এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অনেক সাহসে সর্ষে

    de
    অন্যান্য | ২০ জুন ২০১২ | ১০৮৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | 188.91.253.11 | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ ১১:১৩559011
  • খুব সুন্দর লেখা
  • Cheick-mate | 131.241.218.132 | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ ১১:২০559012
  • আমি যাবো, কিন্তু কবে যাবো?
  • | 24.97.32.29 | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ ১১:২৭559013
  • একই প্রশ্ন আমারও
  • সিকি | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ ১৪:৩৭559014
  • আমি ২০১৫।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ ১৬:১৮559015
  • আমি ২০২৫
  • de | 130.62.172.229 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ২১:২৯559017


  • পাহাড়ের মাথায় নাম না জানা স্তুপ



    শান্তিস্তুপের ওপরে





    নিম্মু গ্রাম


    আলচি গ্রাম



    মনাস্ট্রির পিছনে সবুজ জলের ইন্দাস

    স্পিটুকের ওপর থেকে



    লে রানওয়ে - স্পিটুকের ওপর থেকে
  • de | 130.62.172.229 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ২১:৩০559018
  • সোসেন বল্লো বলে ফটো দিলাম সঙ্গে -
  • de | 130.62.172.229 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ২১:৩৪559019
  • খেয়েদেয়ে বেশ টায়ার্ড লাগছে- হোটেল কাছেই। সেখানে গিয়ে মিনিট দশেকে ফ্রেশ হয়ে এবার যাবো স্পিটুক মনাস্ট্রি। বুদ্ধদেবের সঙ্গে কালীমাতার কি সম্পর্ক কে জানে, প্রায় সব মনাস্ট্রিরই লাগোয়া বেশ ভয়াল দাঁত-নখ-জিভ বার করা কালীমাতার মন্দির আছে। প্রাচীন তিব্বতী তন্ত্রসাধনা আর বৌদ্ধধর্মের হাইব্রিড এই মনাস্ট্রিগুলো। সবগুলোরই সামনে জপযন্ত্র। বেশ অনেকখানি সিঁড়ি উঠে বেশ বুড়োসুড়ো কিছু লোক তাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাপস্খালন করছে। স্পিটুকের ওপরে উঠে লে রানওয়ে, আর্মি ক্যাম্প এইসবের সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। স্পিটুকে থাকতে থাকতেই সুয্যিমামা পাহাড়ের আড়ালে অস্ত গেলেন।

    এরপরে হোটেলে ফিরে আসার পালা। কাল থেকে আসল জার্নি শুরু। এতক্ষণ শুধু শ্যাডো প্র্যাকটিস চলছিলো।
    পরদিন ভোরবেলা বেরোতে হবে। বড় সুটকেস দুটোয় তালা মেরে এই হোটেলের লাগেজ রুমে রেখে যাবো। একটা বড় ব্যাগ প্যাক করে এনেছিলাম -- সেটায় দিন তিনেকের জামাকাপড় আর বাকি আনুষঙ্গিক নিয়ে যাবো। ডায়ামক্স আর কমপ্যাক্ট অক্সিজেন সিলিন্ডার -- আর নসিয়া বা ভমিটিংয়ের ওষুধ। খারদুংলার রাস্তা খুব খারাপ, পাথরে ভর্তি বলে শুনেছি। সুকান্তর বেশ ট্রাভেল সিকনেস হয় -- পাহাড়ী রাস্তায় গাড়িতে চড়লেই বমি। সেটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। একবার মুড অফ হয়ে গেলেই তো হয়ে গেলো! বেশ কয়েকটা জলের বোতলও নিতে হবে।

    নুব্রা ভ্যালি লে থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। রেস্ট্রিকটেড এরিয়া বলে আগে থেকে পারমিট লাগে। লে র বিভিন্ন জায়গায় (প্যাংগং, সো মোরিরি, সারচু ইঃ) যেতেই এই পারমিট প্রয়োজন। তাই একবারে সব জায়গার উল্লেখ করে পারমিট করানোই ভালো। আমরা অগে থেকেই দোরজেকে দিয়ে পারমিট করিয়ে রেখেছিলাম। নুব্রায় থাকার মতো দুটো ছোট শহর - ডিস্কিট আর হুন্ডার। আমাদের বুকিং ডিস্কিটে নোরবের গেস্ট হাউসে করা ছিলো। সিকির কাছ থেকে এনাদের কথা জেনেছিলাম। আমাদের আজকের প্রথম গন্তব্যস্থল অবশ্য ডিস্কিট নয়। আমরা যাবো পানামিকে। আরো আটষট্টি কিলোমিটার দূরে। পানামিক থেকে সিয়াচেন গ্লেসিয়ার দেখা যায়। আর একটা ন্যাচারাল হট স্প্রিং আছে। এছাড়াও অপূর্ব রাস্তার সৌন্দর্য্য -- সে তো আছেই। প্রথমে পানামিকেই থাকবো ভেবেছিলাম। কিন্তু ওখানকার গেস্ট হাউসগুলোর ফিডব্যাক ভালো নয় -- গরম জল পাওয়া যায় না। তাই ফিরে এসে ডিস্কিটেই থাকবো।

    বেশীর ভাগ সময়েই ড্রাইভার এবং ট্রাভেল এজেন্টরা এসব জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি বেরনোর জন্য বেশ জোরাজুরি করে। সেই চক্করে ব্রেকফাস্ট মিস করে সাতটার মধ্যে বেরিয়ে গাড়ির ঝাঁকুনিতে খালিপেটে অসুস্থ হবার খুব সম্ভাবনা। আমি এবার তাই ঠিক করেই এসেছিলাম -- ব্রেকফাস্ট না করে আর স্নান না করে কোথাও বেরোবো না। তাতে একটু দেরী হয়, হবে। সমস্তরকম দাঁতখিচুনি উপেক্ষা করে আমি এইটা মেনে চলেছি এই জার্নিতে!

    হোটেলে বলে রেখেছিলাম আগে থেকেই -- সাত পদের বাফে চাই না। যেকোন একটা পদ, টোস্ট- বাটার হলেও চলবে -- আর চা, এইটা সাড়ে সাতটার মধ্যে চাইই। রাতেই ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলাম। সকাল-বেলা উঠে স্নান সেরে রেডি হয়ে, মেয়েকে তুলে দিয়ে রেডি হবার তাড়া দিলাম। তারপরে ব্রেকফাস্ট সেরে রেডি হয়ে গাড়িতে। অনেকটা রাস্তা যেতে হবে -- প্রায় দুশো কিমি। সকালের রোদ্দুরে নীল আকাশ আর পাহাড়গুলো পুরো ঝকমক করছে। প্রচন্ড গরম লাগছে। শীতের পোষাক, ওভারকোট ইঃ অবশ্য খারদুংলা টপের জন্য নিতে হয়েছে। খারদুংলা লে থেকে মাত্র চল্লিশ কিমি। গাড়ি চড়ার সময় অবিশ্বাস্য লাগছিলো যে আর ঘন্টা দেড়-দুয়েকের মধ্যে এমন একটা জায়গায় পৌঁছবো যেটা ১৮,৩৬৩ ফিট উঁচুতে, চারিপাশ বরফে ঢাকা থাকবে, খুব ঠান্ডা হবে। বাস্তবিকই তাই। কয়েক কিমি যেতে না যেতেই প্লেন রাস্তা ভ্যানিশ। চড়াই শুরু। লে শহরের তাপমান যেখানে তখন ৩২-৩৫ ডিগ্রী, সেখানে খারদুংলার পথে মিনিট পনেরোর মাথায় প্রথম পাহাড়ের ঘাসের ওপর ফ্রস্ট আর তার পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই বরফের প্যাচ! পাহাড় চড়তে চড়তে হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া আসা শুরু হয়েছে দুদিকের খোলা জানালা দিয়ে।

    জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে -- লে শহরটা তার সমস্ত গ্রীনারি আর গুম্ফা,প্যালেস, স্তুপ সমেত ছোট্ট ঝুলনের খেলনার সাজানো শহরের মতো হয়ে আসছে। কোনমতে ছবি তুলতে হচ্ছে। অজস্র পাথর ছড়ানো রাস্তায়, কোথাও সামনে থেকেও পাথর পড়ছে। তারি মধ্যে দোর্জে বেশ জোরে গাড়ি চালাচ্ছে। তার সঙ্গে সমানে গানও চলছে। আমাদের অবশ্য বুদ্ধঠাকুরের গান শোনায়নি। সবই বলিউড। দিন পনেরো সমানে গান শুনে জার্নির শেষে আমি আর মেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আগামী অন্ততঃ একমাস কোন হিন্দী গান শুনবো না। আর আশিকি ২ না কি একটা নাকি মুভি আছে তার ওই "কিউকি তুমহি হো" এটা পুরো জার্নিতে কমকরে তিনশো বার বেজেছে। এখনো ওই গানটা টিভিতে বা কোথাও দিলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দি!

    চারপাশে ঠান্ডা খুব বাড়ছে। সেই সঙ্গে হাওয়া থাকলেও বেশ একটা বদ্ধ ভাব যেন চেপে বসছে। অক্সিজেনের অভাবেই হবে। ওপর থেকে পাথর ভরা ট্রাক আর আরো অনেক গাড়ি আসছে। কোথাও কোথাও রাস্তা এতো সরু যে আগে থেকেই দেখে ড্রাইভার থেমে যায়। অন্য দিকের গাড়ি ধীরে ধীরে পাস করে গেলে তবেই আবার গাড়ি চলতে শুরু করে। তবে দোর্জে খুব নিঁখুত গাড়ি চালায়। যদিও, কম বয়েস বলে একটু ওভারটেকিংয়ের টেন্ডেন্সি আছে ! মাঝে মাঝেই রাস্তায় কাজ চলছে। পাথর পড়ে রাস্তা এতো তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে সবসময়েই রাস্তা সারাই চলে। কখনো কখনো পাথর পরিষ্কার করার জন্যও রাস্তা আটকে যায়। তবে সকালের তাপমাত্রা খুব বেশী বাড়ার আগে আগেই এইসব রাস্তা পেরিয়ে যাওয়া উচিত। দুপুর বারোটা,একটার পর থেকে রাস্তার পাশের জমে যাওয়া ছোট ঝর্না বা এমনি জমা বরফ গলতে থাকে। সেই জল তখন বেশ জোরে রাস্তার ওপর দিয়ে বইতে থাকে। তাতে নুড়ি পাথরের ওপর গাড়ির স্কিড করার চান্স খুব বেশী।

    এইভাবে গাড়ির সিটে নাচতে নাচতে বরফে ঢাকা খারদুংলা টপ এসে গেলো। ওপরে একটা মন্দির মতো তৈরী করে তাতে লাল-নীল কাপড়ের টুকরো আলা অজস্র দড়ি বেঁধে রাখা। যেকোন পাসের ওপরেই এটা কমন। পরে লে-মানালির রাস্তায় অগুণতি পাসে দেখেছি এই মন্ত্র লেখা রঙিন কাপড় আর পাথরের অজস্র টুকরো একটার ওপর একটা সাজিয়ে যাওয়া। যারাই এখানে আসে তারা অথবা স্থানীয় লোকজন এগুলো সাজিয়ে রাখে। অতো হাওয়া সত্ত্বেও পাথরের টুকরোগুলো সুন্দর দাঁড়িয়ে থাকে। একটাও পড়ে যায় না!

    টপের ওপরে গাড়ি থেকে নামাই নিয়ম। ছবি টবি তোলা হবে। আমি গাড়ি খুলে নামতে গিয়ে দেখলাম অসম্ভব ভারী লাগছে মাথাটা। আর বুকের ওপর কেউ যেন একটা ভারী পাথর চাপা দিয়ে দিয়েছে মনে হচ্ছে। একটা করে স্টেপ ফেলতেও যেন কত পরিশ্রম হচ্ছে। এই ফিলিংটা অবশ্য পার্সন টু পার্সন ভ্যারি করে। কারো অসুবিধে হয় - করো হয়্না। দোর্জে আর আমাদের হোটেলের লোকজনও বারবারই বলে দিয়েছিলো যাবার সময়েই অসুবিধে বেশী হয়। খুব চড়াই একটা রাস্তায় ঝট করে খারদুংলা টপ এসে যায়। ফেরার পথে নেমে ছবি তুললে বা একটু সময় কাটালে অসুবিধে অনেক কম হয়। শরীরও এই ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয় একটু বেশী সময় পাওয়া যায় বলে। আমরাও দেখেছি ফেরার সময় কোন কষ্টই হয়নি। নেমে ঘুরে দেখে টেখে দিব্বি ছবি তুলেছি। কিন্তু যাওয়ার পথে কোনমতে আমি মেয়েকে নামিয়ে কয়েকটা ছবি তুলতেই এতো কষ্ট হোলো -- ক্যামেরার শাটার টিপতেও যেন পরিশ্রম হচ্ছে। গাড়িতে ফিরে এসে গাড়ির সব জানালাগুলো বন্ধ করলাম। সুকান্ত অক্সিজেন স্প্রেটা বার করে পুরো গাড়িতে ছড়িয়ে দিলো। কতটা এফেক্ট হলো তা কে জানে, মেন্টাল এফেক্টেই অনেক চাঙ্গা হয়ে গেলাম। কাফেটেরিয়ার চা খেতে সবাই বারণ করেছিলো। তাই আমরা খেলাম না। দোর্জে নেমে চা পকোড়া খেয়ে এলো। খারদুংলার এই বরফ গলেই শিয়ক (shyok)নদীর উৎপত্তি।
  • রোবু | 213.147.88.10 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ২১:৩৬559021
  • দারুণ দেদি!!!
    আর আমি দু-তিন বছরের মধ্যেই।
  • de | 130.62.189.213 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ২২:৩৮559022


  • খারদুংলার ভালো রাস্তার কিছুটা - এখানে তবুও গাড়ি কিছুটা স্টেবল ছিলো বলে ফটো নেওয়া গেছে





    খার্দুংলা থেকে খালসারের রাস্তায় -
  • de | 130.62.189.213 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ২২:৪৫559023
  • শিয়কের শুরু -





    খানিক দূর গিয়ে এই শিয়ক সাথে সাথে চলবে পুরো নুব্রা ভ্যালি আর পানামিক-তুর্তুকের রাস্তায়। তবে নদী বলে বোঝা যায় অনেক পরে, তার আগে অব্দি বেশ সরু। বর্ষাকালে এই নদীই অবশ্য অন্য চেহারা নেয় --

  • সিকি | 126.203.163.12 | ২৭ অক্টোবর ২০১৩ ০০:৪৪559024
  • আহা, আহা, স্মৃতি রিভিজিটেড। আমি এখন আমার অ্যালবামের ছবি দেখছি পাশাপাশি। এক বছরেরও বেশি আগের কথা, তবু এখনও মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন ...
  • san | 113.21.184.83 | ২৭ অক্টোবর ২০১৩ ১৫:০১559025
  • বাঃ বাঃ , তারপর ?
  • + | 213.110.246.25 | ২৭ অক্টোবর ২০১৩ ১৬:৫৪559026
  • দে'দি

    ছবিগুলো দেখলাম, অদ্ভুত ভালো। ছবির আকাশের মত এমন নীল আকাশ কম দেখেছি। কবে যে লে' যাবঃ(
  • + | 213.110.246.25 | ২৭ অক্টোবর ২০১৩ ১৬:৫৫559027
  • লেখা শেষ হউক, জলদি জলদিঃ)
  • i | 147.157.8.253 | ২৮ অক্টোবর ২০১৩ ০২:৩৮559028
  • দে,
    খুব ভালো লাগছে, ঝরঝরে সুন্দর লেখা। সুন্দর ছবি।
  • de | 130.62.182.224 | ০২ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৩৮559029
  • গান্ধী আর ইন্দ্রাণীদিকে অনেক থাংকু!

    টপ থেকে নেমে কিছুক্ষণের মধ্যেই বেশ সমতল জায়্গা – খালসার। কয়েকখানা আর্মি ক্যাম্প,খানকতক রেস্তোরাঁ। ড্রাইভারের মতে পুরো জার্নিতে একমাত্র এখানেই ভদ্রস্থ ওয়াশরুম পাওয়া যাবে। এমনিতেও এতক্ষণের অমন দমচাপা পরিবেশ থেকে যেন মুক্তি পাওয়া যায়। খালসারও যথেষ্ট হাই অল্টিচুডে, কিন্তু খারদুংলার থেকে নীচে। ওয়াশরুম ব্যবহার করতে গিয়ে দেখা গেলো একটা রেস্তোরাঁর ভিতর দিয়ে যাবার পথ। পিছনে দরজার সামনে এক্জন দাঁড়িয়ে। ওয়াশরুমে যেতে হলে জনপ্রতি দশ টাকা তার হাতে দিতে হবে। না হলে প্রাকৃতিক দাক্ষিণ্য গ্রহণ করো! দরজা খুলে বেরিয়ে আমি আর মেয়ে দেখলাম, সারি সারি ওয়াশরুম, প্রত্যেকটায় তালা মারা! অগত্যা আবার ফেরত গিয়ে সেই টাকা চাওয়া লোককে খুঁজতে হবে। দরজার সামনে গিয়ে দেখি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দুমদাম করে খানিকক্ষণ কিলানোর পর - সে পাবলিক উদয় হয়ে দাঁত বের করে বলছে, হো গয়া? আমি রেগেমেগে বল্লাম, দরজাগুলোয় তো সব তালা মেরে রেখেচো, ক্যাসে হো জায়্গা? এই শুনে সে বল্লো, আরে ওসব তো অফসার লোগোকে লিয়ে -- আপলোগোকে লিয়ে উও বাঁয়ে তরফ চলে যাইয়ে। অগত্যা বেরিয়ে বাঁয়ে তরফ যেতে না যেতে একখান পাহাড়ী নালার ওপরে বাঁশ ফেলে রেখেচে, সেটা পার হয়ে অন্যপারে একটা দরজা খোলা রুম -- গন্ধেই মালুম দিচ্ছে, যে ওয়াশরুম। কোনমতে সেই বাঁশ পেরিয়ে অন্নপ্রাশনান্নের উদ্গমনেচ্ছা ব্যর্থ করে কাজ সেরে আসা গেলো। ফিরে এসে সেই লোকটাকে বল্লাম যে - ওয়াশরুম ইতনা গন্ধা কিঁউ রাখতে হো? পয়সা লেতে হো অর সাফ ভি নেহী করতে! সে আর একগাল হেসে বল্লো - সাফ হি তো হ্যায়! তখন খুব রাগ হলেও - পরে প্যাংগং , সো মোরিরি, সো কার বা লে-সারচু রোডে ট্রাভেল করতে গিয়ে এর মানে বুঝেছিলাম। বিভৎস সব ওয়াশরুমের স্মৃতি!

    আবার গাড়িতে চেপে বসা হোলো। এর পরের গন্তব্য ডিস্কিট হয়ে সুমুর। তবে আমরা ডিস্কিটে এখন ঢুকবো না। পানামিকে যাবো। সুমুরে পৌঁছে রাস্তার ধারে ছোট ছোট রেস্তোরাঁর একটায় লাঞ্চ সারা হোলো। বেশী অপশন নেই -- সেই স্যুপ আর চাওমিন। অপশন ট্রাই করার সময়ও অবশ্য নেই। এইবার চলা শুরু পানামিকের দিকে। পথে অপূর্ব নিসর্গ দৃশ্য -- আর তেমনি গরম। সুমুর থেকে পানামিকের রাস্তা মোটামুটি সমতলের ওপর দিয়েই গাড়ি চলে। দুপাশে বিশাল উঁচু উঁচু বরফের টুপি পরা পর্বতশ্রেণী। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। কখনো কখনো স্থানীয় বাসিন্দারা ছোট পাহাড়ী নালায় জামাকাপড় কাচছে। কিন্তু ট্যুরিস্ট ভেহিকল প্রায় নেই। তবে কয়েকজন ফরেনারকে দেখা গেলো সাইকেলে চলেছে উদ্দেশ্যবিহীন। এই এলাকায় মাঝে মাঝেই এদের সাইকেলের দেখা মেলে। পানামিক যাওয়ার পথে রাস্তার দুদিকে একধরণের ঝাউগাছের মতো গাছের দেখা মেলে, লালচে রঙের পাতা। আগের দিন লে মার্কেটে এইরকম গাছের ডাল আর পাতা বস্তায় করে বিক্রি হতে দেখেছিলাম। দোর্জে বল্লো এগুলো জ্বালানী হিসেবে বিক্রি হয়,শীতের সময় এগুলো কম আঁচে ধিকিধিকি করে জ্বলে ঘর গরম রাখে।


    শিয়ক নদীকে পিছনে ছেড়ে এসে এখন সাদা বালি আর মাঝে মাঝে ঘাসভরা প্রান্তর। তারপরেই শুরু হয়ে যায় অগভীর জলাজমি।







    এরকম বেশ কিছুদূর চলার পর একটা পাহাড়ের গা বেয়ে গাড়ি উঠে গেলো বেশ কিছু দূর। যেখানে থামলো তার একদিকে পাহাড় জুড়ে কনস্ট্রাকশন চলছে। অন্য দিকে একটা সুলভ শৌচালয়ের মতো বাড়ি। সামনে একটা বোর্ড টানানো। সবে বলতে যাচ্ছিলাম, আভি জরুরত নেহি হ্যায় -- বোর্ডের দিকে চোখ গেলো। হট স্প্রিং পানামিক। আমি ভেবেছিলাম ন্যাচারাল হট স্প্রিং হবে। তা এখানে প্রতি জনে দশ টাকা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলার কাছে কবুল করে ভেতরে ঢুকে দেখা গেলো একটা ছয় বাই পাঁচ ফুটের টাইল বাঁধানো এরিয়ায় জল ভরা। পাশে একটা মগ। আর একটা মেরুন রঙের তোয়ালে রাখা। এখানে কে স্নান করবে? পাশে অনেকগুলো ছোট ছোট বাথরুম, স্নান সেরে চেঞ্জের জন্য। তারি একটা থেকে দেখলাম লোক্যাল এক মহিলা গা-হাত-পা মুছতে মুছতে বেরোচ্ছেন। ভাবছিলাম জলে একটু হাত দেবো। সেই ইচ্ছেটাও এখন আর রইলো না। দেখে টেখে বেরিয়ে গাড়ি চড়লাম। সমস্ত লে জুড়ে এমন অজস্র হট স্প্রিং ছড়িয়ে আছে। লে র মধ্যে থাকা হট-স্প্রিংগুলোর সাথে একটা করে এইরকম ঘর জুড়ে দেওয়া থাকে প্রায়শই। হট স্প্রিংয়ের জলে সালফার থাকে এবং আরো কিছু মিনারাল থাকার জন্য ওই জলে স্নান করলে অনেক উপকার হয় বলে লোকে বিশ্বাস করে। লোক্যাল লোকের আয়ের একটা উৎস এইসব হট-স্প্রিং। এর পরে লে-মানালি রোডে জনশুন্য প্রান্তরে এরকম একের পর এক হট স্প্রিং দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম। কোন দাবীদার নেই, কিচ্ছু নেই। দুঃখের বিষয়, সেই সময় আলো কম থাকার জন্য একটারও ছবি নেওয়া যায়নি। বেশীর ভাগই পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে বা মাঠের মধ্যে টগবগ করে ওঠা জলের ফোয়ারা। ফুটন্ত জল। হাত দেওয়া যায় না। ওই সব হট স্প্রিং স্নানাগারগুলোতে এতে ঠান্ডা জল মিশিয়ে স্নানের উপযোগী করে রাখে।
  • de | 130.62.182.224 | ০২ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৪২559030
  • পাহাড় থেকে নেমে আরো কিছুদূর যাবার পর অনেক দূরে হাত দেখিয়ে দোর্জে বলে ওই যে ওখানে দূরে সিয়াচেন গ্লেসিয়ার। অনেক দূরে মেঘের গায়ে ছবি আঁকা -- প্রথমে কালো পাহাড়, তারপরে ছাইরঙা আর তারো পরে বরফে ঢাকা পর্বতশ্রেণী। ওরি মধ্যে কোথাও সিয়াচেন গ্লেসিয়ার আছে। আরো ওই দিকে এগোলে এরপর আর্মি বেস ক্যাম্প আর তারপরে আর সাধারণ মানুষের প্রবেশ-নিষিদ্ধ। তখন ঘড়িতে প্রায় তিনটে। একটু ছবি-টবি তুলে ডিস্কিটের দিকে রওনা দিলাম।

    https://lh5.googleusercontent.com/yvwO0ScJdMRVwPgovlTkkoXcWuamT5YjBOHbOP8dS-U=w704-h519-no
  • de | 130.62.182.224 | ০২ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৪৭559033
  • de | 130.62.182.224 | ০২ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৪৯559034
  • গ্লেসিয়ারের ছবিটা এখানে এলো না -- ওপরের লেখার সাথে লিং ক্লিকালে পাওয়া যাবে।
  • সিকি | ০৩ নভেম্বর ২০১৩ ০০:৫১559035
  • বাঃ!
  • de | 130.62.160.122 | ০৩ নভেম্বর ২০১৩ ১১:২১559036

  • এসেছে
  • π | ০৩ নভেম্বর ২০১৩ ১৮:৪৮559040
  • jpg বা png এক্সটেনশন না থাকলে ছবি আসবেনা।
  • সিকি | ০৩ নভেম্বর ২০১৩ ১৯:৩১559041
  • একটা আলাদা টই খুলে লিখুন প্লিজ।
  • sosen | 125.242.156.80 | ০৩ নভেম্বর ২০১৩ ২০:১৫559042
  • খুব ভালো হচ্ছে। কি করে এরা এত মনে রাখে, বাবা!
  • santanu | 102.96.225.36 | ০৩ নভেম্বর ২০১৩ ২০:৩৭559044
  • ও হরি এটা লাদাখের টই, ভেরি সরি

    আর ছবিগুলো না এসে ভালো হয়েছে, না হলে, লাদাখ আর ভুটানের পাহাড়, নদী মিলে মিশে খিচুড়ি হয়ে যেতো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন