড়ার ঠিকঠাক জায়গা। নইলে পড়তে পারতাম নারে। ঝাপসা চোখে পড়া যায় নাকি কিছু। ভাগ্যিস অপিস ছিলো।
  • sosen | 111.63.185.22 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১৩:৫৩569899
  • ঝাড়গ্রাম থেকে দক্ষিণমুখী এগিয়ে গেলে ১০-১২ কিমি দূরে চিল্কিগড় রাজবাড়ি। আর চিল্কিগড় ও ডুলুং নদীর মাঝ বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যে অরণ্য তার-ই নাম জঙ্গলমহল, জামবনী থেকে শালবনী অবধি বিস্তৃত। নদী পেরিয়ে গেলে জাগ্রত দেবী কনকদুর্গার মন্দির। হাড়িকাঠে লেগে রয়েছে সিঁদুর। পুরনো ভগ্নপ্রায় মন্দিরের পাশে একটি নতুন দালান করে মন্দির করা হয়েছে। যতবার-ই নাকি অশ্বারোহিনী চতুর্ভুজা দেবীকে নতুন মন্দিরে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়, কোনো না কোনো বিপর্যয় ঘটে, মারা যায় রাজবংশ বা পুরোহিত বংশের কেউ। দুটি বাস্তু দুধ-গোখরো ও কমল-গোখরো সপরিবারে বাস করে পুরনো মন্দিরে। দরজা খোলা ছিল, উঁকি দিতেই সপাটে একটি লেজ সরে গেল। মন্দিরের লোধা রক্ষক জানালো ওরা কাউকে কামড়ায় না। তবে এই জঙ্গলে বিষাক্ত সাপ খুব। বিছে-ও। সবাই ঢাকা জুতো বা স্নিকার পরেছে, ভয়ের তেমন কিছু নেই, শুধু আমারি পায়ে সবেধন নীলমণি রবারের বেল্ট বাঁধা জুতো। একটু ভয়ে ভয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটি। গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে এক রকম ছোট ছোট বাঁদর। তারা অনর্থক হুকুহুকু করে, খুব চঞ্চল প্রকৃতির। নদীতে পায়ের পাতা ডোবা জল, কিন্তু বর্ষায় নাকি মানুষ ডুবে যায় এমন জল হয়, খুউব ঘূর্ণি। এখন শান্ত মনে ছোট ছোট পাথর নুড়ি, সাদা চিকচিকে বালি নিয়ে কুলকুলিয়ে বয়ে যায় ডুলুং সুবনসিরিতে মিশতে। ঠান্ডা-গরম মেশা জল, পা ডুবুলে ছ্যাঁত করে ওঠে, তার নিচে পষ্ট দেখা যায় লাল শ্যাওলা, আর বেশ কিছু কারা( Chara), তার রসুন-রসুন আঁশটে গন্ধ জলে ছড়িয়ে। ছোট ছোট মাছ-ও। লতানো বাউহিনিয়ার কাষ্ঠল কান্ড থেকে ফার্ন ঝোলে। নিচু হয়ে ব্যাঙের ছাতা তুলতে গিয়ে মাথা ঠুকে যায় একে অন্যের সাথে আর তারপর কুলকুল হাসি। এ জঙ্গল বহু-বিস্তৃত, কিন্তু ঘন নয়। মাঝে মাঝে সাঁওতাল, লোধা , মুন্ডা দের বসতি, তার কাছে কাছেই অল্প অল্প জমি চাষের জন্য পরিষ্কার করা, আর ট্যুরিস্টদের ভাতের হোটেল। সেসব এখন আর আছে কিনা কে জানে। এরম একটি হোটেলে আমরা লাঞ্চ করতে বসি, মোটা লাল চালের ভাত, জলের মত কলাই ডাল, অতি সুস্বাদু, আর ভয়াবহ ঝাল আলু পোস্ত ও মাছের ঝোল দিয়ে। তার লঙ্কা বাটার লাল ফ্লেকগুলি ভাতের মধ্যে পষ্ট দেখা যায়। ঝালে হুস হাস করতে করতে তাই খেয়ে উঠি, সঙ্গে সদ্য কুয়ো থেকে তোলা জল।
    হাতে আমাদের রাশিকৃত প্লাস্টিকের প্যাকেট, তার মধ্যে মুড়ো ধরে নিষ্ঠুরভাবে উপড়ে আনা গাছের স্পেসিমেন। এই সময়ে, দিদিরা আমাদের একা ছেড়ে দিয়ে একটু বসে পড়েন। ঘুম ঘুম চোখে দুই দলে ভাগ হয়ে যেতে হয়, আর দল ভাগাভাগি নিয়ে ইষৎ রাগারাগি হয়ে যায় আমাদের মধ্যে । সকাল থেকে একটু একটু মন খারাপ আমার আর গাছ তুলতে ইচ্ছে করে না। সবাই যখন হাঁটতে যায়, আমি বসে থাকি জিপে, মাথা নিচু করে। বাংলাদেশ থেকে আসা উজ্জ্বল আমায় জরিপ করে দেখে জিগ্যেস করে -"তুমি কি কান্না করসো? কান্না কোরো না। " আমি ফিক করে হেসে ফেলি। গাছের প্যাকেট জিপে রেখে দিয়ে আমি আর উজ্জ্বল হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ডুলুং-এর পার ধরে বেশ অনেক দূর। ঢাকার ছেলে উজ্জ্বল অল্প টান-অলা বাংলায় আমায় তাদের দেশের নদীরা যে কত সুন্দর সেই গল্প শোনায়, বলে এমন জঙ্গল সেখানে তত নাই। নদীর ধারে বাজার বসে। আমি তাকে বলি যশোরকাঠিতে আমার বাবার পূর্বতন বাড়ি, বরিশালে। সে জিজ্ঞেস করে , কেউ আসে সেখানে? কেউ নাই কেউ নাই, বাবার মুখে যশোরকাঠি নামটুকুই শুধু শুনেছি, তবু না দেখা দেশের জন্য একটু কেমন কেমন লাগে। সেখানে অনেক সেনগুপ্ত পরিবার ছিলেন, বাবা বলেছিল।
    পকেট থেকে একটা বাংলাদেশী দশটাকার নোট বার করে তার সাদা অংশে উজ্জ্বল লেখে গুড উইশেস ফ্রম উজ্জ্বল, বাংলাদেশ। আমি সেটা আমার ব্যাগে রেখে দিই। আমার দশটাকা মহামূল্যবান, সে তো অমন করে দেওয়া সম্ভব নয়, বাঁধানো খাতার পাতা ছিঁড়ে আঁকাগুলি দেব কি না ভাবি। তার পর ভাবি থাক, পরে নয় ভালো করে কার্ডে এঁকে দেব।
    সে আর দেওয়া হয়নি অবশ্য। ক্লান্ত খুশি খুশি পায়ে হেঁটে জিপের কাছে পৌঁছে অমন করে না বলে যাওয়ার জন্য একদফা বকুনি-ও খাই দিদিদের কাছে। সে খুব একটা গায়ে লাগেনা। অন্যেরা ততক্ষণে ফিরে এসেছে। লাল ধুলোর রাস্তা বেয়ে, ভাঙ্গা চিল্কিগড় রাজবাড়ি দেখে আমরা ফিরে আসি ঝাড়গ্রাম। তখন আলো পড়ে এসেছে।
  • sosen | 111.63.185.22 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১৪:০৩569900
  • সুবন্শিরি না, সুবর্ণরেখা পড়ুন। দু:খিত। সুবন্শিরি আসামে বোধহয়।
  • Pragati | 126.68.78.62 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১৪:২৭569901
  • এক নিঃশ্বাসে পড়া হয়ে যায়, কিন্তু অনেকক্ষণ মনের মধ্যে বুড়বুড়ি কাটে ছোটো ছোটো ছবির বুদ্বুদ।

    ভীষণ ভালো।
  • sosen | 125.241.89.203 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১৮:৩৬569902
  • কথায় বলে দুটি ঘটিবাটি একসাথে থাকলে ঠোকাঠুকি লাগে। আর এগারোটা মেয়ে একসঙ্গে থাকলে ঝগড়া লাগবে না ? সদ্য ইস্কুল থেকে বেরোনো সেই সব বেথুনিয়াদের মধ্যেও ঝগড়া ঝাঁটি লাগে বৈকি। কি নিয়ে যে লাগে সেইটে বেচারা আমি সঠিক জানিনে। স্নান করতে গিয়েছিলাম। বেরিয়ে এসে দেখি রাত-বিরেতে তুমুল চেঁচামেচি। কারোর বক্তব্যের মর্মোদ্ধার করা যাচ্ছে না। লেগেছিল দু চার জনের মধ্যেই, তাদের এখন তা মনে করিয়ে দিলে হেসে ফেলবে অবশ্যই, কিন্তু তখন দৃশ্যটা এইরকম, দু তিনজন রেগে মেগে তর্কাতর্কি করছে, দু তিনজন উর্দ্ধমুখে ছল ছল চোখে তা শুনছে, বাকিরা থামানোর চেষ্টা করছে, শ্রুতি বাইরে হনহনিয়ে পায়চারি করছে, ঘরের দরজা খোলা। আমি খানিকক্ষণ ব্যাপারখানা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু হঠাত-ই সব থেমে গেল তিতাস হাপুস নয়নে কেঁদে ওঠায় " ওরে তোরা আর ঝগড়া করিস না, আমার যে ভাইটামণির জন্য ভীষণ মন খারাপ করছে এ এ ভীষণ কান্না পাচ্ছে এ এ "
    এই প্রবল হাস্য-করুণ রসের ওভার ডোজে ঝগড়া করুনিরা বেজায় থতমত খেয়ে যায়। "ভাইটামণি" কি বস্তু সে বুঝতে পারা যায়না চট করে, এবং ঝগড়ার সঙ্গে তার কি সম্পক্কো সে বোঝাও বেশ কঠিন। এর পর বোঝা যায় পিঠোপিঠি ভাইয়ের জন্য এই মুহূর্তে তিতাসের বেজায় মনখারাপ হয়েছে, উদ্গত কান্না-ও সে রোধ করতে পারেনি। এর পর পুরোটাই হাস্যরস হয়ে যায়। তিতাসের এক্সপেন্সে।
    কিন্তু, পরে, রাতে ফিসফিসিয়ে তিতাস আমায় জানায় হোমো ( তখন-ও লেসবিয়ান কথাটা তত চালু হয়নি আমাদের মধ্যে) এই অভিযোগে মানসীর পাশে কেউ বা কারা শুতে চায়নি, এবং তার ফলেই অসন্তোষ ও রাগারাগি।
    এক মুহূর্তে হাসিখুশি মন ও জিভ বিস্বাদের কষাটে অনুভূতিতে তেতো হয়ে যায়।
    সেই বিস্বাদ ঠোঁটে নিয়েই পরের দিন থেকে আমি মানসীর পাশে হাঁটতে থাকি। ডেলিবারেটলি। সেই তেতো স্বাদের মধ্যেই চিত্রল পিঠের ছোট ছোট কচ্ছপ দেখি ডিয়ার পার্কে, সাবিত্রী দেবীর মন্দির দেখি। একটা হাত, জানি আমার কারুকে প্রোটেকসন দেওয়ার কোনো ক্ষমতাই ছিলোনা তবু ঘিরে রাখার চেষ্টা করে মানসীকে।
    বিকেলবেলা একটু বিশ্রাম পাই আমরা। দুপুরে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়ে। আর তখনই আকাশ ছেয়ে আসে মেঘ।
    তিতাসকে নিয়ে মেঘের ছায়ায় রাজবাড়ির চারিদিক ঘুরতে বেরুই। অজস্র গাছ, উঁচু উঁচু, দু খানি বিরাট মৌচাকের চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি। রাধাগোবিন্দের মন্দির দেখি। বিরাট সে চত্বর ঘুরে শেষ করার আগেই দমকা ঝড় ওঠে , লাল ধুলোর মেঘ উড়িয়ে। দৌড় দৌড় দৌড় বৃষ্টির আগে কোনমতে আধভেজা হয়ে কটেজে পৌঁছনো যায়। যাওয়ার আগে কালবৈশাখী-ও দেখা হয়ে যায়।তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে রাজবাড়ির গাছপালা সব কোমল মায়াময়, স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে।
    এক বুক সুন্দরের একটি ছোট্ট পুঁটলি সংগ্রহ করে পরদিন ভোরের ট্রেনে চেপে বসি, আবার আমার ভাঙ্গা ঘরের দিকে।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১৮:৫৯569903
  • তোমার সেই ছবির খাতাগুলো আর নেই?
  • sosen | 125.241.89.203 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১৯:১০569904
  • সেই খুঁজে মরছিলুম। দু-একটা আছে। কিন্তু বেশির ভাগ-ই পাই না।
  • nina | 78.37.164.19 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৩:০৮569905
  • সোসেন, শোষেন পাঠকের মন!
  • nina | 78.37.164.19 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৩:১১569906
  • ধ্যেত্তের্রি----লেখার অগেই পোস্ট হয়ে গেল---খেলবনা
  • sosen | 111.63.137.247 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৭:৩৯569908
  • একটু পিছনে ফিরতে হয়। সংক্ষিপ্ত করে হলেও একটা অধ্যায়কে ছুঁয়ে যাওয়া দরকার হয়ত। আগে লিখেছিলাম , আমাদের এই অঞ্চল ছিল প্রশ্নহীন আনুগত্যের লালে রাঙানো। যখন আমরা এখানে আসি তখন-ও এখানে ছিল পঞ্চায়েত, তারপর হয় রাজারহাট গোপালপুর মিউনিসিপ্যালিটি। আজ-ও এই অঞ্চলে ব্লু -ডার্ট ডেলিভারি দেয় না, বাড়ির নেই নম্বর, রাস্তা ভাঙলে কে সারাবে ঠিক করা যায় না, প্রত্যেক পুজো, ঈদ, সবেবরাত ও চড়কের মেলার উদ্বোধন করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলার থেকে শুরু করে মিউনিসিপ্যালিটি কমিশনার। সমস্ত অনুষ্ঠানে রাজনীতির রং টকটক করে, সব বাঁচা-মরা নিয়ন্ত্রিত হয় রং দিয়ে। এই অঞ্চল পেরিয়ে রাজারহাট চৌমাথা অবধি গেলে রং বদলে তেরং পতাকা দেখা যায়। তখন-ও ঘাসফুলের গল্প শুরু হয়নি।

    আমাদের পরিবার-ও লালের পরিবার। মায়ের বাড়িতে সক্রিয় শ্রমিক রাজনীতি করা মানুষেরা আজ-ও আছেন, বাবা তত্ত্বগত ভাবে বামপন্থী, যদিও এক ধরনের নির্লিপ্ত দূরত্ব বজায় রেখেছিল সর্বদা সক্রিয় ও সবাক দলবৃত্ত থেকে। এখানে আসার পর সেই অন্ধকার দিনগুলিতে সেই দূরত্ব আলগোছে কমে আসে। নির্বাক সমর্থন আর ঝান্ডা নিয়ে রাস্তায় হাঁটার মধ্যে এখানে ফারাক সামান্যই। আমাদের সেই অন্ধকার বারান্দায় হ্যারিকেনের আবছা আলোয় যাঁরা সন্ধের আসর বসান তাঁরা পার্টির মুখর কর্মী। আমার মন শুষতে থাকে সে সমস্ত আলোচনা। বাড়িতে যে সমস্ত বই ছিল, তার মধ্যে যে কটি ক্ষমাঘেন্না করে সরিয়ে রেখেছিলাম সেগুলি বামপন্থী তত্ত্বের বই, সোভিয়েত বিপ্লবের রূপকথা ইত্যাদি। ওই খরার সময়ে সেগুলির দিকে নজর ফেরাই। এখানে ছাত্র রাজনীতি কলেজে শুরু হয় না, কলেজ তখন ছিল-ও না, তা শুরু হয় একটিমাত্র আঞ্চলিক স্কুলের শেষ দিকের ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। ব্রিগেডের সমাবেশে যে সব বাস যায় তাতে ফাইভ সিক্সের ছানাপোনারা বোঝাই। না যাওয়া মানে একধরনের ছাপ্পা, আমাদের কাজের মাসি বলতেন ব্রিগেডে গেলে বুঝি কিছু টাকা ও টিফিন মেলে, তাই সেদিন তাড়াতাড়ি কাজ সেরে চলে যেতেন। একটি ছুটির দিন। এস এফ আই, ডি ওয়াই এফ আই দুয়ের-ই সংগঠন অত্যন্ত সবল, পার্টিতে সাপ্লাই চেন সতেজ রাখার জন্য। এরকম এক পরিবেশে ডি ওয়াই এফ আই-এর আঞ্চলিক সংগঠন আমাকে গিলে নেয়।
    তখন -ও চোখে এক ধরনের রং ছিল অবশ্যই। রাজনীতিকে ব্যবহার করে সমাজ যে শুধু বদলানো যায় তা নয়, সব ধরনের, এই গ্রাসরুট লেভেলে-ও কিছু করা যায় এরকম মোহ ছিল, করার ইচ্ছে ও সুযোগ ও ছিল প্রচুর। বয়স্ক শিক্ষার স্কুল, হেলথ ক্যাম্প, রক্তদান শিবিরে সময় দিতে গিয়ে দ্রুত অর্গ্যানাইজেশন কমিটির চোখে পড়ে যাই। নাটকের সুবাদে স্টেজ শাই কোনোদিন-ই নই, ফলে ঐরকম ক্যাডার-ভিত্তিক অঞ্চলে ফ্রন্টলাইনে চলে আসি দ্রুত। প্রতি মিটিং-এ আমার গলা শোনা যায় মাইকে, এক ধরনের নেশা থাকে বৈকি। নাটক করার সময় গায়ে আলো পড়লে যেমন উত্তাপের হলুদ আলোর নেশা ধরে। অনেকটা সেইরকম।
    বাবা বাধা দেয়নি, তবে এক ধরনের বিধিনিষেধ রেখেছিল। তাছাড়া লোকাল পার্টির বয়স্ক কর্মীরা কাকা জ্যাঠাসুলভ স্নেহে খোঁজখবর নিতেন। এক ধরনের ইমেজ তৈরী হলো আমার। যে ইমেজ রাজ্য ডি ওয়াই এফ আই সম্মেলনে আমাকে ইউনিট মেম্বার থেকে এক লাফে জোনাল ও ডিস্ট্রিক্ট কমিটির মেম্বার করে দিলো সহসা। এটা আমার কলেজে ঢোকার সমসাময়িক। অনেক সিনিয়র সদস্যকে টপকে। কিছু লোকজন অতীব অসন্তুষ্ট হলেন, কেউ কেউ খুশি। নিজের অজ্ঞাতে বসে পড়েছিলাম এক দাবার বোর্ডে।
    একটা অর্গ্যানাইজেশনকে ভিতর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম। প্রায় প্রত্যেক মিটিং এ মিনিট রাখতে হত কনিষ্ঠতম সদস্য হিসাবে। সুসংবদ্ধ চলন, কিসের পর কি হবে ছকে বাঁধা, শুধু মনে হত কেন এত সাংগঠনিক ক্ষমতার অপচয়। আমার বইপত্রগত জ্ঞানের সঙ্গে বিশেষ কিছু মিলছিলনা, আবার গ্রাসরুট থেকেও সরে এসেছিলাম। পড়াশুনোর ক্ষতি, তা-ও হচ্ছিলো কিছুটা। কেন লোকে রাজনীতিকে কেরিয়ার বলে তা প্রতীয়মান হচ্ছিলো ধীরে ধীরে।
    এই সময় এক দোলাচল তৈরী হলো। আমাদের ওয়ার্ডটি ও চারপাশের আরো কিছু ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে গেল মহিলাদের জন্য। সামনে ইলেকশন। এইসময়, স্ত্রী ও কন্যাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়, আমার নামটি উঠে এলো। ভাবী ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসাবে।
    পাঠক বুঝবেন, ইলেকশন প্রহসন মাত্র। সি পি এমের জেতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। আমি-ই হয়ত একমাত্র মহিলা ছিলাম যে আগে থেকেই একটু আধটু এই কাদায় পা রেখেছিল। এক গোষ্ঠী যেমন আমাকে নমিনেশন সাবমিট করানোর জন্য কনভিন্স করতে শুরু করলেন, অন্যরা হয়ে উঠলেন রাগত। সহজ ও মসৃণ দাবার ঘুঁটি হিসাবে আমার সুনাম কখনই ছিলনা, আজ-ও কোথাও নেই। যাঁরা আমার হয়ে খেলছিলেন সেই দ্বন্দ্ব তাদের-ও ছিল। সেই সঙ্গে যুব কমিটিতে যাঁরা আমাকে নিয়ে এগোতে চাইছিলেন তাঁদের চাল -ও পড়তে শুরু করলো সেই দাবার বোর্ডে। মানসিক এক অস্থিরতার সময়, সকলের-ই। বিশেষ করে আমার পরিবারের।
    বাবা মা সেই সময় আর আমার হয়ে সিদ্ধান্ত নিত না। পারিবারিক আলোচনা করেও বিশেষ সুরাহা হলো না। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি হয়, এমন একটা ব্যাপার। আমার মাথায় খেলা করছিল একটা খাঁচা। আমার রাস্তা, বেঁকে যাচ্ছে না তো? কোনো খাঁচায় ঢুকে পড়ছি না তো, যা আমার মুক্তির উড়ান ব্যাহত করবে? এই কি সঠিক পথ?
    সকাল থেকে রাত অবধি জমাট আলোচনা আর চায়ের কাপের ভিড় ভেঙ্গে দিতে বেশিক্ষণ লাগলো না, যেদিন আলোচনা হঠাত শাসানিতে রূপান্তরিত হলো। এক মর্নিং ওয়াক থেকে ফেরার পথে জনহীন ভোরে বাবাকে পদস্থ মানুষেরা ও তাদের অনুগামীরা ধরে শাসালেন" মেয়ে যা করছে তার ফল ভালো হবে না। যুব করছে, করুক, এই ফেরে এলে আপনাদের দেখে নেওয়া হবে।"
    না, সেদিন আমার সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় লাগেনি। এই রাস্তার মোড়ে চটের বস্তায় পরিচিত তরুণের টুকরো টুকরো দেহ পাওয়া গিয়েছিল রাজনৈতিক বিবাদের জেরে, সেই ভয়ে? পারিবারিক ও নিজস্ব নিরাপত্তার ভয়ে? না।
    আমি ঘুঁটি হতে চাইনি। যাঁরা আমায় চাইছিলেন ও যাঁরা চাইছিলেন না তাঁরা আসলেই একটি ঘুঁটি চাইছিলেন। আর আমি দেখতে পাচ্ছিলাম ওই চৌষট্টি ঘুঁটির রাজ্যপাট আমার নয়। না, ওই লড়াই আমার ছিল না। অন্তত তখন না, সেই মুহূর্তে না, সেই ভৌগোলিক অবস্থানে না।
    ঢাক ঢোল বাজিয়ে যেদিন স্থানীয় এক নেতার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড-বিহীন স্ত্রী , প্রতিযোগিতাবিহীন মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে এলেন, যেদিন একের পর এক পার্টির লোকজন আমার মাটির ঘরে এসে তাঁদের অসন্তোষ ব্যক্ত করে গেলেন আমার সরে আসার সিদ্ধান্তে, সেদিন আমি হাতে একটা বই নিয়ে বসেছিলাম। দ্য গড অফ স্মল থিংস। আমি জানতাম আমি সরে আসা মানেও এক সু-শক্তিশালী গোষ্ঠীকে চটানো। জানতাম পরবর্তী দিনগুলোতে তার কনসিকোয়েন্স ফেস করতে হবে, আমাকে, আমার পরিবারকে। কিন্তু দাম দিতে হয় জেনেই তো সে পদক্ষেপ। বার বার নিজেকে মনে করানো-না, ওই চৌষট্টি ঘর আমার নয়।
  • Bhagidaar | 218.107.178.181 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৮:১৩569909
  • ফ্রিন্জের লোকেদের নাম দিতে যদি আমার নামটা দরকার পরে তাহলে নির্দ্বিধায় নিস।
  • sosen | 111.63.137.247 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৮:৪৭569910
  • ভাবছিলুম ওইটা আর কারুর নজরে পড়েনি :P
  • siki | 131.243.33.212 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৯:৪৫569911
  • :P
  • | 24.97.206.137 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৯:৫৩569912
  • আঃ সুষেণকে একটা টাইট হাগ।
    এই কিছুতেই ঘুঁটি হব না মনোভাব আর ঘুঁটি বানাতে চাওয়াদের মৃদু অসন্তোষ থেকে অশ্রুসজল ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিঙের চেষ্টা হয়ে ক্রুদ্ধ হুংকার পর্যন্ত আমারও চেনা খুব চেনা।
    আমি অবশ্য কোনোকালে কোনো পার্টি করিনি। তাই অন্ততপক্ষে রক্তপাতের ভয়টা ছিল না। তবে বাইরের রক্তপাতই কি আর সব!
  • sosen | 111.63.137.247 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ০৯:৫৮569913
  • আচ্ছা সিকি যাতে আমার আর ভাগীদার-এর উপরোক্ত কথোপকথনে বেথেমি না করে এই জন্য, সিকিকে রেফারেন্স:
    ২৮শে অগস্ট ৭:৩৮ , ভাট।
  • dd | 69.92.134.53 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ১০:১২569914
  • তাই বলো।
    আমি তো সেই ফ্রীঞ্জ কোথায় আছে একেবারে না পেয়ে সেলুন বা দর্জির দোকানের উপর কোনো টই আছে কি না এসব নিয়ে ভেবেচিন্তে ঘেমে নেয়ে একশা।
  • | 24.97.206.137 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ১০:১৫569915
  • :-)))
    ডিডি বাকরিতে থাকলে হেব্বি ফর্মে থাকেন।
  • maximin | 69.93.255.199 | ২৯ আগস্ট ২০১৩ ১০:৩৫569916
  • হ্যাঁ, পড়ছি।
  • sosen | 125.242.191.88 | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ০৯:৫৬569917
  • এই কাগজটা পেলুম, আনাড়ি হাতের দশ মিনিট স্কেচে ধরা স্মৃতি, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সিংহদরজা।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ নভেম্বর ২০১৩ ১৮:৫৪569919
  • তুলে দিলাম।
  • sosen | 125.241.110.233 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:১০569920
  • ছোট ছোট লাফ। এক পাথর থেকে আর এক পাথরে, এক ক্ষয়াটে বুড়ো বটের নিচ থেকে এক পল্লবহীন অশ্বত্থের নিচে। সব লাফ দারিদ্র্যের নয়। সব চোরাবালি এক-ই রকম নয়।
    ঠোঁটের মাঝখান থেকে জিভ যখন সহসা অন্য অচেনা ঠোঁটের ভিতর ঢুকে যেতে থাকে, হা হা শব্দে শৈশব শেষ হয়ে যায় আর ঘর ভরে আলোরা গুড়ো গুড়ো নি:শব্দ রেণু ছড়াতে ছড়াতে দাঙ্গার মত মিশে যেতে থাকে ধুলোয় আবিরে, তখনও, প্রিয় মানুষের পিঠ আঁকড়ে ধরেও আমার চোখ খেলে বেড়ায় খোলা জানলায়, কান সচকিত হয়ে থাকে অন্য কিছুর জন্য। চুম্বনের মাঝখানে আমি অন্যমনা হই, মিলনের মধ্যে হঠাত উদ্ভ্রান্ত, আমার সর্বাঙ্গে উদাসীনতা নেমে আসে। প্রিয় যুবকটি ঠোক্কর খায়, সে ঠোক্করে ব্যথা লাগে, তারপর একদিন রক্ত ঝরে।
    কিসের যে তাড়া আমার কে জানে। সত্যিই, শক্তপোক্ত পাথরে বাঁধানো নিরাপদ সম্পর্ক আমাকে শ্বাসরুদ্ধ করে কি? স্থির আনন্দ আমার কাছ থেকে কবিতা কেড়ে নেয়, কেড়ে নেয় অক্ষরের ভারসাম্য, তাই কি? প্রেম হঠাত আসেনি, হঠাত এসেছিল সেই যুবক, যার চোখে এমনকি আমার শ্যামলা তেলচিটে মুখটিও সুন্দর, আমার ছেঁড়া ব্যাগ, ভাঙ্গা বাড়ি, কঠিন লড়াইয়ে শক্ত হাতের পাতা এসব-ই কামনায় থিরথিরে। সেই হঠাত আসা আমাকে থমকে দিয়েছিল, আর তারপর ভাবতে বাধ্য করেছিল, এমন-ই হয় তো। চিরকাল-ই ঘুমন্ত রাজকন্যাদের জাগাতে সোনার কাঠি হাতে এমনি রাজ্কুমারেরাই আসে কিনা। না, তেমন করে প্রেমে পড়ার আগেই সে দরিদ্র রাজকুমারী ছোট্ট একটি মাপে মাপে কাটা ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়ে ফেলেছিল। প্রেম অভ্যাস হয়, যেমন অভ্যাস হয় গলার স্বর, স্পর্শ আর গন্ধ, একসময় চামড়া থেকে আলাদা করে আর খুঁজে পাওয়া যায় না কিছু। তেমনি অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল সেই যুবককে। কিছুদিন, বেশ কিছুদিন, কয়েক বছর, কি আরো বহুদিন? নইলে সে চামড়া টেনে দেহ থেকে তুলতে এত রক্তারক্তি কেন!
    অথচ সেই রক্তারক্তির সাথেই একদিন ফিরে এলো আমার কবিতা, আমার অক্ষরেরা।

    ছোট ছোট যৌন ভুলচুকের গল্প আমাদের জীবনে মিশে থাকে। মেয়েদের কিছু বেশি, ছেলেদের কিছু কম। কখনো আমরা পারি তাকে হেলাভরে বাস থেকে নেমে একদলা থুতুর মত, বর্জ্যের মত ফেলে দিয়ে যেতে। কখনো পারি না। তেমন-ই এক ঘটনা, এক প্রিয় বন্ধুর কাছ থেকে অকস্মাৎ আসায় খুব ধাক্কা খেয়েছিল সেই মেয়ে। হয়ত, সে বন্ধু তাকে আঁকড়ে ধরতে মাত্র চেয়েছিল। সেই ঘটনাকে পিছনে ফেলে দিয়ে চলে আসতে চেয়েছিল সেই মেয়ে, চট করে পারেনি। সময় লাগছিল তার। অনেক সময়। পুরুষের হাত শরীরে লাগলেই শিউরে উঠছিল সে। এমনকি সেই চেনা হাত, সেই কাম্য স্পর্শ-ও। তাকে কেউ বলে দেয়নি, এমন হয়, একে ট্রমা বলে, কেমন করে এর হাত থেকে বেরোনো যায় সে জানত না। কারুর সঙ্গে কোনো কথা আলোচনা করতেও সে পারত না তেমন। শুধু মনে মনে ভাবত, কেটে যাবে, আর একটু সময়। আর একটু। আর একটু নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া।
    যুবক হয়ে উঠছিল অস্থির, বুঝতে না পেরে। কেন এমন বদলে যায় তার মানসী, যখন সে দুরের কর্মস্থান থেকে ছুটিতে বাড়ি আসে। কেন সে মেয়ে পালায়, কথা বলে কম, কেন হাত ধরলেই কেঁপে ওঠে, কেন ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে শক্ত হয়ে যায় এমন? সে জিগ্যেস করে। সদুত্তর পায়না। বিরক্ত হয়, সময় দেওয়ার চেষ্টা করে, আরো বিরক্ত হয়। তার পর ব্যাগ গুছিয়ে ফিরে যায়। কিন্তু পরের বার এসেও কিছু বদলায় না। সময়, কত সময়?

    মন শক্ত করে সে মেয়ে খুলে বলবার চেষ্টা করে যুবককে সবটা। বেশিটাই পারেনা। যা বলে তা-র মানে বুঝি উল্টো রকম হয়, কাঁপা গলায়, ভয়ার্ত স্বরে সে যখন বোঝাবার চেষ্টা করে কেমন কাছের মানুষটি ছুঁলেও তার চোখে শুধু সেই অপমানকর সময়টুকু ভেসে ওঠে, কেমন সে নিজের কাছ থেকে বার বার ফিরে ফিরে যায় , চিরে যায়, যুবক মন দিয়ে শোনে, কিন্তু তার চোখে কি যেন অনামা এক রং খেলে যায়। রাজকুমারীর গা শিরশির করে, তার হঠাত পাওয়া আসনের পায়ের নিচে মাটি কেমন ভুসভুসে বালি হয়ে যেতে থাকে। সে ভয় পায়। এইটুকুই তো ভরসা ছিল তার, ও বোঝে, ও বুঝবে।

    বোঝার চেষ্টা যুবক করেছিল হয়ত। হয়ত তার বয়েসের তুলনায় অনেক বেশি-ই করেছিল। কিন্তু চেষ্টা, বোঝা এসবের গিয়ার কখন মুঠিতে ধরে ফেলে প্রাইমাল ইন্সটিনকট। আর তারপর একদিন, একদিন আরো অনেকদিনের মত, যখন মেয়েটি ফিরে যেতে থাকে তার কাছ থেকে, আলিঙ্গনবদ্ধতার মধ্য থেকে, চুম্বনের মধ্য থেকে, দরজার ঠিক সামনে থেকে, হঠাত যুবক তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, দু আঙ্গুলে টেনে খুলে ধরে সে মেয়ের বুজে থাকা চোখ, সহসা অচেনা হয়ে ওঠে। আর এক অচেনা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর।

    অনিবার্য রক্তপাত ছিঁড়ে দেয় অভ্যস্ত এক সম্পর্ক। অনিবার্যভাবেই।

    বহুবার , বহুদিন, পরে এই দিনের কথা ফিরিয়ে ফিরিয়ে ভেবেছে তারা। আলাদা আলাদা, একসাথে, চিঠিতে, ফোনে, সামনে বসে, কিছুতেই, কোনভাবেই আর সেই রক্তপাত থামেনি। পাঁচ, সাত, দশ, বারো বছর কেটে গেছে। কিন্তু তবু সেই ফিরে যাওয়া থামেনি। গতি শুধু আরো বেড়ে গেছে। চিড় বাড়তে বাড়তে মাঝখানে ঢুকে এসেছে মহাসমুদ্র। বার বার যুবক ফিরে এসেছে, চোখে অসীম প্রত্যাশা নিয়ে, একবার ফিরিয়ে ভাবার। বার বার ভাবার। সে মেয়ের তো ছিলই নিজের সাথে কথা বলার রোগ। নিজের সাথে কথা বলতে বলতে, যুক্তি দিতে দিতে, সে বার বার নিজেকে যুবকের জায়গায় দাঁড় করিয়ে ভেবেছে। ভাবে। কিছু বদলায় না। যুক্তি , মায়া, ভালবাসা এসবের উর্ধ্বে জেগে থাকে নিতান্ত রক্তমাংসের এক শরীর যার একান্ততায় জবরদখলের ছাপ পড়েছে। শরীরের সেই খুঁতখুঁতেমিকে মর্যাদাবোধ বলব, নাকি অসহনশীল এক সংস্কার, যে চামড়ার নিচে কিছু দেখতে শেখেনি? যার মধ্যে প্রসার নেই, শুধু ঘুর্ণাবর্ত আছে?

    সে মেয়ে জানে না। বই এর পর বই তাকে এ প্রশ্নের উত্তর দেয় না , আজ-ও দেয়নি । কিন্তু রাত্রে , দিনে অক্ষরেরা ফিরে এসে বেশ মেজাজ নিয়ে তাকে বলে, বেশ করেছ! এই না করলে আমরা আর ফিরতাম না। পোড়া কাঠের মধ্যে থেকেই তো আমাদের উত্থান।
  • I | 24.99.173.160 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:২৬569921
  • বাবা! কী সাহস! সাহসকে সেলাম জানাই।
  • kumu | 133.63.144.70 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০২:৫৭569922
  • সেলাম।
  • | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৮:৩৫569923
  • পড়ছি.........
  • I | 24.99.138.8 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৮:৫৭569924
  • ডিঃ সাহস বলতে এই অকপট লিখতে পারার সাহ্স মিন করেছি।
  • sosen | 111.63.132.178 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:৩৬569925
  • ইন্দোদা, বুইছি :)
  • Bhagidaar | 218.107.71.70 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:০৫569926
  • ভাগ্যিস! কারোর সর্বনাশ কারোর পৌষমাস!
  • Biplob Rahman | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৫:২৭569927
  • Ragib Hasan
    December 8 · Edited ·

    দীন মুহাম্মদের শ্যাম্পু স্নানাগার

    শ্যাম্পু শব্দটি আজ ইংরেজি ভাষার একেবারে নিজের শব্দের মতো বনে গেছে। সানসিল্ক কিংবা আরো দামি নানা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপণে ভর্তি থাকা টিভি/পত্রিকা দেখে কিন্তু বোঝার অবকাশ নাই, এই শ্যাম্পুর সাথে শেখ সাহেব আর বাংলার সম্পর্কটা কী। চলুন ফেরা যাক আজ থেকে আড়াইশ বছর আগের ভারতবর্ষে, যেখানে শেখ সাহেবের মাত্র জন্ম হয়েছে।

    শেখ দীন মুহাম্মদের জন্ম ১৭৫৯ সালে, "বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা"র নবাবী আমল তখন মাত্র ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর লর্ড ক্লাইভের হাতে ধরাশায়ী। এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে দীন মুহাম্মদের জন্ম, নিবাস ছিলো পাটনায়, যা এখন বিহারে পড়েছে। দীন মুহাম্মদের আত্মজীবনী অনুসারে তার পূর্বপুরুষেরা মুগল সম্রাটদের প্রশাসনে কাজ করতেন, আর বাংলার নবাব পরিবারের সাথেও তাদের ছিলো লতায় পাতায় আত্মীয়তা।

    দীন মুহাম্মদের যখন জন্ম, নবাবী আমল প্রায় শেষ, মীর জাফর, মীর কাসিম এরা নামে মাত্র নবাব বনে আছেন। মুগল সম্রাটও প্রায় ক্ষমতাহীন। বড় হতে হতে দীন মুহাম্মদ শিখে ফেললেন মুগল আমলের সব রসায়ন বিদ্যা, সাবান, সুগন্ধি, তেল সবকিছু বানাবার কৌশল। সাথে উপরি হিসাবে কিছু চিকিৎসাবিদ্যাও। নবাবী আমলও নেই, দরবারও নেই, তাই দীন মুহাম্মদ যোগ দিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফৌজে, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসাবে। খুব অল্প বয়সেই যোগ দিয়েছিলেন, আর ইঙ্গ-আইরিশ অফিসার ক্যাপ্টেন গডফ্রি ইভান বেকারের সাথে কাজ করতেন। ১৭৮২ সালে ক্যাপ্টেন বেকার সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন, কেউ কেউ বলে করতে বাধ্য হন, আর ফিরে যান ব্রিটেনে। দীন মুহাম্মদ তার এই ক্যাপ্টেন সাহেবের সাথে সাথে চলে আসেন বিলেতে। বেকার পরিবারের সাথেই তিনি ১৭৮৪ সালে চলে যান আয়ারল্যান্ডের কর্কে। ইংরেজি শেখার জন্য ভর্তি হন স্কুলে, সেখানে পরিচয় আইরিশ কিশোরী জেইন ডেলির সাথে। সুন্দরী জেইনের প্রেমে পড়ে যান দীন মুহাম্মদ, কিন্টু জেইনের পরিবার অমত করায় পালিয়ে যান দুজনে পাশের শহরে ১৭৮৬ সালে, বিয়ে করেন। ততোদিনে দীন মুহাম্মদ খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা নিয়েছেন।

    নানাদেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে দীন মুহাম্মদ ১৭৯৪ সালে The Travels of Dean Mahomet বা দীন মুহাম্মদের সফর নামা নামের বই লিখেন। ভারতবর্ষ নিয়ে ইউরোপে তখন কৌতুহলের কমতি নেই, তাই বইটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

    দীন মুহাম্মদের গল্পের পরের অধ্যায় লন্ডনে। ১৮১০ সালে সেখানে মুহাম্মদের পরিবার চলে আসার পরে একটা রেস্তোরা খুলেন দীন মুহাম্মদ। এটাই ছিলো ইংল্যান্ডের প্রথম ভারতীয় খাবার দাবারের রেস্তোরা। লন্ডনের জর্জ স্ট্রিটে খোলা হিন্দুস্তান কফি হাউজ নামের এই দোকানটি অবশ্য খুব ভালো চলেনি, অল্পদিন পরেই লোকসানের চোটে বন্ধ হয়ে যায়। দুশো বছর পরে ভারতীয় তথা বাঙালি খাবারের কী জয়জয়কার হবে ইংল্যান্ডে, শেখ দীন মুহাম্মদ জানতে পারেননি, লালবাতি জ্বেলে রেস্তোরার ব্যবসা বাদ দিয়ে লন্ডন ছেড়ে চলে যান।

    লন্ডনে রেস্তোরার ব্যবসাতে সাফল্য না পেলেও দীন মুহাম্মদের ভাগ্য ফিরে যায় ব্রাইটনে। ১৮১৪ সালে সপরিবারে এই শহরে বসতি স্থাপনের পর দীন মুহাম্মদ খুলে বসেন তার স্নানাগার। সেসময়কার একটি স্থানীয় পত্রিকায় তার দোকানের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় এভাবে -

    [quote]The Indian Medicated Vapour Bath (type of Turkish bath), a cure to many diseases and giving full relief when every thing fails; particularly Rheumatic and paralytic, gout, stiff joints, old sprains, lame less, aches and pains in the joints[/quote]

    এই সুগন্ধি স্নানাগারে খদ্দেররা পেতেন দীন মুহাম্মদের তৈরী করা মাথার চুলে মাখাবার তেল -- সেই তেল দিয়ে খদ্দেরদের চুলে মাথায় মালিশ করে দেয়া হতো। তেল মালিশের এই কাজটাকে হিন্দুস্তানী ভাষায় বলায় হতো চ্যাম্পু করা, আর সেই শব্দটিই সাগর পেরিয়ে মুহাম্মদের স্নানাগারে গিয়ে হয়ে যায় শ্যাম্পু।

    ইংরেজদের কাছে এই শ্যাম্পুর দোকান অভিনব ঠেকেছিলো, তাই দীন মুহাম্মদের দোকান Mahomed's Steam and Vapour Sea Water Medicated Baths ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় উনবিংশ শতকের ইংল্যান্ডে। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন কেবল দীন মুহাম্মদের দোকানে শ্যাম্পু করাতে ছুটে আসতো। শ্যাম্পু করে রোগবালাই দূর হয়, এই বিশ্বাসে হাসপাতাল থেকে রোগীদের পাঠানো হতো ব্রাইটনে। আর তেল মালিশ করে করেই দীন মুহাম্মদ পেয়ে যান ড: ব্রাইটন খেতাব। জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছে যাওয়া এই মালিশ-চিকিৎসার সুবাদে খোদ ইংল্যান্ডের রাজা ৪র্থ জর্জ ও ৪র্থ উইলিয়ামের "শ্যাম্পু সার্জন" হিসাবে মুহাম্মদ নিয়োগ পান। ১৮৫০ এর পরে তেলের বদলে সুগন্ধি সাবান দিয়ে চুল ধোয়ার রীতি চালু হয়, কিন্তু রয়ে যায় শ্যাম্পু নামটি।

    দীন মুহাম্মদ মারা যান ১৮৫১ সালে, নব্বইয়ের কোঠায় পৌছে। জেইনের সাথে দীন মুহাম্মদের সংসারে এসেছিলো ছয়টি সন্তান - রোসানা, হেনরি, হোরেশিও, ফ্রেডেরিক, অ্যামেলিয়া, ও আর্থার। এর মাঝে ফ্রেডেরিক বাপের পেশায় যোগ দেন। ফ্রেডেরিকের ছেলে ফ্রেডেরিক হেনরি হোরেশিও আকবর মুহাম্মদ (বাপরে, বাপ দাদা সবার নামের সমাস!!) চিকিৎসক হিসাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। লন্ডনের গাইস হাসপাতালে কাজ করার সময়ে উচ্চ রক্তচাপের উপরে গবেষণা করে আবিষ্কার করেন অনেক নতুন তথ্য।

    দীন মুহাম্মদের কথা ইতিহাস ভুলে যায় ধীরে ধীরে। বিস্মৃতির আড়ালে একশো বছর কাটাবার পরে সত্তর ও আশির দশকে আস্তে আস্তে ঐতিহাসিকরা আবার খুজে পান শেখ দীন মুহাম্মদের সেই কাহিনী, বাংলা থেকে ব্রাইটন অবধি এই বঙ্গসন্তানের অভিনব জীবনগাঁথা। ইংরেজদের ভারতীয় খাবার ধরাতে দীন মুহাম্মদ পারেননি, দেউলিয়া হয়ে গেছিলেন, কিন্তু আজ দুশো বছর পরে সেই খাবার ছড়িয়ে গেছে সেখানে। আর শ্যাম্পু? শেখ সাহেবের সেই শ্যাম্পুর দোকান থেকে শুরু হওয়া শ্যাম্পু করার ধারা ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়েই।

    আর এই ছিলো সেই শেখ সাহেবের গপ্পো ...

    https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10152023069803670&set=a.10152016065093670.1073741838.513618669&type=1
  • d | 233.196.220.13 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৬:০৫569928
  • কী? কেনো??
  • I | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৭:৫১569930
  • বা! বেশ !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন