এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বি ই কলেজবেলা

    Mridha
    অন্যান্য | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১৯৪৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PM | 86.96.228.84 | ১৬ অক্টোবর ২০১১ ১৭:৩৯460664
  • bb জানি ... মজা করছিলম
  • Fevi | 80.219.210.233 | ১৬ অক্টোবর ২০১১ ২০:২৩460665
  • গানটা কিন্তু যাদবপুর ক্যাম্পাস নিয়ে লেখা। :-)
  • Lama | 117.194.224.116 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২০:২৪460666
  • বি ই কলেজের একটা ফেসবুক ফোরামে আমাদের বন্ধু পাঁচু আমাকে উস্কেছিল কলেজ নিয়ে একটু স্মৃতিচারণ করতে। সেই হুজুগে নিচের লেখাটা লিখেছিলাম। পড়লে আমার ইমেজটা একটু আধটু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জেনেও এখানে কপি পেস্ট করার লোভ সামলানো গেল না। স্বভাববিরুদ্ধভাবে কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছি, কারণ ঠিকঠাক বাংলা প্রতিশব্দগুলো লিখে ঠিক যেন বোঝাতে পারছিলাম না।
    *************************************************************

    বি ই কলেজের দেড়শো বছরের ইতিহাসে আমিই সম্ভবত: একমাত্র ব্যক্তি যার কলেজ জীবনের অর্ধেক কেটেছে কলকাতা ইউনিভার্সিটির দেখভালে আর বাকি অর্ধেক বি ই কলেজ ডিমড ইউনিভার্সিটির তঙ্কÄ¡বধানে। এর ফলে, কলেজ থেকে পাশ করার সময় একটা আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। দুই ইউনিভার্সিটির কেউই আমাকে ডিগ্রী দেবার গৌরবটা ছাড়তে রাজী হচ্ছিল না। তার ফলে, আমার আদৌ ইঞ্জিনিয়ার হওয়া হবে কিনা, সেই ব্যাপারটাই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

    সেই পর্বে পরে আসছি- আপাতত: একটু ফ্ল্যাশব্যাক।

    আমি যখন হোস্টেলে প্রথম এলাম, তখন ছিলাম একেবারে কপিবুক ভালো ছেলে- পাট পাট করে চুল আঁচড়ানো, কস্মিনকালেও দাড়িগোঁফ কামাই না, সাত চড়ে রা নেই মুখে। বিড়ি সিগারেট এর আগে লুকিয়ে চুরিয়ে দু একটা খেয়েছি, কিন্তু প্রকাশ্যে তখনো খাই না।

    হোস্টেলের প্রথম দিন থেকেই (ঘটনাচক্রে সেদিন আমার জন্মদিন ছিল- সেইজন্য ১৯৯১ এর ১৮ই আগস্ট দিনটাকে আমি নবজন্ম বলে মনে করি) জনগনের নজরে পড়লাম। বিভিন্ন কারণে- আমার ত্রিপুরা ঘেঁষা বিচিত্র অ্যাকসেন্ট, আমার পঁয়ত্রিশ কিলো ওজনের খ্যাংরাকাঠির মাথায় আলুর দম মার্কা আনুপম মূরতি, সর্বোপরি আমার কার্টুন আঁকার ঝোঁক (দু তিন সেকেন্ডে সম্রাট অশোক থেকে জ্যোতিবাবু- সবার মুখ নেমে যেত)।

    জনপ্রিয়তাটা পছন্দ হয়ে গেল। দু ধরনের জনতারই কাছের লোক হয়ে গেলাম- এক, আমার মতো গোবেচারা ছেলেপুলে, দুই মস্তিবাজ, নেশাখোর, হিংস্র জনগন।

    লোকজনের মুখে “ক্রিয়েটিভ”, “ক্রিয়েটিভ” শুনতে শুনতে বাড় খেয়ে গেলাম। কোন না কোন তথাকথিত “ক্রিয়েটিভ” কাজ করে জনতাকে চমকে দেওয়াটাই ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়াল। এই সময় অনেক বিচিত্র পরীক্ষানিরীক্ষা করেছি। তার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক-

    সিগারেটের পাউচের লিফে কবিতা লিখে সেটা দিয়ে সিগারেট বানিয়ে খাওয়া (খেয়ে নেবার পরেও যদি কবিতার লাইনগুলো মনে থাকে তাহলে সেই কবিতাটা দাঁড়িয়েছে বলে ধরা যেতে পারে)

    এই তালিকার কোনো শেষ নেই।

    এদিকে নেশাখোর, বাওয়ালবাজ জনতার কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে মাঝে মাঝে মদের গ্লাসে দু এক চুমুক, কখনোসখনো গাঁজার কল্কেয় দু এক টান- এগুলো চলতে লাগল। তবে হ্যাঁ, মদ গাঁজা সব চেখে দেখেছি কয়েকবার, কিন্তু কখনৈ সেই অর্থে মাতাল বা গেঁজেল ছিলাম না।

    স্কুল জীবনে ভালো ভালো রেজাল্ট করাটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কলেজে এসে মনে হল ভালো পড়াশোনা করে করে মা বাবার উচ্চাশা বাড়িয়ে দিয়েছি। এবার এক্সপেকটেশনটা একটু নীচুতেই সেট করা উচিৎ। পড়াশোনায় ঢিলে দিয়ে দিলাম। আবার এদিকে এরকম কনফি ছিল যে পরীক্ষার আগে তিন দিন পড়েই পাস মার্ক নামিয়ে দেব। তাছাড়া সেমিস্টার সিস্টেমের আগে শুধু থার্ড আর ফোর্থ ইয়ারের মার্ক্স দিয়েই বি ই-র ফার্স্ট ক্লাস পাওয়াটার ফয়সলা হত (কে যেন এই ফান্ডাটা ফার্স্ট ইয়ারের শুরুতেই আমাকে দিয়েছিল)। সুতরাং প্ল্যানটা এইরকম হল- প্রথম দু বছর মস্তি করে নিয়ে শেষ দু বছর পড়াশোনা করব। আর তখনো পর্যন্ত মাইনিঙে কিছু কিছু ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ হচ্ছিল। ফার্স্ট ইয়ারের শেষ মাথায় এসে “বখাটে” বলতে যা বোঝায় আমি ঠিক তাই- ক্লাস মায়া, পরীক্ষা কাটানো, রাত জেগে ভাট, ঝর্ণায় নাইট শো- সর্বগুণে গুণান্বিত। শুধু মেয়েদের পেছনে লাগাটা শিখে উঠতে পারি নি (শুধুমাত্র “মেয়ে” বলেই পেছনে লাগতে আর আওয়াজ দিতে হবে কেন সেই প্রশ্নের উত্তর কখনো পাই নি বলে), আর খুব রেগে না গেলে কাঁচা খিস্তি দেওয়ার অভ্যেসটাও হয় নি (এখনো দিই না)

    যাই হোক, পড়াশোনা না করলেও দু একটা ক্লাস টেস্টে ভালো নাম্বার পেয়ে আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেল (হঠাৎ মনে পড়ে গেল- ড্রয়িংঅএ একশোতে একশো পেয়ে খুব পুলকিত হয়েছিলাম)। কিন্তু পরীক্ষার তিন দিন আগে যখন পড়তে বসলাম (সেটাই ছিল প্ল্যান) তখন দেখলাম পড়াশোনার অভ্যেসটাই চলে গেছে। বিন্দুমাত্র না পড়ে বি ই পার্ট ওয়ান দিলাম। ফলে যা হবার তাই হল।

    ঠিক করলাম ভালোভাবে পড়াশোনা না করে মা বাবার সামনে মুখ দেখাব না। পূজোর ছুটিতে সবাই যখন বাড়ি গেল তখন আমি ডিপার্টমেন্টের হেডকে অনুরোধ করলাম আমাকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে (মাইনিঙে প্রতি বছর গরম আর পূজোর ছুটিতে ট্রেনিং হত, কিন্তু আমি তখন দ্বিতীয়বার ফার্স্ট ইয়ার- স্বাভাবিকভাবে আমার ট্রেনিঙে যাবার কথা নয়। কিন্তু বাড়িতে দেখানোর মুখ নেই) চলে গেলাম বালাঘাট (তখন মধ্যপ্রদেশ ছিল, এখন বোধ হয় ছত্তিসগঢ়), ম্যাঙ্গানিজ মাইনস। দু সপ্তাহ সেখানে থাকার পর ম্যালেরিয়া হল। এদিকে বাড়িতে কেউ আমার খোঁজ পাচ্ছিল না- কাউকে জানিয়ে যাই নি। আর পূজোর ছুটিতে ডিপার্টমেন্ট বন্ধ বলে কলেজে খবর নেওয়াও সম্ভব নয়। কম্পজ্বর নিয়ে ভারবেলি গ্রামের হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আছি, এই অবস্থায় একদিন একটা জীপে করে চারজন পুলিস এসে আমাকে বলল তাদের সঙ্গে যেতে হবে।

    ভারবেলির পুলিস ফাঁড়িতে ওয়্যারলেস সেটের সামনে বসিয়ে বলল “বাত করো”। আমাকে স্তম্ভিত করে হেডফোনে আমার বাবার গলা বলল “এরা তোকে গাড়ি করে নাগপুর পৌঁছে দেবে। আমি নাগপুরে আছি।” নাগপুর গেলাম। বাবার কাছে জানলাম রীতিমত থানাপুলিসের সাহায্য নিয়ে আমাকে খুঁজে বার করা হয়েছে।

    তো, মা বাবার কাছে সেই মুখ দেখাতেই হল। খুব মুষড়ে পড়লাম। জ্বর নিয়ে বেশ কিছুদিন বাড়িতে বিছানায় পড়ে রইলাম। যতদিন রইলাম, পালে পালে আত্মীয়স্বজন এসে বি ই কলেজ ছেড়ে আর্টস টার্টস কিছু একটা নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি কোনো একটা কলেজে পড়ার জন্য মগজ ধোলাই এর চেষ্টা করে গেল। আমিও গোঁ ধরে রইলাম, শেষ না দেখে ছাড়ব না (এখন বুঝতে পারি, সেটা করে ভুল করি নি)।

    সুতরাং এক শুভদিনে আবার হোস্টেলে ফিরলাম- তখন ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল চলছে এবং অঙ্কের প্রথম পেপারটা ইতিমধ্যে হয়েও গেছে। ফলত: ঐ পেপারটায় সাপ্লি পেতে হল। তবে এবারে সেকেন্ড ইয়ারের উঠেই গেলাম।

    সেকেন্ড ইয়ারের একটা সময় আবিষ্কার করলাম, আমি আবার সেই পুরনো ছকে ফিরে এসেছি। অর্থাৎ ফার্স্ট/ সেকেন্ড ইয়ার মস্তি আর থার্ড/ফোর্থ ইয়ার পড়াশোনা। আর পড়বি তো পড়, ম্যাথ প্রথম পেপারের সাপ্লি পরীক্ষার কিছুদিন আগে জন্ডিস হয়ে সাপ্লি পরীক্ষা মায়া। অর্থাৎ আরেক বছর নষ্ট।

    শোকের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে ওঠার পর খেয়াল হল- এটা আমার দ্বিতীয়বার ফেল করা। নিয়ম অনুয়ায়ী এবার আমাকে কলেজ থেকে বার করে দেবে। যাকে বলে সি এন আর।

    মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বড় মুখ করে ইঞ্জিনিয়ার হতে এসেছিলাম। ফিরে গিয়ে কি বলব? বাবার রিটায়ার করার এক বছর বাকি। মা বাবা কি ধাক্কাটা সামলাতে পারবে? সামনে শুধু অন্ধকার। একটা একটা করে দিন কেটে যাচ্ছে। কলেজের মুখো আর হচ্ছি না। যতদিন পারি হোস্টেলেই থাকব। তাড়িয়ে দিলে তখন যাব। ততদিনে হোস্টেলই ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। অন্য কোথাও যাবার বা থাকার কথা ভাবতেই পারি না। মা বাবার কাছে ফিরে যাবার প্রশ্নই ওঠে না। হোস্টেল থেকে যখন ঠেলে তাড়াবে তখন যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব। তারপর বাকি জীবনটা পাগল, ভিখিরি বা চোরডাকাত হয়ে কাটিয়ে দেব। এইভাবে সপ্তাহ দুয়েক কাটল। জনগন সকাল সকাল ক্লাসে যায়। আমার ক্লাস বলে কিছু নেই, তাই বি গার্ডেন চলে যাই রোজ। পছন্দসই কোনো গাছ খুঁজে নিয়ে তার তলায় ঘুমিয়ে পড়ি, ঘন্টা দুয়েক পর পিঁপড়ের কামড়ে ঘুম ভাঙ্গে, তখন গিয়ে গঙ্গার ধারে বসি। সন্ধ্যেবেলা ক্যাম্পাসের পথে পথে এলোমেলো ঘুরে বেড়াই –শেষবারের মত এটাই আমার মস্তি করা। রাতের দিকে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। টাকা পয়সা শেষ, খাওয়াদাওয়া বিশেষ জোটে না। মাঝে মাঝে গেস্ট হিসেবে হোস্টেলে কোনো বন্ধুর বদান্যতায় মেসে রাতের খাওয়াটা হয়ে যায়। সৌভাগ্যের বিষয়, খিদে তেষ্টার বোধটাই প্রায় চলে গেছে, তাই বিশেষ কষ্ট হয় না।

    দু সপ্তাহ এইভাবে কাটানোর পর একটা আশার আলো দেখা গেল। সে বছরই হাফইয়ার্লি- অ্যানুয়াল সিস্টেম উঠে গিয়ে সেমিস্টার সিস্টেম হচ্ছিল। সেই “পরিবর্তন” এর তালেগোলে একটা শেষ সুয়োগ পেয়ে গেলাম। এক বছর পর আমাকে এক্সটার্নাল ক্যান্ডিডেট হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে সাপ্লিটা ক্লিয়ার করতে হবে। যদি পারি, তাহলে পরের বছর থার্ড ইয়ারে আবার ভর্তি হতে পারব, তখন সেমিস্টার সিস্টেমে পড়তে হবে। (এই বিচিত্র কারিকুলাম এর ফলে কিছু কিছু সাবজেক্ট আমার এ জীবনে পড়াই হয় নি।)

    হঠাৎ মনে হল- আমার ভাগ্য আমাকে একটার পর একটা সুযোগ দিয়ে চলেছে। না হলে, নিশ্চিত সি এন আর হয়ে যাবার বদলে এইরকম একটা সুয়োগ পাচ্ছি কেন? এক একটা সুযোগ পাচ্ছি, আর নিতান্ত অপদার্থ বলেই সেই সুয়োগগুলো হারাচ্ছি। আর নয়।

    এবার আর খারাপ খবরটা বাড়িতে দিলামই না। আগের বারই পড়া ছেড়ে দেবার জন্য নানা রকম চাপ এসেছিল, এবার তো আরও বেশি করে আসবে। একদম চেপে গেলাম। এবার সমস্যা থাকার। আমি এখন এক্সটার্নাল ক্যান্ডিডেট। হোস্টেলে থাকার অধিকার আর নেই। চুপচাপ কাউকে না বলিয়ে ম্যাকের একটা ফাঁকা ঘরে বিছানাপত্র পেতে দিয়ে চাবি ঝুলিয়ে দিলাম, দরজায় নিজের নাম লিখে দিলাম আর পোস্টার টোস্টার দিয়ে উদুম সাজালাম। দেখে মনে হচ্ছিল আমি এই ঘরে যুগের পর যুগ ধরে রয়েছি। প্রথম প্রথম অবাক লাগত, এই ঘর থেকে আমাকে কেউ উচ্ছেদ করছে না কেন? পরে জানতে পেরেছিলাম, অফিসিয়াল রেকর্ডসএ ঐ ঘরটাকে বসবাসের অযোগ্য হিসেবে দেখানো ছিল। সত্যিই ছাদ ফুটো করে জল পড়ত। তবে আমার কোনোদিন অসুবিধা হয় নি- জল পড়লেই ঘরের মাঝখানে একটা খালি বালতি রেখে দিতাম।

    সাপ্লির প্রস্তুতি চলতে লাগল। বি গার্ডেনে এখনো যাই, তবে বইখাতা নিয়ে। গাছতলায় বসে পড়াশোনা করি। বোর হয়ে গেলে ছবি আঁকি। হাতে অঢেল সময়, তাই প্রিবেকা, রেবেকা, হোস্টেলের প্রেজেন্টসগুলো- সব কিছুতেই সব ইভেন্টে পার্টিসিপেট করি। এই করতে করতে কলেজে একটা পরিচিত মুখ হয়ে উঠলাম। এইরকমভাবে একটা দু:খ-আনন্দ মেশানো রঙ্গীন বছর কাটানোর পর সাপ্লি পাশ করে থার্ড ইয়ার শুরু করলাম। পড়াশোনা মন দিয়েই করছিলাম। ভালো ছাত্র হিসেবে প্রফেসরদের কাছে কল্কে পেতেও শুরু করলাম। কিন্তু একটা অপুরনীয় ক্ষতি হয়েই গেল- এখন সেমিস্টার সিস্টেম, বি ই তে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়াটা এখন প্রখম দু বছরের মার্ক্স এর ওপরও নির্ভর করবে, যেটা মোটেই ভাল নয়।

    সে আর কি করা যাবে। মোটের ওপর থার্ড ইয়ারটা ভালই কাটল। উপরি পাওনা, তিনটে ব্যাচের সঙ্গে বিভিন্ন সময় পড়ার ফলে একটা সুবিশাল বন্ধু গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গেল। আরও লক্ষ্য করলাম, জুনিয়ারদের কাছে একটা সম্মান আন্যারকম পাচ্ছি যেটা কোনো দুবার ফেল করা ছেলের পাবার কথা নয়- অন্তত: সাধারণ বুদ্ধি তাই বলে।

    থার্ড ইয়ারে ভালই রেজাল্ট হল। এবার বাড়িতে জানালাম, পাশ করেছি তবে ফোর্থ ইয়ার নয়, থার্ড ইয়ার। স্বস্তির বিষয়, এবারের রেজাল্ট মোটামুটি ভাল দেখে বাড়ি থেকে আর কলেজ ছাড়ার জন্য চাপ দিল না। সে বছরই বাবা রিটায়ার করলেন। আমার বুক ভরা আশা, এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। ভালোয় ভালোয় কলেজটা শেষ করব, একটা চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াব ইত্যাদি।

    ফাইনাল ইয়ার যথারীতি চলছে। রেবেকা এসে গেল। রেবেকার কিছুদিন আগে রিচার্ডসন হলে গোকুলের ঘরে বসে আছি, কানে এল ডেকরেটরের ম্যাটাডোর থেকে লর্ডসের মাঠে প্যান্ডেলের বাঁশ ফেলার শব্দ। সেই মুহুর্তে ভেতরটা কেমন হুহু করে উঠল। যাবার দিন তাহলে এসে গেল।

    সেই প্রথমবার মনে হল, আমার জীবনে বি ই কলেজের ভূমিকা অনেকখানি। তারপর কলেজের শেষদিন পর্যন্ত শুধু মায়ায় জড়ানো আর মায়া কাটানোর চেষ্টার গল্প। এখন আর রেবেকার আগে প্রিবেকা হয় কিনা জানি না। তখন প্রিবেকা আমাদের কাছে বেশ উৎসাহের ব্যাপার ছিল। ৯৭ এর প্রিবেকায় খুব এন্থু নিয়ে অংশগ্রহণ করলাম। আমার তখন একটা ছেঁড়া জিন্স ছিল। সেই যে ফার্স্ট ইয়ারে বালাঘাটে ট্রেনিঙে গিয়েছিলাম সেবারে মাইনিং ক্যাপল্যাম্পের ব্যাটারি থেকে কিছু একটা তরল পদার্থ চুঁইয়ে পড়ে জিন্সটার কিছু অংশ ফেঁসে গিয়েছিল। তার ওপর মার্কার দিয়ে নানা কারুকার্য করে এক অপরূপ চেহারা হয়েছিল। সে বছর সেই জিন্স আমার ট্রেডমার্ক। সেই জিন্স পরে খুব মস্তি হল। অনেক অনেক প্রাইজ পেলাম। শেষ দিন graffitiboard এ একটা লেখা দেখলাম। এত এত সাপ্লি পেয়ে ছ বছরে যেটা হয় নি, এই লেখা পড়ার পর তাই হল- প্রকাশ্য বকুলতলায় ভেউ ভেউ করে কান্না। এখনো মনে আছে, একটা A4 সাইজের কাগজে নীল মার্কার দিয়ে লেখা ছিল “Lami, wewillmissyou”

    একটু ভাবপ্রবণ হয়ে পড়ছি। বোরও করছি হয়তো (কিন্তু এখন আর থামা যাবে না। “ছুটলে কথা থামায় কে, আজকে ঠেকায় আমায় কে। আজকে আমার মনের মাঝে ধাঁই ধপাধপ তবলা বাজে।“)

    ঠিক সেই মূহুর্তে একটা কথা মনে হয়েছিল। আমার বি ই কলেজজীবনটা বেশিরভাগের চেয়ে আলাদা। সবারই কলেজজীবন ঘটনাবহুল হয়, এতে কিছু বিশেষত্ব নেই। আমার গল্পটা অন্যরকম এই জন্য, যে বি ই কলেজের দৌলতে জীবনে এমন কিছু পেলাম যেটা পাবার যোগ্যতা আমার ছিল না। এই অন্যরকম জীবন নিয়ে আমি কি করব, খাব না মাথায় মাখব?

    ফোর্থ ইয়ারের শেষদিন পর্যন্ত নানা দার্শনিক ভাবনায় কাটল। এখন মনে হচ্ছে কি সব অলীক কল্পনাবিলাস। কিন্তু তখন ঠিক এই লাইনেই ভাবনাচিন্তাগুলো হাঁটছিল। একটা বই লেখার ইচ্ছে তখনই প্রথম আসে।

    (এখানে একটা না বলা কথা- কলেজের পর একটা কমিক স্ট্রিপ লেখা/ আঁকা শুরু করেছিলাম। 3Idiots দেখার পর সেটা ফেলে দিয়েছি, কেননা সেটা এত বছর পর পড়তে গিয়ে 3Idiots এর গল্পটার প্রথম অংশের ফটোকপি মনে হচ্ছিল)

    যাই হোক, দার্শনিক ভাবনাচিন্তার পাশাপাশি ভালভাবে পাশ করা আর চাকরি পাবার চিন্তাটাও ছিল। ব্যাচমেটরা ক্যাম্পাসে এক এক করে চাকরি পাচ্ছিল আর আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আমারও কিছু একটা হবে। কিন্তু পরীক্ষা পর্যন্ত কিছুই হয়ে উঠল না।

    ফোর্থ ইয়ারের শেষ পরীক্ষার শেষদিন এক অদ্ভুত মুক্তির স্বাদ! অবশেষে! এবার তাহলে সত্যি সত্যি ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছি। শেষ পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে সেই মুক্তি সেলিব্রেট করলাম (মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করছি, কেননা মনে হয় “সেলিব্রেট” না বলে “উদযাপন” বললে ঠিক বোঝানো যেত না)- রাশি রাশি টফি নিয়ে বকুলতলায় হরির লুট দিলাম, জানাদার দোকান থেকে চক চেয়ে এনে সেই চক দিয়ে একটা ছুটন্ত ঘোড়া আঁকলাম, অসংখ্যবার ডিগবাজি খেলাম।

    সেই একই দিনে সন্ধ্যের মধ্যে সেই উদ্দাম ফুর্তি একটা গভীর শূণ্যতায় বদলে গেল। এই ছ বছর সঙ্গী ছিল কত বন্ধু, আর আমার নিজের কিছু সুখদু:খ। এখন না আছে সুখ, না আছে দু:খ। বন্ধুরা কিছুদিনের মধ্যে যার যার নিজের পথে চলে যাবে। এবার কি হবে? চাকরি খুঁজব? বাড়ি ফিরে যাব? সামনে কি এবার? গুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে সারা সন্ধ্যে ক্যাম্পাসের পথে পথে অস্থিরভাবে পায়চারি করে বেড়ালাম- কেমন একটা ঘোরের মধ্যে।

    গ্‌র্‌যান্ড ভাইভা আর প্রোজেক্ট ভালভাবে নেমে গেল। ইচ্ছে করেই কঠিন প্রজেক্ট নিয়েছিলাম। তুষার আর সুজয় পাঠক খুব সাহায্য করল প্রজেক্টে। (লিখিত পরীক্ষা আর ভাইভার মাঝামাঝি সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগে একবার লিখেছিলাম।) ভাইভার পর যে পথ দিয়ে এসেছিলাম সে পথ দিয়েই শতরঞ্জি মোড়া বিছানা ঘাড়ে করে ফিরে গেলাম। দার্শনিক ভাবনাগুলোকে জোর করে তাড়িয়ে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

    এই সময়ের একটা স্মৃতি: আমার নতুন ডেরায় মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যেত আর জানালা দিয়ে তাকিয়ে উল্টোদিকের বাড়িটা দেখতে পেতাম। আর চমকে চমকে উঠতাম, লর্ডসের মাঠটা গেল কই?

    সবার রেজাল্ট বেরিয়ে গেল, আমার বেরোল না। কলকাতা ইউনিভার্সিটি আর ডিমড ইউনিভার্সিটির নিয়মকানুনের কি একটা তালেগোলে আমার রেজাল্টটা “উইথহেল্ড” হয়ে গেল। তার ফলে কলেজে আরো কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করতে হল। এই সময় একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, কলেজে থাকাকালীন নিজেকে যেমন একটা কেউকেটা মনে হত এখন আর সেরকম হচ্ছে না।

    যাই হোক, অবশেষে রেজাল্ট পেলাম। যেদিন মার্কশিট হাতে পেলাম সেদিনই একটা চাকরিও পেলাম- রাজস্থানের এক লাইমস্টোন মাইনসে।

    নতুন চাকরি জয়েন করতে যাচ্ছিলাম “উদ্যান আভা তুফান এক্সপ্রেস” চড়ে। আগ্রার একটু আগে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে গেল। ট্রেনের জানালা দিয়ে তাজমহল দেখতে দেখতে মনটা ভাল হয়ে গেল। ভাবলাম “এখানে দু দিন থেকে গেলে হত না?” তারপর নিজেই নিজেকে ক®¾ট্রাল করলাম। আগে চাকরি। কিন্তু এটা বুঝতে পেরে খুশি হলাম, যে, “অন্যরকম” মনটা মরে যায় নি।

    তাজমহল দেখতে দেখতেই আমার পুরনো প্রশ্নটার উত্তর পেয়ে গেলাম। এই অন্যরকম জীবন নিয়ে আমি কি করব, খাব না মাথায় মাখব? সোজা উত্তর। আমার গল্পটা বলে যাব। শুনবে হয়তো দু চারজন। কেউ না শুনলেও কিছহু আসে যায় না।

    এর পর প্রায় ১৫ বছর কেটে গেছে। মোট ১২ বার চাকরি ধরলাম আর ছাড়লাম। মন দিয়ে পড়াশোনা করলে যা যা করা যেতে পারত বলে আমার মা বাবা মনে করতেন, সেগুলো করলাম- বাড়ি, গাড়ি, বিলেত আমেরিকা যাওয়া, মেয়েকে ভাল স্কুলে ভর্তি করা ইত্যাদি। ২০০৬ সালে কগনিজ্যান্টে জয়েন করতে এসে দেখি আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় ওখানেই আছে। আশ্বস্ত: হলাম, জীবনে কিছু হারাই নি তাহলে। বরং জীবন আমাকে যা দেখিয়েছে, ফার্স্ট বয়কে তার ১% ও দেখায় নি।

    তারপর থেকে আমার আত্মজীবনী লেখার চেষ্টা চলছে। লিখি, আর কেটে দিই, বা ছিঁড়ে ফেলি। কোনোদিন বই হয়ে বেরোতে পারে। আবার নাও পারে। আজ পর্যন্ত এক পাতাও লেখা হয়নি। কোনোদিন হয়তো হবে।

    আসলে ব্যাপারটা এইরকম- আমাদের গল্পটা মাত্র চার বছরের (আমার ক্ষেত্রে ছয়)। আর কলেজটা দেড়শ বছরের পুরনো। আমরা সবাই একটা পুকুরের এক এক ফোঁটা জল। দেড়শো বছর আস্তে আস্তে দুশো বছর হবে, তিনশো হবে। তখন আমরা কে কোথায়? এক সমুদ্র জলের মাঝে এক একটা ফোঁটা মাত্র যারা আস্তে আস্তে মেঘ হয়ে যাচ্ছি। ফেসবুকের পাতায় এরকম কত জলের ফোঁটার সঙ্গে দেখা হয়। আর বৃষ্টি হয়ে সেই পুরনো চেনা পুকুরে ঝরে পড়তে ইচ্ছে করে।

    তাতেই জলের বিন্দু হয়ে জন্মানোর সার্থকতা। আর তাই আমার বই লেখার চেষ্টা।

    অনেক ভাট বকা হল। এখানে শেষ করি আজ।
  • byaang | 122.167.70.254 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২১:২৬460667
  • bb | 117.195.187.68 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২১:৪০460668
  • লামা আপনার লেখাকে ভীষণ ভাবে "লাইকিয়ে" গেলাম। আপনার এই লেখা সম্পুর্ন করুন, আমি অন্তত: কিনব আর পড়ব।
  • Tim | 98.249.6.161 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২২:১৭460669
  • আমিও কিনে পড়তে চাই লামাদার লেখা। অতি অবশ্যই যেন লেখা হয় সেই আশ্চর্য জীবনকথা।
  • T | 14.139.128.11 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২৩:২১460670
  • লামাদার খুরে শত শত গড়।
  • gandhi | 203.110.243.22 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:১৮460671
  • লামা দা

    এতো লেট করে লিখলে চলবেনা।। অপেক্‌খয় থাকলাম।।।
  • debu | 170.213.132.253 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০২:৪৫460672
  • ও লামা নাম টা কিন্তু ও বামা ওবামা শোনাচ্ছে ?
    অপুর্ব কর ,সুরোজিত প্রামানিক কি তোমাদের ব্যচের???
  • Mridha | 65.200.157.179 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৩:০৯460674
  • অসাধারন লামা, অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে........ আমার একজন চেনাজানা আছে তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, তার অনেক কিছুই তোমার মত। একটা সময় মনে হয় দুজনেই ছিলে ঐ তীর্থে, তবে তার engineer হওয়া হয় নি...... তবে সেটা এখন খুব একটা matter করে না, তোমার মত করে বল্লে সব কিছু ঠিক চল্লে যা পাওয়া যেত প্রায় সবই পেয়েছে কিন্তু জীবন থেকে উপরি পাওয়া যেটা সেটার মুল্য যে পায় সেই জানে....... তোমার বই এর অপেক্ষায় থাকলাম।
  • shrabani | 124.124.86.86 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৫:২০460675
  • জানতাম লামার আঠের বছর হয়নি,শুধু বাড়িয়েচাড়িয়ে বলা......তবে লেখাটা একদম আঁকার মত!
  • de | 180.149.51.67 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:০৬460676
  • লামা, অপূর্ব!
  • demba ba | 121.241.218.132 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:১৮460677
  • কেমন কলেজের দিনগুলো মনে পড়ে গেলো। কোনো একটা ইলেকশনের আগে কলেজ বিল্ডিং-এর সামনে পোস্টার লাগানো চলছে, ছাত্র ফেডারেশন আর ছাত্র পরিষদ - দুপক্ষই লাগাচ্ছে। এমন সময় তেড়ে বৃষ্টি। সবাই কলেজ বিল্ডিং-এর মধ্যে ঢুকে গেলো। বিড়ির কাউন্টার চলছে - তখন বিড়ির কাউন্টার বর্ডার মানতো না। জেডি আর মোটা গান ধরলো "কচুবনে **** গেলো কালো কুকুরে...' - ক্লাসিকাল স্টাইলে।

    ল্যামি পোস্টারেও প্রচুর কার্টুন আঁকতো।

    আসল কলেজটা অবিশ্যি কেমন একটা হয়ে গেছে।
  • Lama | 116.203.223.44 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:২৮460678
  • Demba Da, তুমি কে একটু বলবে? অফলাইনেও বলতে পারো- shankhakarbhowmik অ্যাট gmail ডট কমে ইমেল করে :)
  • Suki | 80.254.147.204 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৩২460679
  • ল্যামিদা, দারুণ লেখা হয়েছে। আরো পড়ার ইচ্ছে রইল - বইও লিখে ফেলতে পারো, আমাদের মত আরো পাবলিক আছে যারা গপগপ করে লেখা খাবে। বাই দি ওয়ে, গপগপ প্রসঙ্গে মনে পড়ল, আমি বেশ কিছুদিন আগে বি.. কলেজ লাইফের খাওয়া-দাওয়া বিষয়ে কিছু লেখার চেষ্টে করেছিলাম - এখানে সেটা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। মনে হয় না অপ্রাসঙ্গিক হবে -
    .....................................................................

    অনেকে আবার খাদ্য শিল্পের সাথে অতিরিক্ত খাদ্য প্রীতি ঘুলিয়ে ফেলেন, অনেকে ভাবেন খাবার গল্প করা মানেই যে খাচ্ছে তার মুখ আর যা খাচ্ছে তার বিবরণ। আসলে কিন্তু তা নয়, খাবার গল্প এর থেকেও অনেক বেশী কিছু - আচ্ছা, তবে একটু দেখেই নেওয়া যাক গপগপ করে খাওয়া বলতে আমরা কি বুঝি !

    গপগপ ব্যাপারটা ডিফাইন করা খুবই শক্ত। আমার খাওয়া পুতুপুতু জিরো সাইজের কাছে গপগপ - আমেরিকানদের খাওয়া ইউরোপিয়ানদের কাছে গপগপ - মুখের কাছে ছোট্ট বাটিটা ধরে চপস্টিক দিয়ে মুখে ভাত পাচার করা আবার অন্য গপগপের রকমফের। আসলে সবটাই আপেক্ষিক। তবুও সৌন্দর্য্য ব্যখ্যা করার মত গপগপ ব্যখ্যারও একটা চেষ্টা দেওয়া যেতে পারে - ঐ ধরণের খাওয়া মোটামুটি চোখে লাগে। মিথ্যা বলব না, ছোটবেলায় বিয়েবাড়িতে খেতে গিয়ে মাঝেমাঝেই আমি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়তাম। মিষ্টির প্রতি আমার বরাবরই একটু ঝোঁক বেশী। তাই পেটপুরে মাংস পর্যন্ত শেষ করে, চাটনি - দইএ একটু বিশ্রাম নিয়ে, মিষ্টি হাজির হলেই আমার পাকস্থলীর আয়তন কোন আভ্যন্তরীন হর্মোন ক্ষয়ের দরুণ স্ফীত হত। ফলত: রসগোল্লার সাথে আমার একটা মাখোমাখো গপগপের সম্পর্ক ছিল - গড় ছিল ১৮-২০টার মত। তবে যারা টিভিতে হট্‌ডগ ভোজন প্রতিযোগীতা দেখেছেন তাদের আশা করি গপগপ শব্দটার প্রতিশব্দ খুঁজে দিতে হবে না। আমি যবে শেষবার ওটা দেখি - ৫ মিনিটে ৫১টা হটডগ খেয়ে এক জাপানী বিজয়ী হয়েছিল। ওটা খাওয়া ছিল না - গেলা বা আঙুল দিয়ে ঠেলে পাকস্থলীতে পাঠানো বললেই হয় আর কি ! ইহা মোটেই ভালো নয়।

    তবে অন্যদিকে আমার বি.. কলেজ রুমমেটের ফিলসফি ফলো করাও আমি মোটেই সমর্থন করি না। একবার আমি ওর সাথে কলেজ থেকে গেছি বিয়েবাড়িতে খেতে - দুপুরের খাওয়া মিস দিয়েছি যথারীতি ভালো করে সাঁটাবো বলে। গেলুম বিয়েবাড়িতে - সবাই হাই-হ্যালো বলে আর খেতে যায়। মাল ও দেখি নড়েই না। ওর আবার হাত তুলে নমস্কার করার একটা ব্যাপার আছে - যেখানে জোড়া হাতটা ঘাড় আর বাম কাঁধের মধ্যের সমকোণটার মাঝামাঝি (অর্থাৎ ৪৫ ডিগ্রী কোণে) উঠবে। সেটা নাকি আদি/অকৃত্রিম কংগ্রেসী স্টাইল ! তো যাই হোক আমি খোঁচা মারি মালটাকে খেতে যাবার জন্য। যতই হোক বিয়েবাড়িতে আসা ওর চেনাশোনার সূত্র ধরেই। তো ঘন্টা দুই পর আমার মাথায় বাজ ফেলে সে ঘোষণা করল - হ্যাংলার মত খেতে যাব মানে ? আমরা নাকি জাষ্ট জলযোগ করব ! মিষ্টির প্লেট এলে ও একটা মিষ্টি ডাইরেক্ট টাকরায় (ঠোঁটে লিপষ্টিক না থাকা সঙ্কেÄও) চালান করে ঘোষণা করল - বাকিগুলো ফেরত নিয়ে যান মাসিমা। বাইরে বেরিয়ে এসে বন্ধু আমাকে নিয়ে রেষ্টুরান্টের দিকে রওনা দিল -সেখানে খেয়েই পেট শান্ত করলাম - কারণ বিয়েবাড়িতে খাওয়া তেনার মতে নাকি প্রায়শ:ই ভালগার।

    গপগপ খাবার শেষ উদাহরণ আমার বন্ধু কারকের ('কারক' হল ওর পদবী) বাদাম খাওয়া। ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল ট্যুরে যাচ্ছিলাম ট্রেনে করে - বাদাম কিনে সবার মাঝে রাখা হল - গল্প করতে করতে সবাই এক জায়গা থেকে নিয়েই ছাড়িয়ে খাচ্ছিলাম। খানিক পরে কারক অনুধাবন করল বাদামের ঠোঙর আয়তন সসীম। তাই ও খোসা না ছাড়িয়েই বাদাম মুখে ফেলে চিবুতে শুরু করল। একের পর এক খোসাশুদ্ধ গোটা বাদাম কারকের পাকস্থলীতে চালান হতে লাগল। যতই হোক, মেদনীপুরের ছেলে বলে কথা - হজম শক্তি অনন্যসাধারণ।

    গপগপের বিপরীত ধীরেসুস্থে খাওয়ার উদাহরন কিন্তু আমাদের সকলের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে - কারও কারও তো খাবার দুইবার গরম করতে হয় মাঝে! তেমনই এক উদাহরণ ছিল আমার অন্য রুমমেট সাধন - যার সম্পর্কে সৌগত বলত “ছোটবেলায় ভালো দেখতে ছিল, আরো বড় হলে বুদ্ধি হবে”। সাধন খেতে ভালোবাসত, বিশেষ করে মাংস-রুটি। হোষ্টেলে যেদিন মাংস হত সেদিন সাধনকে দেখতাম কোণের দিকে টেবিলে খাচ্ছে চেয়ারের উপর পা গুটিয়ে আয়েশ করে। এখন কলকাতা বাজারে রুমালি রুটির সাইজ কেমন হয়েছে বলতে পারব না - কিন্তু বছর দশেক আগে দুটো বা তিনটে খেলেই স্বাভাবিক পেট ভরে যেত। সাধন সময় নিয়ে খেত ১২ থেকে ১৪টা। একদিন ওর খেয়াল চাপল আমাদের রুমে মাংস রান্না করা হবে। কিছু করিতকর্মা পাবলিকের দৌলতে আমাদের রুমে ইলেকট্রিক হিটার, কাঁচের নানা সাইজের পাত্র ছিল - যেগুলি সবই কেমেষ্ট্রি ল্যাব থেকে না বলে আপন করে নেওয়া। মাখনদার কাছ থেকে মশালা ইত্যাদি জোগাড় করে সাধন মাংস রান্নায় বসল। আমরা হেলপ অফার করলেও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটবে বলে আমাদের অংশগ্রহন কেবল খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে ঠিক হল।

    এক সময় নির্দেশ এল স্নান করতে যাবার জন্য কারণ মাংস নাকি সমাপ্ত হবার পথে। এদিকে হাল্কা পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম - সাধনের দৃষ্টি সেদিকে আকর্ষণ করাতে আমি মাংস রান্নার কিছুই বুঝি না প্রতিপন্ন হল! সবার স্নান হয়ে ফিরে এলে ঢাকা দেওয়া মাংস খোলা হল। সে কি রঙ, সে কি গন্ধ - কাঠকয়লা আর বিটুমিন মেশালে যেমন রঙ হয় - আর বারুদ পোড়ার মত গন্ধ। সাধন কাঠের হাতা দিয়ে মাংসটা ঘাঁটতে গেলে হাতা ছিটকে গেল। রান্না যে একধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া মাত্র তা সেদিন প্রথম অনুভব ও প্রত্যক্ষ করলাম। কোন এক অস্বাভাবিক প্রৌকশলে সাধন সমস্ত মাংসটাকে একটা জমাটবদ্ধ লাভায় পরিণত করে ফেলেছিল! বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, সেই মাংসেই অল্প অংশ খেয়ে সাধন ও কারক ঘোষণা করল খুব একটা মন্দ হয় নি - একটু জমাট বেঁধে গেছে এই যা !

    এর পরে তাই সাপ রাঁধার সময় বয়-দার পদ্ধতি আমাদের সাধনীয় পদ্ধতির থেকে অনেক এফেক্টিভ মনে হয়েছিল। তবে সাপ রান্নার বিবরণ দেবার আগে বয়-দার পরিচয়টা একটু দিয়ে নিতে হবে....

    বয়-দার ভালো নাম ছিল যতদূর মনে পড়ে বয় কেঙ্গেপোকাম বা ঐ জাতীয় কিছু। আমাদের থেকে ক্লাস-ত এক বছরের বড় ছিল - কিন্তু বয়সে কত সেটা কেউই জানত না। বয়-দা ছিল মিজোরাম কিংবা অরুণাচলের দিকের ছেলে, এক ক্লাশে নাকি বেশ কয়েক বছর করে থাকত। শোনা কথা যে বাৎসরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে ওদের সরকার ভাবত যে স্কলারশিপে হয়ত কিছু কম পড়ে যাচ্ছে - তাই ফেল করলেই বৃত্তি বেড়ে যেত। তো সেই হিসাবে বয়-দার জমকালো জীবনযাপনের একটা জাগতিক ব্যখ্যা খুঁজে পাওয়া যেত।

    আমরা যে ঘর গুলোয় চারজন করে থাকতাম, সেখানে বয়-দা একা একটা ঘরে থাকত। অন্য হোষ্টেলে সিঙ্গেল রুম প্রাপ্য থাকলেও অত্যধিক আনুসঙ্গিক জিনিসপত্রের স্থানসঙ্কুলান হবে না ভেবে বয়-দা আমাদের হোষ্টেলেই থেকে গিয়েছিল। চেহারা খুব ভালো ছিল - গোলগাল ফরসা মুখে ছোট্ট একটা ব্যতিক্রম খুঁজে পাওয়া যেত কপালের মাঝে হালকা কালো দাগ হেতু। দুর্জনেরা বলে দুপুরের পরের বা খুব সকালের ক্লাশগুলিতে বয়-দা নিদ্রাজাত একটা অস্বস্তি অনুভব করত আর তারই ফলস্বরূপ বেঞ্চে ঢুলে ঢুলে পড়ে মাথা ঠুকে ঐ দাগটা তৈরী করেছে।

    তো যাই হোক, বাকি সব ব্যাপারে একটু ফ্যাশনেবল থাকলেও খাবার ব্যাপারে বয়-দা ছিল একেবারে সাঙ্কিÄক প্রকৃতির মানুষ। ওর একটা ছোট্ট প্রেসার কুকার ছিল - দুপুরের ক্লাশ থেকে ফিরে আমরা যখন মাছের ঝোল দিয়ে ভাত সাঁটাতাম - তখন বয়-দার থালায় ঐ প্রেসার কুকার ভর্তি সব্জী উপুর করে দেওয়া হত। সেটাই দিনের পর দিন বয়-দা কে নুন দিয়ে খেতে দেখেছি। আর দেখেছি বেলের সরবত জাতীয় কিছু খেতে। হোষ্টেলের ছাদে একটা লাঠি ও নান-চাকু নিয়ে বিকেলের দিকে প্‌র্‌যাকটিস করত আর পাশে রাখা থাকত ঐ বেলের সরবতের বোতল। বয়-দার ব্যায়াম করা শরীর দেখে বাঙালীদের ভেতো কেন বলা হয় তা মালুম পড়ত।

    আর এই বয়-দার কারণেই আমাদের হোষ্টেল সাপমুক্ত ছিল। এখন যদি আপনি শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন যান, তাহলে মেন গেটের ঢোকার ঠিক বিপরীতে আমাদের ছাত্রাবাস দেখতে পাবেন। আর দেখলেই বুঝতে পারবেন কেন সাপেরা ঐ জায়গাটি পছন্দ করত! তা একদিন নীচের ঘরে সাপ ঢুকে পড়ায় আমরা অনেকেই একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি, কারণ সাধারণত ঘরের বাইরের সাথে ভিতরের বিশেষ কোন পার্থক্য থাকত না। ঘর থেকে সাপ খুঁজে পাওয়া এক দু:সাধ্য ব্যাপার। ইতিমধ্যে আমাদের আশ্বস্ত করে বয়-দা সাপটিকে ধরে। বিষধর কিনা বলতে পারব না, কারণ মেজরিটির অনুমান দেখলাম বাইমোডাল ডিষ্ট্রিবিউশন ফলো করছে - ঢ্যামনা নয়ত গোখরো - স্পেকট্রামের দুই প্রান্ত সর্প প্রজাতির। তবে বয়-দা কর্মবীর টাইপের ব্যাক্তি এই সব ব্যাপারে। সাপটিকে মেরে সে রান্নার ব্যবস্থা করল। নিজের ঘরেই সরঞ্জাম থাকায় সুবিধা হয়ে গেল।

    তবে ব্যাপার কি - বয়-দার রান্নার প্রধান প্লাস ও মাইনাস পয়েন্ট দুটৈ হল - টেকনিকের সরলতা। সেই আমাদের মেমারী স্কুলের ক্লাস এইটের বন্ধুটির মত - হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুতি বর্ণণা করতে গিয়ে যে লিখেছিল - “একটা পাত্রে যা নেবার নিলাম, হিট দেওয়ার পর গ্যাস বেরুলে সংগ্রহ করলাম”। বয়-পদ্ধতির রান্না হল - সাপ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কুকারে দিয়ে সিদ্ধ হয়ে এলে পরিমাণ মত নুন দিয়ে ছাল ছাড়িয়ে খেলাম। এই পদ্ধতির সাপ রান্না আমার বিলকুল না-পসন্দ - মশলাই নেই, সে কেমন রান্না !! তো সেই জন্য আমরা অনেকেই সেই দিন সাপের মাংস স্কিপ করলাম। তবে এরপর থেকে আমাদের হোষ্টেলে সাপের আনাগোনা কমে এসেছিল। সর্পকুল মনে হয় টের পেয়েছিল যে শুধুমাত্র মৃত্যুই নয় - প্রিয়জনের ডেডবডিও ফিরে না পাবার সম্ভাবনাও প্রবল বয়-দার দিকে এলে।

    (ক্রমশ:)
  • demba ba | 121.241.218.132 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৩৫460680
  • ল্যামি - একটু ভাব;-)
  • Lama | 116.203.223.44 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৩৬460681
  • সুকি, তোকে বোধ হয় বিক্কলেজের খাওয়াদাওয়ার কিছু ছবি জোগাড় করে দেব বলে কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু নানা তালেগোলে করে উঠতে পারি নি। ক্ষমা প্লিজ :)
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৩৮460682
  • লামাদা ডেম্বাবুকে চেনতে পারোনা?
    খ্যা খ্যা খ্যা
  • Kaju | 121.242.160.180 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৪১460683
  • আরে বাবা ডেম্বাবা = অজ্জিদ্দা।
  • Lama | 116.203.223.44 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৪২460685
  • ডেম্বাস্যর, একটু ভাবতে না পারাটাই তো আমার দুর্বলতা। সবসময় বেশি ভেবে ফেলি। কিন্তু বেশি ভেবেও কুলকিনারা পাচ্ছি না যে! আলোকপাত প্লিজ :)
  • Lama | 116.203.179.215 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৪৪460686
  • বোঝো! (লালমোহনবাবু স্টাইলে)
  • Lama | 116.203.179.215 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৪৮460687
  • উরিত্তারা! বয় তো এককালে আমারও সিনিয়র ছিল।

    সাপ আমিও খেয়েছি, তবে বয় না, বেঞ্জামিন খাইয়েছিল। বেঞ্জামিন ভেন্ড্রালিংডো নাম ছিল যতদূর মনে পড়ে- ইলেকট্রিক্যালের
  • Jatayu | 121.242.160.180 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৫৪460688
  • সাপ? স্নেক? মানে স-সর্প? কোক-কোক-কোন স্‌স্নেক?
  • Lama | 116.203.179.215 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৫৯460689
  • গোবরা। আই মিন কোখরো।
  • Lama | 117.194.227.143 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৯:৪০460690
  • ক্যা বলে আমার আঠেরো হয় নি? অ্যাঁ? ক্যা? আমি তাহলে কারো জেঠু কি করে হলাম?
  • Lama | 116.202.201.123 | ০৯ এপ্রিল ২০১২ ০১:২৫460691
  • বিক্কলেজে রেবেকা চলছে। নানা কারণে যাওয়া হয়নি। মেজাজটা খিঁচড়ে ছিল। রাত সোয়া একটা নাগাদ একটা ফোন এল "ল্যামিদা, ফোর্থ ইয়ারের অমুক বলছি।.........'

    এখন বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার পনেরো বছর পরের অন্য একটা লামা আমাকে মোবাইলে ফোন করে রিইউনিয়নের জগঝম্প বাজনা শোনাচ্ছে।

    বি ই কলেজ আছে বি ই কলেজেই।
  • Lama | 117.194.225.33 | ০৯ এপ্রিল ২০১২ ০৩:১৬460692
  • এটাকে একটু ভাসিয়ে রাখি
  • Lama | 117.194.225.33 | ০৯ এপ্রিল ২০১২ ০৩:২৮460693
  • ভাসায়ে তুললেম আবার
  • gandhi | 203.110.243.23 | ০৯ এপ্রিল ২০১২ ০৮:২৬460694
  • রেবেকা কাল শেষ হল
  • Bratin | 122.248.183.11 | ০৯ এপ্রিল ২০১২ ১২:১০460696
  • ও লামা, কবি বলেছেন জেঠু হবার জন্যে বেশী বয়েস হবার দরকার নেই। শোন নি আমাদের বাবা/কাক/মামা রা গালগালি করে বকতেন ' অল্প বয়েসেই জেঠা হয়ে উঠেছিস দেখি' :-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন