এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কারাগার, বধ্যভূমি ও একঝাঁক স্মৃতি বুলেট

    kallol
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০০৬ | ১৩৩৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kallol | 192.77.110.18 | ০৪ জুলাই ২০০৭ ১২:৪৮695632
  • রোজ সকালে আমাদের (আমি, দেবাশিস, আকুল আর শম্ভু) লালবাজার থেকে লর্ড সিন্‌হা রোড নিয়ে যাওয়া হত। কোন কোন দিন আমাদের আই.ও (ইনভেস্টিগেটিং অফিসার) তার ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন, না হলে যে ঘরে আমাদের প্রথমে নিয়ে আসা হয়েছিলো, সেই পাঁচজনের ঘরে বসে থাকতাম।
    প্রথমে আমাদের আই.ও মশাইয়ের কথা বলি। একদম নিপাট ভালো মানুষ। প্রথমদিন জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ঘরে ঢুকিয়েই বললেন
    - দেখুন ভাই, চাকরী করতে হয় তাই করি। আমার এসব একদম ভালো লাগে না। আপনাদের ইন্টারোগেট করার কথা আমার। আমি একদিনেই শেষ করে দিতে পারি। তাহলে আবার আর একজনকে পাঠাবে। তারচেয়ে আপনাদের এই সাতদিন ধরে রোজ নিয়ে আসবো ইন্টারোগেট করার নামে। তাতে আমিও বাঁচি, আপনাদেরও লক-আপে থাকতে হয় না।
    আমার প্রথমটা সন্দেহ হলো। ভালোমানুষ সেজে কথা বার করতে চায়? তারপর মনে হলো, কি কথা বের করবে? কাজের মধ্যে কাজ বলতে উল্টোডাঙ্গা খালপাড়ে ফ্রি কোচিং সেন্টার - তার সাথে আমাদের যোগযোগ এরা জানে না। নাহলে মিত্রা আর জয়তিকে আমাদের কথা জিজ্ঞাসা করতো। আর ওরা যদি আমাদের কথা বলে দিতো, তবে অনেক আগেই আমাদের খোঁজ পড়তো। আর রইলো বাকি এপিডিআর। সে তো আমরাই বলেছি যে আমরা এপিডিআর করতাম, ছাড়া পেলে আবার করবো। তাই ভরসা করে রাজি হয়ে গেলাম। উনি খুব কলা খেতেন, আমরাও খেতাম। দুপুরে আমাদের জমা রাখা পয়সা দিয়ে পাঁউরুটি খেতাম। যেদিন উনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতেন সেদিন গোপালবাবুদের সাথে নানান আড্ডা হতো।
    গোপালবাবু আমাদের গ্রেপ্তারী স্কোয়াডের প্রধান। উনি এবং আরো চারজন অন্য ঘরটায় বসতেন। বেশিরভাগ সময়টাই ওরা বোঝানোর চেষ্টা করতেন পুলিশ কনস্টবেল মারাটা আমাদের ভুল ছিলো। কোনো অসুবিধা নেই, আমরাও তাই মনে করতাম। ওদের মতে বরং বড়বাজারে মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীদের মারা উচিৎ ছিলো। আমাদের তাতেও আপত্তি। আমরা ব্যক্তি হত্যার রাজনীতিকে ভুল মনে করতাম। ওরা বেশ হতাশ হয়ে ওসব বলা ছেড়েই দিলেন।

  • kallol | 192.77.110.18 | ০৫ জুলাই ২০০৭ ১২:৪৬695633
  • এইভাবে চললো দু দিন। তৃতীয় দিন হঠাৎই একটা সাংঘাতিক কান্ডো ঘটলো। সেদিন সকালে এসেছি। চা বলা হয়েছে। একটা সিগারেট ধরাবো ধরাবো করছি, এমন সময় ঘরে ঢুকলেন অশোক চ্যাটার্জি।
    এই অশোক চ্যাটার্জি ৬৯-৭২ টালিগঞ্জ আর ভবানীপুর থানায় ছিলেন। আমি যখন প্রথমবার ধরা পড়ি তখন, টালিগঞ্জ থানায় ওনার ""স্নেহস্পর্শ''-এর স্বাদ পেয়েছিলাম। আবার যে ইনফর্মার ""খতম"এর কেসে পুলিশ দেবাশিসকে খুঁজছিলো সেই ভূটান নাকি এই অশোক চ্যাটার্জির সোর্স ছিলো।
    অশোক চ্যাটার্জি কে দেখে আমরা দুজনেই একটু চুপ করে গেছিলাম। আকুল আর শম্ভু কথা বলছিলো, আমরা শুধু হ্যাঁ-হুঁ করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অশোক চ্যাটার্জির চোখ পড়ল দেবাশিসের দিকে।
    - চেনা চেনা লাগছে যেন !
    হঠাৎই ঐ পাঁচজনের কনিষ্ঠতম এস.আই-টি বলে উঠলেন
    - স্যার, এই তো আপনার কালীঘাটের দেবাশিস।
    ব্যস, যা হবার হয়ে গেলো। ঘরের কোনায় পড়ে থাকা পুলিশি বাঁশের লাঠি নিয়ে অশোক ঝাঁপিয়ে পড়লেন দেবাশিসের ওপর। তার সাথে অকথ্য গালাগালি।
    আমরা কি করবো বুঝতে পারছিনা। আকুল আর শম্ভু সিঁটিয়ে গেছে। আমার হাত গোপালবাবু শক্ত করে ধরে আছেন। শরীরের সমস্ত রক্ত যেন মাথায় দাপাদাপি করছে। ভীষন অসহায়, আর ভীষন ছোটো লাগছিলো নিজেকে। বারবার মনে হচ্ছিলো চিৎকার করি, কিন্তু পারিনি। একটা ভয়, বিহ্বলতা গ্রাস করে ফেলেছিলো। আমি কাপুরুষের মত শুধু দেখছিলাম আর দেখছিলাম। শেষে দেবাশিস আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না। মাটিতে পড়ে গেলো। আর পারলাম না। গোপালবাবুর হাত ছাড়িয়ে, দেবাশিসকে তুলে ধরলাম। প্রচন্ড আঘাতের ফলে ওর সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে। অশোক চ্যাটার্জি কেন জানি না দেবাশিস মাটিতে পড়ে যেতেই লাঠিটা ছুঁড়ে ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি ওকে চেয়ারে বসাতে চেষ্টা করছিলাম। ও বসতে পারছিলো না। জল খেতে চাইছিলো। আমি উঠে জল ঘরের বাইরে রাখা কুঁজো থেকে জল আনতে যেতেই গোপালবাবু বাধা দিলেন।
    - এখন জল দিতে নেই, আরও শরীর খারাপ করবে।
    উনি আমাদের আই.ও কে খবর দিতে বললেন, আর ওষুধ আনতে বললেন।
    আমাদের আই.ও এলেন।
    - এটা কে করল ?
    - স্যার, অশোকবাবু স্যার। সেই কনিষ্ঠতম এস.আই-টিই বললো।
    - আমি স্যারকে রিপোর্ট করছি। বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আমাদের আই.ও। কিছুক্ষন পরে খাশনবিশকে নিয়ে এলেন।
    - দেখুন স্যার।
    খাশনবিশ অন্যদের দিকে ফিরে বললেন
    - ওষুধ দিন। তারপর দেবাশিসকে বললেন
    - সরি। এরকম আর হবে না। আপনি উঠে বসুন।

  • kd | 72.229.130.144 | ০৫ জুলাই ২০০৭ ১৩:৫১695634
  • বলতে বড়ই ভয় করছে, কল্লোল শালা আমায় মারবেই মারবে। কল্লোল, মাইরি বলছি , আমার এব্যাপারে কিছু করার নেই - just বিয়ে করেছি এমন একজনকে যার পিসতুতো ভাই শ্যামল মুখুয্যে, আলিপুর জেলের জেলার আর ওর কীরকম যেন মেশোমশাই হয় অচ্চিশ্মান ঘটক - ঐ সময় পুলিশের কিছু একটা ছিলেন - একবার বউএর সঙ্গে লর্ড সিন্‌হা রোডের অপিসে দেখা করতে গিয়েছিলুম। অবিস্যি উনি একটা বড় উপ্‌গার করেছিলেন - ৭২এ না ৭৪এ, পুরো ছটা পুলিশের গাড়ী escort দিয়ে নিজে দম্‌দম এয়ারপোর্টে আমাদের আমেরিকার প্লেন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
  • kallol | 192.77.110.18 | ০৫ জুলাই ২০০৭ ১৬:৩৫695635
  • ও: কেডি....দা,
    তোমায় দাদা বলতেই হবে। কারন তুমি ৬২-র উমা আর আমি ৭৩-এর। তার মধ্যে, শ্যালক সম্বোধন করে বসে আছো, তবে তো আর কথা নেই।
    কেন ? কেন ? এতো ভালো ভালো পুলুশের কথা লিকচি, তাতেও তোমার ভয় গেলোনিকো ? একটা নাহয় খারাপ ছিলো।

  • kallol | 192.77.110.18 | ০৫ জুলাই ২০০৭ ১৭:১৪695636
  • আর কেডিদার ""আমার এব্যাপারে কিছু করার নেই'' পড়ে একটা পুরোনো কথা মনে পড়ে গেলো।
    আমরা তখন কালীঘাট-কেওড়াতলায় রাজনীতি করছি, সেটা ৭৭-৭৮ সাল। দীপকদার বাড়িতে একটা জমাট আড্ডা হতো।
    দীপকদার রেওয়াজ শেষ হতে হতে সকাল ১০টা। তার একটু আগে থেকে জমতে শুরু করতো আড্ডাধারীরা। আমি, কবি সুমিত চট্টো, দীপকদার ভাই চিত্রশিল্পী মানস, বুলকি(পেশায় আলিপুর জেলের ওয়ার্ডার, দীপকদার সাথে তানপুরা ছাড়তো) দীপকদার ছাত্র অজয় আর তীর্থঙ্কর, গ্রুপ থিয়েটারের পেশাদার অভিনেতা বাবলুদা (যে কোন গ্রুপ ডাকলেই অভিনয় করে দিতো, তবে পয়সা নিতো। পরে বাংলা সিনেমায় ছোটখাট ভিলেনের রোল করতো।) আর এন্ডিদা। এন্ডিদার নাম আসলে নন্দদুলাল সংক্ষেপে এন.ডি. সংক্ষেপতর হয়ে এন্ডি। এন্ডিদা দৈর্ঘে ৪'৭''। প্রস্থে প্রায় ৩'। ফলে একটু স্কোয়ারিশ-রেক্ট্যাঙ্গেল। তার মধ্যে মাথা আর দেহের অন্য অংশের অনুপাত ১.৫:৮.৫ (এটা মাপা হয়েছিলো। এন্ডিদার মাথা ছিলো ৮''- একদম য্‌শুরে কই)। এন্ডিদা মাইম করতো (রীতিমতো যোগেশদার ছাত্র), ছবি তুলতো। কোন একটা সরকারী দপ্তরে কাজও করতো।
    এহেন এন্ডিদার বৌএর বাচ্চা হবে। হাসপাতালে (প্রতাপাদিত্য প্লেসের মাতৃসদন)। খবর এলো আজ দুপুরেই হয়ে যাচ্ছে। আড্ডা দৌড়োলো। মাতৃসদনে পৌঁছে দেখি এন্ডিদা খুব নার্ভাস হয়ে বসে আছে। আমাদের দেখেই দৌড়ে এসে দীপকদার হাত জড়িয়ে খুব উদ্বেগ নিয়ে বললো
    - হয়ে গেলো মাইরী, বিশ্বাস কর আমার কোনো দোষ নেই।
    আরে পাগলা বলে কি ! বলে কি !!
    কেস কি ? না সিজার হয়েছে।

  • kallol | 192.77.110.18 | ১০ জুলাই ২০০৭ ১৪:৩৩695637
  • সেদিন লালবাজারে ফেরার কিছু পরে দেবাশিসের বেশ জ্বর এলো। রাতে খাবার সময় সেই প্রথমদিনের আড্ডা মারা অফিসারটিকে পেয়ে গেলাম। ওনাকে সব কথা বলতেই উনি ওষুধ পাঠালেন। একটা খাওয়ার একটা ব্যথার জায়গায় লাগানোর। কি আশ্চর্য্য, সকালে জ্বর তো নেইই, ব্যথাও প্রায় কমে গেছে।
    আবার এস.বি অফিস। আমরা ঘারে ঢুকতেই, অশোক চ্যাটার্জি এলেন এবং বেশ ভদ্রভাবে একরকম ক্ষমাই চাইলেন। এটা অবশ্যই আমাদের আই.ও মশায়ের কান্ডো।
    উনি এসে প্রথমেই দেবাশিসকে জিজ্ঞাসা করলেন
    - কি চ্যাটার্জি এসেছিলো ?
    ঘর সুদ্ধু সকলে মিলে হৈ হৈ করে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলতেই, উনি কেমন মুচকি হেসে বললেন
    - আরে, ওরা হলো থানার প্রোমোটি। আমরা আইপিএস দিয়ে এসেছি। পেটে তো বোম মারলেও অ আ বেরুবে না। শুধু জানে থার্ড ডিগ্রি। দিয়েছি ঠুকে স্যারের কাছে। যা ঝাড় খেয়েছে, ওর বাবাও ক্ষমা চাইবে।
    বুঝলাম, পুলিশের সূক্ষ শ্রেণীভাগ। আইপিএস বানাম প্রোমোটি। পরে জেনেছিলাম ওনার যুক্তি ছিলো - এরা আমার পাঁঠা। ল্যাজে কাটি, মুড়োয় কাটি আমি বুঝবো। অন্যে কেন নাক গলাবে??
    যুক্তি-অযুক্তি-কুযুক্তি সব রাস্তাই রাস্তা, তুমি মানো বা না মানো। অনেক পরে বুঝেছি এসব।
    আবার আবহাওয়া আগের মত হয়ে এলো।
    একদিন কি কথায় কথায় ইন্দিরা গান্ধীর কথা উঠল। এস.বি-কূল তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
    - এই হলো সত্যিকারের লিডার।
    কেন ? না এখন ট্রেন সময়মত চলছে। ব্যাঙ্কে আর নানান রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কত মানুষের চাকরী হচ্ছে। পাকিস্তানকে কেমন ন্যাজে-গোবরে করে দেওয়া গেছে। বাংলাদেশকে একা হাতে স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়েছেন........
    দেবাশিস এইসবের মাঝেই ফট করে বলে বসলো
    - কিন্তু, আপনাদের মাইনে থেকে তো সি.ডি.এস কাটছে।
    - সে তো পরে ফেরৎ পাবো।
    - যদি না পান !
    - তাই হয় নাকি ! এস.বি-কূল স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন।
    - আমাদের কাছে খবর আছে এই সেশনে বিল আসছে, জাতির স্বার্থে প্রভিডেন্ট ফান্ড কনফিসকেট করা হবে।

    ব্যস ভয়ানক হট্টগোল শুরু হলো। নানা রকম প্রতিক্রিয়া।
    - এটা কিন্তু ঠিক না। প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে টানাটানি কেন?
    - বারাবারির একটা সীমা আছে।
    - মারা যাবো তো রে ভাই।
    এরই মধ্যে কে একজন বলল,
    - আরে, এরা বলে দিলো আর হয়ে গেলো। এরা জানলো কি করে ?
    প্রায় একসঙ্গে অন্য চারজন হাঁ হাঁ করে উঠলো
    - আরে এরা রাজনীতি করে, খবর রাখে।
    সেদিন অন্য সব কাজ ভন্ডুল। সারাদিন প্রভিডেন্ট ফান্ড শোক চলল।
    আমার একটু অবাকই লাগছিলো। এতো উতলা হবার আছে কী?
    হায় অর্বাচীন, তখনও চাকরীতে ঢুকিনি। ফলে বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত চাকরীজীবীর কাছে ""প্রভিডেন্ট ফান্ড'' যে কি বস্তু তার জ্ঞানই হয় নি। হলই বা পুলিশ, শেষ পর্যন্ত বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত তো বটে!!!
    আর হ্যাঁ, স্যাম পিত্রোদা তখনো তার শুভ্র ফ্রেঞ্চ কাট এবং সি.ডট নিয়ে আবির্ভূত হন নি। ফলে এস.টি.ডি বস্তুটি ভারতের পূণ্যভূমে তখন বিরাজ করে না। দিল্লীতে ফোন করা তখন এই সব পেতি অফিসারদের সাধ্যের তো বটেই স্বপ্নেরও বাইরে।
  • d | 61.2.3.160 | ১০ জুলাই ২০০৭ ১৮:০০695638
  • ইয়ে, তখন অ্যামেরিকার পেলেন ধরতে পুলুশ এসকর্ট লাগত নাকি?
  • kd | 66.31.246.203 | ১১ জুলাই ২০০৭ ০৫:২৩695639
  • dএর প্রশ্নটি বোধহয় আমাকে। ওই সময় নাকি ভিআইপি রোডে খুব ছিনতাই হতো, উনি না ব্যবস্থা করলে আমাদের সিটি আপিসে চেক্‌ইন করে এয়ারলাইন কম্পানির বাসে যেতে হতো এবং তার জন্যে বাড়ী থেকে অনেক আগে বেরুতে হতো (তখন অবিস্যি আধ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্ট পৌঁছোলেই হতো)।
  • kallol | 192.77.110.18 | ১১ জুলাই ২০০৭ ১২:২০695640
  • এর মধ্যে আর এক কান্ড। একটি কালো মতন আমাদেরই বয়সী ছেলেকে নিয়ে আসা হলো। তাকে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় নি। মাটিতে উবু হয়ে বসেছিলো। আমরা সকলেই প্রতিবাদ করলাম। দেবাশিস, আকুল, শম্ভু আমি। ওকে চেয়ারে বসতে দিতে হবে। শেষে ওর জন্যও চেয়ার এলো। কিন্তু, সে কিছুতেই চেয়ারে বসবে না। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে বসানো হলো। তার কাছেই জানলাম আজিজুল হকরা প্রেসিডেন্সী জেল ভেঙ্গে প্রায় ৫০ জন পালাতে সক্ষম হয়েছেন। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম চেয়ারে বসছিলেন না কেন? তাতে তার উত্তর হল
    - শ্রেণী শত্রুর চেয়ারে বসব কেন?
    আজ হয়তো এটা নিয়ে হাসা হাসি করা যায়। সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেও এটা নিয়ে বিস্তর মজা করেছি। কিন্তু আজ মনে হয়, এই জায়গাগুলো নিয়ে ভাবা হয় নি। কেন একজন মানুষ মাটিতে উবু হয়ে বসে থাকতে অপমানিত বোধ করে না, এবং ""শ্রেণী শত্রু''র দেওয়া চেয়ার প্রত্যাখ্যান করে। এটা কি মার্কসবাদীরা যাকে শ্রেণীঘৃণা বলেন - তাই? আমার কিন্তু অন্য একটা সম্ভাবনার কথা মনে হয়েছে - পুলিশ শেণী শত্রু, অর্থাৎ খারাপ। মানে ধরা যাক ""ছোটো জাত''। এখানে আপত্তি উঠবে হয়তো। খারাপ মানে ছোটো জাত কেন? কারন এখনো সাধারন মানুষ তাই মনে করেন (মিড ডে মিল কিস্‌সা খুব পুরোনো নয়)। এমনকি যাঁরা ঐ ""ছোটো জাত''এর মানুষ তাঁরাও। এর সাথে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে থাকে, ছোঁয়া-ছুঁয়ির ধারনা। এই মানসিকতাকে যদি শ্রেণী- ধারনার আধারে ঢালা যায়, তবেই বোঝা যায়, কেন ""শ্রেণী শত্রু''র দেওয়া চেয়ারে বসা যায় না। তাতে যে জাত(শ্রেণী) মারা(বিচ্যুত) যায়(হয়)।
    তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম
    - আমরা তো বসেছি। তবে কি আমরা খারাপ?
    তার জবাবও আছে।
    - আপনারা তো গণতান্ত্রিক মানুষ (এপিডিআর বা কলকাতা পত্রিকার সাথে যুক্ত, তাই)। যেটা সে বলেনি, অনুচ্চারিত থেকেছে - আমরা যে বিপ্লবী।

  • UM | 70.138.19.71 | ১৪ জুলাই ২০০৭ ০৩:৪৪695642
  • তা র প র ??
  • m | 71.239.32.103 | ১৪ জুলাই ২০০৭ ০৪:১৩695643
  • কল্লোলদা,
    তুমি যে সুমিত চট্টোর কথা লিখেছো তিনি কি কবি?সোঁতার সঙ্গীতা/সংহিতা ওরফে টুম্পার স্বামী?
  • kallol | 192.77.110.18 | ১৪ জুলাই ২০০৭ ১১:১০695644
  • ম - হ্যাঁ উনিই সোঁতার সংহিতার জীবনসঙ্গী।
    উম - একটু কাজে ঘেঁটে ছিলাম।
  • kallol | 192.77.110.18 | ১৪ জুলাই ২০০৭ ১৩:২৫695645
  • জরুরী অবস্থার মধ্যে ঘটে যাওয়া সম্ভবত: সবচেয়ে দু:সাহসীক ঘটনা - প্রেসিডেন্সী জেল ভাঙ্গা।
    সেটা বোধহয় ছিলো আগস্ট বা সেপ্টেম্বর ১৯৭৬। আমাদের ধরা পড়ার কিছু আগে।
    আজিজুলদারা প্রায় জনা ৫০ মত থাকতেন সেল-এ। সেল হল ছোট্টো একটা খুপড়ী বড় জোর ১০x৮। তার মধ্যেই যাবতীয় জাগতিক কাজকম্মো সারতে হয়। প্রাত:কালীন কাজটি বা জলবিয়োগের ব্যবস্থা বলতে একটা পাদানীওয়ালা মুখ খোলা ড্রাম। যার কাজ, কঠিন/প্রায়কঠিন ও জলীয় বস্তু সকল ধারন করা এবং তদনির্গত বায়বীয় বস্তুনিচয় বিতরন করা।
    তখন নকশাল গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একমাত্র ওঁরাই চারুবাবুর মূল লাইনে আস্থা রাখতেন। অর্থাৎ, খতম-গেরিলা অঞ্চল-আদালত বয়কট-জেল ভাঙ্গা.......। অন্যদের মধ্যে বিনোদ মিশ্রের গোষ্ঠী বিশ্বাসে এঁদের কাছাকাছি ছিলেন। তবে ওঁরা জেল ভাঙ্গায় বিশ্বাস করতেন না। বরং আদালতকে ব্যবহার করে জামিন নিয়ে ফেরার হয়ে যাবার কথা বলতেন।
    জেল ভাঙ্গা ঘোষিত কর্মসূচী হওয়াতে, প্রশাসন এঁদের সেলেই রাখতেন। অন্যরা ওয়ার্ডে থাকতেন।
    আজিজুলদার কাছে শুনেছি, লেখাতেও পড়েছি ওঁরা হাতিয়ার করেছিলেন ওদের সেলের ড্রামে জমতে থাকা পরমানু বোমার ""পামটপ'' সংস্করন। হ্যাঁ, ওঁদের নিজেদের শরীরজাত ঐ প্রায়কঠিন ব্রহ্মাস্ত্রের সামনে রাইফেলধারী রক্ষীরাও নিতান্তই অসহায় হয়ে গেছিলো।
    জেলে সেই সময় যে বন্ধুরা ছিলেন তাঁদের কাছে শুনেছি জেলের দরজা প্রায় আধঘন্টা হাঁ করে খোলা ছিলো। পরে কংগ্রেসের কিছু বিচারাধীন বন্দী এসে দরজা বন্ধ করে, তালা লাগায়।
    এই ঘটনাটি স্বাভাবিক ভাবেই মিডিয়ায় আসেনি। কিন্তু সে তো তখনকার কথা। পরেও এই ঘটনাটির উল্লেখ প্রায় হয়নি বললেই চলে। এক আজিজুলদা লিখেছেন। এছাড়া এই ঘটনার উল্লেখ পরবর্তীকালেও প্রায় দেখিনি।
    আমি তখনও জেল ভাঙ্গায় বিশ্বাসী ছিলাম না। সেটা আইন মান্যতার জন্য নয়। বরং বিষয়টা অনেক বেশী পদ্ধতিগত প্রশ্নের। জেল তো ভাঙ্গলে, তারপর? লড়াই কোথায়? ঘাঁটি এলাকা কোথায়? যেখানে তুমি রাষ্ট্রের মুঠোর বাইরে চলে গিয়ে লড়াইয়ে সামিল হতে পারো। তা না হলে ৫০ জন পালাবে আর ১০০ জন পরের মাসেই ধরা পড়বে। ঠিক সেটাই হয়েছিলো।
    তবু, যাঁরা এই অসমসাহসীকতার কাজটা করেছিলেন, জরুরী অবস্থার মুখে জুতো মেরে, সেই কাজটার কথা কেউ উল্লেখ করেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
  • kallol | 122.167.6.23 | ১৭ জুলাই ২০০৭ ০১:৫৪695646
  • এর মধ্যে বাড়িতে খবর গেছে। আমাদের দুজনের বাড়ি থেকেই খোঁজখবর চলছিলো পাগলের মত। থানায় জানানো-ও হয়েছিলো। থানা থেকেই সম্ভবত: খবর পাঠানো হয়।
    বাবা এসেছিলেন এস.বি.দপ্তরে। আমার জন্য জামাকাপড় নিয়ে। এই কদিন তো এক জামাকাপড়েই ছিলাম। নেহাৎ কালীপূজোর পর, তাই গরম কমই ছিলো, সেই যা রক্ষে।
    বাবা প্রথম যে কথাটা বলেছিলো, আমার সারাজীবন মনে থাকবে। বাবা আমার পাশে বসে বললেন
    - ওরা আমাকে মুচলেকা দিতে বলেছিলো তোমায় ছেড়ে দেবার জন্য। আমি রাজি হইনি। ওরা লিখে দিতে বলেছিলো যে তুমি আর কখনো রাজনীতি করবে না।
    আমরা দুজনেই ভীষণ নিশ্চিন্ত আর হালকা বোধ করছিলাম। বাবা দেবাশিসের সাথেও অনেকক্ষন কথা বলল। দেবাশিস আমায় পরে বলেছিলো, ওর খুব চিন্তা ছিলো, যে আমার বাড়ি থেকে হয়তো ওকেই দায়ী করবে।

  • kallol | 192.77.110.18 | ২০ জুলাই ২০০৭ ১৩:০০695647
  • বাবার কথা এলো বলেই, সামান্য প্রসঙ্গান্তরে যাই।
    বাবা (কণককান্তি দাশগুপ্ত, পরে মধ্যপদলোপী হয়ে কণক দাশগুপ্ত) ১৯২১ সালে তখনকার স্বাধীন রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় জন্মেছিলেন। আমার ঠাকুরদাদা সেইসময়ে ত্রিপুরার কেবিনেট সেক্রেটারী ছিলেন। রাজকর্মচারী হওয়ার দৌলতে হাওড়া নদীর ধারে খড়ের চাল দেওয়া একটা সুন্দর কাঠের বাড়ীতে থাকতেন। যদিও নদীটি আগরতলার পাশ দিয়ে বয়, কিন্তু নাম হাওড়া। সম্ভবত: নদীটি তার চলার পথে কোথাও একটা হাওড় তৈরী করেছিলো, তাই হাওড়া। হাওড় কথাটা এসেছে সাগর থেকে। হাওড় বলতে পূববাংলায় (সিলেট-কুমিল্লা অঞ্চলে) খুউউউউব বড় জলাভূমিকে বোঝায়।
    বাবা আগরতলায় ম্যাট্রিক দিয়ে কলকাতায় পড়তে আসেন। পড়তেন রিপন কলেজে (এখন সুরেন্দ্রনাথ)। ত্রিপুরার মানুষ বলে শচীনকর্তার কাছে যেতেন। তখন শচীনকর্তা থাকতেন দক্ষিণ কলকাতার বসন্ত রায় রোডে। বাবা বেশ ভালো গান গাইতেন। শুধু গাইতেন বললে কম বলা হয়, বাবা গান নিয়ে রীতিমত চর্চা করতেন। শচীনকর্তার কাছে যাতায়াতের সুবাদে, বাবা, সেই সময়কার ধ্রুপদী গানের নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন। আমি অনেক পরে মানবেন্দ্র মুখার্জিকে বলতে শুনেছি উনি এবং অখিলবন্ধু দুজনেই বাবার কাছে রিপন কলেজের হোস্টেলে যেতেন শচীনকর্তার গান তুলতে।
    আমরা অনেক বয়স পর্যন্ত বাবার গান শুনেছি। ৮৭-৮৮ সাল পর্যন্ত তো বটেই। আমার পুত্রকে গান গেয়ে ঘুম পাড়ানোর কাজটা বাবারই ছিলো।
    অথচ বাবা কোনদিন সর্বসমক্ষে গান গাইলেন না। কেন তা আজও জানিনা। শুধু শুনেছি ঠাকুরদা একদম পছন্দ করতেন না।

  • kallol | 192.77.110.18 | ২০ জুলাই ২০০৭ ১৮:১৮695648
  • গ্র্যাজুয়েট হবার পর বাবা চকরী পান ICIতে। সারাজীবন ঐ প্রতিষ্ঠানের Shipping Deptএ একই পদে কাজ করে গেলেন। ৬০-এর মাঝামাঝি থেকেই, সক্রিয়ভাবে মার্কেন্টাইল ফেডারেশনের ইউনিয়ানে জড়িত হন। তখন জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ানের যুগ। তখন বাবা এক আশ্চর্য মানুষ। বাড়িতে মার্কসবাদের বই আসছে। আমাকেও পড়তে উৎসাহ দিচ্ছেন। বাবার অপিসের আর অপিসের বাইরের বন্ধুরা আসছেন। তারা কেউ সমমনোভাবাপন্ন, কেউ নয়। ফলে এক তুমুল তর্ক-বিতর্কের মধ্যে কাটছে আমার শৈশব-কৈশোর।
    বাড়িতে খবরের কাগজ আসতো যুগান্তর। বন্ধ করে রাখতে শুরু করলেন বসুমতী। পাতায় পাতায় তখনকার ফেটে পড়া গণ-আন্দোলনের খবর।
    এইভাবে ওঁর সাধ্যমত বামপন্থী জীবন চর্যা বজায় রেখেছিলেন শেষদিন পর্যন্ত।
    নিজে ইরকাল সিপিএম-এর সাথে থাকলেন, কিন্তু আমার নকশাল হয়ে যাওয়াকে কোনো দিনও কোনো বিরুপতার সামনা করতে হয়নি বাড়িতে। আমি যখন এপিডিআরএর বই/লিফলেট বাড়িতে আনছি। দেবাশিস কখনো আমার বাড়িতে থাকছে। শুধু দেবাশিস কেন, তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা বহু সাধারন কর্মী আমার সূত্রে বাড়িতে দিনের পর দিন কাটিয়েছে। তাই নিয়ে কোনোদিনও কোন অন্য কথা শুনিনি।
  • J | 77.56.79.2 | ২৩ জুলাই ২০০৭ ০৩:৪৭695649
  • তারপর?
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৩ জুলাই ২০০৭ ১০:৫৩695650
  • বাড়ি থেকে আসা জামাকাপড় পরে, বরং বলা ভালো চার-পাঁচ দিন এক কাপড়ে থাকার পর, সেগুলো ছাড়তে পেরে কিছুটা স্বস্তি হল। তবে বাড়ির নৈতিক সমর্থন এইভাবে পাওয়ায় খুব নিশ্চিন্ত লাগছিলো।
    আমি বাড়ির বড়ছেলে। বি.কম ফাইনাল দেওয়ার পর থেকে চাকরীর খোঁজ করছি। এখানে ওখানে দু-চারটে ইন্টার্ভিয়্যুও দিয়েছি। এটা ধরেই নেওয়া হচ্ছে বাবা রিটায়ার করার পর আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হবে। এই অবস্থায় ধরা পড়ার অর্থ "সংসারের হাল ধরা'' প্রকল্পটির সম্পূর্ণ সমাধি। ঠিক সেই সময়ে, জরুরী অবস্থার মধ্য গগনে, কেউ উদ্ভটতম স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না যে ইন্দিরা গান্ধী জামানা বা জরুরী অবস্থার অবসানের কথা। ফলে, তখন ধরা পরা মানে নিশ্চিন্তে দশ-বারো বছর সরকারী অতিথি-র সম্মান পাকা। তাই আমার এবং দেবাশিসের বাড়ির এইভাবে আমাদের পেছনে দাঁড়ানো, দুই বাড়ির মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠা; আমাদের সত্যিই অনেক হাল্কা মনে সমস্ত ঝামেলার মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিলো।
    এর মধ্যে আমাদের আই.ও মশাই খবর দিলেন সামনের মামলার তারিখে আমাদের লক-আপ বাসের ইতি, আমরা জেলে যাবো - প্রেসিডেন্সি জেলে। সেই প্রেসিডেন্সি জেল যেখানে সূর্য্য সেন থেকে অরবিন্দ ঘোষ এককালে বন্দী ছিলেন। এখন চেনা বলতে সঞ্জয়দা (সঞ্জয় মিত্র, এপিডিআর-এর প্রাণপুরুষ) আর কৌশিক ব্যানার্জি (ইউনিটি কমিটির মাথা)।
    মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলাম দীর্ঘ কারাবাসের জন্য।
  • Tim | 71.67.115.14 | ২৩ জুলাই ২০০৭ ১১:৩০695651
  • অসাধারন... থেমোনা।
  • ranjan roy | 122.168.90.18 | ২৩ জুলাই ২০০৭ ১২:২৯695653
  • kallol, sorry!
    এই কৌশিক ব্যানার্জি কি সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়তেন? ফর্সা, লম্বাটে? ভাল গান গাইতেন? "থিয়েটার ক্যাম্প" বলে নাটকের দলটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন? আর ১৯৬৯-৭০এ প্রেসিডেন্সি- পিজিএসএফ কো-অর্ডিনেশনের সঙ্গে ছিলেন? মানে, কাকাদের সঙ্গে?
    তুমি থেমো না।
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৩ জুলাই ২০০৭ ১৬:৫৫695654
  • রঞ্জন - হ্যাঁ আপনি ঠিক ধরেছেন। ইনিই সেই কৌশিক ব্যানার্জি।
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৫ জুলাই ২০০৭ ১১:৪৩695655
  • ধীরে ধীরে পুলিশ হেফাজতে থাকার মেয়াদ কমে আসছে। পরের তারিখের আর দুদিন বাকি। দিব্যি আড্ডা মেরে কাটছে দিনকাল। এর মধ্যে হঠাৎই ডাক পড়ল টর্পেডোর ঘরে। আসল নাম তারাপদ। ডিডিতে যেমন রুণু গুহনীয়োগী, এসবিতে তেমনি টর্পেডো। ট্রিগার হ্যাপী বলে নাম আছে। এমনিতে টর্পেডোর আমাকে ডাকার কথা নয়, কিন্তু কথা তো কত কিছুই থাকে!!
    বেশ দুর্ভাবনা নিয়ে ঢুকলাম ঘরে। বসতে বললেন। টেবিলের ওপর একগাছা দড়ি আর বাঁশের লাঠি। ভীষন ভয় লাগছিলো। উনি আমাকে বসিয়ে রেখে কিসব লেখালেখি করতে লাগলেন। আমি চুপ করে বসে আছি। অনেক কিছু মনে পড়ছে। কোন চিন্তাই স্থিত হতে পারছে না। হঠাৎ কেন যেন মনে হল - আমায় চাপে ফেলতে চাইছেন কি টর্পেডো? খুব মরিয়া লাগছিলো। নিজেকে বারবার মনে মনে বলছিলাম - এই তো সেই লগ্ন, যখন তোমায় প্রমান করতে হবে তুমি এতদিন যা যা বিশ্বাস করে এসেছো, সেই বিশ্বাসের পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা তোমার আছে। কারাগার, বধ্যভূমি আর এক ঝাঁক বুলেটের মুখোমুখি - একজন কমিউনিস্টকে পরীক্ষা দিতে হয়। তোমার সমস্ত একাগ্রতা, সমস্ত সহ্যশক্তি দিয়ে পার হতে হবে এই বিষের বিষম সিন্ধু। তোমার বন্ধুরা পাশের ঘরে অপেক্ষা করছে অসম্ভব যন্ত্রনায় - তাদের মুখের দিকে তাকাও - প্রস্তুত হও।
    আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, ভাবছিলাম, ভাবছিলাম....... ঝিলিক মারছিলো অনেক কথা। সঞ্জয়দার সেই স্ট্রিট কর্নারে এস.বির লোকটাকে ধমকে দেওয়া..... খাশনবিশকে অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়া তারকদা..... মনে পড়লো, ধরা পড়ার দিন কয়েক আগে স্টেটসম্যানে ছাপা, দিল্লীর একটা খবর - মনে হলো - রাস্তা পেয়ে গেছি।
  • kallol | 192.77.110.18 | ২৭ জুলাই ২০০৭ ১৩:৩৪695656
  • - জানেন এই চেয়ারে কে কে বসে গেছেন ? কাগজ থেকে মুখ না তুলেই ভাসিয়ে দিলেন কথাটা তারাপদ।
    আমার জবাব দেবার কিছু ছিলো না। আমি যেন কথাটা শুনতেই পাইনি, এরকম একটা ভাব করে বসে রইলাম।
    - অসীম চ্যাটার্জি, সন্তোষ রানা, কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল এমনকি চারুবাবুও।
    বুঝলাম চাপ তৈরীর এও এক খেলা। এরা সকলেই ডিডির হাতে ধরা পড়েছিলেন। ফলে তারাপদ এদের ইন্টারোগেট করতে পারে না। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নি যে ওদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এসবিতে আনাও হয়ে থাকে, জেরা করার হলে খাশনবিশ নিজেই করেছেন।
    চুপ করে থাকাটাই ঠিক মনে হলো।
    এবার বোধ হয় ধৈর্যচ্যুতি ঘটল তারাপদর।
    - কি হলো? কথা বের হচ্ছে না? সে উপায়ও আছে।
    টেবিলে পড়ে থাকা দড়ি আর লাঠি দেখিয়ে বললেন
    - এগুলো কি জানো? দুটো ডান্ডা পড়লে ওসব মাজাকি বেরিয়ে যাবে। যা জিজ্ঞাসা করবো ঠিকঠাক বলে দাও।
    এতেও চুপ করেই ছিলাম।
    চেয়ারের তলা দিয়ে একটা লাথি পড়ল পায়ে।
    এবার, এবার আমায় বলতে হবে। মুখ খুলতে হবে। যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম। পারছিলাম না। সারা শরীর কাঁপছিলো আমার। প্রচন্ড একটা দোলাচল - যদি ব্যাপারটা না লাগে। শেষ পর্যন্ত মনে হলো, মার তো খেতেই হবে। চলো চেষ্টা করি।
    - শুনুন।
    - এই তো মুখ খুলেছে! বলুন বলুন!!
    - আপনি যদি আমায় প্রাণে মেরে ফেলেন, তো কিছু করার নেই, কারন মরা মানুষ কিছু করতে পারে না। কিন্তু যদি বেঁচে থাকি...........
    - আচ্ছা ! আচ্ছা !!! তাই নাকি বেঁচে থাকলে কি করবি? আমায় খতম করবি???
    - না, চাকরীটা খাবো।
    তারাপদ এই জবাবটার জন্য তৈরী ছিলো না। খুব হতভম্ব হয়ে গেল। কিন্তু সে মাত্র সেকেন্ড দুয়েকের জন্য।
    - তাই নাকি? তা কে? কাকে দিয়ে করাবে!! মুখ্যমন্ত্রী না পুলিশ কমিশনার নাকি প্রধানমন্ত্রী!!! কাকে?
    - ইউ এন ও হিউম্যান রাইট্‌স কমিশনকে দিয়ে।
    এটায় দৃশ্যত বিপর্যস্ত দেখালো তারাপদকে।
    - কি? কী? কি কমিশন?
    - ইউ এন ও হিউম্যান রাইট্‌স কমিশন। গত সপ্তাহে স্টেটসম্যানে খবরটা আছে, দেখে নেবেন। দিল্লীর কোনো থানায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে পেটানোয় আপনাদের এক সহকর্মীর চাকরী গেছে। আর সেটা হয়েছে ইউ এন ও হিউম্যান রাইট্‌স কমিশনের হস্তক্ষেপে। জেল থেকে চিঠি পাচার আপনি আটকাতে পারবেন না। ইউ এন ও হিউম্যান রাইট্‌স কমিশনে চিঠি পাঠাবো-ই। তাই বলছিলাম মেরে ফেললে কিছু করতে পারবো না। কিন্তু যদি বেঁচে থাকি.....
    কথাগুলো বলে ফেলে ভীষণ কাঁপছিলাম। তারাপাদ চেয়ারে বসে থাকলেন কিছুক্ষন। তারপর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলেন।
    আমি আর পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো শরীরের সমস্ত রক্ত যেন প্রচন্ড বেগে বেরিয়ে আসতে চাইছে। খুব জ্বর হলে যেমন হয়, তেমন লাগছিলো, গলা কাঠ হয়ে যাচ্ছে, মুখের ভিতর সব থুতু আঠার মত হয়ে গেছে। কতক্ষন এইভাবে ছিলাম মনে নেই।
    দরজা ঠেলে তারাপদ ঢুকলেন। চেয়ারে বসে মুখটা কেমন হাসি হাসি করে বললেন
    - আরে, আমদের তো এই চাকরী। না না আমরা ডিডির মতো মারপিটে বিশ্বাস করি না। এটা ইন্টালিজেন্স ব্র্যান্‌চ।

    আমি ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে ফিরে আসছিলাম।

  • kallol | 220.226.209.5 | ২৮ জুলাই ২০০৭ ১৪:৫৪695657
  • শেষ পর্যন্ত শেষদিন এসেই গেলো। পরের দিন কোর্ট থেকেই চলে যাবো প্রেসিডেন্সি জেল।
    সেদিনও এক মজার ব্যাপার ঘটলো।
    কি কথায় কথায় ওরা বলছিলেন সমাজতন্ত্র-টন্ত্র ওসব হবার নয়। রাশিয়া-চীন এসব দেশে প্রচুর গরীব আছে, নেহাৎ খবর পাওয়া যায় না তাই.........
    যথারীতি আমি আর দেবাশিস লড়ে যাচ্ছি সমাজতন্ত্র ব্যবস্থা হিসাবে কত ভালো তা প্রমান করার জন্য। মজা হলো, আমরা রাজনৈতিক ভাবে বিশ্বাস করতাম না যে রাশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো আদৌ সমাজতান্ত্রিক। কিন্তু তর্ক করার বেলায় ওরা সবাই সমাজতান্ত্রিক হয়ে যেতো। সে যাই হোক, তর্ক বেশ জমে উঠেছে। ওনারা ইন্দিরা গান্ধীর গরীবি হাঠাও নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। কোনো কিছুতেই ফয়সলা হচ্ছে না। হঠাৎ দেবাশিস বলে উঠলো
    - আচ্ছা, একটা দেশ যে উন্নত সেটা বোঝার মাপকাঠি কি?
    নানা রকম মতামত আসছিলো।
    - মানুষ প্রতি রোজগার
    - শিক্ষার হার
    - শিল্প......... ইত্যাদি ইত্যাদি।
    দেবাশিস খুব গম্ভীর হ্যে বললো
    - না, কোনটাই নয়। একটা দেশের উন্নতি বোঝা যায় তার খেলাধূলার মান থেকে।
    সকলেই কেমন যুক্তিটা মেনে নিলো।
    - এবার দেখুন অলিম্পিকে কারা কত মেডেল পায়।
    সেই সময় রাশিয়া আর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো গাদাগাদা মেডেল পেতো। একক দেশ হিসাবে ধরলে কোনবার আমেরিকা কোনবার রাশিয়া শীর্ষে থাকতো। কিন্তু যদি রাশিয়া-পূর্ব ইউরোপ-চীন-কিউবা-ভিয়েৎনাম এসব ধরলে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী মেডেল পেতো এরা।
    কি অকাট্য যুক্তি! মানতে হলো এস.বি-কূলকে, সমাজতন্ত্র উন্নত ব্যবস্থা।
    হায় সমাজতন্ত্র!!!
  • kallol | 220.226.209.5 | ০৭ আগস্ট ২০০৭ ১১:৩৩695658
  • পরদিন সকালে ব্যাংকশাল কোর্ট। আমার আর দেবাশিসের বাড়ি থেকে বাবা আর দেবাশিসের বড়দা এসেছিলেন। সেদিন ওরা প্রচুর খাবার-দাবার এনেছিলেন। আমার আবার খাই খাইটা বেশী। তাই বেশ আশা করে বসেছিলাম, ভালো মন্দ খাবো বলে। এর মধ্যে দেবাশিসের বড়দা এসে বললেন লক আপের রক্ষীটি খাবার দেবার জন্য নিয়ম মাফিক কিছু-মিছু চাইছেন। বড়দা সেটা দেবেন না। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে বিপ্লবী ভাইদের খাওয়ানো যায় না - এই পণ করে খাবার সব ফেরৎ চলে গেলো। আমি ব্যাজার হয়ে রইলাম।
    কোর্টে কি হলো জানি না। কারন ""বিপদজনক আসামী'' বলে আমাদের আর এজলাসে নিয়ে যাওয়া হতো না। শুনলাম আমাদের পিসি-বাস খতম হয়ে জেসি হলো। অর্থাৎ পুলিশ হেফাজত থেকে বিচার বিভাগের হেফাজতে গেলাম।
    বিকেল প্রায় সাড়ে ৫ টায় আমাদের নিয়ে একটা ঢাউস প্রিজন ভ্যান স্ট্র্যান্ড রোড ধরে চললো।
    এইতো বাবুঘাট। এবার আউট্রাম ঘাট পার হচ্ছি। বাঁদিকে ইডেন। ছোটোবেলায় কত বেড়াতে এসেছি এখানে। তখন প্রচুর বড় বড় জাহাজ আসতো এই সব ঘাটগুলোতেও। গঙ্গা, জাহাজের ভোঁ আর জেটিতে বসে বাদাম খাওয়া সব মিলিয়ে সে এক আশ্চর্য রোমাঞ্চ। আর বাবা বলতেন
    - এ আর কি নদী! তোরা তো পদ্মাই দেখলি না।
    - পদ্মা কত বড়ো?
    - এপার ওপার দেখা যায় না।
    আমি ভাবতে চেষ্টা করতাম, একটা নদী যার এপার ওপার দেখা যায় না। তার পাড়ে লঞ্চঘাটায় বাবা আর দাদু দঁড়িয়ে.........
    প্রিন্সেপঘাট ছাড়িয়ে যাচ্ছে কালো বিশাল গাড়িটা। বাঁদিকে মোড় নিয়েছে। বিশাল একটা কর্মকান্ড চলছে এখানে। আরও একটা ""হাওড়া ব্রিজ'' হবে। বাঁদিকে রেসকোর্স। ডানদিকে বাঁক নিচ্ছি আমরা। আদিগঙ্গা পেরিয়ে, চিড়িয়াখানা আর ন্যাশনাল লাইব্রেরী ডানদিকে রেখে, ভাটপাড়া ব্রিজ বাঁদিকে রেখে একটু এগিয়ে থামলো। প্রিজন ভ্যানের থেকে একজন নেমে গেলেন। প্রচন্ড ধাতব আওয়াজ করে তালা খুললো। প্রথম লোহার দরজা পেরিয়ে, পরের কাঠের দরজা পেরিয়ে গাড়ি ঢুকলো। নামছি ভ্যান থেকে।
    জেল, প্রেসিডেন্সী জেল। সন্ধ্যা উত্তীর্ণ। অন্ধকারে দূরে দুথাক আলোর সারী। সারী সারী ওয়ার্ড, এঅকতলা দোতলা........। ওখানেই কোথাও আমাদের পরবর্তী ঠিকানা।
  • Samik | 61.95.167.91 | ১৬ আগস্ট ২০০৭ ১১:০৯695659
  • অ কল্লোলদা,

    হেইডার কী অইবো?
  • DC | 69.232.70.73 | ২৩ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৫২695660
  • কল্লোল্‌দা,লেখাটার কথা কি ভুলে গেলেন?
  • a x | 65.43.179.102 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২০:৪০695661
  • একদম তলিয়ে গেছিল, টেনে তুল্লাম। কল্লোলদা, গপ্পো শুনবো যে!
  • d | 210.211.241.115 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২০:৪১695662
  • ঠিক থিক । অনেকদিন ধরে কল্লোলদা না-পাত্তা।
  • d | 210.211.241.115 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২০:৪৪695664
  • বলে দেওয়া আবার কি? শ্রাবণীর কেমন লেগেছে সেটাই জানতে চাইছি তো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন