এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কারাগার, বধ্যভূমি ও একঝাঁক স্মৃতি বুলেট

    kallol
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ | ১৩৩৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r | 62.140.137.30 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২১:২৫695532
  • না:! পোচোন্ডো ক্যামোন য্যানো শোনাচ্চে।
  • I | 59.93.245.143 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২১:২৯695533
  • কল্লোলদার শেষ দুটো পোস্ট জমে নি।
  • a x | 192.35.79.70 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:০০695534
  • আমারও ঠিক জমলো না শেষ দুটো। তবে তাতে কি-ই বা যায় আসে।
  • Ishan | 130.36.62.139 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:৪৪695535
  • এরা শুধু ভালো কম্পোজিশান চায়। লিখতে দাও না বাপু লোকটাকে যা মনে আসে।
  • I | 59.93.242.112 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:৪৮695536
  • না না, সরি সরি। আমি তো ঐজন্যই কিছু বলছিলাম না, এই বেড়ে বেটা রঙ্গনই তো ....
    কল্লোলদা, জমিয়ে লিখুন। এখানে থেমে গেলে এই এইঘর ভাটুরে আমায় খেয়ে ফেলবে একেবারে।
  • r | 62.140.137.30 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:৫৩695537
  • এই দ্যাকো! লিকতে কে বারং করেচে! কিন্তুক তাই বলে কমেন করবুনি কেনে?
  • r | 62.140.137.30 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:৫৪695538
  • ইন ফ্যাকট, "আমি জন্মের মতো তোর গাধা হতে চাই" ভাবলেই খ্যা: খ্যা: করে হাসি পাচ্চে।
  • S | 125.23.116.117 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ২৩:০৭695539
  • রঙ্গার বউয়ের সাথে এট্টু পেরাইভেট্টক কত্তে হবে। গাধা বিষয়ক তাত্বিক আলোচনা।

    কল্লোলদা পুরো FC পাবার মত লিখছে।
  • Paramita | 143.127.3.10 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ০০:৫১695540
  • "তোমার চিরকালের গাধা হতে চাই" আমার কানে হেবি স্মার্ট ও রোম্যান্টিক শোনালো - প্রায় তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমার মতো। বলে দেখলে পারতেন, কল্লোলদা।

    প্রতিটা অক্ষর পড়ছি। লিখুন।
  • r | 62.140.137.30 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ০১:৫১695542
  • এই মাইরি কান মুলছি, নাক ডলছি। বাঙালী জমায়েতে রোমান্টিক কথাবাত্তা নিয়ে খ্যা: খ্যা: করে ককখোনো হাসব নি।
  • Ishan | 130.36.62.139 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ০১:৫৬695543
  • এই মাইরি এই থ্রেডটা বাদ দাও না। লেখাটাই হারিয়ে যাচ্ছে। :-)
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ১০:৫৫695544
  • উল্টোডাঙ্গা কান্ড ঘটার আগেই একটা যুব সংগঠন তৈরী করা হয়। নকসালদের প্রথম যুব সংগঠন। তখন নতুন বন্ধু হচ্ছে। তারকদার ৫ নং মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়ির একতলায়, ""বডি কাটার মজদুর ইউনিয়ান""-এর অফিস। ওঁরা মূলত: গেঞ্জি কারখানার শ্রমিক। ওদের মালিক বাইরে থেকে থান কেনেন। তারপর সেটা কেটে সেলাই করে হাফ হাতা, হাতকাটা গেঞ্জি তৈরী হয়। গেঞ্জির বডি কাটেন বলে, বডি কাটার। নামটা ওরকম বিটে্‌কলে রকমের রাখা হয়েছিলো কেন, আজও জানিনা। ঐ ইউনিয়ান দিলীপদা, অবিনাশদার মত শ্রমিকরাই চালাতেন। তবে ওঁরা লেখাপড়ার কাজটা করাতেন শান্তিদা (শান্তি রায় - পশ্চিম বাংলায় যারা নাগী রেড্ডিদের সাথে ছিলেন প্রথম থেকে, তাদের একজন), বিজয়দা (রাজাবাজার সাইন্স কলেজের অধ্যাপক) বা কখনো কখনো আমাদের দিয়ে।
    ৭২ থেকে ৭৬ ঐ বাড়িটা ছিলো নকসালদের প্রকাশ্য কাজকর্মের ঘাঁটি। ওখানে একটা ভালো আড্ডা জমত। আড্ডাবাজ হিসাবে তারকদার কোন তুলনা নেই। একেবারে খাঁটি উত্তর কলকাতার বৈঠকি মেজাজের মানুষ। পোড় খাওয়া শ্রমিক সংগঠক। স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডে সেই প্রাক স্বাধীনতা আমল থেকে যে দুজন কমিউনিষ্ট পার্টির ইউনিয়ান গড়ে তুলেছিলো, তারা পরিমল দাশগুপ্ত আর আমাদের তারকদা - তারক দাস।
    ওখানেই আড্ডা মারতে মারতে কথা হয়, উল্টোডাঙ্গার কাজের পাশাপাশি, একটা যুব সংগঠন তৈরী করার। একটা ঘোষনা লিখে ফেলা হল। কোন বিপ্লবী কথাবার্তা নয়। সাধারন ভাবে, দেশের প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরা, সাম্রাজ্যবাদ, বড় পুঁজি আর গ্রামের কায়েমী সামান্ত স্বার্থে কি ভাবে সরকার কাজ করছ, তা তুলে ধরা। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা। কাজের অধিকার নিয়ে জনমত এবং আন্দোলন গড়ে তোলা। নামও দেওয়া হয় খুব ভেবে চিন্তে ""প্রগতিশীল যুব লীগ""। সভাপতি বিজয়দা, গৌতম সম্পাদক।
    পিওয়াইএল-এর প্রথম সভা হয় কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় স্টুডেন্টস হলে। ১৯৭৩, ২৩ সেপ্টেমবর। ভগৎ সিং দিবস। আরসিপিআইএর বিমলানন্দ মুখার্জি সভাপতিত্ব করেন। সমস্ত বাম দলের যুব সংগঠনকে আমন্ত্রন জানানো হয়। যদিও এসইউসির যুব সংগঠন ডিওয়াইও ছাড়া কেউই আসে নি। উদয়ন একটা দারুন নাটক লিখেছিলো। অভিনয় করেছিলো ওর যাদবপুর ইউনিভার্সিটির বন্ধুরা। হল উপচে পড়ছিলো।
    এরপর, নানান জায়গায় পথ সভা করতে থাকি আমরা। পথ সভায় বক্তৃতা করত বিজয়দা, শিবাজি আর গৌতম। একবার এসপ্ল্যানেড ইস্টে রাজনৈতিক বন্দী মুক্তির দাবীতে এপিডিআরের অবস্থান চলছে। পিওয়াইএল সেখানে সমর্থন জানাবে। সকলে বলে বসলো কল্লোল বলবে। না করার কোনো জায়গা নেই। এটাও বিপ্লবের জন্যই দরকার। ফলে - কে আছো জোয়ান/হও আগুয়ান পরিস্থিতি। তিনদিন ধরে শিবাজি, গৌতম আর বিজয়দা সম্ভব অসম্ভব তথ্য জুগিয়ে চলেছে। ওদের সামনে একটা রিহার্সেলও হয়ে গেলো। কোনমতে পাশ। উদয়নও খুব উৎসাহ দিচ্ছিল। কিন্তু ও বারবার বলছিলো, তুই তোর মতো বল। এতো তথ্য দিয়ে কি হবে?
    শেষ পর্যন্ত সেই সময়টা এসেই গেলো। গৌতম একটা ধরতাই দিয়ে ঘোষনা করলো - এখন পিওয়াইএল-এর পক্ষ থেকে কল্লোল বলবেন।
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ১২:১০695545
  • ও: টুলে দাঁড়ানো যে এতো শক্ত কাজ কে জানতো। হাতে মাউথ পিস, ঠ্যাং কাঁপছে। একপাশে শিবাজি অন্য পাশে বিজয়দা, পেছনে গৌতম, সামনে উদয়ন, জয়ীক শ্রোতাদের মধ্যে। কেন জানিনা ঐ সময়টা মিত্রা আর জয়তী ছিলো না।
    আমি তো - বন্ধুগণ - বলে ফেলেছি, আর তো থামা যাবে না। মুখে এসে গেলো,
    -এখানে আমরা অবস্থান করছি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবীতে। তারপর মোটামুটি যে যুক্তিগুলো বলা হতো - এরা যা করেছে দেশের ও দশের স্বার্থে........। পেছন থেকে গৌতম, দুপাশ থেকে শিবাজি আর বিজয়দা বলে যাচ্ছে - ঠিক আছে, চালিয়ে যা। সামনে উদয়ন আর জয়ীক ঘাড় নেড়ে ভরসা দিচ্ছে। গোটা এপিডিআরের অবস্থানকারীরা, সঞ্জয়দা, সুভাষদা, দিলীপদা, ভারতীদি সস্নেহে তাকিয়ে আছেন। আর আমি যা পারছি বলে যাচ্ছি। একসময় শেষ হল। হাততালি একটু প্রশ্রয় সমেত পড়লো। আমার মনে হচ্ছিলো বন্ধুরা এইভাবে পাশে থাকলে - সব - সব - সব করে ফেলা যায়। জয় হোক বন্ধুত্বের।
    ৭৩-এর শেষে বা ৭৪-এর প্রথমে, ঠিক হলো যুব-শ্রমিক সংগঠন মিলে মিছিল হবে। যুবকদের কাজের অধিকারের দাবীতে শ্রমিকরা সোচ্চার হবে, শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে যুবকেরা আওয়াজ উঠাবে। উল্টোডাঙ্গা থেকে মিছিল বার হোল, শিয়ালদা অবধি। পিওয়াইএল, বডি কাটার ইউনিয়ন আর উল্টোডাঙার বস্তির মানুষেরা। ৭০-এর পর, এপিডিআর ছাড়া নকসালদের এই প্রথম প্রকাশ্য মিছিল।
    সব ভালোরই একটা খারাপ দিকও থাকে। এই মিছিলের পর থেকেই আমাদের উল্টোডাঙ্গার কাজকর্ম পুলিশের গোচরে এলো।
    আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম। প্রকাশ্য কাজে এই ঝুঁকি নিতেই হবে - এটাই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিলো। আমাদের ধারনা ছিলো না, পুলিশ এতো দ্রুত আঘাত হানবে।

    গৌতম আর মিত্রা ওদের নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। উদয়ন পড়াশোনা নিয়ে। কাজের ধারা নিয়ে মতবিরোধ হতে লাগলো। বডি কাটার ইউনিয়ানের লোকজন পিওয়াইএল-এ উৎসাহ দেখাচ্ছিনেন না। ধীরে ধীরে গৌতম-মিত্রা-উদয়ন আলগা হয়ে যেতে লাগলো। বিজয়দারও নতুন সংসার। তিনি থাকলেন, কিন্তু যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে এলো। আমি আর শিবাজি, রোজ নিয়ম করে সিপিএম আর এসইউসি ছাড়া, অন্য সব বাম দলগুলোর অফিসে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিতাম। সিপিএম অফিসে ঢোকাই যেতো না। আর এসইউসি অফিসে আড্ডা হতো না, কেবল তর্ক আর সিপিএম চুলকানো।
    এই সময় বহু সুন্দর মানুষের সংস্পর্শে এসেছি। ফরোয়ার্ড ব্লকের ভক্তিভূষন মন্ডল, আরসিপিআইয়ের বিমলানন্দ মুখার্জি, আরএসপির ক্ষিতি গোস্বামী। এরা তখন একেবারে কোনঠাসা অবস্থায়। আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় জেনেও, সাদরে কথা বলতেন। চা-মুড়ি-তেলেভাজা সহযোগে বৃহত্তর বাম ঐক্য জিন্দাবাদ চলত, সেই অন্ধকার সময়ে।
    ক্ষমতা কাউকেই কথা রাখতে দেয় নি।

  • bozo | 129.7.154.46 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৬ ০২:২১695546
  • আমার দাবী, মামুর কাছে। কল্লোল দার এই লেখা টা পুরো এক হয়ে কোনো গুরু র সংখ্যায় বের হবে। নইলে আলাদা লিংক হয়ে রইবে।
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৬ ১২:৫৯695547
  • সে বড় সুখের সময় নয়।
    নকসালবাড়ির যে স্ফুলিঙ্গ দাবনল জ্বালাতে পথে নেমেছিলো বসন্তের বজ্রনির্ঘোষে, তখন তা নেহাৎই সতত অসুখ স্মৃতি। কলকাতার মুখ ঢেকে গেছে এক কাশ্মীরী ব্রাহ্মণকন্যার স্টেনসিলে.......""এশিয়ার মুক্তি সূর্য""। কয়েক হাজার যুবক-যুবতীর লাশ কাঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের লড়াইয়ের সাথীরা। কিছুদিন আগেও যারা পরষ্পরের বিরূদ্ধে অস্ত্র শানিয়েছিলো, আজ তারা ছয়াচ্ছন্ন পরবাসে প্রতিবেশী। তখন যৌবনের ঠিকানা সারা ভারতবর্ষের নানান জেল আর সাবজেল।
    তবু আগুন.......। সেই আশ্চর্য অন্ধকারে মশাল হয়ে জ্বলে পরাজয়ের ভাঙ্গা পাঁজর। সেই আলোয় আমরা খুঁজে চলি পরাজয়ের উৎসমুখ।
    তখন সমালোচনা-আত্মসমালোচনার তুমুল তর্কের ভেলায় পাড়ি দিচ্ছি আমরা। কলার মান্দাস হয়ে গাঙ্গুর সময়ে ভেসে আসছে ""স্বদেশ"", ""প্রস্তুতি পর্ব"", ""অনুষ্টুপ"" , ""পদধ্বনি"" - বইপাড়ার গলিঘুঁজি থেকে। হাড়কাটা লেনের ভিতর তস্য গলি, সেখানে থেকে তর্কের ঝোড়ো বাতাস বয়ে আনছে "পূর্বতরঙ্গ""। দক্ষিণ কলকাতায় উদ্বাস্তু কলোনীর মেঠো গলি আর ছেঁচা বেড়ার ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে আসছে সেই সময়ের কবিতা, ছোটো গল্প, উপন্যাস - ""ব্যারিকেড"" , ""নান্দীমুখ""এর পাতায়। মৃনাল সেন তখন ""ইন্টারভিউ"", ""কলকাতা ৭১"", ""এক অধুরী কাহানী"" পেরিয়ে ""পদাতিক""-এ। বীরেনদা (বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) তাঁর নিজের অস্থি দিয়ে লিখছেন ""মুন্ডহীন ধরগুলো আহ্লাদে চিৎকার করে"", সমীরদার (সমীর রায়) কলমে দক্ষিণ বাংলার মাটি আর প্লাবন - ""রনপায়ে হেঁটে যাবো""। রঘুদা - রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায় (তখন শংকর বসু) বাদার মাটি মেখে লিখছেন - বাদার গল্প। বেলেঘাটা, বেলিয়াহাট্টা হয়ে জন্ম নিচ্ছে রঘুদারই কলমে - ""কম্যুনিস""। উৎপলদা, উৎপলেন্দু চক্রবর্তি (তখন স্বর্ণ মিত্র), উড়িষ্যা-মেদিনীপুর সীমান্তের লালমাটির রুক্ষতায় লিখছে - ""গ্রামে চলো""।
    আর আছেন আর একজন। বইপাড়ার নিউ বুক সেন্টারের কাউন্টারের ওপার থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। সামনে হ্যারিসন রোডের ওপর নাম না জানা গাছটার সবুজ পাতার চাইতেও সবুজ মানুষটি বলে উঠলেন - আসুন কমরেড, চা খাওয়া যাক। এনবিসির কমলেশদা, মাওএর পিকিং রিভিউ আর ফিদেলের গ্রানাদা-র ভান্ডারী কমলেশদা, ১৯৫৬য় পুব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির মেম্বার কমলেশদা, যুদ্ধের বিরূদ্ধে যুদ্ধ-এর কবি কমলেশ সেন - যখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়া কাউকে কমরেড বলে ডাকেন - তখন যে কি হয় তা আজ আর লিখে বোঝানো যাবে না।

  • kallol | 220.226.209.2 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৬:১৪695548
  • সরাসরি রাজনীতির জায়গা থেকে অনেকেই সরে আসছেন সংস্কৃতির আঙ্গিনায়। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন - পালিয়ে যাওয়া। আমাদের কিন্তু তা মনে হয় নি। যে কথা মিটিং-মিছিল করে বলতে পারছি না, তা যদি গান-নাটক-কবিতা-গল্প-প্রবন্ধের ভিতর দিয়ে বলতে পারি, ক্ষতি কি? যেখানে যার পক্ষে যেভাবে সম্ভব, লড়ে যাওয়া।
    প্রচুর নটকের দল, গানের দল, ছোটো পত্রিকা গোষ্ঠী গড়ে উঠতে লাগলো। সারা বাংলা জুড়ে। সেগুলোকে কেন্দ্র করে পুরোনোদের সাথে সাথে নতুন মুখও আসতে লাগলো।
    বেশ কিছু ভালো শিল্পসৃষ্টি উঠে এলো। উত্তরপাড়ার অরণি - তখন প্রতুলদার গানগুলো গাইতো - বোকা বুড়োর গল্প, জন্মিলে মরিতে হবে, দাবানল জ্বলুক দাবানল। ওরা একটা দারুন কবির লড়াই তৈরী করেছিলো। আমার খুব প্রিয় গান ছিলো : হুঁশিয়ার-ও সাথী কিষান মজদুরভাই সব হুঁশিয়ার, অরণির তৈরী।
    উত্তরপাড়ারই নাটকের দল (নামটা ভুলে গেছি) দুটো অসাধারন নাটক নামালো - হচ্ছেটা কি? আর লাশ বিপনী।
    হেমাঙ্গদার (হেমাঙ্গ বিশ্বাস) গানের দল মাস সিংগার্স। দারুন সব গান গাইছেন। প্রীতি গাইতো - আমরা তো ভুলি নাই শহীদ.... প্রসাদের গলায় - ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না..... গণনাট্য আন্দোলনের পর এরকম সংস্কৃতিক জোয়ার বোধ হয় আসেনি। ওদিকে বীর সেন , বাদলদারা (বাদল সরকার) কার্জন পার্কে প্রতি শনিবার, নানন পথসভায়, পথনাটক করতেন। যে অনুশীলন থেকে পরে উঠে এলো বাদলদার যুগান্তকারী থার্ড থিয়েটার আঙ্গীক।
  • S | 61.95.167.91 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৬ ২১:৪৩695549
  • হুঁশিয়ার, ও সাথী কিষাণ মজদুরভাই সব হুঁশিয়ার, ... এই গানটাই তো সেই, সাথীদের খুনে রাঙা পথে দ্যাখো হায়নার আনাগোনা। তাই না?
  • kallol | 203.101.25.234 | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৮:২১695550
  • S - ঐ গানটাই। ঐ দুটো লাইনের জন্যই গানটা এতো প্রিয়। সেই সময়কে এতো ঠিকঠাক ভাবে ধরা-ভাবা যায় না।
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬ ১০:২৩695551
  • ১৯৭৪ এপ্রিল। এইসব নানান সংগঠনগুলো, ছোটো পত্রিকা, গানের দল, শ্রমিক সংগঠন, নাটকের দল, আমাদের মত যুব সংগঠন এরা সবাই মিলে বসা হলো। উদ্দেশ্য মে দিবস পালন। প্রকাশ্য কাজকর্ম বাড়াতে হবে। আর তার সাথে সাথে এই সংগঠনগুলোর একটা যৌথ মঞ্চ গড়ে তোলা। তৈরী হলো ""মে দিবস উদ্‌যাপনী কমিটি""। বহু সংগঠন এমন কি বহু ব্যক্তিমানুষও যোগ দিলেন। কমিটিতে মৃনাল সেনও ছিলেন। মিছিল শুরু হলো সুব্বারাও পনিগ্রাহীর ""কমুনিষ্টালাম মেইমু কস্টজীবলম"" গানটার বাংলা দিয়ে ""কমিউনিষ্ট আমরা/আমরা কমিউনিষ্ট""। প্রায় শ-চারেক মানুষ যখন কলকাতার রাস্তায় এক বৈশাখী দুপুরে গেয়ে ওঠে ""হাত দিয়ে বলো সূর্যের আলো/রুধিতে পারে কি কেউ/আমাদের মেরে ঠেকানো কি যায়/জনজোয়ারের ঢেউ.............. তখন কলকাতা কথা বলতে ভুলে যায়। তখন কথা হয় চোখে চোখে, মনে মনে। ট্রামে-বাসে, বাড়ির বারন্দায়, ফুটপাথে, মিছিল দেখতে থাকা মানুষ বার্তা পাঠায় দৃষ্টির ঈথার তরঙ্গে - এতোদিন কোথায় ছিলেন..............
    একটা ছোট্টো অসুখ, মিছিলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। মৃনালবাবু ছবি তুলছিলেন-মুভিতে। এটা যে করবেন তা আগে বলেননি উনি। অনেকেই প্রতিবাদ করেন। ঐ মিছিলে এমন অনেকেই ছিলেন যাঁরা তখনো আত্মগোপনে। তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই চাইছিলেন না ছবি তোলা হোক। মৃনালবাবুও বুঝতে চাইছিলেন না। ফলে একটা ঝামেলা হয়। মৃনালবাবু মিছিল ছেড়ে চলে যান। একটু বিশৃঙ্খলায় মিছিল শেষ হয়।
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৪:২৮695553
  • পরের মাসেই ২০শে জুন - ফ্যাসীবাদ বিরোধী দিবস।
    এবারও সেই একই রকমভাবে তৈরী হলো ""২০শে জুন উদ্‌যাপন কমিটি""। শিয়ালদা থেকে শুরু হলো মিছিল। মৌলালীর মোড়ে - অরনীর তুবির গলায় প্রথম শুনলাম - প্রতুলদার বোকা বুড়োর পাঁচালী। তখন তো প্রতুলদার গানগুলো ""জেন""এর গান বলে চলতো। একটা চীনা লোকগাথাকে এইভাবে পাঁচালীর আঙ্গীকে ঢালা যায়, ভাবাই যায় না। নেবুতলার তমালদাদের ওপেন থিয়েটার থেকে গাজীর গান করল। আর এক অসাধারন সৃষ্টি। কি ভয়ানক শ্লেষ - চাউলের দাম বেড়েছে/লোক মরেছে/কি বা আসে যায়/গণতন্ত্রের কথা লিখে দিওয়ালের গায়। দ্যাশের অগ্রগতির/তরে ক্ষতি/হইবেই অল্প স্বল্প/এয়ার চাইতেও ভাল লাগে/গাঁজাখোরের গল্প........
    ২০শে জুনের অনুষ্ঠান সব ঠিকঠাক ভাবেই শেষ হলো। ২০শে জুনের অন্যতম কনভেনার ছিলাম আমি। সেই প্রথম আমি এরকম একটা দায়িত্ব পেলাম। সব ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ায় কেমন একটা আনন্দ হচ্ছিলো।
    রিভিয়্যু মিটিংএ ঠিক হলো পরের অনুষ্ঠান - ২০শে জুলাই - সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস।
  • dd | 58.68.4.2 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:৪৮695554
  • এখন আর কিছুই স্ট্রাইক করে না। কোনো কিছুই আবেগে মন্থিত করে না। রাগ নেই দু:খ নেই অভিমান নেই। স্থবির।

    শুধু ঐ কিশান ভাই মজদুরভাই শুনলে এখনো হাড় পিত্তি জ্বলে যায় ..... শুনেছেন কখনো অধ্যাপক ভাই সরকারী কর্মচারীভাই ? এরকম পিঠ চাপড়ানী সম্বোধন ?

    এইসন শুনলেই ইচ্ছা করে ......যাগ্গে
  • Ishan | 130.36.62.141 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:৫৫695555
  • এইটা dd ব্যাপক দিয়েছে। আমারও একদম এরকমই হয়। তবে ঐ সাথীদের খুনে রাঙা পথে দেখো হায়নার আনাগোনা লাইনটা স্রেফ কাব্যগুণের কারণেই বহুত খুব।

    এই সুতোয় সবাইকে হাবিজাবি বকতে বারণ করে নিজেই বকে ফেললাম। মার্জনা প্রার্থনীয়। :-)
  • tan | 131.95.121.127 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬ ২৩:০৮695556
  • উফ্‌ফ!!!!
    অধ্যাপকভাই....:-))))
    লেখকভাই.....:-))))
    অভিনেতাভাই....:-)))))
    এইসব শব্দ ঢুকিয়ে গান লেখা বহুৎ টিকরমবাজীর ব্যাপার!
  • kallol | 220.226.209.2 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ ০৯:১৮695557
  • হয়তো এটা অন্য সুতোর কারবার - তবু দীপ্তেন যখন সামান্য হলেও কষ্ট পেয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে, আর ঈশেনও যখন প্রায় সেই হালে, তখন চুপ করে সেটা দেখে যাওয়াটা শব্দহীন পাপ।
    এই দীপ্তেন/ঈশেন, কিসের তাগিদে সিঙ্গুর নিয়ে কথা বলো, তর্ক করো? শুধুই মধ্যবিত্তের বিপ্লব বিলাস? আমি বিশ্বাস করি না। কেন গুড়গাঁওএর লড়াই উত্তেজিত করে তোমাদের? শুধুই অ্যাড্রিনাল ক্ষরণ? আমাকে বিশ্বাস করতে বোলো না।
    গোটাগোটা করে উচ্চারণ করলেই ভাই হয়? নইলে হয় না?
    স্থবিরতাও প্রতিবাদ। তুমি কি বয়স্ক মানুষদের দ্যাখো নি? বিশ্বসংসার এবং পাশের মানুষটি যখন তাদের অস্বীকার করে, তাদের অস্তিত্বকে "না" করে দেয়, তখন তাঁরা প্রতিবাদ করেন, ঐ স্থবিরতার ভাষায়।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ ০৯:৪৫695558
  • ১লা মে আর ২০শে জুনের সাফল্য আমাদের সাহসী করেছিলো। আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম, হ্যাঁ, ঘুরে দাঁড়ানো যায়। ২০শে জুলাই উদ্‌যাপনী কমিটির মিটিংগুলোতে বোঝা যেতো সেটা। প্রত্যেকটা মতামতকে সম্মান দিতে শিখছিলো সবাই, নিজের মতে প্রত্যয়ী থেকেও। এটা আগে ছিলো না। আগে, মতবিরোধ হলেই সে সিয়া বা কেজিবির বা পুলিশের দালাল। এই অসহিষ্ণুতা চলে যাচ্ছিলো।
    এপিডিআর একটা কাজ খুব নি:শব্দে করে ফেলেছিলো, প্রায় একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব - যে কোন সিদ্ধান্ত গৃহিত হত সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর ভিত্তিতে নয়, বরং সর্বসম্মতিক্রমে। কোন বিষয়ে একজনেরও আপত্তি থাকলে তা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো না যতক্ষণ না সে বিষয়ে সবাই একমত হচ্ছে। এতে হয়তো অনেক কাজ করা যেতো না। কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশী মূল্যবান ছিলো পারষ্পারিক সম্মান ও শ্রদ্ধার বাতাবরণ।
    ২০শে জুলাইএর মিছিল কার্জন পার্ক থেকে সুরু হবে বলে ঠিক হলো। এবার শুধু কলকাতা আর শহরতলি নয়, বহরমপুর, শিলিগুড়ি, মালদা, বর্ধমান থেকেও অনেক সংগঠন যোগ দিলো।
  • Ishan | 67.173.95.163 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ ১০:০০695559
  • সরি স্লাইট ছড়িয়েছি। লুজ কমেন্ট করা উচিত হয়নি।
    বলতে চেয়েছিলাম কিষান ভাই মজদুর ভাই শুনলে দীপ্তেন্দার মতই লাগে। এবং সেটা লাগে বহুবার শোনার ফলে জীর্ণ হয়ে যাবার জন্য। এর সঙ্গে কিষান বা মজদুর বা পলিটিক্সের বিশেষ যোগ নেই।

    কিন্তু পৃথিবীর কোনো ব্যাপার স্ট্রাইক করেনা এরকম অন্তত: আমার ক্ষেত্রে একদম নয়। বরং প্রায় সব ব্যাপারই আমাকে বেশি বেশি করে স্ট্রাইক করে :-)

    এই সুতোটার ইন্টিগ্রিটি আমিই ভাঙলাম। ছরি। কল্লোলদা ক্যারি অন। আমি আর লুজ টক করবনা। :-)
  • kallol | 220.226.209.2 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৭:১৭695560
  • ২০শে জুলাই ১৯৭৪।
    বেলা ১টা নাগাদ পৌঁছে গেছিলাম কার্জন পার্কে। সে এক উৎসবের মেজাজ সারা পার্কটাকে ছেয়ে ফেলেছে। জায়গায় জায়গায় গোল হয়ে বসে গেছে গানের দলগুলো। এখানে অরনী তো ওখানে মাস সিংগার্সের বন্ধুরা। ওদিকে উত্তরপাড়ার ইউনিট থিয়েটারের (নামটা মনে পড়েছে - যারা "হচ্ছেটা কি" আর "লাশ বিপনী" করতো) বন্ধুরা নাটকের একটা বিশেষ অংশের মুভমেন্টগুলো ঝালিয়ে নিচ্ছে। এদিকে আরএকজন (তার নাম জানিনা, নাটক করে) একটা আশ্চর্য মুকাভিনয় করে দেখাচ্ছে - প্রাণপনে দৌড়াচ্ছে সামনের দিকে কিন্তু আসলে পেছনে হাটছে - ইন্দিরার ""প্রগতিশীলতার"" আসল চেহারা। বিশাল একটা ভিড় সেখানে অভিনেতাকে সাবাসী দিচ্ছে। এই সামনে দৌড়ের ভঙ্গী করে পেছনে হাঁটা, এরই নাম ৯০-এ মাইকেল জ্যাকসনের ""মুন ওয়াক""। আমি আজও সেই অভিনেতার নাম জানি না। প্রচুর রংবেরং-এর ব্যানার, পোস্টার-এ, সেদিনের কার্জন পার্ক একদম মেলার মাঠ।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২১ ডিসেম্বর ২০০৬ ১১:৩১695561
  • মিছিল শুরু হলো। রানী রাসমনী রোডের দিকে যাবে মিছিল তারপর এসপ্ল্যানেড ঘুরে, ধর্মতলা স্ট্রিট হয়ে, বৌবাজার, কলেজ স্ট্রিট দিয়ে শ্যামবাজার।
    তখন কার্জন পার্কের ভিতর দিয়ে একটা বাঁধানো রাস্তা ছিলো, যেটা এসপ্ল্যানেড ইস্ট থেকে রানী রাসমনী রোডে যেত। সেই রাস্তা দিয়ে মিছিল এগুচ্ছে। আমি নৈহাটি থেকে আসা একটা গানের দলের পাশেপাশে হাঁটছি। ওরা একটা দারুন গান গাইছিলো - আমরা সূর্য সেনা/আমরা অগ্নিবীনা/আসুক প্লাবন চেতনায়/মাথা নীচুর আগে/যেন রক্তে আগুন জাগে/মুক্তির পথে ঠিকানা..............। দুই দুই ছন্দে, ১৬ মাত্রায় একদম কুচকাওয়াজি মেজাজে বাঁধা এই গানটা ওরা বারবার গাইবে, ফলে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই গানটা শিখে নেওয়া যাবে। এই আশায় ওদের সাথে সাথে চলছিলাম। হঠাৎ দেখি আমাদের দলটার থেকে মিছিলের সামনের অংশ অনেকটা এগিয়ে গেছে। এমন হয়। মিছিলের সামনের লোকেরা বেশী তাড়াতাড়ি হাঁটলে এরকম ফাঁক তৈরী হয়ে যায়। আমি তাই দৌড়ে মিছিলের সামনের দিকে যাচ্ছিলাম, ওদের বলতে - একটু আস্তে হাঁটো। মিছিলের মুখের কাছে প্রায় পৌঁছে গেছি, আচমকা কানে এলো তমালদার তীক্ষ্ণ গলায় হাঁক - মিছিইইইইল দৌড়াআআআও..............
    সেই আশ্চর্য ডাক যেন ভেসে এলো যুগান্তের ওপার হতে। আর ঠিক তারপর সারা মিছিল সমস্ত গান আর স্লোগান ছেড়ে একসাথে গর্জে উঠলো, এক লহমায় ফেলে আসা সাত সাত বছর পার করে - নকসাআআআলবাড়ি লাল সেলাম - নকসালবাড়ির লাল আগুন দিকে দিকে ছড়িয়ে দাও - প্রতিবাদে প্রতিরোধে প্রতিশোধে কমরেড/গড়ে তোল গড়ে তোল গড়ে তোল ব্যারিকেড................। সারা কার্জন পার্ক জুড়ে ফেটে পড়ছে আগুন পাহাড় , ঝলসে যাচ্ছে এসপ্ল্যানেড। ঝড়ের কেন্দ্র তখন রানী রাসমনী রোডের ইডেনের দিকের প্রান্তে।
    পাগলের মত দৌড়চ্ছি সামনের দিকে। সামনে একটা প্রিজন ভ্যান, প্রাগৈতিহাসিক হিংস্রতার মতো দাঁড়িয়ে আছে, দেবর্ষিকে পেটে নিয়ে। ওরা মাথা তাক করে আছে কাপুরুষ ধাতব নল। প্রিজন ভ্যান ঘিরে ধরেছে লাভাস্রোত। লাথির পর লাথি হয়ে আছড়ে পড়ছে লাভাস্রোতের ঢেউ ভ্যানের গায়ে........... হাজারটা বজ্রকে লজ্জা দিয়ে হাঁক পাড়ছে মিছিল - বোলরে কমরেড/হামলা বোল/তানকে সিনা/হামলা বোল/জোরসে বোল/হামলা বোল/পুলিশ কুত্তা পে/হামলা বোল/ফিরসে বোল/হামলা বোল/আরে ডরতা কিউউউউঁ/হামলা বোল..........। হাতে হাত ধরে আগুনের মালা ঘিরে ধরেছে ভ্যানটাকে। ভ্যানের সামনে-পেছনে-ডাইনে-বাঁয়ে রাস্তা জুড়ে মিছিল শুয়ে পড়েছে। দেবর্ষির মাথা তাক করা ধাতব নল কাপুরুষদের দুপায়ের ফাঁকে নেতিয়ে পড়েছে।
    সামনে পুলিশের লাইনে ক্রমশ: সংখ্যা বাড়ছে। হঠাৎ একসময় ধেয়ে এলো তারা। শুয়ে থাকা বন্ধুদের ওপর নেমে আসছে লাঠি আর বুট, রক্তে ভেসে যাচ্ছে রানী রাসমনী রোড, কার্জন পার্ক - ছিটকে পড়ছি বন্ধুরা। একটা প্রচন্ড ধাক্কায় ছিটকে পড়েছি নালা পেরিয়ে ভবানীপুর ক্লাবের গেটে। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে দেখি এপিডিআরের মিছিলে আলাপ চেনা মুখ ভেসে যাচ্ছে রক্তে - সে চেঁচিয়ে বলল - কমরেড, সত্যযুগে জীবনদাকে খবর দিন। আমি দৌড়চ্ছি ভবানীপুর মাঠ পেরিয়ে তার কাঁটার বেড়া ডিঙ্গিয়ে, মনুমেন্ট ছাড়িয়ে, ধর্মতলার মোড় চিরে, স্টেটসম্যান হাউস ডানে রেখে সত্যযুগ অফিসে। আমার পেছনে ফেলে আসা কার্জন পার্কে পুলিশের বুটের তলায় রক্তাক্ত হচ্ছে গান - সাথীদের খুনে রাঙ্গা পথে দ্যাখো - হায়নার আনাগোনা.............

  • kallol | 220.226.209.2 | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৬ ১০:২১695562
  • সত্যযুগ ছিলো সেই সময়ের(৭০-৭৭) একমাত্র বাম মনোভাবাপন্ন খবরের কাগজ। এর সম্পাদক ছিলেন জীবনলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব মাঝে মধ্যে যাওয়া হতো, জীবনদার কাছে। সেই সূত্রে সত্যযুগের লোকজন মুখচেনা হয়ে গেছিলেন।
    খবর পেতেই জীবনদা কয়েকজন সাংবাদিককে পাঠিয়ে দিলেন কার্জন পার্ক হয়ে লালবাজার ঘুরে আসতে। আমাকে বসিয়ে দিলেন অন্য এক সাংবাদিকের সঙ্গে, কি ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ নেওয়ার জন্য। প্রায় এক ঘন্টা পরে ওরা ঘুরে এসে খবর দিলো, লাঠিচার্জে এক্‌জন মারা গেছেন। মেডিকাল কলেজে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। নিয়ে গেছিলেন এক মহিলা। সেখানেই মানুষটি মারা যান।
    জীবনদা একজন চিত্রসাংবাদিককে পাঠালেন, মানুষটির ছবি তুলে আনতে। আমকে বসিয়ে রাখলেন অপিসে। আরও ঘন্টাখানেক পর, ছবি এলো। আমি চিনতে পারিনি। নাম শুনলাম প্রবীর দত্ত। আসলে প্রবীর প্রতি শনিবার কার্জন পার্কে বীর সেনদের নাটক দেখতে আসতো। সেই সূত্রে ওর প্রথমবার এই মিছিলে আসা। ওরা তখন ভবানীপুরে থাকতো। কোন মিটিং মিছিলে আগে আসে নি। ফলে আগে কখনো দেখিনি। জীবনদা বারবার করে বলছেন, মনে করো, মনে করো কোথাও আগে দেখেছো কি না। তাহলে আমি আমার দায়িত্বে ছাপিয়ে দেবো - রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি বলতে পারিনি। জীবনদাও রিপোর্ট অন্যভাবে বানালেন। পরদিন ছাপা হলো - সাংস্কৃতিক কর্মী, বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তানের প্রাণ গেলো পুলিশের লাঠিতে।

  • kallol | 220.226.209.2 | ২৮ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৬:৪৫695564
  • এই ঘটনার পর আমরা তারকদার বাড়িতে বসলাম। কি করা যায়, এই নিয়ে খুব তর্ক হলো। কেউ কেউ চাইছিলেন মাশাল মিছিল হোক, কেউ চাইছিলেন বড়ো করে পতিবাদ সভা, কেউ কিছু না করার আব অপেক্ষা কারার কথা বলছিলেন। আমি মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলের প্রস্তাব দেই - গান্ধীবাদী প্রতিবাদ বলে খারিজ হয়ে যায়।
    এর মধ্যে খবর আসে উৎপল দত্ত, রঙ্গনায়, মিটিং-এ বসেছেন, গ্রুপ থিয়েরটাদের নিয়ে, প্রবীর দত্তের মৃত্যুর প্রতিবাদে কিছু করার জন্য। আমাদের মিটিং-এর সকলেই আমাদের না ডাকার জন্য উৎপল দত্তকে প্রাণ ভরে গালাগালি করলো। ঠিক হলো রঙ্গনার মিটিং-এ আমি যাবো ২০শে জুলাই কমিটির হয়ে।
    তখনই রঙ্গনার দিকে রওনা হয়ে গেলাম। মুক্তারাম বাবু থেকে রঙ্গনা এমন কিছু দূর না। পৌঁছে দেখি, উৎপল দত্ত, অজিতেশদা, বিভাসদা, থিয়েটার কমিউন, চারণদলের অলকদা, বাদলদা (বাদল সরকার), মৃনাল সেন, আরও অনেকে এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আমি ঢুকতেই আমায় জিজ্ঞাসা করা হলো কোন গ্রুপ। আমি ২০শে জুলাই কমিটির থেকে এসেছি বলতেই, উৎপলবাবু বললেন যে ওখনে সবাই ব্যক্তিগত এসেছেন, যেমন উনি নিজে উৎপল দত্ত, এই যে ইনি মৃনাল সেন (জানেন বোধহয় সিনেমা টি্‌নমা করেন), ইনি সৌমিত্র (মানে অভিনয়......), ঠিক এইভাবে উৎপলীয় কায়দায় ডায়লগ থ্রো করে আমায় বললেন - আপনি? আমার তখন খুব খারাপ অবস্থা। তবু বয়সের ঔদ্ধত্য আমায় দিয়ে বলালো - ব্যক্তিগত ভাবে নয় আমি এসেছি ২০শে জুলাই কমিটির প্রতিনিধি হিসাবে। সভায় থাকতে দেওয়া হলো না আমায়।
    ওনারা পরে ইউনিভার্সিটি ইনসটিউটে একটা প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে আমরা কথা বলে বাদলদাকে রাজি করাই কার্জন পার্কে একটা নাটক করতে। বাদলদা ""অজগর"" লেখেন ও করেন। আর একজন সেদিন কার্জন পার্কে ছিলেন - সৌমিত্রবাবু।
    এরপর থেকে প্রায় সব রকমের প্রকাশ্য কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন