এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • চিনের সাথে ক্যাঁচাল

    দেব
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ জুলাই ২০১৭ | ১৫৫৯২ বার পঠিত
  • ১৯৬২র পর ১৯৮৬-৮৭, তারপর এই ২০১৭ এ এসে আবার চিনের সাথে ভাল রকম ঝামেলা শুরু হয়েছে। সেই একই গপ্পো - জমি কার?

    ঘটনার স্থল সিকিম-তিব্বত-ভুটান এই তিনটি রাজ্য ও দেশ যেখানে এসে মিলেছে সেই বিন্দু এবং তার পূর্বদিকের কয়েক বর্গকিমি ক্ষেত্র নিয়ে। সিকিম এবং তিব্বতের সীমানা ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ ভারত ও চিনের রাজার মাঝে হওয়া চুক্তিতে স্থির হয়েছিল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • amit | 213.0.3.2 | ১৭ আগস্ট ২০১৭ ১০:১৫366951
  • যাক গিয়ে, টোয়ি বিপথে করে লাভ নেই, চীনের ইতিহাস চলুক, খুব ভালো হচ্ছে। জাপানিদের কান্ড নিয়ে আর একটা খোলা যাবে পরে।
  • S | 57.15.15.131 | ১৭ আগস্ট ২০১৭ ১৭:১১366952
  • কোরিয়াতেও জাপানীরা মারাত্মক অত্যাচার চালায়। আন্দ বাজারে মনে হয় সেই নিয়ে একটা লেখা বেড়িয়েছিলো।
  • bip | 81.121.240.40 | ১৯ আগস্ট ২০১৭ ১১:১৩366954
  • " দরবারের অন্যান্য গোঁড়া রাজপুত্র ও আমলাদের মতন তিনিও ইউরোপ থেকে বিশেষ কিছু শেখার আছে বলে মনে করতেন না। যেসব বুদ্ধিমান রাজপুত্র ও আমলারা দ্রুত সংস্কারের উপদেশ দিচ্ছিলেন তাদেরকে সি খি অগ্রাহ্য করলেন। এইখানেই জাপানের সাথে পার্থক্য হয়ে গেল।"

    >>>>
    উহু, ডগার সিকি, অত মূর্খ্য ছিলেন না। উনার ভয় ছিল পাশ্চাত্য সংস্কার মানেই চীনে গণতন্ত্রের দাবী তীব্র হবে। ফলে সম্রাট ক্ষমতা হারাবেন।

    এটা পরিস্কার হয় সেপ্টেম্বর ১৮৯৮। ১০০ দিনের সংস্কার। এর অন্য একটা পইয়েন্ট ছিল, কনস্টিটিউশনাল মনার্কি হবে, গণতন্ত্রের পথ সুগম করা হবে। সিকি সম্রাট গুয়াংজুকে হাউস এরেস্ট করলেন। একশো দিনের সংস্কারের মূলে ছিল ছজন ভদ্রলোক-তাদের হত্যার হুকুম দিলেন।

    চীনে সংস্কারের দাবী প্রচন্ড তীব্র ছিল-কিন্ত সিকির জন্য তা হতে পারে নি।

    এই থ্রেডে চীনের যে ইতিহাস লেখা হল, তার অনেক অংশের সাথে একমত না। অতিসরলীকরন হয়েছে। আমি শুধু একটা পয়েন্ট তুলে দিলাম।
  • সিকি | ১৯ আগস্ট ২০১৭ ১১:৪৮366955
  • আমি চীনের সম্রাট ছিলাম - তাও না হয় মেনে নিলাম, কিন্তু তাই বলে আমার নামে এমন কুচ্ছো?

    নাঃ, মানতে পারলাম না।
  • sm | 52.110.180.191 | ১৯ আগস্ট ২০১৭ ১২:২৪366956
  • ওরে ওটা সম্রাট নয় সম্রাজ্ঞী হবে!
  • কুচ্ছো | 180.250.140.52 | ১৯ আগস্ট ২০১৭ ১২:২৫366957
  • Dowger Empress Cixi, উচ্চারণটা আর যাই হোক 'সিকি' নয় :)
  • sm | 52.110.180.191 | ১৯ আগস্ট ২০১৭ ১২:২৯366958
  • এটা সুন্দর ইতিহাস লেখা হয়েছে। ঝর ঝরে ভাষা ও তথ্য সমৃদ্ধ।সব কিছুতে কি বিপের পাকামো না করলে হয় না।
    এটা টুক করে উইকি পড়ে খাবলা তোলা লেখা নয়।
  • বিপ | 81.121.240.40 | ১৯ আগস্ট ২০১৭ ২১:০৪366959
  • এটা টুক করে উইকি পড়ে খাবলা তোলা লেখা নয়।
    >>
    আমি যেটা লিখলাম, সেটা উইকিতে আছে কি না জানি না। আমার সোর্স ওর ওপর একটা ডকু মুভি। সম্ভবত কমিনিউস্ট চিনে বানানো। তাদের ইন্টারপ্রেটেশন সেই সময় চীনের সাধারন মানুষ অনেক বিপ্লব ঘটিয়েছে- এম্প্রেসকে মারার এটেম্পট ও হয়েছে। সেই ভিউপয়েন্টটা এই থ্রেডের সাথে খাপ খাচ্ছে না। তবে ইতিহাসের ভিউপয়েন্ট অনেক কিছুই হতে পারে।
  • দেব | 57.11.216.233 | ২০ আগস্ট ২০১৭ ১৩:৩১366961
  • @S - চিনের সাথে খুব বেশী দেশের সংঘাত লাগে কোই? ১৯৫০ থেকে আজ অবধি সব মিলিয়ে চিনের বোধহয় ১০টার মতন যুদ্ধ/ঝামেলা হয়েছে অন্য দেশের সাথে। আমেরিকার তো বোধহয় ৫০এর বেশী। আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে চিন নেহাতই চুপচাপ থাকা দেশ। হ্যাঁ চিন কিছু করলে সেটা বেশী নজরে পড়ে কারণ আমরা বর্তমানকালে আমেরিকান প্রোপাগ্যান্ডা বেশী গিলি।

    @amit - বার্তোলুচির সিনেমাটার প্রসঙ্গে মনে পড়ল। তারিক আলী একটা বক্তৃতায় শুনেছিলাম, এক চিনা পন্ডিতকে ওনারা নাকি একটা আলোচনাচক্রে ডেকেছিলেন। ভদ্রলোকের নামটা ভুলে গেছি। পার্টির খুব সিনিয়র লোক। সেখানে একথা সেকথার পর ঐ সিনেমাটার কথা উঠলে আলীসাহেব সে ভদ্রলোককে জিগ্যেস করেন "আচ্ছা সিনেমাটা সম্বন্ধে আপনার কি মত? আমি জানি খুব একটা ভাল নয়। কিন্তু আপনার কি মনে হয়?"

    "সম্পূর্ণ ভুলভাল জিনিসে ঠাসা"

    "কি রকম?"

    তখন ঐ ভদ্রলোক ব্যাখ্যা করলেন রাজপরিবারে অন্দরমহল আসলে কি রকম ছিল। খুব ডিটেলে। মাঞ্চু দরবারের বিভিন্ন সদস্যদের অনেক ব্যক্তিগত গোপন কথাও বললেন। আর সিনেমাটায় যেগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো কোথায় কোথায় ভুল সব বিস্তারে বোঝালেন। আলীসাহেব অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন আপনি এগুলো কি করে জানলেন?

    "আজ্ঞে আমি যে শেষ সম্রাটের খুড়তুতো ভাই। কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম"

    @Atlee - অ্যাটলি মন্তব্য করেছিলেন যে গান্ধী নন, নেতাজীর ভয়ে ব্রিটেন ভারত ছেড়েছিল, এই দাবিটা সত্যিই বিশুদ্ধ গুল। এই হচ্ছে পবর গভর্নর লিষ্ট - https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_governors_of_West_Bengal দেখে নিতে পারেন ঐ নামের কোন গভর্নর ছিলেন কি না। আর অ্যাটলি কোনদিন ভারতে আসেনই নি। জেনারেল বক্সী নেটে ছড়িয়ে থাকা একটা গুজবকে সত্যি বলে ভেবেছেন। এইসব লোক দেশের দায়িত্বে থাকলে আর চিন্তা কি?

    @bip - হ্যাঁ ওটা ঠিকই লিখেছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়েই সি খি বেশী সংস্কার করতে দেন নি। ঠিক 'গণতন্ত্রের' ভয়েও নয়। তাইপিং বিদ্রোহের পর মাঞ্চু দরবার ছায়া দেখলেও ভয় পেতে শুরু করে। এই বুঝি হান মেজরিটি আবার খেপে উঠল। ফলে সি খি খুব সাবধানে চলার সিদ্ধান্ত নেন। বোটটা বেশী না নড়িয়ে। কিন্তু তাতেও দায়িত্বটা তার উপরেই বেশী যাবে। বিশেষ করে জাপানের সঙ্গে তুলনা করলে। সি খি চেষ্টা করলেই যে সফল হতেন এমন নয়। কিন্তু তিনি চেষ্টাও করেননি। প্রসঙ্গত, ১০০ দিনের সংস্কারের বিরোধিতা করলেও ১৮৯৯-১৯০১ এ বক্সার বিদ্রোহের পর সি খি অবশেষে ১৯০১ সালে সিরিয়াস রিফর্ম শুরু করেন ইনক্লুডিং কনস্টিটিউশনাল মনার্কি অ্যান্ড প্রোটো ডেমোক্যাটিক রিফর্মস। কিন্তু ততদিনে ইলেভেনথ আওয়ার হয়ে গেছে।

    আরো লিখুন। এই সিরিজটা কিছুটা অতিসরলীকরণ হয়েছে জানি কিন্তু উপায় নেই। নইলে শেষ হবে না।
  • দেব | 127.197.241.31 | ২০ আগস্ট ২০১৭ ২০:০১366962
  • টেরিটোরিয়াল ডিস্পিউট খুব খতরনাক জিনিস। আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যিক টানাপোড়েন বা পাশের দেশ থেকে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে ঝামেলা একরকম ব্যাপার। ওগুলো তাও কথাবার্তা বলে মেটানো যায় বা সহ্য করা যায়। কিন্তু জমি অন্য গোত্রের। যেকোন দেশের অধিবাসীদের সত্ত্বার সাথে জমি জুড়ে থাকে। সে খুব সামান্য একটুকরো জমি, বড়জোর দুটো গ্রাম নিয়েও বিবাদ থাকলে যা, একটা গোটা জেলা নিয়েও তাই। ৫০এর দশকের শেষের দিকে আকসাই চিন নিয়ে চিন-ভারত বিবাদ যখন তুঙ্গে তখন নেহেরু ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন এই ভাবে - "...ভাবতে অবাক লাগে যে ভারত ও চিনের মতন দুই বিশাল দেশ সামান্য এক দু মাইল এলাকা নিয়ে একে অপরের গলা কাটতে উদ্যত, বিশেষ করে যেখানে ঐ দুই মাইল জমি জনশূন্য উঁচু পার্বত্য এলাকায়। কিন্তু এটার একটা কারণ আছে। কারণ প্রশ্নটা এখানে শুধু একখন্ড জমির নয়, দেশের ইজ্জত ও আত্মবিশ্বাসের।" তারিখ ১৯৫৯ এর ৪ঠা সেপ্টেম্বর। তার ঠিক একমাস পরে আকসাই চিনের দক্ষিণে দুর্গম কংকা পাসের কাছে প্রথমবার ভারত ও চিনের সেনাদলের মধ্যে গুলি চালাচালিতে প্রাণহানি ঘটবে, দু'পক্ষেই। দু'দেশের মাঝের বিবাদটা মূলত পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ ও পশ্চিমে আকসাই চিন এলাকা নিয়ে। এছাড়া এই দুয়ের মাঝেও ছোট ছোট কয়েক খন্ড জমি নিয়ে (উত্তরাখন্ডে) বিবাদ আছে। তবে সেগুলো বড় নয়।

    প্রথমে অরুণাচলের প্রসঙ্গে আসি। সমস্যার শুরু ১৯১৩-১৪ সালে। তিব্বতকে নিয়ে চিন-ব্রিটেনের টানাপোড়েন থেকে। চিনের উপকূল থেকে সূদুর অভ্যন্তরে এই স্বশাসিত রাজ্যটি আয়তনে বিশাল - সেই সময় প্রায় ১৫ লক্ষ বর্গকিমি, আজকের ভারতের অর্ধেক! কিন্তু অত্যন্ত জনবিরল। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চিন ধীরে ধীরে খুলতে আরম্ভ করলেও তিব্বত তখনো পুরোপুরি বন্ধ। ১৮৭০-৮০ নাগাদ উপেন্দ্রকিশোর লিখছেন - "তিব্বত আমাদের খুব কাছে হলেও দেশটা থেকে খুব কম খবরই ভারতে আসে। এক তো তিব্বত যেতে গেলে হিমালয় পের হতে হয়। আর তিব্বতিরা বাইরের কাউকে নিজেদের দেশে ঢুকতে দিতে চায় না"। তা ১৯০৪ সালে ব্রিটেনের এক সেনাপতি ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ড দরজা ভেঙ্গেই তিব্বতে ঢুকলেন ভারত থেকে। দু'তিনটে বৌদ্ধমঠ পুড়িয়ে, তিব্বতকে একটু চমকিয়ে ফিরে এলেন। সেই প্রথম তিব্বতের ওপর ব্রিটেনের একরকম 'অধিকার' স্থাপিত হল। তিব্বতে তখন ত্রয়োদশ দলাই লামার শাসনকাল। পরবর্তী ৫০ বছর ধরে ব্রিটেন-চিন-তিব্বত-ভারত এই 'অধিকার' নিয়ে খেয়োখেয়ি করবে। ১৯০৬ সালে লাসায় চিনের সাথে এক চুক্তিতে ব্রিটেন তিব্বতকে চিনের স্বশাসিত রাজ্য বলে মেনে নিল। কিন্তু সাথে সাথে তিব্বতের ওপর ব্রিটেনেরও কিছুটা 'অধিকার' জমাল, মূলত বাণিজ্যিক। তিব্বতের ওপর ব্রিটেনের হাত বাড়ানো দেখে চিন আদৌ খুশি ছিল না। ১৯১০ সালে মাঞ্চু সম্রাট ও ত্রয়োদশ দলাই লামার মধ্যে ঝগড়া লাগল। মাঞ্চু সম্রাট সেনাবাহিনী পাঠিয়ে তিব্বতের স্বশাসন কেড়ে নিলেন। মাঞ্চু সম্রাট বলতে অবশ্য সম্রাটের হয়ে মাঞ্চু দরবার। কারণ সম্রাট পু য়ির বয়স তখন ৫। ত্রয়োদশ দলাই লামা পালিয়ে চলে এলেন ভারতে। প্রায় ঠিক ৫০ বছর পর তার উত্তরসূরী, বর্তমানের চতুর্দশ দলাই লামাকেও একই ভাবে পালিয়ে আসতে হবে ভারতে, ১৯৫৯ সালে।

    তবে তিব্বতের ওপর চিনের শাসন আর বেশীদিন রইল না। মাত্র এক বছরের মাথায় ১৯১১-১২ সালে চিনে শিংহাই বিপ্লবে কেন্দ্রীয় শাসনতন্ত্রই ভেঙ্গে পড়ল। চিনের দু'টি স্বশাসিত রাজ্য - দক্ষিণে তিব্বত ও উত্তরে মঙ্গোলিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করল। লাসা থেকে তিব্বতিরা চিনের সেনাদের ভাগিয়ে দিলেন। ১৯১৩ সালে ত্রয়োদশ দলাই লামা তিব্বতে ফেরত গেলেন। সান ইয়াৎ সেনকে সরিয়ে তখন ইউয়ান শিকাই চিনের প্রেসিডেন্ট। তিনি ত্রয়োদশ দলাই লামাকে এক টেলিগ্রাম করে জানালেন যে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিন। আমরা আর তিব্বতের ভেতরে নাক গলাব না। কিন্তু আপনারা চিনের সাথেই থাকুন। ত্রয়োদশ দলাই লামা বললেন যা ভাগ ব্যাটা। আমরা এখন থেকে স্বাধীন। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে কি হবে, তিব্বত ও মঙ্গোলিয়া কেউই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল না। শুধু একে অপরকে দিল। তবে ব্রিটেন সবই লক্ষ্য করছিল। তিব্বতও ব্রিটেনের দরজা নাড়াল সাহায্যের জন্য। যেহেতু মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯০৬এ ব্রিটেন তিব্বতকে চিনের স্বশাসিত রাজ্য বলে মেনে নিয়েছে তাই মুখরক্ষার খাতিরে ব্রিটেন তখনই তিব্বতকে স্বাধীন দেশ বলে স্বীকার করতে পারল না। কিন্তু এমন সুযোগ কি আর ছাড়া যায়। কর্তাব্যাক্তিরা সিদ্ধান্ত নিলেন তিব্বতকে একটু কাল্টিভেট করা যাক। সেইমত ১৯১৩ সালে ব্রিটেন ভালমানুষের মতন মুখ করে চিন ও তিব্বতের প্রতিনিধিদের ভারতে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাল। চিন প্রথমে রাজী ছিল না। বিগত এক শতাব্দীর অভিজ্ঞতায় চিন ততদিনে বুঝে গেছে যখনই বহির্শক্তিগুলি চিনকে কোন 'আলোচনায়' ডাকে তার অর্থ কি। চিনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আবার নতুন কোন খাবলা মারা। আর তখন চিন পুরো চিৎপাত। মাঞ্চু সম্রাটের শাসন বিলুপ্ত। তং মেং হুই আর ইউয়ান শিকাইএর ভেতরে ক্ষমতা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। কেন্দ্রের শাসনক্ষমতা খোদ পূর্বচিনেই প্রায় নেই। মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত তো কোন ছাড়, স্বাধীনতাই ঘোষণা করেছে। ঠিক এই সময়েই ব্রিটেনের মতন পাবলিক যদি আবার তিব্বত নিয়ে 'আলোচনায়' ডাকে তার অর্থ কি চিন খুব ভালোই বুঝে গেল। চিন বলল আসব না। ব্রিটেন ধমকি দিল না এলে ব্রিটেন শুধু তিব্বতের সাথেই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে নেবে। চিন তখন বাধ্য হল আসতে। চিনের তরফে প্রতিনিধি এলেন ইভান চেন। বৈঠক বসল গ্রীষ্মকালীন রাজধানী সিমলায়। বলাই বাহুল্য চিনের আন্দাজ ভুল ছিল না। দেখা গেল বৈঠকে ব্রিটেনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তিব্বতকে চিনের আওতা থেকে বের করে আনা। ব্রিটিশদের তরফে হেনরী ম্যাকমোহন ও অন্যান্য ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা প্রস্তাব দিলেন -

    ১. তিব্বতকে দুই ভাগে ভাগ করা হোক। 'ইনার' ও 'আউটার'। রাশিয়া যেমন এর আগে করেছে মঙ্গোলিয়ায়। উত্তরের 'ইনার' অংশটা চিনের সাথে সরাসরি জুড়ে যাবে। 'ইনার', 'আউটার' দিকবোধক শব্দার্থগুলির প্রয়োগ এখানে চিনের সাপেক্ষে হচ্ছে।

    ২. দক্ষিণের 'আউটার' অংশটা চিনের 'স্বশাসিত রাজ্যের' বদলে 'স্বাধীন' তিব্বত হবে। কিন্তু চিনের 'সুজেরানিটিতে' থাকবে। উদ্দেশ্যটা পরিস্কার। এমনিতেও তখন চিনের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই তিব্বতের ওপর। ঐ 'সুজেরানিটির' দোহাই দিয়ে ম্যাকমোহন তিব্বতের ওপর চিনের 'অধিকার' (বাস্তবে তখন অস্তিত্বহীন) হালকা করে স্বীকার করলেন। কিন্তু যেহেতু একই সাথে তিব্বত 'স্বাধীন' দেশ হবে তাই তিব্বত ব্রিটেনের সাথে (এবং শুধু ব্রিটেনের সাথেই, এটাও প্রস্তাবে ছিল) ভবিষ্যতে অন্য যে কোন চুক্তি করতে পারবে চিনের নাক গলানো ছাড়াই। অর্থাৎ ব্রিটেন ধীরে ধীরে তিব্বতের ওপরে প্রভাব বাড়াতে পারবে। অন্যদিকে তিব্বতিরা তখন চিন থেকে ডি জ্যুর বেরোতে চান যেভাবে হোক। তারা উৎসাহের সঙ্গে এই প্রস্তাবে রাজী হলেন।

    ৩. এর সাথে ম্যাকমোহন তিব্বতের সাথে ভারত সাম্রাজ্যের (বার্মা সমেত) উত্তর পূর্ব দিকের একটা পাকা সীমান্তরেখার প্রস্তাব দিলেন। এইটাই ম্যাকমোহন লাইন। এই আলোচনায় অবশ্য চিনের প্রতিনিধিরা ছিলেন না। শুধু ব্রিটেন ও তিব্বতের মধ্যেই আলোচনা হল। কারণ সীমারেখাটা 'আউটার' তিব্বত ও আসামের মধ্যেকার ব্যাপার। 'আউটার' তিব্বত যেহেতু সিমলা চুক্তি সই হলেই 'স্বাধীন' হতে চলেছে, (পয়েন্ট ২) তাই চিনের তাতে কিছু যায় আসে না। চিনের সাথে আলোচনার ফোকাস ছিল 'ইনার' ও 'আউটার' তিব্বতের সীমানা নিয়ে। কিন্তু যদি চিন পুরো ব্যাপারটাতে রাজী না হয় তাহলে সবকিছুই জলে, ঐ প্রস্তাবিত নতুন সীমারেখা সমেত। অর্থাৎ প্যাকেজ ডিল। ৩ নম্বর পয়েন্টটা ২এর ওপর নির্ভরশীল। এইটা সবপক্ষই জানতেন ও বুঝতেন।

    ৪. এছাড়া কিছু তিব্বত-ভারত বাণিজ্য ও শুল্কসংক্রান্ত সমঝোতাও ছিল। এখানে বলে রাখি এই সব আলোচনাই শুধু তিব্বত ও ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নিয়ে। পশ্চিমে শিংকিয়াংএর আকসাই চিনের বিবাদের সাথে সিমলা বৈঠকের কোন সম্বন্ধ নেই। ওটা পরে আসছে।

    স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে অরুণাচলের সীমারেখা এই ম্যাকমোহন লাইনটুকু নিয়েই সব কথা হয়। কিন্তু এই লাইনটা সিমলায় নেহাতই সাইড শো। সিমলায় আসল চক্কর ছিল ঐ 'ইনার', 'আউটার', 'সুজেরানিটি' ইত্যাদি কথার প্যাঁচে তিব্বতকে (কিছুটা ছেড়ে) চিন থেকে বের করে আনার। জটিল কূটনৈতিক দাবার চাল। ঘোড়া, মন্ত্রী আর নৌকা একসাথে এগিয়ে। কিন্তু যেহেতু অরুণাচলের ম্যাকমোহন লাইনটাই বিবাদের মূল তাই এটা নিয়ে আরেকটু লেখা প্রয়োজন। তখনও পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারত সাম্রাজ্যের সাথে চিনের পাকা সীমান্তরেখা কিছু ছিল না। এটার কারণটা একটু ব্যাখ্যা করি। আজকের দিনে সব দেশের সীমারেখা প্রতিবেশীর সাথে একদম গায়ে গায়ে ঠেকে থাকে। একটা রেখা (গাণিতিক অর্থে) টপকালেই আপনি অন্য দেশে। প্রাক-আধুনিক যুগে সবসময় ঠিক সেরকম হত না। তখনকার পদ্ধতি ছিল কোন দেশের শাসকের রাজত্বাধিকার একটা নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চল অবধি যাবে। তারপর আর থাকবে না। কিন্তু তারপরে সেখানে সঙ্গে সঙ্গেই পাশের দেশের শাসকের রাজত্বাধিকার শুরু হবে না। কিছুদূর অবধি 'নো ম্যানস ল্যান্ড' চলবে যেখানে কারোরই শাসনাধিকার নেই। এই ধরনের অঞ্চলগুলো জনশূন্য হত। তারপর কিছুদূর এগোলে আবার পাশের দেশের রাজত্বাধীকার চালু হবে। নিজেদের দিকের শেষ গ্রামগুলিকে সীমানা বলে ঘোষণা করতেন রাজারা। এদিকের শেষ গ্রাম ছেড়ে এগোলে আপনি পা রাখছেন জনশূন্য প্রান্তরে যেখানে কারোরই রাজত্ব নেই। আক্ষরিক অর্থেই 'নো ম্যানস ল্যান্ড'। একটা 'ধোঁয়াটে' এলাকা। সান্ধ্যদেশ। তারপর আরো এগিয়ে ওদিকের প্রথম গ্রামটায় ঢুকলে তবে আপনি বুঝবেন এইবার শুন্ডি রাজ্যে ঢুকেছি। অর্থাৎ আজকের দিনে সীমানা হয় সংস্পর্শে, তখনকার দিনে (অনেক সময়) সীমানা হত (ইচ্ছাকৃত) বিচ্ছিন্নতা দিয়ে। রেখার বদলে ক্ষেত্র দিয়ে। টানা একফালি জনশূন্য জমি দুই রাজার 'ডোমেনের' মাঝখানে সীমানার কাজ করত। দুপক্ষই এই আয়োজনকে সন্মান করত, নিজেদের স্বার্থেই। ঠিক কোন বিন্দুতে গিয়ে কার এলাকা শেষ হয়েছে বা সীমারেখার নিঁখুত অবস্থান নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না। ভারত-চিনের মাঝে এইরকম সীমানার কাজ করার জন্য খুব উপযুক্ত একফালি জমি আছে - হিমালয়। অত্যন্ত দুর্গম ও জনবিরল। পশ্চিমে লেহ থেকে পূর্বে ডিব্রুগড় অবধি। ফলে ঐতিহাসিক ভাবে হিমালয় পর্বতের মধ্যবর্তী এলাকা বিভিন্ন দেশী রাজ্য ও তিব্বতের মাঝে সীমানার কাজ করে এসেছে। এই কারণে দুই দেশের ডোমেনের মাঝে জায়গায় জায়গায় একটু করে ফাঁক ছিল। আকসাই চিন ও অরুণাচল প্রদেশ (তাওয়াং বাদে) দুটি এলাকাই এইরকম ফাঁকের মধ্যে পড়ে। মানে আধুনিক মানচিত্রে এই অঞ্চলগুলোকে যেভাবে দেখানো হয় ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ওরকম নয়, মোটামুটি।

    কিন্তু ব্রিটিশরা এই ব্যবস্থায় অস্বস্তি বোধ করল। ইউরোপে সীমানা হত গায়ে গায়ে ঠেকে। ব্রিটিশরা ভাবল এখানেও সেরকম হওয়া উচিত। ১৯১৪য় ভারত সাম্রাজ্যের (বার্মা সমেত) পুরোনো ধাঁচে উত্তর-পূর্ব সীমা ছিল ব্রহ্মপুত্র নদীর থেকে গড়পড়তা ৩০ কিমি উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ অবধি। আজকে যেটা আসাম-অরুণাচল সীমান্তরেখা। এই রেখাটির নাম ছিল 'ইনার লাইন' (সিমলায় প্রস্তাবিত ইনার তিব্বতের সাথে কোন সম্বন্ধ নেই)। যারা উত্তর-পূর্বে বেড়াতে গেছেন কখনো হয়তো নাম শুনে থাকবেন ইনার লাইন পারমিটের কথা। অরুণাচলে ঢুকতে গেলে লাগে। এই সেই ইনার লাইন। ঐ রেখায় সমতল শেষ হয়ে পাহাড় উঠতে শুরু করছে। উল্টোদিকে তিব্বতের দক্ষিণ সীমানা ছিল তাওয়াং শহরের দক্ষিণে সে লা গিরিপথ পর্যন্ত। এই দুয়ের মাঝখানে ৫০ কিমি চওড়া সীমান্ত সান্ধ্যদেশ। ম্যাকমোহন চিন ও তিব্বতের প্রতিনিধিদের প্রস্তাব দিলেন আসাম ও তিব্বতের মাঝের ঐ জনশূন্য জমিটুকু দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হোক। এই প্রস্তাবটাও ঠিক সরলমনের ছিল না। ব্রিটিশদের মনে হয়েছিল একদম পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সীমারেখা শুরু হলে সামরিক সুরক্ষা থাকবে না। প্রতিপক্ষ উঁচু জমিতে থাকলে তাকে আটকানো কঠিন। সম্প্রতি ডোকলাম বিবাদে শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা শুনেছেন নিশ্চয়ই। ঐ একই কারণে। ম্যাকমোহন প্রস্তাব দিলেন আসামের পুরোনো ধাঁচের বর্তমান সীমানা থেকে স্থানভেদে আরো ১০০ থেকে ১৫০ কিমি উত্তরে হিমালয়ের ঐ এলাকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্খলের চুড়ো বরাবর সীমারেখা টানা হোক। এটা সেই জলবিভাজিকার নিয়ম। ব্রিটেন হিমালয়-কারাকোরাম-হিন্দুকুশে (ডুরান্ড লাইন) যে কটি সীমাচুক্তি করেছিল বা করার চেষ্টা করেছিল সবকটিতেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিল। সিকিমেও একই জিনিস। এলাকার সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্খলের চুড়ো দিয়ে সীমারেখা।(১) এদিকের ঢালে ভারত ওদিকে ঢালে চিন। কেউই সামরিক ভাবে বেশী সুবিধা পাবে না। এমন নয় যে সেই সময়ে চিনের দিক থেকে কোন বিপদ ছিল। মাঞ্চুশাসনের তখন সদ্য পতন হয়েছে। ত্রয়োদশ দলাই লামার তিব্বত নেহাতই এক ধর্মান্ধ মধ্যযুগীয় বর্বর সামন্ততন্ত্র। কিন্তু ব্রিটিশরা দূর ভেবেই কাজ করতেন। তা ম্যাকমোহন সেই মতন একটা ম্যাপ পেশ করলেন। নিচের ছবি। একদম তলায় হলুদ রেখাটি ভারতে, ভারতের প্রস্তাবিত উত্তর-পূর্ব সীমান্ত। সবুজ অংশটা বার্মার দিকে। আকাশী রেখাটি 'আউটার' বা প্রস্তাবিত 'স্বাধীন' তিব্বত ও চিনের সীমান্ত। লাল রেখাটি তিব্বতের সমকালীন সীমান্ত। লাল ও আকাশী রেখাদুটির মাঝের অংশটা 'ইনার' তিব্বত যেটা চিনের সাথে সরাসরি জুড়ে যাবে। তাওয়াংকে ম্যাকমোহন ভারতের দিকে ঢুকিয়ে দিলেন। হলুদ রেখাটার বাঁ দিকের শেষপ্রান্তের ঠিক নিচে।



    প্রসঙ্গত, যে এলাকাটা ম্যাকমোহন ভারতের দিকে রাখলেন সেটার পুরোটা ঠিক জনশূন্য ও চিনের (ভায়া তিব্বত) শাসনবর্জিত ছিল না। পশ্চিমপ্রান্তে ভুটান সীমান্তের কাছে তিব্বতের তাওয়াং। ওটা পরিস্কার তিব্বতের এলাকা। তাওয়াং তিব্বতের বেশ বড় শহর। ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিব্বতের ষষ্ঠ দলাই লামার (শাসনকাল ১৬৮৩ - ১৭০৬) জন্ম এখানে। তবে যে জনগোষ্ঠী ওখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা তিব্বতি নয়। এরা মোংপা। তাছাড়া রাজ্যটির অন্যান্য অঞ্চলে আরো বিভিন্ন পাহাড়ী আদিবাসী গোষ্ঠী বাস করত। তবে জনঘনত্ব খুবই কম। এই আদিবাসীরা ব্রিটিশদের আসার আগে কোনকালেই ভারতের কোন রাজার প্রজা ছিল না। চিনেরও ঠিক ছিল বলে মনে হয় না। প্রায় স্বাধীন ছিল। নাগাদের মতন। তাছাড়া ম্যাকমোহন দাবীটা খুব বেশী করে ফেললেন। সীমারেখাকে ১০০ থেকে ১৫০ কিমি উত্তরে অতটা ঠেলে দিলে প্রায় ৭৩০০০ বর্গকিমি এলাকা ব্রিটেনের দিকে চলে আসে। ৬৮০০০ বর্গকিমি ভারতে, ৫০০০ বর্গকিমি বার্মায়।

    শেষপর্যন্ত চিন রাজী হল না। তবে সেটা ভারতের উত্তর-পূর্বের সীমান্তরেখা, ম্যাকমোহন লাইনের অবস্থানের জন্য নয়। আগেই লিখেছি ঐ আলোচনায় চিন উপস্থিত ছিল না। চিন আপত্তি জানাল 'ইনার' ও 'আউটার' তিব্বতের সীমা নিয়ে। ঐতিহাসিকেরা সন্দেহ করেন যে ওটা অজুহাত। আসলে চিনের কোন উদ্দেশ্যই ছিল না ব্রিটেনের এই সব দাবী মেনে নেওয়ার। ম্যাকমোহন জোর করে চিনকে আলোচনায় টেনেছিলেন বলেই চিন এসেছিল। কিন্তু এসেছিল স্রেফ আলোচনাটা ভেস্তে দেবার উদ্দেশ্যে। চিনের তরফে প্রতিনিধি ইভান চেন একটা প্রাথমিক সই দিলেন ঐ ম্যাপে। ম্যাপে ওপরের বাঁদিকের চৌকো সিলটা লক্ষ্য করুন। সম্ভবত ঐটা। (ওপরে মাঝখানের চৌকো সিলটা ব্রিটেনের। মুকুটপরা সিংহ আর এক শিং ওলা ঘোড়া।) কিন্তু তার পরেই তার বেজিংএর ধমকে মত বদলে জানালেন চিন রাজী নয়। পাকা চুক্তি হবে না। বৈঠক ভেস্তে গেল। কিন্তু ঐ একটা ভুল - প্রাথমিক সইটা করে ফেলার জন্যে চিনকে পরে পস্তাতে হবে।

    চিন রাজী না হওয়ায় ম্যাকমোহন এইবার ব্রিটেনের চিরাচরিত যা নীতি সেই নিলেন। চোট্টামো। লন্ডনের নির্দেশ ছিল চিনকে এড়িয়ে কিছু না করতে। সেটা অগ্রাহ্য করে তিনি তিব্বতের প্রতিনিধিদের সাথে একটা গোপন বৈঠক করলেন চিনাদের থেকে লুকিয়ে। বললেন দেখুন আপনারা তো চিনের থেকে স্বাধীনতা চাইছেন। কিন্তু কেউ মানে নি। তা চিন এইবারে রাজী হল না ঠিকই কিন্তু ব্রিটেন আপনাদের স্বীকৃতি দেওয়াতে সাহায্য করবে। এর বিনিময়ে অন্তত আপনারা এই প্রস্তাবটা মেনে নিন। ব্রিটেন তখন পৃথিবীতে মহাশক্তি। আজকের আমেরিকার মতন। তিব্বতিরা প্রস্তাবটা ফেলতে পারলেন না। আশায় আশায় রাজী হলেন। তবে শর্ত দিলেন তিব্বতিরা ঐ নতুন সীমারেখা তখনই মানবেন (অর্থাৎ তাওয়াং ছেড়ে দেবেন) যখন ব্রিটেনের সাহায্যে (আউটার) তিব্বতের সার্বভৌমত্ব অন্যান্য দেশগুলির কাছে গৃহীত হবে। যদি ব্রিটেন তাতে অসফল হয় তালে ডিল বাতিল। ম্যাকমোহন বললেন হ্যাঁ হ্যাঁ সে আর বলতে। সেইমতন গোপন চুক্তি হয়ে গেল। বলাই বাহুল্য আন্তর্জাতিক আইনানুসারে চুক্তিটি সম্পূর্ণ বেআইনি। তিব্বত তখন ডি ফ্যাক্টো স্বাধীন হলেও কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় নি। খাতায় কলমে চিনের অংশ। তাই তিব্বতের চিনকে এড়িয়ে কোন চুক্তি করার অধিকার ছিল না। সেই কারণেই গোপনীয়তা। শেষ খন্ডে লিখেছিলাম চিন ভেঙ্গে যাওয়ার পর রাশিয়া মঙ্গোলিয়াকে ও ব্রিটেন তিব্বতকে টোপ দিয়েছিল। তা এই সবকিছু হচ্ছে সেই টোপ। মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার প্রসঙ্গে পরে আসছি।

    ম্যাকমোহন তিব্বতিদের দু'খন্ডে আরেকটা বড় ম্যাপ দিলেন। তাতে পরিস্কার করে উত্তর-পূর্ব ভারত ও তিব্বতের সীমারেখাটার অবস্থান দেখানো ছিল। এইটা চিনাদের তিনি দেখাননি। তিব্বতিরা ম্যাপটা লুকিয়ে লাসায় ফেরত নিয়ে গেল। সাথে চুক্তির কাগজটিও। কিন্তু খুব সম্ভবত তিব্বতি প্রতিনিধিদের মধ্যে (বা লাসায়) চিনের কোন চর ছিল। সিমলায় চিনা প্রতিনিধিরা গন্ধ পেয়ে গেলেন কিছু একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাঁরা সরাসরি ঘোষণা করলেন - "তিব্বতের চিনকে এড়িয়ে কোন চুক্তি করার অধিকার নেই। তিব্বত ও ব্রিটেনের মাঝে কোন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি চিন স্বীকার করবে না।" তো ম্যাকমোহন ভান করলেন যেন কিছু বোঝেনই নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বুঝে গেলেন যে সিমলা চুক্তি হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। হতাশ হয়ে ওপরওয়ালাদের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিলেন।

    এবার একবার দেখা যাক ঠিক কি কি ঘটল -

    ১. চিন চুক্তিতে রাজী হল না। এবং আগ বাড়িয়ে জানিয়েও রাখল ব্রিটেন আর তিব্বত যেন গেম না খেলে। ব্রিটেন ঠিক সেটাই করল। গোপনে চুক্তি করল শুধু তিব্বতের সাথে। চিন সেটা আন্দাজ করে সরাসরি বলে দিল ব্রিটেন-তিব্বত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি চিন স্বীকার করে না।

    ২. গোপন চুক্তির বোঝাপড়া অনুযায়ী - তিব্বত তখনই তাওয়াং ছেড়ে দেবে যখন ব্রিটেনের সাহায্যে (আউটার) তিব্বত স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। যতদিন সেটা না হচ্ছে ব্রিটেন তাওয়াংএ ঢুকবে না। অর্থাৎ সেই প্যাকেজ ডিল। কুইড প্রো ক্যুও। তাওয়াং বাদে অরুণাচলের অন্যান্য অঞ্চল নিয়ে লাসার অবশ্য তেমন কোন মাথাব্যাথা ছিল না।

    ৩. শুধু চিনই নয়, এর আগে ১৯০৭ সালে রাশিয়ার সাথেও ব্রিটেন চুক্তি করেছিল তিব্বতের ওপরে কেউই হাত বাড়াবে না। এবং চিনকে এড়িয়ে কেউই তিব্বতের সাথে কোন ডিল করবে না। এই কারণেই লন্ডনের বারণ ছিল। আফগানিস্তানের মতন চিনের শিংকিয়াং ও তিব্বত এই রাজ্যদুটো নিয়েও রাশিয়া ও ব্রিটেন দু'দেশেরই অস্বস্তি ছিল। সেই গ্রেট গেম। গ্রেট গেমের কেসটা মোটের ওপর এই রকম - রাশিয়া ও ব্রিটেন দুজনেই একে অপরকে ভয় পেত যে এই বোধহয় অন্যপক্ষ আমার কলোনীগুলোর দিকে হাত বাড়ালো। ব্রিটেন উত্তর পশ্চিম ভারতে ও রাশিয়া মধ্য এশিয়ায় ছড়াতে ছড়াতে ততদিনে প্রায় গায় গায় ঠেকে এসেছে। তখন দুপক্ষই ঠিক করে আফগানিস্তানকে বাফার হিসেবে রাখতে।(২) তারপরেও সন্দেহ গেল না। কেউ যদি কথার খেলাপ করে? তিব্বত ও শিংকিয়াংএর দিকেও রাশিয়ার নজর আছে ব্রিটেন জানত। সেই কারণে ১৯০৭এ ব্রিটেন ঐ সমঝোতা করে যাতে তিব্বতকে বাফার হিসেবে রাখা যায়। ম্যাকমোহন চিনের সাথে রাশিয়াকেও ঠকালেন।

    পুরো ক্যাঁচালটা দেখে ফরেন অফিসে ম্যাকমোহনের সুপিরিয়ররা বুঝে গেলেন এ প্যান্ডোরার বাক্স খোলার কেস হয়েছে। ম্যাকমোহনের পিঠ চাপড়ে বললেন দেখ তুমি চেষ্টা করেছ একটা। আমরা খুশি। কিন্তু এ হাতের বাইরে চলে যাবে। চিন যখন রাজী হয় নি তখন চিনের থেকে তিব্বতকে বের করে আনা প্রায় অসম্ভব। চিনে আমাদের কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য চলে। চিনকে চটানো অসম্ভব। সেই সাথে রাশিয়াও জানতে পারলে খেপে যাবে। তাছাড়া আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানী, জাপান তো আর গান্ডু নয়। ওরা কি আর বুঝতে পারবে না যে স্বাধীনতা দেওয়ানোর নাম করে ব্রিটেন স্রেফ তিব্বতকে গিলতে চাইছে? আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেবে না কেউই যদি না ব্রিটেন তার বদলে অন্য শক্তিগুলিকে কিছু অফার করে। এ ছেড়ে দাও হে। এ সম্ভব নয়। উত্তর পূর্ব সীমান্তের সামরিক সুরক্ষার ব্যাপারটা আছে ঠিকই কিন্তু এমনিতেই তিব্বত ডি ফ্যাক্টো স্বাধীন। চিন বা তিব্বত কেউই এমন ক্ষমতা রাখে না যে ব্রিটেনকে ঐ দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় খোঁচানোর সাহস করবে। সীমানা এখন যা আছে থাকুক।

    সিমলা চুক্তির কাগজপত্র সাউথ ব্লকের ডিপ্লোম্যাটিক সেকশনের আলমারীর ভেতরে চাপা পড়ে গেল। ভারতের সরকারী ম্যাপেও সীমানার কোন হেরফের হল। রাশিয়াকে চটানোর ভয়ে ব্রিটেন ১৯১৩-১৪ সালে হওয়া সিমলা বৈঠক নিয়ে আর মুখ খুলল না কয়েক বছর। অবশেষে ১৯২৯ সালে ভারতের যাবতীয় সরকারী সনদ ও চুক্তির সংকলনের নতুন এডিশন ছাপা হলে তাতে ব্রিটেন ঐ বৈঠকে কি কি প্রস্তাব উঠেছিল সেগুলো সংক্ষেপে প্রকাশ করল। তবে ব্রিটেন স্বীকার করল যে বৈঠক সফল হয় নি। সংকলনে একটা নোট রইল - "সিমলা চুক্তিতে ১৯১৪র ৩রা জুলাই প্রাথমিক সই হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু তিন পক্ষের সকলে শেষ সই দেয় নি ও র‍্যাটিফাই করেনি তাই চিনের বর্তমান সরকার এই চুক্তি স্বীকার করে না"। অনেস্ট।

    ততদিনে ম্যাকমোহন বিদেয় নিয়েছেন। ভারতে আর প্রায় কেউই সিমলা বৈঠক নিয়ে মাথা ঘামায় না। তিব্বতিরাও হাল ছেড়ে দিয়ে বুঝে গেছেন যে তাওয়াংএর বিনিময়ে ব্রিটেনের দ্বারা তিব্বতের স্বীকৃতি জোগাড় হবে না। তারাও কাটিয়েই দিয়েছিলেন। তাওয়াংও লাসার শাসনেই ছিল। কিন্তু রাশিয়াকে নিয়ে ব্রিটেনের যে ভয় ছিল সেই একই ভয় আবার ১৯৩০এর দশকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। এবারের ভয় জাপান থেকে। ১৯৩১ সালে জাপান মাঞ্চুরিয়া দখল করলে আবার দিল্লী নড়েচড়ে বসল। এইখানে ওলাফ ক্যারো নামে দিল্লীর এক উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ অফিসারের এনট্রি। ১৯৩৫ সালে তাওয়াংএ তিব্বতিদের হাতে এক ব্রিটিশ গুপ্তচর ধরা পড়ল। লাসা ব্যাপারটা নিয়ে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে অভিযোগ জানালে এইবার ওলাফ ক্যারোর নজর পড়ল। তিনি ভাবতে বসলেন তাওয়াং ভারতের না তিব্বতের? খুঁজে খুঁজে তিনি আর্কাইভ থেকে ধুলো ঝেড়ে বার করলেন সেই সিমলা চুক্তি।

    তাওয়াংএর কেসটা ঠিক কি সেটা বোঝার পর ক্যারো ঠিক করলেন একটা গুপি করতে হবে। তিনি ১৯৩৮ সালে প্রথমবারের মত সিমলা চুক্তি ছাপালেন। তাতে একটা স্রেফ মিথ্যে কথা লিখলেন যে এই চুক্তিতে ভারত-তিব্বত সীমানা পাকা হয়ে গেছে ঐ ম্যাকমোহন লাইন বরাবর। আসলে চুক্তি সইই করেনি চিন। নতুন ম্যাপও ছাপতে দিলেন ঐ সীমানা দেখিয়ে। এরপর ক্যারো একটা অবিশ্বাস্য চোট্টামো করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন ১৯১৪র দীর্ঘ ২৪ বছর পর সিমলা চুক্তি ছাপালে লোকে সন্দেহ করবে যে এতদিন পরে হচ্ছে কেন। তিনি একটা পুরোনো তারিখ দেওয়া সরকারী সনদ ও চুক্তির সংকলনের নতুন এডিশন ছাপালেন যাতে দেখে মনে হয় ওটাই ১৯২৯ এর সংকলন। ১৯২৯ এর আসল কপিগুলিতে ব্রিটেন একটা নোটে স্বীকার করেছিল যে চিন সিমলা চুক্তি স্বীকার করে না। এই নকল কপিটিতে সেটা বাদ দিয়ে তিনি লিখলেন সিমলা চুক্তিতে ভারত-তিব্বত সীমানা পাকা হয়ে গেছে! এর পর ১৯২৯এর আসল খন্ডটির যে কটি কপি ছাপা হয়েছিল সেগুলো সব জোগাড় করে পুড়িয়ে দিলেন! সরকারী চুক্তির সংকলন আর ক কপিই বা ছাপা হয়। দিল্লী, কোলকাতা, লন্ডন ইত্যাদি শহরগুলির বড় লাইব্রেরীগুলোতে এক কপি করে রাখা ছিল। সেগুলোকে হঠিয়ে নকল কপিটি ঢোকানো হল। একটা আসল কপি বেঁচে গেছিল। পরবর্তীকালে উদ্ধার হয়। এই খন্ডটি রাখা ছিল আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৩ সালে জে অ্যাডিস নামে আমেরিকায় নিযুক্ত এক ব্রিটিশ কূটনৈতিক ভারত-চিনের যুদ্ধ দেখে কৌতুহলী হয়ে সংকলনটি পড়ে দেখেন। তখন তার চোখে পড়ে ঐ নোটটি যেটা আসল কপিতে ছিল। খটকা লাগায় তখন তিনি ঐ কপি এবং ক্যারোর তৈরী একটি নকল কপি মিলিয়ে দেখেন। তখন আবিস্কার হয় কি কেলো হয়ে বসে আছে।

    তো কারচুপি শেষ করার পর দিল্লী এবার অরুণাচল দখলে দিকে মন দিল। ১৯৩৮এ এক ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাদল তাওয়াং গিয়ে পৌঁছলে এবার লাসা আরো জোরে চেঁচাল। কিছু সাবধানী কর্তাব্যাক্তিরা তখন ক্যারোকে আটকালেন। তখনকার মতন ঠিক হল তাওয়াং অবধি যাওয়ার দরকার নেই। তাওয়াংএর দক্ষিণ সীমান্তে সে লা গিরিপথ অবধি গেলেও চলবে। সে লা গিরিপথই ছিল তিব্বতের দক্ষিণ সীমান্ত। ম্যাকমোহনও প্রথমে সে লা কেই সীমানা করবেন ভেবেছিলেন। শেষ মুহূর্তে তাওয়াংকে ঢুকিয়ে নেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আবার উসকানি বাড়ল। জাপানের ভয়ে দিল্লী ঠিক করল নাঃ পুরো ম্যাকমোহন লাইন বরাবর দখল করতে হবে, তাওয়াং সমেত। লাসাকে মারো গুলি। সেই মত পূর্ব প্রান্তের ওয়ালং দখল হল। এরপর ১৯৪৪এ ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনারা গিয়ে পৌঁছলেন তাওয়াংএর কাছে, একটু দক্ষিণে দিরাং জং গ্রামে। লাসা আবার প্রতিবাদ করলে তখনকার মতন দিল্লী লাসাকে শান্ত করল এই বলে দিরাং জং এর থেকে আর দিল্লী এগোবে না। তিব্বতের ওপর ব্রিটেনের 'অধিকার' বিস্তার এইখানে ইতি।

    ১৯৪৭ এর পর নেহেরু সরকার এই সব 'অধিকার' উত্তরাধীকার সূত্রে পেল। কি কি? তিব্বতে ব্রিটিশ মিশনের নাম পাল্টে হল ভারতীয় মিশন। কিন্তু ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্রদূতই রয়ে গেলেন লাসায় - এইচ রিচার্ডসন। বাণিজ্য ও শুল্কসংক্রান্ত চুক্তিগুলিও লাগু রইল। তিব্বতে ডাকযোগাযোগ, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন লাইন বসিয়েছিল ব্রিটেন। সেগুলো ভারতের হাতে এল। সেই সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনের ঘোড়া রোগ, তিব্বত থেকে চিনকে দূরে রাখার চেষ্টা, এটাও ভারতে্র দায়িত্বে এল। ব্রিটিশ অফিসারেরা চলে যাবার আগে ভারতীয় আমলাদের পিঠ চাপড়ে বলে গেলেন - "ব্যাবু, টিবেটে অ্যাম্যাডের 'ওডিকার' আছে। টোমরা খেয়াল রেখো"। ভারতীয় আমলারা সাহেবের হুকুম তামিলে অভ্যস্ত। কি করবেন তারা? প্রথম কাজ, ক্যারোর বানানো নকল কপিটি হাতে পেয়ে পুরো অরুণাচলে 'অধিকার' বিস্তারের সিদ্ধান্ত নিলেন নেহেরু, তাওয়াং সমেত।(৩) ততদিনে তাওয়াং এর কাছে ব্রিটিশ সেনা পৌঁছনোর খবর বেজিংএও পৌঁছে গেছে। ১৯৪৭এর ফেব্রুয়ারী বেজিং চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ জানাল। তখনও বেজিংএ কুয়োমিং তাং ও চিয়াং কাই শেক ক্ষমতায়। গৃহযুদ্ধ চলছে। দিল্লী সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল - সিমলা চুক্তি অনুযায়ী তাওয়াং আমাদের। চিন পাল্টা জানাল, আবার, ঐ চুক্তি চিন স্বীকার করে না। অর্থাৎ পতনের ঠিক আগের সময় পর্যন্ত চিনের কুয়োমিং তাং সরকার এই অবস্থান থেকে সরে নি। ১৯৪৭এর অক্টোবরে লাসাও চিঠি দিল দিল্লীকে। লাসা ভেবেছিল ব্রিটেন বিদেয় হওয়ার পর স্বাধীন ভারত সরকার বোধহয় যে যে এলাকাগুলো ব্রিটেন তিব্বতের থেকে কেড়ে নিয়েছিল সেগুলো তিব্বতকে ফেরত দেবে - যেমন লাদাখ, সিকিম, তাওয়াং। লোকে আশা করেও বটে! দিল্লি আবার সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল ব্রিটিশ আমলে যে যে চুক্তি হয়েছিল সেগুলো দয়া করে মেনে চলুন। কমিউনিষ্ট পার্টিও ভারত ও নেহেরুকে গালাগাল দিল - "ভারত ঠিক ব্রিটেনের মতন ব্যবহার করছে! তিব্বতকে খেতে চায়। তিব্বতে আমাদের 'অধিকার'।" ১৯৪৯ এর ১লা অক্টোবর বেজিংএ ক্ষমতায় এলে পার্টি ঘোষণা করল তিব্বতে চিনের সেনা পাঠানো হবে। "ব্যাটা অশিক্ষিত লামার দল। তোদের স্বাধীনতা স্বাধীনতা খেলা ঘোচাচ্ছি।" দিল্লীর আপত্তি অগ্রাহ্য করে ১৯৫০ সালে সেই কাজ সম্পন্ন হল। ১৯১২ থেকে ৩৮ বছর ডি ফ্যাক্টো স্বাধীন থাকার পর তিব্বত আবার বেজিংএর স্বশাসিত রাজ্য মর্যাদায় ফেরত গেল। দিল্লী চেঁচাল। চিন বলল ভাগ। "তিব্বত আমাদের 'ইন্টিগ্র্যাল পার্ট'।

    দিল্লী বুঝে গেল তিব্বতকে নিয়ে আর গেম খেলে লাভ নেই। বুদ্ধিমানের মতন চুপ করে গেল। কিন্তু নেহেরুর বিরুদ্ধে বিরোধী পার্টি এবং কংগ্রেসের ভেতরেও অভিযোগ উঠল। প্যাটেল ১৯৫০এর নভেম্বরে নেহেরুকে এক চিঠিতে ধমকালেন। বললেন চিনকে অত তেল না দিয়ে দেশের উত্তর সীমান্তের নিরাপত্তার দিকে নজর দাও। চিনকে বিশ্বাস কোরো না। তেল দেওয়া বলতে এখানে প্যাটেল ইউ এনএ ভারত চিনকে যে সমর্থন দিচ্ছিল তার কথা বলছিলেন। কমিউনিষ্ট পার্টি ক্ষমতায় এলে কুয়োমিং তাং পার্টি তাইওয়ান দ্বীপে গিয়ে ঘাঁটি গাড়ে। সেখানে 'দুনম্বর' (বা মতভেদে 'একনম্বর') চিন সরকার স্থাপিত হয়। মূল ভূখন্ডে একটা চিন (৯৯% এলাকা ও ৯৯% জনসংখ্যা) আর তাইওয়ানে আরেকটা। কোনটাকে আমেরিকা 'আসল চিন রাষ্ট্র' বলে স্বীকৃতি দেবে? অফ কোর্স যেটা আয়তন ও লোকসংখ্যায় ১% সেইটাকে। এই উদ্ভট শ্যারাড চলবে দু'দশক ধরে। তা এইটার বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের সাথে নেহেরু তখন ইউএনএ ক্যাম্পেন চালাচ্ছিলেন। ফলে নেহেরুর প্রতি পার্টির প্রথমে যে সন্দেহ ছিল সেটা ততদিনে কমে এসেছে।

    কিন্তু নেহেরু একেবারে কাছাখোলা হয়ে কাজ করছিলেন না। অরুণাচলে বিভিন্ন অংশে ম্যাকমোহন লাইন অবধি ভারতের সেনাঘাঁটির সংখ্যা বাড়ছিল। এবং প্যাটেলের ঐ চিঠির ঠিক ৩ মাসের মাথায় দিরাং জং থেকে এগিয়ে ভারত তাওয়াং দখল করে নিল, ১৯৫১র ফেব্রুয়ারী। যে কূটকচালী ১৯১৩ সালে শুরু হয়েছিল অবশেষে ডি ফ্যাক্টো কাজে সম্পন্ন হল। লাসা আবার প্রতিবাদ করল, নিয়মমাফিক। দিল্লী আবার সেই সিমলা চুক্তির কলা দেখিয়ে দিল। এইবার কিন্তু বেজিং চুপ করে রইল। এইটা বেশ অদ্ভুত ব্যাপার। মাত্র কয়েক বছরে আগেই চিনে আগের কুয়োমিং তাং সরকার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু কমিউনিষ্ট পার্টি চুপ রইল। এটার কারণ কি? কয়েকটা কারণ আন্দাজ করা যায়। চিন তখন দেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত। তার ওপর প্রবল যুদ্ধ চলছে কোরিয়ায়। এই অবস্থায় আর ভারতে সঙ্গে ঝামেলা বাড়াতে চায় নি চিন। বিশেষ করে যখন নেহেরুর ভারত আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণে চিনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সমর্থন জোগাচ্ছে। চুপ করে থেকে চিন ম্যাকমোহন লাইনকে মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিল।

    আকসাই চিন পরের খন্ডে।

    ------------------------------------------------------------

    ১. এই কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত সিকিম-নেপালের সীমারেখায় পড়ে। রেখাটা ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ো দিয়ে গেছে।

    ২. রাশিয়াকে নিয়ে ব্রিটিশ কর্তাব্যাক্তিদের ভয় অমূলক ছিল না। শেষ পর্যন্ত রাশিয়া আফগানিস্তানে সেই উঠেই এল ১৯৭৯ সালে। তারপর রাশিয়া, ব্রিটিশ ভারত সাম্রাজ্যের এক উত্তরাধীকারী পাকিস্তান আর অন্যদিকে সারা পৃথিবীতে খোদ ব্রিটেনের 'উত্তরাধীকারী' আমেরিকা আবার গ্রেট গেম ২.০ খেলবে তিনে মিলে। ইন ফ্যাক্ট এখনো চলছে। ভারতও যোগ দিয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে চিনও যোগ দিতে পারে।

    ৩. এইখানে একটা প্রশ্ন। প্রথম থেকেই নেহেরু ও ভারত সিমলা চুক্তিকে ভ্যালিড বলে মেনে এসেছে। কিন্তু নেহেরু কি ক্যারোর গুপিটার কথা জানতেন? ১৯৩৮এ জানার প্রশ্ন উঠছে না কারণ নেহেরু তখন ক্ষমতা থেকে বহুদূরে। কিন্তু ৪৭এর পর অল্প কজন ব্রিটিশ আমলা যারা ব্যাপারটা জানতেন তারা কি নেহেরুকে জানিয়েছিলেন? নাকি ভেবেছিলেন যে স্বাধীন ভারতকে সত্যিটা বলার দরকার নেই। নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর দেশভাগের অত ডামাডোলে স্রেফ ভুলে গেছিলেন? ভুলে যাওয়াটা একেবার অসম্ভব নয়।
  • T | 131.6.68.127 | ২০ আগস্ট ২০১৭ ২১:৩৬366963
  • চমতকার।
  • S | 57.15.3.208 | ২০ আগস্ট ২০১৭ ২২:৪৩366964
  • "১৯৫০ থেকে আজ অবধি সব মিলিয়ে চিনের বোধহয় ১০টার মতন যুদ্ধ/ঝামেলা হয়েছে অন্য দেশের সাথে। আমেরিকার তো বোধহয় ৫০এর বেশী।"

    তাহলে চীনকে ঢাকতে আমেরিকার ঢাল ব্যবহার করতে হয়। বাহ।

    "হ্যাঁ চিন কিছু করলে সেটা বেশী নজরে পড়ে কারণ আমরা বর্তমানকালে আমেরিকান প্রোপাগ্যান্ডা বেশী গিলি।"

    সেকি? এমনকি আপনার এই লেখাতেও চাইনিজ প্রোপাগান্ডার গন্ধ পাচ্ছি, আর মার্কিনি প্রোপাগান্ডার দোহাই দিচ্ছেন?
  • b | 24.139.196.6 | ২০ আগস্ট ২০১৭ ২৩:১৪366965
  • এস এর পোস্টটিকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থনের সাথে সাথে এও জানাই, দেব এক জায়গাতে দুটো কমাচিহ্ন পর পর দিয়েছেন। অমার্জনীয় অপরাধ।
  • শঙ্খ | 126.206.220.113 | ২০ আগস্ট ২০১৭ ২৩:৩০366966
  • কোথায় লাগে ক্রাইম থ্রিলার
  • DP | 117.167.108.130 | ২০ আগস্ট ২০১৭ ২৩:৫১366967
  • চলতে থাকুক।
    শুধু চীনের ব্লাফ করা প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। ১৯৫০ বা ১৯৬২ এর থেকে এখন পরীস্থিতি অনেক আলাদা। এই ২০১৭ তে চীন হুট করে যুদ্ধে যাবেনা কারন এক, দুই দেশই পরমানু শক্তিধর। দুই, দুই দেশই এখন আর তখনকার মত বাচ্চা নেই, দুজনেই আন্তরজাতিক খেলোয়াড়, বিশেষ করে চীন তো বর্তমানের বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে পড়ে। তিন, ভারতের সাথে যুদ্ধ মানে ভারতের বিশাল বাজার হাতছাড়া হওয়া। এই রিস্ক চীন নেবেনা। আর বেওসার খেতি হলে চীনের আলিবাবা, জিয়াওমি, লেনোভোরা চীন সরকারকে ছেড়ে কথা বলবেনা।
  • সিকি | ২১ আগস্ট ২০১৭ ০০:০৬366968
  • অসম্ভব রকমের অবিশ্বাস্য থ্রিলার। রাত জেগে পড়ছি।

    দেব, রেফারেন্সগুলো কি শেষে দেবেন?
  • দ্রি | 195.104.120.7 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ০১:৩০366969
  • "@আত্লী - অ্যাটলি মন্তব্য করেছিলেন যে গান্ধী নন, নেতাজীর ভয়ে ব্রিটেন ভারত ছেড়েছিল, এই দাবিটা সত্যিই বিশুদ্ধ গুল। এই হচ্ছে পবর গভর্নর লিষ্ট - https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_governors_of_West_Bengal দেখে নিতে পারেন ঐ নামের কোন গভর্নর ছিলেন কি না। আর অ্যাটলি কোনদিন ভারতে আসেনই নি।"

    গভর্নর লিস্টে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাকি সব গভর্নরদের সার্ভিসে কোন ব্রেক নেই। যেদিন একজন ছেড়েছেন পরের জন জয়েন করেছেন। শুধু হরেন্দ্র কুমার মুখার্জী আর পদ্মজা নাইডুর মাঝে কয়েক মাসের ব্রেক আছে (৮ই অগাস্ট ১৯৫৬ থেকে ৩রা নভেম্বর ১৯৫৬)। এই সময়ের মধ্যে সম্ভবত পিবি চক্রবর্তী গভর্নর নন -- 'অ্যাক্টিং গভর্নর' ছিলেন। লেখা আছে,

    PB Chakraborthy was at that time the Chief Justice of the Calcutta High Court and was also serving as the acting Governor of West Bengal.

    আসলে তিনি হাই কোর্টের চীফ জাস্টিস ছিলেন। দুজন গভর্নরের মাঝে টেম্পোরারী স্টপ-গ্যাপ ছিলেন।

    এবং ঐ সময় অ্যাটলী ভারতে এসেছিলেন। অক্টোবর ১০, ১৯৫৬র শিকাগো ট্রিবিউনঃ

    Attlee Leaves for Month Visit in India, Pakistan

    http://archives.chicagotribune.com/1956/10/11/page/12/article/attlee-leaves-for-month-visit-in-india-pakistan

    এবং ফাইনালি, স্বাধীনতায়, নেতাজীর রোল, এবং বিশেষ করে আইএনের ট্রায়াল, এবং তার রিয়্যাকশানে নৌ-বিদ্রোহর খুব বড় রোল ছিল।

    রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মতে,

    There is little doubt that "the widespread disturbance arising out of the trial of the I.N.A. prisoners, created so dangerous and tense a situation" in India that the British Government decided to take some fresh action.
    ...
    The Viceroy announced on 28 January, 1946, that he would establish a new Executive Council formed by political leaders and also set up a Constitution-making body as soon as possible. But before further steps could be taken, a great sensation was created all over India by the revolt of a section of Indians serving in the Royal Indian Navy.
    ...
    On the very next day, Lord Pethick-Lawrence in the House of Lords and Prime Minister Attlee in the House of Commons made a simultaneous announcement that in view of the paramount importance not only to India and to the British Commonwealth, but to the peace of the world, His Majesty's Government had decided to send out to India a special mission consisting of three Cabinet members ... Whether the decision of despatching a Cabinet Mission was hastened by the revolt of the naval ratings is difficult to say. It is, however, significant, that the Mission of Sir Stafford Cripps was also announced only three days after the fall of Rangoon in Japanese hands.

    হিসট্রি অফ ফ্রিডম মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া, ভলিউম থ্রি, পেজ ৭৫০-৭৫৩।

    অন্য প্রেসিং কারনটা ছিল, আমেরিকার কন্টিনিউয়াস প্রেসার। আমেরিকা চায়নি ভারত বৃটেনের কলোনি থাকুক। ইট ওয়ান্টেড টু ওপেন ইন্ডিয়ান মার্কেট টু ইটস এক্সপোর্ট।
  • amit | 149.218.45.61 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ০৪:১৫366970
  • দারুন হচ্ছে। দেব কে একটা প্রশ্ন। যত টুকু জানি, কোনো ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হলে সবার কাছে আসল চুক্তি পত্রের কপি থাকে। তাহলে ম্যাকমোহন এর চুক্তি তে ক্যারো যে গ্যাঁড়াকল করেছিলেন, সেটা ধরতে এতো সময় লাগলো কেন ? চীন আর তিব্বত এর প্রতিনিধি দের কাছেও তো তার প্রতিলিপি থাকা উচিত ?

    আসল টোয়ি এর আলোচনা নয়, তবে নর্থ ইস্ট এর স্টেট গুলো নিয়ে ও একটু জানার ইচ্ছে আছে। ওগুলো কি আদৌ ব্রিটিশ রা আসার আগেই ভারতের পার্ট ছিল ? যদি না হয়, কি ভাবে আর কবে নাগাদ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অংশ হলো ?
  • b | 135.20.82.164 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ০৯:২৪366972
  • আসাম জানি। অমিতবাবু একটু ট্রিটি অফ ইয়ান্দাবো (১৮২৬) /প্রথম অ্যাংলো বার্মা ওয়ার গুগলিয়ে দেখতে পারেন। বর্মা থেকে ক্রমাগত আক্রমণের ফলে তৎকালীন দুর্বল অহোম রাজা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাহায্য চান। তারপর ...
  • সিকি | 158.168.96.23 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ০৯:৩৭366973
  • "নর্থ ইস্ট এর স্টেট গুলো নিয়ে ও একটু জানার ইচ্ছে আছে। ওগুলো কি আদৌ ব্রিটিশ রা আসার আগেই ভারতের পার্ট ছিল ? যদি না হয়, কি ভাবে আর কবে নাগাদ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অংশ হলো ?"

    ভারত নামে কোনও প্রপার বাউন্ডারিওলা দেশই ছিল না, তো ভারতের পার্ট থাকবে কী করে? ভূখণ্ডটা ভারত নামে লোকে জানত কিন্তু ঐ রকমের কোনও রাষ্ট্র তো ছিল না, ছিল একগাদা প্রিন্সলি স্টেটের সমাহার। ওখানেও আলাদা আলাদা প্রিন্সলি স্টেট ছিল। ব্রিটিশ প্রথমে মুঘল সাম্রাজ্যের তখনও পর্যন্ত অকুপায়েড এলাকাকে নিজের করে নেয়।

    এইবারে, "দেশের পার্ট" কনসেপ্টটা আমরা যেভাবে এখন বুঝি, ঠিক সেই ভাবে তখন ছিল না। দেখতে পাচ্ছি, সম্রাট বাহাদুর শাহকে উনিশ শতকে রেঙ্গুনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেটা তখন ব্রিটিশ সাবজেক্ট। এখন রেঙ্গুন যেতে হলে মাঝে এই নর্থ ইস্টের স্টেটগুলো পড়ে, কিন্তু সেখানে আলাদা আলাদা রাজার রাজত্ব চলেছে তখন, যেখানে ব্রিটিশ সেই অর্থে সেগুলোকে "ভারতের পার্ট" হিসেবে ঢুকিয়ে নেয় নি তখনও।
  • Atlee | 89.172.193.32 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ১৩:৩১366975
  • @দ্রি, বুঝলাম না কি করে বোঝা গেল গুল । চক্রবর্তী সত্যিই এক্টিং গভর্নর ছিলেন, এটলি সত্যিই ভারতে এসেছিলেন, কিন্তু কথোপকথনটি গুল ক্যায়সে মালুম হুয়া ?
  • Atlee | 89.172.193.32 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ১৩:৩১366974
  • @দ্রি, বুঝলাম না কি করে বোঝা গেল গুল । চক্রবর্তী সত্যিই অ্যাক্টিং গভর্নর ছিলেন, এটলি সত্যিই ভারতে এসেছিলেন, কিন্তু কথোপকথনটি গুল ক্যায়সে মালুম হুয়া ?
  • দেব | 135.22.193.149 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ১৪:২৪366976
  • @Atlee - আপনি আমাকে মিন করছেন বোধহয়। লিঙ্কটি দ্রি দিয়েছেন।

    @দ্রিকে অনেক ধন্যবাদ। @Atlee কেও। ক্লেমেন্ট অ্যাটলি ভারতে কখনো এসেছেন কি না এইটা নিয়ে আমি বেশ খোঁজাখুজি করেছিলাম কিছু সময় আগে। কিছুই পাইনি। সেই সাথে পবর গভর্নর লিষ্টে ফণি ভূষণ সরকারের নাম না পেয়ে দুয়ে দুয়ে চার করেছিলাম যে এটা বোধহয় গুল। শিকাগো ট্রিবিউনের ঐ পাতাটা এতদিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে লিঙ্ক হতে হতে পেজর‌্যাঙ্কের ওপরের দিকে উঠে এসেছে। জেনারেল বক্সীর কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
  • দেব | 135.22.193.149 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ১৪:২৬366977
  • দ্যাত ছড়ালাম। সরকার না। ফণি ভূষণ চক্রবর্তী।
  • দ্রি | 195.163.1.11 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ১৪:৪১366978
  • উঁহু, আমি বলছি কথোপকথনটি গুল না হওয়ারই চান্স বেশী।

    শুধু কথোপকথন নয়। অ্যাটলীর সমসাময়িক অ্যাকশানও সেরকমই ইঙ্গিত দেয়। ভারতকে সায়ত্বশাসন দিতে হবে সেই নিয়ে কথা, নেগোসিয়্শান দীর্ঘদিন থেকেই চলছিল। নানারকম টানাপোড়েন ছিল। চার্চিল রাজি হচ্ছেন না। চার্চিল রাজি হচ্ছেন তো ক্যাবিনেটে পাশ হচ্ছে না। এই ক্লজ থাকবে না, সেই ক্লজ থাকবে না। কিন্তু যেই নেভাল রিভোল্ট হল, সঙ্গে সঙ্গে সব্কিছু স্পীডাপ হয়ে গেল। একইরকম স্পীডাপ আগে একবার হয়েছিল জাপান রেঙ্গুন দখল করে নেওয়ার পর। বৃটিশরা ঐসময় জেনুইন ভয় পেয়েছিল যে জাপানীদের ঠেকাতে ভারতীয় সোলজার চাই, এবং সেটা পেতে গেলে সাম কাইন্ড অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স প্রমিস করতে হবে। সেইজন্যই ক্রিপস কমিশন। কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের সময় বৃটিশরা ইরিটেটেড হয়েছিল, কিন্তু এইরকম প্যানিক করেনি। বেসিকালি মুভমেন্টের লীডারদের ধরে জেলে পুরে দিয়েছিল। এবং বায় ১৯৪৪ কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট ওয়াজ আ ফ্লপ।

    আসলে আমরা যারা যুদ্ধবিগ্রহ করতে পারি না, শান্তিপ্রিয় কাটিংএর, তারা ভাবতে ভালোবাসি অহিংস আন্দোলন করে একটা দারুন ইন্ডিপেন্ডেন্স এসে গেছিল। কিন্তু কেসটা বোধহয় ঠিক অত সহজ ছিল না।

    বৃটিশরা বরাবরই সিভিলিয়ান ডিসওবিডিয়েন্সকে মিলিটারী ডিসোবিডিয়েন্সের থেকে লঘুভাবে দেখত। এত বড় দেশের সিভিলিয়ানকে কন্ট্রোল করার মত ম্যানপাওয়ার ওদের ছিল না। তাই ভারতীয় পুলিশ, মিলিটারীর সাহায্য নিতেই হত। কিন্তু যখন মিলিটারী বেঁকে বসল, তখন দে গেভ আপ। এবং মিলিটারী ডিসোবিডিয়েন্সের বাতাবরণ তৈরী করেছিল নেতাজীর ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল আর্মি। বিশেষ করে যুদ্ধের শেষে ওদের ট্রায়ালের পাবলিক কাভারেজ।
  • Churchill | 135.20.82.164 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ১৫:৩১366979
  • অঃ অ্যাটলী? A modest man with much to be modest about.
  • DP | 117.167.108.26 | ২১ আগস্ট ২০১৭ ১৫:৪০366980
  • আসাম ও ত্রিপুরা ছাড়া নর্থ ইস্টের অন্য রাজ্যগুলো সেভাবে ভারতের মূলধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলনা। তবে ভারতের প্রভাবাধীন ছিলই। পরবর্তীতে এই এলাকাগুলো নিয়ে অসম ও বার্মার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এবং পরে ব্রিটিশ হস্তক্ষেপের পর বার্মা ব্রিটিশ ভারতে ঢুকে যায়। এমনিতে এই রিমোর এরিয়াগুলো নিয়ে মূলধারার ভারতীয়রা বিশেষ ভাবিত ছিলনা। উপজাতীদের নিজেদের ব্যাপারেও ভারতীয় রাজারা বিশেষ নাক গলাতেন না। আর যেহেতু স্থায়ী কৃষিকাজ বিশেষ ছিলনা, ফলে খাজনা সংক্রান্ত হ্যাপাও ছিলনা।
  • S | 57.15.14.72 | ২৩ আগস্ট ২০১৭ ১৪:০৯366981
  • মণিপুর, মেঘালয়ও তো ভারতীয়। নাম দেখলেই মনে যায়। ইনফ্যাক্ট মেঘালয় রাজ্যটাও তো তৈরী হয়েছে আসাম ভেঙ্গে। মণিপুরে আর নাগাল্যন্ডে মনে হয় প্রচুর বার্মিজ ইনফ্লুয়েন্স ছিলো/আছে।
  • দেব | 135.22.193.149 | ২৩ আগস্ট ২০১৭ ২০:২৫366983
  • @amit - ক্যারো সিমলা চুক্তির বয়ানে কোন পরিবর্তন করেন নি। আসল সংকলনে একটা নোট ছিল সেইটা পাল্টে দিয়েছিলেন। নোটটাকে বলতে পারেন সিমলা চুক্তির ফলাফল নিয়ে (ব্রিটিশ) ভারতের ইন্টারপ্রিটেশন। অরিজিনালি ব্রিটেন লিখেছিল চুক্তি ইনভ্যালিড। ক্যারো সেটাকে পাল্টে লেখেন ভ্যালিড।

    চিন তো চুক্তি স্বীকার করেনি কোনকালেই। তিব্বতও ১৯৩০ নাগাদ ঐ চুক্তিকে খারিজ ধরে নেয় কারণ চুক্তিটা ছিল ক্যুইড প্রো ক্যুও। ব্রিটেন তিব্বতকে সাহায্য করবে পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে। বিনিময়ে তিব্বত ম্যাকমোহন লাইন মেনে নেবে। যেহেতু ব্রিটেন বারগেনের নিজের দিকটা রাখতে পারেনি তাই ডিল বাতিল ধরে নেয় লাসা। সেইজন্যই ১৯৫১ সালে ভারত তাওয়াং দখল করে নিলে লাসা ফর্ম্যালি আপত্তি জানিয়েছিল।

    ১৯৪০এর দশকে ব্রিটেন অরুণাচলে ঢুকতে আরম্ভ করলে সেই সময় চিন বা তিব্বত কারোরই ক্ষমতা ছিল না কিছু করার। যতদিনে সব কিছু ঠান্ডা হল তখন ৪০ বছর কেটে গেছে ১৯১৪ থেকে। মিড ফিফটিস। এইবার তখন ভারত বলছে চুক্তি ভ্যালিড কারণ ১৯২৯ সালের কপিতেই নোটে লেখা আছে (যেটা কি না নকল কপি) - চিন ও তিব্বত বলছে না ইনভ্যালিড কারণ চিন সই করেনি। জটিলতা বাড়ল কারণ তিব্বত সত্যিই ডি ফ্যাক্টো স্বাধীন ছিল এই ইপকটাতে। তো ভারত বলল চিনের সই লাগবে কেন? ব্যাপারটা হি সেড, শি সেডের পর্যায়ে ঢুকে গেল। পরিস্থিতি আরো ঘেঁটে গেল দলাই লামা ১৯৫৯ সালে পালিয়ে ভারতে চলে এলে। ওনাকে খুব সম্ভবত জোর করিয়ে ম্যাকমোহন লাইন মেনে নিতে বাধ্য করানো হয়।(১) ভারতে আসার পর দিল্লী থেকে ওনার একটা বয়ান প্রেসে ছাড়া হয়। দলাই লামা একটা বিবৃতি দেন। তাতে অন্যান্য জিনিসের সাথে এই লাইনটা ছিল - "আমি খিংজেমানের কাছে 'সীমানা' পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছি"। খিংজেমান ম্যাকমোহন লাইনের জাষ্ট এক কিমি উত্তরে। অর্থাৎ ঘুরিয়ে দলাই লামা স্বীকার করে নিলেন ম্যাকমোহন লাইনটাই সীমানা। সুতরাং তাওয়াং ভারতে। ফলে চিন তখন সন্দেহ করে এই শব্দটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দলাই লামাকে দিয়ে ভারত বলিয়েছে। উত্তরে ভারত বলল খোদ দলাই লামাই তো মেনে নিয়েছেন।

    এটা হতে পারে নেহেরু সত্যিই ম্যাকমোহন লাইন ভ্যালিড মনে করতেন। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে - না কি নেহেরু ক্যারোর গুপিটার কথা জানতেন?

    ব্রিটিশ শাসনের আগে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো রাজনৈতিক ভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল না। পূর্ব ভারতে মুঘলদের পৌঁছ ছিল সুবে বঙ্গাল অবধি যেটা মোটামুটি আজকের পব ও বাংলাদেশ। আর উত্তরে কুচবিহার রাজ্যটিও বোধহয় মুঘলদের সাথে অ্যালাইনড ছিল। আকবর আসাম দখলের চেষ্টা করেছিলেন একবার। ব্যর্থ হন। সরাইঘাটের যুদ্ধ। আসাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা তিনটেই বেশ পুরোনো দেশী রাজ্য। এরা ভারতের সাংস্কৃতিক মূলধারার অংশ ছিল। সাথে বার্মারও প্রভাব ছিল। মিজোরাম, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ড অবশ্য আলাদা। এই দুটো প্রায় স্বাধীন উপজাতি রাজ্য। ভারতের সাংস্কৃতিক মূলধারার বাইরে। সিকিম, পবর দার্জিলিং সমেত তিব্বতের ট্রিবিউটারী ছিল। ব্রিটেন নিয়ে নেয়। অরুণাচল ওপরে লিখলাম।

    @S - আমেরিকার প্রোপ্যাগান্ডা লাইন অ্যাডপ্ট করলে আমেরিকার দিকে আঙুল তো উঠবেই কি করা যাবে? অনেষ্ট ক্রিটিসিজম এক জিনিস। আপনি যেটা লিখলেন - "চীনের এখন তিন বন্ধু হয়েছেঃ উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, ইরান।" সারা পৃথিবীতে ২০০ মতন সার্বভৌম দেশ আছে। এর মধ্যে বোধহয় ১৫০ টার সাথে প্রথম পাঁচটা ট্রেড পার্টনারের মধ্যে চিন থাকে। চিনের সাথে 'সকলের' এতো সংঘাত লাগলে এখানে চিন আজকে পৌঁছত?

    মেঘালয় নামটা স্থানীয় নয়। ১৯৭২ এ আলাদা রাজ্য হওয়ার পরে সুনীতিকুমার চ্যাটার্জী ঐ নামটা দেন।

    @সিকি - একসাথে শেষেই দেবো ভেবেছিলাম কিন্তু এখন ভাবছি প্রতিটা খন্ডের ভেতরে যা লিখছি সেগুলোর রেফারেন্স এবার থেকে সাথে নিচে দিয়ে দেব। গুরুতে ইনলাইন হাইপারলিঙ্কটা খুব দরকার।

    ------------------------------------------------------------

    ১. - পরবর্তীকালে দলাই লামা একবার মুখ খুলে ফেলেছিলেন। " ....In 2003, while touring Tawang, the Dalai Lama had been asked to comment on the issue, but had refused to give a direct answer, saying that Arunachal was actually part of Tibet. - http://bit.ly/2voNNIW ভারত তারপরে হুড়কো দিয়ে ওনাকে আবার লাইনে আনে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন