এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস  শনিবারবেলা

  • চেকিয়া দুই

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ৫৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • 'প্রাগের বসন্ত' - ১৯৬৮

    সোনালি বিয়ার



    - একবার আসবেন?
    - অবশ্যই। তবে ক্লিয়ারিঙের বান্ডিল নিয়ে হের বাউয়ার পৌঁছুবেন ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই।
    - আজ না হয় ফ্রাউ রুফের হাতে সেটার ভার দিয়ে আমার অফিসে চলে আসুন। কথা আছে।

    ডাক পড়েছে আমার বস, কারেল সোভার অফিসে।




    কারেল সোভার অফিস


    আমাদের অফিস বাড়িটা হোখটিফ (আক্ষরিক অর্থে উঁচু নিচু) নামের একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ফ্রাঙ্কফুর্ট অফিসের বাড়িতে। কনটিনেনটাল ব্যাঙ্ক দুটি তলা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালায়, এক তলায় বাঁ দিকের বিশাল হলে ফরেন এক্সচেঞ্জ, মানি মার্কেট এবং ডান দিকের স্বতন্ত্র তিনটে ঘর – তার প্রথমটিতে বসেন অপারেশনসের সর্বময় কর্তা কারেল সোভা, তাঁর জানলার বাইরে বাগানের লনের শোভা!

    কনটিনেনটাল ইলিনয় ব্যাঙ্ক অ্যান্ড ট্রাস্ট কোম্পানি অফ শিকাগোর ফ্রাঙ্কফুর্ট শাখায় যোগ দিয়েছি এক বছর আগে; দ্বিতীয় চাকরি। ঠিকানা বোকেনহাইমার লানডস্ত্রাসে চব্বিশ নম্বর, ফ্রাঙ্কফুর্ট ওয়েস্ট এন্ড। এই শহরে আমার প্রথম আস্তানা শুমানস্ত্রাসের আটচল্লিশ নম্বরের বাড়িটি প্রায় দেখা যায়! সমাপতন কি একেই বলে? চাকরি বদল হলেও ট্রাম স্টপ বদলায় নি -স্পরস্ত্রাসের বাড়ি থেকে বারো নম্বর ট্রাম ধরে নামি ওপার্ন প্লাতসে; একটু পেছনে থেকে যায় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অফিস, এগিয়ে ডাইনে মুড়লেই সাত মিনিটের হাঁটা পথে কনটিনেনটাল ব্যাঙ্ক, চলতি কথায় শুধু কনটি। কর্মী সংখ্যা চল্লিশ, আমি একমাত্র ভারতীয়।

    কারেল সোভা চেকোস্লোভাক। মেদ বিহীন দীর্ঘ দেহী পুরুষ, মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি, বয়েস হয়তো পঞ্চাশের কাছাকাছি। তাঁর জন্ম প্রাগের অদূরে, প্লজেন। কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিভাগে কাজ করতেন প্রাগ শহরে। ১৯৬৮ সালে প্রাগ বসন্তে* (প্রাগ স্প্রিং / প্রাগার ফ্রুইলিং) সপরিবারে সীমানা পেরিয়ে জার্মানি আসতে সক্ষম হন। যতটুকু বলেছিলেন তা থেকে জানি সীমানায় (আবার সেই জার্মান এগার / চেক খেব!) চেক রক্ষী কোন বাধা দেয় নি। সেই দুয়ারটুকু পেরিয়ে জার্মান প্রহরীকে বলেন ফ্রাঙ্কফুর্টে তাঁর আত্মীয় আছেন, তাঁর কাছে যাবেন। প্রাগের বসন্তের খবর ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে; ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লবের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের লৌহ শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে এই দ্বিতীয় সশব্দ প্রতিবাদকে পশ্চিম ইউরোপ দেখেছে সমবেদনার চোখে – ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আরেক অধ্যায় শুরু। জার্মান প্রহরী পথ ছেড়ে দিয়েছিল।

    সাত সকালে ডাক পড়েছে, কি ব্যাপার কে জানে। নতুন চাকরি, বিদেশ বিভূঁই। সব ঠিক আছে তো?

    ঘরে ঢুকতেই সোভা বললেন, বসার আগে দরোজাটা বন্ধ করুন, ভেজানো নয়, বন্ধ (আবশ্লিসেন)

    সেকি? হাতে বিল্ব পত্র ধরাবেন নাকি?
    - আপনার সঙ্গে এখন অবধি পাবে যাই নি তবু কি ধরে নিতে পারি জার্মানির জাতীয় পানীয়ের সঙ্গে আপনার সম্যক পরিচিতি ও তার প্রতি প্রীতি আছে?
    কারেল সোভা কথা বলতেন ধীরে, পণ্ডিতি জার্মানে, যেন সংস্কৃতে চুবিয়ে নেওয়া তৎসম শব্দের কাঁটা ভরা বাংলা- তার ছন্দ যতি মিল তিনি শিখেছেন প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী অধ্যাপকদের কাছে, আমার মতন অলিতে গলিতে মদ্যপ মানুষের সঙ্গে গলাগলি করে নয়। কিন্তু এই আলোচনাটা যাচ্ছে কোনদিকে?




    নাম কালবাখার গাসে কিন্তু সেখানে পাব রেসতোরায় মানুষ আগ্রাসী ভোজনে (জারমান ভারব ফ্রেসেন)! তাই ফ্রেসগাসে!


    - ভালো না বেসে উপায় নেই। বিয়ার বাদে কি ফ্রেসগাসেতে কোন আসর জমে?
    - তবে আসুন আপনি আমি মিলে এই প্যাকিংটা খুলি।
    এবার লক্ষ করলাম তাঁর টেবিলের তলায় একটা মাঝারি আকারের ব্রাউন কার্ডবোর্ডের বাকসো, কোন পোস্ট অফিসের ছাপ মারা নয়। আমি সেটা শক্ত করে ধরে আছি, তিনি তাঁর ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে লাইন বরাবর কাটলেন। জিজ্ঞেস করতে পারছি না এর ভেতরে কি আছে। পুরোটা খুলে ফেললে দেখা দিলো দু থাকে সাজানো চব্বিশটা বাদামি রঙের কাঁচের বোতল তার গায়ে লেখা পিলসনার উরকেল (Pilsnar Urquell)!

    একটু অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকালে কারেল একটু বিব্রত মুখে বললেন তাঁর কোন বাল্যবন্ধু সদ্য চেকোস্লোভাকিয়া থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট পৌঁছেছে। শুধু তাঁর অফিসের ঠিকানা জানা ছিল, তাই এসেই বাকসোটি কারেলের দফতরে জমা করে নিজের কাজে গেছে, পরে বাড়িতে আসবে। চোদ্দ বছর দেশ ছাড়া, এই পিলসনার বিয়ারের বোতল তাঁকে দেশের স্বাদ গন্ধ এনে দিয়েছে। এই আনন্দ তিনি আমার সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। বোতল খোলার কল কবজা তাঁর অফিসের চাবির মালায় গাঁথা, তাই দিয়ে দুটো খুললেন, বিয়ারের উষ্ণতার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আমার হাতে একটি তুলে দিলেন। এবার তাঁর চেয়ারটি ঘুরিয়ে বাগান মুখো করে এলিয়ে আরাম বসে বললেন, আপনার চেয়ারটাও এখানে আনুন।

    কোন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটতে দেখলে ইংল্যান্ডে মানুষকে বলতে শুনেছি, বয়, ইট ইজ আনরিয়াল! ইট ইজ নট হ্যাপেনিং! এ সেই রকম মুহূর্ত। বছর দুয়েক আগে ফ্রান্তিসেক নামের চেকোস্লোভাকিয়ার এক ফুটবল ফ্যান বলেছিলেন একবার আমাদের দেশে বিয়ার টেস্ট করে দেখুন। আজ আমার বস কারেল সোভা তাঁর নিজের দফতরে ডেকে কাজে ফাঁকি দিয়ে আমাকে বসিয়ে চেক বিয়ার খাওয়াচ্ছেন!

    ইন্টারকমে ফোন করে সেক্রেটারি ক্রিস্টেলকে বলে দিলেন আমার সঙ্গে তিনি আসন্ন অডিট নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত আছেন, কেউ ফোন করে যেন তাঁকে বিরক্ত না করে।
    - আপনারা পাবে যখন বিয়ারের অর্ডার করেন, তখন বলেন না ‘আইন পিলস বিটে'?
    - হ্যাঁ, মানে সোনালি রঙের যে বিয়ার সেটাই তো, তাকে পিলস বলে।
    - পিলস কথাটা এলো কোথা হতে জানেন কি? আমার দেশের প্লজেন শহরের নাম থেকে! দুনিয়া জোড়া বিয়ারের ব্যবসায় এই শহরের নাম জড়িয়ে আছে!
    জলে বার্লি ও খামির গেঁজিয়ে বিয়ার বানানোর পদ্ধতিটা অন্তত দশ হাজার বছর প্রচলিত, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো অ্যালকহলিক পানীয়। বিয়ার জলের বিকল্প। মিশরের পিরামিড কর্মীদের বেতনের অংশ ছিল বিয়ার,চার হাজার বছর আগে বিশ্বের অন্যতম আইন প্রণেতা (ল গিভার) হাম্মুরাবির কোডে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিয়ারের বিশেষ ভূমিকা নির্দিষ্ট হয়েছে। রাজা এর উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সামাজিক সম্মান অনুযায়ী দৈনিক বিয়ার বিতরিত হবে ; আমলারা পাবেন পাঁচ লিটার, মজুরেরা দু লিটার।

    বিয়ারের ইতিহাসে বোহেমিয়ার বিশিষ্ট অবদান আছে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে, চারটি বিভিন্ন জলধারার সঙ্গমে প্রতিষ্ঠিত ছোট্ট শহর প্লজেনের(জার্মান পিলসেন) আড়াইশো নাগরিককে বিয়ার বানানোর অধিকার দেন বোহেমিয়ান রাজা ওয়েনসেসলাস। প্রাগ শহরের মধ্যমণি আজ ওয়েনসেসলাস চত্বর; তিনি চেকিয়ার রক্ষক সন্ত -প্যাট্রন সেন্ট। কালে কালে নাগরিকরা গড়ে তোলেন আমাদের আমূল দুধের মতন এক বিয়ার সমবায়! কিন্তু সে বিয়ার ক্রমশ মুখে দেওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি একদিন সাড়ে তিন হাজার লিটার বিয়ার প্লজেন শহরের মাঝে এক নর্দমায় ঢেলে দিয়ে নগর পিতারা কোন সুযোগ্য বিয়ার জাদুকরের সন্ধানে গেলেন ব্যাভেরিয়া।

    বিয়ার বানানোয় ব্যাভেরিয়ার বিশেষ সুনাম ছিল -তাদের এক রাজা ১৫১৬ সালে শুদ্ধতার আইন প্রচলন করেন-সে মোতাবেক জল বার্লি এবং হপ (এক ধরনের গাছের ফল যা থেকে বিয়ারের তিক্ততা আসে) ছাড়া বিয়ারে কিছুই মেশানো যাবে না, কোন কেমিক্যাল তো নয়ই। ইস্ট অথবা খামির সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নি এই বিধানে। ব্যাভেরিয়াতে সন্তরা বিয়ার গ্যাঁজাতেন গোপনে পাহাড়ের গুহায় অর্থাৎ তাঁদের পদ্ধতি ছিল কোল্ড, বটম ফারমেনটেশান যার স্বাদ অতি উত্তম কিন্তু বর্ণ ছিল ঘোলাটে। প্লজেনের বিয়ার গোয়েন্দারা ভুলিয়ে ভালিয়ে অর্থের প্রলোভন দিয়ে উনত্রিশ বছরের ইওসেফ গ্রোল নামের এক ব্যাভেরিয়ান সাধুকে তিন বছরের চুক্তিতে পাকড়াও করে নিয়ে এলেন। সাল ১৮৪২। খানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ইওসেফ গ্রোল সোনালি রঙের এক অসাধারণ পানীয় প্রস্তুত করলেন – তার নাম দেওয়া হলো প্লজেন্সকি প্রাজদ্রোই। অস্ট্রিয়ান হাবসবুরগ সম্রাটের আমলে প্লজেন শহরের জার্মান নাম অনুযায়ী নগর পিতারা এই বিয়ারের নাম দিলেন পিলসনার উরকেল (পিলসেন আদি উৎস)!




    সোনালি বিয়ারের জন্মস্থান - প্লজেন / পিলসেন যা থেকে পিলসনার শব্দটি পেয়েছি আমরা


    কারেল একটু থেমে বললেন, ঘরের লাইট সুইচ অন করার সময়ে এডিসন বা গাড়ির ইগনিশন অন করার সময়ে কার্ল বেন্তসের কথা মনে করে না কেউ। তেমনি আপনারা সেই ব্যাভেরিয়ান সন্তকে মনে রাখেন নি, আদি উৎসও নয় কিন্তু বিয়ার অর্ডার কালে আপনারা আমার শহরের নাম উচ্চারণ করেন – পিলসেন থেকে পিলসনার! পৃথিবী জুড়ে সমস্ত বারে কাঁচের গ্লাসে যে বিয়ার ঢালা হয় তার ৭৫% সেই সোনালি রঙের পিলসেন বা সংক্ষেপে পিলস

    যখনই কোন সোনালি বিয়ারের গ্লাস হাতে নেবেন, মনে করবেন এক ব্যাভেরিয়ান সাধু ও বোহেমিয়ার প্লজেন /পিলসেন শহরকে। সেই আদি উৎস! পিলসেনার উরকেল! আমার একান্ত নিজস্ব বারে সেটি সম্মানের সঙ্গে শোভিত।




    আমার একান্ত নিজস্ব বারে পিলসেনার উরকেল


    কখন ঘণ্টা দুয়েক কেটে গেছে।

    কারেল বললেন, গত দু ঘণ্টায় আমাদের সক্রিয় সহায়তা ব্যতিরেকে যখন ব্যাঙ্কটা টিকে আছে আমরা আরও এক ঘণ্টা কাজে বিরতি নিলে এটা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে না। চলুন এবারে জুরনালে (অফিসের উলটো দিকে একটি পাব) যাই। আপনাকে লাঞ্চ খাওয়াব আর আপনি দুটো পিলসনারের অর্ডার দেবেন!

    প্রাগের বসন্ত - আগস্ট ১৯৬৮


    মেলনিকের দিন

    মলদাউ নদী যেখানে এসে মিশেছে এলবে নদীর সঙ্গে, সেই মনোরম তটের নাম মেলনিক, প্রাগ থেকে মাত্র মাইল তিরিশেক দূরে। সদ্য ফ্রাঙ্কফুর্ট বিজনেস স্কুল থেকে পাস করে সেখানে তার খুড়ির বাড়িতে এসেছে এক তরুণ ; তার নাম অরটউইন রুডলফ ক্রাইবিখ, যে একদিন আমাকে শেখাবে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিঙের সুলুক সন্ধান, পঁইত্রিশ বছরের দীর্ঘ বন্ধুত্বের অবসান হবে যেদিন সে বিদায় নেবে এই পৃথিবী থেকে।

    জার্মান নাগরিকের পক্ষে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে তদানীন্তন চেকোস্লোভাকিয়া আসাটা শক্ত ছিল, অসম্ভব নয়। কিন্তু তার খুড়ির পক্ষে শ্রমিক কৃষকের স্বর্গরাজ্য থেকে অবক্ষয়ী ধনতান্ত্রিক ফ্রাঙ্কফুর্টে ভাই বা ভাইপোর বাড়ি যাওয়াটা স্বপ্ন কল্পনা মাত্র। ক্রাইবিখগুষ্ঠি বোহেমিয়ায় বাস করেছেন কয়েকশ বছর, এককালে এই মেলনিকের পোস্ট অফিসে কর্ম করেছেন অরটউইনের বাবা, রুডলফ ক্রাইবিখ। জার্মান মূলের মানুষ সেখান থেকে বিতাড়িত। অন্যেরা চলে গেলেও অরটউইনের খুড়ি থেকে গেছেন কোনমতে, জার্মানের সঙ্গে চেক বলেন স্বচ্ছন্দে। অরটউইনের বাবা মা ১৯৪৫ সালের পরে এ দেশে কখনো ফেরেন নি, কিন্তু অরটউইন এসেছে মাঝে সাঝে তার ওপেল সেনাটর গাড়িতে। এবারে সে লক্ষ করে হাওয়া কেমন যেন বদলে গেছে ; এগার /খেব সীমান্ত চেক রক্ষীদের হাসি মুখ, গাড়ির বুট বনেট খুলে কোন তত্ত্ব তালাশি নয়। চেক ভাষা সে বোঝে না কিন্তু দেখে খুড়ির বসার ঘরে কয়েকজন সমবেত হয়ে উচ্চস্বরে রাজনৈতিক আলোচনা করেন, টেলিভিশনে গোল্ডস্টুইকার নামের এক ব্যক্তি নাকি কমিউনিস্ট সরকারের কঠোর সমালোচনা করে থাকেন, তাঁর কোন সাজা হয় না।

    যদিও সেখান থেকে কোন খবর সরাসরি পাওয়া যায় না কিন্তু চেকোস্লোভাকিয়াতে কিছু একটা ঘটতে চলেছে এমন গুঞ্জন পশ্চিমে ক্রমশ সরব। গত কয়েকমাস যাবত জার্মানির খবর কাগজে, টেলিভিশনে নানান জল্পনা কল্পনা চলছে। কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সেক্রেটারি আলেকসান্দার দুবচেক প্রকাশ্যে জানিয়েছেন মারক্সিজম লেনিনিজম এবং আন্তর্জাতিক প্রলেতারিয়া বিপ্লবের ও ওয়ারশ চুক্তির ওপরে সম্পূর্ণ আনুগত্য রেখেও মানুষের চলা ফেরা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বহু দলীয় নির্বাচন সম্ভব- কমিউনিজমকে দেওয়া হোক একটি মানবিক মুখ (এ হিউম্যান ফেস)*। আলোচনা শুরু হলো বড়ো ভাই, সোভিয়েত নেতৃত্বের সঙ্গে। ব্রেঝনেভ মাথা নাড়লেন, বহুদলীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের পরিপন্থী, কোনমতেই সমর্থনযোগ্য নয়।




    প্রাগে সোভিয়েত বাহিনী


    ইতিমধ্যে চেকোস্লোভাকিয়ায় যে যৌবন জলতরঙ্গ বইতে শুরু করেছে তাকে রোধিবে কে? ফেব্রুয়ারি থেকেই চেক বর্ডার পেরিয়ে প্রায় এক লক্ষ মানুষ পশ্চিমে গেলেন, কেউ বাধা দিলো না। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র – লিতারারনি নোভিনি সকল সেন্সরশিপ ভেঙ্গে এমনি সবাক হলো যে তার বিক্রির সংখ্যা তিন লাখ পেরিয়ে এক ইউরোপিয়ান রেকর্ড সৃষ্টি করে।

    ছোট শহর মেলনিকে অরটউইন ঘোরাঘুরি করে, বাবার পুরনো অফিস খোঁজে। খুড়ির বাড়ির চিলেকোঠা থেকেও দেখতে পায় মানুষের মিছিল।

    একদিন গভীর রাতে খুড়ি ফ্রাউ রসভিলদে সেই ঘরে কড়া নাড়লেন – পাজামা পরে ঘুম চোখে অরটউইন দরোজা খুলতেই তিনি বললেন, বাবা, এখুনি পালাও। সোভিয়েত রাশিয়ান বাহিনী ঢুকে পড়েছে তাদের সঙ্গে নাকি পোলিশ হাঙ্গেরিয়ানরাও আছে

    য পলায়তি স জীবতি!

    ভোর তিনটে, আকাশে একটু আলো দেখা দিয়েছে। কি ভাগ্যে গাড়িতে তেল ভর্তি ছিল, মেলনিক পৌঁছুনর পর অরটউইন বিশেষ গাড়ি চালায় নি। চেকোস্লোভাকিয়া থেকে বেরুনোর দুটো রাস্তা - একটা সোজা পশ্চিমে এগার সীমান্ত পানে অন্যটা এলবে নদী পেরিয়ে খাড়া উত্তরে, ড্রেসডেন। কিন্তু সেটা জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র- সেটি নামেই গণতান্ত্রিক। সেখানে ঢুকলে আবার অন্য বিপদ। অগত্যা এগারের পথ। প্রথমেই তার চোখে পড়ল রাস্তার সাইনবোর্ডগুলো কে বা কারা যেন ঘুরিয়ে দিয়েছে, প্রাগের নিশানা পশ্চিম মুখে, প্লজেন পুবদিকে – সোভিয়েত ট্যাঙ্ক ব্রিগেডকে ভুল পথে চালিত করাতে লড়াকু চেক প্রতিবাদীদের শেষ চেষ্টা।

    সে আমলে গুগল না থাকলেও অরটউইনের স্কুলে পড়া ভূগোলটা মনে ছিল। তার গাড়িতে সব সময় একটা ছোট্ট কম্পাস রাখা থাকত, তার কাঁটা অনুযায়ী সে গাড়ি চালাল পশ্চিম মুখে, প্লজেন ছাড়িয়ে। পরে অরটউইন আমাকে গাড়িতে কম্পাস রাখার পরামর্শ দিয়েছে। জার্মানিতে নয়ের দশকে খদ্দেরের সন্ধানে পথে পথে ঘোরার সময়ে সেটা আমার খুব কাজে লাগে।

    প্রাগের স্বাধীনতা, মুক্তির বসন্ত শেষ হলো ২২শে আগস্ট, ১৯৬৮; সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, বুলগারিয়ার সমবেত পাঁচ লক্ষ সৈন্যের ফৌজ হানা দিলো চেকোস্লোভাকিয়াতে (ব্রেজনেভ পূর্ব জার্মান সৈন্য পাঠান নি -দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বোহেমিয়াতে জার্মান আগ্রাসনের স্মৃতি তখনো তাজা)। যেমন ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিতে, তেমনই ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়াতে গণতান্ত্রিক অভ্যুথানের ধাস্টামোকে ট্যাঙ্কের বিক্রমে শায়েস্তা করতে সাত দিনও লাগে নি। চেকোস্লোভাকিয়ার নতুন নেতৃত্ব সোভিয়েত মার্গ দর্শকের প্রদর্শিত পথে পুনরায় যাত্রা শুরু করে।

    বার্লিন দেওয়াল ভাঙতে একুশ বছর।

    আলেকসান্দার দুবচেককে ফার্স্ট সেক্রেটারির পদ থেকে সরিয়ে বনবিভাগের তদারকির কাজে বহাল করা হলো; তিনি অন্তত প্রাণে বাঁচলেন। হাঙ্গেরিতে ১৯৫৬ সালের বিপ্লবের নেতা ইমরে নজকে ফাঁসিতে চড়ানো হয়েছিল; ক্রুশ্চেভ বলেছিলেন হঠকারিদের শিক্ষা হোক।

    সোভিয়েত সাম্যবাদী ভাবনার জয়ের মালা গাঁথলো প্রাগের বসন্তের ফুল।

    দশ বছর পরে ফ্রাঙ্কফুর্টের ওঙ্কেল মাক্স পাবে বসে যখন অরটউইনের কাছে প্রাগের বসন্তের গল্প শুনি ততদিনে এগার/ খেবের সীমান্ত থেকে প্রাগ অভিযানে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছি। অরটউইনের খুড়ি মারা গেছেন, টেলিফোন যোগাযোগ অসম্ভব।




    অরটউইনের খুড়ির বাড়ি


    আমরা কেউ কখনো সে দেশে যাবার কথা ভাবি না।
    সেদিন কি করে জানব আমার জন্য একটা অন্য চিত্রনাট্য কোথাও লেখা আছে।

    *পেরেসত্রইকা (পুনর্গঠন) ও গ্লাসনস্তের (স্বচ্ছতা) হোতা মিখাইল গরবাচেভকে ১৯৮৭ সালে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আলেকসান্দার দুবচেকের কমিউনিজম উইথ এ হিউম্যান ফেসের সঙ্গে এর তফাত কোথায়?
    উত্তরে তিনি বলেন,‘উনিশটা বছর।’


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ৫৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২০:৫৩535657
  • ভীষণ ভালো লাগল পর্বটা। সোনালী বিয়ারের আখ্যান, আহা। ব্যাংকের বসও দিল দরিয়া মানুষ, এরকম লোকই আরও বেশি প্রয়োজন। "এতক্ষণেও ব্যাংক উঠে যায়নি যখন, একবেলা ছুটি নেওয়াই যায়!"
     
    প্রাগের বিপ্লব সফল হলে সোভিয়েত আগেই ভেঙে পড়তো নাকি হিউম্যান ফেস নিয়ে দীর্ঘজীবী হতো বলা কঠিন। তবে সাধারণ মানুষের (পড়ুন আমেরিকান ও আমেরিকা পন্থী যারা) কাছে হয়তো বা আরও গ্রহণযোগ্য হতো। অল্টারনেট হিস্ট্রি ভাবা সহজ কিন্তু আসলেই ব্যাপারটা অনেক কঠিন।
  • NRO | 165.124.84.35 | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ০১:৪২535677
  • "সোভিয়েত সাম্যবাদী ভাবনার জয়ের মালা"? On which planet, হীরেন বাবু? সমসাময়িক একটি বিখ্যাত joke শুনলেই বোঝা যায় it was just a matter of time before the inevitable defeat of the concept of USSR.
     
    Golda Meir গেছেন Moscow, Breznev এর সঙ্গে dinner. 
     
    Breznev: Goldie, I will fulfill your one wish Just ask.
    Meir: OK Leo, just open your borders for a day.
    Breznev: Goldie, you naughty girl, you wish to be all alone with me?
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ০২:২১535678
  • শ্রী এন আর ও
     
    আমার পরিহাসের প্রয়াসটুকু মাঠে মারা গেল। আগের পরিচ্ছেদে বলেছি
     
    "যেমন ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিতে, তেমনই ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়াতে গণতান্ত্রিক অভ্যুথানের ধাস্টামোকে ট্যাঙ্কের বিক্রমে শায়েস্তা করতে সাত দিনও লাগে নি। "
     
    তবু আমার পরিহাস অধরা রইল! 
     
     
  • রঞ্জন | 2001:999:58c:43ab:d462:27ac:e15a:54d1 | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ০২:২২535679
  • হীরেনদার সিগনেচার উইট  এই লেখাটার মধ্যে যথারীতি ছড়িয়ে আছে।
  • NRO | 165.124.84.35 | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ০৮:০০535687
  • সেই বিসমিল্লায়ই তো গলদ হিরেন বাবু। আপনি যে সময়ের কথা লিখছেন তখন দুনিয়ার সবচেয়ে রস কষ হীন চাকুরীজীবির  মুখ আঁকতে বললে আর্ট স্কুলের ছাত্ররা হয় আঁকতো চুলে মাকড়সার জাল জড়ানো বয়স্কা লাইব্রেরিয়ানের তোবড়ানো  মুখ নয়তো green light shade এর পিছনে ভারী ফ্রেমের চশমা পরিহিত ভুরু কোচকানো কোনো generic Alan Greenspan type banker এর গম্ভীর এর মুখ। পরিহাসপ্রিয় বাঙালি Europe-trotting international banker যিনি inorn-curtain পেরিয়ে গিয়ে বিভিন্ন দ্রাক্ষাসারের রসাস্বাদন করছেন আর ভারী গলায় (Bond স্টাইলে ) নিজের পরিচয় দিচ্ছেন 'name is Singharoy, Hiren Singharoy) - এ দৃশ্য সে আমলে কেন এ  আমলেও কল্পনা করা আমার কম্মো নয় 
  • Suvasri Roy | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৭535689
  • অসাধারণ গাথা। প্রকৃত অর্থে সফরনামা নয় তবে রম্যের অধিক রম্য। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬:২৯535719
  • ধন্যবাদ ! এ আমার জীবন ও তার সঙ্গে জডিয়ে যাওয়া ইতিহাস! ভ্রমণ কাহিনি নয়! 
  • Rouhin Banerjee | ১৬ আগস্ট ২০২৪ ২১:৫৪536491
  • এখন থেকে যতবার বিয়ার নিয়ে বসব, এই ইতিহাস মনে পড়ে যাবে। অসাধারণ!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন