এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কারাগার, বধ্যভূমি ও একঝাঁক স্মৃতি বুলেট

    kallol
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ | ১৩৩৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kallol | 192.77.110.18 | ১৮ জুন ২০০৭ ১২:৩৮695598
  • তখন শরৎ যাই যাই করছে, হেমন্তর আগমনী কলকাতার সারা গায়ে। সকালের ঘাস, শিশিরের প্রথম ছোঁয়ায় শিহরিত। বাতাসে আলতো এক শুষ্কতার পরশ। স্নানের আগে সর্ষের তেল। উড়ন আর বসন তুবড়ী ঠাসা চলছে, সামনে কালীপূজো। ইতিউতি কালীপটকা, ধানীপটকা, দোদমা, ফুলঝুরি আর ইলেকট্রিক তার নিয়ে পসরা বসেছে। বায়ু বা শব্দদূষণ তখনো অচেনা বিষয়।
    পার্ট টু পরীক্ষা শেষ। দিন দুয়েক পরেই কালীপূজো। সেটা সম্ভবত: ৬ অক্টোবর ১৯৭৬। বিকাল ৫টা।
    বুবুর সাথে রাসবিহারী মোড়েই একসাথে বাসে উঠে এসপ্ল্যানেড। হাঁটতে হাঁটতে জ্যোতি সিনেমা পেরিয়ে মটলেন পোষ্ট-অফিসের চা ঘরে। চা-সিগারেট নিয়ে বসতে বসতেই দেবাশিস এলো। আমি দেবাশিসের জন্য চা বলে আসতেই জনা ছয়েক শক্তপোক্ত চেহারার লোক আমাদের ঘিরে ধরলো।
    - একটু উঠতে হবে।
    - কেন বলুন তো?
    - একটু জিজ্ঞাসাবাদ করব।
    - কেন?
    - সামনে কালীপূজো তো, পোষ্ট-অফিসে ডাকাতির খবর আছে। আপনারা একটু পোষ্ট-অফিসের ভিতরে এলে ভালো হয়।
    দেবাশিসের সাথে চকিতে একটা চোখে-চোখে কথা হল। বাধা না দিয়ে বরং স্বাভাবিক থাকা। বোকা বানানোর চেষ্টা করা।
    আমরা তিনজনে পোষ্ট-অফিসের ভিতরে গেলাম। ওরা আমাদের ঘিরে ছিলো। আমাকে, বুবুকে দেবাশিসের থেকে আলাদা করে দিলো। আমায় ওদের একজন নাম জিজ্ঞাসা করলো।
    - তপন।
    - কোথায় থাকেন?
    - তিলজলায়।
    - কেন মিথ্যে বলছেন, আপনি টালিগঞ্জে থাকেন। আপনার বন্ধুর নাম কি?
    - রানা।
    - আবার মিথ্যে বলছেন, ও তো দেবাশিস, কালিঘাটের দেবাশিস ভট্‌চার্য।
    সেই মুহুর্তে বুঝে গেলাম, বোকা বানিয়ে লাভ নেই। চুপ করে গেলাম। মন বলে উঠলো - জীবনের আর এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছো কল্লোলবাবু। চলো কমরেড, শক্ত হও, সামনে আরও পরীক্ষা। আরো একবার বধ্যভূমি, কারাগার ও একঝাঁক বুলেট - পার হতে হবে, হতেই হবে।
  • kallol | 192.77.110.18 | ১৮ জুন ২০০৭ ১৫:০৬695599
  • .
  • kallol | 192.77.110.18 | ১৯ জুন ২০০৭ ১০:৩২695600
  • ওরা আমাদের রাস্তায় নিয়ে এলো। ধর্মতলা স্ট্রিট। কত অজস্রবার এই রাস্তা দিয়ে মিছিল করে গেছি - সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি চাই স্লোগান তুলে। আজ নিজে বন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আশ পাশ দিয়ে কত মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। আমিওতো একটু আগে স্বাধীন ভাবেই হেঁটে এসেছি এই রাস্তা ধরেই। ফিরে যাচ্ছি বন্দী হিসাবে।
    একটা ছাই রংএর অ্যাম্বাসেডারে পেছনের সিটে আমাকে আর দেবাশিসকে মাঝখানে রেখে ধারে দুজন। বুবুকে সামনে ড্রাইভারের আর ধারে বসা আর একজনের মঝে রেখে চলতে শুরু করল গাড়ি। এসল্প্যানেড পৌঁছে বাঁদিকে মোড় নিলো গাড়ি। পেরিয়ে যাচ্ছে মেট্রো সিনেমা, রিৎজ কন্টিনেন্টাল(এখন পিয়ারলেস ইন)। পেরিয়ে যাচ্ছে গ্র্যান্ডের টানা গাড়িবারান্দা, পাসের ক্লাস কেটে সিনেমা দেখতে যাচ্ছি আমি সানু, সমীর, অপু আর জয়ীক.....। পেরিয়ে গেলো লাইটহাউস-নিউ এম্পায়ারের রাস্তা, রাত জেগে লাইটহাউসে লাইন দিয়েছি মৃণাল সেনের প্রথম রঙ্গীন ছবি ""মৃগয়া''......। নিউ এম্পায়ারে ৬৫ পয়সার লাইনের খাঁচায় ঢুকে টিকিট কেটে ব্যালকনীরও ওপরে, চারমিনার ধরিয়ে দেখছি ফেলিনির অ্যামরকর্ড; ফেলিনি, ভিসকন্তি, ডি সিকার করা ট্রিলজি বোকাচ্চিও সেভেন্টি.......। পার হলাম মিউজিয়াম, গভর্মেন্ট আর্ট কলেজ, পার্ক স্ট্রিটের মোড়, আইসিআই বিল্ডিং, আমি জানি বাবা ঠিক এই মুহুর্তে তিনতলায় একমনে কাজ করে যাচ্ছে। পার হচ্ছি জীবনদীপ, টাটা সেন্টার। থিয়েটার রোড দিয়ে বাঁদিকে ঘুরল গাড়ি, ডান দিকে চকিতে মিলিয়ে গেলো প্ল্যানেটোরিয়ামের ঘড়ি আর গম্বুজ.....বুঝে গেলাম এবার ডান দিকে মোড় নেবে.....। ঢুকেই বাঁদিকে ছোট্ট সরু রাস্তাটা, গেট খুলছে, গাড়ি গেট পার হল। আমি আর দেবাশিস দুজনেই হাত ধরলাম লুকিয়ে। এক মুহুর্ত। দুজনে দুজনের হাতে আলতো চাপ। চোখে চোখ। কথা হয়ে গেলো।
    .....তাহলে!!! ব্রিটিশ রাজের আই.বি দপ্তর কুখ্যাত ইলিশিয়াম রো, আজকের লর্ড সিন্‌হা রোড.....এস.বির দপ্তর।
    গাড়ি থেকে নামছি! না:, নামানো হচ্ছে আমাদের। চলো কমরেড সামনে লড়াই.............
  • Suhasini | 203.123.181.130 | ১৯ জুন ২০০৭ ১৬:১০695601
  • কল্লোলদা, হঠাৎ করে এত কিপ্টে হয়ে গেলেন কেন বলুন তো?
  • kallol | 192.77.110.18 | ১৯ জুন ২০০৭ ১৬:৪৪695602
  • না না, তেমন কিছু না। আসলে ৬০-৭০-এ ডুবে গভীর নির্জন পথে হাঁটতে হাঁটতে, ৭০-এর কলকাতা ফুটবলে চলে গেছিলাম। তাই..........
  • `' | 10.153.103.97, 10.150.50.89, 10.150.50.89 | ২০ জুন ২০০৭ ১১:১০695603
  • ও কল্লোলদা, উপরে এনে দিয়েছি। এবার লিখুন না।
  • kallol | 192.77.110.18 | ২০ জুন ২০০৭ ১৫:১২695604
  • দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাঁদিকে শেষ ঘরে আনা হলো আমাদের। আর পাঁচটা সরকারী অফিসের থেকে তফাৎ করা বেশ মুশকিল। পাঁচজন বসেন ঐ ঘরে। পাঁচটা কাঠের সাধারন টেবিল আর চেয়ার, পেছনে স্টিলের আলমারী, কয়েকটা টেবিলের পাশে কাঠের র‌্যাক। টেবিল, র‌্যাক এমনকি আলমারীগুলোর মাথাতেও প্রচুর কাগজ, ফাইল ডাঁই করা। আলমারীর মাথার আর র‌্যাকের নীচের তাকগুলোয় রাখা কগজ ও ফাইলে বেশ ধূলো জমে আছে। নইলে এমনিতে বেশ পরিস্কার। অন্তত: দেওয়ালে পানের পিক বা চুণের দাগ নেই।
    যারা আমাদের গ্রেপ্তারী স্কোয়াডে ছিলেন, তারা ভদ্র ব্যবহারই করছিলেন। বসতে বললেন টেবিলের উল্টোদিকে রাখা অতিথিদের জন্য চেয়ারে। ওরা বেশ উত্তেজিত।
    - বহুদিনের ওয়ান্টেড। কালিঘাটে কি ঘোল খাইয়েছে থানাকে।
    - স্যারকে খবর দে।
    - রিওআর্ডের কথা ভুলবি না কিন্তু।
    রিওয়ার্ডের কথাটা বেশ কানে বাজলো। দেবাশিসের নামে শ্যূট অ্যাট সাইট ছিলো, কিন্তু তার যে যাকে বলে ""মাথার দাম''ও ছিলো তাতো জানতাম না।
    পাশেই বসেছিলো দেবাশিস, সামনে বুবু। বুবুকে আড়াল করে জিজ্ঞাসা করলাম।
    - তোমার নামে রিওয়ার্ড ছিলো নাকি?
    - আমি তো জানতাম না। ওসব ছাড়ো। কাছে তেমন কোন কাগজ টাগজ আছে যেটা ওদের হাতে পড়লে ঝামেলা হবে।

    খেয়াল হলো, পকেট ডায়রীতে প্রচুর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেখা। যদিও নাম সব কোডে লেখা। ঝামেলা তো হবেই। হঠাৎ মনে পড়লো, একটা টুকরো কাগজে কাঠ্‌মান্ডুর একটা ঠিকানা আছে, যেখান থেকে পিকিং রিভিয়্যু, চীনা পার্টির দলিল গোপনে আসতো কমলেশদাদের নিউ বুক সেন্টারে। বুবুকে বললাম একটু আমার দিকে সরে বসতে। তারপর ডায়রীটা বের করে সামনের মলাটের ভাঁজে কাগজটা পেয়ে গেলাম। কিন্তু কাগজটা নিয়ে কি করি!!
    হঠাৎ শোরগোল
    - স্যার আসছেন।
    হট্টগোলে সুযোগ পেয়েই, চিরকুটটা ছিঁড়ে দলা পাকিয়ে এক টুসকিতে পেছনের আলমারীর তলায়। নিশ্চিন্ত।

    সামনের দরজা দিয়ে তিনি ঢুকলেন। অল্প টাক, পাতলা ভুরুর নীচে ধূর্ত এক জোড়া চোখ, সোনালী ফ্রেমের চশমায় চকচক করছে - অশোক খাশনবীশ। স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের অ্যান্টি নকসালাইট সেকশনের ও.সি।
  • | 155.201.35.50 | ২১ জুন ২০০৭ ২২:৪১695605
  • তারপর?তারপর?
  • kallol | 192.77.110.18 | ২২ জুন ২০০৭ ১২:৩৩695606
  • খাশনবিশকে দেখেই আমার এসপ্ল্যানেডে তারকদা-খাশনবিশ হাতটানটানি মনে পড়ে গেলো। কিন্তু তখন হেসে ফেললে ব্যাপারটা বেশ বিচ্ছিরি হতে পারে, তাই গম্ভীর হয়ে বসে রইলাম।
    খাশনবিশ ঘরে ঢুকেই বুবুর দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন
    - একি! একে তো সেদিনই ছড়া হলো! এর মধ্যেই আবার এসব শুরু করে দিয়েছে?
    আমি সাততাড়াতাড়ি বলে বসেছি
    - না না ও তো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। আমরাই ডেকে বসিয়েছি।
    - বলছো, যে ওর সাথে তোমাদের কোন যোগাযোগ ছিলো না।
    - না না।
    - দ্যাখো, তোমার কথার ওপর ওকে ছেড়ে দিচ্ছি। পরে যদি দেখি অন্যরকম, ওকে তো যা করার করবো, তোমাকেও ছড়ব না।
    - হ্যাঁ হ্যাঁ, ও তো কথাই বলতে চাইছিলো না, আমরাই তো জোর করে......
    - ঠিক আছে, ঠিক আছে, ওকে যেতে দাও।
    তারপর বুবুর দিকে ফিরে বললেন
    - যাও তুমি বাড়ি যাও।
    বুবু উঠে দাঁড়ালো। আমি ফিস ফিস করে বললাম
    - দেবাশিসের বাড়িতে খবর দিস।
    বুবু ঘাড় নাড়ল, আর প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।
    নিশ্চিন্ত। কিন্তু......... কেমন যেন খটকা লাগছিলো। এরা আমাকে ধরে রাখলো, আর আমারই কথায় একজনকে ছেড়ে দিলো, যে কদিন আগেই ছাড়া পেয়েছে। যে প্রশ্নাতীত ভাবে আমাদের সঙ্গেই ছিলো আজ!!!!!

    আমাদের খাশনবিশের চেম্বারে নিয়ে আসা হলো।
    - বসো।
    দেবাশিস হঠাৎ কেমন অতিরিক্ত গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাই আমিও বসলাম না।
    - কি হলো? বসো। ও আচ্ছা সরি, বসুন।
    দেবাশিসকে ভীষন বলতে ইচ্ছে করছিলো - দারুন দিয়েছো।
    আমরা বসলাম।
  • kallol | 122.167.179.198 | ২৪ জুন ২০০৭ ১৪:১৬695608
  • বসলাম।
    প্রথমেই শুরু করলেন খাশনবিশ,
    - আপনারা তো সত্যনারায়ন সিন্‌হাদের সাথে আছেন।
    দুজনেই প্রবল বেগে মাথা নাড়লাম এবং বললাম
    - না।
    - আমদের কাছে ডেফিনিট খবর আছে।
    - থাকতে পারে, তবে খবরটা ভুল। জবাব দেবাসিশই দিচ্ছিলো।
    - হুম। তারপর একটু মুচকি হেসে বললেন,
    - ইউ.সি.সি.আর.আই.এম.এল করা হয়।
    আবারও দুজনেই প্রবল বেগে মাথা নাড়লাম এবং বললাম
    - না।
    একটু ভুরু কোঁচকালো। তারপর, ড্রয়ার টেনে কি একটা দেখলেন। যেন মনে ছিলো না এমন একটা ভঙ্গী করে বললেন
    - আমার কাছে ডেফিনিট খবর আছে, ইউনিটি কমিটি।
    এবার আর হাসি চাপতে পারিনি।
    - ডেফিনিট খবর তো একটাই হয়, তিনটে হয় না।
    দৃশ্যত বেশ হতভম্ব দেখালো খাশনবিশকে।
    - তাহলে আপনাদের স্ট্যান্ড কি?
    এবার দেবাশিস শুরু করলো।
    - আমরা মনে করি সিপিআইএমএল গঠনের প্রক্রিয়াটাই ভুল ছিলো। মতাদর্শগত লড়াইকে ঠিক ভাবে পরিচালনা করা হয়নি। কোঅর্ডিনেশন কমিটি থেকে ধাপে ধাপে গণআন্দোলন চালানোর সাথে সাথে মতাদর্শগত লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে ঐক্য-বিতর্ক-ঐক্যের মধ্য দিয়ে পার্টি গঠনের দিকে যাওয়া উচিৎ ছিলো..........
    আমাদের তখন কতই বা বয়স। আমার আঠেরো, দেবাশিসের কুড়ি। আমাদের কাছ থেকে, বোধহয় এই ধরনের তাঙ্কিÄক কথাবার্তা আশা করেনি ওরা।
    কিন্তু দুঁদে অফিসার। আজ মনে হয়। ওদের কাছে, খবর সত্যিই কিছু ছিলো না। কারন সত্যিই আমরা কোন ফ্র্যাকশনের সাথে ছিলাম না। কিন্তু আমাদের অবস্থান জানার জন্য ঐ ""ডেফিনিট খবরের'' গল্পটা ফাঁদা হয়েছিলো।
    দেবাশিস চালিয়ে যাচ্ছে তখনও। খতমের রাজনীতি থেকে গেরিলা লড়াই। গণআন্দোলন, বিশেষ কর শ্রমিক আন্দোলন থেকে সরে আসা মারাত্মক ভুল। এই মুহুর্তে একমাত্র কাজ গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষার লড়াই।
    খাশনবিশ বেশ ধাঁধায়। এরা তো বিপ্লবী কথা বলে না। কিন্তু চুপ করেও থাকে না। বরং কিঞ্চিত বেশীই কথা বলে। আমরা এপিডিআরএর কথা মোটেও অস্বীকার করিনি। বরং ডেঁটে বলছি, এপিডিআর করতাম, ছাড়া পেলে আবার করব।
    এর মধ্যে, খাশনবিশের ঘরে ঢোকার আগেই আমাদের তল্লাসী নেওয়া হয়েছে। আমার পকেট ডায়রী আর দেবাশিসের মানিব্যাগ ছাড়া কিছুই ছিলো না।
    কথার মধ্যেই একজন আমার ডায়রীটা নিয়ে ঢুকলন।
    - স্যার, এতে প্রচুর অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে।
    জিজ্ঞাসা শুরু হলো।
    একটা বাঁচোয়া। পরের দিকে সবই শিবাজীর সাথে অ্যাপো। প্রথম দিকে যারা ছিলো সবাইকেই এপিডিআর বলে চালালাম।
    ঐ সময়ে মিত্রার সাথে বেশ কয়েকটা বসা হয়েছিলো। ওর নাম খুকু লেখা ছিলো।
    - খুকু কে?
    যতটা সম্ভব কুন্ঠিত ও লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলেছিলাম
    - আমার গার্ল ফ্রেন্ড।
    ব্যস সকলেই রসে টৈটুম্বুর।
    - হুঁ: আবার গার্ল ফ্রেন্ডও আছে। সব গুণই আছে দেখছি।
    আমি লজ্জা লজ্জা ভাবটা রেখেই গেলাম।
    ফলে জিজ্ঞাসাবাদ আর এগোলো না।
    অনেক পরে মিত্রাকে ঘটনাটা বলতেই হেসে কুটিপাটি হয়ে বলেছিলো,
    - যাক, শেষ পর্যন্ত ইচ্ছেপূরণ হলো!!
    আমি বোকার মত তাকিয়েছিলাম ওর দিকে। মেয়েরা কি সব বুঝতে পারে!!!
  • dc | 170.213.132.253 | ২৬ জুন ২০০৭ ০০:৪৩695609
  • কল্লোল্‌দা আপনাকে নিয়ে ফিল্ম বানানো যাবে
    চালিয়ে যান প্লিজ।।থামবেনা।।আমাকে দিনে ২ বার login করতে হয় আপনার লেখাটার জন্য।
    দেবু
  • kallol | 122.167.185.239 | ২৭ জুন ২০০৭ ১৮:১২695610
  • এইসব রসালো মন্তব্য শুনতে শুনতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। আবার একটা অ্যাম্বাসেডারে তোলা হলো আমাদের। ততক্ষনে জেনে গেছি গন্তব্য জোড়াসাঁকো থানা। গাড়ি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম ছাড়িয়ে রেডরোডের দিকে। তখন ভিক্টোরিয়ার লাগোয়া মাঠে কি একটা মেলা চলছিলো। গাড়িতে বসা এস.বি. অফিসারদের একজন হঠাৎ কর বললেন,
    - দেখুন, আপনরা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়ে আজ বন্দী। আর সেইসব মানুষেরা কত আনন্দ করে মেলায় বেড়াচ্ছে। কেউ কি আপনাদের জন্য এতটুকুও ভাবছে?
    দেবাশিস প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা মোক্ষম জবাব দিলো,
    - আপনার কথা শুনে একটা লেখার কথা মনে পড়ছে। জুলিয়াস ফুচিকের ""ফাঁসির মঞ্চ থেকে''। সেখানে জুলিয়াস লিখছেন, ওঁকে যখন গেস্টাপোরা গ্রেপ্তার করে প্রাগের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন গেস্টাপোদের একজন ঠিক এই প্রশ্নটাই করছিলো ওনাকে। ""দ্যাখো তুমি যাদের জন্য লড়াই করছ , সেই মানুষেরা কত উচ্ছল এই সন্ধ্যায়। তারা জানেও না তাদের মুক্তির লড়াইয়ের নেতা আজ বন্দী''। ব্যস তারপর সেই ভদ্রলোকের আর কথা সরেনি।
    দেখতে দেখতে চলে এলাম জোড়াসাঁকো থানায়। নিয়ম মাফিক নামধাম, সইসাবুদ করে আমাদের ঢুকিয়ে দেওয়া হলো জোড়াসাঁকো থানার লক-আপে।
    তখন তো জানিনা আমাদের আগেই কবি সমীর রায় এই লক-আপেই কাটিয়েছেন তার বন্দীজীবনের প্রথম কটা দিন। যার ফলশ্রুতি ওঁর ""জেলখানার কবিতা''র সেই অদ্ভুত কবিতাটি - জোড়াসাঁকো লক-আপে কয়কদিন।

  • kallol | 122.167.9.86 | ২৮ জুন ২০০৭ ০৬:৪৮695611
  • জোড়াসাঁকো লক-আপে কয়েকদিন - সমীর রায়

    ছোট্ট একটুকরো চাতাল।
    সারা দিন সারা রাত্রি
    মাথার উপরে চল্লিশ পাওয়ারের বাল্ব।
    ঝুল কালি গলায় ঝুলিয়ে
    ফাঁস দিয়ে মরে আছে
    সূর্য আর চাঁদ।
    পায়খানার দুর্গন্ধে
    নাক থেকে নাভিমূলে অপারেশনের বেদনা।
    জল নেই,
    মরুদ্যান অনেক দূরে।
    আরবের বেদুইন,
    আসামীর বেশে আছি কলকাতা শহরে।
    গঙ্গার জল বা টালার ট্যাঙ্ক,
    সতীন গো সতীন।
    কোনক্রমে তেষ্টা মেটে,
    যদি কোকিলের সুরে ডাকত পারি -
    সেপাই.......

    এহেন বস্তুটির পেটে নানান রকমের মানুষ। পকেটমার, লক-আপের ভাষায় টিংবাজ, ছিঁচকে চোর - ছোটু, ডাকাত - বড়ভাই, সিনেমার টিকিট ব্ল্যাকার - হিরো, ছিনতাইকারী - উঠাইবাজ এমনি আরো কতো। আমরা কমরেট।

  • d | 122.162.104.228 | ২৮ জুন ২০০৭ ০৯:২২695612
  • উঠাইবাজ কি?
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৮ জুন ২০০৭ ০৯:৩৭695613
  • ঐ যে লিখলাম : ছিনতাইকারী বা যারা মানুষের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে ""মাল হাপিস'' করে - তারাই উঠাইবাজ। না, কিডন্যাপার নয়।
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৫:৩১695614
  • হাজতবাসের অভিজ্ঞতায় আমি দেবাশিসের চেয়ে এগিয়ে। ওর এই প্রথম। আমার এটি দ্বিতীয়।
    থানার হাজতে কেউই অবিনশ্বর নয়। সবাই দো দিন কা মুসাফির। সাধারনত: সাতদিনের পুলিশি হেফাজতে থাকার পর লোকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে চলে যায়। প্রশাসনিক ভাষায় পি.সি (পুলিশ কাস্টডি) থেকে জে.সি (জুডিশিয়াল কাস্টডি)। বাংলা করে বললে থানা হাজত থেকে জেল হাজতে চালান হয়। শুধু সেই সময় নকশালদের আর সিপিএমএর ক্ষেত্রে (এখন ''সন্ত্রাসবাদী/মাওবাদীদের ক্ষেত্রে) এই পুলিশী হেফাজতে থাকার সময়টা পুলিশ খুশীমত বাড়িয়ে নিতো।
    তা সে যাকগে। থানা লক-আপে সবসময়েই একজন ""শের'' থাকতো। সেটা কিনি, তা তার বসে থাকার ভঙ্গীতেই মালুম হতো। একবার চোখ বোলাতেই বোঝা গেলো। মাঝারী চেহারার একজন। সোজা তার পাশে গিয়ে বসলাম, একদম তার গা ঘেঁসে। সে অবাক হয়ে আমার দিকে চাইতেই তার দিকে না তাকিয়েই বললাম
    - এস.বি কেস। বিড়ি হবে।
    সে বেশ শশব্যস্ত হয়ে সরে বসলো। বিড়ি দিলো।
    - নকশাল কেস ?
    আমি কথা না বলে। দেবাশিসকে ডাকলাম।
    - এখানে বসো।
    এবার ধীরে ধীরে আলাপ জমলো। তার নাম মিন্টু। ""যুব'' করে। তার মতে কে একজন তারকদা তাকে ডাকাতি মামলায় ফাঁসিয়েছে। কথায় কথায় সে জানালো
    - আরে, পিয়দাও তো নকশাল !
    - সে কি ?
    - পিয়দাও তো ""আমরা করবো জয়'' গানটা গায়।
  • S | 61.95.167.91 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৫:৫৮695615
  • পিয়দা মানে আমাদের পিয়দা? মুন্সি পিয়োচাঁদ?
  • shyamal | 24.117.80.201 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৬:০৮695616
  • গানটা we shall overcome সকলেই জানেন আমেরিকান সিভিল রাইটস মুভমেন্টের জাতীয় সঙ্গীত। পরে নকশাল থেকে আরম্ভ করে অনেকেই গেয়েছে। গানটা কারোর সম্পত্তি নয় ।
  • Arijit | 128.240.233.197 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৬:১৩695617
  • আজ্ঞে তা গেয়েছে - তবে পিয়দা গাইলে সেটা রসিকতাই হয় কিনা, এই যেমন মমতাদেবী যদি "হেই সমালো' ধরেন সেটা যেমন রসিকতা হবে, বা বুশ যদি "উই শ্যাল ওভারকাম' গেয়ে থাকেন তাহলে...

    বলবো না বলবো না করেও বলে ফেলি - এই পোস্টগুলো কখনো কখনো নির্মল আনন্দ প্রদান করলেও, মাঝে সাঝে বেজায় বেখাপ্পা ঠেকে।
  • r | 61.95.167.91 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৬:১৭695621
  • We shall overcome তাও নয়। বস্তুত: এটা একটা ধর্মীয় সঙ্গীত, বা গসপেল সং যা পরবর্তীকালে সিভিল রাইট্‌স্‌ মুভমেন্টে ব্যবহার করা হয়। উইকি থেকে:
    The song derives from a gospel song, possibly a 1903 song by Rev. Charles Tindley of Philadelphia containing the repeated line "I'll overcome some day", but more likely a later gospel song containing the line "Deep in my heart, I do believe / I'll overcome some day." However, there are also earlier acknowledgements of the song date, with Pete Seeger, one of the first artists to record the song, noting that various versions of it can be traced to integrated meetings of black and white coal miners in the early 1900s and to black churches in the 1800s
  • d | 122.162.104.228 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৬:১৭695620
  • ধুত্তোর!!

    কল্লোলদা, আপনি লিখে যান তো।
  • - | 61.95.167.91 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৬:৪০695623
  • পিয় দা তখন ওখানে ছিল। এরা কিসুই জানে না।
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৬:৪০695622
  • একদম হক কথা। We shall overcome গানটা কারো বাপকেলে সম্পত্তি নয়। যে কেউ গাইতে পারেন। গেয়েছেনও পোচুর লোকে, স্থানে-অস্থানে, কারনে-অকারনে, প্রসঙ্গে-অপ্রসঙ্গে। আমি শুধু আমার জোড়াসাঁকো লক-আপের সাথী মিন্টুর ধারনার কথা বলেছি মাত্র। সে মনে করতো ""পিয়দা'' ও নকশাল, কারন তিনিও ""আমরা করব জয়'' গাইতেন। এবং এইসব মানুষদের সামনে সেই সময় ""পিয়দা''রা নিজেদের এইভাবেই পেশ করতেন। নকশাল-নামের সাথে জড়িয়ে থাকা রোমান্টিসিজম-হিরো ইজম এভাবেই ব্যবহৃত হত।
  • I | 172.203.193.64 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৮:১৬695624
  • শ্যামলবাবু খচে গেলেন নাকি?
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৮ জুন ২০০৭ ১৯:২৬695625
  • এই ভাবে আলাপচারীতা গড়াচ্ছিলো দুলকি চালে। এমন সময় হৈ হৈ, কি না গুনতি হবে। ব্যাপারটা কিছুই না, সান্ধ্যকালীন স্টক টেকিং। সারাদিন আসামী এসেছে গেছে। গতকালের সান্ধ্য স্টক + সারাদিনের আমদানী - সারাদিনের জে.সি তে যাওয়া বা জামিন পাওয়া = আজকের সান্ধ্য স্টক।
    সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো সব্বাইকে দাঁড়িয়ে উঠে গুনতি দিতে হবে। না দিলে.......
    সকলে দাঁড়িয়ে গেলো। দেবাশিস আমার দিকে তাকাতেই ঠিক হয়ে গেলো দাঁড়িয়ে গুনতি দেবো না।
    গুনতি হয়ে গেলো আমাদের ছাড়াই। মিন্টু ফিস ফিস করে বলল,
    - গুরু, এবার কি হবে ?
    - কি আবার হবে ?
    - গুরু, তোমাদের খাবার আসবে না।
    তাইতো। এটা মাথায় ছিলো না। যতজন গোনা হয়েছে, ততজনেরই রাতের খাবার আসবে। তাইই হলো।
    আমাদের খাবার নেই। যে খাবার দেয়, সামনের কোনো রেস্টুরেন্টের ছেলে, সে তো হতভম্ব। এমন তো কখনো ঘটে নি!! তার মানে গুনতিতে ভুল। ডাক ছোটবাবুকে।
    সেকেন্ড অফিসার গোছের কেউ এলেন। আমাদের দুজনকে দেখেই বুঝলেন, কেসটা কি। প্রথমে ধমকের সুরে শুরু হলো,
    - কি ব্যাপার গুনতি দ্যান নি কেন?
    আমি ততক্ষনে জবাব তৈরী করে ফেলেছি।
    - গুনতি দেওয়া আমাদের কাজ নয়। গুনতি নেওয়া আপনাদের কাজ। সেটা আপনারা ঠিকঠাক না করলে, এস.বি তে রিপোর্ট করতে হবে। আমরা যদি খাবার না পাই, সেটাও এস.বি তে জানাতে হবে।
    ব্যস লাগ লাগ ভেলকি। সেকেন্ড অফিসারবাবু মিউমিউ করে বললেন,
    - আরে না না। এই শালা বো**** মা***** হা***** লক-আপ ডিউটি, বড়বাবুর কাছে রিপোর্ট দেবো.......। যা, চু******* যেখান থেকে পারিস খাবার নিয়ে আয়।
    সেই রেস্টুরেন্টের ছেলেটা বললো
    - স্যার রুটি কাবাব হবে, তবে বড় খাসী।
    সেকেন্ড অফিসারবাবু আমাদের দিকে চেয়ে বললেন,
    - আপনাদের তো চলে বোধহয়.....
    আমরা ঘাড় নাড়তেই, হুঁশ্‌শ্‌শ করে একটা শ্বাস ফেলেই রাষ্ট্রভাষায় হুকুম
    - যা যা জলদি লা।
    সে রাতে তন্দুরী রুটি আর বড় কাবাবে জমে গেলো।
    মিন্টুকে আর বিড়ির কথা বলতে হয়নি। ঘুমানোর আগে পর্যন্ত এন্তার বিড়ি সাপ্লাই করে গেলো।

  • kallol | 192.77.110.18 | ২৯ জুন ২০০৭ ১১:০৫695626
  • পরদিন সকালে আবার এস.বি অফিস। সেখানে জানলাম আমাদের দুটো কেস দেওয়া হয়েছে, জোড়াসাঁকো ষড়যন্ত্র মামলা আর ওয়াটগঞ্জ ষড়যন্ত্র মামলা। আরে: নাহ। এসব ষড়যন্ত্র মামলা-টামলায় জড়িয়ে নিজেকে বেশ কেউকেটা মনে হচ্ছিল। বেশ হবু শহীদ হবু শহীদ ভাব। হ্যাঁ:, মামলায় যদি আসামী হতেই হয় তবে এই না হলে হয়! কি সব খুচ্‌খাচ খুন বোমাবাজীর মামলা, একদম থাড্ডোকেলাশ (এইরে! ""থাড্ডোকেলাশ'' বলে পলিটিকালি ইনকারেক্ট হয়ে যাব না তো !), মামলা হো তো অ্যায়সা। কি না, আমরা কতিপয় মানুষ জোড়াসাঁকো এবং ওয়াটগঞ্জের কোনো এক গোপন স্থানে বসিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, যুদ্ধের মাধ্যমে উহা উচ্ছেদের, ষড়যন্ত্র করিতেছিলাম।
    সাড়ে ন'টা নাগাদ আবার সেই অ্যাম্বাসেডারে করে নিয়ে যাওয়া হলো ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। আমাদের বাড়িতে তখনও কোনো খবর পৌঁছয়নি। নইলে কেউ না কেউ দেখা করতে আসত। বুবু সম্ভবত খবর দেয় নি। ফলে আমাদের কোন উকিল নেই। কোর্টে তোলা হলো। কাঠগড়া বলতে একটা খাঁচা। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে একজন উকিলবাবু কি সব বললেন। শুনলাম সাতদিনের জন্য পুলিশী হেফাজতে থাকবো। ব্যস, আবার ফিরিয়ে নেওয়া হল এস.বি অফিসে।
    আমাদের কেস যে অফিসার দেখছিলেন তাকে বেশ ভদ্রলোকের মত দেখতে, মধ্যবিত্ত বাড়ির ভালো ছেলে, ভালো ছেলে মুখটা। মানুষটি সত্যিই ভালোমানুষ ছিলেন, তা পরে নানান ঘটনার মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারি।
    ওনার ঘরে ডেকে নিয়ে বললেন,
    - আপনাদের কিছু টাকা আমাদের কাছে জমা আছে, তা দিয়ে কিছু খেতে চাইলে আমাদের ক্যান্টিন থেকে আনিয়ে দেবো।
    আমরা চা আর ঘুগনী খেলাম। ঘুগনীটা ভালো বানায়। আমি সিগারেট আনতে বললে, উনি অফার করলেন
    - আরে ওর জন্য পয়সা খরচ করবেন কেন ! আমার থেকে হয়ে যাবে। নিন। বলে উইলস ফ্লেক বাড়িয়ে দিলেন। নানান কথা হল। একেবারে নির্ভেজাল কথা।
    সেদিন কালীপুজো। সন্ধ্যে বেলা অ্যাম্বাসাডার নিয়ে গেলো, লালবাজার সে¾ট্রাল লক-আপ। রুনুর খোদ জায়গা। একটাই ভরসা, আমরা এস.বি'র আসামী, ডিডি শুধু কাস্টোডিয়ান মাত্র।

  • kallol | 192.77.110.18 | ২৯ জুন ২০০৭ ১৫:৫৭695627
  • সেদিন ডিডি (ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট) অফিস ফাঁকা। কালীপূজোর রাত। সিনিয়াররা ফুর্তিতে বেরিয়েছেন। রেখে গেছেন একজন অল্পবয়সী অফিসারকে। পাৎলা চেহারার শ্যামলা বরন মানুষটিকে পুলিশের চেয়ে বেশী মানায় মাইডিয়ার ছোড়দা হিসাবে। তার হাতে এস.বির লোকেরা কাগজপত্র এবং আসামী বুঝিয়ে চলে গেলেন। অভ্যেস কি সাংঘাতিক। তা সে দুদিনের হলেও। এই দুদিন একনাগারে এস.বির এই চার পাঁচ জনের সাথে ওঠাবসা করতে করতে কেমন অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিলাম। ওরা যখন চলে গেলেন, কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল চেনা মানুষেরা চলে গেলো, অচেনার কাছে রেখে। অথচ আশ্চর্য্য, এরা সকলেই পুলিশ, আমরা আসামী, ফলে সম্পর্কের কোন ইতর বিশেষ নেই। তবু.....
    এই ভদ্রলোক অনেকক্ষন ধরে খুঁটিয়ে আমাদের কাগজপত্র পড়ছিলেন। তারপর মুখ তুলে বললেন
    - বসুন, মশাইরা। এই বয়সে রাজরোষে!
    আমরা দাঁড়িয়েই ছিলাম। উনি আবারও বললেন
    - বসুন। আপনাদের দেখে ভদ্রলোকের ছেলে বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কথা বলা যায়। আরে এই জায়গায় ভদ্রলোক পাওয়া তো দূরস্থান কম ছোটোলোকও পাওয়া মুস্কিল। যাবেন তো সেই ফাটকে, অত তাড়া কিসের। বসুন।
    গলার স্বরে একটা কিছু ছিলো, বোধহয় সততা। আমরা বসলাম।
    কথা শুরু হল। উনিই বক্তা, আমরা ঠেকনা দিচ্ছি মাত্র।
    - কাগজ পড়ে তো মনে হচ্ছে নকশাল। আমি তো এস.এফ.আই করতাম।
    চল্লিশের নীচে পাঠক, চমকাবেন না। বাম জামানয় ছাত্র পরিষদ করা পুলিশ অফিসার বিরল বস্তু হলেও, কংগ্রেসী জামানায় এস.এফ.আই করা পুলিশ অফিসার খুব বিরল ছিলো না মোটেও।
    - আরে মশায়, মধ্যবিত্ত ঘরের বড়ছেলে। সংসার টানতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলো, পরীক্ষা দিলাম, পেয়ে গেলাম। ব্যস এস.এফ.আই থেকে পুলিশ!
    - আরে না না, চকরী তো চাকরীই। আমরা তাল দিলাম।
    তাল সমে ঠিকঠাক পড়ছিলো।
    - কি মনে হয় বিপ্লব হবে ?
    শুরু হলো দেবাশিসের বিপ্লব সংক্রান্ত পদাবলী। চীন নয়, রাশিয়া নয়, ভারতের বিপ্লবের রাস্তা নিতান্তই ভারতীয় হতে হবে। ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্রের শেকড় অনেক গভীরে। ফলে নির্বাচন বয়কট নয়, বরং নির্বাচনকে ব্যবহার করতে হবে, সংসদকে ব্যবহার করতে হবে......
    অনেক্ষন আড্ডা চলল। প্রায় রাত বারোটায় হুশ ফিরলো, পুলিশ অফিসারের।
    - খুব ভাল লাগলো মশাই। আজ কেউ নেই তাই এমন করে কথা বলা গেল। আর সুযোগ হবে না হয়তো। আমি যখন ডিউটিতে থাকবো, কোন অসুবিধা হলে জানাবেন।
    প্রায় সাথে সাথেই বাড়িতে খবর দেবার কথাটা মাথায় এলো। বললাম। বললেন
    - দেখি কি করা যায়।
    তারপর, কেমন হঠাৎ করে বলে উঠলেন
    - চাকরী করি মশাই। শুধু চাকরী করি। দুচোখে রেসের ঘোড়ার মত ঠুলি পরে আছি। কোনোদিকে তাকাই না, শুধু চাকরী দেখি সামনে। কি আর আছে। আজ সিধুবাবুকে স্যালুট মারি। কাল হয়তো জ্যোতিবাবুকে মারব। কে জানে একদিন হয়তো আপনাদেরও.....
    তিনি এখন কোথায়, কি পদে জানিনা। যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন।
  • bozo | 129.6.123.128 | ২৯ জুন ২০০৭ ১৯:০৪695628
  • নিতান্ত রসভঙ্গ হলেও একটু লিখি। We shall overcome প্রথমে folk song ছিল। সেখান থেকে নিয়ে রেভারেন্ড টিন্ডলে গসপেল বা hymn এর রূপ দেন। ১৯৪৫ এর south carolica Tobacco workers movement এর পিকেটিং এর সময় workers রা হঠাৎ-ই এই গান শুরু করেন এবং তার পরে এই গান ইতিহাস। সিভিল রাইটসে চার্চ্চের ভূমিকা অনস্বীকার্য্য। সমাজে চারইদিক থেকে মানুষ কে যখন দমন করা হয় তখন সেল্ফ এস্টীম বজায় রাখতে ধর্ম মনে হয় কোথাও একটা সাহায্য করে। সে আমরা যত-ই উপেক্ষা করি না কেন।
    স্টকহোম কনফারেন্স এ পীট সিগার গান গাইবার আগে এই গান সমন্ধে দুই চার কথা বলেন। সেখানে-ই বলা আছে।
    আর সেরা ভার্শন? উডস্টকে জোন বায়েজের গলায়। বসে থাকলে পা দুটো আপনা আপনি দাঁড়িয়ে পরে।

    নিন কল্লোল দা এই পোস্ট কে স্কিপ করে আবার গল্প শোনান।
  • kallol | 192.77.110.18 | ০৩ জুলাই ২০০৭ ১১:২১695629
  • লালবাজারের লক-আপগুলো বিরাট বড় বড়। লালবাজারের পূবদিকের যে রাস্তাটায় প্রচুর বাজনার দোকান আছে, সেই রাস্তায় বাঁদিকে তাকালে লালবাজারের যে অংশটা দেখা যায়, ঐ বাড়িটার দোতলা, তিনতলা, চারতলা জুড়েই লক-আপ। রাস্তার দিকে বাথরুমগুলো। হ্যাঁ বাথরুম আছে। যেখানে স্নানও করা যায়। লক-আপের এক একটা সেল বিশাল আকারের। প্রায় ২০ x ২৫। এক একটা সেলে সম্ভবত ২০ জনের বেশী রাখা হয় না। ফলে হাত পা ছড়িয়ে, অনেক স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে থাকা যায়। এই লক-আপগুলোতে শের থাকে না। এখানে সবাই সোয়া শের।
    ঢুকেই নজরে পড়ল দুই মধ্যবিত্ত সুলভ চেহারার দিকে। পরে এটা নিয়ে ভেবেছি। যতই প্রোলেতারিয়েৎ-টোলেতারিয়েৎ ফোটাই না কেন, মন প্রথমেই খোঁজে সমগোত্রিয়।
    তাদের পাশেই বসলাম। এক গাল দাড়ি, লম্বা চুল, নীল শার্ট, জিনস - প্রশান্ত। ঘন্টা খানেক বাদে প্রশান্ত থেকে আকুল-এ চলে আসা গেল। আকুল নামটা কি দারুন না? অন্যজন সাদা শার্ট, ধুতি, কুচি কুচি চুল - শম্ভু। কবি শম্ভু রক্ষিত। জমে গেল আকুলের সাথে।
    ওরা জ্যোতির্ময় দত্তের সাকরেদ। কলকাতা পত্রিকার সাথে যুক্ত। আকুল প্রকাশক, আর অফিস সামলাত, শম্ভু। ওদের কাছেই জানলাম জ্যোতির্ময়ও ধরা পড়ে গেছেন। প্রেসিডেন্সি জেলে আছেন। আমাদের কেস ব্যাঙ্কশাল কোর্টে, ওদেরও তাই। আমরা সকলেই প্রেসিডেন্সি জেলেই যাব। আলিপুর কোর্ট হলে আলিপুর সে¾ট্রাল জেলে বা আলিপুর স্পেশাল জেলে(আমার প্রথমবারের সরকারী অতিথিশালা) যেতে হত।

  • J | 77.56.86.149 | ০৩ জুলাই ২০০৭ ১১:৪১695631
  • তারপর?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন