এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • /\ | 127.194.198.23 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ০১:১৮644768
  • http://anupsadi.blogspot.in/

    শিশুরা শুধু --- নবারুণ ভট্টাচার্য

    শিশুরা শুধু, নবারুণ ভট্টাচার্য
    মূর্খ! কোনো আস্থাই নেই মন্ত্রীর আশ্বাসে
    শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে

    জমছে খালি দুধের বোতল, সস্তার ঝুমঝুমি
    নজর কাটার কাজলফোঁটা কোথায় দেবে তুমি
    দোলনা একা দুলেই চলে রাতের মহাকাশে
    শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে

    এই তো এল সেদিন, কীসের যাওয়ার এত তাড়া
    মুখেভাতের যৎকিঞ্চিত খরচ বাঁচায় তারা
    লুকিয়ে পড়ে মাটির তলায় ফুল ফোটাতে ঘাসে
    শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে

    মূর্খ! কোনো আস্থাই নেই মন্ত্রীর আশ্বাসে
    শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে
    শিশুরা শুধুই মরতে ভালোবাসে

    দুটি প্রাথমিক প্রশ্ন থেকে --- নবারুণ ভট্টাচার্য

    দুটি প্রাথমিক প্রশ্ন থেকে
    অনেক গ্রামবাসী
    তাদের চারজন কমরেডের মৃতদেহর জন্য
    শহরতালুকের মর্গের বাইরে
    সকাল থেকে বসে আছে,

    একজন শ্রমিক
    হায় কি দুর্বল তার ইউনিয়ন
    রেললাইনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে
    আত্মহত্যা করলে কী বাঁচা যাবে?

    অনেকগুলো বাচ্চা
    পোস্টারের কাগজ আর প্যাকিংবাক্সের ঘরে
    খেলে খেলে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছে
    ওদের মা ফিরলে তবে খেতে দেবে।

    এখন কি আমার শিল্পচর্চা করা মানায়?

    বুড়ো পাহাড়ের পিঠে গাছগুলো ঝড় মাখছে
    আকাশের চোখ অন্ধ করে দিচ্ছে ধুলো
    গতকালের কালো মেঘগুলো আজকে লাল।

    এখন কি আমার নিজের কষ্ট নিয়ে ভাবার সময়?”

    কালবেলা --- নবারুণ ভট্টাচার্য

    কালবেলা, নবারুণ ভট্টাচার্য

    যুবকেরা গেছে উৎসবে
    যুবতীরা গেছে ভোজসভায়
    অরণ্য গেছে বনানীর খোঁজে
    গরীব জুটেছে শোকসভায়।
    গয়নারা গেছে নীরব লকারে
    বন্যপ্রাণীরা অভয়ারণ্যে
    বিমান উড়েছে আকাশের খোঁজে
    গরীবরা শুধু হচ্ছে হন্যে।
    পুরুষেরা গেছে নিভৃত মিনারে
    গর্ভবতীরা প্রসূতিসদনে
    কুমিরেরা গেছে নদীর কিনারে
    গরীব জমছে নানা কোণে কোণে।
    বিপ্লব গেছে নেতাদের খোঁজে
    যুবকেরা গেছে উৎসবে
    যুবতীরা গেছে বিশিষ্ট ভোজে
    গরিবের হায় কী হবে

    লুম্পেন রাজ চলছে, বললেন নবারুণ ভট্টাচার্য
    (বাংলাবাজার ব্যুরো)

    কলকাতা, ১২ জানুয়ারিঃ প্রায় প্রতিদিনের নিয়মে পরিণত হয়ে যাওয়া অধ্যক্ষ নিগ্রহ নিয়ে আবারও নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিলেন সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য।
    শিক্ষাক্ষেত্রে তাণ্ডব, বিশিষ্টরা যা বললেন

    রাজ্যে লুম্পেন রাজ চলছে বলে মন্তব্য করে নবারুণবাবু বলেন, “লুম্পেন পাওয়ারের উত্থান ঘটেছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আছে বলে এখন বেশী করছে। তবে মাঝদিয়ায় তো এসএফআই করেছে বলে শুনলাম।” লুম্পেনদের ক্ষমতায় অলিন্দে নিয়ে আসার পিছনে সিপিএম এবং তৃণমূল সমান ভাবে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। যে লুম্পেনরা ছাত্র সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকে কড়া হাতে দমন করার পক্ষে সওয়ালও করেন নবারুণবাবু।

    পাশাপাশি রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলকে পরিবর্তন আক্ষা দেওয়াকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, “ আমি এই পরিবর্তন চাওয়া চাইয়ের মধ্যে ছিলাম না। ওসব তো কিছু বিদ্দ্বজন করতেন।” ভবিষ্যৎ এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, “পরিবর্তন আসে একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।”
  • /\ | 127.194.198.23 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ০২:২১644769
  • হিন্দোল ভট্টাচার্যের সংযোজন ফেসবুক থেকে।।। নবারুণদা নেই। যুদ্ধ পরিস্থিতি আছে। নবারুণদা নেই। আমাদের তথাকথিত সমাজের ঢ্যামনামি আছে। নবারুণদা নেই। রাষ্ট্রীয় শোষণ আছে। নবারুণদা নেই। আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা আছে। আমাদের ভাষাকে আর কেউ সাহস করে আক্রমণ করবে না। আমাদের প্রকাশভঙ্গিতে আসবেনা স্বাধীনতার হাওয়া। আমরা হাসতে হাসতে থুতু ফেলতে পারব না ক্ষমতা কাঠামোর গায়ে। আমাদের মেরুদন্ড সোজা থাকবে না আর। তাতে কার কি এসে যায়? হার্বার্ট যখন চলে গেল, তখন কার কি এসে গেছিল? শুধু শ্মশান কেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণে। এক প্রতিবাদ। না, আমরা তাঁর উপন্যাস পড়ে কখনো আমোদ করতে পারিনি, আমেজে ঘুম আসেনি আমাদের, কেঁপে উঠেছি, শীত করেছে আমাদের, নিজের আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারিনি। কষ্ট হয়েছে খুব। রাগ হয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। পারি বা না পারি, স্বপ্ন দেখেছি কোনো এক সাবভার্সিভ ভাবে শুরু হয়েছে অস্বীকার করার লড়াই।নবারুণদা নেই। নবারুণদা আর লিখবেন না। তাতে কার কি এসে গেল? বাংলা সাহিত্যে রাজনৈতিক উপন্যাসের আপাতত শেষ লেখক চলে গেলেন। তাতে কার কি এসে গেল? খুব খারাপ একটা সময়ে উনি চলে গেলেন। যখন রাজনীতি মানে বুদ্ধিজীবিদের বেসাতি। খুব যন্ত্রনায় ছিলেন নবারুণদা। অসুখটা তাঁর হয়নি। অসুখটা আদতে হয়েছিল সমাজের। আমাদের। ঘৃণায় চলে গেলেন আমাদের দাদা। বাংলা উপন্যাসে, গল্পে এভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ না বলে যে সাবভার্সিভ রাজনীতির কথা বলা সম্ভব, তার রাস্তা দেখিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল এমন এক ভাষার গদ্য, যা নেকুপিসু গদ্যের থেকে অনেক দূরের। আমাদের সাব- অল্টারন সমাজের মত রাগী, অবহেলিত, পরিশ্রমী, চাঁচাছোলা। আর এসবের কারণ ছিল তিনি বুঝেছিলেন, এই সমাজের প্যান -অপ্টিকানকে টলিয়ে দিতে হলে, আমাদের মার্জিনের ভাষায় কথা বলতে হবে, আমাদের এক আধুনিক সান্ধ্য ভাষা তৈরী করতে হবে, যা মরমিয়া নয়, বরং তেজস্ক্রিয়। অনেক বেশি এনার্কিস্ট। কারণ আজকের রাজনীতিতে এনার্কিজম ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই, ব্যঙ্গ ও শ্লেষ ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই আক্রমণের। তিনি জানতেন, শাসন যন্ত্র সব সহ্য করতে পারে, কিন্তু পারে না ভাষা এবং সংস্কৃতির গেরিলা আক্রমনকে আটকাতে। নবারুণদা, একজন গেরিলা যোদ্ধা। সাহিত্যের গেরিলা যোদ্ধা। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয় বলেও যিনি জানেন, দেশ কোনো সীমানায় আটকে থাকে না,।দেশ আসলে এক বিরাট শ্রেণী-সংগ্রামের কুরুক্ষেত্র। চলে গেলেন, খুব খারাপ একটা সময়ে। আমরা কাঙ্গাল হলাম। কিন্তু পারব না কি তাঁর ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতে? শত শত নবারুণ তো আমরাই। আমরাই হার্বার্ট। আমরাই ফ্যাতারু। আমরাই সেই সব কথার সংলাপ, যেগুলি শুনলে শাসকের বুক কেঁপে ওঠে। কার কি আসে যায়, যদি আমরা এই আকালেও স্বপ্ন দেখি?

    আমাদের মিষ্টি মিষ্টি মস্তির সাহিত্যের বানচোতসুলভ মধ্যবিত্তপনা দেখে যিনি প্রতিনিয়ত মুচকি হাসতেন, আজ তাঁর শেষ যাত্রায় আমরা কি সত্যি কথা বলার কসম খেতে শিখব না? শিখব না মেরুদন্ড সোজা রাখতে অন্তত আমাদের সৃষ্টির ক্ষেত্রে?
    একবার নির্দেশের ভুল হয়ে গেলে, আবার বিশুদ্ধ হতে কতদিন লাগে? নবারুণদা, ভালো থাকবে না তুমি জানি। যতদিন এই সমাজ ভালো থাকবে না, যতদিন এই পৃথিবী মানুষের বসবাসযোগ্য হবে না, ততদিন তুমি ভালো থাকতে পারো না কমরেড।
    সেলাম।
    ===================================
    বং সাহিত্য
    দেবতোষ দাশ
    http://aainanagar.com/tag/bengali-theater/
    কবি ও নকশাল। বিখ্যাত বাপ-মায়ের এক লওটা সন্তান। বং সাংস্কৃতিক মহলে পরিচয় বলতে এটুকুই। নবারুণ ভট্টাচার্য। এ অবশ্য সেই সময়ের কথা যখন র‍্যাম্বো একাই বেধড়ক ক্যালাচ্ছে, সোভিয়েত কোনোমতে টিকে, সিপিয়েমের অধঃপতন শুরু হলেও তাকে হার্মাদ বলতে সাহস করেনি কেউ। সবে শাদা-ধুতি বাঙালি লেখকেরা কালীপুজো-টুজোর উদবোধন করতে শুরু করেছেন, মার্জিনাল কিন্তু লিটল ম্যাগাজিনের সম্মান অটুট, সুখেন দাস-অঞ্জন চৌধুরীরা সাংস্কৃতিক কেষ্টবিষ্টু হওয়ার দুঃসাহস করেননি। এ সেই সময়ের কথা, ঢোঁড়াইয়ের পরম্পরায় বাংলা সাহিত্যে সাবধানে পা ফেলছে বাঘারু। উন্মাদের পাঠক্রমকেও আত্তিকরণ করতে চাইছে স্টেট। নবারুণ তখন ঘোষণা করছেন – এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।

    সোনারির ঠুকঠাক চলছিল, ৯২-তে লোহারের এক ঘা। লিখে ফেললেন প্রথম উপন্যাস হারবার্ট। বিষ্ফোরণে উড়ে গেল শ্মশানের চুল্লি, শ্যাওলা চৌবাচ্চা আর চেনা বর্ণপরিচয়। শুরুতেই আরডিএক্স। তারপর একে একে হাট করে খুলে দিলেন গোটা অস্ত্রাগার। বং কেরানি-কুলটুর ঘাবড়ে ঘ। পুরষ্কার-টুরস্কার দিয়ে সামলানোর চেষ্টা। নবারুণ মৃদু হেসে লেলিয়ে দিলেন পুরন্দর ভাট নামক এক স্বভাবকবিকে। পুরন্দর এসেই হাতের কাছে যা পেল টানাটানি করতে শুরু করল। পরে বোঝা গেল আসল টার্গেট তার বেরাহ্ম শাদা ধুতি-শাড়ি। এবং সত্যিসত্যি বং কালচার-ভালচারদের ধুতি-শাড়ি সে খুলে নিল। বেরাহ্ম কুলপতিরা কেন এখন অন্তর্বাস পরিহিত, এর রহস্য এখানেই। কাপড়-চোপড় তাদের পুরন্দরের কাছে। অবশ্য তাতে কী, ওই অবস্থাতেই নির্লজ্জ দাপাদাপি চলছে! কী নির্জীব, কী নির্জীব / নির্ঘাৎ ওটি বুদ্ধি জীব!

    ১৯৯২ থেকে ২০০৬ – অনতিদীর্ঘ এই সময়কালে মোট আট পিস উপন্যাস নামালেন নবারুণ আর সত্যি সত্যি বাংলা লেখালেখি নামক চৌবাচ্চার তেলাপিয়া গঙ্গাসাগর পাড়ি দিল। কলকাতার মধ্যে যে আরেকটা কলকাতা আছে নবারুণ সেই মহানগরের গল্প বলতে শুরু করলেন। শহরের নিচের মহল হাজির হল তার লেখায় ঘুগনিমাখা শালপাতা, পোড়া বিড়ি আর খিস্তির আরাম নিয়ে। নাশকতার এজেন্টদের ছড়িয়ে দিলেন কোণায় কোণায়। বিরাট নামিদামী পত্রিকায় না লিখেও নবারুণ, ঔপন্যাসিক নবারুণ, গল্পকার নবারুণ ‘পপুলার’ হলেন। সাবভার্সিভ লেখালেখিও যে পপুলার হতে পারে তিনি দেখালেন।

    কাহিনিই লিখলেন কিন্তু তা নিটোল নয়, একটু টোল ফেলে দিলেন, তেরছা করে দিলেন ন্যারেটিভ, ডিসটর্ট করলেন বয়ান। এর আগেও এ চেষ্টা হয়নি তা নয়, কিন্তু তিনি ভাষা ও ন্যারেটিভে অতিবিপ্লবীয়ানা বা সবজান্তা ভাব বর্জন করলেন সতর্কতার সঙ্গে। সুবিমল মিশ্র বা মলয় রায়চৌধুরিরা অ্যাদ্দিনেও যা পারেননি, নবারুণ পারলেন।

    সেই নবারুণ আজ কর্কটক্রান্তির ছায়ায়। হয়তো অচিরেই থেমে যাবে কলম। কিন্তু হায়, কলেজ স্ট্রিটের কলমকুমারদের থামানো যাবে না! বাঙালি লেখকের লেখালেখি, সন্দীপন যাদের বলতেন বা।লে(বাঙালি লেখক), সেই বা।লে’র লেখালেখি চলবে! ভাষাভাবনাহীন, ‘যা দেখি তাই লিখি’সুলভ বর্ণনাত্মক লেখালেখি চলবে। অসংখ্য বেবাক শব্দের হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই। শোনা যায়, কেউ কেউ নাকি আর চোখে দেখেন না, তাও রাইটার লাগিয়ে লিখছেন! কেউ কেউ জীবৎকালেই নাকি শতবর্ষ মানাবেন এমন হুমকি দিচ্ছেন! সে মানান, তাঁরা দু’শো বছর বাঁচুন, কিন্তু তাই বলে যদ্দিন বাঁচবেন তদ্দিন লিখবেন! বৃদ্ধ কলমকুমারদের কেবল দোষ দিয়ে লাভ নেই, কড়কছাপ নওজোয়ান কলমকুমারও যে কে সেই, হাতে কেবল কলমের বদলে কি-বোর্ড, কিন্তু ভাষাহারা উদ্বাস্তু। যে ভাষাহারা সে তো ঘটিহারা! তোতলা-কলম থেকে বাংলা লেখালেখির কি মুক্তি নেই? ভাটের নিদানঃ তাই ওষুধ একটাই / ফ্যাঁৎ ফ্যাঁৎ সাঁই সাঁই!
    ===========================
    http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=1&pid=content/guruchandali/guruchandali9/1188426659085.htm#.U_UCbsWSzzN

    পাঁচটি কবিতা

    নবারুণ ভট্টাচার্য

    ক্লান্ত শহর

    বার এর টয়লেটের দেয়ালে
    কোন করুণ হোমোসেক্সুয়াল
    বা হারিয়ে যাওয়া মেয়ের মোবাইল নম্বর
    মনে পড়ে যায় অশ্রুতপূর্ব কোন সোনাটার
    স্বরলিপি
    কখনও লেখা হবে না
    এমন কোনো সনেট

    থিয়েটার

    হবে লোডশেডিঙে
    জ্বলবে লন্ঠন
    থাকবে বাঘের মুখোস
    বাজবে ঢোলডগর
    যারা দেখবে তাদের গা ঘামাতে হবে

    সিনেমা

    মাছি ও আরশোলাদের দেখা যাবে
    মাড়ি দিয়ে ভাত খাচ্ছে - দাঁত নেই
    কলকাতার সিনারি দেখালেই
    হাত-পায়ের কাটা প্লাস্টার
    সেলে দেওয়া কমোড

    ভূত

    জ্বলছিল একটা রেলের ইঞ্জিনের আলো
    চেঁচাচ্ছিলো গোটা দশেক শেয়াল
    আকাশেও ছিল আলো, অনেক তারার
    একটা আবার পা পিছলে পড়েও গেল খসে
    কুয়াশারা এল ঘষা কাচের লেন্স নিয়ে
    অবশ্য শব্দ গুলোর তাতে কিছু এলনা গেলনা
    তখন আমাকে ছুঁয়ে গেল
    যদিও আমার গা ছমছম করে নি
    এভাবেই আড়াল থেকে আসে
    ফিস ফিস করে ফের আড়ালে চলে যায়

    গাজা- প্যালেস্টাইন

    খুব দুষ্টু দুটো বাচ্চা
    একজনের হাতে সুতোবাঁধা ঘুরপাক
    একজনের বেসুরো জলতরঙ্গ
    একটা ইয়োইয়ো, একটা ঝুমঝুমি
    টিভিতে ঐ দুটো বাচ্চাকে
    দেখাচ্ছিল খবরের চ্যানেল
    স্টার মুভিজ করে দিলে তুমি
    বাচ্চা দুটো তখন দুষ্টুমি করছিলোনা
    দুজনেই শুয়েছিল
    স্বপ্ন দেখছিল কিনা
    বলতে পারা যাবে না
    কারণ
    দুজনের মাথাই ছিল না
    ===========================
    হারবার্টের ত্রিকাল দর্শন
    লিখেছেন: ইমরান ফিরদাউস • প্রকাশকাল: 25 সেপ্টেম্বর 2011 - 12:34পূর্বাহ্ন

    http://unmochon.net/node/939

    [এপিলোগ : ২০০৮ সালের জানুয়ারির কোন এক সন্ধ্যায় আমি ও আমার বন্ধুরা বেমক্কা নিজেদের নাম ভুলে বসলাম ! কেউ কাউকে আর কোন নামে ডাকছিলাম না। আমাদের বোধিতে নতুন নাম খঁচিত হয়ে গিয়েছিল ততক্ষণে: এবার আকিকা ছাড়াই আমাদের নাম হয়ে গেলো হারবার্ট! জাতীয় জাদুঘরে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ডেব্যু সিনেমাটা দেখতে গিয়ে এই নব-পরিচয়ের উত্থান_তখন একটা চলচ্চিত্র উৎসব চলছিল, উৎসবের শ'খানেক সিনেমার ভীড়ে এক কোণে দর্শক আকর্ষণের আড়ালে থাকা মুখাজ্জী মশাইয়ের সিনেমাটা আল্টপকা আমাদের অদ্য দর্শনীর জন্য নির্ধারিত হলে আমরা বেশ হালকা চালে সিনেমাটা [শুধু] দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু নির্মাতা আমাদের হারবার্ট এর কারবার দর্শনে মাফ না করে ভাসিয়ে নিলেন উজান স্রোতে ।

    ঘন্টা দু'য়েক বাদে যখন 'দ্য এন্ড' দেখা গেলো তখন মনে হচ্ছিলো এইটা কি সিনেমা ছিল নাকি আমরা একটা সাইকোডেলিক ট্রিপে ছিলাম! বেশ নেশা-নেশা ঘোর আমেজ মস্তিষ্কের কোষগুলিকে আয়েশি চালে অবশ করে দিচ্ছে, আমার পাতি বুর্জোয়া শুঁয়োপোকাটা কতক্ষণ ধস্তাধস্তি করে আপনা থেকেই খ্যামা দিলে আমরাও বাড়ির পথ না ধরে পথে পথে চাঁদের আলোয় কি জানি খুজতে থাকি কিন্তু পাইনা কিছুই; পাই শুধু মোনাফেকি রাজনৈতিক বাস্তবতা। এর মাঝে হারবার্ট ভ্রমণ আমাদের মগজে এক চিরস্থায়ী নিঃসঙ্গতা-প্রেম-মৃত্যু-ভালবাসার বিবমিষা বোধের বন্দোবস্ত করে দেয়...]

    'আনন্দনগর' কোলকাতা বললেই দ্যোতিত হয় বাম আন্দোলন । ইংরেজ খেদাও কর্মসূচী হতে শুরু করে ষাটের দশকের উত্তাল সময় এমনকি সাম্প্রতিককালের নন্দীগ্রামের ঘটনা নগরের এই চরিত্রকে প্রক্ষিপ্ত করে। লেখক অশোক মিত্র বলেন- কোলকাতা ভারত উপমহাদেশের বাম আন্দোলনের সূতিকাগার । হালে এই দ্যোতনাটি ক্ষয়িষ্ণু হলেও সাধারনের মাঝে এই প্রতীকটির প্রচলনই অধিক।

    ষাটের দশকের কোলকাতা আর একুশ শতকের কোলকাতার প্রত্ন-মানষিক তফাত চোখে পড়ার মত । কোলকাতা এখন আইটি কোম্পানি আর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের রমরমা বাজার, মধ্যবিত্তের ঘর হতে খোঁচা দাড়ি মুখের কোন যুবক ঝোলা কাঁধে বেরোয় না আর, কথায় কথায় লালবই থেকে ক্যোট করে না; এখন তারা ঝকঝকে বেশে সাইবার কুলিগিরি আর মার্কিন ঢঙে চোস্ত ইংরেজি বোলচালে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

    এহেন সামাজিক বাস্তবতায় প্রখ্যাত মঞ্চনাট্য পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় বেছে নিলেন ১৯৯৭ সনের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নবারুণ ভট্টাচার্যের 'হারবার্ট' উপন্যাসটি । 'হারবার্ট' হারবার্ট সরকারের ছুতোয় কোলকাতা-জনজীবনের ছাইচাপা, বিগত পাচ দশকের বদলে[পাল্টানোর নয়] যাবার বয়ান হাজির করে।

    কোলকাতাকে কেন্দ্র করে সুমন গাঢ় বাদামি[সেপিয়া] ও রঙ্গীন ছবিমালার যে বৃত্তটি রচনা করেছেন তা হারবার্ট সরকার নাম্নী জ্যা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে আকস্মিক বদলে যাওয়া [তথাকথিত] আধুনিক কলকাতার সঙ চরিত্রখানি মেলে ধরে । 'হারবার্ট' আমার কাছে ধরা দেয় শিল্পী রশীদ চৌধুরীর আধো-রঙ্গীন ইমেজের ঠাসবুনোটের জটিল ট্যাপেস্ট্রির চেহারায়: যা পাঠে-অবলোকনে দর্শকের মনঃকল্পিত অভ্যস্ত পৃথিবীর আরশ কেপে উঠে কেননা ঐ মূহুর্তমালাগুলি নিয়মিত র‍্যাশনালিটির প্রতি শুধু তাচ্ছিল্য করে না, আমাদের জ্ঞানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

    'হারবার্ট' কে?

    হারবার্টের পরিচয় কি? সে একজন হাতুড়ে বৈদ্য নাকি জোকার? অপরাধী নাকি কুচক্রী ? নাকি সন্ত্রাসবাদী বা গোলমালকারী ?

    অনেকভাবেই হারবার্ট সরকারকে সনাক্ত করার সুযোগ রয়েছে; এতিম হারবার্টের বেড়ে ওঠা দক্ষিন কোলকাতার এক ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত পরিবারে। হারবার্টের ডাকসাইটে সিনেমাওয়ালা বাবা পিচ্চি হারবার্টের পয়লা জন্মদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ধরাধাম ছাড়লে একলা মা হারবার্টকে নিয়ে যৌথ সংসারে কায়ক্লেশে দিন গুজরান করে। কিন্তু চৈত্রের এক দুপুরে মাও খুব জলদি ওপারের ট্রেনে ওঠে পড়ে । এরপর তার সঙ্গী হয় একটা ছোট্ট পেটরা, কাকা-কাকীমার প্রাণান্তকর ফুটফরমাশ, বাড়ির বড় দা ধন্নার জ্বলাতন! বন্ধু বলতে বিনু[তার ছোট কাকার ছেলে, নকশাল্বাদী] । স্কুলের ঝক্কি থেকেও একসময় ছাড়িয়ে দোকানে ফুলটাইম কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়। এতসব অযাচিত পরিণতির মধ্যেও বাড়ির চিলেকোঠা, কবুতরগুলিকে খাবার ছিটানো আর ঘুড্ডি ওড়ানোর সুখ হারবার্টকে যাবতীয় কষ্ট থেকে খানিকের মুক্তি দিত। ছেলেবেলা থেকেই হারবার্টের খেয়ালিপনা পাড়ার লোকদের কাছে তাকে ঠাট্টার বস্তুতে পরিণত করেছিল।

    হারবার্টের নবুয়্যতপ্রাপ্তি হলে মানে বয়স যখন চল্লিশ, একদিন এলান করে দিল যে প্রয়াত ব্যক্তির সাথে আলাপ করার ঐশ্বরিক ক্ষমতা তার আছে! প্রমাণরূপে, স্বপ্নে পাওয়া পুলিশ এনকাউন্টারে নিহত বিনুর ডায়েরীর হদিস দিলে আস্তপাড়া খানিকের তরে বিস্মিত হলেও পরমূহুর্তেই নিয়মকার বিদ্রুপে মশগুল হয়। কিন্তু, এই ভবিষদ্বাণী যখন ফলে যায়_ রাতারাতি পাড়ায় হারবার্ট সরকার তারকা মর্যাদা অর্জন করে। এবার সে একটি সাইনবোর্ড ঝোলায়— 'মৃতের সাথে আলাপ করা হয়'

    এবং বিফলে মূল্যফেরত সহ পরলৌকিক ক্ষমতার চর্চা শুরু করে। এতে টু-পাইস/যশ ভালোই হচ্ছিল। প্রায় বছর তিনেক রমরমা ব্যবসা কাটানোর পর হঠাৎ ইন্টারন্যাশনাল র‍্যাশনালিস্ট সোসাইটি, কোলকাতা হারবার্টের কন্সাল্ট্যান্সিকে জোচ্চুরি সাবস্ত্য করে _ব্যবসা বন্ধ না করলে পুলিশে দেয়ার হুমকি দিয়ে যায়। যুক্তিবাদীদের হুমকি তার অহমে মারাত্মক চোট পৌছায়; ফলাফল সে রাতেই আত্মহত্যা ।

    দক্ষিণ কোলকাতার স্বল্প-পরিচিত হারবার্টের কদর নজিরবিহীন মাত্রায় বেড়ে যায় মৃত্যুর পর, যখন তার শবদেহ চুল্লীতে ঢোকানোর মিনিটপাঁচেকের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে চুল্লীঘর ভষ্মীভূত ও অত্রস্থ জনাদশেক মানুষ আহত হয় ।

    স্বাভাবিকভাবেই, দ্বিতীয় প্রতুষ্যে সব কাগজে রটে যায় আধ্যাত্মিক/তান্ত্রিক/ রহস্যপুরুষ হারবার্ট সরকারের গল্প। ঐদিকে আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এটিকে জঙ্গী হামলা মনে করে উচ্চক্ষমতা বিশিষ্ট তদন্তকমিটি মাঠে নামায়। তবে, কেউই ঠাহর করতে পারে নাই সত্য কারণটি; এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিনুর হাতবোমাগুলি- সেই সত্তরের দশকে যখন সময় উত্তাল নকশাল আন্দোলনে, সেরকম এক রাতে পুলিশের হাত থেকে বাচার জন্য বিনু হারবার্টের তোষকের ভেতরে বোমাগুলি লুকিয়ে রেখেছিল, এই কথা হারবার্টের কাছে বিনুর মৃত্যুর বিশ বছর পর পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত ছিল। হারবার্ট আত্মহত্যা করে তার তোষকে শুয়ে, তোষকসহ তাকে চুল্লীতে চালান করা হয়।

    কিন্তু, এটি কি নিছকই বিস্ফোরণ নাকি কমরেড বিনুদের অতৃপ্ত আত্মার হুশিয়ারি: 'ফুল ফুটুক আর নাইবা ফুটুক বিপ্লব হবে'। দুঃখবিলাসী-ভোগসর্বস্ব এই সচলায়তন ধ্বসে পড়বে চুল্লীঘরটির মত।

    আর, সিনেমার গল্প শুরু হয় এখান থেকেই- পর্দায় ভেসে উঠে তদন্তের নামে লাল ফিতার সর্পিল চলন, ফ্ল্যাশব্যাকে উঠে আসে আপন স্বার্থ সম্পর্কে অসচেতন পরোপকারী বাড়ন্ত হারবার্টের মনের গলি-ঘুপচিগুলি যেখানে সে প্রতিনিয়ত একা, বজ্জাত চাচাত ভাই ধন্নার হাতে অপদস্থ কিশোর, তার জীবনের একমাত্র ট্র্যাজি-কমিক ভালোবাসার গল্পের আর অজ্ঞাতসারে উত্তাল '৭০-র দশকে নকশাল আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়ার মুহুর্তগুলি।

    পাঠক[দর্শক] আবার ভাববেন না যেন এই সিনেমাটি শুধু হারবার্ট সরকারের জীবনালেখ্য মাত্র- এই ছবি মূলতঃ প্রোটাগনিস্ট চরিত্রের কয়েক দশকের স্মৃতিপরিক্রমার ভেতর দিয়ে প্রাণের শহর কোলকাতার চেপে যাওয়া ইতিহাস, শঠতা, প্রলুব্ধতার গল্পটি বলে যায় ।

    জটিলভাবে সম্পর্কিত অসদৃশ অংশসমূহ নিয়ে চমৎকার কুশলতার সাথে সুমন যে বয়ানের বিস্তার করেছেন সেখানে হারবার্ট সরকার যেন 'বিগ গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক'-এর পেন্ডুলাম, যা নির্দিষ্ট সরল ছন্দিত স্পন্দনে অনায়াসে কাল ও আকালের মাঝে ভ্রমে এবং এক মূহুর্তের মৃত্যু থেকে অপর মূহুর্তের জন্ম বা একটি ঘটনার সাথে অন্য আরেকটি ক্রিয়ার সাযূজ্য ঘোষণা করে ... ।

    হারবার্ট সরকারকে কেউ কেউ উন্মাদ বলতে পারেন; যারা 'উন্মাদ' বলবার পক্ষে তাদের নিকট একটিই মিনতি: আমারা যারা নিজেদের [তথাকথিত] প্রকৃতস্থ দাবি করি তারা ঠিক কতখানি সংবেদনশীল নিজ-নিজ পরিপার্শ্বের প্রেক্ষিতে! হারবার্টকে [কি] উন্মাদ সাবস্ত্য করি আমরা তার সংবেদী আকুতির জন্য, নাকি তার [অ]যৌক্তিক কাজকাম আমাদের মুখস্ত বাস্তবতাকে টিটকারি করে বলে ?

    'হারবার্ট' আমাদের জ্ঞানে কুলোয় না এমন কালিক পরিভ্রমণের বা ফ্যান্টাসি রাইডের আয়োজন করে, তাই বলে ঐ পুরাঘটিত অতীত সম্পর্কে আমরা ওয়াকিফহাল নই তা কিন্তু নয় । কারণটা হলো হারবার্টের দিনচর্যা আমাদের অধীত প্রমাণাদি নির্দেশিত 'রিয়েল ট্রুথ'কে সংশয়ী করে; সিনেমাজুড়ে এই সংশয়-উত্তেজনার পারদ হারবার্টের পাগলামোর বিপরীতে ক্রমশই চড়তে থাকে । তবে কি নির্মাতা আমাদের এই চরিত্রের দ্বারা যৌক্তিক-নৈয়ায়িক ইতিহাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন?

