এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নারী-ধর্ষণ সম্পর্কে দু’চার কথা যা আমরা জানি অথবা জানিনা

    অবন্তিকা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ আগস্ট ২০১৫ | ৮২৮১ বার পঠিত
  • [কেন 'নারী-ধর্ষণ' তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাই প্রথমেই শিরোনাম সম্পর্কে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলে রাখি, যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি ধর্ষণ ব্যাপারটা জেন্ডার-নিউট্রাল একটা ইস্যু, যেহেতু ভারতে ধর্ষণের সংজ্ঞার আরও আরও পরিমার্জন কাম্য বলে মনে করি, আর এই লেখাটা কেবলমাত্র মহিলাদের ধর্ষণ প্রসঙ্গেই একটা ওভারভিউ, তাই এ হেন নাম l
    লেখাটা প্রাথমিকভাবে লিখেছিলাম মার্চ মাসে, রাণাঘাট কাণ্ড ও সুজেটের মৃত্যুর অব্যবহিত পর l একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের কারণে শেষমেষ হয়নি l তারপর বেশ কিছুদিন যাবৎ লেখাটা জাস্ট পড়েই ছিল l জয়ন্ত দা পত্রিকার জন্য লেখা চাইলে বলি, ধর্ষণ সম্পর্কিত একটা লেখা হাতে আছে, কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যের বৃত্তের জন্য কতটা উপযুক্ত হবে জানিনা l অরুণার মৃত্যু ও আরও সামান্য কয়েকটি তথ্যের সংযোজন করে, ওনাকে পাঠাই l উনি কয়েকদিনের মধ্যে জানান লেখাটা অগস্ট ইস্যুর কভার স্টোরি করতে চান l
    কারো কারো পক্ষে যেহেতু পত্রিকার কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই জয়ন্ত দার অনুমতিক্রমে লেখাটা ব্লগে দিলাম l উপরন্তু সাইটের মানুষজনের মনোজ্ঞ মতামত পেলে নিজের জানার পরিধিও, বলা বাহুল্য, ব্যপ্ত হবে l
    লেখাটার জন্য গুরুচন্ডা৯-র 'প্রসঙ্গ ধর্ষণ' বই থেকে কয়েকটি তথ্য নিয়েছিলাম, তাই এই সুযোগে সৈকতদা আর ঈপ্সিতাকেও ধন্যযোগ l ]



    সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের জনপ্রিয় গ্রুপে একখানা সুতো খোলা হয়েছিল l একটি নগণ্য সমীক্ষা l জানতে চাওয়া হয়েছিল- গ্রুপের মহিলা সদস্যরা গত ২০১৪ সালের ৩৬৫ দিনে ঠিক কতবার ইভটিজিং-এর মুখোমুখি হয়েছেন l রাস্তায়, অফিসে, বাজারে, কলেজে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেবিবিধ নোংরা মন্তব্য, খারাপ দৃষ্টিবা গায়ে হাত- এ সমস্তই মাথায় রেখে স্রেফ একটা সংখ্যার উল্লেখ l বলা বাহুল্য, উত্তরগুলো ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো l মহিলাদের কাছ থেকে জবাব আসছিল- ‘অসংখ্যবার, গোনা সম্ভব নয়’, ‘মানেটা কী? মোর দ্যান হান্ড্রেড টাইমস আই গেস!’, ‘প্রায় প্রত্যেকদিনই কিছু না কিছু’- জাতীয় l এবং পুরুষরা কেউ বিস্মিত হচ্ছিল, কেউ বিশ্লেষণ করতে চাইছিল এরকমটা কেন, আর কেউ কেউ জানতে চাইছিল খারাপ দৃষ্টি - ভালো দৃষ্টির তফাৎ করা যায় কীভাবে l না l সত্যিই এমন কোনো মানদণ্ড নেই বটে l পুরো ব্যাপারটাই ভুক্তভোগীর অনুমান বা দৃষ্টিভঙ্গী-নির্ভর l প্রসঙ্গত, একটা গল্প মনে পড়ে গিয়েছিল l বলি...২০০৮ সালে, আমেরিকান উড়ানে ২১ বছর বয়সী এক তরুণী ঘুমোতে ঘুমোতে যাচ্ছিল l ঘুম ভাঙার পর লক্ষ্য করল, জনৈক পুরুষ সহযাত্রী তার দিকে হাসি হাসি মুখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে l মেয়েটি সন্দিগ্ধ হলো ও আবিষ্কার করল ওই পুরুষটি তার দিকে তাকিয়ে হস্তমৈথুন করছে l পরিশেষে মেয়েটির চুলে বীর্যপাতও করে ফেলল l এরোপ্লেনটি নামার সাথে সাথে ভিকটিম পুলিশ ডেকেছিল, ও পরবর্তীকালে ক্ষতিপূরণও চেয়েছিল l তরুণী জানিয়েছিল, সহযাত্রীর দৃষ্টিযে ‘স্বাভাবিক’ ছিল না, সেটা প্রথম থেকেই আন্দাজ করছিল সে l ঘটনা সামান্য হোক বা সাজানো, ভিড় বাসে বৃদ্ধের করস্পর্শ স্নেহসূচক নাকি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ, এ তারাই বোঝে যারা অহরহ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার l মহিলার প্রোফাইল পিকচারে অন্তর্বাসের দৃষ্টিগোচরতা নিয়ে অবলীলায় মন্তব্য করাও তো একপ্রকার ইভটিজিং-ই, সে কমেন্টকর্তা ‘মজা করেই’ লিখে ফেলুক অথবা ‘ভুল করে’ ! মহিলাদের প্রতি এইসব ছোটোখাটো যৌন হেনস্থাই কিন্তু বড় বড় আকার নিতে সক্ষম l এমনকি ধর্ষণ করতে বা ধর্ষণে ইন্ধন যোগাতেও l

    এ দেশে ক্রমে ক্রমে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত ধর্ষণের সংজ্ঞা অপরাধীদের সাজা দেওয়ার পথকে প্রশস্ত করছে ঠিকই, কিন্তু সার্বিকভাবে ঘটনার বাহুল্যকে কমাতে পারছে কি? কী বলছে স্ট্যাটিসটিক্স? কী কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? স্রেফ আর স্রেফ সংখ্যাতত্ত্ব? সম্প্রতিআন্তর্জালে ভাইরাল হয়ে যাওয়া, লেসলি উডউইন-এর তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া’জ ডটার’-এর সূত্রে নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্ত মুকেশ সিং-এর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়ে পড়ল l নির্ভয়া ও তার পুরুষসঙ্গী ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২-র রাতে যে মিনি বাসটিতে ওঠে, মুকেশ তার চালক ছিল l ধরা পড়ার পর প্রাথমিকভাবে সে অভিযোগ অস্বীকার করে, কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় তার বয়ান মিথ্যে প্রমাণিত হয় l বক্তব্যে মুকেশ জানায়,“ধর্ষিত হওয়ার সময় মেয়েটির উচিত ছিল না পাল্টা প্রতিরোধ জানানো l বরং মুখ বুজে থাকা ও ধর্ষণ করতে দেওয়া উচিত ছিল l তাহলেই তাকে ‘করে’ ছেড়ে দেওয়া হতো আর ওই ছেলেটাকে (সঙ্গী) শুধুমাত্র মারধর করা হতো l এক হাতে তো তালি বাজে না, সবসময় দুটো হাতই লাগে l একজন ভদ্র মেয়ে কখনও রাত্তির ন’টার সময় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় না lযেকোনো ধর্ষণকাণ্ডে ছেলেটির (ধর্ষকের) চেয়ে মেয়েটির (ধর্ষিতের) দায় অনেক বেশি থাকে l ছেলে আর মেয়ে কখনও সমান হয়না l ঘরের কাজকর্ম, পরিবারের দেখভাল এইসব মেয়েদের কাজ, রাত্তিরবেলা ডিস্কোয় যাওয়া, বার-এ যাওয়া, খারাপ কাজ করে বেড়ানো বা বাজে পোশাক পরা নয় l আসলে মাত্র ২০ শতাংশ মহিলাই ভালো হয় যারা এগুলো করে না l (ধর্ষকের) ফাঁসির আদেশ হলে পুরো পরিস্থিতিটা মেয়েদের পক্ষে আরো খারাপ হতে পারে l আগে ধর্ষণ করার সময় বলা হতো- আরে ছেড়ে দে, এ কাউকে বলবে না; এখন ধর্ষণ করার পর ছেলেরা, মানে যারা দুষ্কৃতী গোছের, ধরা পড়ার ভয়ে মেয়েটাকে খুন-ই করবে l মেয়েগুলো মরে যাবে…” (সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ) l মুকেশের বক্তব্য সমাজের চেহারাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে দিল l বোঝা গেল, বিভিন্ন সামাজিক স্তরে আর্থ-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত নির্বিশেষে, মানুষ (মানে পুরুষ, এমনকি নারীও) এই জাতীয় অশিক্ষার শিকার, যা ধর্ষণ ঘটায় এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয় l

    কাকে দিয়েছি রাজার পার্ট !!!
    ....................................
    ১) ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২-র দিল্লি-গণধর্ষণ প্রসঙ্গে ডিফেন্স-এর উকিল এ.পি.সিং:
    যদি আমার নিজের মেয়েবা বোন বিয়ের আগে যৌনতা করত এবং মাঝরাতে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত আমি তাকে ফার্মহাউসে নিয়ে গিয়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতাম l এইরকম ঘটনা ঘটতেই দিতাম না l সমস্ত অভিভাবকেরই এরকম মানসিকতা থাকা উচিত l
    ২) বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ:
    আমাদের (হিন্দুদের) উচিত মুসলিম মহিলাদের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে তাদের ধর্ষণ করা l
    ৩) উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়াম সিং যাদব:
    ছেলেরা তো ছেলে l ওমন ভুল করে থাকে l আরে বন্ধুত্ব চলে গেলেই মেয়েরা ছেলেদের ওপর ধর্ষণের অভিযোগ আনে !
    ৪) মুম্বই-এর পুলিশ কমিশনর সত্যপাল সিং:
    পঠনপাঠনের মধ্যে সেক্স এডুকেশন ঢোকানোর ফলে দেশে মহিলাদের প্রতি অপরাধ বাড়ছে l
    ৫) পুরীর শঙ্করাচার্য:
    এককালে ভাইবোনেরা একসাথে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানো সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটত না l এখন মানুষের আবেগ, আদর্শ সবকিছুই বদলে গেছে l আমাদের সংস্কৃতি আমাদের শেখায় মহিলাদের সম্মান করতে- যে নারীরা আমাদের মা, বোন l এমন ভয়ানক ঘটনা (দিল্লিকাণ্ড) নিশ্চয় একদিনে ঘটে না l মানুষ উন্নয়ন ও আধুনিকতার নামে সভ্যতা-সংস্কৃতির সংকীর্ণ রেখাটিকে অতিক্রম করে বলেই ঘটে l
    ৬) মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বাবুলাল গৌর:
    পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মহিলারা জিন্স-টিশার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়, পুরুষদের সাথে নাচানাচি করে, মদ খায়- সেটা তাদের কালচার l ওসব ওই দেশে চলে, এ দেশে নয় l এখানে এখানকার রীতিনীতি মেনে চলাই ভালো l
    ৭) গোয়ার এমএলএ বিষ্ণু বাঘ:
    যদি মডেলরাও এসে পার্লামেন্টে যোগ দিতে থাকে তাহলে তো গোটা পার্লামেন্ট-এই ফ্যাশন শো বসে যাবে ! মালাইকা অরোরা, রাখি সাওন্ত-এর মতো ফ্যাশন দুনিয়ার মহিলারা ভোটে জিতে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়লে দেশে দাঙ্গাও বেঁধে যেতে পারে l
    ৮) সমাজবাদী পার্টির এমএলএ আবু আজমি:
    অবিবাহিত নারী পুরুষদের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে আইনত অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত l আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে গ্রামীণ ভারতে শহুরে দেশের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা অনেক কম ঘটত l
    ৯) স্বঘোষিত ঈশ্বরের দূত আশারাম বাপু:
    শুধুমাত্র পাঁচছ’জনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই l ধর্ষিতা ও ধর্ষণকারী উভয়েই সমান অপরাধী l আক্রান্ত হওয়ার আগে মেয়েটির উচিত ছিল ধর্ষণকারীদের ভাই বলে ডাকা এবং করুণাভিক্ষা করা l এটা তার সম্মান ও জীবনকে রক্ষা করতে পারত l এক হাতে কি তালি বাজে ? বাজে না বোধ হয় l
    ১০) জামাত-ই-ইসলামি-হিন্দ:
    কো-এডুকেশন সিস্টেম বন্ধ হওয়া উচিত এবং মেয়েদের জন্য পৃথকভাবে সমস্ত স্তরে শিক্ষার সুযোগ তৈরী হওয়া উচিত l শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের পরিশীলিত পোশাক চালু করা উচিত l
    ১১) বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রেসিডেন্ট অশোক সিংহল:
    ব্রিটিশ আমলের আগে মহিলাদের সতীত্ব অটুট থাকত l এই মডেলদের জন্যই এখন তা বিঘ্নিত হয়ে গেছে l
    ১২) ছত্তিশগড় মহিলা কমিশনের চেয়ার-পারসন বিভা রাও:
    মহিলারা শরীর প্রদর্শনের মাধ্যমে পুরুষদের অপ্রীতিকর ক্রিয়াকলাপে প্রলুব্ধ করে l মেয়েরা বুঝতে পারছে না কি ধরণের বার্তা তারা সমাজের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে l
    ১৩) বিএসপি নেতা রাজপাল সৈনি:
    মহিলা ও শিশুদের হাতে ফোন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই l ফোন তাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে l আমার মা, স্ত্রী, বোন সকলেই তো ফোন ছাড়া দিব্যি কাটিয়েছে l
    ১৪) খাপ পঞ্চায়েত নেতা জিতেন্দ্র ছাতার:
    দারিদ্র্য, নেশাগ্রস্ততা বা যুব সমাজের খারাপ মেলামেশা ধর্ষণের মূল কারণ l তবে চাউমিন খেলেও হরমোনের সমস্যা দেখা দেয় যা ধর্ষণের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ l
    ১৫) হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েত সদস্য সুবে সিং:
    আমার মনে হয় মহিলাদের ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করে নেওয়া উচিত যাতে স্বামীরা তাদের যৌন চাহিদা মেটাতে পারে l এর ফলে তাদের আর অন্য পুরুষের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না l এভাবেই ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব l
    ১৬) কংগ্রেসের এমপি সঞ্জয় নিরুপম, স্মৃতি ইরানীর উদ্দেশে:
    কাল পর্যন্ত পয়সার জন্য টিভিতে নাচ দেখাত, আর আজ ভোট বিশ্লেষক হয়ে গেল!
    ১৭) বিজেপি নেত্রী হেমা মালিনী, মহিলাদের উদ্দেশে:
    যেখানে ইচ্ছে হয় বেরিয়ে পড়বেন না l যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে l আক্রান্ত হতে পারেন l ভগবান কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বাঁচাতে এসেছিলেন l কিন্তু আমরা তো ততখানি আধ্যাত্মিক নই যে ঈশ্বর আমাদেও বাঁচাবেন !
    ১৮) সিপিএম-এর এমপি অনিল বসু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি:
    তৃণমূলের ভোটের খরচের জন্য উনি কোন্ ভাতারের কাছ থেকে ২৪ কোটি টাকা নিয়েছিলেন?
    ১৯) তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদার:
    পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা ধর্ষণের কোনও ঘটনাই নয়। ওই মহিলার ও তাঁর খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জের l
    ২০) বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনত অপরাধ স্বীকারের মাধম্যে বিল-টিকে সংশোধনের জন্য ডিএমকে-র এমপি কানিমোজির চিঠির উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হরিভাই পারাথিভাই চৌধুরীর বক্তব্য:
    অশিক্ষা, বিবিধ সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অন্যান্য নানাবিধ কারণে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসাবে স্বীকার করা সম্ভব নয়, কারণে ভারতীয় প্রেক্ষিতে বিবাহ একটি পুণ্য বিষয় l

    হ্যাপি নিউ ইয়ার
    .....................
    চলতি বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি বহু প্রতীক্ষিত রাজীব দাস হত্যা মামলার ফল ঘোষণা হলো l দিদি রিঙ্কু দাস-কে শ্লীলতাহানি, বেআইনি অস্ত্র রাখা, এবং দিদিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা ষোলোবছর বয়সী রাজীবকে গুণে গুণে সতেরো বার ছুরির আঘাতে খুন করার অপরাধে মিঠুন দাস, বিশ্বনাথ চ্যাটার্জী ও মনোজিত বিশ্বাস-কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল আদালত, মূল ঘটনার ঠিক চার বছর পর l কেস রিপোর্টেড না হওয়ার ফলে বা হলেও প্রমাণের অভাবে কিংবা প্রশাসনিক ঔদাসীন্যের কারণে পুরো ব্যাপারটাই ধামা চাপা পড়ে যাওয়ায় ধর্ষকদের একটা বড় অংশের কলার তুলে ঘুরে বেড়ানোর আধিক্যে, এ হেন দু’চারটে দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত যে কিছুটা হলেও আমাদের পুনরুজ্জীবিত করে তা নিয়ে সন্দেহ নেই l তবে একটা কেসের সুরাহা হতে না হতেই ঘটে যায় আরো একগুচ্ছ ঘটনা l
    বছর পড়তে না পড়তে গোটা দেশ জুড়ে আরো কিছু ধর্ষণের খবর l ১)২৬শে ফেব্রুয়ারি এআইআইএমএস-এর জনৈক ডাক্তারের বিরুদ্ধে দক্ষিণ দিল্লিতে পঁচিশ বছর বয়সী সিকিম নিবাসী একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল l২)উত্তর প্রদেশের মোতিপুরওয়া গ্রামে ১৬ বছরের একটি দলিত-কন্যার ধর্ষিত মৃতদেহ পাওয়া গেল গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় l ভিকটিমের বাবার অনুমান, ওই গ্রামেরই দুজন যুবক তার মেয়েকে ধর্ষণ ও খুন করে l ৩)মহারাষ্ট্রের লোনাভালার একটি রিসর্টে সাত বছরের শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেল, মেয়েটি নিখোঁজ থাকার দুদিন পর l আংশিক অন্ধত্বে আক্রান্ত এই শিশুটি গিয়েছিল আত্মীয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণে l তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় l ৪)উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফরনগরে একইসাথে দুই শিশুকন্যাকে (পরস্পর তুতো বোন) ধর্ষণ করে পাড়ারই এক বছর পঞ্চাশেকের প্রৌঢ l৫)কোলকাতায় বিজেপি-র পার্টি অফিসে একটি পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সতেরো বছর বয়সী জনৈক যুবককে l৬)হরিয়ানার রোহতক গ্রামের গণধর্ষণ কাণ্ড- একটি আঠাশ বছর বয়সী মেয়ে তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায় যখন তার দুটো হাত, বেশ কিছু অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ ও শরীরের বাঁদিকটা পশুতে খেয়ে গেছে l মেয়েটিরদেহে লাঠি ও পাথর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রবল মারধর করে অচেতনও করে দেওয়া হয়েছিল l এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আটজন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং নবম ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে l৭)দিল্লির নিজামুদ্দিনে একটি স্কুলের বত্রিশ বছর বয়সী এক ফিজিকাল ইন্সট্রাকটর ছয় বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ l ৮)পুরুলিয়ার জনৈক স্কুল-বাস ড্রাইভারকে,চার বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় l৯)জয়পুরে উনিশ বছর বয়সী একটি জাপানি মহিলা পর্যটককে ধর্ষণ করে চব্বিশ বছরের যুবক l অপরাধ স্বীকার করার পর সাতজন বন্ধুর সহায়তায় সে শহর ছেড়ে পালায় l অবশেষে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ এবং দোষীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় l ১০)মালদা জেলার কালিয়াচকে ন’ বছরের একটি শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে খুন করে তেত্রিশ বছরের যুবক l১১)মার্চ মাসের মধ্যরাতে রানাঘাটের একটি কনভেন্ট স্কুলে বাহাত্তর বছরের জনৈক সিস্টারকে গণধর্ষণ করা হয় l ঘটনায় আরো তিনজন সিস্টার দুষ্কৃতীদের দ্বারা গুরুতর আহত হয়েছিল l রানাঘাটের কাণ্ডের দিনেই, এন্সেফেলাইটিস-এ মারা গেল লড়াকু মেয়ে সুজেট জর্ডন, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিটে ঘটে যাওয়া বহুচর্চিত ও বিতর্কিত গণধর্ষণ কাণ্ডের সেই ভিকটিম, দুই শিশুকন্যা ও অসমাপ্ত ‘কেস’-কে পিছনে রেখে l ১২) সম্প্রতি, মে মাসে, আর জি কর হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই মাঝরাতে ২৪ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হাসপাতালে কর্তব্যরত দুজন লিফ্টম্যান l
    ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে, দেশে প্রতিদিন গড়ে বিরানব্বই থেকে তিরানব্বই জন মহিলা ধর্ষিত হয়ে চলেছে l এবং চুরানব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি(/রা) ভিকটিমের পূর্বপরিচিত l

    ধর্ষণ ও ধন-তন্ত্র
    ...................
    ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ১৯৭১ সাল থেকে ধর্ষণের খতিয়ান নথিভুক্ত করতে শুরু করে l জানা যাচ্ছে, সে বছর রিপোর্টেড রেপ কেসের সংখ্যা ছিল ২৪৮৭ l আইপিসি-৩৭৬ ধারায় ২০১৩ সালে দেশের সবকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে রিপোর্টেড রেপ কেসের সংখ্যা ৩৩৭০৭l২০১২-র রিপোর্টেড রেপ কেসের সাপেক্ষে এই সংখ্যা ৩৫.২ শতাংশ বেশি !আবার গত ১০ বছরের খতিয়ান দেখলে জানা যায়, ২০০৩ থেকে ২০১৩-এ রিপোর্টেড রেপ কেসের শতাংশের হার বেড়েছে ৯১.৮ ! এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা যায়, এক- সত্যিই ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, দুই- ধর্ষণের হার যা ছিল তাই আছে, কিন্তু মহিলাদের মধ্যে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বা সোশাল স্টিগমা-গুলোকে অতিক্রম করে অপরাধীদেরদের প্রতি অভিযোগ জানানোর প্রবণতা বাড়ছে l ‘স্লাট শেমিং এন্ড ভিকটিম ব্লেমিং’, মানে ঘটনা যাই ঘটে থাকুক না কেন আসলে তো মেয়েটি মাঝরাত্তিরে একা বেরিয়েছিল, আসলে তো মহিলার পোশাক বড্ডবেশি খোলামেলা ছিল কিংবা আসলে তো ও মেয়ে নয় মেয়েছেলে- এইসব মিথ ভেঙে প্রতিবাদ জানাতে সক্ষম হচ্ছে বহু মহিলাই l ২০১৩ সালে দেশে রিপোর্টেড ইনসেস্ট রেপ কেসের সংখ্যা ছিল ৫৩৬ ও আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪৮ l ইনসেস্ট রেপের ক্ষেত্রেও আশির দশকে বাড়ির ছোট বৌমাকে শাশুড়ি যেমনটা বোঝাতে সমর্থ হতেন- আহা নিজেরই তো শশুরমশাই, অমন হয়ে থাকে, তুমি বাপু পাঁচকান কোরো না- মেয়েরা কিছুটা হলেও এখন ক্রমে ক্রমে উপেক্ষা করতে চাইছে বা পারছে এইসব পরোক্ষ হুমকিকে l তবে,একটা ধর্ষণ ঘটে যাওয়ার পর ধর্ষকের শাস্তি যতটা জরুরি, ততটাই গুরুত্বপূর্ণধর্ষণের উৎসগুলোকে খুঁড়ে বার করা l ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাবাসেরভয় দেখিয়ে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনা আটকানোর থেকে অধিক কার্যকরী সার্বিক সচেতনতার বোধ তৈরি করা l বহু ক্ষেত্রেই ছোটবেলা থেকে মেয়ে ও ছেলেদের পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শুরু করানোর বা আলাদা পরিবেশে বড় করার ফলে শিশুমনে একটা অদ্ভুত ধারণা পুষ্ট হতে থাকে যে মেয়েরা ভিনগ্রহের জীব l তাদের প্রত্যঙ্গের বেড়ে ও গড়ে ওঠা ছেলেদের থেকে বিলকুল আলাদা এবং আশ্চর্য এক রহস্যের জালে আবৃত l বয়ঃসন্ধিতে সেই কৌতুহল আরো চরমে পৌঁছয় l বাড়ির কিশোরটি যুবতী বুয়ার পাতিয়ালায় রক্তের ছিটে দেখে বিচলিত ও সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে l অধিকাংশ মধ্য-চিত্তের পরিবারেই তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে কেউ বোঝাতে আসে না, এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, ঠিক যেমনটা ওই নাইট ফলস-ও l বোঝালে, অপরাধবোধ ও অপরাধের প্রবণতা কমত বৈ বাড়ত না l নারী-পুরুষ-ভিন্নলিঙ্গ বহিরঙ্গে পৃথক, শারীরবৃত্তীয় কারণে আলাদা, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতে সেসব ডিসক্রিমিনেশন-কে অতিক্রম করা উচিত, এই বোধটা মানবিক বিকাশের এক্কেবারে শুরু থেকে কোথাও মাথার ভেতর রোপণ করা দরকার l প্রশ্ন উঠতেই পারে, মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে কোএডুকেশন কালচার এবং অত্যাবশ্যক সেক্স এডুকেশনএকটি ষোলো বছরের মেয়েকে স্কুলমুখী করে তোলার পক্ষে পরিপন্থী হয়ে উঠবে না কি? বলা বাহুল্য এ পরিবর্তনও একদিনে ঘটবে না l কিন্তু সর্বাগ্রে তো প্রতীত হতে হবে শিক্ষার কান্ডারীদেরও, যারা বদলটা আনতে পারবে !
    ২০১৩-র রিপোর্টে, রিপোর্টেড রেপ কেসের সংখ্যা ৩৩৭০৭ হলেও ভিকটিমের সংখ্যা কিন্তু ৩৩৭৬৪ l এই পরিসংখ্যানকে বয়সের নিরিখে ভাগ করে দেখা গেছে: ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ধর্ষিত নারীর সংখ্যা ১৫৮৪, ১০-এর বেশি বয়স থেকে ১৪ বছরের মধ্যে ২৮৪৩, ১৪-র বেশি বয়স থেকে ১৮ পর্যন্ত ৮৮৭৭, ১৮-র অধিক থেকে ৩০ অবধি ১৫৫৫৬, ৩০-এর বেশি থেকে ৫০ পর্যন্ত ৪৬৪৮, ৫০-এর ঊর্ধে ২৫৬ l স্পষ্টতই ১৮ থেকে ৩০ এই বয়সকালকে রিপোর্টের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল ধরা যেতে পারে l কারণটা বোধ করি এই যে, ভারতীয় (অপ)সংস্কৃতিতে যৌবনের কনসেপ্ট মূলত এই বয়সের পরিসরে সীমাবদ্ধ l গয়নার বিজ্ঞাপনে কচি মেয়েটি যেমন মায়ের চুড়ি হাতে গলিয়ে রমণী হয়ে উঠতে চায়, তেমনই মধ্যবয়সী নারীকে সাবান মাখিয়ে বয়স কমানোর চেষ্টা চালানো হয় এবং স্তাবকের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসে- আপকো দেখকে তো উমর কা পাতা হি নহি চলতা ! একটা বড় সংখ্যক মূল ধারার ঝিনচ্যাক দিশি ছবিতে নায়িকার বয়স কিচ্ছুতেই তেইশের বেশি হয়না l গোটা বিপণনের দুনিয়া যৌবন বেচতে বদ্ধপরিকর l এবং যারা খাচ্ছেতাদের কাছে ‘পূর্ণযৌবনা’ নারীকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হিসেবে পরিবেশন করার অদম্য প্রয়াস l ফলত এরাই ‘টার্গেট’ l আর উন্নয়নশীল দেশে পূর্বোল্লিখিত কনসেপ্ট-এর সাথে ভার্জিনিটি-র পাঞ্চ মিশিয়ে দিলে ১৪ থেকে ১৮-র ভীতিপ্রদ সংখ্যার ব্যাখ্যাটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে ওঠে l ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২-র দিল্লি কাণ্ড সমাজের পক্ষে একটা কালো দিক হলেও ধর্ষণের সংজ্ঞায় তা কিছুটা আলো দেখাতে পারলো l এই ঘটনার অব্যবহিত পরে সরকারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত জাস্টিস যে.এস ভার্মা-র তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তে ২০১৩ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি আইপিসি-৩৭৫ ধারায় বেশ কিছুটা (উত্তর)আধুনিকতার ছোয়াঁচ লাগলো lআমরা জানলাম, ধর্ষণ শব্দটা শুধুমাত্র যোনি ও লিঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার বিষয় নয় l আরো কিছু বয়সসীমা ও শর্তের তারতম্য ঘটানো হলো পরিমার্জিত সংজ্ঞায় l তবে ম্যারাইটাল রেপ এখানেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হলো না l ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র ২০১২-র রিপোর্টে আমরা দেখেছি দেশে মোট ১০৬৫২৭ জন মহিলা গৃহনির্যাতন (আইপিসি ৪৯৮ এ)-র শিকার l এখানে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দ্বিতীয়তে অর্থাৎ ত্রিপুরার পরেই l যেখানে ডোমেসটিক ভায়োলেন্স-এর পরিসংখ্যান এ হেন, সেখানে বৈবাহিক ধর্ষণের সংখ্যাও যে বিপুল হবে তা সহজেই অনুমেয় l
    যৌনাচারে নারীটি নিয়ন্ত্রিত হবে তার পুরুষটির দ্বারা, এই মিথ-এর কারণেই বোধ করি ম্যারিটাল রেপ-কে শুধুমাত্র ‘রাফ সেক্স’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার একটা কালচার আগেও ছিল এবং এখনও আছে l নাহলে রাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত পুরুষতান্ত্রিক পরিবার-পরিকাঠামোর সুখী সুখী ইমেজ ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ার অবশ্যম্ভাবী সম্ভাবনাথেকে যায় l ১৯৭৫ সালে কেমব্রিজ ডকুমেন্টারি ফিল্মস-এর জন্য মার্গারেট লাজারাস ও রেনার উন্ডারলিচ ‘রেপ কালচার’ নামে একটি তথ্যচিত্র বানান যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়কেইধর্ষণ করার যে প্রবণতা তাকে ‘স্বাভাবিক’ বলার বিরুদ্ধে অভিমত প্রকাশ করা হয় l ছবিটা ধর্ষণের ধারণাকে প্রথম সংজ্ঞায়িত করার স্বীকৃতি পায় lপ্রসঙ্গত মনে পড়ে যাচ্ছে এর ঠিক ত্রিশ বছর পরে, ২০০৫ সালে ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত‘মাতৃভূমি’ ছবিটির কথাও যা একইসাথে ফিমেল ফিটিসাইড, ডাওরি, ম্যারাইটাল রেপ, ইনসেস্ট রেপ ও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল l মোদ্দা কথাটা হলো উৎস যাই হোক না কেন, আর্থসামাজিক সমস্যা, জাতিবিদ্বেষ, লিঙ্গবৈষম্য, ধর্মীয় ভেদভাব, হোমোফোবিয়া, যুদ্ধ পরিস্থিতি, পর্নোগ্রাফি, মানসিক বিকার ইত্যাদি প্রভৃতি, মূল লক্ষ্য কিন্তুআঘাত করার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতাপ্রদর্শন l পাওয়ার এক্সারশন l বীরভোগ্যা পৃথিবী ও রূপমুগ্ধা নারী- এই কনসেপ্ট থেকে যেমন একজন বলশালী রাজা ভূমি দখল করার পর জমিতে তলোয়ার পুঁতে জাহির করতো ওই পরিসরের ওপর তার কতৃত্ব, একজন পুরুষও নারীর মুখ, যোনি, পায়ু অথবা শরীরের যেকোনো ছিদ্রে লিঙ্গ বা অন্যকোনো বস্তুর প্রবেশ ঘটিয়ে তার ক্ষমতাকে প্রদর্শন করায় l পেনিট্রেশন- মাটি হোক বা রমণী, গ্রোথিত করার মাধ্যমে তার ওপর ক্ষমতাশীলের অধিকারপ্রয়োগ l অথচ শুধু ধর্ষণ কেন, আমরা যাকে স্বাভাবিক যৌনাচার বলে জানি, সেখানেও এই পুরুষতন্ত্র ও ক্ষমতাপ্রদর্শনের রাজনীতি l কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নততর গবেষণা জানায়, নারীর অরগ্যাজম ‘কেবলমাত্র’ পেনিট্রেশন কেন্দ্রিক- এটাও স্রেফ একটা মিথ !
    সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে যে একক ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের সাথে সাথে গণধর্ষণের ঘটনাও অনেক বেশি ঘটছে lগবেষণা বলছে এর পেছনে কারণগুলো মূলত যৌনতার অধিকারপ্রয়োগ, বিনোদন ও শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা l একজন পুরুষ এককভাবে ধর্ষণ করাকালীন যতখানি বলপ্রয়োগ করতে সক্ষম, দলবদ্ধ অবস্থায় তার আঘাত করার ক্ষমতা বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যায় l গণধর্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনজন বা তার বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়সে তরুণ l বলা বাহুল্য, এ বিষয়টি অনেক বেশি হিংসাত্মক এবং যৌন অত্যাচারের পাশাপাশি অযৌন অত্যাচারও করা হয় ভিকটিমকে l যুদ্ধ বা দাঙ্গার পরিস্থিতিতে মহিলাদের গণধর্ষণের মাধ্যমে ভিকটিম ও তার কম্যুনিটিকে ভয় দেখানোর জন্য ব্যাপক হারে গণধর্ষণের প্রবণতা দেখা গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে l তবে সাধারণভাবে, যুবসমাজের বেকারত্ব আর নেশাগ্রস্ততাকে গণধর্ষণের বড় কারণ বলে দাবি করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা l আর যারা গণধর্ষিত হচ্ছে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সদস্য l কেননা সামাজিক কারণেই তাদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও সাহস বহুলাংশে কম l আমাদের দেশে এখনও আলাদা করে গণধর্ষণের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়না l হলে দেখা যাবে সার্বিক পরিস্থিতির মতোই গণধর্ষণের ঘটনাও ক্রমবর্ধমান l

    না-ফুরোনো গল্পগুলো
    ............................
    বড় বেদনার বোধও ক্রমে ঝাপসা হয়ে আসে l মেয়েটির স্বজনেরা, এমনকি সে নিজেও শরীর-মনের ক্ষতগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে l আর আমরা যারা খবর কাগজের পাতায় ঘটনার বিবরণ পড়লাম, দু’চারদিন ভেতরে ভেতরে কোথাও আগুনটুকু জ্বলল, তারাও দ্রুত ফিরে যেতে চাই পরিচিত স্বাভাবিকতায় l টানা বিয়াল্লিশটা বছর ভেজিটেটিভ স্টেটে অরুণা শানবাগ পড়ে ছিল হাসপাতালের বিছানাতে l ১৯৭৩ সালের ২৭শে নভেম্বর সোহনলাল বাল্মীকি নামে সরকারি হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী পঁচিশ বছর বয়সী একটি নার্সকে গলায় কুকুরের চেন বেঁধে সোডোমি অর্থাৎ পায়ুছিদ্র দিয়ে ধর্ষণ করে l সেই নার্স, মানে অরুণার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, ব্রেন স্টেম ও সারভাইকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কর্টিকাল ব্লাইন্ডনেস ঘটে l সোহনলালের কেবল সাত বছরের হাজতবাস হয় ‘ডাকাতি ও খুনের চেষ্টার অপরাধে’, কেননা আইপিসি-৩৭৬ অনুযায়ী সোডোমি-র মাধ্যমে ধর্ষণকে তখন ধর্ষণ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো না l গত ১৮ই মে ২০১৫ তে, অরুণা ‘মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’ lযদিও তার অস্তিত্বের, চেতনার, মৃত্যু ঘটেছিল বহু বছর আগেই l
    বিহারের দেওঘর থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে পারারিয়া গ্রামে এক রাতে উনিশজন আদিবাসী মহিলা ধর্ষিত হয় l নিমিয়া, রাধিয়া, দারিয়া, সুমিয়া ও ভগবতিয়া, পারারিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে (১৯৮৮) মাত্র এই পাঁচজন ছিল অভিযোগকারী l যে ষোলো জনের বিরুদ্ধে কোর্টে যায় এই মহিলারা, তারা সকলেই ছিল পুলিশকর্মী, চৌকিদার ও হোমগার্ড l ধর্ষণের সাথে সাথে মারধর ও তাদের বাড়িতে লুঠতরাজও চলে l অভিযোগ দায়ের করা সত্বেও ধর্ষিতদের যথাযথ মেডিকেল পরীক্ষা হয়না l সরকারি পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় l এবং পরবর্তীকালে ওই পাঁচজন মহিলাকে প্রতারক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় l বলা হয়, মিথ্যাচারের জন্য এরা যেকোনো কিছু করতে পারে কারণ হাজার টাকা এদের কাছে সত্যিই অনেক l
    ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গায় অসংখ্য মুসলিম মহিলাকে ধর্ষণ করা হয় যার হিসাব কেউ দেয়নি আজ পর্যন্ত l
    ২০০৩ সালে একজন আঠাশ বছর বয়সী সুইস ডিপ্লোম্যাট-কে তার নিজের গাড়িতে ধর্ষণ করা হয় l ধর্ষিত তার বিবৃতিতে বলে- ধর্ষকদের একজন অনর্গল ইংরিজিতে কথা বলে যাচ্ছিল l এমনকি তাকে প্রশ্ন করছিল সুইজারল্যান্ড সম্পর্কে, আর সম্ভবত ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে তাকে জ্ঞানও দিচ্ছিল !
    মণিপুরের বত্রিশ বছর বয়সী মেয়ে মনোরমাকে আসামের সৈন্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহীদের’ সঙ্গে যোগাযোগের অপরাধে l কয়েক ঘন্টা পর তার বিক্ষত শরীর পাওয়া যায় l মনোরমার তলপেট ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য বুলেটের আঘাতে l সালটা ২০০৪ l
    ২০০৯ সালে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সোপিয়ান টাউনে দুটি তরুণীকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয় l প্রতিবাদে টানা সাতচল্লিশ দিন সশস্ত্র আন্দোলন ও ধর্মঘট চলে l
    মাওবাদীদের সংবাদপ্রেরক সন্দেহে ২০১১-র অক্টোবর পর্যন্ত সোনি সোরি-কে ছত্তিসগড়ের জেলে আটকে রাখা হয় l জেল থেকে বেরোনোর পর সোনি সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানায়, বন্দী থাকাকালীন তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছিল ও তার যোনিপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল পাথর l
    ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশের একটি থানার ভেতরে সোনম নামে চোদ্দ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় l
    ২০১৩ সালে কলকাতা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে কামদুনি গ্রামে কুড়ি বছর বয়সী কলেজ পড়ুয়াকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয় l ন’জন অভিযুক্তের মধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ l আপাতত তদন্দের ভার সিবিআই-এর হাতে l ভিকটিমের পরিবার ও বন্ধুরা বিচারের অপেক্ষায় l
    এমন আরো একগুচ্ছ জানা অজানা ঘটনা নিয়ত ঘটে চলেছে চারপাশে l তার কতগুলো কেস রিপোর্টেড হচ্ছে? ঠিক কতগুলো ঘটনার মীমাংসা হচ্ছে? কতজন অভিযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে? ‘তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ’–এর চক্করে একাধিক প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে l উচ্চবংশের ছেলে দলিতের মেয়েকে ধর্ষণ করে না- এমন হাস্যকর কিছু যুক্তি সাজিয়ে বেমালুম ছাড়া পেয়ে যাবে ধর্ষক l অমুক যখন শাস্তি পেল না তখন আমাদেরই বা কে কী করবে- এমন মনোবল নিয়ে ধর্ষণে উদ্যত হবে আরো আরো পুরুষ l ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে ভিকটিম ও তার পরিবারের l কোনো কোনো ধর্ষিত অর্থের বিনিময়ে কন্যাসন্তানের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে চাইবে l অন্তত এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় সেই চাওয়াটুকু জাস্টিফায়েড l আর যাদের হাতে ভুবনের ভার, দেখাই যাচ্ছে,নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের একটা বড় অংশ চরম পুরুষতান্ত্রিকতা, ক্ষেত্রবিশেষে চূড়ান্ত অশিক্ষার শিকার l রিপোর্টের ভিত্তিতে সামাজিক অবক্ষয়ের কাটাছেঁড়া চলবে, চলবে সামাজিক অবক্ষয়ের ভিত্তিতে রিপোর্টের কাটাছেঁড়াও l বয়স উনিশ লিখে যে পনেরো বছরের মেয়েটিকে শহর কোলকাতা থেকে মাত্র তিরিশ কিলোমিটার দূরে বিয়ে দিয়ে দিল তার মা-বাবা, ইনসেস্ট রেপের খতিয়ানে তার বয়স কিন্তু রইলো উনিশই l ১৮ থেকে ৩০-এর এই লম্বা ঘরটিকে কেন ১৮ থেকে ২৪ এবং >২৪ থেকে ৩০–এ ভাগ করা হলো না, প্রশ্ন থেকে যাবে l জানা হবে না, আঠেরো বছরের কমবয়সী একটি ছেলে যদি গণধর্ষণে সামিল হয় এবং পূর্ণাঙ্গ ধর্ষণে সক্ষম হয় তাহলে শাস্তি ঘোষণার সময় তাকে কেন দেখা হবে একজন নাবালক হিসেবেই? এক্ষণে প্রশ্ন উঠবে সাবালকত্বের মাপকাঠি, ভোটাধিকার, মদ্যপান, বিবাহের বয়স এবং রাষ্ট্র কতৃক নির্ধারিত অন্যান্য নানাবিধ মাইলস্টোন নিয়েও l বরং আজ থাক l উত্তর খোঁজা যাবে অন্য কোথাও... অন্য কোনোখানে...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ আগস্ট ২০১৫ | ৮২৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৭68198
  • সব ছেলে আর সব মেয়েকে পরষ্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়ার কথা অবশ্যই বলা হচ্ছে না। যে ছেলেরা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট করতে উদ্যত হবে তাদের বিরুদ্ধে তাদের ভিক্টিমরা আত্মরক্ষা করবেন। "লড়িয়ে দেওয়া" জাতীয় কথা না বললেও চলে বোধায়।
  • ঈশান | 202.43.65.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৮68199
  • একক কথিত "হঠকারিতা"র ওইটাই মানে হয়। :-)
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৫১68200
  • মেয়েরা রুখে দাঁড়াতে শিখলে বা সরকারি-বেসরকারি স্তরে তাদের সেই পরামর্শ দিলে সেটা হঠকারিতা? আচ্ছা ঃ-)
  • Ekak | 113.6.157.186 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৫৬68201
  • ঈশান আবার গুলিয়েছেন । আমি বলেছি মেয়েদের কমব্যাট এবিলিটি কম নয় । তারমানে এই নয় যে মেয়েরা কমব্যাট করতে পারেন । যারা নিজেরা বিশ্বাস করেনা যে পারে তারা কিভাবে পারবে । আগে তো নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে । বিশ্বাস টা আনার জন্যে একটা গোলমাল -হটকারিতা ইত্যাদির দরকার আছে । ওসব দাবি-ফাবি তলার দরকার আছে বলে মনে করিনা । বিশ্বাস এলে দাবি যারা খেলোয়ার তারাই তুলবে ।

    আর এই বারংবার "মাদার ,সিস্টার " কোট গুলো এনে একচুয়ালি কিছু জিনিস প্রমান হয় অবস্যই আবার কিছু জিনিস হয়না । দুটো সম্বন্ধেই ওয়াকিব হাল থাকা দরকার । সম্প্রতি কর্নাটকে এরকম পোস্টার এ ছেয়ে গ্যাছে সরকারের তরফ থেকে যার মূল কথা মেয়েরা সন্তান ধারণ করে -মায়ের জাত তাই শিক্ষা দাও । দেখলে আমার ঝাঁট জ্বলে যায় সিম্পলি । কিন্তু বিরোধিতা করবনা । কারণ আমি যেভাবে -যেকারণ -এ যা করি বা করিনা , পৃথিবীশুধ্দু লোক ওই একই কারণ-এ তা করবে বা করবে না তা নয় । এরকম ও লোক আছে যে মেয়েরা সন্তান ধারণ করে মাথায় রেখেই নিজের মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবে । কাজেই তাকে গিয়ে মেয়েরা যে মায়ের বাইরেও একটা অস্তিত্ব এই জ্ঞানের বাণী শোনাবার দরকার নেই ।সে সেই লেভেল নেই । সেম ফর অল দিস ক্যাম্পেইনস । গোবলয় একটা অন্য মানসিকতায় চলে । যেখানে বীরভোগ্যা বসুন্ধরা , মেয়েরা আইদার সোনি কুরি আর নইলে মা-বহেন । ওখানে আগে দরকার ওদের ওই মানসিকতাকেই এনক্যাশ করে মেয়েদের সুরক্ষিত করা । তারপর পরের ধাপ এ মানসিকতা নিয়ে তর্ক আপনা থেকেই উঠবে ।

    এরকম এক ধাক্কায় সব রোগ সারে নাকি ? হাঁপানি সরাতে গিয়ে পেট ব্যাতাহ এত হবেই । আগে হাঁপানি টা সারুক । রুগী কে স্টেবল করা লক্ষ্য পার্মানেন্টলি নিরোগ করার চেষ্টা একটা গড কমপ্লেক্স ।
  • Ekak | 113.6.157.186 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০৫68202
  • ক্যারাটে লড়ে কিচ্ছু মিটবে না ঈশান :) এইযে ছোটবেলায় কবিতা -গল্প লেখা এনকারেজ করা হয় সেকি সবাই সাহিত্যিক হবে বলে :)) কমব্যাট ট্রেনিং নিলে বেসিক জরতা কাটে আর ধারণা জন্মায় কোথায় রিয়েক্ট করব কতটা করব । নাথিং মোর । যুগসঞ্চিত দেয়াল একদিনে তৈরী হয়নি তাই একদিনে কাটার ও নয় । কিন্তু সেই ধারণা কাটাতে কোনো পাঁচশালা বিশাল পরিকল্পনা বা দার্শনিক প্রবন্ধ জরুরি তাও নয় । এগুলো ছোট ছোট ধাক্কা দেবার চেষ্টা যার তাত্ক্ষণিক ফলাফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুন্য । তবু তার মধ্যে যদি দু একটা স্পার্ক বেরয় সেটুকুই লাভ ।
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:১১68204
  • গোবলয়ে তো এই ধাক্কাটা দেওয়াই হচ্ছে না। রিপোর্টেড ধর্ষণের কেসগুলোর স্ট্যাট দেখলেই বুইতে পারবেন। এক ইঞ্চি এগোলেও আমি আপত্তি করতাম না। কিন্তু আদতে পুরোনো ইকুইলিব্রিয়ামটাই রি-ইনফোর্সড হচ্ছে। আমি তো ঘটনাপরম্পরা ফলো না করে মতামত দিচ্ছি এমন না। গোবলয়ে, অন্তত দিল্লিতে, বস্তুটা যা দাঁড়িয়েছে, সেটা এরকমঃ
    ১। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা থেকে শিফট করে বিষয়টা দাঁড়িয়েছে মেয়েদের "রক্ষা"।
    ২। "রক্ষা"র দুটো পার্ট। এক, আত্মরক্ষা, সেটা দুধুভাতু। দুই, কমিউনিটি কর্তৃক রক্ষা। অর্থাৎ, মা, বহিন, ইত্যাদিদের সম্মান রক্ষা। "আত্মরক্ষা" দিয়ে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বদলে "রক্ষা"র ধারণাটা জাস্টিফাই করা হচ্ছে, তারপর "সমাজ" রক্ষার দায়িত্ব তুলে নিচ্ছে।
    ৩। এবার কমিউনিটি কর্তৃক "রক্ষা" মানেই, গাঁওবুড়োদের সম্মান রক্ষার খেলা। খাপ ইত্যাঅদি। পুলিশ এই "সম্মান" রক্ষাকে সাপ্লিমেন্ট করছে। অর্থাৎ, গাঁওবুড়োরা যাদের চিহ্নিত করছে, পুলিশ তাদের জেলে পুরছে। জেল ভরে যাচ্ছে, ধর্ষণের অপরাধীতে, যে ধর্ষকরা আসলে "ধর্ষিতা"র প্রেমিক। মেয়েটির স্ব-ইচ্ছার বিপরীতে গিয়ে তার "সম্মান"এর খাতিরে তার স্ব-ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে।

    এই পুরো সিকোয়েন্সটা বাস্তব। একমাত্র রোমাঞ্চকর স্লোগানই পারে, এই বাস্তব থেকে চোখ ঘুরিয়ে রাখতে। তা, সে স্লোগানগুলি বেশ এফেক্টিভই হচ্ছে, দেখাই যাচ্ছে।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:১১68203
  • "গোবলয় একটা অন্য মানসিকতায় চলে । যেখানে বীরভোগ্যা বসুন্ধরা , মেয়েরা আইদার সোনি কুরি আর নইলে মা-বহেন ।"

    আমিও এরকমটাই দেখেছি। এক্সেপশান আছে, তবে কম।

    "এরকম এক ধাক্কায় সব রোগ সারে নাকি ?"

    ঠিক। তবে এটা অবশ্য আগেও বলা হয়েছে যে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাকে প্যানাসিয়া হিসেবে প্রোজেক্ট করা হচ্ছে না। হয়তো ঈশানের চোখে পড়েনি।

    "কমব্যাট ট্রেনিং নিলে বেসিক জরতা কাটে আর ধারণা জন্মায় কোথায় রিয়েক্ট করব কতটা করব । নাথিং মোর । যুগসঞ্চিত দেয়াল একদিনে তৈরী হয়নি তাই একদিনে কাটার ও নয় । কিন্তু সেই ধারণা কাটাতে কোনো পাঁচশালা বিশাল পরিকল্পনা বা দার্শনিক প্রবন্ধ জরুরি তাও নয় । এগুলো ছোট ছোট ধাক্কা দেবার চেষ্টা যার তাত্ক্ষণিক ফলাফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুন্য । তবু তার মধ্যে যদি দু একটা স্পার্ক বেরয় সেটুকুই লাভ ।"

    ভেরি ভেরি ওয়েল সেড।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:১৬68205
  • "এক, আত্মরক্ষা, সেটা দুধুভাতু"

    এটা বোধায় সবসময়ে ঠিক না। পাইয়ের দেওয়া লিংকে একটি মেয়ের কথা বলা হয়েছে, Asees Chaddha। দিল্লিতে। মেয়েটি দুধুভাতু ট্রেনিং নিচ্ছে বলে মনে হলোনা।
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:২০68206
  • একটি মেয়ে বা একশটি মেয়ে সবসময়েই থাকবে। আমরা যখন সামগ্রিক চিত্র নিয়ে কথা বলি, তখন এক হাজার জনের মধ্যে একজনকে নিয়ে কথা বলিনা।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:২৫68207
  • সঠিক বলেছেন। সেরকমই একটি ট্রেনার বা একশটি ট্রেনার সবসময়েই থাকবে। আমরা যখন সামগ্রিক চিত্র নিয়ে কথা বলি, তখন এক হাজার জনের মধ্যে একজনকে নিয়ে কথা বলিনা।
  • ঈশান | 202.43.65.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:২৮68208
  • আমি একজন ট্রেনারকে নিয়ে কথা বলিনি। সামগ্রিক পরিসংখ্যান নিয়েই বললাম। দাঁড়ান, এই টইয়ে নেই, সেটা খুঁজে আরেকবার দিচ্ছি।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩০68209
  • ইশিতা মাথারু আর আভা নামের দুজন ট্রেনারকে কোট করেছেন দেখলাম।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩২68210
  • এনিওয়ে, এই দুজন যা বলেছেন তাতে ভুল কিছু নেই বলেই মনে হয়। তবে এরকম দুয়েকজনের অ্যানেকডোটাল এভিডেন্স কোট করে একটা ইনিশিয়েটিভ নিয়ে জাজমেন্ট দেওয়া যায়্না বলেই মনে করি।
  • riddhi | 146.165.191.46 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩৪68211
  • পুরো আলোচনা পড়িনি। ঈশানের লাস্ট কটা পোস্ট এ ক। একক দার পোস্টে 'এন্কারেজ ' কথাটা কিন্তু ভেগ। সেই এন/ ডিস -কারেজেমেন্ট লোকে সামাজিক পরিবেশ থেকেই পায়। ফিসিকাল ট্রেনিং কম্পালসরি না হলেই হল। নিজের ই্চ্ছেই যা খুশী করুক।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩৮68212
  • " ফিসিকাল ট্রেনিং কম্পালসরি না হলেই হল। নিজের ই্চ্ছেই যা খুশী করুক।"

    একমত। আর তার সাথে সাথে পরামর্শ দেওয়াটাও জারি থাকুক, অবশ্যই নন-কম্পালসারি বেসিসে।
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩৯68213
  • "ধর্ষণের রাজধানী" দিল্লীর জেলা কোর্টে ২০১৩ তে মোট ৪৬০ টা কেসের পুরো বিচার হয়। শহরে হিন্দুর পক্ষ থেকে এই ৪৬০টি কেসের কোনটা কেমন, তার একটা অনুসন্ধান চালানো হয়। তাতে যা ফলাফল, তা এরকমঃ

    ১। ৪০% ক্ষেত্রে "ধর্ষণ"এর অভিযোগ এসেছে, সম্মতিক্রমে ঘটির যৌন আচরণের জন্য। এগুলোকে আমরা সিধে ভাষায় বলি "পালানো"র কেস। ছেলেটি ও মেয়েটি পালিয়েছে, পরে মেয়েটির বাপ-মা-আত্মীয়স্বজন-পুলিশ অপহরণ ও ধর্ষণের কেস দিয়েছে। এটা হল ধর্ষণের অভিযোগের সিংহভাগ।

    ২। ২৫% শতাংশ ক্ষেত্রে (এটাও সম্মতিক্রমে যৌন সংসর্গের ঘটনা), যৌন সংসর্গের পর বিয়ে না হওয়ায়, মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে। -- এটা হল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেস।

    ৩। ১৭% ক্ষেত্রে, যে অভিযোগগুলি আসে, সেখানে আক্রান্তরা বস্তি বা রাস্তার বাচ্চা (ছেলে এবং মেয়ে) যারা রাস্তায় ঘুমোয় বা সময় কাটায় এবং ফুটপাথবাসিনীদের ধর্ষণ। এগুলো অবশ্যই বলপূর্বক। এবং শাস্তি হয় ৭৫% ক্ষেত্রে।

    ৪। বাকি রইল ১৮%। এটা কোনো আলাদা ক্যাটেগরি না, জাস্ট সংখ্যা মেলানোর জন্য বললাম। সংগে এটাও উল্লেখ থাক, যে, এই ১৮% এর মধ্যে দিল্লী গণধর্ষণের মতো ঘটনা গোটা দিল্লীতে ২০১৩ তে হয়েছে ১২ টা। যেখানে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক বা একাধিক লোক একটি অপরিচিত মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে।

    দিল্লী জেলা কোর্টের ২০১৩ সালের সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান এটা। কোনো স্যাম্পল সার্ভে নয়।

    -----

    এবার বলুন তো, মূল লড়াইটা কিসের ভিত্তিতে। ৬৫% ধর্ষণের অভিযোগে কোনো বলপ্রয়োগ নেই। খাপ আছে, সামন্ততান্ত্রিকতা আছে। ১৮% কেসে বলপ্রয়োগ থাকলেও জুডো-ক্যারাটে শেখার অবস্থায় আক্রান্তরা নেই, তারা ফুটপাতবাসী। সব মিলিয়ে ৮৩% কেসে আত্মরক্ষা বস্তুটাই অবান্তর। বরং "রক্ষা" করার চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াইটাই জরুরি। কিন্তু হচ্ছে উল্টোটাই। "খাপসে আজাদি/বাপ সে আজাদি" নামক একটা মুভমেন্ট চালু হয়েছিল নির্ভয়ার পরে পরেই। সে এখন হাওয়া, তার জায়গা নিয়েছে "রক্ষা" এবং "আত্মরক্ষা"। ফলটা পরিসংখ্যানেই দেখতে পাচ্ছেন।

    এবং মজা হচ্ছে, এই পরিসংখ্যান্টি নিয়ে জাস্ট কোনো কথা হয়না। নারী আন্দোলনের মুখদেরও জিগিয়ে দেখেছি, অখন্ড নীরবতা। "খাপসে আজাদি/বাপ সে আজাদি" চুলো`য় দিয়ে, শুধু "রক্ষা"র লড়াই কীসের হাত শক্ত করছে? উত্তরে শুধু রেটোরিক আসে, কিংবা অখন্ড নীরবতা। কিংবা ওই, ঈশ্বর গুপ্ত আখ্যা আসে। :-)
  • Ekak | 113.6.157.186 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৪১68214
  • একেবারে দেওয়া হচ্ছেনা তা নয় । খাপ -গাঁও বার সবই আছে , কিন্তু রিসেন্ট খবর দেখুন .......তিনটে ভিডিও বাজারে আছে যেখানে মেয়েরা ইভটিজার কে ধরে ঘা কতক দিচ্ছে । একটা তে রীতিমত কোতয়ালী তে নিয়ে গিয়ে জুতোপেটা করছে মেয়েটি ইভ্তিসার কে । সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে ।

    এবার এগুলো থেকে প্রচুর শেয়ার হওয়ার পেছনে আলাদা আলদা দৃষ্টিভঙ্গী থাকতে পারে । একনম্বর তো পিটুনি দেখার আনন্দ যেটা জনতা র সর্বদাই আছে । আরেকটা হলো মেয়ে গুলোর পাল্টা আঘাত করার মানসিকতা কে সমর্থন জানানো । সেটাও অনেকে মনে করছে । দুটো মানসিকতাই আছে ।

    এবার এখানে কেও মাথা চুলকে লজিক আমদানি করতে পারেন যে একটি মেয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিল , পুলিশ দেখল এটা তো ভয়ঙ্কর ! অবস্যই ভয়ঙ্কর । আইন শৃঙ্খলার দিক দিয়ে ভারত রাষ্ট্র অধিকাংশ পকেটে (জীয়গ্রাফিকালি , ক্রাইম টাইপ ধরে ) ফেইল্ড স্টেট এত নতুন কথা না । এবং রাষ্ট্র যেখানে আইদার ফেইলীয়র অর অত্যাচারী সেখানে জনতা আইন হাতে তুলবেই । এটা ওই ইন্দেফিণিত দরজা আটকে ধরনা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন সত্যি তেমন ইভটিজার কে জুতোপেটা করার ক্ষেত্রেও সত্যি ।

    বাস্তব কে অস্বীকার করা হচ্ছেনা । আমরা কেও বাইরে থেকে গোবলয় কে পাল্টাতে পারবো না । যেকোনো ভাবেই হোক শিক্ষাহার -পারস্পরিক সম্মান এগুলো বাড়লে ওরা নিজেরা নিজেদের পাল্টাবে । যতই খারাপ বলুন দশ-বিশ বছর আগে গোবলয় যা ছিল এখন সেরকম নেই । ধাক্কা কে দেবে ? সরকার ভোট পাবে যদি সত্যি সেরকম "ধাক্কা " দেয় ! ভেবে বলুন তো । কেন কেজ্রী কে ওরকম চটুল জোক বলা গ্রাম্য কবি কে টিকিট দিতে হয় ?

    ইত উইল টেক লং টাইম । ইন্টারনেট আছে , ভিসিবিলিটি বাড়ছে । জানতে পারছি । চেঁচামেচি হচ্ছে খুব ভালো কথা কিন্তু সরকার কেন ধাক্কা দিচ্ছেনা বলা সহজ ,করা নয় । রাষ্ট্র বলে আলাদা করে কোথাও কিছু আছে কি ? সেই তো টিকিট , এমপি ,এমেলে । গোবলয় থেকেই উঠে আসা । ওরা ওদের ধাক্কা না দিলে কে দেবে ? এটা বলার মানে রাষ্ট্র কে হাত ছেড়ে দেওয়া নয় , জাস্ট এইটুকুই বলা যে গোবলয় হোক বা পশ্চিমবঙ্গ , যাদের যা সমস্যা তারা নিজেরা ধাক্কা না দিলে রাষ্ট্র তাদেরই প্রতিচ্ছবি ছাড়া কিস্যু না ।
  • Ekak | 113.6.157.186 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৫৫68215
  • রিদ্ধি

    আমি তো চাই ভূগোল পরানো তুলে দেওয়া হোক :) আফটার অল গণতন্ত্রে সন্খায়্গরিস্ত যেটাকে শিক্ষাক্রম হিসেবে মানবে সেটাই শিক্ষাক্রম । কাজেই সেখানে কমব্যাট ট্রেনিং চাইলে থাকবে নইলে থাকবেনা ।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৫:০৩68216
  • ঈশান, আপানি যে স্ট্যাটিসটিক্সটা দিলেন তার পুরোটা সঠিক। ১, ২, ৩, ৪, প্রতিটা পয়েন্ট সঠিক।

    এর সাথে মেয়েদের আত্মরক্ষার শিক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া বা স্কুলে কোর্স চালু করা, যেখানে মেয়েরাও এনরোল করে, তার কি সম্পর্ক বুঝলাম না। "পালানোর" কেসে ধর্ষনের অভিযোগ আনা হয়, এটা ভয়ংকর অন্যায়।

    "যৌন সংসর্গের পর বিয়ে না হওয়ায়, মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে।" - একমত, অন্যায়, এটা করা ঠিক না।

    ৩ ও ৪ এর ব্যাপারেও একমত।

    কিন্তু এগুলোর কোনটার সাথেই, মেয়েদের আত্মরক্ষার শিক্ষার কি সম্পর্ক বুঝলাম না।

    কলকাতায় বা মফস্বলে অন্ধকার গলিতে একটি মেয়ের সামনে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, চেষ্টা করছে আক্রমন করার। মেয়েটি না "পালানোর" কেসে দিতে চায়, না সে বিবাহপূর্বক ধর্ষনের অভিযোগ আনতে চায়, না সে ফুটপাথবাসিনী। সে কলকাতার বা অন্য কোন ছোট শহরের অন্ধকার গলিতে বিপদের মুখোমুখি। বা রোজ বাসে যাওয়া-আসার সময়ে শরীরে অনভিপ্রেত স্পর্শ পেতে পেতে সে বিরক্ত, মরিয়া। এরকম হাজার হাজার মেয়ের সাথে আপনার স্ট্যাটিস্টিকস গুলোর কি সম্পর্ক বুঝলাম না। আত্মরক্ষার শিক্ষার পরামর্শ এরকম মেয়েদের জন্য দিতে চাওয়া হচ্ছে।
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:০০68218
  • আপনি যে কারণে পরামর্শটি দিচ্ছেন, আর রাষ্ট্র যে কারণে দিচ্ছে, এই কার্যকারণ সম্পর্ক দুটো আলাদা। আপনার ব্যক্তিগত অভিপ্রায়টির সততা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু রাষ্ট্রের উচ্চকিত উচ্চারণের সামনে ওটি ক্ষীণ। রাষ্ট্র তার অভিপ্রায়ের কারণে আপনার সদিচ্ছাটিকে ব্যবহার করছে। তাতে আপনার ব্যক্তিগত অভিপ্রায়টি দুষ্ট হয়ে যায়না। এমনকি পরামর্শ দিতে বারনও করছি না। কিন্তু রাষ্ট্রের কার্যকারণ প্যাটার্নটি সম্পর্কে অবহিত থাকুন, এই হল আমার চাহিদা।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:০০68217
  • "সব মিলিয়ে ৮৩% কেসে আত্মরক্ষা বস্তুটাই অবান্তর। বরং "রক্ষা" করার চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াইটাই জরুরি।"

    একমত, "রক্ষা" করার চেষ্টার বিরুদ্ধেও সরব হতে হবে। "খাপসে আজাদি/বাপ সে আজাদি" এরকম আন্দোলনও নিশ্চয়ই জরুরি। কিন্তু তার জন্য রাস্তাঘাটে-ট্রামেবাসে-নির্জন জায়গা ইত্যাদি নানারকম জায়্গায় বা সিচুয়েশনে যে যৌন হেনস্থার ঘটনা রোজ ঘটছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার কোয়্শল শেখানোর পরামর্শ কেন দেওয়া যাবেনা সেটা বুঝলাম না। এমনকি যদি এই ঘটনাগুলোকে "মাত্রঃ ১৮% ধরে নি (সেটাও ডাউটফুল কারন যৌন হেনস্থার ঘটনা ভীষন আন্ডাররিপোর্টেড), তাহলেও সেই ১৮%এও তো হাজার হাজার মেয়ে এই ঘটনাগুলোর শিকার হচ্ছেন! তাদের জন্য কেন সরকারি-বেসরকারি সব স্তরে আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পরামর্শ দেওয়া যাবেনা, বিশেষ করে যদি তাতে কিছু মেয়ে উপকৃত হন?

    (আরেকটা ক্যাভিয়াট দেবো ভাবছিলাম, শুধু দিল্লির কেস স্টাডিকে পুরো দেশে এক্সটেন্ড করা কতোটা যুক্তিযুক্ত। মানে এরকম এক্সটেন্ড করলে এক্সটার্নাল ভ্যালিডিটি ভায়োলেট করার প্রোবাবিলিটি খুব বেশী। তাও এই পয়েন্টটা তলছি না, তর্কের খাতিরে নাহয় ধরে নিলাম দিল্লি ভারতের আর সব শহরকে রিপ্রেসেন্ট করে)

    পরে লিখব।
  • Ekak | 125.99.196.27 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:০১68182
  • সমান শক্তিধর হওয়া জরুরি নয় কিন্তু সমান অধিকার পেতে হলে সমান ক্ষমতাধর হতে হবে । সম না হলে সম্মান কিসের । করুণা চাইলে আলাদা কথা ।
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:১০68219
  • ' পৃথিবীর অনেক দেশেই জন্মের পর থেকে মেয়েদের মগজে একটাই জিনিষ ঢোকানো হতে থাকে - তুমি মেয়ে, তুমি ছেলেদের থেকে সব বিষয়ে পিছিয়ে, অন্যায় হলেও তুমি মুখ বুজে সহ্য করবে, কারুর গায়ে হাত তুলবে না, পিছিয়ে আসবে।'

    এটা পড়ে আগে দেখা ন্যাশানাল ফ্যামিলি সার্ভের একটা তথ্য মনে পড়ে গেল। এমনি দিয়ে গেলাম।

    যথাক্রমে বিবাহিত, বিবাহিত কিন্তু 'গওনা' না হওয়া মেয়ে, অবিবাহিত মেয়েদের উপর ফিজিক্যাল ভায়োলেন্সকারীদের পরিসংখ্যান, শতা১শেঃ

    অত্যাচারী Father/step-father 4.4 29.5 26.6
    অত্যাচারী Mother/step-mother 8.9 64.3 57.1

    NFHS এ ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সে ছেলেদের উপর হওয়া ভায়োলেন্স নিয়ে তথ্য প্রায় নেই, ছেলেদের বয়ানে তো নেইই, তাই মেয়েরা (পড়ুন মায়েরা) খালি মেয়েদের গায়েই হাত তোলে, ছেলেদের গায়েও তোলে কিনা তথ্য থেকে বলা গেল না।
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ১০:৩০68220
  • অদ্ভুত টাইমিং। ঠিক যে সময়ে এখানে আলোচনা চলছে সে সময়েই ইন্ডিয়াজ ডটার্স তথ্যচিত্রটি যিনি বানিয়েছেন তিনি ইন্টারভিউ দিলেন টিভিতে। টিভির ক্যামেরার সামনে স্বীকার করলেন ১৮ বছর বয়সে উনিও রেপড হয়েছিলেন। ছবিটির কিছু অংশ দেখানো হলো। আলোচনা চলল। (সিএনএন চ্যানেলে)। হয়ত ওদের ওয়েব সাইটে এই অনুষ্টানটা দেখা যাবে।
    রেপের ঘটনা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আন্ডাররিপোর্টেড। অ্যামেরিকাতেও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রচুর মেয়ের রেপ হয়ে থাকে। ২৫% না কত যেন বললেন তিনি। এবং দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই এই সেদিন অবধি এই ধারণাই চালু ছিলো (কোথাও কোথাও এখনো আছে) যে ধর্ষণের জন্যে মেয়েরাই দায়ী। তার পোশাক তার আচরণ। ঐ ছবির নির্মাতাই বললেন এসব। আরো বললেন যে জেন্ডার ইনইকুয়ালিটি এর কারণ। অ্যামেরিকায় মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় প্রায় ২৫% কম স্যালারী পায় একই কাজের জন্যে। অ্যামেরিকার কন্সটিটিউশানেও ছেলে ও মেয়ের সমানাধিকার নেই। এখনো অবধি নেই। অর্থাৎ যা বুঝলাম, খাপ পঞ্চায়েতি ধ্যানধারণা সব দেশেই রয়েছে। কোথাও কোথাও সেটা সংবিধানের মধ্যেই স্বীকৃত। চাইলে সিএনএনের ওয়েব সাইটে অনুষ্ঠানটি দেখে নিতে পারেন।

    কদিন আগে, কিছু পোস্টার দিয়েছিলাম। কিছু অ্যামেরিকার, কিছু ভারতের। সেইগুলো দেবার উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, চারদিনের সেল্ফ ডিফেন্স কোর্স ও রয়েছে। মেয়েরা নিশ্চয় এনরোল করে। কিছু ফ্রী, কিছু পয়সা দিয়ে। নইলে ব্যবসা চালাবে কেমন করে? অর্থাৎ শুধু ভারতে নয়, উন্নত দেশেও মেয়েরা সেল্ফ ডিফেন্স শেখে। তবে সেসব দেশে খাপ পঞ্চায়েত আছে কিনা জানা নেই। এতে সেসব দেশে কতটা গেল গেল রব ওঠে, কতটা কন্স্‌পিরেসী থিয়োরী খাড়া করা হয় সেসবও জানিনা।
    জেন্ডার ইনিকুয়ালিটি প্রধান সমস্যা বলেই মনে হয়। অ্যামেরিকায় বহুদিন ধরেই সেল্ফ ডিফেন্স কোর্স মেয়েরা করছে (এটা ঐ চিত্র নির্মাতা বলেননি কিন্তু), সেখানে সর্বত্র মেয়েরা ছেলেরা মারপিট করছে বলেও শুনিনি। হয়ত আন্ডাররিপোর্টেড।
    যাইহোক, এখানে গত সপ্তাহে জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে ইন্ডিয়াজ ডটার ছবিটি দেখানো হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে। সব ছাত্র ছাত্রীই দেখেছে, শিক্ষকরাও। আমরা অবিশ্যি আগেই দেখে নিয়েছি ইন্টারনেটে।
  • AP | 24.139.222.45 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ১০:৫২68183
  • সযত্নে গুলিয়ে দেওয়া কতগুলো কথা আবার লিখে দিই।

    আত্মরক্ষার কৌশল যে কেউ শিখলে আপত্তির কিছু নেই, কেউ তাতে আপত্তি করেননি। কিন্তু সরকারী তরফে যদি 'আত্মরক্ষার কৌশল' শেখানো হয়, তার অর্থ নিশ্চই 'বিপদ থেকে আত্মরক্ষা'। সেটা ছেলে মেয়ে সকলের জন্যই হওয়া উচিত। শুধু মেয়েদের জন্য হলে বুঝতে হবে 'পুরুষ দ্বারা বিপদ (বা আপদ)' থেকে আত্মরক্ষার কৌশল। সেটা এই বিপদের কোনো সমাধান নয়। কারণ মেয়েদের যে ধরনের ট্রেনিঙ্গ দেবার কথা হচ্ছে, ক্যারাটে ইত্যাদি, বা যে সব হাতিয়ার রাখার কথা বলা হচ্ছে, পেপারস্প্রে ইত্যাদি সেগুলো যদি ছেলেরাও রাখেন, প্রয়োগ করেন তাহলে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল কোনো কাজেই আসবে না। হয়তো আসেও না। ঠিক যে কারণে একটি আক্রান্ত মেয়ের পুরুষ সঙ্গীও অনেক সময় কিচ্ছু করতে পারে না (সিনেমায় যেমন হয় না)। তাই রাষ্ট্র এই ট্রেনিঙ্গ ইত্যাদি গুলোকে বেশি প্রোজেক্ট করলে আখেরে মেয়েদের বিপদ বাড়বে বই কমবে না।

    যে আক্রান্ত সে যা কিছুই করতে পারে। এখানে 'করতে পারে' অর্থ হল যাকিছু করতে পারার অধিকারী। কিন্তু আক্রান্ত সাধারনতঃ বেকায়দায় থাকে তাই মাঝে সাঝে টেনে একটা চড় মারা ছড়া কিছু সত্যি সত্যি করতে পারে না। সেটাও ঐ বড়জোর ভীড় বাসে কি ওয়ান টু ওয়ান মোকাবিলায়। সেখানে আবার ক্যারাটে শিখে বিশেষ লাভ নেই। তবু আত্মরক্ষার কৌশল শিখে রাখাই ভালো। কিন্তু তাতে রাষ্ট্র যেন সেটা নিয়ম করে না ফেলে।

    কিন্তু আক্রমণকারীর শাস্তিটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে ঘরের লোকই হোক বা রাস্তার। সেটা অন্য প্রসঙ্গ, কিন্তু নেহাত অপ্রাসঙ্গিক নয়। কারণ সেখান থেকেই এই আলোচনা শুরু হয়েছিল। আর সেটা সমাধানের একটা দিকও বটে।

    এ বাদে মেয়েরা কিসে কিসে নীচে, কি করে উঠে এল, চাকরী, রোজগার, ব্রেড আর্নার কিনা ইত্যাদি বোধহয় এই আলোচনায় বহিরাগত।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ১১:০৫68184
  • সযত্নে গুলিয়ে হচ্ছে যে আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পরামর্শ দেওয়া মানেই এটা না যে রাষ্ট্র তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে। প্রত্যেক নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া আর অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য। সেই কর্তব্যে কোথাও গাফিলতি হলে সেটা নিয়ে আন্দোলন করা যেতেই পারে। কিন্তু আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পরামর্শ সরকারি বা বেসরকারি নানান লেভেলে দেওয়া যেতেই পারে। আত্মরক্ষার কৌশল জানা থাকলে বা ব্যাগে পেপার স্প্রে থাকলে মেয়েরা কিছু কিছু সময়ে নিজেদের বাঁচাতেই পারে। কাউকে সরকারী বা বেসরকারী তরফে আত্মরক্ষার কৌশল শেখালে বা শেখার পরামর্শ দিলেই যে রাষ্ট্র অব্যাহতি পেয়ে যাচ্ছে না এটা যেন গুলিয়ে দেওয়া না হয়।
  • AP | 24.139.222.45 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ১১:৪৩68185
  • @ ল্যামডা,

    এটা গুলিয়ে দেওয়া নয়। এটা তো সকলেরই মাথাব্যথা। যারা এই বিষয় নিয়ে ভাবছেন, এই গুলিয়ে দিয়ে তাদের কারুর কিচ্ছু লাভ হচ্ছে না। তারা কেউ আত্মরক্ষার কৌশল সেখার বিরুদ্ধে কথা বলছেন বলে তো দেখলাম না। কিন্তু এটা একটা চিন্তার বিষয় অন্ততঃ আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। কারণ রাষ্ট্র (মানে ধরুন পুলিশ) যে এই করে কিছুটা দায়িত্ব এড়িয়ে জেতে চাইছে / চাইবে না সেটা কে বলতে পারে ! আজ যারা মেয়েদের আত্মরক্ষা শিখতে বলছে, কাল তারাই পুরুষদের বলবে আত্মরক্ষার কৌশল শিখে মেয়েদের রক্ষা করতে। সেটাকেও অন্যায় বলা যাবে না। তাই আত্মরক্ষার কৌশল যা খুশি শিখুন বা সেখান কিন্তু সেটাই যে সমাধান নয় বা সেটুকুই যে সরকারের কাজ নয় এই ধারনাটা পরিস্কার থাকলেই ভালো।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ১২:১২68186
  • AP, অনেস্টলি কয়েকটা কটা লিখি। এখানে দুটো এক্সটেন্শান দেখছি, যে দুটোতেই লজিকাল ফ্যালাসি চোখে পড়ছে।

    ১। মেয়েদের আত্মরক্ষার পরামর্শ দেওয়া --> রাষ্ট্র তার দায় এড়িয়ে যাবে।

    প্রথমত, আজকের ভারতবর্ষে সত্যিই কি পুলিশ আদৌ কোন দায়িত্ব পালন করে? একে তো বহু অপরাধের সঠিক তদন্ত হয়না, তার ওপর যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত অপরাধের কিনারায় প্রায় পুরো পুলিশ-বিচারব্যাবস্থা গা করেনা। এই অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই হতে হবে, তার জন্য আন্দোলনও হতেই হবে, কিন্তু মেয়েদের আত্মরক্ষার পরামর্শ দিলে পুলিশ তার দায় এড়িয়ে যাবে এটা কিকরে ভাবছেন? পুলিশের কর্তা বা সরকারী কাউকে কি বলতে শুনেছেন যে আমরা তো আত্মরক্ষা শিক্ষা দিচ্ছি, কাজেই আমাদের আর কোন মাথাব্যথা নেই। এরকম কোন স্টেটমেন্ট আমার চোখে পড়েনি, পড়লে তার প্রতিবাদ অবশ্যই করবো। সরকারি স্তরে এরকম মনোভাব আছে কি? আমার সেরকম মনে হয়নি, তবে এরকম মনোভাব হলেও প্রতিবাদ অবশ্যই করবো। অন্যদিকে যৌন হ্যানস্থা যেভাবে বাড়ছে তাতে কিন্তু মনে হয় আত্মরক্ষার পরামর্শ, সেটা সরকারই দিক বা মেয়েরা নিজেরাই এটা নিয়ে চিন্তা করুক, কাম্য। ঠিকমতো ট্রেনিং নেওয়া থাকলে কখনো কখনো নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হতেও পারে। যে মেয়েটি নিজেকে বাঁচাতে পারলো তার তো লাভ হলো! (এর মানে এও না, যে শেখেনি সে কোন ঘটনার সম্মুখীন হল, তখন তাকে বলা হবে তুমি কেন কিছু শেখোনি? সব দায় তোমার। এরকম ভিক্টিম ব্লেমিংও আমার চোখে পড়েনি)। তাই এই এক্সটেনশানটা কেন করছেন সত্যি বুঝছি না।

    ২। মেয়েরা আত্মরক্ষা শিখলে --> ছেলেরাও সেসব শিখবে আর সেসব অস্ত্র ব্যবহার করবে, তাহলে কি হবে?

    এটা কিন্তু একেবারে স্লিপারি স্লোপ ফ্যালাসি। মেয়েরা শিখলেই ছেলেরাও শিখবে এটা লজিকালি আসে না কারন দুটো আলাদা সেট। মেয়েরা শিখবে আত্মরক্ষার তাগিদে। সব ছেলের আত্মরক্ষার দরকার হয়না, অন্তত যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে, তাই তাদের শেখার তাগিদটাই নেই। এবার আসি যে ছেলেরা যৌন হেনস্থা করতে পারে তাদের কথায়। আগেই বলেছিলাম, এদের মধ্যেও একটা বড়ো অংশ স্রেফ সুযোগন্ধানী, পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে হেনস্থা করেনা (কিছু এক্সেপশান বাদে)। ট্রামেবাসে যারা হাত চালায় বা অন্ধ্কার গলিতে একটি মেয়েকে একা পেয়ে যারা এগিয়ে আসে তার বেশীরভাগ স্রেফ সুযোগন্ধানী। আপনার কি মনে হয় তারা ধৈর্য্য ধরে রেপ করতে হবে এই তাগিদ থেকে ক্যারাটে শিখবে? খুব কম ছেলেই ওরকম করবে।

    "আজ যারা মেয়েদের আত্মরক্ষা শিখতে বলছে, কাল তারাই পুরুষদের বলবে আত্মরক্ষার কৌশল শিখে মেয়েদের রক্ষা করতে"

    এটাও কষ্টকল্পিত মনে হচ্ছে। আজ যারা মেয়েদের আত্মরক্ষা শিখতে বলছে (যেমন দুয়েকটা রাজ্যের পুলিশ) তারা তো মেয়েদের নিয়েই প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করছে। তার মধ্যে পুরুষদের কেন টেনে আনবে?
  • AP | 24.139.222.45 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ১২:৩২68187
  • @ ল্যামডা,

    এক নম্বর পয়েন্ট নিয়ে খুব কিছু বলার নেই। সরকার বা পুলিশের উদ্যোগটা যতক্ষণ স্রেফ সচেতনতা / আত্মরক্ষার ক্ষমতা / আত্মবিশ্বাস বাড়াবার জন্য ততক্ষণ কিছু সমস্যা নেই। আর কিছুটা সফল হবে, সেটাও ঠিক।

    কিন্তু মেয়েদের বিরক্ত বা রেপ যারা করছে তারা কেউ রেপিস্ট হয়ে জন্মায় নি, ছোটবেলায় রেপিস্ট হবে বলে খাতায় রচনা লেখেনি, অনেকেই সাধারণ ঘরের ছেলে। বড় হয়ে রেপ করবে বলে নয় এমনিই তো তারাও সেই কৌশল শিখতে পারে। আত্মরক্ষার দরকার যে তার কোনোদিন হবে না তা তো নয় ! ঠিক যে ভাবে পাশের বাড়ির মেয়েটি আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে, সেই ভাবেই সেই ছেলেটিও শিখতে পারে, সাথে রাখতে পারে পেপার স্প্রে। অর্থাত এই ক্যারাটে শেখা ইত্যাদি কালচারে পরিণত হলে সেটা আর আলাদা করে 'মেয়েদের' শক্তি বাড়াবে না। (আমাদের ছোটবেলায় ছেলেদের যেমন নাচ এমনকি গান শেখার চলও খুব বেশি ছিল না, কিন্তু এখন যে কারণেই হোক এই বিষয়ে ছেলে মেয়েতে বিশেষ তফাত নেই, নাচ-গানের স্কুলে ছোট শিশুরা ছেলে-মেয়ে প্রায় সমান সংখ্যায় যাচ্ছে)।

    আজ যারা মেয়েদের নিয়ে অর্গানাইজ করছে কয়েক বছর পর যদি দেখা যায় সেই প্রোগ্রাম যথষ্ট সফল নয় তখন সেটা ছেলেদের জন্যও প্রসারিত করবে না তাও বলা যায় না আর করলে সেটাতে আপত্তিরও কিছু দেখা উচিত নয়।
  • ঈশান | 183.17.193.253 (*) | ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪৫68221
  • ভারতীয় আন্ডার রিপোর্টিং নিয়েও আমার চাল্লাইন বলার আছে। সেটাই বা বাদ থাকে কেন।

    ধর্ষণের আন্ডার রিপোর্টিং একটি বাস্তব ঘটনা। সারা দেশে সেটা কমছে এমন কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। একই সঙ্গে ধর্ষকদের পিটনি দেবার ঘটনাও বেড়ে চলেছে। কোথাও ক্ষুব্ধ জনতা ধর্ষক সন্দেহে পিটিয়ে জিন্দা জ্বালিয়ে দিচ্ছে, কোথাও থানার সামনে আক্রান্ত মহিলারা ধরে পেটাচ্ছেন। সেসবেরই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, এবং ঘটনাগুলির উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটছে।

    পাল্টা ভায়োলেন্সের দিকটা যদি এড়িয়েও যাই, তাহলেও, এই দুটো ঘটনা পরস্পরবিরোধী। আন্ডার রিপোর্টিং ঘটে তখনই, যখন আক্রান্ত, বা সামগ্রিকভাবে সমাজ ধর্ষণকে চায়। আর প্রকাশ্যে ধর্ষক সন্দেহে শাস্তি দেওয়ার অর্থ হল ধর্ষণকে বা হেনস্থাকে প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে সজোরে। এর একটা বাড়লে আরেকটা কমা উচিত। হেনস্থাকে প্রকাশ্যে আনার প্রবণতা বাড়লে আন্ডার রিপোর্টিং কমা উচিত। কিন্তু সেটা হচ্ছেনা। দুটোই উজ্জ্বল হয়ে পাশাপাশি বিরাজ করছে।

    প্রশ্ন হল কেন। তাহলে কি এরা একে অপরের হাত ধরে বাড়ছে? দুটো প্রবণতার মধ্যে কি কোনো বোঝাপড়া (কনস্পিরেসি ভাববেন না দয়া করে) আছে? আন্দাজ করা যায় আছে। যদি পিটুনির ভিডিওগুলির দিকে ভালো করে তাকান, দেখবেন একটা কমন প্যাটার্ন আছে। যেখানে মব পেটাচ্ছে, সেখানে তো পেটাচ্ছেই। যেখানে মহিলারা ঠ্যাঙাচ্ছে, সেখানেও দেখবেন, চারদিকে সমাজের দাদাদের সোচ্চার উপস্থিতি। কোথাও উদ্যোগ পুলিশের, কোথাও এলাকার রক্ষাকর্তাদের। আক্রমনকারীকে ধরে মেয়েদের "রক্ষা" করা হয়েই গেছে, এবার মেয়েদের বলা হচ্ছে, নে তোরা ঠ্যঙা। পুরো চিত্রনাট্যে, মহিলাটি বা মহিলারা ক্রীড়নক মাত্র। উদ্যোগ মব, বা পুলিশের, মহিলারা সাবজেক্ট নন, আত্মরক্ষাকারী তো ননই।

    এটা শুধুই ভিডিওতে দেখা যায় এমন না। খবরেও এমনই চিত্র প্রায় সর্বত্র। এক আধটা কেসে একজন মেয়ে একজন দুষ্কৃতীতে পিটিয়েছেন বলে খবর আসে, কিন্তু সে ওই খুব খুবই কম। বাকি সবই মবের রাজত্ব। কমিউনিটির হাতের সুখ।

    এই জায়গাটা থেকেই বাকিটা বোঝা যায়। কমিউনিটি একটি মাপকাঠি ঠিক করেছে, যে মাপকাঠি অনুযায়ী কিছু হেনস্থা শাস্তিযোগ্য। আর কিছু হেনস্থা চেপে দেবার মতো। যে ঘটনায় পিটনি দিলে কমিউনিটির "সম্মান" রক্ষিত হয়, সেটিতে পিটনি দেওয়া হয়। যেটি চেপে দিলে কমিউনিটির "সম্মান" রক্ষিত হয় সেটি চেপে দেওয়া হয়।

    ফলে এই আন্ডার-রিপোর্টিং এবং মহিলাদের দ্বারা স্বহস্তে শাস্তিপ্রদান, এরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম। একটা আরেকটার পরিপূরক। পাল্টা ভায়োলেন্স, মহিলাদের দ্বারা হলেও, সেটা আন্ডার-রিপোর্টিংকে কমায়না। বরং রক্ষা করে। আর আমরা, এই তো মেয়েরা কেমন রুখে দাঁড়িয়েছে, ভেবে আনন্দ পাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন