গোপাল সাঁতরা চামড়ার থলেতে করে হরেক যন্ত্রপাতি নিয়ে সাতসকালে বেরোয়। তার দু:খু অনেক। কিন্তু শোনবার লোক নেই। সে কাজে যাবার পথে সকালবেলায় একবার করে মহাদেববাবুর উঠোনে ঢুঁ মারে। সেখানে তখন ত্রিকালসহ মহাদেব এবং দীনবন্ধু বাবু চা পানে ব্যস্ত।সে এসে সেখানে থলে নামিয়ে রেখে উবু হয়ে বসে।তার দু:খু অনেক। তিন তিনটে সোমত্ত ছেলে। সবাই বেকার। কেউ এক পয়সা কামায় না। দুটো বারো তেরো বছরের মেয়ে।বেওয়ারিশ যত্র তত্র চরে বেড়াচ্ছে। এত বড় সংসারের ভার তার একার ঘাড়ে। এই বুড়ো বয়সে সে আর খেটে খেটে পারে না। ছোটখাট কলকব্জা যন্ত্রপাতি সারিয়ে বেড়ায় সে। একরকম ফ্রি-ল্যান্সার মিস্ত্রি বলা যায়। বড় হাঁফ ধরে আজকাল। ... ...
এদিকে এক পাহাড় । ওদিকে এক পাহাড় । মাঝখানে নদী। সেই নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরী হয়েছে সরন্তি ড্যাম। শাল, পলাশ, শিশু, সেগুনের জঙ্গলে ঘেরা এই আদিবাসী গ্রাম। ফাগুন চোত মাসে রুখা সরন্তি সেজে ওঠে পলাশের সাজে। লাল মাটির পাশে সবুজ ধানক্ষেত।ওই ধানক্ষেতের ওপারে চার্চের জমি। সেন্ট অ্যাগনেস চার্চ। বেশ বড়সড় ইমারত। জমির চারপাশে দেড় মানুষ সমান লোহার রেলিং। গেট খুলে ভেতরে গেলে বেশ শান্তির পরশ লাগে যেন। পুব দিকে শাল সেগুনের বনের মাথা টপকে সূয্যির আলো পড়ে সকালবেলায়, চার্চের দুধসাদা দেয়ালের গায়ে। ওখানে মূল দরজার ওপরে প্রভু যীশুর শ্বেত পাথরের পূর্ণ মূর্ত্তি । মূর্ত্তির নীচে লেখা, “ হে ভারাক্রান্ত ও পরিশ্রাম্ত পথিকেরা আমার নিকট আইস আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব “ ... ...
রাস্তার ধারে বারোতলা ফ্ল্যাট বাড়ি উঠছে। গলির মুখে বালি স্টোন চিপস স্তুপাকার। পাশ কাটিয়ে একটা সাইকেল বের করতেও কসরত করতে হচ্ছে। গলির মধ্যে গাড়ি টাড়ি ঢোকা তো দূরের ব্যাপার।সজলবাবু পাড়ার পুরনো বাসিন্দা। বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে ছিলেন গৌরের কচুরির দোকানের পাশে। অনিন্দ্য ঘোষ শালপাতার ঠোঙা থেকে তরকারি মাখিয়ে কচুরি মুখে পুরে চিবোচ্ছিল পরমানন্দে ... ...
থার্ড গিয়ারে ধুমায়িত হুল্লোড় আই পি এল। কে কাকে কিনল যেন সাড়ে এগারো কোটিতে, ঝটতি পড়তি খেলুড়ে বাছারাও পাঁচ ছ কোটিতে মারে মুঠোভরা খাবলা। ... ...
ঋষভের পুলকার গড়িয়ে যায় / মরণ নালায়, / ব্যস্ত মালিক, রাশভারি স্কুল, ঠেকা মারা অদলি বদলি ড্রাইভার, ... ...
চারিদিকে শুধু জল আর জল। দোতলা বাড়ি জলের তলায়। বাড়ি তেতলা হলে শুধু গলাটুকু বাইরে। দোতলা তেতলা এখানে আর কোথায় । যা দেখা যাচ্ছে তা অনেক দূরে দূরে। ও..ই দূর গঞ্জে। এ তো নিকষ্য গেরাম। কুঁড়েঘরে খড়ের ছাউনি। দু চারটে ইঁটের গাঁথনির কোঠা আছে। মাথায় টিনে র বা টালির ছাউনি। সব ডুবে আছে ... ...
বাবুমশায়দের পেন্নাম । মা জননীদের গড় করি।আজ্ঞে আমার নাম গণেশ হাঁসদা। মাঠের ওপারে ওই কুঁড়েটায় আমি থাকি । ছিটবেড়ায় মাটি লেপা । পচা খড়ের ছাউনি। তেমন বরষা হলে জল বাঁধে না। ঘর ভেসে যায়। আর ঘরে আমার কি বা আছে। একটা ছেঁড়া চাটাই – খেজুর পাতার, আমি নিজেই বুনেছিলাম। একটা মাটির হাঁড়ি। খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করি। ভেঙে গেলে মুশকিল। ওটাতেই ভাত রাঁধি কিনা। যেদিন চাল জোটে আর কি। রোজ তো আর জোটে না। আর একটা টিনে র শানকি আছে। ভাত জুটলে ওটায় ঢেলে খাই। ... ...
দশদিন বাকি আর.... সামনের উঠোনটা বুড়োমানুষের মতো ঘ্যানঘেনে মেঘলা কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঝিমোয় খালি , সেলের গরাদে এসে পড়ে বারোমেসে ভাঙাচোরা রোদ্দুর, গেটের মুখে একটা সেপাই হাতের তেলোয় পরম যত্নে খইনি ডলছে, ... ...
ওসেইফ আর আজরার দুজনেরই বাড়ি শোপিয়ান থেকে বাইশ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে। গ্রামের নাম গুলসুমা। তাদের গাঁওয়ের মধ্যে দিয়ে ঝিলমের জল বয়ে গেছে। খুব শান্ত তীর - ঠিক ঝিলমের জলের মতোই ।সেখানে শোপিয়ানের মতো হালচাল নয়। মিলিটারিতে ছেয়ে থাকে না পথঘাট। লেড়কা লেড়কিরা নিয়মিত স্কুল করে। পড়াই লিখাই করে। সেখানে অবশ্য কাশ্মীরি ভাষার কোন জায়গা নেই। শুধু হিন্দী বা ইংরেজী ইস্তেমাল করা হয়। আব্বা আম্মা ক্ষেতি করে। গাঁওয়ের কেউ কেউ সোনমার্গে থাকে। ওখানে ডাল লেকে শিকারা চালায়। দুএকজনের হাউস বোট আছে পারিবারিক সূত্রে। ভাড়া খাটায়। এখন অবশ্য মার্কেট ডাল। হাল হকিকৎ খুব খারাপ ... ...