অপেক্ষার পল অনুপল বিপল এখন পরিতোষের আঙুলে— মেগাবাইট গিগাবাইটে ভরে উঠতে লাগল ওর মোবাইল— তারপর উপচে উপচে ক্লাউডে— মুহূর্তর পরে মুহূর্ত সাজিয়ে এইভাবে সে যেন পৌঁছে যাবে গন্তব্যে, তারপর ক্যামেরার ফ্রেমে দেখতে পাবে তাকে— –কেমন আছ পরিতোষ? –আসুন কালিদা, চা খান। ... ...
সেডিজম্ ও সরস্বতী পুজোর খিচুড়ি প্রসঙ্গে ... ...
উত্তাল যমুনার বুকে দীর্ঘ এক ফালি চর - নাম ফুলেশ্বরী, পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার মধ্যে পড়েছে চরটি। বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন যমুনার বুকে এই চর জেগে উঠেছে স্বাধীনতার পরেই, তবে বসতি গড়ে উঠেছে আরো কয়েক বছর পরে। বর্ষাকালে প্রমত্তা যমুনার স্রোতরাশি যখন উত্তাল হয়ে ওঠে সে-সময়ে ইঞ্জিন নৌকায় প্রবল ঢেউ ঠেলে বেড়াবাজার ঘাট থেকে ফুলেশ্বরীতে যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। ... ...
যেদিকে দুচোখ যায় প্রতিভার ছড়াছড়ি। ফাঁকা খাটে তোষক পেতে শুয়ে আছে প্রতিভা, স্যানিটাইজার মেখে স্নান করছে প্রতিভা। পাবজির মাঠে অষ্টপ্রহর গুলি চালানোর বুদ্ধিতে ঠাসা ঘিলুগুলোর গুহার আঁধার তাই গমগম করছে সামান্য মোটিভেশন পাখির আর্তনাদে । কেউ বানাচ্ছে রোবোট, কেউ বানাচ্ছে এক্সটেনশন কর্ড। তবে বুদ্ধি যার যার, ফলাফল সবার। অতএব বিদ্যুতের লাইনের MCB যাচ্ছে নেমে সকলের, গরমে লোকজন যাচ্ছে ঘেমে। এনট্রপি টঙে তুলে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে মই গেছে হারিয়ে..... ... ...
কত বছর পর গ্রামে ফেরা! নিরানন্দ, ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। শীতকাল, তায় শেষ কয়েকটা সপ্তাহ হলো বেজায় বরফ পড়ছে। পথরেখা দেখা যায়না। রাস্তার দু'পাশে, দূরের পাহাড়ের গায়ে - মোটা বরফের কম্বল। আকাশে কালো মেঘ, মেঘের ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা বরফের ছিটেফোঁটা। শেষ বিকেলে পড়া শুরু হল যখন, তখন সারারাত আর থামবে না। ... ...
সিনেমা হলের আলো যেমন এক এক করে নিভে গিয়ে অন্ধকার হয়, তারপর বিজ্ঞাপন, ফিল্ম ডিভিসনের তথ্যচিত্র শেষ করে সিনেমা, লীলাময়ীর চোখের সামনে তেমনি অল্প অল্প করে বসুশ্রীর স্ক্রীন ফিরে আসছিল - বাড়িওলা ঘর থেকে বেরোতেই সৌমিত্র দিনের বেলা আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে বারান্দায় - মাথার কাছের জানলার পর্দায় মস্ত ফুটো - বর্ষার জল ঢুকছে, সৌমিত্রর কাটা কাটা নাক মুখ, ট্রামে বসে আছে- জানলার বাইরে কলকাতা, কপালে একগুছি চুল, তারপর জানলার ওপারে ডুম জ্বলা ঘরে একটি মেয়েকে দেখে বাঁশি দিয়ে জানলার পাল্লা বন্ধ করে দিচ্ছে সৌমিত্র, আধশোয়া হয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে, হা হা করে অকারণ হাসছে - ঢেউ খেলানো চুল সৌমিত্রর, মোহন অঙ্গুলি, টিকোলো নাক, চিবুকের ভাঁজ, ডান গালের নিচের দিকে একটা তিল- পটে আঁকা ঠাকুর দেবতার মত মুখ- "দীর্ঘজীবী হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও " কে যেন বলছিল। ... ...
ভূত সম্বন্ধে দু-চার কথা যা আমি জানি। ... ...
"ব্যবসা চলে না একেই, নিজের সংসার চালাতে...ছিঁড়তে হয়, আবার টাকা ধার দেবে। তোমরা মেয়ে মানুষ, আর কিছু না হোক শরীর বেচে খেতে পারো। আমরা পুরুষরা কি বেচে খাব?" ... ...
কফিহাউসের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই মনটা ভাল হয়ে গেল ধীমানের। কফিহাউস বলতে যাদবপুর কফিহাউস। কলকাতায় কফিহাউস মোট তিনটে, অন্তত ধীমান তাই জানে। কিন্তু অন্য দুটো কফিহাউস ধীমানের তেমন পছন্দ নয়। কলেজ স্ট্রীটের কফিহাউসটা একটা প্রাগৈতিহাসিক, অন্ধকার গুহার মত মনে হয় আর সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ-এরটায় ঢুকলেই মনে হয় কোন অফিসের ক্যান্টিন। যাদবপুর কফিহাউস সে তুলনায় অনেক বেশী খোলামেলা, এখানে অনেক বেশী আলো হাওয়া। ... ...
নৌকা বানিয়েছিল বাবা। ডিঙি একটা। খুদে খুদে নাম লিখেছিল- ল্যাজারাস। বাড়ির সামনে উল্টে রাখা ছিল -বারান্দার থামের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা। সাদা রং করে চোখ এঁকেছিল। মা বিড়বিড় করে বলেছিল -'কবে খোঁটা ওপড়ায় কে জানে!' ... ...
পায়ে শট ছিল না সেরকম। গায়েগতরে খেলা তো দূরের কথা। তবু গোলটা চিনতো। বক্সে বল পেলেই পায়ের ডগা দিয়ে টুক করে গোলে ঢুকিয়ে দিতো। মানস থাকলে বলতেন - সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার। পল্লব থাকলে বলতেন - পরিভাষায় যাকে বলে, ফক্স ইন দ্য বক্স। ... ...
সেদিন কী সাংঘাতিক কাণ্ডটাই না ঘটেছে জানো কি তোমরা? রানি ঝিলিমিলির রাজমুকুটখানি হারিয়ে গেছে। রানি ঝিলিমিলি তো লাল রেশমি উড়ুনিটা পেয়ারা গাছের ডালে ঝুলিয়ে আর মুকুটটি খুলে গোলাপগাছের তলায় রেখে সইদের সঙ্গে একটু কুমিরডাঙ্গা খেলতে গেছেন। খেলছেন তো খেলছেন, বেলা গড়িয়ে গেল, বিকেল ফুরিয়ে গেল, জলে সূয্যিমামার লাল লম্বা ছায়া পড়ল, তবু খেলা শেষ আর হয় না। শেষমেষ বহুদিনের পুরনো বুড়ো রাজপেয়াদা রামদয়াল ডাকতে এল.. ... ...
রামধনু সিরিজের দ্বিতীয় গল্প। ... ...
গ্রাম হেকে শহরে যারা আসেন, তারা যেই আকাঙ্খা নিয়ে আসেন আর যেমন করে সেই আকাঙ্খা আঁকড়ে থাকেন, অনেক ক্ষেত্রে একটা ব্যবধান থেকে যায়; স্বপ্ন আর বাস্তব, আশা আর প্রাপ্তির ... ...
মাটির দুলুনি একটু থামতে বাড়ির রাস্তা ধরেছিল মিতা। চেনা রাস্তা তবু যেন কেমন অচেনা! রাস্তার মাঝে মাঝে ফাটল দিয়ে বেরিয়ে এসেছে মহীরূহ। গাছ তেমন চেনে না মিতা, তবে চওড়া গুঁড়ি, ছড়ানো ডালপালা দেখে বোঝা যাচ্ছিল কচি গাছ তো নয়, আদিম অরণ্যের বৃদ্ধ সন্তান। রাস্তার পাশের বাড়িগুলোর পাঁচিল ফুঁড়ে উদ্ধতভাবে বেরিয়ে আছে মোটা সপত্র ডাল। ... ...
সতেরো বছর বয়সে তার ভারী ওজনের শরীরটা ও একটা ভুলভাল মেকআপ সেন্স সঙ্গে করে মনিকা ম্যাকন প্রথম টরন্টো আসে ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে। টিনএজকালে তাকে বেশ সাধারণ দেখতে ছিল আর তখনও তার কোনো বয়ফ্রেন্ড জোটেনি। একমাত্র হাসলে তাকে কিছুটা সুন্দর দেখাত, কিন্তু সে প্রায় সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে থাকত। ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলো সে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত, যদিও মাঝারিমানের ছাত্রী হওয়ায় অনেককিছুই তার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যেত। ... ...
আলাদা বলেই এর একটা নাম রেখেছিলেন বিপ্লব - সানাই। ছোটবেলায় বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় যে পাড়াতে ওঁরা থাকতেন সেখানে একটা রাস্তার কুকুরের ওই নাম ছিল। কুকুরটা ডাকতো একটা অদ্ভুত গলায়, কেউ একজন ওই নাম দিয়েছিল, সেটা চালু হয়ে যায়। নামের কথা ভাবতে গিয়ে ওইটাই মনে এসেছিল তাঁর। এতদিন কোথায় ছিলে? ফিস ফিস একটা বনলতা সেনীয় প্রশ্ন করলেন বিপ্লব। ... ...
সত্য ঘটনা অবলম্বনে ... ...
গল্প ... ...