গ্রাম। কিন্তু তা বলে গন্ডগ্রাম নয়। গ্রামে স্কুল আছে। সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। তারে করে ঘরে ঘরে কেবল কোম্পানির পৌঁছে দেওয়া আনন্দ স্ফূর্তি আছে। তবে সবাইকার পাকা বাড়ি নেই। সবাইকার জন্য পাকা শৌচাগার নেই। কিন্তু উদ্যোগ আছে। দেয়াল লিখন আছে। ঘরেতে একটি পায়খানা বানান, মা -বোনেদের ইজ্জত বাঁচান এমন দেয়াল লিখনের পাশেই গোলাভরা ধান আছে, আবার আলুচাষির আত্মহত্যা-ও আছে। আর আছে একজন ডাক্তার বাবু। ৮৪ বছর তার বয়েস। ... ...
তারপর এখানে আর ভালবাসা হবার নয, নয বলেই যেন ইনফিনিটিতে প্রাণ বল্লম গুটিয়ে ফিরছেন জাদুকর তার দীর্ঘ ছায়া পড়ছে মাঠে। ক্রমে গাছে গাছে কমে আসছে সালোক সংশ্লেষ, বাতাসে শ্বাস বাযু কমছে কি? সে বড় করে শ্বাস নেয় ,ঠিক বুঝতে পারে না। ... ...
পথ চলতে গিয়ে যে সকল মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি তেমন একজন কে মনে রেখে ... ...
একটা অদ্ভুত মাথা ধরা নিয়ে ঘুম ভাঙ্গল গোপাল বাবুর। মাঝে মাঝে এমনটা হয়। আগে কম হত। আজকাল একটু বেশিই যেন হচ্ছে। ভাবেন এর পর শহরে ছেলের কাছে গেলে একটা ভাল ডাক্তার দেখাতে হবে। এখানে, মানে এই মফস্বল শহর শালদুয়ারির পাঁচ কিলোমিটার দূরের গ্রামে তার উপায় নেই। তবে দিন বাড়লে এটা নিজেই কমে যাবে জানেন উনি। তাছাড়া শরীরকে বেশী পাত্তাও দিতে চান না। গোপালবাবুর বাবা বলতেন “শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়”, তাই উনি আজ অবধি সেটাই মেনে চলেন। ... ...
খালিশপুরে হাউজিং বাজারের বিহারী পট্টির এক চিমসার মধ্যে সে সাইন্দা থাকে! চায়ের কাঁপে চুমুক দেয় আর চিনচিন করে বিড়িতে টান মারে! ফলে আমরা রত্ন আবিষ্কারের মতন ঝকমকি উল্লাসে উজ্জ্বল হয়ে যাই তারে নজরে পেয়ে! আমরা নাড়াই তারে! আমরা জিজ্ঞাস করি, কাকা দেশের অবস্থা দেখছেন? করোনার মধ্যে সারা দেশে কি টাল্টুবাল্টু কারবার? ... ...
সন্ধ্যায় কতগুলো লোক জোর করে বাড়িতে ঢুকলো । কেউ চেনা, কেউ অচেনা। ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে লোকগুলো চিৎকার করে বললো, এগুলো গরুর মাংস। রান্নাঘরের দরজার আড়ালে ভয়ে তখন কাঁপছিল আঞ্জুমান। ... ...
কিছু শোনা, কিছু কল্পনা ... ...
তিনি বুঝতে পারেন শেষ হাসিটা পর্দা থেকে বেরিয়ে, তাঁর মাথার ওপর দিয়ে গিয়ে ব্যালকনি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সুবিনয়ের মনে হয় শহরের সমস্ত বাড়ির জানলা, ব্যালকনি দিয়ে হাসিরা বেরিয়ে আসছে। শেষ হাসি। ... ...
-ওই বেজান বেড়াটার জন্য কত চোখের পানি, কত ঘৃণা, কত যন্ত্রণা, কত যুদ্ধ। যার জান নাই তার লাগি কত জান যায়, আমি রাতের আন্ধারে বেড়াটারে খুইলা লই। যেহানে বেড়া নাই সেহানে দেশভাগ নাই। সব এক, কে কইবে কোনটা দেশ আর কোনটা বিদেশ? ... ...
পরী এসে দাঁড়ায় ছাদের কার্নিশে মাঝে মাঝে । আজকাল প্রায় রাতেই আসছে। দুধেল সাদা পোশাকটা অন্ধকারেও আলো ছড়াতে থাকে । পথভুলে এই শহরতলিতে তাদের বাড়ির ছাদে কেন যে নামে রাত্রিবেলা, যখন সে ছাদে থাকে বুঝতে পারেনা রিন্টু । তবে পরী এলে তার ভালই লাগে। আজকাল একটু একটু গল্পগাছাও হয় তাদের মধ্যে। এই তো গত পরশু এসেছিল। সেদিন দীপক দা মেয়ের বিয়ের জন্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দোকানে আসার পথে পড়ল ছিনতাইবাজের খপ্পরে। ... ...
হারিকেন ইসাইয়াস এসে জোর ধাক্কা দিয়ে গেল উত্তর আমেরিকার ইস্ট কোস্টে| বিদ্যুৎবিহীন, নেটওয়ার্ক-বিহীন অবস্থায় আটকে পড়া দুটি ছেলেমেয়ের জীবনে কেমন করে প্রেম জমে উঠলো, আজ তারই গপ্পো| ... ...
তার পক্ষ হইতে এক লোক আইসা খাবার দিয়া যাইত ও সন্ধ্যার দিকে আইসা বাক্সগুলি নিয়া যাইত। সেই লোকও অদ্ভুত, চোখে সব সময় কালা চশমা পইরা থাকত, আর কথা বলার সময় এর গলা থেকে চি চি শব্দ বের হইত। অনেকটা পাখির মত। ... ...
বাপের কথা জবার মনে পড়ে অস্পষ্ট, রাতে দেখা স্বপ্ন যেমন সকালে কিছুটা মনে পড়ে, আবার পরক্ষণেই মানস থেকে দ্রুত সরে যায়- তেমনি। গত বছর মা-ও চলে গেল পেটের ব্যথা নিয়ে। প্রথমে গ্রাম ডাক্তারের কাছে গেলে ব্যথা কমার ওষুধ দেয়। দিনে দিনে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে, খাওয়া-দাওয়া আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকে, একসময় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। জবার চাচা কবিরাজ ডেকে আনে, তিনি শহরের হাসপাতালে নিতে বলেন, হাসপাতালে কে নিয়ে যাবে, চিকিৎসা খরচই-বা কে দিবে; এক সকালে জবার হাউমাউ শুনে চাচা, চাচি, তাদের ছেলেমেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে জানতে পারে জবাকে একা রেখে তার মা-ও পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। ... ...
এরপর একটা ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে রেণু নামবে; পিয়ানো যেখানে বাজছে সেদিকেই যাবে রেণু- নামতেই থাকবে -তাকে আর আটকাতে পারবে না সুবর্ণ- আস্তে আস্তে রেণু কুহেলির সন্ধ্যা রায় হয়ে যাবে। ... ...
গপ্পো ... ...
একটা টি সেট আর একটি মেয়ে!এই নিয়েই কথকতা। ... ...
তখন ছিল অঘ্রান মাস- ধান কাটার আগের মৌসুম; এ-সময়ে এলাকায় দিনমজুরের কাজ একেবারে থাকে না। উলিপুরের বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের গড়গড়িয়া গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে থাকা নদীভাঙা মানুষগুলো নৈরাশ্যের অতলে নিমজ্জিত। বাঁধের এ-অংশকে কে, কবে হঠাৎপাড়া নাম দিয়েছে, তা তাদের অজানা, এটা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। এ বাঁধে অনেক নিঃস্ব মানুষ আছে, একসময় যারা ছিল সম্পন্ন গেরস্ত; অনেকে আছে যারা একবার নয়, পাঁচ কি সাতবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে এখন নিঃস্ব। জীবন সম্পর্কে তাদের ধারণা তাদের কাছে পরিষ্কার। তারা ভাবে জন্ম-মৃত্যু যেমন আল্লাহর হাতে, তাদের জীবিকাও তাঁরই হাতে। ঈদের আগের দিনগুলোতে যারা শহরে রিকশা চালাতে যায়, তাদের আয়-রোজগার হয় কিছুটা বেশি, যদিও তা দিয়ে বিগত দিনের কর্জ পরিশোধ করে ঈদের দিনের জন্য এক ঠোঙা সেমাই আর একটু চিনি বা গুড় কেনা হয়। ... ...
পাশের টেবিলে তিনজন বসে গল্প করছিল। আমি আড়ি পেতে শুনছিলাম। আড়ি পেতে ঠিক নয়, কানে আসছিল। অসমবয়েসী তিনজন। একজন বছর পঁচিশেকের, একজন বছর পঁয়তিরিশের, আর অন্যজন আমার বয়েসী হবে। বছর পঞ্চাশেক। পানভোজনের মাঝারি মানের রেস্তোঁরা। আমি অনেকদিন থেকে এখানে আসি। পান আর আহার দুইই ভাল। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম যেমন বদলেছে, আমার রুচিও। এদেরও দেখলাম রুচির তফাত। ছোটজন নিয়েছে বিয়ার। মেজোজন রেড ওয়াইন। বড়জন শুনলাম সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি অর্ডার দিল। খাবারেও তিনজন ভিন্নপন্থী। ছোটজন অর্ডার করল ঝাল চিকেন উইংস। দ্বিতীয়জন চাইল নিউজিল্যান্ডের আমদানী ল্যাম্ব শ্যাংক। বুড়োজন নিল রেয়ার-মিডিয়াম ফিলে মিনিয়ন। আট আউন্সের। মানে খুবই ছোট। ... ...
লোকটা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। চাকরি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল যে মৃত মানুষ নিয়ে কারবার। চাকরি দরকার, আমি রাজি হয়ে গেছি। কিন্তু আমাকে নদীর পাড়ে, ঠিক শ্মশানের পিছনে নিয়ে আসল কেন বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে অন্ধকার থাকে সব সময়। শ্মশানে আগে আসলেও পিছনে আসা হয়নি। কিন্তু আমার সুপারভাইজারের কোন দিকে কোন খেয়াল নেই, তিনি হনহন করে হাঁটছেন আর বলছেন, "আসেন, জলদি আসেন। কাজ ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সময়ের এদিক সেদিক হয়ে মহা কেলেঙ্কারি!" আমি তার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি, আর ভাবছি, সমস্ত ব্যস্ততা শেষ করেই তো মানুষ শ্মশানে আসে, এখানে এত কিসের তাড়াহুড়া? আমার সুপারভাইজার, যার নাম মোহাব্বত, তাকে যে জিজ্ঞাস করব, তার সুযোগ তিনি দিচ্ছেন না। বিড়ি টানতে টানতে দ্রুত হাঁটছেন তিনি, পারলে দৌড় দেন! ... ...