এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফেসবুক থেকে কিছু পুরনো লেখা

    sosen
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১২ | ১৮০২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sosen | 218.107.178.181 | ০৩ আগস্ট ২০১৩ ১৯:১৯569864
  • কলেজ বিল্ডিং-এর পিছনে এক মস্ত গাছে প্রচুর বাদুড়।সারাদিন তাদের উল্টোবাগে ঝুলে থাকা। তেমনি, আমার প্রাণপণ ঝুলে থাকা, দাঁতে সুতো কামড়ে রাখার লড়াই। তখনো আমাদের সেই একটি মাটির ঘর, তার মেঝেতে ইঁদুর মাটি তুলে ডাঁই করে রাখে। রান্নাঘরের মাটির মেঝেতে একসারি ইঁট পাতা, তার উপর গ্যাসের উনুন। একটা ছোট্ট সাদা-কালো টিভি, তারই পাশে পড়ার একটা ভাঙ্গা টেবিল চেয়ার, যেখানে আমি ছাড়া কেউ বসতে পারেনা। মেঝেতে মাদুর পেতে ভাইয়ের পড়াশুনো, টেবিলে আমার, তার-ই মাঝে টিভিতে খেলা চলে, লোকজন আসে যায়, আর টিনের চাল থেকে তাপ চুঁইয়ে পড়ে। দেওয়ালে ঝরে পড়তে থাকা সিমেন্ট, ভাঙ্গা বাথরুম, এইসব ছেড়ে আমি উড়ে যাই মনে মনে। পাতা খোলা বইয়ের সামনে বসে দিবাস্বপ্ন দেখি কোনো লাল পাতা ঝরা দেশে ছোট্ট একটি বাড়ির। তার আনাচে কানাচে নেই এক ছিটে ধুলো কিংবা নোংরা। একটা সুন্দর লাইব্রেরি। তার একদিকের দেওয়াল জোড়া কাচ, তা দিয়ে দেখা যায় একদিকের অরণ্য। আর আধো আঁধারী বইয়ের গন্ধ-ওলা সেই প্রশস্ত ঘরে বসে আমি বই পড়ি।
    এমনি করে আমি নিজেকে আলাদা করে নিতে শিখি। আমার কল্পনার মিথ্যে জগতে। আবরণের মত সেই সব দিবাস্বপ্ন ঘিরে থাকে আমায়। বাল্যাবধি কারো উপর নির্ভর করতে না পারা আমার অন্ত:স্থলে এক কল্পজগতের জন্ম দেয়। যেখানে সব পারফেক্ট। ছবির মত সুন্দর সব মানুষেরা। মায়েরা ঠিক বাণী বসুর গল্পের মত, গম্ভীর, চশমা-পরা, শান্ত। বাবারা আপনভোলা, ভালো মানুষ। প্রেমিকেরা দীর্ঘদেহী, মিতভাষী, ঘিরে নেওয়া সমর্পণ। মনে হয় হঠাত চোখ খুললেই এসব সত্যি হয়ে যাবে। নিমেষে।
    সত্যি অবশ্য যেমন তেমন-ই থাকে। হা-ক্লান্ত মা সারাদিন কাপড় কেচে, বাসন মেজে আরো কালো হতে থাকে। বাবা আরো রোগা হয়, আরো কাশে। স্মোকার্স কাফ, ধূমপান বন্ধ না হলে থামেনা। আর আমি তো আমি-ই, সেই তৈলাক্ত , মোটা বিনুনি, রক্তহীন স্ফীতি।

    সকালবেলা দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে পূর্বা যখন বেরোয় তখন ওকে ধরতে হয় সকালের প্রথম মেট্রো। লোরেটো ইস্কুলের দারুণ ফ্যাশনেবল পূর্বা একদিন ভাঙ্গা চশমা হাতে নিয়ে আসে। মেট্রোর ভিড়ে চাপ পড়ে ভেঙ্গে যাওয়া চশমা। দারুণ ফিগার, জিন্সের মধ্যে ইন করে জামা পরা, পিঠের মাঝ অবধি সোজা লাল চুল , সুদৃশ্য সব বেল্ট পরা পূর্বা পড়াশোনায় -ও খুব ভালো। তারা তিন বোন। পূর্বার প্রিয়তম বন্ধু শমী, শিলিগুড়ির মেয়ে, কনভেন্টের। লাল টুকটুকে গাল, ছোট ছোট চুল কাটা লম্বা , সুদর্শনা শমী। এদের জীবন আমার অচেনা। এরা কোন সব দোকান থেকে তদবধি না দেখা জামাকাপড় কেনে, ইংরেজি গানের গপ্পো করে, ইংরেজি সিনেমা দেখতে যায়। আমাকে গান শোনার জন্য বাবা একটা নীল এফ এম রেডিও কিনে দিয়েছে, তিরিশ টাকা দাম। সেটা কানে লাগিয়ে আমিও গান শোনার প্রয়াস পাই। তখন আমাদের ফিলিপসের রেডিও খারাপ হয়ে গেছে এবং কে যেন সেটা সারাতে নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেয় নি।
  • pragati | 126.68.78.62 | ০৩ আগস্ট ২০১৩ ২৩:১৭569865
  • সোসেন, এইমাত্র এতদিন পরে আপনার লেখা পড়লাম।
    ব্রাভো! শব্দ, বাক্য, কথা জড়িয়ে মড়িয়ে কি যে অতুল তরবারি এনেছেন, সেলাম আপনাকে।
  • achintyarup | 103.186.31.80 | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ১৮:৩৮569866
  • এই টই আমি অনেক বার পড়েছি। অনেক বার। কিন্তু লেখা নিয়ে কমেন্ট করিনি কখনো। আসলে, কী লিখব বুঝে উঠতে পারিনি। আমার কাজ সহজ করে দিলেন ইন্দ্রাণীদি আর কাবলিদা। হ্যাঁ, এই রকম লেখা আমি নেটে আর পড়িনি কখনো। আর, এরকম একজন মানুষের সঙ্গে পরিচয় আছে, ভাবতে খুব ভাল লাগে আমার। আমার খুব গর্ব হয়, সোসেন।
  • sosen | 218.107.178.181 | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ১১:৩৯569867
  • এই কলেজে প্রায় ইস্কুলের উইকলি টেস্টের মত মান্থলি টেস্ট হয়। তাতে পাশ করতে হয় রীতিমত। রেজাল্ট বেরোয়। ইস্কুলের মতই টিফিন নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু গেটের বাইরে পঞ্চাশ বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করা দাদুর কাছ থেকে টিফিনে ফুচকা খেতে অসুবিধা হয়না তত। টিউশনির পয়সায় এসব তো হয়ই, আরো হয় দু একটা সৌখিন কানের দুল কিংবা চটি, দেড়শ টাকার সালোয়ার কামিজ, স্টিকার কিংবা গল্পের পুরনো বই, দেশ। না, ক্লাসের নোট জেরক্স হয়না। আমি লাইব্রেরির পূর্ণ ফায়দা তুলি, বই টুকে , নোট লিখে। সত্যি বলতে কি, ভালই লাগে। রংচঙে পেন দিয়ে অজস্র ছবি এঁকে নোট লিখতে লিখতে মনে পড়ে যায়, এককালে আমি ছবি আঁকতাম।
    ছুটির পর কোনদিন শ্যামবাজার অবধি হাঁটি, কোনদিন কলেজ স্ট্রিট। শ্যামবাজার মোড় পেরিয়ে গিয়ে আর জি করের আগে খালধারে ৯১সি আর এল নাইনটি ওয়ান বি র টার্মিনাস।সেখানে গিয়ে বাসে বসে পড়তে পারলে এক বাসে বাড়ি। শেষ বিকেলের আলো, খালের পচা গন্ধ আর ধুলোর স্রোতেও আস্তে আস্তে গা-মুচড়ানো, বেলাশেষের খিদেতে একটু গা বমি বমি করা নিজের কলকাতা তৈরী হতে থাকে আমার। সে কলকাতায় দুজন ভাগ করে ব্লসম থেকে একটা রোল খাওয়া যায়, কিংবা ষ্টার থিয়েটারের আগের গলিতে মাসিক কুড়ি টাকায় যথেচ্ছ বই ভাড়া পাওয়া যায়। দুটাকা বা পাঁচ-ছ টাকায় দরকষাকষি করে হাতিবাগানে কিনে ফ্যালা যায় আভরণহীন রাণীমার জন্য একজোড়া মেকি সোনার দুল কিংবা আসন বোনার একটা চার চৌকো চট আর রঙিন উল। তাইতে আধো অন্ধকারে হাসিতে ভরে ওঠা একটা মুখ দেখে বুকের ভিতরটা এক অনাস্বাদিতপূর্ব মায়ায় ভরে ওঠে অকস্মাৎ। সময়ের বড় অভাব হলেও আরেকটা টিউশনি নিতে আর দ্বিধা হয়না। চাদরের ছেঁড়া অংশ সুদৃশ্য তাপ্পি দিয়ে ঢাকতে ঢাকতে পড়িয়ে দিই আরো দুটি ছাত্রী। আর ভোরের চটা ওঠা কাপে একমাত্র বিলাসিতার সুগন্ধি চা খেতে খেতে মায়ের হাতে নকশায় ভরে ওঠা আসনটির দিকে তাকিয়ে থাকি।
  • maximin | 69.93.202.71 | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ১৩:১৮569868
  • একমাত্র বিলাসিতার সুগন্ধি চা -- উফফ এইটাও মিলতে হল। অনেক কিছুই মিলছিল একজনের সঙ্গে তার গল্প সে লিখে রেখে যায় নি। তার না-বলা-বানী তোমার লেখায় পাচ্ছি সোসেন। তোমার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার সীমা নেই।
  • সে | 203.108.233.65 | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ১৭:২৭569869
  • বাঃ আরেকটা অধ্যায়। বেশ ভালো হচ্ছে।
    আর ইয়ে মানে, খাসিয়া জয়ন্তিয়া গারো পাহাড়ের দুনিয়ায় ঐ সুমতির মাতৃতান্ত্রিক মেঘালয়ে কনিষ্ঠা কন্যা সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারি হয়; বাবা নয় মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হয় সন্তানরা। ওখানে ঐরকমই নিয়ম।
  • sosen | 218.107.178.181 | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ২১:০৬569870
  • স্মৃতির একটু একটু ঝাপসা আয়নায় ফিরে নিজেকে দেখি যখন, চারপাশের মুখগুলোকেই ঝকঝকে দেখায়, আর নিজেকে একটা ধোঁয়াটে মানুষ বলে ভ্রম হয়। কিছুতেই মনে পড়ে না , কি করছিলাম তখন, কি ভাবছিলাম, কেমন করে গড়ে উঠলো এই গল্পের টিলা। শুধু তার চূড়ায় দাঁড়ালে বহুদূর , বহুদূর নজরে আসে। ঘটনারা আগে পরে হয়ে যায়, সামনে থাকে এক মাঝারি মেধার, মাঝারি উচ্চতার, মধ্যপন্থী বালিকার একগুঁয়ে সামনে এগোনোর চেষ্টা, যে সামনে ঠিক কি আছে, কতদূর সামনে যাওয়া যেতে পারে তা-ই সে জানে না। কিন্তু সেই অনিশ্চয়তার সেঁক দেহে নিতে এক ধরনের আরাম। কড়া রোদ্দুর যেমন ঝিম ধরায় মাথায়, তেমন এক নেশা।
    শারদীয়া উত্সব আর কোনো কলেজে হত কিনা জানা নেই। বেথুন কলেজে শারদোত্সব হত, বোধহয় মহালয়ার দিন। নীল রঙের অডিটোরিয়াম, সে ঠিক অডিটোরিয়াম নয়, একটা ঘর। সেখানে কাশফুল আর শিউলিফুল এনে সাজানো হত আগমনী উত্সবের জন্য। এই উত্সবের চরিত্র কতটা হিন্দু তা অবশ্য জানিনা। এখন মনে হয়, আগমনী উত্সবের গান থেকে শুরু করে সজ্জা সব-ই যথেষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ রাখা তো সম্ভব ছিলনা। "যাও যাও গিরি আনিতে গৌরী" গাইলেই যে ইমেজারি চোখের সামনে ভাসে তা দুগ্গা ঠাকুরের , কিন্তু মুসলিমদের পরমানন্দে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে দেখেছি। কিছুদিন আগে শুনলাম এই উত্সবের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কলেজে। প্রশ্নটা হয়ত সঠিক। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে নীল শাড়ি পরা একদল মেয়ে যে ছুটির আবহাওয়া তৈরী করত মনের কোণে, শরীরে যে হালকা রোদের সেঁক লাগত, মনে পুজোর রং লাগত, তা যে কারুর খারাপ লাগতে পারে এ প্রশ্নই মনে উদয় হয়নি সেদিন কখনো। ছোট্ট চেহারার পাম্শু পরা প্রিন্সিপাল পুষ্পা মিশ্র টুক টুক হেঁটে বেড়াতেন সামনে। ফিজিক্সএর হেড নন্দিনীদি সাদা শাড়ি ব্লাউজ আর ফিতে দিয়ে বেড়াবিনুনি বেঁধে কলেজে আসতেন সবসময়। এই সব ভালোমানুষ দিদিদের ভিড়ে ইস্কুল ছেড়ে এসেছি তা আর মনে হত না। এমনকি ইস্কুলের প্রেয়ার -ও শুনতে পেতাম। পিছনের গ্রাউন্ডে গং করে ঘন্টাধ্বনি অবধি।
  • | 24.97.49.162 | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ২১:১৩569871
  • পড়ছি
    তারপর?
  • nina | 22.149.39.84 | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ২৩:৩০569874
  • এইরকম ক্ষণজন্মা রা আছে বলেই পৃথিবী আজও ঘুরছে!
    সোসেন তোমার কথা যত পড়ছি তত মনের জোর পাচ্ছি----এগিয়ে চলার নামই জীবন--অর তোমার মতন করে এগিয়ে চলার নাম সার্থক জীবন!!
    শ্র্দ্ধায় মাথা নীচু করলাম!
  • kumu | 94.70.118.216 | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ২৩:৩০569872
  • ইশ্কুলের প্রেয়ারে আমি আছি।
  • sosen | 218.107.178.181 | ০৮ আগস্ট ২০১৩ ২০:৪২569875
  • মিনদি, দেখলাম, কোনো ব্যক্তিগত স্মৃতি, জিগ্যেস করা উচিত হবে না হয়ত। আমার লেখা পড়ছেন, এরজন্য আমি-ই কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম।
  • maximin | 69.93.199.48 | ০৮ আগস্ট ২০১৩ ২০:৪৮569876
  • :)
  • sosen | 111.63.138.35 | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ২০:৪৩569877
  • পুজো আসে। অনেক রং, বর্ণ , গন্ধ নিয়ে এই পুজো আমার বড় হয়ে ওঠার পুজো। ইস্কুলে পড়তে বন্ধ দরজার ওপার থেকে মুখ তুলে দেখার ফুরসত হয়নি কখনো। এইবার হঠাত পুজো এক নতুন দুয়ার খুলে দেয়। ছোটবেলায়, বাবা পুজো দেখাতে নিয়ে যেত, বাগবাজার থেকে শুরু করে কলেজ স্ট্রিট। এবার সেই জায়গাগুলো নিজেই চিনতে পারি। রোজ রোজ যাওয়া আসার সুবাদে। কলেজ স্ট্রিট ভরে ওঠে নতুন পুজোসংখ্যার গন্ধে, সে গন্ধ বুকে টেনে নিতে নিতে আমি বইপাড়া দিয়ে হাঁটতে থাকি, বেসামাল। সাথে দু একজন বন্ধু। কখনো তা-ও নয়। ধাক্কা খাই, ড্যাবডেবে চোখ মেলে উপরপানে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে। বুকের কাছে কাপড়ের ব্যাগ আঁকড়ে রাখতে শিখি হাঁটার সময়। মেডিক্যাল কলেজের উল্টো দিকের সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টের দোকানগুলিতে আমার না-হতে পারা ডাক্তারির স্বপ্ন উচাটন উড়ে বেড়ায়। একটা সবুজ এপ্রন কিনতে ইচ্ছে করে।
    প্রেসিডেন্সির মাঠে আমাদের স্পোর্টস হয়। কারণ বেথুন কলেজের পিছনের মাঠ খুঁড়ে পাওয়া গেছে প্রত্নতাত্ত্বিক কিছু নিদর্শন, এক কুমোরশালা, বোধহয় শশাঙ্কের আমলের। আর্কিওলজি বিভাগ এসে ঘিরে ফেলে ওই পিছনের মাঠ। আমি একটা গাঁজার কলকে তুলে আনি, পোড়ামাটির। তার গা কি মসৃণ! স্পোর্টসের নাম করে মাঠে বসে আড্ডা হয়। খুব একটা দৌড়াদৌড়ি হয় না। প্রেসির হোস্টেলে আমাদের কলেজের কিছু মেয়ে থাকে। কাজেই মোটামুটি জানাশোনা। আমার সাথে ঘোরে হোস্টেলের মেয়ে মানসী( নাম বদলানো শ্রেয়: মনে হলো ) , আর সকলকে চিনিয়ে দেয়। তার চোখ আটকে থাকে অবশ্য আমাদের থার্ড ইয়ারের একটি দিদির উপর। লম্বা, রোগা, টকটকে ফর্সা, মিষ্টি-মতন মুখের সেই দিদি তার রুমমেট, লখনৌ-এর প্রবাসী বাঙালি। মানসীর মুখের উপর যে সব ছায়া আলো খেলে যায় গীতুদিকে দেখে, সেসব আমি পড়ার চেষ্টা করি। মনে রাখার-ও।
    মানুষ দেখতে ভালো লাগে বড়। লাইটহাউস না নিউ এম্পায়ারে Jerry Maguire দেখতে যাই, আমি, পূর্বা , শমী ও অন্তরা। পূর্বা আর শমী সারাক্ষণ বকে যায়। আমি এই প্রথম বড় পর্দায় ইংরেজি সিনেমা দেখা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে থাকি, অর্ধেক কথা না বুঝলেও। বেরিয়ে এসে ওরা ফ্রেঞ্চে জামা বানাতে দিতে যায়। আমি মনে করে রাখি, আমি-ও এখান থেকে জামা বানাবো। কত ডিজাইন বইতে। আর কি ভালই না লাগে বৃদ্ধ দর্জির জামার মাপ নেওয়া দেখতে।
    মানুষ জমাই আমি। স্কেচের খাতায়, ডায়রিতে, দিস্তা খাতায়। উপর্ঝুরন্ত হয়ে আসে কবিতা, মুক্তো মুক্তো আকাশ, হলদেটে, মিষ্টি কলকাতা। সে আমার কোনাচে গ্রামের থেকে শতযোজনদূর। সে আমার পাখায় জোর, স্বাধীনতার উড়ান।
  • sosen | 111.63.138.35 | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ২১:৩১569878
  • ব্যস্ত রাজপথ এই পাড়ায় এসে থমকে গেছে। সময় চলে একটু ঢিমে তালে। ফুটপাথে শুয়ে থাকে বেশ কিছু পুরুষ রমণী ও শিশু, মাঝে মাঝে ফুটপাথ থেকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভ্যান আসে। তখন তারা পালিয়ে যায়। ওই বাচ্চাদের পয়সা দিতে নেই, তা হলে ওরা ডেনড্রাইট কিনে নেশা করে, সামনে বৈকুন্ঠের দোকানের দাদু বলে দেন। গলি ধরে সেন্ট্রাল এভিনিউর দিকে গেলে বাম হাতে পড়ে সেই বিখ্যাত কচুরির দোকান। তিন টাকায় চারটে দেবভোগ্য কচুরি আর যথেচ্ছ মটর-আলুর হিং দেওয়া ঝোল। হেদোর গা ধরে উল্টোদিকের গলিতে বেথুন কলেজের ভাঙ্গা সেকেলে হোস্টেলবাড়ি । শুনি সে নাকি খুব নোংরা। মেটিয়াবুরুজ থেকে আসে পৃথা, সে কতদূর, কত সময় লাগে ওর আসতে। ভেবে খুব অবাক হই। দু একজন ভর্তি হয়েও অন্য কলেজে চলে যায়, শ্রীতমা যায় ব্রেবর্নে, আরো দু-এক জন। সকলে টিউটরের খোঁজ করতে থাকে। অনেকে ভর্তি হয় স্কটিশের এক নামকরা প্রফেসরের কাছে, আর হাতিবাগানে প্র্যাকটিকাল ক্লাস-ও করে অনেকে। বেথুন, স্কটিশ ও প্রেসির ছাত্রছাত্রীরা একে অন্যকে বেশ চেনে। এক-ই টিউটরিয়াল-এ পড়ার জন্য হয়ত। আমি সবার নোটগুলো খুঁটিয়ে দেখে নিশ্চিত হই, এ আমার বিশেষ কাজে লাগবে না। অত মুখস্থ-ই বা কি করে করব? তা ছাড়া চার-পাঁচশ' টাকা অনেক টাকা, তা নষ্ট করতে ইচ্ছে করে না। তার চেয়ে দু -একটা বই কিনে দিলে কাজে দেয়, বাবাকে বলি। অবিশ্যি শেষ অব্দি একখানা ভলিউম কলেজ বোটানি ছাড়া কিছুই কেনা হয়না। টোকাটুকিতে এফিসিয়েন্ট আমি কাজ চালিয়ে যাই নিজের মত। আমার পড়াশুনোর দিকে কেউ আজকাল আর মনোযোগ দেয়না। প্রয়োজন-ও হয়না। ভাই বড় হচ্ছে। তার পড়াশুনো প্রথম প্রায়োরিটি হয় এখন সংসারে। সেই অবসরে আমি হাতড়ে বেড়াই মাঝারি রকম কোনো সাফল্যের মই। চাকরি, পড়াশুনো, দুটোই করতে হবে, কি করে করা যায় তা জানিনে, কিন্তু করতে হবে জানি। এদিকে আমার যে ভাল্লাগে ছবি আঁকতে, আর লিখতে, তার কি হবে?
  • siki | 127.192.12.126 | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ২১:৫৭569879
  • তার পর?
  • | 24.97.200.98 | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ২২:০৫569880
  • আমারও এককালে খুব শখ ছিল অন্যদের মত ফ্রেঞ্চ-এ জামা বানাব, কত্ত কত্ত ডিজাইন ওদের। পরে অবশ্য লায়েক হওয়ার পর সুষমা-য় বানাতাম আর আরো পরে নতুন নিউ মার্কেটের দোতলায় সঞ্জয় টেলার্স।
  • sosen | 111.63.201.87 | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ২২:৪৯569881
  • শীতের সময় হেদোর গা জুড়ে রঙিন ভুটিয়া সোয়েটার, উল, মাফলারের মেলা বসে। তার উপর হাত বুলিয়ে আসি। কত রঙের উল। পাহাড়ি শহরের স্বপ্ন আমার বুকের ভেতর ঘাঁটি গেড়ে বসে। একদিন, কোনো একদিন--নিজঝুম এক কুয়াশা-ঢাকা রাস্তা, দূরে টিমটিম আলো, কাঠের ঘরে কার্পেট আর ফায়ারপ্লেস আমার মায়ানগর। কোনোদিন, আরো অনেক অনেক দূরের কোনো বিদেশী শহর, পাতাঝরা রাস্তায় মচমচ শব্দ তুলে হেঁটে যাওয়া, একলা, একলা কিন্তু সম্পূর্ণ। তখন-ও বিদেশ তার আঁখিপল্লবে ইষৎ মায়ারাখা এক অচিনকন্যা, পাশের বাড়ির সকাল বিকেল উড়ান হয়ে ওঠেনি সে তখন। আর আমি , আমি তো তখন-ও দূরপাল্লার ট্রেন-এও উঠিনি। নেহাত ছোটবেলার বেড়ানোর স্মৃতি আর নেই।
    তখন-ও ভাবিনি পায়ের নিচের ছোট্ট তিল একদিন আমায় আর শান্ত হয়ে বসতে দেবেনা, খালি গোল্লাছুট করিয়ে নিয়ে বেড়াবে এ শহর থেকে ও শহর, সমুদ্দুরের এপার ওপার।
    ম্যাগাজিনে লেখা চাইতে আসে পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইংরিজির ছেলেমেয়েরা। আমি চুপি চুপি, সবাইকে লুকিয়ে গিয়ে একটা গল্প লিখে দিয়ে আসি।
    তারপর, ম্যাগাজিন বেরোলে ডাক পড়ে আল্পনাদির ঘরে। গল্প পড়ে তাঁর গলা ভারী কান্নায় , চোখের কোণে জল। শুধু বলতে থাকেন এমন কি করে লিখলি তুই, ছোট্ট মেয়ে, কি করে লিখলি? এ যে আমার কথা।
    সে ছিল এক মায়ের গল্প, একলা মা, যাঁর কাছ থেকে ছেলে বিদেশে চলে যাচ্ছে পড়াশুনো করতে। কোনভাবে হৃদয়ে হয়ত ছোঁয়া লেগে গিয়েছিল দিদির। আমি সাদা দেওয়ালে মিশে দাঁড়িয়ে থাকি, আর ম্যাগাজিনটি স্টাফরুমে হাত থেকে হাতে ঘুরতে থাকে। নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখতে আমি কোনোদিন চাইনি তা নয়, কিন্তু দেখার পর, কেমন নগ্ন মনে হয় নিজেকে অকস্মাৎ। যেন সহসা সব ঢাকনা কেড়ে নিয়ে কে সহস্র আলোর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমায়। ঢোঁক গিলতে গিলতে ক্লাসে ফিরে আসি আর ভাবি, কোনোদিন আর লেখা দেব না কোথাও। কক্ষনো না। কাউকে দেখাবো না।
  • sosen | 111.63.201.87 | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ২৩:২৭569882
  • আলাদা হয়ে যাই। না, আমার পৃথিবী আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ইস্কুল কলেজ নিয়ে কোনদিন-ই হয়ত ছিল না। ধীরে ধীরে গুটি কাটার সময় আসে যখন, দেখি আমি এক বুদবুদের মধ্যে বাস করি। ব্যূহ চক্র তীর তীরন্দাজকে ঠেকাতে আমার বর্ম গড়ে উঠেছে আপনা আপনি। তার মধ্যে উঠন নামন, তার মধ্যেই বাঁচা। বুদবুদের গায়ে হাত ঠেকিয়ে অন্যকে ছুঁতে চেষ্টা, যা বেশিরভাগ সময় অসফল। সম্পর্কগুলি আপনা আপনি খসে পড়ে এবার, পেঁয়াজের খোসার মত। নির্লিপ্তি, আর এই নিজস্বতার তীব্র আকুতি খেয়ে নিতে থাকে আমায়। কলম-কাগজ। এই আমার সংগোপন পৃথিবী হয়ে ওঠে।
    স্কুল থেকে এক বান্ধবী এসেছিল এই কলেজেই। তার-ই সঙ্গে ছিল সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, একমাত্র বন্ধু বললেও হয়। যেমন যেমন আমার ক্লাস পরীক্ষার রেজাল্ট ঝলমলিয়ে উঠতে থাকে, অন্যান্য ব্যাপারেও দিদিমণিরা ভারী প্রশংসামুখর হয়ে উঠতে থাকেন, তেমন তেমন সে সরে যেতে থাকে। সরে যাওয়ার সে ধরন কেমন করে বোঝাই। সে ছিল সাদামাটা সাজ পোশাকবিহীন মেয়ে। হঠাতই সে হয়ে উঠলো পোশাক আশাকে ভারী মনোযোগী, সৌন্দর্য্যে তীক্ষ্ণ নজর, যে দু একটি মেয়ে ওসব অতিরিক্ত ভালবাসত তাদের সঙ্গেই সময় কাটাতে শুরু করলো। আমি যে তার সঙ্গে কবিতা পড়তাম! তাতে আর উত্সাহ রইলো না তার-আমার বই পড়ার সঙ্গী হারাতে শুরু করলো। আমি ঘাড় গুঁজে আরো নিজেকে লুকোতে চাই, কিন্তু তাতে কি হয়? কলেজের অভ্যন্তরীণ বাত্সরিক উত্সবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়, দলগত ক্যুইজ থেকে শুরু করে ডিবেট , আবৃত্তি, তাত্ক্ষনিক বক্তিমে, তাত্ক্ষনিক ক্রিয়েটিভ রাইটিং। নাচ, গান ইত্যাদি-ও। আর নাম তো ডিপার্টমেন্টের দিদিরাই লিখিয়ে দেন। পাঁচটা ইভেন্টে প্রথম হয়ে, সেই সঙ্গে ক্লাসের রেজাল্ট মিলিয়ে স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার হওয়া গ্যালো, একখানা মেডেল আর কিলো কিলো বই পেলাম, কিন্তু আমার বন্ধুটি হারাতে থাকলো। সে গল্প আসবে।
    তার আগেই অবশ্য হই হই করে এসে গেল এক্সকার্সন, জ্ঞানত আমার প্রথম বেড়াতে যাওয়া। ঝাড়গ্রাম, জঙ্গলমহল। ফুলডুংরির দেশে, লাল ধুলো উড়িয়ে। তার জন্য আটশ টাকা কি করে যোগাড় হয়, সে বরম এই আনন্দের নিচে চাপা থাক।
  • nina | 78.34.163.242 | ২৫ আগস্ট ২০১৩ ০০:২০569883
  • ------------চুপকথায় মুগ্ধতা----
  • siki | 127.192.12.126 | ২৫ আগস্ট ২০১৩ ০০:৪২569886
  • লেখা কি আট্টু এগোবে? ঘুমোতে পারছি না।
  • sosen | 111.63.201.87 | ২৫ আগস্ট ২০১৩ ০১:০৫569887
  • আরে, একি রহস্য গপ্প?
  • siki | 127.192.12.126 | ২৫ আগস্ট ২০১৩ ০১:১৫569888
  • না। নেশা ধরে গেছে। শুধু কি রহস্যের গল্পেই নেশা থাকে?
  • sosen | 125.242.244.117 | ২৫ আগস্ট ২০১৩ ১২:৩০569889
  • একটা ছোট্ট ব্যাগ, তিনদিনের ট্যুর। তাতে তিনটে সালোয়ার কামিজ, ম্যাক্সি, সাবান, পুরনো ভারী ন্যাপথলিন-গন্ন তোয়ালে, হাওয়াই চটি। একটা হাতব্যাগে পঞ্চাশ টাকা, পাউডার আর চিরুনি। একটা গল্পের বই। কৌটো ভরে নিমকি আর নারকেল নাড়ু, যদি খিদে পায়! আর ঝমঝম ট্রেন তারপর ভেসে যায় লালমাটির দেশে। দল বেঁধে হই হই, অন্তাক্ষরী , ডাম্ব শ্যারাদের মাঝে কোনোমতে জানলার পাশে গিয়ে বসে পড়ি। বিভোর চোখ শুষে নেয় সবুজ সবুজ চাষের ক্ষেত, ফুলের ক্ষেত, পুকুরে পদ্ম-শালুক, ছোট ছোট ক্ষেতে জবার চাষ। মাটির দোতলা বাড়ি, খড়ের ছই। আস্তে আস্তে লাল রং লাগে মাটিতে, ধুলো ওড়ে, ফুল কমে আসে। গাছপালা হয় অবিন্যস্ত, অনাদৃত, একটু বা শুখা। সুবর্ণরেখা দেখতে পেয়েছিলাম কি পাইনি, মনে পড়ে না। স্টেশন ঠিক ছবির মত। ঝরে পড়ে শাল পাতা। একটা সাদা বাঁধানো খাতায় ডটপেন দিয়ে ছবি আঁকি আর আঁকি। আমার নেই ক্যামেরা, তাই এই প্রয়াস-হায়, সে সব খাতা এখন কোথায়? প্রতি পাতায় তার ছবিতে একেকটি গল্প লুকিয়ে ছিল, সেসব আর মনেও পড়ে না। সঙ্গে আল্পনাদি আর ভারতীদি। ভারতীদি ট্যাক্সোনমিস্ট , সব গাছ চেনেন। স্টেশনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে দুটি খোলা জিপ, আমরা থাকব ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির আউটহাউসে। জিপের পিছনে বসি, মুহূর্তে সারা শরীর লাল হয়ে যায়, কি ধুলো, কড়া ধুলোর ঝড় তুলে জিপ ছোটে। আদিবাসী মহিলাদের দেখতে পাই ধুলোর আস্তরণ ভেদ করে। চোখ কড়কড় করে, তবু ধুলোর আলিঙ্গন থেকে সরি না। কবে, আবার কবে এমন মুক্তি আসবে কে জানে?
    ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি বড় সুন্দর। ছোট ছোট দুটি কটেজ মতম আউটহাউসে আমাদের থাকার জায়গা হয়। ট্রাভেল এজেন্ট সাথে, তাই রান্নার ঠাকুরও। দুপুরে ডাল, আলুভাজা, মাছের ঝোল চাটনি খেয়ে আমরা ঘরে তিন ঘন্টা দুপুর কাটাতে পাই। ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর , তাই বেরোনো যাবে না। দুটি টানা ঘর, ছাত্রীদের জন্য, তার এক কিনারায় কলঘর। দুটি লম্বা বিছানা। জানালায় জাল লাগানো, পর্দা দেওয়া, খড়খড়ি তুললে দেখা যায় এক মাঝারি টলটলে পুকুর , তার ওপারে ঠিক শিবলিঙ্গের আকৃতির এক শিবমন্দির। বাথরুমের পাশে শয্যার এক কোণ অধিকার করে শুয়ে শুয়ে আমি ঝাঁ গরম দুকুর দেখি। সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, নিজঝুম সেই দুপুর খোলা চুলে জানালায় দাঁড়িয়ে আমায় একটু একটু হাতছানি দেয়। আঁকিবুঁকি জমে ওঠে খাতায়।
  • aranya | 154.160.130.16 | ২৬ আগস্ট ২০১৩ ০৬:১৩569890
  • অপূর্ব
  • ঐশিক | 24.140.33.186 | ২৬ আগস্ট ২০১৩ ১০:২৪569891
  • সোসেনদি টুপি খুললাম
  • bm | 79.181.200.155 | ২৬ আগস্ট ২০১৩ ১২:৫৭569892
  • কি অসামান্য লেখেন এই সোসেন। এই লেখা পড়তে পড়তে আমিও শুনতে পাচ্ছি নিজের বুকের গোপন কুঠুরীতে রক্তপাতের শব্দ। কৃতজ্ঞ থাকলাম, সোসেন ।
  • sosen | 233.176.232.30 | ২৭ আগস্ট ২০১৩ ০১:১০569893
  • আজ সকালে প্রাণপণ খুঁজছিলাম সেই সব পুরনো খাতাপত্তর। হঠাত উপচে ওঠে মায়া কেন কে জানে। সাদা মলাটের বোর্ড বাঁধাই খাতায় বেড়ানোর হদিস, গাছেদের নাম, ছবির ভাঁড়ার, কে জানে কখন কোথায় হারালো? কলেজ স্ট্রিট থেকে চকচকে সোনালী অক্ষর কিনে, একটি একটি করে নাম সযত্নে তৈরী করে সে খাতার মলাট হয়েছিল, স্টেনসিল কেটে তাতে লেখা ছিল রেজিস্ট্রেশন নম্বর আর রোল নম্বর। স্বচ্ছ সেলোফেন পেপারে মুড়ে তাতে সাঁটা থাকত এক্সকার্শনের দিনপঞ্জি, কোন স্টেশনে কটার সময় নামা, কোন পাহাড়ের ঢালে ফুটে ছিল রডডেনড্রন , কোন আঁধার পথের ভিজে কোণে পলিপোরাসের কমলা হলুদ দঙ্গল, কোথায় বা লাল শৈবাল-এর উপর দিয়ে তিরিতিরি বয়ে যায় পাহাড়ি ঝরনা। এই সব ধরা থাকত সেই নোটবুক-এ। রাতের বেলা ক্যাম্পফায়ার, বন্ধুদের সাথে রাত কাটানোর রাগ বিরাগ ভিজে চোখের পাতা কিংবা অকারণ হাসি আর বকুনি খাওয়া, ছেলেমানুষী নার্সারী-নালিশের পলিটিক্স , এ-সব যদিও লেখা থাকবে না, কিন্তু ওই পাতাগুলো উল্টোলেই মনে পড়ে যাওয়ার কথা ছিল সব। এখন সব একটু ছেঁড়া ছেঁড়া---কোলাজ-ধূসর।
    না, আমার কলেজজীবনে তেমন উদ্দামতা ছিলনা। ছিলনা নেশার হাতছানি, টালমাটাল প্রেম, তেমন কিছু। মেয়েদের শাসনপ্রবন এই কলেজে সবাই বই হাতে আসতো, আর বই পড়ে বেরিয়ে যেত। ছিল না ছাত্র রাজনীতির আঁচ। কেউ কাউকে ঘেরাও করত না, পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ ছিল, মোটামুটি ঝকঝকে আঙ্গিনা ডালিমের ফুল ঝরে ভরে থাকত, সিগারেট বাটে নয়। বিদ্রোহ ছিল একটু আধটু, স্ফুলিঙ্গের মত, কখনো একটু সাহসী পোশাকে, কখনো কাঠের পুরনো বিল্ডিং-এ জুতোর হিলের খটাখট শব্দে আর সহসা একদিন, শীতের অন্ধকার হয়ে আসা নির্জন সায়েন্স বিল্ডিং -এর পিছনে গীতুদির লম্বা শরীর ঝুঁকে আসায়, একটি পাঁচ আট আর একটি চার এগারোর ঠোঁট মিলে যাওয়ার ছবিতে। চেনা জিন্স আর টি শার্ট জোড়ার দিকে আমি অনধিকারপ্রবেশী অপলক তাকিয়ে থাকি, আর ওদের দেহ থেকে বিচ্ছুরিত উত্তাপ আমার হাড়ে ঢুকে যেতে থাকে। ওদের আড়াল করি আমি। একজন যে ফিরে যাবে বাড়ি। কাল-ই।
  • sosen | 111.63.185.22 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১০:৫৫569894
  • কেমন করে যেন আমার স্মৃতিগুলি মিশে যায়। হোলির বালতিতে গুলতে থাকা রঙের মত, ইংরেজিতে যাকে কিনা সোয়ার্ল করা বলে, বিভিন্ন রং, ছবি , আলোর ঘূর্ণি , কিছুতেই তারা সময়ানুপাতিক থাকতে চায় না। ঘটনার পারম্পর্য্য গুলিয়ে যায়, শুধু চামড়ায় জেগে থাকে উত্তাপের বোধ, পায়ের নিচে শুকনো পাতার মচমচ জঙ্গল মহলের এক শালবীথির রাস্তায়, ডুলুং নদীর তিরতিরে একঘেয়ে আওয়াজ, আঙ্গুলগুলি লাল ভিজে শৈবালের মোটা কার্পেটে থুপ্থুপিয়ে বসে যাওয়ার আরাম। শুকনো ঘাসের মেটে সোনা-রং, কালো ঘামে ভেজা আদিবাসী মেলার গন্ধ, আর এক চৌকো, মস্ত বড় ইঁদারা। বিকেলে গাছ কুড়ানর কাজে বেরোয় একপাল উচ্ছল শহুরে মেয়ে, সাথে তাদের দুই ভারিক্কি দিদিমণি, আর ট্রাভেল এজেন্ট সরকারবাবুর বাংলাদেশী সম্বন্ধী উজ্জ্বল নামে একটি অল্পবয়সী চোখে চশমা ছেলে। সবুজের রং ঝাড়গ্রামে একটু হলদেটে , একটু মাটি মাটি। তার উপর জেগে থাকে অল্প বিস্তর আগাছা। শালবনের নিচের বিস্তৃত ছায়াচ্ছন্ন অঞ্চলে মেডিসিনাল হার্ব চাষ হয়। প্রচুর ঘৃতকুমারী, হাতে তার পাতা ভেঙ্গে গন্ধ শুঁকতে খুব আরাম। একটা ভারী ভালো মেহেন্দি গাছ, পাতা হাতে ঘষলেই ছোপ পড়ছে অল্প অল্প। প্রচুর ঘাসের নতুন নতুন প্রজাতি দেখা যায়।
    আজ ভাবলে কষ্ট হয়, পড়াশুনোর দিনগুলোতে কেমন করে আমরা শূন্য করেছি ধরিত্রীর ভাঁড়ার। গোছা গোছা হারবেরিয়াম শিটের জন্য কত দুষ্প্রাপ্য মূল্যবান ইকোসিস্টেম নষ্ট করেছি, যে বিষয়ে কিছুই তেমন জ্ঞান -ও অর্জন করেনি কেউ, কয়েকটি গাছের নাম মুখস্ত ও ভুলে যাওয়া ছাড়া। সুটকেসের নিচে বয়ে নিয়ে গেছি খবরের কাগজ, তার মধ্যে শুকিয়েছি দুষ্প্রাপ্য গাছের স্পেসিমেন, আর কাগজে সেঁটে পরীক্ষায় জমা দিয়েছি , সাকুল্যে পাঁচ নম্বরের জন্য। কেউ যদি আজ জিগ্গেস করে , পৃথিবীতে স্বকৃত কোন কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি অনুতাপ আমার, তা হলো এই। উপড়ে তোলা গাছের শিকড়, যা হয়ত হাতের মুঠোর মধ্যে কেঁপেছিল সেদিন । বুঝতে পারিনি। কিছু ফিরিয়েও দিতে পারিনি মাটিকে তার বদলে।
    ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ সেদিন বন্ধ ছিল। বিকেলের হাঁটাপথে বাইরে থেকে দেখতে পাই কলেজ। তার পর, মনে পড়ে সেই বিরাট ইঁদারা , যার পাশে এসে আমরা ক্লান্ত পায়ে বসে পড়ি। আদিবাসী মেয়েরা ঘষে ঘষে তাদের বাসনকে স্বর্ণপ্রভ করে তুলছিল সেখানে বসে। দড়ি টানা বালতি দিয়ে আমাদের তারা জল তুলে দেয়। কি স্বাদ সে জলের!
    রাতে কটেজে ফিরে দৈনন্দিন প্রথম কাজ হলো তোলা গাছগুলির আইডেনটিফিকেশন । খুব বিরক্ত লাগে, কারণ আমার গাছ চেনার মোটেই ন্যাক নেই। ইচ্ছেও করেনা। কোনরকম করে গাছের গা থেকে মাটি ঝেড়ে ফেলে, নিউজপেপারে বান্ডিল করে ফেলে শান্তি। তারপর জলদি রাত্তিরের খাওয়ার পর দিদিরা নিজেদের ঘরে চলে গেলেই মেয়েদের আসর বসে জমিয়ে।
  • sosen | 111.63.185.22 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১১:৫১569895
  • দুটি ঘর, তার একটিতে ছ জন থাকার কথা, একটিতে পাঁচজন। কার্যকালে দেখা যায় প্রায় সবাই একটি ঘরে এসে জড়ো হয়েছে আর ধাক্কাধাক্কি করছে সীমিত কম্বলের তলায়। আমি অন্য ফাঁকা ঘরটিতে আশ্রয় নিই। একটু দূর থেকে দেখা যায় , শোনা যায় শিবমন্দিরে শয়ন আরতি। অজস্র আলোর ছায়া পড়ে পুকুরের কালো অন্ধকার জলে। সন্ধের সময় রাধাজিউর মন্দিরের কীর্তনের আওয়াজ-ও পাওয়া গিয়েছিল। এই সব দেখতে দেখতে , অন্য ঘর থেকে ভেসে আসা ছেঁড়া ছেঁড়া হাসি, বালিশ ছোঁড়াছুঁড়ি , চেঁচামেচির মাঝে তন্দ্রা এসে যায়। হাত থেকে গল্পের বইটি খসে পড়ে। কি জানি অন্যেরা কখন ঘুমোয়। ঘুম থেকে সবার আগে উঠে পরদিন ভোর বেলা দেখি এক ছোট খাটে এর গায়ে ওর পা, ওর কোমরে এর হাত, এলিয়ে ঘুমিয়ে থাকা দশটি মেয়ে। ভারী ভালো লাগে, মনে হয় কেন যে একটা ক্যামেরা নেই। কোথাও বালিশ নিচে পড়ে, কোথাও আধখানা কম্বল মাটিতে লুটিয়ে, বাইরে ভোরের প্রথম আলো এসে পড়েছে তাদের প্রথম যৌবনের মুখে। আজকে মনে করার চেষ্টা করি মাঝে মধ্যে সেদিন কি জানতাম, প্রেডিক্ট করতে পেরেছিলাম, তারা কে কোথায় যাবে, কেমন হবে তাদের ভবিষ্যত ? সেদিন ভোরের অকূল প্লাবী আলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে হঠাত-ই আমায় সেই মৃত্যু-মুহূর্তের অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছিল। কোথায় যাচ্ছি? কোনদিকে ? আর শুধু আমি-ই নই, এই যে এতজন আমার চারিদিকে , কিছু সময়ের জন্য হলেও ভাগ করে নিচ্ছে আমার অন্ন, হাওয়া, আগুন, নির্জনতা, এদের মধ্যে-ও কি কখনো কেঁপে যায় আমার এই অনিশ্চয়তা? এদের-ও কি কখনো মনে হয় পায়ের নিচে মাটি বড় শিথিল, জলের মত, এ যে কোনো সময় মিলিয়ে যেতে পারে, না কি এ শুধু আমার ?
    দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসি। অজস্র পাখির ডাকে ভরে গেছে রাজবাড়ির অঙ্গন। মন্দিরে জাগরণের আরতি হচ্ছে। সূর্য ওঠার আগে লাল আকাশ। নেই -এর মধ্যে কোথাও আছে, আছে , অস্তির সুর এসে ভরে দেয় আমার শরীর।
    কারোর ঘুম ভাঙ্গার আগেই হেঁটে বেরিয়ে পড়ি আমি। পায়ে হাওয়াই চটি। গায়ে এক হালকা সালোয়ার কামিজ। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা, দুপুরের দুর্দম সূর্য ওঠার আগে। সাইকেল চালিয়ে প্রচুর মানুষ বোধ করি স্টেশনের দিকে যায়। মাথায় খড় বয়ে নিয়ে আসে কালো বুড়ি এক। একপাল মুরগি-হাঁস তাড়িয়ে নিয়ে যায় কমলা ডুরে শাড়ি পরা একটি শিশু বউ। আমার পানে চোখ ফেলে সে মিচকি হাসে। স্বভাব-মুখচোরা আমি ভাবি তার সঙ্গে গল্প জমাবো কি না। ভাবতে ভাবতে সে পালিয়ে যায়।
    ফিরে এসে দেখি কচুরি আর আলুর ঝোলের ব্রেকফাস্ট রেডি , তার সঙ্গে একটা মিষ্টি। সবাই উঠে পড়েছে আর সেজেগুজে দিনের জন্য তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে আমার একান্ত বন্ধুটিকে ডেকে ভোরের এই সব অনাঘ্রাত গল্প বলব ভাবি। কিন্তু সে আমায় বিশেষ পাত্তা দেয় না, কালো পেন্সিল দিয়ে ভ্রুপল্লব আঁকতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমার দামী রত্ন আমারি ভিতর জমে থাকে, যেন পাতার আগে নিঁখুত জলের ফোঁটা। টুপ করে ঝরে পড়লেই বিস্মৃতি। একটু একটু চুপি চুপি ঠোঁট ফোলে আমার, বিনাকারণে। সৌন্দর্য্য যেমন কাঁদায়।
  • lcm | 118.91.116.131 | ২৮ আগস্ট ২০১৩ ১১:৫৬569897
  • খাসা কলম!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন