এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ১০ আগস্ট ২০২৪ | ৫৪০ বার পঠিত
  • বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ভদ্রলোক ছিলেন। অর্থাৎ তিনি কম্যুনিস্ট হওয়ার প্রথম শর্ত পূরণ করেছিলেন।

    শুনে অবাক লাগতে পারে। কারণ আমাদের মনে আছে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র একবার বলেছিলেন, তিনি ভদ্রলোক নন, কম্যুনিস্ট। এই সূত্রায়নটা বিভিন্ন কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে চালু ছিল, হয়ত এখনও আছে। সবিনয়ে বলার, গত শতাব্দীর এই অমূলক ধারণা পরিত্যাজ্য। আসলে বঙ্গীয় ভদ্রলোকের সংজ্ঞায় আমরা যে যে গুণাবলী আরোপ করে থাকি যেমন সততা, রুচিবোধ, কিঞ্চিৎ বিনয়, নিজেকে জাহির না করা --- এগুলি কেবলমাত্র মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৈশিষ্ট্য বলেই আমরা ধরে নিই। অথচ ভেবে দেখলে এইসব গুণাবলী শ্রেণীনির্বিষেষে ভালো মানুষের লক্ষণ হওয়া উচিত, বরং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এগুলি বরাবরই বেশ কম। ঘুষখোর কোনো ইঞ্জিনীয়ার বা ওষুধ ব্যবসার অংশীদার কোনো চিকিৎসকের চেয়ে বাজারের অনেক সবজিবিক্রেতার সততার প্রতি নিষ্ঠা অনেক বেশি। তাই শ্রেণীর গণ্ডীতে না বেঁধে রেখে ভদ্রতাবোধ সম্পন্ন হওয়াটা গুণ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। এর বিপরীতে দুর্মুখ হয়ে, অহংকারী হয়ে মনে করা যে ‘ভদ্রলোকী’ আচরণ থেকে বেরিয়ে এসে বেশ কম্যুনিস্ট হলাম — এটা বাতিল কনসেপ্ট। বরং ভদ্রতাবোধ সম্পন্ন হওয়া কম্যুনিস্ট হওয়ার প্রথম শর্ত হওয়া উচিত।
    বুদ্ধবাবুর সংস্কৃতিবোধ, সাহিত্য ও সিনেমা প্রেম নিয়ে আমি কিছু লিখব না। অনেকে লিখেছেন। আমি ওঁর রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলব। সেখানে কিছু সমালোচনা যেমন থাকবে তেমনি ওঁর বিরুদ্ধে অতি বামদের কিছু সমালোচনার জবাবও থাকবে যেগুলি একদিন বিরতি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু হয়ে গেছে। এমন নয় যে আমি সবটাই ঠিকমত বলতে পারব। কিন্তু চেষ্টাটা অন্তত করতে পারি।

    বুদ্ধবাবু মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন নি। সেই শ্রেণীর আশাআকাঙ্খাকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই উনি প্রাথমিকে ইংরেজি ফেরান। সেই শ্রেণীর সীমাবদ্ধতা থেকেই উনি বলে ফেলেছিলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আমি এমন একটা দল করি যারা বন্ধ ডাকে। উনি যদি বলতেন, আজকের দিনে বন্ধের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে কতটা কার্যকারিতা আছে সেটা বিবেচনা করা দরকার, তবে তার একটা মানে হত। বদলে উনি শ্রমিক শ্রেণীর ধর্মঘট করার অধিকারকেই অস্বীকার করে ফেললেন যেটা জ্যোতিবাবু কোনোদিন করেন নি। উনি বলতেন, ধর্মঘটের অধিকার কখনও ছাড়বেন না।

    আসলে বুদ্ধবাবু সাহিত্যচর্চা করলেও মার্কসবাদের বড় কোনো তাত্ত্বিক কখনই ছিলেন না। মার্কসবাদ সংক্রান্ত তাঁর লেখাগুলি সবই গতানুগতিক ধাঁচের। পার্টিতে আসার অব্যবহিত পরে জ্যোতিবাবুকে যতটা শ্রমিক আন্দোলন করতে হয়েছিল অথবা দ্বিতীয় পার্টি কংগ্রেসের পর বি টি রণদিভের পালটা দলিল হাজির করে যে তাত্ত্বিকতার পরিচয় জ্যোতিবাবু দিয়েছিলেন তার কণামাত্রও বুদ্ধবাবুকে করতে হয় নি। তাই উদারীকরণ পরবর্তী ভারতের অঙ্গরাজ্যে সরকার চালাতে গিয়ে যে সীমাবদ্ধতা থাকে তার মোকাবিলায় সৃজনশীল মার্কসবাদের বদলে নিরুপম সেন নির্দেশিত প্রথাগত মার্কসবাদী পাঠ – সামন্ততন্ত্রের থেকে পুঁজিবাদ উন্নত অতএব কৃষি থেকে শিল্পে গেলে সেটাও মার্কসবাদের পথে হাঁটা হল --- এরকমই একটা সরলীকরণের শিকার হয়েছিল তাঁর সরকার। এর সঙ্গে প্রয়োগগত যা যা ভুল ছিল সেগুলো বহু আলোচিত বলে আর পুনরাবৃত্তি করছি না। কিন্তু এই সূত্রায়নকে তিনি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেছিলেন। এর মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কোনো ব্যাপার ছিল না। অতি বাম বা এস ইউ সিরা তাঁকে টাটার দালাল বানালেও দালালির টাকা রাখার অ্যাকাউণ্টটা কোথায় খুঁজে পায় নি। তাই এখন সবাইকেই তাঁর সততাকে কুর্ণিশ জানাতে হচ্ছে যা আজ ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতিতে একটি দুর্লভ গুণ। ক্ষমতায় যান নি যে বামপন্থী দলগুলি সেখানেও অনেক আর্থিকভাবে সৎ ব্যক্তিত্ব আছেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর, দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকার পর সৎ থাকাটা খুব কঠিন। বুদ্ধবাবু সেই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ।

    এবার আসি বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে তোলা অন্য কিছু অভিযোগ সম্পর্কে।

    (১) বুদ্ধবাবু ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রীসভা থেকে আচমকা পদত্যাগ করেন। তখন নাকি বলেছিলেন, ‘আমি চোরেদের মন্ত্রীসভায় থাকব না’। যদি তাই বলে থাকেন তাহলে কয়েক মাস বাদে যদি তিনি সেই মন্ত্রীসভায় ফিরে আসেন সেটাও এক ধরণের অসততা হয়। আসলে বুদ্ধবাবু এরকম কিছু বলেন নি। পদত্যাগ করার পর কাউকে সাক্ষাৎকারও দেন নি বা প্রেস কনফারেন্সও করেন নি। এটা ওই আনন্দবাজারের ‘বিশ্বস্ত সূত্রে প্রকাশ’ বা ‘রাজ্য কমিটির জনৈক প্রবীণ সদস্যের মতে’ ইত্যাদি লিখে নিজেদের অনুমান বা গল্প চালিয়ে দেওয়ার বহুপরিচিত কায়দা। কিন্তু যেহেতু আনন্দবাজার, তাই এই গল্পটাই থেকে যায়। যদিও পরে জ্যোতিবাবু তাঁর আত্মজৈবনিক লেখা ‘যতদূর মনে পড়ে’ তে জানিয়েছিলেন যা জনৈক আমলাকে নিয়ে জ্যোতিবাবুর সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় বুদ্ধবাবু পদত্যাগ করেছিলেন।

    (২) বুদ্ধবাবুর আমলে কয়েকজন মাওবাদী নেতা ও কর্মী কারারুদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘদিন ছিলেন ইউ এ পি এ জাতীয় কালা কানুনে। এদের মধ্যে দু তিন জন অসুস্থ হয়ে মারাও গেছেন। এর জন্য বুদ্ধবাবুকে দায়ী করা হচ্ছে। স্বাভাবিক, কারণ তিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই সময়। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবদমনের নীতি কিন্তু দল হিসেবে সি পি আই এম অনেকদিন পর্যন্ত নেয় নি, এমনকি নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মাওবাদীদের স্পষ্ট ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও। ২২ শে জুন, ২০০৯ এর ইণ্ডিয়া টুডে অনুসারে বিমান বসুকে আমরা দেখছি মাওবাদীদের নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে মতামত দিতে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই মাওবাদীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে বুদ্ধবাবু অবশ্য নিষিদ্ধকরণের পক্ষেই ঝুঁকে পড়েছিলেন। ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৫ তারিখে পুরুলিয়ার গ্রামে প্রাক্তন সভাধিপতি রবীন্দ্রনাথ করকে তার স্ত্রী আনন্দময়ী করের সঙ্গে পুড়িয়ে হত্যা, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে ছাত্রদের সামনে প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিবাকর মাহাতোকে হত্যা, ১৯ শে ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে পুরুলিয়ার ঝালদা ব্লকে ফরওয়ার্ড ব্লকের সাতজন পঞ্চায়েত সদস্যকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে হত্যা—অনেক উদাহরণ আছে মাওবাদী নৃশংসতার। প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর খুব অন্যরকম কিছু করার সুযোগ ছিল না বোধহয়। আর লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে এই ঘটনাগুলির পর আর কয়েক মাস পরেই তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে ওই ক্রান্তিলগ্নে বন্দীমুক্তির ব্যাপারে চাপ দেওয়া যায় নি, এই ব্যর্থতা কাদের, বিশেষত যখন সেই মুখ্যমন্ত্রীকেই মাওবাদীরা ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিলেন ?

    (৩) সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষীদের কাছে বলপূর্বক জমি নেওয়ার চেষ্টা মানা যায় না। তবে পরবর্তীকালে কারখানার কাজ যখন এগিয়ে গেছিল তখন অন্যরকম সমাধানসূত্র বের করা যেত হয়ত। নন্দীগ্রামে মহাকরণের থেকেও বেশি সক্রিয় ভূমিকা ছিল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের আড়ালে লক্ষণ শেঠ আর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির। আর সরকার পিছু হঠার পরও যে গুলিচালনা, এলাকা দখল ইত্যাদি ঘটেছে, বিশেষত ১৪ই মার্চের ঘটনা তার পেছনে কিছু ষড়যন্ত্রও ছিল। নন্দীগ্রামের ঘটনার প্রায় একবছর পরে ওই আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠক সুমিত সিনহা ফ্রন্টিয়ার পত্রিকায় ( ভল্যুম ৪০, নং ৩৪, মার্চ ২-৮ ২০০৮, The Other Side Of River : Nandigram – A bird’s eye View) লেখেন –‘‘Forcing, in a manner characteristic of the CPI(M), the people to join processions and to enter new areas by the force of arms were two of these steps. The village committees that had been instrumental in mobilizing the people for struggle gradually became non-entities. It should be pointed out that most of the CPI(M) supporters who fled their homes were from the new areas. In many cases, the new masters of the Bhoomi Uchhed Pratirodh Committee tortured the people in a more or less CPI(M) manner. There was no knowing why these new masters decided to storm these areas; and the general people who had participated in the resistance movement, were kept in the dark. Had the opinion of the people been given its due weight, the decisions could well have been different and many new CPI(M) supporters could have been rallied to the cause of the resistance struggle.” তাহলে কিছু লোক ঢুকেছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিতে যাদের বিশ্বাস ছিল অস্ত্রের জোরে আর এলাকা দখলে। বুদ্ধদেব ১৪ই মার্চের ঘটনাকে জাস্টিফাই করেন নি। কিন্তু নভেম্বর মাসে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির দ্বারা উৎখাত হওয়া সি পি আই এম সমর্থকরা যখন নিজের এলাকায় ফিরে আসার জন্য সশস্ত্র অভিযান চালায় সেটার সমর্থনে বলেছিলেন ‘They have been paid back in their own coin’. অভিনেতা সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ও ১৪ই মার্চের ঘটনার নিন্দা করেছিলেন কিন্তু নভেম্বর মাসের অ্যাকশন ( যদিও সেটা ব্যর্থ হয়) সমর্থন করেছিলেন। গোটা নন্দীগ্রাম কাণ্ডে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দায়িত্ব সমধিক, কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠও দেখা দরকার।

    (৪) যেদিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেলেন সেদিনও বাংলার পীট সিগার, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ পোস্ট দিচ্ছেন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে যার প্রাণদণ্ড হয়েছিল হেতাল পারেখ ধর্ষণ ও খুনের মামলায়। একটা মহল এমন একটা অভিযোগ তুলে আসছে যেন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের প্রাণদণ্ডের জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দায়ী। ১৯৯০ সালের ১২ই মে ধনঞ্জয় যখন তাঁর বাঁকুড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন তখন বুদ্ধবাবু তথ্য সংস্কৃতি, নগর পরিকল্পনা ও পৌর দপ্তরের মন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ধনঞ্জয়ের গ্রেপ্তারির কোনো সম্পর্ক থাকারই কথা নয়। অভিযোগ, ধনঞ্জয়কে ফাঁসানো হয়েছে এবং শুধুমাত্র পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এমনটা হতেই পারে। যদিও একমাত্র বিরলতম অপরাধের ক্ষেত্রেই ভারতে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং অনেকগুলি আদালতের আইনী স্তর পেরিয়েই সেটা ঘটে থাকে কিন্তু ভুল বিচার বা অবিচার যে একদম ঘটে না, তা নয়। আফজল গুরুর প্রাণদণ্ডের সময়ও এই অভিযোগ উঠেছিল। তখন ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার এবং মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী। তাই বলে কেউ আফজল গুরুর ফাঁসির জন্য মনমোহন সিংকে দায়ী করে নি। এখানে বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য প্রাণদণ্ডের পক্ষে ছিলেন এবং সেই নিয়ে প্রচারও করেছিলেন। আবার অনেক বামপন্থী নেতা, যেমন অনিল বিশ্বাস নীতিগতভাবে প্রাণদণ্ডের বিপক্ষে বলে তাঁর অবস্থান জানিয়েছিলেন। এর দ্বারা আইনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়েছে বা রাষ্ট্রপতি কালাম তার প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করার সময় এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু এর জন্য ব্যক্তিগতভাবে যারা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা তাঁর স্ত্রীকে দায়ী করতে চান তাদের নিজস্ব এজেণ্ডা আছে।

    বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকা কোনো মহাপুরুষ ছিলেন না। অনেক ভুল করেছেন, ভুল ভাবে ভেবেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত লাভের জন্য কিছু করেন নি। এই সততা যাঁর থাকে তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলেও একটা বেসিক সততা থাকা দরকার। তথ্যের প্রতি। সত্যের প্রতি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১০ আগস্ট ২০২৪ | ৫৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরিত্র | 103.77.139.246 | ১১ আগস্ট ২০২৪ ০০:০১536146
  • আপনার লেখা ভালো লাগলো। আমার মনে হয় সিপিএম পার্টি ও বামফ্রন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি দল হিসেবে এবং যাদের ভোট পায় তাদের সবার মার্কসবাদী পথের দাবী থাকে না। এটাও মনে রাখার যে নির্বাচিত সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী শুধু পক্ষে ভোটদাতাদের জন্য কাজ করতে দায়বদ্ধ থাকেন না, যারা বিপক্ষে দিয়েছেন তাদের দাবি আশা আখাংকার প্রতিও দায়বদ্ধ থাকেন যেগুলো মার্কসবাদী পথানুসারী নাই হতে পারে। তাই তারা মানুষের নির্বাচনী সমর্থনকে একমাত্র মার্কসবাদী পথে এগোনোর জন্যে ব্যবহার করলে তা পক্ষে ও বিপক্ষে বহু নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও সংবিধান অনুযায়ী নেওয়া শপথের অবমাননা হয়।
     
    দ্বিতীয়ত আপনি ভদ্রলোকীয়তার বিষয়টা উত্থাপন করে ভালো করেছেন। ভদ্রতা আমি মনে করি সেই আঠা যা একটা সমাজকে ধরে রাখে এবং সেই আচরণগত রীতিনীতি যা সমাজে সকলের নির্বিবাদ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর রূপ সমাজের বিভিন্ন অংশে আলাদা হলেও সততা, নম্রতা, শিষ্টাচার, সহনশীলতা প্রভৃতি মৌলিক গুণাবলী সবক্ষেত্রেই থাকে। নিশ্চয়ই তথাকথিত ভদ্রলোক (যা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত অংশকে বলা হয়) অংশের অনেক ব্যক্তিই এই আচরণগত গুণাবলীর অধিকারী হন না, অর্থাৎ যারা মেকী ভদ্রলোক। কিন্তু তার জন্যে ভদ্রতাকেই আক্রমণ করে এক অসভ্য অসৎ মিথ্যাচারের সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় সহকারে লালনপালন করা হয়েছে। এই রাজনীতি অত্যন্ত খারাপ এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে।
  • অরিত্র | 103.77.139.246 | ১১ আগস্ট ২০২৪ ০০:০২536147
  • * আকাঙ্খা। 
  • t | 2001:67c:6ec:203:192:42:116:203 | ১১ আগস্ট ২০২৪ ০০:৪৪536148
  • মীরা ভট্টাচার্য আর কজনের প্রাণদণ্ডের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন? না নেমে থাকলে বোঝা যাবে এই ঘটনায় তাঁর নিজস্ব এজেন্ডা ছিল।
    অনেক দিক দিয়েই বুদ্ধবাবুকে ক্লিনচিট দেওয়া সহজ হবে না।
  • কালনিমে | 103.244.242.18 | ১২ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৩৫536237
  • "They have been paid back in their own coin" - এ কথাটা কোন মহামানব যেন বলেছিলেন?
  • কালনিমে | 103.244.242.18 | ১২ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩৯536242
  • ভদ্রলোক বলতে bourgeois শ্রেণীকেই বোঝায় বলে জানি  - তো "বরং ভদ্রতাবোধ সম্পন্ন হওয়া কম্যুনিস্ট হওয়ার প্রথম শর্ত হওয়া উচিত"। তাতে কমিউনিস্ট রা প্রথমত তথাকথিত ভদ্রলোক হয়ে যান না - যদিও জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব বুর্জোয়া শ্রেণীরই প্রতিনিধি - তাঁদের শাদা ধুতি পাঞ্জাবি শোভিত নিষ্কলঙ্ক অবতার সহ। “cabinet of thieves”, কথাটা তিনি বলেছিলেন বলেই সংবাদপত্রে প্রকাশ - লেখকের বিশ্বাস ও ভক্তিপ্রকাশেই ও নির্ণয়েই কি তাঁর শাদা পোষাক ওচরিত্র অধিকতর 'উজালা' হয়ে উঠবে?
  • কৌতূহলী | 115.187.40.100 | ১২ আগস্ট ২০২৪ ২০:১১536251
  • খুব ভাল যুক্তিপূর্ণ লেখা, আনবায়াসড। 
    যদিও লেখাটা নিয়ে কিছু বলার আছে। 
    আপাতত দুটো কথা বলে রাখি।
    ১) ''ভদ্রলোক'' পশ্চিমবঙ্গে তৈরী হওয়া একটা কালচারাল ইকনমিক বর্গ। মোটামুটি হোয়াইট কলার জব হোল্ডারদের ধরা হয় এই বর্গে। বুদ্ধবাবু এই মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক শ্রেনীরই প্রতিনিধি, যেটা আপনিও লিখেছেন। এটার সাথে ''ভদ্র আচরণ'' ব্যাপারটা ততটা সম্পর্কিত না।
    ২) কমিউনিস্টরা ক্ষমতাহীন লোকের সাথে, শ্রমিক শ্রেণীর সাথে ভদ্র সংবেদনশীল আচরন করবেন, কিন্তু ক্ষমতাবান আমলা বা ব্যবসায়ীর সাথে আচরনের সময় রূঢ়ভাষী হবেন, এটাই হওয়া উচিত। অশোক মিত্র ''আমি ভদ্রলোক নই, কমিউনিস্ট'' কথাটা একজন আমলাকে দাবড়ানোর সময় বলেছিলেন। এক্ষেত্রে কিছুটা অভদ্র হওয়াই বরং কমিউনিস্টদের কাম্য। 
  • অভদ্রলোক | 45.148.10.111 | ১২ আগস্ট ২০২৪ ২০:৪৭536261
  • মমতার দাবড়ানি অনেক জোরালো।
  • [email protected] | 116.193.136.53 | ১২ আগস্ট ২০২৪ ২৩:১৯536276
  • কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মাইনাস ব্র্যান্ড বুদ্ধ মাইনাস সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম লাল সেলাম।
  • অরিত্র | 103.77.139.246 | ১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৫৭536292
  • কৌতূহলীর সঙ্গে একমত, লেখককে যথেষ্ট নিরপেক্ষ মনে হয়েছে। কিন্তু তার বাকি দুটো পয়েন্টে একমত নই।
     
    সাধারণত যাদের ভদ্রলোক (gentleman) বা ভদ্রমহিলা (lady) বলি তাদের নির্দিষ্ট পেশাগত ও অর্থনৈতিক একটা ক্ষেত্র থাকে, কিন্তু "ভদ্রলোক বর্গ" শুধু আর্থ-সাংস্কৃতিক বর্গ নয়, ভদ্রলোক হতে গেলে আচরণে ভদ্র সভ্য হওয়া জরুরি। কুণাল ঘোষ, কল্যাণ ব্যানার্জিরা ভদ্রলোক বর্গে পড়েন না কিন্তু সুগত বসু, সাগরিকা ঘোষ বা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়রা পড়েন বলাই বাহুল্য। বুদ্ধদেব পড়েন, অশোক মিত্র হয়তো (আমি তাকে চিনি না, নিজেই বলেছেন তাই) পড়েন না।
     
    (ভদ্রলোকেরা বেশিরভাগই বুর্জোয়া (যারা সাবরে দেওয়া উদ্বৃত্ত মূল্যের ভাগ পান তাই তো?) হলেও হতেই হবে এমন বোধহয় নয়, একজন গৃহ শিক্ষক বা যিনি সমবায় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোটামুটি স্বচ্ছল ব্যক্তি ভদ্রলোক হতে পারেন তদ্রুপ আচরণ করে কিন্তু বুর্জোয়া হচ্ছেন না মনে হয়।)
     
    সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দল জয়ী হলে সেটা কমিউনিস্টের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল হয় না, জয়ী প্রার্থীরা কমিউনিস্ট হিসেবে মন্ত্রিসভায় যান না, সাংসদ বা বিধায়ক হিসেবে যান। প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সময়েই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারপর মন্ত্রী হলে তার ব্যক্তিগত সত্ত্বাটি আর প্রযোজ্য নয়। সিপিএম সিপিআই দলগুলি যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন "ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই" কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্য যতটা হয় কাজ করতে চেয়েছিলেন। ফলে তাদের মন্ত্রী হয়ে একজন মন্ত্রীর মতোই আচরণ কাম্য, একযোগে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে জন সাধারণের জন্য কাজ করা, আমলা দাবরানো নয়। অশোক মিত্রের ওই কথা আমার অনুচিত মনে হয়েছে বরাবরই, ওতে তার দল যে লক্ষ্য নিয়ে (অন্তত লিখিত) সরকারে গেছিল তার ক্ষতিই হয়েছে সম্ভবত।
     
    যাই হোক আলোচ্য বিষয় ছিল বুদ্ধদেব, আমি বোধহয় বিষয়টা ভদ্রলোক করে ফেললাম। সরি। আমি অনেকদিন এই কথাগুলো বলার সুযোগ খুঁজছিলাম এটা একটু কাছাকাছি মনে হওয়ায় .. :-(
  • অরিত্র | 103.77.139.246 | ১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৫৮536293
  • হোয়াইট কলার জব হোল্ডাররা আসলে "বাবু"।
  • দুঃখিত | 103.77.139.246 | ১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৬:০১536294
  • না, ভুল বললাম ছাতুবাবু লাটুবাবু যদুবাবু এরা কেউ চাকুরে ছিলেন না। কিন্তু বাবু বর্গে পড়তেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন