এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভুত

    deepten
    অন্যান্য | ১৩ মার্চ ২০০৬ | ২৮৪৯১ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Netai | 122.177.31.234 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২৩:৫৩497814
  • ফার্স্ট ইয়ারের গল্প। নতুন গন্ধ ছাড়েনি পুরোপুরি। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন নতুন অভ্যেস। নতুন একগুচ্ছ বন্ধু। হোস্টেলের আদব কায়দা শিখছি নতুন। সকাল সকাল নবীনদার ক্যান্টীনে নাকে মুখে দুটো রুটি গুঁজে কলেজ যাওয়া। মাঝে লাঞ্চব্রেকে হোস্টেলে ফেরা ঢ্যাং ঢ্যাং করে। তারপর আবার কলেজ। আর বিকালে মুক্তি। সবে সীজন শুরু। পড়াশোনার চাপ নেই। সে এক মুক্ত অনন্ত পৃথিবী তখন।
    তাস দাবার নেশা ধরেনি তখনো। নাহ, বিকেলে টাউনে ঘুরতে (পড়ুন মেয়ে দেখতে) বার হতামও না। টাইমাপাস ছিল টিভি আর রুমেরুমে আড্ডা।

    এরকম ই একদিন, তখন সন্ধে নেমে গেছে, আমি টিভিরুম থেকে ফিরে রুমে রুমে ঢুঁ মারছি। কোথায় ভালো আড্ডা বসেছে কে জানে। খুঁজে খুঁজে দেখছি তাই। টিভিতে কিসব ইংরেজী সিনেমা চলছে। আমার একদম পছন্দ না। তার চেয়ে পাতি বাংলায় আড্ডা ঢের মজাদার। এই করতে করতে দেখছি বাইরে গন্ডগোল চলছে আবহাওয়ায়। দুর্যোগপুর্ন রাতের প্রস্তুতি। সব ভুতে গল্পে যেমনটি হয়- প্রথমে সোঁওওওওও সোঁওওওওও করে হাওয়া বইলো। তারপরেই ঝম ঝম করে শুরু হল বৃষ্টি। তখনো কোন রুমেই ঢুকে উঠতে পারিনি। বাইরে পিছনদিক করা ঘেরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছি কেরামতি। এমন সময়, এমন সময়....... থপথপ শব্দে চমকে তাকিয়ে দেখি গোবরা ঢুকছে। হোস্টেলের গেট দিয়ে ঢুকলেই ফ্রন্ট উইংস। আর ফ্রন্টের মাঝামাঝি ওর ঘর। আমি একটু অবাক হলাম। গোবরা ভিজে কাদা হয়ে আছে। তার জন্যে অবশ্য অবার হইনি। বাইরে যে বৃষ্টি তাতে ভিজে না যাওয়াটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু সে এমন করে হাঁটছে কেন? দেওয়াল ধরে ধরে, কাঁপতে কাঁপতে। আমি হাঁক মারলাম -'কিরে গোবরা'। গোবরা হাসলো। ফ্যাকাশে সে হাসি। আমি ভয় পেলাম। শরীর খারাপ নয় তো। দৌড়ে কাছে আসতে না আসতেই হাটুমুড়ে বসে পড়লো মেঝেতেই। আর গোঁ গোঁ করে বললো-'আমায় ঘরে নিয়ে চল'। আমি হাঁক পাড়লাম। লোক জড়ো হল। গোবরাকে ওর ঘরে শুইয়ে দেওয়া হল তারপরে জানা গেলো ভুত। ভুতের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে। ভুত বেরিয়েছে শুক্রবারের সন্ধ্যায়। ওভালের মাঠের পাশে দুর্যোগের রাতে ফাঁকা রাস্তায়। গোবরা কাঁপতে শোনালো সেই সাক্ষাৎকার।

    ঘটনাটা ঘটেছে কিছুটা এরকম। গোবরাকে কেশবদার বুথ থেকে ডেকে পাঠিয়েছিলো।

    এই ডেকে পাঠানোর গল্পটা একটু বলে নিচ্ছি।
    তখন তো অনেক দিন আগে, তাই তখন মোবাইলের চল ছিলোইনা। একদমই না। শুধু মোবাইল নয় দাদারা, আমাদের হোস্টেলে এমনি ফোং ও ছিলনা। বাড়িতে যোগাযোগ থাকতো চিঠিতে। আর মাসে একবার ফোন করতাম। ফোন করতে যেতে হত ক্যাম্পাসের বাইরে। হয় কেশবদার বুথ নয় নিমুদার দোকান, কলেজ মোড়ে। বাড়িওতেও ঐসব বুথের নম্বর দেওয়া থাতো। তেমন জরুরি দরকার পড়লে কেশবদারা খবর পাঠাতো,' এইও আপুনার বাড়ি থিক্ক্যা কল করেচিল, আপুনি আধাঘন্টার মধ্যে বুথে হাজিরা দেন' এই বলে।

    কেশবদার বুথ থেকে ডাক তো এলো। যাব কি যাবনা ভাবতে ভাবতে গোবর বেরিয়ে পড়লো। পায়ে হেঁটেই। অনেকটা পথ। সোঁ সোঁ হাওয়া তখন বইতে শুরু করে দিয়েছে। গোবরা ভেবেছিল বৃষ্টি নামার আগেই বুথে পৌছে যাবে। আর বৃষ্টি এলেই ভয় কী? হাতে তো ছাতা আছে। কালো ফোল্ডিং ছাতা। ওভাল মাঠের বাক পেরিয়ে চলেও এসেছিল অনেকটা। কিন্তু তখনি বাতাসের বেগ বাড়লো। আর স্পষ্ট পিছন থেকে খোনা গলায় বলছে তাকে-'এই, ছাতাটা দে'। কে? কে বলছে? পিছন ফিরে তাকালো গোবর। চারদিক ফাঁকা। যতদুর চোখ যায়। না কেউ রাস্তায়, না কেউ মাঠে। কই, কেউ তো নেই কোথাও!! তবে কি..... তবে কি..... আঁতকে উঠে হাঁটার বেগ বাড়ালো গোবর। ভাঙ্গা (মানে আন্ডার কন্সট্রাকশান) জিমখানার কাছে পৌঁছতেই আবার ডাকলো কেউ-'এই ছাতাটা দে না, ছাতাটা দে'। ওরে বাবা। আর থাকা যায়!!! গোবরা করলো কী, ছাতাটা গুঁজলো এক বগলো। পায়ের চটিটা খুলে হাতে ধরে দৌড় মারলো হোস্টেলের দিকে। সাথে সাথে ঝমঝম করে বৃষ্টি। মোটাসোটা চেহারা। দৌড়নোর অভ্যেস নাই। তাও দৌড়ালো গোবরা। জীবন আর ছাতা দুইই হাতে রেখে। সে লড়াই সে দৌড় দেখার জন্য কেউ ছিলনা তখন। শুধু ঐ ছাতার ভুতটা ছাড়া। ঐ দৌড়ানোর মাঝেই নাকি সে বার দুই এসে শুধিয়ে গেছে- ছাতাটা দে না রে, ছাতাটা দে। 'ছাই দেব তোকে', মনে মনে আউড়ে দৌড়ে গেছে গোবরা। হোস্টেলের সামনেই প্রায় পৌঁছে হাফ ছেড়ে যেই পিছনের দিকে তাকিয়েছে, তখনি বাজ পড়লো। চোখ ঝলসানো আলো। ভেসে গেলো চারদিক। কিছুই দেখা গেলোনা ভালকরে। শুধু দুরে ল্যাম্পপোস্টটা ছাড়া। আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে সাদা শাড়ী জড়ানো এক বিশালাকার রমণীমূর্তি। জ্বলজ্বলে দুচোখে যার দেখা যায় মৃত্যুর ছায়া। একঝলকে এর চেয়ে বেশী দেখতে পায়নি গোবর। কাঁপতে কাঁপতে ঢুকে পড়লো হোস্টেলে।

    গোবরার বর্ণনা শেষ হতেই লোডশেডিং হল। অন্ধকারে ডুবে গেলো রুম। গোটা হোস্টেল।

    রাকেশ মোমবাতি জ্বালালে দেখা গেল সবাই কেমন চুপ্‌চাপ। হাওয়া শুকিয়ে গেছে সব্বার।
  • Netai | 122.177.31.234 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২৩:৫৪497815
  • শেষ না। এর সাথে জড়িয়ে আর দু একটা গল্প।
    আগামীকাল।
  • T | 14.139.128.11 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০১:১৬497816
  • বাপ রে!
  • SM | 155.212.244.66 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০১:৫৬497817
  • নিশি ভূত। আমাদের গ্রাম বোর্ধোমানে।পারার সেজোদাদু খূব সাহোসি ও সোক্তিশালি। ওদের বারির কাছে বরো আম বাগান। গরোম কাল। মাটি কাটার সোমোয়। খূব সকালএ মাটি কাট্‌লএ কস্টো কম হবে বোলে দাদাকে বোল্লো জে ভোর বেলায় ওটাতে। গারাম ওন্ধোকার। ভোর বেলায় দাদা দাদা ডাক্লো কেস্টো ওট মাটি কাট তে জাই। কেস্টো কোদাল/গাইটি নিয়ে চোল্লো মাটি কাট তে। কেস্টো মাটি কাটে আর ওর দাদা মাটি ফেলে। দাদা খূব তারতারি মাটি ফেলে।কেস্টো কে কেউ কাজে হারাতে পারে না। কেস্টো আরো তারাতারি মাটি কাটে। মুখ তোলার সোমোয় পায় না। ঘাম ঝোএর্তে থাকে কেস্টোএর গা থেকে।অনেক মটি কাটা হয়।এমোন সোমোয় কেস্টোর আসোল দাদার ঘূম ভাঙ্গে। হারিকেন নিয়ে কেস্টো কে দাক্তে যায়।দেখে কেস্টো নাই। দাদা আম বাগান যাই খূব তারতারি। দেখে কেস্টো মাটি কাটে্‌ছ আর এক্‌জন মটি ফেল্‌ছএ। দাদা কেস্ট কেস্ট বোলে ডাকে। কেস্টো মুখ তোলে। দেখে সাম্নে কেউ নাই। দাদা এসে কেস্টো কে বারি নিয়এ যায়।কেস্টো তখ্‌ন বুঝেতে পারে ঐ লোক্ট কে ছিলো।নিশি ভূত। তাই ওতো তারাতরি মটি ফেলি্‌ছলো।সোত্তি ঘ্‌টনা।
  • S | 129.115.2.75 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৩:০৪497818
  • একটা সিনেমা দেখতে পারেন। আমার খুব ভালো লেগেছিলো। অনেকেই দেখেছেন আশা করি। Grudge. শুনেছি Japanese version আরো ভয়ানক।
  • kumu | 122.176.32.39 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:০০497819
  • নেতাই -"আমি হাঁক পাড়লাম"।-এই একটি বাক্য হইতে স্পষ্ট বোঝা যায় ইহা একটি বানানো গল্প।

    হয় কেউ ভয় দ্যাকাচ্চিলো,নয় একটু বড়সড় চ্যাহারার কেউ ছাতা চাইছিল।
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:১৪497820
  • কুমুদি কোশ্নো করেছে দেখে আমিও সাহস করে আমার টেকনিক্যাল কোশ্নো করেই ফেলি।
    উল্লেখিত ছাতাটির খোলা অবস্থায় ডায়ামিটার কত? আর উক্ত বিশালাকায়া রমণীটির কাঁধ টু কাঁধ প্রস্থই বা কত? ভূতেদের ছাতাই বা লাগে কেন?
  • Bhuto | 117.120.16.132 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:২২497821
  • আমি ছোটবেলায় বস্তাভূত দেকেচি।
  • kumu | 122.176.32.39 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:৩৮497822
  • ভূত ছাতা চাইছে,চাদ্দিকে ঝড়জল,জনপ্রাণী নাই-এমত অবস্তায় কেউ ছাতা, চটি এতসব সামলাতে পারে ?????
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:৪০497825
  • আমার আবার নেত্যর ভূতের বিবরণ পড়ে প্রথমেই কেন জানি না কুমুদির কথা মনে হয়েছিল। (খিক খিক)
  • kumu | 122.176.32.39 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:৪৪497826
  • ব্যাঙ,তুমিও?তুমিও?,তুমিও?

    দু:খে গলা বুজিয়া যাওন-
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:৪৬497827
  • দু:খু পেও না। আমি তো চোখে খুনীর দৃষ্টির রেফারেন্সে বললাম কথাটা।
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:৫০497828
  • আমার সেই কবে থেকে মৃত্যুর ছায়াওয়ালা অমন দুটো চোখের শখ!
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১২:৫১497829
  • আর নেত্যর ভূতের অসম্ভব সহ্যশক্তি। তুমুল বৃষ্টির সময়ে আমি কারুর থেকে ছাতা চাইলে সে যদি আমাকে বলত ""ছাই দেব তোকে'' তাহলে এই মানুষ আমিই তার ঘাড়টি মটকে দিতাম, ভূত হওনেরও লাগত না।
  • T | 14.139.128.11 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৩:০০497830
  • সামনে এসে দাঁড়ালে এসব রসিকতা করা বেরিয়ে যাবে।
  • Jhiki | 182.253.0.99 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৩:০৮497831
  • আমি ভূতে ভয় পাই না, আমাকে সবাই বুঝিয়েছে যে 'ভূতকে কখনও ভূতে ধরে না'.....
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৩:১০497832
  • আমি ভূতে ভয় পেতে চাই, কিন্তু ভূতরা আমাকে ভয় পাওয়াতে পারে না। :-((
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৩:৫১497833
  • ভুতেরা কখন কী চায়, কেনই বা চায়, কিছুই বোঝা যায় না। ভুতুড়ে সব ব্যাপার স্যাপার।
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৩:৫৬497834
  • নেত্য, তোর গল্পের সাথে জড়িয়ে আর যে দুটো গল্প সেগুলো বলবি না?
  • dd | 59.97.121.155 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৪:০০497836
  • কতকগুলো ক্যারেক্টেরাস্টিক আছে।

    . ভুতেরা নির্জন যায়গা ভালোবাসে। সেখানে জ্যান্তো লোক গ্যালে রেগে যায়।
    . তারা স্বভাবে বদমেজাজী বা দু:খী। খুব মিশুকে নয়।
    . বেশী লোক থাকলে কাছে আসে না। তার মানে স্বভাব ভীতু।
    . দিনের বেলাতেও দেখা যায় না, কি না একটু প্যাঁচালো চরিত্র।
    . সংখ্যায় ক্রমে কমে আসিতেছে। অলমোস্ট এক্সটিন্‌ক্‌ট হয়ে গেছে। খুবই ফ্রাজাইল তাদের ইকোসিস্টেম।
    .অবিলম্বে সুরক্ষা দরকার। প্রতিটি শহরে বাধ্যতামুলক ঘুপচি যায়গা চাই, কয়েকটা পুরোনো বাড়ী আদ্দেক ভেঙে রেখে দিতে হবে। প্রতি অমবস্যা রাতে অন্তত: মিনিট কুরি ভুতেদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখতে হবে ভুতপ্রবন যায়গায়।

    কিন্তু এই ধান্দাবাজ দুনিয়ায় কে আর পরের জন্নে ভাবে, স্প্রশালি পরলোকের পরদের জন্নে?
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৪:০৯497837
  • বলবো। আজই।
  • byaang | 122.172.231.126 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৪:১৬497838
  • ডিডিদার পোস্ট দেখে লুরুর সেন্ট মার্কস রোডের সেই ভুতুড়ে বাড়িটার কথা মনে পড়ে গেল।

    এই বাড়িটা আমার ছেলের স্কুল থেকে হেঁটে দুই মিনিট দূরে হওয়ায় কয়েক বছর খুব সুবিধে হয়েছিল, বাঁদরামি করলেই একবার বাড়িটার সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে আনা হত, ব্যাস দুই-তিনদিনের জন্য বর্ণপরিচয়ের গোপাল হয়ে যেত আমার ছেলে।
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৮:৪১497839
  • 08 Feb 2012 -- 11:53 PM
    এর পর

    থমথমে পরিস্থিতি অবশ্য খুব বেশীক্ষণ থাকলো না। কেমন করে যেনো চাউর হয়ে গেলো যে গোবরা ভুত দেখেছে। সবাই এসে ভিড় করলো গোবরাদের রুমে। থার্ড ইয়ারের দাদারাও। গোবরা তখন ছোটখাটো সেলেব্রিটি। লোকে আমাকেও শুধাচ্ছিলো, 'কিরে কেমন দেখলি ছাতা ভুত?'। আমি মিনমিন করে জাবাব দিলাম, 'না না, আমি তো না। আমি তো তেমন ভুত দেখিনি। গোবরা দেখেছে ছাতা ভুত। আর আমি দেখেছি গোবরাকে।' আর গোবরা ওদিকে বিছানায় শুয়ে আছে চিৎ হয়ে। চারপাশে মানুষের মেলা। তার মাঝে কাঁপছে। আর গলাটাও কেমন জড়িয়ে গেছে। লোকজন মাঝে যে মজা করছিলনা তা নয়। ভীড়ের মধ্যে থেকে ফ্লেমিং বললো,-'এতোকরে চাইছিলো যখন, তখন ছাতাটা দিয়েদিলেই পারতিস'। শুনে বিছানায় শুয়ে গোঁ গোঁ করতে করতে একই গল্প রিপিট করতে থাকা গোবরা ধড়ফড় করে উঠে ফ্লেমিংকে এই মারে কি সেই মারে। চার্দিকে হাসি হুল্লোড় উঠলো। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হল কই?

    সবার পড়াশোনা লাটে উঠলো ঐ দিনকার মত। বদলে রুমে রুমে চললো জমিয়ে আড্ডা। তবে এবার আর আরবিট বিষয় নিয়ে নয়। লোকে টপিক পেয়ে গেছে। সবই ভূতের গল্প। যতীনদা(মেসের কর্মচারী) অবধি কুটনো কোটা বন্ধ রেখে গল্প শোনাচ্ছে ডাইনিং এ বসে। আর লোকজন তাই হাঁ করে খাচ্ছেও। যতীনদার দাবী সে ভুত দেখেছে। তাও বাইরে কোথাও নয়। এই হোস্টেলেই। এই মেসেই। অনেকদিন আগেকার কথা যদিও। যতীনদা তখন ঘুমাতো মেসের ডাইনিংয়ে, একাএকা। খাওয়া দাওয়া সব হয়ে যাবার পর ভীতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে। একদিন মাঝরাতে যতীনদা তখন গভীর ঘুমে, হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। কিচেনের দিক থেকে আওয়াজ আসছে -রিনরিন রিনঝিন রিনরিন রিনঝিন। উঠেবসে চোখ কচলালো যতীনদা। হ্যাঁ, এখনো আওয়াজ আসছে। ঠিক যেন কোন মেয়ে হেঁটে যায় নুপুর পরা আলতো পায়। অবাক হয়ে দরজা ঠেলে কিচেনের ভীতরে ঢুকলো যতীনদা। আর ঠিক তখনি থেমে গেলো শব্দটা। চারিদিকে নীরবতা তখন চোখে পড়ার মত। মাঝরাত্তির। দুরে কুকুর ডাকছে করুন স্বরে -কেঁউউউউউউউউউ। আর........ আর ........ কিচেনে কিন্তু কেউ নেই। শুধু ট্যাপ থেকে জল পরছে টপ টপ করে। ছ্যাঁৎ করে উঠলো যতীনদার বুক। কী জানি, হয়তো মনের ভুল, ভেবে ট্যাপটা জোরসে এঁটে, কিচেনের দরজা ভেজিয়ে আবার শুয়ে পড়লো। না না, পুরো শুয়েও পড়েনি, হটাৎ আবার আওয়াজ এলো এলো কিচেন থেকে। এবার আর নুপুরের রিনিঝিনি নয়, ট্যাপ থেকে সজোরে জল পড়ার শব্দ। সাথে বাসন মাজার আওয়াজ, ঘ্যাঁসঘ্যাঁস ঘ্যাঁসঘ্যাঁস। এরপর আর যতীনদার পক্ষে মেসে থাকা সম্ভব হয়ি্‌ন। দৌড়ে পালিয় আশ্রয় নিয়েছিল ফ্রন্ট উইংসের কোন একটা রুমে, সেই রাত্রের মত। মেসে সেই রাত ই ছিল যতীনদার শেষ রাত কাটানো।

    যতীনদা চোখ বড়বড় করে হাত পা নেড়ে এইসব গল্প বলে চলেছে। আর চারপাশে ছেলেরা তাই খাচ্ছেও গপগপ করে। আমি এই গল্পটা শুনে বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে। রান্না শেষ হতে এখনো সময় লাগবে বুঝতে পারছি। দোতালা ব্যাক উইংসে গেলাম। সেখানেও দেখি একই কান্ড। ভূতের গল্প চলছে। ওখানে সুকান্তদা গল্প শোনাচ্ছে।
    -'বুঝলি, সেদিন অমবসার রাত। ঘুট্‌ঘুটে অন্ধকার। ড্রইং সাবমিট করতে হত পরের দিন। মাঝরাতে একটা সিগারেট ব্রেক নিতে বেরিয়েছি, হটাৎ দেখি, কুলগাছটার নীচে,..... এই যে সামনের কুলগাচট দেখছিস? হ্যাঁ, ওর ই নীচে, কুল কুড়াচ্ছে একটা বাচ্ছা মেয়ে। ছেলেও অবিশ্যি হতে পারে, মানে আবছা অন্ধকারে যতদুর দেখা গেলো, তাই ই মনে হল। এতো রাতে এখানে আবার কে রে? ঝট করে রুম থেকে টর্চ ট নিয়ে এসে দেখি একটা ৫-৬ বছরের ফুটফুটে বাচ্ছা, বাচ্ছা মেয়েই, কুল কুড়োচ্ছে। তারপর সে টর্চের আলোয় থমে্‌ক দাঁড়িয়ে আমার দিকে মুখ তুলে দেখলো, জুলজুলে চোখে, তারপরে তরতর করে গাছে চড়ে পড়লো। আর দেখতে পেলাম না। আমার চোখের সামনেই, হ্যাঁ। টর্চের আলো ফেলে গাছে তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখলাম। কিন্তু না:, কোথাও মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না। ঐ ছোটছোট পাতাগুলোর আড়ালে বেমালুম হারিয়ে গেলো। সাথে সাথে পশের রুমের ছেলেদের ডেকে নীচে নেমে ভালোকরেই খুঁজে দেখেছিলাম। কিন্তু কিছুই আর খুঁজে পাওআ যায়নি"
  • Kaju | 121.242.160.180 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৮:৪৬497840
  • গায়ে কাঁটা দিচ্ছে মশাই ! কী বলেন ফেলুবাবু? সেই সেবার কোলকাতায় লোডশেডিঙের বাড়াবাড়ি, আরে সেই যে, স্কাইল্যাব পড়বে পড়বে করছে, আপনি বললেন 'এই লোডশেডিঙে গোয়েন্দা কাহিনীর থেকে ভূতের গপ্পো জমবে বেশী', আমিও লিখে ফেললুম 'পিঠাপুরমের পিশাচ'।
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৮:৪৭497841
  • শেষ নয়, আর একটুখানি আছে।
  • Jatayu | 121.242.160.180 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৮:৪৮497842
  • দেখেছেন ছেলের কান্ড ! আমার পোস্ট নিজের বলে চালিয়ে দিল বেমালুম !
  • kumu | 122.176.32.39 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৮:৫৪497843
  • যতসব্বাজে কতা,ভূত বলে কিচু নাই।

    আজ রাতে আমি বাড়ীতে একা,আসুক দেখি ভূত।
  • Kaju | 121.242.160.180 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৮:৫৮497844
  • ইস, আমি যদি কুমুদির বাড়ির কাছাকাছি থাকতাম, ভূতের সাথে ক্যান্ডেল্লাইট ডিনার করিয়ে দিতাম কুমুদি-র !
  • kumu | 122.176.32.39 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৯:০২497845
  • এ:,ডিনার কর্বে!!ঘরবাড়ী ডাস্টাক তার আগে।
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৯:০৬497847
  • কুমুদি কি ভয় পাচ্ছো?

    ডিডিদা যে ক্যারেস্টারিস্টিক লিকে দিয়েছেন তারপরে আর ভুতেরা তোমার বাড়ী আসবেনা। আফটার অল, গুরগাঁও গাঁও নয়, শহর।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন