কোনার্ক থেকে ফিরছি। সারাদিনের ট্রেন। গায়ে ‘সুপারফাস্ট’ লেখা, কিন্তু কাজ করে না। চেয়ার-কার। পিঠ সোজা করে ঢুলুনি। রিজার্ভেশন ব্যাপারটা কারুর কাছেই খুব স্পষ্ট নয়। অনেকেই এসে ক্লেম করছে ২০ নং সিটটা তার, কিন্তু ওটা আসলে আমার। ফিরছি, আমি আর আমার বন্ধু।এমনিতেই দূরপাল্লার ট্রেনে বাঙালী সহযাত্রীর সান্নিধ্য আমি খুব একটা উপভোগ করি না, যদি না একেবারেই আত্মীয়-পরিজন গোত্রের হন তাঁরা। কারণ, বাঙালী মূলতঃ পরিবার-পালিত পশু। তাই, ট্রেনে করে দূরে যাওয়ার পথে, এবং দূর থেকে ট্রেনে করে ঘরে ফেরার পথে তাঁর মধ্যে একটা অবিশ্বাস্য সেন্ট্রিপেটাল ফোর্স কাজ করে পরিবারের প্রতি, ঘরের প্রতি। তখন, ট্রেনে, বাঙালী ভাষা দিয়ে পরিবার বিচার করে। আপনারা দু’জন ... ...
একটা টাটকা শোক থেকে আরেকটা টাটকা শোকে চলে যাচ্ছি। প্রথমটার থেকে দ্বিতীয়টায় গেলে পরের গুলো লঘু হয়ে যাচ্ছে। আসলে ধীর গতিতে দেখলে আমাদের এই শোক উবাচ অনেকটাই সময় ধারার মতো ইতিহাস মেনে চলছে, যুগ বদলালেও আমরা একেবারে যুগপৎ বদলে যাইনি। রামের কাছে একটা মৃত্যু ভোর ভোর এসে পৌঁছায় তো সেটা শ্যামের কাছে সেটা প্রাক দুপুরে। তারপর দুজনের শোকবহর চলে প্রকৃতি মেনে। আমি আপনি সেখানে হাত ঢোকাতে পারিনা। বড়জোর পারলেও আম্ফান ইয়াসে ভেসে যাওয়া শুকনো ত্রাণ বিনিময়ের মতো, হাত বুলিয়ে ছেলে ভুলোনো। কিন্তু রাম শ্যাম? রাম শ্যাম রহিম করিমের আবহাওয়ার খবর ভেসে যায় পাড়া থেকে বেপাড়া হয়ে পরিচিত গ্রহান্তরে। ... ...
তোলেদো। তাগুস নদীর কিনারায় অবস্থিত প্রাচীন পার্বত্য নগরী। শহর না বলে গ্রাম বলাই ঠিক। তবে একরত্তি একলা গ্রাম নয়, বেশ জমাটি 'ভিলেজ টাউন'। স্পেনের এই এক চিলতে জায়গায় কী জাদু কে জানে, হাজার বছর ধরে অনুপ্রবেশকারীরা তোলেদো দখল করবে বলে হাপিত্যেশ করে বসে থেকেছে। রোমান, মুর, ভিসিগথ-- নতুন প্রজন্মের সঙ্গে নতুন নতুন ইতিহাসের পাতা যোগ হয়েছে তোলেদোতে কিন্তু পুরোনো পাতাগুলো মুছে যায়নি কোনোদিনই, বরং সময়ের সাথে সাথে তাদের অস্তিত্ব আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সেই শহরে গিয়ে পৌঁছেছি সেইবার। রূপকথার রাজ্য, কিন্তু সে রাজ্য পাথর দিয়ে গড়া। লোরকার ভাষায় স্পেন হল জ্যান্ত ভূতের দেশ, বর্তমান এখানে গৌণ। ভুল বলেননি। এখানকার ভুগোল, ইতিহাস, ... ...
এই থ্রেডে 'গুরু'দের মধ্যে আড্ডা জমুক 'ইউরো ২০২০' নিয়ে? যাঁরা আজ রাত থেকে বসছেন ম্যাচ দেখতে, স্বাগতম আমার এই থ্রেডে আপনাদের সকলকে। মতামত, ফেভারিট, প্রেডিকশন, বিশ্লেষণ চলতে পারে আমাদের মধ্যে।আমার মত নিচে জানাচ্ছি।এবারের টুর্নামেন্টে তেমন কোনও ফেভারিট নেই আমার। আগে থেকে guess ও করতে চাইছি না কে জিততে পারে। নির্ভেজাল আনন্দ নেব ম্যাচগুলো দেখে। প্রতিটা গ্ৰুপ থেকে যে যে দেশগুলোর উপর আমার নজর থাকবে --A: ইতালি, তুরস্কB: বেলজিয়ামC: অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডD: ক্রোয়েশিয়া, ইংল্যান্ডE: স্পেনF: পর্তুগাল, ফ্রান্স আজ প্রথম ম্যাচ: ইতালি বনাম তুরস্কআমার প্রেডিকশন: Draw (1-1) ... ...
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ হাওড়ার সাঁত্রাগাছি ঝিল যেটা কি না বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট বলে পরিচিত, তার জল কতটা বন্যপ্রাণের জন্য উপযুক্ত সেটা পরীক্ষা করেছিল।
দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে দিনাজপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। দিনাজপুর জেলা উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার মধ্যে বৃহত্তম। এই অঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে ভারতীয় প্লেটের অংশ যা আদি জুরাসিক যুগে সৃষ্টি হওয়া গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ ছিল। সে যাইহোক দিনাজপুর জেলার ভূগোল এবং ইতিহাস নিয়ে পরে একদিন গল্প করা যাবে আজ আপনাদের ছোট্টুর গল্পটি বলি। ছোট্টুরা থাকতো বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে। বাড়িতে ছিলো আম্মা আব্বু আর তার সদ্যোজাত একটি বোন।সেই গ্রামটি ভারতের কাছে হিলি বর্ডার থেকে খুব বেশি দূরত্বে ছিলো না। ছোট্টুর বাবা ওই গ্রামেই রিক্সা চালাতো। রিক্সা চালিয়ে যা রোজগার করতো তাতে ... ...
নদী ভরাডুবি হয়ে গেছে চড়ায়। খেয়া নৌকার এগোনো প্রায় দুস্কর। তবুও খেয়া টানার আপ্রান চেষ্টা চালায় হারুন। সুন্দরবনের খাড়ি নদী বললেই ভালো বলা হবে। হারুন ভোরে বেড়িয়ে গাছ কেটে সব্জি নিয়ে নিজের খেয়া বাইছে। বড় কাজ ছিল কেরোসিন জোগাড়ের। পয়সা দিয়েও বেশ অপ্রতুল। আর হারুনের যে খুবই দরকার হয়ে পড়েছিল। দুদিন ধরেই বউ রুমেলা ঘ্যান ঘ্যান জুড়ে দিয়েছিল এই কেরোসিনের জন্য। ... ...
বসন্ত এসে গেছে...আজকাল কবে বসন্ত আসে, কবে চলে যায় কিছুই বুঝতে পারি না। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কাঠফাটা রোদ্দুর আর প্যাচপেচে ঘাম, মাথা ঝিমঝিম করে। তারই মাঝে মাইক চালিয়ে সরস্বতী পুজো নয় শিবরাত্রির কানে তালা লাগিয়ে দেওয়া উৎসব পালন। দক্ষিণ ভারতেও মাইক সংস্কৃতির হিড়িক লেগেছে, আজ গনেশ কাল ছত্রপতি শিবাজি পরশু ব্রাহ্মণ ভোজন চলছেই। দোলযাত্রা বা হোলির উৎসব তো এক যুগ আগেই উন্মাদ নৃত্যে পরিণত হয়েছে, হিন্দি বেল্টে ছোটবেলা কাটানোর ফলে আমার অভিজ্ঞতা অন্তত খুব একটা সুখকর নয়। কিন্তু আজকাল সবচেয়ে বেশি মাথা ধরে ফেসবুকে একটানা দশ পনেরো মিনিট কাটালে। এক একজনের রাজনৈতিক পোস্টকে যদি ন্যূনতম ডেসিবেলে বদলে দিই, সমস্ত পৃথিবী ... ...
বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একটা ছোট্ট তুলতুলে মেয়ের জন্ম দিলো অনুসূয়া। অনুসূয়ার অনেক রকম শারীরিক সমস্যা ছিলো।মা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে এই ভেবেই অনুসূয়া আর দেরি করতে চায়নি বাচ্চা আনার ক্ষেত্রে। যদি কোনোদিন মা না হতে পারে এই ভয় মনে দানা বেঁধেছিলো সঞ্জয়ের সাথে বিয়ের আগে থেকেই।সঞ্জয় পাশে থেকে সর্বদা ভরসা জুগিয়েছিলো।সঞ্জয়ের বক্তব্য ছিলো ---মা হওয়াই কি জীবনের সব!!!আমরা একসাথে থাকবো, সময় কাটাবো আর মন ভরে একে অপরকে ভালোবাসবো। ... ...
দেশজুড়ে যখন ভ্যাকসিনের হাহাকার, তখন পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালার স্বাস্থ্যকর্মীদের নৈপুণ্যে এই দুই রাজ্যের ভ্যাকসিন অপচয়ের হার ঋণাত্মক। এটা সম্ভবপর হয়েছে প্রতিটি ভ্যাকসিনাধার থেকে শেষবিন্দু অবধি প্রাণদায়ী ভ্যাকসিন নিংড়ে নেওয়ার জন্যে।
লেচ নদীর জল এতটাই পরিষ্কার যে ওপর থেকে জলের নিচের নুড়ি, পাথর সমস্ত একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমনিতে জলের গভীরতা বেশি নয় কিন্তু ভীষণ রকমের খরস্রোতা, যেন বয়ে চলেছে আপন আনন্দে, নাচতে নাচতে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো লেচের দিকে তাকিয়ে বসেছিলাম, হটাৎ গায়ে দু এক ফোঁটা জল পড়তে সম্বিৎ ফিরলো। পাহাড়ি পরিবেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সবসময় হুবহু মিলবে সেটা ভাবা ভুল, আজ পূর্বাভাস ছিল সারাদিন শুকনো থাকবে, ছিলও তাই কিন্তু আলো কমে আসার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো, তাই দেরি না করে কম্বল গুটিয়ে হোটেলের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। যাবার পথেই একটা আপওথেকে দেখতে পেয়ে ঢুকতে হলো, জার্মানি তে ওষুধের দোকান কে আপওথেকে বলে। ... ...
ভবেশ কলকাতায় হাতে টানা রিক্সা চালায়। দেশের বাড়ি বিহারের প্রত্যন্ত এক গ্রামে, বাড়িতে আছে বাবা, মা,ও ছোটবোন। যদিও একজন নতুন সদস্য এসেছে এখন, সে হলো ভবেশ কুমার যাদবের নতুন বৌ সুনিতা। বিয়ে করেই কলকাতায় ফিরে এসেছে ভবেশ পেটের তাগিদে। আসার আগে বৌকে বলে এসেছে পুজোয় গিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসবে তাকে। তার জন্য দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে সে। বৌকে নিয়ে আসার আগে একটা ঘর ভাড়া করতে হবে।বর্তমানে রাতটুকু রাস্তাতেই কোথাও গামছা পেতে ঘুমিয়ে থাকে, আর রঙিন স্বপ্ন দেখে সুনিতাকে নিয়ে নিজেদের একটা সংসার করবে কলকাতায়। ... ...
'মিথ্যামেব জয়তে' প্রকাশিত হয়েছে তিন মাস হয়ে গেল। পঞ্চম বই, আলাদা করে তেমন কোনও অনুভূতি হয়নি। তাও বই প্রকাশের সময়ের এই পোস্টটা আরো একবার দিয়ে রাখলাম। ফেসবুক কখন উড়িয়ে দেয় ঠিক নেই। সুতরাং ব্যাকআপটুকু থাক... দীর্ঘ সময় ধরে বহন করে চলা একটা লেখা যখন অবশেষে দু মলাটে বাঁধাই হয়ে বই হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন মনে নানা রকমের ভাবের উদয় হয়। আনন্দ, গর্ব, স্বস্তি, কৃতজ্ঞতা...কিন্তু আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, আমার ক্ষেত্রে এই সমস্ত ইমোশনকে ছাড়িয়ে গেছে বিষাদ। বন্ধু বিচ্ছেদ আর হতাশার হাত ধরেই যে লেখার সুত্রপাত, অসহায় যাপন আর নীরব দীর্ঘশ্বাস অবলম্বন করেই যে আখ্যান গড়ে উঠেছে, সেখানে আর আনন্দের অবকাশ ... ...
গ্রামের নাম পুলনা। চিরতরে হারিয়ে গেছে এই গ্রাম। না, নামটা আছে, গ্রামটাও আছে। কিন্তু বদলে গেছে আমার স্মৃতিতে ধরে রাখা এক চিলতে গ্রামের সেই পরিচিত দৃশ্য, যেখানে সূর্যের আলো মাথায় হাত দিয়ে ঘুম ভাঙাত। চা-ওয়ালা রমনকিশোর ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স-এর ট্রেকারদের চা দিতে ভুলে গিয়ে মোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকত আচমকা জেগে ওঠা রামধনুর দিকে। হেমকুণ্ড সাহিবগামী তীর্থযাত্রীরা চলে যেত এই গ্রামের পাশ দিয়েই কিন্তু ফিরেও চাইত না গ্রামের মোড়ল রামধনীর দিকে। গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান যদি নিয়ম করে নদীর ধারে গিয়ে রঙিন পাথর কুড়োয় তাহলে কে আর পাত্তা দেয়? গোবিন্দঘাটের হইচই থেকে দূরে পাহাড়ের কোলে নিরবিচ্ছিন্ন শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকত পুলনা। নাম না জানা পাখিরা ... ...
একবার এক বন্ধু বাংলায় অ্যাডভেঞ্চার গল্প বিশেষ লেখা হয় না বলে বকবক করছিল। আমিও মনের দুঃখে সায় দিচ্ছিলাম কিছুটা। মিনিট কুড়ি জ্ঞান আহরণ করে জানলাম বাবাধন 'চাঁদের পাহাড়'-ই পড়ে দেখেনি। বটমলাইন -- আমি যেটাকে মাস্ট ওয়াচ, ক্লাসিক বা ট্রেন্ডমেকার বলে মনে করছি, অনেকে হয়তো সেই বই বা সিনেমার নামও শোনেনি। তাই দোনামোনা করে আজকের পোস্টটা দিয়ে ফেললাম। ... ...
বাণী
সালটা ১৮৯৯। চুরুলিয়া গ্রামের আকাশের মুখ সেদিন গম্ভীর। গতরাত থেকে অবিশ্রান্ত ভাবে কেঁদে চলেছে সে, এমনকি সকালেও সে কান্নার বিরাম নেই। এমনই এক বর্ষণমুখর দিনে চুরুলিয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে এক কুঁড়েঘরে জন্ম নিলেন দুখু মিঞা ওরফে কাজী নজরুল ইসলাম। বাবা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। জন্মের পর থেকেই সংসার সীমান্তে স্বল্প রোজগেরে বাবা – মায়ের নিত্যদিনের এক অসম লড়াইয়ের স্বাক্ষী ছিলেন একরত্তি নজরুল। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় খুব দ্রুত বদল ঘটছিল মানুষের যাপনে। খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিল সমাজ অর্থনীতি এবং বিশ্বরাজনীতির মানচিত্র। সময়ও তার মতো করে গড়েপিটে নিয়েছিল নজরুলকে।১৯১৭ সালে মাত্র আঠেরো বছর বয়সে নজরুল যোগ দিলেন সেনাবাহিনীতে। ... ...