তিলোত্তমার দোতলায় ছ নম্বর ঘরটা একেবারে একফালি। খুবই ছোট। লাগোয়া বাথরুমও নেই। এ ঘরটায় সপ্তাহে পাঁচদিন থাকে অমিতাভ। অমিতাভ ভট্টাচার্য। একটা বেসরকারী আর্থিক লগ্নি সংস্থায় কাজ করে । কোম্পানির হাল খুব খারাপ। নানারকম সরকারি নিয়মকানুন আসছে মাঝেমাঝেই। সে সব মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া মুশ্কিল । কোম্পানি গুটিয়ে যেতে পারে যে কোন দিন। অমিতাভ ছাড়া তার একজন সহকর্মী অলোক সিনহা তিলোত্তমায় থাকে সপ্তাহে পাঁচদিন, সোম থেকে শুক্র। শুক্রবার অফিস করে কলকাতায় ফেরে দুদিনের জন্য। দুজনের মনেই চাপা শঙ্কা এবং উদ্বেগ চাকরি হারাবার। ... ...
পরদিন সকাল নটা নাগাদ নিখিল উদভ্রান্তভাবে সারা লজে ছোটাছুটি করতে লাগল। সে নাকি ঘুমোচ্ছিল। ঘুম থেকে উঠে দেখে অনিন্দিতা বিছানায় নেই। বিছানা থেকে উঠে দেখল বাথরুমে কেউ নেই। ঘরের দরজা খোলা। নিখিল দেখল টেবিলের ওপর রাখা সুটকেসের ডালায় ফাঁক। নিখিল পোড় খাওয়া লোক। তার বুক ছ্যাঁত করে উঠল। দুলাল বলল, ‘ কিরে অ্যাত হাঁফাচ্ছিস কেন ? ‘— ‘ আরে কি বলব, পাখি উড়ে গেছে। সুটকেস থেকে আমার দশ হাজার টাকা ঝেড়ে পালিয়েছে। শি ইজ এ হোর..... অ্যাবসোলিউট হোর। নিজের ভাসুরের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশান ছিল .... কি জিনিস বুঝতে পারছ ! ‘ দুলালকে জিনিসটা পুরোপুরি বোঝানো যেন তার আশু কর্ত্তব্য ... ...
বেলা এগারোটা নাগাদ বরানগরে বাড়িতে পৌঁছল দুলাল। বড় মেয়ে ঈশিতা বাড়িতে আছে। প্রিয়াঙ্কা কলেজে গেছে। তার শ্যালক দিব্যেন্দুকে দেখা গেল খাটের ওপর বসে চা খাচ্ছে। শর্মিষ্ঠা বসে আছে বালিশে হেলান দিয়ে। মুখে তেমন রোগের চিহ্ন নেই আপাতত:। দুলালকে হঠাৎ দেখে একটু অবাক হয়ে গেছে। ‘একি তুমি ! ....’ শর্মিষ্ঠার স্বরে বিস্ময় ও আনন্দ একসঙ্গে মাখামাখি। — ‘ এ..ই চলে এলাম.... ফুচার ফোন পেলাম ... এখন কেমন ? ... ...
দুলালবাবু এই তিলোত্তমা লজে ম্যানেজারি করছেন প্রায় দশ বছর। মাস গেলে হাতে পান পনের হাজার টাকা। দোতলা আর তিনতলা মিলিয়ে তেরোটা ঘর। একতলায় ভাতের হোটেল। সবকিছুই দেখভাল করতে হয় দুলালবাবুকে। ... ...
( দশম ও শেষ পর্ব ) দুশো মিটার শুরু হবার আগে স্পন্দন অনেকক্ষণ ধরে কথা বলল শুভর সঙ্গে। নতুন কোন পরামর্শ দিল না অবশ্য। টাইমিংটা যাতে ঠিক থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে বলল। একশ মিটারের পর থেকে স্পীড তোলার কথা বলল। ... ...
অভ্রর শরীরের ভিসেরা ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে। পাকস্থলিতে কোন বিষ ছিল কিনা সেটাও দেখা হবে। পেটে বিষ পাওয়া গেলে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রবল হবে। নইলে আবার ঘোটালা .... ঘটনাটা বড় আকার নিল। কোন বিশেষ কারণে তদন্তটা স্থানীয় থানা থেকে লালবাজারে সরে গেল। চিত্রতারকার স্বামী বলে কথা। ... ...
এর মধ্যে মোহিনীমোহন ও নিরুপমার মেয়ে জামাই বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ একদিন এসে হাজির। নিরুপমা ভাবলেন নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। অন্তত বছর তিনেক বাপ মায়ের কোন খোঁজখবর নেয় না। ছেলেমেয়েরা কেউ আসে নি অবশ্য। যেমন মেয়ে শর্মিষ্ঠা তেমন জামাই বাবাজি জয়ন্ত। দুটোই সমান মতলববাজ। যেমন দ্যাবা তেমনি দেবী। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে নিরুপমা অনুমান করল জোড়ে নিশ্চয়ই ছক কষছে মোহিনীবাবু মারা যাবার আগেই বাড়িটা নিজেদের নামে লিখিয়ে নেবার জন্য। ... ...
সুইডেনের অ্যাথলেটিক্স অ্যাকাডেমি জিএনএ-তে শুভর যোগদানের ব্যাপারটা আপাতত মুলতুবি রাখা হল। কারণ সুরিন্দরের সঙ্গে কথা বলে স্পন্দন জানতে পারল সিলেকশান কমিটি থেকে সানি ডিসুজার অপসারণ হয়েছে। নতুন করে কমিটি তৈরি হবে এবং তাতে সুরিন্দরের অন্তর্ভুক্তি প্রায় নিশ্চিত। নতুন করে ট্রায়াল হবে অলিম্পিক স্কোয়াডের জন্য। জামশেদপুরে যে মিটটা হবে সেটাই ফাইনাল ট্রায়াল বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সুরিন্দর পরামর্শ দিল ওই ইভেন্টটার ওপর মনোনিবেশ করতে। বাকিটা সে দেখে নেবে। ... ...
প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাপকরা অনুষ্ঠানটিকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে কোন ত্রুটি রাখেন নি। স্টেডিয়ামের চারদিকে গোল করে লাগান নানা রঙের পতাকা উড়ছে। স্টেডিয়ামের বাইরেও অ্যাথলেটিক্সের নানা কোলাজ সহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনী বোর্ড লাগান হয়েছে। ... ...
নিরুপমা বাইরে বেরিয়ে এসে গভীর স্নেহে সিক্ত কটি শীর্ণ আঙুল দিয়ে শুভর হাতটা ধরে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ হাতে যদি পাঁচ মিনিট সময় থাকে একটু ভেতরে এস বাবা।’স্পন্দন লজ্জায় মরে গিয়ে বলল, ‘এ কি বলছেন .... নিশ্চয়ই .... নিশ্চয়ই ....সময়টা কোন ব্যাপার না।’ নিরুপমা শুভকে ট্র্যাক শ্যুট পরা দেখে বললেন, ‘তুমি বুঝি খেল ? ‘— ‘ হ্যাঁ ওই ... রেসে দৌড়াই। স্যার আমাকে শেখান ।’ ... ...