এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কারাগার, বধ্যভূমি ও একঝাঁক স্মৃতি বুলেট

    kallol
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ | ১৩৩৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • m | 67.173.95.163 | ১৪ নভেম্বর ২০০৬ ০৩:০৪695843
  • অ্যাক্স,
    ওটা শুনে ইশান কেমন গায় বোঝা মুশকিল।ওটার তুলনায় ও সত্যি ই তিনগুণ ভালো গায়:))))
  • a x | 192.35.79.70 | ১৪ নভেম্বর ২০০৬ ০৩:১১695844
  • কি গান? কোন গান? আমি কোত্থেকে? ঈশান তো আমারে কোনোদিনো নিরিবিলিতে গান শোনায় নি।
  • m | 67.173.95.163 | ১৪ নভেম্বর ২০০৬ ০৩:১৫695845
  • অ্যাক্স,
    আমি ভাবলাম,দময়ন্তী বোধহয় তোমাকে ইশানের গান পাঠিয়েছে,তাই সতর্ক করে দিচ্ছিলাম:))) সরি।
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৪ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:২৫695846

  • মিলে গেছে, ঠিক ঠাক। আমিই সে।
    কোথায় শুনলে ?
    ওটা - লাল নীল হলদে সবুজ চশমায় চোখ ঢেকো না।
  • Arjit | 128.240.229.67 | ১৪ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:৩১695847
  • আমিও গান শুনবো। ইশেনের নয়, ওটা শুনেছি - মানে যেটা দমু দিছিলো, অন্য থাকলে অবশ্যই শুনবো। আর কল্লোলদার শুনবো।
  • J | 160.62.4.10 | ১৪ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:৪১695848
  • হ্যাঁ হ্যাঁ গান হোক গান হোক।
    ও কল্লোলদা, আর বাকী কিস্তিগুলো কই?
    আমি তো ফ্যান হয়ে গেলাম।
  • Ishan | 130.36.62.140 | ১৪ নভেম্বর ২০০৬ ২৩:৪৮695849
  • আরে পাগলা তো, আপনাকে তো চিনি ও তার মানে। মানে চোখে দেখা আর কি।
  • indo | 221.134.58.72 | ১৫ নভেম্বর ২০০৬ ১০:২৫695850
  • ও, আপনি আমাদের গাইয়ে কল্লোলদা? আপনার গান শুনেছি তো প্রেসিডেন্সীতে-কমপক্ষে দুইবার। প্রতিবাদী ও লোকগানের আসরে।
  • bhabuk | 209.209.248.9 | ১৭ নভেম্বর ২০০৬ ০৪:৩২695851
  • আমি গুরু 'র এই পাড়ায় নতুন। সাধ্য ছিলনা ভিতরে ঢুকি। ভয় ও ছিলো। আজ কপাল ঠুকে ঢুকে পড়লাম। আম্মো শুনবো কল্লোল-দা'র কথা।
  • m | 67.173.95.163 | ১৭ নভেম্বর ২০০৬ ০৯:৫২695853
  • কল্লোলদা,
    আমি প্রেসিডেন্সীতে আপনার গান শুনেছি,তাছাড়া যাদবপুরে,ছোট ঘরোয়া আসরে শুনেছি বলে মনে পড়ছে।
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৩:৩৩695854
  • অন্যদিকে কানুদার (কানু সান্যাল) নেতৃত্বে জঙল সাঁওতাল, কেশব সরকার, কদম মল্লিক, খোদন মল্লিক, খেমু সিং, পাঞ্জাব রাও, কৃষ্ণমায়া রাও, শিলা কিষান, বিগল কিষান, ফুদন কিষান, কুমার কিষান, খোকন মজুমদার, সাবিত্রী দাসের মতো পার্টির শ্রমিক-কৃষক কর্মীরা, নক্সালবাড়ি, খড়িবাড়ি, হাতিঘিষা, ফাঁসীদেওয়া এই পুরো অঞ্চল জুড়ে জঙ্গী কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করতে শুরু করেন। এই আন্দোলনের রূপও ছিলো সশস্ত্র, কিন্তু এদের কাজের ধরন ছিলো চটেরহাট-ইসলামপুরের থেকে আলাদা। এঁরা সিদ্ধান্ত নেন : জোতদারদের জমি দখল করে তা ক্ষেতমজুর আর গরীব কৃষকদের মধ্যে বাঁটোয়রা করা। জোতদারদের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে সশস্ত্র কৃষক বাহিনী তৈরী করা। জোতদারদের কাছে থাকা জমির দলিল আর ঋণের কাগজপত্র জ্বালিয়ে দেওয়া।
    ১৯৬৭ মে। খড়িবাড়ি অঞ্চলের কুখ্যাত জোতদার নগেন রায়চৌধুরীর বাড়ি ঘেরাও করেন দুহাজার কৃষকের এক সশস্ত্র বাহিনী। সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কানুদা, কদম, খুদন আর পঞ্চানন সরকার। বাড়ির ভিতর যে ঘরে দলিলপত্র থাকে সেই ঘরের দখল নিয়েছেন সশস্ত্র কৃষক বাহিনী। যুগ যুগ ধরে যে কাগজের তাড়াগুলি কৃষকদের ভূমিদাস বানিয়ে রেখেছিলো, সেই সব কাগজ টেনে উঠোনে জমা করলেন তারা। আর তারপর শুরু হলো মুক্তির যজ্ঞ। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো দাসত্বের কাগুজে শিকল। দোতলার জানালা দিয়ে গুলি চালায় জোতদার নগেন। জনা কয়েক কৃষক জখম হন। গর্জে ওঠে নক্সালবাড়ির মুক্ত কৃষক চৈতন্য। পালাতে চায় নগেন। তাড়া করে তাকে ধরে ফেলে কৃষক বাহিনী। কৃষকদের আদালতে বিচার হয় তার। তার অতীতের সমস্ত কুকীর্তির জবাবাদিহি চাওয়া হয়। মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করে আদালত। যদিও তার বাড়ির অন্য কারুর গায়ে একটা আঁচড়ও লাগেনি।
    ভারতের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে সংযোজিত হচ্ছিলো আর একটি গৌরবময় অধ্যায়।
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৮:৩১695855
  • এই ঘটনার পর পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায়।
    ওরা বলেছিলেন গণআন্দোলনে পুলিশ যাবে না। ফলে কৃষকরা ভেবেছিলেন ক্ষমতায় যখন আমাদের সরকার তখন আর যাই হোক পুলিশ কৃষকের ওপর লাঠি গুলি চালাবে না। সেদিনও কেউ কথা রাখে নি।
    পুলিশের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় কৃষক সমিতি ঠিক করে গ্রামে পুলিশ ঢুকতে দেওয়া হবে না। সশস্ত্র কৃষক বাহিনী দিনরাত গ্রাম পাহারা দিতে শুরু করে।
    তীর ধনুক, টাঙ্গী, বল্লম আর জোতদারদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া বন্দুক নিয়ে প্রায় দুহাজার চা বাগানের শ্রমিক আর নক্সালবড়ি-খড়িবাড়ির কৃষক যোদ্ধা মিলিত ভাবে ঘিরে রাখে গ্রামগুলো।
    ১৯ মে ১৯৬৭, সকাল ৮টা-৯টা। পুলিশ ঝরুজোত গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে। খবর পৌঁছে যায় দাবানলের মত দ্রুত। নারী-পুরুষের মিলিত চার পাঁচশ জনের সশস্ত্র মিলিশিয়া ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল। স্লোগান উঠলো "পুলিশ কুত্তা হোশিয়ার মজ্‌দুর কিষান হ্যায় তৈয়ার"। তদের সাথে পালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তৈরী কুড়ি পঁচিশটা গ্রামের কুকুর। পিছু হঠল পুলিশ।
    ২২ মে। পুলিশ আবার চেষ্টা করে। আবারও ব্যর্থ হয়।
    ২৩ মে। পুলিশ আসে। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে। তারপর ফিরে যায়।
    ২৪ মে। ট্রাকে ট্রাকে পুলিশ আসে এবার। জবরদস্তি ঢুকে পরে গ্রামে। জয়ের আনন্দে মাতাল ও.সি সোনাম ওয়াংদি আর ছয়জন এস.আই বড় সাহেবদের জানাতে ছোটে তাদের বিজয় কাহিনী। এক রেলগেটের কাছে তারা অন্যান্য গ্রাম থেকে আসা সশস্ত্র কৃষক বাহিনীর সামনে পড়ে যায়। কৃষক জনতা ঘিরে ফেলে পুলিশের দলটাকে। তীরের ঢেউ আছড়ে পড়ে। এফোঁর-ওফোঁর হয়ে লুটিয়ে পরে ও.সি সোনাম ওয়াংদি। সার্ভিস রিভলভারে হাত রাখার সময় দেয় নি বীর কৃষকেরা।
    ২৫ মে ১৯৬৭। খবর আসে জয়সিং জোত আর ঘুঘুঝোড়ায় পুলিশ ঢুকছে। ব্যাঙ্গাই জোত আর প্রসাদু জোতের পুরুষ কৃষকেরা দৌড়ে আসেন। মেয়েদের তৈরী হয়ে আসতে বলা হয়। মেয়েরা প্রসাদু জোতের ইস্কুলের সামনে জমায়েত হচ্ছিলেন। কালান্তাক ঝড়ের মতো ছুটে আসে পুলিশের ট্রাক। চলন্ত ট্রাক থেকে যথেচ্ছ গুলি চালানো হয় ঐ মহিলা ও শিশুদের ওপর। এগারোটি প্রান বরণ করে শহীদের মৃত্যু।
    সারা দুনিয়া তোলপাড় করে নক্সালবাড়ি থেকে গর্জে ওঠে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ।

    কলকাতায় সি.পি.এম-এর কিছু নেতা, সুশীতল রায়ে্‌চ±ধুরী, প্রমোদ সেনগুপ্ত(দাশগুপ্ত নয়), তারক দাস(এঁর কথা আগে বলেছি), অসিত সেন, পরিমল দাসগুপ্তেরা আর অসংখ্য কর্মী মিলে তৈরী করলেন "নক্সালবাড়ি সংগ্রাম সহয়ক কমিটি"। চিন পার্টি এবং চেয়ারম্যান মাও ঘোষনা করলেন "এই স্ফুলিঙ্গ দাবানলে পরিণত হবে"। অজিতদা (অজিত পান্ডে) গান বাঁধলো, তরাই কান্দে গো / কান্দে আমার হিয়া / আর নক্সালবাড়ির মাঠ কান্দে গো / সপ্ত কন্যার লাগিয়া। রাঙ্গা হলো কার বা খুনে / কোন বাঁশের কেল্লা লাল / কোন তিতুমীরের রক্তে ভেজা / তরাইয়ের কপাল। দুধের বাছা ঘুমের ঘোরে / খুঁইজা ফিরে মা / আর তরাইকন্যা হাঁইক্কা বলে / তোমরা আর ঘুমায়ো না। চারুবাবুকে এই গান শোনানো মাত্র অজিতদার কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বলেছিলেন, "অজিত, তরাই কাঁদছে না, তরাই জ্বলছে। কথা পাল্টে দিলো অজিতদা। "তরাই জ্বলছে গো / জ্বলছে আমার হিয়া / আর নক্সালবাড়ির মাঠ জ্বলে গো / সপ্ত কন্যার লাগিয়া"।
    অনেক পরে যখন আমরা পরাজায়ের ভাঙ্গা পাঁজর মশাল করে জ্বালিয়ে সেই অন্ধকার সময়ে পরাজয়ের কারন খুঁজছি, তখন পুরোনো গানটাই উঠে আসত - তরাই কান্দে গো??????.
  • sucheta misra | 202.63.56.114 | ১৮ নভেম্বর ২০০৬ ০১:৫০695856
  • কল্লোল,

    আপনার এই লেখা পড়ার জন্য বারবার আসছি। ঐ গানের পুরোটা কি মনে আছে? কোথায় পাওয়া যাবে? আপনাকে যোগাযোগ করতে চাই, আপনার অসুবিধে না থাকলে। লিখবেন? এখানে

    [email protected]
  • DB | 71.138.241.60 | ১৮ নভেম্বর ২০০৬ ১২:৫১695857
  • বাঙ্গালীর মধ্যে নেতাজীর,ক্ষুদিরাম এর জিন রয়েছে।
    ইন্‌ক্‌লাব জিন্দাবাদ!
    কল্লোল্‌দা চালিয়ে যান,বই লিখুন আমরা কিনবো কথা দিলাম
    জয় হিন্দ
  • kallol | 203.101.18.107 | ১৮ নভেম্বর ২০০৬ ২০:০৬695858
  • সুচেতা.... কোন গান ? তরাই ? তাহলে ওটাই পুরোটা। 17 Nov 2006 -- 06:31 PM-এর পোস্টটায় য্‌টা আছে।

  • a x | 208.49.111.100 | ১৯ নভেম্বর ২০০৬ ০৯:৩৮695859
  • কল্লোল, এই লেখা গুলো, এই ভাবনাগুলো এইভাবে আমাদের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য কি বলা উচিৎ জানিনা। ধন্যবাদ বললে পাতি শোনাবে। পড়তে পড়তে মনে হয়, ইতিহাস না, ফেলা আসা সময় না, যেন এই মুহুর্তে ঐ সময়ে দাঁড়িয়ে তুমি বলছ। যে অল্প কিছুদিন এখানে আসছি তার মধ্যে, এই লেখাগুলো বোধহয় সবচেয়ে বড় ব্যাক্তিগত পাওয়া আমার।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২১ নভেম্বর ২০০৬ ১৪:২৮695860
  • নক্সালবাড়ি সংগ্রাম সহায়ক কমিটি ছিলো মূলত: পশ্চিম বাংলা ভিত্তিক। কিন্তু নক্সালবাড়ির খবর ছড়িয়ে পড়ল দ্রুত। সারা ভারত জুড়ে তখন বসন্তের আগমনী বেজে উঠেছে নক্সালবাড়ির বজ্রনির্ঘোষে। বিহারে মুসাহারি, পুন্‌পুন, অন্ধ্রে শ্রীকাকুলাম, ওয়ারাঙ্গল, পশ্চিম বাংলায় ডেবরা, গোপীবল্লভপুর, কাঁকসা, .............
    তৈরী হলো সারা ভারত কমিউনিষ্ট বিপ্লবী কোঅর্ডিনেশন কমিটি। সুশীতল রায়চৌধুরী তার আহ্বায়ক। অন্ধ্রের নাগী রেড্ডি থেকে কাশ্মীরের সরাফ থেকে
    বিহারের সত্যনারায়ন সিং কে নেই তাতে। নানান তাত্বিক লড়াই চলছে। লড়াইয়ের কায়দা নিয়ে, ভারত রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিত্র নিয়ে, প্রধান শত্রু চিহ্নিতকরণ নিয়ে.....। এরই মধ্যে চরুববু গেলেন অন্ধ্রে শ্রীককুলামের কমরেডদের ডাকে। ফিরে এসে বললেন শ্রীকাকুলমের কৃষক কমরেডরা চাইছেন - পার্টি গড়ে উঠুক। নাগী রেড্ডিরা, কানাইবাবুদের দক্ষিণ দেশ গোষ্ঠী (পরে যাঁরা এম.সি.সি গড়লেন) একমত হলেন না। এঁদের বাইরে রেখেই ১৯৬৯ - ২২ এপ্রিল তৈরী হল সি.পি.অই.(এম এল)।
    ১৯৬৯ ১লা মে। শহীদ মিনারের জনসভায় কানু সান্যাল পার্টি গঠনের ঘোষনা করলেন।
    তখন সময় ছিলো আগুন জ্বালার।
    কৃষকরা অস্ত্র হাতে উঠে আসছেন, তাঁদের রক্তে বোনা ধানের, ঘাম ঝরানো জমির দখল নিতে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঙ্কÄল তরুণেরা তাঁদের মধ্যবিত্ত বিলাসের মুখে লাথি মেরে গ্রামে যাচ্ছেন কৃষকের সংগ্রামে সাথ দিতে। প্রেসিডেন্সি থেকে অসীম, সব্যসাচী, রনবীরদের দল কাঁসাই নদী পেরিয়ে গেল ডেবরা, গুনাথদা (গুনধর মূর্মূ) নিতাইদা (নিতাই দাস) ভবদেবদার (ভবদেব মন্ডল) নেতৃত্বে কৃষক সংগ্রামে অংশ নিতে। রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ থেকে সন্তোষ, জয়শ্রী, তালতলার মেঘনাদদের দলটা গেল গোপীবল্লভপুরে লেবা টুডুদের সাথে লড়াইয়ে।
    খবর আসছে শ্রীকাকুলামের। পুলিশের সাথে লড়াইয়ে জান কবুল করেছেন পঞ্চাদ্রী আর নির্মলা কৃষ্ণমূর্তি । প্রেসিডেন্সির দীপেশ-গায়েত্রী-গৌতমরা (হ্যাঁ, দীপেশ চক্রবর্তি, গায়েত্রী স্পিভাক, গৌতম ভদ্র) রাস্তা কাঁপিয়ে স্লোগান তুলছেন ""প্রতিবাদে প্রতিরোধে প্রতিশোধে কমরেড-গড়ে তোল গড়ে তোল গড়ে তোল ব্যারিকেড""। ব্যারিকেড তৈরী হচ্ছে কলেজ স্ট্রিটে। দাউ দাউ জ্বলতে থাকা পুলিশের গাড়ির আড়াল থেকে ঘৃণা হয়ে ফেটে পড়ছে বোমা। মাটিতে পড়ে ধোঁয়া বেরোনো টিয়ার গ্যাসের শেল ছুঁড়ে পুলিশের বেষ্টনিতে ফেরৎ পাঠাচ্ছে আজিজুল। ব্যারিকেডে বসে গান বাঁধছে দীপেশ ""শ্রীকাকুলাম জ্বলিছে, আমার বুকে তার আগুন নিভে যাবে না/নির্মলা বোন আমার, সুখে ঘুমাও রাবনরাজা তোমায় চুঁতে পাবে না।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২৩ নভেম্বর ২০০৬ ১৩:১৪695861
  • ১৯৭৩। ফিরে এলাম কলকাতায়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ , অমার তিন বছরের নির্বাসনের মেয়াদও শেষ। ৭১ থেকে ৭৩ খড়্‌গপুরের দক্ষিণে হিজলী আই আই টি ক্যাম্পাসে ছিলাম এই তিন বছর। পড়তাম হিজলী হাই স্কুলে। তখন ১০ ক্লাশে ভর্তি হওয়া মানেই "কেস খাওয়া পাবলিক"। ফলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই হলো বেশী। লোকে যেচে এসে আলাপ করত। প্রচুর বন্ধু এবং বান্ধবী। সেই প্রথম আমি কো-এড স্কুলে। ঐ বয়সে (সুকান্ত ভট্টাচার্যের ১৮ বছর বয়সের চেয়েও মারাত্মক ১৫/১৬) হঠাৎ করে এতোগুলো সমবয়সী মেয়েদের সাথে এক ক্লাশে..... কিন্তু সকলেই কেমন বন্ধু হয়ে গেল। এর আগে মেয়েদের সংসর্গে অস্বস্তিতে থাকতাম। আসলে আমাদের বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা,খেলাধূলা সবই বড় বেশী নারী বিবর্জিত ছিলো। ৬০ এবং ৭০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমাদের সমবয়সী মেয়েরা আমাদের পাত্তাই দিতো না। তারা, কোন জাদুবলে কে জানে, আমাদের থেকে বড়ো হয়ে যেতো। ফলে সমবয়সী কোন মেয়ের সাথে আলাপ হয়ে গেলে, সেটা এমন পরম সৌভাগ্য বলে বোধ হতো, যে ময়ূর-বোধে আক্রান্ত হতাম। ময়ূর-বোধ হলো, সদা সর্বদা প্যাখম মেলে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা। এক একজনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এক একরকম দাঁড়াতো। বাঙ্গালী কিশোর তখন সবে শুকতারা-সন্দেশ-কিরীটী রায়-স্বপনকুমার-আম আঁটির ভেঁপু বড়োজোর লুকিয়ে শরৎচন্দ্র ছেড়ে সুকান্ত-সুভাষ-শক্তি-সুনীলে পা রেখেছে। এবং সময়ের পাল্লায় পড়ে ''ভালোবেসে চলে এসো / দিগন্তে মিছিল হাঁক দেয় / হাতে রেখো হাত / আর রক্তকরবী ও খোঁপায়........."" গোছের সাম্ভাব্য নোবেলজয়ী কবিতায় হাত মক্সো করছে। তাই সেই কিশোরীটির স্কুল ব্যাগে দিনে দশটা ""হয়তো"" প্রেমপত্র জমা হতো। ""হয়তো"" বললাম, কারন তাতে প্রেম ছাড়া আর সবই থাকতো - লেনিন থেকে মাও হয়ে চে..... আর ""এই পচাগলা সমাজটাকে শিকড়সমেত উপড়ে"" ফেলার শপথ হাতে হাত রেখে উচ্চারনের প্রাণগত-মনগত নিদারুণ ইচ্ছে। হাতে হাত রাখার চাইতে বেশী কিছুর চিন্তাও সে সময়ে ""বুর্জোয়া"" বলে গন্য হতো।
  • kallol | 125.23.77.222 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৩:২৯695862
  • কলকাতায় এসে দেখি ব্যাপার "পুঁদেচ্চরী" (যারা টেনিদা পড়ো নি তদের জন্য - পুঁদেচ্চরী মনে সাংঘাতিক গোলমেলে - এটা ফরাসী শব্দ - টেনিদা উবাচ)। পুরোনো বন্ধুরা অনেকেই নব-যুব কংগ্রেসে। তদের যুক্তি - সিপিএমের সাথে যাদের দুশমণি তারা আমাদের দোস্ত। তাই কংগ্রেস। কেনো, মাও বলেলনি, শত্রুর শত্রুর আমার বন্ধু? (মাও এর নামে আর কতো !!!)। এরাই সিপিএম কর্মীদের পাড়াছাড়া করার মূলে। সিপিএম তখন এদের একটা নতুন নাম দিয়েছিলো"কংশাল"।
    একদম সঠিক নাম। ঐ বন্ধুদের সাথে আর সম্পর্ক রাখার কোন তাগিদ বোধ করিনি। ঐ প্রাক্তন বন্ধুরা যে জীবন যাপনে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছিলো তাতে খুব কষ্ট পেতাম, বুঝতে পারতাম না, একটা বিপ্লবী রাজনীতির সংস্পর্শে এসেও, ঐভাবে নিজের জীবন বিপন্ন করেও, এই যাপনকে ওরা কিভাবে মেনে নিচ্ছে। আমার নিজের চোখে দেখা, কিভাবে সোদপুরের রতন বা বিরাটির অতুল বা চন্ডীতলার বিকাশ (নাম আর জায়গা গুলো ইচ্ছে করেই বদলে দিলাম) কাঁধের ঝোলা ব্যাগে বোমা নিয়ে সিআরপির গুলির মুখে দাঁড়িয়ে-ও বোম চার্জ করে যাচ্ছে। একটা গুলি বা ঐ বোমা ভরা ব্যাগে একটা অসাবধানী ঝাঁকুনি, মানুষটার নামের ডগায় চন্দ্রবিন্দু বসিয়ে দিতে পারে। তারা কি করে পারলো শুধু দাদা সিপিএম করার অপরাধে মায়ের সামনে বোনকে বেআব্রু করতে!! খোঁজ করেছিলাম অন্যদের যারা "কংশাল" হয়ে যায় নি। কেউ কেউ একদম সরিয়ে নিয়েছে নিজেকে নানা অজুহাতে - "এই শ্বেত সন্ত্রাসের মাঝে কিচু করতে যাওয়া বোকামী" , "লেনিনের এক পা আগে - দুই পা পিছে" (এবার লেনিনের নামেও !!!) বা "সংসারটা চালাতে হবে তো" ইত্যাদি। সংসার চালানোর যুক্তি তবু বোঝা যায়। অনেকেই স্কুলে-কলেজে পড়তে পড়তে "বুর্জোয়া শিক্ষাব্যবস্থা"কে "লাথি" মেরে চলে গিয়েছিলেন। পরে জেল থেকে বা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ফিরে পেট চালানোর লড়াইয়ে কোনোমতে নিজেকে এবং পরিবারকে টিঁকিয়ে রাখার জন্য, অন্য কোনোদিকে তাকানোর ফুরসতও পাচ্ছিলেন না। খুব অসহায় লাগতো। কি করি না করি এইসব ভাবতে ভাবতে সাউথ সিটি কলেজে কমার্সে ভর্তি হলাম।
  • J | 160.62.4.10 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৪:০৪695864
  • কল্লোলদা,
    জাস্ট অসা। থেমে যাবেন না। আমরা পড়তে উদ্‌গ্রীব।
  • kallol | 125.23.77.222 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৫:১২695865
  • মোটামুটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসায়, আমি হয়তো সেইসব বন্ধুদের তুলনায় সুবিধাভোগী অবস্থানে ছিলাম। মাথার ওপর ছাদ, দুবেলা খাবার জুটে যেতো। কলেজের মাইনে বা বইয়ের টাকাও আমার পরিবারই জুগিয়েছে। তবু টিউশনি ধরলাম। তখন কোনো স্কুলের শিক্ষক না হয়েও বা কোনো কোচিং প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত না হয়েও টিউশনি পাওয়া যেতো। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবের সূত্রে গোটা তিনেক টিউশনি করতাম। সব মিলিয়ে ১৩০ টাকা পেতাম। তাই দিয়ে চা-সিগারেট, সিনেমা আর যাতয়াতের পয়সা - চলে যেত।
    লেক ক্যাম্পের বাবলু ছাড়া পেয়ে এক ডেকরেটারের কাছে কাজ করতো। প্যান্ডেল বাঁধা থেকে শুরু করে হিসেব রাখা (যেহেতু ওর অন্যান্য সহকর্মীদের চাইতে ও বেশী শিক্ষিত) সব করতে হতো। বাবলুর সাথে হঠাৎই রাস্তায় দেখা। বাঁশ ভর্তি একটা ঠ্যালাগাড়ি ঠেলছিলো অন্য আরও দুজনের সাথে। আমি ডাক দিতেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমার সাথে কলেজের নতুন বন্ধুরাও ছিলো। তারা প্রথমটায় একটু ঘাবড়ে গেলেও, তারপর মজাই পেলো। ওরা সকলেই খুব শ্রান্ত ছিলো। ভবানীপুর থেকে ঢাকুরিয়া বাঁশ ভর্তি ঠ্যালার ঠ্যালা সহজ কথা নয়। আমরা একটা চায়ের দোকানে বসলাম। বাবলুটা তো কেঁদেই ফেললো। অনেক প্রাক্তন বন্ধুই ঠ্যালার ঠ্যালায় বাবলুকে দেখেও দেখেনি। একজন নাকি সোজা "চিনতে পারলাম না" বলে সাদা মুখ করে চলে গেছে। বাবলুর সাথে নানান বিষয় নিয়ে কথা হলো। বাবলু আর আমি একমত হলাম , গণসংগঠন না করা ভুল ছিলো। কিন্তু "খতম"-এর প্রশ্নে আমদের মতের মিল হলো না। বাবলুর মত রণকৌশল হিসাবে "খতম" ভুল নয়। তবে গরীব ট্রাফিক কনস্টবেল খুন করা বা সিপিএম-এর কর্মী বলে সাধারন মানুষকে হত্যা করা ভুল ছিলো। আমি নীতিগতভাবে "খতম"-এর বিরুদ্ধে। একজন বা একদল মানুষকে শারিরীকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। লড়াইটা রাজনৈতিক। বিপ্লবে রক্ত ঝড়বেই, কিন্তু তা যদি রাজনৈতিক ভাবে আমাদের সাধারন মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় সেই হিংসা ভুল।
    মিথ্যে বলবো না, কলেজের বন্ধুদের কাছে প্রায় হিরো বনে যাবার অবস্থা। তারা কোনদিনই রাজনীতিতে যুক্ত হয় নি (একজন ছাড়া - তার কথায় পরে আসছি), তাই, একতো ঠ্যালাওয়ালা বন্ধু, তারওপর সে ঠ্যালাওয়ালা মার্কস-লেনিন-মাও আওড়ায়। তারা যাকে বলে ছিটকে ছাপ্পান্ন।

  • d | 202.54.214.198 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৬:১২695866
  • টেনিদার কথাটা "পুঁদিচ্চেরি'।
  • kd | 59.93.212.110 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৬:১৫695867
  • ভাই কল্লোল, তোমার লেখা পড়ছি আর একটা অচেনা দুনিয়ার দরজা খুলে যাচ্ছে - এই সময় দেশে না থাকাতে কিছুই শুনিনি (except occasional obviously biased comments)। তোমরা guided না misguided তা বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই (কারও কি আছে?), তবে তোমাদের effort parallels সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। এটাও কী স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল না - যা এখন IRA বা প্যালেস্টাইনীরা করছে (আমি ঠিক-ভূল জানি না)। Please লিখে যাও, আমার পরের জেনারেশন কিসের মধ্যে (প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে) দিয়ে গিয়েছিলো, শিখছি।

    একটা অনুরোধ করছি, তুমি যদি জানো। জানলেও কোন রকম অসুবিধে থাকলে উত্তর দিও না। আমার কলেজের এক প্রিয় বন্ধু ত্বিশানপতি BECতে ME করতে করতে এইব্যাপারে জড়িয়ে যায় - আমি ৭২ আর ৭৪এ কলকাতায় এসে ওকে খুব খুঁজেছি, without any success - কেউ কিছু বলতে পারেনি (বা বলতে চায়নি, অন্তত: আমার তাই মনে হয়েছিল উত্তরের ধরণ দেখে)। তারপর যা হয়, ওকে পুরো ভুলে গেছি - তোমার লেখা পড়ে আবার ও আবার আমার মনে ফিরে এসেছে - তুমি কী কিছু জানো ওর whereabouts?
  • kallol | 125.23.77.222 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:৩৮695868
  • এতে একটা ভালো হলো। বন্ধুরা অনেক কাছের হয়ে গেলো। আমাদের মধ্যে একটা আশ্চর্য্য ভালোবাসার বৃত্ত গড়ে উঠলো। আজও আমরা একে অন্যের সান্যিধ্যে উদ্ভাসিত হই।
    আমরা বাবলুদের বাড়িতে যেতে শুরু করলাম। বাবলুর মা প্রচন্ড ভালোবাসতেন আমাদের। গেলেই মুড়ি-পেঁয়াজ-লঙ্কা মাখতেন। ঐরকম মুড়ি মাখতে আর কেউ পারে নি। উনি কাগজের ঠোঙ্গা বানাতেন। আমরা বাড়িথেকে প্রায় চুরি করেই পুরোনো খবরের কাগজ লুকিয়ে নিয়ে আসতাম যাতে ওঁর ঐ পয়সাটা বাঁচে। আমি আর শানু তো ভালো ঠোঙ্গা বানানো-ও শিখে গেছিলাম। সমীরদের জগুবাজরে দোকান ছিলো। ও, ওর বাবাকে বলে ওদের দোকানের সব ঠোঙ্গা মসীমার থেকে নিতো। পরে আরও তিন চারটে দোকানে বন্দোবস্তো করে দিয়েছিলো।
    বাবলুদের বাড়িতে আর একটি ছেলেও আসতো। গোলাম মহম্মদ রোডের নেড়ু। ও তখনও বাড়িছাড়া। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ক্যানিং লাইনে কোনো একটা গ্রামে কৃষক সংগঠন করতো। খুব তর্ক হতো আমাদের।
    আমার মত ছিলো : আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিবিপ্লবই পথ, কিন্তু সেটা চীনের রাস্তায় নয়। চীনের মতো গেরিলা লড়াইয়ের বা দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-ভৌগলিক অবস্থান ভারতের নয়, ১৯৬৭-তেও তা ছিলো না। রাজনৈতিক অবস্থার পার্থক্য আকাশ পাতাল। চীনে, গণতন্ত্র বলে কোনো বস্তু বিরাজ করত না। নির্বাচন কি জিনিস চীনা জনগন কস্মিনকালেও তা দেখে নি। ফলে খারাপ সরকার পাল্টাতে গেলে অস্ত্র ধরা ছাড়া পথ নেই, এটা তাঁরা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছেন। এখানে কংগ্রেস পাল্টে যুক্তফ্রন্ট আসে। সেটা শুধু ৬০-এর দশকের কথা নয়। ৫৭-তেই কেরলায় নাম্বুদ্রিপাদরা ক্ষমতায় এসেছিলেন। ক্ষমতায় তাদের থাকতে দেওয়া হবে না, সে তো জানাই কথা। ক্ষমতাচ্যুত হলেই লড়াই শুরু হবে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার। সেই রাজনৈতিক দাবীর লড়াইয়ের সাথে যুক্ত হবে কৃষকদের জমির মালিকানার লড়াই, শ্রমিকের কারখানা দখলের লড়াই। তার আগে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-যুব সংগঠনগুলিকে সশস্ত্র করে তুলতে হবে গোপনে। পার্টিকে একই সাথে প্রকাশ্য ও গোপন কর্মসূচী চালু রাখতে হবে।
    যোগযোগ ব্যবস্থায় সেদিনের চীনের চেয়ে ৬৭-র ভারত অনেক এগিয়ে ছিলো। মিলিটারীর পক্ষে অতি দুর্গম গ্রামেও পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব ছিলো না। যেটা সেদিনের চীনে কুয়োমিংটাং বা জাপানীদের পক্ষেও সম্ভব হয় নি। তাই ঘাঁটি এলাকা গড়ে গেরিলা লড়াইয়ের মাধ্যমে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরা সম্ভব হয়েছিলো। সেদিনের চীনে ৬৭-র ভারতের মতো সুসংহত সরকার ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এই বিপুল সংখ্যার সেনাবাহিনী ছিলো না। তুলনায়, আমাদের হাতে জোতদারদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া গোটা কতক পুরোনো বন্দুক ছাড়া আর কোনো আধুনিক অস্ত্র ছিলো না। তড়িঘড়ি করে পার্টি গঠন করা হলো। সারা দেশের বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ হবার যে প্রক্রিয়া কোঅর্ডিনেশন কমিটি (সরকারী কর্মচারীদের সংগঠন নয়। আগের পোষ্টে এই নিয়ে লেখা আছে) শুরু করেছিলো তা সম্পূর্ণ না করেই পার্টি গড়া হয়েছিলো।
    সেই সময় দিয়ে পার্টি গড়ে তুললে, আর প্রকাশ্য-গোপন কাজের সমন্বয় ঘটাতে পারলে সারা ভারত জুড়ে গ্রাম-শহরে একসাথে অভ্যুত্থান হলে, অনেক অর্থবোধক কাজ হতো।
  • Arjit | 128.240.229.67 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:৪৩695869
  • কিন্তু এই তাড়াহুড়োটা কেন? কোন কারণ ছিলো কি?
  • r | 61.95.167.91 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৯:০৬695870
  • জোরে জোরে ভাবছি:

    "প্রকাশ্য-গোপন কাজের সমন্বয়" ঘটিয়ে "গ্রাম-শহরে একসাথে অভ্যুত্থান" ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে নতুন চিন্তা নয়। চল্লিশের দশকে, এমন কি পঞ্চাশের দশকেও এইজাতীয় চিন্তাভাবনা প্রচুর হয়েছে যার একধরনের বহি:প্রকাশ ছিল পি সি যোশী লাইন ছেড়ে রনদিভে লাইন নেওয়া। ১৯৪৮-১৯৫০ অবধি রনদিভে লাইন, তারপর রনদিভের অপসারণ। তারপর আবার রনদিভের পুনর্বাসন এবং শেষে ১৯৬৪-র তেনালি কংগ্রেস। কিন্তু তার পরেও ১৯৬৭ হল কেন? তার কারণ কি ছিল যুক্তফ্রন্ট? নকশাল আন্দোলন তো কোনো স্বয়ম্ভূ আন্দোলন নয়। কিন্তু প্রাক-১৯৬৭ সি পি এম বা অবিভক্ত সি পি আইয়ের ইতিহাস কি ভাবে নকশাল আন্দোলনের গতিপথ নির্ণয় করেছে, তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা পাই না। কেন চারু মজুমদার-সুশীতল রায়চৌধুরী-সরোজ দত্ত? কেন রনদিভে-সুন্দরাইয়া-গোপালন নন? ইতিহাস কিভাবে নেতৃত্বের নির্ণয় করল? নাকি মূলপথের কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুতি এবং বিযুক্তির ফলে সত্তর দশকের ভরাডুবি?
  • kallol | 125.23.101.240 | ২৮ নভেম্বর ২০০৬ ১৬:৪০695871
  • এই তাড়াহুড়োর ঠিক কি কারন ছিলো, জানি না। মনে হয় দীর্ঘ সময় ধরে তাঙ্কিÄক লড়াই চালানোর মানসিকতা অনেক নেতারই ছিলো না। তার উপর নক্সালবাড়ির লড়াই, শ্রীকাকুলামের লড়াই-এর চাপ ছিলো। মনে হয়েছিলো এখনই পার্টি না গড়ে তুললে, এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবার কেউ থাকবে না। আরো অনেক কিছু কাজ করেছে। ""স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল"" তঙ্কেÄ বিশ্বাসী নেতৃত্বের হয়তো মনে হয়েছিলো, লড়াই প্রচন্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। ফলে তাড়াহুড়ো। তবে ব্যক্তিগতভাবে যখন, সেদিনের নেতৃত্বে থাকা, ঐ মানুষদের সাথে পরিচিত হই (চারুবাবু আর সুশীতলবাবু ছাড়া), বারবার মনে হয়েছে, এঁরা ভারতবর্ষের মতো এরকম একটা বিশাল দেশে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবার যোগ্য নন। সে ধারনাটা আরও পাকা হয়েছে চাকরীর সূত্রে গত তিন বছর ধরে সারা ভারত ঘুরে বেড়ানোর সূত্রে। একটা প্রজেক্টে অন সাইট ট্রেনিং-ইম্পলিমেন্টেশনের কাজে কাশ্মীর আর মধ্যপ্রদেশ বাদে সমস্ত প্রদেশের বেশ প্রত্যন্ত জায়গায়, কোথাও দুমাস কোথাও চারমাসও থেকেছি। কিছুটা ভারতবর্ষ দেখেছি বলে বিনম্র দাবী করতে পারি।
  • Arjit | 128.240.229.66 | ২৮ নভেম্বর ২০০৬ ১৬:৫৭695872
  • একটা ইন্টারপ্রিটেশন কোথাও পড়েছিলাম যে চারুবাবু প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলেন বলে তাড়াহুড়ো করতে চেয়েছিলেন - এটা কি সত্যি?
  • kallol | 125.23.101.240 | ২৮ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:২৭695873
  • র-এর জোরে জোরে ভাবনা বেশ মৌলিক গোছের প্রশ্ন তুলেছে - "কেন রণদিভে-সুন্দরাইয়া-গোপালন নয়, কেন চারু মজুমদার-সুশীতল রায়চৌধুরী-সরোজ দত্ত।
    যতদূর জানি, তেলেঙ্গানার লড়াই যখন তুঙ্গে, তখন কমিনফর্মের বকলমে স্তালিনের নির্দেশ আসে লড়াই বন্ধ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। এরকম নির্দেশ সত্যিই এসেছিলো কি না কেউ জোর গলায় স্বীকার বা অস্বীকার করেন না। যতজনকে জিজ্ঞাসা করেছি (কবি সুভাষ মুখার্জি থেকে কংসারী হালদার থেকে নাগী রেড্ডি থেকে স্বাধীনতার সাংবাদিক-মিহির ঘোষদস্তিদার.....) সকলেই বলেছেন ""শুনেছি""। এবং পার্টি সেটা সবাইকে মানিয়েছে। তবে এটা ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের বৈশিষ্ট, লড়াই যখনই তুঙ্গে তখনই সিদ্ধান্তহীনতা বা পিছিয়ে আসা বা উল্টো মুখে হাঁটা। কায়ুর কৃষক বিদ্রোহ, নৌ-বিদ্রোহ , ৪২-এর ভারত ছাড়ো, ডাক-তার ধর্মঘট, তেভাগা, তেলেঙ্গানা, খাদ্য আন্দোলন....একই ইতিহাস। তাই রণদিভে-সুন্দরাইয়া-গোপালন নয়। আর ভুল হোক ঠিক হোক, বুক ঠুকে নক্সালবাড়ির সমর্থনে এগিয়ে আসা মধ্যে যে রাজনৈতিক সততা, তার ফলশ্রুতিতেই চারু মজুমদার-সুশীতল রায়চৌধুরী-সরোজ দত্ত। ভরতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে নক্সালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহ ব্যতিক্রম নয়, ব্যতিক্রম, তাকে ঘিরে যে বিপ্লবের প্রচেষ্টা - সেটা।
  • kallol | 125.23.101.240 | ২৮ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:৩৫695875
  • অর্জিত - চারুবাবু অসুস্থ ছিলেন খুবই সত্যি। তখনই পার্টি গড়ার চিন্তা, চারুবাবুর সেটাও সত্যি। কিন্তু কিন্তু কিন্তু কিন্তু.... তাঁকে নাগী রেড্ডি, কানাই চ্যাটার্জি, মনি গুহ, পরিমল দাশগুপ্ত, সঞ্জয় মিত্র-র মতো কয়েকজন ছাড়া অন্য সকলে সমর্থনও তো করেছিলেন। চারুবাবুর একার সিদ্ধান্তে কিছু হয় নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন