এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  দর্শন

  • পশ্চিমা দর্শনের গপ্পোগাছা — গ্রিক সভ্যতার উত্থান (২)

    প্যালারাম লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | দর্শন | ২৮ জুলাই ২০২৪ | ৩১৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মুখবন্ধ | খণ্ড-১, পর্ব-১, বিভাগ-ক (১) | খণ্ড-১, পর্ব-১, বিভাগ-ক (২)
    The Death of Socrates - Jacques-Louis David , সূত্র


    সক্রেটিসের আগে

    গ্রিক সভ্যতার উত্থান

    আগের পর্ব থেকে চলছে...


    কেন্দ্রে একটি নগর, তার চারপাশে চাষাবাদের জমি—এই নিয়ে গড়ে উঠতো একটি রাজ্য। এরকম অনেকগুলি ছোটো, স্বাধীন রাজ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল গ্রিস। গ্রিসের বিভিন্ন অংশে সভ্যতার অগ্রগতি মোটেই একইরকম ছিল না—গোটা হেলেনিক কীর্তিকলাপে আদতে খুব কম সংখ্যক নগরের অবদান।

    সামরিক দিক থেকে স্পার্টার গুরুত্ব খুব বেশি হলেও, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তেমন কিছু নয় (স্পার্টা সম্পর্কে পরে আরও বিস্তারে কথা হবে)। বাণিজ্যকেন্দ্র করিন্থ (Corinth) বেজায় ধনী আর সমৃদ্ধ হলেও, মানবসম্পদের দিক থেকে তেমন রত্নপ্রসবিনী ছিল না।

    এছাড়া ছিল কৃষিপ্রধান গ্রামীণ জনপদ—যেমন প্রবাদপ্রতিম আর্কাদিয়া (Arcadia) [৯]—শহুরে চোখে শান্ত, রমণীয়, কিন্তু আসলে বন্য আতঙ্কে ভরা। এখানকার বাসিন্দারা এর্মিস (Hermes) আর প্যান (Pan)-এর উপাসনা করতো; এখানকার বহু ফার্টিলিটি কাল্টেই অনেকসময় একটা সাধারণ চৌকো থাম-ও দেবতাজ্ঞানে পূজিত হত। ছাগল ছিল উর্বরতার প্রতীক, কারণ চাষীদের হাতে ষাঁড় কেনার মতো পয়সা ছিল না। খাদ্যাভাবের সময় প্যান-এর মূর্তিকেই ধরে পেটানো হতো (এখনো চিনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমনধারা চলে)। বলি দেওয়া আর নরমাংসভক্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক নেকড়ে-মানবের (were-wolf; ওয়্যারউলফ) গোষ্ঠীও নাকি গড়ে উঠেছিল। বলিপ্রদত্ত নরমাংস যারা খেত, তারাই নাকি ওয়্যারউলফ হয়ে যেত। জ়িউস-লিকেওস (Zeus Lykaios) বা নেকড়ে-দেবরাজ-এর নামে এক পবিত্র গুহা ছিল, যার ভেতরে কারুর ছায়া পড়তো না আর যে/যারা একবার এখানে প্রবেশ করতো, এক বছরের মধ্যে মারা যেত। এসব কুসংস্কার সবই এই সনাতনী যুগে ফুলে-ফেঁপে উঠছিল [ড]



    Zeus turning Lycaon into a wolf, engraving by Hendrik Goltzius. (সূত্র: উইকি )


    অনেকে বলে প্যান-এর আসল নাম নাকি ছিল পাওন (Paon), যার মানে পশুপালক বা রাখাল। পারসিক যুদ্ধের ঠিক পরে, পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্স যখন এই দেবতাটির উপাসনা শুরু করে, তিনি তাঁর বেশি প্রচলিত নামটি পান, যার অর্থ ‘সর্ব-দেবতা’ (All-God) [ঢ]। 

    ধর্ম (religion) শব্দটির যে অর্থ আমরা বর্তমানে বুঝি, সে জিনিস প্রাচীন গ্রিসে ভালোই প্রচলিত ছিল। যদিও অলিম্পিয়ানদের সঙ্গে নয়, এই ধর্মের যোগ ছিল দিওনিসুস (Dionysus) বা ভাখেস (Bacchus)-এর সঙ্গে, আমাদের ধারণায় যিনি মদ ও মত্ততার এক অল্পবিস্তর কুখ্যাত দেবতা। উল্লেখযোগ্য এক ব্যাপার হল – এঁর উপাসনার মাধ্যমে এক গভীর অতীন্দ্রিয়বাদ গড়ে উঠেছিল, যা বহু দার্শনিককে প্রবল প্রভাবিত করে—এমনকি খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্বের আকার নির্ধারণেও এর প্রভাব ছিল। যারা গ্রিক চিন্তাধারার প্রগতির খবর রাখতে চায়, তাদের সকলেরই এই বিষয়টা বোঝা দরকার।

    দিওনিসুস বা ভাখেস আসলে থ্রেসীয় (Thracian) দেবতা [১০]। থ্রেসীয়রা গ্রিকদের তুলনায় সভ্যতায় পিছিয়ে ছিল—গ্রিকরা এদের বর্বর মনে করতো। সব আদিম কৃষিবিদদের মতোই এদেরও ফার্টিলিটি কাল্ট ছিল আর ছিলেন এক দেবতা, যাঁর কাজ ছিল উর্বরতা বৃদ্ধি করা। এঁর নাম ছিল ভাখেস। ভাখেসের শরীর ষাঁড়ের না মানুষের – তা কখনোই ঠিক পরিষ্কার হয়নি। প্রথম যখন থ্রেসীয়রা বিয়ার বানাতে শেখে, এদের মনে হয়েছিল – নেশা এক দৈব ব্যাপার, আর তার কৃতিত্ব পান ভাখেস। পরে যখন তারা আঙুরলতা খুঁজে পেল আর ওয়াইন খেতে শিখল, ভাখেসের খ্যাতি আরও বাড়ল। অচিরেই, উর্বরতা বাড়ানো—যা তাঁর মূল দায়িত্ব ছিল—পাদপ্রদীপের আলো থেকে সরে গিয়ে, তার জায়গা নিল আঙুর ফলন; ওয়াইন-সেবনের ফলে জন্মানো দৈব মাতলামোই হয়ে দাঁড়ালো ভাখেসের খ্যাতির উৎস।



    Sacrificio a Baco (Massimo Stanzione) (সূত্র: উইকি )


    ঠিক কোন সময়ে তাঁর উপাসনা থ্রেস থেকে গ্রিসে এসেছিল জানা না গেলেও, এ সম্ভবত লিখিত ইতিহাসের উন্মেষকালের আগের ঘটনা। সনাতনীরা ভাখেসের কাল্ট-এর বৈরী হলেও, কিছুদিনের মধ্যেই তা গ্রিসে ঘাঁটি গেড়ে বসে। এই কাল্টের নিয়মকানুনে বহু বর্বরতার চিহ্ন বিদ্যমান, যেমন, বুনো জন্তুদের ছিঁড়ে টুকরো করে তার কাঁচা মাংস খাওয়া। নারীবাদের এক অদ্ভুত উপাদানও ছিল এর মধ্যে। সমাজের সম্মানীয়া গৃহকর্ত্রী আর কন্যারা, পদমর্যাদা নির্বিশেষে, ন্যাড়া পাহাড়ের মাথায় বড়ো সংখ্যায় জড়ো হয়ে, সারা রাত ভাবাবেশে নেচে কাটাতেন—মূলত আধ্যাত্মিক, তবে কিছুটা কোহল-প্রভাবিত ভাবের আবেশ। এসব স্বৈরাচার তাঁদের স্বামীদের মোটেও পছন্দ না হলেও, ধর্মাচরণের বিরোধিতা করার সাহস তাদের ছিল না। এই কাল্টের সৌন্দর্য আর বর্বরতা – দুয়েরই খতিয়ান আছে ইউরিপিডিস (Euripides)-এর ভাখি (Bacchae) নাটকে [১১]

    গ্রিসে দিওনিসুসের সাফল্য এমন কিছু অবাক করার মতো ঘটনা নয়। দ্রুত সভ্যতার মুখ দেখেছে – এমন যে কোনো সম্প্রদায়ের মতোই গ্রিকরাও—অন্তত তাদের কিছু অংশ—আদিমের প্রতি একধরনের ভালোবাসা অনুভব করতো, চলতি সময়ের নীতির নিগড় ছাপিয়ে এক আরো প্রবৃত্তি-তাড়িত, আবেগ-নির্ভর জীবনযাপনের অভিলাষী ছিল। অন্তরের তাগিদে নয়, যে মানব বা মানবী নিয়মের চাপে পড়ে বাহ্যিক ব্যবহারে সভ্য – তাদের কাছে যুক্তি বিরক্তিকর আর ন্যায়পরায়ণতা এক বোঝা—একরকমের দাসত্ব বলে প্রতিভাত হয়। স্বভাবতই, এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় চিন্তনে, মননে এবং অবশেষে, আচরণে। চিন্তায় যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা নিয়েই আমাদের উৎসাহ, কিন্তু মনন আর আচরণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু কথা তার আগে বলা দরকার।

    সভ্য ব্যক্তির সঙ্গে বর্বরের পার্থক্য বিচক্ষণতার (prudence)—বা আরেকটু প্রসারিত অর্থে—দূরদর্শিতার (forethought)। ভবিষ্যত সুখের জন্যে সভ্য ব্যক্তি বর্তমানের যন্ত্রণা সহ্য করতে সক্ষম, সে ভবিষ্যত যত দূরেরই হোক না কেন। কৃষির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গেই এই অভ্যাসের গুরুত্ব অনুভূত হয়েছিল; কোনো বন্য প্রাণী বা বর্বর মানব আসন্ন শীতের জোগাড়ের কথা ভেবে বসন্তে পরিশ্রম করে না – কিছু প্রবৃত্তিগত আচরণ বাদে, যেমন, মৌমাছির মধু তৈরি করা বা কাঠবেড়ালির বাদাম সঞ্চয়। এইসব উদাহরণে দূরদর্শিতার ছাপ নেই, সরাসরি এক প্রবৃত্তিগত উদ্যোগ আছে, মানুষের চোখে যা পরবর্তীকালে লাভজনক। প্রবৃত্তির সামান্যতম উস্কানি ছাড়াও, কেবল যুক্তি যখন কাউকে পরবর্তীকালে লাভবান হওয়ার কথা বলে – সেই অবস্থায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে পারাই আসলে দূরদর্শিতা। শিকার করতে দূরদর্শী হতে হয় না, কারণ সে কাজ করতে ভালো লাগে; কিন্তু জমি-কর্ষণ শ্রমসাধ্য কাজ—স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বশে কখনোই করা সম্ভব নয়।

    দূরদর্শিতা ব্যক্তির আত্ম-নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ। সভ্যতা কেবল ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই প্রবৃত্তিকে লাগাম পরায়নি, সে কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল আইন, আচার আর ধর্ম। এগুলি বর্বর জীবনেরই উত্তরাধিকার, তবে প্রবৃত্তির প্রভাব এখানে কম, প্রকরণের বেশি। কিছু কার্যকলাপকে অপরাধ বলে দাগানো হল, আর যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থাও হল; অন্য কিছু কাজ—যদিও আইনের চোখে অপরাধ নয়—সমাজের চোখে ন্যক্কারজনক বলে চিহ্নিত হল। জমির ব্যক্তিগত মালিকানা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার ফলে তার পিছু নিয়ে এল নারীর বশ্যতা স্বীকার, আর প্রায়শই, একটি দাস-শ্রেণীর নির্মাণ। একদিকে যেমন গোষ্ঠীর ভালোমন্দের ভার ব্যক্তির ওপর চাপানো হল, অন্যদিকে তেমনই—নিজের গোটা জীবনকে নিয়ে ভাবার অভ্যেস তৈরি হওয়ার ফলে—ব্যক্তি আরো বেশি করে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানকে বিসর্জন দিতে শুরু করল।

    স্পষ্টতই, এই প্রক্রিয়াটিকে বেশি লম্বা করলে তাতে আখেরে ক্ষতি হয়, উদাহরণ – যারা হাড়কিপটে। কিন্তু তদ্দূর না গেলেও, অনেক সময়েই, জীবনের শ্রেষ্ঠ উপাদানগুলিও ‘বিচক্ষণতা’-র হাড়িকাঠে বলি হয়। দিওনিসুস-এর উপাসকের প্রতিক্রিয়া এই বিচক্ষণতার বিরুদ্ধেই। বিচক্ষণতা তার যেসব অনুভূতি তেজকে প্রশমিত করেছিল, শারীরিক বা আধ্যাত্মিক নেশার ঘোরে সে আবার সেসব ফিরে পায়; জগৎ আবার সৌন্দর্য আর আনন্দে ভরে যায়, দিনগত পাপক্ষয়ের জোয়াল থেকে তার কল্পনা মুক্তি পায়। ভাখীয় (Bacchic) আচার অনুষ্ঠানগুলি থেকে যার জন্ম হয়েছিল, তাকে বলা হত ‘উদ্দীপনা’ (enthusiasm), যার বুৎপত্তিগত অর্থ – উপাসকের শরীরে দেবতার প্রবেশ; উপাসকের বিশ্বাস ছিল – এভাবে দেবতার সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায়। মানব-কীর্তির অনেক কিছুর সঙ্গেই কোনো না কোনো পরিমাণে মত্ততা জড়িয়ে আছে [ণ], বিচক্ষণতার কিছু অংশ আবগের ঝড়ে উড়ে যাওয়ার ফলে। ভাখীয় মশলা না থাকলে জীবন নির্ঘাত জোলো হয়ে যেত; এই ফোড়নের উপস্থিতির ফলেই জীবন অনিশ্চিত, বিপদসংকুল। আবেগের সঙ্গে বিচক্ষণতার এই লড়াইয়ের শরিক আমাদের গোটা ইতিহাস। কোনো এক পক্ষকে যেখানে পূর্ণ সমর্থন করা যায় – এ লড়াই সে লড়াই নয়।

    চিন্তার জগতে, সভ্যতার বিচক্ষণ অংশটি মোটামুটি বিজ্ঞানের সমার্থক। কিন্তু নিখাদ বিজ্ঞানে পরিতৃপ্তি নেই; আবেগ, শিল্প, ধর্ম – মানুষের সবই দরকার। বিজ্ঞান জ্ঞানের সীমা নির্দেশ করতে পারে হয়তো, তবে কল্পনার নয়। গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে—তাঁদের উত্তরসূরীদের মতোই—একদল ছিলেন মূলত বিজ্ঞানী, আরেকদল মূলত ধার্মিক। এই দ্বিতীয় দলটি, সরাসরি বা পরোক্ষভাবে, ভাখেস-এর ধর্মের কাছে বহুলাংশে ঋণী। এ কথা প্লেটোর জন্যে বিশেষভাবে প্রযোজ্য, আর তাঁর মাধ্যমে, পরবর্তী যুগের সেইসব উন্নত চিন্তার জন্যেও—যার প্রচলন খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব নামে।



    Marble relief of a Maenad and two satyrs in a Bacchic procession. AD 100, British Museum, London. (সূত্র: উইকি )


    দিওনিসুসের উপাসনার চরিত্র—তার মূল চেহারায়—অসভ্য এবং অনেকভাবেই ঘৃণ্য। ঠিক এই চেহারাটি দার্শনিকদের আকর্ষণ করেনি – করেছিল সেই সাধু, আধ্যাত্মিক চেহারা, যার কৃতিত্ব দেওয়া হয় অর্ফেয়স (Orpheus)-কে, যেখানে শরীরের মত্ততার জায়গা নিয়েছিল মনের নেশা।

    অর্ফেয়স এক অনুজ্জ্বল, অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। কেউ বলে তিনি সত্যিকারের মানুষ, কারুর মতে তিনি দেবতা বা কল্পনার নায়ক। সাধারণত ভাখেস-এর মতোই থ্রেস থেকে তাঁর উৎপত্তি ধরা হলেও, তাঁর (বা তাঁর নামাঙ্কিত আন্দোলনটির) উৎস ক্রিট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অর্ফীয় মতবাদগুলির প্রথম উৎস যে মিশরে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই, আর ক্রিট-এর মাধ্যমে মূলত এভাবেই মিশর গ্রিসকে প্রভাবিত করেছিল। কথিত আছে, যে, অর্ফেয়স একজন সংস্কারক ছিলেন, যাঁকে উন্মত্ত মেনাদ-রা (Maenads; ভাখীয় পুরাণের কল্পনা) ছিঁড়ে টুকরো করে [১২]। সঙ্গীত নিয়ে তাঁর উৎসাহ পরবর্তীকালে যতটা দেখা গেছে, পুরোনো কিংবদন্তীতে ততটা পাওয়া যায় না। প্রাথমিকভাবে তিনি ছিলেন একজন পুরোহিত ও দার্শনিক।

    অর্ফেয়সের (যদি সত্যিই থেকে থাকেন) শিক্ষা যা-ই হোক না কেন, অর্ফীয়-দের (Orphic) শিক্ষা সর্বজনবিদিত। তারা আত্মার স্থানান্তরে বিশ্বাস করতো; তাদের মতে, মর্ত্যে কাটানো জীবনের ওপর নির্ভর করেই ঠিক হবে যে আত্মার কপালে অনন্ত স্বর্গ, অনন্ত নরক নাকি সাময়িক অত্যাচার নাচছে। এদের লক্ষ্য ছিল ‘শুদ্ধ’ (pure) হওয়া – অংশত শুদ্ধিকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, অংশত কিছু বিশেষ ধরনের কলুষ এড়িয়ে চলার মাধ্যমে। এদের মধ্যে সবচেয়ে গোঁড়ারা প্রাণীজ খাবার বর্জন করেছিল—কেবল অনুষ্ঠানের সময় আচারের অংশ হিসেবে খেত। মানুষকে এরা আংশিক পার্থিব, আংশিক স্বর্গীয় বলে মনে করত; শুদ্ধাচারী জীবনযাপনের ফলে স্বর্গীয় অংশ বাড়ে, আর মর্ত্যের ভাগ কমে। এই পথের শেষে একজন মানুষ ভাখেস-এর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে পারেন, তাঁকে তখন ‘একজন ভাখেস’ বলে ডাকা যায়। এর সঙ্গে এক খুঁটিনাটি-সমৃদ্ধ ধর্মতত্ত্বও ছিল, যেখানে ভাখেস আসলে দু-বার জন্মেছেন – একবার মা সেমেইলি (Semele) গর্ভ থেকে, আরেকবার পিতা জ়িউসের জঙ্ঘা থেকে।



    The Death of Orpheus, detail from a silver kantharos, 420–410 BC (সূত্র: উইকি )


    দিওনিসুস-এর পুরাণের অনেকগুলি ধরন। তার একটিতে, ভাখেসের মা পার্সেফোনি, বাবা জ়িউস; বাল্যকালে টাইটানরা তাঁকে টুকরো করে ছিঁড়ে খায়, শুধু হৃদয়টি বাদ দিয়েছিল। কেউ বলে জ়িউস সেই হৃৎপিণ্ডটি সেমেইলিকে দিয়েছিল, অন্যদের মতে জ়িউস সেটি গিলে ফেলে; গল্প যাই হোক, এর পরেই ভাখেস-এর দ্বিতীয় জন্ম হয়। বন্যপ্রাণীকে ছিঁড়ে টুকরো করে তার কাঁচা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে নাকি টাইটানদের দিওনিসুসকে ছিঁড়ে খাওয়ার পুনরাভিনয় হতো – জন্তুটিকে কোনো একভাবে দেবতার এক রূপ বলে কল্পনা করা হত। টাইটানদের জন্ম পৃথিবীতে, কিন্তু দেবতার মাংস খাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে একখণ্ড দৈব স্বত্ত্বার জন্ম হয়। এভাবেই, মানুষ অংশত স্বর্গের, অংশত মর্ত্যের – ভাখীয় আচার অনুষ্ঠান তাকে পূর্ণ দৈবভাবের নিকটবর্তী করত।

    এক অর্ফীয় পুরোহিতের মুখে ইউরিপিডিস এক লক্ষণীয় স্বীকারোক্তি বসিয়েছেন [, ১৩]:

    ক্রিটের শতেক দুর্গ যাঁর পদতলে,
        পিতা যাঁর দেবরাজ—ইউরোপা-স্বামী
        ‘টির’-বংশলতায় যিনি জ়িউস-অনুগামী
    তাঁরই নাম গান করি মন্দিরতলে,
    ছায়াচ্ছন্ন, কড়িকাঠ খোদিত কাঠের।
        সাইপ্রেস কাঠ, মাঝে ক্যালিব-এর স্টিল [১৪]
        পোক্ত করেছে তাকে দুইয়ের মিল
    তার ওপর রক্ত লেপা বন্য ষাঁড়ের...
    ফুরোলো এ ভৃত্যের সরল জীবন
        ইডা-কুল জ়িউসের আমি ব্রতচারী, [, ১৫]
        সেই পথে মধ্যরাতে আমি ঘুরে মরি,
    যেখানে জ়াগ্রেয়ুস করেন ভ্রমণ। [দ]
    রক্তাক্ত ভোজ সেরে, মায়ের পাহাড়ি
        আগুন ধরেছি, প্রভুর বজ্র-হুঙ্কার
        সহন করেছি, কাজ পেয়েছি পূজার
    ‘একজন ভাখোস’ আমি, কবচধারী।
    শুভ্র বস্ত্র পরে, ধুয়েছি মলিন
        মানবজন্ম থেকে, শ্মশান-কাদাও।
        ছোঁবো না তেমন মেধ, যতই চাপাও—
    যে শরীরে প্রাণ ছিল কোনো একদিন।



    Gold Petelia Tablet with Case in the British Museum. Museum number 1843,0724.3 BM (সূত্র: উইকি )


    বিভিন্ন সমাধিতে অর্ফীয় নানা ফলক পাওয়া গেছে, যেখানে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে নির্দেশ দেওয়া আছে – কীভাবে পরলোকে নিজের রাস্তা খুঁজে নিতে হয় আর নিজেকে মুক্তিলাভের উপযুক্ত প্রমাণ করতে কী কী বলতে হয়। প্রায় সবগুলিরই ভাঙা, অসমাপ্ত টুকরো পাওয়া গেছে; প্রায় পূর্ণাঙ্গ যে ফলকটি পাওয়া গেছে—পেটেলিয়া ফলক (Petelia Tablet)—তার বয়ান এইরকম:

    হেডিস-এর বাড়ির বাঁদিকে তুমি একটি প্রস্রবন দেখতে পাবে।
    তার পাশে খাড়া হয়ে থাকবে একটি সাইপ্রেস গাছ।
    এই প্রস্রবনের কাছে ভুলেও যেও না।
    বরং ‘স্মৃতির হ্রদ’-এর পাশে আরেকটি পাবে,
    শীতল জল বইছে তাতে, পাহারাদার-রাও মজুত,
    বোলো: ‘আমি ধরিত্রী আর তারকাখচিত স্বর্গের সন্তান;
    তবে আমার ঠাঁই কেবল স্বর্গে। এ তোমরাও জানো।
    দেখো, আমি পিপাসায় আর্ত। শীঘ্র আমায়
    স্মৃতির হ্রদের থেকে বাহিত ওই শীতল জল দাও।’
    দেখবে, ওরা নিজেরাই তোমায় সেই পবিত্র প্রস্রবন থেকে জল পান করতে দেবে,
    তারপর অন্যান্য সব অমৃতের সন্তানের মধ্যে তুমিও রাজত্ব করবে...

    অন্য একটি ফলকে লেখা – “ধন্য তুমি, যে যন্ত্রণা সহ্য করেছো... মৃতের থেকে অমৃতে তোমার উত্তরণ হল”। আরো একটি – “তুমি সুখী, আশির্বাদধন্য – আর মরণশীল নও, এখন তুমি দেবতা”।

    যে প্রস্রবন থেকে জল খাওয়া মানা, তার নাম লিথে (Lethe), যার কাজ ভুলিয়ে দেওয়া; অন্য প্রস্রবনটির নাম ম্নিমোসিন (Mnemosyne), স্মরণ। পরলোকে যদি আত্মাকে মুক্তি পেতে হয়, তবে ভুললে চলবে না, বরং স্বাভাবিক স্মৃতির অধিক কিছু অর্জন করতে হবে।

    অর্ফীয়রা ছিলেন সাত্ত্বিক এক দল; পরবর্তীকালে খ্রিস্টান চর্যায় যেমন ওয়াইন কেবল প্রতীকমাত্র ছিল, অর্ফীয় মতবাদেও তেমনই। যে নেশার খোঁজে তাঁরা থাকতেন, তা ছিল সেই ‘উদ্দীপনা’, ঈশ্বরে বিলীন হওয়ার আনন্দ। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, একমাত্র এই পথেই অতীন্দ্রিয় জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া সম্ভব। এই গূঢ় অতীন্দ্রিয়বাদ গ্রিক দর্শনে এসেছিল পিথাগোরাসের হাত ধরে; অর্ফেয়স যেমন দিওনিসুস-এর ধর্মের সংস্কারক ছিলেন, তেমনই পিথাগোরাস ছিলেন অর্ফীয় ধর্মের সংস্কারক। তাঁর থেকেই অর্ফীয় চিন্তার কিছু উপাদান প্লেটোর দর্শনে প্রবেশ করে, আর সেখান থেকে পরবর্তী সব ধর্মভিত্তিক দর্শনে।

    অর্ফেজ়ম যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেয়েছিল, সেই সবখানেই কিছু ভাখীয় উপাদান টিকে যায়। এর একটি হল নারীবাদ – পিথাগোরাসের মতবাদেও এর উপস্থিতি যথেষ্ট, আর প্লেটো-র ক্ষেত্রে তো তা এমন উচ্চতায় যায়, যে, মেয়েরা পূর্ণ রাজনৈতিক সাম্যের অধিকারিণী হন।  পিথাগোরাস বলছেন, “লিঙ্গ হিসেবে, মেয়েরা স্বভাবতই ধর্মানুরাগী”।

    আরেকটি ভাখীয় উপাদান হল – তীব্র আবেগের প্রতি সম্মান। গ্রিক ট্র্যাজেডির জন্মই হয়েছিল দিওনিসুস-এর আচার-অনুষ্ঠান থেকে। ইউরিপিডিস নিজে অর্ফেজ়মের দুই মূল দেবতার—দিওনিসুস আর ইরস (Eros)-এর—ভক্ত ছিলেন। ঠান্ডা, ধর্মভীরু, ‘ভদ্র’লোকদের প্রতি তাঁর কোনো ভক্তি ছিল না; এদের তিনি তাঁর ট্র্যাজেডিগুলোয় হয় উন্মাদ করে দিয়েছেন, নয়তো ধর্ম-সমালোচনার শাস্তি হিসেবে, দৈব-নির্দেশে, অশেষ কষ্টের মধ্যে ফেলেছেন।

    গ্রিকদের সম্পর্কে জনমানসে একটা চলতি ধারণা হল, যে, তাদের বহিরঙ্গে এক প্রশংসনীয় প্রশান্তি ছিল, যার ফলে তারা নিজেকে আবেগের বাইরে রেখে আবেগ ও তার স্বরূপ নিয়ে চিন্তা করতে পারতো; ফলে আবেগ-অনুভূতির তারিফ করতে পারলেও, নিজেরা এমন প্রশান্তি লালন করত, যা দেবসভায় অংশগ্রহণের উপযুক্ত। এই ধারণা নেহাতই একচোখো। হোমার, সোফোক্লেস বা অ্যারিস্তোতল-এর জন্যে সম্ভবত সত্য হলেও, যেসব গ্রিক ভাখীয় বা অর্ফীয় দর্শনের ছোঁয়া পেয়েছিল—প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে—তাদের জন্যে মোটেই ঠিক না। ইলিউসিস-এ, যেখানে এথেন্সের রাষ্ট্রধর্মের সবচেয়ে পবিত্র অংশ—ইলিউসীয় অতীন্দ্রিয়বাদের জন্ম হয়, সেখানে এইরকম এক স্ত্রোত্র গাওয়া হত [১৬]:

    মদের পেয়ালা দুলিয়ে ধরেছো উচ্চে
    এত আনন্দ – এখনই মাথাটা ঘুরছে,
    এত ফুল তবে ইলিউসিস-এও হয়?
    চলো, গলা ছাড়ো – জয়, ভাখেসের জয়!

    ইউরিপিডিসের ‘ভাখি’ নাটকে মেনাদ-এর দল একইসঙ্গে কবিত্ব আর বর্বরতার এমন নমুনা রেখেছে – আর যাই হোক, তা প্রশান্তির নিদর্শন নয়। এক বুনো পশুকে ছিঁড়ে টুকরো করার এবং তৎক্ষণাৎ তাকে উদরস্থ করার আনন্দ তারা আর ধরে রাখতে পারে না [১৭]:

    আনন্দে আজ পাহাড়ে পাহাড়ে ওড়া
             জীর্ণ পথের ধুলো তুলে চলি ছুটে,
            মৃগশিশু-ছাল অঙ্গ ছাড়িয়ে ওড়ে
            আমরা ভুলেছি বাকি যত মাথাব্যথা,
    যেখানে সূর্যকিরণ ছুঁয়েছে চূড়া –
             পাহাড়ি ছাগীর বুনো চিৎকার ওঠে,
             ফোয়ারা ছুটেছে ছিন্ন কণ্ঠ ফুঁড়ে
             গৌরবে হবে রক্তগোলাপ গাঁথা,
    ফ্রিজিয়াই হোক অথবা লিডিয়া পাহাড়ে
             ব্রোমিওস পথ দেখাবে – এমনই কথা।

    ব্রোমিওস (Bromios) দিওনিসুস-এর আরেক নাম। পর্বত-পার্শ্বে হওয়া মেনাদ-দের এই নাচ কেবল উগ্র ছিল বললে সুবিচার হয় না; এ ছিল সভ্যতার বোঝা আর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে ঝোড়ো হাওয়া আর নক্ষত্রের রাজ্যের স্বাধীনতা আর সৌন্দর্যের উদযাপন। আরেকটু শান্ত হয়ে, এই মেনাদ-দেরই গান [১৮]:

    আর কী কখনো ফিরে পাবো সেই
             সুদীর্ঘ রাত,
             রাত ভোর করা নাচ,
    যে নাচের শেষে ক্লান্ত তারারা দিগন্তে যেত ঢলে?
    উড়িয়ে চিকুর উতল হাওয়ায়, দু-গালে শিশির মেখে
    ছুটবো কী আর চঞ্চল পায়ে দূর দিগন্ত দেখে?
             হরিৎ বনের হরিণ শিশুর
             একলা চকিত চপল চরণ
    ছুটতো সটান, টপকিয়ে ফাঁদ, শঙ্কা পিছনে ফেলে।
    তবু দূর থেকে উঠতো আওয়াজ, কুকুরের ডাক, অচিন বিপদ –
             ফুরিয়েছে দম, ঘড়ঘড়ে শ্বাস,
             পার করে নদী, গিরিসঙ্কট
    আনন্দ, নাকি অজানা ভয়ের তাড়নে ছুটছো তড়িৎ শ্বাপদ?
    যেখানে যাচ্ছো, সেই জঙ্গলে মানুষ থাকে না কোনো?
             শব্দ ফোটে না ছায়াঘেরা বনে,
             ঘোলাটে সবুজ নিরালা কাননে
    চুপচাপ বাঁচে যা কিছু সরল এবং যা কিছু বুনো?

    গ্রিকদের সম্পর্কে ‘প্রশান্ত’ শব্দটা ব্যবহার করার আগে একবার কল্পনা করুন দেখি – ফিলাডেলফিয়ার কোনো সম্পন্ন পরিবারের কর্ত্রী এইরকম আচরণ করছেন! এমনকি ইউজিন ও’ নিল-এর নাটকের চরিত্রদের ক্ষেত্রেও এমন কল্পনা করা কষ্ট। দিওনিসুস-এর অসংস্কৃত অনুগামীদের থেকে অর্ফীয়রা কোনো অংশে বেশি ‘প্রশান্ত’ ছিল না। অর্ফীয়দের কাছে জীবন মানেই যন্ত্রণা আর শ্রান্তি। আমরা যেন এক চাকায় বাঁধা আছি, যা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে নিরন্তর আবর্তিত হচ্ছে; আমাদের টিকি বাঁধা আছে নক্ষত্রমধ্যে, অথচ শরীর মাটির পৃথিবীতে বন্দি। শুদ্ধিকরণ, ত্যাগ আর সাত্ত্বিক জীবনযাপনের মাধ্যমেই একমাত্র এ চাকা ভেঙে ফেলে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনের আনন্দলাভ সম্ভব। এই দৃষ্টিভঙ্গি যাদের, জীবন তাদের সহজ, মধুময় হতে পারে না। এ অনেকটা সেই কৃষ্ণাঙ্গ আধ্যাত্মিকের কবিতার মতো শোনায়:

    যেদিন ঘরে ফিরবো,
    সেদিন ঈশ্বরকে নিজের সব দুঃখের কথা খুলে বলবো। [১৯]

    সকলে নয়, তবে গ্রিকদের এক বড় অংশ ছিল আবেগপ্রবণ, অসুখী, নিজের সঙ্গে লড়াইরত – আবেগ তাদের এক রাস্তায় নিয়ে গেলে, বুদ্ধি টানতো অন্য পথে। স্বর্গের উদ্ভাবন করার মতো কল্পনাশক্তিও যেমন তাদের ছিল, মনের জোরে নিজের দাবি খাটিয়ে ব্যক্তিগত নরক তৈরি করার ক্ষমতাও তেমনই ছিল। যদিও তাদের প্রবাদ ছিল, ‘কোনোকিছুই খুব বেশি নয়’, আসলে সবকিছুই তাদের ছিল অতিরিক্ত – বিশুদ্ধ চিন্তা, কাব্য, ধর্ম, এমনকি পাপ-এও। যতদিন তারা মহান ছিল, তাদের মহত্ত্বের কারণ ছিল বুদ্ধি আর আবেগের সহাবস্থান। ভবিষ্যতের দুনিয়াকে তারা যেভাবে প্রভাবিত করেছিল, এদের কোনো একটি না থাকলে তা সম্ভব হত না। তাদের পুরাণের আদিরূপে অলিম্পিয়া-অধিপতি জ়িউস ছিল না, ছিল প্রমিথিউস – যে স্বর্গ থেকে আগুন নিয়ে এসেছিল ধরায়, বদলে পেয়েছিল অনন্ত যন্ত্রণা।

    তবে, গ্রিকদের সামগ্রিক মূল্যায়ন যদি করতে বসি, এতক্ষণ যা বললাম, তা, তাদের ‘প্রশান্ত’ বলে বর্ণনা করার মতোই একপেশে। গ্রিসের ইতিহাসের আসলে দুটো ধরন ছিল — তার একদিক আবেগপ্রবণ, ধর্মপ্রাণ, অতীন্দ্রিয়, রহস্যে ঘেরা; অন্যদিক দিলখুশ, বাস্তবমুখী, যুক্তিবাদী আর বিবিধ বিষয়ে জ্ঞানার্জনে ইচ্ছুক। হেরোডোটাস যেমন এই দ্বিতীয় দলের প্রতিনিধি, তেমনই প্রথমদিকের আয়োনীয় দার্শনিকরা, কিছুটা অ্যারিস্তোতল-ও। বেলোখ, অর্ফিজ়ম বর্ণনা করে বলছেন [, ২০],

    “তবে, যে বিশ্বাসের জোরে ইহজগতকে মায়া ঘোষণা করে আসল জীবনকে মরণোত্তর বলে ভাবা যায়, সেরকম বিশ্বাসের জন্যে গ্রিকদের অপরিমেয় যৌবনের প্রাণশক্তি অনুপযুক্ত ছিল। স্বভাবতই, অর্ফীয় মতবাদ শুধু ব্রতচারীদের দীক্ষা অনুষ্ঠানের সঙ্কীর্ণ রাস্তাতেই সীমাবদ্ধ ছিল, রাষ্ট্রধর্মের ওপর সামান্য প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করেনি, এমনকি এথেন্সের মতো জনপদেও না, যেখানে গুপ্ত আচার-অনুষ্ঠানগুলিকে (mysteries) রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের অংশ করে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। একটি গোটা সহস্রাব্দ পেরোনোর পরেই কেবল এই ধারণাগুলি গ্রিসে জয়লাভ করে (যদিও সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক মোড়কে)।”

    এই বক্তব্যটি, কিছুটা হলেও, অতিরঞ্জিত। বিশেষ করে ইলিউসীয় গুপ্ত অনুষ্ঠান—যার গর্ভে অর্ফিজ়ম লালিত হচ্ছিল—তাদের ক্ষেত্রে। মোটা দাগে বললে, ধার্মিক মনোভাবাপন্নরা অর্ফিজ়মকে আপন করে নিয়েছিল, উলটোদিকে যুক্তিবাদীরা একে মোটেই পছন্দ করত না। এর সঙ্গে অনেকটা অষ্টাদশ শতকের শেষ আর ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকের ইংল্যান্ডের মেথডিজ়মের তুলনা করা যায়।

    এই সময়ের একজন গ্রিক তার পিতার থেকে কী কী শিক্ষা লাভ করত – তা আমরা মোটামুটি জানলেও, জীবনের শুরুতে সে তার মায়ের থেকে কী শিক্ষা পেত, তার সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম। পুরুষরা যে সভ্যতা নিয়ে আনন্দে থাকতো, এই মায়েরা তার থেকে অনেকটাই দূরে জীবনযাপন করতেন। সম্ভবত শিক্ষিত এথেনীয়রা, যতই তাদের সচেতন চিন্তায় যুক্তিবাদী হোক না কেন, ঐতিহ্য আর শৈশবের শিক্ষার ফলে, তাদের শ্রেষ্ঠ সময়েও নিজেদের মধ্যে এক আদিম চিন্তা আর অনুভূতির অনুশীলনে সক্ষম ছিল – বিশেষ করে সময় যখন খারাপ যেত। এই কারণেই গ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো সহজ বিশ্লেষণ কখনোই যথেষ্ট নয়।

    গ্রিক চিন্তায় ধর্মের—বিশেষ করে অলিম্পিয়ার বাইরের ধর্মের—এই প্রভাব সাম্প্রতিক কালের আগে বিশেষ বোঝা যায়নি। জেন হ্যারিসন (Jane Harrison) তাঁর এক বৈপ্লবিক বই ‘Prolegomena to the Study of Greek Religion’-য় সাধারণ গ্রিক জীবনে আদিম আর দিওনিসীয় --দুইয়েরই প্রভাবের ওপর জোর দিয়েছেন; দার্শনিকদের ওপর ধর্মের প্রভাব নিয়ে যদিও এফ এম কর্নফোর্ড (F. M. Cornford)-এর ‘From Religion to Philosophy’ গ্রিক দর্শনের পড়ুয়াদের জানিয়েছেন, কিন্তু তার ব্যাখ্যা বা নৃতত্ত্ব পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয় [ন]। জন বার্নেট-এর (John Burnet) ‘Early Greek Philosophy’, বিশেষ করে দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম’ আমার মতে এ বিষয়ে সবথেকে সুষম ব্যাখ্যা। তাঁর মতে বিজ্ঞান আর ধর্মের মধ্যে বিরোধের কারণ, “খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে হেলাস -এ (Hellas; গ্রিসের পুরোনো নাম) ধর্মের পুনর্জাগরণ”, তারই সঙ্গে আয়োনিয়ার থেকে আরো পশ্চিমে পশ্চাৎপটের পরিবর্তন। তিনি বলছেন [২১],

    “মহাদেশীয় হেলাস-এর ধর্মের উদ্ভব আয়োনিয়ার থেকে পুরো আলাদারকম ছিল। বিশেষ করে, থ্রেস থেকে আসা দিওনিসুস-এর উপাসনার মধ্যে—হোমার-এ যার উল্লেখ নামমাত্র—মানুষের সঙ্গে জগতের এক সম্পূর্ণ অন্যরকম সম্পর্কের বীজ বহন করতো। থ্রেসীয়রা তেমন কোনো উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতো – এমন ভাবা ভুল হবে, তবে ভাবাবেশের তুরীয়ানন্দ গ্রিকদের কাছে প্রমাণ করেছিল, যে, আত্মা কেবল সত্তার এক দুর্বল সঙ্গীমাত্র নয়, আর কেবলমাত্র ‘অশরীরী’ অভিজ্ঞতাই তার প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করতে পারে...
    প্রাচ্যের ধর্ম যে স্তরে ইতোমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছিল, মনে হচ্ছিল গ্রিক ধর্মও সেই স্তরে প্রবেশের মুখে; আর বিজ্ঞান তার প্রভাব না খাটালে, এই প্রবণতার  আর কোনোরকম পরিণাম ভাবা অসম্ভব। সাধারণত বলা হয়, প্রাচ্যের ধর্মীয় পরিণামে গ্রিসের না পৌঁছনোর কারণ পুরোহিত শ্রেণীর অনুপস্থিতি, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিলে কার্য আর কারণকে গুলিয়ে ফেলা হয়। পুরোহিতরা ধর্মমত তৈরি করে না, ইতোমধ্যে উদ্ভূত ধর্মের সংরক্ষণ করে; আর তাদের ক্রমবিকাশের প্রথম স্তরে প্রাচ্যের ধর্মগুলিতেও পুরোহিত শ্রেণী—প্রচলিত অর্থে—ছিল না। পৌরোহিত্যের অভাব নয়, বিজ্ঞানের নানা ঘরানার উপস্থিতিই গ্রিসকে বাঁচিয়েছিল।
    এই নতুন ধর্ম—এক অর্থে নতুন, অন্য অর্থে এ মতবাদ মানব-ইতিহাসের মতো প্রাচীন—তার শীর্ষে পৌঁছয় অর্ফীয় গোষ্ঠীগুলির স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে। অতীতের দিকে যতদূর দেখতে পাই, তাতে এর উৎস আফ্রিকা, কিন্তু এর প্রসার হয়েছিল অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে, বিশেষ করে দক্ষিণ ইতালি আর সিসিলিতে। মূলত তারা দিওনিসুস-এর উপাসক গোষ্ঠী ছিল; কিন্তু দুটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে তারা হেলেনিকদের মধ্যে  বিশিষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমত, তারা ব্যক্তিগত দৈবাদেশ বা আত্মোপলব্ধিকে ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তি বলে মনে করত আর দ্বিতীয়ত, তারা নিজেদের কৃত্রিমভাবে নানা গোষ্ঠীতে ভাগ করেছিল। যে সব কবিতাকে এরা ধর্মের পবিত্র পাঠ হিসেবে দেখতো, তাদের প্রেরণা ছিলেন থ্রেসীয় অর্ফেয়স, যিনি স্বয়ং পাতালে (Hades) প্রবেশ করেছিলেন, আর তাই পরলোকে বিদেহী আত্মার নিরাপদ পথপ্রদর্শক হিসেবে আদর্শ ছিলেন।”

    বার্নেট আরো একটু এগিয়ে বলেছেন, যে, অর্ফীয় বিশ্বাসগুলির সঙ্গে সমসাময়িক ভারতে প্রচলিত ধ্যানধারণার এক বিস্ময়কর মিল রয়েছে, যদিও তাঁর মতে এদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এরপরে তিনি ‘orgy’ শব্দটির মূল অর্থ নিয়ে আলোচনা করেছেন, অর্ফীয়রা যার মানে করত ‘পবিত্র অনুষ্ঠান’ (sacrament), আর এর লক্ষ্য ছিল বিশ্বাসীর চিত্তের শুদ্ধিকরণ, যাতে সে জন্ম-মৃত্যুর এই চক্র থেকে মুক্তি পায়। আমরা যাকে ‘চার্চ’ বলি, অর্থাৎ দীক্ষার মাধ্যমে, জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে, যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যে কেউ অংশ নিতে পারে, অলিম্পীয় কাল্টগুলি নয়, অর্ফীয়রাই তার প্রথম প্রতিষ্ঠা করে, আর তাদের প্রভাবেই, দর্শন এক জ়ীবনযাপনের অংশ হিসেবে তার গুরুত্ব পায়।


    চলবে... (এর পরের পর্ব: মাইলেশীয় ঘরানা)


    বার্ট্রান্ড রাসেল
    A History of Western Philosophy বইটির প্রথম পরিচ্ছেদের প্যালারাম-কৃত অনুবাদ



    টীকা-টিপ্পনীর ব্র্যাকেটের মধ্যে অক্ষর থাকলে তা রাসেলের আসল ফুটনোট, সংখ্যা থাকলে তা অনুবাদকের পাকামো। ফুটনোট কণ্টকিত লেখাটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী, তবে ছবি-ছাবা দিয়ে সেই দোষ স্খালনের একটা চেষ্টা করা হয়েছে।




    [ড] Rose-এর Primitive Greece বইটির ৬৫ পাতা দেখুন। (অনুবাদক: রাউটলেজ এই বইটিরও কাঁড়ি দাম দিয়ে নতুন সংস্করণ ছেড়েছে। ফ্রি বই নাই)
    [ঢ] J. E. Harrison -এর Prolegomena to the Study of Greek Religion বইটির ৬৫১ পৃষ্ঠা দেখুন।
    [ণ] মানসিক মত্ততার কথা বলছি, মদের নেশা নয়।
    [ত] এই অধ্যায়ের কবিতাগুলির ইংরেজি অনুবাদ অধ্যাপক গিলবার্ট ম্যরি-র।
    [থ] দিওনিসুস-এর সঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবে যুক্ত।
    [দ] জ়াগ্রেয়ুস (Zagreus) দিওনিসুসের অনেক নামের একটি।
    [ধ] Beloch-এর Griechische Geschichte দ্রষ্টব্য, (প্রথম অধ্যায়, পৃষ্ঠা ৪৩৪)
    [ন] অন্যদিকে, প্লেটোর কথোপকথন নিয়ে বইগুলো আমার মতে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য।



    [৯] পেলোপোনিসস্‌ (Peloponnese) দ্বীপের ঠিক মাঝখানে, অকলুষিত, বন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা অঞ্চল। প্রকৃতির দেবতা প্যান-এর বাসস্থান। এই সব মিলিয়ে রেনেসাঁ-র সময় থেকে অবিকৃত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্য নাম।
    [১০] দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের যেখানে বর্তমানে বুলগেরিয়া, রোমানিয়া আর উত্তর গ্রিস, তার সঙ্গে আনাতোলিয়ার কিছু অংশ নিয়ে তৈরি অঞ্চলের আদি নাম Thrace
    [১১] Center for Hellenic Studies-এর সাইটে ইংরেজি অনুবাদে পড়তে পাবেন।
    [১২] মেনাদ, বহুবচনে মেনাদেস -- ভাখেস-এর অনুচরী। দেবতার মায়ায় তারা প্রায় সর্বদাই নেশা/ভাবের ঘোরে উন্মত্ত অবস্থায় থাকতো। মৃতা স্ত্রীর শোকে কাতর অর্ফেয়সের থেকে এদেরই একদল বিনোদন দাবি করে আর অর্ফেয়স তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলত...
    [১৩]
    Lord of Europa’s Tyrian line,
         Zeus-born, who holdest at thy feet
         The hundred citadels of Crete,
    I seek to Thee from that dim shrine,
    Roofed by the Quick and Carven Beam,
         By Chalyb steel and wild bull’s blood,
         In flawless joints of Cypress wood
    Made steadfast. There in one pure stream
    My days have run. The servant I,
          Initiate, of Idaean Jove;
          Where midnight Zagreus roves, I rove;
    I have endured his thunder-cry;
    Fulfilled his red and bleeding feasts;
         Held the Great Mother’s mountain flame,
         I am set free and named by name
    A Bacchos of the Mailed Priests.
    Robed in pure white I have borne me clean
         From man’s vile birth and coffined clay,
         And exiled from my lip always
    Touch of all meat where Life hath been.

    [১৪] প্রাচীন পৃথিবীর যে সমস্ত আদিবাসী গোষ্ঠী প্রথম লোহাকে বশ মানাতে পেরেছিল, তাদের কয়েকটির নাম অতীতের ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করে গেছেন। এদের বাস ছিল উত্তর আনাতোলিয়ায়। ক্যালিবিস (Chalybes; প্রাচীন গ্রিক: Χάλυψ, অর্থ - ইস্পাত) তাদেরই একটি গোষ্ঠী।
    [১৫] Idean Jove মানে ইডা পর্বত-গুহার জ়িউস। নিজের পিতা উরানোস-কে (Uranus), মাতা গেয়া-র (Gaia) নির্দেশে খোজা করে, নিজে অলিম্পাসের রাজা হয়েছিল টাইটান ক্রোনুস (Cronus)। সেই পাপে, ভবিষ্যদ্বাণী হয়েছিল – সে নিজেও রাজত্ব হারাবে তার নিজের সন্তানের হাতে। কাজেই, তার ঔরসে, রেয়া-র (Rhea) গর্ভে জন্মানো সমস্ত সন্তানকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলেছিল (ঠিকই পড়েছেন, খেয়েই ফেলেছিল)। জ়িউস-এর জন্মের পরে রেয়া তাই তাকে লুকিয়ে রাখেন ইডা পর্বতের এক কন্দরে। তাকে পাহারা দিত কুরেতেস (Curetes) নামের এক শস্ত্রধারী বাজনদারের দল; তারা সেই শিশুকে ঘিরে অস্ত্র বাজিয়ে সশব্দে নাচ-গান করতো, যাতে সেই সদ্যোজাত-র কান্না ক্রোনুস-এর কানে না পৌঁছয়।
    [১৬]
    With Thy wine-cup waving high,
    With Thy maddening revelry,
         To Eleusis’ flowery vale,
    Contest Thou—Bacchus, Paean, hail!

    [১৭]
    O glad, glad on the Mountains
         To swoon in the race outworn,
         When the holy fawn-skin clings
         And all else sweeps away,
    To the joy of the quick red fountains,
         The blood of the hill-goat torn,
         The glory of wild-beast ravenings
         Where the hill-top catches the day,
    To the Phrygian, Lydian mountains
         ’Tis Bromios leads the way.

    [১৮]
    Will they ever come to me, ever again,
              The long, long dances,
    On through the dark till the dim stars wane?
    Shall I feel the dew on my throat, and the stream
    Of wind in my hair? Shall our white feet gleam
              In the dim expanses?
    O feet of the fawn to the greenwood fled,
              Alone in the grass and the loveliness;
    Leap of the hunted, no more in dread,
              Beyond the snares and the deadly press.
    Yet a voice still in the distance sounds,
    A voice and a fear and a haste of hounds,
              O wildly labouring, fiercely fleet,
              Onward yet by river and glen—
              Is it joy or terror, ye storm-swift feet?
    To the dear lone lands untroubled of men,
    Where no voice sounds, and amid the shadowy green
    The little things of the woodland live unseen.

    [১৯]
    “I’m going to tell God all of my troubles
           When I get home.” – Paul Robeson (1927)

    [২০]
    “But the Greek nation was too full of youthful vigour for the general acceptance of a belief which denies this world and transfers real life to the Beyond. Accordingly the Orphic doctrine remained confined to the relatively narrow circle of the initiate, without acquiring the smallest influence on the State religion, not even in communities which, like Athens, had taken up the celebration of the mysteries into the State ritual and placed it under legal protection. A full millennium was to pass before these ideas—in a quite different theological dress, it is true—achieved victory in the Greek world.”
    [২১]
    “The religion of continental Hellas had developed in a very different way from that of Ionia. In particular, the worship of Dionysus, which came from Thrace, and is barely mentioned in Homer, contained in germ a wholly new way of looking at man's relation to the world. It would certainly be wrong to credit the Thracians themselves with any very exalted views; but there can be no doubt that, to the Greeks, the phenomenon of ecstasy suggested that the soul was something more than a feeble double of the self, and that it was only when "out of the body" that it could show its true nature…
    It looked as if Greek religion were about to enter on the same stage as that already reached by the religions of the East; and, but for the rise of science, it is hard to see what could have checked this tendency. It is usual to say that the Greeks were saved from a religion of the Oriental type by their having no priesthood; but this is to mistake the effect for the cause. Priesthoods do not make dogmas, though they preserve them once they are made; and in the earlier stages of their development, the Oriental peoples had no priesthoods either in the sense intended. It was not so much the absence of a priesthood as the existence of the scientific schools that saved Greece.
    The new religion—for in one sense it was new, though in another as old as mankind—reached its highest point of development with the foundation of the Orphic communities. So far as we can see, the original home of these was Attica; but they spread with extraordinary rapidity, especially in Southern Italy and Sicily. They were first of all associations for the worship of Dionysus; but they were distinguished by two features which were new among the Hellenes. They looked to revelation as the source of religious authority, and they were organized as artificial communities. The poems which contained their theology were ascribed to the Thracian Orpheus, who had himself descended into Hades, and was therefore a safe guide through the perils which beset the disembodied soul in the next world.”



    চলবে... (এর পরের পর্ব: মাইলেশীয় ঘরানা)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    মুখবন্ধ | খণ্ড-১, পর্ব-১, বিভাগ-ক (১) | খণ্ড-১, পর্ব-১, বিভাগ-ক (২)
  • আলোচনা | ২৮ জুলাই ২০২৪ | ৩১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্যালারাম | ২৮ জুলাই ২০২৪ ০১:৩৪535453
  • ভালো প্রশ্ন। অনুবাদ থেকে, স্বভাবতই 'নতুন কিছু' পাওয়া মুশকিল। বিশেষ করে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ হলে। অতএব,ছোট উত্তর - বিশেষ কিছু পাওয়ার আশা না করাই ভালো। 

    এবারে প্রশ্ন যদি এইটে হয়, যে, বেগার খাটুনি কেন দিচ্ছি, উত্তর: নিজস্ব কিছু লেখাপড়া, অনুবাদের অভ্যেস - এবম্বিধ কিছু ব্যক্তিগত কারণে। তাই, ব্লগ। তারপরও যদি অনুবাদকের নিজের মতো অল্প লেখাপড়া করা কিছু লোক অনুবাদ বলেই রাসেল শেষ অবধি পড়ে ফেলে, উপরি পাওনা। 

    আর একটা কথা, যে লিঙ্কটি দিয়েছেন, তা বাদেও একটি বাংলা অনুবাদ বই দেখেছিলাম নিয়ে বসার আগে। দুটির কোনোটিই খুব আরামে পড়তে না পারাও এই অবান্তর কাজে বসার আরেকটি ব্যক্তিগত কারণ।
    এই...
  • শাঁওলী শীল | 2409:4060:ebe:e640::944a:c80f | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৪৫535712
  • অনুবাদ খুব সাবলীল। খুবই সুখপাঠ্য একটি লেখা।তবে লেখার মধ্যে এক জায়গায় বলা হয়েছে প্লেটো মেয়েদের রাজনৈতিক সমানাধিকারের কথা বলেছিলেন। একথা ঠিক প্লেটো যে guardian সম্প্রদায়ের কথা বলেছিলেন সেখানে তিনি মেয়েদের অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছিলেন ।তাঁর এই চিন্তা তাঁকে তাঁর সমসাময়িক দার্শনিকদের থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে রাখে।তবে এই সাম্যের কথা বলার সাথে সাথে তিনি একথাও বলেছিলেন মহিলারা তুলনামূলক ভাবে পুরুষ দের চেয়ে দুর্বল। এছাড়াও তিনি যে army গঠন করার কথা বলেছিলেন সেখানে বিশেষ ভাবে সমাজের পুরুষ সম্প্রদায়ের (brothers, fathers and sons) কথাই আসে।এমনকি সেখানে মহিলাদের সম্মুখ সারিতে আসা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। Republic Book I থেকে IV -এর বিভিন্ন স্থানে মহিলাদের সম্পর্কে বৈষম্যসূচক মন্তব্য করেন। Book V এ এসেই তিনি প্রথম লিঙ্গ সাম্যের কথা বলেন।এই বিষয়ে সমালোচকরা এবং Republic  এর ব্যাখ্যাকাররাও প্লেটোর চিন্তার এই inconsistency র প্রসঙ্গ বারবার উল্লেখ করেছেন। তাই কোন একটি ক্ষেত্রে লিঙ্গ সাম্যের কথা বললেও তাঁকে নারীবাদী বলা যায় কি এটা আমার একটা ছোট্ট জিজ্ঞাস্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন