এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জিমি আর কলতান ৫ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ আগস্ট ২০২৪ | ১১০ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩
    ( ৫ )

    ভোরের বেলায় আকাশ থেকে নরম আলো ছড়িয়ে পড়ছে। পুজো এসে গেল। শোভাবা‌জারে কৃষ্ণময় ঠাকু্রের বাড়ি দুশো বছরের দুর্গাপুজো। তিন চার পুরুষের মধ্যে দিয়ে বয়ে এসে প্রাণময়ের কাঁধে এসে পড়েছে। এখন তাদের পড়তি অবস্থা। আগের সে দিন আর নেই। তবু বছরে একবার বংশের ধারা রক্ষা করে চলতে হচ্ছে। দাদা মনোময় থাকলে কোন চিন্তা ছিল না। এত ঝক্কি তার ওপর পড়ত না। তাকে বৌদির এবং ভাইপো ভাইজির দেখাশোনাও করতে হয়। একজন স্কুলে, আর একজন কলেজে পড়ে। বৌদি একটু নড়বড়ে মতো আছে। বাইরের কাজ একেবারেই পারে না। দেওরদের ওপর পু্রোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এখন। আর এক ভাই স্বপ্নময়ও এই বাড়িতেই থাকে সস্ত্রীক। তার কোন ছেলেপুলে হয়নি। এরকম একান্নবর্তী পরিবার এখন আর নেই বললেই চলে। মনোময়বাবু সরকারি চাকরি করতেন। রোজগারপাতি ভাল ছিল। তার একটা ম্যাজেন্টা ব্লু রঙের মারুতি জেন গাড়ি ছিল। কোন ড্রাইভার রাখেননি মনোময়। গাড়িটা খুব দরকার না পড়লে বার করতেন না। দরকার পড়লে নিজেই চালিয়ে এখানে ওখানে যেতেন।

    মেজকাকার সঙ্গে দেখা করতে কোনা এক্সপ্রেস ধরে গাড়ি চালিয়ে সলপের দিকে যাচ্ছিলেন। মনোময় খুবই সতর্ক এবং সাবধানী চালক। কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার কোনা আর কদমতলার সংযোগস্থলে দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল। তারা কেউ পৌঁছবার আগেই পুলিশ হাওড়া হাসপাতালে বডি নিয়ে যায় ... তারপর নাকি কোন ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা এসে বডি কালেক্ট করে নিমতলা শ্মশানে নিয়ে যায় এবং তারা শ্মশানের কাউন্টার থেকেই ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে চলে যায় প্রাণময়রা পৌঁছবার আগেই। তারপর থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট বার করার চেষ্টা করে চলেছে মনোময়বাবুর ভাইয়েরা। এমন অদ্ভুত এবং রহস্যময় ব্যাপার যে ঘটতে পারে তা প্রাণময়রা কখনও কল্পনাও করেনি। তারপর যাও বা ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া গেল, তার মধ্যে মৃত ব্যক্তির নাম এবং মৃত্যুর দিন ছাড়া আর সব ... মানে, ঠিকানা এবং বাবার নাম একদম আলাদা ছিল। সেগুলো সব সংশোধন করার জন্য দরখাস্ত করা হয়েছে। এখনও কিছু ফয়সালা হয়নি। ডেথ সার্টিফিকেট একটা অতি প্রয়োজনীয় নথি। না পাওয়া গেলে নানা ব্যাপারে নানা সমস্যা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, ওটার অভাবে মনোময়বাবুর স্ত্রীর এখনও উইডো পেনশন চালু করা যায়নি। বাড়ির সকলেই এই নিয়ে বিস্তর চিন্তায় আছে। এ সমস্যার সঠিক সুরাহার জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বাড়ির লোকেদের ছোটাছুটি অব্যহত আছে।

    এর মধ্যে একদিন প্রাণময়দের সেই সলপের কাকা শশাঙ্ক ঠাকুর এদের শোভাবাজারের বাড়িতে এলেন পুজোর যোগাড়যন্ত্র কেমন এগোচ্ছে তার খোঁজ নিতে।
    তিনি চা খেতে খেতে বললেন, ' অনেকদিন ধরে আসব আসব ভাবছি .... কিন্তু শরীরটা একদম ভাল নেই তাই .... তোরা একটা বড় সমস্যায় পড়েছিস বুঝতে পারছি .... প্রপার ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া তো সব কিছুই আটকে যাবে ... ', বলে আবার চিন্তান্বিত মুখে চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক দিতে লাগলেন।
    মিনিটখানেক পরে বললেন, ' কারা গিয়ে হাওড়া হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের সার্টিফিকেট বার করল কে জানে .... বডি পোড়ানো হয়ে গেছে। এখন ডিএনএ টেস্টের উপায়ও নেই ... কি ঝামেলা ... ', বলে গম্ভীর মুখে চায়ের কাপে আরও দুটো চুমুক দিলেন।
    আবার বললেন, ' তোরা একটা কাজ করতে পারিস ..... কলতান গুপ্তের নাম শুনেছিস ? '
    বাড়ির সকলেই চুপ করে রইল। তারা কলতানের নাম শোনেনি। কে আর অত খবর রারখে কলতা।
    কাকাবাবুই বললেন, ' একজন প্রাইভেট গোয়েন্দা। দুর্দান্ত স্কিল আছে শুনেছি ... অনেক জটিল কেস সলভ করেছে ... নিউজে থাকে প্রায়ই ....'
    প্রাণময়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ' একবার ওর কাছে গিয়ে দেখতে পারিস। সলিউশান কিছু হলেও হতে পারে .... ওর বাড়িটা কোথায় আমার জানা আছে .... হ্যারিসন রোড আর কলেজ স্ট্রীটের ক্রসিং - এ। ওখানে গিয়ে আশপাশের দোকানে জিজ্ঞাসা করে খুঁজে নিবি। ওখানে সবাই জানে ... '
    বাড়ির সকলের চোখে শারদ রোদ্দুরের মতো উজ্জ্বলতা ঝিকমিক করে উঠল।

    বাড়ি খুঁজে পেতে কোন অসুবিধে হয়নি প্রাণময়, স্বপ্নময়ের। বেলা প্রায় এগারোটা এখন। সন্দেহ ছিল, এখন তাকে বাড়িতে পাওয়া যাবে কিনা। কিন্তু পাওয়া গেল ... ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হবে। কলতানই দরজা খুলল।
    ----- ' আমরা একটু মিস্টার কলতান গুপ্তের সঙ্গে দেখা করতে চাই ... '
    ----- ' ও আচ্ছা .... আসুন আসুন... আমিই কলতান .... '

    ( ক্রমশঃ)

    *******************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন