এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • চিনের সাথে ক্যাঁচাল

    দেব
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ জুলাই ২০১৭ | ১৫৬০৬ বার পঠিত
  • ১৯৬২র পর ১৯৮৬-৮৭, তারপর এই ২০১৭ এ এসে আবার চিনের সাথে ভাল রকম ঝামেলা শুরু হয়েছে। সেই একই গপ্পো - জমি কার?

    ঘটনার স্থল সিকিম-তিব্বত-ভুটান এই তিনটি রাজ্য ও দেশ যেখানে এসে মিলেছে সেই বিন্দু এবং তার পূর্বদিকের কয়েক বর্গকিমি ক্ষেত্র নিয়ে। সিকিম এবং তিব্বতের সীমানা ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ ভারত ও চিনের রাজার মাঝে হওয়া চুক্তিতে স্থির হয়েছিল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | 158.168.40.123 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:১৬367017
  • অসাম। এক দমে পড়ে উঠলাম। এ লেখার জন্য আরও অপেক্ষা করা যায়।
  • অ্যান্ডালগ্যালর্নিস | 131.241.218.132 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১০:৩৯367018
  • আলাদা করে লেখাগুলো একটা ডকুমেন্টে রেখে একবারে পড়বো। সিকি বানিয়ে ফেলবে নাকি? পিডিএফ করে অনেককে পড়ানো যাবে।

    আর শেষমেষ নেভিল ম্যাক্সওয়েলের বইটা কিনেই ফেল্লাম, এই প্রতিবার রেফার করার জন্যে খুঁজে বেড়াতে ভাল্লাগে না। সাথে জেপি দালভির হিমালয়ান ব্লান্ডারও কিনে ফেলেছি।
  • amit | 213.0.3.2 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:০০367019
  • আজকাল এই জাতীয়তাবাদের হাওয়াতে ইতিহাস আলোচনা করাও বিপদ। কদিন আগেই একচোট হয়ে গেলো কয়েকজন নর্থ ইন্ডিয়ান বন্ধুর সাথে, পাবলিক একেবারে বাড় খেয়ে টঙে চড়ে বসে আছে "মোদী চীনকে কিরকম দিলো দেখেছো" বলে। হোয়াটস্যাপ পড়ে এতো বেশি লোকে জেনে যাচ্ছে আজকাল, কিছু ডকুমেন্টারী আলোচনা করাই ঝামেলা।

    আরো কটা প্রশ্ন দেব কে। জাপান এর সাথে কি চীনের কোনো সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল ২ন্ড বিশ্বযুদ্ধের পারে ? কয়েকটা দ্বীপ নিয়ে ঝামেলা ছিল বোধহয়। আর তাইওয়ান কে যতদূর জানি চীন আলাদা দেশ হিসেবে স্বীকার করে না, কিন্তু দুটো দেশের বিসনেস রিলেসন বেশ ভালো। এটা কি ঠিক ইনফো ? সাউথ চীন সে এর বিবাদ তা নিয়ে আরো একটু বিশদে লিখলে ভালো হয়।
  • দেব | 127.197.249.96 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১৫367020
  • জাপানের সাথে চিনের আধুনিক ওয়েষ্টফ্যালিয়ান ধাঁচের সীমাচুক্তি একটাই হয়েছে, কোরিয়াকে নিয়ে। জাপান কোরিয়া দখল করার পরে চিন ও কোরিয়ার মাঝের সীমারেখাটা ঐ চুক্তিতে টানা হয়েছিল। পরবর্তীকালে যেটার ভিত্তিতে চিন-উত্তর কোরিয়ার সীমারেখা নির্ধারিত হয়।

    জাপানের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে চিনের সাথে কোন সীমাচুক্তি হয়নি। শুধু চিনই নয়, জাপানের সাথে রাশিয়া ও দুই কোরিয়ারও বিবাদ আছে। তবে সবকটাই খুচরো বিবাদ। কতকগুলো খুদে জনশুন্য দ্বীপ নিয়ে। তাইওয়ানের একটু উত্তরে এরকম কয়েকটা দ্বীপ আছে, চিন (এবং তাইওয়ান) ও জাপানের মাঝে সেইগুলো নিয়ে ঝামেলা আছে। জাপানীরা দ্বীপগুলোকে ডাকেন সেনকাকু, চিনারা বলেন দিয়ায়ু।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪৩ সালে চিয়াং, রুজভেল্ট ও চার্চিল কায়রোতে এক যৌথ বিবৃতি দেন। ঘোষণা হল জাপানকে হারাতে হবে এবং যুদ্ধের পর চিন থেকে যে যে অংশ জাপান কেড়ে নিয়েছে, যেমন মাঞ্চুরিয়া, তাইওয়ান এবং পেঙ্গু দ্বীপ, সেগুলি সব চিনকে ফেরত দেওয়া হবে। সেইসাথে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় থেকে জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য যেসব দ্বীপপুঞ্জ দখল করেছে সেগুলিও ফেরত নেওয়া হবে। এই 'অন্যান্য' দ্বীপপুঞ্জের তালিকায় দুটি দ্বীপপুঞ্জ স্প্র্যাটলি ও প্যারাসেল, দক্ষিণ চিন সাগরে। ফেরত যাবে কার কাছে সেটা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়নি। ধরেই নেওয়া হয়েছিল জাপান এগুলি দখল করার আগে যে যে দেশের ছিল সেই সেই দেশের কাছে ফেরত যাবে। গুয়াম ও মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ যেমন ছিল আমেরিকার। এগুলি ১৮৯৮ সালে স্পেনের কাছ থেকে আমেরিকা কেড়ে নেয়।

    তো সেনকাকু/দিয়ায়ু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চিনের বক্তব্য ওগুলোর নাম মাঞ্চু আমলের খাতাপত্রে পাওয়া গেছে সুতরাং কায়রো বিবৃতি অনুযায়ী ওগুলো চিনের। জাপান সেটা মানে না। জাপানের বক্তব্য ওগুলোয় জাপানীরা পা রাখার আগে (১৮৯৫) কারোরই দাবী ছিল না। টেরা নালিয়াস ছিল।

    দক্ষিণ চিন সাগরের স্প্র্যাটলি ও প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চিন (এবং তাইওয়ান), ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও ফিলিপাইনসের মধ্যে বহুপাক্ষিক বিবাদ আছে। চিন ও ভিয়েতনামের দাবীটা ঐতিহাসিক রেকর্ডের ভিত্তিতে ও কায়রো বিবৃতি অবলম্বনে (সেনকাকু/দিয়ায়ু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চিনের যেরকম দাবী)। মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইএর দাবীটা ১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক UNCLOS চুক্তি অনুযায়ী। ঐ চুক্তিতে সিদ্ধান্ত হয় প্রত্যেকটা দেশের উপকূল থেকে ২০০ নটিকাল মাইলের (৩৭০ কিমি) মধ্যের এলাকায় যাবতীয় সামুদ্রিক সম্পদের ওপর শুধু সেই দেশের অধিকার। এই ক্ষেত্রটিকে আন্তর্জাতিক পরিভাষায় "নিজস্ব অর্থনৈতিক এলাকা" বলে। যদি ২০০ নটিকাল মাইলের আগেই অন্য কোন দেশের ভূখন্ড চলে আসে তাহলে দুই ভূখন্ডের মাঝবরাবর ভাগ হবে।

    ফিলিপাইন্সের দাবী, ১৯৫৬ সালে কিছু ফিলিপিনো নাবিক পা রাখার আগে ঐ দ্বীপগুলির ওপর কারোরই দাবী ছিল না। টেরা নালিয়াস ছিল। সুতরাং স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ ফিলিপাইন্সের (সেনকাকু/দিয়ায়ু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে জাপানের যেরকম দাবী)।

    এই ম্যাপে কার কি দাবী পাবেন। রঙিন লাইনগুলো দেশগুলির প্রত্যেকের প্রত্যেকের দাবী অনুযায়ী নিজস্ব অর্থনৈতিক এলাকার সীমারেখা দর্শাচ্ছে।



    এই মুহূর্তে প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ চিনের হাতে। স্প্র্যাটলির বেশীর ভাগ তুলনামূলকভাবে বড় দ্বীপগুলি ভিয়েতনামের হাতে। কিন্তু স্প্র্যাটলির বৃহত্তম দ্বীপটির মালিক তাইওয়ান। তবে তাইওয়ানের হাতে ঐ একটি দ্বীপই। চিনসহ অন্যান্য দেশগুলির হাতেও কিছু কিছু আছে।

    http://thediplomat.com/2016/05/south-china-sea-who-claims-what-in-the-spratlys/

    এইখানে পৃথিবীর বৃহত্তম নিজস্ব অর্থনৈতিক এলাকাসম্পন্ন দেশগুলির বিবরণ পাবেন। প্রথম ফ্রান্স; ১১,৬৯১,০০০ বর্গকিমি। দ্বিতীয় আমেরিকা; ১১,৩৫১,০০০ বর্গকিমি। ভারত ২,৩০৫,১৪৩ বর্গকিমি।

    https://en.wikipedia.org/wiki/Exclusive_economic_zone

    --------------------------------------------------------------

    তাইওয়ানের কেসটা এই। দ্বীপটা চিনের ছিল। ১৮৯৫এ জাপান কেড়ে নেয়। ১৯৪৫এ ফেরত যায় চিনের কাছে (কায়রো বিবৃতি অনুযায়ী)। ১৯৪৯এ কমিউনিষ্ট পার্টি ক্ষমতায় এলে কুয়োমিং তাং পার্টি তাইওয়ান দ্বীপে গিয়ে ঘাঁটি গাড়ে। সেখানে 'দুনম্বর' (বা মতভেদে 'একনম্বর') চিন সরকার স্থাপিত হয়। মূল ভূখন্ডে একটা চিন (৯৯% এলাকা ও ৯৯% জনসংখ্যা) আর তাইওয়ানে আরেকটা। দু'পক্ষই নিজেকে গোটা চিনের ন্যায্য উত্তরাধিকারী বলে দাবী করতে শুরু করে। কোনটাকে আমেরিকা 'আসল চিন রাষ্ট্র' বলে স্বীকৃতি দেবে? অফ কোর্স যেটা আয়তন ও লোকসংখ্যায় ১% সেইটাকে। এই উদ্ভট শ্যারাড চলবে দু'দশক ধরে। ১৯৭১এ নিক্সনের চিনযাত্রার পরে আমেরিকা তাইওয়ানকে ছেড়ে লালচিনকে 'আসল' চিন বলে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু চিয়াং দাবী ছাড়েননি। তাইওয়ান আজও নিজেকে গোটা চিনের ন্যায্য উত্তরাধিকারী বলে দাবী করে। তবে আজ এটা নেহাতই প্রতীকি দাবী হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ তাইওয়ানবাসী মূল ভূখন্ডের ওপর দাবী ছেড়ে দিয়ে নিজেদেরকে চিনের থেকে আলাদা স্বাধীন দেশ বলে ঘোষণাতে ইচ্ছুক। তবে একটা সাইজেবল চাঙ্ক আছেন যারা চিনের সাথে যুক্ত হতে চান।

    উল্টোদিকে চিন হুমকি দিয়ে রেখেছে তাইওয়ান যদি স্বাধীনতার কথা চিন্তাও করে তালেই ক্যাল। চিন গোটা তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে ধরে। এই ব্যাপারটাতে চিন সিরিয়াস। তবে তাইওয়ান কিছু মুখ খোলেনি এখনও অবধি। চিন বলেছে তাইওয়ান চুপ থাকলে চিনও কিছু করবে না। দু'দেশের মধ্যে ব্যব্সায়িক সংযোগ খুবই ভাল। ১৯৯২ সাল থেকে বরফ গলতে শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়ার মতন তাইওয়ানও খুব ধনী শিল্পোন্নত দেশ। চিনে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে তাইওয়ানএর কোম্পানীদের।

    প্রসঙ্গত সেনকাকু/দিয়ায়ু দ্বীপপুঞ্জতে এবং দক্ষিণ চিন সাগরে কিন্তু চিন ও তাইওয়ানের দাবী আইডেন্টিকাল। ঐ একটা জায়্গায় দু'পক্ষ এককাট্টা।

    --------------------------------------------------------------

    পুজো ভাল কাটাবেন সবাই। ক্যাঁচাল যতই থাকুক :)
  • দেব | 57.11.254.120 | ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ১৭:৩১367021
  • তুলে রাখলাম।
  • পাই | 24.139.221.129 | ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ২০:০৪367023
  • দেব, মেইল পেয়েছেন ?
  • দেব | 57.11.254.120 | ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ২০:১৬367024
  • এই দেখলাম। রিপ্লাই দিয়েছি।
  • sswarnendu | 41.164.232.149 | ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ২০:১৭367025
  • এই টইটা অনবদ্য, জাস্ট অনবদ্য। এত সরসভাবে ভূরাজনীতির মত তথ্যভারে ভারাক্রান্ত বিষয় নিয়ে লেখা মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়। আর আমার নিজের কথা বলতে পারি ভারত যতটা চিল্লায় তেমন গা-জোয়ারি চীন যে করেনি বা করেনা সেইটার একটা আবছা ধারণা ছিল মাত্র, কিন্তু বস্তুত এতগুলো সীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে চীন এত সেন্সিবলি খেলেছে এইটা জাস্ট জানতামই না।
  • de | 24.139.119.171 | ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:৩২367027
  • এই লেখাটা হিন্দী আর ইংরাজীতে ট্রান্স্লেট করে সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে বেরোনো উচিত - খুবই দরকারী লেখা!
  • দেব | 57.11.236.255 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৭:৫৬367028
  • ১৯৭৪ সাল। উত্তর-পশ্চিম চিনের শানক্সি রাজ্যের এক পুঁচকে হতদরিদ্র গ্রাম লিয়াংজিয়াহি। বিদ্যুৎসংযোগবিহীন, বহির্জগৎবিচ্ছিন্ন, মাটি অনূর্বর। চাল, গম তো দূর, ভুট্টাও গজায় না। খাবার শস্য বলতে শুধু বাজরা অথবা বুনো ঘাসের বীজ, ঐ বাজরা জাতীয়। গ্রামের লোক পাহাড়ে গুহা খুঁড়ে বাস করে। সেই গ্রামে বেজিং থেকে একটি ছেলে এসে হাজির। তাকেও থাকার জন্য একটা গুহা দেওয়া হল। এইটা -

    https://qph.ec.quoracdn.net/main-qimg-3a4d36f3a55832f95ff2a0200564bfa4-c

    চারদিকে তাকিয়ে ছেলেটি বুঝল অবস্থা কঠিন। বিদ্যুৎ বা জলের ব্যবস্থা করা অসম্ভব। কিন্তু আর কিছু কি আছে। হ্যাঁ গু আছে। গ্রামবাসীদের। ছেলেটি বইয়ে পড়েছিল গু, গোবর এগুলো পচিয়ে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করা যায়। তাতে রান্না বা আলো হতে পারে। সে একখানা ট্যাঙ্ক বানিয়ে তাতে গ্রামবাসীদের খাটা পায়খানাগুলোর থেকে গু জমা করে মিথেন বানানোর চেষ্টা শুরু করল। সবই হল কিন্তু দেখা গেল ট্যাঙ্কটার ভেতরে একটা পাইপ আটকে গেছে। পাইপটাকে আলগা করতে সে গু ভর্তি ট্যাঙ্কের ভেতরে নামল। গুয়ে চুবে পাইপটাকে ঠিক করার পর দেখা গেল জিনিসটা কাজ করতে শুরু করেছে। পরের বছর ছেলেটি নিজের মোপেডটা বেচে গ্রামের জন্য একটা জলের পাম্প জোগাড় করল। টুকটুক করে এগোতে শুরু করল গ্রামটা। সেই বছরই ছেলেটি দরখাস্ত করল পার্টিতে যোগ দেওয়ার। চিঠির উত্তর এলে খুলে দেখে - দরখাস্ত বাতিল।

    --------------------------------------------------------------

    দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে অনেক চিনারা বাস করে। দেশগুলিতে চিনাদের জনসংখ্যার অংশবিন্যাস দেখুন - ভিয়েতনাম (২%), বার্মা (৩%), থাইল্যান্ড (১৪%), ইন্দোনেশিয়া (৩%), মালয়েশিয়া (২২.৬%), সিঙ্গাপুর (৭৪.৩%), লাওস (১০%)। এর একটা কারণ ভৌগোলিক নৈকট্যজনিত স্বাভাবিক জনপ্রবাহ। এছাড়া ঔপনিবেশিক আমলে এই দেশগুলিতে অনেক চিনা (এবং ভারতীয়ও) শ্রমিক কাজ খুঁজতে আসত। বিশেষ করে ব্রিটিশশাসিত সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ডাচশাসিত ইন্দোনেশিয়ায়। সিঙ্গাপুরে চিনারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বেশ কিছু ভারতীয়ও বাস করেন সিঙ্গাপুরে (৯.১%)। এই চিনা ডায়াস্পোরা ১৯৭৮এ চিন বাজার খোলার পর থেকে চিনে বিনিয়োগ ও শিল্পস্থাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। লাইক ক্লকওয়ার্ক এই সবকটি দেশেই চিনারা অত্যন্ত বাণিজ্যসফল। আমাদের পার্সিদের মতন। এবং হয়তো কিছুটা এই কারণেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই সংখ্যালঘু চিনাদের ওপরে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীগুলি গত ৬০-৭০ বছর ধরে উৎপাত চালিয়ে এসেছে। মালয়েশিয়ায় একদম খাতায় কলমে বৈষম্যের আইন করা আছে। স্থানীয় মালয় জনগোষ্ঠীকে মনে করা হয় 'বুমিপুতরো' (শব্দটা সংস্কৃত 'ভূমিপুত্র' থেকে নেওয়া)। সরকারী সুযোগসুবিধা এনারা বেশী পান। বাকিরা কিছুটা এলেবেলে। চিনারা - এবং কিছু ভারতীয়ও বাস করেন মালয়েশিয়ায় (৬.৭%) - এই বাকিদের দলে।

    ভিয়েতনামের সাথে চিনের ঝগড়া সুপ্রাচীন। ৯৩৮ শতাব্দে ভিয়েতনাম চিনের থেকে স্বাধীন হয়। এর আগে প্রায় হাজার বছর ভিয়েতনাম চিনের শাসনে ছিল। এরপরে মিং সাম্রাজ্যের কালেও একাধিক রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫০, ৬০এর দশকে আমেরিকাকে ঠেকাতে চিন ভিয়েতনামকে বিরাট সাহায্য করেছিল। ইনফ্যাক্ট আমেরিকা উত্তর ভিয়েতনামে স্থল অভিযান করতে সাহস করেনি চিনের জন্যই। ১৯৬৪ সালে চিন আল্টিমেটাম দেয় আমেরিকাকে - "যদি উত্তর ভিয়েতনামে স্থলসেনা পাঠাও, চিনও তাহলে ফিল্ডে নামবে"। কোরিয়ায় আমেরিকা যা শিক্ষা পেয়েছিল তাতে আর ঝুঁকি নেয় নি আমেরিকা। এই সবের বদলে চিন আশা করেছিল হয়তো পুরোনো ঝগড়াঝাঁটি মিটিয়ে সব ঠিক হয়ে ভিয়েতনামের সাথে অবশেষে ভাল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। সে গুড়ে বালি। ১৯৭৪এ দক্ষিণ ভিয়েতনামের নৌসেনারা - দেশটি তখন প্রায় পতনের মুখে - দক্ষিণ চিন সাগরের প্যারাসেল দ্বীপগুলিতে হাত বাড়াল। চিন মেরে তাড়িয়ে দিল। এর পরের বছর দক্ষিণ ভিয়েতনামের পতন ঘটে ভিয়েতনাম আবার একখন্ড হল। সাথে সাথেই চিন-ভিয়েতনামের সেই পুরোনো ঐতিহাসিক বিবাদ আবার ফিরে এল। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিয়েতরা স্থানীয় চিনাদের ওপরে ব্যাপক অত্যাচার শুরু করলে প্রচুর চিনা ভিয়েতনাম ছেড়ে পালায়। ১৯৭৯ সালে চিন ভিয়েতনাম যুদ্ধের এটা একটা অন্যতম কারণ। আরেক প্রস্থ নৌযুদ্ধ হল ১৯৮৮ সালে, স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ চিগুয়াতে। চিন ভিয়েতনামের বর্তমান সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল। ঝগড়ার মূল কারণ ঐতিহাসিক রাগ এবং স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে।

    তবে সবচেয়ে বেশী অত্যাচার হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। ১৯৬০এর দশকে আমেরিকার আশীর্বাদধন্য জেনারেল সুহার্তো ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিষ্টদের কচুকাটা করেন। প্রচুর স্থানীয় চিনাদের হত্যা করা হয় তবে শুধু চিনারাই টার্গেট হননি। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকেরাও কমি সন্দেহে খুন হন। কোন হিসাব নেই ঠিক কত। তবে সব মিলিয়ে ১০ লক্ষের কম হবে না। ১৯৬৭ সালে চিন ইন্দোনেশিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। বিচ্ছিন্ন থাকবে ১৯৯০ অবধি। এরপর ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আরেকপ্রস্থ ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। এবারে শুধু চিনারাই টার্গেট হলেন। মহারাষ্ট্রে যেমন সবকিছু পার্সি ও গুজরাতিদের হাতে তেমনি ইন্দোনেশিয়ায় সব বড় বড় কোম্পানীগুলি স্থানীয় চিনাদের স্থাপনা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়টির নাম আপনারা শুনেছেন হয়তো - সালিম গ্রুপ। পশ্চিমবঙ্গে এদের কিছু পয়সা ঢালার কথা উঠেছিল মাঝখানে। জানিনা এখন কদ্দুর গেছে। যাই হোক এই সালিম গ্রুপেরও মালিক চিনা। তো যা হয় আর কি। ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রবল। স্থানীয় চিনাদের ওপরে রাগ গিয়ে পড়ল। ১৯৯৮এর দাঙ্গায় হাজারের ওপর চিনা খুন হন। দেশ ছেড়ে পালালেন অনেকে, আরো কয়েক হাজার হবে। কেলো ক্যাঁচাল কেরোসিন হয়ে গেল। কিন্তু ১৯৯৮এ চিন ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে রা কাড়েনি। ফলে ডায়াস্পোরার চিনারা, বিশেষ করে মালয়ি ও সিঙ্গাপুরিরা ক্ষুব্ধ হন। খোদ চিনেও জনতার প্রবল রাগ ছিল। ভারতে যেমন বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে আক্রমণ হলে প্রতিক্রিয়া হয়। বেজিং এ ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের সামনে চিনারা বিক্ষোভ দেখালে পার্টি টের পেল এই রে! পাবলিক চটেছে। তখন জিয়াং জেমিন একটু মিউ মিউ করলেন। তবে সে এতই সামান্য যে উল্টে আগুনে ঘি পড়ল। কিন্তু পার্টি আর কথা বাড়ালো না। অথচ সেই তুলনায় তাইওয়ান ও হংকংএর থেকে ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিক্রিয়া আসে। তাইওয়ান জাকার্তাকে হুমকি দেয় - চ্যাংড়ামো বন্ধ না হলে যাবতীয় বিনিয়োগ বন্ধ হবে। ইন্দোনেশিয়ার শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারেন বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। ক্ষমা চাইলেন। কনট্রাস্টটা প্রবল। চিনে আজও এই নিয়ে সিসিপির ওপরে পাবলিক খাপ্পা।

    https://www.theguardian.com/world/2001/aug/01/indonesia.comment
    https://www.theguardian.com/world/2017/oct/17/indonesia-anti-communist-killings-us-declassified-files
    https://en.wikipedia.org/wiki/May_1998_riots_of_Indonesia

    বার্মা একটি বাস্কেট কেস। ব্রিটিশ শাসন থেকে ১৯৪৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর দেড় দশক মোটের উপর ঠিকঠাক চলেছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে সেনাপতি নে উইন ক্ষমতা দখল করলেন। ১৯৫৮ সালে যে কীর্তি আয়ুব খাঁ পাকিস্তানে করেছেন। ভারত মুখে কুলুপ এঁটে রইল। কি আর বলবে? চিনও মুখে কুলুপ এঁটে থাকার মতলবেই ছিল কিন্তু থাকা গেল না। আগের পোষ্টে লিখেছি মনে করুন বার্মার সাথে সীমাচুক্তিতে চিন বেশ কিছু এলাকা ছেড়ে দিয়েছিল। এগুলি বার্মার শান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে মূলত চিনারা বাস করত। এরা আবার অভিবাসীও নন। মাঞ্চু আমলে এই এলাকাগুলো চিনেরই ছিল। ব্রিটেন জোর করে বার্মায় ঢোকায় (উত্তরের ম্যাকমোহন লাইনের মতন)। ইন্দোনেশিয়ার মতন বার্মাতেও ১৯৬০এর দশকে অত্যাচার শুরু হলে স্থানীয় চিনারা 'নকশাল' আন্দোলন শুরু করলেন। বার্মার সেনা পেঁদিয়ে লাট করে দিল। এরা প্রতিবেশী চিনের ইউনান রাজ্যে গিয়ে উদ্বাস্তু হলেন। চিন শ্যাম রাখি না কূল ভাবতে ভাবতে ছড়িয়ে লাট করল। ভারত শ্রীলঙ্কায় তামিলদের নিয়ে যে গেরোয় পড়েছিল হুবহু সেই এক কেস। এই আজকে চিন বিদ্রোহী 'স্বদেশী' দের সাহায্য করছে। এই কালকে রেঙ্গুনের চিৎকারে সাহায্য বন্ধ করছে। সেই উৎপাত আজও থামেনি। শেষ খবর অনুযায়ী ২০১১ সাল অবধিও চিন উত্তর বার্মার কাচিন বিদ্রোহীদের সাহায্য দিয়ে এসেছে। কাচিনরাও চিনের একটি ছোট জনগোষ্ঠী। একদিক দিয়ে দেখলে চিনের কপাল খুব ভাল। বার্মার সাথে ঝামেলা শুরু হওয়ার ঠিক আগে আগে সীমাচুক্তিটা সেরে নিয়েছিল (১৯৬০) নইলে ঘেঁটে ঘ হয়ে যেত। তবে চিনারা বার্মার ভেতরে সরাসরি হাত লাগানোর ভুল করেননি। নইলে কে জানে, হয়তো রাজীব গান্ধীর মতন দেংবাবুর বডিখানাও উড়ে যেত। আন্দাজ করা যেতে পারে বার্মার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা পেয়েই চিন ১৯৯৮এ ইন্দোনেশিয়ায় আর নাক গলায় নি। পার্টি মুখ বুঝে পাবলিকের খিস্তি ও জুতোপেটা সহ্য করেছে।

    শুধু চিনারাই নন, বার্মার আরো অনেকগুলি সংখ্যালঘু জনজাতির সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ বামারদের মারপিট। কারেন, শান, কুকি, ওয়া, রোহিঙ্গা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫টি (!) সশস্ত্র বিদ্রোহী দল স্বাধীন বার্মায় বিভিন্ন সময়ে সচল থেকেছে বা এখনো রয়েছে। শাসকশ্রেণী কতটা অপদার্থ হলে এই পরিস্থিতি হয় ভাবুন। (বার্মার জনসংখ্যা ৫ কোটি। ১৩০ কোটির ভারতে সব মিলিয়ে এরকম দল ৪০টির মতন।) রোহিঙ্গাদের নিয়ে কি চলছে দেখছেনই। কুকি জনগোষ্ঠীটি বার্মার 'চিন' রাজ্য ও প্রতিবেশী ভারতের মনিপুর রাজ্যে বিস্তৃত। এরা দু'দেশের ওপরেই খাপ্পা। নিচের ম্যাপে বিভিন্ন বিদ্রোহী দলগুলির অবস্থান পাবেন -



    থাইল্যান্ড ব্যাতিক্রম। অন্যান্য অনেক উৎপাত থাকলেও চিনাদের বিরুদ্ধে কোন অত্যাচার হয় নি। সিঙ্গাপুরে চিনারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং হয়তো ডায়াস্পোরা স্পিরিট বলে কিছু একটা হয় - সিঙ্গাপুর পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী দেশ - ক্রয়ক্ষমতা সমন্বয় করে বছরে মাথাপিছু আয় ৯০,০০০ ডলার! অথচ চিন নিজে - ১৫,০০০, ভারত ৬,৫০০ ডলার। কিন্তু হংকং - ৫৮,০০০, তাইওয়ান - ৪৮,০০০ ডলার। এবং ইন্দোনেশিয়ায় এত কান্ডের পরেও স্থানীয় চিনারা ধনীতম জনগোষ্ঠী। অবশ্য তাইওয়ানের কেসটা ডায়াস্পোরার জন্য নয়, আলাদা। ১৯৪৯ সালে চিন ছেড়ে পালিয়ে আসার সময় চিয়াং কাইশেক ও তার দলবল সারা চিনের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের যাবতীয় মজুত সোনা, রূপো, বৈদেশিক মুদ্রা চুরি করে তাইওয়ানে নিয়ে আসেন। সেই টাকায় তাইওয়ানের অর্থনীতি পুনর্চাঙ্গা হয়।

    কিন্তু একটা প্যাটার্ন পরিস্কার। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবকটি দেশই এককালে চিনের অনুসারী রাজ্য ছিল। চিনকে সন্মান করে চলত। চিনকে ঘিরে এই দেশগুলির অর্থনীতি ও সমাজসংস্কৃতি পাক খেত। ইউরোপীয় শক্তিগুলির ধাক্কায় চিন গত ১৫০ বছরে সেই প্রভাব প্রায় সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে। জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনাম তিনটে দেশেই স্থানীয় বর্ণমালা চিনের বর্ণমালার ভিত্তিতে বানানো। আজ কোরিয়া নিজের আলাদা বর্ণমালা অনুসরণ করে। ভিয়েতনাম ল্যাটিন অক্ষর ব্যাবহার করে (ফরাসীশাসনের প্রভাব)। একমাত্র জাপানই বর্ণমালা বদলায়নি। কারণটা বোঝা কঠিন নয়। জাপান নিজের পায়ে আগেই দাঁড়িয়েছিল। তাই নিজের বর্ণমালা চিনের থেকে আমদানী হলেও অতটুকু আত্মবিশ্বাস জাপানের শাসকশ্রেণীর ছিল যে নিজেদের ঐতিহাসিক বর্ণমালা পরিত্যাগ করেননি। কিন্তু জাপানের সাথে চিনের কি সম্পর্ক সে তো জানেন ই। ১৯৪৫এর পর কোরিয়ার সাথে চিনের সুসম্পর্ক স্থাপন না হওয়ার কোন কারণ ছিল না। কিন্তু সেখানেও ভূরাজনীতি ব্যাপারটাকে পুরো ঘেঁটে দিল। দক্ষিণ কোরিয়া আজ আমেরিকার 'অনুসারী' রাজ্য। জাপানও তাই। দুটিই চিনের নাগালে বাইরে। উত্তর কোরিয়ার কিমতন্ত্র এতই বিকৃত যে তার সাথে কথা বলাই অসম্ভব। তার ওপরে দুই ও তিন নম্বর কিম পরমাণু বোমাই বানিয়ে ফেলেছেন। চিনের পক্ষে উত্তর কোরিয়াকে আর নিজের অরবিটে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। চিন যতদিন আমেরিকাকে হারানোর ক্ষমতা অর্জন না করছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান চিনের প্রভাববলয়ে আসবে না। এই গেল পূর্ব এশিয়া।

    দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সাথে চিনের যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক রয়েছে অবশ্য। এই তিনটিকে বর্তমানে চিনের 'অনুসারী' দেশ বলা যেতে পারে এবং দেশগুলির তাতে খুব একটা আপত্তিও নেই। আপত্তি না থাকার প্রধান কারণ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম যেমন চিনকে ভয় খায় লাওস ও কম্বোডিয়া তেমনি ভিয়েতনামকে ভয় খায়। সে আরেক লম্বা গপ্পো। ঐতিহাসিকভাবে চিন এদেরকে ভিয়েতনামের থেকে প্রোটেকশন দেয়। ভিয়েতনামের কম্বোডিয়া দখল করে নেওয়াটা ১৯৭৯ সালে চিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রধান কারণ। উল্টোদিকে থাইল্যান্ড বার্মাকে ভয় খায়। একবার দু'বার নয় গত পাঁচশো বছরে সাতবার থাইল্যান্ডের প্রাক্তন রাজধানী অযোধ্যাতে বার্মা হানা দিয়েছে। বার্মা ব্রিটেনের দখলে চলে যাওয়ার পর বন্ধ হয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্স - ব্রিটেন ভারত ও বার্মায় এবং ফ্রান্স উল্টোপিঠে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়াকে দখল করেছিল - নিজেদের ডোমেনের মাঝে থাইল্যান্ডকে, তখন শ্যামদেশ বলে পরিচিত ছিল, স্বাধীন বাফার রাজ্য হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রাশিয়া ও ভারতের মাঝে যেমন আফগানিস্তান। এই কারণে থাইল্যান্ড কারোর দখলে যায় নি। আজ ব্রিটেনও নেই, ফ্রান্সও। বার্মার ভয়ে থাইল্যান্ড চিনের ওপর নির্ভর করে। OBOR এর আওতায় চিন এই তিনটি দেশেই প্রচুর টাকা ঢালছে। সেই সঙ্গে সস্তায় সমরাস্ত্রের যোগান দেয় চিন। কয়েক মাস আগেই চিন থাইল্যান্ডকে গোটা ৩০ আধুনিক ট্যাঙ্ক বেচেছে।

    বার্মার সাথে চিন রণে ভঙ্গ দিয়েছে। বুঝে গেছে যে এগুলোর দ্বারা কিসু হবে না। বার্মা নিজের দেশে যা করে করুক, চিনা জনজাতিদের ওপরে অত্যাচার করুক বা রোহিঙ্গাদের ওপর, চিন মুখ বুজে নিজের ধান্দায় মন দিয়েছে। তেলের পাইপলাইন বসে গেছে একখানা। চিনের কুনমিং থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলস্থ বার্মার সিত্তে বন্দর অবধি। সেই দিয়ে বার্মার নিজস্ব তেল, গ্যাস এবং পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে অশৌধ তেল চিনে ঢুকবে। মালাক্কা প্রণালী দিয়ে আর যেতে হবে না। রুটটার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। এই গত এপ্রিল মাসে চালু হল। লক্ষণীয় পাইপলাইনটার শেষ অংশটুকু রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত। যেখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যা চলছে। বলা বাহুল্য রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমেরিকা যতই চাপ দিক না কেন, চিন বার্মাকে আর কিছু বলতে পারবে না। এত বড় ইনভেস্টমেন্ট তাহলে জলে। বাস্তব এটাই যে চিন-বার্মা সম্পর্কে আপার হ্যান্ড বার্মার। কোরোলারী - বার্মা রোহিঙ্গাদের সাথে যা শুরু করেছে অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠী টুকুস করে পাইপলাইনটা উড়িয়ে দিলে অবাক হবেন না। এবং সে কাজে আমেরিকা আনন্দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের উচ্চমানের বিস্ফোরকের যোগান দেবে। ভূরাজনীতি বড় কঠিন ঠাঁই।

    এই সবের সাথে পাকিস্তানের CPECএর মতন বার্মার ভেতর দিয়েও চিন একখানা ট্রানসিট রাস্তা আদায় করেছে, বঙ্গোপসাগরে আসবে। রেল লাইনের কথাও চলছে। চিনের বিদেশমন্ত্রক অবিশ্বাস্য রকম পরিণত ও কর্মপটু স্বীকার করতে হবে।

    https://www.bloomberg.com/news/articles/2017-04-11/china-opens-delayed-myanmar-oil-link-to-get-mideast-crude-faster

    দক্ষিণ চিন সাগরের দ্বীপগুলো নিয়ে বিবাদের ইতিহাস এবং কার কি দাবীদাওয়া সেগুলো আগের পোষ্টে দিয়েছি। ওটার আর পুনরাবৃত্তি করছি না। এবার আসা যাক বর্তমানে। আজকাল ভিয়েতনামের সাথে চিনের সম্পর্ক ব্লেডের ধারে ব্যালান্স হয়ে আছে। ভিয়েতনামের কমিউনিষ্ট পার্টির ভেতরে দু'টো দল আছে। দুইই 'চিন কার্ড' খেলে। একদল চায় চিনের সাথে সম্পর্ক আর জটিল না করে বরং চিনের থেকে কিছু রোকড়া বিনিয়োগ হিসেবে আদায় করা যাক। অন্যদল পাবলিককে চিনের বিরুদ্ধে উসকিয়ে চিনের থেকে আরো বেশী টাকা আদায়ের পন্থায় বিশ্বাসী। মোদ্দা কথা চিনের প্রতি ভিয়েতনামের মেসেজটা এই - আমরা পুরোনো ঝামেলা মিটিয়ে চিনের 'অনুসারী' দেশ হতে রাজি। কিন্তু ক্যাশ ছাড়ো বস। অনেক অনেক অনেক ক্যাশ। চিন কোনমতে ব্যালান্স করে চলেছে। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়তে একটা নতুন মেট্রো লাইন বানাচ্ছে চিন। কাজ প্রায় শেষের মুখে। কিন্তু তারই মাঝে গত জুন মাসে দক্ষিণ চিন সাগরে ভিয়েতনাম একটি স্প্যানিশ কোম্পানীকে তেল খোঁজার অনুমতি দিয়ে বসল। যে জায়গায় অনুসন্ধান চালানো হবে সেটা চিনের দাবীকৃত নিজস্ব অর্থনৈতিক এলাকার সমুদ্রের মধ্যে। চিন সরাসরি যুদ্ধের হুমকি দেওয়ায় ভিয়েতনাম শেষ অবধি পিছিয়েছে। এই গত আগস্টের ঘটনা। লক্ষণীয় ঘটনাটা ঘটেছে ভারতের সাথে ডোকলাম বিবাদ ও ট্রাম্পের উত্তর কোরিয়া নিয়ে চিলচিৎকারের একদম সাথে সাথেই। কার উসকানিতে কে কি করছে আর কে 'ঝি' কে মেরে 'বউ' কে শেখাচ্ছে বলা মুশকিল। মারাত্মক ব্যাপার। ভারত-ভুটান, ভিয়েতনাম, আমেরিকা-জাপান বনাম উত্তর কোরিয়া, চিন কি করে মাথা ঠান্ডা রেখেছিল কে জানে! প্রসঙ্গত ভারতের ONGCও ভিয়েতনামের নিজস্ব অর্থনৈতিক এলাকার সমুদ্রের মধ্যে তেল-গ্যাস খোঁজার কাজ চালায়। কিন্তু সেগুলো চিনের দাবীকৃত এলাকার গা বাঁচিয়ে।

    https://www.nytimes.com/2017/08/04/world/asia/vietnam-south-china-sea-repsol.html

    মালয়েশিয়ার সাথে চিনের সম্পর্ক ভালই আজকাল। দক্ষিণ চিন সাগরে দু'দেশের মধ্যে নিজস্ব এলাকা নিয়ে বিবাদ আছে ঠিকই কিন্তু মালয়েশিয়া তুলনামূলক ভাবে পরিণত দেশ। খুব বেশী চেঁচামেচি না করে OBOR এ সামিল হয়ে গেছে। পরিকাঠামো কে না চায়। সিঙ্গাপুর একটু স্পেশাল। আয়তনে ছোট্ট (শুধু একটা শহর) দেশটিতে চিনারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এবং সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধনীতম দেশ। চিনের থেকে অনেক অনেক ওপরে। লি কুয়ান ইউ (ইনিও চিনা) বলে এক ভদ্রলোক স্বাধীনতার পর প্রেসিডেন্ট হয়ে দেশটিকে এভারেস্টের উচ্চতায় তুলে নিয়ে যান। না গণতন্ত্রের 'গ'ও ঢুকতে দেননি। কিন্তু সিঙ্গাপুরের ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর সেরা সমুদ্রবন্দর খাড়া করেছেন একখানা। তাইতে জাহাজ চালাচালি ও কন্টেনার লোফালুফি করে টাকার সমুদ্র বানিয়েছে সিঙ্গাপুর। সারা পৃথিবীর অর্থনীতির পন্ডিতশ্রেণী লি কুয়ান ইউকে বিরাট সন্মান করেন, চিনারা বিশেষ করে। এই ২০১৫ সালে মারা গেলেন। শি জিনপিং নিজে লি বাবুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রেসের কাছে একখানা বক্তৃতা দিয়েছেন।



    আপনারা হয়তো ভাবছেন যেহেতু সিঙ্গাপুরিরা জাতিগত ভাবে চিনা তাই সিঙ্গাপুর চিনের কথা মেনে চলে। না স্যার। মনে রাখুন সিঙ্গাপুরিরা (কলা নয়, মানুষ) গড়পড়তা চিনাদের থেকে অনেক দিন ধরে অনেক বেশী বড়লোক। ফলে এনারা চিনের জাতভাইদের বেশ হেলাছেদ্দার চোখে দেখেন। তার ওপরে চিনারা আবার 'কমি'। আর গত ৭০ বছর ধরে আমেরিকা চিনের ঘাড়ের ওপরে বসে। ফলে সিঙ্গাপুর চিনকে বেশী পাত্তা দেয় নি। কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের সাথে অন্য দেশগুলির ঝগড়া দেখে সিঙ্গাপুর ভয় খেয়েছে। এটা অকারণে নয়। সিঙ্গাপুরের যাবতীয় উপার্জন ঐ বন্দর থেকেই। যদি দক্ষিণ চিন সাগরে কোন যুদ্ধটুদ্ধ লেগে নৌবাণিজ্য কয়েকমাসের জন্যেও বন্ধ হয়ে যায় তালে সিঙ্গাপুরের বাঁশ হয়ে যাবে। ফলে যদিও দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের সাথে সিঙ্গাপুরের কোন বিবাদ নেই, সিঙ্গাপুর এই এলাকায় চিনের দাবী সমর্থন করে না। এবং সিঙ্গাপুর চায় আমেরিকা ঐ অঞ্চলে উপস্থিতি বজায় রাখুক যাতে চিনের একটা কাউন্টার থাকে।

    সিঙ্গাপুরের মতন ইন্দোনেশিয়ার সাথেও চিনের কোন এলাকা নিয়ে বিবাদ নেই। ইন্দোনেশিয়া ও চিনের মাঝে সম্পর্ক ১৯৯৮এর দাঙ্গার পর আস্তে আসে এখন অনেক ভাল। তবে হোঁচট আছে। স্থানীয় চিনারা এখনো পুরোপুরি টার্গেট হওয়া বন্ধ হননি। ওখানেও 'বিজেপি' আছে। তারা স্থানীয়দের মধ্যে চিনাবিদ্বেষী কার্ড খেলে সময়ে সময়ে। মালয়েশিয়ার মতন ইন্দোনেশিয়ায় চিনাদের বিরুদ্ধে কোন প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের আইন নেই (আগে ছিল)। কিন্তু তাতেও ডায়াস্পোরার চিনারা স্বীকার করেন যে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য থাকলেও মালয়েশিয়া বেশী নিরাপদ। কারণ মালয়েশিয়ায় চিনাদের বিরুদ্ধে সদাসর্বদা 'অপ্রাতিষ্ঠানিক' হিংসার (দাঙ্গা) ভয় তাড়া করে বেড়ায় না। ইন্দোনেশিয়ায় কিন্তু সেটা আছে।

    কিন্তু যে দেশটির সাথে সম্প্রতিকালে চিনের সবথেকে বেশী করে লাগল সেটা ফিলিপাইন্স। এটা ওবামা ও হিলারীর ব্রেনচাইল্ড। একটু ব্যাকগ্রাউন্ডটা দিই। এই সিরিজটার একদম প্রথমে লিখেছিলাম ২০০১ থেকে ২০১০ মোটের ওপর এই দশ বছরের মধ্যে আমেরিকা বুঝতে পারে যে চায়নাস গ্রোথ ইজ নট গোয়িং টু স্লো ডাউন এনিটাইম সূন। দেওয়ালের লিখন পড়তে ওবামা ও তার বন্ধুদের ভুল হয় নি। কি করা যায়? দু'টো বড় ভূরাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি বানালো আমেরিকা। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ইতিমধ্যেই আমেরিকার অর্থসামরিক কাঠামোয় পুরোপুরি মিলে ছিল। এবার চিনের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলির দিকে নজর পড়ল। সিদ্ধান্ত হল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চিনের যে কটা প্রতিবেশী দেশ আছে এদেরকে নিয়ে আমেরিকা একটা অর্থনৈতিক ব্লক বানাবে। মিলিতভাবে এই দেশগুলিকে আস্তে আস্তে চিনের প্রতিদ্বন্দী বানিয়ে তোলা হবে। প্রথমে অর্থনৈতিক, এবং পরে যদি দরকার হয়, সামরিক। চিনকে ঘিরে থাকা এই দেশগুলি চিনকে অনেকটা আটকে দেবে। ব্লকটির নাম দেওয়া হল 'ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ'। সংক্ষেপে টিপিপি। প্রথম খেপে মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর এই চারটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সহ মোট ১২টি দেশ (আমেরিকা ও জাপান সমেত) নির্বাচিত হল। এইটা গেল প্রথম স্ট্র্যাটেজি। এটা ডিফেন্সিভ। ট্রেড টার্মস নিয়ে কথাবার্তা শুরু হল।

    দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজিটা অফেন্সিভ। সিদ্ধান্ত হল চিনকে সরাসরি হালকা করে খোঁচানো হোক। চিনের উপকূলের প্রায় গা ঘেঁষে আমেরিকার স্পাই প্লেন ঘোরাঘুরি বাড়াতে শুরু করল। উদ্দেশ্য চিনের জনতাকে রাগিয়ে পার্টিকে একটা কিছু করতে বাধ্য করা। চিন বরফশীতল। চুপচাপ সহ্য করল। তখন ঠিক হল লেটস আপ দি অ্যান্টি। চিনের এতগুলো প্রতিবেশী দেশের বেশ কয়েকটির সাথে কোন কোন ঝামেলা আছে। এদের কোন একটাকে দিয়ে চিনকে একটু খোঁচালে কেমন হয়? আমেরিকানরা প্রথমে ভিয়েতনামকে কাল্টিভেট করবেন ভেবেছিলেন। ভিয়েতনামের সাথে চিনের ঝামেলার কথা সবাই জানে। ভাবলেন চিনকে খোঁচানোর কাজটা ভিয়েতনামকে উসকিয়ে করানো যাক। ভিয়েতনাম চালুপুরিয়া। বলির বকরা হওয়া এড়িয়ে গেল। তখন আমেরিকার নজর পড়ল ফিলিপাইন্সের দিকে। ২০১১ নাগাদ। ফিলিপাইন্সের সাথেও চিনের এলাকাগত বিবাদ আছে (আগের পোষ্টের ম্যাপটা দেখুন)। কিন্তু এতদিন মাথাচাড়া দেয়নি। আমেরিকা ফিলিপাইন্সকে ওসকালো - "মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াও! ঐ দ্বীপগুলি তোমাদের। ভয় পেও না। চিন বাড়াবাড়ি করলে আমেরিকা তোমাদের সঙ্গে আছে।" এটা কিন্তু সত্যি কথা। ফিলিপাইন্সের সাথে আমেরিকার একটা সামরিক সুরক্ষা চুক্তি আছে। অনেকদিনের। [ https://en.wikipedia.org/wiki/Mutual_Defense_Treaty_(United_States%E2%80%93Philippines) ] ফিলিপাইন্স বাড়টা খেল। প্রেসিডেন্ট বেনিনো অ্যাকিনো চিনের সাথে ক্যাঁচাল লাগালেন।

    --------------------------------------------------------------

    ২০১২ সাল। ঝোংনানহাইএর মিটিং রুমে শি জিনপিং বসে আছেন। ভ্রূ কুঁচকে। ১৬ বছর বয়সে লিয়াংজিয়াহি গ্রাম থেকে শুরু করে তিনি আজ চিনের এক নম্বর। তার দায়িত্ব ২০২১ সালের মধ্যে চিনের থেকে গরিবী হটাতে হবে।(১) পুরো মনোযোগটা সে দিকে দেওয়া দরকার। কিন্তু ক্রমাগত কাজে বাধা আসছে। আমেরিকার উসকানিতে ফিলিপাইন্স স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের স্কারবোরো নামে একটি খুদে চড়াকে নিয়ে আওয়াজ চড়িয়েছে। আরে বাবা দেশের আসল কাজে মন দে। এইসব ডিসপিউটগুলো পরে মেটালেও চলবে। তা না। যত্তসব। যাকগে। ওটা পরে দেখা যাবে। আপাতত সিঙ্গাপুরকে একটু সিধে করা দরকার। বড্ড চ্যাটাং চ্যাটাং কথা।

    সিঙ্গাপুর টেবিলের উল্টোদিকে বসে। "কেন তোমরা আমেরিকাকে এই এলাকায় টেনে আনছ বলতো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার কীর্তিকলাপ তো তোমাদের অজানা নয়।" - শি প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন।

    "দেখুন আমরা চাই না এই অঞ্চলে আর কোন ঝামেলা হোক। শান্তি বজায় থাকলেই আমরা খুশি।" - সিঙ্গাপুর উত্তর দিল।

    "তা শান্তি বজায় থাকবে না এরকম তোমাদের মনে হল কেন?"

    "সে তো আপনি জানেনই। এতগুলো দেশের সাথে চিনের বিবাদ রয়েছে।"

    "বিবাদটা কি চিন বাধিয়েছে? এই দ্বীপগুলোর ওপরে চিন সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই দাবী করে আসছে। ১৯৫৬ সালে প্রথমবার ফিলিপাইন্সের করা দাবীটা ঠিক আর আমাদেরটা ভুল এরম কেন হবে?"

    "দেখুন এগুলো টেকনিক্যাল ব্যাপার। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে আমরা আশা করি। কিন্তু খোলা সমুদ্রের ওপরে আপনারা যেরকম একটা লাইন টেনে দিচ্ছেন আমরা ওটাকে সমর্থন করতে পারি না। দুঃখিত কিন্তু এই ব্যাপারটায় আমরা আমেরিকার সাথে সহমত।"

    "তোমাদের তো জাহাজ চালাচালির ব্যবসা তাই না?" - পাশ থেকে ঝাং গাওলির গলা ভেসে এল।(২)

    সিঙ্গাপুর তাকালো ঝাং গাওলির দিকে।

    "এত বড় ব্যবসা চালাচ্ছো। এত উপার্জন। ভাল ভাল। তা ভাবো দেখি, যদি ব্যবসাটার কিছু একটা হয়ে যায় তখন কি হবে?" - ঝাং মৃদু হাসলেন।

    "মানে?"

    "তোমাদের নিশ্চয়ই এটা অজানা নয় যে সিঙ্গাপুরে যে পরিমাণ পণ্য হাত ঘোরাঘুরি করে তার সিংহভাগই চিনের। হয় চিন থেকে যাচ্ছে নয় চিনে যাচ্ছে।"

    "হ্যাঁ জানি।"

    "তা আমরা ভাবছিলাম কি সিঙ্গাপুরের ওপরে এতটা চাপ দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। ভাবছিলাম ওখানে আরেকটা বন্দর খুললে কেমন হয়? এই ধরো সিঙ্গাপুরের ঠিক পাশেই, মালয়েশিয়ায়।"(৩)

    সিঙ্গাপুর ঢোঁক গিলল।

    "ভালই হয় কি বল? মালয়েশিয়ার সাথে আমরা প্রাথমিক কথাবার্তাও শুরু করে দিয়েছি। ওনারাও খুব উৎসাহিত প্রকল্পটা নিয়ে।"

    সিঙ্গাপুর চুপ।

    "যাকগে। কথা বলে ভাল লাগল। দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে তোমাদের একটা নৈতিক অবস্থান আছে। আমরা বুঝতে পারছি। হ্যাভ এ নাইস ডে।"

    সিঙ্গাপুর মুখ গম্ভীর করে বিদেয় নিল।

    --------------------------------------------------------------

    ১. আমাদের যেমন নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক, রাইসিনা হিলস, বেজিংএ চিনের ক্ষমতাকেন্দ্রের বাড়ীটির নাম ঝোংনানহাই। আশীর দশকে দেং চিনের জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ঠিক করেন। ২০২১ সালের মধ্যে (পার্টির জন্মের শতবর্ষ) চিন থেকে দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর করে জিয়াওকাং ("মোটের ওপর স্বচ্ছল") সমাজ গড়ে তুলতে হবে। ২০৪৯ সালের (পার্টির বিজয়ের শতবর্ষ) মধ্যে দাতং (সম্পূর্ণ উন্নত, প্রায় ইউটোপিয়ান) সমাজ গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যে প্রথমটার দায়িত্ব শি এর কাঁধে। শি পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য ১০ বার আবেদন করেছিলেন। ৯ বার খারিজ হয়। ১০ বারের বার ঢুকতে পান। ২০২১ লক্ষ্য করে শি ছুটছেন।



    ২. ঝাং গাওলি চিনের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সাত সদস্যের একজন। এই কমিটি চিন চালায়। ঝাং OBORএর দায়িত্বে আছেন।

    ৩. http://www.scmp.com/week-asia/politics/article/2087402/can-china-really-deliver-malaysias-singapore-slayer
  • | ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:১৫367029
  • পড়েছিলাম কাল রাত্রেই।
    পড়ছি মন দিয়ে জানিয়ে গেলাম আরেকবার।
  • aranya | 83.197.98.233 | ২০ অক্টোবর ২০১৭ ১০:৪২367030
  • আম্মো পড়ছি, টু গুড
  • দেব | 57.11.219.165 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৪367031
  • ২০০১ সালে চিনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের হাইনান দ্বীপের কাছে একটা ঘটনা ঘটে। চিনের উপকূলের একদম গা ঘেঁষে আমেরিকার নজরদারী বিমানের ঘোরাঘুরি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে। জিনিসটা অত্যন্ত অপমানকর। সেই সময়ে চিনের পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমেরিকার বিমান কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করলে চিনও একটা যুদ্ধবিমান পাঠাত সেটাকে তাড়ানোর জন্য। গুলি চালানোর প্রশ্নই নেই। কিন্তু সাধারণত চিনের প্লেনকে রাডারে বা খালিচোখে আসতে দেখলে আমেরিকানরা ফিরে যেত। ঐ বছর পয়লা এপ্রিল আমেরিকার একটি প্লেন অত্যধিক কাছে চলে এলে চিনের একটি যুদ্ধবিমান সেটার কাছে এসে হাজির হয়। রুটিন ব্যাপার। চিনের পাইলট কিছুক্ষণ রেডিওতে ফিরে যেতে বলবে। আমেরিকানরা জানাবে 'আন্তর্জাতিক বায়ুসীমায়" আমেরিকানদের ঘোরার পূর্ণ অধিকার আছে। তারপর দু'পক্ষই বাড়ীর দিকে রওনা দেবে। সেদিনও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু যেটা ঘটল সেটার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। গতিবেগ বুঝতে না পেরে চিনের জে-৮ গোত্রের যুদ্ধবিমানটি সোজা এসে আমেরিকার ইপি-৩ই গোত্রের নজরদারী বিমানটির ডানা ছুঁয়ে বেড়িয়ে যায়। চিনের বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এরপর সমুদ্রে আছড়ে পড়লে পাইলট ওয়াং উই প্রাণ হারান। আমেরিকার বিমানটিতে ২৪ জন সেনা ছিলেন। সৌভাগ্যবশত পাইলট শেন অসবোর্ন অবিশ্বাস্য দক্ষতায় জখম বিমানটিকে (৪টির ইঞ্জিনের মধ্যে ১টি বন্ধ হয়ে গেছিল) চিনের হাইনান দ্বীপে নামাতে সক্ষম হন। অনুমতি ছাড়াই। চিন সবাইকে অ্যারেস্ট করে।

    http://www.nytimes.com/2001/04/02/world/us-plane-in-china-after-it-collides-with-chinese-jet.html

    এই ঘটনাটা চিন-আমেরিকা সম্পর্কের একটা টার্নিং পয়েন্ট। এর আগে আমেরিকা চিনকে যতই থাবড়াক না কেন পূর্ব এশিয়ায় নিকট অতীতে প্রাণহানি হয়নি। ঘটনাটার স্রেফ দু'বছর আগে ১৯৯৯ এ সার্বিয়ায় আমেরিকা চিনের দূতাবাসে বোমা মেরে তিন জন কর্মচারীকে খুন করে। আমেরিকা অজুহাত দিয়েছিল ভুল হয়ে গেছে। চিনারা রাগে ফেটে পড়েন। চিনের পক্ষে তখনও কিছুই করার ছিল না। জিয়াং জেমিন চুপচাপ পাবলিকের খিস্তি সহ্য করেন। সেটা তাও ছিল অন্য দেশে। এবারে একদম বাড়ীর দোরগোড়ায়। এবারে আমেরিকা জানিয়ে দিল ক্ষমাটমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। কিন্তু আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি। ১০ দিন বাদে চিন ঐ ২৪ জনকে ফেরত পাঠায়। চিনারা বুঝে যান ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হয়নি। পিকচার তো সবে শুরু।

    https://www.theguardian.com/world/1999/oct/17/balkans

    কিন্তু ইরাক চিনকে বাঁচিয়ে দিল। আগামী দশটা বছর আমেরিকা আর চিনের দিকে নজর দিতে পারল না। চিনারা নিজেরাই স্বীকার করেন সে কথা - ইরাক আমাদের অমূল্য দশটা বছর সময় দিয়েছে। ২০০১-১১ এই দশ বছরে চিনের অর্থনীতির আয়তন বাড়ল সাত গুণ! অর্থাৎ জর্জ বুশ ২০০১ এ যে চিনের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, ২০১১য় ওবামা সামনে দেখলেন সেরকম সাতখানা চিন! ২০০৭-০৮এ ওয়াল স্ট্রীটে লঙ্কাদহনের পরে অনেকে ভেবেছিলেন চিনও ডুববে। আফটার অল চিন আমেরিকাকে বেচেই খায়। চিন পাল্টা দিল এক পর্বতাকার স্টিমুলাস নামিয়ে। গতি কমা তো দূরে থাক চিন আরো ফুলেফেঁপে উঠল, সাথে এবার দ্রুতগতির ট্রেন। বেজিং থেকে সাংহাই ১৩০০ কিমি লম্বা (কলকাতা থেকে আগ্রা) লাইন পাতার কাজ শুরু হল ২০০৮এর এপ্রিলে, স্রেফ তিন বছর পর সার্ভিস চালু - ২০১১র জুন! এবং লাইনটা প্রায় পুরোটাই কংক্রিটের ভায়াডাক্টের ওপরে বসানো। কীর্তিখানা দেখে দুনিয়াসুদ্ধু লোকের চোয়াল ঝুলে গেল। বিল গেটস সমেত।



    গত বছর এইরকম আরেকটা তথ্য দেখে অবাক হয়েছিলাম। ইদানিংকালে সারা পৃথিবীতে যত স্টীল উৎপন্ন হয় তার অর্ধেকটা হয় চিনে! ভারতের ৮ গুনের বেশী।



    বলাই বাহুল্য চিন বরাবর এই মাত্রায় স্টীল আর সিমেন্ট খাবে না। আর ২০-২৫ বছর এই বেগে চললে চিনের যা কিছু পরিকাঠামো, বসতবাড়ী, অফিস যতটা পরিমাণ লাগে সবই তৈরী হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে এই গতিতে এতবড় দেশে এত পরিকাঠামো তৈরী করছে চিন - ম্যাজিক ছাড়া ব্যাখ্যা করা মুশকিল। ভারত তো ছেড়েই দিলাম আমেরিকার পক্ষেও একটা সেতু বানাতে ঘেমেনেয়ে একসা হতে হয়। সংখ্যাগুলো দেখে মনে হয় অন্য গ্রহের সভ্যতা। ২০০৮ থেকে শুরু করে ২০১৭র মধ্যে ২০,০০০ কিমি দ্রুতগতির রেল লাইন, সব কংক্রিটের ভায়াডাক্টের ওপর বসানো! ১,৩০,০০০ কিমি এক্সপ্রেসওয়ে (আমেরিকার ইন্টারস্টেট সিস্টেম ৮০,০০০ কিমির মতন), সেতু ও টানেলের কোন গোণাগুনতি নেই। পুরো দক্ষিণ চিন পাহাড়ী এলাকা। পাহাড়ে রাস্তা বানানোর নিয়ম হচ্ছে এঁকে বেঁকে গা বেয়ে যাও। চিনে পাহাড়ী এলাকায় সোজা ফুটো করে সরলরেখায় ৪ লেনের হাইওয়ে। সেতু-সুরঙ্গ-সেতু-সুরঙ্গ-সেতু হাজার হাজার কিমি। বড় শহরগুলোতো ছেড়েই দিলাম ছোটগুলো দেখলেও হাঁ হয়ে যেতে হয়। আর প্রায় এই সবকিছু হয়েছে স্রেফ গত ১৫ বছরে। চিনের ফর্মুলা হচ্ছে সময় বাঁচাও, পয়সা নিয়ে ভেবো না। ঋণ নাও হুলিয়ে। সময়ের দাম বেশী। একটা রাস্তা যদি ৫ বছর আগে শেষ হয় সেটা বেশী ভাল।

    ২০১১ নাগাদ ঘর সামলিয়ে যখন ওবামা চিনের দিকে নজর দিতে পারলেন ততদিনে চিন হাতের বাইরে। কিন্তু আমেরিকানরা বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি তখনো। নিজেদের প্রোপাগ্যান্ডায় নিজেরাই ডুবে। আমেরিকায় ইকোনমিষ্ট বলে একটি পত্রিকা আছে সেটির কাজ হচ্ছে প্রতি বছর নিয়ম করে চিনের অর্থনীতিতে আসন্ন প্রলয়ের পূর্বাভাস দেওয়া। আমেরিকার অন্যান্য কাগজগুলোও তাই।

    ১৯৯০ - ইকোনমিষ্ট - "চিনের অর্থনীতি পুরো থেমে গেছে।"
    ১৯৯৬ - ইকোনমিষ্ট -"চিনের অর্থনীতিতে চড়া মন্দা আসন্ন।"
    ১৯৯৮ - ইকোনমিষ্ট -"চিনের অর্থনীতিতে বাজে সময় আসছে।"
    ২০০০ - চিকাগো ট্রিবিউন - "চিনের মুদ্রাসংস্কার দেশটিকে চড়া মন্দার দিকে নিয়ে যাবে।"
    ২০০৩ - নিউ ইয়র্ক টাইমস" - "চিনের ব্যাঙ্কব্যাবস্থায় মারাত্মক বিপদ আসতে চলেছে"
    ২০০৪ - ইকোনমিষ্ট -"চিনের পতন আসন্ন?"
    ২০০৭ - টাইম - "চিনের অর্থনীতিতে চড়া মন্দা আসন্ন।"
    ২০০৯ - ফরচুন - "চিনের অর্থনীতিতে চড়া মন্দা আসন্ন।"
    ২০১১ - বিজনেস ইনসাইডার - "চিনের অর্থনীতিতে চড়া মন্দা প্রায় এসে গেছে।"
    ২০১৪ - সিএনবিসি - "চিনের অর্থনীতিতে চড়া মন্দা আসন্ন।"
    ২০১৫ - ফোর্বস - "এই দেখুন! চিনের অর্থনীতিতে চড়া মন্দা এসে গেছে।"
    ২০১৬ - ইকোনমিষ্ট -"চিনের অর্থনীতিতে চড়া মন্দা আসন্ন।"

    সি দা প্যাটার্ন?

    বলাই বাহুল্য যে চিনে আজ না হয় কাল মন্দা আসবেই। ধনতন্ত্রের ওটাই নিয়ম। কিন্তু সে তো আজ না হয় কাল কলকাতায় সেতু ধ্বসেও পড়বেই, জাপানে ভূমিকম্প আসবে, আমেরিকায় বন্দুক দিয়ে ম্যাসাকার হবে, জার্মানীতে মন্দা আসবে। সুতরাং ঐ পূর্বাভাসটা অঙ্কের ভাষায় যাকে বলে 'ট্রিভিয়াল' তাই। আপনি যদি সব সময়েই মন্দা আসছে ঘোষণা করেন একটা সময়ে গিয়ে লেগেই যাবে। একটা বন্ধ ঘড়িও দিনে দু'বার সঠিক সময় দেখায়। কিন্তু আসলে কি কোন দেশে কখন মন্দা আসবে সেটা বলা সম্ভব? না। তাহলে আর মন্দা আসতই না। লোকে সাবধান হয়ে যেত। ২০০৭এ আমেরিকায় যে ধ্বসটা নামল সেটার কোন পূর্বাভাস এই কাগজগুলো থেকে পাওয়া যায় নি। আমার ব্যাখ্যা পশ্চিমী মিডিয়ার চিনকে নিয়ে এই খ্যাপামোর কারণটা কিছুটা সাইকোলজিকাল। ফ্রয়েড ঘাঁটলে বোধকরি কিছু একটা পাওয়া যাবে এই নিয়ে। এমনকি বিল ক্লিন্টন পর্যন্ত এই লুপে পড়েছিলেন। জ্যাক মা র সাথে ২০১৫ সালে একটা আলোচনাচক্রে তিনিও ঐ এক ভ্যাজর ভ্যাজর তুলে আনেন। জ্যাক মা চিনের ধনীতম শিল্পপতি। 'আলিবাবা' নামে ই-বিজনেস কোম্পানীর মালিক। তা সেই সভায় বিলবাবু জ্যাকবাবুকে জিগালেন "আচ্ছা চিনের অর্থনীতি কোনদিকে যাচ্ছে আপনার দুশ্চিন্তা হয় না?" উত্তর জ্যাক মা হেসে ফেললেন - "আপনারা আমেরিকানরা চিনের অর্থনীতি নিয়ে বড্ড বেশী ভাবেন। আমরা নিজেরাও এতটা ভাবি না।"



    -------------------------------------------------------------

    গণতন্ত্র না থাকলে পয়সা করা যায় না এই ধর্মবিশ্বাসটা ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়েছিল। আমজনতার মধ্যে খোঁয়ারি কাটতে এখনও সময় লাগবে। কিন্তু কাগজগুলোতে যাই হ্যাজাক, পেন্টাগনে যে লোকগুলো বসে তারা ধর্মান্ধ নন। বুঝে গেলেন শুধু ভগবানের ভরসায় বসে থাকলে চলবে না। 'স্বৈরতান্ত্রিক' চিনের দ্রুত উন্নতি থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ২০১০-১১ নাগাদ ওবামা চিনের দিকে সিরিয়াস মনোযোগ দিলেন। ঠিক হল চিনকে খুঁচিয়ে বেসামাল করতে হবে। বকরা পাওয়া গেল ফিলিপাইন্স। দেশটি এককালে স্পেনের দখলে ছিল। আমেরিকা ১৮৯৮ সালে কেড়ে নেয়। ফিলিপাইন্স দখলে থাকবে ১৯৪৬ অবধি। স্বভাবতই আমেরিকার বিশাল প্রভাব আছে। দেশটিতে ক্যাথলিক ক্রিশ্চিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সরকারী ভাষা ইংরিজি। ১৯৯২ অবধি আমেরিকার একটা বিশাল সেনাঘাঁটি ছিল ফিলিপাইন্সে। দেশের শাসকশ্রেণী বরাবরই আমেরিকার গায়ে সামনের দু'পা তুলে লেজ নেড়ে অস্থির। ওবামার পরামর্শমত প্রেসিডেন্ট বেনিনো অ্যাকিনো ২০১২ সালে ঘোষণা করলেন দক্ষিণ চিন সাগরের স্কারবোরো চড়াটি ফিলিপাইন্সের 'অবিচ্ছেদ্য' অংশ।

    চিন বুঝল গেমটা। সেন্ট্রাল কমিটি ঠিক করল এইরকম খোঁচানি আসতেই থাকবে। সুতরাং এটাকে থামাতে গেলে একটা কড়া ধাতানি দেওয়া দরকার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে দেশবাসীর যাই চান না কেনা, প্রায় প্রতিটিতেই শাসকশ্রেণী অত্যন্ত অপদার্থ। পাকিস্তানের থেকেও বাজে। আমেরিকা এদের যে কোন একটাকে ধরে অনায়াসে উসকাতে পারে এবং আজ না হয় কাল এই দেশগুলি তাতে নাচবে। সুতরাং ব্যাপারটা বেশীদূর গড়ানোর আগে লেটস পিক ওয়ান অ্যান্ড মেক ইট আ হুইপিং বয়। একটা উদাহরণ সেট করা দরকার যে চিনের গায়ে হাত লাগালে তোদের আমেরিকা বাঁচাতে আসবে না। যদি সেটা ফিলিপাইন্স হয় তো তাই হোক। দেখা যাক যে ফিলিপাইন্সের সাথে আমেরিকার যে সুরক্ষা চুক্তি রয়েছে সেটাকে আমেরিকা অনার করে কি না। সেই মত ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে চিনের নৌবাহিনী স্কারবোরো চড়া থেকে ফিলিপাইন্সের উপকূল রক্ষীবাহিনীকে গোঁত্তা মেরে হঠিয়ে দিল। তখন কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল সুরক্ষাদাতা আমেরিকার কোন পাত্তা নেই। অবশ্য সেটা আমেরিকা মেক আপ করল মিডিয়াতে চিলচিৎকার করে। চিন যথারীতি কাজ সেরে চুপ (প্যাটার্নটা লক্ষ্য করুন)। ফিলিপিনোরা তখনও আশায় ছিলেন একটা কিছু হবে। ২০১৩ সালে ফিলিপাইন্স নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুন্যালে চিনের বিরুদ্ধে আবেদন করল। ঘটনাচক্রে ইউএনের আন্তর্জাতিক কোর্টও হেগ শহরেই অবস্থিত। এই সুযোগটা নিয়ে পশ্চিমী মিডিয়ায় প্রোপাগ্যান্ডায় দু'টোকে গুলিয়ে দেওয়া হল। ভাবখানা এই যে খোদ ইউএনই চিন-ফিলিপাইন্সের কেসটা দেখছে। 'আন্তর্জাতিক কমিউনিটি'। বাস্তবে আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুন্যালের সাথে ইউএনের আন্তর্জাতিক কোর্ট এর কোন সম্বন্ধ নেই। এটা সম্পূর্ণ বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। ঠিক কোন কোর্টও নয়। ট্রাইব্যুন্যালের 'বিচারপতিদের' চড়া ভাড়া দিতে হয়। চিন বলল মোজা ছেঁড়ো গিয়ে। আমাদের বিরক্ত কোরো না। তখন ফিলিপাইন্সই চিনের হয়ে ভাড়াটা দিল। আটজন জাজসহ মোট ভাড়া ৩ কোটি ডলার! আমেরিকার টাইম পত্রিকা ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট বেনিনো অ্যাকিনোকে পৃথিবীর ১০০ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্বের লিষ্টে ঢুকিয়ে ফেলল - ৫৩ নম্বর। লিখল - "Most important, he became the face of the regional confrontation with Beijing over its claim to virtually all of the South China Sea. It is a brave stance, the long-term consequences still unknown." মাই সাইডস!

    http://time100.time.com/2013/04/18/time-100/slide/noynoy-aquino/

    এরপর জানাই ছিল কি হবে। যে কোন বিচারে দু'পক্ষকেই আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হয়। একপক্ষ যদি হাজিরই না হয় তা হলে একতরফা রায় কি করে দেওয়া সম্ভব জানি না। যা আশা করা গেছিলো, শ্যারাড শেষ হলে ২০১৬র ১২ই জুলাই ট্রাইব্যুন্যাল জানাল ফিলিপাইন্স ঠিক, চিন ভুল। চিন আবার মোজা ছেঁড়ার পরামর্শ দিল। তার ওপরে চিন এই সময় আরো একটা কান্ড শুরু করে দিল। স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের বেশীর ভাগ বড় দ্বীপগুলি ভিয়েতনামের হাতে। চিন কয়েকটি খুদে দ্বীপের ওপরে মাটিপাথর ফেলে সেগুলোকে আয়তনে বাড়িয়ে সমুদ্রের ভেতরে নতুন দ্বীপ বানিয়ে তার ওপরে নৌঘাঁটি বানাতে শুরু করল! মিডিয়াতে যতই বক্তিমে চলুক বাস্তবে আমেরিকা আঙুলও নাড়ালো না। দেন দা পেনি ফাইনালি ড্রপড অ্যামং ফিলিপিনোস। শিক্ষিত ফিলিপিনোরা বুঝলেন দে হ্যাভ বীন ড্যুপড।

    http://www.manilatimes.net/psst-all-superpowers-usually-ignore-international-verdicts/273798/

    ট্রাইব্যুন্যালের রায় বেরোনোর ঠিক দু'সপ্তা আগে ২০১৬র ৩০শে জুন ফিলিপাইন্সে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রডরিগো দুতের্তে। এসেই তিনি জানালেন "বারাক ওবামা একটি বেশ্যাসন্তান" এবং সটান পিভট করলেন চিনের দিকে। রাগটা কি মাত্রায় ছিল বোঝা মুশকিল নয়। চিনের বিদেশমন্ত্রকও চালু জিনিস। গত ৫ বছর ধরে ফিলিপাইন্সের সাথে এত কান্ড চলেছে সে সব সঙ্গে সঙ্গে ভুলে গেল। রডরিগো দুতের্তে ক্ষমতায় এসেই চিনে গেলেন সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে। শিএর হাসিখানা দেখুন -



    রাশিয়ার আরটিকে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে রডরিগো দা স্পষ্টভাষায় বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি আমেরিকার ল্যাজ ছেড়ে চিনের দিকে ঝুঁকেছেন - "...দক্ষিণ চিন সাগরে আরবিট্রেসন ট্রাইব্যুন্যাল আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। কি ঘন্টাটা হল তাতে? চিন ওটা মানে না। আমাদের পক্ষে চিনকে তো আর যুদ্ধে হারানো সম্ভব নয়। এই সার্কাসটার মানে কি?...আমেরিকার হাতে তামাক খেতে আমরা আর রাজি নই।..."



    "...the long-term consequences still unknown." - ইনডিড।

    আমেরিকায় ২০১০-২০১৫ এই সময়কালটাতে চিনবিরোধী প্রোপাগ্যান্ডা তুঙ্গে উঠল। এটাকে ডিনায়াল মোড বলা যেতে পারে। "চিন দেনায় ডুববে! চিনের মানুষ পার্টির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন! চিনের অর্থনীতি ফোঁপড়া হতে চলেছে! এত মানবাধিকার বঞ্চনা! চিনের সর্বনাশ হবে দেখ!" ২০১৫য় একটা নতুন খবর এল -.২০১৪ সালে ক্রয়ক্ষমতা সমন্বয় করে মাপলে চিন পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এইবার প্যানিক সেট ইন করল। জলদি! হিলারিকে গদিতে বসাও। রাশিয়া আর চিনকে আটকাতে হবে!

    -------------------------------------------------------------

    ওয়াল স্ট্রীটের হাতে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা পুরোপুরি বিক্রি না হয়ে গেলে ডোনাল্ডদা প্রেসু হতে পারতেন না। রিপাবলিকানদের তরফে আগানো হল কাকে? না জেব "প্লিজ ক্ল্যাপ" বুশ। গুড লর্ড! ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে রিপাবলিকান পার্টি এসট্যাবলিশমেন্টকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাঙ্গলেন দেখে রোমাঞ্চ হচ্ছিল মাইরি। অন্যদিকে হিলারীর জেতার চান্স ছিল কিন্তু পার্টির ভেতরের দুর্নীতি সামনে চলে আসায় ডুবে গেলেন। কিন্তু ট্রাম্প এত ভোট টানলেন কি করে? উত্তর - সেই চিন। ক্যাম্পেনে আগাগোড়া ট্রাম্প 'চিন কার্ড' খেললেন। সাথে একটু মেক্সিকান আর মুসলিমরা। "চিনের সাথে বাণিজ্যঘাটতি সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে! চিন নিজের মুদ্রামান অনৈতিকভাবে কমিয়ে রেখেছে (কথাটা আংশিক সত্যি)!, চিন নিজের দেশে আমেরিকার পণ্য ঢুকতে দিচ্ছে না! চিন আমাদের 'ধর্ষণ' করছে! চিইইইইইইনননন!"



    চিনের ছোট প্রতিবেশী দেশগুলির ভেতরের রাজনীতিতে 'চিন কার্ড' খেলা চলে। নেপাল বা বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন 'ভারত কার্ড' আছে। পাতি অরবিটাল মেকানিক্স। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে সম্প্রতি চিনের অরবিটে আরো একটি দেশ ঢুকে গেছে - আমেরিকা - ঘরোয়া পলিটিক্স চিনকে ঘিরে পাক খেতে শুরু করেছে। ভোটে জিতে ট্রাম্প আরো একধাপ সুর চড়ালেন। একখানা ফোন লাগালেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের সাথে। সাই তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী (অর্থাৎ চিনবিরোধী) ডিপিপি দলের নেত্রী। চিনের কাছে তাইওয়ান একটা রেড লাইন। চিন কড়া প্রতিক্রিয়া দিল। আমেরিকান 'পন্ডিতশ্রেণীর' একদল উৎফুল্ল হয়ে জানালেন এটা খুব নৈতিক স্ট্যান্ড নেওয়া হয়েছে। চিনের গা জোয়ারী আর আমেরিকা সহ্য করবে না। "দেয়ার ইজ এ নিউ শেরিফ ইন টাউন।" হুঁ হুঁ বাবা। ট্রাম্পকে ওবামার মতন নরম (!) ভেবো না।

    http://www.chicagotribune.com/news/opinion/commentary/ct-trump-taiwan-call-china-20161205-story.html

    দক্ষিণ চিন সাগরে আমেরিকার সাথে চিনের সরাসরি কোন বিবাদ নেই। সেই কারণেই প্রক্সি খুঁজতে হচ্ছিল। কিন্তু ২০১৫ থেকে আমেরিকা একটা সার্কাস শুরু করল। যে কৃত্রিম দ্বীপগুলি চিন বানিয়েছিল সেগুলোর গা ঘেঁষে আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ পাড়ি দিতে শুরু করল। একটা উদ্ভট অজুহাত বিস্কার হল - চিন এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক নৌচলাচল বন্ধ করে দিতে পারে (!) - আমেরিকার অজুহাতের অভাব হয় না। তাই আমেরিকা 'ফ্রিডম অফ নেভিগেশন' এর নীতি চিনের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চায়। আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ আন্তর্জাতিক সমুদ্রের এলাকায় যেখানে খুশি সেখানে যাবে (বিশেষ করে চিনের দাবীকৃত দ্বীপগুলির নিজস্ব জলসীমার মধ্যে)। উদ্দেশ্য চিনকে উত্তেজিত করে কিছু একটা করতে বাধ্য করানো। চিন আবার টোপটা এড়িয়ে গেল। বলল ঠিক আছে। যদি ডিজেল পোড়াতে চাও বি আওয়ার গেস্ট। জাহাজগুলো কাছে এলে রেডিওতে দ্বীপগুলি থেকে চিনের নৌসেনারা প্রথমে জানান দিল তোমরা চিনের এলাকায় ঢুকেছ। তারপরেই প্রশ্ন - "এবারে ক্রিসমাসের কি প্ল্যান?" মনস্তাত্বিক যুদ্ধ চিনারা যা খেলছেন সান জু দেখলে খুশি হতেন।

    http://www.anandabazar.com/international/prepared-for-any-war-with-us-warns-china-1.230794

    কিন্তু ট্রাম্প সাইকে ফোন করার পর চিন ঠিক করল একটু লাগাম টানা দরকার। ফোনটা করার ঠিক দু'সপ্তাহের মাথায় দক্ষিণ চিন সাগরে আমেরিকার একটি গুপ্তচর জাহাজ পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছিল। সেটির থেকে একটি সেনসর লাগানো খুদে গ্লাইডারকে জলে নামানো হয়। চিনের একটি যুদ্ধজাহাজ কোত্থেকে হাজির হয়ে আমেরিকানদের চোখের সামনে থেকে গ্লাইডারখানা নিয়ে চম্পট দিল!

    http://www.foxnews.com/world/2016/12/16/china-steals-us-underwater-drone-in-south-china-sea.html

    কাজটা ট্যাকটিক্যালি অর্থহীন। কিন্তু উদ্দেশ্যটা ছিল মনস্তাত্বিক। আমেরিকানদের একটা মেসেজ দেওয়া যে যতই 'ফ্রিডম অফ নেভিগেশন' কর, দক্ষিণ চিন সাগরে চিন 'যা খুশি' তাই করার ক্ষমতা রাখে। কি করবে করে নাও। সাধারণ আমেরিকানরা যে রেটে মগজধোলাই হয়ে আছেন তাদের চোখে চিন একটি তৃতীয় বিশ্বের স্বৈরাচারী ভিখিরি দেশ। শুধু আয়তনে বড়। আমেরিকার 'দয়ায়' বেঁচে আছে। মেসেজখানা ঠিক জায়গাতে গিয়ে লাগল। আমেরিকান মিডিয়া বিষম খেয়ে একাকার। যতই হোক আমেরিকা চিনের গায়ে হাত তুলতে পারার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং পাবলিককে বেশী উসকালে বিপদ আছে। অন্যদিকে একটা ব্যাখ্যা তো দিতে হবে। আমতা আমতা করে কাগজগুলো ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল। চিন আরো একটু নুন ঘষে দিল - চিনের বিদেশমন্ত্রক আরো জানাল - "এই 'সামান্য ব্যাপারটাকে' নিয়ে বেশী হাইপ করার দরকার নেই"। আউচ। সপ্তাখানেক বাদে চিন গ্লাইডারটা ফেরত দিল।

    আরো ঝটকা বাকি ছিল। সেই টিপিপি মনে আছে? ওবামা আর হিলারী অনেক খেটেখুটে ডিলটা প্রায় রেডি করে এনেছিলেন। শুধু আমেরিকার সইটা করা বাকি ছিল। আশা ছিল প্রেসিডেন্ট হিলারি উদঘাটন করবেন। গদিতে বসে প্রথম দিনই ট্রাম্প সে ডিল ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। এত বছর ধরে এত সময় পরিশ্রম ব্যায় করে অত যে বহুপাক্ষিক আলোচনা হয়েছিল সব বেকার গেল। ট্রাম্পকে আমি দোষ দেবো না। টিপিপি বাস্তবায়িত করতে গেলে আমেরিকাকে আরো আউটসোর্সিং করতে হত। শুধু চিনকে আউটসোর্স করাতেই আমেরিকার শ্রমিকশ্রেণীর নাভিশ্বাস উঠে গেছে। রাতারাতি তো আর চিন থেকে ভিয়েতনামে সব কারখানাগুলো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং টিপিপির চক্করে আরো বাম্বু হত গড় আমেরিকানদের। আর ট্রাম্প ভোটে জিতেইছিলেন আউটসোর্সিংএর বিরোধিতা করে। সাম্রাজ্যকে ওভার এক্সটেন্ড করার ঝুঁকি না নিয়ে ট্রাম্প মানে মানে কাটিয়ে দিলেন। বাকি ১১ টা দেশকে গাছে তুলে মইটা কেড়ে নেওয়ার ফল যা হবার তাই হল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে আসতে সময় লাগবে। ঝোংনানহাইতে সেন্ট্রাল কমিটি উল্লাসে পার্টি দিল।

    এখানেও শেষ নয়। সাইকে ফোন করার ঠিক দু'মাসের মাথায় ২০১৭র ফেব্রুয়ারীতে ট্রাম্প জানালেন যে তিনি তাইওয়ানের ব্যাপারে চিনের সাথে এতদিন যে বোঝাপড়া হয়েছিল সেটা মেনে চলবেন। আর সাইএর ফোন এলে ধরবেন না। "নিউ শেরিফ ইন টাউনকে" এইভাবে ল্যাজ গুটোতে দেখে আমিও বিষম খেয়েছিলাম। সাধারণ আমেরিকানরাও এইবার মাথা চুলকাচ্ছেন। ওদিকে খবর এল চিন নাকি সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্প ও তার পরিবারের সদস্যদের চিনের ভেতরে ঢেলে ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, বিশেষ করে ট্রাম্পের কোম্পানীর কিছু কপিরাইট আটকে ছিল। সেগুলো কোন এক আশ্চর্যে জট খুলে গেছে। এবং খুলেছে ট্রাম্প তাইওয়ান নিয়ে ট্রাম্প মুখ বন্ধ করার সাথে সাথেই। পুরোটাই কাকতালীয়, আমি নিশ্চিত।

    https://www.nytimes.com/2017/02/09/world/asia/donald-trump-china-xi-jinping-letter.html

    আর্টিকলটায় কমেন্টগুলো পড়ে দেখুন। চিনারা বোধহয় ভাবছেন ইয়ার অব দা রুস্টার ইনডিড।(১) ওবামাকে দেখে চিনের ভয় ছিল হিলারি কি না কি করবেন। সে জায়গায় ট্রাম্পের মতন এরকম ভগবান প্রদত্ত সুযোগ খুব বেশী আসে না। কীর্তিকান্ড দেখে হেনরি কিসিঞ্জার কবরের মধ্যে পাক খাচ্ছেন বোধহয়। ও না ভুল হল। উনি এখনও বেঁচে! কি করে সেটা একটা আশ্চর্য অবশ্য।

    -------------------------------------------------------------

    চিনের উত্তরে মঙ্গোলিয়া পুরোপুরিই চিনের অরবিটে ঢুকে গেছে। তবে আনলাইক কম্বোডিয়া অর থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া এতে খুশি নয়। যে কথা আগের খন্ডে লিখেছি। পশ্চিমে প্রাক্তন সোভিয়েতের মধ্য এশিয়ার 'স্তান রাজ্যগুলোও চিনের দিকে ঝুঁকেছে কিছুটা। তবে এই দেশগুলিতে আজও রাশিয়ার প্রভাবই মূল। এবং রাশিয়া এই দেশগুলিতে চিনের প্রভাব বাড়তে থাকায় কিছুটা অস্বস্তিতে। চিনও সেটা বোঝে। কিন্তু রাশিয়া নিজেই ধীরে ধীরে চিনের পকেটে ঢুকতে শুরু করেছে। ইউক্রেনকে নিয়ে আমেরিকা ও জার্মানীর সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক ২০১৪য় একদম তলানীতে চলে যায়। স্যাংশন চাপল ভালরকম। চিন সঙ্গে সঙ্গে টাকার থলে নিয়ে হাজির। বিশাল তেলগ্যাসের ডিল হল ২০১৪য়। ৩০ বছরব্যাপী যোগান দেবে রাশিয়া, মোট ৪০০ বিলিয়ন ডলারের! লক্ষণীয়, বিনিময় হবে ইউয়ানে, চিনের মুদ্রায়, ডলারে নয়। পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। রাশিয়া বুঝে গেছে চিনের 'কানাডা' হতে পারলে খুব একটা খারাপ হবে না ভবিষ্যতে। এছাড়া চিন থেকে কাজাকস্তান, রাশিয়া, বেলারুস হয়ে ইউরোপ অবধি কয়েক বছর হল রেলপথে মালগাড়ী চালু হয়েছে। এইটা একটা অবিশ্বাস্য অ্যাচিভমেন্ট। এবং ভারতের সাথে তুলনা করলে কান্না পায়। শুধু একটা দেশ, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রক এখনও অবধি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সাথে ট্রানসিট আদায় করতে পারে নি। চিন গোটা এশিয়া-ইউরোপের ৪-৬টি দেশ টপকিয়ে লন্ডনে গিয়ে হাজির। সবচেয়ে লম্বা রুটটা পূর্বচিনের ইয়ু শহর থেকে স্পেনের মাদ্রিদ অবধি - ১০,০০০ কিমি! ইয়ুতে চিনের হালকা পণ্যের বৃহত্তম পাইকারী বাজার আছে। রাশিয়া ট্রানসিট ফি পাচ্ছে।

    https://www.theguardian.com/world/2014/may/21/russia-30-year-400bn-gas-deal-china

    https://en.wikipedia.org/wiki/Yiwu%E2%80%93Madrid_railway_line

    রাশ্যানরা অবশ্য নিজেদের সাদা ইউরোপিয়ান মনে করেন। চিনাদের প্রতি রেসিজম আছে ভালরকম। কিন্তু দু'দেশের প্রধান জনবহুল এলাকাগুলোর মাঝে বিশাল ভৌগোলিক বাফার রয়েছে। ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা শূন্যপ্রায়। ২০০৫ সালে সীমাচুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর (আগের খন্ডে দেখুন) দুইদেশের মাঝে সম্পর্ক বর্তমানে ঐতিহাসিক উচ্চতায়। ইউরোপ আমেরিকা অবশ্য এর বিরুদ্ধে তুমুল হুইস্পারিং ক্যাম্পেন চালাচ্ছে (ভারত যেমন CPEC নিয়ে)। "এঃ এই সম্পর্ক টিকবে না। OBOR এর নাম করে চিন রাশিয়াকে ঠকাচ্ছে। চিন তোদের সাইবেরিয়া দখল করে নেবে দেখিস! মঙ্গোলিয়া ও মধ্য এশিয়ার 'স্তান দেশগুলোকে চিন খেয়ে নেবে। সাদা চামড়া হয়ে সরু চোখের চিনাদের খনিজ তেল বেচে খাচ্ছিস লজ্জা করে না! ইউরোপীয় হ!" ইত্যাদি। কান দেবেন না। পুতিন আর যাই হোন না কেন বোকা নন। চিন ও রাশিয়া একে অপরের পরিপূরক। রাশিয়ার খনিজ সম্পদের শেষ নেই আর চিনের খাঁই অসীম। চিনকে খনিজ সম্পদ বেচে পয়সা কামানোয় কিচ্ছু লজ্জা নেই। অস্ট্রেলিয়াকে জিজ্ঞেস করুন (বা ভারতকেও)। ভাল কথা পুতিন নাকি পিয়ানো বাজাতেও পারেন একটু আধটু। সম্প্রতি OBORএর সন্মেলনে পুতিন শিএর বাড়ী গিয়ে পিয়ানো বাজিয়েছেন।



    দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান বরাবরই চিনের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রেখে এসেছে। চিনারা নিজেরাই স্বীকার করেন চিনের একমাত্র প্রকৃত বন্ধু পাকিস্তান। ১৯৬০এর দশকে আয়ুব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে চারায় জল ঢেলে ছিলেন আজ তা মহীরূহ। আমেরিকাকে ছেড়ে পাকিস্তান সম্প্রতি আরো ভাল রকম পিভট করেছে চিনের দিকে। চিন আরো আগে পয়সা করতে পারলে আরো আগেই করত। যাই হোক দের আয়ে, দুরুস্ত আয়ে। CPEC এ ঢেলে দিচ্ছে চিন। রাস্তা, রেল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, কারখানা। লাহোরে নতুন মেট্রো পাতার কাজ চলছে। এই গত সপ্তাহে প্রথম রেকখানা চিন থেকে পাকিস্তানে ঢুকল।



    পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানটা (ঐ দেখুন আবার ভূগোল) সত্যিই সোনায় বাঁধানো। আফগানিস্তানে পৌঁছনোর জন্য আমেরিকা পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে চিনের পাকিস্তানকে না পেলে আরব সাগরে পৌঁছনো সহজ নয়। CPEC নিয়ে ভারতের 'পন্ডিতরা' মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশী দেখিয়ে ফেলেছেন। কি নাকে কাঁদুনি মাইরী! "চিন পাকিস্তানকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলছে! পাকিস্তানের কথা ভেবে ভারতের রাতে ঘুম হচ্ছে না! ভারত পাকিস্তানের ভালর জন্যই এটা বলছে কিন্তু! প্লিজ আমাদের বিশ্বাস করো।" খোকনরা এটা বুঝে উঠতে পারেননি লাইক বার্মা, ইটস পাকিস্তান দ্যাট হ্যাজ চায়না বাই দা বলস, নট দি আদার ওয়ে রাউন্ড। ভুগোল বড় কঠিন জিনিস। আমেরিকা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। ট্রাম্প গদিতে বসেই ৬-৭টি মুসলিম দেশ থেকে অভিবাসন বন্ধ করার হুকুম দিয়েছিলেন। সেই লিষ্টে কিন্তু পাকিস্তান নেই। বিশ্বসুদ্ধু লোকে জানে পাকিস্তান আফগান তালিবানদের সাহায্য দেয়। কিন্তু কিস্যু করার নেই। আমেরিকা আফগানিস্তানে থাকবে কি না সেটা পুরোপুরিই পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত। ট্যাঁফোঁ করলেই ন্যাটো সাপ্লাই লাইন বন্ধ হবে। সুতরাং মুখ বুজে সহ্য করুন। সম্প্রতি ট্রাম্প আবার আফগানিস্তানে 'কমিটমেন্ট' বাড়িয়েছেন। পাকিস্তানি জেনারেলরা আগ্রহের সঙ্গে হাতে হাত ঘষে মিটিমিটি হাসছেন। যতদিন আমেরিকা আফগানিস্তানে থাকে পাকিস্তানের লাভ। না ভুল হল। লাভ আমজনতার নয়। শুধু পাকিস্তানের ১% ফুলে ফেঁপে উঠছেন আমেরিকার 'বদান্যতায়'। আফগানিস্তানে ন্যাটো সাপ্লাইএর জন্য ২০০১ থেকে আজ অবধি প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের মূলত সামরিক সাহায্য পেয়েছে পাকিস্তান। আমেরিকার সমরাস্ত্রের জাত আলাদা। এছাড়া ন্যাটোর সাপ্লাই ট্রাকপিছু ১০০,০০০+ পাকিস্তানী টাকা আয় হয়। একই রকম ভাবে চিন গোয়াদরে নৌঘাঁটি চায়। চিনের সাথেও অন্য কিছু রকম হবে না। পাকিস্তান অবশ্য বোঝে (আশা করি) যে চিনের থেকে শুধু ভাড়া আদায় করলে হবে না। টিকতে গেলে নিকট ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে চিনের 'মেক্সিকো' হতে হবে।

    চিন আফগানিস্তানেও গুটিগুটি হাজির। একটা তামার খনির লিজ নিয়েছে। কিন্তু আমেরিকা এখনও অবধি কাজ শুরু হতে দেয়নি। মুখে অবশ্য কিছু বলেনি। পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। দখল আমি (আমেরিকা) করব আর গুড় তুই (চিন) খাবি তা কি আর হয়।

    http://www.scmp.com/news/china/diplomacy-defence/article/2093852/talks-aim-jump-start-china-miners-stalled-afghanistan

    নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে 'অনুসরণ' করে করে তিতিবিরক্ত। সম্প্রতি নেপালও চিনের দিকে ঘুরেছে, খুব উৎসাহ নিয়েই বলতে হবে। চিনের বিদেশমন্ত্রক কিছু খেল দেখাতে পারে বটে। 'অনুসারী' দেশ হিসেবে নেপাল চিনের কাছে নেহাতই বোনাস। কিন্তু চিন নেপালকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। লাসা থেকে কাঠমান্ডু অবধি রাস্তা একটা আগে থেকেই ছিল। ২০১৫ সালে ভুমিকম্পে ভেঙ্গে যায়। সেটাকে এই গত সেপ্টেম্বরে মেরামতি করা হল। আরো বাড়ানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে ভারত আবার নেপালকে ব্লকেড করে দিলে কাজে আসবে। একটা রেললাইনের কথাও চলছে। এভারেষ্টের তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে আসবে! তবে এটা নিকট ভবিষ্যতে হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু এই সব কিছুই ঘটল ডোকলাম স্ট্যান্ডঅফের সমাপতনে। ডোকলামের জন্য ভারতকে 'শিক্ষা' দিতে নেপালকে ভারতের হাত থেকে বের করে আনতে চিন উঠেপড়ে লেগেছে। ভুটানকে এখনও ভারত জোর করে ধরে রেখেছে কিন্তু কদ্দিন থাকবে কে জানে।

    বাংলাদেশের সাথেও চিনের সম্পর্ক বেশ ভাল। তবে এটা ততটা চিনের জন্য নয় যতটা ভারতের ওপর বিরক্তি থেকে (নেপালের মতন)। বাংলাদেশ চিনের থেকে গত মার্চে দু'টো ডিজেল সাবমেরিন কিনেছে। আনন্দবাজার খুব খুশি। তবে আফগানিস্তানকে যেমন ভারত পারেনি তেমনই বাংলাদেশকে চিন নিজের অরবিটে অত সহজে ঢোকাতে পারবে না। কারণ সেই ভূগোল। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে চিন চুপ করে থাকায় বাংলাদেশীরা চিনের ওপরে এখন চটেছেন।

    http://www.anandabazar.com/bangladesh-news/bangladesh-becomes-the-41st-nation-to-add-submarine-in-the-navy-bng-dgtl-1.578747

    নিচে দুটো ছবি দিলাম। প্রথমটা সম্প্রতি হওয়া OBOR সন্মেলনে তোলা। দ্বিতীয়টা বিগতযুগে চিন সম্রাটের দরবার আগত অনুসারী রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের ছবি।





    -------------------------------------------------------------

    ২০১০ সালে নরওয়ের নোবেল কমিটি লিউ জিয়াওবো বলে এক চিনা ভদ্রলোককে শান্তির নোবেলখানা দিয়ে বসল। ১৯৮৯এ দলাই লামার পর এই দ্বিতীয় বার। লিউ বেশ কয়েকবছর ধরে চিনে গণতন্ত্র আনার জন্য খুটুরখাটুর করছিলেন। আশ্চর্যভাবে আমেরিকার যাবতীয় কীর্তিকলাপে ওনার সম্পূর্ণ সমর্থন। ইরাক সমেত। ইরাক আক্রমণ করায় বুশকে দারুণ প্রশংসা করেছেন লিউ - লিখেছেন "আধুনিক সভ্যতায় কি করে যুদ্ধ করতে হয় তার অসামান্য উদাহরণ অ্যাংলো-আমেরিকান 'ফ্রিডম অ্যালায়েন্স'।"(২) সবই ভালই চলছিল চিন হঠাৎ করে.২০০৯য়ে ওনাকে জেলে ঢুকিয়ে দিল। অভিযোগ উনি আমেরিকার থেকে টাকা নিয়েছেন। আমেরিকা বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রপ্রেমীদের টাকা ছড়ায় এটা সত্যি কথা। খুব সম্ভবত ওনাকে নিয়ে চিনের রিস্কটা বেশী হয়ে যাচ্ছিল। শান্তির নোবেল বেশ বড় ব্যাপার। বারাক ওবামা পেয়েছেন ঠিক আগের বছর। নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী আমেরিকান প্রেসিডেন্টটি গদি ছাড়ার সময়ে সাতটি দেশে একসাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। তা এরকম প্রাইজ যে লিউএর মতন লোকও পাবেন অস্বাভাবিক কিছু নয়।(৩) হিলারী জিতলে উনিও পেতেন। চিন নরওয়েকে ভালরকম কথা শোনাল। নরওয়ে ভান করল দেখুন আমরা তো কিছু জানি না। নোবেল কমিটি তো আর নরওয়ের সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। পুরো 'স্বাধীন' সংস্থান। আর চিন এরকম করছেই বা কেন? চিনের উচিত 'আন্তর্জাতিক কমিউনিটির' কথা শুনে লিউকে মুক্তি দেওয়া। আর আমেরিকা, জাপান, নরওয়ে ইত্যাদিকে দেখে চিনের শেখা উচিত গণতন্ত্র কি ভাবে চালাতে হয়। ছি ছি। নোবেল শান্তি পুরস্কারের মতন একটা পবিত্র জিনিসকে চিনারা, থুড়ি আই মিন চিনের সরকার অমান্য করছে! এত সাহস কি করে হয়? চিনের উচিত ঘাড় নিচু করে ক্ষমা চাওয়া।

    চিন আর কথা বাড়ালো না। শুধু নরওয়ের থেকে স্যামন মাছ কেনা বন্ধ করে দিল। আগেই বলেছি আমেরিকায় ২০১০-২০১৫ এই সময়কালটাতে চিনবিরোধী প্রোপাগ্যান্ডা তুঙ্গে ঊঠেছিল। গণতন্ত্র! মানবাধিকার! তিব্বত! দলাই লামা! উইঘুর জনগোষ্ঠী! চিনের দেনা! চিনের দুর্নীতি! ফিলিপাইন্স! দক্ষিণ চিন সাগর! চিনের পরিবেশ দূষণ! চিলচিৎকারের মধ্যে আরেকটি নাম যোগ হল - লিউ জিয়াওবো। চিন চুপ। কিন্তু হঠাৎ ২০১৬ সালে এসে নরওয়ে ঘোষণা করল চিনের সাথে সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে গেছে। মঙ্গোলিয়া যেমন দলাই লামাকে নিয়ে স্টান্ট করার পর ক্ষমা চেয়েছিল তেমনি নরওয়ে চিনকে প্রতিজ্ঞা করেছে যে ভবিষ্যতে তেনারা আর কোনদিনও চিনের কোন ক্ষতি হয় এমনতরো কাজ করবেন না! অর্থাৎ ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিলেন যে এর আগে নরওয়ে চিনের ক্ষতি করেছে (লিউকে নোবেল দেওয়া)। কারণটা আন্দাজ করতে পারি। চিনকে স্যামন মাছ বেচতে না পারাটা আসল কারণ নয়। নরওয়ের অনেক টাকা। খনিজ তেল আছে। আসলে বারাক ওবামার কীর্তিকলাপ দেখে নরওয়ের পলিটিশিয়ানরা বুঝতে পেরেছিলেন ওনাকে শান্তির নোবেল দেওয়াটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারটা হাসিঠাট্টার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরাকেও ততদিনে আইসিস হাজির। আর চিন যদি ২০১০ সালে জায়ান্ট হয়ে থাকে, ২০১৬য় লিভায়াথান। লিউকে আর ডিফেন্ড করলে মানসন্মান থাকবে না। নরওয়ে ক্ষমা চাইল চিনের কাছে। পশ্চিমী 'পন্ডিতবর্গ' রাগে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন।



    নরওয়ের সাথে সাথে ইউরোপে চিন সম্প্রতি আরো একটি 'অনুসারী' দেশ জোগাড় করেছে। এটি পুরোনো পাপী - ব্রিটেন। এবং চিনের সামনে ব্রিটেন একবারে আগবাড়িয়ে সাষ্টাঙ্গপ্রণাম ঠুকেছে। শি জিনপিং ২০১৫ সালে ব্রিটেনে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে ডেভিড ক্যামেরনের সরকার এমন আদেখলাপনা করল যে আমারই অস্বস্তি হচ্ছিল। ফরচুন পত্রিকা স্বীকার করল - জর্জ ম্যাকার্টনির উত্তরসূরীরা অবশেষে 'চিনসম্রাটের' কাছে সাষ্টাঙ্গপ্রণাম করতে শিখেছে বটে।(৪) ২১৮ বছর লেগেছে লেকিন দের আয়ে দুরুস্ত আয়ে। গার্জিয়ান পত্রিকাটি এখনও হাল ছাড়েনি অবশ্য।(৫)



    মাত্র কয়েক বছর আগেও ব্রিটেন চিনকে মানবাধিকার নিয়ে ভাষণ দিত। সেখানে পরিবর্তনটা লক্ষণীয়। শি জিনপিংএর জনপ্রিয়তা বর্তমান চিনে আকাশছোঁয়া। জিয়াং জেমিন বা হু জিনতাওএর আমলে চিন চুপ করে পশ্চিমী দেশগুলির অসহ্য ন্যাকামো ও ধ্যাষ্টামো সহ্য করত। ওঁদেরকে দোষ দেওয়া যায় না। দেং এর নীতি - সময়ের আগে স্বরূপ দেখিও না - ওনারা মেনে চলেছেন। কিন্তু সাধারণ চিনারা অধৈর্য হয়ে পার্টিকে খিস্তি দিতেন। আজ সে দিন গেছে। ২০১২য় ক্ষমতায় আসার পর শি জাপান ও ফিলিপাইন্সকে চমকিয়েছেন আমেরিকার চোখের সামনে। চিনের নৌসেনায় ঝড়ের বেগে বিপুল বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। তিন নম্বর এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার তৈরীর কাজ চলছে। ট্রাম্পকে শি পকেটে পুরেছেন। আমেরিকার থেকে গ্লাইডার কেড়ে নিয়ে ছোট্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে আরও বড় জিনিস ঘটতে পারে। নরওয়ে ও মঙ্গোলিয়াকে কান ধরে ওঠবোস করিয়েছেন। এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার - OBOR - সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ জুড়ে চিন পৃথিবীতে এক নম্বর ছিল, OBOR সেই আমেজ ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে। এই সবের সাথে শি এর শাসনকালে দেশের অর্থনীতি বেড়েছে ৭-৮% হারে। সারা দেশজুড়ে পার্টির দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ওপর তুমুল ক্র্যাকডাউন নেমেছে। যদি আজই চিনে ভোট নেওয়া হয় শি অনায়াসে জিতবেন। কিন্তু চিন ভোটে বিশ্বাস করে না।

    আর ভারত? ভারত এখনও ঘাড় গোঁজ করে। সরকার ও জনমত দুইই ঘোরতর চিনবিরোধী। বোধহয় ভিয়েতনাম ও জাপানের পরে সারা পৃথিবীতে ভারতই সবচেয়ে চিনবিরোধী দেশ। ৫০ বছরের আবাং প্রোপাগ্যান্ডার ফল। সৌভাগ্য এই যে ভারতের সাথে চিনের সরাসরি লাগার মতন ডিসপিউট খুব বেশী নেই। সীমানা সংক্রান্ত বিবাদ ঠান্ডাঘরে পড়ে আছে। কিন্তু যেদেশে জনমত এত অন্ধ সেখানে আমেরিকার উসকানীতে ভারত ভবিষ্যতে চিনের বিরুদ্ধে ভুল পদক্ষেপ নিতে পারে। ডোকলাম নিয়ে যা ঘটল এটা কি ভারতের নিজের সিদ্ধান্ত ছিল না কি আমেরিকার উসকানীর ফল? ইন্টারনেটের সুবাদে ধীরে ধীরে ভারতীয়রা পাকিস্তানী ও চিনাদের সংস্পর্শে আসছে। সে আদৌ গঠনমূলক নয়। শুধু খিস্তির ফোয়ারা। এবং এই অনলাইন কথোপকথনগুলোয় যা দেখছি শিক্ষিত চিনারা ভারতীয়দের তুলনায় নিজেদের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক বেশী ওয়াকিবহাল। ভারতীয়রা তামাশার পাত্র। সম্প্রতি এক ফোরামে ডোকলাম বিবাদসংক্রান্ত এরকমই একটা কথা চালাচালি চোখে পড়ল। এক ভারতীয় জোরগলায় জানালো ভারত চিনকে গুঁড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। এক চিনা উত্তর দিল - "চিনের হাতে একটা থাবড়া খেলে নিজের মুখটা আর আয়নায় চিনতে পারবি না। দেখে মনে হবে পিকাসোর আঁকা ছবি।"

    দি মিডল কিংডম ইস ব্যাক। উইথ এ ভেনিগ্যান্স।

    -------------------------------------------------------------

    ১. চিনে জ্যোতিষে ২০১৭ সালটা মোরগের বছর।

    ২. http://blog.boxun.com/hero/liuxb/133_1.shtml - চিনা ভাষায়, গুগলে ট্রানস্লেট করে নিন।

    ৩. https://www.lrb.co.uk/blog/2010/12/11/tariq-ali/the-nobel-war-prize/

    ৪. http://fortune.com/2015/10/21/britain-china-uk-xi-jinping-visit/

    ৫. https://www.theguardian.com/commentisfree/2015/oct/18/kowtowing-to-china-does-nothing-for-british-economic-health

    ওলাফ ক্যারোর গুপির খোঁজ - - ফুটনোট ২৬ দেখুন। মূল সূত্র - The McMahon Line: A Study in the Relations between India China and Tibet, 1904 to 1914, অ্যালিস্টার ল্যাম

    অন্যান্য তথ্যসূত্র - রবিন ডেভারম্যান, গটফ্রি রবার্টস, পল ডেনলিঙ্গার, রেডিট, কোরা, পাকিস্তান ডিফেন্স ফোরাম, সিনো ডিফেন্স ফোরাম ইত্যাদির সদস্যরা।

    গুরুচন্ডালী সাইট ও যারা এই সিরিজটার সঙ্গে ছিলেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। বর্তমানকালে চিনের তিনটি বড় শহরকে নিয়ে বানানো এই ক্লিপটা দেখার মত। এটা দিয়েই শেষ করছি।

  • PP | 138.97.245.7 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:২০367032
  • চীনে অনেক ঘোস্ট টাউন আছে শুনেছি সেগুলো কি বা কেন?
  • sswarnendu | 41.164.232.149 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:৩৩367033
  • অনবদ্য।
  • T | 165.69.191.251 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৮:৫৭367034
  • চরম হয়েছে চরম।
  • dd | 116.51.225.89 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:২৬367035
  • পোলিটিকাল প্রবন্ধ এতো সুস্বাদু হয় - এটি পড়বার আগে জানতামই না।
  • সিকি | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:৩৪367036
  • এ মানে মহাকাব্য লেখা হল।
  • b | 135.20.82.164 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:৪৩367039
  • চটি চাই। নইলে সম্পাদক মন্ডলীর ঘরে বোমা পড়বে।
  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:৫৯367040
  • "কিন্তু ট্রাম্প এত ভোট টানলেন কি করে? উত্তর - সেই চিন। ক্যাম্পেনে আগাগোড়া ট্রাম্প 'চিন কার্ড' খেললেন। সাথে একটু মেক্সিকান আর মুসলিমরা।"

    সিরিয়াসলি? ট্রাম্প আমেরিকান ইলেকশন জিতেছেন "চিন কার্ড" খেলে? সাথে "একটু" মেক্সিকান আর মুসলিমরা?
  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১০:৩৩367041
  • চীনের শিক্ষিত লোকজনেদের মধ্যে প্রচন্ড পরিমাণে অ্যান্টি ইন্ডিয়া সেন্টিমেন্ট আছে। বিশেষত ভারতীয় কালচারকে ছোটো করে দেখানোর একটা প্রবণতা আছে।
  • দেব | 135.22.193.149 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১২:৩৩367042
  • @PP - চিনে 'ঘোস্ট টাউন' বলে কিছু নেই। অনেক নতুন শহর তৈরী হচ্ছে। সেগুলোয় লোক ভর্তি হতে সময় লাগে। যতদিন না হচ্ছে সেগুলো ফাঁকা থাকে। সেই দেখেই আমেরিকান মিডিয়া ঘোষণা করে দিয়েছে 'ঘোস্ট টাউন' (আর বলেছে চিনের পতন আসন্ন)।

    @S - "একটু" শব্দটা ব্যবহার করেছিলাম ব্যাঙ্গার্থে। অল্প বোঝাতে নয়।

    চিনারা মনে করেন ভারতীয় সমাজের ভেতর থেকে সংস্কার ঘটেনি যেরকম চিনে বিপ্লবের ফলে ঘটেছিল। কথাটা আমাদের গায়ে লাগাটা স্বাভাবিক কিন্তু কথাটা শতকরা ১০০ ভাগ সত্যি। দু'টো দেশের বিভিন্ন সামাজিক বিকাশসূচকগুলির দিকে একঝলক তাকালেই সেটা বোঝা যায়। কিন্তু তাতে সমস্যা নেই। দু'টো দেশের ইতিহাস আলাদা আলাদা পথ ধরে চলতেই পারে। ভারত চিনের তুলনায় আস্তে আস্তে এগোচ্ছে ঠিকই কিন্তু এগোচ্ছে। একদিন হয়ে যাবে।

    কিন্তু এটা গেল গভীরের ব্যাপার। সম্প্রতিকালে চিনারা ভারতীয়দের হেয় মনে করেন। এটা কয়েকবছর আগে অবধিও ছিল না। এর কারণ এক হাতে তালি বাজে না। ভারতীয় কাগজগুলো অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে চিনের বিরুদ্ধে আজকাল প্রোপাগ্যান্ডা চালাচ্ছে। ডাহা মিথ্যা, অর্ধসত্য, ইঙ্গিতপূর্ণ টোনে ভর্তি। চিনের কাগজগুলি এরকম করে না। সুতরাং চিনাদের ভেতর থেকে প্রতিক্রিয়া আসাটা অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া এত বছর ধরে এত ফোরামে যা দেখছি 'শিক্ষিত' ভারতীয়রা একেবারে কান্ডজ্ঞানবর্জিত। ২০১৩ নাগাদ হবে, এক ফোরামে চিনের অর্থনীতি নিয়ে কিছু কথা হচ্ছিল। এক ভারতীয় জানাল "চিনের অর্থনীতির পতন আসন্ন (সাউন্ড্স ফ্যামিলিয়ার?) কারণ চিন ঠিক সৌদি আরবের মতন। খনিজ সম্পদ উৎপাদন করে টিকে আছে। সৌদি আরব বৃহত্তম খনিজ তেল উৎপাদক দেশ আর চিনও তেমনি বৃহত্তম কয়লা উৎপাদক দেশ। এই প্রাকৃতিক সম্পদ একবার ফুরিয়ে গেলেই দুটি দেশই ডুববে!"

    কমেন্টটা এতটাই উদগান্ডুবৎ যে আমার এতদিন পরেও মনে আছে। ৯০% ই এই ধাঁচের। তখনও পর্যন্ত চিনারা রেগে গেলেও যুক্তিতথ্য দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করতেন। ইদানিং হাল ছেড়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। এখন ভারতীয়রা সর্বত্র খিল্লির পাত্র এবং শুধু চিনাদের কাছে নন। সারা পৃথিবীর কাছে ইন্টারনেটে আমরা আজ 'পাজীত'।

    এছাড়া দু'দেশের মধ্যে উন্নয়নের ব্যবধানটা আজকে আকাশপাতাল। সুতরাং আরো জুতো আসবে। তাতেও ভারতীয়দের বোধবুদ্ধি হবে না। অজুহাত রেডি আছে - কংগ্রেসের ৬০ বছরের অপশাসন। বিজেপি থাকলে হত না। ইত্যাদি।
  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:১৯367043
  • আপনার লেখাতে একটা মারত্মক চীনা বায়াস পাই। চীনারা কিছু করলেই সেখানে অনেকদিন সহ্য করার পরে ঘুরে দাঁড়ানো টাইপের একটা হিন্দি সিনেমা টাইপের গপ্পের যুক্তি চলে আসে।

    আর চীনের বিপ্লবে চীনের কিস্যু লাভ হয়নি। চীনের উন্নতি যা হয়েছে সব ১৯৯০এর পর থেকে। সেটা এই চার্টটা দেখেই বোঝা যায়। ওদের হেইচডিআই-ও বেড়েছে বিগত ৩০ বছরেই।

  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:২২367044
  • চীনে রীতিমত গুচ্ছের ঘোস্ট টাউন আছে। যেগুলো তৈরী করা হয়েছে জিডিপি গ্রোথকে আর্টিফিসিয়ালি চালু রাখার জন্য। এবং অবশ্যই পস্চীমের মিডিয়াতেই সেই নিয়ে খবর বেড়োয়, কারণ চীনে এসব নিয়ে কথা বলাও বারণ।
  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:২৭367047
  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:২৭367046
  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:২৭367045
  • এইযে কিছু ঘোস্ট টাউনের নমুনা। এর মধ্যে অনকগুলো পস্চীমের শহরের নকল করে বানানো। সো মাচ ফর চাইনিজ কালচার।



    <
  • S | 184.45.155.75 | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:৩৬367048
  • চীনে যে কোম্পানিটি আইফোন তৈরী করে সেটির নাম হলো ফক্সকন। আপানারা এখানে বেশিরভাগই টেকনলজিতে কাজ করেন বা অন্তত আইফোন ব্যবহার করেন। অতেব ধরে নিচ্ছি যে আপনারা সবাই নিস্চই জানেন। এছাড়াও আরো বেশ কিছু আম্রিকান ও বিদেশি কোম্পানির ম্যানুফ্যাকচারিঙ্গ ইউনিট হিসাবে কাজ করে এই কোম্পানি।

    সেখানে এতো খারাপ ওয়ার্কিঙ্গ কন্ডিশন, এতো কম ওয়েজ, আর এতো মারাত্মক কাজের চাপ যে সেখানে বেশ কিছু সুইসাইড হয়। সেটা আটকাতে এই ব্যবস্থা নিয়েছেঃ

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন