রূপকথা, আজকের দিনের। মিতুলের অভিযান। অভি তারার আলো বুকে নিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার। আগে প্রকাশিত। এখানে তুলে আনলাম। ... ...
জোলো বাতাসে কুয়াশার ঘেরাটোপকে আমার বাপের বাড়ির মশারির মতো লাগছিল, এই পথঘাট ফলত স্বপ্নের এবং অবাস্তব - মানুষজন যেন জোব্বা পরা মরুবাসী অথবা মেরুপ্রদেশের; কুয়াশার সর ক্রমশ এমন ঘন আর রহস্যময় হয়ে উঠছিল যে চেনা পাড়াকে অজানা দ্বীপ বোধ হচ্ছিল - কুয়াশা ফুঁড়ে যে কোনো মুহূর্তেই বেরিয়ে আসতে পারে প্রকাণ্ড কাছিম অথবা ক্ষুদে পেঙ্গুইনের দল, অ্যালবাট্রসের পাখার ঝাপট লাগতে পারে গায়ে। ... ...
থাপ্পড়ের রকম ফের ... ...
ঝুরো গল্পের সংকলন প্রকাশ করতে চাই ... ...
পি.জি ওডহাউসের একটা গল্পকে গাউনের বদলে শাড়ি পরালে কেমন হয় - মানে অনুবাদ না করে রূপান্তর করলে কী দাঁড়ায় ব্যাপারটা, সেটাই দেখার চেষ্টা করেছে এই লেখা। ... ...
ছোট পাড়ার এই রাস্তাটা আজ সন্ধেয় আলোয় সাজলো সম্পূর্ণ। দুটো গলি পেরিয়ে পাড়ার পুজো। আবছা সুরে সে পুজোর সূচনা ভেসে আসছে এত পথ। নিঝুম, হৈমন্তী রাস্তার উপর আলোর ঝালর, তারও উপরে কিছু বাড়ির বারান্দায় শৌখিন জ্বলা-নেভা আলো, আমাদের এই নিয়োগী বাড়ির গায়ে আলোর মালা, আর তারও অনেক, অনেক উপরে, হাল্কা হিমধরা আকাশে ইতস্তত তারাদের সংলাপ। বোধনের সময় হল। ... ...
পুস্তকেই তো বলা হয়েছে কেউ যদি অনাবাদী জমিন আবাদ করে, তার জন্য রয়েছে সওয়াব… এখন একদম মিম্বরের সামনেই রয়েছে সে…স্রষ্টার এত বড় জমিনে জায়গা পাওয়া বুঝি কি সবাইকে দিয়ে হয়? এর জন্য বুদ্ধি, ক্ষীপ্রতা, সজাগ দৃষ্টি দরকার হয় শক্তিমত্তার পাশাপাশি… বেশ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন মুরব্বি… জায়গাটা এত মধুর লাগে তার কাছে! খোশবুর রোশনাই মনে হয় এখান থেকেই ছেটানো হয়! পবিত্র এক শিহরনে তার দুচোখ বয়ে নিদ নেমে আসতে চায়! ... ...
এক সময় ঝটিকা অভিযানটি সম্পন্ন করে প্রদর্শনীতে থাকা বাক্সগুলোর থেকে কম দামী কিছু মিলবে কিনা জানতে মোরসালিন তরুণীটির দিকে প্রথমবারের মত ভাল করে তাকায়- গোলাপী ফাউন্ডেশান উপচে উপচে পড়ছিল তার রক্তে-মাংসে-গাত্রে। বেশ আড়ষ্ট হয়ে পড়ে সে, আর অনেকটা গায়ে পড়ে অকারণে একটা ব্যাখ্যা জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করে, ‘ইয়ে…মানে…বাচ্চাদের জন্য …কিছুক্ষণ খেলেটেলে তো নষ্ট করে ফেলবে, তাই বেশী দামিটা…?’ সেলস গার্ল যেন সব বুঝতে পারে, তার ভীষন মায়া পড়ে যায় ক্রেতাটির উপর। বাণিজ্যিক চাকরি নীতিভ্রষ্টা হতে কসুর করে না এক পারিবারিক চাকরির অমোঘ টানে…অতি সস্তা একটি মেকাপ বক্স যেটি খেলতে খেলতে নষ্ট করে ফেলা যাবে, তার একটি বিকল্প উৎসের নাম চুপি চুপি বলে দেয় সে। ... ...
মেট্রো স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার পথে অটোটা ঠিক পাঁচবার বাঁক নেয় – অমিত হিসেব করে দেখেছে। সুধীন সমাদ্দারের বাড়ি ঠিক তিন নম্বর বাঁকের মুখে। সুধীন সমাদ্দারকে অমিত চেনে না। কিন্তু রোজই দেখে তাকে তাঁর বাড়ির বারান্দায় বসে লিখতে। সুধীন সমাদ্দার ছোট ছোট কবিতা লেখেন আর লিখে বাড়ির দরজা বা বাইরের দেওয়ালে আটকে দেন। তলায় সই – সুধীন সমাদ্দার। ... ...
অনেক দিন বাদে কিছু লোক তাকে দেখতে পায় একটি গাছ তলায়। একটি বেলচা দিয়ে তলোয়ারের মত করে মূহুর্মূহ আক্রমণ শাণাচ্ছিল সে অনন্ত শূণ্যকে লক্ষ্য করে। সে কি মাছি মারছিল? না কি গল্প তাড়াচ্ছিল, প্রতি মুহূর্তে যারা তার মাথায় ভর করত? সে বলত তার গল্প-পাওয়া রোগের কথা, কেউ সে কথা বিশ্বাস করেনি। একটা সময় সে সবকিছুতেই গল্প পেত, সব গল্প মিলেমিশে এমন গল্পহীন হয়ে উঠতো, সে শেষ খুঁজে পেত না আর! ... ...
সজীবকে জানানো হয়েছিল সাপোর্টিং হ্যান্ড আসছে; কিন্তু কে ভাবতে পেরেছিল, সে হবে স্কুল বালিকার মত দেখতে, আর মুখ ফোলাবে কথায় কথায়! তিথী সজীবের সব কাজ নিজেই করে দিতে চাইতো, আর প্রায়ই আটকে যেয়ে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ স্বরে এমন চেঁচাতো যে সজীবকে গোল্লাছুট লাগাতে হতো। সেদিন কয়েকটা সেলস্ সেন্টার পরিদর্শনে বের হচ্ছিল, তিথী যেন ঘরের মেয়েটির মত বায়না ধরল। রেশমী চুলের ঢেউ তার মুখের বিস্তীর্ণ উপকূলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল, গোলাপী ঠোঁট দুটো ভিজে সপ্সপ্ করছিল । সজীব কথা না বাড়িয়ে সোঁ সোঁ করে রিকশায় উঠে গেল আর তারপর তিথীর দিকে রোমশ হাতটা বাড়িয়ে দিল; কিন্তু তিথী কি কারণে কি মনে করে ইঞ্চিখানেক পিছিয়ে গেল। এরপর রিকশার বাহু ধরে গদিতে নিজে নিজেই উঠে বসলো, যদিও পুরো পথ জুড়ে একটা ফাঁক রাখল তাদের দুজনের মধ্যে, সেই ইঞ্চিখানেক। ... ...
আওয়াজকে অনুসন্ধান করতে মোরসালিনের দিকে প্রশ্নাতুর চোখে তাকায় ছেলেটি। এক সময় সেখানে ফুটে উঠা আস্বাসের উপর ভর রেখে ছুটতে শুর করে… ব্লকের ঢালে গড়িয়ে যেতে যেতে সে পতঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে। মোরসালিনের চোখ যতই ক্ষুদে বণিকটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে, ততই যেন ব্রিজটি সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। ছেলেটা যত নীচু হতে থাকে, ব্রিজটা ততই উঁচু হতে থাকে তার দৃষ্টিসীমাকে অদ্ভুত সব কনিক উপহার দিয়ে। ... ...