এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপর বাংলা

  • বাংলাদেশ অভ্যুত্থান ও পশ্চিমবঙ্গঃ ঠিক কি ঘটছে দু’পার বাংলায়?

    স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
    অপর বাংলা | ১১ আগস্ট ২০২৪ | ২৭১৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৪ (৮ জন)

  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়

    বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব যে ‘হয় আওয়ামী নয় বিএনপি-জামাত’ এই দ্বি-মেরু চক্কর থেকে দেশকে বের করতে চাইছেন, তা পশ্চিম বাংলার অধিকাংশের কাছেই স্পষ্ট নয়

    গত ৫-ই অগাস্ট বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর মুর্তি ভাঙ্গার দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দা ও সামাজিক মাধ্যমে দেখার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাংশের মানুষের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে।

    মুজিব-কন্যা আবার দেশছাড়া, বঙ্গবন্ধুর মুর্তির ঘাড়ে উঠে মাথায় প্রস্রাব করছে কেউ, মারছে চটি দিয়ে, বুলডোজার গর্দান নামিয়ে দিচ্ছে কোনও মুর্তির, জ্বলছে ধানমন্ডির সেই বাড়ি যেখানে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে – প্রতিটা ছবি যেন বুকে শেল বেঁধায়। এ হামলা বঙ্গবন্ধুর ওপর হামলা, এ হামলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর হামলা, যে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে পশ্চিমবাংলার বাঙালির বুক গর্বে ভরে ওঠে। যে মুজিবের “আমরা যখন মরতে শিখেছি, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না” পশ্চিম বাংলার বাঙালি আজও ভোলেনি। যে মুজিব শুধু দেশনায়ক নন, শহীদও।

    পশ্চিম পাড়ের বাঙালি কিন্তু এই কথা জানেননি যে ২০২৪-এর জুলাই-অগাস্ট ছাত্র আন্দোলনেও “আমরা যখন মরতে শিখেছি, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না” চেতনা নিয়েই বুলেটের মুখোমুখি হয়েছিল হাজার হাজার তরুণী-তরুণ। তাঁদের অনেকেই অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতার লাইন থেকেঃ “রক্ত দেখলে বাড়ছে সাহস।”

    প্রশ্ন হল, কেন ৫-ই অগাস্টের আগে বাংলাদেশ নিয়ে এই উদ্বেগ জন্মায়নি, যখন মুজিব-তনয়ার নির্দেশে মাত্র তিন সপ্তাহে তিনশ’র ওপর মানুষের মৃত্যু হয়, যার অধিকাংশই ছাত্র ও তরুণ? কেন কেউ জানলনা যে গণহত্যায় মেতে উঠেছিলেন শেখ হাসিনা?

    কেন পশ্চিমবঙ্গে ভাইরাল হয়নি আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে গুলি খাওয়ার ছবি? প্যাকেট ভর্তি জলের বোতল হাতে ঘুরতে থাকা মীর মুগ্ধ, ‘কারো পানি লাগবে, পানি?’ জিজ্ঞেস করতে করতে যে পুলিশের গুলিতে মরে গেল, তাকে কেন চিনলনা পশ্চিম বাংলা? কেন জানলনা সেই রিকশাওয়ালার কথা যে গুলিতে মৃতপ্রায় কোনও যুবককে রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখেন এ তাঁরই ছেলে? কেন জানলনা যে মারা গেছে শুধু তরুণ-তরুণী নয়, কিশোর কিশোরীও? কেন জানলনা যে দলে দলে অভিভাবকরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন পুলিশের মুখোমুখি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য?

    এর একাধীক উত্তর আছে, আমি আপাতত শুধু প্রধান দুটি কারনই উল্লেখ করছিঃ

    প্রথম কারণ, ভারত ও পশ্চিম বাংলার মূল ধারার গণমাধ্যম মানুষকে হাসিনার অত্যাচারের কথা জানায়নি। দ্বিতীয়, হাসিনার পদত্যাগের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের চিত্র ও সংবাদে পশ্চিম বাংলায় সামাজিক মাধ্যম ভরিয়ে দেওয়ার মত কোনও সংগঠিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা হাসিনা-পতনের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক শক্তি করছে।

    এই পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গে কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় সাম্প্রদায়িক শক্তি ব্যাপক ভুয়ো সংবাদও প্রচার করে, যথা ব্যাপক হিন্দু নির্যাতনের খবর। ঘটনা তো ঘটেছেই, তার ওপর রং চড়ছে। ক্রিকেটার মাশরাফি মোর্তাজার বাড়িতে হামলার খবর লিটন দাসের বাড়ি হামলার ঘটনা বলে প্রচার করা হয়। পুরনো ছবি ভিডিও ভুল প্রেক্ষিতে ছড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের মুর্তি ভাঙ্গা হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। আওয়ামী লীগের অনেকেই আক্রান্ত হন কিন্তু বেছে বেছে হিন্দু পরিবারগুলির খবরই ভেসে ওঠে।

    এর ফলে, মানুষ হঠাৎ জানতে পারেন যে বাংলাদেশ আবার মুসলিম মৌলবাদীরা দখল করে নিয়েছে, যারা হাসিনাকে তাড়িয়েছে, মুজিবের মুর্তি ভেঙ্গে বাড়ি পুড়িয়েছে, আর এবার হিন্দুদের তাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।

    এই প্রেক্ষিতে তাই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর উল্লেখযোগ্য দিকগুলি উল্লেখ করছি।

    ১) ১৪-ই জুলাই থেকে ৫-ই অগাস্ট এর মধ্যে ছাত্র বিক্ষোভ যে গণবিক্ষোভে পরিণত হল, তা শুধু ওই কয়দিনের ঘটনা প্রবাহের ফল নয়। ২০০৮-এ জনপ্রিয় ভোটে ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা দেশে আর কখনও বিশ্বাসযোগ্য কোন নির্বাচন হতে দেননি। ২০১৩-র নির্বাচন বিরোধীরা বয়কট করে। এরপর ২০১৮-র নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। ফলে বিরোধীরা আবার ২০২৪-এর নির্বাচনও বয়কট করে। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে হাসিনা বিরোধীদের ছাড়াই নির্বাচন করিয়ে নেন। সেই তখন থেকেই বাংলাদেশের একাংশের মানুষ মনে করতেন, হাসিনার পতন একমাত্র গণঅভ্যুত্থানেই সম্ভব, কারণ শান্তিপুর্ণ পথে পরিবর্তনের কোনও সুযোগ তিনি রাখেননি।

    ২) পূর্ব বাংলায় সেকুলার-লিবারাল ও সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী শক্তি ও মতাদর্শের সংঘাতের ইন্তিহাস ১০০ বছরেরও বেশী পুরনো। যদিও কোনও কিছুই পুরিপুরি সাদাকালো নয়, তবু মোটের ওপর ১৯৪৭-এ জিতেছিল তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়, ১৯৭১-এ জিতেছিল তাঁদের সাংস্কৃতিক পরিচয়। এরপর নানান ওলট-পালট হলেও বাংলাদেশ মূলত মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা ও ধর্মীয় পরিচয়ের সংঘাতের আবর্তে ঘুরেছে।

    ৩) ১৯৭৫-এর অগাস্টে সামরিক অভ্যুত্থানে দেশের বাইরে থাকা হাসিনা ও তাঁর বোন রেহানা ছাড়া সপরিবারে মুজিব হত্যার পর মোটামুটি ১৫ বছর কেটেছে একের পর এক সেনা অভ্যুত্থান আর সামরিক শাসনে। এর মধ্যে দুই সেনা শাসক, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নিজেদের রাজনৈতিক দল গড়েন। জিয়া, যিনি নিজেও সেনা অভ্যুত্থানেই নিহত হন, বাংলাদেশ ন্যাশানালিস্ট পার্টি (বিএনপি) গঠন করেছিলেন। এরশাদের প্রতিষ্ঠিত পার্টি হল জাতীয় পার্টি। গত সাড়ে তিন দশকে বাংলাদেশ মূলত আওয়ামী লিগ ও বিএনপি এই দুই মেরুর রাজনীতিই দেখেছে। জাতীয় পার্টি ও নানান বাম দল গুলির উপস্থিতি মূলত পরিপার্শিক।

    ৪) বিএনপি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং রেডিও-তে জয়ের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর শাসন কালেই মুজিব ঘাতকদের কেউ কেউ উঁচু পদ পায় ও কাউকে কাউকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এই অভিযোগ আছে। জিয়ার স্ত্রী, খালেদা জিয়া বিএনপির নেত্রী হিসাবে ১৯৯১-’৯৬ ও ২০০১-’০৬ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শাসন করেন।

    ৫) বিএনপির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতার অভিযোগ আসে মূলত জামায়াতে ইসলামীর সাথে তাঁদের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক জোটের কারণে। জামায়াত নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। রাজাকার ও আল বদরের মত কুখ্যাত ঘাতক বাহিনীর নাম জামায়াতের সাথেই সংশ্লিষ্ট।

    ৬) হাসিনা ১৯৮১-তে দেশে ফিরে আওয়ামী লিগের দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার পর আবার ২০০৮-এ জনপ্রিয় ভোটে ক্ষমতায় ফেরেন। এর পর থেকে বাংলাদেশে আর কোনও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হয়নি।

    ৭) ১৯৭০ ও ‘৮০র দশকেই আরেকটি বড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূল ভিত্তির একটি ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা, যেটি ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান মুছে ফেলেন। এর পর ১৯৮৮ সালে এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন।

    ৮) হাসিনার লড়াই সহজ ছিল না। তাঁকে শুধুই জামাতের মত মৌলবাদী সংগঠন নয়, ২০১৩-১৬ নাগাদ আল কায়দা ও আইসিস-অনুপ্রাণিত একাধীক জঙ্গি গোষ্ঠীর মোকাবিলা করতে হয়েছে। একসময় জামায়াতকে জব্দ করতে তিনি আরেক ধর্মীয় সংগঠন, হেফাজতে ইসলামের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন।

    ৯) কিন্তু সন্ত্রাস ও মৌলবাদ মোকাবিলার নামে তিনি ক্রমশ সমস্ত রকম রাজনৈতিক বিরোধিতার নাম ও নিশান মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। শুরু হয় গুম করে দেওয়া, ‘ক্রস ফায়ার’-এ বা ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা; নানান অভিযোগে জেলে ঢোকানো। ২০১৭-সালে একটি রায়ে সরকারের সমালোচনা করার পর প্রধান বিচারপতি বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে কার্যত দেশ ছাড়া হতে বাধ্য করা হয়। এর পর থেকেই বিচার বিভাগের ওপর ক্রমশ গভীর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে আওয়ামী লিগ। পরে দুর্নীতির দায়ে তাঁর জেলের ব্যবস্থাও করে রাখা হয়।

    ১০) একের পর এক জেলে ঢোকানো হয়েছে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী থেকে রাজনৈতিক বিরোধী — সব ধরণের সমালোচককে। বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করা আইনকরে নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের “মানহানীর” অভিযোগে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা করা বহু ব্যাক্তিকে কুখ্যাত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে জেলে ঢোকানো হয়।

    ১১) হাসিনা শুধু সব বিরোধীদেরই সন্ত্রাসী বা দুর্নীতিবাজ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি, তাঁর আমলেই সৃষ্ট গুমঘর ‘আয়না ঘর’-এ গোপনে স্থান হয়েছে পুলিশ বা সেনা বাহিনীর হাতে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া বিরোধী/সমালোচকদের। তাঁর আমলে পুলিশ, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন – সবই দলদাসে পরিণত হয়। হাসিনার বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা বারংবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে; আন্তর্জাতিক মানবাধীকার সংগঠনগুলি বারবার গলা তুলেছে। কিন্তু হাসিনা চলেছেন নিজের মত।

    ১২) এই পরিস্থিতিতে গত দুই-তিন বছর ধরেই হাসিনার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের পারদ ক্রমেই চড়ছিল। কিন্তু বিরোধীদলগুলিকে তিনি নেতৃত্বশূন্য করে ফেলেছিলেন। হাসিনার বজ্রকঠিন শাসন এড়িয়ে প্রভাবশালী কোনও গণআন্দোলন তাঁরা গড়ে তুলতে পারেননি।

    ১৩) ২০২৪-এর জুলাইতে চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণের বিরোধিতা করে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ-ই তীব্র গতি পেয়ে যায় ১৪ তারিখ হাসিনার একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসম্মানসূচক মন্তব্যে। কোটা-বিরোধী আন্দোলনকারীদের তিনি কার্যত “রাজাকারের বাচ্চা” বলেন। এতেই আগুন জ্বলে। ছাত্র আন্দোলনের মূল কেন্দ্রে যারা ছিলেন, তাঁরা মূলত বাম-ঘেঁষা বা সেকুলার-লিবারাল। নিশ্চয়ই বিএনপির ছাত্র দল বা জামাতের ছাত্র শিবিরের সদস্য-সমর্থকরাও ছিলেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে ছিলনা।

    ১৪) গোটা আন্দোলনপর্ব জুড়ে, রাষ্ট্রশক্তির প্রবল নিপীড়নের মুখেও, একদিকে ছাত্ররা যেমন পিছু হঠেনি, তেমনি তারা বিএনপি বা জামাতের হাতেও আন্দোলনের রাশ যেতে দেননি। এই পরিস্থিতে বিরোধী দল গুলি ঠিক করে চুপচাপ ছাত্র আন্দোলনে কিছু লোক পাঠাতে, যাতে ভিড় বাড়ে। ছাত্ররা হাসিনাকে সরাতে সফল হলে তাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, এরকমটাই তাঁরা আশা করেন।

    ১৫) পুলিশকে ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে দেওয়া যদি হাসিনার বেপরোয়াপনার এক অন্তিম বহিঃপ্রকাশ হয়, তবে কফিনে শেষ পেরেক হল ৪ অগাস্ট সশস্ত্র আওয়ামী লীগ বাহিনীকে পুলিশের সাথে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া। ওই একদিনে একশ’র ওপর মৃত্যু হয়, যার তিন-চতুর্থাংশেরও বেশী হল লীগ কর্মী ও পুলিশের গুলিতে মৃত আন্দোলনকারী; বাকিরা গণপিটুনিতে নিহত পুলিশ ও লীগ কর্মী। ওই দিনের ঘটনাবলী মানুষের সহ্যের সব সীমা ভেঙ্গে দেয়। ৫ তারিখ ছাত্রদের ডাকে জমায়েতের ভিড়ের বহর দেখে সেনা-পুলিশ আর গুলি চালাতে অস্বীকার করায় হাসিনার খেলা সমাপ্ত হয়।

    ১৬) হাসিনা পদত্যাগ করে সটান দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় ছাত্রদের কাছে দুই নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। এক দিকে ফের সেনা শাসনের সম্ভাবনা। আরেকদিকে বিএনপি-জামাত কর্তৃক ক্ষমতা দখল। সেনা-সমর্থনে বিএনপি-জামাত-জাতীয় দলের মিলিজুলি সরকারের সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু ছাত্ররা দৃঢ়তার সাথে এই সব সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করে বলে তারা যেহেতু রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে মাঠে নেমেছে, তারা সেনা শাসন বা অন্য আরেক ধরণের স্বৈরাচারী শাসন মানবে না। তারাই ঠিক করে দেবে অন্তরবর্তীকালীন সরকারের স্বরূপ কি হবে।

    ১৭) সোজা কথায়, যা কেউ ভাবেনি, ছাত্ররা এমন একটা সম্ভাবনা উপস্থিত করল – আওয়ামী লীগ আর বিএনপি-জামাত এই দ্বিমুখীনতার বিরুদ্ধে এক তৃতীয় সম্ভাবনা। তারা ঘোষণা করল, দ্যর্থহীন ভাবে, এক স্বৈরাচারের বিকল্প আরেক স্বৈরাচার নয়। তারা শুধু সরকার বদল নয়, গোটা কাঠামো ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দীর্ঘমেয়াদী বদল চান। মুজিব পরিবার, জিয়া পরিবার, এরশাদ পরিবার – এর বাইরে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলতে চান।

    ১৮) অন্তত ৮ই অগাস্ট পর্যন্ত, যেদিন ছাত্রদের মনোনীত তদারকি সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ যিনি নিজেও হাসিনার রোষের শিকার হয়েছিলেন, নতুন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন, ছাত্ররা সেনা-নিয়ন্ত্রিত সরকার ও বিএনপি-জামাত প্রভাবিত সরকার – দুই সম্ভাবনাকেই আটকে রাখতে পেরেছেন।

    ১৯) এর মধ্যে, ৫ তারিখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে, বাংলাদেশের সব থানা ও রাস্তা কার্যত পুলিশ শূন্য হয়ে যায়। গণপিটুনির শিকার হওয়ার ভয়ে পুলিশকর্মীরা আর থানা বা রাস্তায় থাকতে চান নি। এই সুযোগে কিছু দুষ্কৃতি ও মৌলবাদীরা হামলা চালায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যে, সংখ্যালঘুদের বাড়িতে, উপাসনালয়ে, সুফি মাজারে। টার্গেটের ধরণ দেখে মুসলিম মৌলবাদীদের ছাপই পাওয়া যায়। কিন্তু ছাত্র নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে ঘোষণা করেছেন যারা যারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে/করবে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ, তারা আন্দোলনকে কলঙ্কিত করতে চায়। আজ তারা সরাসরি মুসলিম মৌলবাদীদের নাম নিলেন না। কিন্তু লড়াই জারি রাখতে হলে তাঁদের জামাতের নাম এক দিন না একদিন নিতেই হবে।

    ২০) পুলিশশূন্য দেশে এই ছাত্র নেতৃত্ব বারবার ডাক দিয়েছেন পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গড়ে মন্দির, গির্জা পাহারা দেওয়ার জন্য; রাত জেগে পাহারা দেওয়াও হয়েছে বহু জায়গায়। তারপরও, কোনও সামাজিক উদ্যোগের পক্ষেই পুলিশের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। নৈরাজ্যে যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পাঁচ তারকা হোটেলে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে এক জন বাদে সবাই স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী-আন্দোলনকারী। হোটেল এক দফা ভাংচুর হওয়ার পর এক দল আন্দোলনকারী উৎসাহ বশে হোটেলটি দেখতে বা জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতে উপরের তলাগুলিতে যখন উঠেছে, তখন আরেকদল বিক্ষোভকারী নিচ তলায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুড়ে খাক হয়ে গেছে আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থক, ‘জলের গান’ গানের দলের রাহুল আনন্দের বাড়ি ও অগণন অমুল্য বাদ্যযন্ত্র।

    ২১) হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ও তাঁদের একাংশের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসার প্রচেষ্টা সংবাদ, ছবি ও ভিডিও পশ্চিমবঙ্গে ভাইরাল হতে থাকে। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। ২০১৪-১৫ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মুসলিম মৌলবাদ, জঙ্গি কার্যকলাপের বাড়বাড়ন্তকে হাইলাইট করে পশ্চিম বাংলায় মুসলিম-বিদ্বেষ খুঁচিয়ে তোলার কাজ শুরু করে হিন্দু মৌলবাদী শক্তিগুলি। এরপর ২০১৮-১৯ থেকে মূলত বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক নাগরিকতা আইন (সিএএ) ও প্রস্তাবিত পঞ্জিকরণ কর্মসুচী (এনআরসি)কে সামনে রেখে ধর্মীয় মেরুকরণের কাজ শুরু হয়।

    ২২) ২০২৪-এর অগাস্টে কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, নদীয়া সীমানা পার হয়ে ভারতে ঢোকার লাইনের ছবি ও ভিডিও আবার পশ্চিম বাংলার হিন্দু মৌলবাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। এই জন্যই ছাত্ররা যে স্বৈরাচার-বিরোধী ও মৌলবাদ-বিরোধী এক নতুন সরকার গড়ে তোলার কথা বলেছে, তার দ্রুত বাস্তবায়ন দুই পার বাংলার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। হাসিনা এখন অতীত। ছাত্রদের লড়তে হবে সেনার ক্ষমতা-প্রবণতা ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। এটা ভুললে চলবে না, ওখানকার হিন্দু নির্যাতন দেখিয়ে এখানকার হিন্দু মৌলবাদীরা হাওয়া গরম করবে, আর সেটাকে দেখিয়ে আবার ওখানকার হুজুররা হাওয়া গরম করবে।

    ২৩) জামাতের বিপদ নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব ওয়াকিবহাল বলেই মনে হল। তাদের পছন্দের ইউনূস ঘোর হাসিনা বিরোধী হলেও বিএনপি-জামাতেরও পছন্দের ব্যক্তি নন, যদিও অনেকেই বলছেন, তিনি আমেরিকার বিশ্বস্ত। বাংলাদেশ নিয়ে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অতিতৎপরতা অনেক কন্সপিরেসি থিওরির জন্ম দিচ্ছে। ‘ভারতের কলোনি’ হয়ে ওঠার যে ক্ষোভ অনেক বাংলাদেশীর মনে আছে, তেমনি আগামীতে মার্কিন কলোনি হয়ে ওঠার বিপদের সম্ভাবনাও তাঁরা কেউ কেউ ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছেন।

    ২৪) ছাত্ররা আশাতীত সাফল্য দেখিয়েছে। তার পরেও দৃঢ়তা দেখিয়েছে। স্বৈরাচার না মৌলবাদ, এই প্রশ্নের বাইরে স্বৈরাচার ও মৌলবাদ উভয়কেই দূরে রাখার যে প্রকল্প তারা ঘোষণা করেছে, তার সাফল্যের ওপর শুধু বাংলাদেশ নয়, দুই বাংলার পারষ্পরিক সম্পর্কও নির্ভর করছে। এসবের সাথে তাঁরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেরও বিরোধিতা করতে পারবেন কিনা সেটা অনেক বড় প্রশ্ন হয়ে যায়। কিন্তু তাঁরা যদি ‘৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা আবার ফিরিয়ে আনতে পারেন, সেটাই হবে, আমার মতে, তাঁদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এরকম কোনও উদ্দেশ্যের কথা অবশ্য তাঁরা এখনও ঘোষণা করেননি।

    ২৫) এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আরেকটা কাজ করতে পারেন। যখনই কেউ মুজিব মুর্তি ভাংচুরের প্রসঙ্গ তুলে বলতে আসবে মুসলমানদের দেশ বাংলাদেশ এত খারাপ যে জাতির জনককেও ছাড়ে না, তাঁকে আগে একবার জিজ্ঞেস করে নেবেনঃ “আর ভারতের জাতির জনকের হত্যা বিষয়ে তোমার/আপনার কি মত?” তাঁরা যদি গান্ধী হত্যার তীব্র নিন্দা না করেন, বুঝে যাবেন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত নিয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যাথা নেই; না তাঁরা স্রেফ বাংলাদেশকে ব্যবহার করে এদেশের মাটিতে নিজেদের বিষবৃক্ষের ফসল তুলতে চাইছেন।

    পাঁচ তারিখ হঠাৎ হাসিনা-পতনের পরের প্রশাসনিক শূন্যতার সুযোগে তিন-চার দিন দেশ জুড়ে ব্যাপক নৈরাজ্য চললেও নয় তারিখ থেকে পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হল, সব পক্ষ মাঠে নেমেছে। সংখ্যালঘুরা মাঠে নেমে প্রতিবাদ করছেন, “আমার মাটি ছাড়বো না, দেশটা কারোর বাপের না।” আওয়ামী লীগ রাস্তায় নেমে মিছিল করছে। বিএনপি মিছিল করছে। জামাতের ছাত্র শিবির মাঠে নেমেছে। শিবিরের মোকাবিলায় ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীরা মাঠে নেমেছেন। এই সবাই মাঠে থাকাটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের আভাস দেয়, যা হাসিনা থাকাকালীন ছিল না।

    বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতার এখন উচিৎ, নতুন সরকারকে, নতুন নেতৃত্বকে প্রথম থেকে প্রশ্ন করা, প্রতিটি বিচ্যুতিকে প্রশ্ন করা, প্রথম থেকে চাপে রাখা, যাতে প্রশ্ন করা ও মাঠে নামার অধিকার আর হারাতে না হয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সব ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ – যারা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গুলি বা হামলার শিকার ও যারা ৫ তারিখের পর থেকে মৌলবাদী ও দুষ্কৃতি হানার শিকার। দলমত নির্বিশেষে সব পরিবারের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মধ্যে দিয়েই এক প্রকৃত গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হতে পারে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপর বাংলা | ১১ আগস্ট ২০২৪ | ২৭১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:196c:32e7:778:5634:1232:5476 | ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৩:০৯536993
  • ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে তসলিমা এই মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লেখালেখি করছেন। তখন আমরা তাঁর লেখায় গুরুত্ব দিইনি। বরং তাঁর লেখাকে নিষিদ্ধ করে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়ানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মহাবিপ্লবী মুখ্যমন্ত্রী তসলিমার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তসলিমাকে রাজ্য ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দিয়েছিলেন!
    আজ আমরা তসলিমার লেখার গুরুত্ব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি! 
     
  • দীপ | 2402:3a80:1989:3840:578:5634:1232:5476 | ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৪:৩৭536995
  • আবার একটা কথা মনে করিয়ে দিই। তসলিমার সঙ্গে যা হয়েছে; কোনো সভ্য দেশ হলে ঐ মুখ্যমন্ত্রী ও তার পেটোয়া পুলিশ অফিসারদের ( বর্তমানে এরা মমতার পোষ্য সারমেয়) ঘাড়ধাক্কা দিয়ে জেলে ঢোকানো হতো! 
    তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলেই এই অসভ্যতা ও ঔদ্ধত্য সম্ভব!
  • দীপ | 2402:3a80:198b:f37c:678:5634:1232:5476 | ৩১ আগস্ট ২০২৪ ১১:৪৫537036
  • দাবি এক। দফা এক। বাংলাদেশকে বাঙালিস্তান বানানোর প্রক্রিয়া জোর কদমে শুরু হয়েছে। 
     
    পাকিস্থানের যে উর্দুভাষী শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, লক্ষাধিক ধর্ষিতা রমণীর চোখের জলে একটা বাংলা ভাষী দেশের জন্ম হয়েছিল, যে দেশের মুসলিম মহিলারা পর্দার বাইরে বেরিয়ে মুক্ত আকাশে বিচরণ করতেন, যে দেশে রবীন্দ্রনাথকে প্রাণের কাছে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সেই দেশটার কফিনে প্রতিদিন একটি করে পেরেক পুঁতে দেওয়া হচ্ছে। উল্লসিত পাক পন্থী জামাতের দল। যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার বিরুদ্ধে ছিলেন। তাই তাদের পতাকায় এখনও উর্দু।
     
    ইতিমধ্যেই ভারত বিরোধী, ওই দেশের মুক্ত প্রতিবাদী ব্লগারদের হত্যাকারী মৌলবাদী জঙ্গিদের জেল থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এদের অনেকেই আবার ISIS এর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। স্কুল কলেজের শিক্ষিকাদের প্রতি নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তাদের কর্মক্ষেত্রে আসতে হবে বোরখা, হিজাব বা কাপড়ের ঘোমটার আড়ালে। হ্যাঁ , শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু এবং বৌদ্ধদের জন্যও এটাই নির্দেশ। 
     
    শুধু হাসিনা ঘনিষ্ঠ বা তাঁর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী নন, যে বামপন্থী পুরুষ ও মহিলা নেতা নেত্রীরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিলেন, হাসিনার বিরুদ্ধে ছিলেন আন্দোলনের সময় তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন, ইতিমধ্যে তাদেরও জেলে পাঠানো হয়েছে। প্রায় সকলকে। এরা অনেকেই বৃদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। জেলে পাঠানো হয়েছে বহু মুক্ত মনা সমাজকর্মীকে।
     
    স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের, উপাচার্যদের জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। তোলা হয়েছে গণ পাশের দাবি। যাতে ইউনূস সরকারের সিলমোহর পড়ল বলে! অর্থাৎ বিনা পরীক্ষায় সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়া হবে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চারটি স্বাধীন প্রাইভেট টিভি চ্যানেল। এগুলির মধ্যে অনেকেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ইত্যাদি দেখাত। 
     
    ঢাকার বিখ্যাত আবাহনী ক্রীড়াচক্র ক্লাব ভাঙচুর করা থেকে আরম্ভ করে সব ট্রফি, স্মারক লুঠ করা হয়েছে। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব, যশোর প্রেস ক্লাব, খুলনা প্রেস ক্লাবের সম্পাদকদের বিতাড়িত করা হয়েছে। সংযোগে এরা অধিকাংশ হিন্দু। তীব্র ভারত বিরোধী জিগির তোলা হচ্ছে। বহু সাংবাদিক ঘর ছাড়া। যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন, বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সমস্ত সংবাদ মাধ্যমের পলিসি পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছে। না হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে। হয়েছে। হচ্ছে।
     
    এটাই নতুন বাংলাদেশ। দফা এক। দাবি একের বাঙালিস্থান।
     
    আমাদের এখানে, অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে অনেক সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লবীকে ওই সময় নতুন ভোরের জন্য ভয়ঙ্কর উত্তেজিত, উল্লসিত হতে দেখেছিলাম। এরা যে আদপে মূর্খ সেটা এই ২২ দিনের মধ্যেই প্রমাণিত। এদের প্রতি আমার করুণা হচ্ছে। বয়েসে অনেকে আমার পুত্রসম। একজন তো আবার দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায় বামপন্থার খোঁজে! ক'দিন বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়ালো।
     
    যত সব ছাগল পন্ডিত!
     
    যারা ঢাকার গণভবনে ঢুকে এক ৭৭ বছরের বৃদ্ধা প্রধানমন্ত্রীর (তিনি কতটা দুর্নীতি বা দলতন্ত্র করেছেন, পুলিশি অত্যাচারের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই বিচার নিরপেক্ষ আদালত করবে) অন্তর্বাস নিয়ে পাবলিক শো করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারে, তারা আর যাই হোক মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। ফলে দেশটা তোমার বাপের নাকি চিৎকার করে বাঙালিস্থান হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। 
     
    এত কথা বললাম কেন জানেন? দেশটাকে অন্য চোখে দেখতাম। আমার বাপ ঠাকুর্দার দুই জায়গাতেই বাসস্থান ছিল। কলকাতা এবং তৎকালীন যশোরের সাতক্ষীরা। ওটাকে বলা হত দেশের বাড়ি। কলকাতার বাসা বাড়ি। মুক্তি যুদ্ধের সময় কিছু মানুষ পালিয়ে এসে বনগাঁতে ছিলেন। আমাদের বরানগরের বাড়িতেও ছিলেন দিন কয়েকের জন্য। শুধু হিন্দু নন, তারমধ্যে মুসলিমও ছিলেন। আমার ঠাকুরমাকে খুড়ি মা বলে ডাকতে শুনেছি। বালক বয়েসে নিজের চোখে দেখা। দেশটা স্বাধীন হতে সবাই ফিরে যান।
     
    C@ প্রসূন আচার্য
  • দীপ | 2402:3a80:198b:f37c:678:5634:1232:5476 | ৩১ আগস্ট ২০২৪ ১১:৪৬537037
  • অবশ্য এরপরও ছাগনৃত্য বন্ধ হবেনা!
  • দীপ | 2402:3a80:198b:f37c:678:5634:1232:5476 | ৩১ আগস্ট ২০২৪ ১১:৪৮537038
  • অবশ্য বিপ্লবীরা তো ফারাবীর জন্য নাকের জলে-চোখের জলে একাকার হয়েছে!
  • দীপ | 42.110.168.106 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:৩১537058
  • @guru | 89.147.109.226 | ১৩ জুন ২০২৪ ১৯:৫৭533124
    বাংলাদেশের আবার পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠতে কতটা সময় লাগবে বলে আপনার মনে হয়? কুড়ি বছরের বেশি লাগতে পারে? 
     
    কুড়ি বছর নয়, দুমাসের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে!
  • দীপ | 2402:3a80:196b:d4d8:678:5634:1232:5476 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:২২537116
  • "প্রকৃতিতে ডোয়ার্ফিজম ও জাইগান্টিজম নামে দুটি ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুলো এখানে একটু ব্যাখ্যা করছি:

    বড় প্রাণীরা, যেমন হাতি, বাঘ, সিংহ, এরা যখন কোনো ছোট ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস শুরু করে, তখন বংশপরম্পরায় এদের আকার ছোট হতে থাকে। তাদের শরীর, মগজ, সবই ধীরে ধীরে খর্বাকায় হয়। কারণ বড় শরীর ধারণের জন্য যে-পরিমাণ খাদ্য দরকার, তা ছোট দ্বীপ বা এলাকায় পাওয়া যায় না। ফলে টিকে থাকার তাগিদে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, প্রাণীগুলোর আকার খর্ব হয়ে আসে, যেন কম খাবারে বেশিদিন বাঁচা যায়। বড় অতিকায় প্রাণী তখন পরিণত হয় বেঁটে জন্তুতে। 

    অন্যদিকে ছোট প্রাণীরা, যেমন ইঁদুর, ছুঁচো, টিকটিকি, এগুলো ওই পরিবেশে বংশ পরম্পরায় বড় হতে থাকে। কারণ ছোট দ্বীপে বড় প্রাণীর খাবার কম থাকলেও, ছোট প্রাণীর খাবার থাকে অঢেল। প্রিডেটর বা শিকারী প্রাণীর ভয়ও সেখানে কম। ফলে ছোট প্রাণীগুলো নির্ভয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এতে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, ছোট প্রাণী পরিণত হয় বড় প্রাণীতে। 

    উদাহরণ হিশেবে মাদাগাস্কার, সার্ডিনিয়া, ও মৌরিশাসের কথা বলা যায়। ওখানে ইঁদুর, টিকটিকি, কোমোডো, এসব প্রাণী দানবাকৃতির, কিন্তু হাতি, ছাগল, জলহস্তী, এগুলো খর্বাকৃতির।

    এই যে কোনো এলাকায়, রসদের অভাবে বড় প্রাণীর ছোট হয়ে যাওয়া, এটি হলো ডোয়ার্ফিজম; আর রসদের প্রাচুর্যে, ছোট প্রাণীর বড় হয়ে যাওয়া, এটি হলো জাইগান্টিজম।

    আমি ভেবে দেখেছি, ইভোলিউশোনারি বায়োলোজির এ চমৎকার ধারণাটি সংস্কৃতি, দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, এগুলোতেও প্রয়োগ করা যায়। গভীর চোখে তাকালে দেখতে পাই, জাইগান্টিজম ও ডোয়ার্ফিজম, প্রাণিজগতের মতো সমাজেও প্রতিদিন ঘটে চলছে। 

    কোনো এলাকায় মহৎ সাহিত্য, মহৎ দর্শন, মহৎ শিল্পকলা, মহৎ বৈজ্ঞানিক চিন্তা, উঁচু রাজনীতিক ভাবনা, এগুলোর গ্রাহক যদি কমে যায়, বা এপ্রিশিয়েশন উধাও হয়ে যায়, তাহলে ওই এলাকায় প্রতিভাবান মহৎ মানুষের সংখ্যা, ধীরে ধীরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, কমতে থাকে। ফলে যা কিছু উঁচু ও মহৎ, তার আকার ও প্রভাব আস্তে আস্তে বেঁটে ও খর্বাকায় হতে শুরু করে। অর্থাৎ হাই-আর্ট ও হাই-কালচার পর্যবসিত হয় নিম্নমানের মেঠো-শিল্পকলা ও মেঠো-সংস্কৃতিতে। উঁচু সভ্যতা ক্ষয় হয়ে রূপ ধারণ করে বামন-সভ্যতার।

    সংস্কৃতির রসদ ও খাদ্য মূলত সমাজের বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের কর্মকাণ্ডেই সংস্কৃতি বেঁচে থাকে। তাদের রুচির ওপরই দর্শন, শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, এগুলোর বিকাশ ও বিস্তার নির্ভর করে। উঁচু সাহিত্য, উঁচু দর্শন, উঁচু শিল্পকলার জন্য দায়ী মানুষের উঁচু রুচিবোধ। সমাজে মানুষের গড় রুচিবোধ নিচে নেমে গেলে, হাই-আর্ট ও হাই-থট এপ্রিশিয়েট করার মতো মগজ মানুষের মাথা থেকে হারিয়ে গেলে, সেখানে বিকাশ ঘটে বেঁটে সাহিত্য, বেঁটে দর্শন, বেঁটে বিজ্ঞান, ও বেঁটে শিল্পকলার। গৌণ বিষয়াদি তখন বিরাজ করতে থাকে মুখ্য রূপে। বেঁটে সংস্কৃতিরা পায় উঁচু সংস্কৃতির মর্যাদা। 

    সংস্কৃতি কী? লর্ড রাগলান বলতেন— মানুষ যা করে, আর বানর যা করে না, তাই সংস্কৃতি। কিন্তু বাংলাদেশে মনে হচ্ছে, বানরদের কাজকর্মই সংস্কৃতির প্রধান শাখা। লোকজন এখানে শরীর ধারণ করছে মানুষের, আর মন ধারণ করছে বানরের (বাস্তবের সুবোধ বানর নয়, কল্পনার নির্বোধ বানর; কারণ আমরা যা করছি, তা জঙ্গলের বানর করে না)। গোশালাকে বলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়, স্ক্রিপচারকে ডাকছি বিজ্ঞান, পাগলামোকে বলছি রাজনীতি। অ্যারিস্টোটল এ সমাজে বড় হলে তাঁকে ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে হতো। বার্ট্রান্ড রাসেলকে দেখা যেতো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোনো আহাম্মকী পদে। রবীন্দ্রনাথকে খাতির রাখতে হতো শাহবাগ থানার ওসির সাথে। অর্থাৎ কালচারাল ডোয়ার্ফিজম এখানে প্রকট। প্রতিভাবানরা টিকে থাকার তাগিদে প্রতিভা কমিয়ে ফেলছে। উঁচু সংস্কৃতি কদর হারিয়ে পরিণত হচ্ছে বেঁটে সংস্কৃতিতে। আর এই ফাঁকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিসিএস গাইড, স্পোকেন ইংলিশ, জায়েদ খান, হিরো আলম, আহমদুল্লাহ, আয়মান সাদিক, সেলেব্রিটিজম, মোটিভেশোনাল স্পিচ, বিটিএস, এসব। এ জঙ্গলে এগুলোই এখন মেইনস্ট্রিম জাইগান্টিক এনিম্যাল।"

    .

    —মহিউদ্দিন মোহাম্মদ 
    পৃষ্ঠা ১৩-১৫, বই: মূর্তিভাঙা প্রকল্প
  • দীপ | 2401:4900:16c7:4431:3378:443b:fbda:9e21 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:০৬537257
  • বাংলাদেশ নামটি নাকি বদলে ফেলতে চাইছে ক্ষুদে জিহাদিরা? বেশ তো। অনেক আগেই জিহাদিস্তান নামটি প্রস্তাব করেছি। অবশ্য পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে যেতে চাইলে পূর্ব পাকিস্তান নামটিতে ফিরে যাওয়া যায়। যৌক্তিকও বটে। কারণ ক্ষুদে জিহাদিরা তো অস্বীকার করে ১৯৭১ সাল নামে কোনও সাল ক্যালেণ্ডারে ছিল বলে, অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধ নামে কোনও যুদ্ধ বাংলায় ঘটেছে বলে, স্বীকার করে না পাকিস্তানি আর্মি লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে যে হত্যা করেছিল, মেয়েদের যে ধর্ষণ করেছিল, সে কথা। দুই ব্যর্থ রাষ্ট্র অর্ধশত বছর পর একত্র হবে, দুই ধর্ম ভাই অর্ধশত বছর পর মিলিত হবে। এই ব্যাপারটি চমৎকার। কিন্তু আমার তো মনে হয় না পাকিস্তান বাংলাদেশকে গ্রহণ করবে। পাকিস্তান তো মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই বলে স্লোগান দেয় না? পাকিস্তান কাছে পেতে চায় ধনী দেশকে, উন্নত দেশকে, সভ্য দেশকে। আমেরিকা ইউরোপের সাহায্য চাইতে গিয়ে বলে, খ্রিস্টান মুসলমান ভাই ভাই, চীনের অনুকম্পা চাইতে গিয়ে বলে, নাস্তিক মুসলমান ভাই ভাই। বাংলাদেশের লোকেরা যদি ফ্রি ভিসার আনন্দে পাকিস্তানে বেড়াতে যায়, আমার তো মনে হয় এদের দেখে সৌদি ভাইদের মতোই পাকিস্তানি ভাইরাও মিসকিন বলে গালি দেবে।
    -তসলিমা
  • দীপ | 2402:3a80:196c:2a75:778:5634:1232:5476 | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:২৮537300
  • জাতীয় সংগীত ছাড়া আমার দেশ নিয়ে গর্ব করার বেশি কিছু পাই না আমি । প্যারিসে যখন ছিলাম, ফরাসি বন্ধুদের বলতাম, তোমাদের জাতীয় সংগীত লা মারসেইয়েজ এ কেবল রক্ত নেওয়া আর খুনোখুনির কথা বলা হয়েছে, আমাদের জাতীয় সংগীতে আছে ভালবাসার কথা। আমি বাংলায় গানটি গেয়ে অনুবাদ করে দিতাম। ওরাও মুগ্ধ হতো গানের কথা শুনে। অনেক দেশের জাতীয় সংগীতের কথা ও সুর আমি শুনেছি, কোনওটিই আমার সোনার বাংলার ধারে কাছে আসতে পারে না। 
     
    আজ বেচারা দেশ আমার, জিহাদিদের কবলে। জিহাদিরা রক্ত খুন ইত্যাদি পছন্দ করে। তাদের হৃদয় ঘৃণায় টইটম্বুর। তারা ভালবাসার মূল্য বোঝে না। সে কারণে দেশের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ হয়েছে এমন জাতীয় সংগীত তাদের ভাল লাগে না। ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক মানসিকতা গানটিকে ঘৃণা করে যেহেতু গানের রচয়িতা এবং সুরকার একজন অমুসলিম। 
     
    আহা দুঃখিনী দেশ আমার! দেশের জাতীয় সংগীত কেড়ে নেওয়া দেশের হৃদপিণ্ড কেড়ে নেওয়ার মতো। জিহাদিদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবে আমার দেশ, জানিনা।
     
    লিখলেন তসলিমা।
  • দীপ | 2402:3a80:196c:2a75:778:5634:1232:5476 | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:৩২537302
  • এখানেও ঠিক কয়েকজন এইরকম যুক্তি দিতো। দেশকে মাতৃরূপে বন্দনা করলে তাদের চর্মরোগ শুরু হতো!
    এই ছাগুসহচরেরা ভুলে গেছে  ভারতভাগ্যবিধাতার চতুর্থ স্তবকে ভারতভাগ্যবিধাতা মাতৃরূপে উদ্ভাসিত!
     
    সাধে কি বলে, রামের পাঁঠা, বামের পাঁঠা; তফাৎ শুধু একটা ফুটকির!
  • দীপ | 2402:3a80:1989:3095:578:5634:1232:5476 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১৮537400
  • ছাগু মাকু দুই ভাই ,
    একসাথে নাদে তাই।
  • দীপ | 2402:3a80:1989:c7e7:578:5634:1232:5476 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০৭537414
  • ছাগু থামবে না!
     
     
     
  • দীপ | 2402:3a80:1989:b1f6:578:5634:1232:5476 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৩537431
  • বাংলাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে ইসলামি গানের জলসা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার হৃদয় মাঝে কাবা আর নয়নে মদিনা। আল্লাহু আল্লাহু। মা আমিনা। ইত্যাদি। এর পর ওয়াজ মাহফিল হবে হপ্তায় হপ্তায়। ওয়াজে নারীর বিরুদ্ধে, হিন্দুর বিরুদ্ধে ঘেন্না ছেটানো হবে। এরপর বোরখা না পরলে মেয়েদের রাস্তাঘাটে পেটানো হবে। এরপর হিন্দু দেখলে নবীর নিন্দে করেছে অভিযোগ করে পুলিশে দেওয়া হবে। রাজাকারের বাচ্চারা, জামায়াতের বাচ্চারা, হিজবুত তাহরীরের বাচ্চারা, হরকাতুল জিহাদের বাচ্চারা, হেফাজতির বাচ্চারা, জিহাদির বাচ্চারা, ইসলামী সন্ত্রাসীর বাচ্চারা, আইসিসের বাচ্চারা, আল কায়দার বাচ্চারা সব এক হয়ে হাতে হাত রেখে দেশকে জাহান্নাম বানাবার পাঁয়তারা করছে। ছাত্ররা যারা পুলিশ খুন করেছে, তাদের মাথায় মুকুট পরানো হচ্ছে। খুনী হিসেবে এদের কেরিয়ার শুরু হয়ে গেল। আগে মহল্লায় ডাকাত এলে মানুষ যেমন ভয়ে কাঁপতো, এখন শিক্ষার্থীরা এলে মানুষ ভয়ে কাঁপে। শিক্ষার্থীর সমার্থক শব্দ এখন হেনস্থাকারী, দুস্কৃতিকারী, দুর্বৃত্ত, খুনী। কী পবিত্র শব্দটিকে এরা অপবিত্র করলো! 
     
    -তসলিমা
  • দীপ | 2402:3a80:198b:2957:678:5634:1232:5476 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৭537478
  • আসলে মবোক্রেসি। নকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভেতরে জিহাদি। বাইরে ছাত্র।এটিই সত্যিকার চিত্র। হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে মাদ্রাসার ছাত্র, এ অনেকটা কিশোরীকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য জাত-ধর্ষককে বসানো হয়েছে। হিন্দুদের বাড়িঘর, গুদামঘর, দোকানপাট ইত্যাদি আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হচ্ছে। চাকরি থেকে জোর করে হিন্দুদের পদত্যাগ করানো হচ্ছে। বাড়িতে চিঠি পাঠানো হচ্ছে, বৌ বা মেয়েকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে দেশ ছাড়ার জন্য, নয়তো প্রাণে মেরে ফেলা হবে। আওয়ামী লীগ করিস, কোরান অবমাননা করেছিস ইত্যাদ অভিযোগ এনে হিন্দুদের মেরে ফেলা হচ্ছে। হিন্দুরা কার কাছে বিচার চাইবে? দেশে কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেই বললেই চলে। থানায় পুলিশ কম অথবা নেই, অস্ত্র লুঠ করে নিয়েছে জিহাদিরা,পুলিশ ''শিক্ষার্থী''দের ভয়ে এখনও কাঁপে। 
     
    এই সময় ভীত সন্ত্রস্থ হিন্দু প্রাণ বাঁচানোর জন্য দেশ থেকে পালাতে চাইছে। গ্রামের গরিব হিন্দুদের ক্ষমতা নেই ভিসা পাসপোর্ট করার। তারা রাতের অন্ধকারে কাঁটাতার ডিঙ্গোতে চেষ্টা করে। ওই চেষ্টা করার সময় সীমান্ত প্রহরীর গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়। সেদিন বিএসএফের গুলিতে কিশোরী ঝর্ণা দাসের মৃত্যু হলো, আজ ঠাকুরগাঁও সীমান্তে জয়ন্ত কুমার সিংহের মৃত্যু হলো। বিএসএফ কি গুলি করা বন্ধ করতে পারে না? হয় মানবিক কারণে হিন্দুদের ভারতে ঢুকতে দিক, একান্তই অপারগ হলে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিক। মানুষগুলোকে বাঁচতে দিক।
     
    -তসলিমা
  • দীপ | 42.110.165.27 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩537495
  • "ভারতে যাঁর জন্ম, ভারতেই বেড়ে উঠা। হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছে। অজস্র শ্যামা সংগীত রচনাকারী। হিন্দুয়ানী মিথ ছাড়া কবিতাই লিখতে পারে নাই। সংস্কৃত ও পৌরাণিক শব্দে টইটুম্বুর তার কবিতা।
    এমন একজন কবি তারপরও শারীরিকভাবে অসুস্থ কবিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে এনে জাতীয় কবি করাটা একদমই অযৌক্তিক। 
    আমি চাই জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় কবিকেও পাল্টানো হোক৷ কারণ যার জন্মই এ দেশে না, সে কেনো জাতীয় কবি হবে বাংলাদেশের!! কেনো?  
    এদেশে কি কবির আকাল পড়ছে নাকি!!"
     
    রবীন্দ্রনাথের পর নজরুলের শ্রাদ্ধ!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন