ফাঁকা রাস্তার মাথার ওপরে ঘন নীল মেঘ উঠছে, উল্টোদিকের বাড়ির দোতলায় আলো জ্বলল, আর যে পাখি তিনটে এতক্ষণ টেলিফোনের তারে বসেছিল, তারা উড়ে গেল এইমাত্র ; দূর থেকে কিছু শব্দ এগিয়ে আসছিল যেন পথচারীদের সেই সব কথারা মাঝখানের এই ফাঁকা রাস্তাটুকু পেরিয়ে ডানদিকে যাবে কিম্বা উল্টোটা- ফলে এই জনহীন পথের দু’ দিকেই কিছু দৃশ্য ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছিল অথবা তৈরি হচ্ছিল। এখান থেকে যে রাস্তাটুকু দেখা যায় তা এমনই চৌকো আর ফাঁকা যেন এখনই নাটক শুরু পারে সেখানে - ছোটো, একাঙ্ক কোনো নাটক। ... ...
আজ সেই রাত।পার্কে গিয়ে তাই করি, বেঞ্চটা খুঁজে বার করে বসি । একটা ফাঁকা সিগারেটের প্যাকেট ফেলে গেছে কেউ বেঞ্চটার ওপর, সেটা দুমড়ে পাশে সরিয়ে দিলাম। পার্কটা ফাঁকা । ঘড়ির দিকে চোখ রাখি, সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘুরছে । এখনো পনেরো মিনিট বাকি আছে। হেলান দিয়ে বেঞ্চে মাথাটা তুলে ওপরে তাকালাম। ঝিকমিক করছে নানারকম তারা। একটা কৃত্রিম উপগ্রহ সপ্তষিমণ্ডলকে পিছনে রেখে আকাশ পেরিয়ে যাচ্ছিল। ... ...
আমি,আপনি,আমরা আর একটা কুকুর। ভালবাসা,ন্যাকামো,আদিখ্যেতা,ধাষ্টামো সবকিছু। অবশ্যই গল্পে। ... ...
যদুনাথ সরকারের লেখা থেকে উপাদান নিয়ে, ইতিহাসের কিছু ঘটনা আর কল্পনা মিশিয়ে লেখা গল্প। শাজাহানের সময় নগ্ন সাধক সারমাদ সত্যিই গান আর কবিতার মাধ্যমে, তাঁর নিজস্ব দর্শন (যার খানিকটা গল্পে বলা আছে) প্রচার করতেন। তবে, এই গল্পে সারমাদের গানটা আমার লেখা। দশম শতকের পারসিক মনীষী মনসুর আল হাল্লাজের আনাল হক (সো অহং) বাণী সারমাদ ব্যবহার করতেন বলে জানা যায় না। আবার করতেন না, সেটাও জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। ... ...
ইতিহাস আশ্রিত এই গল্পটায়, যেটুকু কল্পনা মিশেছে, তাতে মানুষের নিজের পরিচিতি খোঁজাকে বুঝতে চেয়েছিলাম। খুব উঁচুদরের সাহিত্যকর্ম নয়। একটা প্রচেষ্টা মাত্র। ... ...
জীবনে চলার পথে কত কি না হারিয়ে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া জোনাকি খুঁজতে বেরিয়েছে আনন্দ। ... ...
এদিকে পিলু বক্সীর মেয়ে সোনাইয়ের সাথে বাদলার খুব ভাব হতে শুরু করেছে। কিন্তু বাবা মস্তান ভেবেও মাঝে মাঝে ঘাবড়ে যাচ্ছে বাদলা। ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে – বয়সটাই বা কিই! জেঠু এসব বোঝালেও বাদলা মানতে রাজি নয়। তাঁরই উস্কানিতে তো সোনাইকে ও দিনের পর দিন চকোলেট দিয়ে এসেছে। ... ...
পুজোবাড়িতে সপ্তমীসন্ধে এলেই এমন কিছু মানুষ থাকেন যারা সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে শুরু করেন, "এই তো সপ্তমীও কেটে গেল, অষ্টমী-নবমী দুটো দিন কেটে গেলেই ভাসান! ব্যাস! এত আনন্দ-আয়োজন সব শেষ!" এটুকু শেষ করে তারপর অপেক্ষাকৃত ছোটদের দিকে তাকিয়ে জগতের এই প্রবহমানতার রহস্য ভেদ করার আনন্দে হ্যা হ্যা করেন। ... ...
এই বাংলায় লেখকের তো অভাব নেই। কিন্তু শুধু লিখে মোটা টাকা রোজগার করছেন এমন লেখকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। হয় কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়, নয় সরকারি চাকরি করে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে এক নতুন উচ্চতায় স্থাপন করলাম। লেখালিখির যা জ্ঞান আছে তাতে মনে হল ঘরে বসে হাজার হাজার টাকা রোজগারে কোনও সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। ... ...
এ্যাঁ! তিনিবাবু! এটা আবার কারুর নাম হয় নাকি? আমি, আপনি, উনি, তিনি এসব তো সর্বসাধারণের যে কেউ হতে পারে, অর্থাৎ সর্বনাম। পরিবর্তনশীলও বটে। যেমন ধরুন, আপনি আমার কাছে আপনি কিন্তু আপনি আপনার কাছে আমি। আমরা তো সেই অর্থে সবাই একই সময়ে আমি, আপনি, উনি, তিনি হয়ে বিরাজ করি। ... ...
মামা উড়নচন্ডি স্বভাবের জন্য শৈশবে তাকে ‘ঘোড়া’ উপাধি দিয়েছিল, সে খুব ক্ষেপে যেত দুষ্টুমির ছলে কেউ এই নামে ডাকলে…. অথচ সে প্রায়ই দাঁড়িয়ে ঘুমোত এবং তা কেউই জানতো না। ছোট থেকেই সে খুব সোজা হাঁটে, একই রকম করে কদম ফেলে; তার চোখ দেখে, সবই তো সরল পথ, যেখানে পথ বেঁকেছে বলে মনে হয়, সেখানেই তো নতুন পথের খোঁজ পেয়ে যায় সে। বেতার তরঙ্গের মত সে সোজা ছুটে, মাঝে মাঝে মহাকাশের কাছে পৌঁছে যায়, বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ সীমায় বাঁধা খেয়ে আবার ফিরে আসে পৃথিবীতে। একদিন সে-ই নানাজানের হাতের বাঁধনে পিষ্ট হতে হতে এক গনজমায়েতের মুখে দাঁড়িয়ে জানলো, ‘এক রত্তি মাংস নাই শরিলে…সাধারন বৃত্তি না…ট্যালেন্টপুল…সবই তাঁর কেরামতি!‘ তীর্যক চোখে তাকিয়েছিল তারা সবাই, সম্মিলিত একটি ফিসফিসানি ঢেউয়ের মত আবর্তিত হয়ে প্রায় পিষে ধরছিল তাকে। ... ...
প্রায়ই আমায় নিজের ড্রয়ার থেকে গেঞ্জি বার করে বাবার ড্রয়ারে রেখে দিতে হত; আর প্রতিবারই মনে হত, একটি নতুন স্যান্ডো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে বাবার জন্য। কিন্তু তারপরই স্মৃতি থেকে ধুলোর মত উড়ে যেত সেই স্যান্ডো। ... ...
কথায় আছে, “অষ্টমীর পূজায় ফলে বিদায়ের আশ/ নবমী দশমী বাঁধে আর বারো মাস”। অষ্টমীর পুজোয় নাকি বিদায়ের আশা ফলে গেরস্থের বুকে – সে কেমন? অষ্টমীর পুজো-শেষে নবমীর দিকে পা দিলেই বিদায় বাদ্য বাজতে থাকে কোথাও, আর মাত্র দু’ দিন। এই ‘মাত্র দু’ দিন’-এর প্রহেলিকায় গেরস্থ-কন্যা গৌরীর আগের তিনটে আলো-ঝলমল দিন কোথায় যেন পালায়! তারা এসেছিল যেন এটুকু বোঝাতেই যে তারা থাকবে না। ... ...
অস্তমিত সূর্যদেব তখন আকাশ - বাটি ভরে পায়েস খাচ্ছেন, লাল, নীল, কমলা, হলুদ, গোলাপি, ফিরোজা.. তাতে হরেক রকমের সর। আজ 'তার' জন্মদিন। রাধারাণীর ঘরে 'ম' 'ম' করছে পরমান্নের গন্ধ। বাতাস আজ ক্ষীরের মতো নিগূঢ়। গাছেরা উথলে ওঠা ঘন। ... ...
ধর্ষণ কি শুধুমাত্র শারীরিক? নাকি অনেক বেশি মানসিক? ... ...
একা থাকতে কিছুটা ভয়ই পাই আমি। আকাশপাতাল চিন্তা করতে একেবারে ভালবাসি না, তবু ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা থাকলে সেসব কীভাবে যেন এসেই যায়। তাদের থেকে পালাতে চাইলেই আমি বাইকে উঠে বসে এক্সিলারেটর ঘোরাই। গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গলিতে আসতে না আসতেই বুঝতে পারি আমি পালাতে সক্ষম। কারণ বাইক চালাতে চালাতে অন্য কোন চিন্তা মাথায় আসে না। আসা সম্ভব নয়। এলে, দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ... ...