    প্রকৃতপক্ষে, সিনেমার প্রায় শেষে যখন 'পোস্টমর্ডান' এবং 'ফুকো বলেছেন' টাইপ সংলাপ প্রক্ষিপ্ত হয়, তখন হারবার্টের অলৌকিক প্রেরণাসঞ্জাত উন্মত্ত প্রত্যাখান_ অলৌকিক ক্ষমতার বিদ্যমানতার প্রতি আবার ভেবে দেখার অবকাশ করে দেয়। এক্ষণে, আমরা যদি সত্যজিত রায়ের 'প্রতিদ্বন্দ্বী'(১৯৭০) কে বাংলা সিনেমায় আত্মমাত্রিকতার (সাব্জেক্টিভিটি) সংকট অনুসন্ধানের উৎসমুখ রূপে জ্ঞান করি তবে বলতে হয় যে, 'হারবার্ট' সংকটের সেইউৎসমুখ-কে প্রান্ততক বিস্তৃত করেছে ।

    নির্মাণ-শৈলীঃ

    সুমন মুখোপাধ্যায়ের নিজস্ব প্রকাশভঙ্গির দরুন টানটান বয়ানের এই সিনেমাটির পরিধি জুড়ে নির্মাণ-শৈলীর ছাপ ছড়িয়ে আছে । যেমন, অতীত ও বর্তমানের ভেদ হেতু সেপিয়া টোন ও টেকনিকালারের ব্যবহার চাতুর্যতার সাথে [রঙ্গীন] বর্তমান ও [ধূসর] অতীতের ফারাকটা নান্দনিক আকারে উপস্থাপন করে ।

    সুনিপুণ সম্পাদনার গুণে সিনেমাটি অন্যরকম গীতিময়তা লাভ করেছে । বিশেষ করে জুক্সটাপজিশন ও মন্তাজের অমায়িক ব্যবহার দর্শকের চৈতন্যকে বধির করে দিয়ে মহাবৃত্তের হাওয়া বইয়ে দেয় ।

    জুক্সটাপজিশনের প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে পড়ে যায় কিশোর হারবার্ট যখন বাড়ির ছাদে বসে কবুতরগুলিকে দানা ছিটাচ্ছে তখন সন্নিধি দৃশ্যে ডিস-এন্টেনার রোপণ একি সাথে সাংস্কৃতিক ক্রান্তিকালকে নির্দেশ করে। ডিস-এন্টেনা রোপিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে ছাদটা আর হারবার্টের থাকে না... ঠিক যেভাবে এই মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে বিনিক্ততা বা একান্ততা বলে কিছু অবশিষ্ট নাই ।

    আর 'ব্যাটেলশিপ পতেমকিনে'র ঐতিহাসিক ওদেসা স্টেপ যখন মন্তাজের ভিতর দিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের সিড়ি হয়ে যায় তখন বিপ্লবের আঁচটা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারে সচেতন দর্শকমাত্র ।

    পুরা ছবিজুড়েই দেখা যায় সময়ের গলন অর্থাৎ এলোমেলোভাবে এক দৃশ্যের ভেতর দিয়ে আরেক দৃশ্যে আগমন-নির্গমন যদিও দিনশেষে তা জিগ-স পাজলের মত ঠিক ই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছায়।

    কুশীলবদের অভিনয় এককথায় দূর্দান্ত। নাম ভূমিকায় সুভাষ মুখাজ্জী প্রায় সিনেমার পর্দা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছেন বলা যায়, বিনু চরিত্রে পরম্ব্রত চ্যাটার্জীর অভিনয় নকশাল যশটা প্রতিফলিত করে আর দারোগার ক্যামিও চরিত্রে গায়ক কবীর সুমনের অভিনয় অন্তত আমাকে 'অ্যাপোকালিপ্স নাউ'(১৯৭৯)-এ মারলোন ব্র্যান্ডোর কর্নেল কুর্টজের ক্যামিও চরিত্রটির কথা মনে করিয়ে দেয় ।

    'হারবার্ট'-এর পরতে পরতে ক্ল্যাসিক হলিউড থেকে শুরু করে প্যারালাল ইন্ডিয়ান সিনেমা সহ বিশ্ব চলচ্চিত্রের এন্তার চোথা চোখে পড়ে। চিত্রনাট্যের গড়নটা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ সিনেমার অনুপ্রেরণা পুষ্ট। তথাপি, এটি স্ব আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবেশের কাছে সৎ ই থাকে।

    সুমন মুখোপাধ্যায় সমন্ধে দু-চার কথাঃ

    শৈশবে বাবা অরুণ মুখোপাধ্যায়ের নাটকের দল চেতনার মহড়া ও নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ড্রামা রিভিয়্যু পড়তে পড়তে সুমনের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটতে থাকে, পাশাপাশি হিন্দী সিনেমার দেখার অভ্যেস তাকে সিনেমার প্রবল অনুরাগী করে তোলে।

    ১৯৮৮তে বিভাস চক্রবর্তীর সাড়াজাগানো মঞ্চনাটক মাধব মালঞ্চী কন্যাতে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে তার দৃশ্যরূপ জগতে পথচলা শুরু হয়। ১৯৯১ সনে নিউইর্কের এশিয়ান কালচারাল কাউন্সিলে থিয়েটার উপর কোর্স করেন এবং কলকাতায় ফেরার পর ক্লাউস মানের মেফিস্টো ও গিরিশ কারনাডের নাগমন্ডলের মত একাধিক সফল দর্শক-সমালোচক নন্দিত নাটক মঞ্চস্থ করেন। পরবর্তীতে তৃতীয় সূত্র নামে নিজ নাট্যদল করেন।

    এতকিছুর মধ্যেও সিনেমার অনুরাগ একটুও কমেনি তাই কারিগরী বিদ্যালাভের উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। যদিও ততদিনে মঞ্চের পাশাপাশি পকেটস্থ হয়েছে বেশকিছু প্রামাণ্যচিত্র, টি.ভি.বিজ্ঞাপন এবং নাসিরুদ্দিন শাহ ও পংকজ কাপুর অভিনীত একটি টি.ভি.ধারাবাহিক নির্মাণের অভিজ্ঞতা ।

    ফিল্ম স্কুলের পাঠ চুকিয়ে তিনি প্রথম বানালেন হারবার্ট। থিয়েটার বা সিনেমা সব ক্ষেত্রেই সুমনের কাজে কিছু বিষয়ের পৌনঃপুনিক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সুমনে ভাষ্যে-

    "রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক সজ্ঞানতা আমার বেড়ে উঠার দিনগুলিতে

    অভাবনীয় প্রভাব রেখেছে যা এখন আমার কাজের আবিশ্যিক অনুষঙ্গ ।"

    'তিস্তাপারের বৃত্তান্ত'-এর বাঘারু বা 'হারবার্ট'-এর হারবার্ট সরকার বা 'চতুরঙ্গ'-এর দামিনী ; সবক্ষেত্রেই সুমনের লক্ষ্য প্রান্তিক সমাজের চরিত্ররা । প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক সংহিতায় অপাঙক্তেয় মানুষদের চোখে সরাকে ধরা জ্ঞান করার চর্চা সুমনের কাজের অন্যতম ট্রেডমার্ক । সুমনের মতে, প্রান্তিক মানুষদের চোখ দিয়ে দেখামাত্রই প্রচলিত বাস্তবতার একটি ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায় ।

    আব্বাস কিয়োরস্তামি ও ফাতিহ আকিন-এর সিনেমার ভক্ত সুমনের আগ্রহ অনাড়ম্বর ও আকর্ষণীয় এমন সিনেমার প্রতি যা কারিগরি মানে চকচকে নাও হতে পারে কিন্তু মানবিক; যেটি এক অর্থে তার সিনেমার অন্যতম মাত্রা ।

    ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত 'হারবার্ট' চেতনার ভিত নাড়িয়ে দেয়া শৈল্পিকভাবে নির্মিত চলমান ছবিমালার স্থাপত্যকীর্তি যা কোলকাতার জায়মান বাস্তবতার ভেতর দিয়ে আমাদের গভীর হাস্যরস-করুণা-মানবিকতার হদিস দিয়ে যায়।

    আমেন ।

    হারবার্ট (২০০৮) , ১৪২ মিনিট
    পরিচালনা : সুমন মুখোপাধ্যায়
    চিত্রনাট্য : নবারুণ ভট্টাচার্য ও সুমন মুখোপাধ্যায়
    ডি.ও.পি . : সোমক মুখার্জী
    সম্পাদনা : অর্ঘকমল মিত্র
    সঙ্গীত : ময়ূখ ভৌমিক
    প্রযোজনা : কাজল ভট্টাচার্য

    ৮মার্চ-১৩মার্চ, ২০১১, মাকাসার, ইন্দোনেশিয়া।

    দোহাই

    ১। Herbert (2008)[ http://www.imdb.com/title/tt1084008/ ]

    ২। Suman Mukhopaddhay [ http://www.sumanmukhopadhyay.com/ ]
    ======================

    http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDhfMDdfMTRfMV80MV8xXzE2NzEwMg==

    বিদায় নবারুণ ভট্টাচার্য বিকল্প গদ্য আখ্যানের অনন্য স্থপতি - গৌতম গুহ রায়

    বাংলা সাহিত্যের বিকল্প গদ্য আখ্যানের অনন্য স্থপতি বিদায় নিলেন, চলে গেলেন নবারুণ ভট্টাচার্য। এক আধুনিক সৃষ্টিশীল লেখক ও কবি, যিনি মেইন স্ট্রিম ধারার একদম বিপরীত বিন্দু থেকে ক্রমাগত বিস্ফোরক নির্মাণ করে গেছেন গতানুগতিক শ্লথতার বিরুদ্ধে।

    তার সহযাত্রীদের প্রতি আমন্ত্রণ ছিলো্‌

    'আগ্নেয়গিরির মুখে/ একটা টেবিল বসানো আছে/ সেখানে আজ আমার/ চা খাওয়ার নেমন্তন্ন।/ হে লেখক, প্রবল পরাক্রান্ত কলমজীবী/আপনি যাবেন?' সেই নবারুণ ভট্টাচার্য নিজেই আজ চলে গেলেন, যাওয়ার আগে ভাষা উপত্যকায় কিছুটা লাভা উদগীরণ করে গেলেন। 'ফ্যাতাড়ু'র স্রষ্টা 'হারবার্ট'-এর জনক এক স্বতন্ত্র উচ্চতা থেকে তার আখ্যান বিন্যাসের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করালেন ভিন্ন ভাষিক ও আঙ্গিক নির্মাণকে। সাম্যবাদে বিশ্বাসী কবি নিজেকে পরিচয় দিতেন মানবতাবাদী হিসেবে, স্বভূমির প্রতি তীব্র ভালোবাসার যন্ত্রণায় লিখেছিলেন কবিতা 'এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না'। সেই কষ্টকে বহন করেই মাত্র ৬৬ বছর বয়সে চলে গেলেন। কর্কট রোগ তাঁকে শয্যাশায়ী করেছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। তবুও, তাঁর সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি জগতের দৈনন্দিন সম্পর্কে ভাটা পড়েনি। অসুস্থ অবস্থাতেও তারুণ্যের সঙ্গে যুক্ত রেখেছিলেন তিনি নিজেকে।

    প্রান্তিক বাংলার সঙ্গেও একটা নিবিড় আত্মীয়তা ছিল নবারুণ ভট্টাচার্যের। চূড়ান্ত অসুস্থ হওয়ার আগেও টেলিফোন সংলাপে তাঁর আকুতি স্পর্শ করত, 'এদিকে আর ভালো লাগে না রে, আমাকে তোদের ওদিকে থাকতে দিবি?' এই টানে তাই সুযোগ পেলেই চলে আসতেন। গত জানুয়ারিতে যখন তাঁকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। চরম দুঃখ ও হতাশায় জানিয়েছিলেন, 'ডাক্তার আর অনুমতি দিচ্ছে না রে, একটু সুস্থ হয়ে নি।' না, আর এদিকে আসার আর কোনো সুযোগ পেলেন না নবারুণ দা। ১৯৯৬-এর মাঝামাঝি তাঁর প্রথম জলপাইগুড়ি আসা, 'দ্যোতনা'-র আমন্ত্রণে তাকে ঘিরে সাহিত্যের আড্ডা। সাহিত্য ও রাজনীতি ছিল সেদিনের আলোচ্য। স্পষ্ট করে সেদিন নবারুণ দা বলেছিলেন্‌ 'কোনো শিল্পী বা লেখক নিজেকে অরাজনৈতিক বললে সে মিথ্যাচার করে এবং একটা পক্ষ সে নেয় চতুরভাবে। রাজনীতির বিরোধিতার নামে আদর্শহীনতা বিস্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।'

    সেদিন তিনি তার স্বচক্ষে দেখা সোভিয়েত পতন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, রাশিয়ার বিপ্লব পরবর্তীতে যে নতুন প্রজন্ম জন্ম নেয় তাদের মধ্যে আদর্শবাদের স্খলন ও ভোগবাদের বিস্তারই সোভিয়েত পতনের ভিত্তি রচনা করেছিল। যন্ত্রণার সঙ্গে উচ্চারণ করেছিলেন, 'যে শতাব্দীর সূচনা হয়েছিল মানবসমাজের মুক্তির বার্তা দিয়ে তার শেষ হলো কোক-পেপসির বাজার দখলের বিজয় কেতন উড়িয়ে। বরাবরই দারুণ আড্ডাবাজ ছিলেন তিনি। চোখে হাইপাওয়ার চশমা, মুখভর্তি কাঁচাপাকা দাড়ি, ঘন ঘন ধূমপানে অভ্যস্ত নবারুণদার স্বাভাবিক বন্ধু ছিল তরুণ থেকে তরুণতর কবি-সাহিত্যিকরা। বাবা 'নবান্ন' স্রষ্টা বিজন ভট্টাচার্য, মা মহাশ্বেতা দেবী, মামা যুবনাশ্ব বা মনিষ ঘটক; স্বাভাবিকভাবেই উভয়দিক থেকেই সাম্যবাদী চেতনায় লালিত হয়েছেন। সত্তরের উদ্দাম সময়ে নকশাল রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন 'হাজার চুরাশির মা'-এর সন্তান। তবে কখনও নিজেকে দলদাস করে ফেলেননি, প্রতিবাদে, সৃজনে ছিলেন স্পষ্টবাদী। সুগার আক্রান্ত ছিলেন, ২০০৫-এ তার সেরিব্যাল স্ট্রোক হয়, এরপর থেকে বাউন্ডুলেপনাকে ছেঁটে ফেলে জীবনযাপনে সাবধানী হন। সব সময় তাঁর সঙ্গে ছায়াসঙ্গীর মত থাকতেন জীবনসঙ্গিনী প্রণতি ভট্টাচার্য। আশ্চর্য গভীর, সখ্য ও নির্ভরতা ছিল দু'জনায়। শেষ যেবার এলেন শিলিগুড়িতে, গত ২০১১-তে, সঙ্গে বৌদি, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল যে শরীর দুর্বল হয়েছে। বক্তব্যে তবুও তীব্র কৌতুক ও রহস্যের মোড়ক ভেঙে ভেঙে এগিয়েছেন দৃঢ় নবারুণ। নবারুণদার স্বপ্নের ফসল ছিল 'ভাষাবন্ধন' কাগজটি। জলপাইগুড়িতে তার পাঠক তৈরির জন্য আমাকে বলেছিলেন। উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সেতুবন্ধন ছিল কাগজের লক্ষ্য। আক্ষেপ করতেন যে আমরা আমাদের প্রতিবেশী ভাষার সৃজনসম্পদ সম্পর্কে উদাসীন বলে। 'ভাষাবন্ধন'কে ঘিরে তৈরি হয়েছিল তরুণ লেখকগোষ্ঠী। অসুস্থ নবারুণদাও শেষদিকে যদিও এর হাল ছেড়ে দেন, মাসিক 'ভাষাবন্ধন' ক্রমশ ত্রৈমাসিক হয়ে গেল। মনে পড়ে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তার সোভিয়েত কনসুলেটের চাকরিটাও চলে যায়। এটা ছিল তার কাছে একটা বড় ধাক্কা। নবারুণ-পুত্র তথাগতর ভাষায় ঃ তখন বাবা খুব ফবঢ়ৎবংংবফ হয়ে পড়েছিল। মতাদর্শের দিক থেকে আঘাত ছাড়াও অর্থনৈতিক দিক থেকেও ধাক্কা এসেছিল।

    মা কলেজে পড়াত। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি।।।। যাই হোক তখন বাবার সামনে একটা কঠিন লড়াই উপস্থিত হয়। লড়াইটা খুব ব্যক্তিগত। এবং সেই লড়াইতে বাবা তার প্রতিপক্ষ ধষড়পড়যড়ষরংস-কে পরাজিত করে।।।। 'হারবার্ট' সেই সমাজের লেখা। হারবার্ট বাবাকে ধষড়পড়যড়ষরংস কে হারাতে সাহায্য করেছিল। হারবার্ট লেখায় শব্দের ফাঁকে ফাঁকে এই যে গধৎমরহধষরংবফ কান্না, ব্যথা ছিলো। যেটা একদিকে খুব ব্যক্তিগত, আবার অন্যদিকটা বিশ্বায়ন।।।। হারবার্ট বাবাকে বাঁচিয়েছিল। হারবার্ট হতে দেয়নি।'

    নবারুণ ভট্টাচার্যের সাহিত্যের ভাষার প্রসঙ্গে বিতর্ক বারংবার মাথাচাড়া দিয়েছে। মৃত ও সৃজনে রক্ষণশীলতার বপুটি নাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পুঁজি বিশ্বের বেনিয়া লালিত সাহিত্যকে আঘাত করা ছিলো তার অভিষ্ট, নগর জীবনের ব্যভিচারী লাম্পট্যকে র‌্যাশনালিজম আর রেনেসাঁর রাংতা ছিঁড়ে এবং মানবতার পলেস্তারা চটিয়ে প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। তাঁর অধিকাংশ গল্প-উপন্যাসের চরিত্ররা হারবার্ট, বোকা, মদনা, সুরপতি সারিক বা মদন, ডিএম, ওদি, পুরন্দরেরা চলতি হাওয়ার পন্থী নয় কেউ, কিন্তু চলতি সময় সম্পর্কে তীব্র সচেতন; সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মুখে ঝামা ঘষে দেবার তৎপরতা তাদের শিরায় শিরায়। নবারুণের ফ্যাতাড়ুদের লক্ষ্য ছিলো এদের পি-ি চটকানো। 'হারবার্ট'-এর বিনু ১৯৬৯-এ আশুতোষ কলেজে জিওলজি নিয়ে পড়তে আসে, সে তার আধখ্যাপা কাকা' 'হারবার্ট'কে বুঝিয়েছিলো্‌ 'যতদিন হাতেগোনা কয়েকটা লোক লাখ লাখ মানুষকে বোকা বানিয়ে খাটিয়ে মারবে, তাদের ঠকাবে, ততদিন ভূত, তারপর তোমার গিয়ে ঠাকুর-দেবতা-ধর্ম-এই সবই চলবে।' এই বিনু নকশালি আন্দোলনের বলি হয় পুলিশের গুলিতে, এলগিন রোডের একটি দেওয়ালে স্টেল মিল থেকে মাও-সেতুং-এর মুখ আঁকার সময় পুলিশের গুলিতে 'লাংফিন্ড পাঙচার' হয়ে যায় বিনুর। মৃত্যুর মুহূর্তে সে পিজির কেবিনে শুয়ে আবৃত্তি করে সমীর মিত্রর কবিতা্‌ 'আমি দেখতে পাচ্ছি, / আমার চোখের সামনে, আমার এতকালের দেখা/ পুরনো দুনিয়াটা পাল্টে যাচ্ছে, / ভেঙেচুরে, তছনছ হয়ে, গুঁড়ো গুঁড়ো/ হয়ে ঝরে পড়ছে/ পুরোনো দিনগুলো। / ঝড় আসছে একটা। কিন্তু ঝড় আসেনি। এসেছিল 'পচা, বদ্ধ, অকিঞ্চিৎকর' এক চালপর্ব। ঝড় না এলেও হারবার্ট এক আশ্চর্য বুদ্ধি জাগরণে বিনুর ঘরে সজ্জিত গোপন নিষিদ্ধ কাগজ বই ইস্তাহার চিলছাদের নির্জনতায় পুড়িয়ে এবং কিছুদিন পরে অলৌকিক স্বপ্নের দৌলতে ঝড়জাগানিয়া মন্ত্র পেয়ে যায়্‌ 'হারবার্ট হদিস পাচ্ছে। এবার তাকে ছাপাতে হবে। বিনুর সময় এসেছিল। এবার তার সময়। সব ল-ভ- করে দিতে হবে। নকড়াছকড়া করে ফাঁৎরাফাঁট করে বিশ্ব সংসারে একটা তা-ব লাগিয়ে দিতে হবে।' এই 'হারবার্ট' ১৯৯৬-তে বঙ্কিম পুরস্কার পায় এবং ১৯৯৭-তে পায় সাহিত্য আকাডেমী পুরস্কার। ২০০৬-এ সুমন মুখোপাধ্যায় একে নিয়ে ফিল্ম তৈরি করেন।

    ১৯৯৫-তে নবারুণের ফ্যাতাড়ুর আবির্ভাব। ২০০৪-তে এটি ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক ও অন্যান্য নামে বাজারজাত হয়। এই ফ্যাতাড়ুদের অভীষ্ট অন্তর্ঘাতী অভিযান, ছেলে, তঙ্গি ও সংস্কৃতি সচেতন পোয়ারে কিছু বিশিষ্ট ও আমূল সংস্কারমুখী অন্তর্ঘাতী অভিযান। কেন এই অন্তর্ঘাত তা স্রষ্টার ভাগ্যে নিরন্তর যে প্রতিহিংসার আগুন আমাদের মধ্যে কখনো ধিকি ধিকি, কখনো ধুঁক ধুঁক করেই জ্বলেছে, যা কেলিয়ে পড়লেও নিভতে পারে না, তা অনেকটাই চরিতার্থ করার পথ ফ্যাতাড়ুরা আমাদের দেখিয়েছে। ফ্যাতাড়ু কি সে ইঙ্গিত রয়েছে্‌ 'ইতিহাসে দেখবে কত মহাপুরুষ মানুষকে নতুন করে বানাবার জন্যে কত ফন্দি বাতলেছে। আমার তো মনে হয় অনেক খেঁটেখুটে শেষশেষ এই ফ্যাতাড়ু তৈরি হয়েছে। ফ্যাতাড়ু মদন একজন সঙ্গী জোগাড় করে যার নামের আদ্যাক্ষর হল ডি এবং এস। এই ডিএসকে মদন শেখায় কেমন করে ফ্যাঁৎ ফ্যাঁৎ সাই সাই।।। ফ্যাঁৎ ফ্যাঁৎ সাই সাই বলে আকাশে ওড়া যায়। একবার ঘুরে আসে নতুন হাওড়াপুলের চূড়ায় যেখানে 'হঠাৎ মেঘ ফুঁড়ে চাঁদমুখ' বেরোয় এবং 'তলায় খোপ খোপ অন্ধকার'। এভাবেই শুরু হয় ভ-ুলের নানা কথা। হয় কথা 'ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক', 'বোম্বাচাক' মানে ক্যাচাল লাগানো। পরের কথা বইমেলার ফ্যাতাড়ু এই সেই পোড়া বইমেলা, যেখানে 'বানচোৎরা আড়ালে আবডালে গাদাগুচ্ছের খাবারের দোকান' বসিয়েছিল। এভাবেই নানা পর্বের পর কবি সম্মেলনে ফ্যাঁতাড়ু। এই পর্বে নবারুণের আর এক সৃষ্টি কবি পুরুন্দর ভাটের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মদন ডিএস জুটির। পুরন্দরের আক্ষেপ সে কবি সম্মেলনে ডাক পায় না, অথচ কবি হিসাবে দারুণ ক্ষমতাবান পুরন্দরের কবিতা। এহেন তিন মূর্তির শেষ কীর্তি সাধু সমাগমে ফ্যাতাড়ু কুইজের 'লক' করাকে নিয়ে পুরন্দরের কীর্তি্‌ 'দু দুখানি নিতম্ব দুরু দুরু কাঁপে। পিঁপিড়া কামড় দিয়া যায় কোন ফাঁকে। লাল আছে, ডোঁয়া আছে, আরো আছে হায়। ঠাকুরের নামে পোদ লক কিয়া যায়''। এভাবেই নবারুণ শ্লেষে ও ব্যঙ্গে তীব্র সন্ত্রাসী, ভাষাকে মিষ্টি মোড়ক ভেঙে পাঠকের জিবে দেন প্রকৃত বাস্তবতার স্বাদ, দৈনন্দিনের উচ্ছল সংলাপ জেগে ওঠে। উদ্ভট কৌতুকের মাধ্যমে সে সমকালে উপনীত হন এক ধরনের মাত্রায়নের বহুস্বরীয় ভাষ্যে। হারবার্ট থেকে ফ্যাতাড়ু বাংলা উপন্যাসের ছকে বাঁধা সংজ্ঞা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নবারুণের পাঠককে আগাপাশতলা এলোমেলো ও বিশৃঙ্খল বয়ানের প্রতিন্যাশ থেকে অজস্র গলিঘুঁজির মধ্যদিয়ে ঠিক পথ বের করে এগিয়ে যাওয়া।

    লেখালিখিতে জীবনযাপনের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে পারতেন না তিনি। স্বগতোক্তির মত তাই লিখেছেন্‌ 'দু'দুটো কবিতা লিখেছি। আমার অনিয়ন্ত্রিত, অবিন্যস্ত, অসভ্য জীবনেও। এটা কম কথা নয়। রিকেট রোগে আক্রান্ত পায়ে (আমার ছোটবেলায় ছিল, আমি গরিব কমিউনিস্ট পরিবারের ছেলে) এর চেয়ে বেশি দৌড়ানো সম্ভব নয়। এসব নিয়েও ভাবছি। ভাবছি নশ্বরতা ইত্যাদি নিয়ে, তৎসহ ভাবছি এমনকি কিছু তুলকালাম ঘটবে; যেখানে আমি খেতাবের বদলে বুলেট খেতে যাবো। বুলেট মানুষই তৈরি করে। আমার খেতেও আপত্তি নেই। এটা কথা দেওয়া লেখা নয়, লিখে দেওয়া কথা।।।।'

    নবারুণাদার এমন অনেক লিখে দেওয়া কথা আজ গুন গুন করছে, চিৎকার করছে, ফিস ফিস করছে। ভাষার ব্যবহারে নবারুণ ভট্টাচার্য ছিলেন স্বতন্ত্র ও সরাসরি। বক্তব্যেও ছিলেন তেমনি, সরাসরি ও ভনিতামুক্ত। 'মহা প-িতদের ফুঁৎকারে মান্যভাষা না মেনে চলার অপরাধে, কত সাহিত্যকর্মী যে উড়ে গেছে তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু উড়ে যেতে যেতে তারা সকলেই বলেছে 'অনেক ভাটিয়েছেন, এবার ফুটুন'। হাংগ্রিরা থাকলে অবশ্যই বলতেন, যেমন তারা বলেওছিলেন 'এবার তবে মুখের মধ্যে লাগিয়ে নিন লুপ'। বাংলায় মানেটা এই যে ভাষাকে রক্তহীন, অযৌন, প্লাস্টিকগন্ধী ও ঢ্যামনা করে দেওয়ার একটা চেষ্টা আছেই। আমাদের কাজ হল এইসব সচেষ্টদের বাংলামতে ক্যালানো। আগে তেরপল চাপা। তারপর খেটো বাঁশ। (ভাষা ঃ জনৈক সাহিত্য কর্মীর উপলব্ধি ঃ নবারুণ ভট্টাচার্য) নবারুণদা বিদায় নিলেন। যাওয়ার আগে ভাষাকে সজীব করার কাজকে এভাবেই চাঙ্গা রেখে নতুন প্রজন্মের হাতে ব্যাটন দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার শেষতম আলোচনার দুটি কথা আজ নবারুণবিহীন সময়ে খুব মনে পড়ছে আমি লেখার ব্যাপারটা যেভাবে বুঝি সেটা নিছক আনন্দ দেওয়া বা নেওয়া নয়। আরও গভীর এক স্যালকেমি যেখানে বিস্ফোরণের ঝুঁকি রয়েছে।

    সংযোজন

    ১৯৮৩, সময়টা সাম্যবাদী জোটেরও বিপন্নতার সময়। এর পরবর্তী একদশকে কবিতা থেকে প্রবলভাবে চলে আসেন গদ্যে। ১৯৯২-তে 'প্রমা'-র শারদ সংখ্যায় বের হয় 'হারবার্ট' উপন্যাস। চমকিত বাংলা ভাষায় সংবেদনশীল পাঠককুল। এরপর ১৯৯৫-তে 'যুদ্ধপরিস্থিতি', ২০০৪-তে 'খেলনানগর', ২ বছর পর 'লুব্ধক'। ২০০৩-তে কাঙ্গাল মালসাট-এর ২ বছর পরে মসোলিয়াম্‌ একের পর এক পাঠকের চিরাচরিত পাঠাভ্যাসের ওপর বোমাবর্ষণ ঘটিয়ে অবশেষে যুদ্ধভূমি থেকে বিদায় নিলেন, কিন্তু ততদিনে উজ্জীবনী মন্ত্রে জাগিয়ে তুলেছেন বাংলাভাষার তারুণ্যকে, যারা আজ স্বজন হারানো কষ্টে মূক।

    উল্লেখযোগ্র গ্রন্থপঞ্জী ঃ

    উপন্যাস

    ১। হারবার্ট। ১৯৯৩ প্রমা প্রকাশনী।
    ২। ভোগী 'অটো' ২০০৭ দেশজ প্রকাশনী।
    ৩। যুদ্ধ পরিস্থিতি ১৯৯৫, 'প্রতিক্ষণ' শারদ সংখ্যা।
    ৪। খেলনানগর ২০০৪, সপ্তর্ষি প্রকাশন।
    ৫। লুব্ধক ২০০৬, অভিযান পাবলিশার্স।
    ৬। কাঙ্গাল মালসাট ২০০৩, সপ্তর্ষি প্রকাশন।
    ৭। মসোলিয়াম ২০০৬, দেশজ পাবলিশিং।

    গল্প সংকলন

    ১। হালাল আন্ডা, প্রমা প্রকাশনী ১৯৮৭।
    ২। অন্ধ বেড়াল, সৃষ্টি প্রকাশন ২০০১।
    ৩। ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক, ২০০১ প্রমা।
    ৪। ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক ও অন্যান্য ২০০৪, সপ্তর্ষি প্রকাশন।

    আরও অনেক গ্রন্থ।
  • /\ | 127.194.198.23 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ০২:৫৫644770
  • চড়াই
    ৩০/২০১৩
    - নবারুন ভট্টাচার্য

    মদ না খেলেও
    স্ট্রোক না হলেও
    আমার পা টলে যায়
    ভূমিকম্প উঠে আসে বুকে ও মাথায়

    মোবাইল টাওয়ার চিত্কার করে
    চড়াই পাখীরা পরে থাকে মরে
    ওদের আকাশ ফুরিয়ে গেছে
    আকাশ চুরি করেছে তস্করে

    পরে থাকে, বড়ই একাকী
    চড়াইপাখি
    পালকে কী জংলি ছাপ
    ঠোঁটে, চোখে লেগে ও কি নীল
    পাশে থাকে খড়কুটো, একে ফর্টিসেভেন
    এভাবেই শেষ হলো এবারের লেনদেন

    একটু চুপ করবেন, বিশিষ্ট শকুনেরা
    থামাবেন আপনাদের কর্কশ হাঁকডাক
    কিছুক্ষণ, বিনা শ্রবনযন্ত্রে, চড়াইয়ের
    কিচিরমিচির
    শোনা যাক
    ==============

    চুদুরবুদুর, ঝিনচ্যাক খিস্তি আর নুনুকামানের জোর
    অভিলাষ রায়,

    http://www.banglalive.com/Entertainment/Detail/5961/Entertainment#.U_UMJMWSzzM

    'কাঙাল মালসাট' নামে উপন্যাসটি নবারুণ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন 'প্রমা' পত্রিকায় ১৯৯৯-২০০০ সালে' ধারাবাহিক হিসেবে ় উপন্যাস তো নয়, সে ছিল যেন একখানা আস্ত বোমা ় যে বাংলা-বাজার একপিস 'বিবর'-এর ঘায়েই একসময় নড়ে কেঁপে হেলে হুল্লাট হয়েছিল,'কাঙাল মালসাট' সেই বাংলাবাজারের দম যেন বন্ধ করে দিয়েছিল ় সমাজের নিচুতলার গরীব-গুর্বো লোকসকল, যাদের এতদিন নেকু-পুষু-মুনু মেনস্ট্রিম জাস্ট করুণা করে এসেছে, সেই তারাই যে সপাটে একটা গোটা কাহিনির হিরো হয়ে বসতে পারে, সেটা নবারুণের আগে কেউ আর ভাবতে পেরেছিল কি? ফ্যাতাড়ু নামের সেই অদ্ভুত জাদু-মানুষেরা, যাঁরা আকাশে উড়ে বেড়াতে পারেন ফ্যাৎ-ফ্যাৎ-সাঁই-সাঁই মন্ত্রের দৌলতে, তাঁদের আমরা চিনতে শিখলাম তো নবারুণের হাত ধরেই ় এই অবমানবেরা (উচ্চকোটির কালচার তাঁদের সেভাবেই দ্যাখে) শুধু যে মহাদাপটে নিজের নিজের দুনিয়ায় রাজ করে, শুধু তাই নয়, দরকারে-অদরকারে ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দেয় বাকি পৃথিবীর পাবলিকগুলোকে ় কালচার বনাম কালচারের এই যুদ্ধ নিয়েই একটার পর একটা ফ্যাতাড়ু -কাহিনি সেই সময় লিখেছিলেন নবারুণ, তার মধ্যে সর্ববৃহৎ এই 'কাঙাল মালসাট' ়

    ১৫০ পাতার সেই উপন্যাস যেসব শব্দে আগা পাস্তালা ঠাসা, এই লেখায় সেগুলো জাস্ট কোট করে দেবারও সম্ভবত উপায় নেই, কারণ তথাকথিত ভদ্রজনেদের সেসব খিস্তি ছাপার ধক নেই ় ভাষার এই বেপরোয়া চ্যালেঞ্জ দিয়ে যে শুধু শুচিতার ঢ্যামনামিকেই নবারুণ অ্যাটাক করেছিলেন, তাই নয় ় অ্যাটাক করেছিলেন ভন্ডামির আড়ত সবকটা প্রতিষ্ঠানকেই ় তারমধ্যে পুলিশ-প্রশাসন-বামপন্থা-দক্ষিনপন্থা কী নেই ় সবচেয়ে বেশি করে আছে, প্রধান একটি খবরের কাগজ, সোজাসুজি যে কাগজের নাম করে নবারুণ তির্যক ব্যঙ্গে লিখছেন, 'দুইহাতে সংবাদ ও সাহিত্যের মন্দিরা যে প্রতিষ্ঠান নিয়তই বাজিয়ে চলেছে তার পোঙায় লাগতে যাওয়া মোটেই ফলপ্রসূ হতে পারে না ় উল্টে হুলো হয়ে যেতে পারে' (অধ্যায় ১) ় 'কিম্বা ড্যাশ ছাপা হচ্চে ় আর কী জানবে, ড্যাশ? কাল সাত লাখ বাঙালি এটা পড়েই সারাদিন ড্যাশ চুলকোবে' (অধ্যায় ১৮, ড্যাশ-এর জায়গায় কী কী শব্দ রাশি, সেটা জানতে মূল বই পড়ুন) ়

    বুঝতেই পারছেন, এহেন বই থেকে যখন সিনেমা বানাচ্ছেন সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতো এক অগ্রগণ্য বিদ্বজ্জন, তখন গোড়া থেকেই তৈরি হয় প্রচণ্ড কৌতূহল, কাহিনির কতটা রাখার দম দেখালেন পরিচালক? বাদ পড়লো কতখানি, কতটা জাস্ট চেপে যেতে হল ় এর ওপর গোটা টেনশনটাকে জাস্ট আরও উসকে দিল সি বি এফ সি বোর্ডের কাজকারবার ় গত কয়েকটা মাস ধরেই কানে আসছিল তাদের হুলোগিরি, এটা দেখানো যাবে না, ওটা দেখালে দুগ্ধপোষ্য (কার দুধ?) পাবলিকের সর্বনাশ ও সতীত্বনাশ ় সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন-এর কাজ আসলে শুধু ছবিটা কীরকম দর্শকগোষ্ঠীর জন্য উপযোগী, সেইটুকুনি বাতলে দেওয়া ় কিন্তু আগ বাড়িয়ে ছবি সেন্সর করার মহা-দায়িত্বটাও তাঁরাই পালন করে এসেছেন কিনা এযাবৎ ় এক্ষেত্রেও সেটাই হল, এই বোর্ডের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাখার হাত ঘোরাঘুরি করে বেশ কিছু দৃশ্য কেটে, গালির শব্দে বিপ লাগিয়ে তবে দেশের নাবালক আমজনতার কাছে হাজির হল এই ছবি ় মিডিয়ার কল্যাণে ততদিনে জেনে গেছি, কাহিনিকে সমকালে নিয়ে এসে সুমন মূল ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন ফ্যাতাড়ুদের যুদ্ধজয়ের পরে বামপতন ও দিদির শপথগ্রহণ দৃশ্য ় বোঝো কান্ড! ফ্যাতাড়ুরা কি তাহলে আসলে দিদির লোক নাকি? নবারুণ-কাহিনির এ কী বিপজ্জনক ইন্টার-প্রিটেশন করে বসছেন সুমন? সরকারি কাঁচি অবশ্য কেটে উড়িয়ে দিয়েছে ঠিক এই দৃশ্যটাই ় অগত্যা, সুমন শুধু ইঙ্গিত রেখেছেন ঘটনাটার, দেখিয়েছেন লাল আকাশটা সবুজ হয়ে গেল, ব্যাস শুধু ওটুকুই ়

    পুরনো দাদা আর নতুন দিদিকে নিয়ে চাপা শ্লেষ করাটা যত ইজি, বাংলার সবচেয়ে বিক্রিত (শব্দটাকে অন্যভাবে, অন্য বানানে নেবেন না ভাই) সংবাদপত্রের পোঙায় নবারুণের স্টাইলে লাগতে যাওয়াটা অবশ্য ঠিক ততটা ইজি নয় ় অধ্যায় ১-এই নবারুণ লিখছেন, 'আজ যদি কোনো লেখক ড্যাশকে খচায় তার কী দশা হবে ভেবে আতঙ্কিত হওয়া যাক' (পুরোটা জানতে মূল বই) ় এরকম সোজাসুজিভাবে সতর্কতা জারি করেছেন লেখক সেই ২০০০ সালেই, আর এই ২০১৩-র মিডিয়া-প্লাবন-যুগে পৌঁছে পরিচালক সেই সতর্কবার্তায় কান না দিয়ে ড্যাশ-কেই খচিয়ে বসবেন, সেটা আবার হয় নাকি? তার ফলে যেটা হল, কাহিনির ল্যাজামুড়ো ধরে ওই ড্যাশ কাগজের নামে যতগুলো বিষ-বিস্ফোরণ আছে, সব ঝেড়ে-পুঁছে বাদ দিলেন সুমন ় সি বি এফ সি আর কি সেন্সর করবে দাদা, বুঝতেই পারছেন, এই পাল্টানো সময়ের সব ইকুয়েশন ঠিক রাখতে সেন্সর বোর্ডের প্রথম কাঁচিটা খোদ পরিচালককেই বার করতে হয় ় যত প্রতিভাই থাকুক না কেন, মিডিয়া আপনাকে ব্যাক না করলে, আপনি যে ধুয়ে-মুছে যাবেন ভাই আমার ়

    ড্যাশ কাগজের নামে বিপজ্জনক কথাবার্তা বাদ দিয়ে এই ছবিটা তাই ১১৩ মিনিট জুড়ে খেলে গেল শুধু ফ্যাতাড়ুদের জাদু-বাস্তবতা নিয়েই ় তিন ফাতাড়ু, মদন (শন্তিলাল মুখোপাধ্যায়), ডি এস (দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য) আর পুরন্দর ভাট (জয়রাজ ভট্টাচার্য)-কে নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে যাওয়া বৃথা ় আমার ওপর এদের হ্যাং-ওভার আবার আরেক ডিগ্রি বেশি, কারণ ঠিক একদিন আগেই দেখে উঠেছি সংসৃতি-র 'ফ্যাতাড়ু' নাটকটাও, আর কী কান্ড, সেখানেও মদনের ভূমিকায় ওই শান্তিলাল (অন্য দুটো কাস্ট আলাদা) ় নাটকে অবশ্য সেইভাবে দণ্ডবায়স আসেননি, সিনেমায় সেই ভূমিকায় কবীর সুমন ় শাসক পার্টির টিকিটে ভোটে জিতে এখন শাসক পার্টির প্রধান বিরোধী তিনি ় রিয়েল লাইফে যাঁর ক্যারেকটার এতটা ডায়ানামিক, সিনেমায় জ্ঞানবৃদ্ধ সিনিক দাঁড়কাকের অভিনয়ে আর টুকটাক সংলাপ-বোমায় তাঁর তো জবাব হবে না দাদা ় এর পাশাপাশি সেক্সের মশলাটা পরিচালক ছড়িয়ে রেখেছেন নিজের কায়দায় ় মূল কাহিনির সেক্স-ভকিল 'বাবরাক কামাল কাবুলী' কিম্বা তার যৌনক্ষমতাবর্ধক ওষুধ, কোনওটাই সিনেমাতে পাবেন না ় বরং পাবেন মার্শাল ভদি (কৌশিক গাঙ্গুলী) আর তাঁর স্ত্রী বেচামণি-র (কমলিকা ব্যানার্জি) গ্লিসারিন সাবান আনার দাম্পত্য-খ্যামটা ় মূল উপন্যাসে এই কথাবার্তা চলছে মুখোমুখি ় আর সিনেমায় এই সংলাপের সময় পরিচালক যুবতী বেচামণিকে আড়ালে শুধু স্নানের ঘরেই পাঠিয়ে দিলেন না, ক্যামেরায় জমিয়ে দেখালেন বেচামণির স্নান, কখনও সামনে থেকে কখনও পেছন থেকে তার ফর্সা থলথলে মেদবহুল চামড়ায় চললো চানের জলের আঁকিবুকি ় আর এইভাবে দর্শকদের নিজের আদুল গা দেখাতে দেখাতে সেই বেচামণি যখন বলে ওঠে, '(আমায়) কী বলবেটা কী? বাজারখোলার খানকি?' তখন বোঝা যায়, সেক্স এরিয়াটা পলিটিক্স আর মিডিয়ার থেকে অ্যাটলিস্ট সেফ এরিয়া, তাই এই ব্যাপারে লেখকের থেকেও এককাঠি এগিয়ে যেতে পারলেন পরিচালক ় বা ওই সিনটাই ধরুন না ় বড়িলাল (শংকর দেবনাথ) আর তার বেবুশ্যে সাথী কালি (উষসী চক্রবর্তী) যে ভীষণ উগ্রতায় সেক্স করে, সেটা মূল উপন্যাসে তো নেই-ই, আর কোনও বাংলা ছবিতেও এর সমতুল্য শোয়াশুয়ির সিন পেয়েছি কিনা, মনে করতে পারছি না ় শরীর ধামসানো কাকে বলে, ক্যামেরা খুলে বুঝিয়ে ছাড়লেন সুমন ়

    সমাজের উঁচুতলার সঙ্গে নিচুতলার এই লড়াইয়ের প্রধান উপকরণের অনুষঙ্গেও সেই সেক্স ় মূল কাহিনি অনুসারে সেই অস্ত্রটা ছিল মাটি খুঁড়ে পাওয়া একটা ছোট্ট কামান, 'নুনুকামান' ় লেখক নবারুণ শুধু নামটা নিয়ে মশকরা করেই থেমেছিলেন, পরিচালক সুমন যথারীতি এর প্রয়োগে লেখকের থেকে একধাপ এগিয়ে গেলেন, দেখা গেলো নুনুকামানটা আকাশ জুড়ে থাকা অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনের জাঙিয়ার একটা বিশেষ জায়গা ফুঁড়ে বেরোচ্ছে আর মার্শাল ভদি চেঁচিয়ে বলছে, 'ঢুকিয়ে দাও' ় হল-এ তখন হৈ-হৈ হাসি আর সিটি-র বন্যা ় সেই নুনুকামানের জোরেই শেষ অব্দি রাজ্যে পালাবদল হলো কিনা, সেই ব্যাপারটা আরও খোলতাই যে করা গেল না, সেটা শুধু বাংলা বইয়ের স্পেশাল এফেক্টের ভাণ্ডারে একটু টান পড়ে গেল বলে ়

    পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় মূলত নাটকের মানুষ ় বাংলা নাটকের গৃহস্থ পরিসরে যে তিস্তা পাড়ের প্রায় নগ্ন বাঘাড়ু-কেও তুলে আনা যায়, সেটা হাতে-কলমে করে দেখিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন সুমন ় তাঁর প্রথম ছবি 'হারবার্ট' (২০০৬) তৈরি হয়েছিল নবারুণ ভট্টাচার্যেরই এক শ্লেষাত্মক উপন্যাস নিয়ে ় পরের ছবি করার সময় নবারুণকে ছেড়ে সুমন সোজা রবি ঠাকুরের কাছে ় ছবির নাম 'চতুরঙ্গ' (২০০৮) ় এরপর ২০১০ সালে তৃতীয় ছবি 'মহানগর অ্যাট কলকাতা'য় ফের নবারুণ ় এবার নবারুণের তিনটে ছোটগল্প একসঙ্গে এক ছবিতে বুনে দিলেন পরিচালক ় ২০১৩তে তাঁর এই চতুর্থ ছবি 'কাঙাল মালসাট' যখন রিলিজ করছে, তখন এর মধ্যেই প্রায় তৈরি তাঁর এর পরের ছবিটাও, ফের রবি ঠাকুর, এবার 'শেষের কবিতা' ় সেই 'শেষের কবিতা' এখনও দেখিনি, কিন্তু ওইটে বাদ দিলে, এখনও অব্দি আমার কাছে সুমনের সেরা ছবি সেই প্রথম ছবি 'হারবার্ট' ় অনেক পথ চলে নাটকের বাঘাড়ু থেকে সিনেমার ফ্যাতাড়ু অব্দি এসে পৌঁছেছেন সুমন, কিন্তু হারবার্টের মতো অভিঘাত সিনেমায় অন্তত আর একটা দিতে পেরেছেন কিনা, সেটা নিয়ে তর্ক রয়েই যাবে ভাই ়

    যে কটা ছবি আজ অব্দি করেছেন তিনি, 'কাঙাল মালসাট' তার মধ্যে সবচেয়ে জটিল ় লেনা-দেনার সমীকরণ এ যুগে এখন এতটাই বদলে গেছে যে, মূল উপন্যাসে যে খবরের কাগজের হদ্দ্মুদ্দ করে ছেড়েছেন লেখক, সেই প্রবল পরাক্রমশালী কাগজটাই হৈ-হৈ করে প্রচার করেছে 'কাঙাল মালসাট' সিনেমার (গোপন শর্ত কি এটা ঃ সিনেমাটায় অ্যাটলিস্ট আমাদের খিস্তি দেওয়া চলবে না) ় এবং এই এত প্রচারের পরেও রবিবার দুপুরবেলায় সিনেমাহল প্রায় খালি ় যতই গালাগালি আর শরীরবাজির পাঁচফোড়ন থাক না কেন, টানা দুই ঘণ্টা ধরে এতটা ম্যাজিক রিয়ালিজিম (পড়ুন আঁতলামি) কি দেব-আর-জিৎ দেখা পাবলিকের ধাতে সয় নাকি? হাফ টাইমে 'বস'-এর ট্রেলর দেখানোমাত্র পাশের লোকটার তাই কাতর আফশোস, ধুস শালা, কী যে বই দেখতে ঢুকলাম, এই 'বস' রিলিজ করছে কবে? মাসখানেক আগে যে 'চুদুরবুদুর' শব্দ নিয়ে প্রতিবেশী দেশে তুলকালাম হয়ে গেল, সেই শব্দটা মূল লেখার আগা পাস্তলা জুড়ে আগে থেকেই ছিল ় রিসেন্ট হৈ-চৈ-টা হয়ে যাবার পরে বিপণনের নিখুঁত অঙ্কে সেই শব্দ উঠে এল ছবির বিজ্ঞাপনেই ় শহরের নানান ঠেকে যে দুর্দান্ত গ্র্যাফিটি দিয়ে ছবির প্রচার হল, তার কর্নারে 'নো চুদুরবুদুর' লেখা দেখে আপনার যদি রক্তে দোলা লেগে গিয়ে থাকে তাহলে আগেই বলে দিই, এর মানে জাস্ট গড়িমসি কিংবা বাড়াবাড়ি, আর কিছু না, এমনকি একটা এক্সট্রা চন্দ্রবিন্দুও কোথাও নেই ়

    এইসব প্রাকৃত শব্দ-গাঁতন ব্যবহার করে বাংলা সিনেমার রাজমহলে একটা তুলনারহিত ধাক্কা দিতে পারছেন সুমন, তাতে সন্দেহ নেই ় সুমন কিম্বা কিউ-এর ('বিষ'‚ 'গান্ডু') মতো পরিচালক ছিলেন বলেই অন্তত এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে ত্রিকোণ পীরিতির পিকচার-পোস্টকার্ড ন্যাকামির বাইরেও বাংলা সিনেমা হতে পারে ় সাহিত্যে যে ঝাঁকুনিটা একসময় হাংরি জেনারেশন বা সুবিমল মিশ্র দিয়েছিলেন, সিনেমায় সেটাই তো আপনি এখন 'গান্ডু', কিম্বা ‚'-এ পেয়ে যাবেন ় একদম সেই অনেস্টি, সেই ঝাঁজ ় তারমধ্যে গোলমরিচের মতো ছড়িয়ে নিন এই সিনেমার ওই গানদুটো, শুরুতে 'সাত সমুন্দর পার ম্যায় তেরে' (ইন্সট্রুমেন্টাল) আর ছবির মাঝবরাবর 'ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না' (কবীর সুমন) ় খাবেন কি দাদা, গ্যারান্টি দিচ্ছি, ঝাঁজেই মজে যাবেন ়

    এই প্রসঙ্গে একটা অসাধারণ কাকতালীয় ব্যাপারের কথাও না লিখে পারছি না ় হাফ-গেরস্থ 'আধুনিক' বাংলা ছবিকে ঠাসিয়ে থাবড়া মেরে প্রাপ্তমনস্ক বানাচ্ছেন যে দুজন পরিচালক, সেই দুই মুখোপাধ্যায়ের (সুমন আর কোয়াসিক বা কিউ) সিনেমাই এবার রিলিজ করল একই দিনে ় মজা হল, তার মধ্যে সুমনের বহু বিতর্কিত 'কাঙাল মালসাট' নিয়ে মিডিয়া হাজার গাওনা গেয়ে ফেললেও, অন্যজনের ছবিটা (পরিচালক কিউ-য়ের 'লাভ ইন ইন্ডিয়া') নিয়ে মিডিয়া একেবারে চুপ ় 'বেস্ট ফিল্ম ইন ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার' বিভাগে জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই ছবি কোন মাল্টিপ্লেক্সে কটার শোয়ে চলছে, (সিনেম্যাক্স সন্ধে ৭।৩০) এ লেখা পড়ার আগে অব্দি আদৌ জানতেন? অথচ এই ছবির বিষয়ও কিন্তু সেই মুচমুচে সেক্স, সেক্স নিয়ে আজকের ভারতের ভণ্ডামি আর দ্বিচারিতা ়

    এত বাজার্-চালু বিষয় নিয়ে তৈরি ছবির রিলিজ নিয়েও কেন কোথাও একটাও শব্দ হল না, একই দিনের দুটো রিলিজের একটার ওপর বেছে বেছে বাংলা মিডিয়ার কেন এই (অ)সৎ মা-সুলভ নখরামি, তার রহস্যভেদ করাটা অবশ্য আমার সাধ্য নয় দাদা, এক ওই ফ্যাতাড়ুরা যদি পারেন ়
    ================================
    নবারুণ ভট্টাচার্যের হার্বার্ট - অর্ণব ইসলাম

    http://www.dainikdestiny.com/index.php?view=details&type=main&cat_id=1&menu_id=68&pub_no=477&news_type_id=1&index=0&archiev=yes&arch_date=24-11-2012

    নবারুণ ভট্টাচার্যের 'হার্বার্ট' উপন্যাসে এক ধরনের অধিবিদ্যার বাস্তবতার স্বাক্ষর পাওয়া যায়। এ উপন্যাসের শুরুতে আমরা দেখতে পাই হার্বার্ট নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তান। সে পেটের দায়ে তার বড় বোন বিনুর সঙ্গে শহরের এখানে-ওখানে ঘুরাঘুরি করেও থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা পায় না। এক সময় হার্বার্টের আশ্রয় হয় একটি পুরনো বাড়ির ছাদে পানির ট্যাঙ্কির ভেতর। যেখানে অনেক দিন ধরে পানি ভরা হয় না।
    গ্রীষ্মের জলবাষ্পহীন রোদ এমন কড়া যে কাকের গলা দিয়ে শুকনো ডাক বেরোয়। হারবার্টের পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি হালকা-পাতলা শরীরেও জলবসন্তের গোটা হয়ে ঘাম ফোটে। কিছুতেই তৃষ্ণা মেটে না। চিলছাদের ঘরটায় গরম বায়ুর উপদ্রব এমনিতেই বেশি। ধন্নাদা যদিও এই ঘর নানা বস্তুতে সুসজ্জিত করে ব্যবহার করছে, হারবার্ট সেসব বস্তু ছুঁয়েও দেখে না। হাতের শিরা কেটে আত্মঘাতী হওয়ার সময় ঘরের যে ভূগোল ছিল, আসবাবের যে অবস্থান ছিল তার মধ্যেই হারবার্ট সময় কাটায়। সময় কাটায় পুলিশের হাতে নিহত আশুতোষ কলেজের ভালো ছাত্র নকশাল ভাইপো বিলুর সঙ্গে কথা বলে। হারবার্ট তিনটি বই বা পত্রিকা অংশত পড়েছিল। 'পরলোকের কথা' বইটি হারবার্ট পুরনো বাক্সের মধ্যে পেয়েছিল, যা ১৭১ পাতা থেকে রয়েছে। দাদামশায় বিহারীলাল সরকারের সংগ্রহ থেকে হারবার্ট আরো বই পেয়েছিল, নাম 'পরলোক রহস্য'। তিন নম্বরটি জরাজীর্ণ 'নাটমন্দির'র পত্রিকা। এ পত্রিকা থেকে শুধু পড়ে 'সার্কাসে ভূতের উপদ্রব' লেখাটি। পরলোকের কথা, পরলোকের রহস্য আর ভূতের কাহিনী পর্যন্ত আউট বই পড়া হারবার্ট 'মৃতের সহিত কথোপকথন' করে বাজারে আলোচিত হয়ে ওঠে। হারবার্টের ছোটবেলায় বিনু একটা ছড়া শিখিয়েছিল্‌ 'পুলিশের লাঠিঝাঁটার লাঠি/ভয় করে না কমিউনিস্ট পার্টি।' ওই ছোটবেলাতেই কৃষ্ণলালের সঙ্গে হারবার্ট 'ফল্ অব বার্লিন' আরও কিসব যুদ্ধের ডকুমেন্টারি দেখেছিল। কৈশোরে উত্তীর্ণ হতে হতে বড় নিঃসঙ্গ, বিষণ্ন বিহ্বল ফাইভ-পাস হারবার্টের মনে কমিউনিস্ট পার্টি অব ফল অব বার্লিনের প্রভাব থাকে না। বরং ওই চিলছাদ তার জীবনে বড় নিকট, বড় গভীর জায়গা নিয়ে থাকে। হারবার্ট চিলছাদের ঘরে সব জায়গা, আলো-বাতাস, গন্ধ সমস্ত শরীর দিয়ে অনুভব করে, তবুও তার পারলৌকিক রূপে ছায়া জমে, অভিমান হয় প্রণব বাবুর মতো বড় মানুষকে চৌবাচ্চার ব্যাঙকে ব্যাঙ বলেই প্রমাণ করতে
    হাজির করার!
    উপন্যাসে দেখা যায়, পুলিশের গুলিতে মৃতপ্রায় বিনুকে পুলিশই বন্দি করে হাসপাতালে তোলে। বিনু মারা যাওয়ার আগে পুলিশের কান ও চোখ এড়িয়ে হারবার্টকে তার ডায়রির কথা বলেছিল্‌ কালীদেবীর ফটোর পেছনে লটকানো আছে। বিনু ১৯৭১ সালে খুন হওয়ার তের-চৌদ্দ বছর পর হারবার্ট দুপুরে ঘুম তন্দ্রার মধ্যে স্বপ্নে দেখেছিল বিনুকে। বিনু বলছে, পূজোর ঘরে মা-কালীর পটের পেছনে ডায়রির কথা। মৃত্যুর আসন্নকালে বিনুর বলা ওই ডায়রির কথা হারবার্ট ভুলেই ছিল। এই স্বপ্ন দেখার দিন বিনুর বাবা কৃষ্ণলালও এই বাড়িতে, বিনুর মৃত্যুর তের-চৌদ্দ বছর পর তিনি এলেন। হারবার্টের জন্য বরাবরের মতো দুটো করে ধুতি-শার্ট কিনে দিলেন। নতুন ধুতি আর শার্ট পরে ঘুমাচ্ছিল, তখনই ওই স্বপ্নের ঘটনা ঘটে। হারবার্টের কথা মতো কালীপটের পেছনে ফ্রেমের সঙ্গে আটকানো বিনুর ডায়রি পাওয়া যায়। হারবার্টের একমাত্র বিশ্বাস স্বপ্নেই বিনু বলে গেল ডায়রির কথা। হারবার্ট সাইনবোর্ড টাঙিয়ে 'মৃতের সহিত কথোপকথন' শুরু করে দেয়। মৃত ছেলের খবর, মায়ের খবর, বরের খবর জানতে লোকের অভাব হয় না।
    পরলোকে বিশ্বাসী হারবার্টকে বিনু বলেছিল, 'ওসব ধাপ্পা'? 'রিডিকিউলাস'। হারবার্টের তা মনে হয় না, 'তাহলে প্ল্যানচেট যেটা হয়?' হারবার্ট যেন শক্ত যুক্তি পেয়ে যায়! মাত্র কয়েকটা লোক ভূত, ধর্ম ইত্যাদির কথায় পাথরপোড়া রোদের ঝাঁপে হারবার্টের চোখের চারপাশ লাল হয়ে ওঠে, গরম পানি ভেসে ওঠে আর হারবার্ট কান পেতে শোনে বৈদ্যুতিক শ্মশান বিধ্বংসী বোমা বিস্ফোরণের গর্জন। হারবার্টের বিছানাসহ বৈদ্যুতিক চুলি্লতে ঢোকানো হয়েছিল। বিনুর রাতের পর রাত এ বিছানায় কমরেডদের সঙ্গে তোশকের পরতে পরতে চোরাপথে সংগৃহীত পাথর ফাটানোর ঘটনা মাপ ও ক্ষমতার প্রভূত ডিনামাইট স্টিক ঢুকিয়ে রেখেছিল। হয়তো বিনুর প্ল্যান ছিল বিকট প্রলয়ংকর কিছু ঘটাবার; সে সময় সে পেলো না। বিনু হারবার্টের ব্যর্থ স্বপ্নভরা এই তোশক শেষ পর্যন্ত প্রচ- আগুনের চাপে লুকানো ডিনামাইট স্টিকসহ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশের সামনে লাশ পোড়ানোর শ্মশান ধ্বংস করে দেয়। হারবার্টের সুইসাইড নোটে লেখা ছিল্‌ চৌবাচ্চার তেলাপিয়া গঙ্গা সাগর চলল।/ দোবেড়ের চ্যাং দেখবি? দোবেরের চ্যাং/ দেকাব? ক্যাট ব্যাট ওয়াটার ডগ ফিশ।
    =========================

    মুভি রিভিউঃ কাঙাল মালসাট
    য় অদ্মিন এদ্নেস্দয়, আউগুস্ত ১৪, ২০১৩

    http://anusondhan.com/Home/Details/N000000004081

    সেন্সর, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আর বিতর্ক- ত্রিশূলের আঘাতে প্রায় কণ্ঠরোধ হতে বসেছিল সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবি। প্রচুর আলোচনা-টক শো-লেখালিখির পর অবশেষে সেন্সরের কাছে মাথা নুইয়েই মুক্তি পেল শহরের বিভিন্ন হলে। ছবি দেখে প্রথমেই যে দীর্ঘশ্বাসটা পড়ে সেটা এই নির্মম কাঁচির জন্যেই। ছবির পরিসরে বেশ কটি জায়গায় বড় নিঃস্ব, বড় কাঙাল করে দিল কাঙাল মালসাট-কে। পরিচালক যারপরনাই বিরক্ত ও বিষণ্ণ। সঠিক জানা নেই শেষ অবধি সত্যিই কাঁচির দোষ, নাকি কিছুটা পরিচালকের চিন্তাভাবনার খামতিই কাঙাল মালসাট-এর ওপর ন্যায়বিচার করতে পারল না? ব্যক্তিবিশেষের অভিনয়ের ওপরে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকল কাঙাল মালসাট। বিপ্লব যে-কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে। সমাজ যতই পরিবর্তন হোক না কেন, নিম্নবর্গের মানুষেরা চিরকাল নিচের স্তরেই থেকে যান হয়ত, তবু বিপ্লবের বারুদ জমতে থাকে পাহাড়প্রমাণ হয়ে। শুধু একটু আগুনের অপেক্ষায় থাকে। নবারুণ ভট্টাচার্যের উপন্যাস "হার্বার্ট`` শেষ হয়েছিল এই আশ্বাস দিয়ে। যে-সময়ে এই উপন্যাস লেখা হয়, সে বড় সুখের সময় নয়। নকশাল আন্দোলন দিকদিশা হারাচ্ছে। পথভ্রষ্ট হচ্ছে যুবসমাজ, শাসক-নিরসনের নামে চলছে নির্বিচার হত্যালীলা। এই আশ্বাসই জাগরুক ছিল কাঙাল মালসাট-এও।
    কাঙাল মালসাট প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। শুরুতে মিখাইল বুলগাকভের উক্তি- পান্ডুলিপিরা পুড়ে যায় না। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে লেখা ছিল-চলবে। শেষ অধ্যায়ে লেখা ছিল একটি ছোট্ট অথচ জাজ্জ্বল্যমান শব্দবন্ধ- চলবে না। ২০০৫ এ এর নাট্য-উপস্থাপনা। তৃতীয় সূত্র ও চেতনা নাট্যগোষ্ঠির যৌথ উপস্থাপনা। পরিচালক সুমন সেই গল্পটাই বললেন অন্য আর্থসামাজিক কাঠামোয়। রূপকার্থে, এই ছবি পশ্চিমবঙ্গের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির (যতই পরিচালক বলুন এ ছবি অ্যান্টি-তৃণমূল বা অ্যান্টি- সিপিএম নয়) ফ্রেম। পরিবর্তনের পরের ছবি। কলকাতা লন্ডন হবে। দার্জিলিং হবে সুইজারল্যান্ড। ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না! বস্তি উচ্ছেদ হয়ে আকাশ চুম্বন করবে শপিং মল। গরিবরা পিছোতে পিছোতে পাতালপ্রবেশ করছে। কোনও পরিবর্তনেই তাদের কথা ভাবা হচ্ছে না। ভোটব্যাঙ্ক ছাড়া তাদের কোনও অস্তিত্বস্বীকার করা হয় না রাজনীতিতে। যে-কটি কথা বললাম, সেগুলো এই কাঙাল-দের ছবি আঁকার জন্য। সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে পুরন্দর, ডি এস, চোক্তার ভদি, বেচামণি, বেগম জনসন, গুপ্তচর গোলাপ এরাই। প্রান্তিক মানুষ।

    ফ্যাতাড়ু-র যে ধারণাটা দিয়েছিলেন নবারুণ ভট্টাচার্য, তাতে ম্যাজিক রিয়্যালিজম-এর মোড়ক ছিল। গুমরে ওঠা বিপ্লব হঠাত্ প্রাণ পাওয়া। অন্যরকম বাস্তবে। গ্রাম্য বিশ্বাস, তুকতাক ঝাড়ফুঁকের তুঙ্গ ব্যবহারের নিদর্শনও ছিল। দণ্ডবায়সের চরিত্রটির অবশ্যই একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। ইতিহাস ও ভবিষ্যত্ দেখতে পান যিনি। এখানেও তার অন্যথা হয়নি। কবীর সুমনের গম্ভীর কণ্ঠস্বর সত্যিই একটা অন্য আবহ তৈরি করে। কিন্তু কস্টিউম এমন নাটুকে কেন? কেনই বা স্পেশাল এফেক্টস-এর এত দৈন্যদশা? তিনি উধাও হন আর পালক ঝরে পড়ে! বড় রকমের ছন্দোপতন। তা ছাড়াও স্পেশাল এফেক্টস সম্পর্কে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত্‍ ছিল উড়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলোয়, কিংবা আকাশে ভেসে থাকা ফ্যাতাড়ুদের। সিনেমায় যে ফ্যাতাড়ুরা ফিরে আসে, তাদের ফ্যাত-ফ্যাত-সাঁই-সাঁই অবশ্যই নাটকের উপস্থাপনার থেকে আলাদা হবে, আশা রাখা যায়। উড়ন্ত চাকতিকেও কেমন যেন খেলনা-খেলনাই মনে হয়। অল্কিঙ্গ তিঘ্ত্রোপে বেত্বীন থে রেঅলিত্য অন্দ উন্রেঅলিত্য" যে ধারণায় নবারুণ ভট্টাচার্য বাস্তবতার ছবি আঁকতেন, সুমনের ছবিতে সেই বাস্তবদৃশ্যগুলো একটু যেন আরোপিত মনে হল। ধাক্কা খেল ম্যাজিক রিয়্যালিজমের যাদুবিন্যাস।
    পরিচিত ভাষাবিন্যাসের বাইরের ভাষায় কথা বলে এই চরিত্ররা। অ-সভ্য ভাষা। চোখ কপালে তোলার মতো বিস্ফোরক। এখানে লেখক ও পরিচালক একই রুটে হেঁটেছেন। ছবি যত এগোয়, ততই গা-সওয়া হয়ে যায় এই আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাঙ্গোয়েজ। কেন্দ্রীয় চরিত্র কৌশিক গাঙ্গুলি- চোক্তার ভদি। চরিত্রের রক্তমাংসে ঢুকে গিয়েছেন অনায়াসে। শান্তিলাল, জোজো থেকে বিশ্বজিত্ চক্রবর্তী, বিমল চক্রবর্তী- সব কলাকুশলীরা নাটকের দক্ষ শিল্পী। প্রাণপণ অভিনয় করেছেন। তবু কবি পুরন্দর ভাটকে ধারহীন মনে হল। নাটকে রুদ্রনীল অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন এই চরিত্রে, এখানে তাঁর অনুপস্থিতি বেশ টের পাওয়াও গেল।

    অস্ত্র ছাড়াও বিপ্লব হয়। কাঙালদের জোটবদ্ধ প্রচেষ্টা ভিত নড়িয়ে দিল, অন্তত টেররাইজ করল এই সমাজকে। নানা ঘটনার ঘনঘটায় তা বেশ ভালভাবেই বর্ণিত। যাঁরা কাঙাল মালসাট নাটক পড়েননি, কিংবা মঞ্চউপস্থাপনাও দেখেননি, তাঁদের বেশ ভালই লাগবে। কিন্তু শেষে এসে আবার গতি হারাল। প্রায় তুবড়ি যেমন হুহু করে উঠে ছড়িয়ে যায় দিগ্বিদিক তার পর ভুস করে নিভে যায়, তেমনই। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু পেয়ে গেল। ধুলোর আস্তর পড়ে গেল বিপ্লবে। কেন? কোনও সঙ্গত কারণ ছিল কি?

    উত্তরে মৌনতা। সিনেমা জুড়ে আমরা যাকে সাক্ষী হিসেবে দেখি, যে ঘুলঘুলি দিয়ে দেখে কাঙালের বিশ্বকে। সে-ই বা গেল কোথায়? এই বিপ্লবে তার কি কোনও ভূমিকা ছিল না? যে-মানুষটি প্রথম থেকে শেষ অবধি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে চলে তেল পাওয়ার আশায়, সেই নিরন্তর স্বপ্নও কি অবাস্তব বলে স্বীকার করে নেওয়া হল? এমনই প্রচুর প্রশ্ন। আর সেই সঙ্গেই হঠাত্ যবনিকাপতন। কোথাও `চলবে না` শব্দটা শোনা গেল না। মনে হল, "চলছে, চলবে"-ই শুনতে পেলাম। ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না। চলবে লোভের সংস্কৃতি। মাথা নোওয়াবে সব বিপ্লব। নাকে খত দেবে ফ্যাতাড়ুরা।

    বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আরেকজনের উপস্থিতি অনস্বীকার্য ও বেশ জোরালো। সঞ্চালক মৌপিয়া নন্দী!
  • /\ | 127.194.210.83 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ১০:২৫644771
  • আজ কে কে যাচ্ছেন? আমি যেতে পারলাম না, অফিস আছে।
  • pi | 24.139.221.129 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ১০:২৬644772
  • সুমেরুদা যাচ্ছে।
  • /\ | 118.171.159.41 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ১৩:১৯644773
  • আলোচনাটা অন্তত যদি কেউ রেকর্ড করে রাখতে পারেন, গান আর নাটক তো পরে অন্যত্রও শোনা / দেখা যাবে। সুমেরু দা যা বলল, সাধারণভাবে কোনো রেকর্ডিং হচ্ছে না। ভিডিও বা অডিও। যদি মোবাইলে কেউ ধরে রাখেন, আলোচনাটুকু অন্তত। প্রেসির বাচ্চাদের সাথে ও কারো যোগযোগ নাই?
  • pi | 24.139.221.129 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ১৩:২০644774
  • আছে।
  • b | 135.20.82.164 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ১৪:১০644775
  • লজিক্যাল অ্যান্ড-কে লাখ লাখ লাল সালাম।
  • /\ | 127.194.214.241 | ২৩ আগস্ট ২০১৪ ১১:৩৩644776
  • গত রবিবার মানে ১৭ই আগস্টের "একদিন" কাগজটা কারো কাছে আছে? ওতে নবারুণ ভট্টাচার্যের সামগ্রিক কাজের একটা খতিয়ান রয়েছে। রাজীব চৌধুরি করেছেন। কারো কাছে থাকলে জানাবেন। ১ দিনের জন্যেও যদি পাওয়া যায়, বা লেখাটা। অনলাইন সাইট টা বোধহয় বন্ধ করে দিয়েছে তাই না? কাজু কই?
  • aranya | 78.38.243.218 | ২৪ আগস্ট ২০১৪ ০৬:৫৮644778
  • 'বাংলার সবচেয়ে বিক্রিত (শব্দটাকে অন্যভাবে, অন্য বানানে নেবেন না ভাই) সংবাদপত্রের পোঙায় নবারুণের স্টাইলে লাগতে যাওয়াটা অবশ্য ঠিক ততটা ইজি নয় ় অধ্যায় ১-এই নবারুণ লিখছেন, 'আজ যদি কোনো লেখক ড্যাশকে খচায় তার কী দশা হবে ভেবে আতঙ্কিত হওয়া যাক' (পুরোটা জানতে মূল বই) ় এরকম সোজাসুজিভাবে সতর্কতা জারি করেছেন লেখক সেই ২০০০ সালেই, আর এই ২০১৩-র মিডিয়া-প্লাবন-যুগে পৌঁছে পরিচালক সেই সতর্কবার্তায় কান না দিয়ে ড্যাশ-কেই খচিয়ে বসবেন, সেটা আবার হয় নাকি? তার ফলে যেটা হল, কাহিনির ল্যাজামুড়ো ধরে ওই ড্যাশ কাগজের নামে যতগুলো বিষ-বিস্ফোরণ আছে, সব ঝেড়ে-পুঁছে বাদ দিলেন সুমন ় সি বি এফ সি আর কি সেন্সর করবে দাদা, বুঝতেই পারছেন, এই পাল্টানো সময়ের সব ইকুয়েশন ঠিক রাখতে সেন্সর বোর্ডের প্রথম কাঁচিটা খোদ পরিচালককেই বার করতে হয় ় যত প্রতিভাই থাকুক না কেন, মিডিয়া আপনাকে ব্যাক না করলে, আপনি যে ধুয়ে-মুছে যাবেন ভাই আমার'

    - কাঙাল মালসাট সিনেমাটা দেখা হয় নি এখনো। মূল উপন্যাসের আবাপ-বিরোধী যাবতীয় কথাবার্তা সত্যিই বাদ পড়ে থাকলে দুঃখের ব্যাপার
  • সে | 203.108.233.65 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ০২:২০644779
  • ভাষাবন্ধনের উৎসব সংখ্যায় নবারুণ ভট্টাচর্যের ওপরে একটা খুব সুন্দর লেখা বেরোচ্ছে (অনেক লেখার মধ্যে একটি)। সংগ্রহ করে পড়তে অনুরোধ করি।
  • :) | 127.194.210.112 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১০:৫৪644780
  • কার লেখা?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১২:৫০644781
  • একজন গবেষকের লেখা। তিনি নবারুণ ভট্টাচার্যের লেখাপত্তরের ওপরে অনেকদিন যাবদ গবেষণা করছেন। পান্ডুলিপিটি আমি পড়েছি।
  • Kaju | 131.242.160.210 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৩:০৪644782
  • ওমুদা, একদিনের সাইট বোধায় বন্ধ করে দিয়েছে। গুগল করে ekdin.in, ekdin.org কিছুতেই পেলাম না। অন্য কোথায় চলে যাচ্ছে লিঙ্কে। ঃ(
  • de | 190.149.51.68 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৩:২৮644783
  • সে, কি করে ভাষাবন্ধন পাবো? কোথাও অর্ডার দেওয়া যায়?
  • /\ | 118.171.159.41 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৪:০১644784
  • পুরোনো একদিন কাগজই শুধু উঠে যায় নি, যা জানলাম, পুরোনো আফিসের সব কাগজ, লাইব্রেরি, আর্কাইভ সবই নষ্ট হয়ে গেছে।
    নতুন ভাবে একদিন শুরু হয়েছে, সল্টলেকের কোথাও তাদের অফিস। ঠিকানা / ফোন নং দৈনিক একদিন কিনে দেখতে হবে। তারপর তাদের ফোন করে জানতে হবে ১৭ই আগস্ট রবিবারের কাগজ তাদের কাছে পাওয়া যাবে কিনা। পাওয়া গেলে, যেইই সেটা সংগ্রহ করতে যাক, সে যেন অন্তত ১০ কপির বেশি কাগজ নিয়ে আসে, আমার নিজের ১০ কপি লাগবে, বিভিন্ন উৎসাহীদের জন্যে।
    কেউ কাজটা করতে পারলে জানাবেন।

    গবেষকের নাম কি গোপন রাখাই বিধেয়?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৫:০৩644785
  • আরে না না , নাম গোপন রাখার প্রশ্নই নেই। লেখকের নাম তো লেখার সঙ্গেই ছাপা থাকবে।
    ভাষাবন্ধন তো ত্রৈমাসিক হয়ে গিয়েছিলো কিছু সময় থেকেই , অবশ্য এখন কী ব্যবস্থা হবে তা জানা নেই, হয়ত আবারো মাসিক হয়ে যাবে কিংবা হবে না। সাধারনতঃ স্টলে পাওয়া যায়, ২০১২র উৎসব সংখ্যাটা এখন হাতে ধরে রয়েছি (এটা নবারুণদা স্বহস্তে উপহার দিয়েছিলেন), সেখানে একটা ইমেল ঠিকানা রয়েছে সেটায় মেইল করে দেখুন না [email protected]; এছাড়া যোগাযোগের ঠিকানা ও নম্বর যথাক্রমে
    ৩/৫২, বিজয়গড়, কলকাতা ৭০০ ০৩২,
    ফোন (০৩৩) ২৪৯ ৯০৭ ৫৪
  • Kaju | 131.242.160.210 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৫:০৭644786
  • সে-দার সাথে ওনার কীভাবে পরিচয় কোন সূত্রে বলুন না। উনি তো আগে 'সোভিয়েত দেশ' পত্রিকায় ছিলেন, রাশিয়ায় ছিলেনও বোধায় কোনো সময় যা শুনেছি। আপনারও রাশিয়া কানেকশন, সেই দিক থেকেই নাকি?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৫:০৯644787
  • কাজু,
    না। পাঠক হিসেবে প্রিয় লেখকের সঙ্গে সোজা সাপটা যেচে পরিচয়। এইটুকুই।
  • Kaju | 131.242.160.210 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৫:১২644789
  • ও আচ্ছা। কাল ঋত্বিকের ওপর বক্তব্যটা শুনছিলাম বাড়িতে। ডাউনলোড করে রাখব ভেবেছিলাম, করা গেল না।
  • /\ | 118.171.159.41 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৬:১২644790
  • ■ট্রিবিউট টু নবারুণ / ফেসবুক থেকে

    কবীর সুমন
    জাত-বিদ্রোহী, জাত-স্রষ্টা নবারুণ হাজির! কিসের মৃত্যু! নবারুণরা মরার জন্য জন্মান না। জন্মের স্ট্রীট-ফাইটার নবারুণের লড়াই কোনওদিন থামতে পারে না। আমার,আমাদের কমরেড, বন্ধু, সহযোদ্ধা, সহনাগরিক, সহ-বিদ্রোহী, সহ-পরিহাসপ্রিয়, সহ-খিস্তিমুখর, সহ-প্রেমিক, নবারুণ হাজির আছেন, থাকবেন। ঠিক যেমন মরশুমগুলো হাজির থাকে, আছে। বিশ্বের কোনও শক্তি যেমন বাংলার চৈত্রের হাওয়াকে, বাংলার শরতের স্তরমেঘগুলোকে, শরতের প্রথম শিশিরের ফোঁটাগুলোকে, শীতের হাওয়ায় আমাদের দেহের শিরশিরানিটাকে, শীতের শেষের হাওয়ায় বুকের হাহাকারটাকে, যে-কোনও ভোরবেলা অন্তত একটি শালিখের প্রাতঃভ্রমণকে থামাতে পারে না, তেমনি মৃত্যুর ক্ষমতা নেই আমাদের নবারুণকে থামিয়ে দেয়, অন্য কোথাও নিয়ে যায়। যেখানে মানুষ বিদ্রোহ করবে, তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বিদ্রোহকে ভাষা দেবে, রূপ দেবে, সেখানেই নবারুণ। থাকবেনই থাকবেন। যেখানেই মানুষ বা যে-কোনও প্রাণী মনে মনে হলেও রুখে দাঁড়াবে, সেখানেই নবারুণ। যে বিপুল গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কালক্রমে এই রাজ্যে বাম-শাসনের অবসান হয়েছিল তার একদম গোড়ার দিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় আমায় দেখতে পেয়েই নবারুণদা বলেছিলেন, “কবীর, এবারে ছাড়ব না, বাঞ্চোৎ, এবারে ছাড়ছি না।” সেই “এবার” কিন্তু শেষ হয়নি। চলছে। চলবেই। কমরেড নবারুণ একইভাবে মুখে একটা অদ্ভূত ছেলেমানুষির হাসি নিয়ে বলে চলেছেন, “এবারে ছাড়ছি না, বাঞ্চোৎ, এবারে ছাড়ছি না।”

    টোকন ঠাকুর
    হার্বাট এর হারু… নবারুণ দা’র চলে যাওয়া না যাওয়া
    গোল পার্কের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে, সেই মে মাসের পোড়া পোড়া দুপুরে ট্যাক্সিতে গেলাম গলফ গ্রিন, তখনকার সময়ে মহাশ্বেতা দেবীর বাসায়। অামি অার শাহনাজ মুন্নী। অামাদের সঙ্গে ছিলেন অাকাদেমীর অারুণি দা এবং নবারুণ দা। অবশ্য ট্যাক্সিতে তিনি বলেননি যে, তিনি নবারুণ ভট্টাচার্য। ‘মৃত্যু উপত্যকাকে যিনি নিজের দেশ বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তো মহাশ্বেতা দেবীর সামনেই তিনি সিগারেট ধরালেন এবং সিগারেটের প‌্যাকেটটা তিনি অামার দিকে বাড়ালেন। অামি জড়তা ফিল করছিলাম, ২০০২ সালে, মহাশ্বেতা দেবীর সামনে, তাঁরই বাসার ড্রইংরুমে কীভাবে সিগারেট টানি! হাজার চুরাশির মা তা টের পেয়ে বললেন, ‘শোনো, তুমি তো অামার নাতির বয়সী। খোকন যদি টানে, ও তো অামার ছেলে, তুমিও টানো।’ খোকন বলতে নবারুণ দা। বললাম, ‘নবারুণ দা, বাংলাদেশেও বিপ্লবী স্বপ্নের বারান্দায় বসা ছেলেমেয়েদের সম্ভবত সব্বারই মুখস্ত, এই জল্লাদের ভূমি অামার দেশ না…’
    মাঝেমধ্যে অামি সিদ্বেশ্বরীতে, প্রতীতি দেবীর সঙ্গে অাড্ডা দিতে যাই। ভবির বয়স এখন ৮৯। ভবি, ভবার যমজ। ভবা হচ্ছেন ঋত্বিক ঘটক। সঙ্গতকারণেই কথা হয় খুকু ওরফে মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে, তিনি প্রতীতি দেবীর তিন মাসের ছোট। ঋত্বিক-প্রতীতির বড় ভাই মনীশ ঘটকের মেয়ে খুকু। খুকুর ছেলেই, বিজন-পুত্র নবারুণ। নবারুণ ভট্টাচার্য চলে গেলেন। কয়েকমাস অাগে, প্রতীতি দি’ই একদিন ফোন করে এমন ভাবে বললেন, যেন এ ব্যাপারে অামার কিছু করার ছিল! দিদি বললেন, শোনো, খোকনকে মুম্বাই না নিয়ে দিল্লি নেয়া কি ভালো হলো?’
    চলে গেলেন। তো গেলেইনই। তবু মৃত্যু উপত্যকায়, জল্লাদভূমিতে, হার্বাট-এর হারু…নবারুণ দা, অাপনার মৃত্যু হয় না…

    সুমন মুখোপাধ্যায়
    “অমানবিকতা ও তৎসংশ্লিষ্ট আবশ্যিক যে বুজরুকির সার্কাসের মধ্যে আমরা রয়েছি তার সঙ্গে কোনরকম আপোষ অসম্ভব”।
    তোমার এই কথা মনে রাখব। লাল সেলাম কমরেড নবারুণ ভট্টাচার্য।
    Red Salute Comrade Nabarun Bhattacharya. I am immensely fortuitous that you have shared some precious anarchist moments with me. Will clench them within me.

    রায়হান রাইন

    “হারবার্টের রক্তহীন মৃতদেহ দাহ করার সময় যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছিল তা অবধারিতভাবে এই ইঙ্গিতই দিয়ে চলে যে কখন, কোথায়, কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা কে ঘটাবে সে সম্মন্ধে জানতে রাষ্ট্রযন্ত্রের এখনও বাকি আছে।”
    নবারুণ ভট্টাচার্যের এই কথাগুলি খুব সত্য আমাদের সময়ের জন্য। বারবার কথাগুলি মনে পড়ছিল শাহবাগ আন্দোলনের সময়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদেরকে দেখিয়েছে কিভাবে সেই অনিশ্চিত বিস্ফোরণকে সে মোকাবেলা করতে পারে। বিনুকে তাই বাঁচতে হবে, তাকে যে খুব দরকার। যে আরও বেশি পাথর ফাটানোর ডিনামাইট স্টিক জড় করতে থাকবে তার বিছানার নিচে। এমন এক মহতী বিস্ফোরণ সে ঘটাবে যাকে মোকাবেলা করার হিসাব আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে এখনো নেই।

    এ টি এম গোলাম কিবরিয়া
    ডিয়ার নবারুণ, এই মিহিমিহি সন্ধ্যায় আপাতশান্ত মাঝবয়সীদের তরে তুমি থাকতে পারতা আরো কিছুক্ষন। আমাদের বিমোহিত ইয়াং ব্লাডেরা খলবলায়না বহুকাল, মাদার তেরেসার পোষ্যপুত্রেরা ডরায় হার্বার্টরে, ভালো লাগেনা তারে আর। তুমি তো ছিলানা শুধুই ক্রোধান্বিত চাঁড়াল এক, পরবর্তী ঋত্বিক ঘটক কোন। তুমি তো ছিলানা ব্র্যান্ড এমব্যাসেডর সত্তরের, বেভুলবিপ্লবী সকাতর। এইসব পোষমানা সন্ধ্যায় আমার বাবার কাকার তরুণ আননখানি দেখিতাম আমি তোমারি চশমাতে; তাদের যৌবনে তারা মিছিলে যাইতেন, আমরা যাইতেছি, ফেইসবুকে। অবিরাম।

    আরফান আহমেদ

    যা হবার তাই হল একটু পরেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কি করি আর কি করি নাই কিচ্ছু মনে নাই। মানিব্যাগটা একটানে ফুরিয়ে গেল দেখলাম, এই সকালে। গত রাতে মাতলামো কি বেশি না কম হল এইটা ভাবতে ভাবতেই সকালের সংবাদ, নবারুণ গন কেইস ! ধুর! বাম হাতের বুড়া আঙ্গুলটায় কি বেদম ব্যাথা, কেম্নে কি কে জানে! তাইলে এখন বাংলা সাহিত্যের আর কোন অফিসার বাঁইচা নাই! নবারুণ কাজটা না করলেও পারত!

    নাসিফ আমিন
    আমাদের ফ্যাতাড়ু নবারুণ ভট্টাচার্য আজিকে বিকাল চার ঘটিকায় ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে দেহ ছাড়িয়াছেন। তাহাকে আমি দূর হইতে ভালবাসিয়াছিলাম। আশা ছিল দেখা হইবে আমাদের। আমার বন্ধু আরস্তু লেনিনের সহিত তাহার আলাপ হইয়াছিল দিল্লীতে। ভাবিয়াছিলাম সেই মারফত একবার তো অন্তত দেখা হইবেই। দিল্লীতে না হউক; কলকাতায়। যদিও যাই নাই কভু কলকাতায়। তবু ভাবিয়াছিলাম নবারুণ দার জন্য হইলে যাইব। ভারতবর্ষে ঢুকিবার ভিসা লইতে ভারতীয় এমবাসির সামনে লাইনে দাঁড়াইব। বনগাঁ লোকালে করিয়া কলকাতা পৌঁছাইয়া সোজা নবারুণ দার বাসায় যাইব। যদিও জানি না তাহার ঠিকুজি কি; তবু ভাবিয়াছি জোগাড় হইবে যেকোনভাবেই। তবু ভাবিয়াছি একবার যাইব কলকাতা; একবার কথা কহিব নবারুণ সনে। হইল না। তিনি আচম্বিৎ উড়িয়া গেলেন; ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাই সাই…

    অনির্বাণ ভট্টাচার্য
    মনে হচ্ছে এই বেলেল্লাপনা, শপিং মল, সেন্টু গান, আর মাল্টি নাশনাল খুনসুটি করা সোফাসেট এ বসে থাকা কুকুরগুলোর পৃথিবীতে বড় একা হয়ে গেলাম…আমার জিভটা কেউ কেটে নিল অনেকটা অন্যরকম ভাবে ভাবতে চাওয়া নবারুণের লড়াইটা নিভিয়ে দিয়ে… এরকম আর কেউ নেই… এরকম আর কেউ ছিল না… এরকম আর কেউ আসবে না… এবার কি করবে কমরেড…?

    বসন্ত বোস

    এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।
    কত জনে কত জায়গায় যে ব্যবহার করে লাইনগুলো। আসলেই এ তাঁর দেশ নয়। কাঁটাতারের এপাড়-ওপাড় কোনপাড়েই নয়। আর মাঝখানে ফেলানী। নাহ, এ নবারুনের দেশ নয়। নবারুণ ভট্টাচার্য, আমাদের হার্বার্ট বিদায় নেন আর বিশেষ আদালতের বিশেষ জামিনে মুক্ত ‘মানুষ’ গার্মেন্টস মালিক দেলোয়ার। মরছে মানুষ, নবারুনের মানুষ… এমনই প্রতিকী!
    রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের ৪০০০ কোটি টাকা তসরুফ যেখানে মন্ত্রীর মতে এমন কিছু নয় সেখানে শ্রমিকের প্রাপ্য ৪৫৭ লক্ষ টাকা দিতে গড়িমসি করা মালিকের কাছে পরাজয় মেনে নিচ্ছি। হয়তো দেলোয়ারের সাক্ষর দেয়া চেকে বেতন মিললে ভুলে যাবো তাজরীনে মানুষ গ্রীলের আখ্যান।
    কলম হাতেও ট্রেঞ্চে ট্রেঞ্চের দায়িত্বপালন করতে পারেন আপনি। দেখিয়ে গেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য। গেছেন। যারা আছেন, আছি- অলঙ্কার না বানিয়ে, তারা নবারুণের ট্রেইল ধরে এগোবো কি?
    লাল সালাম কমরেড। লাল সালাম।

    ■নবারুণ ভট্টাচার্য ফিচারিং ঋত্বিক কুমার ঘটক / ভূমিকা- গদ্য ও শ্রুতিলিখনঃ ইমরান ফিরদাউস

    যেকোন জন্ম বা মৃত্যু মানুষকে সক্রিয় করে তোলে। কোত্থেকে যেন অ্যাক্টিভিজমের জোশ নাজেল হয় শিরায় শিরায়। দিল-দরিয়ার ওপর দিয়া সিনায় সিনায় লাগে টান। একটা কসমিক ভালোবাসা তৈরি হয়। যেখানে আসলে সম্পর্কের লেপ্টালেপ্টি খুব বড় বিষয় হয়ে উঠে না। বা, এক কাপে চা পানের মত ঘনিষ্ঠতারো প্রয়োজন পড়ে না। শুধু জরুরী হয়ে উঠে সংগোপনে উদ্দিষ্ট বিষয় বা ব্যক্তির সাথে সংজ্ঞাপনের ইশারাটুকুন। নাইলে ধরেন, মানুষ মরে শ্মশানে/গোরস্তানে আর বিলাপ হয় কেন উঠানে!? একটা সিন্ডিক্যালিস্ট ফিলিংস তৈরি হয় মাথার ভেতরে। তো, নবারুণ ভট্টাচার্য বা ঋত্বিক কুমার ঘটক অথবা জহির রায়হান-কে সেই সিন্ডিকেটের একজন বলেই আমি বা আমরা মনে করি বা এক কথায় সময়ের প্রয়োজনে যাদের যুইতের কথা কইতে চোখের পলক পড়ে না তাদের সব্বাইকে।

    ২.০
    নবারুণ তার পাঠকদিগেরে ফ্যাতাড়ু চিনায় দিয়া নিজে করছেন ভবলীলা সাঙ্গ। ভাবলাম, কুচ পরোয়া নেহি… মন্ত্র তো একটা জানাই আছে ‘ক্যাট-ব্যাট-ওয়াটার-ডগ-ফিশ’- এই মন্ত্রেই হয়তো ফ্যাতাড়ু হয়ে উড়াল দিবো তাহার নিকটে। হুঁহ, সে আশায় গুড়েবালি। উলটো চাপা শোক নিয়া অফিসে বইসা গাজায় মৃতের টালি আপডেট করি। আর ভাবি, পাগলের সর্দারটা পগাড় পার দিয়া কতদূর গেলো?! আরো ভাবি, কি কইরা তার থাকা-না-থাকার শোক উদযাপন করা যায়… এলিজি লেখার ভার থেকে রেহাই নেওয়ার লাইগা তাই ইতি-উতি রসদ খুঁজি। মনে মনে পছন্দসই টেক্সট খুঁজি তর্জমা করার বাসনায়। তো, হাতড়াইতে হাতড়াইতে মাউসের কার্সরে আইসা ঠেকলো ঋত্বিকরে নিয়ে নবারুণের এই বোম্বাস্টিং কথামালা।

    ৩.০
    কোন আইডিয়া ছিল না কি শুনতে যাইতেছি, বাট বিস্ফোরক দ্রব্যের ঘ্রাণ বাড়ি মারতেছিলো ইন্দ্রিয়ে। টের পাচ্ছিলাম এই কথামালা শোনার পর কিছুই আর রবে না আগের মতন। কেননা, আমরা তো জেনে থাকবো- নবারুণ বা ঋত্বিকের কাছে মুড নিয়ে কোন চুদুরবুদুর চলে না!

    ৪.০
    বিষয়টা হইলো টাইম ট্রাভেলিং। মানে নবারুণ যখন ঋত্বিককে নিয়ে আলাপ করেন তখন সেটা আর ব্যক্তি ঋত্বিকের ঘেরাটোপে আটকে থাকে না। বরং ঋত্বিকের মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের একটা খোয়াবনামার বয়ানে ঘনীভূত হয়। বা আরো বলা যায়, সামগ্রিকের মাঝে ঋত্বিকের অনন্যতাও পরিস্ফূটিত হয়। এক কথায়, ‘ঋত্বিক-বিচার’ রচনা করেন অবলীলায়। আইকোনোক্লাস্টের কালচার ভেঙ্গে রচনা করেন চিরায়ত মানুষের টুকরো আলোর স্মৃতি। বুঝিয়ে দেন- অ্যাক্টিভিস্ট মাত্রই শিল্পী নন আর শিল্পী হলেই কেউ অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে উঠে না। দুটো বিষয়কেই একই দেহ-মনে ধারণ করার, সিস্টেম-সর্বস্বতাকে বারংবার নাকোচ করে দেয়ার মত কোমরের জোর থাকতে হয়। আর যিনি এই ভাব অবধারণ করেন তিনি যে কোন উপায়ে, যে কোন শিল্প-মাধ্যমেই সমাজের শিখিয়ে দেওয়া র‍্যাশনালিটিকে প্রশ্ন করবেই করবে! এই মানুষ(গুলি) প্রতিনিয়ত উত্তরের মধ্যে দিয়ে প্রশ্নের যৌক্তিকতা বিধান করে থাকেননা পরন্তু প্রশ্নের ছড়ি দিয়ে উত্তরের জরুরত নির্মাণ করেন।

    নবারুণের কথামালায় এক প্রয়োজনীয় ক্রিটিকের সন্ধান পাওয়া যায়। যেথায় তিনি একাধারে ঋত্বিকের শক্তির কথা কইতেছেন, আরেকধারে ঋত্বিকের ব্যর্থতার হিসেব দিতেছেন। আর বুঝাইতেছেন, ‘ঋত্বিক’ নামের এক অনবদ্যতার গল্প; যে গল্পে সময় হয়ে উঠে এক অসুদাপায়ী শেরিফ আর শুভংকরের ফাঁকি ধরার দায়ে যে কোন সৎ শিল্পী মাত্রই প্লে করে আউট ল’র ক্যারেক্টার। এই আলাপের মধ্যে দিয়ে আরো অনেক কিছুর সাথে যে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠে, তাহলো- আপাত শিক্ষিত মানুষের মোনাফেকির নকশামালা। বা, ক্ষমতা কাঠামোর মর্মমূল আঘাতে আঘাতে উপড়ে ফেলার অদম্য ইচ্ছা। এবং সবশেষে এটিই প্রতীয়মান হয়- লোকাল সিস্টেমে সহজ মানুষের কোন খানা নেই। কারণ, পরিবেশবাদীদের গায়েই সবসময় লেগেছে সত্যের মত বদমাশের তকমা।

    ৫.০
    বক্ষ্যমাণ কথামালা নিয়ে নবারুণ কবে, কোথায়, কেন হাজির হয়েছিলেন সেই ফিরিস্তি আমার জানা নেই (তবে জানার চেষ্টা ‘অন প্রসেসিং’ আছে)। যথাযথ সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক- কথা থেকে লেখায় আমদানির এই প্রসেসটাকে আমি এথায় তর্জমা হিসেবে বিবেচনা করার স্পর্ধা দেখাইতে চাই। ভবিষ্যতে টীকা-টিপ্পনি আর স্বাস্থ্যবান ভূমিকাসহ পুনর্বার হাজির হওয়ার ইরাদা নিয়ে, আশু পাঠক-পাঠিকারে সেলাম জানাই।

    …[ ভূমিকা-গদ্য ইমরান ফিরদাউস ]

    নবারুণ ভট্টাচার্য ফিচারিং ঋত্বিক কুমার ঘটক

    হোয়াট ড্যু ইউ মিন বাই ফিল্ম?
    সত্যিই কি তুলসী চক্রবর্তী পরশ পাথরে কিছু করেছিলেন নাকি হ্যামলেটে আমরা যে স্মোকনোফস্কিকে দেখেছি সেটা কি খুব ভাল ছিল… কীরম যেন কনফিউজড হয়ে যাই! এই যে আমাদের দেশে এইভাবে একটা লুম্পেন কালচার তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক টেলিভিশনে এই কথাও কবুল করেন যে উনি মেঘে ঢাকা তারার রিমেক করবেন! মানে অসভ্যতা, অভব্যতা যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে এই সময়ে…! সত্যি, উনি যে বললেন ঋত্বিক আবিষ্কার- এই আবিষ্কার যত বেশি করে করানো যায় ততই মঙ্গল! আমার একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে- সেই অসামান্য সিকোয়েন্সটি তোলা হচ্ছে কোমল গান্ধারে যেখানে গিয়ে সেই বাফারের ট্রেনের ধাক্কাটা… সেই যে বাংলাদেশ বর্ডার… তো ঐখানে, আমি তখন খুব ছোট আর ঐ যে ট্রলিতে করে ক্যামেরা যাচ্ছে, ঐ ট্রলিতে আমি বসে আছি; তা লালগোলার কোন ফিল্মবেত্তা এসে হঠাৎ আমাকে বললো, ‘আচ্ছা খোকা শোন তুমি দেড়শো খোকার কাণ্ডতে ছিলে না?’ ঐ ধরেশ সিনেমা কোম্পানির সঙ্গেই সে সিনেমা করে বেড়ায়… আমি খুব স্মার্টলি উত্তর দিলাম- হ্যাঁ আমি ছিলাম! কথাটা কিন্তু খুব মিথ্যে নয়, কারণ আমার বন্ধু লোকনাথ দেড়শো খোকার একটি খোকা, আমরা একসঙ্গে পড়তাম অতএব সেই বন্ধুর গর্বে আমিও গর্বিত। যাইহোক, সেইখানে সেই লোকটিই ঋত্বিককে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছিলো- ‘আচ্ছা এই ফিল্মে এমন কোন ক্যারেক্টার আছে যাকে নিয়ে আপনার ক্যামেরা এগোচ্ছে?!’ তো, ঋত্বিক বললো- কি বললে? তো, আবার বললো- ফিল্মে…? ঋত্বিক বললো, হোয়াট ড্যু ইউ মিন বাই ফিল্ম? এইটা একটা মারাত্মক প্রশ্ন কিন্তু!! ন্যাচারালি সে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি! ওর প্রশ্নের পালাতে পথ পাচ্ছে না লোকটি!!
    ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে
    কিন্তু হোয়াট ড্যু ইউ মিন বাই ফিল্ম? ফিল্ম বলতে আমরা কি বুঝি…? ফিল্ম কি…? ফিল্ম একটা স্টেটমেন্ট হতে পারে, ফিল্ম একটা দার্শনিক তাৎপর্য বহন করতে পারে, ফিল্ম একটা ট্রিটিজ হতে পারে, ফিল্ম একটা দাস ক্যাপিটাল হতে পারে… ফিল্ম অনেক কিছু হতে পারে। মুষ্টিমেয় চলচ্চিত্র পরিচালকই এই জায়গাটায় উত্তীর্ণ হন, সকলেই হন না! এবং সেখানে ঋত্বিক একজন, যেমন- তারকোভস্কি একজন, বার্গম্যান একজন, আকিরা কুরোশাওয়া একজন- যারা এই দর্শনের জায়গায় গিয়ে, ইতিহাসের জায়গায় গিয়ে অদ্ভুত একটা অবস্থান গ্রহণ করে- যেখানে সমস্ত শিল্পমাধ্যম গুলিয়ে যায়! তা, আমি এইটা নিয়ে একটা তত্ত্বে এসছি, ঋত্বিক ঘটক বা তার পাশাপাশি আমরা যাদের দেখতাম সেই বিজন ভট্টাচার্য, যতীন্দ্র মৈত্র, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, চিত্ত প্রসাদ, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য- এরা কারা? আজকে কোনো লোক এদের চেনে না! দু’দিন পর ঋত্বিককেও চিনবে না, সেটা ঠিক। কারণ, আমাকে যে নেমন্তন্নটা করা হয়েছিলো সেখানে বলা হয়েছে যে, বাঙ্গালির আধুনিকতা কোলন ঋত্বিক কুমার ঘটক। এখন, এই বাঙ্গালি যে রেটে আধুনিক হয়ে উঠেছে, তাতে তার কাছে ঋত্বিক ঘটক একটা উদ্বৃত্ত মানুষ! তা, আমি উদ্বৃত্ত মানুষটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। আমি সোভিয়েত দূতস্থানের প্রচার বিভাগে চাকরি করতাম। পাশের ঘরে বসতেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ছিলেন পিকিংপন্থি। মানে, মস্কোর হেডকোয়ার্টারে পিকিংপন্থি মানুষ- অতএব কেউ তার সাথে কথা বলতো না। আমি জন্ম থেকেই ওকে দেখে আসছি। তো, আমি গিয়ে কথা বলতাম, গল্প করতাম। আর ঋত্বিক প্রায়ই আসতেন পয়সার জন্য। একটু মদ খাওয়ার জন্য পয়সা দরকার। এলেই শিবদেবের কাছ থেকে কিছু, আমার কাছ থেকে কিছু, হেমাঙ্গদার কাছ থেকে কিছু নিয়ে বেরিয়ে যেতেন। খুব কম সময়ের জন্য আসতেন। এই মানুষটাকে কাছে দেখতে দেখতে একদিন হলো কি- এই যুক্তি-তক্কো-গপ্পোর ফেইজটাতে বা তার আগে ঋত্বিক ফুটপাতে থাকতো, রাস্তায় থাকতো। আমার বাড়ির উল্টোদিকে একটা বাড়ি ছিলম, তার রক ছিল, তার উপরে থাকতো। শুধু ঋত্বিক নয়, ঋত্বিকের মত আরো কিছু লোক যাদের পরিপূর্ণ উদ্বৃত্ত বলা যায়- দে ওয়্যার লুম্পেনস, তারাও থাকতো। ঋত্বিকও সেই লুম্পেনদের একজন। আমার মনে আছে- সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমি সিগ্রেট কিনতে গিয়েছি ঋত্বিক আমার কাছে পয়সা চেয়েছে… এক প্যাকেট চারমিনার কেনার পরে আমার কাছে আঠারো না আটাশ এরকম পয়সা আছে। তো, আমি বললাম এটা নেবে? ও বললো দে! আমি দিয়ে বললাম, এই পয়সায় কি হবে? ও বললো, চলে যাবে! ঋত্বিকের মৃত্যুর পর আমার বাবা একটা স্মরণ সভায় বলেছিলো, ‘ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে’। ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে- এই কথাটা যেন আমরা না ভুলি। কারণ, এই খুন নানাভাবে করা যায়! জাফর পানাহিকে যখন বলা হয় কুড়ি বছর তুমি ছবি করতে পারবে না, স্ক্রিপ্টও লিখতে পারবে না- এটা তাকে খুন করা। বিনায়ক সেন কে যখন বলা হয় তুমি ডাক্তারি করতে পারবে না, কিছুই করতে পারবে না- সেটাও তাকে খুন করা। এবং ঋত্বিক ছবি করার কি সুযোগ পেয়েছিলো তার সময়?! একটা স্ট্রাগ্লিং/ফাইটিং আর্টিস্ট বলতে যা বোঝায় ঋত্বিক পরিপূর্ণভাবে তাই ছিলো! আমি আপনাদের বলছি, সুবর্ণরেখার আউটডোর চাকুলিয়ায় হয়েছিলো। সেখানে রোজ রাত্তিরে সাড়ে নয়টায় কোলকাতা থেকে একটা ট্রেন এসে পৌঁছাতো। সাড়ে ন’টার আগে থেকে আমি ঋত্বিকের মধ্যে একটা অদ্ভুত টেনশন লক্ষ্য করতাম। টেনশনটা হচ্ছে ঐ ট্রেন এসে পৌঁছুবে কিনা! ট্রেনটা এলে তার থেকে কোন চেনা লোক নাববে কিনা! এবং সে ফিল্মের র’স্টক আনবে কিনা! সেইটা না আসলে শুটিং করা যাবে না! এসবের কারণে দিনের পর দিন শুটিং বন্ধ হয়ে গেছে, র’স্টক আসেনি। এইভাবে একটা মানুষকে কাজ করতে হয়েছে। ঋত্বিক যখন ছবি শ্যুট করতেন তখন তার মাথায় তো একটা অ্যাল্কেমি, একটা ক্যালকুলেশন সবই থাকতো…। কিন্তু, আরেকটা জিনিস করতেন- অনেক এক্সেস শ্যুট করতেন, ওগুলো সব এডিটিং টেবিলে ঠিক হবে। সুবর্ণরেখার সেই দুর্মূল্য বহু বহু ফুটেজ টালিগঞ্জে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে… আমাদের দেশে সত্যি কোন আর্কাইভ, সত্যি কিছু থাকলে (হয়তোবা সংরক্ষিত হতো)… এগুলো অমূল্য সম্পদ। যেমন, আইজেনস্টাইনের এইরকমের বহু কাজ তারা নষ্ট করেনি। সেগুলো নিয়ে পরে এডিট করে অনেক কিছু বেরিয়েছে। কিন্তু, ঋত্বিকের ভাগ্যে সেটা জোটেনি!! এই জন্য বললাম, ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে। ঋত্বিকের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ছে- ঋত্বিক যাদের বাজনা শুনতো, খুব পছন্দ করতো তার মধ্যে একজন মোজার্ট। মোজার্টের একটা জীবনী পড়েছিলাম সেখানে আছে যে, মোজার্ট কোথাও একটা, তার অর্কেস্ট্রা টিম দিয়ে একটা সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন, একটা সিম্ফোনি কম্পোজিশন, সামনে লোকের প্রচন্ড ওভেশন… তারা চিৎকার করছে লং লিভ মোজার্ট! আর মোজার্ট কানে শুনছেন লং স্টার্ভ মোজার্ট! তুমি না খেতে পেয়ে মরো! এইটা আমাদের দেশে হয়েছে! একাধিক শিল্পীর ক্ষেত্রে হয়েছে! আমি যাদের কথা বললাম এদের প্রত্যেকের হয়েছে। যেমন, যতিরীন্দ্র মৈত্র- তিনি কি মাপের একজন শিল্পী এটা কেউ ভাবতে পারে না! তার কাছে যখন কোন অর্কেস্টা নেই, কোন বাদ্যবৃন্দ নেই, কিচ্ছু নেই- তিনি ফুটপাতের, বস্তির বাচ্চাদের নিয়ে একটা টিম বানালেন। সেখানে ইন্সট্রুমেন্ট কি- একটা পাউডারের কৌটার মধ্যে ইট ভরে সেইটা দিয়ে একটা ইফেক্ট, এভাবে অন্যান্য ইফেক্ট এবং সেটার নাম দিলেন কী- জগঝম্প! তা জগঝম্পের সঙ্গে ঋত্বিকের যে সম্পর্ক, এই লোকটার সঙ্গে বিজন ভট্টাচার্যের যে সম্পর্ক… যেমন ধরুন একটা ঘটনা বলি- সুবর্ণরেখার ফাইনাল স্ক্রিপ্ট লেখা হচ্ছে, পরদিন শুটিং হবে… হরপ্রসাদ মানে যে চরিত্র আমার বাবা করেছিলেন, উনি সেই ডায়লগগুলিকে আবার লিখছেন- তখন ওকে একজন জিজ্ঞেস করেছে এই ডায়লগগুলি তো কালকে লেখা হয়ে গেছে আবার কেনো করছেন! বললেন, থামো! এশিয়ার গ্রেটেস্ট আর্টিস্ট তাকে আমায় প্রজেক্ট করতে হবে না!! এই বোধটা !!! এগুলি কিন্তু সবই উদ্বৃত্ত মানুষদের নিয়ে কথা। তারা কি ছিল আর বাঙ্গালির জানার কোন উপায় নেই।

    ঋত্বিক সেই লোক যিনি ইংরেজি জানা ক্রিটিকদের কাল্টিভেট করতো না
    আমি একটা ছোট্ট কথা বলছি, আপনাদের মধ্যে যারা আমার হারবার্ট উপন্যাসটা পড়েছেন… তা সেই হারবার্টকে নকশালি বুদ্ধি-টুদ্ধি শিখিয়েছিলো বিনু বলে একজন। এবং সুবর্ণরেখার বিনু, ছোট বিনু, যে আমার ভাই, যে মারা যায় লেকের জলে ডুবে… সুবর্ণরেখার শেষ হচ্ছে মামার সঙ্গে সে যাচ্ছে আর বলছে আমরা নতুন বাড়িতে যাবো যেখানে প্রজাপতি আছে, গান হয়, সেখানে গেলে মাকে পাবো, বাবা আছে… এই নতুন বাড়িতে যাচ্ছিলো বিনু। এখানেই ছবিটা শেষ হয়। এবং এর পরবর্তী যে বিনু, আমি যাকে কনশাসলি হারবার্টে নিয়ে এসেছিলাম; সেই বিনু তখন বড় হয়েছে। এবার সে নতুন বাড়িটা নিজে বানাবার চেষ্টা করছে। এবং আজকেও এই চেষ্টাটা ফুরিয়ে যায়নি। আজকে আমার যে মাওবাদী বন্ধুরা জঙ্গলে বা জেলে রয়েছেন তারা ঐ নতুন বাড়িটার জন্যই ভাবছেন… আর কিছু না। এবং প্রত্যেক যুগে, সমস্ত সময়ে বিনুদের এটা অধিকার! বিনুরা এটা করবেই, সেটা ঠিক হোক কি ভুল হোক! এবং সেইটাকে ক্যামেরায় এবং কলমে ধরবার লোকও থাকবে। যেমন, সত্যি সত্যি অমূল্য বাবুদের দলের সঙ্গে ঋত্বিকের কনফ্রন্টেশনটা… তা একটা ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট, অসামান্য ডকুমেন্ট। পার্টলি আপনারা এই রকম ডকুমেন্ট পাবেন বিজন ভট্টাচার্যের চলো সাগরে নাটকে। ওখানে একটা ডায়লগ আছে যেইটা একচুয়ালি নকশালবাড়িতে হয়েছিলো হরে কৃষ্ণ কুমারের সঙ্গে ঐখানকার নেতৃবৃন্দের- জঙ্গল সাঁওতাল, চারু বাবু এদের আলোচনা। এই ডকুমেন্টশনের যে কাজটা ঋত্বিক করে গেছেন, এটার মূল্য অপরিসীম। সেটা আজকেও টপিক্যাল। ঐ যে বলছেন- তোমরা সফল ও নিষ্ফল; সেখানে তিনি মোটামুটি একটা প্র্যাকটিসিং সোশালিজমের ইতিহাস বলছেন। ঋত্বিক কিন্তু সবটা জানতেন। তিনি সুসলভ থিসিস পড়েছিলেন, তিনি চেগুয়েভারার অন গেরিলা ওয়্যারফেয়ার জানতেন। এগুলো জেনে এই জিনিসটাকে করা। এবং কতটা তার ডিটেইল সেন্স… অনন্যর একটা সিকোয়েন্স আছে ব্রেনগান নিয়ে উলটে উলটে যায়, একচুয়ালি দ্যাট ইজ দ্য ওয়ে দ্যাট গান ইজ টু বি ট্যাকলড! এবং অন্যন্যর সঙ্গে একটা ছেলে ছিল সে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ঐ বন্দুকটা নিয়েই লড়াই করেছিলো এবং দে ওয়্যার প্রোপারলি ট্রেইন্ড। এখানে সবটা আবেগের বিষয় নয়, একটা সায়েন্টিফিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ফটোগ্রাফির এই যে সিদ্ধি দেখছি, এই যে আশ্চর্যের জায়গা ওর সিনেমায়, এরও কিন্তু একটা গুরু-শিষ্য পরম্পরা আছে। ঋত্বিকের এই কাজের অনেকটাই কিন্তু শেখা বিমল রায়ের কাছে। যার মত একজন টেকনিশিয়ান তখনকার যুগে কেন, এখনো নেই। বিমল রায় কি মানের টেকনিশিয়ান তার একটা উদাহরণ দেই- বিমল রায় শুটিং করছেন মীনা কুমারীকে নিয়ে। এমন সময় পাশের স্টুডিও থেকে কে.আসিফ একটা নোট পাঠায়- বিমলদা একবার আসবে? উনি গেলেন আর সেটে বলে গেলেন থাকো আমি আসছি। ওখানে গিয়ে দেখেন সব্বনাশে ব্যাপার! মুঘলে আযমের শুটিং হচ্ছে– আয়নায় মধুবালাকে দেখা যাচ্ছে, সেই সিকোয়েন্সেটা… ঐটা শুট করার সময় ক্যামেরা বারবার চলে আসছে আয়নায়। তো, কে.আসিফ বলছে এখন আমি কি করে শুট করবো!? ঐখানে ক্যামেরায় ছিলেন আর ডি মাথুর। তো, বিমল রায় ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা বসাচ্ছেন কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। তখন উনি নিজের ফ্লোরে একটা নোট পাঠালেন শুটিং প্যাকআপ করে দাও, মীনাকে বাড়ি চলে যেতে বলো। তিনি ঐ ফ্লোরের দায়িত্ব নিয়ে নিলেন এবং ছয়-সাত ঘন্টা থেকে প্রব্লেমটা সলভ করেন। সেই ফিনিশড প্রোডাক্টটা আমরা দেখি এখন। সেই লোকের সঙ্গে কাজ করেছেন। এদের ট্রেনিং, এদের আউকাত, এদের ঘারানাসবগুলোই অন্যরকম। কারণ, ঋত্বিক সমন্ধে একটা ইমেজ বাজারে দেওয়া হয়, ঐ পলিটিক্যালি কারেক্ট বাঙ্গালিরা করে…! এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলি ঋত্বিক সেই লোক যিনি ইংরেজি জানা ক্রিটিকদের কাল্টিভেট করতো না! বেশি তালেবড় লোক তার কাছে গেলে লাথ মেরে বের করে দিতেন, সোজা কথা। এবং আমি বাকি ডিরেকটদের জানি তারা এই হাফ সাহেবদের কালিটিভেট করেছিলেন এবং তারা তখনই বুঝতে পেরেছিলেন সাহেবদের বাজারে কল্কে না পেলে কিছু হবে না। ঋত্বিকের এসব মাথায় ছিলো না। একটা অ্যাওয়ার্ডও পায়নি, একটাও না! মানে কিচ্ছু পায়নি, কোন ফেস্টিভালে না… কিচ্ছু না! এবং আজকে সে সমস্ত ফেস্টিভালের বাইরে চলে গেছে, অন্য জায়গায় চলে গেছে। এবং এই যে, ফাইটিং স্পিরিট… ঠিক আছে ছবি করতে পারছে না, থিয়েটারের উপর ম্যাগাজিন করছে, নাম ছিল অভিনয় দর্পণ। সেটাও উইথ ইক্যুয়াল অনেস্টি। আমি নিজের চোখে দেখেছি। শেষে হলো প্রফেশনাল থিয়েটার করবো… শালা সিনেমা করতে দিবি না… যাহ থিয়েটারই করবো। এবং সেই প্রজেক্টও এগিয়েছিলো… সাথে ছিল তিনটা ছবি করা এবং প্রত্যেকটা বানচাল হয়ে যায়। ঐ মিসেস (ইন্দিরা)গান্ধী একটু স্পেশালি ফেভার করতেন বলে উনার কিছু কাজ-টাজ, তারপর ইমার্জেন্সি ফ্লাইটে করে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা-এগুলো হয়েছিলো। আদারওয়াইজ, কোন জায়গা থেকে কোন সহায়তা লোকটা পাননি। আমাদের সো-কল্ড ইন্ডাস্ট্রি, সো-কল্ড বিগ নেইমস কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এবং তার সময়ও তাকে কেউ বুঝতো না। ছবি তো ফ্লপ। ছবি যখন রিলিজ হতো, হলে কেউ নেই।

    ঋত্বিক ওয়াজ দ্য ওনলি ম্যান…
    বাঙ্গালি শুধু বোঝেনি তা নয়… ঋত্বিক ওয়াজ দ্য ওনলি ম্যান যার হাত থেকে কোন ডিরেকটর বের হয়নি। তার সঙ্গে যারা ছিলো তারা কোন কাজ করতে পারেনি। এইটা একটা পিকুইলিয়ার ঘটনা কিন্তু! লোকে গিয়ে শেখে অথচ অত বড় লোকের কাছে থেকেও কেউ শিখতে পারেনি। কারণ, তারা তার অরাতে এত বেশি আচ্ছন্ন যে শুধু মদ খাওয়াটা শিখে নিলো কিন্তু কাজের কাজটা শিখলো না। যার ফলে কিছুই হয়নি। এ্যাটলিস্ট মিডিয়োক্রিটও তৈরি হয়নি। আমি ঋত্বিকের কাজের কতগুলি ধারার সাথে পরিচিত যার মধ্যে একটা স্পট ইম্প্রোভাইজেশন। ঐযে অসামান্য বহুরুপী এয়ারপোর্টে যার সামনে সীতা গিয়ে পড়ে, এই বহুরূপীর কোন সিকোয়েন্স স্ক্রিপ্টে ছিল না। আমরা গিয়েছিলাম ওখানে একটা বাজারে, সেইখানে ঐ বহুরূপী ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। তখন ওকে দেখে ইম্প্রোভাইজ করে তুলে নিয়ে যায় এয়ারপোর্টে। নিয়ে গিয়ে শ্যুট করা হয়। এবং তখন আমি অবাক হয়ে গেছলাম ওরে! বাবা! ওত বড় এয়ারপোর্টে আমি ঘুরে বেড়ালাম কই প্লেনটা তো দেখি নি… কিন্তু ছবিতে প্লেনের একটা রেকেজ ছিল… সিনেমায় তো এটাই মজা কোথায় কিসের সাথে কি জুড়ে দেয় বোঝা যায় না! তবে, চাখলিয়ার যে এয়ারপোর্ট ওখানে ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের প্র্যাক্টিস করার জায়গা ছিল… তারা মেশিনগান মানে পোর্টেবল গান নিয়ে মহড়া দিতো। আমি ওখান থেকে মেশিনগানের অনেক বুলেট খুলে এনেছিলাম কিন্তু বুলেটগুলো মরচে পড়ে পড়ে খুলে খুলে নষ্ট হয়ে গেছে। এটা সুবর্ণরেখার শুটিংয়ের সময় দেখা যেত, সেখানে রয়্যাল এয়ারফোর্সের ইন্সিগ্নিয়া লাগানো ছিল। কিন্তু সবই নষ্ট হয়ে গেছে… এখন আর কিচ্ছু নেই।

    বাংলায় ঋত্বিকের কোন ঘারানা তৈরি হলো না কেন?
    এবং এটাও ঠিক যে বাংলায় তার কোন ঘারানা তৈরি হলো না কেন? অন্য জায়াগায় কিন্তু অন্ধ ভক্ত ফিল্মমেকার জুটলো, বিশেষত জন এব্রাহাম; কিন্তু বাংলায় কোন কিছু হলো না। কারণ, এই এত আধুনিক বাঙ্গালি উদ্বৃত্ত মানুষটাকে আর রাখার দরকার মনে করেনি!! কেননা, এই লোকটা খুব ঝামেলা। আপনার লক্ষ্য করবেন এই ঝামেলাবাজ লোকগুলোর হাতে আর বাঙ্গালি কুক্ষিগত হয়ে থাকতে চাইছে না! এখন তার ফ্লাইট এত বেশি, এখন তার বহুমুখী ইয়ে এত বেশি মানে তার সাহিত্যই বলুন, চলচ্চিত্রই বলুন সব খানেই ঐ যে- কে যেন বলছিলেন হরমোনাল ডিজঅর্ডার না কি যেন…! তো, যাই হোক মানে প্রব্লেম বলবো না… এগুলোর কোন সোশ্যাল রিলেভেন্স আছে কি না… মানে, এক পার্সেন্ট লোকের মধ্যে কে হোমোসেক্সুয়াল আর কে নয়, তার রাইট নিয়ে উচ্চবাচ্য হচ্ছে আর এদিকে ওয়ার্কারদের রাইট নিয়ে কোন কথা হবে না, কেউ কোন ফিল্ম করবে না। লাখের ওপর কারখানা বন্ধ তাই নিয়ে কোন ফিল্ম হবে না। চা-বাগানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করে মরে গেলো সেসব নিয়ে কিচ্ছু হবে না! আর ননসেন্স, ইডিয়োটিক ইস্যুজ নিয়ে যত কথা… আসল কথা কি, একটা সোসাইটি যখন ডি-পলিটিসাইজড হয়ে যায় তখন এইসব হয়। যেমন, আজকে হচ্ছে ফলস থিয়েট্রিক্যাল, ফলস স্পেক্টাকলস ভঙ্গি; এইভাবে যখন রাজনীতিটা এগোয়, শিল্পীরাও এই গড্ডলিকায় ভিড়ে পরে পয়সা খেয়ে এবং না খেয়ে। তো, এই কারবারের মধ্যে ঋত্বিকের কথা আনা, এ্যাট অল আলোচনা করা সম্ভব কি!

    ঋত্বিকের রাজনীতি
    আমি ঋত্বিকের রাজনীতি নিয়ে দু’একটা কথা বলছি। মেঘে ঢাকা তারার দুই ছেলে একজন কন্ঠশিল্পী হবে, হয়ও, প্রতিষ্ঠিত হয়। আরেকজন ফুটবলার হবে, হতে পারে না… কারখানায় চাকরি নেয় এবং সেখানে তার অঙ্গহানি ঘটে। ঐ যে আমার বাবার একটা ডায়লগ আছে ‘যন্ত্র গ্রাস করতে পারে নাই’। ষাটের দশকে বা পঞ্চাশের দশকের পর থেকে আমাদের দেশে এই যে একটা নতুন দশা এলো… এবার চিন্তা করুন সুবর্ণরেখায় রবিরাম- যে লেখক হবে তাকে হতে হলো বাস ড্রাইভার। একটা বিরাট মধ্যবিত্তের জীবনে পরিবর্তন এসে গিয়েছিলো; অসংখ্য বাঙ্গালি ছেলে ওয়ার্কার হয়ে দুর্গাপুর চলে গিয়েছিলো। সেই পুরো পিকচারটা, সমস্ত কিছু ঋত্বিকের ছবিতে রয়েছে। ঋত্বিকের মার্কস-এঙ্গেলস প্রীতি, যে টা সে বলছে- ‘এটা কিন্তু ফেলনা নয়’!উনি একমাত্র ডিরেকটর যার প্রতিটি ফ্রেম পলিটিক্যাল। প্রত্যেকটা ফ্রেম বারুদে ভর্তি। সে যখন একটা অপমানিত মানুষকে দেখায়… সে এই বার্তাই আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়-মানুষের অপমানকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে!! এবং সাঙ্ঘাতিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজগুলো করা। তার দায়িত্ববোধের চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে যুক্তি-তক্কো-গপ্পো। আমার মজাটা হচ্ছে, ছবিটা যখন তৈরি হয় আমি তখন কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। বরং আমি ঋত্বিকের সঙ্গে একটা ফ্যানাটিক ঝগড়া করেছি। আমি বলেছি এনাফ ইজ এনাফ!! তুমি ক্যামেরার ফ্রেমে মদ ঢেলে দিবে আর যা ইচ্ছা তাই করবে… ইন ডিফেন্সে অভ ইউর অ্যালকোহলিজম- এটা আমি মানবো না! প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছিলো এবং তখনকার মত ঋত্বিক কিন্তুকন্সিডারড হিজ ডিফিট। সে বলছে- ‘না, আমি আর পারছি না’! ঐ কথাটাও মনে আছে, সেটা ক্যোওট করছে কিং লিয়ার থেকে ‘ডিনাওন্সড দ্য ওয়ার্ড’… আমি বললাম হ্যা… চুপ করে থাকো আর কিচ্ছু করতে হবে না। এবং তারপর আমি যতবার ছবিটা দেখেছি, তার আধুনিকতার দিকটি আমাকে পাগল করে দিয়েছে। কোথায় নিয়ে গেছে একটা ছবিকে… কোথায় চলে গেছে একেকটা ইমেজ… এবং তৎকালীন বাংলায় যা কিছু ঘটেছে পলিটিক্যাল, বিশ্বে যা কিছু ঘটেছে পলিটিক্যাল সমস্ত কিছু ঐ ছবিটাতে সারৎসার হয়ে ঢুকে গেছে। এবং ঋত্বিকের ফ্রেমের এপিক কোয়ালিটি… এটা আমাকে অসম্ভব মোটিভেইট করে। কোলকাতা শহরে রোজ অনেক মেয়ে নতুন করে বেশ্যা হয় তাদের কাছে তাদের দাদারা গিয়ে পৌঁছয়, প্রমত্ত অবস্থাতেই গিয়ে পৌঁছয় কিন্তু এটা ক্যামেরার ফ্রেমে অরকম একটা বোল্ড সিকোয়েন্সে দেখানো… এটা ঋত্বিক ছাড়া আর কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিলো না। কারণ, গ্রেট আর্টিস্টরা খুব নিষ্ঠুর হয়। ঋত্বিকও নিষ্ঠুর। মারাত্মক নিষ্ঠুর। এবং তার নিষ্ঠুরতার চাবুক দিয়ে মেরে মেরে মেরে সে সম্বিৎ ফেরাবার চেষ্টা করেছে মানুষের! কতটা পেরেছে আমরা জানি না।

    মেকানিক্যাল মার্ক্সিজম দিয়ে ঋত্বিককে বোঝা যাবে না
    কিন্তু, আজকে আমার নিজের খুব ভালো লাগছে যে, এই ধরনের একটা আলোচনা সম্ভব হয়েছে। এতটা ভালোবাসা, এতটা রেস্পেক্ট নিয়ে ঋত্বিকের ব্যাপারটা ডিস্কাসড হচ্ছে। ঋত্বিকের জীবনদর্শন, ঋত্বিকের রাজনৈতিক আদর্শ প্লাস তার বহু বিশ্রুত ইয়ুং প্রীতি এইসবগুলি নিয়ে আরো বিশদ গবেষণা-আলোচনা করা দরকার। ঋত্বিকের দুটো বই ইনফ্যাক্ট আমার কাছে আছে, একটা হলো মডার্ন ম্যান ইন সার্চ অভ স্যোওল- কেউ গবেষণা করলে আমি দিতে পারি। ঐ বইটার পাতায় ঋত্বিকের কমেন্টস আছে। এবং আমার পরিচিত এক বন্ধুর কাছে আছে এরিখ নিউম্যানের দ্য গ্রেট মাদার। এবং সত্যি কথা বলতে কি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে- এই অন্তর্জগতের যে রহস্য আর বহির্জগতের যে সমস্যা এদের মধ্যে কিন্তু ভয়ংকর বিরোধের কিছু নেই। একটা ইন্ডিভিজুয়ালকে বুঝতে গেলে তার প্রব্লেমসকে বুঝতে গেলে, সে কিভাবে তার রিয়ালিটির সঙ্গে লড়াই করছে সেটা বুঝতে গেলে, তার এক্সিজটেনশিয়াল ফ্রেমটাকে বুঝতে গেলে আমাদের ইয়ুংকে দরকার, ফ্রয়েডকে দরকার, অ্যাডলারকে দরকার- প্রত্যেককে দরকার। ইভেন আব্রাহাম ম্যাসলোকেও দরকার। ম্যাসলো যে সাতটা ক্যাটাগরি বলছেন অর্থাৎ সাতটা ক্রাইসিস আছে মানুষের… একটা শেল্টারের ক্রাইসিস, একটা সান্নিধ্যের ক্রাইসিস, একটা খাবারের ক্রাইসিস… এগুলো মিট আপ করতে প্রতিটি স্তরে মানুষের লড়াই চলে। কাজেই, এই যে ট্রেন্ডটা ঋত্বিক আমাদের চিনিয়ে দিলো, এটারও অপরিসীম মূল্য আছে। কারণ, এই মেকানিক্যাল মার্ক্সিজম দিয়ে (জীবন-বাস্তবতা) বোঝা যাবে না! ইটালিতে মার্ক্সবাদের প্রতিষ্ঠাতা যিনি গ্যাব্রিওলা, তিনি বলেছিলেন- দান্তের সময়ে গম কত দামে বিক্রি হতো আর সিল্কের কাপড়ের কি দাম ছিলো- এইগুলো জানলেই সেই সোসাইটিকে এক্সপ্লেইন করা যাবে না, দান্তেকে তো নয়ই! এই ভুল মার্ক্সবাদ আমাদের দেশের অনেক বারোটা বাজিয়েছে। যার ফলে, একটা সময় এই তথাকথিত মার্ক্সিস্ট ক্যাম্পে আমরা দেখেছি যেটাকে আজকে ভুল রাজনীতির জন্য এক্সপ্লোয়েট করা হচ্ছে, তা হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে শিল্পীদের বিরোধের প্রেসনোট। আর মজাটা ছিলো- শিল্পীরা অনেক অ্যাডভান্সড লুকিং, তারা এগিয়ে ভেবেছিলেন আর কমিউনিস্ট পার্টি ছিলো ব্যাকোয়ার্ড, কমিউনিস্ট পার্টি ছিলোঅজিফায়েড চিন্তাধারার বাহক; কাজেই তারা সেই শিল্পীকে বুঝতে পারেনি। এই একই অভিযোগ ঋত্বিকের বিরুদ্ধেও এসছে, উনি কিসব গ্রেট মাদার পড়েন, আমার বাবার সমন্ধে এসছে… উনিও তো মাদার-কাল্টে বিশ্বাসী…। এই মেকানিক্যাল মার্ক্সিজমে যেটাকে আমি ভালগার মার্ক্সিজমই বলি- এটা নিজেকে এনরিচ করতে পারেনি, এনরিচ করতে না পেরে দিনের পর দিন নতুন নতুন গাড্ডায় গিয়ে পড়েছে এবং প্রচুর ভুল ব্যাখ্যা এবং ইন্টারপ্রিটেশনের সুযোগ ঘটেছে।

    কালচার ইন্ডাস্ট্রির যে খেলা, মুনাফার যে খেলা, সেখানে ঋত্বিক চলে না
    আমি আর কিছু বলবো না… সাম্প্রতিক একটা নাটক দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে, সেখানে কতটা ঐতিহাসিক ফ্যাক্ট আছে এবং সেখানে যা যা সমস্যার কথা বলা হয়েছে সেগুলো কোন লেভেলের সমস্যা… এগুলো একটু ভাববার দরকার। অ্যাকচুয়ালি ঋত্বিকের সঙ্গে কি হয়েছিলো, হোয়াট সর্ট অভ ডিফারেন্স হি হ্যাড এবং সো ফার মাই নলেজ গোজ জর্জ বিশ্বাসের সঙ্গে এরকম ভয়ংকর কিছু টাসেল হয়েছিলো বলে আমার জানা নেই! এই ইতিহাসের অনেকটার সঙ্গেই আমি জড়িত খুব কাছ থেক জড়িত। আমার বাবাও একজন ভুক্তভোগী প্লাস আমি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি, যেমন- সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন চট্টোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র, বিষ্ণু দে… আমি কোথাও বাবা এসব পাইনি! এখন সব অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস উঠে আসছে এবং আমি দেখছি এগুলোকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অস্ত্র সমস্ত যদি প্রতিপক্ষের হাতে চলে যায়, আমরা কি নিয়ে লড়বো?! এটাও একটা সমস্যা। কাজেই ঋত্বিক চান যে আমরা তাকে সেফগার্ড করি, আমিও চাই আজকের ইয়ঙ ফিল্মমেকাররা এ্যাটলিস্ট একটা অটোগ্রাফ কাজ করুক যেখানে বলা যাবে যে, ঋত্বিক বেঁচে আছেন। সেরকম একটা অবস্থা আসবে কি কখনো, কখনো কি দেখতে পাবো? নাকি বাঙ্গালি আরো আধুনিক হতে থাকবে! এ একটা জটিল সংকটের সময়, সংকটটাকে আমি অস্বীকার করি না… ম্যাসিভ একটা মার্কেট, একটা কালচার ইন্ডাস্ট্রি আছে… কালচার ইন্ডাস্ট্রির যে খেলা, মুনাফার যে খেলা সেখানে ঋত্বিক চলে না। বরং বলা হয়, ঋত্বিকের ছবির কদর এখন হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি- যারা তাদের সময় অনেক এগিয়ে থাকে, তাদের লেখার কদর পরে হয় বা শিল্পকর্মের! যেমন, সেইদিন কাফকাকে কেউ বুঝতে পারেনি কিন্তু এখন দিন কে দিন কাফকার রেলিভেন্সি প্রত্যেকদিন বাড়ছে। এই নতুন ম্যানুস্ক্রিপ্টগুলো বেরোলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা বোঝা যাচ্ছে না। যেমন, আন্তোনিও গ্রামসি। তাকে কুড়ি বছরের জন্য এই ব্রেনটাকে কাজ করতে দেবো না বলে জেলে দেয়া হলো; আর তিনি টুকরা পেন্সিল আর কাগজেলিখে ফেললেন প্রিজনারস ডায়েরি! সেটার রেলেভেন্স ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাচ্ছে দিন কে দিন… সমাজকে দেখার চোখগুলো পালটে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এই যে চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে রদবদল, এই রদবদলের যে দর্শন সেখানে ঋত্বিক একদম প্রথম সারির সৈনিক হয়ে থাকবেন।

    অ্যাপারেন্টলি কিচ্ছু জানতোনা
    এবং আমি এই মানুষটাকে এত কাছ থেকে দেখেছি, তিনি আমাকে এত কিছু জানিয়েছেন, বুঝিয়েছেন, শিখিয়েছেন… যেমন ধরুন মিউজিক শোনা- এই লোকটা ভারতীর মার্গ সঙ্গীত থেকে শুরু করে ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিক্যাল ইভেন জ্যাজ ইভেন বিং ক্রসবির গান- এ সমস্ত কিছুর উপরে এন্সাইক্লোপিডিক নলেজ থাকতো। সেই লোকটা আমাকে মদেস মুশোভস্কির মিউজিক শোনালো। লং প্লেয়িং রেকর্ডের উপর মদের গেলাশ রাখতো ফলে গোল গোল দাগ হয়ে যেত… একটা বাজিয়ে একদিন শোনালো নাইট অন দ্য বেয়ার মাউন্টেন। পরে যখন চাকরি-বাকরি করেছিতখন এগুলো সংগ্রহ করেছি। একবার বসুশ্রী কফি হাউসে ক্রিকেট নিয়ে কিছু কথা বলেছিলো… সেখানে তো বাঙ্গালির ক্রিকেট নিয়ে বিশাল আড্ডা… সব একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে, এগুলো জানেই না! ক্রিকেটের সবচাইতে বড় যে লেখক সি এল আর জেমস- ওয়েস্ট ইন্ডিজের, হি ওয়াজ প্রোটেস্টান্ট অ্যান্ড আ জায়ান্ট ইন্টেলেকচুয়াল। তার লেখারও হদিশ জানতেন ঋত্বিক। এই যে ব্যাপারটা… সত্যি কি জানতেন আর জানতেন না… আমি তাকে কন্ঠস্থ শেক্সপিয়ার বলতে শুনেছি কিং লিয়ার থেকে। আমি ঋত্বিককে স্টেজে আশ্চর্য আলোর কাজ করতে দেখেছি, কিছু না জেনে। তিনি আমার বাবার নাটক দেখতে গেছেন, সেই নাটকে আলোর কাজ করছেন তাপস সেন। ঋত্বিক গিয়ে তাপস সেনকে গলাধাক্কা দিয়ে বললো, বেরো এখান থেকে! আমি আলো করবো, যা শালা ভাগ! তাপস আর কি করবে… ইয়ে মদটদ খেয়ে এসেছে… কিন্তু তারপর ও যে কাজটা করলো অসাধারণ। জাস্ট একটা ডিমার আর একটা স্পট লাইট কমিয়ে বাড়িয়ে পুরো ডাইমেনশনটা পালটে দিলো! ঋত্বিক থিয়েটারেরও লোক, ছবি আঁকার লোক ছিলেন, স্কেচ করতে পারতেন, তিনি মিউজিকের লোক…। এইবার বলি, ঋত্বিকের ক্যামেরার কথা, ওঁর প্রত্যেকটা ছবিতে ক্যামেরাম্যানের নাম থাকতো কিন্তু বেশিরভাগ কাজ ঋত্বিকের নিজের করা। ক্যামেরায় যখন লুক থ্রু করছে, সেখান থেকে বলে দিচ্ছে রোল-ক্যামেরা-অ্যাকশন… চললো! একটা লোক সবকিছু করতে পারতো। আর এডিটিংটা তো রমেশ যোশীর সাথে বসে ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করতেন। যাই হোক, ঋত্বিক ঘটক কিরকম ছিলেন… তার বন্ধুবান্ধব অনেকে নেই দুই একজন যারা আছেন তারা কতটুকু বলবেন তাও জানি না। কিন্তু, আবার নতুন করে তথ্য যদি কিছু পাওয়া যায় সেগুলো যোগাড় করার এখন হাইটাইম! ঋত্বিকের সিনেমার মেকআপের কাজটা করতেন মূলত শক্তি সেন, শক্তি দা নেই, আমি নিজে দেখেছি ঋত্বিক নিজে বলে দিচ্ছেন এই শেডটা মার, ঐটা কর। মানে, এই লোকটা কি জানতো আর কি জানতো না সেইটাই একটা রহস্য। বাট, অ্যাপারেন্টলি কিচ্ছু জানতো না। সরোদ বাজাতে পারতো, বাঁশি বাজাতে পারতো। কিন্তু, কিচ্ছু নয়।

    আরে! শালা! ও গ্রামার বানাচ্ছে! ওর গ্রামারটাকে শেখ!
    আর বাঙ্গালি ক্রিটিকরা লেখলো- এনার একটু ডিসিপ্লিনের অভাব আছে! এনার সিনেমায় কোন গ্রামার নেই! আরে! শালা! ও গ্রামার বানাচ্ছে! ওর গ্রামারটাকে শেখ! চিরকাল এরা গোল গোল, নিটোল জিনিস মানে ঐ ক্যালেন্ডার ফটোগ্রাফি টাইপ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে গেলো!! খালি চিন্তা জিনিসটা কত নিটোল হবে! আরে, একটা বীভৎস ,ভাঙ্গাচোরা জিনিসকে নিটোল করা যায় না! দ্যাট ইজ নট দ্য নিউ এস্থেটিক! নিউ এস্থেটিক হলো মন্তাজ, সেটাও কিন্তু পলিটিক্যাল কারণেই ওয়ার্ক করেছে। ঐ যে সিকোয়েন্সটা- মা বলছে, ক্যামেরা উপরে ঘুরছে, সেখানে একটা জিনিস আছে, একটা বাচ্চা ছেলে দোলনায় দুলছে, এখানে বাচ্চা ছেলেটা হচ্ছে অনন্ত সময়ের মধ্যে একটা পেন্ডুলাম, সে কোথায় যাচ্ছে ডাইনে না বায়ে সে জানে না! কারণ, ঐ ছেলেটার এখন কেউ নেই… মা নেই, বাবা নেই, প্রেমিকা নেই, কেউ নেই! ওর লেখা নেই, কিচ্ছু নেই, টোটালি লস্ট! যেকোন সময় পেন্ডুলাম থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবে, ও তখন ট্রাপিজের খেলোয়াড়! এই একটা সিকোয়েন্স তোলেন তিনি। আরেকটা সিকোয়েন্সে হরপ্রসাদকে যখন ঈশ্বর বলছে, তুমি আমাকে কোলকাতায় নিয়া যাবা? কোলকাতায় এখন মজা, সে যে কি বীভৎস মজা! তখন হরপ্রসাদ বলছে, নিয়ে যাবো… ওখান থেকে কাট করছে রেসের মাঠ, একটা ঘোড়া লাফ দিয়ে বের হচ্ছে, আর সীতার গলায় একটা পোকার হার…। চিন্তা করা যায় না! বিশ্ব সিনেমাতে নেই, কোথাও নেই এমন একটা সিকোয়েন্স! আমাদের যা বড় বড় নাম, যাদের নামে আকাডেমি, ইন্সটিটিউট হয়েছে তাদের কোন কাজে নেই, কিচ্ছু নেই! কিন্তু, এই লোকটার আছে! এই লোকটা বিশ্বসিনেমাতে রুথলেসলি অটোগ্রাফ করে গেছে, খোদাই করে দিয়ে গেছে! এবং আমাদের এটা গর্বের বিষয় তিনি আমাদেরই লোক, আমরা তাকে কাছে পেয়েছি দেখেছি।

    হারাবার কিছুই নেই শৃঙ্খল এবং পলিটিক্যালি কারেক্টনেস ছাড়া!!
    তার স্পিরিটটা খুব সহজ কিন্তু- মানুষের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া! গরিব মানুষের প্রতি অনেস্টি বজায় রাখা! বেশি বড়লোকের সঙ্গে মাখামাখি করার দরকার নেই- তাতে কখনো শিল্প হয় না, দালালি হয়! এগুলো হচ্ছে প্রত্যক্ষ শিক্ষা এবং পলিটিক্যালি অ্যালাইভ হওয়া। এবং আই স্ট্যান্ড ফর লেফট উইং আর্ট বাট নো ফারদার লেফট ইন দ্য আর্ট! এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কবুল করা এবং কবুল করতে করতে করতে করতে মরে যাওয়া একসময়! এইটাই স্বাভাবিক। এইটাই একটা শিল্পীর জীবন! এইখানেই সে বাঁচে। এবং শিল্পীরা পৃথিবীর কোন দেশে খুব একটা আনন্দে খেয়েছে আর থেকেছে এমনটা কেউ দেখাতে পারবে না! মদিলিয়ানির মত শিল্পী একটা ব্রেডরোল খাবার জন্য কাফেতে বসে সাদা কাপড়ে ছবি এঁকে দিতেন। সেই ছবিগুলি পরে কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছে। এই মার্কেট তো রয়েছে চারদিকে…। তো, যাইহোক- আমাদের এই পলিটিক্যালি কারেক্ট ও কালচারালি কারেক্ট বাঙ্গালিরা নিপাত যাক!! তাদের আধুনিকতা নিপাত যাক!! আমরা যারা প্রিমিটিভ, পুরোনোপন্থি আমরা থাকবো! আমরাও বুঝি- এই হোমোসেক্সুয়ালিটি নিয়ে দেবেশ রায়ের দাদা দীনেশ রায় একটা গল্প লিখেছিলেন, অসামান্য গল্প, সেই গল্প আমরা প্রোমোট করেছিলাম… আমরা হোমোসেক্সুয়ালিটিকে প্রোমোট করিনি, আমরা প্রোমোট করেছিলাম একটা অসামান্য শিল্পকর্মকে- যার বিষয় হোমোসেক্সুয়ালিটি হতেই পারে!! আমরাও কিছু জানি না, বুঝি না এমন নয়! আমরা রামছাগল এরকম মনে করো না! আমরা ডেথ ইন ভেনিস দেখেছি। উই ক্যান টিচ ইউ হোয়াট ইজ হোমোসেক্সুয়ালিটি! এরা যেন আজকে আবিষ্কার করলো এমন ভাব! এগুলো অনেক প্রিমিটিভ ব্যাপার-স্যাপার! এসব হয়ে গেছে অনেক আগে! এগুলো আমরা জানি! কাজেই, হারাবার কিছুই নেই শৃঙ্খল এবং পলিটিক্যালি কারেক্টনেস ছাড়া!!

    থ্যাঙ্কিউ !!
  • /\ | 118.171.159.41 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৬:১৯644791
  • অসন্তোষের ব্যকরণে গড়া তার মন / ফারুক ওয়াসিফ
    নবারুণ ভট্টাচার্য (২৩ জুন ১৯৪৮ – ৩১ জুলাই ২০১৪) হাজার চুরাশির মায়ের ছেলে।

    তুলনায় তাল পাকে না; তবু মনে হয় লক্ষণে নবারুণ সনাতনধর্ম-প্রগতিবিলাসের অ্যান্টি হিরো, বঙ্গীয় দস্তয়েভস্কি। তাঁর হারবার্টকে আমি কোনো অংশেই দি আউটসাইডার অথবা মেটামরফসিসের চাইতে কম মনে করি না।

    যা কিছু ভাল, যার সঙ্গে সুনীল গাঙ্গুলির প্রথম আলো, সেই কলকাতাই এনলাইটেনমেন্ট, হিন্দুত্ব, প্রগতি, যুক্তিবাদ, পুতুপুতু বামখোলস আর বিজ্ঞানবাদের জটপাকানো গুপ্ত কেশের উকুন তিনি চিপে চিপে মারতেন। ঋত্বিকের পর তিনিই সভ্যতার ঘুলঘুলি দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলতে পারতেন, ‘আমি কিন্তু সব দ্যাখতেছি’। তিনি যেন পাগলা মেহের আলী, সভ্যতার ভুতুড়ে দরদালানের চারপাশে চক্কর খেতে খেতে বলতেন, ‘সব ঝুটা হ্যায়’। উৎপল দত্তের টিনের তলোয়ারের মেথর চরিত্রটি তিনিই, তার মতোই ‘আমি কইলকাত্তার তলায় থাকি’ বলে ভদ্দরনোকদের গায়ে বালতিভরা ময়লা ঢেলে দেন। ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাকে এইসব ফ্যাতাড়ুরাই আবার আসে কল্লোলিনী কলকাতার প্রমোদতরীর প্রমত্তদের বিষ্ঠা তাদেরই গায়ে ঢেলে দিতে। এই রে, তলায় যে গঙ্গা গঙ্গা! তিনি ম্যাজিক রিয়ালিজমের মথশো করেন না, ঠাকুমার ঝুলির ভুতদের স্বপ্ন-কল্পনা-ভয়-বীভতসতা আর কারুণ্যের আলেখ্য নির্মাণ করেন রংচটা আধুনিকতার ধরা-খাওয়া পরিবেশে। ভুতেরাও মানুষ, মানুষেরাও ভুতের মতোই। ইতিহাস, কালবোধ, মানচিত্র ডিঙানো ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’র মধ্যে ফেলে দিলে মনে হয়, ‘আর কত কাল আর কত কাল’। সাবঅলটার্ন গুরু রণজিত গুহ এখনো তাকে নিয়ে লিখতে পারেননি, লিখেছেন সুনীলদের নিয়ে। হা হতোষ্মি। ওহো, কারণ কি না, সুকুমার নাদুসনুদুস নন্দনতত্ত্বের বালিশে নবারুণ যে বিছাতু লাগিয়ে রাখেন! নবারুণও খ্যাপাটে, রুচির দিকে গোঁড়া নন। বিশুদ্ধ শিল্পের বাতিক ছিল না। অসন্তোষের ব্যকরেণ গড়া তার মন। তিনি সাহিত্য করেন না, অন্ধকার হৃদয়ের শিল্প সৃজন করেন। কীভাবে করেন? জীবনসায়র মন্থনের বিষ শুষে শুষে। তিনি এক বিষাক্ত কমরেড। তিনি জানতেন, ‘কখন, কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা কে ঘটাবে সে সম্বন্ধে জানতে রাষ্ট্রযন্ত্রের এখনও বাকি আছে। ‘তিনি আমাদের কেউ নন। তিনি হয়তো তার প্রজাতির শেষ লোক। চলো কমরেড ফ্যাতাড়ু, ‘ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই’ উড়ে যাই, সভ্যতা চোদাই।

    ফুটনোট::

    Painting: চিত্তপ্রসাদ (Chittaprasad)
    Poster design: অশোক ভৌমিক (Ashok Bhowmick)
    Calligraphy: জয়তু দেশমুখ (Jayatu Deshmukh)
    নবারুণের কাজকেও Renato poggioli’র বুঝের খাপে ধার দিয়ে বলা যায় যে, তিনি Far less `catholic inhis taste and far more arbitrary in his judgments, based, as they were, on the critical idiosyncrasies of a sectarian mind, which could understand only the “grammar of dissent’’. (The Phonix and the Spider, 1957) নবারুণও খ্যাপাটে, রুচির দিকে গোঁড়া নন। বিশুদ্ধ শিল্পের বাতিকের বল্টু তিনি খুলে ফেলতেন চণ্ডালসম ঝাঁঝে। তাঁর সমালোচনার ক্ষুর, চিন্তার বিশেষ বাতিক, পক্ষপাতি মন অসন্তোষের ব্যকরণ চৈতন্যে লালন করতো।

    ওস্তাদের জন্যে গান / বিজয় আহমেদ

    নবারুণের গল্পের সাথে আমার পরিচয় শিবু কুমার শীলের হাত ধরে। এক সন্ধ্যায় আজিজ মার্কেটে শিবুদা কইলেন ‘বাপ্পি নবারুণের গল্প পড়ছ? না পড়লে পইড়া ফালাও।’ তারপর ১৩/০৬/২০১১ তারিখে সন্ধ্যা ৭.৩০টার দিকে বোধয় নবারুণের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ টা কিইনা ফালাই প্রথমা থেকে। অবশ্য তার আগেই সুমন মুখোপাধ্যায়ের হারবার্ট দেইখা ফালাইছি রুদ্র আরিফের বদান্যতায়। বলে রাখা ভালো এই মহাপৃথিবীর অল্প যে কয়েকটা অসাধারণ ফিল্ম দেখছি অ‍ামি তার সিংহভাগই রুদ্র আরিফ তুলে দিয়েছে আমার হাতে। তখনো কিন্তু হারবার্ট পড়া হয় নাই । হারবার্ট পড়েছি অনেক পরে। তার মানে নবারুণকে না চিনেই হারবার্ট দেখার চেষ্টা করেছি আমি। সুমন আরেকটা মাস্টার এইটাও কিন্তু বইলা রাখতে হয় এই সুযোগে। যে কারণে নবারুণের হাতে হাত রেখেও সুমন, সুমন হয়ে উঠতে পেরেছেন। সুমনের ঐ সিনেমা, রুদ্র আরিফ ও শিবু কুমার শীল আমাকে ঐ নবারুণ নামের লোকটার দিকে ঠেলে দিয়েছে ভীষণ। এরপর যখন তার শ্রেষ্ঠ গল্প পড়েছি তখন থেকে আমি ভয় পেয়েছি আসলে। নত হয়েছি। উফ সে এক ভয়ংকর গদ্যকার! সে এক মহান স্টোরিটেলার আমার। মাস্তান ও মাস্টার আমার!
    ০২
    তারপর জেনেছি নবারুণ বিপজ্জনক এক যোদ্ধা মানুষ। কলকাতার যে কাজটাকেই বা লেখক বা কবি বা ফিল্মমেকারকে অস্ত্রধারীর মত বিপজ্জনক মনে হইছে খোঁজ নিয়া দেখি কি সে লোকও নবারুণের ভাইবন্ধু। আরো জেনেছি নবারুণ মহাশ্বেতা দেবীর ছেলে। অথবা কখনো না কখনো নবারুণের মায়ের নাম মহাশ্বেতা দেবী। হাজার চুরাশির মা লিখেছেন ‍যিনি। আবার কখনো নবারুণের বাবার নাম বিজন ভট্টাচার্য। বিখ্যাত অভিনেতা ও গণনাট্য আন্দোলনের কর্মী যিনি। হায় এভাবেই কখনো নবারুণ আবিষ্কারে নেমে তার বাবা মাকেও চেনা হয়ে যায়। অথচ আমরা কে না জানি মহাশ্বেতার নাম। কে না জানি বিজন ভট্টারাচার্যের নাম।

    তারপরেও নবারুণের হাত ধরে মহাশ্বেতা ও বিজন পরিচিতি পান আমার কাছে। এও এক নতুন পরিচয় যেন। মনে হতে থাকে এভাবেই মহান কোনো পুত্রের বিশ্বস্ত কাঁধ তাঁর বাবা ও মাকে বহন করে যায় আজীবন।

    ০৩
    হারবার্ট উপন্যাসটা পড়েছি যখন নবারুণ সম্পর্কে আমার অনেক ভুল বা সঠিক জানাশোনা হয়েছে তার অনেক পরে। রোমহর্ষক ও অতিজান্তব একটা উপন্যাস। কোনো ভণিতা নাই। এ যেন কৃমি ও পেটে পাকায়া উঠতে থাকা বমির সাথে জড়িয়ে থাকা। বেঁচে থাকা।

    নাম হারবার্ট সরকার। পিতা ললিতকুমার। মা শোভারাণী। ললিতকুমার সিনেমায় টাকা খাটিয়ে বড়লোক হওয়া লোক। জিপ দুর্ঘটনায় পিতা আর কারেন্টের শকে মায়ের মৃত্যুর পর, হারবার্ট এর শুধুই ভয়, মুত্যু, আত্মহনন, ঠকবাজি, মৃতের সঙ্গে কথোপকথন, পিউ কাঁহা পিউ কাঁহার জ্যাঠামশাই, নকশালপন্থী বিনু, বিনুর ডায়েরী, মাতলামি, খিস্তি খেউড়, মৃতা পশ্চীমা নারীদের গান, পরলোক আর পরলোক, বাংলামদ, ক্ষুধা, কখনোই হারবার্টের সঙ্গে বেঈমানী না করা চিলছাদ আর আবোলতাবোল। উত্থান ও পতন। অদ্ভূত ও বিবমিষাময় এক জীবন। আর নবারুণের গদ্য সে আর এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমাদের।

    কিন্তু হারবার্টের উত্থান যেমন আমার কাছে যৌক্তিকতার চেয়েও বেশি সিনেম্যাটিক (নাকি জীবন, বাপের বানচুৎ ছেলে বলেই এমন সিনেম্যাটিক!) মনে হয়েছে তেমনি তার পতনকে মনে হয়েছে আরো করুণ। মানে হারবার্ট কে ধরা খেতে হবেই যেহেতু নবারুণ চাচ্ছেন। হারতে তাকে হবেই। মরতে তাকে হবেই। কেননা নবারুণ চাচ্ছেন। উপন্যাসের চরিত্র এভাবেই বুঝি লেখকের ইচ্ছার কাছে হার মেনে নেয়। হায়!

    বুঝি নবারুণ হলো পোড় খাওয়া সেই ভাস্কর যে অতিকায় পাথরের ব্যক্তিত্ব অস্বীকার করতে পারেন। তারপর হাতুড়ী আর বাটাল দিয়ে ছেনে ছেনে শেপ দিতে পারেন নিজের আকাঙ্খার। প্রাণ দিতে পারেন পুনরায়। নত‍ুন পরিচয়ও দিতে পারেন সেই পাথর খণ্ডকে। নিজের মত করে। নিজের আকাঙ্খা বা ড্রিম তার চির আরাধ্য আমরা জানি। তা যত প্রতিকূলেই থাকুক। তাহার পরেও। কেননা নবারুণ তো ঘোষণাই করেন, ‘আশা-হতাশা জর্জরিত সাম্প্রতিক ইতিহাস আমার লেখক সত্তাকে কতটা আলোড়িত করেছে সেটা গল্পগুলোতে টের পাওয়া যাবে। মতাদর্শগত একটা যোগসূত্র খুব সরলীকৃত দৃষ্টিতে না হলেও থেকে গেছে বলে আমার বিশ্বাস। সময় যদি নির্মম হয় নির্দয় হয় তাহলে তার কাছে নতিস্বীকার করায় আমি বিশ্বাস করি না।’ আর নির্দয় সময়রাক্ষুসীকে চাবকাতে চান বলেই পশ্চিমবঙ্গ যুক্তিবাদী সঙ্ঘের কাছে কিংবা করুণাযোগ্য ডা: টিনার কাছে হার মানতে হয় অসীম ক্ষমতাবান (ব্ল্যাক ম্যাজিসিয়ান) হারবার্টকে। হারুকে। `দোবেড়েরে চ্যাং দেকাব’ লিখতে হয়, লিখতে হয় `চৌবাচ্চার তেলাপিয়া গঙ্গাসাগড়ে চলল।’ অথচ ঘাস্টলি ম্যানারে কিংবা `ভূতের জলসায় গোপাল ভাঁড়’ পড়তে পড়তে এইসব যুক্তিফুক্তিকেও চুদে দিতে পারত আমাদের অন্তরের হারু। ভুখা হারু। নিমেষেই পশ্চিমবঙ্গ যুক্তিবাদী সঙ্ঘেরও পাছার কাপড় উদোম করে দিতে পারত লোকটা। এই ক্ষমতা উপন্যাস জুড়ে হারুর ছিল। ব্যক্তিত্বেও ছিল এই জোর। হায় তবু আরো কোনো শাণিত আক্রমণ দেখাবেন বলেই হেরে যেতে হয় হারুকে, হারবার্টকে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা কৌশলকে টেক্কা দিয়ে নিজের প্রতিরোধ কৌশলকে জারি রাখতেই বুঝি হারুর নিয়তিতাড়িত ক্যারাভানের লেজ টেনে ধরেন নবারুণ। এমনটাই মনে হয়। (কেননা নবারুণ তো আর শ্যামল গাঙ্গুলী নন যে কুবেরের নিয়তিতাড়িত জার্নির সাথে নিজেকেও ভাসিয়ে দেবেন। তারপর তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবেন ক্যারেক্টারের নিজস্ব সুষমা!) আর এই যে প্রতিরোধ শাণাতে গিয়ে মার খেতে হল হারবার্টকে (অথচ আমি স্লোগান দিতে চেয়েছি যুগ যগ জিও হারবার্টদা) এখানেই একটা ছোট্ট কমার মত আপত্তি তৈরী হতে থাকে আমার (হায় সাহিত্যিক আকাঙ্খা!)। অথচ আমার এই আপত্তির জায়গাটাকে ওভারলুক করেই বিপ্লবী দাঁড়ায়ে থাকে সটান। দেখি এই মোড়টা পার হয়েই বিপ্লবী ঘোষণা করেন, ‘কখন, কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা কে ঘটাবে সে সম্বন্ধে জানতে রাষ্ট্রযন্ত্রের এখনো বাকি আছে।’

    বুঝি অল্পপ্রাণ আমি। অল্পতেই খেই হারাই। অথচ গেইমটা নিরন্তর চলতেই থাকে। আর চলতে থাকা গেইমে অংশ নিতে চাইলে এইভাবে অনেককিছু ওভারলুক ও ওভারটেক করে বিস্ফোরণটা ঘটায়ে ফেলতে হয়।
    ০৪
    আজ ৩১ জুলাই, ২০১৪। নবারুণ, আপনি শরীরের ভার আর বইবেন না কখনো। ক্যান্সার হয়েছিল আপনার। কিন্তু এই পৃথিবীর ভার কিন্তু পৃথিবীকে সইতেই হবে। ‘বহিবে না আর অবিরাম অবিরাম ভার’ বলে তার মরে যাবার সম্ভাবনা বা সুযোগ কোনোটাই নাই। ফলে নবারুণ জেনে রাখুন ইজরায়েলী বোমা আবার ছুটে যাবে গাজার দিকে। ইরাক নাই হয়ে যাবে ভ্রাতৃঘাতী হনন পিপাসায়। নরেন্দ্র মোদীদের সাম্প্রদায়িক পালের হাওয়া বেগবান হবে। হিন্দু আরো হিন্দু হয়ে উঠবে। মুসলিম আরো মুসলিম হয়ে উঠবে। ইহুদী আরো ইহুদী হয়ে উঠবে। খ্রিশ্চান আরো খ্রিশ্চান হয়ে উঠবে। চিটাগাংয়ের বুড্ডিস্ট ক্রমেই হয়ত মায়ানমারের বুড্ডিস্ট হয়ে উঠবে। কালশীর বিহারীরা হয়ত নাই হয়ে যাবে একদিন। চট্রগামের রাউজানে যে রোহিঙ্গা ছেলেটা পান খাওয়াত সে বেদম মারা পড়বে একদিন আমাদের হাতেই। হয়ত আরো শত শত তুবা গার্মেন্টস এই শহরে নিদারুণ করুণা করবে আমাদের।

    শুধু মানুষ শব্দটা ছোট একটা কীটের মতন এদিক ওদিক ডানা ঝাপ্টাবে। আর কেউ হয়ত চিৎকার করে বলবে ‘সিনেমায় মার্ডার দেখতে বেশ লাগে। ‍আমরা এত খুন খারাবী দেখছি ‍কিন্তু সব বেঁচে আছে।’

    যেন ফূর্তির পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা। ঢেঁপের কেত্তন শাল্লা!

    আজ বুহস্পতিবার। ৩১ জুলাই, ২০১৪। আজ থেকে স্মৃতিচারণের ‍অংশ আপনি, নবারুণ। বহু দূর ও দূরত্বের ঐ নীল কচ্ছপের দেশে, ভাবি, নবারুণের নক্ষত্রখচিত উর্দি এতক্ষণে পত পত করে উড়তে শুরু করেছে নিশ্চয়ই।

    ০৫
    আমার অন্তহীন ও বোকা বোকা প্রণয়ের নাম সন্দীপন চট্রপাধ্যায়। লোকটা সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসে আছেন আমার কাঁধে। গল্পকার বা ঔপন্যাসিক সন্দীপন যতটা না তার চে অধিক গদ্যকার সন্দীপনের প্রতি মোহ প্রেম আমার। অন্ধ স্কুলে কখন ছুটির ঘন্টা বাজবে। বিড়ালের হা এর ভিতর মাথা পেতে রাখা ইঁদুর ও বিড়ালের সে কী অপেক্ষা কখন অন্ধ বাচ্চাগুলা আসবে। কখনই বা ভুল করে মাড়িয়ে দেবে বিড়ালের লেজ। আর বিড়ালের হা বন্ধ হয়ে আসবে। সাঙ্গ হবে ইঁদুরের ইঁদুরজীবন। আহা কী ভয়ানক গল্প। কিংবা বিজনের রক্তমাংস।

    আর উপন্যাসে সন্দীপন সীমাহীন আইডিয়া বা চাতুর্যের খেলাই খেলতে চেয়েছেন মনে করি। এমন কী অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে উপন্যাসে বারবার ব্যবহার করেছেন কবিতা ও যৌনাচার। প্রেম আর নারী। ‍ আমার ব্যক্তিগত বোঝাপড়ায় গল্পে সন্দীপনকে মনে হয়েছে ঈশপের বাণীর মত নিজের আকাঙ্খা প্রচার করছেন। আর উপন্যাসে মনে হয়েছে এক গাঁদা আইডিয়া, কবিতানিঃসৃত নিজস্ব গদ্যভঙ্গী ও স্টোরিটেলিংয়ের চমৎকারিত্ব দিয়ে মাৎ করতে চাইছেন সবকিছু। আর এসব কারণে গল্প বা উপন্যাসের চেয়ে সন্দীপনের গদ্যকে আমার এক ভয়ানক পর্বত চূড়ার মত মনে হয়। এই পর্বত চূড়া অকপট সন্ত্রাসী। দুঃসাহসী। দাম্ভিক। অভিজাত ও চিন্তাশীল।

    আজ ৩১ শে জুলাই, ২০১৪, রোজ বৃহস্পতিবারে সন্দীপনের মত আরেকটা লোককে আমি ভালোবেসেছিলাম মনে হচ্ছে। আর সেই লোকটির নাম নবারুণ ভট্টাচার্য। আজ লোকটি দেহত্যাগ করেছেন। যাচ্ছেন এক নীল কচ্ছপের দেশের দিকে।

    ফ্যাঁৎ ফ্যাঁৎ সাঁই সাঁই করে উড়ছে হারবার্ট / ফায়হাম ইবনে শরীফ

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আদিখ্যেতা নেই আমার। কলকাতা নামক শহরটা নিয়ে এখন আর বালখিল্যতা অবশিষ্ট না রইলেও, একসময় যে ছিলো না, সেটি বললে তা হবে প্রেমের অবমাননার শামিল। স্কুলে পড়বার সময় অবশ্য নকশালবাড়ি, ডুয়ার্সের চা-বাগান, প্রেম, প্রাপ্তি, হতাশা, পুরুষের একরোখামি আর বহুগামিতার উপাখ্যান পড়ে পশ্চিমবঙ্গ নয় বরং ভুলভাল জানা কলকাতা নিয়ে একরকম হৃদয় জুড়ানো ভালোবাসা ছিলো। কে যেন বলেছিলো- কলকাতার বাতাসে নাকি প্রেম উড়ে বেড়ায়। ওখানকার খেটে-খাওয়া রিক্সাওয়ালাটাও নাকি উঁচু দালানের ঝিয়ের সাথে প্রেম করে, সংসার জীবন ফেঁদে বসবে বলে স্বপ্ন দেখে। সে যাই হোক, বর্ণনার না বলা অংশগুলো বুঝতে সময় লেগেছে, আবেগের বাঁধ ভেঙেছে গঙ্গাজলে, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পদ্মার পাড়ে, যেখানে দুই বাংলার মাঝে সীমান্ত হয়ে রয়েছে ফেলানি।
    নবারুণ ভট্টাচার্যের জন্য অনলাইন এপিটাফ লিখতে বসেছি। কিন্তু কি-বোর্ড চাপতেই লেখায় উঠে এলো এইসব আবোল-তাবোল কথা। কারণ, নবারুণের সাথে আমার পরিচয় আবোল-তাবোল কথামালায়।

    ক্যাট-ব্যাট-ওয়াটার-ডগ-ফিস। সিনেমার পোষ্টারে কত কিছুই তো থাকে, কিন্তু তারপরও এই আবোল-তাবোল কথামালাই কিছু বন্ধু সমেত আমায় টেনে নিয়ে গিয়েছিলো সিনেমা হলে। এরপরেরটা ইতিহাস।

    সিনেমার নাম হারবার্ট। তখনো নাকি ভারতে মুক্তির অপেক্ষায় সেটি। কিন্তু ঢাকার শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরে মিলনায়তনে, হারবার্ট মুক্তি দিলো আমাদের কয়জনার পরাধীন মনকে। ছেঁড়া পকেট আর শেখানো বুলির কারণেই হয়তোবা মিলনায়তনের বাইরে এসে মুক্তিপ্রাপ্তদের একজন বলে বসলেন- এক বোতল বিদেশি মদের সমান নেশা হয়েছে। তখনো বুঝিনি নেশাটা ধরালো কে?

    এরপর অজস্র নিঃসঙ্গ রাত্তিরে, হাসি ঠাট্টায়, একমদ সভায়, নিউরোন সেলের অভব্য আচরণে কিংবা মাঠে-ময়দানে আমায় তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বানচোত ছেলে হারবার্ট। একসময় রেড ইন্ডিয়ান সীউরা যেভাবে রকি মাউন্টেনের উপত্যকায় তাড়িয়ে বেড়িয়েছে অ্যান্টিলোপ কিংবা মোষের পালকে, ঠিক তেমনি আমাকেও এই মৃত্যু উপত্যকায় তাড়াতে লাগলো হারবার্ট। দৌড়াতে-দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠার মূহুর্তে আমি হাজির হলাম নবারুণের দ্বারে। প্যাঁচপ্যাঁচানি মধ্যবিত্তীয় প্রেম, হারায়ে খোঁজা সাম্যের গান কিংবা শিল্পীয় পরকীয়া থেকে মুক্তি দেয়া এই অভদ্দরনোকের নাম তবে নবারুণ ভট্টাচার্য! যার লেখায় চুর হয়ে হারবার্টের জন্ম দেন সিনেমা পরিচালক।

    হৃদয়ের চোখ দিয়ে এতকাল নারীদেহ চেনাতে চেয়েছেন ঝাঁকভরার শিল্পী সমাজ। অন্তরের অন্তঃস্থলে ভালোবাসার নদীতে বয়ে যাওয়া অ্যাড্রানালিন গ্রন্থির জন্য ড্রেজিং করেছেন তারা। শিখিয়েছেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আরো শক্ত-সামর্থ পুরুষ হয়ে উঠার গল্প। কিন্তু আমার রক্ত বিদ্রোহ করেছে। তাই নবারুণের ছোঁয়ায় ফিনকি দিয়ে ছুটে বেরিয়েছে কাম। দেহ থেকে মুক্তি মিলেছে পুরুষত্বের জ্বালার। শরীরের মাঝে অর্থ-বিত্ত-কাম খুঁজবার বদলে মানুষ চিনতে শিখেছি। আর ফ্যাঁৎ ফ্যাঁৎ সাঁই সাঁই করে হারিয়ে গিয়েছি পাহাড়ের খাঁজে আদিবাসী পল্লীতে, যেখানে দেখা মিলেছে অসংখ্য ফ্যাতাড়ুর-হারবার্টের।

    শ্বাশত সুন্দরের গল্প বলায় এক ধরনের অরুচি নবারুণের। আর তাই নবারুণের “প্রটাগোনিস্ট”রা সবসময়ই মধ্যবিত্তের কাছে ম্লেচ্ছ সব মানুষেরা। ঠিক যতটা আক্রোশ ভরে আদিবাসী কিংবা হরিজনদের দূর্গম পথে ঠেকে দেয় আমাদের আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ঠিক ততটাই মমতা ভরে তাদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন নবারুণ। দিকে দিকে যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থার নামে মারণাস্ত্রের “ডিজে” চলছে, তখন নবারুণ বুক ফুলিয়ে ক্ষেদোক্তি করছেন– এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না। যেখানে ডাল-ভাতের জন্য শিল্পের সমঝদার না হয়ে, শ্রমের কাঙাল হতে হয় শ্রমিকের; সেখানেই কিনা অধিকার আদায়ে না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। তবে নবারুণ কখনোই মেনে নেননি এই অসাম্যের অদ্ভুত প্রলোভন। তাই হাজারো শ্রমিক যখন ন্যায্য পাওনা আদায়ে আমরণ না খেয়ে থাকবার প্রতিজ্ঞা করে, ঠিক তখনই অনিয়ম আর অন্যায্যের এই বাগানকে বিদায় জানান নবারুণ। এ এক অদ্ভুত “আয়রনি”ই বটে।

    আঁধারের প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ যেন আমত্যু তাড়া করেছিলো তাকে, যা কাঁধে তুলে নিয়েছি আমাদের অনেকেই। সকলের অপছন্দের এই অন্ধকারে বাতি জ্বালাতে নয়, বরং এর সৌন্দর্যকেই আমার চোখে যেন আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন তিনি। সমাজের চোখে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্বাভাবিক তারাই যেন মদের গেলাস হাতে নবারুণের সাথে নিত্য করেছে উল্লাস। শেষ পর্যন্ত তাদের নিয়েই হয়তো শ্মশানে শেষ সময়টা কাটিয়ে দিয়েছেন নবারুণ।

    মারাত্মক রাজনৈতিক অন্তর্ঘাত নিয়ে নবারুণ কখনো সাম্যের গান গাওয়া মানুষকে বলেছেন অ্যামিবা। তাই বলে ধনতান্ত্রিক অসাম্যের কাছের মানুষ ছিলেন তা কিন্তু নয়। আমাদের সমাজে এরকম অজস্র শহুরে ভবঘুরেকে তাই বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছে ফ্যাতারু। শুধুই প্রমিত-প্রথাগত সৌন্দর্যের গুণগ্রাহী রস আস্বাদন না করায়, তার কথায় ঠিকরে বেরিয়েছে খিস্তি-খেউর। অনেকের ভাষায়, শুনলেই গা গুলিয়ে উঠে এমনতর ভাষা তার। আর এক মুঠো অপাংক্তেয়’র ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে নবারুণ পথ দেখিয়েছেন হতাশ মানুষদের। অন্ধকার গলি-ঘুপচি আর সমাজের চোখে নিষিদ্ধ পল্লিতে ঘুরে-বেড়ানো অচ্ছুৎ’র “ট্র্যাভেলগ”কে এভাবেই তুলে এনেছেন সভ্য মানুষের দৃষ্টিসীমানায়। বেনিয়াদের লেখা ইতিহাসের সাথে একইভাবে উঁচুদরের সাদা কাগজে ছাপা হয়েছে নবারুণ-গাঁথা।

    তবে এসবের আর বালাই থাকছে না। কারণ, নবারুণ পাখা মেলেছেন। যে পাখার স্বপ্ন দেখায় ফ্যাতাড়ু, যেভাবে কম কথায় বিস্ফোরণের মতই বিদায় নেয় হারবার্ট। ঠিক সেভাবেই ইতিহাসের পাতায় পাদটীকার সমান জায়গা দখল করে নিজেকে আড়াল করলেন নবারুণ ভট্টাচার্য।

    ■প্রতিবিপ্লবীর জন্যে শোকগাঁথা / সৈকত দে

    লেখাটা তুলে নিয়েছে, পড়াই হলনা। সবাইকে অনুরোধ যেখানে যে লেখা পাবেন, এখানে কপি করে রাখুন। মাঝে মাঝেই সাইট বন্ধ হয়ে যায়, লেখা তুলে নেওয়া হয়। পেজ ডিসটার্ব করে, লিংক ফেল করে। যখন চাই তখন পড়া হয় না।
  • /\ | 118.171.159.41 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৬:২০644793
  • সুমনের গান বিষয়ে নবারুণের কথাবার্তা (পুন:পাঠ)

    খুব নিরীহ ভঙ্গিতে, নিভৃতে, সুমনের ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামটি বের হয় ১৯৯২ সালে। প্রকাশের পর পরই এই অ্যালবাম মহীরুহের ন্যায় মাথা উঁচু করতে শুরু করে। বরং যতদিন গেছে সিন্ধুর ওপারে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ততদিন এটি আরো বিস্ফোরক হয়া উঠেছে। হয়ে উঠেছে তেজী ও অহংকারী। আমরা এখন বলতেই পারি ১৯৯২ সালের আগে ও পরের বাংলাগান এক নয়। মানে বাংলাগানের হিস্ট্রি এইখানে নতুন একটা রাস্তার দেখা পাইল। মানে এই ১৯৯২ সালে। সুমনের হাত ধরে।

    ২০১৩ সালে ‘তোমাকে চাই’ এর ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সুমিত দাস ও অনির্বান সাধুর সম্পাদনায় বের হয় ‘তোমাকে চাই’ নামের একটা স্মরণীয় গ্রন্থ। ঐ গ্রন্থে নবারুণের একটা ইন্টারভিউ পড়ার সুযোগ হয় পাঠকের। ইন্টারভিউটিতে নবারুণ বেসিক্যালি কথা শুরু করেন সুমনের গান বিষয়ে তারপরে সুমনের গানকে কেন্দ্র রেখে নবারুণ ঘুরে আসেন রাজনীতি, সময়, সম্পর্ক, বাংলাগান, লেখালেখি ও ফিল্মেও। অসাধারণ এই কথামালা গ্রহণ করেন মানস ঘোষ ও সুমিত দাস। ৮ জুন, ২০১২ এর নাগরিক সন্ধ্যায়। গলফগ্রিনে।

    নবারুণের অভিনিবেশ জানার জন্যে গুরুত্ব রাখে বিধায় পত্রস্থ হল ইন্টারভিউ‍টি। পুন:পাঠ শুভ হোক।

    ::: ভূমিকা: লাল জীপ

    ফ্যাতাড়ু ও কমরেড সুমন
    সাক্ষাৎকারক:: মানস ঘোষ ও সুমিত দাস

    ::: নবারুণ দা, ‘তোমাকে চাই’ কুড়ি বছর হল। ১৯৯২ সালে ক্যাসেটটি বেরয়। এই সময়টার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার মূল্যায়ন কি?
    ■এই ১৯৯২ সালটা ছিল একটা Paradigm Shift’র সময়। তাঁর আগের বছর ১৯৯১, fall of Soviet Union। যে ঘটনাটি এমনই আলোড়ন তৈরি করে যার রেশ এখনও রয়েছে। এরকম একটা সময়ে সমস্ত বামপন্থি Construct টা যখন প্রশ্নের সামনে সেই সময় সুমনের এই গান এবং rather সুমনের এই explosive entry সমগ্র cultural পরিবেশটাকে বিরাট ধাক্কা দেয়। এবং আমি এটাই মনে করি যে artist’র সবচেয়ে বড় কাজ যে মানুষের যে Static Psychological frame সেটাকে disturb করা। সুমন সেটা সাংঘাতিকভাবে করেছেন। He reacted like a conscious artist. এবং তাঁর এই গান ও তার যা অভিঘাত সেটা বাংলা গানের ইতিহাসে চিরদিন লেখা থাকবে। বাংলা আধুনিক গান দীর্ঘদিন ধরে একটা ক্লান্তিকর গড্ডালিকার মধ্যে চলে গিয়েছিলো। সুমন single handedly সেটাকে retrieve করে অর্থাৎ golden heritage টাকে। যেমন আমার মনে আছে, ‘নীল আকাশের নিচে’তে যেখানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বা সলিল চৌধুরী যে গান, এইসব গানের মধ্যে যে সাংঘতিক spark ছিল সেটাকে সুমন যেন নতুন করে re-discover করল। এবং এইটাই সুমনের সবচেয়ে বড় credit। শুধু তাঁর Popularity’র জন্য নয়, সুমন হচ্ছেন সেই লোক যাকে সম্ভবত People’s Artist বলা যায়। এটা সমাজতান্ত্রিক দেশ হলে তাকে People’s artist ই বলত। কারণ তিনি মানুষকে সেইরকমভাবেই নাড়া দেন। মানুষের প্রচলিত যা ধ্যানধারণা সেগুলোকে ভেঙ্গে দেন। আমার মানে আছে, আমরা একজন People’s artist কে কলকাতায় শুনেছিলাম। আজেরবাইজান থেকে এসছিলেন, রশিদ বেভুটভ। এই বেভুটভ পৃথিবীর অসংখ্য ভাষায় গান করেছেন। He was the people’s artist of Soviet Union. এবং তার গানের যে ঢঙ যে জোর, সেই জোরটা সুমনের গানে খুঁজে পেলাম আমরা। সুমনকে যে কারণে রাজনৈতিক গানের পথিকৃৎ বলা যায়। অন্যান্য গান আর অন্য সব হিসেব মাথায় রেখেই বলছি। খুবই দুঃখের কথা, যেকোনো জিনিয়াসেরই যা হয়, সুমনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। তাকে অনুসরণ করার মত যোগ্য লোক এল কই? বরং সস্তা, ছ্যাবলা রাস্তা বেছে নিল অনেকে। সুমন তাঁর রাস্তা থেকে কিন্তু একটুও সরেননি। এবং তার এই যে focusটা যে focusটা নিয়ে এসেছিল, সেটা তো একবারও ছাড়ল না। তাঁর হাজার রাজনৈতিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও। এটা আমার কাছে খুব interesting লাগল এবং এই ব্যাপারে সুমনের কাছ থেকে হয়ত আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বোঝবার আছে।

    ::: নব্বইয়ের দশকে আপনিও ছোটোগল্পের form থেকে উপন্যাসের form-এ আসছেন। এবং যদি দুটো মুহুর্ত বলা যায়, যেটা বাংলার সংস্কৃতিতে যে ভাটা পড়েছিল তাতে আলোড়ন তুলল, তারমধ্যে একটা যদি হয় ‘তোমাকে চাই’ আরেকটি ‘হারবার্ট’- একটা প্রজন্মকে নতুন করে ভাববার একটা প্রেরণা দিল। এই সময়ে দাঁড়িয়ে যখন আপনি ‘হারবার্ট’ ভাবছেন, ‘হারবার্ট’ লিখছেন, তখন ‘তোমাকে চাই’ শুনলেন। সেই অভিজ্ঞতাটি কেমন?

    ■অভিজ্ঞতা মানে সুমনকে আমার বাড়িতে ক্যাসেটে, যেহেতু তখন ক্যাসেট ছিল, তো ক্যাসেটের মাধ্যমে নিয়ে আসে আমার ছেলে তথাগত। তখনই প্রথম শোনা। সুমন তো আমার বন্ধু। আমি বললাম তথাগতকে ‘দ্যাখ, কিরকম লাগে’। অসম্ভব। সে impact ভাবা যায় না। চিন্তা করা যায় না। এবং আমি এটা মনে করি যে ৬৮-৭২ পশ্চিমবঙ্গের যুব সমাজের সামনে যে Street fighting years ছিল তার রেশটা অর্থাৎ সেই passion টা অনেকের মধ্যে থেকে চলে যায়। কিন্তু আমার মধ্যে থেকে যায়নি। আজও যায়নি। সুমনের তো যায়ইনি। ও Street fighting ছাড়া থাকতে পারে না। এইটাকে বাঁচিয়ে রাখাটা বিস্তর বড় কাজ। এবং এখানেই সুমনের political commitment এবংএখানেই তার engagement শিল্পীসত্তার জায়গা থেকে। এইটাকে আমি খুব honor করি। সে কোন পার্টির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছে না দাঁড়িয়েছে তার সাথে মেলানো যায় না। যাবেও না। ও শিল্পী এবং committed শিল্পী। এবং আমি মনে করি যে সুমনের মধ্যে Democratic Political Consciousness’র যে রেশ বা ধারা রয়ে গেছে সেটাকেই আমরা একসময় সকলে মিলে share করেছিলাম। কেউ কেউ সেটাকে express করতে পেরেছিল। আমি হয়ত পেরেছিলাম ‘হারবার্ট’ লিখে, সুমন গান করে পেরেছিল। এবং এই যে ব্যাপারটা কিন্তু আরেকটা জিনিসে জানান দিল যে political চেতনা এবং তার বিস্ফোরণ এটা থেমে যাওয়ার জিনিস নয়। Social oppression থাকবে, inverted একটা society থাকবে, সেখানে চাটুকারবৃত্তি দালালি এগুলি থাকবে কিন্তু artist-রা চুপ করে থাকবে এটা কখনও হয় না, হয়ওনি।তাছাড়া, এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য সুমনের গানকে আমরা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যেকোনো শিল্পীর পাশে রাখতে পারি। যেমন এর বেশ কিছুদিন আগে আমি চিলির শহীদ গায়ক ভিক্তর হারা’র দু’খানা লং প্লেয়িং রেকর্ড ইউরোপ থেকে আনাতে পেরেছিলাম। সেইগানের যে impact আমার ওপর, সেই impactটা দেখলাম আমাদের এখানকার সুমন- আমার বন্ধু সুমন- সৃষ্টি করল। কাজেই এই যে আন্তর্জাতিক গানের যে ঘটনা যেখানে বব ডিলান আছে, যেখানে সাইমন অ্যান্ড গারফানকেল আছে, তাদের থেকে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ পীট সিগার আছেন, আরও আগে উডি গাথরিয়া আছেন সেই গানের একটা ধারাবাহিকতা এবং সেই গানের পাশে দাঁড়াবার মত কন্ঠ এবং গানের কনটেন্ট এইটা সুমনে এসছে। এসছে বলছি এই কারণে কারণ সে এখনও খুব ভালোভাবে alive and kicking, কাজেই আমার মনে হয় এইটা থাকবে। শুধু যেটা দরকার সুমনের কিছু উত্তরাধিকারী শিল্পীর আসা দরকার সেইটা আমি খুব একটা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ আমার মনে হয় তারা একটু সস্তার escape route গুলো বেছে নিচ্ছেন। মানে route ways towards market এটা খুঁজতে বেশি ব্যস্ত।
    ::: নবারুণদা, আশির দশকে আমরা দেখলাম যে গানবাজনা বলুন বা সাহিত্য বলুন সেখানে ভালো কিছু হচ্ছে না বা Path breaking কিছু হচ্ছে না। আর আপনি বলছেন যে আপনার ক্ষেত্রে এটা সত্যি এবং সুমনের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি যে ৬৮-৭২’র street fighting‘র যে অভিজ্ঞতা যা আপনাদের লেখক-কবি-গায়ক করে তুলেছে…

    ■এবং অভিজ্ঞতা মানে যে আমি রাস্তায় গিয়ে পুলিশ ভ্যানে ইট মারছি তা না। ব্যাপারটা হচ্ছে পুরো জিনিসটার সঙ্গে intellectually participate করা। এবং মনে রাখতে হবে যে ৬৮’র ঘটনা যার ওপর তারিক আলি’র অসামান্য বই আছে ‘our street fighting years’ যার ওপর ভিত্তি করে সারা পৃথিবীর youth জেগে উঠেছিল। তো how could we remain silent? সম্ভব না। সম্ভব ছিল না। অসম্ভব। আমার পাশের দেশ শ্রীলঙ্কায় ছাত্র uprising-এ হাজার হাজার ছেলে মারা গেল। আমার এখানে মারা গেছে। ফ্রান্স হোক, জার্মানি হোক, আমেরিকা হোক সর্বত্র লড়াই চলেছে আমি তারই ধারাবাহিকতায় সুমনকে দেখতে চাই। দেখতে পারি। কিন্তু একদম copy book style নয়। west থেকে যেগুলোকে এনে চালু করা হচ্ছে। যার পেছনে আমাদের cultural industry’র একটা বড় ভূমিকা আছে- আজকে সাহিত্যও যার মধ্যে integrated হয়ে গেছে- তারা কখনই এ জিনিস করতে পারবে না। কারণ none of them were heaven stomer। সুমনের একটা দায় ছিল, সে দায়টা তার এখনও আছে। তাই সে এখনও গাইছে মানুষকে নিয়ে। অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এবং জীবনের শেষদিন অবধি এই commitment টা থাকবে। কারণ এইটা হারিয়ে গেলে আর কিছুই থাকে না। এটা হারিয়ে গেলে আর কোনো মানেই থাকবে না। এইটা ছাড়া মানুষ হিসেবে তার অস্তিত্বের কোনো অর্থ নেই। কারণ আমি একদম exixtentialism’র term –এ মানুষের authenticity টার ওপর ভীষণ জোর রাখি। সুমনের radicalism টা তাঁর authentic সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই দুটো কিন্তু একটা আরেকটার পরিপূরক। একটা গেলে আরেকটাও থাকবে না।
    ::: একটা প্রশ্ন করি, ধরা যাক যদি হারবার্ট সুমনের গান শুনত, তবে কি সে আত্মহত্যা করত? মানে হারবার্ট-র ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে যদি সুমনের গান ঢুকিয়ে দেওয়া যেত…

    ■হ্যাঁ, ও তাজ্জব হয়ে শুনত। কিন্তু হারবার্টের যা মাথার ক্ষমতা তাতে এগানটা তার ভালো লাগলেও এগানটা তার ভেতরে কতটা register করত এটা বলা কঠিন। কারণ এ গানটা শুনলে logically কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না। এবং আমি খুব একটা ওর আত্মহত্যাটাকে এভাবেই portray করেছি it was not suicide, it was a murder. It was killing. He was murdered. যে অর্থে ঋত্বিকের মৃত্যুর পর আমার বাবা বলেছিল ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে। কেন বলেছিল? আমি তিনটে রাত্তিরের উদাহরণ দিতে পারি। এই তিনরাত্তিরে he was murdered. আমি তিনরাত্তির চাকুলিয়াতে দেখেছি- একটা লোক অবাক হয়ে তাকিয়ে আচে রেলস্টেশনের দিকে। কারণ আমরা যে বাড়িতে থাকতাম তার পাশেই স্টেশন। একটা ট্রেন আসবে। সেই ট্রেন থেকে একটা লোক নামবে। সেই লোকটা ফিল্মের raw stock নিয়ে আসবে। সেইটা আসছে না অতএব ঋত্বিক shoot করতে পারছে না। ঐ তিন রাত্তির যখন অপেক্ষা করছিল he was murdered. এইটাই রিয়াল। এটাই true. বাকি সব বাজে কথা। ফালতু।
    ::: আপনি একটু আগে বললেন না যে উত্তরাধিকার পাওয়া যাচ্ছে না? ছয় এবং সাতের দশকের পর আটের দশক প্রশ্ন করছে ছয় এবং সাতের দশকের শূণ্যতাটাকে। সুমন কি শুধু গান গাইলেন? সুমন তো একটা পরিমণ্ডল তৈরি করলেন যখন রথ এগিয়ে আসছে এবং রথে আডবানী আসছে, অযোধ্যা হবে।

    ■এবং তার আগে একটা ঘটনা বলেছি ৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন fall করেছে। ফ্রান্সিস ফুকোয়ামা লিখলেন end of history. সেই সময় সুমন re-establish করছে ইতিহাস আছে। এবং সেই history’র সন্ধানেই তোমাকে চাই। সুমনের এই গানটা যে কতলোককে কতভাবে আমাদের এই সমাজে sanity’র বৃত্তে থাকতে সাহায্য করেছে। এটা কেউ জানে না। যেটাকে sober thinking বলে। যেটা সঠিক চিন্তা। মানে affirmative ভাবনা যেটা। যেটা মানুষ share করে। নিয়ে বেঁচে থাকে। সেখানে সুমনের অবদান অবিস্মরণীয়। অবিস্মরণীয়। আমি মনে করতে পারি যে একসময় সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা সুকান্ত’র কবিতার যে impact চিল। সেই ধরনের একটা role সুমন play করেছে তার সময়ে। ১৯৯২ তে এই গান গেয়ে। এবং এইটাই major artist রা করে। major artist রা হিসেব কেতাবগুলো পালটে দেয় এসে। এবং তাদের কেউ অনুসরণ করে, কেউ করে না। এভাবেই চলে। সে সাহিত্যের ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে, চলচ্চিত্রে দেখা গেছে, নানান জায়গায় দেখা গেছে। He questioned the basic grammar- তুমি গান করছ কাকে address করছ? কেন address করছ? এই প্রত্যেকটা প্রশ্ন সে তুলেছিল। এই ‘তোমাকে চাই’ বলতে ও সক্কলকে চেয়েছিল। কারণ তার যে dramaটা এটা নিছক প্রেমের গান নয়। এটা Political Commitment.
    ::: ছয়-সাত-আট দশকের ব্যর্থতার কথা বললেন আপনি, আমাদের গণনাট্য কি তাহলে ব্যর্থ ছিল?

    ■ব্যর্থ হবে কেন? গণনাট্য তার সময়ে তার কাজ করেছে। It was in the forties. তারপর যেভাবে market forces কাজ করেছে তা ছাড়া শিল্পের আন্দোলনটা তো জিনিয়াসের ওপর নির্ভর করে, আমি চাইলেই একটা ঋত্বিক আজকে আসবেনা। সে তার মত করে তৈরি হচ্ছে যথাসময়ে সে এগোবে। এই অনেকগুলো factor কাজ করে, সেই factor গুলো যখন ঠিকঠিক ভাবে চলে তখন একটা সুমন emmarge করে। সুমন এসছিল মানে সুমন না এলে আর কেউ আসত, সে সুমন হত। এবং ভবিষ্যতেও হবে।
    ::: সুমন আসার ক্ষেত্রে একটা সুবিধে আছে, প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের যে বিস্মৃতির ইতিহাস সুমনের বারবার ইতিহাসে পা রাখবার একটা প্রবণতা দেখা গেছে। একইসঙ্গে ভবিতব্যকে দেখতে চাইছে।

    ■এবং একইসঙ্গে তার international exposure এবং তার অভিজ্ঞতা। পিট সিগারের মত একটা মানুষের পাশে পাঁচ মিনিট কাটালেই জীবনটা পাল্টে যায়। সেই বিরল সুযোগ ওর হয়েছিল। এবং music –এ এই যে কাজ, তারও আগে তার মত করে গৌতম চট্টোপাধ্যায় করেছিল। এদের দুজনেরই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিচার করলে বোঝা যাবে culture কীভাবে আরেকটা culture কে feed করে। এই যে role টা আমার কাছে খুব interesting লাগে যে একজন theater কর্মী বিদেশ গিয়ে একটা production দেখে তার মাথা ঘুরে যায়। তার হাজারটা avenues খুলে যায়। যেটা সিনেমার ক্ষেত্রে বারবার হয়েছে। আমার মনে আছে। যখন কলকাতায় প্রথম Ivan’s Childhood দেখানো হয় আমাকে ঋত্বিক নিয়ে গিয়েছিল দেখতে। এবং ও ছবিটাকে গিলছিল, তার থেকে আমি বুঝতে পারছিলাম যে এর একটা result হবে। এখানে প্রত্যক্ষভাবে কেউ কারও লেখা মেরে দিচ্ছে বা কাজকর্মের technique মেরে দিচ্ছে তা না, যেটা হচ্ছে একটা aesthetic sensibility. তার মত করে সে imbibe করছে। এবং এক্ষেত্রে সুমন এবং গৌতম এরা কাজটা করেছে। এর proper assessment আরও পরে হবে। বাংলাতে এমনিই প্রতিভা কম, copy cut বেশি। ওরকম artist অনেক থাকবে কিন্তু চাইলেই আমি একটা গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মহীনের ঘোড়াগুলি পাব না বা কবীর সুমন পাব না। We are very lucky যে আমরা এরকম artist পেয়েছি। এবং এটা আমাদের সম্পদ।
    ::: এই যে আপনি বললেন influence’র কথা, তো নিজস্ব সংস্কৃতির যে গোড়া, সেই মূলে নব্বইয়ের দশকের নতুন অর্থনীতি ধেয়ে আসছে আর সুমনের গানে ‘কালকেউটের ফণায় নাচছে লখিন্দরের স্মৃতি/বেহুলা কখনও বিধবা হয় না এটা বাংলার রীতি’…

    ■না, এটা তো গানে প্রত্যক্ষ কথায়। সুমন কিন্তু আমাদের traditional গানের যে ইতিবৃত্ত তার সঙ্গে তার পারিবারিক কারণে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার রক্তে কীর্তন আছে, রবীন্দ্রনাথের গান আছে। নজরুলা আছে, সবকিছু আছে। সে কিন্তু একটা huge musical heritage সঙ্গে নিয়ে এসেছে। এসে সে নতুন সময় নতুন স্বরলিপি দিয়ে খুঁজবে। এবং এইখানেই একটা role থাকে আমাদের শিল্পে বলা হয় পরস্পরা। সুমনকে আমি পরস্পরার বাইরে মনে করি না- পরস্পরার ধারার মধ্যেও কতগুলো break আসে- একটা leap আসে- যেটাকে মেলানো যায় না- সে-ই সুমন- সুমনের পেছনে অনেককিছু আছে। অনেক অনুশীলন আছে, অনেকের দীর্ঘদিনের চর্চা আছে, অনেককিছু আছে। সবকিছু নিয়ে ও এল।
    ::: শূণ্য আশির দশক! Nineteens কে তবে feed করা গেল? Nineteens অনেক কিছু পেল? গান…

    ■আমি কিন্তু ওভাবে শূণ্য বা ভরাট বলতে পারি না। সবসময়ই কিছু না কিছু কাজ হয়। সবগুলো কাজ equally সামনে আসে না বা প্রকাশিত হয় না। চেষ্টা নিশ্চয়ই ছিল। আশির দশক থেকেই সুমন নিজের মত করে নিজেকে তৈরি করেছে।
    ::: সুধীরবাবুর কথায় দুজন মানুষকে আশির দশকে ভোলাই যাবে না। বিপুল চক্রবর্তী এবং প্রতুল মুখোপাধ্যায়। আমি সেটাও বলছি না। আমি আরও বৃহত্তর অংশে বলছি। এইরকম তথ্য পাচ্ছি যে ৯০’র মাঝামাঝি অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিন হচ্ছে। বাংলার শহরাঞ্চলে। ৯০’র শেষপ্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন জায়গায় বিশেষভাবে এইরকম একটু সমৃদ্ধ অঞ্চলে ছেলেপিলেরা band করছে। ঐ হারমোনিয়াম আর তবলা নিয়ে বসে যাওয়া পাঁচটা ছেলেকে আমি চার দশক আগে দেখি…

    ■হ্যাঁ বহুগুলো Paradox হচ্ছে একেকটা art-form একেক সময় Predominate করে। এই সময়টা দেখা যাবে theater’র প্রসারটা কমে যাচ্ছে। কিন্তু এদিকে ব্যান্ডটা আসছে। কারণ এই যে একটা নতুন শব্দ নতুন expression, এই যে guitar as an instrument সেটার কী ভূমিকা বা ঐ Percussion’র কী ভূমিকা এগুলো প্রথাগত যে শিক্ষা-তালিকা যে ক্লান্তিকরতার রেশ আছে। ঐ যে ‘শাপমোচন’ আর ‘চিত্রাঙ্গদা’…
    ::: শ্যামা শাপমোচনের অশ্রুমোচন-

    ■হ্যাঁ, হারমোনিয়াম আর তবলার বাইরে গিয়ে নতুন শব্দ নতুন expression খোঁজা, এইটাই তো international ভাষা, যে ভাষাটা এখানে আসছে that is very good.
    ::: আরেকটা খুব interesting জায়গা বলে ফেললেন, লোকগানের মধ্যে হয়েছে ছাদ পেটানোর গান, ধান কাটার গান রয়েছে ধান মাড়ানোর গান, ধানভানার গান। কিন্তু নাগরিক গান, একসাথে বহুমানুষের পথচলার গান নেই। সুমন গান গাইতে এলেন তারপর কানোরিয়া জুট মিল হয়েছে, অসংখ্য movement হয়েছে, নাগরিক একটি বাচ্চার মৃত্যুতে গান হয়েছে, একজন ধর্ষিতা হলে নাগরিক কন্ঠ গেয়ে উঠেছে- এইটাকে কীভাবে দেখছেন? এটা কি নতুন করে এল?

    ■না, শিল্পের আধুনিকতার বড় ধাক্কাগুলো বাইরে থেকে আসে। Urban world থেকেই আসে। সে Socialism ই হোক বা মায়াকভস্কিদের futuristic আন্দোলনই হোক। কাজেই সেভাবেই এটা এসছে। এটা বাইরে থেকে আসতে বাধ্য। কারণ সেখানে সব থেকে advance thinking. এটা বোধহয় কিছুটা মারিগোল্লার গেরিলা ওয়ারফেয়ারের তত্ত্বের মত যেটা totally শহর নির্ভর। সেইখানেই সুমন এসছিল।
    ::: আরেকটা খুব অদ্ভুত ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন করলেন এবং গান লিখলেন। দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পরে দেশটা স্বাধীন হল ও নতুন একটা দেশ হল। এবার এপার বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ওপার বাংলার ভাষা আন্দোলনের গর্জে ওঠার ছায়াপাত খুব একটা দেখা গেল না। বরং মাঝে মধ্যেই সুমনের গান আমাদের অপরাধ কিছুটা কমালো। আমি বলতে চাইছি একটা গান ছিল, ‘বাংলার ধনুকের ছিলায় ছিলায় যত টান/ তীরের ফলায় তবু বিষ নয় লালনের গান’ এ কারণে এটি উল্লেখ্য, এর মাঝের সময়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ দুজনে একটি ভাষাই share করে। দুজনের মধ্যে দীর্ঘ ইতিহাস আছে, যেটা ছিল না- সুমনের গান বোধহয় প্রথম যা বাংলাদেশে একই আলোড়ন তৈরি করেছে…

    ■এটা ওখানেও equally নতুন। ওখানেও equally appealing. তার কারণ এখানে indigenous people’s culture টা বাংলাদেশের মত powerful নয়। যদিও আমরা একই বাংলার। তাদের ওখানে গানের যা variety, যেগুলো মুখ্যত দেখা যায় যে ধরনের music নিয়ে ঋত্বিক কাজ করেছেন। যে গান use করেছেন সমস্ত ওখানের। আমরা শুনলে বুঝতে পারি যে আমাদের আব্বাসউদ্দিন নেই। এগুলো বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না।
    ::: বিনয় রায়, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মধ্যে…

    ■না, তারা ওখানকারই লোক। তাদের তো ওখানে এখানে বলে কিছু ছিল না। এই identity মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় মধ্যে একদম। Despite ১৯৭১ যখন ঐ বাংলা লড়াই করছে। এই বাংলা মদত দিয়েছে, গুলি বন্দুক দিয়েছে সবই করেছে, everything possible করেছে। এটা কিন্তু বাঙালির সার্বিক মুক্তির লড়াই ছিল ৭১-এ।
    ::: সেটাই বলতে চাইছি সুমনের গান কিন্তু দু’বাংলাতেই ঢেউটা তুলছে।

    ■সে তো বটেই। আমাদের এখানে যে ক্লান্তিকর ঘেষ্টঘেটাং চলছিল ও বাঙলাতেও চলছিল না তা নয়। এ দুটোই ধাক্কা খেল সুমনের কাছে। এবং ধাক্কা খেয়ে এই নাগরিক গানটা এটা diversion দিল, একটা নতুন politics-এ অভিষিক্ত করল এবং এই রাজনীতিটা না থাকলে কিন্তু সুমনের গান হয় না, হতে পারে না।
    ::: ১৯৪৫-এ একজন গায়ক ছিলেন যশোদা দুলাল মন্ডল, তিনি গাইছিলেন যে- ‘…একটু থমকে চল ভাই/ এ কলকাতা Socialism কে চায়। Nazism কে চায় না, কুলিমজুর আর হুজুর বলছে না…’ অর্থাৎ নাগরিকজীবনের চাওয়া পাওয়ার যে দাবি, একটিই গানে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে আর পাওয়া যায়নি- এটা যদি ৪৫ সাল হয় তাহলে প্রায় পঞ্চাশ বছরের দূরত্ব। গণনাট্যের গান তো শ্রমিকমজুর নিজের শ্রম লাঘবের জন্য গাইছে না আবার স্নানঘরে বা বেডরুমে আমি আমার একান্তেও সেই গান গাইছি না। এই যে নতুন নব্য মধ্যবিত্তের উঠে আসা, যার একান্তের গানও লাগে-

    ■এবং সুমনের গান একাধারে দুটোই। কেননা অনেকসময় দেখেছি আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছি যদিও ২০০৫-এ একটা সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়ে আমি গান গাইতে পারলেও আমার গলা থেকে সুরটা চলে যায়। তবুও আমি আপন মনে যখন কোনো মেলোডি গুনগুন করি বা হেমন্তের কোনো একটা গান গাই বা সুমনের গান, বহুসময় দেখেছি আমি unconsciously গাইছি। অচেতনেই। এটা আমার কাছে খুব মূল্যবান অভিজ্ঞতা কিন্তু। এ গানটা আমার কাছে spontaneously ভেতর থেকে উঠে আসছে যেখানে আমার আশেপাশে কেউ নেই আমি নিজের জন্য গাইছি রাস্তায়।
    ::: তাহলে তো আমি একটা প্রশ্নের লোভ সামলাতে পারছি না যে দিলীপকুমার রায় বলছেন সঞ্চারী দিয়ে ব্রিটিশ তাড়ানো যেত বা রাখা যেত… বহু বহুকাল পরে সুমনের সমস্ত অনুষ্ঠানেই দিলীপকুমার রায়’কে উঠে আসতে দেখা এবং সে একই কথা সঞ্চারী সঞ্চারী সঞ্চারী। সঞ্চারী এবং গানের যে বাঙালিয়ানা সেটা বস্তুটা সুমন দেয়, সেটা আপনার মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলে?

    ■আমার ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলে জানিনা যেটা ফেলে দ্যাখো, সমস্ত artist’র ক্ষেত্রেই এটা একটা unconscious process. এখানে আমার পেছনে কোথায় হুতম আছে কোথায় বিভূতিভূষণ আছে, ত্রৈলোক্য কোথায় আছে এগুলো কেউ জানে না। সুমন’ও জানেন না। আমার যেমন মনে পড়ছে অপরেশ লাহিড়ীর একটা গান ছিল ‘ঐ যে- ভেঙেছে দমকা ঝড়ে।’ এটা তো totally নতুন ধরনের content বা জটিলেশ্বরবাবুর ঐ গান, সম্ভবত শিবদাসবাবুর লেখা যে ‘এ কোন সকাল’- এই একটা new approach সুমনের মধ্যে রয়েছে এবং এটা এসে তাঁকে আধার করে জিনিসটা explore করেছে। এটা করতই।
    ::: ধরুন idiom’র কথা বলছেন, ‘পথিক পথ হারাইয়াছ’-

    ■হ্যাঁ, এগুলো কি বলব, এগুলো Punch line, Boom করল একটা ঘুষি knock out করে দিল। এখন এই knock out মারার ক্ষমতা major artist ও লেখকদের থাকে। সুমনের আছে।
    ::: একধরনের একাকীত্ব যেটা দেবব্রত বিশ্বাসের ব্রাত্যজনে উঠে এসছে, প্রথম সারির শিল্পীরা তার বাড়িতে যাচ্ছেন, সারাদিন প্রণাম করছেন, লোকটা প্রলাপ বকছে tape recorder চালিয়ে কিন্তু কোনো শিল্পী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সোচ্চার হচ্ছেন না। আমার বেড়ে ওঠায় সুমন তো icon, আমি কিন্তু সুমনের ক্ষেত্রেও সেটা দেখতে পাই। এই একাকীত্ব। আপনি এঁকে কিভাবে দেখেন। আপনার দ্যাখাটাতো আরও বড়। ঋত্বিকও ঢুকে আসে? নাকি?

    ■ঋত্বিকের সময়েও আমি এটা দেখেছি, জর্জ বিশ্বাসের সময় যেটা ছিল ঋত্বিকের সময় It was very much there। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। কী অসামান্য একটা concept করে ছিল বস্তির ছেলেদের নিয়ে একটা orchestra. বাজানো হবে রাস্তার instruments ইট, টিনের কৌটা। He did not get any recognition, nothing. আমার বাবা গিয়ে কোথাও নাটক করতে পারেনি। গাঁজা পার্কের মঞ্চে যে একটা ঘর থাকত ঐ ভিখিরি, drug addict-রা থাকে ওখানে গিয়ে rehearsal দিত। এটাও আমাদের reality, আমরাও আমাদের culture কে murder করিনি। সুমন তার অত্যন্ত দুঃসময়ে ক’জনকে পাশে পেয়েছেন? এটা artist’র একার লড়াই। একাই লড়তে হবে। এ লড়াইটা কেউ লড়ে দেয় না। এবং এ লড়াইটা যে জিততে হবে এমন কোনো ব্যাপার নেই-
    ::: না, আমি লড়াইটা জেতার কথা বলছি না, আমি বলতে চাইছি যে বনসুতার বাক্য আমরা থাকি ও বাঘ মারি সেইরকম কোনো একটা বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে-

    ■জর্জ বিশ্বাসকে তো তার পাশের শিল্পীরা bitrey করেছে। কারণ তারা তখন more powerful যে establishment তার দিকে যাচ্ছে। বিশ্বভারতীর সাথে বা আনন্দবাজারের সাথে গলা মেলাচ্ছে তারা। এই করতে গিয়ে তারা নিজেরা ডুবল জর্জ যেখানে যাবার ঠিক চলে গেল। এটাও artist’র একটা ব্যাপার। Artist কে ঐভাবে ঢাকা যায় না। আমি মনে করি এটা একজন artist’র পক্ষে bleasing যে তাকে comer করা হচ্ছে। বোম্বাই চাচ্ছে market থেকে একে সরিয়ে দাও। আজকের সুমনের market টাও জানিনা। কিন্তু মনে হয় না সুমনের গুণগ্রাহীর সংখ্যা একটাও কমেছে।
    ::: আমার বারবার মনে হচ্ছিল, ১৪ নভেম্বর নন্দন থেকে যারা ফিল্ম দেখা ছেড়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বেরিয়েছিল। তার একটা বড় অংশ যাতে আপনিও আছেন, দল পতাকা নেতা নেত্রী ছাড়া যে নেমে এল তারা সুমনের গান শুনেছে, গুনগুন করে গাইতে পারে। তারও একটা বড় অংশ সোচ্চার গাইতে পারে। তারা ফ্যাতাড়ুকেও চেনে।

    ■একটা artist বেচে ওঠে এই ভাবে। যে মিছিলটার মধ্যে সুমন বেচে থেকেছে। ঐ পুরো আন্দোলনটার মধ্যে সুমন তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে তার গানগুলো বেঁধেছে। আজকেও করে। ভবিষ্যতেও করবে। এইটেই তার আসল জেতা। দেবব্রত বিশ্বাসও যেমন জিতে যান। কেউ জানুক না জানুক। দেবব্রত আমাদের পল রবসন বা পল রবসন আমেরিকার দেবব্রত। এই যে জায়গায় তিনি রয়েছেন তা কেউ কাড়তে পারবে না। যেমন সুমনের জায়গাটা, গৌতমের জায়গাটা unique। এঁরা হচ্ছে unique artist। যারা একটা সময়কে এমনভাবে ধাক্কা দেয় যে culture’র ক্লান্তিকর পরিবেশে accepted হয়েই চলা (বিশেষভাবে যখন একটা নাটক যেমন সাম্প্রতিককালে শেক্সপিয়র হিট করায় সকলে সেটাই পুণরাবৃত্ত করে চলেছে, একটা শেক্সপিয়র সাফল্য পেয়েছে তো আরও করা যাক! যারা করছে তাদের গালাগাল করছিনা) এইটাই আসলে Pattern হয়ে দাঁড়ায়। এখানেই একটা লোক এসে অন্য কাজ করে।
    ::: যুক্তি-তক্কো-গপ্প ভয়ঙ্কর সময়ে দাঁড়িয়ে যেমন বলছিল ভাব, ভাব ভাবা practice কর। কিন্তু তারপর অনেকতা সময় ফাঁকা। সুমন কিন্তু কোথাও সোচ্চারভাবে ভেবেই শুরু করেছেন, বলছেন তোমাকে ভাবাবই ভাবাবও-

    ■ও ভাবনার কাজটা অনেকটা সেরে এসেছে। Ideologically নিজেকে Prepare করেছে। ও নিকারাগুয়া এমনি এমনি যায়নি। বা সারাবিশ্ব এমনি এমনি ঘোরেনি। পীট সিগারের কাছে এমনি যায়নি। ও নিজেকে তৈরি করেছে। এবং সারা পৃথিবীর গানের pulse টা বুঝেছে। কোনটা ঠিক, কোনটা এগিয়ে বা সামনে সেটা ও বুঝতে পেরেছে। বুঝতে পেরেই এসেছে। এবং artist যদি এই level-এ নিজেকে prepare করে it’s a very big thing. কথা সুমনের গানের সম্পর্কে prepare হয়ে কিছু বলা কঠিন। কারণ আমরা এমন একটা জিনিস নিয়ে কথা বলছি! সুমনের গানের ওপরে গুণগ্রাহী শ্রোতারা যারা সামান্য লোক, কেরানি তারা কীভাবে তাদের ভাবনা চালিত করছেন, এই ভাবনাগুলো জানা উচিত।
    ::: নয়ের দশকের গোড়ায় আডবানীর রথ ছুটছে। অযোধ্যা হচ্ছে, নতুন অর্থনীতি আসছে আমাদের রাজ্যের শাসকদল বিজেপিকে মোকাবিলা করছে, তারও দীর্ঘসময়ের পর দেখা যাচ্ছে পাড়ার মোড়ে শনিমন্দির হচ্ছে যেখানে মে’মাসের বিশেষদিনে লালপতাকা পতপত করে ওড়ে। এই যে সময়, উগ্র ধর্মের বিরুদ্ধে যে লড়াই সেখানে সুমনের গান সালমা খাতুন পুত্রবধূ ইত্যাদি ইত্যাদি, যেখানে দেখা যায় ওপার বাংলার হিন্দু-মুসলমান বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ায় এপার বাংলায় এসে বিয়ে করছে- সেখানে দাঁড়িয়ে গোটা phase-এ ধর্ম/মসনদ নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ভাবধারাগুলো পাল্টাচ্ছে। এখানে দাঁড়িয়ে কবীর সুমনকে কীভাবে দেখেন? সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট্রের কমরেডকে কীভাবে দেখেন?

    ■না, as such তো ফ্রন্ট declared হয়নি। Cultural movement যখন একটা ফ্রন্ট তৈরি করে তখন তো সেখানে শুধু গায়ক থাকে না। সেখানে যে নাচে সেও থাকে। Why our dance has died a death? কে নাচ নেই? শেষ innovative নাচের কাজ সম্ভবত মঞ্জুশ্রী করেছিল। বা রঞ্জাবতী করেছে। অথচ আমাদের এটা শান্তি বর্মনের দেশ। আমরা শম্ভু ভট্টাচার্য মারা গেলে ট্রিবিউট দি। কিন্তু নাচের কি ধারাবাহিকতা আছে! কিস্যু নেই। বাঙালি খুব একটা culturally enriched জাত না। তাতে অনেক মস্ত শিল্পীরা এসেছে কিন্তু কোনো ধারাবাহিকতা তৈরি হয়নি।
    ::: স্বাধীনতার দীর্ঘ আগে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ভারতবর্ষের যে দুটি মানুষকে চিনতেন তারা হলেন গান্ধি ও উদয়শংকর-

    ■উদয় শংকরের dance form নিয়ে আমি বলবার যোগ্যতা রাখি না। সেখানে folk element’র বিরাট role ছিল। তার সঙ্গে classical মুদ্রা ইত্যাদিও ছিল। সেখানে কোনো নাচের স্কুল নেই। শান্তিলাল, একটা শম্ভু ভট্টাচার্য চেষ্টা করেছেন, তারা তাদের মত করে তারপর কিন্তু নামটা থেকে গেছে in our more conservative areas like South India, Orissa রয়েই গেছে। এখানে তাদের একতা traditional নাচ ছিল। আমাদের কিছু ছিল না। Participatory যে dance expression of solidarity যা গুয়াহাটির লিটিল ম্যাগাজিন মঞ্চে দেখে এলাম তা বাঙালির নেই। বাঙালি ভাসানের সময় একটু কেওড়ামি করে, ব্যাস, that’s all, সে নাচটা নাচ না। বম্বের গনেশ পুজোতেও হয় এই এক। বাঙালি একটা নাচবিহীন জাতি।
    ::: সেই বাঙালির ভাষায় বাংলা গানকে এ প্রেক্ষাপটে কীভাবে দেখছেন?

    ■বাঙালির musical orchestration বা ensemble’র culture নেই। যা রবিশংকর, তিমিরবরণ চেষ্টা করলেন। তবে এঁরা radio দপ্তরটাকে পেয়েছিলেন। যাদের মাইনে করা musician থাকত। আমার পাড়ার একজন ছিলেন যিনি chello বাজাতেন।এখন যেটা Western school of music-এ ঢুকে গেছে। ভি বালসারা যার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রচেষ্টা করেছিলেন। এখন তো anyone can be a musician. Electric music’র দিন এসে গেছে। এখন আর পারকাসন হাত দিয়ে বাজাতেও হয় না। আঙুল দিয়ে বোতাম টিপলেই চলে। তবে sms’র ভাষায় War and Peace বা কমলকুমার হবে না। তার জন্য জটিলবাক্য বা শব্দ দরকার। সেমন ঋত্বিক, culture’র যে preparation তা কিন্তু সাংঘাতিক। সেখানে কি নেই আর কি আছে! ও দিলীপ রায়ের কথা তো বলবেই। ঐ আশ্চর্য গান। যে গানের মধ্যে কী নেই আর কী আছে। ওই তো বলবে। আর কে বলবে।
    ::: ব্যক্তিজীবনে তবু গান আসে, গান বদলায় বিভিন্ন বয়সে, আপনি যে বয়সে পৌছেছেন সে বয়সে আপনার গানের নির্ভরশীলতা কোন জায়গায়?

    ■অনেকসময় স্মৃতিতে আমি গান শুনি। I imagine that the song is being sung. আমি শুনছি। আমার মাথার মধ্যে melody টা আছে। যেমন হ্যামলেট’র ওফেলিয়ার কম্পোজিশনটা শুনি। এরজন্য এগুলো বাজাবার দরকার পড়ে না। কিন্তু that can inspire me। আমি international শুনি কিন্তু! International বাজালে কেঁদেও ফেলতে পারি। I can die for that. Emotional attachment টা সেই জায়গায় আছে। এবং International বাজলে আমি কিন্তু বুলেট ফুলেট মানব না। সোজা কথা, music একটা লোককে কিন্তু এ জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। Music এই role play করছে। আরও ভয়ঙ্গর role play করছে। নাৎসি ক্যাম্পেও music বাজত। ড্রামস বাজত মানুষকে পুড়িয়ে মারার সময়!
    ::: আপনার রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থান থেকে সুমনকে কীভাবে দেখেন? গায়ক সুমন না কমরেড সুমন?

    ■Absolutely আমার কমরেড, আজকে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও কাঙাল মালসাটে দাঁড়কাকের role করেছে। আমি লোককে বলতে পারব, ঐ দ্যাখ আমার লেখায় কে করেছে জানিস? I am really proud of him, এই যে আনন্দ, একজন বন্ধু, he is greater friend of mine. সে আমাকে এতটা honor করল! ওতবড় একজন গায়ক আমার লেখা একটা চরিত্রে অভিনয় করছে, এটা ভাবা যায়? এই pride ক’জনের আছে। রবীন্দ্রনাথেরও নেই!
    ::: সাতের দশক পেরিয়ে আটের দশক এল। তারপর বামপন্থীদের রাজনীতি ভাঙল। তারও পর যে রাজনীতি এত তাতে individual হয়েই সুমনের থাকা। অন্তত ৯০ থেকে যে ফ্রন্টটা ঝাপসা ভাবেই গড়ে উঠছিল, যাকে দেখা যায় না, কিন্তু বোঝা যায় ফ্রন্টটা আছে, তা থেকে কি কোনো আবেদন জানাবেন? ঐ সময়টাকে কোনো আবেদন জানাবেন?

    ■হ্যাঁ, একটা ফ্রন্ট তো আছেই, কিছুটা ফিল্মে- কিছুটা থিয়েটারে- কিছুটা গানে আছে কিছুটা আছে গদ্য রচনায়- কিছুটা কবিতায়। একটা অলিখিত, undeclared ফ্রন্ট আছে, এবং ভবিষ্যতে একটা catalyst আসবে এবং সব শেষ হবে। আমি কোনো ক্লান্তিকর একঘেয়েমিতে বিশ্বাস করি না। Politics যেভাবে চলছে চলবে। আচমকা একটা ধারা আসবে। আসবেই। যেমন একজন বিখ্যাত কমিউনিস্ট লেখক, কবির মতে বিভিন্ন লোককে পায়ে সরষে বা সুড়ুসুড়ি দিলে reaction টা আলাদা হবে কিন্তু চেপে ধরলে reaction টা
    ::: রজনীকান্ত বলছেন ব্যাক্তি মানুষের মুক্তি কামনা। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া। সেখান থেকে আমিও ভন্ড অনেকের মত, এ উচ্চারণে কোন ভন্ডটাকে কীভাবে দেখবেন?

    ■এ ভন্ডামি তো ভর্তি, খারাপ লেখা লিখব, খারাপ গান করব। Only with an eye to the market. Market artist কে নষ্ট করে। Artist ও Market’র সামনে গিয়ে কুকুরবৃত্তি করে। কেন করে? কই ঋত্বিক তো করেনি, বারীন সাহা তো করেনি। বারীন সাহার কি বাইরের ফিল্মে অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করে খাওয়ার যোগ্যতা ছিল না? করতে পারেনি।
    ::: পরের লাইনগুলো অবশ্য- তবু বলি শোনো দেখতে ভুলো না অন্য ছবিও আঁকো।

    ■হ্যাঁ আর্টিস্ট গুবলেট করবেই আবার সেখান থেকে নিজেকে বের করেও আনবে। আর্টিস্ট কখন কি করবে কেউ জানে না।
  • de | 69.185.236.51 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৬:২০644792
  • সে, অনেক ধন্যযোগ!!
  • /\ | 118.171.159.41 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১৬:২৪644794
  • পেয়েছি। লিংক এ গন্ডোগোল ছিল। এ সমস্তই লাল জীপের ডায়রি থেকে, যার লিংক আগে দিয়েছি ৫ নং পাতায়।

    প্রতিবিপ্লবীর জন্যে শোকগাঁথা / সৈকত দে

    রাত প্রায় একটা। ঘুম আসছেনা বলে আমি আমার ডাইরিতে লিখে রাখছি নবারুণ ভট্টাচার্য সম্পর্কে আমার স্মৃতিচারণ। এমিল জোলা বলেছিলেন- নো ডে উইদাউট এ লাইন-কথাটা আমিও মানি। ওনার কোন লেখা পড়বার আগেই জানতাম তিনি ‘নবান্ন’ খ্যাত বিজন ভট্টাচার্য এবং সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র পুত্র (আশা করি, বাংলা সিনেমার তন্নিষ্ঠ দর্শকরা বিজনকে ইতিমধ্যে ভুলে মেরে দিয়েছেন)। ছোটো গল্পে ওগুলোর সামনে পড়লাম একদিন। ওরা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো না বলে আমাকে গ্রস্ত করলো বললে একটুও ভুল বলা হয়না বরং পুরোটাই ঠিক বলা হয় যেভাবে সমুদ্রতীরবর্তী বালির প্রাসাদ ভেঙ্গে পড়ে ঢেউয়ের আঘাতে এবং লুপ্ত হয়ে যায়। পারিজাত, বেবি কে ওরফে বেবি খানকি, মদন, ডি এস সর্বোপরি পুরন্দর ভাটের সাথে এইভাবেই আলাপ আমার। ভেবে দেখলাম যে যন্ত্রণা একজন সংবেদন্সম্পন্ন মানুষ হিসেবে তিনি সহ্য করতে পারছেন না সেইসব যন্ত্রনা বাইপাসের একটা রাস্তা হল তাঁর রচিত গদ্যে স্যাটায়ারের চিনিপ্রলেপ যা চেটে খেয়ে নিয়ে হেসে ফেলার পর রীতিমতো বোকাচোদা বনে যেতে হয়…
    ফ্যাতাড়ু সম্পর্কে যেমন একদিন বিকেলবেলা আমার প্রাক্তনীর সাথে কথা বলেছিলাম। সেই স্মৃতি থেকে এই ইহজনমে বেরোতে পারবো কি! বলেছিলান্ যে, ফ্যাতাড়ু হলো নবারুণের বিপ্লবীদের দঙ্গল। টিনটিনের বইয়ের নাম ধার নিলেও ওগো সোনামন, তোমাকে বলে রাখা ভালো যে ফ্যাতাড়ুরা কেউ খাবে তো কেউ খাবে না নীতিতে বিশ্বাস করে না এবং তা বলে বোকাবাক্সের কথাবার্তায় ঢুকে পড়ে না (এবং হায়! তাকে তখন ‘মবলগে নভেল’ থেকে কোট করতে পারিনি যে- আমরা লোককে জিজ্ঞেস করে, মহল্লা কে মহল্লা সার্ভে করে দেখেছি টিভির টকশোতে বিদ্বজ্জনদের বাতকর্ম প্রতিযোগিতা যতদিন চলবে, ততক্ষণ যে যাই লিখুক, কেউ কিছু পড়বে না) বরং খাবার নষ্ট করার মতো প্রাচুর্যে যারা বাস করে তাদের ডাইনিং টেবিলের উপর ফ্যাত ফ্যাত সাই সাই করে উড়তে উড়তে হেগে দেয়।

    আমি এইসব বলাতে সে আমাকে ‘ভালগার’ বলে বাম গালে মৃদু টোকা দিয়েছিলো। সে বড় সুখের দিন ছিলো স্বস্তি না থাকলেও আজ ভাইস ভার্সা। নিকটে থাকলে বলতাম, অকস্মাৎ অকারণে রাষ্ট্র খুব বেশি জোরে জরিয়ে ধরায় কতজন দুমদাম মরে যাচ্ছে, সেসব তোমার ভালগার লাগেনা নাজারিন-সুন্দরী!

    লোকটা সেই নির্মম, ঠান্ডা অন্ধকারকে চিনত। মানুষের অপমান, কষ্ট, অপরাধে জড়িয়ে পড়া, প্রচ্ছায়ার মধ্যে জুয়াড়ি, বেশ্যা, বিপ্লবী, খাপছাড়া, মানুষদের জীবনের খুঁটিনাটি ছিল তার নখদর্পণে- সেই সঙ্গে ছিল মানবিক এক গহন আধ্যাত্মিকতা যার মধ্যে সত্য হয়ে উঠেছিল মার্কস-এর কথা- Religion is a recognition of man in an indirect, round-about way… Christ is the intermediary onto which man shifts all his inner divinity, all his religious limitations.’। লোকটার ঘরের দেওয়ালে থাকত প্রিয় চিত্র, রাফায়েলের ম্যাডোনা-র একটি রিপ্রোডাকশন। সোনিয়ার সামনে নতজানু হয়ে রাসকলনিকভ চিরকাল থেকে যাবে। এই প্রায়শ্চিত্ত কখনো শেষ হতে পারেনা । (ভাষাবন্ধন মে ২০১০ সম্পাদকীয় থেকে)

    আবার সম্পাদকীয় তুলে দিলাম… মনে হল এটা তুলে না দিলে অন্যায় করা হবে… এই কয়েকটা বাক্যের ভেতর বিপুল ভাবনার খোরাক লুকিয়ে আছে যা প্রাপ্তমনস্ক পাঠক ভাববেন।

    পুরন্দর ভাটের কবিতা সম্পর্কে কিছু কথা হোক… আমার মনে হয় বিনয় মজুমদারের ‘বাল্মীকি সিরিজ’ এরপর এই ‘পুরন্দর ভাটের কবিতা’ বইটা সোজা সাপটা কবিতার এক লক্ষ্য ভেদী তীর সংগ্রহ যদিও কিছু কিছু কবিতায় নারীবাদিরা ক্ষেপে যেতে পারেন… আমরা দুটো কবিতা বিবেচনা করতে পারি, পুরন্দর ভাট নামে লেখা কবিতাগুলো থেকে… ‘বোকা ছেলে পুচু পুচু কোকাকোলা খায়/বোকাচোদা বাপ তার পয়সা যোগায়’ এবং ‘ঢেপসীরা পেপসিতে লাগায় চুমুক/ইয়া বড় পাছা আর ইয়া বড় বুক’… এখন কথা হচ্ছে এই কবিতার আক্রমণের লক্ষ্য কারা? নবারুণের তাবৎ লেখা পড়ার পর এই ধারণা নিশ্চয় আমাদের আছে তিনি অকারণে কিছুই লেখেন না… ফলে সংবেদী পাঠক বুঝতেই পারেন দায়িত্ববোধহীন ধেড়ে খোকা আর খুকিরাই তার আক্রমণের লক্ষ্য।

    “আমি ‘ভাতঘুম সাহিত্যে’ বিশ্বাসী নই। পাঠক আমার বই পড়ে নিশ্চন্তে ঘুমোতে না পারে, আমি তবে বলবো, কিছু একটা হল! লিটারেচার সবদেশেই দু-ধরনের। একটা হল, লিটারেচার অব এসকেপ। আরেকটা, লিটারেচার অব রিয়্যালিটি। দূর্ভাগ্যবশত, আমাদের এখানে প্রথম ধরনেরটাই বেশি হয়। ‘বেশি’ মানে, ওতেই তো ছেয়ে গেছে চারপাশ। আমি সাহিত্যটাকে দেখি একদম অন্যভাবে। একটা লেখার জন্য দীর্ঘ ভাবনা চাই। ক্ষতবিক্ষত হওয়া চাই। লেখক টেবিলে বসে লিখছে আর হরলিক্স খাচ্ছে। আবার লিখতে শুরু করছে। ওইভাবে কিছু হয় না। শুধু ওজন বাড়ে!”

    কথাটা বলেছিলেন নবারুণ… আসলে ব্যাপারটা হল উনাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে বেশি কথা বলতে হয়না কেননা উনার যাপনে আর লেখায় যিনি যেইভাবে তাঁর সৃষ্টি ফ্যাতাড়ুদের কায়দায় আমাদের বোধ আর বুদ্ধি ধরে ঝাঁকুনি দেন যে বেশি কথা না বললেও চলে।

    তাঁর একমাত্র অনুবাদ গ্রন্থ ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’ পড়লেও প্রিয় পাঠিকা আপনি দেখবেন কেবল ভাল কিছু লেখা অনুবাদে পড়ানোই উনার লক্ষ্য নয় বরং কী কবি, কী গদ্য, কী নাটক নির্বাচনে একেবারে প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান সম্ভাব্য পাঠকের কাছে পরিষ্কার করেন।

    আমরা সূচিপত্রেই চোখ বুলালেই তাঁর উদ্দিষ্ট বুঝে ফেলা শুরু করবো… মার্কিন প্রতিবাদী কব কার্ল স্যান্ডবার্গ, নিকারাগুয়ার যুবক কবি ফার্নান্দো গর্দিনো সারভান্তেস, সোভিয়েত কবি লেভ ওজেরভ (হায় সোভিয়েত!), জাপানী কবি ইসসা, চিলির পাবলো নেরুদা, মাও সে তুং আর আন্না আখমাতোভার কবিতা আরো কয়েকজন দ্রোহী কবির যারা কবিতাকে পুতু পুতু আবেগের প্রকাশ ভাবেবনি… গদ্যেও সেই ওয়ান অ্যান্ড অনলি মিখাইল বুলগাকভ দিয়ে শুরু তারপর লোরকার বন্ধু স্প্যানিশ কবি রাফায়েল আলবের্তি, জার্মান সুরকার হানস আইসলার, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে… ইলিয়া ইরেনবুর্গ করেছেন নাজিম হিকমতের স্মৃতিচারণা… তিনি, হিকমত ১৯৫১ সালে বলেছিলেন- ‘কমরেড স্ত্যালিনকে আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি কিন্তু অই কবিতাগুলো দেখলে আমার গা জ্বলে যায় যাতে স্তালিনকে সূর্যের সাথে তুলনা করা হয়। বাজে ক্কবিতাই শুধু নয়, ভাবাবেগটাও বাজে।’

    এই বইয়ে তিনি মাক্স ফ্রিশ আর বের্টল্ট ব্রেখটের দুটো নাটক অনুবাদ করেন… ফ্রিশের নাটকে অনুবাদকের নোটে তাঁর কথাগুলো খানিক পড়ে দেখা দরকার- ‘বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাটকটি আমার কাছে গভীর তাৎপর্য বহন করে। মাক্স ফ্রিশ ১৯৬৩ সালে যা ভেবে নাটক লিখেছিলেন তা ত থেকেই গেছে, উপরন্তু দুনিয়াজোড়া দক্ষিণ- ঘেঁষা টালমাটালে নাটকটি নতুন মাত্রা অর্জন করেছে। সত্যি বলতে কারা আগুন লাগায় এটাই মূল প্রশ্ন। সে প্রশ্নের কোন সরলীকৃত উত্তর এখনই দেবার সময় হয়নি। মার্কিন ও পশ্চিমী ধনকুবেরতন্ত্র, পালটি খেয়ে রাতারাতি ‘গণতন্ত্রী’ বনে যাওয়া পূর্ব ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ, বিশ্বব্যাংক- আই এম এফ-এর তাঁবেদার তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশের দালাল রাজনৈতিক নেতা, হরেক কিসিমের সন্ত্রাসবাদ- বহু হাত একসঙ্গে তালি বাজাচ্ছে। পাশাপাশি আবার সেই জায়মান শক্তি নতুন করে দানা বাঁধছে যারা মতাদর্শের যুগ বা ইতিহাসের অবলুপ্তি ঘটেছে বলে মনে করেনা। দ্বিতীয় দলের সহমর্মী হিসেবেই নাটকটি বাছাই করেছি। ওকলাহোমার বিস্ফোরন বা টোকিওর পাতাল রেলে মারণ-গ্যাস দেখে আমি বিস্মিত হই না। অমানবিক, অনান্তরিক, ভোগবাদী এক বিকৃত ব্যবস্থা ওই জাতীয় বিকৃত প্রতিশোধের জন্ম দিতে বাধ্য। আগুন লাগছে। লাগবে। এটাই সত্যি খবর।’

    আমার বা আমার প্রজন্মের লেখক হতে চাওয়া, কিছু কথা বলতে চাওয়া মানুষের পক্ষে নবারুণকে আর তাঁর কাজকে স্মরণ করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এই অর্থে যে এই স্মরণের অন্তর্গতে লুকিয়ে আছে দীপ্ত প্রতিজ্ঞা। এই দেশকে যারা মৃত্যু উপত্যকা বানিয়েছে তাদের পক্ষে কোনোভাবেই না থাকার প্রতিজ্ঞা। তাদের ছুঁড়ে দেয়া হাড়ের তোয়াক্কা না করা। কুকুরজন্মের পরোয়া না করে বরং নিজেরাই হাতে হাত ধরে একটা বিকল্প অবস্থান তৈরি করা, প্রবল বৃষ্টির পরেও দাঁড়িয়ে থাকা মানববন্ধনগুলোর মত।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ২০:০২644795
  • ওমনাথ, বোম্বাচাক এর কোনো ইকপি কোথাও পাওয়া যাবে? আমার বইটা খুঁজে পাচ্ছি না।
  • lc | 198.70.12.60 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ২০:০৯644796
  • ঈশেনকে এত্তগুলো দুয়ো। ওমনাথকে এত্তগুলো থেন্কুও কম পড়ে গেল। আমার থেঙ্কু, ওমনাথকে।
  • kc | 198.70.12.60 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ২০:২১644797
  • নাম টাইপাতে ভুল হইছে।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ২১:৩৫644798
  • কেশীকে পাল্টা দুয়ো। বই পাঠানোর নাম নাই দুয়ো দেবার গোঁসাই।
  • /\ | 127.194.195.138 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০০:০৭644800
  • ঈশানের সত্যই খানিক দুয়ো প্রাপ্য কারণ বইটার লিং এই টইয়ের ২ পাতাতেই রয়েছে। যদিও সেটা ওয়াটারমার্ক দেওয়া এবং আমার কাছে ঢের ভালো কন্ডিশনের ওয়াটারমার্ক ছাড়া বইটার সফট কপির সন্ধান আছে, তবু শুধু এই কুঁড়েমি ও ক্যাসুয়াল অ্যাপ্রোচের জন্যেই দেবো না। "ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক" এর চেয়ে অনেক বেশি সিরিয়াসনেস দাবি করে।

    যাক গিয়ে, রইল আনন্দবাজারে বেবিকে পারিজাত বইয়ের রিভিউ;
    http://archives.anandabazar.com/archive/1130330/30pustak3.html

    ভাষা চরিত্রসম্ভব হয়ে ওঠে - আশিস পাঠক



    সেই ঐতিহাসিক রাতে পারিজাতের পেট্রলে চলা খাজা মোপেড যদি কোনও স্পেশাল ম্যাজিক ট্রিকে এ-রাস্তা ও-রাস্তা দিয়ে, নানা টাইপের খাত্রা পার হয়ে, অকুপায়েড বাগদাদে পৌঁছে যেতে পারত তা হলে, কোনও সন্দেহই নেই যে, জব্বর একটা জমকালো ঘটনা ঘটত। এই ম্যাজিকটির পেছনে একটি নির্ভুল লজিকও আছে। বুশ পেট্রল চায় বলে সে বাগদাদে গেছে। বেবি কে। পেট্রল খায় বলে সে তো বাগদাদে যেতেই পারে।’’
    বাংলা সাহিত্যে ফ্যাতাড়ুদের মহাচমকপ্রদ আবির্ভাবের ঠিক এক দশক পরে নবারুণ ভট্টাচার্য জন্ম দিলেন দুই নতুন বিস্ময়কর চরিত্রের, বেবি কে। ও পারিজাত। তাদের ধাত্রী বইটির নাম বেবি কে পারিজাত (সপ্তর্ষি প্রকাশন, ১০০।০০) এবং তার যে অংশ থেকে উপরের উদ্ধৃতিটি, তার নামটি বড় তাৎপর্যপূর্ণ, ‘সব খেল-ই খতম হয়’।
    সব খেল-ই যে খতম হয়, সুমহান এবং সুপ্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ধারা এই সারসত্যটি প্রায়শ বিস্মৃত হয়। নাগরিক হৃদয়ের বিবর্ণ জটিলতার যে খেল সাম্প্রতিক বাংলা আখ্যানের ভুবনটিকে ক্রমাগত একঘেয়ে করে তুলছে তার খতম হওয়ার সময় সত্যিই এসেছে। দশ বছর আগে কাঙাল মালসাট উপন্যাসে নবারুণের কলমে কবিবর পুরন্দর, ডি এস, মদন, চোক্তার ভদি, বেচামণি, বড়িলাল, বেগম জনসন, কমরেড আচার্য এবং বৃহৎ দণ্ডবায়সের বিস্ফোরক মিছিল সেই একঘেয়ে, একপেশে বাংলা সাহিত্যের ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আম বাঙালি চিরকালই লেটে বোঝে এবং বই বই (অর্থাৎ সিনেমা) না হলে ফিরেও তাকায় না, সুতরাং অধুনা সেই মালসাট মাধ্যমে বহুচর্চিত।
    আর সেই সময়েই ওই চরিত্রগুলির খেল একপ্রকার খতম করলেন নবারুণ। কথাসাহিত্যে (নিন্দুকেরা বলেন কুকথাসাহিত্য) তাঁর সৃষ্ট যে ধারাটি মহাকালের ফলস দাঁত পরা মুখগহ্বরের দিকে ধাবিত হচ্ছিল তা থেকে, তাঁরই ভাষায়, কিছুটা যেন অন্য গলতায় ডিউটি পড়ল।
    না, পুরোপুরি ধারা-বদল করেননি নবারুণ। কিন্তু ভাষারীতিটি, তার সমস্ত খিল্লি এবং মাঝে মাঝে চকিত মহাকাব্যিক দীপ্তি নিয়ে অক্ষুণ্ণ রইল। ভাষা ব্যবহারের এই নতুন প্রক্রিয়া নিতান্ত ব্যর্থ চমক হয়ে থাকত যদি না এই ভাষা সদর্থে চরিত্রসম্ভব হয়ে উঠত।
    চরিত্র বলতে কেবল ফ্যাতাড়ুরা নয়, উপন্যাসেরই মৌলিক চরিত্র। সেই মৌলিক মেজাজটি, বার বার মনে হয়, কোনও ভাবেই অন্যতর কোনও ভাষারীতিতে প্রকাশযোগ্য ছিল না। ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক ও অন্যান্য থেকে বেবি কে পারিজাত পর্যন্ত নবারুণের কথাযাত্রার এই ভাষারীতি ইতিমধ্যে বিবিধ উত্তম প্রকাশমাধ্যমে অনুকৃত হয়েছে কিন্তু তাতে বারংবার প্রমাণিত হয়েছে নবারুণের কব্জির জোরই। একুশ শতকের বাংলা উপন্যাসের ভাষায় যে জোরটি প্রায়শ দুর্লক্ষ্য।

    গর্গ চ্যাটার্জির লেখা অবিচুয়ারি (ঢাকা ট্রিবিউন)

    http://www.dhakatribune.com/op-ed/2014/aug/17/valley-death

    today's paper - op-ed - published: 00:19 august 17, 2014 - updated : 14:59 august 17, 2014

    In this valley of death
    Garga Chatterjee

    One’s life experiences continually create and recreate the vessel one calls the 'personal'

    Damn your cars and shopping malls / When the naked labourer of the soap factory will rise up in anger / You’ll be fixed.

    These lines of poetry are from a novel written by a person who died last month. At a time when much of the subcontinent takes car sales figures as its symbol of prosperity and shopping mall footfalls as its lifestyle-boosting symbol, these lines sound particularly discordant in the development party that has been going on for many full-moon nights now. The author was a professional party pooper. In fact, he wished pox on such parties and parties that supported such parties.

    There is a particular kind of phenomenon that leaves you changed once you encounter it. The change may not be the same for everyone – it typically isn’t. One’s life experiences continually create and recreate the vessel one calls the “personal.”

    Nabarun Bhattacharya, the Bengali author and poet who died on July 31, 2014, was one such. He was 66 when he died. His literary career bloomed late and was relatively short. And in that what he produced, and the readers he changed, have ensured he will not be forgotten. His death brought a spontaneous outpouring of sadness from many.

    Huge halls were filled in his memorial meetings that were termed as meetings of solidarity and not of condolence. This peculiar and special role of the author as the locus of social conscience and critique still has significant currency in Bengal. The patronage styles of the TMC and the CPI(M) is a testament to that.

    Nabarun not only shunned these two major parties till the very end, he used the choicest expletives to expose the brutality of the political system that these parties have helped nurture. He was published and immortalised by small independent publishing houses till the very end.

    This is not easy in Bengal for any author, especially if one shuns the media behemoth that actually claims to be one of the poles of political power in West Bengal. Nabarun’s dead body was covered in the red hammer and sickle flag – not from any specific party, in sharp contrast to the competitive necrophilia that big parties have indulged in, so as to co-opt the appeal to the dead one.

    In Nabarun’s case, neither the CPM nor the TMC or the BJP or the Indira Congress for that matter claimed him to be one of their own. He was too dangerous in life and could be unpredictable in death. He could explode like the dead body of Herbert Sarkar, one of the many unforgettable fictional characters he had created. This specific one had won him a Sahitya Academy award. Near the red flag on his dead body was the black flag of anarchists.

    Almost universally misunderstood, many associate his literary works with a flavour of anti-authoritarian libertarian socialism with a special emphasis on the creed of the deed. They don’t make them like him nowadays. For the sake of the world and exiled, impolite, dangerous sensitivities, I hope that the world is pregnant with people like him.

    Born to author and activist Mahashweta Debi and theatre personality and actor Bijon Bhattacharya, Nabarun grew up with his father after Mahashweta Debi left the father-son duo to live alone when the child was in his teens. When I was in Shahbagh in early 2013 during the historic protest movement, I saw a famous line from one of Nabarun’s poems being used as a slogan in a poster Ei Mrityu Upotyoka Amar Desh Na (This Valley of Death Is Not My Country).

    His fans span the Bengals and beyond, as evidenced from the outpouring of grief and solidarity from Bangladesh. To me, his greatest intervention was the invention of beings called fyatarus, who are humans with the ability to fly and with a penchant for disturbing power relations.

    The fyatarus came into their own especially when they sought to expose and vilify the hypocritical, pretentious and perfumed “cultured society” of urban elites. Kanaal Maalshaat (War Cry of the Beggars), Mausoleum, Fatarur Bombachak and Fyatarur Kumbhipak are the four books that feature fyatarus.

    In Kangal Malshat, fyatarus work under a even superior set of beings called Choktars to initiate a once in 300 years war against oppression – in this case, an urban guerilla war fought using magic, rusted canons, and smelly trash against the police of the CPI(M)-led Left Front government. While his writings had many layers, a particular layer was most cherished and best understood by those who, for long, had a radical critique of the CPI(M) before the year 2000.

    To them, the CPI(M) had not degenerated, it had always been a degenerate force. There is this particular edge to Nabarun’s work that is almost a private conversation of this political community.

    Apart from his Fyataru series, Lubdhak (Bengali name for the dog-like celestial constellation) is a touching characterisation of the human urbanity from the standpoint of non-human inhabitants of a city (cats and dogs) – Kolkata, in this case. The insurrection of dogs of the city and how that unfolds is a searing critique of the anthropocentrism of the modern man (and woman).

    His other major works like Ei Mrityu Upotyoka Amar Desh Na, Andho Beral, Halaljhanda o Onyanyo and Herbert have enriched the literature of man, helping many of us to look bottom up between our own legs at the dirt we hide in our pubic creases and then look at ourselves at the mirror, anew.

    Are the trees feeling cold like this /are the dogs feeling cold like this / Roads, cinema-halls, tube-wells / restaurants, beauty parlours / Are they all feeling cold like this / Or is it just me?

    AUGUST 1, 2014
    Poet Nabarun Bhattacharya dies
    Garga Chatterjee is a freelance contributor. He can be followed on twitter @gargac
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন