এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দ‍্য রমস্তনকি গেজেটিয়ার-১৩

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ জুলাই ২০২৪ | ২৬৬ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
    পাঁচই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪

    "আমি ইতিহাস লিখতে চাই। তার আগে শুধু মৃত্যু থামাতে পারবে আমায়।"

    আর কদিন পরেই বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। আমি তার কথা চিন্তাও করছি না। আমি ভাবছি উচ্চমাধ্যমিকের পরে কী নিয়ে পড়া যায়? আমার সব বিষয়ই ভালো লাগে। বেশ দোটানায় পড়ে গেছি। একে কি আদৌ দোটানা বলা যাবে? চারটে বিষয়, তাই চারটানা বলা বোধহয় ভালো হবে।

    মিনু বলছিল ওর নাকি মামার ক্যানসার হয়েছে। কান্নাকাটি করছিল। মামার জন্য এত ভালোবাসা সবার সাধারণত হয় না। কিন্তু মিনুদের অবস্থা নাকি আগে ভালো ছিল না। সরকারি যে বেসিক প্যাকেজ আছে, তার ভরসায় দিন চলত। ওর ওই মামাই ওদের নানাভাবে সাহায্য করেছে। ওর বাবাকে হার্ডওয়্যার দোকানটা ওর মামাই করে দিয়েছে। তাছাড়া সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থেকেছে। দুঃখ হওয়াটা স্বাভাবিক। অবশ্য ক্যানসার এখন তেমন বড় কিছু ব্যাপার নয়। কিন্তু এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, আর কিছু করার নেই। শরীরের প্রায় সমস্ত কোষ মেটাস্ট্যাসিসের দৌলতে ক্যানসার আক্রান্ত। তাই সবগুলোকে যদি মেরে ফেলাও যায়, মানুষটা তাতেও বাঁচবে না।

    আমি নার্সিং হোমটাই বেশ জাঁকিয়ে বসেছি। মালিকের পরেই আমি। আমাকে হয়তো ম্যানেজার বানিয়ে দিত। কিন্তু বয়সটা কম বলেই সেটা করেনি। করলেও আমি হতাম না। আমি যতই যোগ্য হই না কেন, এখনও মানুষ যোগ্যতার থেকে বয়সকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সেটা ভুল নয়, কারণ স্বাভাবিক মানুষদের যোগ্যতা বয়সের সাথে আসে। তাই ওদের অবচেতনে বয়সের সাথে যোগ্যতার সম্পর্ক জেঁকে বসেছে। আমি যদি ব্যতিক্রম হই, ওরা কী করবে?

    জমি দেখতে গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর জায়গাটা। আমি কথা বলে, বায়না দিয়ে এসেছি। আমার কাছে ক্যারাব তো পুরো নেই। হয়তো মাস ছয়েক দাঁড়ালে সেটা হিয়ে যাবে, কিন্তু লোকটা কি এতদিন অপেক্ষা করবে? ভাবছি ফয়জল বাবুকে বলব। কিন্তু তিনিও বলছিলেন তাঁর নাকি হাতটান। অপারেশনের যন্ত্রপাতি আরো কেনা দরকার, তাছাড়া কিছু স্ক্রিনিং যন্ত্রপাতি কিনতে হবে, তার জন্যও নাকি ক্যারাব দরকার। মনে হয় কেনা হবে না জমিটা। আবেগে খামোখা বায়নাটা দিয়ে দিলাম। ফেরতও দেবে না।

    এখন সেই আগুনটা আর জ্বালাতন করে না। আমি পুরোপুরি তাকে আয়ত্ত করে নিয়েছি। আমার ইচ্ছামতো সেটা ব্যবহার করি। যদিও এখনো তেমন দরকার হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি লাগে, সামলাতে পারব। সরকারি গোয়েন্দারা কিন্তু এখনো আমার উপর নজর রাখছে। এখনো পর্যন্ত কেন কোনো আক্রমণ আসেনি সেটাই ভাবছি। ওরা কি বড়ো কিছু পরিকল্পনা করছে?

    দাদা এখন টেরাডাইটদের নেতা হয়েছে শুনছি। নিত্যদিন খবরে তার নাম আসে। এখানে চোরা আক্রমণ চালাচ্ছে, ওখানে পুলিশ মেরে ফেলছে, কোথায় আধাসামরিক বা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের খুন করছে। তাতে যে বিশেষ কিছু হয়েছে তা নয়। তবে প্রচন্ড অরাজকতা ছড়াচ্ছে চারিদিকে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। পুলিশ, সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষকে বিদ্রোহী ভেবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, পেটাচ্ছে। মা আর দিদি পুরোপুরি দাদা ও টেরাডাইটদের সমর্থন করে। যদি প্রয়োজন হয় রাস্তাতেও নামবে। কদিন আগে গিয়েছিলাম। জানি অর্থকষ্টে আছে। কিছু ক্যারাব নিয়ে গিয়েছিলাম দেব বলে। মা দরজা খুলেছিল। প্রথমে তো ঢুকতে দিতেই চায়নি। পরে দিদি এসে মা কে বলতে ঢুকতে দিল। জিজ্ঞেস করলাম সব কথা। উত্তর দিদিই দিল। মা সারাক্ষণ মুখ ফিরিয়ে বসেছিল। আসার সময় আমি ক্যারাবগুলো নিয়ে দিদির হাতে দিতে গেলাম। দিদি হাত সরিয়ে নিল। মা ফিরে তাকালেন আমার দিকে। চোখে যেন আগুন জ্বলছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "দয়া দেখাতে এসেছ!বেরোও আমার ঘর থেকে। ছেড়ে চলে যখন গেছিস আর তোর কোনো সাহায্যের দরকার নেই তোর। আমি মরে গেলেও মুখ দেখতেও আসবি না। বেরো!"
    আমি কিছু বললাম না। বলেও লাভ ছিল না। রাগের মাথায় কি আর কথা বলে কিছু লাভ হয়?

    আমার মনে হয় থিওসকে এদের সমর্থনের কথা বলে দেওয়া উচিত। নাহলে লড়াইয়ে তো মরবেই। বরঞ্চ সরকার যদি গ্রেপ্তার করে কিছু করার আগেই, শাস্তি দিলেও বেঁচে তো থাকবে। আর আমারও লাভ হবে। আমি থিওসের নেকনজরে চলে আসব। নিষ্ঠুর শোনাচ্ছে হয়তো। কিন্তু বাঁচার থেকে বড় প্রয়োজন কি আছে আর? আমিও তো ওদের বাঁচাচ্ছি। দাদাটাকেও যদি গ্রেপ্তার করানো যেত!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন