এই লেখাটির প্রথম পর্বটি না পড়ে - - - দ্বিতীয় পর্বটি পড়া একদমই বাঞ্ছনীয় নয় - - - তাতে ছন্দপতন অনিবার্য ... ...
বাইরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে। জীবন্ত সম্প্রচারের সময় হয়ে এল। এই গুহাতে কোনো প্রাকৃতিক আলো , হাওয়া আসে না। গুহার নকল সিলিংকে পেঁচিয়ে শুয়ে আছে গোলাপি এলইডি আলোকলতা। তাদের ফুলের আভায় সারা ঘরে এক অদ্ভুত হালকা আলো আঁধারির খেলা। ... ...
"ওমা তাইতো! সাড়ে তিনটে বেজে গেছে। চল চল আমরা ছুটে যাই রাস্তা অবধি" বলে রাজু বিস্তৃত মাঠের ওপর দিয়ে ছুটতে শুরু করলো। দীর্ঘাঙ্গী হেমাঙ্গিনীও আঁচলটা কোমরে গুঁজে ভাইয়ের পিছনে ছোটে। সরমার দেওয়া কমলা কোটা শাড়ির সরু সুতোর মিহি বুনোনে অনেক চৌখুপিতে সৃষ্টি হয়েছে মায়াবী স্বচ্ছতা। হাতে চটি নিয়ে সবুজ ঘাসে ফরসা পা ফেলে ছুটন্ত হেমার সতেজ শরীরের আভা যেন ঐ শাড়ির অসংখ্য জালি বাতায়ন দিয়ে ফুটে বেরুচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে চরাচরে। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য! ... ...
দেহটা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল পিঠের সিংহাসনটাতে, কিন্তু তেলের কাঁটার সাথে সঙ্গত করতেই কিনা, গাড়িটি হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। সিগনাল বাতি নেই, তাও এই জ্যাম! ‘’রাস্তায় নামলেই পাব্লিকের নাটকের আল্লাদ উডে… পাংখা গজান আরম্ভ করে…’’, বিড়বিড় করতে থাকে মারুফ গায়ের ক্যাটক্যাটে হলদে গেঞ্জিটা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে। গেঞ্জিটা বুক পর্যন্ত উঠাতেই বেরিয়ে পড়ে রোমশ শরীরটা, এক রত্তি মাংস বাড়তি নেই কোথাও, হাড্ডিগুলো গড়েপিটে উঠেছে সেখানে বাইশটি বছর ধরে, তেল-মসলার কারুকাজ ছাড়াই। কিন্তু এই শরীরটারই চাকায় চাকায় বেজে চলে রাজপ্রাসাদী তান, যখন এক মনে আল্লা-খোদা করে যেতে থাকে তার পিছনে দন্ডায়মান এক দল নিরীহ ও নিপীড়িত যান! সংগীতটা আরো সুমধুর হয়ে উঠে, যখন সে বড় রাস্তা ছেড়ে গলিতে ঢুকে পড়ে। তখন জায়গার অভাবে তার জ্যাকটাকে সাইড দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়ে মরাকান্না জুড়ে দেয় আগের থেকেও নিরীহ ও নিপীড়িত কিছু যান। মারুফ আপন মনে হেসে উঠে! এমন কোন প্রাণী আছে যে রাস্তার বুকে চড়ে বেড়াবে আর তাকে সমীহ করবে না? তাকে নিয়ে রাস্তার সবার দুশ্চিন্তা, অথচ কারো মুখে রা পর্যন্ত নেই! পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, এমনকি মন্ত্রী- মিনিস্টারের গাড়িকে গুণতে চায় না পাব্লিক আজকাল! কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলে না, গালাগালির তুবড়িও ছুটে আসে না। কি করবে, মানুষ যে ময়লা সহ্য করতে পারে না; টিয়ার গ্যাস, গুলি হজম হলেও ময়লা হজম হতে চায় না তাদের! বাসার পায়খানাটার মতই ঘেন্না একে তাদের! ... ...
প্রথমে কিছু গগনবিদারি শ্লোগানে গা গরম করে নিয়ে মাইকটা এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল জনপ্রিয় সুরে দল ও নেতার বন্দনাগীতিতে। ইতিমধ্যেই নেতাকর্মীদের ভীড়ে জায়গাটা ভরে গেছে। ওদিকে আরো কিছু মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ কোণাটিতে দাঁড়িয়ে গেছে; অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীদের হুংকারে তাদের মাঝেমধ্যে কষ্টকর দিকবদল করতে হচ্ছে! সভার প্রবেশদ্বারটা প্রশস্ত হওয়ায় কোণাগুলি একটু বেশিই বেঁকে গেছে, না হলে সামান্য লম্ফ-ঝম্ফ - এ আর কী এমন কঠিন কাজ! ... ...
একটা মচমচে মাছ ভাজার গন্ধ তাতিয়ে দিতে লাগলো দীপকে! পড়ার টেবিলে আর মন বসল না; ‘বাবা নেই’ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ড্রইয়িং রুমের রিমোটটা হাতে তুলে নিল। ব্রেকিং নিউজটা এখন হেডলাইনে কনভার্ট হয়েছে, মানুষ ভেঙে পড়ছে প্রয়াত নায়কের বাড়িতে, একের পর এক সাক্ষাৎকার আসছে, ক্যামেরাম্যান হুমড়ি খেয়ে পড়েছে! ... ...
এক বৃদ্ধ অসুস্থ ছিলেন বলে, কয়েকমাস পরে পেনশন তুলতে গেছেন সরকারি আপিসে। গিয়ে শোনেন আইন বদলে গেছে। এবার শুধু হাজিরা দিলেই হবেনা, কাগজ লাগবে। কী কাগজ? কর্তব্যরত কেরানি বললেন, জ্যান্ত সার্টিফিকেট।- সেটা আবার কী? কেরানি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গীতে বললেন, ডেথ সার্টিফিকেট শোনেননি? শ্মশানে দরকার হয়? সেইরকম জ্যান্ত সার্টিফিকেট লাগবে। নইলে সরকার জানবে কীকরে আপনি জ্যান্ত আছেন? যান কাগজ নিয়ে আসুন। ... ...
উপরে হচ্ছিল উড়াল রেলপথ, আর তাতে করে রাস্তাটিকে ভাঙা হয়েছিল ইচ্ছেমতন একটুও দয়া বা সন্মান না দেখিয়ে। ফলে জায়গায় জায়গায় খানা খন্দ তৈরী হয়েছিল, গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে দেখতে পাওয়া লিকলিকে খন্দগুলোর সাথে এগুলোর পার্থক্য এইটুকুই যে ওরা প্রাকৃতিক, আর এরা কৃত্রিম। ... ...
গাঁজাখুরি গরুর গপ্পো ... ...
ভাষাদিবসের দিনে এক পুরোনো গালগপ্পো ... ...
শোভার মুখে ‘বাঘাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ কাহিনী শুনে রীণা যতীনবাবুর কাছে আব্দার করে, বাঘাকে রেখে দাও না, বাবা। বাঘা তখন উঠোনের এপাশ ওপাশ, হাঁসের ঘর, সাদা ইঁদুরের ঘর শুঁকে বেড়াচ্ছে। যেন বিয়ের পর প্রবাসে চলে যাওয়া মেয়ে বহু বছর পর বাপের বাড়ি এসে এখানে ওখানে স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছে। দড়িতে ঝোলানো খাঁচার টিয়াটা উত্তেজিত হয়ে এপাশ ওপাশ করে ট্যাঁ ট্যাঁ করে চ্যাঁচাচ্ছে। তবে বাঘা ঢাকা বারান্দায় ওঠেনি। বসার ঘরেও যায়নি। কোনো অবোধ্য কারণে হয়তো ও বুঝেছে ওসব জায়গায় যাওয়ার অধিকার সে হারিয়েছে ... ...
জমে উঠেছে এই রেস ভিডিও গেমসের মত। বিচিত্র ব্যাপার, বাসগুলোতে এই কোন লোক নেই, আবার এই লোকে ভর্তি হয়ে গেছে। যেমন, এই মুহূর্তে বাংলামোটরের মোচড়ে যখন দাঁড়িয়ে, তখন কমে গেছে এদের কারো কারো জনবল আশংকাজনক হারে। সিগনালের জ্যাম অস্বাভাবিক দীর্ঘায়িত হচ্ছিল। পেছনে পড়ে থাকা বাসগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল অনন্তকাল ধরে এই স্থানেই বাস করবে। যখন বাঁয়ের বাসটির ভেতর থেকে গলা বাড়িয়ে ডেকে ডেকে লোক ভরা হচ্ছিল আর এক ফাঁকে হেল্পার নেমে পড়েছিল অদূরে জিহবা বেরিয়ে থাকা ডাস্টবিনটার কোনায়, ঐ মেয়ে দুজনের একজন অগ্নিমূর্তি ধারণ করল, আর নিজেদের বাস ড্রাইভারকেই হুংকার ছাড়ল, “এই ছ্যামড়া, সিগ্নাল দেখলেই কি তোর দাঁড়াইতে মন চায়”, পেছন থেকে উৎসাহ পেয়ে এক যুবক বয়সী বলে উঠে ‘হেল্পার হালায় একটা মাদারচোদ! থামলেই মুত আহে’। ... ...
গল্প লিখলাম। জানাবেন কেমন হয়েছে। ... ...