গল্প পরে। আগে পটভূমি। সমুদ্র দিয়ে ঘেরা এক ভূখণ্ড ছিল—উর্বর, শ্যামল। বহু কাল আগে, বাইরের দেশ থেকে আরবি ঘোড়ায় চড়ে আসা মুসলিম ঘোড়সওয়াররা সেই দেশ দখল করেছিল। তারা খাওয়ার আগে হাত ধোয়; শুয়োর খায় না, অন্য প্রাণীর মাংসও—বিশেষ কায়দায় না মারলে খায় না; জন্মের পরে খৎনা আর মৃত্যুর পরে গোর দেওয়ার নিয়ম পালন করে; তাদের পুরুষরাও হাতে-পায়ে রঙিন হেনা পরে—যার ফলে অন্যের চোখে তাদের ‘মেয়েলি’ মনে হয়। সব মিলিয়ে—এক অদ্ভুত, বিজাতীয় সংস্কৃতি। ... ...
রাতের বেলা ছেলেরা খেতে বসলে কথাটা ওঠে ফের। অতু, পুতু আর নান্টু। বড় বৌমার কানে কলতলার কথাটা উঠেছে। সে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, "মায়ের যেমন কান্ড! ছেলেপিলে নিয়ে ঘর, ওই মানুষ মারা গুণ্ডাদের কাছে আবার জানতে গেছেন, কই লইয়া যাও।" অতু-পুতু দুই ছেলেই একটু বিরক্ত মুখে বড় বৌ এর দিকে চায়। মায়ের মুখে মুখে ঝাঁঝানো এ বাড়িতে এখনো চালু হয় নি। বুড়িও একটু লজ্জিত হয়। বিড়বিড় করে বলে, "নারানরে তো জন্মাইতে দ্যখছি , তাই ভাবি নাই আগুপিছু।" ... ...
রাজার বুঝিতে দেরী হইয়া গেল। দেরীতে হইলেও অন্তত সত্য বুঝিয়া পাইলেন। ভৌগোলিক বিভাজনে জাতি-ধর্ম-ভাষার বিবাদ মিটিল না। রাজার মনে দুঃখ জাগিল। প্রজাদের মধ্যকার ভিন্নতা আর বৈচিত্র্যকে মান্যতার ও শ্রদ্ধার শিক্ষা দিতে হইত। এই কথা কেন পিতৃপুরুষের ভাবনায় বিশেষ স্থান পাইল না? সহনশীলতা আর উদারতা প্রতিষ্ঠা পাইল না। তাই বিভেদ-বিবাদের উৎস বন্ধ হইল না। পরের রাত্রে রাজার ঘরেই- কাঁই মাঁই। চমকাইয়া রাজা তলোয়ার নিয়া উঠিলেন। দেখিলেন পৃথিবী উল্টাইল। চোখের সামনে রাক্ষসীরানি রাজপুত্রকে খাইতে লাগিল। ... ...
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বিতান দেখে চারপাশটা বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে আসছে। নিচে, মাটিতে জল জমছে আস্তে আস্তে। কাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, টানা। এরকম মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি মুম্বইতে হয়েছে কয়েকবার, খবরে পড়েছে বিতান। এবার কী কলকাতার পালা? সে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ তলার ওপর। তার বাড়িও কি ভেসে যেতে পারে? বিতান ভয় পায় না। পাঁচতলা ভাসিয়ে নেওয়া বৃষ্টি কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই বিতানের, তবু হলে ভাল হয়। কিছু একটা অন্তত হবে জীবনে। ... ...
আমার মনে হচ্ছিল, অনীক আর আমার সমস্যাটা যেন কিছুটা বুঝতে পারছি- আবছা আবছা- যেন একটা মাকড়শার জালের মতো, গাছের দুটো ডালের মাঝখানে আঠালো সুতোর একটা নকশা হচ্ছিল আস্তে আস্তে । আরো মনে হচ্ছিল, স্বপ্নার নদী পেরোনোর ঐ মোমেন্টটার মত আমরাও একটা মুহূর্তর সন্ধানে আছি- দ্য স্বপ্না মোমেন্ট- আমি আর অনীক, দুজনেই। মুহূর্তটা এসে গেলেই আমরা আর একসঙ্গে থাকতেই পারব না। ... ...
সার্কাসে তুলসীদা খেলা দেখিয়েছে কী দেখায় নি, এই নিয়ে পাড়ায় বিবিধ মত ছিল। আমার বন্ধুরা জোর দিয়ে না বলেছিল, অথচ শিবুদা, কেষ্ট কাকা হলফ করে বলেছিল, তুলসীদাকে এক চাকা সাইকেল চালাতে দেখেছে, কাঁধের ওপর সাদা কাকাতুয়া; তুলসীদার বুকের ওপর টান টান করে সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। ... ...
দুটো রোমান মিথকে একসঙ্গে করে, দু'বছর আগে লিখেছিলাম গল্পটা। এই গল্পে ব্যবহৃত ঘরবাড়ি, খাবার, জীবনযাত্রা, কবিতা সবই ইতিহাস থেকে নেওয়া। বানাইনি। এমনকি, পাস্তুমিয়ার চুটকিটাও দু'হাজার বছর আগেকার! যাঁর কবিতা অনুবাদ করেছি, সেই অসামান্য ক্ষমতাশালিনী, সাফো সমপ্রেমী ছিলেন। ... ...
এই মুহূর্তে, রাতের আকাশের তলায় প্রমীলা হাত তুলছে মাথার ওপর, আবার নামিয়ে নিচ্ছে, যেন তার কাঁধের ওপর ডানা আর সে তা ঝাপটে চলেছে ; জলের তলায় ওর পা স্থান বদলাচ্ছিল ঘন ঘন, যেন সে তার ব্যালে ক্লাসের প্রথম দিনে ফার্স্ট পোজিশন থেকে ফিফথ পোজিশন করে চলেছে - ওয়ান, টু, থ্রী, ফোর , ফাইভ, ওয়ান, টু, থ্রী, ফোর , ফাইভ; দ্রুত, প্রাণবন্ত মুভমেন্ট ; লয় বাড়ছিল, প্রমীলার পা ক্রমান্বয়ে গতি বাড়াচ্ছিল- যেন ঝিঁঝিঁর ডাক থেমে গিয়ে চাইকোভোস্কি বাজছে ওর মাথার মধ্যে। চাঁদ আর ছেঁড়া মেঘ লাইটিং ডিজাইন করেছে- নীলচে শাদা আলোয় ভরে যাচ্ছিল চরাচর। ... ...
দ্রৌপদীর চিত্তহরণ করাটা কি মুখের কথা? অতবড় শালপ্রাংশু মহাভুজ বৃষস্কন্ধ পরম রূপবান মানুষটা? একহাতে বৃক্ষ উপড়ে ফেলতে পারেন এরকম চণ্ড মানুষটাও দ্রৌপদীর কাছ থেকে এক কণা ভালবাসা পাবার জন্য কেমন শিশু হয়ে যেতেন। ... ...
সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার সম্পর্কের রহস্য এখন জানি। সন্তানের জন্য সবটুকু উজাড় করে দেওয়া যায়। হাত ধরে তাকে রাস্তা চেনানো, খানাখন্দ পার করে দেওয়া, তারপর বড় রাস্তায় তুলে দিয়ে দুগ্গা দুগ্গা করে তার যাত্রাকে সফলতায় পূর্ণতাপ্রাপ্তির নিরন্তর শুভকামনা জানিয়ে যাওয়া।আর কী বা করতে পারে কোনো বাবা মা? ... ...
মনোলীনা ছায়াছবির এক উঠতি নায়িকা জেনে ভেদীপ্রিয়ার রাগ সেদিন চরমে...আর ওর রাগ মানেই ছোঁড়াছুঁড়ি... প্রথমে বালিশ, চাদর তারপর মগ, প্লেট যা হাতের কাছের পায়... ঘরেতে প্রান ফিরেছে, তাই চুপ থাকলেও পরে কাঁটাচামচ দেখে চিৎকার... এবারে কি সত্যি সত্যি মার্ডার করবেন!!...রাখুন ওটা, বলে ভেদীপ্রিয়ার হাত থেকে যখন কাঁটাচামচ ছাড়াচ্ছি, টের পেলাম ল্যাপটপ স্ক্রীনে মনোলীনার ছবিটা ঝাপসা হয়ে আসছে... এরপর সব শান্ত...কি যেন একটা ঘটে গেল ... ভেদীপ্রিয়ার মুখ লাল... দু কারণে হতে পারে... ... ...
একটা অসমাপ্ত নকশা তৈরি হত, বদলেও যেত প্রতিদিন- এই সব হিসেব না মেলা সংখ্যাদের জ্যান্ত দেখাতো- আলাদা রং, আলাদা শেপ- যেন একটা বোর্ড গেমের ঘুঁটি সব- খেলার নিয়ম তৈরি হওয়ার অপেক্ষা করছে; মনে হত, আমাকেই এই গেমের রুল ঠিক করতে হবে- তার আগে নকশাটা চিনে নেওয়া খুব জরুরী । নকশা বা একটা গল্প -স্পাই বলেছিল। ... ...
১৬৭৯ সালের ১৮ অক্টোবর শিবাজির নৌবাহিনীর হাতে বম্বের ইংরেজরা সত্যিই শোচনীয়ভাবে হেরে যায়। শম্ভাজির নৌবলাধ্যক্ষ কনহজি শঙ্খপালের বাবা বিঘ্নেশ কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু দৌলত খান,জর্জ কোল, থ্রপ, ব্র্যাডবেরি আর ওয়েলশ্ এর নাম ইতিহাসে পাওয়া যায়। মারাঠা গ্রামীণ শাসনের রূপ, আর নারী স্বাধীনতা ঐতিহাসিক সত্যি। এছাড়া বাকিটার পুরোটাই কাল্পনিক গল্প। ... ...