একাকীত্বে জীবন কাটান বহু মানুষ এই কলকাতার বুকে৷ তাদেরই কারুর গল্পকথা ৷ ... ...
একটা কাঁসার থালা কেমন গল্প তৈরি করবে টিনার জীবনে? — এই কথকতাই পড়ুন মহুয়া দাশগুপ্তের লেখা মেট্রো গল্পটিতে। ... ...
গরম লাগছিল প্রচন্ড। কিভাবে এই জ্বালা থেকে মুক্তি পাই, সাজেশন চাওয়ায় বিল্লি তৎক্ষণাৎ বললো, তিব্বত গেলেই পারো। আমরা হাঁ হাঁ করে উঠলাম, "বলে কী! তিব্বত? যাওয়ার জোগাড় করতে করতেই তো ঘেমে নেয়ে মরে যাব!" বিল্লি একটুও না দমে বললো, "সে মরতে পারো, কিন্তু একবার চেষ্টা চরিত্তির করে যদি পৌঁছে যাও তিব্বতে, দেখবে এ জীবনের মতো গরম উধাও হয়ে গেছে! তাপ্পর যতই যাও বীরভূম বা আফ্রিকা, গরম আর লাগবে না। এমনকি বরাত থাকলে পরের জন্মে গ্রিনল্যান্ডেও জন্ম হতে পারে।" ... ...
বালাসাহেব মারা যাবার বছরখানেক পরে বোম্বে এসেছি। সন্ধ্যের ঝোঁকে রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠেছে; আলো ফেটে রঙ নাবছে, রঙ থেকে ঝিনচ্যাক রঙ। ... ...
তখন আমি ছিলাম দারুণ গরীব এবং দারুণ সুখী, হেমিংওয়ের মতো বলতে পারলে ভালো হতো; কিন্তু সত্যিটা এটাই, পকেটে পয়সা না থাকাটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। তখন আমি থাকতাম ডাউনটাউন ব্রুকলিনের একটা বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে। আমার বাথরুমটা ছিল নিজস্ব আর শুধু এইটুকুর জন্যে আমি ঐ ঘুপচি অ্যাপার্টমেন্টটা ছাড়িনি। অনেকরকম ছোটখাটো কাজ করতাম আমি, যার মধ্যে রেস্তোরাঁয় বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি সবই ছিল। কখনও কখনও বেশ অদ্ভুত কাজে জড়িয়ে পড়তাম। ... ...
মধুর ঠোঁট থেকে সিগারেটটা পড়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে লোকটাকে আচমকা ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ছুটে পালানোর চেষ্টা করল সে। পারলো না, আরও দু জন লোক কাছেই ছিল, একজন মধুকে ল্যাং মারল, সে উলটে পড়ে যেতেই চার জন মিলে তাকে ধরে পিছমোড়া করে হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দিল। তারপর কোমরে দড়ি পরিয়ে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল পাশের গলির দিকে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুলিশের গাড়ি। মধুকে তাতে তুলে বেরিয়ে গেল গাড়িটা। আশেপাশে জড়ো হওয়া লোকেরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। ... ...
গল্প। ... ...
বেচারা সরকার বাবু, গন্ধ সাবান আর কানাই ভ্যারাইটি স্টোর্সের গপ্পো.... ... ...
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অমলবাবু বুঝলেন মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। আসলে এটা কাল রাতের রেশ। রাত তখন প্রায় বারোটা। হাই উঠে গেছে গোটা পাঁচেক, ঘুম ঘুম পাচ্ছে। এমন সময় এল। কবিতার লাইন। কবিতা যারা লেখেন তাঁরা জানেন, কবিতা খুব মারাত্মক জিনিস। একবার এলে, যতক্ষণ না লিখে ফেলা হচ্ছে, পেটের ভেতরটা গুড়গুড় করে, মন আনচান। লিখে ফেললে তবে শান্তি। অমলবাবুও দেরি করেন নি। স্ত্রী সুরমা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। চট করে কবিতাটা লিখে ফেলেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট। কিন্তু কটা লাইক পড়ল সেটা দেখার জন্য বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারেন নি অমলবাবু। ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছিল। কটা লাইক পড়ল সেটা দেখার জন্য আজ একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন। ... ...
মনে করা হয় যে শরৎকালের পূর্ণিমায় চাঁদ ষোলো কলায় পূর্ণ হলে অমৃত বর্ষণ করে। অনেক বাড়িতে পায়েস দেওয়া হয় চাঁদকে। তাছাড়া শাশুড়ি বলতেন লক্ষ্মীঠাকুর সারা রাত ঘুরবেন, চাঁদ যদি মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গিয়ে আলো না দেন, তবে তো খুব মুশকিল হয়ে যাবে। চাঁদকে নৈবেদ্য দেওয়ার সময়ে তুলসী গাছকেও পুজো করা হয়। তুলসী নারায়ণের প্রতীক হিসেবে পুজো পান। ... ...
দশমীর বেলায় নিরঞ্জনের শেষে আর দুষ্টকে দুষ্ট মানা হয় না। সবই ভেসে যাবে জলে। বাংলার এই পুজোয়, ঘরের মেয়ে উমার বিসর্জনের আগে তাঁর চিরশত্রুকেও বাড়ির মা-বউয়েরা আদর করে বিদায় দেন। করুণার এমন ছিন্ন মেঘ খেলা করে মানুষের মনে, সুদর্শনের চোখ জলে ভরে আসে। ... ...
এইভাবে রিকশাদুটি ক্রমে গলির মুখে বাঁক নেয়। মঞ্জু দ্যাখে কী বিচ্ছিরি পাড়াটা! চারদিকে ঘিঞ্জি বস্তি, রাস্তার ধারে ময়লা জলে থেবড়ে বসে চান করছে মুশকো মুশকো লোক। সস্তা সাবানের ফেনা গড়িয়ে যাচ্ছে ম্যানহোলের দিকে। রোদে একটা বোঁটকা গন্ধ ঝুলে রয়েছে। কর্পোরেশনের ডাস্টবিন থেকে ভাত গড়িয়ে পড়েছে রাস্তায় ... ...
রাহেলার শরীর ভালো যাচ্ছে না কামাল সেটা আগে থেকেই জানতো। গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ার পরও বউটাকে গ্রামে নিয়ে যাবার ব্যাপারে তার কোনো সাড়াশব্দ ছিল না। এরকম সময়ে গর্ভবতী মেয়েদের নিরাপদ জায়গায় সরে থাকা উচিত। সেসব নিয়ে কোনো চিন্তা না করে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা রাহেলাকে ফেলে ছুটির আমেজে বাইরে বাইরে আড্ডা মেরে বেড়াচ্ছিল কামাল। ... ...
বাইরে কে একটা চিৎকার করছে। বাইরে মানে এই ছোট্টো নোংরা কফির দোকানটা, যার বৈশিষ্ট্যহীন টেবিলগুলোর ওপর ছড়িয়ে রয়েছে খাবারের গুঁড়ো আর দেয়ালে ঝোলানো ফ্যাকাশে ছবিটা কোনো জলপ্রপাত নাকি মেয়ের মুখ বোঝা যাচ্ছে না — এই দোকানটার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কেউ চিৎকার করছে। বাইরে বরফ পড়ছে। আশ্চর্য নিস্তদ্ধভাবে বরফের গুঁড়োগুলো নেমে আসে, যেন রুখসানার হাত থেকে এইমাত্র পেনটা খসে পড়ে গেল — ইরফানের মনে হল এমন দৃশ্য; অথচ আমি জানি না কেন তার হাত থেকে পেনটা খসে পড়ে গেল। তার মাথার পিছনে দেয়ালের গায়ে লাল ও বেগুনি, নাকি নীল, হয়তো ... ...
দেখছিলাম সেই পাতাদের ওড়উড়ি, বুনোফুলে প্রজাপতিদের খেলা, জলে বাতাসের তোলা হালকা হালকা ঢেউ – যাতে মনে হয় মেঘের ছায়াতে সুড়সুড়ি লাগে। তখনই খুব আস্তে গাড়িটা বলল – এখন অনেকটা সুস্থ লাগছে। ... ...