( তৃতীয় ও শেষ পর্ব ) আমহার্স্ট স্ট্রীট চোরবাগান লেনে সন্ধে নেমে এসেছে। প্রাচীন বাড়ির দোতলার পাথুরে বারান্দার পাথুরে কার্নিশ। বারান্দার সামনেই একটা সপ্তপর্ণী গাছ। অন্ধকারে একা একা দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়েছে গাছের পাতায়।আমহার্স্ট স্ট্রীটে গাড়ির জ্যাম লেগে গেল হঠাৎ। সম্বুদ্ধ সিংহরায় দোতলার ঘরে বসে জানলা দিয়ে রাস্তার জ্যামের দিকে তাকিয়ে ছিলেন আনমনা হয়ে। তার মনে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে উঠছে উড়ন্ত শ্বেত বলাকার মতো বাতাসে ভেসে আসা এক পেসার । বলটা অফস্টাম্পের একফুট বাইরে থেকে হাওয়ায় ডানদিকে বাঁক খেয়ে ... ...
শাম্ব পাল আর সেন্টু সেন-কে দিয়ে বোলিং ওপেন করাল প্রত্যয়। বোর্ডে অল্প রান। মৈনাক উইকেট নেওয়া বোলার হলেও ওকে প্রথমে আনল না প্রত্যয় কারন শাম্ব আর সেন্টু একদম জায়গায় বল রাখে। মারার জায়গা দেয় না ব্যাটসম্যানকে। তাছাড়া বল একটু পুরনো হলে হয়ত মৈনাক রিভার্স সুয়িং পেতে পারে এই হিসেবও হয়ত মাথায় ছিল।দীপশিখাকে কিন্তু প্রত্যয়ের এই সিদ্ধান্তে বেশ হতাশ দেখাচ্ছিল। সে বাঁশের একটা খুঁটি ধরে একটা পা আড়আড়ি করে দাঁড়িয়ে রইল। ... ...
অশোকতরু মুখোপাধ্যায় হুইলচেয়ারে ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তার ছায়াসঙ্গী হল বিনোদ। বিনোদবিহারি জাতে বিহারি। সে-ই অশোকতরুবাবুর অন্ধের যষ্ঠি। রান্নাবান্না, বাজারহাট থেকে শুরু করে অশোকতরুবাবুর যাবতীয় পরিচর্যা সবই করে সে। কাজের একজন মাসি আছে অবশ্য। বাসন মাজা, ঘর মোছা, জামাকাপড় কাচার জন্য।অশোকতরুবাবু রুরকি আই আই টি -র অধ্যাপক ছিলেন মেটালার্জি বিভাগে। ষাট বছরে রিটায়ারমেন্ট। তার পরে বছর তিনেক এক্সটেনশান। কিন্তু স্বাভাবিক মেয়াদই তিনি শেষ করতে পারেননি। ... ...
#বিচকে_২ পরদিন সকালে বাজারে বেছে বেছে চারাপোনা গামলায় তুলছিলেন তপনজ্যোতি দত্ত ।একশো ষাট টাকা কেজি। এর কম দামে খাওয়ার যোগ্য মাছ বাজারে পাওয়া গেল না। বাড়িতে তিনটে লোক। তপন-কনিকা দম্পতি ছাড়া তপনবাবুর এক ভাগ্নে তাদের সঙ্গেই থাকে। হাসনাবাদের ওদিকে বাড়ি। কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইংরীজিতে অনার্স পড়ে। মামার খুব ভক্ত এবং মামীর খুব প্রিয়পাত্র। কনিকার মতে ‘খুব করিতকর্মা ছেলে। মামার মতো লগবগে নয়।’ ... ...
ছেলেটা কালোকোলো বেঁটেখাটো। ওর বয়সের অন্য ছেলেদের তুলনায় মাথায় বেশ নীচু । ওর মা সন্ধ্যার মতে ছেলে বারো বছরে পড়েছে। লোকজন বলে, বড় হলে মারাদোনার হাইটেরই হবে। তার বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। সে যাই হোক, রায় পাড়ার মাঠের চারিধারে দাঁড়িয়ে যারা ম্যাচটা দেখছিল তারা ওর ড্রিবলিং দেখে থ হয়ে গেল। তপন দত্তের ষাট বছর বয়েস হল। সারা জীবন মাঠে ময়দানে ঘুরে ঘুরে জীবন কাটল বা বলা যায় হেলায় নষ্ট হল। ... ...
(পঞ্চম ও শেষ পর্ব) দিন তো আর বসে থাকে না। মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো চাকায় বেঁধে সে অবিরাম গড়িয়ে চলে। কৌশিক দত্ত আর মনোময় মৈত্র একদিন দুপুরবেলার দিকে শংকরকে আই এফ এ অফিসে নিয়ে গিয়ে সইসাবুদ করিয়ে আনল।নিয়মকানুন না মেনে উপায় নেই। মেঘলা দিন, বাদুলে হাওয়া বইছে থেকে থেকে। সারা ময়দান জুড়ে পড়েছে মেঘের ছায়া। ধর্মতলা আর ময়দানের আশেপাশে এলেই নানা সুরভিত স্মৃতির হাওয়ায় দোল খায় শংকরের মন। ... ...
সৌভাগ্যক্রমে এম আর আই রিপোর্টে তেমন গন্ডগোলের কিছু পাওয়া গেল না। ডান হাঁটুর পাশের দিকে লিগামেন্টে কিছুটা স্ফীতি আছে। ডক্টর মিত্র তিন চার রকম ওষুধ দিয়েছেন। অন্তত তিনমাস খেতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল হাঁটুর ব্যায়াম। সেটা নিয়মিত করে যেতে হবে। সিজন শুরুর আগে অন্তত একমাস বল পায়ে মাঠে না নামাই ভাল।সেটা অবশ্য কার্যত অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। অপারেশনের কোন প্রয়োজন নেই এই মুহুর্তে। পরে সুবিধেমতো লিগামেন্টের একটা ছোট সার্জারি করে নিতে পারলে ভাল হয়। ... ...
সবুজের সঙ্গে বাড়ি ফিরে শংকর দেখল কৌশিক দত্ত এবং আর এক ভদ্রলোক বসে আছে। দ্বিতীয় ভদ্রলোককে শংকর চেনে না। কৌশিকবাবু বললেন, ‘আরে ....এই তো এসে গেছে। এই দেখ কেমন ঘাঁটি গেড়ে বসে আছি। মাঠ থেকে সোজা এখানে আসছি। গরজ বড় বালাই ....’। শংকর বলল, ‘হ্যাঁ ... ভাল করেছেন। মাঠে দেখেছি আপনাদের।’ ... ...
মাঠে মেডিক্যাল টিম বলতে তেমন কিছু নেই। এই ধরণের ম্যাচে থাকেও না। দলের অবৈতনিক ফিজিক্যাল ট্রেনার এবং দুজন রিজার্ভ বেঞ্চের প্লেয়ার মাঠে ঢুকে যতটা সম্ভব শুশ্রূষা করার চেষ্টা করতে লাগল। উৎকন্ঠায় অস্থির হয়ে ক্লাব সভাপতি প্রদীপ ঘোষ মাঠে ঢুকে গেলেন। কিন্তু রেফারির নির্দেশ মেনে তাকে আবার বাইরে চলে যেতে হল। একটানা ঠান্ডা পেন কিলার স্প্রে করতে লাগল ট্রেনার প্রত্যুষ সাহা। একটা পেন কিলার ট্যাবলেটও খাওয়াল শংকরকে। বরফ ঠান্ডা স্প্রের প্রভাবে শংকরের ব্যথা অনেকটা নরম হয়ে আসল। ... ...
কৌশিক দত্ত মনোময় মৈত্রকে কনুইয়ের হাল্কা ঠেলা মেরে বললেন, ‘প্লেয়ারটার স্পট জাম্প দেখেছ? মনে হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো স্টপারে খেলছে। এয়ারে এখন পর্যন্ত একবারও বিট হয়নি।’ — ‘হ্যাঁ সেটাই দেখছি ..... গ্রাউন্ডেও দারুণ স্ট্রং। দুর্দান্ত অ্যান্টিসিপেশান .... একটাও ট্যাকল মিস হচ্ছে না.... ... ...