এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফেসবুক থেকে কিছু পুরনো লেখা

    sosen
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১২ | ১৭৯৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • achintyarup | 69.93.193.209 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ২১:৪৫569931
  • বিপ্লব, খুবই ইন্টারেস্টিং। কিন্তু এটা এই থ্রেডে যাওয়ার নয় বোধহয়। 'ফেসবুক থেকে কিছু পুরোনো লেখা' আসলে সোসেনের একটা লেখার নাম, ফেসবুকে বিভিন্ন লোকের লেখার কালেকশন নয়। আমি বরং দীন মুহম্মদের জন্য নতুন একটা টই খুলে এই অংশটা ওখানে পেস্ট করে রাখি।

    সোসেন, লেখা চলুক।
  • Bhagidaar | 218.107.71.70 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ২২:১৫569932
  • ধুর!
  • ঐশিক | 133.252.160.213 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৭:২৩569933
  • সোসেন দি, কিছুই বলার নেই, মনের জোর হারিয়ে গেলেই এটা পড়ি, বিপ্লব দার লেখাটাও ভালো কিন্তু প্লিস এখেনে না ,
  • de | 190.149.51.67 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৭:৪২569934
  • সোসেনকে সেলাম -- একটু দেরী হয়ে গেলো বোধহয়, তবুও!
  • aranya | 154.160.5.25 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৮:৫৯569935
  • সোসেন, কুর্নিশ
  • sosen | 111.63.137.99 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ২১:৫১569936
  • প্রবল বৃষ্টি। প্রায় ডুবে গিয়েছে কলকাতা শহর। একটা ধার করা স্কাইব্যাগ হাতে আমি আর বাবা জল ছপ ছপ করে বাস ষ্ট্যান্ড অব্দি পৌঁছই। কাল রাত থেকে শুরু হয়েছে, আর থামার নাম নেই। এই অঞ্চলের চারপাশে ধান জমি ইত্যাদি থাকায় বোধহয় অত জল জমে না, তা-ও পায়ের পাতা ডুবে যায় এখানে ওখানে। বাস অবশ্য চলছে। একখানা নাইনটি ওয়ান সি তে উঠে পড়ি আমরা। বাস মোটামুটি ফাঁকা। এই দুর্যোগে কে আর বাইরে বেরোয়। কিন্তু আমার তো বেরোতেই হবে।

    ঘরের ভিতর আর বাইরে দুদিকেই অঝোর জল ঝরছে । আর বেরোনোর আগে অবধারিত বাবার রাগারাগি, এটা ওটা সেটা। এই সব পেরিয়ে বাস যখন ভি আই পি তে পড়ে , দেখি দুদিকের ঢালে থৈ থৈ জল, বাসের ভিতরেও জল পড়ছে, করুণ অবস্থা। উল্টো ডাঙ্গাতে প্রায় এক কোমর জল। গাড়ির পর গাড়ি খারাপ। উপর্ঝুরন্ত জলে রিক্সা-ও চলে না, কিছু লোকজন গাড়ি ঠেলছে। বাসগুলি কালো নোংরা ঘিনঘিনে জলের ঢেউ তুলছে।
    উল্টো ডাঙ্গা পেরিয়ে ১৫ নং বাস ষ্ট্যান্ড এ এসে আমরা লাল সরকারী দোতলা বাসে উঠি। একখানাই বাস। সে আর ছাড়ে না। আদৌ ছাড়বে কিনা তা-ও বোঝা যায় না অনেকক্ষণ। তারপর পরম সাহসে ড্রাইভার একসময় লগবগে সেই বাস নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। গুটি কতক যাত্রী। ধীরে ধীরে জল ভেঙ্গে বেশ নৌকোর মত চলে বাস।
    দোতলায় সামনের দিকে বসে নিমজ্জমান কলকাতা দেখা যায়। এমন কলকাতার ছবি আগে দেখিনি। জলের স্রোতে ভেসে বেড়ায় গাঁদার মালা, পলিথিন, নোংরা কাপড়, ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন। তার-ই মধ্যে জায়গায় জায়গায় ঝাঁপাঝাঁপি করছে পথশিশুরা। যে সব চাকুরে মানুষেরা হাঁটু অবধি প্যান্ট গুটিয়ে ছাতা মাথায় অফিসে চলেছেন, তাদের জলের ছিটাতে ভিজিয়ে দিচ্ছে বাস। বড়বাজারের দিকে তার-ই মধ্যে উঁচু করে মাথার ওপরে ঝুড়ি নিয়ে লোকে চলেছে, তাতে পাতায় চাপা দেওয়া সবজি, ফল। কলাপাতা ভাসছে জলে। মানুষের বর্জ্য।
    হাঁচড় পাঁচড় করে বাবার ভাঙ্গা কালো দাদুর ছাতার তলায় সুটকেস বাঁচিয়ে কাকভেজা হয়ে হাঁচতে হাঁচতে হাওড়া স্টেশনে ঢুকি। বৃষ্টির দিনে সেখানে লোকের ঢল আরো বেশি। বড় ঘড়ির তলায় এসে দাঁড়াই। ঘড়িতে বাজে দশটা চল্লিশ, সাড়ে এগারটায় জমায়েত হওয়ার কথা এখানেই সবার। আজ আমাদের কলেজ এক্সকারশন, নৈনিতাল, বৈজনাথ, কৌশানি-----আমরা একটু আগেই এসে গিয়েছি। এই বিপুল জলতরঙ্গ ঠেলে, যাক বাবা, পৌঁছে তো গিয়েছি।
    এগারোটা বাজে। সোয়া এগারোটা। সাড়ে এগারোটা। এমনকি ট্রেনের সময়-ও পেরিয়ে যায়। আর কেউ আসে না।
    বাবা এনকোয়ারিতে খোঁজ করে আসে। ট্রেন ডিলেড, কত ডিলে বোঝা যাচ্ছে না। কেউ তো আসেও না ছাই কলেজের। নোটবুক ঘেঁটে একজনের নাম্বার বের করে তাকে পে ফোন থেকে ফোন করতে যাই। কয়েন ফেলে।
    আমার গলার আওয়াজ পেয়ে সে অবাক হয়ে যায়, একি, তোকে কেউ জানায়নি? ট্যুর তো ক্যানসেল হয়ে গেছে, কাল রাতেই, এত বৃষ্টি। ম্যাম ফোন করেছিলেন সবাইকে, বললেন ট্যুর পোস্টপন করে দেওয়া হচ্ছে। তোকে কেউ জানায়নি?

    আমি না ফোন করলে তো আমাকে জানানো সম্ভব নয়। আমার তো ফোন নেই।

    ফোন রেখে অপরাধী মুখ করে বাবার কাছে এসে সব বলি, আবার এক প্রস্থ বকুনি খাই। এমনি-ই এক্সকারশন যে জরুরি সেটাই বাবার মনে হয়না, তার ওপর এই বৃষ্টিতে দৌড়াদৌড়ি ---"কাল ফোন করে জেনে নিতে কি হয়েছিল!!"

    অপরাধী মুখেই চুপ করে থাকি। দুপুরে না সকালে যখন অত বৃষ্টি ছিলনা তখন একবার বেরিয়ে একজনকে ফোন করেছিলাম বটে। তখন সে কিছু বলেনি, তখনও মনে হয় ক্যানসেল হয়নি যাওয়া। আর বিকেল থেকে ওই বৃষ্টি--কি করে যাব সেটাই ভাবছিলাম, আর তো মনে হয়নি এস টি ডি বুথ এ গিয়ে ফোন করার কথা!

    আবার জলে ভেজা কলকাতা দেখতে দেখতে কাদা ছপ ছপে রাস্তায় বাড়ি ফিরি। বাসে, বকুনি খেতে খেতে আড়াই ঘন্টা ধরে ।
  • bhagidada | 106.2.241.35 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ২২:০৮569937
  • আহা গো!
  • sosen | 111.63.137.99 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ২২:১০569938
  • দাদা কি রে!
  • san | 133.63.144.163 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ২২:১৫569939
  • ঃ-(
  • Samik Mukherjee | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ২২:৩৪569941
  • :-(
  • | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৬:৪১569942
  • parhe du:khit hate giye 'bhaageedaadaa' dekhe hyaa hyaa kare hese phellaam.
  • | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৬:৪১569943
  • পড়ে দুঃখিত হতে গিয়ে 'ভাগীদাদা' দেখে হ্যা হ্যা করে হেসে ফেল্লাম।
  • a x | 86.31.217.192 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৮:৪০569944
  • ভাগীদাদাটা আমার খুব ভালো লাগল।

    প্রতিবার পড়ি এই টইটা আপডেট হলেই। কিছু লিখিনা, কিন্তু পড়ি সেটা জানিয়ে গেলাম।
  • sosen | 125.242.254.174 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ২০:১৮569945
  • এই লেখাটার মধ্যে সময়ের প্রবাহ নেই, সময়ানুপাতিকও নয়। চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি। আমার গল্প, আমার সময়ের গল্প মানে তো শুধু আমার গল্প না। আরো কতজনের মিলে মিশে যাওয়ার গল্প। যাদের গল্প লেখার স্বাধীনতা আমার আছে কি না জানিনা। অথচ তারা আমার চারপাশে সারাক্ষণ রয়েছে, তাদের না ফেলে এসেছি কোনো গ্রামে, না কোনো এমন আড়াল রয়েছে যেখান থেকে নিভৃতে মুখ লুকিয়ে নিজের জীবন ভেবে বেচে দিতে পারি অন্য কারোর জীবন। তাই খালি খালি ঝগড়া হয়। তুমুল ঝগড়া। ৯৫ সালের "আমি" বলে, ওকি, আমার কথা বললে না তো? যে আমি ইলেভেনে গল্প লিখে একখানা রথীন মিত্রের স্কেচের বই প্রাইজ পেয়েছিলাম, তাতে কলকাতার কিছু বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছবি ছিল। আর সেই ছবি দেখে দেখে তুমি ভাবতে কোথায় ভর্তি হতে পারো তুমি? আর ভাবতে, কেমন হয়, যদি এমনি আঁকতে পারো? তো ৯৬ সালের আমি বলে, বা: আমার কথা বলবে না? যে আমি পাঁচটি রুমালে কারুকাজ করে নামের প্রথম অক্ষর লিখে দিয়েছিলাম এক যুবককে, আর বদলে পঞ্চাশ পয়সা চাইতে সে আমায় কিছুতেই তা দেয়নি, খুব হেসেছিল, আর বাড়ি ফেরার পথে সারাক্ষণ আমি ভেবেছিলাম কুসংস্কার তো বটে, কিন্তু যদি ঝগড়া হয়? যদি? যেখানেই পা ফেলতে যাই, দেখি জড়িয়ে আছে অন্য কেউ, অন্য জীবন, অন্য নাম। কাউকেই ফেলা যায়না, কাউকেই আবার দেওয়ালে ঠুকে টাঙ্গাতেও পারিনা। এ যেন আধা খাপছাড়া এক কুইল্ট বানানো, যেমন যেমন রঙের কাপড় মেলে তেমন তেমন এগিয়ে যাওয়া।

    জলের গল্প, ঠান্ডার গল্প, শুষ্কতার গল্প, রক্তহীনতার গল্পের মধ্যে একজন নিভৃত মানুষ আমার পায়ের তলায় জমি এনেছিল। তাকে সরিয়ে দিতে গিয়ে আমার পা দুর্বল হয়ে যায়। নিজের সঙ্গে নিজের সেই চুপচাপ বোঝাপড়ার চেষ্টা আমার চোখ থেকে ঘুম কেড়ে নেয়। রাতের পর রাত আমি ঘুমোই না। ঠান্ডা চোখ মেলে অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকি। বইপত্রের নিচে ডুবতে চেষ্টা করি, কিন্তু তেমন জোর আসে না। অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকি মাঝে মধ্যেই। সেই যুবক আমায় ছাড়ে না। বার বার ফিরে আসে, চোখে অপেক্ষা নিয়ে। কেন জানিনা সেই শান্ত অপেক্ষা আমায় শুধু আরো বিরক্ত করে। না, আমি ওকে দেখতে চাই না। বড় লোভ। বড় মায়া। আর বড় উত্কট সেই স্মৃতিসমূহ যা জট পাকিয়ে থাকে চুলের দলার মত।
    কি হয়, যদি আরেকবার দেখা যায়? একবার, একটি ভুল, হয়ত ভুল ও নয়, ভুলে যাওয়া যায় না?
    তার পরেই হাড় শিরশির করা সেই ভয় ফিরে আসে। নিজের উপর দখল হারানোর ভয়। বিশ্বাস হারিয়ে গেছে, তাকে আর ডেকে ফেরাতে পারি না। না, ভুলতে পারি না। অন্তত এখন নয়।
    একমাত্র প্রিয় বান্ধবী এই সময় কলেজ ছেড়ে কলকাতার অন্য শহরে চলে যেতে বাধ্য হয়। একটি বিষয়ে পার্ট ওয়ানে পাশ করতে না পারায় সেই এক দক্ষিণের শহর, যেখানে আমাদের সময়ের সব ছেলেপুলে পড়াশুনো করতে ছুটত বেসরকারী কলেজে সেখানে চলে যায় সে। কথা বলার লোক ও থাকে না বিশেষ। চতুর্দিক কেমন হলদে আলোয় ভরে যেতে থাকে। বিষণ্ন, নিরানন্দ সেই আলো। ঠোঁট চেপে আবেগ ভিতর দিকে পাঠাতে থাকলে বুদবুদ কেটে যা ওঠে তার নাম কবিতা।
    বিষাদের বর্ম ঢেকে ফেলে আমাকে। পড়াশুনো করতে ভালো লাগে না। হাতিবাগানের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটে এক বড়সড় হাতখোঁপার , ছাপা সালোয়ার কামিজের মেয়ে, যার ঢোকার কথা কলেজে কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে সে চলে যায় কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজার--ক্লাস করতে ভালো লাগে না। কলেজ স্কোয়ারের বেঞ্চিতে বসে পুরনো বই ভাড়া নিয়ে পড়তে থাকে, পাঁচ টাকায় বই পাওয়া যায়। কখনো এমনিই জলের দিকে তাকিয়ে থাকে। কলেজে দিদিরা খেয়াল করতে থাকেন তার অনুপস্থিতি। আলাদা করে ডেকে একদিন হেড বোঝান, বন্ধুরা তো আর চিরকালের নয়, পড়াশুনো তো করতেই হবে, এত ভালো রেজাল্ট করেছে সে পার্ট ওয়ানে, এবছর তার ওপর দিদিদের কত ভরসা। সে বোবা চোখে শোনে। তার সাপ্তাহিক পরীক্ষার খাতার উত্তর থেকে দিদিরা ছোট ক্লাসের মেয়েদের নোট লেখান, নোটের জন্য জুনিয়ররা তার আশেপাশে ভিড় করে। সে যা পারে দিয়ে দেয়। সামনে পরীক্ষা, কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করে না। খাতা ভরে উঠতে থাকে, না লেখাপড়ায় নয়, কবিতায়। মনে হয় মাঝে মাঝে, কি হয়, ফেল করলে, পরীক্ষায় না বসলে, এইখানে থেমে গেলে কি হয়? তখুনি আবার আরেকটা স্বর খুব রাগী গলায় বলে ওঠে " খুব মজা , না? ভেবেছিলে বেশ হাতের তলায় পাওয়া গেছে নির্ভর, আর খাটতে হবেনা রাস্তা কাটার জন্য, পাথর তুলতে হবে না ঘাড়ে করে, বেশ পালিয়ে যাওয়া যাবে চুল্লির দহন-উত্তাপ থেকে? যাও না, যাও। দেখো পারো কি না! দেখো কোনটা বেছে নেবে, কেউ ধরে ধরে না নিয়ে গেলে হাঁটতে পারবে, নাকি পথের মাঝখানে বসে পড়বে উদ্ভ্রান্ত? দেখো। বেছে নাও তোমার রাস্তা। "

    বড্ড ক্লান্ত লাগে, তবু উঠে খাতা বইয়ের গোছা নিয়ে বসি। মা এক কাপ চা নিয়ে আসে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে একবার নিজেকে মনে করাতে হয়-এইটে আমার বাড়ি। এই টিনের চাল, স্যাঁতসেতে মাটি। এখান থেকে স্বপ্নের সেই বাড়িটা অনেক দূর। আর সেই অব্দি যাওয়ার জন্য হাঁটতে হবে। হারিয়ে গেলে হবে নাকি, দূর !
  • de | 130.62.180.138 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৮:৪৩569946

  • এইটে শুনতে বড়ো ভালো লাগলো এই লেখার পর!
  • sosen | 111.63.207.194 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ ২২:১৪569947
  • কেমন যেন দুবলা,ক্লুলেস হয়ে গিয়েছি বুঝতে পারি। পাশের বাড়ির কালো শিশুটির তেল মেখে লুটোপুটি খাওয়া দেখি রোদ্দুরে বই নিয়ে বসে। মোটা মোটা খামের চিঠি গুলি উল্টে পাল্টে রেখে দিই। খুলতে ইচ্ছে করে না। বিষাদে ডুবে থাকার এক অত্মহননকারী নেশা আছে। সে নেশা আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরে আমাকে। রুক্ষভাষী হয়ে উঠি, কর্কশ। ভুরু কুঁচকে থাকে সারাক্ষণ। বর্মের মত করে অসন্তোষ পরে থাকি।
    এইচ ও ডি একদিন ডেকে বলেন, আমার এবার পরীক্ষার আগে কোনো নামকরা মাস্টারমশাইয়ের কাছে পড়া উচিত। আগের বছরের রেজাল্ট ধরে রাখতে গেলে। বিভিন্ন কলেজের টিচারদের কোচিং ও তার অন্তর্নিহিত তাত্পর্য্য সম্পর্কে একটু হিন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি নিজে প্রাইভেট পড়াতেন না, কলেজের মেয়েরা ভালো রেজাল্ট করবে এই তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। বেথুনের শিক্ষিকারা , আমাদের ডিপার্টমেন্টের, সচরাচর প্রাইভেট পড়াতেন না। খোঁজ করে দেখি প্রত্যেকেই দু জন করে টিচারের কাছে পড়ে, তাছাড়া হাতিবাগানে কি এক প্র্যাকটিকাল করানোর দোকান আছে, সেখানেও সবাই ভর্তি হয়। আমার তীব্র বিবমিষা হয়।
    পার্ট টু তে পড়াশুনোর কোনো চাপ নেই। কিন্তু আমি তো পড়াশুনো শুরুই করতে পারিনি। খাতার দিকে তাকালে ব্ল্যান্ক পাতা দেখতে পাই। বিষয়গুলিও বেশ বিরক্তিকর। তার চেয়ে গল্পের বই ভালো নয়? জয় গোস্বামী ? সেই সব নেশার মত দীর্ঘ কবিতারা?
    বাঙ্গালোর চলে যাওয়া বান্ধবীর কাছ থেকে প্রথম প্রথম জার্নাল আকারে চিঠি পাই। তারপর সংখ্যা কমে আসে। টানের জায়গা নেয় অভিমান।
    গোটাকতক টিউশনি বাড়ে। নিজের টুকটাক খরচগুলি সব-ই চালাতে পারি আজকাল। সংসার স্বচ্ছল না হলেও আগের সেই প্রত্যেক পদক্ষেপে মুখ থুবড়ে পড়া বন্ধ হয়েছে। আমাদের কারখানাটি ধীরেসুস্থে টুকটাক করে চলে। চতুর্দিকে ধারের পাহাড় একটু একটু করে কমে। আর আমার পৃথিবী প্রসারিত হয়েছে তো বটেই। তা-ই হয়ত আর ওই ঘষে ঘষে ছেঁচড়ে চলাটাকে অত সর্বগ্রাসী মনে হয় না। তাছাড়া গত কিছু বছরে কৈশোরের ভালোবাসা অনেক সহনীয় করে তুলেছিল সব কিছু। সব-ই ঢাকা পড়ে গিয়েছিল অল্প স্বল্প। এখন ভালোবাসার জায়গা নেয় জেদ।
    খুব জেদ এই তেএঁটে মেয়ের। নিশ্চুপ, ঠান্ডা জেদ। সেই জেদ মুঠোয় ধরে এক দড়ি টানাটানির খেলায় নামে সে। খুব-ই নিষ্ঠুর সে টানাটানি । যতবার ডাক আসে, যতবার ফিরে আসে সেই ভালোবাসার হাতছানি, সে ধৈর্য্য ধরে ,সামনে বসে, চোখে চোখ রেখে প্রত্যাখ্যান করে। তারপর ঘরে ফিরে এসে মধ্যরাত্রির দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠতে থাকে। দীর্ঘ এই টানাটানির সময়। কেউ হারতে চায়না। দুজনের-ই বড় জেদ। কে আগে চোখের পাতা ফ্যালে!

    "কে ছিল, কে চলে গেছে; ঝুল বারান্দায়
    চৈত্রের নিভন্ত সূর্য হিম ঠান্ডা আগুন ছড়ায়--"

    লিখতে ভাল্লাগে বৈকি, তার চেয়েও ভালো লাগে ছিঁড়ে ফেলার টান। মাঝে মাঝেই নির্মমভাবে আমি পুড়িয়ে ফেলি আমার খাতাপত্র, কবিতা, চিঠির তাড়া, ছবি। কালো ছাই উড়লে একধরনের আরাম হয়। আগুনের কমলা রঙেও।
    আমার ভিতরে অনেককিছু বদলাতে থাকে। প্রশ্ন, প্রশ্নের ধরন। অন্ধকারের দিকে চোখ ফেরে। মানুষের ভিতরকার অন্ধকার ঘেঁটে দেখতে ইচ্ছে করে, এড়িয়ে যাওয়ার বদলে। কি আছে ওই অন্ধকারের নিচে? কতটা ব্যখ্যা করা যায় তাকে?
    আরাকুর এক এক্সকারশন -রাতে, তথাকথিত সমকামী দুই বান্ধবীর সঙ্গে যখন অন্য কেউ থাকতে চায়না এক ঘরে, আমি তাদের সঙ্গে থাকতে যাই। তারা যখন জানতে চায় কেন তাদের সঙ্গে কেউ থাকতে চাইল না, আমি তাদের বলি কারণটি, আর তারা সপাটে অস্বীকার করে। তাদের লাল, কিছুটা ভয়ার্ত, কিছুটা উদ্ভ্রান্ত মুখ দেখে মায়া হয়।
    খুব-ই নিকট পরিবারে একটি ইনসেস্ট ঘটেছিল। তাঁদের খুব কাছ থেকে যখন দেখি, কি-ই বা আলাদা তাঁরা? সম্পর্কগুলি একটু গুলিয়ে যায়, কিন্তু তাঁদের মিষ্টি, তীক্ষ্ণধী সন্তানটিকে কি করে অন্য কারোর থেকে আলাদা করে দেখি?
    যে ক্ষমা নিজের জীবনে দিতে পারিনা, তা ছড়িয়ে পড়ে সবদিকে।

    বান্ধবী ছুটিতে ফেরে, জানতে পারি তার একটি প্রেম হয়েছে। কিন্তু কেন জানি তার এই হাসিখুশি প্রেমের গল্প আমার আর ভাল্লাগে না। সহজ জীবন দেখলে কেমন রাগ হতে থাকে। পিছিয়ে গিয়ে বরং আমি মন দিয়ে অন্যদের দেখি। কাউকেই, এই কলেজে, এই উচ্চবিত্ত পরিসরে বিশেষ ইন্টারেস্টিং মনে হয়না। কারুর জীবন-ই টানেনা সেভাবে।জটিলতা খুঁজি। সেই জটিলতা প্রতিফলিত হতে থাকে আমার টু-রিড লিস্টে।
    বেথুন কলেজের সামনে ফুটপাথে বাস করে বেশ কিছু পরিবার। মাঝে মাঝে তাদের ধরতে আসে কোনো হোমের গাড়ি। তারা তখন কোথাও পালিয়ে যায়। দেহাতি ও বাঙালি এই পরিবারগুলির মধ্যে বেশ সদ্ভাব। কমলা শাড়ি পরে শীতের দুপুরে বসে আটোসাটো শরীরের মেয়েরা একে অন্যের মাথার উকুন বাছে। বাচ্চারা ভিক্ষে চেয়ে বেড়ায় এদিক ওদিক। বুড়িরা শুয়ে থাকে।
    এমনি এক শীতের বিকেলে, বাস পেতে অনেক দেরী হওয়ায় আমার দেখা হয় অভিলাষা ও জয়ন্তীর সাথে, আরো কিছুদিন পরে হিমল, রোহিত, সুমনা, আরো জনাপাঁচেক মধ্য-উত্তর কলকাতার বাঙালি ও অবাঙালি যুবক-যুবতীর সাথে, যারা ফুটপাথে সন্ধেবেলা ছোট্ট সতরঞ্চি আর টুল পেতে বসে ফুটপাথের মেয়েদের পড়ায়, শিশুদের-ও, তবে মূলত মেয়েদের, হেলথ সেন্টারের সস্তা কন্ডোম আর স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলোয়, মশলা গুড়ো করার আর পাঁপড় বেলার বরাত এনে দেয় মেয়েদের। আমার চেয়ে কিছুটা বড়, এরা একটি ন্যাশনাল এনজিওর কর্মী। মূলত প্রান্তিক মেয়েদের স্বাস্থ্য ও আত্মনির্ভরতা নিয়ে কাজ করে এরা। এক মুখ হাসি ও ধৈর্য্য নিয়ে এদের কাজ দেখে আমার খুব ভালো লাগে। স্বেচ্ছাশ্রম দিতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ি এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে। জানতে পারি কমলা শাড়ি পরা ওই মেয়েটির একটি নাম আছে, পূর্ণিমা। তাকে আদর করে সবাই ডাকে পুনম। ফুটপাথেও আদর আছে, আছে চুম্বন, নির্ভর, জন্ম, ঠাকুমার তৈরী কাঁথা। জন্মের সার্টিফিকেট নেই শুধু। কি করে চোখের সামনে এই জীবন আমার কাছে অধরা ছিল এতদিন? ভালো করে ,খেয়াল করে দেখি নি, শুধু এখানে কেন, আমার বাড়িতে, আমার দরিদ্র চতুর্পাশে?
  • siki | 135.19.34.86 | ০১ জানুয়ারি ২০১৪ ১০:২৯569948
  • তারপর?
  • sosen | 125.241.48.47 | ০১ জানুয়ারি ২০১৪ ১৩:০০569949
  • অস্মিতা আমার প্রথম "কেস"। ১৯৯২ সালে বিহারের এক গ্রামে সাতবার ভূমিহার জমিদারদের বাড়ির ছেলেদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছিল সে, তেরো বছর বয়সে, তিনবার তার মায়ের সাথে, এক-ই ভূমি শয্যাতে, যেখানে আসন্নপ্রসবা তার মা মারা যান । অস্মিতাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কোথাও, সম্ভবত মৃতপ্রায় ভেবে। অস্মিতা, এই নামটি আমার দেওয়া। কোনোভাবে রেললাইনের কাছে এসে পৌঁছে অস্মিতা একটি ট্রেনে উঠে পড়ে। অসম্ভব জীবনীশক্তি ও কিছু দয়ালু মানুষজনের সাহায্যে হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছয় সে, তারপর শিয়ালদা। ১৯৯৯ সালে তার সাথে যখন আমার চেনা হয়, তখন সে শিয়ালদহ রেল স্টেশনে থাকে, একটি চায়ের দোকানে বাসন মাজে, ও অবসরে ভিক্ষা করে, এক মদ্যপ অন্ধ ভিখিরির সঙ্গে বসবাস করে। তাদের দুটি সন্তান। সন্ধ্যার ট্রেনে গান গেয়ে তাদের ভিক্ষা করতে দেখা যায়।
    অস্মিতার লিপিবদ্ধ বয়ান, যা প্রতিষ্ঠানের অফিসে জমা করেছিলাম, তা স্মৃতি থেকে কিছুটা উদ্ধৃত করি। তার সঙ্গে পরিচয়ের প্রধান কারণ ছিল, অস্মিতার ধাত্রীবিদ্যায় স্বভাবজ দক্ষতা। স্টেশনের অনেক মহিলার সন্তান্জন্মে সে সাহায্য করত কর্তৃত্বের সঙ্গে, ওই বাধ্যতামূলক নোংরা পরিবেশেও পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করত। সাধারণত কোনো এমন ব্যক্তি সাহায্য করলে ওষুধ বিষুধ, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জিনিসপত্র বিলোনো, সবাইকে একজোট করা সহজসাধ্য হয়। স্টেশনের অধিবাসীরা জীবিকার সন্ধানে সততই ব্যস্ত। তাদের এক জায়গায় আনাও দু:সাধ্য। এরপর আছে ভিখিরিদের সর্দাররা, যারা এইরকম সমস্ত এক্টিভিটিকে অত্যন্ত স্ট্রংলি বাধা দেয়। স্বাস্থ্যবান, পড়ুয়া ভিখিরি তাদের কোনো কাজের নয়। এরকম ক্ষেত্রে ভিতরকার লোকেদের অনুসন্ধান করতে হয়, যারা সহজে এইসব কাজে সাহায্য করতে পারে।
    প্রসবে সাহায্য করে, বা প্রসব্পরবর্তী সেবাযত্নে কাজে লাগে এমন কিছু জিনিসপত্র নিয়ে অস্মিতার কাছে যাই আমরা। ধারালো নতুন ব্লেড ও স্ক্যালপেল, ব্যথার ওষুধ, নরম তোয়ালে, জল গরম করার একটি হিটার , প্রচুর স্যানিটারি ন্যাপকিন।
    অস্মিতা হিন্দি-বাংলা মেশানো এক ভাষায় কথা বলে। অক্ষরপরিচয় আছে তার, হিন্দি পড়তে পারে, এক স্বাভাবিক কর্তৃত্ব ও মিতভাষিতা আছে তার। তাকে দেখে কুড়ি একুশ বছরের মেয়ে বলে মনে হয়না, অন্তত তিরিশ মনে হয়। তার মুখ লড়াইয়ের দাপটে ভাঙা। টোল খাওয়া। শরীরের বাঁধুনি খুব একটা সুন্দর নয়, শীর্ণ । তবে রং ফর্সা, এবং সে ফর্সা রক্তহীনতার নয়। অনুমান করা যায়, গ্রামে সুন্দরী ছিল অস্মিতা। দীর্ঘ অনাহার, অসুস্থতা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাদের টোল আদায় করেছে তার দেহ থেকে।
    স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কর্মসূচির পাশাপাশি এইসব মেয়েদের কোনো ডোমেস্টিক এবিউজের ইতিহাস আছে কিনা তা খাতায় তোলা আমার কাজ ছিল। অস্মিতার মিতভাষিতার বেড়া টপকে তার শিউরে ওঠা কাহিনী বের করে আনতে আমি সক্ষম হই শেষ পর্যন্ত।
    তার হয়ে কেউ কোনো আইনি লড়াই লড়েনি। সম্ভবত তার মায়ের হয়েও না। তাদের মত আরো অজস্র মেয়েদের হয়েও, সম্ভবত নয়।
  • sosen | 111.63.139.142 | ০১ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:৩০569950
  • নির্লিপ্ত আর ইষৎ বিরক্ত মুখে অস্মিতা যখন তার অতীতের কথা বলে, তখন তার গলায় কোনো ইমোশন থাকে না। চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসে আমি একটা ফর্মাটওয়ালা টেবিলে টিক দিতে চেষ্টা করি। তাতে কলামে কলামে লেখা থাকে-হিস্ট্রি অফ এবিউস, নেচার অফ এবিউস ইত্যাদি। কিন্তু খানিক পরে কলামেরা নিজেদের অপারগতা ব্যক্ত করে থমকে যায়। আমি আর বৃথা টিক দেওয়ার চেষ্টা করিনা।
    তেরো বছরের অস্মিতাকে যখন পরিবারের আরো মহিলাদের সঙ্গে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন-ও তার প্রথম রজ:দর্শন হয়নি। একরাত ক্রমাগত তাকে ধর্ষণ করা হয়, আরো মেয়েদের সাথে। তার আটমাসের আসন্নপ্রসবা মা-কে তার সামনেই ধর্ষণ করার পর যৌনাঙ্গে হাতের মুঠি ঢুকিয়ে ঘোরানো হয়। মহিলা নাকি কাটা পশুর মত ছটফট করতে থাকেন, কাঁপুনি ধরে, রক্তপাত তো হয়-ই। বেশ কয়েকজন মেয়েকে মৃত ভেবে খেতে ফেলে যাওয়া হয়, যার মধ্যে অস্মিতা-ও ছিল, অর্ধ-অচেতন। জ্ঞান হওয়ার পর মায়ের শরীর ছুঁয়ে সে মৃত্যুর শীতলতা অনুভব করে। এর পর, নিজেকে টেনে টেনে সে রেললাইনের কাছাকাছি কোনভাবে চলে আসতে পারে। প্রচন্ড কুয়াশায় কোনো একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। সেই ট্রেনে কোনোমতে উঠে পড়তে পারে অস্মিতা।
    ট্রেনে তার কথা অনুযায়ী মূলত তীর্থযাত্রীরা ছিলেন, ছিলেন অবাঙালি সন্ন্যাসীরা। আহত অস্মিতাকে তাঁরা অনেক প্রশ্ন করলেও সে আসল কথা বলেনি। পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর দল তাকে একটি কাপড় দেয়, তীব্র জ্বরে আক্রান্ত মেয়েটিকে কোনো সহৃদয় প্যাসেঞ্জার হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেন। সন্ন্যাসীর দলের সাথে হাওড়ায় এসে পৌঁছয় সে। তাঁদের সঙ্গেই কিছুদিন সেখানে থাকে, তারপর তাঁরা অন্য কোথাও চলে যান। ভিক্ষা করতে করতে বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে শিয়ালদহে পৌঁছয় অস্মিতা। এবং সেখানেই থেকে যায়, ভিখিরিদের দলের সাথে।
    দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মবাসকালীন অস্মিতা শরীর বেচতে শিখেছে খাদ্যের বিনিময়ে। দরদাম করতে শিখেছে। চায়ের দোকানি থেকে শুরু করে যে ভিখারীর সাথে শোয়ার জায়গা শেয়ার করতে হয়, তারা প্রত্যেকেই শরীর চায়। অস্মিতা শিখেছে, এমনকি এখানেও, এই প্ল্যাটফর্মেও রক্ষকের প্রয়োজন। আধবুড়ো যে ভিখারীর সঙ্গে সে থাকে সে এখানকার প্রবীণ ভিক্ষুকদের অন্যতম। এখন আর শরীর বেচে না অস্মিতা। চায়ের দোকানে অমলেট করে, চা বানায়। তার ভিক্ষুক সহবাসী ট্রেনে গান গায়, দুটি শিশুকে নিয়ে। পার্কসার্কাসের বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নেওয়া অস্মিতার স্বপ্ন।
    তাকে জিগ্যেস করি, সেই সব "জানবার"দের শাস্তি চায় না অস্মিতা?

    প্রবৃদ্ধ স্বরে অস্মিতা বলে, " আদমী হারামি হ্যায় দিদি। একজনকে মারবে, তো আরো দশজন পয়দা হোবে। আমার পেটেই হোবে। কয়জনকে মারব? ভগওয়ানজিকি কিরপা, হাম মরে তো নেহি না! "
    তারপরে একটু নরম গলায় বলে, বস, মায়ের জন্য কষ্ট হয়। আট মাস পেটে রেখেও ছেলের মুখ দেখতে পারল না---
    না, বাবার মুখ ভালো করে মনে পড়ে না তার। ছোট বোনের মুখ-ও না। দিদির লগন-এ অনেক লোক এসেছিল, একটু একটু মনে পড়ে।
    তার সব স্মৃতির উপর জেগে আছে সেই এক রাত আর তার পরবর্তী নিরবচ্ছিন্ন রাতের স্রোত।

    বাড়ি ফিরে এসে এইসব অকারণেই annexure দিয়ে লিপিবদ্ধ করতে করতে আমি কেমন কেঁপে উঠতে থাকি। যত না এই নিষ্ঠুর শীতল গল্পের ঠান্ডায় , তার চেয়ে বেশি অস্মিতার সামনে বসে কথা বলার গ্লানিতে, পেন্সিল আর খাতা নিয়ে তাকে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টার ধৃষ্টতায়। নিজেকে অসীম, অপরিসীম ভাগ্যবান মনে হয়। মাকে একবার জড়িয়ে ধরি। গায়ে মুখ গুঁজে ভাবি, এমন কতজন আছে? কতজন? ভালবাসায় শরীর ছোঁয়া যারা জানলই না কোনদিন? জানবেও না?
  • achintyarup | 125.111.242.10 | ০২ জানুয়ারি ২০১৪ ১৬:০৭569952
  • এই লেখাটা কেমন আগুনের মতো
  • sosen | 24.139.199.11 | ০২ জানুয়ারি ২০১৪ ১৭:১৬569953
  • আগুনের মত এমন অনেকজনের ছবি চোখে ভেসে আসে। পথের পাশের ধুলো , জট আর নোংরা ভেদ করে ধিকিধিকি জ্বলা আগুন। এদের কয়েকজনের কথা বলব, ইচ্ছে আছে।
  • sosen | 125.241.12.178 | ০২ জানুয়ারি ২০১৪ ২২:০৩569954
  • ফুটপাথ থেকে মধ্যবিত্ত ঘর। মেয়েদের স্বাস্থ্যের হালত সর্বর্ত্রই বেশ খারাপ। যৌন স্বাস্থ্য সাধারণত অবহেলিত, এ ছাড়া আছে সবশেষে খাওয়া, একটু খারাপ হয়ে যাওয়া, একটু রসে যাওয়া খাবার খাওয়া, কম খাওয়া। আমি খুব দরিদ্র, ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়োনো পরিবার নিয়ে কাজ করিনি। পথের ধারে ছাউনি বানিয়ে থাকা, ব্রিজের নিচে, স্টেশনের একটেরে, সাবওয়ের মধ্যে, অগণিত পরিবার; তাদের কারো কারো সাথে বসে কথা বলার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়েছে। নোংরা, অপরিষ্কার দেহ, দুর্গন্ধ, ভিখিরিদের স্বাভাবিক অস্ত্র, তা আমাকে দুরে ঠেলেছে। এমন-ও হয়েছে, কোনো কোনো ভিখিরির সাথে কথা বলতে বলতেই রাস্তার পাশে গিয়ে বমি করে ফেলেছি। উত্তরকাশীর ছেলে হিমল, সস্নেহে আমাকে জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছে, বলেছে এরকম-ই হয়। তার-ও হত। এখন সয়ে গেছে।

    ভিখিরি মহিলাদের মধ্যে বৃদ্ধারা সচরাচর কোনো দলে থাকেন না। খোঁজ করলে দেখা যায় এদের অনেককেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তাদের বাড়ির লোকেরা, ছেলে, মেয়ে, জামাই, নাতিরা এসে কলকাতায় ছেড়ে দিয়ে যায়। এইরকম-ই এক বৃদ্ধা দ্রবময়ী, কাঁকুরগাছির সরকারী আবাসনের সামনের রাস্তায় তিনি থাকতেন। দ্রবময়ী ছাড়া আর কোন নাম তাকে দিতে পারি বুঝতে পারিনি, যদিও নিজেকে তিনি মন্টুর মা বলতেন। ২০০৫ সালে এক শীতের রাতে যখন তিনি মারা যান, মন্টু তাঁর মুখাগ্নি করেনি। মন্টুকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না।
    নিতান্ত অশক্ত ছোটখাটো এই ভিখিরি বৃদ্ধা, আবাসনের সামনে ফলের দোকানের পাশে থাকতেন। চায়ের দোকান থেকে একটা দুটো পাউরুটি, চা, ফল ইত্যাদি মিলে যেত। ভাতের জন্য লাঠি ঠুক ঠুক করে মুরারিপুকুর বস্তির একটা দর্জির দোকানে গিয়ে কাপড়ের ছাঁট বেছে দিতেন তিনি। দোকানটি ঝাঁটও দিয়ে দিতেন। তারা দুপুরের ভাত তো দিতই, কিছু টাকা পয়সাও দিত।
    পেটের যন্ত্রণা হত বুড়ির মাঝে মাঝেই। আলসার ছিল বোধ করি। তাঁকে দু-মাসে একবার আরজিকর হাসপাতালে আউটডোর-এ নিয়ে যেতে হত। কিছু প্রেসক্রাইবড ওষুধ ছিল , যা কিনে দেওয়া হত। বৃষ্টির সময় তিনি চায়ের দোকানের বা সামনের সরকারী মার্কেটপ্লেসের ছাদের নিচে থাকতেন।

    দ্রবময়ীকে হোম-এ নিয়ে যাওয়ার নাকি অনেক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি যাননি। মন্টু এঁকে ওই উল্টোডাঙার মোড়ে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিল। আমি যখন এঁকে চিনি, তখন আর হয়তএই ভ্রম ছিল না , যে মন্টু একদিন তাঁকে নিয়ে যাবে। কিন্তু ওই জায়গাটি-ই হয়ত মন্টুর সঙ্গে তাঁর শেষ সংযোগ ছিল। তাই এই ফুটপাথ ছেড়ে কখনই যেতে চাইতেন না।
    বকবক করতে ভালবাসতেন এই দ্রবময়ী। দীর্ঘদিন নিজের উদ্যোগে খই কিনে দিয়ে এসেছি ওঁকে। ওঁর গ্রামের নাম মুকুন্দগঞ্জ, বা ওই রকম কিছু । একটু পুর্বদেশীয় টান ছিল বাংলায়, বলতেন মন্টু তাঁর ছোট ছেলে, বড় ছেলে মারা গিয়েছে, মেজ ছেলে দুরে বসবাস করে। "গ্রামে বড় কষ্ট, বান আসে, সব ভাসি যায়"। এমনি বন্যা ও দারিদ্র্যের আক্রমণে দিশেহারা মন্টু একদিন মাকে নিয়ে কলকাতায় আসে। তারপর মাকে এইখানে ছেড়ে দিয়ে কোথায় হারিয়ে যায়। আর ফেরে না।
    এই গল্প বলার সময় বৃদ্ধা পাখির ছটফটে দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতেন। কোথা দিয়ে আসবে সে সুসংবাদ? চারদিক থেকে অফিসযাত্রী লোকজনের ব্যস্ত হাঁটাচলার শব্দ, ট্রামের ঠনঠন, তার মধ্যে অবাক চড়ুইপাখির মত দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকানো মুখটি সহসা কি সুন্দর হয়ে উঠত। অপেক্ষার দৃষ্টি চকচক করত। অমনি হয় বুঝি মায়ের চোখ?

    ওই রাস্তায় ছিল এক পাগল। ঝাঁকড়া চুলের নগ্ন সুঠামদেহী সেই পাগলকে ওই অঞ্চলে অনেকেই দেখেছে। রাত নটা বা দশটার সময় সকালের পাউরুটির একটু প্রাপ্তির আশায় সে এসে হাঁটু মুড়ে বসত বৃদ্ধার কাছে। আর ছোঁয়া বাঁচিয়ে আধখানা রুটি তাকে ছুঁড়ে দিতেন বৃদ্ধা। কুঁচকানো মুখে মায়া লেগে থাকত।

    বুড়ির মৃত্যুর পর যতবার ওই রাস্তা দিয়ে পাগলকে হাঁটতে দেখেছি, মনে হয়েছে এ-ই আসলে মন্টু নয় তো? ভাবতে ইচ্ছে করে, সে ফিরে এসেছিল দ্রবময়ীর কাছে।
  • Tripti | 138.210.206.145 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০১:১৯569955
  • এই লেখনীকে কুর্নিশ জানাই।
  • শিবাংশু | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৩০569956
  • কী লিখেছে সোসেন !!
    অসম্ভব একটা লেখা, মাথা নীচু করতেই হয় ....
  • সিকি | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৪৮569957
  • সত্যি অসম্ভব একটা লেখা।
  • kumu | 133.63.112.151 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:১২569958
  • ইয়েস অসম্ভব, এ অসম্ভব লেখা।
  • b | 135.20.82.164 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১৩:০১569959
  • ছাপা বই চাই। নইলে গুরু-র সম্পাদকদের কপালে দুঃখু আছে।
  • ঐশিক | 133.252.160.213 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১৭:১৬569960
  • সোসেন দি খুব খুব ভালো লাগা জানিয়ে গেলুম
  • achintyarup | 69.93.245.234 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০০:৩৯569961
  • সোসেনের লেখা পড়তে পড়তে কয়েকটা মুখের কথা মনে হয়। একটুখানি লিখতে ইচ্ছে করে, কম্পিউটার নিয়ে বসি, কিন্তু হাত সরে না, মাথার ভেতরে কেমন সব ঘেঁটে যায়। চুপ করে বসে থাকি, কী লিখব ভেবেই উঠতে পারি না। মনে হয় যা সব কিছু শুনেছিলাম সে সব গল্প শুধু, দূরের কোনও কথা, সত্যিতে তেমন হয় না, তাই গুছিয়ে লিখতেই পারি না কিছু। আমার স্বপ্নের মধ্যে শুধু লাল বুগেনভিলিয়ায় ঢাকা রাস্তার ছবি আসে, অত ফুল, অত ফুল ছড়িয়ে থাকা রাস্তা আমি আগে কখনও দেখিনি। অমনি টকটকে লালরঙা ফুলে ঢাকা শান্ত রাস্তা আমার মাথার মধ্যে থেকে বেরোতে চায় না। রাস্তার পাশে বাড়ি, সে বাড়ির মানুষজন কেমন, সে সব যেন আবছায়া মনে হয়। গাঁয়ের বাড়ির ভেতরে গিয়ে বসা, আধো অন্ধকার ঘর, দরজার সামনে উবু হয়ে বসে থাকেন বৃদ্ধা, গালে হাত, কনুই হাঁটুতে ঠেকানো, চেহারা মনে করতে গেলে পুরোনো ছবি খুঁজে বের করতে হবে এখন, মুখের নির্লিপ্তিটুকু মনে আছে কেবল। কান্না নেই, গলায় কাঁপন নেই এতটুকু, যেন এরকমই হওয়ার কথা ছিল, যেন সব কিছুই একেবারে ঠিকঠাক আছে, পেটে ধরা মেয়েটা গুলি খেয়ে মাঠে পড়েছিল কেমনভাবে, তার নিখুঁত বর্ণনা দেন মা, পা দুটো কেমনভাবে দুমড়ে পড়েছিল, সে কথা বলেন যেন টিভি সিরিয়ালে দেখা গল্প। অঙ্গনওয়াড়ির কাজ করত মেয়ে, সিপিএম করত তো, তাই ওকে মেরে দিয়েছে। ছেলেটা ইস্কুলে পড়ত, পড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে, এখন কী করে, কিছুই করে না, এমনই তো হওয়ার কথা ছিল যেন, যেন স্ক্রিপ্টের লেখার সঙ্গে মিলে গেছে ঠিকঠাক, অমনি ভাবে বলা। আমিও শুনে যাই, ঘ্যানঘ্যানে প্রশ্ন করি, বিরক্ত না হয়ে উত্তর দিয়ে যান মা। নেতারা এসেছিল, কত সাহায্য-টাহায্যের কথা, সে সব কি আর আসলে পাওয়া যায়, কে যাবে বলো রোজ রোজ, ধরনা দিয়ে পড়ে থাকবে পার্টি অফিসে, কিছুই আমরা পাইনি গো বাবা। দরজা দিয়ে ফালি আলো এসে পড়ে ঘরের ভেতর। দরজার বাইরে রাস্তা ভরে ফুল, অত ফুল, অত ফুল, অমনি টকটকে লাল রং বুগেনভিলিয়া ফুলের হয় সত্যিই?
  • a x | 138.249.1.202 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৩:৩৯569963
  • লিখতে থাক। আলাদা টই খুলেই লেখ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন