ভুলের জানলা দিয়ে কখন ঠিক দরজায় / পৌঁছে যাই; নিজেও জানি না। / বনপথবীণা, চুপে মনোলীনা / বেজে ওঠে ছায়াতপা রোদ্দুরে।
আমি একাকী হেঁটে চলেছি রুক্ষ মাটিতে / গাছপালা নদনদীকে অবহেলে
১। প্রথমেই মনে রাখতে হবে, বাঙালী শপিং করে না। তারা মার্কেটে যায় 'মার্কেটিং' করতে। আর দোকানদার শপ্ খুলে বসে থাকে, তাই সে করে শপিং। গ্রামার আর ইকনমির হাতে হ্যারিকেন, বাঙালীর জয়।২। দ্বিতীয়ত, বাঙালী দোকানে জিনিস কিনতে যায় -- কে বলেছে আপনাকে? তারা যায় দোকানদারের রিয়ালিটি চেক করাতে। প্রতিটা প্রোডাক্টেই প্রায় রে-রে করে তেড়ে যাওয়া -- কি বললি? ওইটা পাশের দোকানে (পাশে কোনো দোকান নেই, 'পাশের দোকান' হল ঈশ্বরের মতো অ্যাবসেন্ট প্রেজেন্স) তিরিশ টাকা বলল, আর তুই দেড় টাকা বাড়িয়ে বলছিস কেন? ইত্যাদি অন্তে দোকানদারের মুখে ফেনা তুলিয়ে জিনিসটা পঁচিশ টাকায় নামিয়ে না কিনে চলে যাওয়া (দাঁড়া পাশের দোকানে দেখে আসি)।৩। ... ...
আজকাল ঘর থেকে বেড়ানো হয় না। অফিস কাছারি নেই। থাকলে অবশ্যই ভুত বাবাজির সাধনা করতাম। নানা ভগবানের বা ঠাকুরদেবতার সাধনা করে কি হবে বলুন। ওনারা তো এখন সিরিয়াল করতে ব্যস্ত। যতই ডাকাডাকি করো আসবে না। তবে ভূতের বর পেলেই কাজ চলে যাবে। একটা হাততালি দিয়ে অফিসে হাজির হয়ে যেতাম। সোনারপুর স্টেশনে গিয়ে মারপিট করতে হত না। ... ...
একটি ননসেন্স ও অ্যাবসার্ড লেখা। আপনাদের মনে পড়ে, সেই যে সেই জানলাটা খোলা ছিল না? যে জন্য মাছিটা বেরোতে পেরেছিল, সেই জানলাটা খোলাই ছিল। ঐ খোলা জানলাটুকু দিয়েই লোকে শুনতে পেল, কয়েকটা কণ্ঠস্বর একযোগে বলে চলেছে, ক্যাট ব্যাট ওয়াটার ডগ ফিশ
পাহাড়ে দু' মাস কেটে গেল।মেঘ-বৃষ্টি-বরফ-বুগিয়াল নিয়ে সবুজের মাঝে দিন কাটে, গাড়িও দেখিনি বহুদিন। গ্রামের ধারে গেলে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা চোখে পড়ে, গাড়ি চোখে পড়ে না। হিমাচলেও লকডাউন চলছে, বাস বন্ধ। হয়তো কিছু প্রাইভেট গাড়ি চলছে, কিন্তু দেখিনি। আপেল গাছের আপেল বড় হয়ে উঠছে, সবুজের আচ্ছাদন ঘন হচ্ছে রোজ। আগের চেয়ে শীত কমে গেছে অনেক, আজকাল আর কাঁপুনি দেয় না। কিন্তু সোয়েটার গায়ে দিতেই হয়।অভ্যস্ত চোখে ঘুরে বেড়াই, ঘাসফুল আর লাল গোলাপের ঝাড় দেখে থমকে যায় স্মার্টফোন। ছবি, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক। সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার সাবকনশিয়াস চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।কয়েকদিন ঘরে বসে বোর হয়ে গেলে পাড়া বেড়াতে বের হই। উঁচুনিচু পাথুরে পথ, ... ...
গত এক বছরে কমপক্ষে পঁচিশ থেকে তিরিশজন পরিচিত ব্যক্তি মারা গেছেন, বেশিরভাগই কোভিডে। এমন বহু মানুষ, যাদের স্নেহছায়ায় ছোটবেলা কেটেছে, যাদের সঙ্গে একসময় নিত্যকার হাসিমজা বা খুনসুটির সম্পর্ক ছিল, তারা চুপচাপ বিদায় নিয়েছে মহামারির মধ্যেই। আচমকা বিদ্যুৎচমকের মতো একেকটা দুঃসংবাদ আছড়ে পড়ে, স্কুলের বন্ধুর মা বা পরিচিত কোনো বন্ধুর বাবা গত হয়েছেন, তখন কত কথা মনে পড়ে যায়। এরকম কত কত মানুষ যাদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে দেখা সাক্ষাত নেই, তাদের ঘিরে ধরে থাকা সুখস্মৃতি নাড়া দিয়ে যায় তখন। বন্ধুর মায়ের হাতের রান্না বা প্রয়াত অগ্রজ বান্ধবদের স্নেহমাখা বকুনির কথা এসে ধাক্কা দেয় মানসপটে। কত কত সম্পর্ক! কত স্মৃতি! কালের নিয়মে ফ্যাকাসে ... ...
"ধুস। পাহাড়ে চলে যাব।"পনেরো বছর ধরে এই বুলি নিয়ে জীবন কাটানো চলছে, চিরাচরিত ঘুরে বেড়ানো আর ট্রেকিংয়ের ব্যস্ততার বাইরে সত্যি কিছুদিন যে পাহাড়ে গিয়ে কাটাব, সেই স্বপ্ন স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেছে। পাহাড়ে এসে আমার আকুলিবিকুলি দেখে ঘড়ির কাঁটা তাই চিরদিন মুচকি হাসে। মেঘ-কুয়াশা-রোদ্দুর-এর স্বাভাবিক লুকোচুরি দেখে আমাদের শহুরে চোখ অভ্যস্ত নয়, তাই দিনকয়েকের ছুটিতে এসে বড়ই বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি আমরা। এই সূর্যোদয়, এই সূর্যাস্ত, এই ট্রেল, ওই পয়েন্ট...হ্যানাত্যনা! ফলে 'পাহাড়ে চলে যাব' অ্যাটিটিউড হারিয়ে 'পাহাড়ে ঘুরতে এলাম'-টাই প্রধান হয় দাঁড়ায়। কুকুরগুলো বিকেল হলেই চেঁচিয়ে গালি দেয়, পাখিরা কাছে আসে না নিজের মতো, বনফুলের ঝোপ বা দেবদারুর বনের দৃষ্টি বহিরাগতদের প্রতি ... ...
সঘন বরষা করিল মগন প্রেয়সী রহিল দূরে বিরহী মরম ভুলিয়া ধরম গাহিছে বেহাগী সুরে।কতযুগ যেন হইল বিগত নয়ন তাহারে যাচে মুষ্টিফোনের কথোপকথনে মনের ময়ূর নাচে।মকমকি সহ বারিধারা ঐ রঙ্গ করিছে অনঙ্গকতকাল সহে মনের প্রবোধ মুষ্টিফোনের সঙ্গ।
কাছে ঘেঁষতে পারব না, ঘুমিয়ে পড় / তোমার চাওয়া- আনুগত্য নয়তো দাসত্ব- / পূরণ করা অসম্ভব; রাত হয়েছে।
আমার হাইট পাঁচ পাঁচ। আমার নামের হাইট ছয় চার। শুধু নামটাকে যদি ধরা হয়, সত্যজিৎ রায়ের মতো প্রেজেন্স। তারপর তো আমি এলাম, যাক গে, সে অন্য ব্যাপার। ছোটবেলায় কথা বলতে শেখার পর প্রবল উৎসাহে কেউ জানতে চাইলেই নিজের নাম বলতাম। কিন্তু ছোটরা খুব উৎসাহ নিয়ে কিছু করলে বড়দের উদ্ভট আচরণ করার স্বভাব প্রথাগত। তাই, আমি নাম বললেই দেখতাম স্বাভাবিক কথা বলতে পারা মানুষেরা হঠাৎ আউ-আউ করে আধো-আধো বোলে "বাব্বা কত্তো বয়ো নাম" বলে তালি দিচ্ছেন। আমার ভালো লাগতো না। বরাবরই, মানুষ যাতে কম কথা বলে, আমি সেই চেষ্টা করি। তাই তারপর থেকে কেউ নাম জানতে চাইলে বহুদিন অব্দি বলতাম "শুভংকর ঘোষ ... ...
(ভিয়েতনামী ও ফরাসী নামগুলির সঠিক উচ্চারণ আর তার বাংলায় বানান বেশীর ভাগই জানি না। দু এক যায়গায়, যেখান ইউটিউবে ডকুমন্টারী শুনে যা মনে হয়েছে সেটাই লিখেছি, বাকীটা যেরকম ইংরেজীতে লেখা আছে, সেই রকমই লিখেছি।) প্রেক্ষাপট :সময়টা ১৯৪০ থেকে শুরু করেছি। এর থেকেও পিছিয়ে গেলে মুষকিল। ভিয়েতনামের ইতিহাস বড়োই কুটিল। পাশাপাশি রাষ্ট্র, যেমন কাম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড - এদের ইতিহাস এতো রক্তাক্ত ছিলো না তখনো। ভিয়েতনামেরও সত্যিই কোনো উপনিবেশ হওয়ার যোগ্যতা ছিলো না। কী ছিলো ঐ দেশে? একেবারে সম্পুর্ণ কৃষি ভিত্তিক দেশ। খুবই গরীব । তাতে না আছে কোনো মুল্যবান খনিজ না আছে কল কারখানার প্রাচুর্য্য না কোনো ক্যাশ ক্রপ ... ...
#পুরোনোলেখা প্রতিটা শহরের একটা চরিত্র থাকে। পৃথিবীতে হাজার হাজার শহর থাকলেও প্রত্যেকটা শহর তার পরিচয় বহন করে নিজস্ব ভাবে, নিজস্ব স্টাইলে। উপর থেকে দেখে মাঝেমধ্যে অন্য কোনও শহরের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয় কিন্তু খতিয়ে দেখতে গেলে প্রতিটা শহরের মেজাজ তার নিজস্ব। তাতে কোনও ভেজাল পাওয়া যাবে না। একটা শহরের আত্মার সঙ্গে যোগ পাতানো অত সহজ নয়।লন্ডনে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে যখন চেনাজানা সমস্ত কিছুই দেখা হয়ে গেছে, তখন আমি অনুসন্ধান শুরু করলাম তুলনামূলক ভাবে অখ্যাত জায়গাগুলোর। অবশ্য লন্ডনে আর অজানা কী আছে? হাজার হাজার বছর ধরে লন্ডনকে নিয়ে লক্ষ লক্ষ গল্প লেখা হয়েছে। ... ...
যন্ত্রের বেদনাই কি যন্ত্রণা? হঠাৎ এমন ব্যাখ্যায় পড়লাম কেন? বলছি। আমার চোখের সামনে একটা শরীর যন্ত্রণায় ছটপট করছে। সে বলছে, আর কেমো দিও না আমায়। পারছি না এ যন্ত্রণা সহ্য করতে। এতবড় কারখানায় নানা যন্ত্র অবিরাম কাজ করে চলেছে। তার কোন অংশ যে বিকল যন্ত্রীও ধরতে পারছে না। শুধু অসহ্য যন্ত্রণা, যন্ত্রণা আর যন্ত্রণা। তার একটা ভাষাও আছে। কখনও গর্ভধারিনী মায়ের নাম অস্ফুষ্টে বেরিয়ে আসে, কখন শুধুই নীরবতা। দুই চোখের কোণ দিয়ে সে ভাষা জল হয়ে বয়ে চলে। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি কিসের জানা নেই। কিন্তু মুক্তি ভীষণ রকম প্রয়োজন। অপেক্ষায় আছি... ... ...
স্রোত এসে হাঁতরায়, মাটি খোঁজে / অবলীলায় পিপাসার্তের মুখে মুখ ছোঁয়
যে মানুষ সারাজীবন নিজের কাজ নিজে করে গেছেন, হাট-বাজার করা, নালা,নর্দমা, বাথরুম পরিস্কার থেকে নিজের জামাকাপড় নিজে কেচে ইস্ত্রি করা
একদিন অফিস সেরে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলে তুমি। হঠাৎ দেখলে সামান্য দূরে রাস্তার পাশে যে বালির ঢিবি, তার ওপর দাঁড়িয়ে একটা সাড়ে তিন বছরের মেয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছে। হয়তো রাস্তার বা কোয়ার্টারের কোন কাজ হবে বলে বালি ঢিবি করে রাখা ছিল। সেখানেই বেশ কিছু চার/পাঁচের বাচ্চা ছেলেমেয়ে উঠে হুটোপুটি করছিল। একবার চূড়ায় উঠছে নামছে। যখন খেলা শেষ করে সবাই নেমে চলে গেছে। তখন সেই মেয়েটি নামতে পারছিল না। কেবলই ভয় পাচ্ছে আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে সেই বালুর ঢিবিতে দাঁড়িয়ে। মেয়েটির চোখের জলে, নাকের জলে কাজল ধুয়ে লেপ্টে মুখে মাখামাখি। চেনার উপায় নেই। এগিয়ে গেলে তুমি। চিনতে পেরে হাত ধরে নামিয়ে ... ...
এলইডি আলোর তলা দিয়ে যাওয়ার সময় হেলমেট আর আকাশের মাঝখানে এক পশলা ইলশেগুড়ি নেমে আসতে দেখে *অভিযানের* মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার কথা ! সেই প্রথমবার তার ইলশেগুড়ি দেখা, সে আশ্চর্য হয়ে দেখেছিলো দুহাত বাড়ানো আকাশ জুড়ে নেমে আসা মুঠো মুঠো আনন্দ! পাশে থাকা বন্ধুরা ততক্ষনে রাস্তার ধারের দোকানের শেডে ঢুকে গেছে, রাস্তা আর দোকানের মাঝের রাস্তা টুকু মাথায় স্কুল ব্যগ দিয়ে ভিজে যাওয়া আটকেছে কোনোক্রমে! যদিও *অভিযান* সেসব করেনি ! অবাক করা ইলশেগুড়ি কে দুহাতে আপন করে নিয়ে যখন বাড়ি ঢোকে ততক্ষনে তার মা বুঝে গেছে ছেলে তার মুষলধারা বৃষ্টিতে ভেসে এসেছে! ... ...
জ্বরের ঘোর থেকে উঠলে যেমনি হয়, আমার তেমনি লাগছে। মুখটা একটানা বিস্বাদ; কালকের তেতো প্যারাসেটামল আর জলের স্বাদ যখন মুখের মধ্যে বিরাজমান, আগেরদিনের মদের গন্ধের মতো, কিন্তু বুক পেট ঘিরে প্রচন্ড ভাতের খিদে। আমার জ্বর হয়নি। বা হয়েও থাকতে পারে। সেটা বড় কথা নয়। এখন কোনো কথাই এই ভোরের বেলায় (ভোর না রাতের এক্সটেনশন, রাতের কালি বারুদ ফুরোবার বিষণ্ণতা?) তেমন কিছু নয়। সবই কেমন যেন নিস্তেজ, ম্রিয়মাণ; তেমন ভীষণ কোন ভাবের সঞ্চার নেই এই বাগানের গাছপালাগুলোদের মধ্যে, এই সকালের আলোয় ফিকে হয়ে আশা উল্টো দিকের একচিলতে পাঁচিলের মধ্যে। কিন্তু আমার মধ্যে একটা খুশি খুশি ভাব একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে, ... ...
মাথাটা নীচু করে বসেছিলেন বৃদ্ধ মানুষটি। দুটো চোখে শূন্য দৃষ্টি। এতক্ষণে বেশ কয়েকবার তার নাম ডাকা হয়ে গেছে। তিনি শুনেও শোনেন নি। উঠে এগিয়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই। স্থির, স্তম্ভিত অনুভূতিহীন এক মানুষ।