(তৃতীয় ও শেষ পর্ব) প্রথম দুটো বল গুড লেংথে ।আউট সুয়িং করাতে চেয়েছিল মনোজ বরাট। দেবু ডান পা বাড়িয়ে মাথা বলের ওপর নিয়ে গিয়ে ব্লক করল। বল ভাঙতে দিল না। তৃতীয় বলটা কম লেংথের। অফস্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে আসছিল। দেবু ব্যাকফুটে গেল। তার ব্যাট ঝলসে উঠল দেড় দশক আগেকার ঔজ্জ্বল্যের একটা স্কোয়্যার কাটে। কভার পয়েন্ট ফিল্ডার নড়ার সুযোগ পেল না। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে কৌস্তভ ব্যাটতালি দিল। মাঠের বাইরে বসে সজল দাস বলল, ‘খুব রিস্ক নিল দেবু। মিট করতে না পারলে শিওর বোল্ড।’ ... ...
প্রদ্যুৎ ঘোষেরা ঘরে ঢুকে একবার, আবার বেরোবার সময় একবার গৌরীদেবীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। গৌরীদেবী ছেলের গৌরবে প্রগাঢ়ভাবে আপ্লুত হলেন। তার জীবনে সুখের মুহূর্ত খুব বেশি আসেনি। যে কবার এসেছে তার মধ্যে এটা একটা। গৌরীদেবী বললেন, ‘বেঁচে থাক বাবা। বড় ভাল লাগল .... আবার এস ‘প্রদ্যুৎবাবু অকৃত্রিম আন্তরিকতার সঙ্গে বললেন, ‘হ্যাঁ মাসীমা নিশ্চয়ই আসব। দেবুর জন্যে আমাদের যা করনীয় সবই করব। ভাল থাকবেন।’ ... ...
‘দেবুদা আপনি তো রনজি খেলেছিলেন না ? ‘কৌস্তভ জিজ্ঞাসা করে।— না রে .... সে সৌভাগ্য হয়নি। স্পোর্টিং ইউনিয়নে তিন বছর আর মোহনবাগানে দু বছর ছিলাম। খুব ইরেগুলার ছিলাম ফার্স্ট ইলেভেনে। আর বাকি কেরিয়ার তো নবদিগন্তে মানে, নবদিগন্ত স্পোর্টিং-এ খেলেই কেটে গেল।’ কৌস্তভ বলল, ‘অম্বরীশ কাকু বলত আপনার মতো টেকনিক্যালি পারফেক্ট ব্যাটসম্যান খুব কম দেখা যায়। আপনার আরও অনেক অপরচুনিটি পাওয়া উচিৎ ছিল।’ ... ...
*** পোস্ট করতে একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল । তাই আর একবার দিলাম গল্পটা । মাফ করবেন। একটা আয়না দেয়ালের পেরেকে টানানো ছিল। চৌকো ছোটখাটো তিন বিঘতের আয়না। শুধু মুখটুকু দেখা যায়। একটু পিছিয়ে দাঁড়ালে বুকেরও আধখানা দেখা সম্ভব। ওটার সামনে দাঁড়িয়েই দীপিকা চুল আঁচড়ায়, কপালে বিন্দি লাগায়, সিঁথিতে সিঁদুর ঢালে। মাঝে মাঝে চোখে কাজলও টানে।বাদল কসবার একটা বারের বাউন্সার । পয়সাওয়ালা ঘরের উড়নচন্ডী বেপরোয়া ছেলেমেয়েরা যেখানে বেহিসেবী টাকা ছড়ায় উন্মত্ত অবস্থায়। ... ...
সুভাষবাবু বিকেল বেলায় মুড়ি আর নারকেল খাচ্ছিলেন। সারাদিন রোদ্দুরে অনেক ঘুরেছেন। সেই সকালে বেরিয়েছিলেন পান্তাভাত খেয়ে।গ্রামের ছেলে। গ্রামেই কেটেছে সারাজীবন। পান্তাভাতেই এই শরীর এবং মাথা ঠান্ডা থাকে তার। হৈ হৈ করে ভোটের মেলা এসে পড়েছে। পার্টি এবারেও তাকে টিকিট দিয়েছে। সকলেই জানে সুভাষ গিরির প্রায় অর্ধশতাব্দীর রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণ কলঙ্কহীন। রাস্তায় বেরোলে এলাকার লোক পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। আবার তারা এও জানে সুভাষ গিরি ভোটে জিতবেন না। পার্টির সংগঠন বসে গেছে। সংগঠন মজবুত না হলে ভোটে জেতা যায় না। শুধু ভাল লোক হওয়া কোন কাজে আসবে না। ... ...
(তৃতীয় এবং শেষ পর্ব) সৈকতের বুটটাই চমৎকার ফিট করে গেল নিতুর পায়ে। কয়েক জোড়া অতিরিক্ত হোর্স আর গোলকিপারের জার্সি ক্লাবে ছিল। সেগুলোই কাজে লেগে গেল।ওগুলো কেনাকাটার সময়ও হাতে ছিল না।আড়াইটের মধ্যে স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে পৌঁছে গেল সুহাসিনী স্পোর্টিং। পুরুলিয়ার দলটার নাম বল্লভপুর ইলেভেন। বেশ দাপুটে টিম বলে শোনা যাচ্ছে।স্টেডিয়ামের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। কোন টিকিট লাগবে না। প্রবেশ অবারিত। ... ...
সত্যেন প্রামাণিক ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া-য় চাকরি করেন। হাওড়ায় অফিস। অফিস যাওয়া তো দূরের কথা তার নাওয়া খাওয়া মাথায় উঠেছে। নিতুর মা দিবারাত্র কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। কুচুটে প্রতিবেশীরা বেশ মজা পাচ্ছে। এইসব মজার অপেক্ষায় বছরভর বসে থাকে তারা। সন্ধের দিকে গলির মুখে অসীম মান্নার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। বলল, ‘এই যে সত্যেনবাবু .... আপনাকেই খুঁজছিলাম। শুনলাম, নিত্যানন্দ নাকি স্কুল থেকে বাড়ি ফেরেনি ....’, বলে যেন কিছুই জানে না এইভাবে সত্যেনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ... ...
‘রাতদিন মাঠে ঘাটে খেলে বেড়ালে কি আর পড়াশোনা হয়। আমি মরলে ছেলের কি দশা যে হবে ঈশ্বরই জানেন। সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনা নানা ভাবনা চিন্তায়’ - এ হল নিতুর বাবা সত্যেন প্রামানিকের নিজের একমাত্র সন্তান সম্পর্কে দৈনন্দিন খেদোক্তি। নিতুর মা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন এই সময়ে। জানেন যে, তার এ সময়ে যে কোন বাক্যস্ফূরণ হওয়া মানে আগুনে ঘি পড়া। ... ...
জয়তী ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে বলল, ‘ ওঠ ওঠ .... বেলা নটা বাজে ... আর কত ঘুমোবে। ওঠ তাড়াতাড়ি। আজ রোববার। ঘরের ঝুল ঝাড়ব। পড়ে পড়ে ঘুমোলে জীবন চলবে ? ‘ অর্ণব কথা না বাড়িয়ে বিছানা ছেড়ে বাইরে বেসিনের দিকে যায়। সেখানে তখন তার সাত বছরের ছেলে চিন্টু দাঁত ব্রাশ করছে। আজ রবিবার বলে দেরিতে দাঁত ব্রাশ। বাবাকে দেখে মাজনের ফেনা ভরা মুখে বলল, ‘ বাবা বাবা ...... আমাদের স্কুলে না সায়েন্স একজিবিশান হবে নেক্সট স্যাটারডে অ্যান্ড সানডে। সবাইকে হান্ড্রেড রুপিজ করে দিতে হবে। দেবে তো ? ‘ চিন্টুর শিশুমনে এই মুহুর্তে এইটাই চিন্তা ও উত্তেজনার প্রধান বিষয়বস্তু। ... ...
অমলেন্দুবাবু অনেকদিন বাদে চারতলার ছাদে উঠলেন। চারতলার ছাদে চিলেকোঠার ঘর। ঠাকুর্দার করা একান্নবর্তী পরিবারের এতবড় বাড়ি । বাড়িতে লোক অনেক। কিন্তু বাড়ি দেখভাল করার মতো মানুষের নিতান্তই অভাব। ... ...