আমার ছেলেবেলায় স্কুল-বাস ধরতে যাবার পথে একটি কাঠের-পুলের পাশে একটি পাগল বসে থাকতো।।।একবার দেখলাম পাগলটি চলে গেছে ।।কিছুদিন পর দেখলাম আবার সেই রিকশা স্ট্যান্ডের পাশেই একটি পাগলী এসে বসেছে।।।বাকিটা কল্পনা , গল্পের খাতিরে ... ...
এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালের রাতগুলি বাষ্পহীন, মেঘহীন এবং নিঃশব্দ। সামনের একটা মাঠ ছাড়া চোখের সীমানায় কোথাও আলোর কোনো উৎস নেই, খালি দূরে হাইওয়ে যেন জ্বলন্ত আংরার শেষ আভাটুকু হয়ে ফুটে থাকে। এই রাত্রের অন্ধকারের মধ্যে মিশে বসে থাকি রোজ, মাথার উপরে তাকিয়ে খুঁজতে থাকি বাল্যবন্ধুর মতো চেনা তারামন্ডল - লুব্ধক চিনতে পারি, চিনতে পারি কালপুরুষের কোমরবন্ধনী, জিজ্ঞাসাচিহ্নের মত হাতড়ে হাতড়ে খুঁজি সপ্তর্ষিদের -- পুলহ, পুলস্ত্য, অত্রি, অঙ্গিরা ... আর? নামগুলো মনে পড়ে না আর, শুধু মনে পড়ে আগের জন্মের শহরে ফেলে আসা একটা অলৌকিক ছাদ আর সে ছাদের কোণায় কোণায় জমে থাকা ধুলোর মত ময়লা একটুকরো ছেলেবেলার গল্প ... ... ...
হ্যাঁ হ্যাঁ বুয়েছি, আপনি বলছেন এ চাপ তো রাবণের মায়ের, ছেলের কোথায়? আরে মশায়, দশ খানা মাথায় ঘুম আসাটা কি চাট্টিখানি কথা? এক মাথা চ্যাঁ ভ্যাঁ করলে পাশের জনের, থুড়ি, পাশের মাথার কানে চলে যাবে, ব্যাস, যেটুকু ঘুম এসেছিল তার বারোটা।... আবার কী বলছেন? রাবণের কান কটা? কেন, কু---- না না, ঠিকই তো বলেছেন। মাথাগুলো তো সবকটাই পাশাপাশি আটকানো, কানের জন্য কোনও অ্যালাউন্স তো নেই। তাহলে বোধহয় দুটোই কান -- ফার ইস্টের একটা আর ফার ওয়েস্টের একটা। এতে অবশ্য একটা সুবিধে -- কান বেশি থাকলে কামমলাও বেশি খেতে হত। ... ...
ফুলবানু বাস-টারমিনাল এলাকাতে থাকতেই পছন্দ করে। বাস-টারমিনালে ঢুকতে দশ টাকা দিতে হয় বটে, তবে এখানে আয় ভালো। কল্যাণপুর থেকে শত শত বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু ওখানকার মানুষগুলো দান-খয়রাতে তেমন পটু না। হাতটা বড়িয়ে দিলেই রেগে যায়। গাবতলী বাস-টারমিনালই তার পছন্দ। এখানকার মানুষগুলোর বেশভূষা দেখলেই বোঝা যায় এরা কল্যাণপুরের মানুষগুলোর চেয়ে অর্থবিত্তে কমা। তবুও এরাই বাসে ওঠার আগে না হলেও দু’ টাকা দেয়। জ্ঞান হওয়া অবধি সে এখানেই। ... ...
তাছাড়া সেদিন কি শুধু সুকল্প তাকে মুক্তি দিয়েছিল? ঊর্মি সুকল্পকে দেয়নি মুক্তি? পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের হাত ধরে ঘটে যাওয়া এই নিঃশব্দ বিপ্লবকে কোনোদিন স্বীকার করে নি করবেও না। কিন্তু তাতে ঊর্মীদের কৃতিত্ব কমে না। ... ...
জানিস পেখম রাস্তা,বিদ্যুৎ, জল,যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুই আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে কিন্তু আমরা এক গভীর অসুখে ভুগছি রে, কবে যে নোংরা রাজনীতির ভাইরাস আমাদের প্রত্যেকের মনকে সংক্রমণ করেছে। এ রোগও মরশুমে প্রকট হয়। মরশুম বলতে ভোটের সময়। ফুটবল মাঠের মত ভোটের মাঠেও নিজের দলের খেলোয়াড় ছাড়া সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী।আর কোন পরিচয় থাকেনা। সারা বছর ভুলাভালা সাদাসিদা ছেলেটাও তখন রয়েল বেঙ্গল টাইগার । হাসিখুশি মিশুকে বৌদিটাও তখন গুপ্তচর। যত পৌরুষ,যত বীরত্ব, যত বুদ্ধিমত্তা আশ্বিনমাসে ধানের শিষের মত ফুলে বেরোয়। ... ...
হিলবার্টের হোটেল ব্যাপারটা কী জানো? - এলিভেটর থেকে বেরিয়ে লোকটা আমায় জিগ্যেস করল - যেসমস্ত জিনিস মানুষ কেবল তার স্বপ্নে কল্পনা করতে পারে, তার প্রত্যেকটা এই মস্তি সেন্টারে পাওয়া যায়। প্রতিটা ফ্লোর ভর্তি হয়ে আছে হরেকরকম জিনিসে। ... ...
লরার সাথে আমার আলাপ হয়েছিল নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে এক শীতকালীন সেমেস্টারে; আমরা দুজনেই কনভেক্স অপ্টিমাইজেশনের একটা কোর্স নিয়েছিলাম আর কোর্স প্রজেক্টে আমি ছিলাম ওর পার্টনার। লরা এসেছিল এল.এ. থেকে। নিউইয়র্কের শীত আমি পছন্দ করিনা, সে প্রায়ই বলত। ... ...
ওপরের তাক থেকে তিন চারটে বই টেনে নামাতেই একটা খাম মেঝের ওপর পড়ে গেল। টুলের ওপর থেকে রঞ্জন সাহা তাকিয়ে দেখলেন একটা বড়সড় ব্রাউন রঙের খাম। কিসের খাম বুঝতে পারলেন না। এই তাকটা খুব একটা ব্যবহার হয় না। মাসখানেক ধরে গৃহিনী তাগাদা দিচ্ছেন বই-এর আলমারির ওপরের তাকটা পরিষ্কার করার জন্য। আজ টুলে উঠে সবে কাজটা শুরু করেছেন, তার পরেই এই ঘটনা। ... ...
এক নতুন জগতের কল্পনা। এক অন্য ধরণের পৃথিবী। আগামী কি ভয়াবহ ? ... ...
সে সময় পুরুলিয়া মানে কিষেণজি। আমাদের যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে বাঘমুন্ডির দু'জন স্কুল শিক্ষককে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। সে ঘটনায় তখন সারা পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল। ... ...
আগে মানে এই সত্তর আশির দশকে এরকম বেশ কিছু জ্যেঠু বা পিসীদের আমরা অনেকেই চিনতাম। এঁদের কেউ বলত ছিটেল, কেউ বলত বাতিকগ্রস্ত, কেউ কেউ বিরক্ত হত, বেশিরভাগই এঁদের নিয়ে হাসাহাসি করত। তবে কোথাও একটা প্রশ্রয়ও ছিল সমাজে এঁদের প্রতি। এঁরা এঁদের বিশ্বাসমত সকলের যাতে ভাল হয় সেরকম চেষ্টা করতেন, ব্যক্তিগত অধিকার অনধিকারের তোয়াক্কা খুব একটা করতেন না। সেটা যে সবসময় ভাল হত তাও না, তবু এঁদের আন্তরিকতায় খাদ ছিল না। আরোপিত স্বাতন্ত্র্যে ঘরবন্দী থাকার সময় এঁদের কথা হঠাৎই বড্ড মনে পড়ছে। ... ...
রাঁধুনি মৃদু হাসলেন। গ্রীষ্মের দুপুরের লু-এর মতন সেই হাসি। ডানহাত দিয়ে বাঁ-হাতের ব্লাউজের হাতা কনুই অবধি তুলে দেখালেন। দেখলাম - ব্লাউজের নিচের হাতের চামড়ার রঙ বাকি দেহের, মুখের রঙের চেয়ে একেবারে আলাদা - ফ্যাটফ্যাটে সাদা। ... ...
বাবা-মা চায় না আমি এইসব গল্প শুনি। কিভাবে তারা সব হারিয়ে এখানে এসে আবার গোড়া থেকে জীবন শুরু করেছে, রিফিউজীর জীবন, সেটা মা-বাবা-ঠাকুমা কেউ বেশী বলতে চায় না। কিন্তু বীণা পিসী আমায় চুপি চুপি তার গল্প বলে, আমি চুপি চুপি শুনি। আমি ভেবে পাই না লোকে কেন বর্ডার দেয়। কেন বর্ডার পার হতে হয়। এমন হয় না, পৃথিবীতে কোথাও কোন বর্ডার থাকবে না? ... ...
সে রাতে বহু লোকেরই ভৌগোলিক অবস্থান গুলিয়ে যেতে থাকে। অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ এ ওর ঘাড়ে চড়ে এক রাতে মফস্সলে মহাপৃথিবীর জন্ম হয়। ... ...