এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফেসবুক থেকে কিছু পুরনো লেখা

    sosen
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১২ | ১৮০২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মৌ | 24.96.64.45 | ১৯ আগস্ট ২০১৪ ১০:১৪570064
  • কি বলি ! কিছু বলার নেই, শুধু চুপ করে পড়ি। জানিয়ে গেলাম, পড়ছি।
  • de | 190.149.51.68 | ১৯ আগস্ট ২০১৪ ১১:৩১570065
  • আমি বরাবর বিজয়ার প্রণাম করেছি - বাড়িতে যাঁরা কাজ করতে আসেন তাঁদের - হাজা ওঠা, জলজল ভেজা মতো আলতা পরা পা - বড়দের প্রণাম করতে হবে এটাই রীতি ছিলো -
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ১৯ আগস্ট ২০১৪ ১২:৪৬570066
  • পড়ছি
  • Tim | 188.91.253.21 | ১৯ আগস্ট ২০১৪ ১৪:৪৯570067
  • হুঁ প্রণাম করেছি তো বটেই সে এমন কিছু না, তবে এক হেবি শাসনও করেছেন তাঁরা আমায়। অল্প একটু বড়ো এক দিদি ছিলো, দরকার পড়লেই কানমলা গাঁট্টা খেয়েছি। দে দির মতই বাড়ির রীতি ছিলো। ঃ-)
  • sosen | 111.63.140.109 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২০:১৬570068
  • একেকদিন সন্ধ্যাগুলো বড় কাঁপায়। কোত্থেকে এক খুব চেনা চেনা গন্ধ-অলা হাওয়া আসে, কারেন্ট চলে গেলে। সব বাড়িতে মোমবাতি কিংবা হ্যারিকেন জ্বলে, কেমন স্নিগ্ধ-মধুর আলো। গোল হয়ে খাতার উপর পড়ে, শিখার ভিতরটুকুনি নীল, কমলা, ঝমঝমে একটা আওয়াজ হয় কানের ভিতর, ঐ নীল-কমলার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলে। চোখ বুজলে তার পর পাতার ভিতর-দিকে ঐ শিখাটুকুনি দেখতে পাওয়া যায়।
    লাবণ্য বলে এক কাগজকুড়ুনি মেয়ে একবার ভারি অদ্ভুত কথা বলেছিল আমায়। ছোটো থেকে ধোঁয়ার নেশা করতে করতে তার ফুসফুসদুটি ফুটো, ঝুল আর ঘায়ে ভরে গেছে। বলেছিলাম, কেন খাও মাসি? বন্ধ করতে পারো না?
    লাবণ্য বলেছিল, জাড়ে ঐটুকুই যে ওম গো দিদি । ঐটুকুই যে আলো।
    বিশেষ কিছু ভেবে সে ও কথা কয়নি , জানি। তবু কেমন ভিতরটা চমকে উঠেছিল। কোথা থেকে আসে আলো, কে জানে তা?
    লিখতে লিখতে আলোটুকু হারিয়ে ফেলি। মাকড়্সার জালের মধ্যে ছটফটিয়ে এদিক ওদিক তাকাই, কোথায় সেই আলোর বিন্দু, যা পথ দেখায়, উত্তাপ দেয়, খোলা প্রান্তরে রচনা করে গৃহকোণ?

    মৃত্যুর দিকে টানলেও, বাতি হাতে সেই দিকেই এগিয়ে যাওয়া, নইলে এক জায়গায় বসে থাকতে হয়। আলো হারিয়ে যাওয়ার ভয় পায় মেয়েটা। প্রাণপণে আলো জ্বালাতে চেষ্টা পায়। হাতে ছ্যাঁকা লাগে।
    ঝোলানো নম্বর শিটের সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এতোটা কমে গেলো নম্বর? পার্ট ওয়ানে না সে প্রথম পাঁচের মধ্যে ছিল? আর প্র্যাকটিকাল, ওতে এতো কম? প্রেসিডেন্সিতে সিট পড়েছিল, কেউ কেউ এসে সহপাঠিনীদের জিগ্যেস করেছিল ঠিক-ই, অমুক স্যারের কাছে পড়ো? তমুক জায়গায় প্র্যাকটিকাল করো? কিন্তু সে যে নিজের সেক্শন কাটা শেষ করে অন্যদেরগুলো-ও কেটে দিয়েছিল? যে কয়েকজন মাত্র কোষ-বিভাজন ঠিকঠাক খুঁজে বার করতে পেরেছিল অণুবীক্ষণের তলায়, তাদের মধ্যে সে-ও ছিল না?
    নাকি ওসব ভুল ভাবনা? সে আসলে অতোটা ভালো নয় মোটেই !

    এম এস সি পড়া যাবে এই নম্বরে, ততো ভালো না হলেও। ভাবে মেয়েটা, এবার মন দিয়ে পড়বে। আলোর নীচে। ইলেকট্রিকের সাদা ফ্যাটফেটে আলো। চতুর্দিকে ছড়িয়ে যায় তা। পথ দেখায় না--দেখায় চারপাশ।
    এন জি ও র খাতাপত্র জমা দিয়ে আসে। নাঃ রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বেড়ালে চলবে না আর। মাঝে মাঝে যাবে। শামিহা, টুলু, দীপাদের খবর নিতে।
  • sosen | 111.63.140.109 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২০:৩৫570069
  • "না? এখনো না?"
    না তো না-ই। চোখের কোণ দিয়ে এক যুবককে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দেখে সে। দেখে চামড়ার উপরে একসাথে পড়া বাঁকি বাঁকি রোদ্দুর ছিঁড়ে চলে যাচ্ছে একটা ভীষণ চেনা দীর্ঘ দেহ, ঈষত নুয়ে থাকা ছিলার মতো পিঠ, ছিটকে যেতে ইচ্ছে করে, ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে, মুঠো করে টি-শার্টের ডোরাকাটা শেষটুকু টেনে ধরলেই এক্ষুণি ফিরে তাকাবে ও, মোটা ঘোলাটে কাঁচের চশমাটা অভ্যাসবশে নাকের উপরে ঠেলে দেবে, হেসে ফেলবে, সেই ছ্ড়াছ্ড়া গমের মতো উজ্জ্বল হাসি---কিন্তু সব সম্পর্কের নুন এসে জমা হয় এই এক বন্দরে, ভিতরদিকে লোনা জলের স্রোত ফেরত পাঠাতে পাঠাতে জাহাজ অবশেষে ডুবে যায়।

    জেগে থাকে ভগ্নপ্রায় নাবিকেরা, তারা বিনুনি সামনের দিকে টেনে আনে, ম্লান হাসি হাসে রেস্তোঁরার ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে, তারপর নতুন শহরের দিকে পা টেনে টেনে হাঁটতে থাকে। হাতে ছিটকাপড়ের ব্যাগ, পায়ে সোয়েডের চটি। আলো নেই।
  • sosen | 111.63.140.109 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২০:৫৫570070
  • এই ধূসর শহরে চারটের মধ্যে গাঁটপাকানো বালিশ ছেড়ে , ভাইয়ের নিঃশ্বাসের শব্দ ছেড়ে উঠে পড়তে হয়। কুয়োর ধোঁয়া ওঠা জলে স্নান করতে হয় বাথরুমে কুপি জ্বেলে। সূর্য ওঠার লালের সাথে, কারখানার প্রথম ভোঁ-এর সাথে, কাকেদের চেঁচামেচি-র সাথে বয়ে গিয়ে ভোরের প্রথম বাসে উঠে পড়্তে হয়, আর দু-ঘন্টার জন্য হারিয়ে যেতে হয় এক অর্ধ-সুষুপ্ত নিভৃতিতে। লোকে ওঠে, নামে, ওঠে, আবার নামে। নাবিক বসে থাকে, তার জেটি হু-উ-ই অনেক দূরে।
    তার টিপিনবাক্সোর মধ্যে আছে বীট-গাজর-কপির লাল তরকারি, এক হাতা মোটা চালের ভাত, আর এতোবড় এক দলা আদর, যে আদর হাত বেয়ে উঠে মাথা ছোঁয় না, কিন্তু দরজার ভাঙ্গা কোণটি ধরে সেই সকাল থেকে সন্ধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে, রুলি-পরা হাতের কালো ছোপ ধরা নখ, কড়া পড়া পায়ের শব্দ হয়ে, মোমের চাকতি চাকতি কাঁপা আলো হয়ে। ঐ আলো। বাকি সব আঁধার, ব্যাকুল বায়, জগতে কেহ নাই কিছু নাই---

    শুধু ডাকটুকু জেগে থাকবে--সোনা এলি?
  • sosen | 111.63.231.91 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২১:৪৭570071
  • " আমি মোটা। দু-মাস আগে আমার বয়ফ্রেন্ড আমায় ছেড়ে চলে গেছে। তার পর থেকে রোজ-ই মনে হয় আরো মোটা হয়ে যাচ্ছি। কি খাই, কিছুই তো খেতে ইচ্ছে করে না, সারাদিন, কিন্তু আমার ছবি যেন জোড়া দেওয়া দেওয়া গোলাকার রিং ,সামনে বেঢপ পাঁউরুটির মতো ঠোঁট, যা কিনা কেউ চুম্বন করে না। এমনকি দশ বছর পর দেখা হওয়া বন্ধুও আমায় দেখে সেদিন বলে উঠল, কত মুটিয়েছিস! দশ বছরে আরো কত কিছুই হয়েছি আমি, কত বদলেছি, আরো ভালো আর সুন্দর মনের একটি নারী হয়ে উঠেছি হয়ত, আরো অনেক বই পড়েছি, কত দেশ ঘুরেছি, আমার চোখ দুটিতে কি তার একটুও লেগে নেই? চোখে কি পড়ে না, আমার চোখে একটু কালি, একটু বেদনা--এই মোটা হয়ে যাওয়ার খোঁটা আর কশাঘাতে একটু বুঝি রুক্ষতা দুই গালে। ওসব কিছুই চোখে পড়ে না তোমাদের , হ্যাঁ গা?"
    দিল্লির একটি মেয়ের কথা, আন্তর্জালে পড়ি, যা চাবুক কষায় আমাকেও, মনে পড়তে থাকে, দাঁত উঁচু, একটু বোকা সুচরিতাকে ঘোড়া নাম দিয়েছিলাম আমি-ই, রুমালচোর খেলার সময় ল্যাগব্যাগে দুই পা ফেলে ঘোড়ার ত্রস্ত পায়ে সে ছুটে আসত আর গ্রেস বলে কিছুই ছিল না তার, তাই সবাই মিলে তাকে ঐ বলে খেপাত, নিষ্ঠুরের মত-এই আমরা, আমি-ই তো। আলো আলো বলে যে আমি নাকেকান্না কাঁদছি, এই কম্পু-পর্দার আড়ালে, সেই আমি-ই কি অন্ধকার বয়ে বেড়াচ্ছিনা, দলা দলা, ক্ষমাহীন সব জ্যান্ত, ফ্যাঁসফেসে অন্ধকার, বুকের হাড়ের মধ্যে নখের আঁচড়। ফেসবুকে কোনো বন্ধু আমার ছবির নীচে "কি মুটিয়েছিস" সহজেই লিখে যেতে পারে, আমাকেও সয়ে যেতে হয়, কারণ একদিন কি তাকে, বা অন্য কাউকে আমি অমনি অচেনা নরম জায়গায় বুটের আঘাত করিনি!
  • byaang | 116.197.48.203 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২২:০৭570072
  • আঃ কত কত না বলতে পারা কথা, কত ভুলে যাওয়া গন্ধ, খাবলা দলা পাকানো কষ্ট। সব ফিরে এল।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২২:৩০570074
  • আ মোলো! মুটিয়েছিস এ এত দুঃখু পাবার কি হলো! আমারতো আবার তোমার ঐ রসগুল্লা টাইপ ব্যাপারটাই বেদম মিষ্টি লাগে।

    আমার এক বন্ধুকে এই সেদিন ফেবু তে খুঁজে পেলুম। মেয়ে সেই আগের মতই গোল্লু আছে। আমরা আমাদের ব্যাচটা খুব শিগ্গিরি দেখা করছি, তাতে তো আগে তাকে খাচুম খুচুম করে আদর করবো গিয়ে ভেবেছিলুম। কি মুস্কিল! আবার সে না ঠোঁট ফোলায়।
  • sosen | 125.241.116.176 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:৫৬570075
  • আস্তে আস্তে লেখাগুলো মিশে যেতে থাকে। গাঢ় তার্পিন তেলে মেশানো খয়ের রং, জর্দা রং, বেনারসী সবুজ রং , মিশে মিশে আকারহীন , সীমারেখাহীন একরকম তেলতেলে ক্যানভাস। সময়ের মাকড়সার জাল তার ওপর, বিন্দু বিন্দু ধুলো। তার সামনে আস্তে আস্তে ফুটে ওঠে অচেনা এক মানুষ, অচেনা, কিন্তু বড় চেনা হয়ে উঠতে পারে, যদি পরিষ্কার করে আঁকি তার ধারালো চোখমুখ, নাকের উপর হাল্কা ফ্রেকল, কিন্তু আমি স্পষ্ট হতে চাই না। আমি দূরে সরে যেতে চাই।
    তখন একটা বছর কেটে গেছে সেই আট্তলা বাড়িতে। চোখটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে এসেছে-এখানে আমি চাইলেই হারিয়ে যেতে পারি, আবার পথ খুঁজে ফিরতে পারি নিভৃতিতে। এখানে সবাই বেশিরকম ব্যস্ত, সব্বাই দৌড়চ্ছে, কিছু না কিছু করতে চায় তারা, আমিই বরং ভয় পেতে শুরু করি। এতদিন তো গলি থেকে রাজপথের প্রশস্তি জানা ছিল, কিন্তু রাজপথের পরে কি তা তো ভেবে দেখিনি---
    তার বাংলায় হিন্দির টান মিশে আছে। সে আমায় দিদি বলে ডাকে, নোট্স চায় কখনো, কখনো বা প্র্যাকটিকাল খাতা একটা পুরোনো-আমি দিই। একবছরের ছোটোরা প্রায়ই অমনি চায় তো। মাঝে মাঝেই লাইব্রেরির ঘরে সে আমার পাশে এসে বসে। ছোটো ছোটো গল্প করে। হস্টেলের গল্প, গ্রামের বাড়ির গল্প।
    গমগমে সুন্দর গলায় গান গায় সে। ফাংশনে কি গান গাইবে সেটা আমাকে শুনিয়ে নেয়। আমরা কখনো রাস্তা হাঁটি, কখনো মেট্রো স্টেশনে বসে থাকি। কোথাও অল্প আগুন জ্বলে, আমি তা টের পাই, আমি ভয়-ও পাই। সরে সরে যাই। সরে যাওয়া সহজ।
    শুধু স্টুয়ার্ট এন্ড রথওয়েল এর বই বের করে বসতে হয়।কপি করতে হয় আঁকা, ছোট্টো ছোট্টো মার্জিনে নোট লিখতে হয়। সে মাঝে মাঝে এসে ঝুঁকে দেখে আরো অনেকের মতো। তার চোখে প্রশংসা আমি এড়িয়ে যাই।
    নতুন মানুষদের দেখলে মনের ভেতরে গল্প জমে। আমি এক হিলহিলে লম্বা মেয়েকে দেখি, শুনেছি সে মাতৃহীন। সে একটা চামড়ার ফোলিও ব্যাগ হাতে করে আসে, সেটা খুব ভালো লাগে আমর। তখনো আমার কোনো চামড়ার ব্যাগ নেই। একদিন লাইব্রেরিতে সে হাতে মাছের তেলে ছ্যাঁকা লাগার দাগ দেখালো। রান্নার লোক আসেনি, ভাজতে গিয়ে পুড়ে গেছে।
    আমি সেদিন অবধি খুন্তি ধরিনি। খানিক অবাক হয়ে দেখি। ভীষণ মায়া হয়।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ২০:২৪570076
  • বাহ! অনেকদিন পর লিখলে।
  • Bhagidaar | 216.208.217.6 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ২২:৪০570077
  • আরেকটু হোক!
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:১৮570078
  • সোসেন-দি লেখ
    বসে আছি তো পড়ব বলে
  • sosen | 113.225.178.130 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ২১:৫০570079
  • খাটের ওপর বাবু হয়ে বসে আছি আমি। এটা ২০১৫ সাল।
    প্রচন্ড আওয়াজে লুঙ্গি ড্যান্স বাজছে। এটা দোতলার ঘর। ২০০০ সাল , যখন এই ডায়রির শেষ এন্ট্রি, তার পর থেকে চলে গেছে পনেরো বছর। সব বদলে গেছে।
    যদি বলি ঐ ২০০০ অব্দি ছিলো প্রথম পর্ব, তবে আরো দু পর্ব অনায়াসে লেখা যায়। কিন্তু না, হাত চেপে ধরে অনেক কিছু। আরো সময় চাই। কিছু ক্ষত শুকিয়েছে, কিছু ক্ষত-হাত রাখলে বোঝা যায় এখনো দগদগে। কিছু আনন্দ এখনো টাইমস স্কোয়ারে গিয়ে চিৎকার করে বলার সময় হয়নি। আরো অপেক্ষার দিন বাকি। লিখতে লিখতে বুঝতে পারি--না, ঘষা লাগছে কোথাও একটা। এখনো ঠিক নিরাসক্তির ফ্রেমে মাউন্ট করা যাচ্ছে না এই ক্যানভাস।
    গত চার পাঁচ দিনে এক ফ্ল্যাটবাড়ির কনস্ট্রাক্শনের জন্য ফাঁকা হচ্ছে বাড়ির লাগোয়া জমি। তিরিশ বছরের কাঁঠাল গাছ, আমগাছ, বেলগাছ, নারকোল, সুপুরি--গত দুই দশক ধরে ওরা আমার জীবনের নীরব সাক্ষী। ঐ বেলগাছের পাতার ঝিরিঝিরির মধ্যে দিয়ে আমি একোসাথে শত সূর্যগ্রহণ দেখেছি। ওদের ছায়ার নীচে মাদুর পেতে বসেছি রৌদ্রতপ্ত দিনে। ওরা ছিল আমদের ধুলো, রোদ, মাইক, বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। প্রতি বসন্তে আসতো ছোটো ছোটো টিয়া, হলুদ বসন্তবৌরি, কোকিলের দল, এক মা-হনুমান। এ বছর আর ওরা আসবে না। কিংবা এসে নিরুপায় হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। যেমন হয় ঘর খুঁজে না পেলে।
    একটা বেজির বাসা ছিলো। সেটা ভেঙ্গে পড়লো। গোটা দুই দাঁড়াশ সাপ ছিল। তাদের আর দেখতে পাচ্ছিনা।
    এখন জানলা খুললেই ধুলো। এর পর আসবে বড়ো বড়ো সিমেন্টের গাড়ি। মাইকের আওয়াজ আর আটকায় না।
    আমার একটা বাড়ি আছে এখন। কিন্তু ঘর হারিয়ে গেছে।
    ওদেরো ঘর হারিয়ে গেলো। ওরা কিনা মানুষ নয়। তাই ওদের ঘরের অধিকার নেই। মানুষের একটা দুটো, চারটে ফ্ল্যাট চাই। হোম লোন চাই। ট্যাক্সের ছাড় চাই। আরো, আরো সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ চাই। ওদের চাইতে নেই।
    সেই পাকেচক্রে সুতোগুলো সব হারিয়ে গেলো। হারিয়ে যায়। ওদের আর খুঁজে পাবো না।

    আর এখন লেখা হবে না এই জার্নাল। পরের পর্ব ঘা শুকোলে।

    (শেষ)।
  • | ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ২১:৫৭570080
  • .
  • dd | 132.171.102.229 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ২২:০৭570081
  • বাব্বারে বাব্বা।

    ক্ষী ল্যাখে এই মে'টা।
  • সিকি | ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ২২:১৪570082
  • জাস্ট হাঁ হয়ে বসে আছি। এভাবেও শেষ করা যায়!
  • Paallin | 226.113.160.71 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৮570083
  • হুট করে ঢুকে এমন একখান পড়া। এ কপালে থাকতে হয় !
    লেখিকাকে হাজার সেলাম ঠুকে গেলাম। ঘা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে আসুক ......... পরের পর্ব পড়ার আশায় রইলাম।
  • san | 11.39.24.34 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১০:৪৫570085
  • সিকির কথাটা আসলে আমার বলার ছিল !
  • Du | 230.225.0.38 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:৫৮570086
  • লী টা বিনয় করে, এ তো ঠিক সেই জিনিষটাই
  • de | 24.139.119.172 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:১৯570087
  • যাঃ! শেষ করে দিলে-- আরো শুনবো বলে বসে ছিলাম তো!
  • Ela | 15.69.121.183 | ২৯ মে ২০১৬ ১৯:৪০570088
  • সোসেন, আগে এই লেখটা পড়িনি। কীভাবে মিস করে গিয়েছিলাম জানি না। এখন পড়লাম, খুব ভালো লাগল বললে কমই বলা হবে। সেই ছোট্টো মেয়েটার জন্য অনেক ভালবাসা রইল।

    আমার ছোটবেলা ঐ বাগুইহাটি-দমদম পার্ক এলাকায় কেটেছে। আমার খুড়তুতো বোনেরা সব ক্রাইস্ট চার্চে পড়ত। আমার ছোটবেলায় নানা পারিবারিক জটিলতায় মা-বাবা যৌথ পারিবার ছেড়ে বেরিয়ে এসে অন্যত্র বাড়ি করেন, ফলত আমি অন্য স্কুলে ভর্তি হই।

    আমরা বোধহয় সমসাময়িক, ১৯৯৮ এ আমার কলেজবেলা শুরু। এক নিতান্ত হাঁদা কারণে বাড়ির কারো কথা না শুনে আমি বেথুনে ভর্তি হইনি যেমন আরো কয়েকটি কলেজেও হইনি। পরবর্তীতে আমার কলেজবেলা এত কষ্টে, এত অপমানের মধ্য দিয়ে কাটে, এত আঘাত পাই, যে ভর্তি-না-হওয়া কলেজগুলির জন্য এখন আফশোস করি এতদিন পরেও। মনে হয়, ওসব কলেজে ভর্তি হলে হয়্ত অনেক শান্তি থাকত, অনেক আনন্দের স্মৃতি থাকত। আর যাই হোক, এত অপমানের বোঝা বয়ে বেড়াতে হত না।

    এ সব অযাচিত (হয়ত বিরক্তিকরও) কথার একটাই উদ্দেশ্য। হয়ত ক্রাইস্ট চার্চ বা বেথুনে ভর্তি হলে আপনি আমার বন্ধু হতেন।

    ভাল থাকবেন।
  • পুপে | 131.241.184.237 | ৩০ মে ২০১৬ ০৯:৩৯570089
  • সোসেনদি,
    রাত তিনটে অব্ধি লাল লাল চক্ষু (খানিক ঘুমের চাহিদায়, আর বাকি পুরোটাই চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়া জলের জন্য) নিয়ে এটা শেষ করলাম। কিছু বলার মত ভাষা পাইনা। শুধু পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। সময় পেলে লিখো আবার। ভালো থেকো।
  • অভি | 37.63.183.155 | ৩০ মে ২০১৬ ১৫:৪৪570090
  • একটানা পড়লাম, কুর্নিশ।
  • sosen | 80.158.100.154 | ০২ জুন ২০১৬ ০১:৫৯570091
  • এলা, আমি ৯৭ এ। এই তো দেখা হোলো!
    পুপে, অভি, ঃ)

    হয়তো আবার লিখব। ঐ যে লিখেছি, ঘা শুকোলে, তা শুকোচ্ছে তো বটেই।
  • Ela | 15.69.121.183 | ০২ জুন ২০১৬ ০২:০৫570092
  • তাড়া নেই, একদমই নেই। শুনব যখন বলতে মন চাইবে। বন্ধুর কথা না বললেও শোনা যায় তো।
  • Paramita | 896712.159.341223.211 | ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:৪৭570093
  • আজ এতদিনে পড়লাম। কি আর বলি। কলমেই থাকো।
  • সিকি | 894512.168.0145.123 | ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:৩৭570094
  • বড় ভালো জিনিস খুঁজে দিলে পামিতাদি। বিকেলটা অন্যরকম হয়ে গেল।
  • Tim | 013412.126.562323.237 | ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ২১:২১570096
  • ভালো খারাপের ঊর্দ্ধে, আরো একটা কথা থাকে সোসেনের এই লেখায়। সেটা ফিরে পড়তে গিয়ে মনে হলো বলি। খুব সহজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার এই সময়ে, কথা বলার সময়, ইন্ট্যার‌্যাক্ট করার সময়, এমনকি উপদেশ দেওয়ার সময়েও, নতুন পুরোনো পরিচিতি নির্বিশেষে মানুষের আরেকটু পজ করা খুব দরকারি হয়ে পড়েছে। আরেকটু ভেবে কথা বলা, যাতে দগদগে ক্ষত রোজ তৈরী না হয়, এই কারণেই। কথাটুকুই পড়ে থাকে দিনের শেষে। যত বয়স বাড়ছে ততই আঘাতপ্রবণ হয়ে পড়ছি, বয়স্ক ফুটবলার হেন চোট খেতে খেতে একসময় অবসর নিতে হবে ভেবে আজকাল চিন্তা হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন